Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Mousumi Rahaman

Pages: 1 [2] 3 4 ... 15
16
ওজন বাড়লে সবার আগে তার প্রভাব মুখেই এসে পড়ে। মুখ ভারী দেখায়, গাল ফুলে যায়, বিশেষ করে থুতনির কাছে মেদ জমে গিয়ে চিন ভারী হয়ে যায়। চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। সমস্যা হলো, খুব সহজে এই মেদ কমানো সম্ভব হয় না। মুখের এই অংশের মেদ কমাতে কিছু আলাদা যোগব্যায়াম রয়েছে। নিয়মিত করলে থুতনির নিচের মেদ কমতে পারে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই।

সেন্টার ফর ইয়োগা সায়েন্সের ইয়োগা প্রশিক্ষক শ্যামলী মণ্ডল বলেন, যোগব্যায়ামের মাধ্যমে ভারী চিনসহ শরীরের আরও অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। অনেকেই একবারে সব ব্যায়াম করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে একটু বেশি সময়ের প্রয়োজন হতে পারে।

মকরাসন

উপুড় হয়ে শুয়ে লম্বা শ্বাস নিতে নিতে দুই হাত চোয়ালে রেখে হাতের কনুই জোড়া করে সামনের দিকে ঠেলে দেবেন। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ঘাড় পেছনে বাঁকিয়ে দিতে হবে। এভাবে ৩০ সেকেন্ড থাকবেন।

২০ সেকেন্ড বিশ্রাম নেওয়ার সময় উপুড় হয়ে শুয়ে দুই হাতের ওপর কপাল রাখুন।

17
সকালের নাশতা বা ব্রেকফাস্ট সারা দিনের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সকালে আমাদের মেটাবলিজম বা বিপাকক্রিয়ার শুরু, এ সময় সব ধরনের হরমোনও থাকে সক্রিয়।

সকালের স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে শুরু হবে দিনটা। সকালের নাশতা বাদ দিলে বা সময়মতো না খেলে সারা দিন ক্লান্ত লাগতে পারে। স্ট্যামিনা কমে যেতে পারে কাজের। কিন্তু ওদিকে আপনি হয়তো ডায়েট কন্ট্রোল করছেন, ক্যালরি মেপে খাচ্ছেন। তাহলে কেমন হওয়া উচিত আপনার স্বাস্থ্যকর নাশতা?

: যাঁরা ডায়েট করতে চান, তাঁদের উচিত হবে সকালের নাশতায় ২০০ থেকে ৩০০ ক্যালরি পরিমাণ খাবার গ্রহণ করা। এই খাবারে জটিল শর্করা ও আমিষ থাকতেই হবে। চর্বি বা তেল খুব কম পরিমাণে। সঙ্গে একটি তাজা ফল থাকা ভালো।

: বাড়িতে তৈরি রুটি এবং বাজারের গোটা শস্যের তৈরি ব্রাউন ব্রেড বা সিরিয়ালের চেয়ে পরোটা, নানরুটি বা সাদা পাউরুটিতে ক্যালরি ও চর্বির মাত্রা অনেক বেশি।

: সকালের নাশতায় খানিকটা আঁশ বা ফাইবার থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সহজ হবে। সকালের দিকেই কোষ্ঠ পরিষ্কার হবে।

স্বাস্থ্যকর নাশতা কেমন হতে পারে তার উদাহরণ



দুটি হাতে বেলা ছোট রুটি বা চাপাতি (প্রতিটি ৮০ ক্যালরি = ১৬০ ক্যালরি)

এক বাটি সবজি (১৫০ গ্রাম = ৮০ ক্যালরি)

অর্ধেক কলা (৬০ ক্যালরি)



১টা রুটি বা চাপাতি (৮০ ক্যালরি)

১টা ডিম (১৬০ ক্যালরি)

আধা বাটি ডাল (৮০ ক্যালরি)



এক বোল পরিজ দুধ: ২১৭ ক্যালরি



১ কাপ দুধ (১৫০ ক্যালরি)

২ স্লাইস ব্রাউন ব্রেড (১৫৫ ক্যালরি)

18
Faculty Sections / টিফিনে পুষ্টি
« on: September 19, 2018, 10:44:10 AM »
স্কুলে থাকতে হয় অনেকটা সময়। ওই সময় পুষ্টি চাহিদার যাতে কোনো ঘাটতি না হয়, তাই স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর টিফিন বাচ্চাদের নিশ্চিত করতে হবে। বাচ্চাদের অনেক ধরনের পছন্দ-অপছন্দ থাকে। তাই মাকে এমনভাবে টিফিন তৈরি করতে হবে, যাতে তা থেকে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়ার পাশাপাশি বাচ্চা আনন্দও পায়। খাবার অল্প পরিমাণে দিলেও কার্বোহাইড্রেট, চর্বি ও প্রোটিন—এই তিনটি প্রধান পুষ্টি উপাদান যাতে টিফিনে থাকে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

সঠিক টিফিন নির্বাচনে মাকে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে:

* সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে তার পছন্দ-অপছন্দের গুরুত্ব দিয়ে টিফিন মেনু নির্বাচন করতে হবে।

* অল্প পরিমাণে কিন্তু পুষ্টি উপাদান বেশি আছে—এমন খাবার টিফিনে দিন।

* ঝোলজাতীয় খাবার বাচ্চারা অপছন্দ করে, তাই এগুলো এড়িয়ে যান।

* এমন কোনো খাবার দেওয়া যাবে না, যেগুলো ঠান্ডা হলে শক্ত হয়ে যায়।

* খাবারকে সুন্দর করে টিফিন বাক্সে সাজিয়ে দিতে হবে।

* ফুড গ্রেড প্লাস্টিক বা খাবার ভালো থাকবে, এমন বাক্সে খাবার দিতে হবে।

* টিফিনের খাবার নরম ও সতেজ হওয়া জরুরি।

* বাইরের কেনা খাবার টিফিনে না দেওয়াই ভালো।

* যেকোনো টিফিনের সঙ্গে একটু শসা বা শুকনো ফল ইত্যাদি দিলে বাচ্চাদের ফল খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হবে।

* বাচ্চাদের টিফিন খাওয়াকে উৎসাহ দিতে একটু বেশি পরিমাণে টিফিন দিন। বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে মাঝেমধ্যে খেলে ভালো।

* যারা দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকে, তাদের অল্প করে দুবার খাওয়ার মতো টিফিন দিলে ভালো।

* শিশুরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে খেতে পারে, তাই ছোট আকারের খাবার টিফিনে দিন।

* ঘরে তৈরি টিফিন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তাই রকমফের করে ঘরের খাবার টিফিনে দিতে হবে।

* বাচ্চাদের টিফিনে ভাজাপোড়া খাবার দিলে লক্ষ রাখতে হবে যেন এসব খাবারে পুরোনো তেল ব্যবহার করা না হয়।

* টিফিনে রং, টেস্টিং সল্ট, কেনা বিস্কুটের গুঁড়া, অতিরিক্ত লবণ এড়িয়ে চলুন।

* গরমে খুব দ্রুত নষ্ট হতে পারে—এমন কোনো খাবার টিফিনে দেওয়া যাবে না। যেমন মেয়নিজ, সালাদ ড্রেসিং, আধা সেদ্ধ খাবার, কাঁচা খাবার ইত্যাদি।

টিফিন না খেলে শিশুকে বকা না দিয়ে তার কারণ জানার চেষ্টা করুন। সকালের নাশতা ঠিকমতো খেলেই শিশুরা ভালোভাবে টিফিন খাবে। তাই সকালের নাশতার অভ্যাস শিশুদের করাতে হবে। বাইরের কেনা খাবার শিশুদের নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন মাথাব্যথা, অ্যাসিডিটি, গ্যাস, রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। তাই ঘরের টিফিন শিশুদের জন্য নিরাপদ।

 ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর টিফিন

ঘরে তৈরি কেক, প্যানকেক, খিচুড়ি, রুটির সঙ্গে জ্যাম, ডিম আলুর চপ, সবজি কাটলেট, মুরগির কাটলেট, ডিম, মুরগি বা টুনা স্যান্ডউইচ, বুটের হালুয়া বা গাজরের হালুয়া, নুডলস, মাছের কাটলেট, ফ্রেঞ্চ টোস্ট, ঘরে তৈরি ফ্রায়েড রাইস, গ্রিল করা আলু, ফল, বিস্কুট (রকমারি), ঘরের বার্গার, ভেজিটেবল রোল ইত্যাদি।

মনে রাখবেন, ৩০ দিনের মধ্যে ২৪ দিনই শিশুকে টিফিন দিতে হবে। তাই মাসের শুরুতেই একটি রুটিন করলে আপনিও ঝামেলায় কম পড়বেন এবং শিশুটিও রকমফের খাবার উপভোগ করতে পারবে।

 লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল, ঢাকা

19


পম্পেই ছিল প্রাচীন রোমান নগরী। পরিকল্পিত নগরীটি চাপা পড়েছিল পাশের ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে সৃষ্ট জ্বলন্ত লাভার নিচে। বর্তমান ইতালির কাম্পানিয়া অঞ্চলের সেই পম্পেই নগরী ঘুরতে গিয়ে বিষণ্নতা আর মুগ্ধতার অনুভূতি হয় একই সঙ্গে।
আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে যাদের কৈশোর কেটেছে, তাদের কাছে পম্পেই মানে সেবা প্রকাশনীর বই দ্য লাস্ট ডেজ অব পম্পেই আর বাংলাদেশ টেলিভিশনে মুভি অব দ্য উইকে দেখা ধূসর বিষণ্নতার স্মৃতি। তাই পম্পেইয়ের নাম শুনলেই মনটা কেমন যেন করে ওঠে। কল্পনায় ভেসে ওঠে ভিসুভিয়াসের ফুটন্ত লাভার নিচে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটা জলজ্যান্ত শহরের চিত্র।

এই প্রাচীন শহর দেখার বাসনা নিয়েই ইতালির নেপলসে পা রাখি। জানা ছিল, নেপলস থেকে পম্পেইয়ের দূরত্ব বেশি নয়। রাতটা হোটেলে কাটিয়ে, সকাল ৮টায় বেরিয়ে পড়ি প্রাচীন শহরের উদ্দেশে। ট্রেনে ৪০ মিনিটেই পৌঁছে যাই। স্টেশন লাগোয়া পম্পেইয়ের প্রবেশপথ। পর্যটকদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো।


স্বপ্ন স্মৃতির শহরে

সারি ধরে টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম স্বপ্ন স্মৃতির শহরে। পোর্টা মারিনা প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল ভঙ্গুর দাঁড়িয়ে থাকা দেয়ালগুলো; এখনো টিকে থাকা ছাদগুলো। ভিসুভিয়াসের ছায়ায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। এখানে দাঁড়িয়ে দুই ধরনের বোধ হলো—একটি বিষণ্নতার, অন্যটি মুগ্ধতার।

দুই ধরনের অনুভূতি নিয়েই রাস্তা ধরে এগিয়ে যাই। চোখে পড়ল বাসিলিয়া। এটি ছিল নগরের আদালত প্রাঙ্গণ এবং মূল ব্যবসায়িক কেন্দ্র। এর ২৮টি কলাম এখনো জেগে আছে। এই প্রাঙ্গণ মুখরিত থাকত ব্যবসায়ী আর ব্যাংকারদের পদচারণে।

আরও কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর বেশ বিস্তৃত খোলা জায়গায় পৌঁছালাম। পম্পেই শহরের কেন্দ্রবিন্দু। এটার নাম ফোরাম। এখানেই নগরের সব বড় বড় অনুষ্ঠান হতো। ফোরামের চারদিকে বিভিন্ন ধরনের ভবন। অনেকগুলো স্মৃতিস্তম্ভও দেখা গেল ফোরাম স্কয়ারে। ফোরাম কিন্তু এখনো তার প্রাচীন কাঠামোর নিদর্শন ধরে রেখেছে। উত্তর-দক্ষিণমুখী মূল চতুষ্কোণা কাঠামোটি দৈর্ঘ্যে ৪৮২ ফুট আর প্রস্থে ১২৪ ফুট। স্কয়ারের দক্ষিণ দিকের দেয়ালের সঙ্গে রয়েছে মার্বেল-খচিত তিনটা বড় হল। এখানে বসতেন নগরের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। পশ্চিম দিকে ছিল শাকসবজি, ফলমূল আর বিভিন্ন খাবারের বাজার। এরই নিচের দিকে জুপিটারের মন্দির। ধারণা করা হয়, এই মন্দির খ্রিষ্টপূর্ব দুই শতকে নির্মিত।

আরও এগিয়ে যাওয়ার পর আমরা ঢুকি একটি ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে। সেখানে দেখা মেলে ফোরাম বাথের। অর্থাৎ গণ-গোসলখানা। যেখানে ছিল নারী-পুরুষের জন্য গোসলের আলাদা ব্যবস্থা। ঠান্ডা এবং গরম পানির সরবরাহও ছিল।


রোমান ধনীদের জীবনযাপন

ফোরাম বাথের পর আমরা গেলাম ‘হাউস অব স্যালাস্ট’ নামে এক বাসায়। শহরের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই বাসা থেকে বোঝা যায় কেমন ছিল রোমান ধনীদের জীবনযাপন। ছোট্ট একটা করিডর দিয়ে ভেতরে ঢুকেই বড় খোলামেলা একটি কামরা, যার নাম এট্রিয়াম। ঘরে আছে প্রচুর আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা। ছাদের মধ্যের একটি অংশ খোলা রাখা হয়েছে। সেখান থেকে বৃষ্টির পানি পড়ে মেঝেতে রাখা এম্পুভিয়া নামের একটি পুলে। এই সংগৃহীত পানি পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা হতো গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের জন্য। অতিথি ও পরিবারের সদস্যদের জন্য আলাদা ঘর আছে। এরপর আরেকটি ছোট করিডর পেরিয়ে দেখা মেলে বাসার ভেতরেই থাকা বাগানের। ‘হাউস অব স্যালাস্ট’ কিন্তু বিভিন্ন সময়ের স্মৃতি বহন করছে। বাড়ির মালিক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির স্টাইলে পরিবর্তন এনেছিল, আর আমরা জানতে পারছি রোমান সভ্যতার বিভিন্ন সময়কে।

ফাস্ট ফুডের দোকান

পম্পেই নগরীতে ছিল বেশ কয়েকটা বেকারির কারখানা। সেগুলো ঘুরে দেখা গেল বিভিন্ন ধরনের চুলা, নানা ধরনের রুটি আর খাবার তৈরির কারিগরি ব্যবস্থা। রাস্তার ধারেই টিকে আছে অনেকগুলো দোকান। এক গাইড দেখি একদল পর্যটককে বোঝানোর চেষ্টা করছে, এগুলো ছিল সেই সময়কার ফাস্ট ফুডের দোকান। নগরীজুড়ে নাকি ১২০টির মতো ফাস্ট ফুডের দোকান ছিল। দোকানগুলোতে ভিসুভিয়াসের কোলজুড়ে উৎপাদিত আঙুর থেকে তৈরি ওয়াইন বিক্রি হতো। জনপ্রিয় এই ওয়াইন কিনতে দূরদূরান্তের মানুষ আসত এই শহরে।


বারবনিতাদের ভবন ‘দ্য লুপানার’

এরপর দেখা মিলল পতিতালয়ের। পুরো নগরে প্রায় ২৫টি পতিতালয় চিহ্নিত করা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি একটা দোতলা ভবন যার নাম ‘দ্য লুপানার’। এর নিচতলায় পাঁচটা আর ওপর তলায় আরও পাঁচটা কক্ষ। ওপর তলায় একটা বড় কামরাও রয়েছে, সেটি বোধ হয় পার্টি করার জন্য। ছোট আকারের কক্ষগুলোতে একটি করে পাথরের ডিভান দেখা যায়। অন্য সব পতিতালয়ের মতো এখানেও রয়েছে শোষণ আর বঞ্চনার গল্প। এখানকার মেয়েদের ধরে আনা হতো উত্তর আফ্রিকা, এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের দখলকৃত এলাকা থেকে। পম্পেইয়ের যৌনজীবন নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা চলছে। এসব লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখা হয়েছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত।

ঐতিহ্যের থিয়েটার

নগরে দুটো থিয়েটারের সন্ধান পাওয়া গেছে। একটি আকারে ছোট। সেখানে কবিতাপাঠ, ছোট সংগীতায়োজন ও অভিনয় চলত। বড়টি উন্মুক্ত ছিল প্রায় ৫ হাজার দর্শকের জন্য। সেখানে আয়োজন করা হতো নাটক এবং বড় ধরনের সংগীত পরিবেশনার।

মূল শহর পেরিয়ে একটু বাইরে টিকে আছে রোমান সময়ের সবচেয়ে পুরোনো অ্যাম্পিথিয়েটারটি। খ্রিষ্টপূর্ব ৭০-৮০ শতকে এটি নির্মিত হয়। এর নাম ক্যাভেয়া। এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসার ব্যবস্থা ছিল। এখানে গ্লায়াডিয়েটররা নিয়মিত লড়ত ভয়ানক সব প্রাণীর বিপক্ষে। ৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ক্যাভেয়াতে নাকি পম্পেই আর নুসেরিয়া শহরের মধ্যে খেলাধুলা নিয়ে রীতিমতো দাঙ্গা লেগে যায়। এরপর নাকি অনেক দিন এখানে খেলাধুলা নিষিদ্ধ ছিল।

প্রায় টানা সাড়ে তিন ঘণ্টার পরিভ্রমণ সেরে যখন আমরা বের হচ্ছি তখন মনে হলো ২০ হাজার মানুষের নানা প্রয়োজন মাথায় রেখে আজ থেকে ১৯৩৯ বছর আগে কত গোছানোভাবে তৈরি হয়েছিল পম্পেই নগরী। সেই নগরীর পরিকল্পনায় রাখা হয়েছিল পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা সরবরাহের ব্যবস্থা, সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের জন্য খোলা জায়গার ব্যবস্থা, সবুজের জন্য বাগান এবং মূল শহরের বাইরে অ্যাম্পিথিয়েটার। প্রাচীন নগরীর পরিকল্পনাবিদেরা যে চিন্তা–চেতনায় আধুনিক ছিল তা বলাই যায়। বিষণ্নতা আর ভালো লাগা—এই দুই অনুভূতি নিয়েই আমরা বিদায় নিলাম ভিসুভিয়াসের ছায়ায় থাকা পম্পেই নগরী থেকে।

20
গায়ে নিয়মিত রোদ না লাগালে রক্তে ভিটামিন ডি কমে যায়। ভিটামিন ডি ছাড়া আমাদের অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণ হয় না, ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যেতে পারে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, মেটাবলিক সিনড্রোমসহ আরও নানা রোগের সঙ্গে ভিটামিন ডির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আবার সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্যানসারের জন্যও দায়ী। তাই বিশেষজ্ঞরা রোদে বেশি পুড়তে নিষেধও করেন। তাহলে কতটা রোদ আসলে ভালো?

: আমাদের ত্বকে রোদ পড়ার পর ভিটামিন ডি শোষিত হয় এবং যকৃৎ ও কিডনির মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায় পার হয়ে রক্তে উপকারী ভিটামিন ডি-এ রূপান্তরিত হয়। এই ভিটামিন ডি তখন ক্যালসিয়াম শোষণসহ নানা কাজে আসে। দুগ্ধজাত খাবার, সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম, কমলার রস ইত্যাদি কিছু খাবারে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। তাই এখন পর্যন্ত সূর্যের আলোই ভিটামিন ডির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও সস্তা উৎস। এ ছাড়া ত্বকের মেলানিন ও পরিবেশদূষণের কারণে আমরা ভিটামিন ডি কম পাই। তাই যথেষ্ট ভিটামিন ডি পেতে হলে রোদে প্রতিদিন একটু-আধটু বের হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

: দুপুরের খাড়া রোদে অতিবেগুনি রশ্মি বেশি। এটি ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক। বলা হয়, সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত যতক্ষণ ছায়া ছোট থাকে, ততক্ষণ সূর্য অতিবেগুনি রশ্মি বেশি ছড়ায়। এই সময়ের আগে বা পরে প্রতিদিন ২০ মিনিট রোদে হাঁটাহাঁটি করলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া যাবে কোনো ক্ষতি ছাড়া।

: অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ত্বকে সানস্ক্রিন লাগিয়ে রোদে হাঁটাহাঁটি করা যায়। অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব আমাদের মতো তামাটে বা কালো ত্বকে কিছুটা কম। সানস্ক্রিন লাগালে ভিটামিন ডি কম পাওয়া যাবে, এ ধারণাও ভুল। সবচেয়ে ভালো হলো যখন রোদ নরম থাকে (ভোর ও বিকেল) হাত-পায়ের কিছু অংশ অনাবৃত করে গায়ে রোদ লাগানো।

21
ব্যায়ামের উপকারিতা জানা আছে সবারই কমবেশি। তবে নিয়ম করে ব্যায়াম করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। কদিন ব্যায়াম করলেন, আবার কদিন বাদ দিলেন, এভাবে অনিয়ম হলে চলবে না।

হঠাৎ ব্যায়াম ছেড়ে দেওয়াও ঠিক নয়। কিছুদিন খুব কঠোর পরিশ্রমের ব্যায়াম করে আবার কিছুদিনের জন্য ব্যায়াম একেবারেই বাদ দিয়ে দিলেন, এমনটা করবেন না। এর চেয়ে বরং সহজ ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস ধরে রাখুন।

যাঁরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যায়াম করেন বা হাঁটাহাঁটি করেন, তাঁরা যদি হুট করে ব্যায়াম ছেড়ে দেন, তাহলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

শরীর ফিট রাখতে যাঁরা ব্যায়াম করেন, তাঁরা ব্যায়াম ছেড়ে দিলে ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে তো বিঘ্ন ঘটবেই। যাঁরা ওজন কমানোর ব্যায়াম করেন তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যায়াম ছেড়ে দিলে হুট করে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে; কারণ ব্যায়ামের মাধ্যমে যেমন নিয়মিত হারে ক্যালরি পোড়ানো হচ্ছিল, সেটি আর সম্ভব হয় না।

সুস্থ হৃৎপিণ্ডের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম চাই। নিয়মিত ব্যায়ামে রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যায়ামের জন্য সময় বের করা এমনিতেও কঠিন; তা ব্যস্ততার জন্যই হোক আর আলসেমির কারণেই হোক। কাজেই একবার ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে সেটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করাই শ্রেয়। অভ্যাস ছুটে গেলে নতুন করে অভ্যাস তৈরি করা কঠিন। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করুন। ভারী ব্যায়াম করতে পারলে অবশ্য সপ্তাহে ৭৫ মিনিটই যথেষ্ট।

22
সারা দিন খুব ক্লান্ত লাগে, অবসন্ন লাগে? কোনো কাজ করতে মন চায় না? মনে হয় কেবল বিশ্রাম নিই। শরীর ব্যথা করে, ম্যাজম্যাজ করে। ঘুম ঘুম ভাব হয়।

আজকাল রোগীরা প্রায়ই এমন সব সমস্যার কথা বলেন। আদিম যুগে মানুষ শিকারি ছিল, বৈরী পরিস্থিতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হতো। তখন তাকে সাহায্য করত নানা স্ট্রেস হরমোন, যেমন কর্টিসল, এপিনেফ্রিন ইত্যাদি। বর্তমানে মানুষের স্ট্রেস বা মানসিক চাপের ধরন আলাদা। এখনো প্রচুর স্ট্রেস হরমোন তৈরি হয় বটে, কিন্তু তা আগের মতো খরচ হয় না। এই স্ট্রেস হরমোনের ক্ষতিকর প্রভাবে আমাদের রক্তে শর্করা, রক্তচাপ বাড়ে, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে, অবসাদ বাড়ে, বিষণ্নতা বাড়ে, এমনকি ওজনও বাড়ে।

স্ট্রেস হরমোনের এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তি লাভের উপায় হলো মানসিক চাপ কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম বা পরিশ্রম করে হরমোনের লাগাম টেনে ধরা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও যথেষ্ট ঘুম। প্রার্থনা, যোগব্যায়াম, মানবসেবায় নিয়োজিত হওয়া, গাছপালা বা পশুপাখির পরিচর্যা, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটানো, ঘুরতে যাওয়া—এমন নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আপনি স্ট্রেস হরমোন কমাতে পারেন। ভাবছেন সারা দিন এত পরিশ্রম করি, তারপর আবার ব্যায়াম? আসলে এই নিত্যনৈমিত্তিক পরিশ্রমে স্ট্রেস হরমোন খরচ হয় না, বরং ক্লান্তি বাড়ে।

স্ট্রেস হরমোন কমাতে সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০ মিনিট করে এমনভাবে হাঁটতে হবে, যাতে হৃৎস্পন্দন বাড়ে, রক্ত চলাচল বাড়ে। যত কাজই থাকুক, রাতে নিশ্ছিদ্র ঘুম চাই ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। ঘুমের আগে ফেসবুক, মুঠোফোন, টিভি দেখা বন্ধ করুন।

থাইরয়েড হরমোন, সেক্স হরমোন, ভিটামিন ডি কমে গেলেও ক্লান্তি ও অবসাদ দেখা দেয়। রক্তশূন্যতাও হতে পারে একটি কারণ। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে আপনার ক্লান্তি ভাব আসবেই। কিছু ওষুধ শরীরের লবণ-পানি কমিয়ে দেয় ও অবসাদগ্রস্ত করে তোলে। তাই এসব দিকেও খেয়াল রাখুন।

ক্লান্তি ও অবসাদ কমাতে তাই প্রথমে প্রয়োজন আপনার সচেতনতা। বিভিন্ন খাবারের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন। ক্যালরি ও প্রয়োজনীয় ভিটামিন খনিজের মাত্রা বুঝে খাবার বেছে খান। জাঙ্ক ফুড, কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত ব্যায়াম করে স্ট্রেস হরমোন ঝেড়ে ফেলুন। ঘুমের ব্যাপারে কোনো আপস নয়। স্বাস্থ্যকর ও আনন্দময় জীবনযাপনের চেষ্টা করুন। এরপরও ক্লান্তিবোধ দূর না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল

23
৭-৮ মাস বয়সে বা-দা-মা ইত্যাদি অর্থহীন শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে শিশুর মুখে প্রথম বোল ফোটে। এরপর ক্রমে ভাষাজ্ঞান অর্জনের ধাপগুলো বিকশিত হয়। জীবনের প্রথম ৩ বছর কথা ও ভাষা বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। শ্রবণপ্রতিবন্ধিতা, অটিজম, ঠোঁটকাটা-তালুকাটাজাতীয় সমস্যা কথা বলার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

শিশুর কথা বলার নৈপুণ্য অর্জনে মা-বাবার ভূমিকা অনেক। শিশুর কথা শেখার সময় আপনি যেভাবে সাহায্য করতে পারেন।
* প্রতিদিন শিশুকে কিছুটা সময় দিতে চেষ্টা করুন। তার যেকোনো কথার প্রতি আগ্রহ দেখান। শিশু কিছু বলতে চেষ্টা করলে উৎসাহিত করুন।
* খেলা ও ছবির বই দিয়ে শিশুকে শেখান; যেমন বলের ছবি দেখিয়ে ‘এটি বল’ বলুন।
* শিশুরা সাধারণত ছন্দ ও সংগীত ভালোবাসে। তাই ছড়াগান, ছড়া, কবিতা, গানের মাধ্যমে খেলা করতে শেখান।
* শব্দ হয় এ ধরনের খেলা যেমন—পুতুল, ঝুনঝুনি, গাড়ি ইত্যাদি দিয়ে খেলতে খেলতে এ সম্পর্কে বলুন।
* বাইরের পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হতে দিন। যেমন—রাস্তায় গাড়ি, আকাশে বিমান, পার্কে গাছপালা, মাটিতে পড়ে থাকা পাতা দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে দিন।
* নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যেমন—থালা-বাসন, গ্লাস-চামচ ইত্যাদির সঙ্গেও পরিচিত করান। খাওয়ার সময় শিশুকে কী খাওয়াচ্ছেন, খেতে কেমন স্বাদ সে সম্পর্কেও কিছু বলুন।
* ইশারার চেয়ে মুখে চাইতে শেখান। যেমন—শিশু যদি হাত দিয়ে বেলুন দেখায়, আপনি বলবেন—এটা হলো বেলুন, তুমি কি বেলুন চাও?
* দুই বছরের কম বয়সী শিশুর টেলিভিশন না দেখাই ভালো। দুই থেকে ছয় বছর বয়সে কেবল ২ ঘণ্টার জন্য মা-বাবার সঙ্গে বসে বোধগম্য ভাষার অনুষ্ঠান দেখবে।

 

বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

24
Faculty Sections / সহজ কাজে ওজন কমান
« on: September 13, 2018, 02:28:29 PM »
একজন মানুষের সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকা অবস্থাতেও কিছুটা ক্যালরি ক্ষয় হয়। হৃৎপিণ্ড সচল রাখতে, শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে বা দেহের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় এই ক্যালরি খরচ হয়। একে বেসাল মেটাবলিক রেট (বিএমআর) বলা হয়। বিএমআর মানুষ ও পরিস্থিতিভেদে ভিন্ন। বিএমআরের সঙ্গে ওজন বাড়া-কমার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে যাঁরা ডায়েট করে থাকেন, তাঁদের নিম্ন মেটাবলিক রেট থাকলে ওজন কমাতে সমস্যা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, স্রেফ ঘরে পায়চারি, এটা-ওটা ছোট কাজকর্ম, পা নাচানো ইত্যাদি করেও সপ্তাহ শেষে প্রায় ৩৫০ ক্যালরি ক্ষয় হতে পারে। এখন দেখা যাক আমরা নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়ামের বাইরেও কীভাবে দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমে মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে ক্যালরি ক্ষয় বাড়াতে পারি।

: বাড়িতে বা অফিসে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারেন। ১২টি সিঁড়ি ওঠা ও নামার পর আপনি ৫ ক্যালরি ক্ষয় করতে পারবেন।

: কিছুটা দূরে গাড়ি পার্ক করে বা বাস থেকে নেমে বাকিটা পথ হেঁটে আসুন।

: কোনো কারণে হাঁটতে হলে (যেমন বাজার করার সময়) একটু দ্রুত লয়ে হাঁটুন।

: অফিসে প্রতি এক ঘণ্টা পরপর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান, আড়মোড়া ভাঙুন ও পারলে পায়চারি করুন।

: বাড়িতে টিভি দেখা বা বসে পত্রিকা পড়ার মাঝে এদিক-ওদিক হাঁটাহাঁটি করুন। ঘরের কাজ করতে পারেন। ১৫ মিনিট মেঝে ঝাড়ু দিলে ৩৯ ক্যালরি, দাঁড়িয়ে বাসনকোসন ধুলে ২২ ক্যালরি ক্ষয় হয়।

এভাবে প্রতিদিন ক্যালরি ক্ষয়ের পরিমাণ একটু একটু বাড়িয়ে আমরা তা সপ্তাহা‌ন্তে মোট ব্যায়ামের সঙ্গে যোগ করতে পারি। সেই সঙ্গে ক্যালরি গ্রহণও কমাতে হবে। কেউ যদি প্রতিদিন অতিরিক্ত ১০০ ক্যালরি পরিমাণ খাবার গ্রহণ করে, তবে বছর শেষে ৪ থেকে ৫ কেজি ওজন বাড়বে।

25
গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুর নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় অস্ত্রোপচারের (সিজারিয়ান) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইদানীং বিশ্বব্যাপী এমন অস্ত্রোপচারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন শিশুর জন্মের পর একজন মায়ের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে প্রায় চার-পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যায়। আর স্বাভাবিক প্রসবের পর মা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন।

নির্ধারিত সময়ের আগেই শিশুর জন্মের অস্ত্রোপচার করা হলে সেই নবজাতক প্রিম্যাচিওর হয়ে থাকে। এই প্রিটার্ম ও স্বল্প ওজনের নবজাতক নানা রকমের রোগ ও জটিলতায় পড়তে পারে। স্বাভাবিক প্রসবে জন্ম নেওয়া নবজাতকের তুলনায় অস্ত্রোপচারে জন্ম নেওয়া বাচ্চাদের তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। যেমন

■ অস্ত্রোপচারে জন্ম নেওয়া শিশুর প্রথম ২৮ দিন বয়সের মধ্যে জন্ডিস, খাওয়ানোর সমস্যা ও শীতল হয়ে যাওয়ার হার অধিক।

■ স্বাভাবিক প্রসবে জন্ম নেওয়া শিশুর তুলনায় ডায়াবেটিস, ওবিসিটির (স্থূলতা) হার বেশি।

■ অস্ত্রোপচারে জন্ম নেওয়া শিশুদের নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস উচ্চ হারে ঘটে, তাদের মধ্যে একজিমা হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

অস্ত্রোপচারে জন্ম নেওয়া শিশুর ঝুঁকি কমাতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

: মায়ের অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে শিশুকে আলাদা রাখা উচিত নয়। যদি শিশুর সবকিছু ঠিক থাকে তবে দ্রুত তার তাপমাত্রা নিশ্চিত করে কাপড়ে জড়িয়ে মায়ের বুকে দেওয়া উচিত। মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

: যতটা সম্ভব মায়ের গর্ভে প্রায় সম্পূর্ণ সময় অতিবাহিত হয়, সে চেষ্টা করাই ভালো।

: নিয়মিত টিকাদান ও স্বাস্থ্য দেখভাল এসব ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। 


বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

26
বাইরে প্রখর রোদ এখনো। গরমও কমেনি। বরং আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ঘাম হচ্ছে খুব। এমন আবহাওয়ায় সহজেই পানিশূন্যতা হয়, কখনো রক্তে লবণও কমে যেতে পারে বেশি ঘামার কারণে। এ ছাড়া গরমজনিত অসুস্থতাও হয় অনেকের।

চিকিৎসকেরা বারবার পরামর্শ দেন, বেশি করে পানি পান করুন, পানিশূন্যতা এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে যাঁরা বাইরে রোদে কাজ করেন বা যেসব শিশু খেলাধুলা করে। কিন্তু কতটুকু পানি খাবেন?

প্রথমত, শরীরে পানির অভাব হচ্ছে কি না, তা বোঝার জন্য আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশে পিপাসা কেন্দ্র আছে। যখনই পানির অভাব হয়, এই কেন্দ্র জানান দেয় যে পানি পান করতে হবে। অবশ্য খুব ছোট শিশু ও বৃদ্ধ বা স্মৃতিভ্রম, স্ট্রোকের রোগী বা মানসিক রোগীরা নিজের চাহিদা ভালো করে বুঝতে পারেন না বা প্রকাশ করতে পারেন না। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে চাই সতর্কতা। আমাদের আবহাওয়ায় একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বা নারীর দৈনিক সাত থেকে আট গ্লাস পানি পান করলে মোটামুটি চাহিদা মেটে। কিন্তু জ্বর, ডায়রিয়া, বমি, বেশি ঘাম এই চাহিদা বাড়িয়ে দিতে পারে।

আমাদের আবহাওয়ায় একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বা নারীর দৈনিক সাত থেকে আট গ্লাস পানি পান করলে মোটামুটি চাহিদা মেটে
দ্বিতীয়ত, পানি বেশি পানও ভালো নয়। ওভারহাইড্রেশন হলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে, কারও আবার শরীর ফুলে যেতেও পারে। কিডনি, যকৃৎ ও হৃদ্‌রোগীদের চিকিৎসক পানি মেপে খেতে বলেন, সে জায়গায় অতিরিক্ত পানি পান করা বিপজ্জনক হতে পারে। অ্যাথলেট বা খেলোয়াড়েরা প্রচুর ঘামেন, যাতে লবণপানি দুটিই হারায় শরীর, সে ক্ষেত্রে তাঁরা যদি শুধু বারবার পানি পান করেন, তাহলে রক্তে লবণের ভারসাম্যহীনতা হতে পারে। তাঁদের উচিত ইলেকট্রোলাইটসহ পানি, ডাবের পানি, স্যালাইন পানি পান করা। অথবা শুধু পানির সঙ্গে মাঝেমধ্যে লবণাক্ত স্ন্যাকস খাওয়া। আর কিডনি, যকৃৎ বা হৃদ্‌রোগীরা কতটুকু পানি পান করবেন, তা তাঁদের প্রস্রাবের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। ২৪ ঘণ্টায় যতটুকু প্রস্রাব হয়েছে, তার চেয়ে ৫০০ মিলিলিটারের মতো বেশি খেলেই হলো।

তৃতীয়ত, পানিশূন্যতা হলে আমাদের মাথা ফাঁকা লাগে, ত্বক ঢিলে হয়ে যায়, চোখ গর্তে ঢুকে যায়। সবচেয়ে বড় কথা, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় বা প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়। বিশেষ করে শিশুদের এসব লক্ষণ দেখলে বুঝবেন যে পানিশূন্যতা হচ্ছে, পানি পূরণ করতে হবে। আরেকটা কথা, পানির বদলে চিনিযুক্ত ড্রিংকস, কোলা বা জুস খেলে তাতে পানিশূন্যতা দূর হয় না, বরং এগুলো রক্তের ঘনত্ব আরও বাড়ায়।

27
৮ থেকে ৯ বছর বয়স থেকে শুরু হয় বয়ঃসন্ধি। ১২ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত একজন কিশোরী বা টিনএজ মেয়ে শরীরে-মনে নানাভাবে বাড়তে থাকে। নানা রকমের হরমোনজনিত পরিবর্তন ঘটে তার শরীরে। এই সময় চাই একটি সুষম বা সঠিক পুষ্টি। সঠিক ধারণার অভাবে এ সময় কারও বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, কেউ আবার হঠাৎ মোটা হয়ে যেতে থাকে, কারও দেখা দেয় রক্তশূন্যতা, ভিটামিনের অভাব। তাই কিশোরীর পুষ্টি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা চাই।

প্রথমত, বয়ঃসন্ধিতে মেয়েদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা মেনার্কি বা রজঃস্বলা হওয়া। এ সময় যথেষ্ট আয়রনযুক্ত (লৌহ) খাবার না খেলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। মাসিকের দিনগুলোতে প্রতিদিন একটি মেয়ের এক মিলিগ্রাম করে আয়রন চলে যায়। তাই বাড়ির ছেলেটির চেয়ে মেয়েটির আয়রনযুক্ত খাবারের চাহিদা বেশি। ছেলেদের আয়রনের দৈনিক চাহিদা ১১ মিলিগ্রাম, মেয়েদের প্রায় ১৫ মিলিগ্রামের বেশি। এই বাড়তি আয়রন পেতে আপনার মেয়েকে নিয়মিত সবুজ শাক, বিশেষ করে কচু, কচুশাক, মাংস, কলিজা, ডিম, নানা ধরনের ফল, বিশেষ করে বেদানা, আনার, খেজুর, সফেদা, কিশমিশ ইত্যাদি খেতে দিন।

দ্বিতীয়ত, শারীরিক বৃদ্ধির জন্য এবং মজবুত হাড়ের জন্য টিনএজারদের প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি চাই। বয়স বাড়লে পুরুষদের তুলনায় নারীদের অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি। কেননা একজন নারীকে সন্তান ধারণ করতে হয়, বুকের দুধ খাওয়াতে হয় যখন প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়ামের দরকার হয়। তা ছাড়া হাড়ের সর্বোচ্চ ঘনত্ব তৈরি হয়ে যায় ১৮ থেকে ২১ বছরের আগেই, এরপর তা আর বাড়ে না। তাই মজবুত হাড়ের জন্য খেতে হবে দুধ, দুগ্ধজাত খাবার যেমন: দই, পনির, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, পাতাওয়ালা সবুজ সবজি ইত্যাদি।

তৃতীয়ত, সঠিক বেড়ে ওঠা ও পেশির বৃদ্ধির জন্য ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী মেয়ের দৈনিক ৩৪ গ্রাম আমিষ খাওয়া উচিত, আর ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সে দৈনিক ৪৫ গ্রাম। তাই প্রতিদিনি মাছ বা মাংস, ডিম, দুধ, বীজ ও ডালজাতীয় খাবার, নানা ধরনের বাদাম দিন মেয়েকে। যারা একটু খেলাধুলা করে, তাদের আমিষের চাহিদা আরও বেশি। এর বাইরে টিনএজ মেয়েদের আয়োডিন, জিঙ্ক ও ফলেট-জাতীয় খনিজের চাহিদা বেশি। তাই খেতে হবে সামুদ্রিক মাছ, সবুজ শাকসবজি ও ফল।

চতুর্থত, এই বয়সে হঠাৎ মুটিয়ে গেলে নানা ধরনের হরমোনজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে, মুখে লোম গজায়। তাই অতিরিক্ত ক্যালরি-সম্পন্ন খাবার যেমন: ভাজাপোড়া, মিষ্টান্ন, কেক পেস্ট্রি, ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় ইত্যাদি কম খাওয়াই ভালো। আজকাল অনেক কিশোরী আবার স্লিম হওয়ার জন্য ক্রাশ ডায়েট করে, যা খুবই ক্ষতিকর।

28
Faculty Sections / অল্পতেই বেশি রাগ!
« on: September 13, 2018, 02:22:49 PM »
রেগে গেলে আমার যে কী হয়…মাথার কিছু ঠিক থাকে না’—এমনটা বলতে শোনা যায় অনেককে। সামান্য বিষয়ে রেগে গিয়ে জিনিসপত্র ভাঙচুর, গালাগালি, চিৎকার-চেঁচামেচি, এমনকি নিজেকে বা অপরকে আঘাত করেন।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় রাগ একটি স্বাভাবিক আবেগ হলেও এর প্রকাশ যদি অনিয়ন্ত্রিত বা অন্যের জন্য ক্ষতিকারক অথবা অপ্রীতিকর হয়, তখন এটি নিঃসন্দেহে অগ্রহণযোগ্য। রাগের কারণে সম্পর্কের বিচ্ছেদ, বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি, অঙ্গহানি বা এমনকি কারও মৃত্যুর খবরও উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে। তবে রাগের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু ব্যক্তি নিজেই। দূরত্ব তৈরি হয় তার পারস্পরিক সম্পর্কে, কমে যায় এর গুণগত মান অথবা তার প্রতি অন্যদের সম্মানবোধ, আগ্রহ। বিষণ্নতা, হীনম্মন্যতা বা অপরাধবোধে আক্রান্ত হয় ব্যক্তি। শুধু তা-ই না, অতিরিক্ত রাগ কমিয়ে দিতে পারে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের স্বাভাবিক দক্ষতা অথবা উৎপাদনশীলতা। বিঘ্ন ঘটায় সার্বিক জীবনছন্দে।

রেগে যাই কেন?
রাগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের মানসিক অবস্থার একটি বহিঃপ্রকাশ।
ফ্রয়েডের মতে, অন্যের প্রতি আক্রমণ মানুষের নিজের প্রতি ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তির এক রকম আত্মরক্ষামূলক আচরণ (ডিফেন্স) মাত্র। আলবার্ট বান্দুরার মতো মনোবিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, ব্যক্তির অনিয়ন্ত্রিত রাগ মূলত তিনি পরিবেশ থেকেই শেখেন। তার মতে, ব্যক্তি তার আগ্রাসীভাবের কারণে চারপাশের মানুষের কাছ থেকে কোনো না কোনোভাবে উপকৃত হয় (তার ইচ্ছা পূরণ হওয়া, অন্যদের ওপর নিয়ন্ত্রণ, অপরের ‘সমীহ’ ইত্যাদি)। অনেক সময় অন্যের আগ্রাসনও যখন পরিবার ও সমাজ কর্তৃক নানাভাবে উৎসাহিত হতে দেখে, সেটাও তাকে উৎসাহিত করে। তবে এ বিষয়ে অন্যতম শক্তিশালী তত্ত্ব জন ডোরাল্ডের ফ্রাস্ট্রেশন-অ্যাগ্রেশন মতবাদ। রাগ মূলত মানুষের আশাভঙ্গ, নিষ্ফলতা, ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে সে আশাভঙ্গ বা বিফলতার মাত্রা যদি গ্রহণযোগ্য না হয় বা এর মাত্রা যদি গভীরতর হয়।

উদ্বিগ্ন বা বিষণ্নতা: ব্যক্তি যদি কোনো বিষয়ে নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে থাকে, সে ক্ষেত্রেও তার অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা রেগে যাওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে।
সামাজিক দক্ষতার অভাব: সমস্যা সমাধান বা দৈনন্দিন জীবনের নানামুখী চাপ ভালোভাবে মোকাবিলা করতে না পারা, অন্যের কাছে সঠিকভাবে প্রকাশের অদক্ষতা ইত্যাদি ব্যর্থতার দায় ব্যক্তি অনেক সময় কাছের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়।

কাজ ও সময়ের চাপ: অনেক কাজ একসঙ্গে এসে গেলে অথবা অল্প সময়ের মধ্যে অনেক কাজ শেষ করতে গিয়ে সেসব যদি ঠাকমতো না হয়, তাহলে অনেকের মধ্যে টেনশন বা হতাশা জমতে জমতে রাগ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।

পারিবারিক পরিবেশ: ছোটবেলায় যদি কেউ এমন পরিবেশে বড় হয়, যেখানে মা-বাবা বা অভিভাবকেরা অল্পতেই রেগে যান, সেই পরিবারে শিশুরাও একই ধরনের আচরণ শেখে।
কিছু মানসিক সমস্যা: বিভিন্ন মানসিক সমস্যা, যেমন ব্যক্তিত্বের ত্রুটি, বিষণ্নতা রোগ, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার, উদ্বিগ্নতা রোগ, শুচিবায়িতা, মাদকাসক্তি, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, কনডাক্ট ডিসঅর্ডার, ডিমেনশিয়া ইত্যাদির অন্যতম উপসর্গ রাগ।

এ ছাড়া খুঁতখুঁতে স্বভাব, হীনম্মন্যতাবোধ, অতিরিক্ত কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব, সবকিছুতে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ, ব্যর্থতা মেনে না নেওয়ার মনোভাব ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের মানুষের মধ্যে অল্পতেই রেগে যাওয়ার প্রবণতা থাকে।

রাগ সামলাবেন কীভাবে
সিদ্ধান্ত নিন: রাগ যে আপনার একটি নেতিবাচক আবেগ, যার কারণে আপনার ও অন্যদের যে ক্ষতি হচ্ছে, সেটি আগে নির্দিষ্ট করুন, পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিন।
তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানো থেকে বিরত থাকুন: রেগে গেলে সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে নিজের কাছে কিছু সময় নিন। দেখবেন এই সময়ক্ষেপণের ফলে আপনার উত্তেজনা বা রাগের তীব্রতা কমে গেছে। ফলে রাগত অবস্থায় আপনি যেমন ধংসাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখাতেন, রাগ কমে যাওয়ার পরে আপনি অনেক সঠিকভাবে আপনার মনোভাব অন্যের কাছে পৌঁছাতে পারবেন।

পরিস্থিতি থেকে সরে আসুন
যখন বুঝে যাচ্ছেন আপনি রেগে যাচ্ছেন, তখন একেবারে প্রাথমিক অবস্থাতেই সেই পরিস্থিতি বা জায়গা দ্রুত ত্যাগ করুন বা কারও সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাগ হতে থাকলে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে ফেলুন অথবা তার সঙ্গে সেই মুহূর্তে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। এ সময় কিছু ‘রিলাক্সেসন এক্সারসাইজ’, যেমন শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, গুনগুন করে গান গাওয়া, মজার কিছু ভাবা, মনে মনে নিজেকে শান্ত হতে বলা ইত্যাদি আপনার অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করবে।

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বাড়ান
নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়ম করে দিনে অন্তত আধা ঘণ্টা জোরে ঘাম ঝরিয়ে হাঁটা বা যেকোনো ব্যায়াম, প্রতিদিন এক থেকে দুবার শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম আপনার আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়াবে। মানসিকভাবে আপনাকে ভালো রাখতে সাহায্য করবে।

গুণগত সময়: আপনার জীবনের গুণগত মান অন্যের ওপরে না, আপনার ভালো থাকার ওপর নির্ভর করে। সুতরাং নিজেকে ভালোবাসুন, ভালো রাখুন, গান শুনুন, বই পড়ুন, পছন্দের কাজ করুন। বন্ধুবান্ধব ও সামাজিক মেলামেশা বাড়ান, নিয়ম করে মাঝেমধ্যে বেড়াতে যান। নিজের জন্য প্রতিদিনই কিছুটা গুণগত সময় রাখুন।

আপনার জীবনের মান আপনি নিয়ন্ত্রণ করবেন, আপনার রাগ নয়। কাজেই রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। কথায় তো আছেই—রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। রাগ প্রকাশ করে হেরে যাওয়ার তো কোনো মানে নেই।

সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

29
Faculty Sections / রক্তশূন্যতা রোধ করতে
« on: September 13, 2018, 02:21:17 PM »
রক্তশূন্যতা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয়। রক্তশূন্যতা অন্য রোগের সঙ্গে একটি উপসর্গ হতে পারে। কখনোবা নিজেই একটি রোগ হতে পারে। রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কোনো কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে গেলে তাকে বলা হয় অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা। হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করা। হিমোগ্লোবিন রক্তের লোহিত কণিকায় থাকে।
এ বিষয়ে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক আল-আমিন মৃধা বলেন, ‘আমাদের দেশের শিশুরা সাধারণত আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতায় বেশি ভোগে। শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য যে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, তা সাধারণত হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়। তাই শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রক্তস্বল্পতা একটি বড় প্রভাব ফেলে। নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা দিলেও এটি সব বয়সী মানুষেরই হতে পারে।’
স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১৪ থেকে ১৮ গ্রাম বা ডিএল (ডেসিলিটার) থাকে। নারীদের ১২ থেকে ১৬ গ্রাম বা ডিএল। শিশুর বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী স্বাভাবিক মানের নিচে থাকে, তবে সে রক্তস্বল্পতায় ভুগছে বলা হয়। এক বছর বয়স থেকে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত সাধারণভাবে শিশুর হিমোগ্লোবিন ১১ গ্রাম বা ডেসিলিটারের নিচে থাকা রক্তস্বল্পতার নির্দেশ করে।

কেন হয় রক্তস্বল্পতা?
রক্তস্বল্পতা রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। নানা কারণে রক্তস্বল্পতা হতে পারে। রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরির অন্যতম প্রধান কাঁচামাল হলো আয়রন। কোনো কারণে শরীরে আয়রনের উপস্থিতি কমে গেলে রক্তস্বল্পতা হয়। একে বলে আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা। এ ছাড়া ভিটামিন বি ও ফলিক অ্যাসিডের অভাব, দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ কিছু রোগ যেমন: দীর্ঘমেয়াদি কিডনি সমস্যা, যক্ষ্মা, রক্তের ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া, থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা, রক্ত উৎপাদনকারীর মজ্জার সমস্যা, রক্তের লোহিত কণিকা নিজে নিজে ভেঙে যাওয়া, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি কারণে রক্তস্বল্পতা হয়ে থাকে।
নানা রকম রক্তস্বল্পতার ভেতর আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতার হারই সবচেয়ে বেশি। নারীদের মধ্যে এর হার পুরুষের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশে নারীদের গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এই রক্তস্বল্পতার কারণে বেড়ে যায় মাতৃমৃত্যুর হার। শিশুদের মধ্যেও এর হার যথেষ্ট বেশি।

আয়রনের ঘাটতি কীভাবে হয়?
আয়রনের ঘাটতি হওয়ার প্রধান কারণ অপুষ্টি। খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন না থাকলে আয়রনের অভাব দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় এবং শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় বাড়তি আয়রনের প্রয়োজন। কিন্তু দেখা যায় সেই অনুযায়ী গর্ভবতী মায়েদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হয় না। কিছু পরিবার বা এলাকায় গর্ভবতী মায়েদের কম খেতে দেওয়া হয়। যেসব নারী অতিরিক্ত ঋতুস্রাবজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাঁদেরও আয়রনজনিত রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। পেপটিক আলসার, কৃমি, পাইলস, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার ওষুধ সেবন ইত্যাদি কারণেও দীর্ঘমেয়াদি রক্তক্ষরণ হলে আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা হতে পারে।
যারা বেশি বেশি বা অপ্রয়োজনীয় গ্যাসট্রিকের ওষুধ খায় অর্থাৎ গ্যাসট্রিকের সমস্যা হলেও খায়, না হলেও খায়, তাদের রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। কারণ, আয়রন শোষণ করতে গেলে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড লাগবে কিন্তু গ্যাসট্রিকের ওষুধগুলো কারণে এই অ্যাসিড কমে গেলে আয়রন কিন্তু পর্যাপ্ত শোষণ হবে না।

উপসর্গ
* শরীর ও চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।
* বুক ধড়ফড় করা।
* দুর্বলতা ও সামান্য পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়া এবং ব্যায়ামের পর শ্বাসকষ্ট হওয়া।
* কানে ঝিঁঝিঁ শব্দ শোনা।
* খাবারে অরুচি ও ক্ষুধামান্দ্য।
* নখ ভঙ্গুর হওয়া বা নখের আকৃতি চামচের মতো হওয়া।
* কাজকর্ম-পড়ালেখায় অমনোযোগী হওয়া।

চিকিৎসা
যেকোনো ধরনের রক্তস্বল্পতায় চিকিৎসা দেওয়া হয় রক্তস্বল্পতার পেছনের কারণটিকে বিবেচনা করে।
আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতায় কী কারণে আয়রনের ঘাটতি হলো, তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। অপুষ্টিজনিত কারণে হলে আয়রন দেওয়াটাই মূল চিকিৎসা। সঙ্গে আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের পরামর্শ দেওয়া হয়। কচুশাক, ডাঁটাশাক, পালংশাক, শিম ও শিমের বিচি, কাঁচা কলা, সামুদ্রিক মাছ, কলিজা, গিলা, গরু-খাসির মাংসে প্রচুর আয়রন থাকে। আয়রন সাপ্লিমেন্ট দুই ভাবে দেওয়া হয়। মুখে খাওয়ার জন্য ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল আকারে, শিরায় ইনজেকশন হিসেবে। কোন উপায়ে রোগী এটা নেবে, তা রোগীর অবস্থা বুঝে চিকিৎসক পরামর্শ দেবেন। পেপটিক আলসার, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, পাইলস থাকলে তার চিকিৎসা করতে হবে। নিয়মিত কৃমির ওষুধ খেতে হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য একটা বড় হুমকি হলো এই আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা। অথচ এর সমাধান খুব সহজ। শুধু দরকার একটু সচেতনতা।

লেখক: চিকিৎসক

30
পারিবারিকভাবে নিরামিষ খাবার খান, বাংলাদেশে এমন মানুষের সংখ্যা কম। বাঙালি খেতে ভালোবাসে। তারপরও আজকাল স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনেকেই বেছে নিচ্ছেন নিরামিষ খাবার। ডায়েট করার প্রবণতা বাড়ায় খাদ্যাভ্যাসের ধরনেও নতুনত্ব দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে নিরামিষ খেয়ে ডায়েট করা একটি ধরন। সাধারণত তিনভাবে এই ডায়েট করা যায়।
১. সম্পূর্ণ নিরামিষভোজী অর্থাৎ যাঁরা মাছ, মাংস, দুধ, ডিম কোনোটাই খান না।
২. ল্যাকাটা নিরামিষভোজী অর্থাৎ যাঁরা দুধ খান, অন্য কোনো প্রাণিজ প্রোটিন খান না।
৩. ওভোল্যাকাটা নিরামিষভোজী অর্থাৎ যাঁরা ডিম ও দুধ খান, অন্য কোনো প্রোটিন খান না।
সাধারণত ধর্মীয় কারণে যাঁরা নিরামিষভোজী, তাঁদের বেড়ে ওঠাটাই খাবারের একটি নিয়ম মেনে। কিন্তু যাঁরা নিজে হঠাৎ করে নিরামিষভোজী হন, তাঁদের জন্য অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল অনেকেই ওজন কমাতে চান। এ ছাড়া হৃদ্‌রোগসহ নানা কারণে নিরামিষ ডায়েট শুরু করেন। তাঁদের জন্য সঠিক প্রোটিন গ্রহণ ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সে বিষয়গুলো জানা অনেক জরুরি।
দীর্ঘমেয়াদি সবজির ওপর ভিত্তি করে খাবার চালিয়ে নিলে ধীরে ধীরে অনেকের ভিটামিন বি১ ও ২, আয়রন, হিমোগ্লোবিন ইত্যাদির মাত্রা রক্তে কমে যেতে পারে। সঠিক প্রোটিন চাহিদা পূরণ না হলে পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। যেমন ত্বকের সমস্যা, চুল পড়া, বিষণ্নতা, দুর্বলতা, মাংসপেশি কমে যাওয়া, লাবণ্য কমে যাওয়া ইত্যাদি। তাই নিরামিষভোজীদের খুব হিসাব করে এমন খাবার খেতে হবে, যাতে প্রোটিনের ঘাটতি না হয়। সাধারণত যাঁরা নিজের ইচ্ছায় নিরামিষভোজী হন, তাঁরা মাছ বা মাংস খাওয়া ছেড়ে দেন। তাই তাঁদের খাবারে প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে—
* সবজিতে ডাল ব্যবহার করে খাওয়া
* টক দই, মাওয়া, দুধ ইত্যাদি প্রোটিনজাতীয় খাবার রান্নায় ব্যবহার করা।
* খাবারে ভেজিটেবল অয়েল বা ঘি দিয়ে বাগার দেওয়া।
* যাঁরা ডিম খান, তাঁদের মেনুতে দৈনিক একটা কুসুমসহ ডিম অবশ্যই খেতে হবে।
* কিছু কিছু সবজিতে একটু বেশি মাত্রায় প্রোটিন থাকে। যেমন পালংশাক, ব্রকোলি, অঙ্কুরিত ছোলা, মাশরুম, মটরশুঁটি, কাঁঠালের বিচি, ভুট্টা ইত্যাদি খাওয়া।
যাঁরা দুধ পান করেন, তাঁরা তাঁদের খাবারের মেনুতে দই, দুধ, ছানা, পনির, লাচ্ছি ইত্যাদি হিসাব করে খেলে ভালো মাত্রার প্রোটিন পাওয়া যাবে।
খাবার পদে সয়া থাকলে ভালো মাত্রার প্রোটিন পাওয়া সম্ভব। যাঁরা দুধ বা ডিম কোনোটাই খাবে না, তাঁদের খাবারে দৈনিক পাঁচমিশালি ডাল, টফু, সয়া প্রোটিন, মাশরুম অবশ্যই রাখতে হবে।
প্রোটিন শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তাই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি কেজি ওজনের বিপরীতে দৈনিক কমপক্ষে ১ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণের প্রয়োজন হয়। তাই যাঁরা হঠাৎ নিরামিষ খেতে শুরু করবেন, তাঁদের উচিত অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গে বসে পরামর্শ করে নেওয়া।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল, ঢাকা

Pages: 1 [2] 3 4 ... 15