Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Md. Alamgir Hossan

Pages: [1] 2 3 ... 38
1
সাজিয়া ওমরকে অনেকে চেনেন লেখক হিসেবে। ২০০৯ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‌লাইক এ ডায়মন্ড ইন দ্য স্কাই প্রকাশ করে ভারতের বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পেঙ্গুইন। এরপর লিখেছেন আরও দুটি উপন্যাস। তবে বড় বড় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা সাজিয়া, সব সময়ই মন যেটা চেয়েছে, তা করেছেন। করোনাকালে ঘরবন্দী থেকে এখন যেমন যোগব্যায়াম (ইয়োগা) নিয়ে মেতে আছেন। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রতিদিন একটি করে ভিডিও প্রকাশ করছেন। শেখাচ্ছেন যোগের মাধ্যমে শরীরচর্চার নানা সুবিধা।

যোগব্যায়ামের জগতে সাজিয়া মোটেও নবীন নন, বেশ পুরোনো প্রশিক্ষক। দেশ–বিদেশ ঘুরে সাজিয়া ওমর বাংলাদেশে থিতু হয়েছেন ২০০৫ সালে। আর সেই সময় থেকেই ঢাকায় যোগ ও পিলাটিসের মতো শরীরচর্চার প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। সাজিয়া এসব শিখেছিলেন কোথায়? ফোনে এমন প্রশ্নের পর বেশ একচোট হাসলেন। তারপর বললেন, ‌‘নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার হামলার সময়ে আমি ওখানে কর্মরত ছিলাম। এত বড় একটি ঘটনার পর বেশ ভেঙে পড়েছিলাম। মনে হচ্ছিল নতুন কিছু করতে হবে, যাতে নিজে শান্তি পাব। এই সময়ে আমি ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারত ভ্রমণ করি। সেখানেই আমার ইয়োগার প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। প্রশিক্ষণ নিই। নিউইয়র্ক, লন্ডনে থাকতে আমি সেখানে ইয়োগা শেখাতাম। এরপর দেশে এসে শুরু করলাম।’


শুরুর দিকের কথা বলতে গিয়ে আরও যোগ করেন সাজিয়া—দেশে যখন শুরু করি তখন এটি নতুন একটি ধারণা। তবে অনেকেই শেখা শুরু করলেন। বিশেষ করে অনেক খেলোয়াড় বা বিদেশিরা আসতে শুরু করেন। এখন তো আমার অনেক শিক্ষার্থী ইয়োগা স্কুল চালু করেছে। লোকজনকে শেখাচ্ছে। খুব ভালো লাগে, মানুষ শরীরের যত্নে সচেতন হচ্ছে।

সাজিয়া ওমর বর্তমানে কাজ করছেন বিশ্ব ব্যাংকে, কাজের ক্ষেত্র যোগাযোগ। এর আগে জাতিসংঘের নানা সংস্থা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), সিরির মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। তবে যখন যেখানেই কাজ করেছেন, চাপ সামলে নিয়েছেন সহজে। যোগব্যায়াম করে শারীরিকভাবে ফিট থাকতেন। সাজিয়া বলেন, ‘স্পন্ডালাইটিস, হাঁপানি, ডায়াবেটিস, ওজন কমানো বা মেদ থেকে শুরু করে শরীরের সব ধরনের সমস্যা নিরাময়ে আছে ভিন্ন ভিন্ন যোগব্যায়াম। শুধু সঠিকভাবে সেটা প্রয়োগ করতে হবে। অনেকেরই কোর মাসল শক্ত না থাকলে স্লিপডিস্ক হয়, সেটাও সহজে সারাতে পারে ইয়োগা।’

যোগব্যায়ামের ধরনধারণ

তিনটা পর্বে ইয়োগা করা হয় বলে জানালেন এই প্রশিক্ষক। এর মধ্যে আছে আসন (শারীরিক ব্যায়াম), প্রাণায়াম (মানসিক) ও মেডিটেশন (ধ্যান)। প্রতিটি পর্ব ১০-১৫ মিনিট করে করতে হবে। তবে একসঙ্গে সবগুলো না করলেও সমস্যা নেই। দিনের বিভিন্ন সময় ভাগ করে একেকটি পর্ব শেষ করা যেতে পারে। ইয়োগার সবচেয়ে কার্যকর দিক হচ্ছে প্রায় সব বয়সেই এটি করা যায়। সাজিয়া ওমর প্রশিক্ষণ দেন গুলশান ২–এর ৮০ নম্বর সড়কের নর্ডেক ক্লাবে। করোনাভাইরাসের কারণে আপাতত সেটি বন্ধ আছে। ঘরে থেকে মনোবল ঠিক রেখে এখন দরকার সুস্থ থাকা। আর এই ভাবনা থেকেই ইউটিউবে নিজের চ্যানেলে (www.youtube.com/shaziaaminaomar) প্রতিদিন নতুন নতুন শরীরচর্চার ধারণা দিচ্ছেন সাজিয়া ওমর। শেখাচ্ছেন কীভাবে করতে হবে শরীরচর্চা। আর সাজিয়া বললেন, লেখালেখির মতো শরীরচর্চাও আমার কাছে একটা প্যাশন। আর সেটি থেকে যদি মানুষের উপকারে আসতে পারি তাহলে ক্ষতি কী!’

2
পিসিআর পদ্ধতিতে ল্যাবে কোভিড-১৯ টেস্ট করতে যেখানে সময় লাগে দুদিন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিটে সেখানে সময় লাগবে মাত্র পাঁচ মিনিট। টেস্টের ফলও আসবে শতভাগ নির্ভুল। এমনটিই দাবি করেছেন ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’ প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা।

গত শনিবার  ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালের গেরিলা কমান্ডার মেজর এ টি এম হায়দার বীর বিক্রম মিলনায়তনে আয়োজিত কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তারা এ দাবি করেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, কিট উদ্ভাবনের প্রধান গবেষক গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড.বিজন কুমার শীল, গবেষণা প্রকল্পের সমন্বয়কারী ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার কিট সম্পর্কে নিজেদের মতামত ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘আমাদের টেস্ট কিটে আমরা দুই ধরনের ফেজ ডেভেলপ করেছি। একটা হলো করোনা ভাইরাসের অ্যান্টিজেন ডিটেকশন। আরেকটি হচ্ছে অ্যান্টিবডি ডিটেকশন। প্রত্যেকটা ইনফিউশনে দুটি ডোর থাকে। একটি হচ্ছে অ্যান্টিজেন বা ভাইরাল ফেজ আরেকটি হলো অ্যান্টিবডি।’

‘আমাদের সবচেয়ে বড় অ্যাচিভমেন্ট হলো- আমরা দুটি ফেজ একত্রিত করতে পেরেছি। ফলে আমরা শতভাগ রোগীকে শনাক্ত করতে পারব। এই টেস্ট খুব সহজ এবং স্বল্প সময়ে করা যাবে। যেখানে পিসিআর করতে দুদিন সময় লাগে সেখানে আমাদের এই কিটে টেস্ট করতে মাত্র ৫ মিনিট সময় লাগবে’— বলেন ড. বিজন কুমার শীল।

কিটের সহজ ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, এক সেট কিট বক্সে একটা ডিভাইস এবং দুই ধরনের বাফার থাকবে। ওই ডিভাইসের ভেতরে ক্যাপসারিন রিএজেন্ট দেওয়া আছে। ডিভাইসে প্রথমে একটি বাফার দুই ড্রপ দেওয়ার পরে সাসপেক্টেড স্যাম্পল দিতে হবে। ডিভাইস সেটি চুষে নেওয়ার পর আবার দুই ড্রপ বাফার দিতে হবে। এরপর আরেক ধরনের বাফার (যেটা মূলত গোল্ডপার্টিক্যাল) দুই ড্রপ দিতে হবে। যদি কোভিড-১৯ পজেটিভ হয়, তাহেল দুটি ডট আসবে। আর যদি নেগেটিভ হয়, তাহলে একটি ডট আসবে। সবকাজ সম্পন্ন করতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট।

ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘এই টেস্টের পটভূমি যদি বলি এটি শুরু হয়েছিল সিঙ্গাপুরে। ২০০৩ সালে আমি যখন সার্স ভাইরাস নিয়ে কাজ করি, তখন ডট ব্লোট ডেভেলপ করি। তখন এর সময় ছিল ১৫ মিনিট। যখন এটাকে ডিভাইসে নিয়ে আসি, তখন এর সময় চলে আস পাঁচ মিনেটে।’

কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরেকজন গবেষক বলেন, ‘টেস্ট কিট নিয়ে বিতর্ক অনেক আছে। আমরা যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানী, বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছি তারা নানারকম বিতর্ক করে যাচ্ছি। পিসিআর পদ্ধতি ভালো। সেলুলজিক্যাল পদ্ধতি খারাপ!’

‘আমাদের বক্তব্য হলো, দেশের অর্থনীতিকে যদি রক্ষা করতে হয়, তাহলে এত লম্বা সময় ধরে, এত টাকা খরচ করে পিসিআর পদ্ধতিতে টেস্ট করা যাবে না। আমাদেরকে খুব সহজ পদ্ধতিতে যেতে হবে। ধরুন আমরা একটা ইন্ডাস্ট্রি খুলব। ইন্ডাস্ট্রিতে দুই হাজার লোক আছে। আমরা সেখানে কিট নিয়ে যাব। একদিনের মধ্যে টেস্ট করে বলে দেব, এখানে কে কে ইনফেক্টেড আছে’— বলেন ওই গবেষক।

তিনি বলেন, ‘এয়ারপোর্ট বা গাবতলীতে চেকপোস্ট বসাতে গেলে সেখানে পিসিআর নেওয়া যাবে না। কারণ, পিসিআর পদ্ধতিতে কাজ টেস্ট করতে হলে বড় ল্যাবরেটরি সেটআপ দিতে হয়। সহজ পদ্ধতিই আমাদের নিতে হবে। এই কারণেই ডব্লিউএইচও’, ‘সিডিসি’ সেলুলজিক্যাল টেস্টে যাওয়ার কথা বলছে। এখন কথা হলো- এই টেস্টে সেনসিটিবিটি কতটা হবে? এটা আসলে নির্ভর করছে বিজ্ঞানীরা কীভাবে বিষয়টি ডিজাইন করছে, সেটির ওপর। আমরা সেটি করতে সমর্থ হয়েছি।’

3
ক্যাম্পাসের বাইরে পা রাখিনি প্রায় দেড় মাস হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মে থাকছি, ক্লাস করতে হচ্ছে অনলাইনে। এমন বিচিত্র অভিজ্ঞতা শুধু আমার কেন, মনে হয় যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্যই বিরল।

আমি চীনের হুঝো শহরের হুঝো ইউনিভার্সিটিতে ভিজ্যুয়াল আর্ট ডিজাইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছি। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক শিক্ষার্থীই দেশে ফিরে গেছেন। আমার যাওয়া হয়নি। কারণ যে শহরে থাকি, সেখানে কোনো বিমানবন্দর নেই। দেশে ফিরতে হলে আমাকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অন্য শহরে যেতে হবে। বাসে, ট্রেনে, মানুষের ভিড়ে পড়তে হবে। তার চেয়ে ক্যাম্পাসটাই আমাদের জন্য নিরাপদ। এমনকি মাঝেমধ্যে মনে হয়, দেশে থাকলেও হয়তো এতটা নিরাপদ বোধ করতাম না।

জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে যখন প্রথম করোনাভাইরাসের কথা শুনলাম, তখন আমাদের ক্যাম্পাস বন্ধ। লুনার ফেস্টিভ্যালের (চীনা নববর্ষের উৎসব) ছুটিতে হুঝো ইউনিভার্সিটির প্রায় ১৭ হাজার চীনা শিক্ষার্থী তখন বাড়ি চলে গেছে। তখনো সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। লুনার ফেস্টিভ্যালের পরই মূলত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল। হঠাৎ ঘোষণা এল, ২৭ জানুয়ারি বিকেলের পর থেকে আমরা আর ক্যাম্পাস থেকে বের হতে পারব না। যারা দেশে ফিরে যাবে, শুধু তারাই বেরোনোর অনুমতি পাবে। সেই থেকে আমরা প্রায় আড়াই শ–এর বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মে থাকছি। শুরুর দিকে, প্রায় এক মাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আমাদের দুই বেলা খাবার দেওয়া হয়েছে। এখন অবশ্য ক্যানটিন খোলা, নিজেরাই কিনে খেতে পারছি। রুম থেকে খুব একটা বের হই না। দিনে দুইবার করে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়। কারও জ্বর হলেই তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়।

এত কড়াকড়ির মধ্যেও পড়ালেখায় কিন্তু কোনো ছাড় নেই। নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট করতে হচ্ছে। যে যেখানেই থাকুক, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে সময়মতো। ‘গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্ট’ও করতে হচ্ছে। আমরা একেকজন একেক জায়গায় আছি। অনলাইনে আলোচনা করে সব ঠিকঠাক করে নিতে হচ্ছে। এরই মধ্যে অবশ্য অনলাইনে অনেক বিভাগের লাইভ ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। এখানে লাইভ ক্লাসের জন্য আলীবাবার একটা অ্যাপ ব্যবহার করা হয়, নাম ডিংটক। সামনের সপ্তাহ থেকে আমাদেরও লাইভ ক্লাস হবে। জুলাইতে পরীক্ষা। তত দিনে আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে। আবার আমাদের বন্ধুরা ফিরে আসবে। আমরা ক্লাস করব, ক্যাম্পাসের বাইরে ঘুরতে যাব। নির্দ্বিধায় বন্ধুর কাঁধে হাত রাখব। দম নেব বুক ভরে।

চীনের হুঝো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে রয়ে গেছেন, প্রতি দিন দুবার করে মাপা হয় তাঁদের শরীরের তাপমাত্রা। ছবি: রাহাত কবির
চীনের হুঝো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে রয়ে গেছেন, প্রতি দিন দুবার করে মাপা হয় তাঁদের শরীরের তাপমাত্রা। ছবি: রাহাত কবির
এক নতুন অভিজ্ঞতা : মো. মেহেদী হাসান

জানুয়ারির শুরু থেকেই চীনা নববর্ষ উপলক্ষে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল আমার চীনা বন্ধুরা। তখনো জানতাম না, এই ছুটিতে বাড়ি ফেরা হবে আমারও। আমি চীনের শ্যাংডং প্রদেশের ঝাওঝুয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। যন্ত্রকৌশলে (অটোমেশন অ্যান্ড ডিজাইন) স্নাতক করছি। চীনের উহান থেকে করোনা যখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল, তখন আরও অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ফিরে আসি দেশে।

একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এমনিই আমাদের ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার কথা ছিল। করোনার কারণে ছুটি বাড়ানো হয় আরও ১০ দিন। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার শুরু হয়ে গেছে শিক্ষা কার্যক্রম। ২ হাজার কিলোমিটার দূরে বসেও নিয়মিত ক্লাস করছি। অনলাইনে ভিডিওর মাধ্যমে শিক্ষকেরা আমাদের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন। নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতির কারণে আমাদের কোর্সগুলোর পাঠ্যক্রমে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমি যেহেতু প্রকৌশলের ছাত্র, আমাদের পড়ালেখা মূলত ব্যবহারিকনির্ভর। কিন্তু এখন তত্ত্বীয় ক্লাসের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। সব স্বাভাবিক হলে হয়তো ব্যবহারিক ক্লাস করে আমরা ঘাটতিটুকু পুষিয়ে নেব।

চীনা শিক্ষকেরা ক্লাস নিচ্ছেন উই চ্যাট বা কিউকিউয়ের মতো অনলাইন যোগাযোগমাধ্যমে। যেসব শিক্ষক অন্যান্য দেশে আছেন, তাঁরা ক্লাস নিচ্ছেন মেসেঞ্জারে। কিন্তু পড়ালেখার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই। প্রতিটা ক্লাসের আগেই শিক্ষকেরা পিডিএফ-এর মাধ্যমে কী কী পড়ানো হবে, তা পাঠিয়ে দেন। আমরা আগে থেকে প্রস্তুতি রাখি। আবার প্রতিটা পিডিএফ-এর শেষে কিছু বাড়ির কাজ দেওয়া থাকে। অতএব ক্যাম্পাস বন্ধ, কিন্তু আমাদের আসলে ছুটি নেই। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১০ এবং বিকেল ৪টা থেকে ৬টা নিয়ম করে শিক্ষকেরা অনলাইনে থাকেন। এই সময়ে আমরা আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারি। তবে শিক্ষকেরা শুধু যে পড়ালেখার ওপরই জোর দিচ্ছেন, তা নয়। নিয়মিত আমাদের পরিবারের, দেশের খোঁজ নিচ্ছেন। সাহস দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে এটা একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।

এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই ‘গ্লোবাল ভিলেজ’–এর ধারণাটা আরও ভালো করে বুঝতে পারলাম। জানলাম, জরুরি অবস্থায় প্রযুক্তি কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে। মানুষের জীবনে বাধা আসবে, দুর্যোগ আসবে, তবু থেমে থাকলে তো হয় না। এর মধ্য দিয়েই আমাদের তাকাতে হয় সামনের দিকে।

4
বিশ্বের ১৭৩টি দেশের ৩ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এ পর্যন্ত সাড়ে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত মানুষ ও মৃত্যুর হার লাফিয়ে বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ছাড়া অন্য দেশগুলো খুব সফল হয়নি। এরপরও চেষ্টা চলছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ঠেকানোর।

চীন পথ দেখাচ্ছে

গত বছরের ডিসেম্বরের চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে নভেল করোনাভাইরাস বা ‘কোভিড–১৯’। চীনে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আগে গোটা উহান লকডাউন বা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আক্ষরিক অর্থেই চীনের এ শহরের লোকেরা বাসা থেকেও বেরোতে পারেনি। এরপরও রোগটি চীনের অন্যান্য এলাকায় পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়া না ঠেকানো গেলেও অন্যান্য অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই নগণ্য। অর্থাৎ, উহান বন্ধ করে দেওয়ায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকারে আর চীনে ছড়িয়ে পড়েনি।

চীন গোটা উহানকে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করেছে। এ জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সাধারণ মানুষও যোগ দিয়েছে।


করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে ১০ দিনের মধ্যে বিশেষায়িত হাসপাতাল বানানো হয়েছে। এ ছাড়া চীনের বহু হোটেলকে অস্থায়ী হাসপাতাল বানানো হয়েছে। সেখানকার মানুষকে গণহারে পরীক্ষা করা হয়েছে।


গত জানুয়ারি মাসে চীন উহান শহরকে কার্যকরভাবে অবরুদ্ধ করে এবং এর ১ কোটি ১১ লাখ জনসংখ্যাকে কোয়ারেন্টিনে পাঠায়। এই প্রক্রিয়া পরে অনুসরণ করা হয় পুরো হুবেই প্রদেশের জন্য। পাঁচ কোটি মানুষকে গণ-আইসোলেশনে পাঠায়। ৪২ হাজার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হুবেই প্রদেশে পাঠানো হয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য। এ সময় ৩ হাজার ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হন এবং ১৩ জন মারা যান।

এ সময় চীনের ব্যাপক মানুষ মাস্ক পরতে শুরু করে। চীন এ সময় প্রতিদিন ১৬ লাখ মাস্ক উৎপাদন করেছে। পরিস্থিতির ভিত্তিতে ‘সবুজ’, ‘হলুদ’ ও ‘লাল’ চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নাগরিকদের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। অনেকে জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়ার সময় এসব এলাকা এড়িয়ে গেছেন।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির এসব ব্যবস্থা নেওয়ায় ৮১ হাজার ৪৫৪ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছে ৩ হাজার ২৭৪। ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭২ হাজার ৮১৭ জন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী হাসপাতালগুলো। চীন এখন সারা দুনিয়ার বহু দেশে অভিজ্ঞ চিকিৎসক, করোনা শনাক্তকরণ কিট, মাস্কসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে।

আর সে কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মোকাবিলায় চীন আশার আলো দেখাচ্ছে। অর্থাৎ চীনা পথে করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করার ওপর জোর দিচ্ছেন সারা দুনিয়ার বিশেষজ্ঞরা।

করুণ অবস্থা ইতালির
এ পর্যন্ত সব থেকে বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ইতালিতে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হিসাবমতে, ইতালিতে এখন পর্যন্ত ৫৯ হাজার ১৩৮ জন আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে মারা গেছে ৫ হাজার ৪৭৬ জন। ১২ মার্চ থেকে ইতালির সরকার বেশির ভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে। এরপরও থামছে না মৃত্যুর মিছিল।

লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার একটি কারণ হতে পারে দেশটির জনসংখ্যায় প্রবীণদের সংখ্যাধিক্য। নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতালির বাসিন্দাদের প্রায় ২৩ শতাংশের বয়স ৬৫ বা তার বেশি। দেশটিতে বসবাসরত মাঝবয়সী জনসংখ্যা ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ। দ্য লোকাল–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতালিতে যারা এই সংক্রমণে মারা গেছে, তাদের বেশির ভাগের বয়স ৮০ থেকে ৯০।

মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেক ব্যক্তি ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা ক্যানসারে ভুগছিলেন। অনেকে আবার ধূমপান করতেন। সেই কারণেই তাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গিয়েছিল।
চীন ইতিমধ্যে ইতালির জন্য পরীক্ষার কিট, মাস্ক, ওষুধ, চিকিৎসকসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি পাঠিয়েছে। আজ সোমবার রাশিয়া বড় আকারে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও চিকিৎসক পাঠিয়েছে ইতালিতে।
ইতালিতেও ভালো খবর আছে। সেই ভালো খবরের নাম হলো ইতালির ছোট্ট শহর ভো। এ শহরে সব বাসিন্দাকে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করার পর দারুণ সফলতা পেয়েছে। শহরটিতে এখন সংক্রমণের সংখ্যা শূন্যে নেমে এসেছে।
ইতালির ইউনিভার্সিটি অব পাদুয়ার অণুজীববিজ্ঞানের অধ্যাপক আন্দ্রেয়া ক্রিসান্তি এবিসির দ্য ওয়ার্ল্ড টুডেকে বলেন, ‘আমরা সবাইকে পরীক্ষা করেছি। তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করি।’ তিনি আরও জানান, মোট বাসিন্দার ৩ শতাংশ (৮৯ জন) মানুষের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। কোনো লক্ষণ নেই, এমন মানুষের শরীরেও করোনা শনাক্ত করা হয়। বিষয়টি গবেষকদের জন্য ছিল খুবই উদ্বেগের। ভো শহরে সংক্রমণ শূন্যে নেমে এসেছে। সব নাগরিকের করোনা পরীক্ষার পর মেলে এই সফলতা।


ইরানের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ
ইরানে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২১ হাজার ৬৩৮ জন। করোনাভাইরাসে মারা গেছে ১ হাজার ৬৮৫ জন। ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, দেশটিতে ঠিক কত পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, তার সঠিক তথ্য নেই।
বিশ্বে যেসব দেশে করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে, তার মধ্যে ইরান অন্যতম। ইরানের জনগণের মধ্যে প্রবল ধারণা, ইরানের সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এর বড় কারণ হলো, ইরানের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২১ ফেব্রুয়ারি। এ নির্বাচনের আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সরকার মুখ খোলেনি। বিপুল মানুষ নির্বাচনে ভোট দিতে এসে ও প্রচারণায় যোগ দিয়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশটির সরকারের একজন উপদেষ্টা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
ইরানে ফেব্রুয়ারি মাসে দুটি বড় ঘটনা ঘটে যায়। একটি ইসলামিক অভ্যুত্থানের ৪১ বছর পূর্তি, অন্যটি দেশটির সংসদ নির্বাচন। ১১ ফেব্রুয়ারি ইরানের বিজয় দিবস। এর কিছুদিন আগেই ইরানে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

পরীক্ষা, পরীক্ষা ও পরীক্ষার নীতি নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রথমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এরপরই দেশটি নাটকীয়ভাবে করোনাভাইরাসকে আটকে দিতে সমর্থ হয়। এর কারণ হলো, ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা। উপসর্গ দেখা দিক বা না দিক, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার দেশটির নাগরিকদের পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এখন পর্যন্ত দেশটি ২ লাখ ৯০ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করে ফেলেছে। প্রতিদিন দেশটি বিনা মূল্যে ১০ হাজার লোকের পরীক্ষা করছে।

এ ব্যাপারে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের সংক্রামক রোগের উদ্ভব বিষয়ের অধ্যাপক ওই ইং ইয়ং বলেছেন, তাঁরা (দক্ষিণ কোরিয়া) যেভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং লোকজনকে পরীক্ষা করেছে, তা উল্লেখ করার মতো।

অধ্যাপক প্যানগেস্তো জানান, কিছু দেশে পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট কিট নেই। তিনি বলেন, ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করার বিষয়টি এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেতে হবে। উপসর্গ রয়েছে, কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়নি এবং এখনো ভাইরাস ছড়াচ্ছেন, এমন ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা আরও বেশি জরুরি। এ কারণে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ৯৬১ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ রোগে মারা গেছেন ১১১ জন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৩ হাজার ১৬৬ জন।

জার্মানি
জার্মানিতে পাঁচ ফুট দূরত্বের মধ্যে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল কোরান্টিনে। কারণ, ৬৫ বছর বয়সী ম্যার্কেল ভাইরাসে আক্রান্ত একজন চিকিৎসকের সংস্পর্শে এসেছিলেন। দেশটির সরকার স্কুল এবং অনেক ব্যবসা, জনসমাগমস্থল বন্ধ করেছে। দেশটিতে ২৪ হাজার ৮৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ৯৪ জন।

যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার ২২৪। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৪৭১ জন। এর মধ্যে সর্বাধিক মারা গেছে দেশটির নিউইয়র্ক শহরে ৯৯ জন। ব্যাপকভাবে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশটির মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


জাপানের ওষুধ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে
জাপানে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১০১ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৪১ জন। জাপান ভাইরাসটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়া থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে।
অন্যদিকে চীনের চিকিৎসা কর্মকর্তারা বলেছেন, জাপানে ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হওয়া একটি ওষুধ করোনার চিকিৎসায় ব্যবহার করে তারা সফলতা পেয়েছে। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ঝ্যাং সিনমিন সাংবাদিকদের বলেছেন, ফাভিপিরাভির নামের ওই ওষুধ প্রস্তুত করেছে জাপানের বহুজাতিক কোম্পানি ফুজিফিল্মের সহযোগী ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টয়ামা কেমিক্যাল। এটি একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ। ওষুধটি চীনের উহান ও শেনজেন এলাকার ৩৪০ জন করোনা সংক্রমিত রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়। এতে ব্যাপক ও কার্যকর সফলতা পাওয়া গেছে।

জাপানের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে এক খবরে জানায়, যে রোগীদের ওপর ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়েছে, তারা গড়ে চার দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে। যেখানে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া অন্য রোগীদের সেরে উঠতে সময় লেগেছে ১১ দিন। এ ছাড়া রোগীদের বুকের এক্স-রের মাধ্যমে জানা গেছে, যেসব রোগীর শরীরে ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের ফুসফুসের অবস্থা ৯১ শতাংশ উন্নতি হয়েছে। যাদের ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়নি, তাদের ওই সময়ে ফুসফুসের উন্নতি ঘটেছে ৬২ শতাংশ।

5
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করার জন্য সোশ্যাল ডিসট্যান্স বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব ব্যাপারটা কী?

এটা হলো নিজের বাসায় থাকা, ভিড়ে না যাওয়া, একজন আরেকজনকে স্পর্শ না করা


১. আমি কি বাজার করতে যেতে পারব?

হ্যাঁ। নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে যেতে পারেন। কম যাবেন। যাবেন তখন, যখন কম লোক থাকে বাজারে। সেখানে যাবেন, যেখানে কম ভিড় থাকে। মোটকথা ভিড় এড়িয়ে চলুন।
বাজার থেকে বের হয়েই হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন। এসেই ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেবেন। তরকারি ফল ধুয়ে নেবেন। বক্স নাড়ার পরই হাত ধোবেন।
খাবার কিনে মজুত করবেন না। খাদ্যশস্য কম পড়ার কোনো কারণ ঘটেনি।

২. আমি কি খাবার অর্ডার দিয়ে বাসায় এনে খেতে পারব?

হ্যাঁ। খাদ্য থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর কথা শোনা যায়নি। তবে যে প্যাকেটে খাবার আনা হবে, সেটা ধরার পর হাত ধুয়ে নিতে হবে। আর কাঁচা সালাদ ফল বাইরে থেকে নিশ্চয়ই আনাবেন না। আর যিনি খাবার নিয়ে আসবেন, তাঁকে বলবেন খাবার দরজার বাইরে রেখে দিতে। দাম ও টিপস দেবেন অনলাইনে। (আমাদের দেশে এটা কীভাবে হবে, আমি জানি না।)

৩. আমি কি গণপরিবহন বাস, ট্রেন ব্যবহার করব?

যদি পারেন, গণপরিবহন এড়িয়ে চলুন। তা না হলে সঙ্গে করে স্যানিটাইজার নিয়ে যান। হাতল ধরার পরেই হাত পরিষ্কার করুন। নামার সঙ্গে সঙ্গে হাত পরিষ্কার করুন।

৪. অফিস তো ছুটি দিচ্ছে না। কী করব?

যতটা সম্ভব সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং করুন। দরকার হলে, মাস্ক ব্যবহার করুন।

৫. আমি কি সব জায়গায় যেতে পারব?

আপনি যতটা পারেন, বাসায় থাকুন। হাসপাতালে, বাজারসদাই করতে যেতে হতেই পারে। সিনেমা, থিয়েটার, প্রার্থনাগৃহ, জাদুঘর—সব বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এসব জায়গায় ভবিষ্যতে যাওয়া যাবে। এখন না।

৬. আমি কি ভ্রমণ করতে পারব?

না। আপনার এখন ভ্রমণ, দেশের ভেতরে বা বাইরে, করা নিষেধ। বাস, ট্রেন, প্লেন, জাহাজ, লঞ্চ লোকে ভরা থাকে। তবে যাঁদের কাজই ভ্রমণসংক্রান্ত, যেমন এয়ারলাইনসের ক্রু, ট্রেনের চালক, তাঁদের কথা আলাদা।

৭. আমি কি মাস্ক পরে থাকব?

সম্ভবত নয়। মাস্ক রোগীদের হাঁচি–কাশির ছিটা বাইরে যেতে দেয় না। কিন্তু বাইরের ভাইরাস আপনার নাকেমুখে প্রবেশ ঠেকাতে পারে না। আপনার নিজের হাঁচি–কাশি থাকলে দয়া করে বাইরে বের হবেন না।

৮. আমি কি ব্যায়াম করব?

হ্যাঁ। ঘরে। ঘরের বাইরে ফাঁকা জায়গায়। কিন্তু জিমে নয়।

৯. আমি কি চিকিৎসকের কাছে যেতে পারব?

খুব বেশি দরকার না হলে নয়। করোনাভাইরাস সন্দেহ হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রথমে ফোনে যোগাযোগ করবেন।

১০. রোগী দেখতে যাব?
না।

১১. আমি কি প্রবীণ স্বজন-পরিজনদের দেখতে যাব?

না। ফোনে খোঁজ নিন। বাজারসদাই লাগলে সাহায্য করুন।

১২. আমার বন্ধুরা কি আমার কাছে আসতে পারবে?

না। ফোনে কথা বলুন। ভিডিও চ্যাট করুন।

১৩. বাচ্চারা কি খেলতে পারবে?

বাইরে একা একা? হ্যাঁ। বাইরে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে? না। বাইরের বাচ্চাদের সঙ্গে নয়। কারণ, তারা পরস্পরকে ধরে ফেলবে। হাত ধোয়ার নিয়ম ভুলে যেতে পারে। স্লাইড ইত্যাদি কারও সঙ্গে ব্যবহার করা যাবে না। কাজেই পার্কেও নিয়ে যাওয়া যাবে না।

১৪. আমি কি আমার সন্তানের কাছে যেতে পারব?

হ্যাঁ। সাধারণভাবে হ্যাঁ। তবে যদি আপনি মনে করেন দুজনের একজন এরই মধ্যে সংক্রমিত হয়ে আছে, তাহলে দূরত্ব বজায় রাখুন।

১৫. আমার রুমমেট হাসপাতালে চাকরি করেন। আমি কি তাঁর থেকে দূরে থাকব?

হ্যাঁ।

১৬. কত দিন এই রকম সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং করতে হবে?

সম্ভবত কমপক্ষে পাঁচ মাস। পরে আবারও করতে হতে পারে। এটা একেবারে সেরে যাবে না সহসা। ঢেউয়ের মতো আসতে থাকবে।

6
Life Science / অফিসের কাজে হলে ভুল...
« on: March 14, 2020, 09:04:52 AM »


হয়তো অফিসের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ই-মেইল পাঠাচ্ছেন। অথচ অ্যাটাচমেন্টে অতি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ফাইল যোগ না করেই ‘সেন্ড’ করে দিলেন। এর পরের অবস্থা কল্পনা করা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু ভাবতে গিয়ে গা একটু শিরশির করে!

অফিসে ভুল হওয়া খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। কাজ করলে টুকটাক ভুল হবেই। তবে কখনো কখনো ভুল খুব বড় হয়ে গেলে তা নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। এমনকি চাকরি নিয়েও টানাটানি হতে পারে। তাই কাজে ভুল হওয়ার পর আপনি কীভাবে তা সামাল দেবেন, তার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।


কর্মক্ষেত্রে ভুল ব্যক্তিগত জীবনেও প্রভাব ফেলে। বেশির ভাগ সময়ই নিজের আত্মপরিচয় বা নিজের কাছে নিজের যে ভাবমূর্তি থাকে, সেটি শঙ্কায় পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাককম্বস স্কুল অব বিজনেসের সেন্টার ফর লিডারশিপ এক্সিলেন্সের সহপরিচালক ক্যারোলিন বারটেল এবং রস স্কুল অব বিজনেসের সেন্টার ফর পজিটিভ অর্গানাইজেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা জেন ডাটন এ বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁদের মতে, কর্মক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষ নিজের একটি ভাবমূর্তি গড়ে তোলেন। সহকর্মীদের কাছেও সবাই নিজের একটি নির্দিষ্ট ও আদর্শ ‘চেহারা’ সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু কাজে বড় ধরনের ভুল হলে তা ভেঙে পড়ে। এতে নিজের আত্মবিশ্বাসে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি দেখা দেয়।

জাপানের আকিও মোরিতার নাম শুনেছেন? গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তিনি প্রথম রাইসকুকার বানিয়েছিলেন। সেই রাইসকুকারে চাল ভালোমতো সেদ্ধ হওয়ার বদলে পুড়ে কড়কড়ে হয়ে যেত। প্রথম দিককার সেসব রাইসকুকার তাই বাজারে পাত্তাও পায়নি। ওই ভুল করার পর কিন্তু আকিও মোরিতা থেমে যাননি। বরং দ্বিগুণ উৎসাহে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। সেই পরিশ্রমের ফলও মিলেছে। আজও আছে আকিও মোরিতার ওই ‘ছোট্ট’ কোম্পানি, নাম ‘সনি’!

মোদ্দা কথা হলো আপনার ভুল হতেই পারে, আপনি একাধিকবার ব্যর্থ হতেই পারেন। কিন্তু চেষ্টা থামিয়ে দিলে চলবে না। কারণ, শুধু এর মাধ্যমেই ভুল শোধরানো যায়। এবার আসুন দেখে নেওয়া যাক অফিসের কাজে ভুল হলে কী করা যেতে পারে।

১. একটু যাতনা, মন্দ না

ইচ্ছে করে কেউ ভুল করে না। কিন্তু ভুলের পর মানসিক যাতনা হতেই পারে। ওই আফসোস বা আক্ষেপ অনুভবে বাধা দেওয়ার দরকার নেই। স্বাভাবিকভাবেই কাজে ভুল হলে হতাশা আসবে, লজ্জাবোধও হবে। তবে এ নিয়ে মাথা কুটে মরার অর্থ নেই। সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড অনুতাপে ভুগতে পারেন। এরপর সেই নেতিবাচক ভাবনা মন থেকে বের করে দিন। বেশি নেতিবাচক হলে আর ভুল শোধরানো হবে না। তাই আবেগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে, ইতিবাচকভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। মন থেকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন ভুলের বিষয়টি। এরপর ভাবুন ভবিষ্যৎ নিয়ে।

২. দায় নিন

নিজের ভুল স্বীকার করে নেওয়া দোষের কিছু নয়। কাজে ভুল হলে বসের সামনে সরাসরি বলে দিন, ‘আমি ভুল করেছি’ বা ‘আমার কাজটি ঠিক হয়নি’। কোনো অজুহাত দেওয়ার চেষ্টা না করাই ভালো। এতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আরও অসন্তুষ্ট হতে পারেন। ভুলের বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত। তবে ক্ষমা চাইতে গিয়ে আবার বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই। পুরো বিষয়টি হতে হবে সংক্ষিপ্ত।

৩. কী করবেন, ঠিক করুন

ভুল করলেন, স্বীকারও করলেন। এবার ভুল শোধরানোর উপায় খুঁজুন। আপনার ভুলের কারণে প্রতিষ্ঠান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আপনাকেই করতে হবে। শুরুতেই নিজে একটি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করুন। এ ক্ষেত্রে বস ও সহকর্মীদের পরামর্শও নিতে পারেন। আপনার ভুলের কারণে হওয়া প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষতি প্রশমনের চেষ্টা করুন। যদি আংশিকও সফল হন, তবে সেটিও আপনার সাফল্য। এতেই আপনার মনোযন্ত্রণার উপশম হবে।

৪. ভুল এড়াতে কী করবেন, তা জানান

ভবিষ্যতে যেন কাজে ভজকট না হয়, তার জন্য কী করতে চাইছেন, তা ঊর্ধ্বতনদের জানান। ভুল থেকে কী শিখলেন, তা জানাতেও ভুলবেন না। এতে করে কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার ভাবমূর্তি ইতিবাচক হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে আপনার দক্ষতাও বাড়বে। হয়তো এতে তাৎক্ষণিক ফল মিলবে না, কিন্তু এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।

৫. নিজের যত্ন নিন

শরীরের সুস্থতার সঙ্গে নৈপুণ্যের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। শরীর সুস্থ না থাকলে কাজেও মন বসবে না। আর মনোযোগ না থাকলে কাজে ভুল হবে হরদম। তাই ঘুম ঠিকমতো হওয়া, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা—এসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখুন। মন প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করুন। পেশাগত হতাশাকে ব্যক্তিজীবনে ঢুকতে দেবেন না। এভাবে শরীর-মন সুস্থ রাখতে পারলে কাজে ভুলের পরিমাণও কমে আসবে।

7
সেই আদিকাল থেকে মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলছে যে ক্ষুদ্র দানব, তার নাম ‘ভাইরাস’। লাতিন শব্দ ‘ভাইরাস’–এর অর্থ ‘বিষ’। আবার মানুষ এই ‘বিষ’কে মানবকল্যাণেও কাজে লাগাচ্ছে ইদানীং। তবে এটা নিশ্চিত যে এই ভয়ংকর ক্ষুদ্র দানবদের পুরোপুরি আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপে বন্দী করতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

অতি ক্ষুদ্র ভাইরাসের আছে ভয়ংকর মারণ ক্ষমতা। শুধু বিশ শতকেই গুটিবসন্ত প্রাণ কেড়ে নিয়েছে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের। প্রথম কে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তা জানা না গেলেও এ পৃথিবীর সর্বশেষ আক্রান্ত ব্যক্তিটি ছিলেন আমাদের বাংলাদেশের রহিমা বানু। বর্তমানে এই দানবটিকে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। আরেকটি বিভীষিকার নাম স্প্যানিশ ফ্লু। ১৯১৮ থেকে ১৯১৯ সালের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণে প্রাণ হারায় পাঁচ থেকে দশ কোটি মানুষ, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় তিন শতাংশ।


পৃথিবীতে জানা-অজানা বহু ভাইরাস আছে। এর মধ্যে ছয়টি ভাইরাসকে সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সে ছয়টি ভাইরাসের সঙ্গে ইদানীং যোগ হয়েছে করোনাভাইরাস।

প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটে কর্মরত বিজ্ঞানীরা। ছবি: লেখক
প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটে কর্মরত বিজ্ঞানীরা। ছবি: লেখক
ইবোলা ভাইরাস
এ পর্যন্ত ঘাতক ভাইরাসের শীর্ষে আছে ইবোলা ভাইরাস। এখন পর্যন্ত এর ছয়টি প্রকরণ শনাক্ত করা গেছে। প্রকরণভেদে ইবোলা ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর হার ২৫ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশের বেশি হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনতে পারলে তাকে বাঁচানো সম্ভব। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রথম দেখা যায় ১৯৭৬ সালে। একই সঙ্গে নাইজার, সুদান, ইয়াম্বুকু ও রিপাবলিকান কঙ্গোতে। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালে ইবোলা মহামারিতে আফ্রিকার পশ্চিমাংশের দেশগুলোতে ১১ হাজার ৩৩৩ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ২০১৯ সালে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ইবোলা ভাইরাসে ২ হাজার ৯০৯ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় এবং এদের মধ্যে ১ হাজার ৯৫৩ জন প্রাণ হারায়। আজ পর্যন্ত এ ভাইরাসের কোনো কার্যকর প্রতিষেধক তৈরি করা যায়নি। ইবোলা ভাইরাস সংক্রামিত মানুষের রক্ত, লালা বা যেকোনো নিঃসৃত রস থেকে কিংবা শরীরের ক্ষতস্থানের মাধ্যমে অপরের শরীরে সংক্রামিত হয়ে থাকে।

রেবিজ ভাইরাসের থ্রিডি ছবি। ছবি: উইকিপিডিয়া
রেবিজ ভাইরাসের থ্রিডি ছবি। ছবি: উইকিপিডিয়া
রেবিজ ভাইরাস
রেবিজ ভাইরাস নিউরোট্রপিক অর্থাৎ এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। এ ভাইরাসের সংক্রমণে যে রোগটি হয়, তার নাম জলাতঙ্ক। প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবছর পুরো পৃথিবীতে জলাতঙ্কের আক্রমণে প্রাণ হারায় ৫৯ হাজার মানুষ। সংক্রামিত প্রাণীর লালায় রেবিজ বা জলাতঙ্ক রোগের ভাইরাস বিচরণ করে। সেসব প্রাণী মানুষকে কামড়ালে মানুষ সংক্রামিত হয়। কার্যকর ভ্যাকসিন থাকা সত্ত্বেও আক্রান্ত ব্যক্তিকে সময়মতো ভ্যাকসিন না দেওয়ার কারণে জলাতঙ্কের আতঙ্ক থেকে এখনো মুক্ত হওয়া যাচ্ছে না।

ভাইরাসটি সরাসরি মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে এবং এর স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে। সময়মতো টিকা না দিতে পারলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু অবধারিত। মস্তিষ্কে রেবিজ ভাইরাস যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখনই রেবিজের লক্ষণগুলো দেখা দিতে থাকে। লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে তীব্র খিঁচুনি ও পক্ষাঘাতে রোগীর মৃত্যু হয়।

এইচ৫এন১ ভাইরাসের একটি সাব টাইপ এইচ১এন১। ছবি: উইকিপিডিয়া
এইচ৫এন১ ভাইরাসের একটি সাব টাইপ এইচ১এন১। ছবি: উইকিপিডিয়া
এইচ৫ এন ১ (H5 N1) রূপান্তরিত এবং মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
এই ভাইরাসটি মিউট্যান্ট। ডাচ ভাইরোলজিস্ট রন ফুচিয়ে গবেষণাগারে বার্ড ফ্লু ভাইরাসকে রূপান্তরিত করেন। এ ভাইরাসটি মারাত্মক সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ভীষণ বিপজ্জনক বিধায় ২০১১ সালে আমেরিকান বায়োসফটি এজেন্সি (এনএসএবিবি) এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা ও প্রকাশনার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। গবেষকেরা আশ্বস্ত করেছেন, এই দানব ভাইরাসটির স্থান হয়েছে গবেষণাগারের অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রকোষ্ঠে। সেখান থেকে পালানোর কোনো পথ খোলা নেই। এমনিতেই সাধারণ বার্ড ফ্লু ভাইরাসের মারণ ক্ষমতা ৬০ শতাংশের ওপরে। এরপরও উচ্চ মারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ ভাইরাসটি নিজে থেকেই ভোল পাল্টাতে অর্থাৎ রূপান্তরিত হতে পারে। সে জন্য এটি নিয়ে বিশেজ্ঞরা বিশেষ বেকায়দায় আছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ২ লাখ ৯০ হাজার থেকে সাড়ে ৬ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা দায়ী। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে এই মৌসুমে তিন কোটির বেশি মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েছে এবং কমপক্ষে ১৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এ ভাইরাসে ফ্রান্সে ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে প্রাণ হারিয়েছে ৮ হাজার ১০০ জন।

মারবুর্গ ভাইরাস নিউক্লিয়োক্যাপসিডের ক্রিও ইএম পুনর্নির্মাণ। ছবি: উইকিপিডিয়া
মারবুর্গ ভাইরাস নিউক্লিয়োক্যাপসিডের ক্রিও ইএম পুনর্নির্মাণ। ছবি: উইকিপিডিয়া
মারবুর্গ
জার্মানির একটি শহরের নামে এই ফিলোভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে। যদিও এটি ইবোলা ভাইরাসের চেয়ে কম মারাত্মক। তবে এ দুটি ভাইরাসের অনেক মিল আছে। উচ্চ মারণক্ষমতা অর্থাৎ প্রায় ৮০ শতাংশ আক্রান্ত মানুষ এ ভাইরাসে মারা যায়। মারবুর্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পঞ্চম বা সপ্তম দিনে সংক্রামিত ব্যক্তির প্রচণ্ড জ্বর এবং সেই সঙ্গে রক্তবমি, মলের সঙ্গে রক্ত, নাক, দাঁতের মাড়ি এবং যোনিপথে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহ অসুস্থতার পরে পুরুষদের মধ্যে অর্কিটিস নামক অণ্ডকোষের প্রদাহও দেখা দিতে পারে। আশার কথা, এ ভাইরাস খুব সহজে সংক্রামিত হয় না। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে খুব বেশি মেলামেশার কারণে তার মল, প্রস্রাব, লালা বা বমির মাধ্যমে মারবুর্গ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।

একটি টিইএম মাইক্রোগ্রাফে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাস। ছবি: উইকিপিডিয়া।
একটি টিইএম মাইক্রোগ্রাফে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাস। ছবি: উইকিপিডিয়া।
ডেঙ্গু
ডেঙ্গুর আরেকটি নাম আছে, তা হলো ‘ট্রপিক্যাল ফ্লু’। এডিস মশার কামড় দ্বারা সংক্রামিত হয় ডেঙ্গু। অন্যান্য ভাইরাসের চেয়ে কম বিপজ্জনক। ডেঙ্গু ভাইরাস সাম্প্রতিককালে ইউরোপেও হানা দিয়েছে। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ১৪১টি দেশে আনুমানিক ৩৯ কোটি ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ডেঙ্গু জ্বরে প্রায় পাঁচ লাখ ব্যক্তি মারাত্মক রক্তক্ষরণকারী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে প্রাণ হারায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ এবং কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

এইচআইভি ভাইরাসের ডায়াগ্রাম। ছবি: উইকিপিডিয়া।
এইচআইভি ভাইরাসের ডায়াগ্রাম। ছবি: উইকিপিডিয়া।
এইচআইভি বা এইডস ভাইরাস
এই ভাইরাসটি পোষক কোষে আট থেকে দশ বছর পর্যন্ত ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। সক্রিয় হয়ে উঠলে পোষক দেহের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিকল করে দিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, এইডস মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে সাত কোটি মানুষ এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ এইচআইভিতে মারা গেছে।

১০ মার্চ ২০২০, ব্রিটিশ মেডিকেল বৈজ্ঞানিক জার্নাল The Lancet খবর দিয়েছে, এইডসে আক্রান্ত একজন ব্রিটিশ ব্যক্তির অস্থি–মজ্জা–কোষ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তাকে পুরোপুরি সরিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। তিনি হচ্ছেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যাকে এইডসের কবল থেকে মুক্ত করা গেছে। এইডসের মোকাবিলায় এটি একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
নভেল করোনা (Covid-19)
ইদানীং যে ভাইরাসটি সারা বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে, তা হলো করোনাভাইরাসের একটি প্রকরণ নভেল করোনা (Covid-19)। এ পর্যন্ত যে তথ্য আমাদের হাতে আছে, তাতে দেখা যায়, এ ভাইরাসে আক্রান্ত ১০০ জনে প্রাণ হারিয়েছে ৪ জনের কম ব্যক্তি এবং অর্ধেকের বেশি ইতিমধ্যে সেরে উঠেছে। করোনা নামের ভাইরাসের নতুন রূপটি এখনো পুরোপুরি উন্মোচন করেনি। বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন এর মতিগতি বুঝতে এবং উঠেপড়ে লেগেছেন এর প্রতিষেধক উদ্ভাবনের। এ ব্যাপারে প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা অচিরেই বিশ্ববাসীকে সুখবর দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

8
এলিজাবেথ স্নাইডার থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে। নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তা থেকে ধীরে ধীরে সেরেও উঠেছেন। সম্প্রতি এই সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার গল্প তিনি সবাইকে শুনিয়েছেন। এলিজাবেথ আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি, সেরেও উঠেছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলিজাবেথ স্নাইডার নামের এই নারী পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন জৈবপ্রকৌশল বিষয়ে। ৩৭ বছর বয়সী এলিজাবেথ একটি পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন গত ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখে। এর পর পরই তাঁর মধ্যে ফ্লু-এর লক্ষণ দেখা দেয়। সেটা ছিল ২৫ ফেব্রুয়ারি। পরে দেখা যায়, ওই পার্টিতে অংশ নেওয়া আরও ৫ জনের মধ্যে ফ্লু-এর লক্ষণ দেখা দিয়েছে।

ওই সময়কার অবস্থা জানাতে গিয়ে এলিজাবেথ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমি ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই খুব ক্লান্তবোধ করছিলাম। কিন্তু এটি অন্যান্য দিনের চেয়ে ভিন্ন ছিল না। সাধারণভাবে ঘুম থেকে উঠে কাজে যাওয়ার সময় আপনার যেমন ক্লান্তবোধ হয়, ঠিক তেমনটাই ছিল। যেহেতু এর আগের সপ্তাহেই আমি কাজে খুব ব্যস্ত ছিলাম, তাই ক্লান্তবোধ হওয়া আমার জন্য আশ্চর্যজনক ছিল না।’


সে দিনের মাঝামাঝি এলিজাবেথের মাথাব্যথা হতে থাকে। জ্বর আসে এবং সারা শরীরে ব্যথা শুরু হয়। এ কারণে সঙ্গে সঙ্গে তিনি অফিস ছেড়ে বাড়ি ফেরেন। বাসায় এসে কিছুটা ঘুমানোর পর এলিজাবেথ বুঝতে পারেন যে, তাঁর গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে অনেক। থার্মোমিটারে ওঠে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট।


এলিজাবেথ বলেন, ‘ঠিক ওই সময়টায়, আমার শরীর প্রচণ্ডভাবে কাঁপতে শুরু করে।’ ওই সময় একবার হাসপাতালে যাওয়ার কথাও ভেবেছিলেন তিনি। কিন্তু হাসপাতালে আর যেতে হয়নি। দিন কয়েকের মধ্যেই তাঁর জ্বর কমে আসে।

এরই মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের খবরাখবর পাচ্ছিলেন এলিজাবেথ। কারণ গত জানুয়ারির শেষের দিকেই যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিল। এর পর তা রাজ্যজুড়েই ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ওয়াশিংটনে ২৬০ জনেরও বেশি মানুষ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এ রোগে দুই ডজনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।

তবে এলিজাবেথের কাশি ও শ্বাসকষ্ট ছিল না। তাই তিনি ভেবেছিলেন, করোনা বোধ হয় ধরেনি। চিকিৎসক বলেছিলেন, সাধারণ জ্বর হলে যা করার তাই করতে। অর্থাৎ বাসায় বিশ্রাম নেওয়া, বেশি করে পানি পান করা ইত্যাদি।

কিন্তু কিছুদিন পর এলিজাবেথ জানতে পারেন, যে পার্টিতে গিয়েছিলেন, সেখানে অংশ নেওয়া বেশ কয়েক জনের মধ্যে ঠিক একইরকম লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তখনই এলিজাবেথ স্নাইডারের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধে। ফ্লু সংশ্লিষ্ট একটি গবেষণা কর্মসূচিতে তিনি যুক্ত হন এবং ৭ মার্চ জানতে পারেন যে, তিনি নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এলিজাবেথ বলেন, ‘আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। কারণ আমি ভেবেছিলাম যে, এটি স্বাভাবিক জ্বর ছিল। লক্ষণও তেমনই ছিল। আমার মা খুব ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলেন এই খবরে।’

কিন্তু সাহস হারাননি এলিজাবেথ। তত দিনে ফ্লু-এর বিভিন্ন লক্ষণও কমতে শুরু করেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা খবর পেয়ে তাঁকে ৭ দিন ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেসব তিনি মেনে চলছেন।

বর্তমানে ভালোই আছেন এলিজাবেথ স্নাইডার। সবার প্রতি এলিজাবেথের বার্তা, ‘যদি মনে করেন যে, এই রোগ হয়েছে, তবে দ্রুত পরীক্ষা করান। যদি লক্ষণ প্রাণসংহারী না হয়, তবে স্রেফ বাসায় থাকুন। কিছু প্রতিরক্ষামূলক সাধারণ ওষুধ খান। প্রচুর পানি পান করতে হবে, বিশ্রাম নিতে হবে। প্রয়োজনে সময় কাটাতে টিভি শো দেখুন। আতঙ্কিত হবেন না।’

9
অলইনওয়ান ওয়েবভিত্তিক নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্ম জেডকেবায়োসিকিউরিটি উন্মুক্ত করেছে চীনের বায়োমেট্রিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান জেডকেটেকো। সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্টের ছোঁয়ায় সহজ নিরাপত্তাসেবা হিসেবে ভি৫০০ মডেলের ওয়েব সেবাটি এখন দেশের বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে।

নতুন সফটওয়্যারটিতে আছে একাধিক ইন্টিগ্রেটেড মডিউল। এর মধ্যে অ্যাকসেস কন্ট্রোল, টাইম অ্যাটেনডেন্স,এলিভেটর কন্ট্রোল, ভিজিটর ম্যানেজমেন্ট, পার্কিং, ক্যামেরা ম্যানেজমেন্ট, ভিডিও লিংকেজসহ নানা সেবা পাওয়া যাবে। ব্যবহারকারীর জন্য প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী ভিজ্যুয়াল ডেটা প্রেজেন্টেশন অ্যানালাইসিস ফাংশন দেখার সুযোগ আছে। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে যেকোনো বড় প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম অনুযায়ী নিরাপত্তা ইনটেলিজেন্স তথ্য পাওয়া সম্ভব।


জেডকেটোর তথ্য অনুযায়ী, জেডকেবায়োসিকিউরিটিতে নতুন মাইক্রোসার্ভিস মাল্টিপয়েন্ট ডিসট্রিবিউটেড ডেপ্লয়মেন্ট আর্কিটেকচার ও উন্নত ডেটাবেইস ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ব্রাউজার ও সিস্টেম সক্ষমতাও উন্নত হয়েছে। জেডকেবায়োসিকিউরিটিতে সব ফেসকিয়স্ক আন্তসংযোগ থাকায় হালনাগাদ মডিউল দিয়ে তা ব্যবস্থাপনা করা যায়। এতে ডিভাইসে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের সুযোগও তৈরি হয়। এ ছাড়া অন্য অ্যাড অন ফিচার যুক্ত করে সহজ ও ব্যবহারবান্ধব বায়োমেট্রিক অ্যাকসেস কন্ট্রোল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে উন্নত ও নিরাপদ ডেটা স্থানান্তর, হাজিরার হিসাব রাখা যায়।

10
দেশে নতুন করোনাভাইরাসটি ঢোকার খবর জানা গেল গত রোববার। তারপর ঢাকার দোকানগুলো থেকে সাবানের বিকল্প বলে পরিচিতি পাওয়া স্যানিটাইজার নিমেষে উধাও। সেই ইস্তক রাস্তাঘাটে মানুষের মুখে মাস্কও যেন বেশি চোখে পড়ছে।

ফেসবুকে আতঙ্ক, পরামর্শ আর গুজবের ছড়াছড়ি। কিন্তু সতর্কতার সঠিক পরামর্শগুলো মানুষজন জানছে বা মানছে কি? এই কৌতূহল থেকে গত সোম-মঙ্গলবার ঢাকা আর কেরানীগঞ্জের বেশ কয়েকটা জায়গায় গেলাম। কম করে ৫০ জনের সঙ্গে কথা বললাম।


সারকথা যা বুঝলাম, আতঙ্ক যতটা ছড়িয়েছে, ঠিকঠাক তথ্য ততটা নয়। আবার আতঙ্কও সবার মধ্যে ছড়ায়নি। তবে এই যাত্রায় আমি আতঙ্কিত হয়েছি। সেটা অবশ্য পথেঘাটে-বাজারে ময়লা-আবর্জনা নতুন চোখে দেখে।



সোমবার বিকেলে গিয়েছিলাম কারওয়ান বাজারে। কাঁচাবাজারের পেছনের গলিতে দেশি মুরগি বেচাকেনা-কাটাকুটি হচ্ছে। রক্তমাখা পালক আর নাড়িভুঁড়ির পাশে প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে বসে ছিলেন কাঁচামালের আড়তদার আমির হোসেন।

করোনাভাইরাসের কথা জিজ্ঞাসা করতে বললেন, ‘আমি মুসলমান। আমাকে মরতে হবে, করুণা আর ফরুনা যা-ই কিছু হোক। ‍মৃত্যু যেদিন আসবে, সেদিন কেউ রাখতে পারবে না। অতএব করোনাকে ভয় করি না, আল্লাহকে ভয় করি।’

কিন্তু সতর্কতা? আমির বললেন, সতর্ক হচ্ছেন। তবে ভয়ডর নেই। পাশেই মুরগি বিক্রি করছিলেন নান্নু মিয়া। তাঁর কথা বলারই গরজ নেই। সাফ বললেন, করোনার কথা শোনেননি।

আমির হোসেনের ভয়ডর নেই। ছবি: লেখক
আমির হোসেনের ভয়ডর নেই। ছবি: লেখক
কাঁচাপাকা দাড়ি, দাঁত ফোকলা মো. নূর নবী সবজির খুচরা বিক্রেতা। তিনি ‘করোনা’ শব্দটা জানেন। বললেন, ভালোভাবে হাত–মুখ ধুতে হবে। হাঁচি-কাশিওয়ালা মানুষজনের থেকে ‘৯ ফুট’ দূরে থাকতে হবে।

তবে ‘বাজারে তো এগুলা মানা যায় না। সবার সাথে ওঠাবসা করতেই হবে।’ নূর নবীরও ভয়ডর নেই—‘আল্লার ওপরে ভরসা, দিল খোলাসা।’

বেচাবিক্রির ফাঁকে ছুরি দিয়ে টমেটো কেটে খাচ্ছিলেন সাবের হোসেন। নীল ড্রামের ঘোলাটে পানি দেখিয়ে বললেন, ধুয়ে নিয়েছেন। আর নিজে সকালে বাসা থেকে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে এসেছেন।



সাবের ‘করলা’ভাইরাসের কথা শুনেছেন, তবে তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই—‘বড় লোকের সময় আছে, তারা ভাবুক’।

বিকেলে আবছা আলোয় কাঁচাবাজারের চালার ভেতরে সবজির সবুজ, বেগুনি আর কমলা রং চোখকে টানে। দূর থেকে মনে হয় যেন ছবি আঁকা।

কাছে গেলে ময়লা-আবর্জনা চোখে পড়ে। তারই মধ্যে টুলে বসে চা খাচ্ছিল বালক রিটন। বলল, কাপে করে খাচ্ছে, হাত ধোয়ার দরকার নেই।

হাজী আবদুস সোবহানের গায়ে ফকফকে সাদা ফতুয়া, মাথায় সাদা টুপি। সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, টিস্যু বা কনুই দিয়ে ঢেকে হাঁচি-কাশি দেওয়ার নিয়মগুলো তিনি জানেন।

বাবু ফল বিক্রি করেন। ছবি: লেখক
বাবু ফল বিক্রি করেন। ছবি: লেখক
সামনের রাস্তায় ফলওয়ালা বাবু একটা কমলা খুলে খাচ্ছিলেন। আমাকেও দুই কোয়া সাধলেন। জিজ্ঞাসা করলাম, করোনাভাইরাস সম্পর্কে তিনি কী জানেন।

বাবু বললেন, শুনেছেন এই ভাইরাস থেকে জ্বর হয়, সর্দি-ঠান্ডা লাগে। এটার থেকে দূরত্বে থাকতে হবে। কোনো কিছু খাওয়ার আগে সুন্দর করে হাত ধুতে হবে।

সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বার্তা অনেকের কাছেই পৌঁছেছে। কিন্তু বিক্রেতারা বললেন, বাজারে বসে বারবার তা করার সুযোগ নেই।

ফল কিনতে এসেছিলেন গৃহিণী সুমি। বললেন, এটা ছোঁয়াচে রোগ। বাচ্চাদের বলছেন কারও হাঁচি-কাশি হলে তার থেকে দূরে থাকতে। মাস্ক পরতে, বাইরে থেকে ফিরে হাত-মুখ ধুতে।

সুমির সঙ্গে ছিল ছেলে। হলুদ মাস্ক পরা বালক, ডাকনাম দোয়া। সে গড়গড়িয়ে হাত-পা ধোয়া আর মাস্ক পরার গুরুত্বের কথা বলে গেল। বলল, করোনাভাইরাস একটা ‘আতঙ্কিত রোগ’

‘আমি কী ডরামু?’—আমেনা। ছবি: লেখক
‘আমি কী ডরামু?’—আমেনা। ছবি: লেখক
কারওয়ানবাজারের ঝাঁকা মুটে মনসুর আলী রীতিমতো দার্শনিক। বললেন, ‘বিদেশে হইছে। বিদেশে থে আমার দ্যাশে তো আইসা সারে নাই, দেহিও নাই। ভয়? আল্লাহ্‌পাক সৃষ্টি করসে, আল্লা নিব, ভয় কিসের?’

শীর্ণ কালো হাতে বঁটিতে কেটে ঝড়তিপড়তি আদার পচা অংশ বাদ দিচ্ছিলেন আমেনা। সস্তায় বেচবেন। বললেন, ‘ভাইরাসের রুগি বলে বিদেশ থেইকা পাঠাইসে!’

আমেনা রাস্তায় থাকেন। পান খাওয়া মুখে হেসে বলেন, ‘আমি কী ডরামু? আমারে নিলে গা বেশি ভালা।’

কোভিড-১৯ নামের এই রোগের তথ্য আর সতর্কতার নিয়মগুলো জানিয়ে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে। তবে পত্রপত্রিকা বা টিভি-ফেসবুক মনসুর-আমেনাদের নাগালের বাইরে। সাধারণ সাবানও তাঁদের জন্য দুষ্প্রাপ্য।

টাকার ঝুঁকি বড় ঝুঁকি। ছবি: লেখক
টাকার ঝুঁকি বড় ঝুঁকি। ছবি: লেখক
এই দেশে, এই শহরে আমরা ঘেঁষাঘেঁষি থাকি, গায়ে গায়ে চলি। ভাড়ার মোটরসাইকেলের বারোয়ারি হেলমেট পরি। কষ্টের রোজগারের নোংরা টাকা আঙুলে ঘষে ঘষে গুনে হাতবদল করি। পথেঘাটে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সুযোগ হয় না, মনেও থাকে না।

মঙ্গলবার সকালে যাত্রা করলাম কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজারের দিকে। রাস্তা ধুলায় ধূসর, জায়গায় জায়গায় নোংরা-নর্দমা। তবে মধ্যের চরে দীন মোহাম্মদের মুদি কাম চা-নাশতার দোকানটি ছিমছাম।

দীন টিভি দেখেন না। নতুন ভাইরাসের কথা শুনেছেন, কিন্তু বিশেষ কিছু জানেন না।

দোকানের সামনে বেঞ্চিতে বসে চায়ে চুমুক দিই। মুখোমুখি বেঞ্চিতে বসে নাশতা সারলেন মো. আবুল কালাম। কালিন্দী এলাকায় তাঁর ফুলের দোকান আছে।

কালাম সকাল থেকে রাত অবধি পরিশ্রম করেন, খুব একটা খবর রাখতে পারেন না। বললেন, করোনাভাইরাস ঠেকানোর জন্য মাস্ক পরা ও ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া উচিত। তিনি নিজে অবশ্য দিনে দু-চারবার, কখনোবা একবারই সেভাবে হাত ধুয়ে থাকেন।

আবর্জনা আর কচুরিপানায় আঁটিবাজারে বুড়িগঙ্গার খালটার অবস্থা খারাপ। সেটা পেরিয়ে ডানে মোড় নিলে সামনেই দোকানটা। উঁচু বেদিতে বসে দুই কিশোর ময়দা মাখছে, দুই তরুণ বাখরখানি বেলছেন।

বাখরখানির ওস্তাদ প্রবীণ ইউনুস আলী (ডানে)। ছবি: লেখক
বাখরখানির ওস্তাদ প্রবীণ ইউনুস আলী (ডানে)। ছবি: লেখক
তন্দুরে সেগুলো সেঁকছেন স্যান্ডো গেঞ্জি পরা প্রবীণ ইউনুস আলী। তিনি করোনাভাইরাসের নাম শুনেছেন, কিন্তু করণীয় জানেন না। কর্মচারী মো. কাদির মাস্ক পরা আর পরিষ্কার থাকার কথা ভাসা-ভাসা শুনেছেন।

পাশের মুদিদোকানি মো. জামাল বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের তিনজন রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানেন। হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার কথাও জানেন।

জায়গাটা কাঁচাবাজারের কাছাকাছি। মাছি ভনভন করছে। কয়েকটা কামালের মুখে-গায়েও বসে।

নর্দমা পেরিয়ে যে গলি দিয়ে কাঁচাবাজারে ঢুকলাম, তার এক দিকে মুরগির দোকান। রক্ত, নাড়িভুঁড়ি আর পালকে জায়গাটা সয়লাব। বড় ছুরি দিয়ে মুরগি টুকরো করছে এক কিশোর। ছাঁট ছিটকে এসে গায়ে লাগে।

পাশেই সবজি বিক্রি করছেন আকাশ। সতর্কতার সাধারণ নিয়মগুলো তিনি জানেন, তবে সারা দিনে বাজারে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অবস্থা নেই।

সবজি বিক্রেতা আকাশ মোটামুটি খবর রাখেন। ছবি: লেখক
সবজি বিক্রেতা আকাশ মোটামুটি খবর রাখেন। ছবি: লেখক
বাজার করতে এসেছিলেন অ্যালুমিনিয়াম-সামগ্রীর ব্যবসাদার সিরাজ। পেপার-পত্রিকা পড়েন, টিভি দেখেন। সতর্কতার নিয়মগুলো বেশ গুছিয়ে বললেন। আরও বললেন, নিজে নিরাপদ না থাকলে সেটা অন্যদের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে।

যত জায়গায় গেলাম, কোথাও সতর্কবার্তার বিলবোর্ড-পোস্টার বা প্রচার দেখিনি। তবে পথে পথে সর্দি-কফ ফেলার চিহ্ন দেখলাম। আমরা রাস্তাঘাটে পিচ করে পানের পিক-কফ-থুতু ফেলি, হাঁচি এলে হেঁচে দিই। এ আপদ স্বভাবের, যা নাকি মরলেও যায় না!

11
প্রতিটি নতুন বছরের শুরুতে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট বিশেষ একটি সংখ্যা বের করে। মূলত নতুন বছরের নানা সম্ভাবনার কথাই বলা হয় এখানে। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন ২০২০’ নামের এবারের সংখ্যায় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা শীর্ষ যে ১০টি দেশের তালিকা দেওয়া হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ আছে ৩ নম্বরে। ম্যাগাজিনটি বলছে, নতুন বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। শীর্ষ দশের এই তালিকা থেকে চীন বাদ পড়েছে, আর ভারত কোনোরকমে টিকে গেছে। তারা আছে ঠিক ১০ নম্বরে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) নিয়মিতভাবে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ বলেছে, ২০১৯ সালে বিশ্ব জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রায় ৮৬ শতাংশ এসেছে যে ২০টি দেশ থেকে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি।


পারভেজ হুদভয়ে
পারভেজ হুদভয়ে। ছবি :ইউটিউব
পারভেজ হুদভয় পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। তিনি সম্প্রতি ডন পত্রিকায় লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ কোনো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ভূস্বর্গ নয়। দেশটি দরিদ্র এবং জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ। এখনো শিক্ষার হার কম ও দুর্নীতিগ্রস্ত। প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়, মাঝেমধ্যে সন্ত্রাসবাদও প্রত্যক্ষ করে। আবার প্রহসনমূলক গণতন্ত্রের চেহারাও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ লাইফ সাপোর্টে বা মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে বলে আগে যেমনটা বলা হতো, সেই চিত্র এখন বদলে গেছে। আজকে অনেক অর্থনীতিবিদ বলছেন, এই দেশটিই হবে পরবর্তী এশিয়ান টাইগার।’

বাংলাদেশের এই ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতির উল্টো পিঠে লুকিয়ে আছে আরেক বিস্ময়। সুশাসনের সংকট, ঘুষ-দুর্নীতি, পরিবেশগত নানা বিপর্যয়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাব—এসব ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী যত সূচকই প্রকাশ পায়, প্রায় সব কটিতেই অনেক অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। একদিকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি, আরেক দিকে উচ্চ দুর্নীতি। বিস্ময় এখানেই। যেমন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০১৯-এ এবার বাংলাদেশের উন্নতি মাত্র এক ধাপ। ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৬তম। ট্রেস ইন্টারন্যাশনাল নামের আরেকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তৈরি বিশ্ব ঘুষ সূচকে বাংলাদেশ ২০০ দেশের মধ্যে ১৮২তম।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) নিয়মিতভাবে গণতন্ত্র সূচক প্রকাশ করে। তাদের তালিকায় বাংলাদেশ আছে ‘হাইব্রিড রেজিম’ অবস্থানে। এটি হচ্ছে স্বৈরতান্ত্রিক ও ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থান। আর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) গত অক্টোবর মাসে প্রকাশ করেছে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবার দুই ধাপ পিছিয়ে ১৪১টি দেশের মধ্যে হয়েছে ১০৫তম। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকার প্রশ্নেও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের সর্বশেষ প্রকাশিত ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক ২০১৮’-এ ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম।

সর্বশেষ ১১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (ডব্লিউজেপি) আইনের শাসন সূচক প্রতিবেদন-২০২০ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সূচকেও বাংলাদেশের অবনতি হয়েছে। বিশ্বের ১২৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৫তম। এক বছর আগেও বাংলাদেশ ১২৬টি দেশের মধ্যে ছিল ১১২তম।

এক বাংলাদেশের এ দুই চেহারার কারণেই এখন দেশটিকে কেউ বলছেন ‘সারপ্রাইজ’ বা বিস্ময়, ‘কেউবা বলেন ‘মিস্ট্রি’ বা রহস্য অথবা প্রহেলিকা, আবার অনেকে বলেন ‘প্যারাডক্স’ বা আপাতবৈপরীত্য। সুশাসনের বড় ধরনের সংকট, আইনের শাসনের অভাব ও ক্রমবর্ধমান দুর্নীতির মধ্যে থেকেও বাংলাদেশের এই সাফল্যের রহস্য কী?

হেনরি কিসিঞ্জার । রয়টার্স ফাইল ছবি
হেনরি কিসিঞ্জার । রয়টার্স ফাইল ছবি
কেমন ছিল বাংলাদেশ
বাংলাদেশের টিকে থাকা নিয়ে মার্কিন প্রশাসন সন্দেহ প্রকাশ করেছিল স্বাধীনতা পাওয়ার আগেই। ১৯৭১ সালেই সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব হেনরি কিসিঞ্জারসহ মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বা ‘বাস্কেট কেস’ বলেছিলেন। দীর্ঘ বছর ধরে এই অপবাদ বাংলাদেশকে শুনতে হয়েছে।

আর স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রথম রিপোর্ট করেছিল ১৯৭২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। সেখানে বলা হয়, ‘সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের উন্নয়ন সমস্যাটি অত্যন্ত জটিল। এখানকার মানুষ অত্যন্ত দরিদ্র, মাথাপিছু আয় ৫০ থেকে ৭০ ডলারের মধ্যে, যা গত ২০ বছরে বাড়েনি, জনসংখ্যার প্রবল আধিক্য এখানে, প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ৪০০ মানুষ বাস করে, তাদের জীবনের আয়ুষ্কাল অনেক কম, এখনো তা ৫০ বছরের নিচে, বেকারত্বের হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে এবং জনসংখ্যার বড় অংশই অশিক্ষিত।’

তবে নরওয়ের অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফাল্যান্ড এবং মার্কিন অর্থনীতিবিদ জে আর পার্কিনসন ১৯৭৬ সালে লন্ডন থেকে ‘বাংলাদেশ দ্য টেস্ট কেস ফর ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি বই বের করে আরও কঠিন করে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে উন্নয়নের একটি পরীক্ষাক্ষেত্র। বাংলাদেশ যদি তার উন্নয়ন সমস্যার সমাধান করতে পারে, তাহলে বুঝতে হবে যেকোনো দেশই উন্নতি করতে পারবে।’

এখনকার বাংলাদেশ
আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৩তম। বাংলাদেশের আয়তন বিশ্বের মোট আয়তনের দশমিক ১ শতাংশের কম। আবার এই দেশই জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে অষ্টম। আয়তন ক্ষুদ্র হলেও জিডিপির পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বের ৪১তম দেশ বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক রিসার্চ (সিবিইআর) অনুযায়ী, এশিয়ার ৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬তম, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরেই বাংলাদেশ। একটি দেশের অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী তা দেখার আরেক উপায় হচ্ছে ক্রয়ক্ষমতার সমতার (পিপিপি) ভিত্তি। এটি ধরলে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩১তম বড় অর্থনীতি।

আবার চাল উৎপাদন ও গ্রহণে বিশ্বে বাংলাদেশ চতুর্থ। সব ধরনের খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ১১তম, মোট ফল উৎপাদনে ২৮তম, আম উৎপাদনে সপ্তম এবং চা উৎপাদনে দশম। আর ‘মাছে ভাতে বাঙালি’র এই দেশ মৎস্যসম্পদ (মাছ, আবরণযুক্ত জলজ প্রাণী ও শামুক) উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম, প্রাকৃতিক উৎসের মাছ উৎপাদনে তৃতীয় এবং ইলিশে শীর্ষ দেশ।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) হিসাবে ২০০৮ থেকে ২০১৮ সময়ের মধ্যে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়, সবার ওপরে ভিয়েতনাম। এক যুগের বেশি সময় ধরে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে।

প্রবাসী-শ্রমিক
প্রথম আলো ফাইল ছবি
সাফল্যের রহস্য
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রেখেছে মূলত তিনটি খাত। যেমন কৃষি, প্রবাসী আয় ও পোশাক খাত। এসব ক্ষেত্রে সরকারেরও নীতিগত অবদান আছে যথেষ্ট। যেমন কৃষিতে উচ্চফলনশীল জাত যেমন ফলন বাড়িয়েছে, তেমনি সরকারও কৃষি উপকরণ, সার ও বীজের বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। এখন এক জমিতে একাধিক ফসলের ফলন হয়। ফলে কৃষিজমি কমলেও বেড়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ।

পোশাক খাতের দ্রুত সম্প্রসারণে আশির দশকে সরকারের দুটি সিদ্ধান্ত ছিল যুগান্তকরী। যেমন ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র বা এলসি ও বন্ড সুবিধা। এর আওতায় কাপড়সহ আনুষঙ্গিক পণ্য উদ্যোক্তারা কোনো মূলধন ছাড়াই আমদানি করে তা বিনা শুল্কে রাখতেও পেরেছেন। এতে বড় ধরনের মূলধন ছাড়াই পোশাক খাতের উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব হয়েছে। আর ছিল অফুরান সস্তা শ্রমিক। তবে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে খোলা বাজারে কাপড় বিক্রি করে বিপুলভাবে লাভবান হওয়া উদ্যোক্তার সংখ্যাও কম ছিল না।

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরেক উৎস প্রবাসী আয়ের সম্প্রসারণ সেই আশির দশক থেকে। শুরু থেকে যথেষ্ট অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যেই অদক্ষ শ্রমিকদের বিদেশ যাত্রা ঘটেছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। দেশের যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি, তাতে বড় অবদান রপ্তানি এবং প্রবাসী আয়।


ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ
ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ । প্রথম আলো ফাইল ছবি
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বাংলাদেশের উন্নয়ন বিস্ময় নিয়ে একাধিক গবেষণা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, কোনো জবাবদিহিমূলক সরকারি ব্যবস্থা বা সমন্বিত উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রগতি ঘটেনি। বরং বিভিন্ন ধরনের উপাদান এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর সংযোগের ফল এটি। যেমন দাতাগোষ্ঠীর তহবিলনির্ভর পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি, স্বাধীনতা–পরবর্তী ত্রাণ কর্মসূচি পরিচালনাকারী সংস্থার উন্নয়ন এনজিও হিসেবে আবির্ভাব, গ্রামীণ রাস্তাঘাট নির্মাণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিআরডি) বড় ভূমিকা, পোশাক খাতের রপ্তানি বাজার দখল এবং মধ্যপ্রাচ্যে অদক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিক রপ্তানি।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও মনে করেন, বাংলাদেশের এ পর্যন্ত অগ্রগতির পেছনে আরেকটি উপাদান হচ্ছে অল্প ব্যয়ের প্রযুক্তি গ্রহণ। অদক্ষ যেসব শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যে গেছেন, তঁাদের কাজের ধরন প্রযুক্তিনির্ভর ছিল না। কিংবা পোশাক খাতের শ্রমিকদের প্রযুক্তি জানার দরকার হয়নি। যে স্যালাইন ডায়রিয়াজনিত মৃত্যু কমাতে জাদুকরি ভূমিকা রেখেছে, সেটিও খুব সাধারণ পণ্য দিয়ে তৈরি। মানুষ খুব সহজে এসব স্বল্প প্রযুক্তি আয়ত্তে আনতে পেরেছে। এ ছাড়া ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষের অভিজ্ঞতা ছিল পরবর্তী সব সরকারের জন্য একটি বড় শিক্ষা। সবাই বুঝেছিলেন যে আরেকটি দুর্ভিক্ষ আসতে দেওয়া ঠিক হবে না। এ কারণে খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্যনিরাপত্তাকে সব সরকারই গুরুত্ব দিয়ে আসছে।

সুশাসন কতটা জরুরি
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সুশাসনের বিপরীতমুখী সম্পর্কের আলোচনা বহু পুরোনো। একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা কয়েক দশক ধরেই বলে আসছে যে দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশে জিডিপির ক্ষতি ২ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলে, বাংলাদেশ যদি দুর্নীতির মাত্রা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর সমান পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারে, তাহলে জিডিপি বাড়বে ২.১ থেকে ২.৯ শতাংশ পর্যন্ত। অথচ দেখা যাচ্ছে, দুর্নীতি কমেনি, কিন্তু জিডিপি ঠিকই বাড়ছে। এখানে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও উচ্চ দুর্নীতি পাশাপাশি চলছে।

‘প্যারাডক্স’ কথাটি বহুভাবেই ব্যবহৃত হয়। অর্থনীতির প্রচলিত তত্ত্ব অনুযায়ী যা কাজ করে না, মোটাদাগে তাকেই প্যারাডক্স বা আপাতবৈপরীত্য বলে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্যারাডক্স কথাটি ব্যবহৃত হচ্ছে গত এক দশকের বেশি সময় ধরেই।

এ বিষয়ে ২০১৩ সালে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির শিক্ষক অ্যান্টোনিও স্যাভোইয়া এবং মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক এম নিয়াজ আবদুল্লাহ ‘প্যাথস টু ডেভেলপমেন্ট: ইজ দেয়ার এ বাংলাদেশ সারপ্রাইজ?’ নামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে এক বাংলাদেশের দুই চিত্রের বিশ্লেষণ ছিল।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করা এম নিয়াজ আবদুল্লাহ এবং রাশিয়ার সাইবেরিয়ান ফেডারেল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের এন এন তরুণ চক্রবর্তী বাংলাদেশের এই প্রসঙ্গ নিয়ে আরেকটি গবেষণা করেছেন। ‘গ্রোথ, গভর্ন্যান্স অ্যান্ড করাপশন ইন বাংলাদেশ: এ রি-অ্যাসেসমেন্ট’ শিরোনামের এই গবেষণা উন্নয়ন শিক্ষাবিষয়ক জার্নাল থার্ড ওয়ার্ল্ড কোয়ার্টারলির গত জুন সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে এই দুই গবেষক বলেছেন, অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সুশাসন একটি প্রয়োজনীয় শর্ত—এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির নাগরিকেরাও মনে করে চাকরি, বিচারব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অন্যান্য সরকারি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি একটি বড় বাধা। এই ত্রুটিপূর্ণ সরকারি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যেও এই বাংলাদেশই উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ কিন্তু একমাত্র উদাহরণ নয়। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান উচ্চ দুর্নীতির মধ্যে থেকেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তবে এই তিন দেশে রাজনীতি–সংশ্লিষ্টরাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছেন বেশি। চীনে অবশ্য দুর্নীতি ও উন্নয়ন পাশাপাশি হাত ধরে চলেছে। বিশেষ করে নব্বইয়ের দশকে চীনে অর্থনৈতিক অগ্রগতি যত ঘটেছে, দুর্নীতিও বেড়েছে তত বেশি। নব্বইয়ের দশকে অর্থনৈতিক উন্নতি ও উচ্চ দুর্নীতির একসঙ্গে পথচলার চীনের সেই অভিজ্ঞতাকে মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ওয়েডেমেন বলেছেন, ‘ডাবল প্যারাডক্স’।

উন্নয়ন বনাম দুর্নীতির আলোচনায় প্রচলিত একটি ধারণা হচ্ছে ‘স্যান্ড দ্য হুইলস’ তত্ত্ব। অর্থাৎ চাকা বালুতে যেমন আটকে যায়, দুর্নীতিও তেমনি উন্নতিকে আটকে রাখে। আবার এর বিপরীতেই অনেকে বলেন ‘গ্রিজ দ্য হুইল’-এর কথা। অর্থাৎ গ্রিজ বা তৈলাক্ত কোনো কিছু দিলে সেই চাকা ঘুরতে শুরু করে। এর অর্থ ঘুষ দিয়েই অনেক কাজ করানো যায়, এতে বাড়তি ব্যয় হলেও তা উন্নতিতে অবদান রাখছে। যেসব দেশে প্রতিষ্ঠান দুর্বল ও সুশাসন পরিস্থিতি ভালো নয়, সেসব দেশে এই নীতি শুরুতে কাজ দেয় বলে অনেক গবেষক মনে করেন। আরেকটি প্রচলিত মত হচ্ছে, উন্নয়নের শুরুতে দুর্নীতি দেখা দেয়, অগ্রগতি বাড়তে থাকলে দুর্নীতির চাহিদা ও আগ্রহ কমে যায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটিও দেখা যায়নি।

দুর্নীতির চালচিত্র
এম নিয়াজ আবদুল্লাহ ও এন এন তরুণ চক্রবর্তী বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। আশির দশকের পর থেকে পোশাক খাত ক্রমান্বয়ে এগিয়ে শীর্ষস্থানে চলে এসেছে। অথচ এই সময় দুর্নীতি পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিচালনা সূচকেও পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এ অবস্থার মধ্যে থেকেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত কীভাবে এগিয়ে গেল, সেটাই গবেষকেরা দেখতে চেয়েছেন।

এই দুই গবেষক পোশাক খাতের ৯২ জন মালিক ও ব্যবস্থাপকের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে গবেষকেরা পাঁচটি ফলাফলের কথা জানিয়েছেন। যেমন ২২ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, ঘুষ সবচেয়ে বড় বাধা। ৩ দশমিক ৩ শতাংশ চাঁদাবাজিকে সবচেয়ে বড় সমস্যার কথা বলেছেন। দ্বিতীয়ত, ৪৯ শতাংশ বলেছেন ঘুষ ও চাঁদাবাজি কোম্পানির প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করছে। তৃতীয়ত, ব্যবসায়ীরা কর বা শুল্ক পরিহার বা আমদানির ক্ষেত্রে আন্ডার-ইনভয়েস (দাম কম দেখানো) করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেন। চতুর্থত, আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে কী পরিমাণ অর্থ ঘুষ দিতে হবে, তা কাস্টমস কর্মকর্তারাই ঠিক করে দেন। পঞ্চমত, বিদেশি কোম্পানিও সরকারের কাজ পেতে, যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে থাকে। মোদ্দা কথা হচ্ছে ঘুষ দেওয়াকে সবাই একটি রীতি বলে মেনে নিয়েছেন।

একটি কাজ পেতে কত দিন লেগেছে এবং কী পরিমাণ অর্থ ঘুষ দিতে হয়েছে, তারও একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে এই গবেষণায়। যেমন কোম্পানি গঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে ঘুষ দিতে হয় ৩৪ হাজার ৩৩২ ডলার। আবার কোম্পানি গঠনের দলিল সংগ্রহ বা নানা ধরনের অনুমতি পেতে যে ঘুষ দিতে হয়, তাকে তঁারা অনানুষ্ঠানিক ব্যয় বলছেন। এর পরিমাণ ২৩ হাজার ৩৩০ ডলার।

অনুমোদন পাওয়ার পর কোম্পানির কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎ, গ্যাস, ও পানি সরবরাহ সংযোগ, টেলিফোন লাইনপ্রাপ্তি, ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন, ইত্যাদি। এসব কাজে দিতে হয় ১৪ হাজার ৮০৮ ডলার। এরপরে প্রতিটি রপ্তানির দলিলের জন্য ৫ দশমিক ৭১ ডলার ও প্রতিটি আমদানি কনসাইনমেন্টের জন্য ঘুষ দিতে হয় ১৪২ ডলার। গবেষকেরা বলছেন, মূলত এভাবে ঘুষ দিয়ে কাজ করাটাই এখানকার রীতি।
দুর্নীতি

উচ্চ প্রবৃদ্ধির সঙ্গী উচ্চ দুর্নীতি
২০০৫ সালে পোশাক রপ্তানিতে যখন কোটাব্যবস্থা উঠে যায়, তখন বাংলাদেশ ছিল টানা পঞ্চমবারের মতো শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। এরপর থেকে পোশাক খাতের চমকপ্রদ অগ্রগতি হলেও দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি অতি সামান্য। এমনকি সহজে ব্যবসা পরিচালনার সূচকেও বাংলাদেশ ক্রমে খারাপ পর্যায়ে গেছে। সুতরাং দুর্নীতি অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম বাধা—এই যুক্তি পোশাক খাতের ক্ষেত্রে খাটছে না। পোশাক খাতের অগ্রগতি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের সামান্য উন্নতিও আনতে পারেনি।

বলা হয়ে থাকে একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্নীতি কমায়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ায়। আর টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি ঘটায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা–ও দেখা যায়নি। ২০১৪ সালের এ বিষয়ে এক গবেষণায় ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও সিমিন মাহমুদ বলেছিলেন, ১৯৯১ সালে একনায়কের শাসন থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রে বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটেছিল। তবে এরপর চলতে থাকা রাজনীতির সংস্কৃতি দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশের বিস্তার ঘটায়নি, একটি জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ রাষ্ট্রেরও দেখা মেলেনি। শাসনব্যবস্থার মূলে রয়েছে অকার্যকর সংসদ, তীব্র দ্বন্দ্ব-সংঘাতপূর্ণ রাজনীতি, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চার অনুপস্থিতি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনীতিকীকরণ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অযোগ্য আমলাতন্ত্র। এ ছাড়া প্রকটভাবে যা আছে তা হলো পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি, যেখানে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে আশ্রয়–প্রশ্রয় ও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

উচ্চ দুর্নীতির মধ্যেও বাংলাদেশে অগ্রগতি তাহলে কীভাবে ঘটছে, এ নিয়ে ২০১৪ সালে একটি গবেষণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক ফয়সাল জে আহমেদ, এনা গ্রিনলিফ এবং বিশ্বব্যাংকের অড্রে স্যাকস। গবেষকেরা দেখিয়েছেন, বাংলাদেশে আসলে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য স্থিতিশীল ও আন্দাজ করা যায় এমন একটি দুর্নীতিব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। একে বলা যায় নিয়মানুগ ও ফলপ্রদ ঘুষ ব্যবস্থা।

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ নিয়ে এম নিয়াজ আবদুল্লাহ এবং এন এন তরুণ চক্রবর্তীর উপসংহার হচ্ছে দুর্নীতির সঙ্গে প্রবৃদ্ধির সম্পর্ক ইতিবাচক না নেতিবাচক? আসলে বাংলাদেশে ঘুষ-দুর্নীতি একটি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এখানে সরকারি অর্থের ব্যাপক অপচয় ও আত্মসাৎ হয়, এতে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার ব্যয় আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ নেওয়ার সংস্কৃতিও বজায় থাকে।

আরেকটি তত্ত্বের কথা বলা যায়। যেমন সুশাসনের অভাব যেখানে, সেসব ক্ষেত্রে ‘ডিল’ বা লেনদেনভিত্তিক একটি অর্থনীতি চালু আছে। কোনো কোনো দেশের অর্থনীতি এর ওপর নির্ভর করেই পরিচালিত হয়। নিচের ছকটিতে এর ব্যাখ্যা মিলবে।
Untitled-4

‘নেভিগেটিং দ্য ডিলস ওয়ার্ল্ড: দ্য পলিটিকস অব ইকোনমিক গ্রোথ ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি গবেষণা আছে দুই অর্থনীতিবিদ মির্জা এম হাসান এবং এবং সেলিম রায়হানের। সেখানে বলা আছে, ‘বাংলাদেশ আইনের শাসনের ভিত্তিতে চলে না। বাংলাদেশ চলে ডিলস বা নানা ধরনের লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে। যেমন তৈরি পোশাক ও ব্যাংক খাতে চলে খোলা বা ওপেন ডিল এবং বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতের ডিল বদ্ধ বা ক্লোজড। ১৯৭৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশ এই লেনদেনের ভিত্তিতেই চলে আসছে। আর এই লেনদেন বা ডিলে বেশ শৃঙ্খলা আছে। তার মানে হলো ঘুষ খেয়ে কাজটি করে দেওয়া হয়। আর এটাই হচ্ছে খারাপ শাসনব্যবস্থার মধ্যেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির আসল ব্যাখ্যা।’

আকবর আলী খান
আকবর আলী খান । প্রথম আলো ফাইল ছবি
আকবর আলি খান তাঁর পরার্থপরতার অর্থনীতি বইয়ে দুই ধরনের দুর্নীতির বর্ণনা দিয়েছিলেন। যেমন নির্ভরযোগ্য দুর্নীতি ও অনির্ভরযোগ্য দুর্নীতি। নির্ভরযোগ্য দুর্নীতি হলো সে ধরনের ব্যবস্থা, যেখানে ঘুষ দিলে লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত। বিনিয়োগকারীদের এ ধরনের দুর্নীতিতে অরুচি নেই, বরং এ ধরনের দুর্নীতি তাঁরা পছন্দ করেন। অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো অনির্ভরযোগ্য দুর্নীতি। কেননা ঘুষ দিয়েও কার্যসিদ্ধির কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিভিন্ন রাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একনায়কতন্ত্র ও কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থাই নির্ভরযোগ্য দুর্নীতির জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

অবশ্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার কথা রাজনীতির মঞ্চে অহরহ শোনা যায়। ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা আছে। এ প্রসঙ্গে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ গুনার মিরডালের একটি কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। ১৯৬৮ সালে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে একটি বৈঠক প্রসঙ্গে সে সময় লিখেছিলেন, ‘ওপর মহলের সবাই যখন দুর্নীতি নিয়ে অহেতুক চিৎকার করতে থাকেন, তখন দুর্নীতি করার একধরনের পরিবেশ তৈরি হয়। মানুষ মনে করে, তারা দুর্নীতির আবহাওয়ার মধ্যে বসবাস করছে এবং তখন সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।’

সুতরাং ছোটবেলায় পড়া ‘সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা’ নীতি মেনে চলে কেউ যদি এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে চান, তাহলে তাঁর পক্ষে টিকে থাকা বাস্তবিকই অসম্ভব।

শেষ কথা
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সুশাসনের অধোগতির এ রকম এক ব্যবস্থার মধ্যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের এই ধারা কি বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকবে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক অবিনাশ দীক্ষিত এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ল্যান্ট প্রিটচেট এ বিষয়ে বলেছিলেন, ‘যখন কোনো দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের নিম্ন পর্যায়ে থাকে, তখন সুশাসন ছাড়াও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয়। তার কারণ, নিম্ন আয়ের দেশে প্রবৃদ্ধির অনেক সম্ভাবনা রয়েছে এবং এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু যখন একটি দেশ নিম্ন আয় থেকে মধ্যম আয়ের পর্যায়ে উপনীত হয়, তখন সুশাসনের প্রয়োজন অনেক বেড়ে যায়। সুশাসন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির সম্পর্ক তখন সরলরৈখিক নয়। (অবাক বাংলাদেশ: বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি, আকবর আলি খান)।

বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ। অন্যদিকে ২০২৪ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হওয়ার কথা। এতে অনেক ধরনের অগ্রাধিকার সুবিধা আর থাকবে না। বিশ্ব অর্থনীতিতেও থাকবে নানা উত্থান-পতন। এ রকম এক অবস্থায় উচ্চ দুর্নীতির সঙ্গী হয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি আর কত দিন চলবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

তাহলে কী করতে হবে? প্রশ্নটা ছিল ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের কাছে। তিনি তিনটি করণীয়র কথা জানালেন। যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের সেবার মান বাড়ানো। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ স্বল্প খরচের সমাধানের পর্যায় পার হয়ে এসেছে। এখন এই দুই খাতে ব্যয় বৃদ্ধি ও সেবার মান বাড়ানো প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, সরকারের জবাবদিহি বাড়াতে হবে। এত দিন এই ঘাটতি নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়েছে। কিন্তু এখন শাসনব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। সর্বশেষ হচ্ছে এত দিন এনজিওগুলোই মূলত সরকারি নানা সেবা সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু এর সম্প্রসারণের জন্য, কমিউনিটিভিত্তিক সেবার জায়গা থেকে বের হতে একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।


শেষ প্রশ্ন হচ্ছে সামনের দিনগুলোর জন্য বাংলাদেশের কি কোনো প্রস্তুতি আছে। নাকি রবীন্দ্রনাথকে অনুসরণ করাই একমাত্র পথ। অর্থাৎ ‘এমনি ক’রেই যায় যদি দিন যাক না’।

12
যা ছিল স্বপ্ন, তা এখন বাস্তব। মুঠোফোন তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশেই। শুধু কথা বলার জন্য ফিচার ফোন নয়, উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার উপযোগী স্মার্টফোনও তৈরি হচ্ছে এ দেশের কারখানায়। মুঠোফোন কেনার সময় আপনি যদি একটু খেয়াল করে মোড়কটি দেখেন, তাহলে দেখবেন লেখা আছে ‘বাংলাদেশে তৈরি’ অথবা ‘বাংলাদেশে সংযোজিত’।

এর মানে হলো, কেউ দেশেই মুঠোফোন তৈরি করে। আবার কেউ কেউ তৈরির পথে প্রথম ধাপ, অর্থাৎ সংযোজনে রয়েছে। যেমন দেশি ব্র্যান্ড ওয়ালটনের মুঠোফোন বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। তেমনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের ব্র্যান্ড স্যামসাংয়ের মুঠোফোন বাংলাদেশে সংযোজিত হচ্ছে। আরেক দেশি ব্র্যান্ড সিম্ফনি, দ্রুত অগ্রসরমাণ চীনা ব্র্যান্ড অপো, ভিভো, টেকনো ও ভারতীয় ব্র্যান্ড লাভা বাংলাদেশে কারখানা করেছে। কারখানা রয়েছে ফাইভস্টার ও উইনস্টার নামে দুটি ব্র্যান্ডেরও। সব মিলিয়ে কারখানার সংখ্যা ৯। নতুন করে এসেছে চীনা ব্র্যান্ড রিয়েলমি। তাদের কারখানাও গাজীপুরে।

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, সস্তার স্মার্টফোন সংযোজন বা তৈরি কঠিন কিছু নয়। তাহলে আপনার জানা দরকার, স্যামসাংয়ের নোট ১০ প্লাস এখন বাংলাদেশেই সংযোজিত হয়। দেশে সংযোজন করে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকার ফোনের দাম ৩০ হাজার টাকা কমিয়েছে স্যামসাং। নতুন আসা এস-২০ সিরিজের ফোনও বাংলাদেশেই সংযোজন করছে স্যামসাং।

আপনি সংযোজনশিল্পকে গুরুত্ব দিতে চান না, তাহলে আপনার আরও কিছুটা জানা দরকার। আগেই বলেছি, ওয়ালটন স্মার্টফোন দেশেই তৈরি হয়। আরেকটি নতুন খবর জানুন, কয়েক মাস পরেই স্যামসাংয়ের মাদারবোর্ড বাংলাদেশে তৈরি শুরু হবে। সিম্ফনি নতুন কারখানা করছে। সেখানে মুঠোফোনের যন্ত্রাংশ, চার্জার ও হেডফোন উৎপাদন করা হবে। টেকনোর কারখানায় মাদারবোর্ড তৈরি হচ্ছে।

সব মিলিয়ে দেশে মুঠোফোনশিল্পের যাত্রাটি জোরেশোরে শুরু হয়েছে। উদ্যোক্তারা করছেন রপ্তানির চিন্তাও। একটি চালান যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে ওয়ালটন।

জনপ্রিয় হচ্ছে দেশের তৈরি মুঠোফোন। ছবি: সাইফুল ইসলাম
জনপ্রিয় হচ্ছে দেশের তৈরি মুঠোফোন। ছবি: সাইফুল ইসলাম
মুঠোফোন সেবার শুরুর কথা

বাংলাদেশে মুঠোফোন সেবা পরিচালনা বা অপারেটর লাইসেন্স দেওয়া হয় ১৯৮৯ সালে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮৯ সালে বেতার যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন তিন ধরনের লাইসেন্স দিয়েছিল তখনকার বাংলাদেশ সরকার। সেগুলো হলো পেজার, মুঠোফোন এবং নদী এলাকায় বেতার যোগাযোগব্যবস্থার লাইসেন্স। দেশে মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবার যাত্রা শুরু হয় এভাবে। কার্যত দেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর সিটিসেল।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকার কিছু মানুষ হাতে বড় বড় মুঠোফোন নিয়ে ঘুরতেন, যা দেখে অবাক হতেন অন্যরা।

১৯৯৬ সালে সিটিসেলের একক আধিপত্য ভেঙে যায়। সরকার গ্রামীণফোন, একটেল (এখন রবি) এবং সেবা টেলিকমকে (এখন বাংলালিংক) মুঠোফোন সেবা দেওয়ার জন্য লাইসেন্স পায়। এখন দেশের মুঠোফোন সেবার গ্রাহকের সাড়ে ১৬ কোটির বেশি। জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে! মনে রাখতে হবে, একজন মানুষের একাধিক সিম থাকতে পারে।

শুরুতে নানা ব্র্যান্ডের ফিচার ফোন দেশে আমদানি হয়েছে। যখন মুঠোফোন সাধারণ মানুষের হাতে উঠতে শুরু করে, তখন একক আধিপত্য ছিল নকিয়া ব্র্যান্ডের। প্রথম দেশীয় ব্র্যান্ড সিম্ফনি। ২০০৮ সালে জার্মানির সিমেন্স ব্র্যান্ডের মুঠোফোন ব্যবসা গুটিয়ে যাওয়ার পর সেখানকার কয়েকজন কর্মকর্তা সিম্ফনি ব্র্যান্ডের মুঠোফোন বাজারজাত শুরু করেন। শুরুতে তাঁরা চীন থেকে মুঠোফোন তৈরি করিয়ে আনতেন। ২০১২ সালে দেশে তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা বা থ্রি–জি চালুর পর কম দামের সিম্ফনি ফোন ব্যাপক বাজার পায়।

আমদানি থেকে দেশে মুঠোফোন তৈরির যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে।

 সরকারি নীতি

মুঠোফোনশিল্পের আজকের যাত্রার শুরুটা হয়েছিল সরকারি নীতি দিয়ে। উদ্যোক্তারা জানান, দেশে মুঠোফোন তৈরির কারখানা করতে সরকার উৎসাহ দেওয়া শুরু করে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট থেকে। ওই বাজেটে মুঠোফোনের ৪৪টি যন্ত্রাংশে বড় ধরনের শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। ৪১টি যন্ত্রাংশে আমদানি শুল্ক করা হয় ১ শতাংশ, যা আগে ৫ থেকে ২৫ শতাংশ ছিল। বিপরীতে তৈরি করা মুঠোফোন আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।

নীতির ফলে একদিকে আমদানি করা মুঠোফোনের খরচ বেড়ে যায়, অন্যদিকে দেশে তৈরি করলে খরচ কমে যায়।

২০১৮ সালের ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, মুঠোফোন উৎপাদনে কিছু যন্ত্রাংশ উৎপাদন করা এবং ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করার শর্তে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) পুরোপুরি অব্যাহতি দেওয়া হয়। আবার সংযোজনের ক্ষেত্রে ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে আরও ৪৪টি যন্ত্রাংশের শুল্ক কমানো হয়। বিপরীতে বিদেশি তৈরি মোবাইল আমদানিতে শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। ফলে এখন আর বিদেশ থেকে আনা মুঠোফোন দিয়ে বাজার ধরা যাচ্ছে না। এ কারণে একের পর ব্র্যান্ড কারখানা করছে।

৯টি কারখানা

মুঠোফোন সেট তৈরিতে এগিয়ে ওয়ালটন। তারাই প্রথম দেশে কারখানার কাজ শুরু করে। আবার তারাই সবচেয়ে বেশি যন্ত্রাংশ উৎপাদন করে। গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের কারখানা উদ্বোধন করা হয় ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে। যদিও বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ২০১৮ সালের মাঝামাঝি। একই বছরের জুনে স্যামসাং ব্র্যান্ডের মুঠোফোন সংযোজন শুরু করে ফেয়ার ইলেকট্রনিকস লিমিটেড।

সিম্ফনি ব্র্যান্ডের মুঠোফোন বাজারজাতকারী এডিসন গ্রুপের কারখানাটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করা হয়। তাদের মুঠোফোন বাজারে আসে ডিসেম্বরে।

এরপর টেকনো ব্র্যান্ডের মুঠোফোন বাজারজাতকারী ট্রানশান, ভিভো, অপো, ফাইভস্টার, উইনস্টার ও লাভা ব্র্যান্ডের ফোনের কারখানা হয়।

সব মিলিয়ে এখন অন্তত ৯টি কারখানা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বাজার হিস্যাধারীদের মধ্যে কারখানা করার ক্ষেত্রে বাকি রয়েছে মুঠোফোন ব্র্যান্ড হুয়াওয়ে, শাওমি এবং নকিয়া।

৪৩% দেশে

মুঠোফোনের বাজার নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সমীক্ষা নেই। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হিসাবে, ২০১৯ সালে দেশে ৩ কোটি ২৮ লাখ মুঠোফোন বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে দেশে তৈরি অথবা সংযোজিত প্রায় ১ কোটি ৪২ লাখ ইউনিট। শতকরা হিসাবে যা ৪৩ শতাংশ।

আলোচ্য বছরে দেশে স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে ৭৭ লাখ, যার মধ্যে ৫৪ লাখ দেশে তৈরি অথবা সংযোজিত। বাকিটা বৈধ ও অনানুষ্ঠানিক পথে বাংলাদেশে আসে। অবৈধভাবে আসা মুঠোফোন ঠেকাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। যেটি চালু হলে অবৈধ মুঠোফোন ব্যবহার করা যাবে না।

দেশে তৈরি, মান কেমন

দেশে কারখানা চালু করার পর দুটো মডেলে ১২০ দিনে রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি (ত্রুটি দেখা দিলে বদলে দেওয়া) দিয়েছিল স্যামসাং। ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ফেরত আসার হার ছিল ১ শতাংশের অনেক কম। এটা খুবই ভালো নজির। তিনি বলেন, দেশে সংযোজনে মানের দিক দিয়ে কোনো হেরফের হয় না; বরং আরও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ বলেন, ‘বাংলাদেশের কারিগরি কর্মীরা খুবই দ্রুত শিখতে পারে। আমাদের কারখানায় একজন বিদেশি কর্মীও নেই। মানের ক্ষেত্রেও আমরা ভালো ফল পাচ্ছি।’

 রপ্তানির সম্ভাবনা কতটুকু

দেশে তৈরি স্মার্টফোনের প্রথম চালানটি এ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে যাবে। রপ্তানিকারক ওয়ালটন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্র্যান্ড ওয়ালটনের কাছ থেকে স্মার্টফোন নিচ্ছে। ওয়ালটন দাবি করেছে, অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার (ওইএম) হিসেবে ওই ব্র্যান্ডটিকে স্মার্টফোন তৈরি করে দিচ্ছে ওয়ালটন। ফলে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ওয়ালটনের তৈরি স্মার্টফোনগুলো আমেরিকার বাজারে বিক্রি হবে।

সিম্ফনি দেশের চাহিদা পূরণ করে ২০২২ সালে রপ্তানি করার লক্ষ্য ঠিক করেছে। তারা মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে মুঠোফোন রপ্তানির সম্ভাবনা দেখছে। সিম্ফনি ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কায় ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে বলে জানান জাকারিয়া শহীদ।

টেকনো ব্র্যান্ডের মুঠোফোন বাজারজাতকারী ট্রানশান বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানুল হক বলেন, চীনে খরচ অনেক বাড়ছে। সেখানে একজন শ্রমিকের মজুরি ৫০ হাজার টাকা। বাংলাদেশে ৮ হাজার টাকা। ফলে ভারত ও ভিয়েতনামের পাশাপাশি বাংলাদেশ মুঠোফোন তৈরির কেন্দ্র হতে পারে।

 দুই পক্ষ

মুঠোফোনের কারখানা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে দুটি পক্ষ রয়েছে। এক পক্ষ উৎপাদনকারী, তারা চায় উৎপাদনকারী ও সংযোজনকারীর মধ্যে উচ্চ হারে কর পার্থক্য থাকুক। আরেক পক্ষ বলছে, কর ছাড় পেতে যন্ত্রাংশ উৎপাদনের যে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয়।

মুঠোফোনের একটি যন্ত্রাংশের নাম পিসিবি। শর্তানুযায়ী উৎপাদনকারী হতে হলে পিসিবি তৈরি করতে হবে। বিদেশি কয়েকটি ব্র্যান্ড বলছে, বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ড নিজেরা সবকিছু তৈরি করে না। তারা সংযোগশিল্পের মাধ্যমে তা তৈরি করিয়ে নেয়। কেউ তৈরি করে চিপসেট, কেউ এলসিডি, কেউ আবার ক্যামেরার লেন্সের ক্ষেত্রে দক্ষ। এ ক্ষেত্রে অ্যাপলের উদাহরণ দেন। বলেন, অ্যাপল সবকিছু তৈরি করিয়ে নেয়। নিজেরা করে না।

ট্রানশান বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানুল হক বলেন, কেসিংয়ের একটি মোল্ডের দাম কোটি টাকা। একটি মোল্ড দিয়ে অন্তত ১০ লাখ কেসিং তৈরি না হলে খরচ উঠবে না। কেসিং, পিসিবি ইত্যাদি একেকটি যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য একটি কারখানা হতে পারে, যেখান থেকে সবাই তৈরি করিয়ে নেবে। নীতিমালায় এ বিষয়টি থাকা দরকার।

অবশ্য ওয়ালটন মোবাইলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এস এম রেজওয়ান আলম বলেন, দেশের বর্তমান কর–কাঠামো অনুযায়ী আমদানিকারকদের সঙ্গে সংযোজনকারীদের করভারের পার্থক্য ৩০ শতাংশ। কিন্তু সংযোজনকারীদের সঙ্গে উৎপাদনকারীদের কর ভারের পার্থক্য মাত্র ৫ শতাংশ। এর ফলে দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও নতুন আর কোনো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না।

বল এখন সরকারের কোর্টে।

13
করোনাভাইরাসের নানা ধরন রয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনোটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানে চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস তেমনই একটি ভাইরাস। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের সংক্রমণের বা কোভিড-১৯ রোগের কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর লক্ষণ প্রকাশে সর্বোচ্চ ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কোভিড-১৯-এর লক্ষণগুলো হলো:

■ শুকনো কাশির সঙ্গে জ্বর


■ শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা।

■ মাংসপেশিতে ব্যথা থাকতে পারে

এ ক্ষেত্রে সংক্রমণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে। এরপর শুকনো কাশি হতে পারে, যার এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ঝুঁকিতে যারা

যেকোনো ফ্লু–জাতীয় রোগে আনুষঙ্গিক রোগ যেমন কিডনি, হার্ট বা লিভার ফেইলিউর, আগে থেকেই অসুস্থ বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তি, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে এবং গর্ভবতী নারীরা ঝুঁকিতে থাকেন বেশি। নতুন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে প্রবীণদের মৃত্যুর হার বেশি। শিশুদেরও ঝুঁকি কম নয়।

সংক্রমণ ঠেকানোর উপায়

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যক্তিগত সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই:

■ ড্রপলেট ইনফেকশন অর্থাৎ হাঁচি-কাশির মাধ্যমে রোগটি ছড়ায়। আক্রান্ত, সন্দেহজনক আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো প্রতিরোধ। নিজেকে নিরাপদ রাখতে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত যেকোনো ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।

■ আক্রান্ত ব্যক্তি ও পরিচর্যাকারীর মুখে বিশেষ মাস্ক পরতে হবে। কখনোই নাক-মুখ না ঢেকে হাঁচি-কাশি দেবেন না। ব্যবহৃত টিস্যু বা রুমাল যথাযথ জায়গায় ফেলতে হবে।

■ বারবার সাবান-পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। যেসব বস্তুতে অনেক মানুষের স্পর্শ লাগে, যেমন সিঁড়ির রেলিং, দরজার নব, পানির কল, কম্পিউটারের মাউস বা ফোন, গাড়ির বা রিকশার হাতল ইত্যাদি ধরলে সঙ্গে সঙ্গে হাত পরিষ্কার করতে হবে।

■ মাছ-মাংস ভালো করে সেদ্ধ করে নিতে হবে।

14
  ১
গাজীপুরের প্রমিক্সো শিল্পপার্কে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম। ছবি: সানাউল্লাহ সাকিব
গাজীপুরের প্রমিক্সো শিল্পপার্কে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম। ছবি: সানাউল্লাহ সাকিব
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে আর দশজনের মতো চাকরির পেছনে ছোটেননি মৌসুমী ইসলাম। ২০০০ সালে বিদেশ থেকে দুটি চিকিৎসা সরঞ্জাম এনে বিক্রি করার মধ্য দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এরপর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করেন বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম। একপর্যায়ে গড়ে তোলেন নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রমিক্সো হেলথ কেয়ার। ২০১০ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ২০ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন প্রমিক্সো শিল্পপার্ক। এখন দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে তারকা মানের হাসপাতালগুলো প্রমিক্সো হেলথ কেয়ারের উৎপাদিত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ফার্নিচার ব্যবহার করে।


একসময় দেশে পুরো চিকিৎসা সরঞ্জাম ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের ফার্নিচার আসত বিদেশ থেকে। তা প্রমিক্সোর আগমনে কিছুটা কমেছে। আমদানিনির্ভরতা ছেড়ে প্রমিক্সো উৎপাদকে পরিণত হওয়ার ফলেই এমনটা হয়েছে। আর মৌসুমী ইসলামের প্রমিক্সো হেলথ কেয়ার তো এখন বিদেশেও চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ফার্নিচার রপ্তানির স্বপ্নও দেখছে।

প্রমিক্সো গ্রুপের গল্প শুনতে সম্প্রতি গাজীপুরে গিয়েছিলাম। প্রমিক্সো অবশ্য ‘আপার কারখানা’ নামেও সমধিক পরিচিত। মৌসুমী ইসলাম জানান, প্রমিক্সো গ্রুপের উঠে আসার পথে শুরু থেকেই পাশে ছিল বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংক। তিনি বলেন, ‘আইএফআইসি ব্যাংক পাশে না থাকলে এত দূর আসতে পারতাম না। প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে প্রমিক্সো আরও বড় হয়ে উঠবে। চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানির পরিবর্তে রপ্তানি করবে বাংলাদেশ।’

গ্রুপটি সম্পর্কে আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ার বললেন, ‘প্রমিক্সো একেবারে ক্ষুদ্র থেকে বড় হয়েছে। আগে বিদেশ থেকে পণ্য এনে বিক্রি করত। এখন নিজেরাই উৎপাদন করছে। বড় সরঞ্জামের পাশাপাশি ছোট চিকিৎসা সরঞ্জামও তৈরি করছে। ট্রেডিং থেকে উৎপাদনে গেছে প্রমিক্সো। সব মিলিয়ে ভালো করছে।’

প্রমিক্সো শিল্পপার্ক

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকায় ২০ বিঘা জমিতে গড়ে ওঠা প্রমিক্সো ইন্ডাস্ট্রিয়াল মানে শিল্পপার্কের পুরো এলাকাটা সাজানো গোছানো। সাতটি ভবনে রয়েছে ১৩টি উৎপাদন ইউনিট। পার্কে ঢুকতেই চোখে পড়ে কৃষি খামার। পাশেই কুকুর, বিড়াল, খরগোশ পালন চলছে। অন্যদিকে দেখা মিলল কয়েকটি জার্মান শেফার্ডের। এরপর উৎপাদন ইউনিটগুলো।

প্রমিক্সো শিল্পপার্কে কী কী পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে, তার একটা তালিকা দেখে নেওয়া যাক—অপারেশন থিয়েটার (ওটি) টেবিল, ওটি লাইট, করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) বেড, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বেড, ইসিজি মেশিন, প্রসূতি টেবিল, ডেন্টাল চেয়ার, রোগী মনিটর ও রোগী পরীক্ষার টেবিল। আরও উৎপাদিত হচ্ছে ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ, নেবুলাইজার, এয়ার পাম্প ম্যাট্রেস, ওজন মাপার স্কেল, ট্রাস্ট মি কনডম, সার্জিক্যাল ও এক্সামিনেশন গ্লাভস, অটোক্লেভ, সাকশন মেশিন, বেবি ইনকিউবেটর, ফটোথেরাপি মেশিন, আইসিইউ সরঞ্জাম, ফিজিওথেরাপির যন্ত্রপাতি এবং একবার ব্যবহারোপযোগী চিকিৎসা সরঞ্জাম (যেমন সিরিঞ্জ, নিডল, কেনোলা, গ্লাভস)।

পুরো শিল্পপার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে পরিবেশবান্ধব কারখানার আদলে, যেখানে রয়েছে অগ্নিনির্বাপণের সব ধরনের ব্যবস্থা ও নিজস্ব দমকল কর্মী। রয়েছে নিরাপত্তাকর্মী। আর প্রত্যেক কর্মীকে কাজ শুরুর আগে পরিধান করতে হয় অ্যাপ্রোন বা বিশেষ পোশাক। সব মিলিয়ে গ্রুপটিতে প্রায় ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ঘুরে ঘুরে কারখানা দেখানোর সময় প্রমিক্সো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘আমি এমন এক ব্যবসা করি, যাতে মান চুল পরিমাণ খারাপ হলেই ব্যবসা শেষ। তাই সবার আগে নিশ্চিত করতে হয় পণ্যের মান। এরপরই পণ্য সরবরাহ করা হয়।’

মৌসুমী ইসলাম কিছুটা গর্ব করেই বললেন, ‘দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে থাকা হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোও আমাদের পণ্য ব্যবহার করে। প্রয়োজনীয় নীতি-সহায়তা দেওয়া হলে দেশে বিদেশি চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানি অনেক কমবে। তবে এখনো চিকিৎসা সরঞ্জামের ৯৫ শতাংশ আমদানিনির্ভর।’

প্রমিক্সোর মেডিকেল সরঞ্জামের শোরুম ঢাকার উত্তরায়। যেটি দেশে উৎপাদিত মেডিকেল সরঞ্জামের প্রথম শোরুম। মৌসুমী ইসলাম বলেন, শিগগিরই সারা দেশে ৬৪ জেলায় শোরুম খুলবে প্রমিক্সো গ্রুপ। এর ফলে চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আর ঢাকামুখী হতে হবে না।

মৌসুমী ইসলাম, এমডি, প্রমিক্সো গ্রুপ
মৌসুমী ইসলাম, এমডি, প্রমিক্সো গ্রুপ
আরও যত ব্যবসা

মৌসুমী ইসলাম শুধু চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদন করেই থেমে নেই; গড়ে তুলেছেন প্লাস্টিক পণ্য, কাঠের ফার্নিচার ও স্টিলের ফার্নিচার তৈরির কারখানাও। পাশাপাশি পোষা প্রাণীকে নিরাপদে রাখা, এর খাদ্যের সংস্থান, যত্নআত্তি করাসহ উন্নত চিকিৎসার জন্য গড়ে তুলেছেন এলডি ভেটেরিনারি হাসপাতাল অ্যান্ড ডে-কেয়ার সেন্টার।

মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘যখন একটা হাসপাতালের কাজ পাই, তখন অন্য ফার্নিচারও সরবরাহ করতে হয়। এ জন্য নিজেই প্লাস্টিক, কাঠ ও স্টিলের ফার্নিচার তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছি, যাতে মান নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে।’

রাজধানীর উত্তরার রবীন্দ্র সরণির ১৪/এ নম্বর ভবনে মৌসুমী ইসলামের তৈরি ভেটেরিনারি হাসপাতালেরও জনপ্রিয়তা বাড়ছে দিন দিন। তিনি জানান, ২০১৯ সালে প্রায় ৬০০ প্রাণীর চিকিৎসা করা হয়েছে এই হাসপাতালে, যার ৭০ শতাংশই বিড়াল। বাকি প্রাণীদের মধ্যে বেশির ভাগ কুকুর। এ ছাড়া খরগোশ, গিনিপিগ, পায়রাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও আছে। পোষা প্রাণীর উন্নত চিকিৎসার জন্য বেসরকারি পর্যায়ে এমন বিশেষায়িত হাসপাতাল, দিবাযত্ন কেন্দ্র ও হোটেল সুবিধার কথা বাংলাদেশে এর আগে শোনা যায়নি।

সব মিলিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রমিক্সো গ্রুপের টার্নওভার বা মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৬৭ কোটি টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে লেনদেনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।

15
২০৪১ সালে দারিদ্র্যমুক্ত হবে বাংলাদেশ। নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১–এ এই লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। এ বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি এনইসির চেয়ারপারসন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় এটি অনুমোদন পায়। বাংলাদেশকে উচ্চ আয়ের উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে দেশের দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) অনুমোদন করা হয়েছে।

শিল্পে ভর করে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। জিডিপি বাড়ছে রেকর্ড হারে, কিন্তু কর্মসংস্থানের প্রভাব পড়ছে কম। রপ্তানি বাজারে কমেনি পোশাকশিল্পের নির্ভরতাও। অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও প্রবাসী আয়কে ঘিরে সাফল্য সবার নজর কেড়েছে। তাই উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্যে অবিচল বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর কৌশল কী হবে, তা স্পষ্ট হয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায়। ২০৪১ সালে মাথাপিছু আয় (পিপিপি) হবে সাড়ে ১২ হাজার মার্কিন ডলার, যেখানে বর্তমানে দেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজারে ডলারের বেশি।


পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে ০.৬৮ শতাংশে এবং দারিদ্র্য হার হবে ৩ শতাংশের নিচে। ২০৩১ সাল নাগাদ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে হবে ৯ শতাংশ, দারিদ্র্যহার ২০২০ সালের ১৮ দশমিক ৮২ শতাংশ থেকে কমে ৭ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্য ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ হবে। এ ছাড়া মানুষের গড় আয়ু হবে ৮০ বছর। আলোচনা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দারিদ্র্য দূর, সুশাসন আরও সুসংহত করা এবং বাংলাদেশকে আধুনিক ও বিশ্বমানের ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ ঐতিহাসিক ডকুমেন্টটি প্রণয়ন ও অনুমোদন করা হয়েছে।

সুশাসন, গণতন্ত্র, বিকেন্দ্রীকরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি—এই চারটি প্রাতিষ্ঠানিক স্তম্ভ ভিত্তি করে উন্নত দেশ হবে বাংলাদেশ। শিল্পায়ন ও এর অবকাঠামোগত রূপান্তর নিশ্চিত করা এবং কৃষি খাতে অনুকরণীয় পরিবর্তন আনা ও রপ্তানিমুখী অর্থনীতি গড়ে তোলা হবে অন্যতম লক্ষ্য। এ প্রকল্পের অনুমোদনের ফলে দেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাড়বে। পাশাপাশি কৃষি খাতেও আসবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। এতে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি দেখা যাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি। দেশের ক্রমবর্ধমান জিডিপির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আমাদের দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে।

উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাড়তি গুরুত্ব পাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও আইসিটি খাত। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে আইসিটি। এই খাতকে উন্নত করা হলে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

তবে আশার কথা, বর্তমানে বাংলাদেশের ১২টি জেলায় হাইটেক পার্কের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ফলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খোলা শুধু সময়ের ব্যাপার।

উল্লেখ্য, ওই সভায় জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সোনাদিয়া দ্বীপের পরিবর্তে অন্য এলাকায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। সোনাদিয়া দ্বীপের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে সেখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলে জানানো হয়। ফলে এ দ্বীপকে পর্যটনকেন্দ্রের আওতাধীন করে দেশের পর্যটনশিল্প বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়।

এতে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সরকারি অনুদান ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যথাযথ সমন্বয় সাধনের পাশাপাশি উত্তম পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি।

অন্যদিকে সমুদ্রবন্দর অন্যত্র তৈরি করা হলেও বাংলাদেশের অন্য তিনটি সমুদ্রবন্দরের ওপর চাপ কমবে। পাশাপাশি জাহাজের মাল খালাসের ক্ষেত্রে সময় ও অর্থ দুটিই সাশ্রয় হবে।

এসব ভাবনা এক করে বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ উপস্থাপন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে। কিছু পরিসংখ্যান হালনাগাদ করে এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে মার্চে। আগামী ২০ বছরের জন্য পরিকল্পনাটি তৈরি করা হবে।

Pages: [1] 2 3 ... 38