Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Md. Rashadul Islam

Pages: [1] 2
1
ট্রেডমার্ক আর শিল্পনকশা এই তিনটি স্বত্বকেই মেধাস্বত্ব বলা হয়।

 

★ পেটেন্ট :
পেটেন্ট হলো – একটি দেশের কোনো উদ্ভাবককে তার উদ্ভাবনী পণ্যসেবাকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এককভাবে নির্মাণ, বিতরণ ও সংরক্ষণ করার অধিকার সনদ।

 

★ ট্রেডমার্ক :
ট্রেডমার্ক হলো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বাতন্ত্র্যসূচক চিহ্ন, যা ওই ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের পণ্যসেবাকে সমজাতীয় অন্যান্য পণ্যসেবা থেকে আলাদা করে। এটি কোনো নাম বা অক্ষর বা শব্দ বা প্রতীক বা ছবি বা এসবের সমন্বয়ে হতে পারে। যেমন—মার্সিডিজ বেঞ্জের লেখাসংবলিত নকশা হলো এর ট্রেডমার্ক।

★ শিল্পনকশা :
শিল্পনকশা হলো হাতে বা যন্ত্রে প্রস্তুত করা দৃশ্যমান নকশা, যা কোনো প্রস্তুত পণ্যে ব্যবহার করা যায়। হাল আমলে আইপড বা আইফোনের নকশা হলো বিশ্বের অন্যতম সুন্দর শিল্প নকশা।

★ ভৌগলিক পণ্য নির্দেশক (জিআই পণ্য) :
ভৌগলিক পণ্য নির্দেশক (Geographical Indications of Goods বা জিআই পণ্য) হলো একটি প্রকিয়া যার মাধ্যমে একটি দেশ তার দেশের নির্দিষ্ট কিছু পণ্যকে নিবন্ধন করে। এর ফলে ঐ পন্যটি যেমন ব্র্যান্ডিং পায়, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারে সেই পণ্যের মূল্যও বাড়ে।

★ পেটেন্ট :
‘পেটেন্ট’ হচ্ছে কিছু স্বতন্ত্র বা একচেটিয়া অধিকার যেগুলো আইনগত সিদ্ধ কর্তৃপক্ষ দ্বারা কোনো উদ্ভাবককে তার উদ্ভাবনের জন্য প্রদান করা হয়। একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য পেটেন্ট দেয়া হয় যা পরে নবায়ন করা যায়। পেটেন্টকৃত উদ্ভাবনের কৌশল সংশ্লিষ্ট আইনী দপ্তরের মাধ্যমে সবাই জানতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম টেলিভিশনের পেটেন্ট নিয়েছিলেন জার্মান বিজ্ঞানী পল গটলায়েব নিপকো।

★ ট্রেডমার্ক :
ট্রেডমার্ক বা ব্যবসা স্বত্ত্ব হল একটি চিহ্ন বা প্রতীক যা দ্বারা একটি প্রতিষ্ঠান বা উৎস থেকে আগত পণ্য বা সেবা থেকে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা উৎসের পণ্য বা সেবা পৃথক করা যায়। সাধারণত, পণ্যের মোড়কের গায়ে বা অন্যান্য কাগজপত্রে ট্রেডমার্ক অঙ্কিত থাকে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্থাপনায় এটি দেখা যায়। ট্রেডমার্ক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেয়া হয় যা নবায়নযোগ্য। ট্রেডমার্ক প্রকাশ করার জন্য সাধারণত নিম্নের প্রতীকগুলো ব্যবহার করা হয়ঃ

® একটি বৃত্তের মাঝে R যার অর্থ হল এটি যথাযথ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা অনুমোদিত ও নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক।
TM ইংরেজি অক্ষর TM বা ‘Trade Mark’ হল অনিবন্ধিত (রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি এমন) ট্রেডমার্কের প্রতীক। এটি কোন পণ্য বা ব্র্যান্ডকে মানুষের সাথে পরিচিত করানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
℠ ইংরেজি অক্ষর SM বা ‘Service Mark’ এটিও কোন পণ্য বা ব্র্যান্ডকে মানুষের সাথে পরিচিত করানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। সার্ভিস মার্ক নিবন্ধিত হয়ে গেলে সেটিকে ® চিহ্নের সাহায্যে প্রকাশ করা যেতে পারে। ট্রেডমার্ক সাধারণত একটি ছবি, বর্ন, অক্ষর অথবা প্রতীক হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, উইন্ডোজ লোগো মার্কিন সফটওয়্যার নির্মাতা মাইক্রোসফটের রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক।

★ কপিরাইট / মেধাস্বত্ব :
মেধাস্বত্ব বা কপিরাইট (ইংরেজি: Copyright) কোন একটি বিশেষ ধারণার প্রকাশ বা তথ্য ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণকারী বিশেষ কিছু অধিকারের সমষ্টিগত নাম হলো মেধাসত্ত্ব। একটি আইনি ধারণা। সাধারণত কোন দেশের সরকার এই ধারণাটির বাস্তবায়ন করে। কপিরাইট বলতে কোন কাজের মূল সৃষ্টিকর্তার সেই কাজটির উপর একক, অনন্য অধিকারকে বোঝানো হয়। কপিরাইট সাধারণত একটি সীমিত মেয়াদের জন্য কার্যকর হয়। ঐ মেয়াদের পর কাজটি পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্গত হয়ে যায়।

মেধাস্বত্ব কোন একটি বিশেষ ধারণার প্রকাশ বা তথ্য ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণকারী বিশেষ কিছু অধিকারের সমষ্টি বা সেট। সবচেয়ে সাধারণ ভাবে, শাব্দিক অর্থে এটা কোন মৌলিক সৃষ্টির ‘অনুলিপি তৈরির অধিকার’ বুঝায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অধিকারগুলো সীমিত সময়ের জন্য সংরক্ষিত থাকে। কপিরাইটের চিহ্ন হল ©, এবং কিছু কিছু স্থানে বা আইনের এখতিয়ারে এটার বিকল্প হিসেবে (c) বা (C) লেখা হয়।

সৃষ্টিশীল, বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা শিল্পের বিভিন্ন প্রকার কাজের একটা বিরাট পরিব্যাপ্তিতে মেধাস্বত্ব থাকতে পারে বা হওয়া সম্ভব। কবিতা, থিসিস, নাটক এবং অন্যান্য সাহিত্যকর্ম, চলচ্চিত্র, কোরিওগ্রাফির কাজ (নাচ, ব্যালে ইত্যাদি), মিউজিকাল কম্পোজিশন, অডিও রেকর্ডিং, চিত্র বা পেইন্টিংস, আঁকা বা ড্রইং, স্কাল্পচার বা মূর্তি/প্রতিকৃতি বানানোর শিল্প, ফটোগ্রাফ, সফটওয়্যার, রেডিও ও টেলিভিশনের সরাসরি ও অন্যান্য সম্প্রচার, এবং কিছু কিছু এখতিয়ারে শিল্প-নকশা (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন) এর অন্তর্গত।

নকশা বা শিল্প-নকশাগুলোর (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন) জন্য কোন কোন এখতিয়ারে আলাদা বা যুগপৎ/অধিক্রমণকারী (ওভারল্যাপিং) আইন থাকতে পারে। মেধাস্বত্ব আইন, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ (ইন্টেলেকচুয়্যাল প্রোপার্টি) সংক্রান্ত একটি ব্যাপ্ত বিষয়ের অধীনে অনেকগুলি আইনের একটি।

★ মেধাসত্ত্ব বা পেটেন্ট আইন মানতে হলে সমস্যা কী?
পেটেন্ট কোন প্রতিষ্ঠানকে মেধাসত্ত্ব দিয়ে দেয়। ফলে সে সেই মেধাসত্ত্বের ভিত্তিতে সেই পেটেন্টের সাথে সম্পর্কিত যে কোন বাণিজ্যে সে রয়্যালটি দাবী করতে পারে। যেমন নিমের পেটেন্ট করা আছে আমেরিকার তাই নিম গাছ থেকে উৎপাদিত যে কোন পণ্যে সে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়্যালটি দাবী করতে পারবে। বীজ এবং কৃষি পণ্যের দাম অনেকগুন বেড়ে যাবে বলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। তৈরি পোশাক শিল্পকেও ব্র্যান্ড নামে ব্যবহূত এদেশের তৈরি এ্যাকসেসরিজের জন্য সংশ্লিষ্ট মার্কিন কোম্পানিকে রয়্যালটি দিতে হবে। বাসমতি চাল,চিরতার রস,নিমের দাঁতন ইত্যাদি হেন বস্তু নেই যা আগেভাগেই মার্কিনীসহ বিদেশি কোম্পানিরা পেটেন্ট করে রাখেনি। মেধাস্বত্ব অধিকারের ধারা প্রয়োগ করে তারা এসবকিছুর জন্য রয়্যালটি প্রদানে বাংলাদেশকে ‘টিকফা’ চুক্তি মাধ্যমে বাধ্য করবে। একবার নাইজেরিয়ায় একটা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট কিনেছিলাম যেটা অ্যামেরিকান প্যাটেন্ট করা, সেই প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের দাম যেখানে বাংলাদেশে এক টাকার কম সেটা নাইজেরিয়ায় বাংলাদেশী মুদ্রায় ২৭ টাকা লেগেছিল। এই অতিরিক্ত ২৬ টাকা প্যাটেন্ট বা মেধাসত্ত্বের মূল্য। মেধাসত্ত্বের মূল্য সবসময় মুল পণ্যটির চাইতে কয়েকগুন হয়ে থাকে।

★ মেধাস্বত্ব : কেন এটা জরুরি ?
অথচ বিশ্বব্যাপী পণ্য ও সেবার উদ্ভাবনের মেধাস্বত্ব নিতে আবেদনের হিড়িক বেড়েছে। বিদেশি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন তাই ক্রমেই বাড়ছে। একই কারণে দেশীয় ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি হারে নিবন্ধনও পাচ্ছে তারা। দেশীয় ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে মেধাস্বত্বে আগ্রহবিমুখ, সেখানে প্রতিবছরই এ দেশ থেকে মেধাস্বত্ব নিতে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে বিদেশি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদন যেমন বেশি করছে, তেমনি তাদের পক্ষে নিবন্ধনও বেশি হচ্ছে।

★ ভৌগলিক পণ্য নির্দেশক (জিআই পণ্য) :
ভৌগলিক পণ্য নির্দেশক (Geographical Indications of Goods বা জিআই পণ্য) একটি প্রকিয়া যার মাধ্যমে একটি দেশ তার দেশের নির্দিষ্ট কিছু পণ্যকে নিবন্ধন করে। এর ফলে ঐ পন্যটি যেমন ব্র্যান্ডিং পায়, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারে সেই পণ্যের ভাল মূল্যও বাড়ে।

★ ভৌগলিক পণ্য নির্দেশক সংরক্ষণের প্রয়োজনীতা :
বাংলাদেশ মসলিন, জামদানি, নকশিকাঁথা, ফজলী আম, ইলিশ মাছসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পণ্য ভৌগলিক নির্দেশক পণ্যের (জিআই) অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। বাংলাদেশের বিশেষায়িত পণ্য জিআইয়ের নিবন্ধন পেলে দেশ হিসেবে আমরা বিশ্বব্যাপী যেমন ব্র্যান্ডিং পাবো, তেমনি দেশীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যও বাড়বে।

যে কটি পণ্য বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছে তার একটি মসলিন। মসলিনেরই টিকে যাওয়া একটি ধরন জামদানি। ঐতিহ্যগতভাবে জামদানি বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য। দেশে-বিদেশে এর গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণও রয়েছে। এত কিছুর পরও ভারতের অন্ধ প্রদেশ ২০০৯ সালে জামদানিকে তাদের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করেছে। এর নাম দিয়েছে ‘উপাদ্দা জামদানি’। অথচ, বাংলাদেশ এখনো নিজেদের জামদানিকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনই করতে পারেনি।

★ ভৌগলিক পণ্য নির্দেশক (জিআই পণ্য) – সংরক্ষণে করণীয় :
বাংলাদেশকে জিআই নিবন্ধনে ভালো করতে হলে এ ক্ষেত্রে গবেষণা বাড়াতে হবে। বিভিন্ন পণ্যের ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। পণ্যের জিআই নিবন্ধনের জন্য যথাযথভাবে তথ্য-উপাত্তসহ তাদেরই ডিপিডিটিতে আবেদন করতে হবে

2
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘আবাসন ব্যবস্থা’ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের (এয়ারবিএনবি) অধিকারে কোনো হোটেল, রিসোর্ট বা গেস্ট হাউজ নেই। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবহন ব্যবসায়ী (উবার) হওয়ার জন্য গাড়ি কেনার প্রয়োজন হয়নি (অবশ্য সেরা হওয়ার পর উবার চালকবিহীন গাড়ি নিয়ে গবেষণা করছে। সেই সুবাদে গাড়ির মালিক হবে)। সর্ববৃহৎ খুচরা ব্যবসায়ী আলিবাবা— ২০১৬ সালে (এপ্রিল-মার্চ) যার আয় ১৫ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার আর মুনাফা ১১ বিলিয়ন ডলার, তার ৬৪ বিলিয়ন ডলার সম্পদ থাকলেও গুদামজাত কোনো পণ্য নেই।

এয়ারবিএনবির প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান চেস্কি (১৯৮১) মাত্র ৩৫ বছর বয়সে বিলিয়নেয়ার ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন। সম্প্রতি (জুন ২০১৬) বিল গেটস আর ওয়ারেন বাফেটের ‘প্রদানের পণ’ (গিভিং প্লেজ) গোষ্ঠীতেও যোগ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রোডে আইল্যান্ড স্কুল অব ডিজাইন থেকে ২০০৪ সালে পাস করে ক্যালিফোর্নিয়ায় এক প্রতিষ্ঠানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইনার হিসেবে চাকরি নেন। পরে সানফ্রান্সিকোয় নিবাস গড়েন। বন্ধু গেব্বিয়ার সঙ্গে একটা রুম ভাড়া নেন। ২০০৭ সালে আমেরিকার ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন সোসাইটি একটা কনফারেন্সের আয়োজন করে। শহরের সব হোটেল বুক হয়ে যায়। অনেকে কনফারেন্সে আসতে চাইছেন কিন্তু হোটেলে রুম পাচ্ছেন না বলে আসতে পারছেন না। ব্রায়ান তখন টাকা-পয়সার টানাটানিতে। ঠিক করলেন, তাদের রুমটা সাবলেট দেবেন। যে-ই ভাবা সে-ই কাজ। তিনটা ফোম বা এয়ারবেড কিনে আনলেন। উদ্ভট ধরনের এক অফার তৈরি করলেন— ‘এয়ারবেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট’। অর্থাৎ বিছানা আর নাশতা। সেখান থেকে ‘এয়ারবিএনবি’ নামের উত্পত্তি। প্রথম রাতেই মিলে গেল তিনজন অতিথি। ভাবলেন, ভালোই তো, ব্যবসাটা মন্দ না! কোমর বেঁধে নামলেন। যেখানে কোনো জমজমাট অনুষ্ঠান হতো, সেখানে আবাসিক (হোটেল) ব্যবস্থার ঘাটতি থাকলে এয়ারবিএনবি ঝাঁপিয়ে পড়ত।

আমেরিকার নির্বাচনের বছর। ওবামা আর  ম্যাক কেইনের নামে প্রাতরাশের নতুন এক আইটেম তৈরি করলেন। হটকেকের মতো চলল। নাশতার এই অভিনবত্ব দেখে ২০০৮ সালে ওয়াই কম্বিনেটর এক্সেলেটর প্রোগ্রামে তাদের গ্রহণ করল ও সিড ফান্ড প্রদান করল। সিড ফান্ড হলো, কোনো একটা ব্যবসায়িক ধারণাকে বাস্তবায়নের জন্য প্রদত্ত অর্থ। প্রথম বছরেই তিনি তার ব্যবসার বিশ্বায়নে নজর দেন। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার লোক এয়ারবিএনবির আতিথেয়তা গ্রহণ করেছে। ২০১৬ সালের ব্রাজিল অলিম্পিকের অন্যতম স্পন্সর ছিল তারা। ২০১৫ সালের মার্চে কোম্পানির ভ্যালুয়েশন করা হয় ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি ডলার, টাকার অংকে যা ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ২০১৬-১৭ বাজেটের প্রায় অর্ধেক (৪৭%)। এয়ারবিএনবি গত বছর ১ বিলিয়ন ডলার তহবিল উত্তোলন করে। কোম্পানির মূল্য ধরা হয় ২৪ বিলিয়ন ডলার। চার হাজার হোটেলের মালিক ম্যারিওট গ্রুপ, যাদের গত বছর আয় ছিল ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, তাদের মূল্য ধরা হয়েছে ২১ বিলিয়ন ডলার (ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল)। বায়বীয় সম্পদের ওপর গড়ে ওঠা কোম্পানি ‘কঠিন সম্পদের’ কোম্পানিকে কীভাবে টেক্কা দিচ্ছে!
প্যারিসের এক বরফ পড়া সন্ধ্যায় ট্রাভিস কালানিক ও গেরেট ক্যাম্পের ট্যাক্সি পেতে দারুণ বেগ পেতে হচ্ছিল। তখনই মাথায় এল আকাশ কুসুম কল্পনা, ‘আহা, এমন যদি হতো, একটা বোতাম বা সুইচ টিপলাম, সঙ্গে সঙ্গে একটা ট্যাক্সি সামনে এসে দাঁড়াল! সেই স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে একটা অ্যাপ তৈরি করলেন, যা দিয়ে কয়েকটি শহরে অভিজাত কালো ট্যাক্সি ডাকা যায়। অ্যাপসের মাধ্যমে উবারের গাড়িকে ডাকলে কাছাকাছি অবস্থিত গাড়ি চলে আসবে। যাত্রী গুগল ম্যাপে গাড়ির অবস্থান দেখতে পাবে। সুতরাং গাড়ি আসতে কতক্ষণ লাগবে তা আন্দাজ করতে পারবে। গাড়ির ভাড়া ওই এলাকায় ওই সময়ে গাড়ি সরবরাহ ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে বাড়তে বা কমতে পারে। গাড়ি প্রতি ঘণ্টায় ১৮ মাইলের কম বেগে চললে সময় হিসাবে আর ঘণ্টায় ১৮ মাইলের উপরে চললে মাইল হিসাবে বিল হিসাব করা হয়। যাত্রীর ই-মেইলে বিল পাঠিয়ে দেয়া হয়। যেকোনো গাড়ির মালিক উবারে নাম লেখাতে পারেন। তার গাড়ি যখন অবসর থাকে তখন যাত্রী নিতে পারে। কিছু বাড়তি অর্থ উপার্জন করতে পারে। আবার তিনিও অন্য চালকের গাড়িতে যাত্রী হতে পারেন। উবার ট্রাফিক জ্যাম কমাতে সহায়তা করে। কারণ উবারের প্রযুক্তি যাত্রী ও চালকের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। চাহিদা আর সরবরাহের ফাঁক বুঝে মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি চাহিদা ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। ড্রাইভার তার যাত্রী সম্পর্কে এবং যাত্রী চালক সম্পর্কে মন্তব্য দিতে পারে। খুব নিম্নমানের মন্তব্য পেলে সেই যাত্রী বা চালককে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালির্ফোনিয়া লস অ্যাঞ্জেলেসে ভর্তি হওয়া ট্রাভিস (১৯৭৬) ২০০৯ সালে গেরেট ক্যাম্প ও স্ট্যাম্বল উপন যৌথভাবে উবার প্রতিষ্ঠা করেন। উবারের মালিকানায় কোনো গাড়ি নেই। এমনকি কোনো ড্রাইভারও তাদের কর্মচারী নয়। অথচ তারা বিশ্বের সর্ববৃহৎ যানবাহন সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের জন্য অন্য কেউ গাড়ি ক্রয় করেনি। বিদ্যমান গাড়িগুলোর অব্যবহূত সময় ও আসন ব্যবহার বাড়িয়ে উবারের ব্যবসা। প্রচলিত প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা বাড়ানো মানে যেখানে বোঝে সম্পদ বাড়ানো, সেখানে উবার বা এয়ারবিএনবি সম্পদের ব্যবহার বাড়ানোই কৌশল হিসেবে নিয়েছে।

এদের মধ্যে আরেকটি মিল— তারা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডের আর্থিক সহায়তা পেয়ে ব্যবসায় নেমেছেন। আমার এক বন্ধু বলছিল, এরা যে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে ফান্ড পেলেন, এখানে উদ্ভাবন বা ইনোভেশন কোথায়! ইনোভেশন বলতে আমরা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে বুঝি। ভাবি, মেশিন থাকতে হবে, ল্যাবরেটরি থাকতে হবে। বৈজ্ঞানিক কোনো ফর্মুলা বাতলে দেবে। অথবা নতুন কোনো গ্রহ বা অণু-পরমাণুর সন্ধান দেবে। উদ্ভাবকের পরনে অ্যাপ্রোন থাকতে হবে। আসলে কি তা-ই? পেপালের প্রতিষ্ঠাতা ও ফেসবুক, লিঙ্কড-ইনসহ কয়েকশ নতুন উদ্যোগে বিনিয়োগকারী পিটার থেইল বলেছেন, “প্রযুক্তি বলতে শুধু কম্পিউটার বুঝব কেন? একটু গভীরে তাকালে বুঝি, যেকোনো ‘নতুন ও উত্তম উপায়ে কার্য সমাধান’ প্রক্রিয়াই প্রযুক্তি।”

জেফ বেজোস ১৯৯৪ সালে ওয়াল স্ট্রিটের চাকরি ছেড়ে অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দোকান স্থাপনের স্বপ্ন নিয়ে ১৯৯৫ সালে অনলাইন স্টোর স্থাপন করেন। প্রথমে সিডি, বই, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ভিডিও, পার্টস— এমন ২০টি আইটেম নির্ধারণ করেন বিক্রির জন্য। তার মধ্য থেকে বই দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। কারণ বইয়ের চাহিদা জগত্ব্যাপী আর সরবরাহ মিলবে কয়েক লাখ। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। ইংগ্রাম বুকের জন ইংগ্রামের সঙ্গে যুক্তি করে খুলে দিলেন বুক স্টোর। প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি স্টেট এবং ৪৫টি দেশে বিক্রি করলেন। প্রতি সপ্তাহে বিক্রি দাঁড়াল ২০ হাজার ডলার। ইট কাঠের বইয়ের দোকানে যেখানে সর্বোচ্চ লাখ দুয়েক বই পাওয়া যেত, সেখানে অ্যামাজনে মিলত কয়েক গুণ বেশি। কারণ গুদামের ঝামেলা নেই। কম্পিউটারের অসীম ধারণক্ষমতার সঙ্গে ইট-কাঠের দোকান যে নস্যি। ২০১৫ সালে রেভিনিউ দাঁড়াল ১০৭ বিলিয়ন ডলার, লাভ ৫৯৬ মিলিয়ন ডলার আর কর্মী সংখ্যা ২ লাখ ৬৮ হাজার ৯০০। অ্যামাজন ১৯৯৭ সালে আইপিওতে যায়। ২০০১ সালে প্রথম লাভের মুখ দেখে। অবশ্য বিক্রি তখন ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। অ্যামাজনের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। মেশিন ইন্টেলিজেন্স ও গ্রাহক অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে অ্যামাজন গ্রাহকের আচরণ বুঝে ব্যবস্থা নেয়। ব্যবসা এখন ‘সম্পদভিত্তিক’ থেকে ‘জ্ঞান ও যোগাযোগভিত্তিক’-এ রূপ নিয়েছে।

উপরোক্ত ব্যবসাগুলোয় লাখ লাখ গ্রাহকের তথ্য সংগৃহীত হয়। সেই তথ্য মেশিন ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে গ্রাহকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। আপনি বিদেশ ভ্রমণে যাবেন। যদি এয়ারবিএনবির মাধ্যমে আবাসিক ব্যবস্থার সুলুক সন্ধান করেন, তাহলে ওই শহরের ব্যাপারে আপনাকে এয়ারবিএনবি প্রতিনিয়ত খোঁজখবর দিতে থাকবে। আপনি ‘চালডাল’-এ কোনো একটা পণ্যের দাম জানতে চাইলেন— ইন্টারনেটে ঢুকলেই আপনি দেখবেন, চালডাল আপনার পেছনে লেগে আছে। কিংবা ডক্টরোলার মাধ্যমে আপনি কোনো ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করিয়েছেন, পরবর্তীতে আপনার উক্ত রোগের ব্যাপারে বিভিন্ন টিপস আপনার কাছে আসতে থাকবে। প্রযুক্তি এখানে বিশাল তথ্যভাণ্ডার সংগ্রহে আর দ্রুত প্রক্রিয়াকরণে বিরাট ভূমিকা রাখে। আর অবদান আছে নেটওয়ার্কের— যত বেশি লোক কোনো প্লাটফর্মে যুক্ত হবে তথ্যের মান তত উত্তম হবে। সি টু সি বা গ্রাহক টু গ্রাহক রীতির ফলে গ্রাহক বেড়ে গেছে বহুগুণ। পুরনো ধারণায় আগে বিক্রেতাই শুধু বিক্রয় করতেন, এখন ক্রেতাও বিক্রেতা সাজতে পারেন। এয়ারবিএনবির মাধ্যমে আপনি শুধু অন্যের বাসায় থাকা নয়, নিজেও আপনার বাসা ভাড়া দিতে পারেন কোনো পর্যটকের কাছে। উবারে আপনি কখনো যাত্রী আবার কখনো ড্রাইভার বনতে পারেন। গ্রাহক হয়ে যায় সরবরাহকারী আবার সরবরাহকারী বনে যায় গ্রাহক। আলিবাবায় আপনি পণ্য শুধু কেনা নয়, বিক্রিও করতে পারেন। বিদেশ না গিয়েই বিদেশী কোনো পণ্য (বৈদেশিক মুদ্রা আইনসাপেক্ষে) কিনতে পারেন। কিংবা দেশে বসেই আপ-ওয়ার্কের মাধ্যমে আপনার শ্রম, সময় ও মেধা নিয়োগ করতে পারেন বিদেশী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য। ২০ বছর আগেও ব্যবসা এভাবে হতো না। এখন অনেক কিছুই বদলে গেছে। মাত্র নয় বছর আগে মোবাইল সেট বিক্রয় বাজারের ৪১ শতাংশ দখলকারী নকিয়া বিক্রি হয়ে গেছে মাইক্রোসফটের কাছে ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে। ১৯৭৬ সালে আমেরিকার ফিল্ম বাজারের ৯০ শতাংশ এবং ক্যামেরা বাজারের ৮৫ শতাংশ দখলকারী কোডাক ১৯৯৬ সালে ১৬ বিলিয়ন বিক্রয় আর ১৯৯৯ সালে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জন করেছিল। অথচ ২০১৫ সালে লোকসান দিয়েছে ২১১ মিলিয়ন ডলার। তাই গতানুগতিক ব্যবসা যারা করছেন, সিট বেল্ট বাঁধুন। আরো কত কিছু আছে সামনে! চোখ-কান খোলা না রাখলে ‘কোডাক’ বা ‘নকিয়া’ বনে যাওয়া অসম্ভব নয়।
 
লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক
বিডি ভেঞ্চার লিমিটেড

3
স্বপ্ন দেখতেন। স্বপ্ন বাস্তবায়নও করলেন। চাকুরী ছেড়ে নেমে পড়লেন ব্যবসায়। হয়ে উঠলেন সফল উদ্যোক্তা। গড়ে তুললেন রানার গ্রুপ। এখন সেই রানার গ্রুপ নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন আন্তজার্তিক পর্যায়ে। সেই ব্যক্তির কথা বলছি যার মেধা, বুদ্ধি, পরিশ্রমে গড়ে উঠা রানার গ্রুপ আজ বাংলাদেশের অটোমোবাইলস্ জগতের  সুনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি হাফিজুর রহমান। রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান। হাফিজুর রহমান খানের একান্ত সাক্ষাতকারে উঠে এসেছে রানার গ্রুপের সেই সফলতার কথা। বাবা চাইতেন না ছেলে ব্যবসা করুন। বাবা চাইতেন ছেলেও যেন তার মতো চাকুরি করেন। কারণ ব্যবসা করতে পুঁজি লাগে। সেই পুঁজিইবা দিবেন কিভাবে।  বারো জন ছেলে-মেয়ের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো বাবা কোরেশ আলী খানকে।  তাই পরিবারের কিছুটা দায়িত্ব নিজের কাধে নিতে এবং বাবা কোথায় প্রথম কর্মজীবনে হাফিজুর রহমান লেখাপড়া শেষে চাকুরি করলেও চাকুরিতে মন বসাতে পারেননি তিনি। ছোট বেলে থেকেই হাফিজুর রহমান খান ছিলেন স্বপ্নবাজ। স্বপ্ন দেখতে দেশের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হবেন।  তাই চাকুরি ছেড়ে নেমে পড়ে ব্যবসায়। পুঁজি না থাকলেও ছিল মেধাশক্তি ও পরিশ্রমের মানসিকতা। তাই ব্যবসার কারণে ছুঠেছেন গ্রাম থেকে গ্রামে। আজ তার সেই পরিশ্রমের ফসল রানার মোটরসাইকেল ছুটে চলেছে শহর থেকে গ্রামের মেঠোপথে। শুধু মোটরসাইকেলই নয় চলছে রানার গ্রুপের যানবাহনগুলো। দেশের  অটোমোবাইল বাণিজ্যে সুনাম কুড়িয়েছে রানার গ্রুপ। এছাড়াও রিয়েল এস্টেট, কৃষি ও তথ্য খাতে রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। রানার অটোমোবাইলস, রানার এগ্রো কোম্পানি, রানার অটো ব্রিকস ফিল্ড, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রানার সিসটেমস লিমিটেড, রানার  প্রোপার্টিজ ও রানার মোটরস লিমিটেড। রানার প্রুপ বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমাজে সুপরিচিত একটি নামই শুধু নয় বরং সংশ্লিষ্ট সকলের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীকও বটে। তাই তিনি একজন তরুণ উদ্যোক্তাদের মডেল।
ফিরে যাই পিছনের দিকে। সেই ১৯৫৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। বাবা মরহুম কোরেশ আলী খান ও মাতা মরহুমা পরিজান নেসার কুলে জন্ম নেয় ফুটফুটে শিশুটিই ছিল রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রজমান। রাজশাহীতে জন্ম নিলেও পৈত্রিক নিবাস ছিলো নওগাঁ। বাবা সরকারি চাকুরি জীবি হওয়ায় শৈশব পার করেনে দেশের বিভিন্ন জেলায়। নওগাঁর থেকে ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর ভর্তি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহীতে ভর্তি হওয়ার পরই সফল উদ্যোক্ত ও ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে শুরু করেন কর্মজীবন। পুঁজি না থাকায় ব্যবসা করা আর হয়ে না তার।  তবুও তিনি হাল ছেড়ে দেননি তিনি। পুঁজি না থাকলে কি হবে ছিলো তার বুদ্ধি ও অদ্যম সাহস। প্রথম কর্মজীবনে হাফিজুর রহমান খান একটি পাঠকলে চাকরি করেন। এই চাকরি ছেড়ে চাকরি নেন শ্যালো মেশিন ও পাম্প বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে। এই চাকরি মাধ্যমে শিখতে থাকেন ব্যবসায় নানা বিষয়। ১৯৮৩ সালে শেষের দিকে চাকুরি ছেড়ে নেমে পড়লেন ব্যবসায়। সেই সময় তার মূলধন মাত্র ছিল ২০ হাজার টাকা। পুঁজি যথেষ্ট না থাকলেও তিনি  মেধাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেন নিজের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অংশদারিত্বের ভিত্তিতে তিনজন মিলে তৃতীয়াংশ শেয়ারে ব্যবসা শুরু করেন। এই ব্যবসায় তার ছিলো মেধাশক্তি আর বিনিয়োগকারী ছিল অর্থ। অবশেষে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগকারীই  থেকে গেলেন আর তিনি হয়ে সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। ২০০০ সালে গড়ে তুলেন রানার অটোমোবাইলস। আমন্ত্রণ জানাতে শুরু করেন দেশের সুপ্রতিষ্ঠিত মোটরসাইকেল ব্যবসায়ীদের। তার ব্যবসার পরিকল্পনা ও উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখে এসব ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করেন তার ব্যবসায়। এখন সময় তার পুঁজি হয় ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এই পুঁজি নিয়ে পুরোদমে নেমে পড়েন ব্যবসায়। ব্যবসার শুরুতে চায়না থেকে মোটরসাইকেল আমদানি করে বিক্রি করা করতেন। এর পাশাপাশি ট্রাক, বাস দেশের বাইরে থেকে এনে বিক্রয় শুরু করে দেন। যখন  রানারপুরোপুরি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠলো এই ব্যবসা । তখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন দেশের আবাসন খ্যাতকে নিয়ে। গড়ে তুলনে রিয়েল এস্টেট ও ব্রিকস কোম্পানি। এরপর আরো গড়ে তুললেন কিছু প্রতিষ্ঠান। এই ভাবে তার মেধা, বুদ্ধি, পরিশ্রম  এবং অনেক বাধা উপক্ষো তিলতিল করে গড়ে তুললেন রানার গ্রুপ।
এখন সেই রানার গ্রুপ নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন আন্তজার্তিক পর্যায়ে। সাক্ষাতে তাই তিনি জানালেন, অটোমোবাইলস শিল্পখাতে রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। বর্হিবিশ্বে  এইসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।  তাই এসব পণ্য রফতানির জন্য চাই একটি সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও নীতিমালা । তাহলে অটোমোবাইলস খাতের পণ্যগুলো বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি আরো দৃঢ় করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, এ শিল্প খাতের পণ্য বিশ্ববাজার দখলে সক্ষম হবে এবং দেশের চেয়ে বিশ্ববাজারে  রফতানির সম্ভাবনা  দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।  তিনি তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য করেন বলেন, তরুণ্য উদ্যোক্তারা এ শিল্পে খাত উন্নয়নে এগিয়ে আসলে এই শিল্প খাত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে সুনাম বয়ে আনবে।
উল্লেখ্য,  রানার গ্রুপ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের পাশাপাশি নিজস্ব মানবসম্পদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে  দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়েছে। রানার গ্রুপের সকল কর্মী ও তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত কল্পে একটি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

Source: http://doinikbangladesh.com/

4
কি ভাবে শুরু করবো। এই প্রশ্নটি উদ্যোক্তাদের মাথায় প্রথমে চলে আসে যখন তারা চিন্তা করতে শুরু করে, তারা কি করবে। এটা আসলেই একটু কঠিন তাদের জন্য কি করা উচিত আর উচিত নয়।

যে পণ্য নিয়ে কাজ করবেন:

যে পন্য নিয়ে কাজ করবেন তার সুস্পষ্ট একটি ধারনা থাকতে হবে এবং সেই পন্যকে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে মানে হচ্ছে আপনার ক্রেতা কারা, আপনার পন্য কি কি হবে এবং আপনার প্রতিযোগীদের কথাও মাথায় রাখতে হবে।

নিজেকেই একটু প্রশ্ন করুন:

এই পন্যটিতে কি কোন সমস্যা সমাধানের পথ খুজে পাওয়া যাবে
এই পন্যটিতে নতুন কি আছে
কারা এই পন্যটি কিনতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করবে
এটা সত্য যে আপনি আপনার প্রতিযোগীর থেকে ভালো করতে না পারলেও নতুন কিছু উপাদান যোগ করতে পারবেন যেটা কিনা আপনার ক্রেতাদের কাছে বিক্রয় করতে পারবেন।

কি ভাবে সামনে পৌছবেন ঠিক করুন:

মনের ভেতর আপনার বিজনেস প্লান এর নকশা তৈরি করে রাখেতে হবে, সেটা দীর্ঘ এবং স্বল্প মেয়াদী হতে পারে।এই গোছানো প্লানটিই আপনাকে সামনে আগানোর পথ দেখাবে, কথন আপনার কি করা দরকার।আপনি প্রথম ৬ মাসে কি করতে চান প্রথম ৩ বছর আপনার প্রতিষ্ঠান কোথায় নিতে চান।যদি সম্বব হয় বিস্তারিত ভাবে আপনার সকল পরিকল্পনা লিখে রাথা ভালো।এটা শুধু পরিকল্পনাকেই সহায়তা করবে না আপনার চলার পথকেও সজহ করবে।

আপনার ব্যবসায়িক পরিবেশকে জানুন এবং আপনাকে পরিচিতো করে তুলুন:

নিজের প্রতিষ্ঠানকে পরিচিতো করার জন্য আপনার ব্যবসায়িক পরিবেশের সাথে খাপ খায়িয়ে চলুন, পরিবেশকে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের সাথে সর্ম্পক তৈরি করতে হবে, এটা খুব গুরুত্বপূন্য কারন এটা এমন একটি নেটওয়ার্ক আপনাকে অনেক দূর পযর্ন্ত নিয়ে যেতে পারে। ব্যবসার

সময় ব্যবস্থাপনা:

সময় = টাকা যদি ধরা হয়, সে ক্ষেত্রে সময় এর দিকে একটু নজর দিতে হবে। আপনি কোন কাজে কতটুকু সময় ব্যয় করছেন এটাও আপনার প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূণ্য বিষয়, সঠিক সময় সঠিক কাজ না করলে আপনার কাজটিই করা হবে না।

শেষ কথা, ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে গেলে ব্যাংক থেকে টাকা না নেয়াই ভালো।আপনার যতটুকু সামর্থ্ আছে ততটুকু দিয়েই শুরু করতে দিতে পারে।

5
RJSC entity name search

RJSC name clearance is the first step for a company formation or registration to start business in Bangladesh. RJSC (The Registrar of Joint stock Companies and Firms) is the only legal authority to issue Name Clearance Certificate.

Name Clearance Terms and Condition:
The same name is not applicable for Company / formation in Bangladesh, (Which is certified by RJSC). Its hearing sound, written style and sight will not be same all the way.
Name could not be similar with international company , organization, social & Cultural organization.
Name cannot be permissible any existing company , business body, Social, Cultural, Entertainment & Sporting organization’s name.
Company’s name will not be similar Govt. Organization or Company.
Nationally fame person’s name or famous family’s name need to permission from particular person and take permission to Government.
If you interested to take freedom fighter related name for your company must be essential approval ofFreedom Fighter Ministry of Bangladesh.
Company’s name could not be similar of Govt. development program or development organization.
No name will applicable of political party’s slogan, political party’s name and program which are existing now.
Slang word, Rebuke or……possible for company formation in Bangladesh.
Cannot select any name which is broken Social, Religious and national harmony.
Earlier established (at least 10 years old) Social organization’s real name , to attend personally with organizing Committee happy wheels demo resolution for registration of social organization’s real name.
Social, cultural & sporting Organization’s can be limited company by taking Ministry permission otherwise not possible to do.
Violating any name clearance terms & conditions R, RJSC can change providing name and if name is unchanged a certain time , Registration number will be acquainted of the company.
Only name clearance is not final settlement of Company Registration/Formation first stapes.
At first you select a name of your company than submit RJSC and pay 600 (Six Hundred) taka to schedule authorized bank of name clearance cost. If you get name clearance from RJSC of submitting company’s name, and make Memorandum of Association & Article of Association. Memorandum of Association describes all kinds of business & activities which will be operate by the company and mentioned of shares distribution of every Director and share holders. All share holder, director, managing director, Chairman signed it for their proposed share.

Article of Association basically written down legal and administrative activities of the company, as like borrowing powers, power of chairman, managing director, director and share holders, general meeting procedure, quorum of meeting, vote of member’s ,qualification shares of directors, quorum of board meetings, number of share of directors and share holder’s and all other operating activities which followed by Company Act 1994.

6
মারমেইডের পথচলা শুরু হয়েছিল কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতে ছোট্ট একটি রেস্তোরাঁ দিয়ে। সময়টা ২০০৪ সাল। কর্মী ছিল তখন মাত্র পাঁচজন। এখন সেই কর্মীবাহিনী ৪০০ সদস্যের। রেস্তোরাঁর পাশাপাশি এখন আমরা গড়ে তুলেছি রিসোর্ট, যা দিনে দিনে হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। এখানে বেড়াতে এসে নিজস্ব সৈকত, দ্বীপ, বিচ রাইড থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মানের সেবা পাচ্ছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা।
তবে এই অবস্থানে আসতে পোড়াতে হয়েছে অনেক কাঠখড়। হোঁচট খেয়েছি। আবার উঠে দাঁড়িয়েছি। ছোট ছোট জায়গায় দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করেছি। সেই দক্ষতাই বড় কাজের প্রেরণা দিয়েছে।
সেই কাহিনি শোনাতে একটু পেছনে যেতে হবে। বয়স তখন ১৭ কি ১৮। তারুণ্যের উন্মাদনা তুঙ্গে। যা ভালো লাগছে, তা-ই হাসিল করা চাই। কখনো ট্রাভেলার, কখনো সার্ফার, কত্ত কী! তবে সবকিছুই পরিপাটিভাবে করার চেষ্টা থাকত।
একসময় যোগ দিলাম থিয়েটারে। বিস্ময় জাগাত তাদের কাজ। সবকিছুর পেছনে গল্প। কাজ করতে থাকলাম মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর সঙ্গে। নাটকে অভিনয়, সিনেমায় পার্ট। সবই চলতে থাকল সমানতালে। তারপরও কোথায় যেন ঘাটতি। ভাবলাম, এ জন্য চাই আরও দক্ষতা, পড়াশোনা। ব্যস, পাড়ি জমালাম ভারতের মুম্বাই। সেখানকার একটি থিয়েটার স্কুলের সঙ্গে যুক্ত হলাম। এর ফাঁকে ঘুরে বেড়িয়েছি ভারতের বিভিন্ন স্থানে। একবার গেলাম গোয়া। সমুদ্রশহরটি দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় ছিল না। সৈকত ঘিরে সেখানকার মানুষের জীবনধারা বেশ উপভোগ্য। সৈকতে সংগীত, রেস্তোরাঁ, সার্ফিং, বিচ বাইক—মজার এক জীবন।
গোয়া আমাকে টানল। পরের মাসে আবার গেলাম। কিন্তু শুধু গেলে তো হবে না। এ জন্য খরচ লাগে। খরচের সংস্থান করতে সৈকতে একটি রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজ নিলাম। এই দিনগুলো আমার জীবনে নতুন বাঁক এনে দিল। গোয়ায় নানা ভাষার পর্যটক আসেন। রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন করতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা। নানান অভিজ্ঞতার গল্প শোনা। তা ছাড়া একসঙ্গে অনেক মানুষকে খাবার দেওয়া, ঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা। সবকিছু সামলাতে গিয়ে অন্য এক অভিজ্ঞতা হলো। এভাবে টানা চার মাস গোয়া গিয়ে ১৫ দিন করে কাটিয়েছি। এরপর দেশে এলাম। এদিকে অভিনয়ে কেটে গেল তিন বছর। কিন্তু এবার আর কাজে মন বসছে না। মনে হচ্ছে অভিনয়টা আমার জন্য নয়। আমার পথ হয়তো ভিন্ন। ইস্তফা দিলাম অভিনয়জীবনে। ঘুরপাক খেতে থাকল অন্য স্বপ্ন—এমন একটা ক্যারিয়ার হবে, যার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ থাকবে।
এর মধ্যে মাথায় ঢুকল সার্ফিংয়ের পোকা। এলাম কক্সবাজার। এখানেও গোয়ার সেই সমস্যা। খরচ। হোটেলের ভাড়া বেশি। তবে দমে যাইনি। কাজে লাগল গোয়ার অভিজ্ঞতা। লক্ষ করলাম সমুদ্রের পাড়ে কোনো রেস্তোরাঁ নেই, সংগীত নেই। ভালো মানের রেস্তোরাঁ হলে পর্যটকেরা আসবেনই। কিন্তু রেস্তোরাঁ হবে কীভাবে? না আছে জমি-জিরাত, না আছে যথেষ্ট টাকা। সম্বল বলতে নিজের জমানো ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। তারপরও চেষ্টা করতে থাকলাম। সাগরপাড়ে জমির মালিকদের কাছে ধরনা দিলাম। একজন ভাড়ায় জায়গা দিলেন।

শুরু হলো সৈকতজীবন। কলাতলীতে জায়গা পেয়ে তাঁবু খাঁটিয়ে শুরু হলো থাকা। রেস্তোরাঁ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য মাটি কামড়ে পড়ে রইলাম। এই সময়ে সাহস জোগালেন আমার বড় ভাই, বন্ধু নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি জিয়াউদ্দিন খান। তাঁর সহযোগিতায় দাঁড়িয়ে গেল ২০ থেকে ২৫ আসনের রেস্তোরাঁ। নাম ‘মারমেইড ক্যাফে’।

হোঁচট খেয়েছি। আবার উঠে দাঁড়িয়েছি। ছোট ছোট জায়গায় দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করেছি। সেই দক্ষতাই বড় কাজের প্রেরণা দিয়েছে
শুরু থেকে একটি ব্যাপারে কোনো আপস ছিল না। তা হচ্ছে, মানসম্মত খাবার ও পরিবেশবান্ধব স্থাপনা। এ জন্য দরকার ভালো একজন শেফ। ঢাকায় এক বন্ধুর মাধ্যমে এমন একজনকে পেলাম, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে শেফ হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। তাঁকে বললাম, ‘আসুন, দেশের জন্য কিছু করি।’ তিনি আমাকে একটা শর্ত দিলেন রান্নাঘর থাকতে হবে ‘পবিত্র’। আমি আশ্বাস দিলাম, তিনি আস্থা রাখলেন। চলে এলেন কক্সবাজার।
এবার রেস্তোরাঁর বিপণন। নিজেরাই প্রতিদিন সৈকতে হেঁটে হেঁটে কিংবা বাসস্টেশনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে পৌঁছে দিতে লাগলাম মারমেইড রেস্তোরাঁর খবর। পর্যটকেরা রেস্তোরাঁয় এসে দেখল পবিত্র রান্নাঘর। এই আমাদের পুঁজি। দিনে দিনে পর্যটকেরা মারমেইড ক্যাফেমুখী হলো। একটা সময় তো রীতিমতো লাইন পড়ল খাবারের জন্য।
একদিন হঠাৎ মাথার ওপর বাজ পড়ল। জমির মালিক এসে বললেন, জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। বেকায়দায় পড়ে গেলাম। শেষে পাশেই আরেকটি জায়গায় স্থানান্তরিত হলো মারমেইড ক্যাফে। এত দিনের রেস্তোরাঁর আয় পুরোটা বিনিয়োগ করলাম। পর্যটকদের জন্য চালু করলাম মন্তব্য খাতা। এসব মন্তব্যে তাঁরা আমাদের রিসোর্ট করার কথা বলত। বিষয়টা আমাকে ভাবাতে লাগল। আবার বড় ভাই জিয়াউদ্দিন খানের শরণাপন্ন হতে হলো। তিনি বললেন, ‘হুট করে কোনো কিছু নয়। এগোতে হবে ধীরে ধীরে।’
রেস্তোরাঁ চালানোর ফাঁকে জমি খোঁজা শুরু হলো। তবে কক্সবাজার শহরের আশপাশে হবে না। এখানে জমির অনেক দাম। চলে এলাম ২০ কিলোমিটার দূরের রেজুখালের পাশে প্যাঁচার দ্বীপ সমুদ্রসৈকতে। সামান্য জমি কিনলাম। প্রথম দিকে কেনা আধা কানি জমিতে একটি মাটির ঘর তৈরি করলাম। পর্যটকদের জন্য প্যাকেজ বানালাম। সারা দিন নির্জন সৈকতে ঘোরাঘুরি আর দুপুরের খাবার। অনেকেই লুফে নিলেন। এর মধ্যে আমার জীবনে যুক্ত হলো সামিহা আলম চৌধুরী, আমার স্ত্রী। দুজন মিলে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
স্বপ্ন পূরণের পথে এগোনোর প্রাথমিক ভিত্তি গাড়া হলো। জিয়াউদ্দিন খান, সামিহা আর আমি মিলে গঠন করলাম ‘মারমেইড ইকো টুরিজম লিমিটেড’। প্রথম প্রকল্প ‘মারমেইড ইকো রিসোর্ট’। ১৫টি কক্ষ দিয়ে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু। বছর খানেক যাওয়ার পর আবার বিপত্তি। প্রশাসন ভুল বুঝে ভেঙে দিল ইকো রিসোর্টের অর্ধেকটা। মন ভেঙে গেল। ঢাকায় ফিরে গেলাম। তবে বসে থাকলাম না। হাত দিলাম রেস্তোরাঁ গড়ার কাজে। মাথায় ছিল ভালো সেবা ও মানসম্মত খাবার দিলে সব জায়গায় গ্রাহক পাওয়া যাবে। শেষমেশ ঢাকায় চালু হলো ‘মারমেইড গ্যালারি ক্যাফে’। খাবেন তো বটেই, একই সঙ্গে চিত্রকর্মও উপভোগ করুন। ঢাকার মানুষও আমাদের আপন করে নিল।
এর মধ্যে কক্সবাজারের ভাঙা ইকো রিসোর্টও আবার চালু হলো। কর্মীরা কেউ আমাকে ছেড়ে যায়নি। নতুন উদ্যমে ফেরা। এবার অনেক বেশি পরিণত, বাস্তবমুখী। বাড়তে থাকল আয়, সঙ্গে কাজের পরিধিও। এরপর আরও এক ধাপ এগোলাম। আর্ট রেসিডেন্সের আদলে প্যাঁচার দ্বীপে গড়ে তুললাম ‘মারমেইড আশ্রম বিচ ভিলাস’।
এবার স্বপ্ন আরও বিস্তৃত। গড়ে তোলা হলো ‘মারমেইড বিচ রিসোর্ট’। সেটি চালু হয়েছে ২০১২ সালে। এখন তিনটি রিসোর্ট মিলে ৫৩টি কক্ষ।
মারমেইড এখন সারা বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। পর্যটন-বিষয়ক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট ‘ট্রিপ অ্যাডভাইজার’ থেকে এক্সেলেন্স সনদ পেয়েছে। আরেক বিশ্ববিদিত ওয়েবসাইট ‘লোনলি প্ল্যানেট’-এরও সেরা তালিকায় আছে মারমেইড। শুধু তা-ই নয়, চীনের হাইনান প্রদেশের সানায়া সমুদ্রসৈকত এলাকায় যৌথ ব্যবসায় চালু হয়েছে ‘মারমেইড-লা পা মিয়ার’।
আমাদের মূল ভাবনা অর্গানিক খাবার। সেটি দিয়েই এত দূর এসেছি। আমি ইতালীয় দার্শনিক কার্লো প্যাতরিনির ভক্ত। তাঁর ‘স্লো ফুড’ আন্দোলন আমাকে নাড়া দিয়েছে। তিনি বলেছেন, নিজের খাদ্য নিজেই উৎপাদন করতে।
আমাদের এখানেও গ্রামের মানুষের নিজস্ব পদ্ধতিতে জৈব সারে ফলানো ফল-সবজি পর্যটকদের পরিবেশন করা হয়। সেসব সংগ্রহ করা হয় রিসোর্টের ১০ কিলোমিটার এলাকা থেকে। তাজা মাছ দেওয়া হয় সাগর থেকে তুলে এনে। এর ফলে আশপাশের মানুষ ভালো দামে সবজি ও মাছ বিক্রি করতে পারেন। তাঁদের আর্থসামাজিক অবস্থায়ও মারমেইড ভূমিকা রাখতে পারছে।
একদিন পাঁচজনের দল দিয়ে শুরু করা মারমেইড ক্যাফে রেস্তোরাঁর সংখ্যা এখন এসে দাঁড়িয়েছে পাঁচটিতে। রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁর পাশাপাশি অন্য ক্ষেত্রেও প্রসারিত হয়েছে মারমেইড। গড়ে তোলা হয়েছে পোশাকের ব্র্যান্ড ‘মারমেইড মারম্যান’ ও শিল্পকলা-বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘মারমেইড আর্ট ফাউন্ডেশন’।
আমি মনে করি, কর্মীরা সবাই এই প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাঁরা শ্রম দিচ্ছেন, আমরা বিনিয়োগ ও পরিচালনা করছি। তাঁরা মনে করেন, এটি তাঁদের সম্পদ। তাঁদের সেই পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে।
আমার অভিজ্ঞতা হলো, শুরু করতে হবে ছোট কিছু দিয়ে। তাহলে বড় কিছু কীভাবে পরিচালিত হয়, তার অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব। বড় কিছু দিয়ে শুরু করলে সেটার ভগ্নাংশ হয়ে থাকতে হয়।
আসলে ভালোবাসা আর একাগ্রতা থাকলে যেকোনো বাধার পাহাড় ডিঙানো সম্ভব। বাধার পেছনেই থাকে সাফল্যের মন্ত্রগাথা। বাধা পেলে তাই পথ ছেড়ে সরে যেতে হয় না।

Source: Prothom-Alo

7
স্টার্টআপদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটা হল মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ করা। তথ্যের অভাব, উটকো ও জটিল প্রক্রিয়া, দুর্নীতি এবং প্রকৃত সাহায্যকারীর অভাবে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন পাওয়া আমাদের অনেকের জন্যই একটা বাজে অভিজ্ঞতা। আমরা প্রায়ই এই বিষয়ে ফোন এবং ইমেইল পেয়ে থাকি। কিন্তু তথ্যের অভাবে আমাদের যাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। যাই হোক, এ ব্যাপারে বেশ গবেষণার পর সমস্যার সমাধানে এটি আমাদের একটি বিনীত প্রচেষ্টা। চলুন দেখা যাক বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের পদ্ধতি এবং খরচ কেমন:

এটি কারা দেয়: ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯ এবং ট্রেডমার্ক বিধি, ১৯৬৩ অনুসারে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে।

আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

মার্ক/লোগো/ডিভাইসের নাম, প্রতিরূপ অথবা বিবরণ
আবেদনকারীর নাম
আবেদনকারীর ঠিকানা ও জাতীয়তা
আবেদনকারীর পদমর্যাদা (যেমন: মার্চেন্ডাইজার/কারখানার মালিক/সেবা প্রদানকারী/অন্যান্য)
মালামাল/সেবার সবিস্তার বিবরণী ও ধরণ
মার্ক ব্যবহারের তারিখ (তা বাংলাদেশে ব্যবহৃত হোক কিংবা ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত হোক)
সাধারণ/নির্দিষ্ট মোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি), যা পরবর্তীতেও নথিভুক্ত করা যায়।
একনজরে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া:
১. প্রাপ্যতা খোঁজ করা: ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করার আগে খুঁজে নিন যে ট্রেডমার্কটি ইতোমধ্যেই ব্যবহৃত কিংবা অন্য কারো দ্বারা রেজিস্টার্ড হয়ে গিয়েছে কি না।
২. আবেদন: DPDT থেকে আপনার রেজিস্ট্রেশন ফরম সংগ্রহ করুন এবং ঠিকভাবে পূরণ করে জমা দিন।
৩. আবেদনের স্বীকারোক্তি: আবেদনের রসিদের উপর রেজিস্ট্রার সরকারি নথিভুক্তকরণ রসিদ ইস্যু করেন। ঐ ডকুমেন্টে ট্রেডমার্ক সম্পর্কিত যাবতীয় নথিভুক্ত বিবরণ থাকে, যেমন: আবেদন নম্বর, আবেদনের তারিখ, ট্রেডমার্ক ইত্যাদি।
৪. আবেদনপত্র যাচাই: আবেদনপত্র গ্রহণের পর রেজিস্ট্রার ২টি বিষয় যাচাই করে দেখেন: (ক) স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য এবং (খ) আইনের দাবীর সাথে সাধারণ সম্মতি।
৫. স্বীকৃতির চিঠি: যদি আবেদনপত্রটি সব দাবীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, তখন রেজিস্ট্রার ঐ মার্কটির বিরোধিতা প্রাপ্তির জন্য ট্রেডমার্কস জার্নালে বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য একটি স্বীকৃতির চিঠি ইস্যু করেন। নতুবা, রেজিস্ট্রি আপত্তি সংক্রান্ত লিখিত জবাব চেয়ে আপত্তি উত্থাপন করেন।
৬. আবেদনপত্র প্রত্যাখ্যান: বিভিন্ন কারণে আপনার আবেদনপত্র প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে। তবে যাই হোক, যখন এটা ঘটবে আপনি অবশ্যই তিন মাসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দিবেন এবং এই বিষয়ে শুনানির আবেদন করবেন, তা না হলে আপনার আবেদনপত্র পরিত্যক্ত হয়ে যাবে।
৭. আবেদনপত্র গ্রহণ: যদি পরীক্ষক আবেদনপত্র এবং দাবীর প্রতি সন্তুষ্ট হন, রেজিস্ট্রার সেই মার্কটিকে ট্রেডমার্কস জার্নালে বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য গ্রহণ করেন।
৮. বিরোধিতা: যখন ট্রেডমার্কটি বিরোধিতার জন্য ট্রেডমার্কস জার্নালে বিজ্ঞাপন দিবে, প্রকাশের তারিখ থেকে দুই মাসের মধ্যে যেকোনো ব্যক্তি রেজিস্ট্রারের কাছে ফরম TM-5-এ বিরোধিতার নোটিস দিতে পারবে।
৯. রেজিস্ট্রেশন: যদি বিরোধিতার মেয়াদের মধ্যে কোন বিরোধিতা না আসে অথবা প্রতিপক্ষ যদি আবেদনকারীর পক্ষে স্থির অবস্থান নেয়, রেজিস্ট্রার তখন নির্ধারিত ফী গ্রহণ করে ঐ ট্রেডমার্কের জন্য রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ইস্যু করতে বাধ্য হবে।
১০. রেজিস্ট্রেশনের তারিখ: ট্রেডমার্কের রেজিস্ট্রেশনের তারিখ হবে নথিভুক্ত করার তারিখ।
১১. রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদের সময়কাল: একটি রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক প্রাথমিকভাবে নথিভুক্ত হওয়ার তারিখ থেকে সাত (৭) বছরের জন্য বৈধ হয় এবং এরপর প্রতি দশ (১০) বছর পরপর রেজিস্ট্রেশন পুনরাবৃত্তি করা যায়।
১২. প্রয়োজনীয় সময়: সবকিছু ঠিকঠাক চললে এই পুরো প্রক্রিয়ার জন্য এক থেকে দুই সপ্তাহের বেশি লাগা উচিৎ নয়। কিন্তু প্রায়শই এটা দীর্ঘায়িত হয়ে থাকে। DPDT-তে আপনাকে সবকিছুই ম্যানুয়ালি পূরণ করতে হবে। সুতরাং সময় বেশি লাগলে অপেক্ষা করুন এবং যদি আপনার কোন জরুরি অবস্থা থাকে তাহলে দ্রুত শুরু করুন।
১৩. খরচ: সবকিছুর উপর নির্ভর করে আসল খরচ দুই থেকে চার হাজারের বেশি হওয়া উচিৎ নয়; কিন্তু আপনার বাজেটে এর সাথে কিছু ‘স্পীড মানি’ গুণতে হবে। আমাদেরকে দোষারোপ করবেন না; এই অনিয়মগুলো দূর করার জন্য আপনারও দায়িত্ব আছে। এরপর যখন আপনার কাছে কেউ অতিরিক্ত অর্থ চাইবে, তখন নাছোড়বান্দা হোন এবং এটা বন্ধ করার জন্য যতদূর যেতে হয় যেতে থাকুন।

8
Business Information / উদ্যোক্তার ঝুঁকি
« on: November 16, 2016, 11:24:41 AM »
ক’দিন আগে এক উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলছিলাম। আমার বাসার কাছে তার একটি অত্যন্ত ছোট বাজেমালের দোকান আছে। একটি বাড়ির সিড়ির নিচে, ৫০ বর্গফুটও হবে না। আমি প্রায়শ তাঁর দোকান থেকে আমার সন্ধ্যাবেলার সওদা কিনি। তাঁকে আমি চিনি অবশ্য কয়েকবছর আগে থেকেই। একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে চাকরি করতো। সেই ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে তাঁর বেতন ছিল ৭ হাজার টাকা। থাকা-খাওয়া আর ঈদে বাড়ি যাওয়ার খরচ স্টোর মালিকই দিতেন। গ্রামসূত্রে তাকে চাচা ডাকতো সে।কাজ করতে করতে সে এই ব্যবসার কয়েকটা অংশের ব্যাপারে বুৎপত্তি অর্জন করে। তারপর থেকে ঠিক করে নিজেই একটা দোকান করবে। এজন্য টাকা জমাতে শুরু করে ৫০ হাজার টাকার মতো জমাতে সক্ষম হয়। এই সময় তার এলাকার আর একজন উদ্যোক্তা যিনি ছোট দোকান থেকে বড় দোকানে যাবেন তিনি তাঁকে এই দোকানটি নিতে অনুরোধ করে। তবে, দরকার ১ লক্ষ টাকা।
আমাদের উদ্যোক্তা তাঁর বোন জামাই-এর কাছ থেকে আরো ৫০ হাজার টাকা ধার করে এখনকার দোকানটি নেয়। স্টোরের চাকরির সঙ্গে সঙ্গে তার থাকা-খাওয়ার সুযোগটাও রহিত হয়ে যায়। কিন্তু সে হার মানেনি।
বোনের বাসায় গিয়ে উঠে আর আস্তে আস্তে নিজের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে থাকে। প্রায়শ আমি তার ব্যবসার খোঁজ নিতাম। সে বলতো তার কী কী সমস্যা। স্টোরে চাকরি করার সময় সে লক্ষ্য করেছে এ সমস্ত দোকানে যারা কেনাকাটা করেন তাদের এটা অভ্যাসে পরিণত হয় এবং তারা এক দোকানেই মোটামুটি সব কিনতে চায়। শুরুতে তার দোকানে ফ্রিজ ছিল না। কিছুদিনের মধ্যে সে “ফ্রিজ না থাকাকে” তার দূর্বলতা হিসাবে চিহ্নিত করে এবং তারপর ফ্রিজ যোগাড়ে লেগে যায়। কিছুদিনের মধ্যে তার দোকানে একটা ফ্রিজ হয়েছে। এভাবে সে নিজের দূর্বল দিকগুলো প্রথমে চিহ্নিত করে এবং তারপর সেটা অবসানের চেষ্টা করে। ফ্রিজ কেনার সময় সে তাঁর সবলতাও এভাবে চিহ্নিত করে আমার কাছে “স্যার, আপনার মতো অনেকেই পাউরুটির সঙ্গে দুধটাও কিনতে চায়। পাশের দোকান থেকে আলাদা করে কিনতে চায় না। ফ্রিজ হলে দুধটা ওরা আমার কাছ থেকেই কিনবে”। আমি নিশ্চিত জানি, এই উদ্যোক্তার একদিন বড় একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর হবেই, হবে।

এই উদ্যোক্তা নিয়মিত যে কাজটা করেন সেটি হলো নিজের ব্যবসার একটা এসেসমেন্ট। এটি তাকে প্রতিনিয়ত আগানোর শক্তি যোগায়। সে তাঁর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যে কাজটা করে, সেটাকেই ম্যানেজমেন্টর ভাষায় বলা হয়  SWOT (Strength, Weakness, Opportunity, Threat)। শক্তিমত্তা-দূর্বলতা-সুযোগ-হুমকি। এ ধরণের বিশ্লেষন উদ্যোক্তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই ধরণের কাজ করার জন্য দরকার কাগজ-কলম এবং কিছুটা সময়। ভাবতে হয় কিছু বিশেষ প্রশ্নের উত্তর।

যেমন ধরা যাক আপনার শক্তিমত্তা কী?

আপনি যখনই কোন বিনিয়োগকারীর দ্বারস্থ হবেন তখনই আপনাকে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। তো, আপনি বললেন আপনি যে সেক্টরে কাজ করেন সেটার বাজার বছরে পাঁচশ কোটি টাকা। না, এটা আপনার শক্তিমত্তা নয়। আপনাকে ভাবতে হবে কী এমন বিষয় আছে যেটিকে আপনি ক্যাশ করতে পারবেন, যেটি আসলে আপনাকে আগাচ্ছে। যেমন আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু। স্বভাবতই নতুনদের এটা থাকে না। নতুনদের তাহলে কী থাকে? একটা হলো তার একাগ্রতা ও নিষ্ঠা। কিন্তু সেটা কাগজে কীভাবে লিখবেন – আমার পরিচিত একজন উদ্যোক্তা ঘন্টাখানেকের আলাপচারিতায় তার শক্তি বের করতে পেরেছেন – তার অনেক রিটার্নিং কাস্টোমার আছে। কেন? কারণ সে প্রতিটি কাস্টোমারকে আলাদা আলাদাভাবে সেবা দেয়। তাদের ছোটখাটো সেবা দিতেও পিছপা হয় না। এ কারণে অনেক সময় তার কোন লাভ হয় না।

নতুন উদ্যোক্তার আর একটা ভাল শক্তি হতে পারে তার নেটওয়ার্ক। এটা তাঁর মার্কেটিং-এ কাজে লাগবে। তবে, এটা আবার দূর্বলতাও হতে পারে। একজন উদ্যোক্তার দোকান বন্ধ করতে হয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতির কারণে! অনেকেই তার থেকে পন্য নিয়ে বাকী ফেলেছে এবং বলেছে, ” আরে, মাত্র দুই হাজার টাকার জন্য কী তোমার দোকান বন্ধ হযে যাবে?” বেচারা তাদেরকে বলতে পারে নাই যে, এরকম দুই হাজার টাকা বাকী আছে কমপক্ষে আশি জনের কাছে। আপনার জন্য দুই হাজার, আমার জন্য একলক্ষ ষাট হাজার!!!

একটা হুমকির বিষয় বিনিয়োগকারীরা সব সময় জানতে চান। মার্কেটে বড় কোন প্লেয়ার আসলে তুমি কী করবে? ভারতে এসে পড়েছে আমাজন, বাংলাদেশেও আসবে। ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের তাহলে এই হুমকি মোকাবেলায় কী করার দরকার?

তো, এই ধরণের বিশ্লেষন ক্ষমতা অর্জন করা যায় দুই ভাবে। নিজে নিজে পড়ালেখা করে আর নিরন্তর চেষ্টা  করে। আর একটা হলো যারা এই কাজটা ভাল পারেন, তাদের মাধ্যমে এক দুইবার কাজটা করে।

Source: http://munirhasan.com/swot/

9
দারিদ্র্যকে জয় করে যারা স্বপ্ন পূরণ করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ‘শ্যামলী পরিবহনের’ চেয়ারম্যান গনেশ চন্দ্র ঘোষ। চুয়ালি্লশ বছর আগে একটি জীর্ণ পুরাতন স্কুটার থেকে একটি চকচকে নতুন বাস কেনার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। পাবনা শহরের শালগাড়িয়ার অভাবী ঘরের সেই গনেশ চন্দ্র ঘোষ আজ গোটা দেশের পরিবহন খাতের এক দিকপাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তার সেই জীর্ণ স্কুটারটি যেন এক চারাগাছ, যা এখন মহীরুহে পরিণত হয়েছে।

তখন কেবল স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব ভালো ছিল না। গনেশ ঘোষদের পরিবারেও ছিল শতেক রকমের অভাব-অনটন। তবু স্বপ্নবান মানুষটি এই অভাব-অনটনের মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। পড়াশোনা করার সময়ই তিন চাকার একটি স্কুটার কিনেফেলেন তিনি।

জমানো কিছু টাকা তো ছিলই। সঙ্গে ধার-কর্জও করতে হয়েছে। পাবনা শহর থেকে সুজানগর উপজেলা পর্যন্ত স্কুটারে যাত্রী বহন করে যে টাকা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চলত। গণেশ চন্দ্র ঘোষ নিজেও স্কুটার চালাতেন। বড় সন্তান হিসেবে সংসারের ঘানি টানতে টানতেই একদিন তিনি পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে রসায়নে সম্মান ডিগ্রিটাও অর্জন করে ফেললেন। মেজ ভাই রমেশ চন্দ্র ঘোষ ও ছোট ভাই রমেন্দ্রনাথ ঘোষ নিয়মিত স্কুটার চালাতেন। আজকের শ্যামলীর বিশাল সাফল্যে এই দুই ভাইয়ের শ্রমও স্মরণীয়। আকাশছোঁয়া স্বপ্ন বাস্তবায়নে বড় ভাই গণেশ চন্দ্রের পাশে থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছেন রমেশ ও রমেন্দ্র।

ওই সময় পাবনা শহর থেকে সুজানগর আর পাকশী ফেরিঘাট পর্যন্ত চালানো হতো স্কুটারটি। পাবনা-সুজানগর ১২ কিলোমিটার পথের যাত্রীপ্রতি ভাড়া ছিল পাঁচ টাকা। পাকশী ফেরিঘাট পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার চালিয়ে প্রতিজনে পেতেন ৭-৮ টাকা। প্রতি ট্রিপে চারজন যাত্রী বহন করে যা পাওয়া যেত সে দিয়ে সংসারের খরচ বহনের পর কিছু জমানো হতো। এভাবেই কিছুদিনের মধ্যে আরও কয়েকটি স্কুটারের মালিক হয়ে গেলেন তারা।

সেই পুরনো স্কুটারটিতেই গোড়াপত্তন হয়েছিল আজকের শ্যামলী পরিবহনের। এই নামটি প্রথম লেখা হয় জীর্ণ-শীর্ণ সেই স্কুটারটির গায়ে। এখন দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের গৌরব বহন করছে সেই নাম। ধর্মীয় চিন্তা থেকেই স্কুটারটির নাম রাখা হয়েছিল শ্যামলী পরিবহন। দেবতা শ্রীকৃষ্ণের শ্যামলী, ধবলী, কাজলী নামের ধেনুর (গাভী) মধ্য থেকেই ‘শ্যামলী’ নামটি রাখা হয়েছিল। মা-বাবাসহ সাত ভাই, চার বোনের ১৩ সদস্যের পরিবারের সদস্যরা বসে আলোচনা করেই ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধ থেকে নামটি রেখেছিলেন।

গণেশ চন্দ্রের এই উদ্যোগে প্রেরণা জুগিয়েছেন তার বাবা মৃত অবিনাশ চন্দ্র ঘোষ। এতকাল পর পুরনো সেই সব দিনের কথা বলতে গিয়ে তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে বাবার স্মৃতিচারণ করেন। ঢাকায় শ্যামলী পরিবহনের প্রধান কার্যালয় বিলুপ্ত শ্যামলী সিনেমা হলের খুব কাছাকাছি একটি ভবনে। সেখানে ছোট্ট একটি টেবিল, একটি কাঠের চেয়ার। এখানে বসেই প্রতিদিন অফিস করেন চেয়ারম্যান গণেশ চন্দ্র ঘোষ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখোমুখি বসেন তিনি।

অতি সাধারণ পোশাকে নম্রতা ও ভদ্রতার এক এক মূর্ত প্রতীক যেন। সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত এই মানুষটির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, এমডিরা আধুনিক অফিসে বসেন, বিলাসবহুল জীবন-যাপন করেন, আপনি তাদের থেকে ভিন্ন কেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘শান-শওকত আর বিলাসী জীবন-যাপন করলে যাত্রী সেবার মানসিকতা থাকে না। এই সাধারণ জীবন-যাপনেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি আমি।’ জীবনের এক পর্যায়ে তিনি পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের রসায়ন বিভাগে প্রদর্শক শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। অবসরে যান ২০০৯ সালে।

সাধারণ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত মানুষটি এখন শ্যামলী পরিবহন নামে এক সাম্রাজ্যের অধিকর্তা। জীবনের চড়াই-উৎরাই পার করে আজ তিনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন খাতের সার্থক এক ব্যবসায়ী। তার শ্রম, মেধা ও কঠোর পরিশ্রম নতুন প্রজন্মের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে।

শুরুতে স্বপ্নটা এত বড় ছিল না। নতুন একটি বাসের মালিক হবেন_ এই স্বপ্নটুকুই পুঁজি ছিল গণেশ চন্দ্রের। তিনি বললেন, স্বাধীনতার পর প্রথম যে স্কুটারটি তিনি কিনেছিলেন সেটি কেনা হয়েছিল ১৯৭২ সালে। দাম কত পড়েছিল ঠিক মনে নেই। তবে যতদূর মনে করতে পারেন ৭-৮ হাজার টাকায় কেনা হয়েছিল পুরনো ওই স্কুটারটি। পরে আরও কিছু টাকা খরচ হয়েছিল স্কুটারটি সংস্কার করতে। এক সময় পুরনোটির সঙ্গে যুক্ত হয় আরও কয়েকটি স্কুটার।

পরে স্কুটারগুলো বিক্রি করে যে টাকা হয়েছিল তা দিয়ে একটি পুরনো বাস কেনা হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। তখনও নতুন বাস কেনার স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে যায়। রাজশাহী থেকে নগরবাড়ি পর্যন্ত চালানো হতো পুরনো ওই বাসটি। বাস চালিয়ে উপার্জিত অর্থ, পরিবারের সদস্যদের স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির অর্থ এবং সোনালী ব্যাংক পাবনা জেলা শাখা থেকে নেওয়া ঋণের টাকায় ১৯৭৮ সালে কেনা হয় চকচকে একটি নতুন বাস। সেদিনই পূরণ হয় গণেশ চন্দ্রের নতুন বাস কেনার স্বপ্ন। তখন থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর বছরে বছরে কেনা হয় নতুন নতুন বিলাসবহুল আধুনিক বাস।

১৯৭২ থেকে ৪৪ বছর পর আজ পরিবহন সেক্টরে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী গণেশ চন্দ্র ঘোষ। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও চলে তিল তিল করে গড়ে তোলা শ্যামলী পরিবহনের বাস। দেশে-বিদেশে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার টিকিট কাউন্টার। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক লাখ শিক্ষিত, অশিক্ষিত মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে এই পরিবহনে। বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিধি ক্রমে বেড়েই চলেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার সর্বত্র চলে শ্যামলী পরিবহনের বাস। অর্থাৎ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া শ্যামলীর সেবা আছে সর্বত্রই।

আন্তর্জাতিক রুটের মধ্যে ঢাকা-কলকাতা, আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-শিলং-গৌহাটি-ঢাকা, ঢাকা-বুড়িমারি-শিলিগুড়ি, চট্টগ্রাম-ঢাকা-কলকাতায় (ট্রানজিট) চলছে শ্যামলীর বাস। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক রুটে চালানো হচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১০টি অত্যাধুনিক বাস। দেশের অভ্যন্তরে শ্যামলী ব্র্যান্ডের বাসের সংখ্যা ৪শ’ ৫০টি। এর মধ্যে অর্ধশত বাস শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।

এখন দেশে-বিদেশে শ্যামলী পরিবহন একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। তাদের আধুনিক একটি চেয়ার কোচের দাম ৭০ লাখ টাকা। অত্যাধুনিক বিলাসবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি বাসের দাম দেড় কোটি থেকে পৌনে দুই কোটি টাকা। একদিন যারা জীবনের তাগিদে ৭-৮ হাজার টাকায় পুরনো স্কুটার কিনে চালাতেন আজ তারাই পৌনে ২ কোটি টাকায় আন্তর্জাতিক মানের বাস কেনেন। দেশ-বিদেশে যারা দারিদ্র্যের রাহু থেকে মুক্ত হয়ে জীবনসংগ্রামে জয়ী হয়েছেন, তারাই আজ ওইসব দেশে ইতিহাসের অংশ। শ্যামলীও আজ বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ।

চুয়ালি্লশ বছর আগের ৭-৮ হাজার টাকার বিনিয়োগ আজ ৪০০ কোটির ঊর্ধ্বে পৌছেছে। পাবনা-ঢাকা প্রথম বাস সার্ভিস চালু হয় ১৯৭৯ সালে। কুষ্টিয়া-ঢাকা প্রথম নাইট কোচ চালু করা হয় ১৯৮১ সালে। আন্তর্জাতিক রুটে বাস চলাচল শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। আন্তর্জাতিক রুটে বাস চালানোর জন্য ওই সময় সরকারি উদ্যোগে এক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল খ্যাতনামা ১২টি বাস কোম্পানি। তার মধ্যে গুণগতমানসহ সার্বিক বিচার-বিশ্লেষণে নির্বাচিত হয় শ্যামলীর বাস। ওই সময়ই ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বাস চালানোর জন্য সরকারের সঙ্গে শ্যামলী কর্তৃপক্ষের এক চুক্তিও হয়েছিল।

বর্তমানে ঢাকাসহ সারাদেশে শ্যামলী পরিবহনের এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে। এই সাম্রাজ্যে প্রত্যক্ষভাবে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করে। দেশের ভেতরে টিকিট কাউন্টারের সংখ্যা তিনশ’র বেশি। প্রতিষ্ঠানের জিএম, অঞ্চলভিত্তিক ম্যানেজার, কাউন্টার মাস্টার, টিকিট বিক্রেতা, চালক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হিসাব বিভাগ, মেইনটেন্যান্স, প্রধান মেকানিক, সহকারী, সার্ভিসিং সেন্টার, ক্লিনিং, চেকআপ, বডি মেরামত গ্যারেজ, পার্কিং অ্যান্ড ফুয়েলিং স্টেশনসহ নানা ইউনিট রয়েছে।

পরিবহন খাতের ঝুঁকি সম্পর্কে গণেশ চন্দ্রের মেজ ভাই শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেছেন, ফুটবল খেলে মারধর করা হলেও একপর্যায়ে গাড়ি ভাংচুর শুরু হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতায়ও রাস্তায় চলা গাড়িগুলো হয়ে ওঠে প্রধান শত্রু। শুরু হয় ভাংচুর। সবচেয়ে ভয়ানক হলো পুড়িয়ে দেওয়া। একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হলে সেটি সচল করার মতো কোনো অবস্থা থাকে না। মুহূর্তেই মূল্যহীন হয়ে যায় দামি একটি বাস। এরপর দুর্ঘটনাতো আছেই।

শ্যামলী পরিবহনের কোনো বাস দুর্ঘটনার শিকার হলে দুর্ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী অফিসের দায়িত্বশীল লোক দ্রুত সেখানে চলে গিয়ে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন। শ্যামলী পরিবহন কর্তৃপক্ষই এই চিকিৎসার খরচ বহন করে। প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়। দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে সংশ্লিষ্ট পরিবারকে সাধ্যমতো ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়। মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের কাছে গিয়ে সহমর্মিতাও জানানো হয়।

শ্যামলী পরিবহনের চেয়ারম্যান গণেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘যাত্রী সেবাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। একটি গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীদের যতটুকু সেবা দেওয়া দরকার আমরা ততটুকু দিই। যাত্রীরাই আমাদের অমূল্য সম্পদ। সেবা দিয়ে আমরা তৃপ্তি পাই।’ তিনি বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল বলেই দেশের পরিবহন খাতের উন্নয়নের আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছি।’

(Source: http://www.bdview24.com/)

10
IT / মালিহা এম কাদির: সহজ.কম
« on: November 16, 2016, 11:22:09 AM »
সিঙ্গাপুর থেকে ফোনে সহজের পরিকল্পনার কথা জানালে বাবা মজা করে বলেছিলেন, ‘তুমি তো পাগল। এত ভালো চাকরি ছেড়ে দেশে এসে তুমি বাসের টিকিট বিক্রি করবে।’ কিন্তু দৃঢ়প্রত্যয়ী মালিহা তার সিদ্ধান্তে অনড় রইলেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে পাকাপাকিভাবে চলে আসেন। এর এক মাস পর জানুয়ারি থেকে পুরোদমে সহজডটকম-এর কাজ শুরু করেন

নামটা ‘সহজ’ হলেও কাজটা মোটেও সহজ নয়। কাজের চাপে দম ফেলার সময় নেই। তবু মুখে তৃপ্তির হাসি লেগেই আছে। এ হাসিই নাকি পঞ্চাশের অধিক কর্মীর কাজের অনুপ্রেরণা। মালিহা এম কাদির; আমেরিকা কিংবা সিঙ্গাপুরের উন্নত জীবনের মায়া ছেড়ে দেশের মানুষকে আধুনিক সেবা দিতে উদ্যোগ নিয়েছেন হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ সম্পন্ন করা এ উদ্যমী নারী। নামিদামি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও সহজ তার প্রথম উদ্যোগ। স্বপ্নটা তাই একটু বড়।

কর্মজীবী নারী হিসেবে পেশাজীবনের শুরু থেকেই মালিহা এম কাদিরের ভাবনাজুড়ে জীবন কীভাবে আরো সহজ হবে। আমেরিকায় থাকাকালীন সময়ে ‘রিয়েল সিম্পল’ নামের একটি ম্যাগাজিন পড়তেন। এটা তার প্রিয় ম্যাগাজিন। এর থিম হলো ‘হাউ টু মেইক লাইফ সিম্পল’। নানান ধরনের কাজ  কীভাবে দ্রুত ও সহজে করা যায়, সেসব নিয়েই তৈরি হয়েছে এ ম্যাগাজিন। অন্যদিকে মালিহার কল্পনার বিষয় প্রযুক্তির মাধ্যমে কীভাবে মানুষের জীবন সহজ করা যায়। দুই ভাবনা একযোগ হয়েই জন্ম হয় সহজডটকমের।

মালিহা এম কাদিরের শৈশব কেটেছে ঢাকায়। মা-বাবার একমাত্র সন্তান, ছোটবেলা থেকেই ক্লাসে প্রথম ছিলেন। বাবা রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ও মা জীবন বীমা করপোরেশনে কাজ করতেন। মা-ই তার অনুপ্রেরণার উত্স।

মালিহার মা-বাবার দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনার শখ ছিল। সেখান থেকে তারও বিদেশে পড়াশোনার আগ্রহ জন্মে। ইংলিশ মিডিয়ামে ও লেভেল সম্পন্ন করে মালিহা আমেরিকায় চলে যান। সেখানে স্মিথ কলেজে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইকোনমিকসে স্নাতক শেষ করেন।

এর পর ২০০০ সালে ক্যারিয়ারের শুরুতে মরগান স্ট্যানলির মার্জারস অ্যান্ড একিউজিশন টিমে কাজ শুরু করেন। মার্কেট একিউজিশনে কোম্পানিগুলো যখন মার্জ করে, সেগুলোর ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস করতেন তিনি। সে সময় অনেকটা শ্রম দিতে হয়েছে তাকে। কখনো রাত ৩টা-৪টা পর্যন্ত অফিসে কাজ করতে হতো। নিজের লক্ষ্য পূরণে সে কষ্টগুলোও সয়ে নিয়েছিলেন।

মালিহার পরিকল্পনা ছিল একটি ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করে দেশে ফিরে কিছু করার। ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং সেক্ষেত্রে ভালো একটা শেখার জায়গা। তাই হাল না ছেড়ে দিয়ে লেগে রইলেন। টানা তিন বছর কাজ করলেন সেখানে। এ সময়টায় স্বামী খালিদ কাদিরের কাছ থেকে দারুণ সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানান মালিহা। খালিদ কাদির ব্রুমার অ্যান্ড পার্টনারসের একজন অংশীদার। মালিহার এগিয়ে যাওয়ার পথে তার অভিজ্ঞতাও কাজে লেগেছে অনেকটা।

মরগান স্ট্যানলিতে কাজ করতে করতেই একসময় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করার সিদ্ধান্ত নেন মালিহা। হার্ভার্ডে এমবিএ পড়ার সময় ২০০৫ সালে তার প্রথম সন্তান আনুশকার জন্ম। ছোট্ট মেয়ে আনুশকাকে নিয়েই হার্ভার্ড থেকে ২০০৮ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। এর মধ্যখানে দুই বছর বাংলাদেশে ব্র্যাকনেটেও কাজ করেন মালিহা। ব্র্যাকনেটে ক্ল্যাসিফাইড কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতেন। হার্ভার্ড থেকে এমবিএ শেষে তিনি সিঙ্গাপুরে ব্যাংকিং সেক্টরে কাজ শুরু করেন। এক বছর কাজ করেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে এবং পরে নকিয়ায় সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে ডিজিটাল কন্টেন্ট সার্ভিসে যোগ দেন।

নকিয়া লাইফ টুলস ডিজিটাল সার্ভিসের ইমার্জিং মার্কেট বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সেক্টরটি তিনি দেখতেন। যেখানে মোবাইল গ্রাহকদের এ সার্ভিসের মাধ্যমে কৃষি, স্বাস্থ্য, ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে এসএমএসএ পরামর্শ দেয়া হতো। ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া— এ তিন দেশ ছিল তার দায়িত্বে। তিনি জানান, সেখান থেকেই মূলত বাংলাদেশেও এমন কিছু করা যায় কিনা, সে ভাবনার জন্ম। নকিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে আসেন সার্ভিসগুলো চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে। কিন্তু নকিয়া পরিকল্পনা থেকে সরে এলে সিঙ্গাপুরে ইউরোপীয় অনলাইন কোম্পানি ভিসতাপ্রিন্ট ডটকমে যোগ দেন মালিহা। কোম্পানি তাদের ইমার্জিং মার্কেট এক্সপেনশন করার জন্য তাকে নিয়োগ দেয়। এ সময়ে বিভিন্ন দেশ নিয়মিত ভ্রমণ করতে হতো তার। ভিসতাপ্রিন্টে কাজ করার সময় থেকেই বাংলাদেশে আসার বিষয়টি মনস্থির করে ফেলেন।

বাংলাদেশে এসে বোঝার চেষ্টা করেন, এখানকার ইন্টারনেটের কী অবস্থা। দেখলেন,  বাংলাদেশের ইন্টারনেট সেবা অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। বিভিন্ন অনলাইন ক্লাসিফাইড সাইটগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চাকরি ছেড়ে দিয়ে সিঙ্গাপুরে বসেই সহজের টিম গোছানো শুরু করেন। একদিন সিঙ্গাপুর থেকে ফোনে সহজের পরিকল্পনার কথা জানালে বাবা মজা করে বলেছিলেন, ‘তুমি তো পাগল। এত ভালো চাকরি ছেড়ে দেশে এসে তুমি বাসের টিকিট বিক্রি করবে।’ কিন্তু দৃঢ়প্রত্যয়ী মালিহা এম কাদির তার সিদ্ধান্তে অনড় রইলেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে পাকাপাকিভাবে চলে আসেন। এর এক মাস পর জানুয়ারি থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করেন। লোভনীয় চাকরি ছেড়ে নিজেই উদ্যোগী হয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন সহজডটকম। এ মুহূর্তে অনলাইনে ২৫টি বাস ও ১২টি লঞ্চ অপারেটরের টিকিট বিক্রি হচ্ছে সহজডটকমে। হোটেল রিজার্ভেশন, ইভেন্টের টিকিট বিক্রির পাশাপাশি এ বছর তাদের সেবায় যোগ হয়েছে সিনেমার টিকিট বিক্রিও।

মালিহা এম কাদির জানান, সহজ তার প্রথম উদ্যোগ। কাজটা অনেক মজার। যারা সহজ ব্যবহার করছেন, তারা নাকি বোঝেন এর মজাটা। তবে অনলাইন ব্যবহার অনেকে কঠিন মনে করেন। কারণ তারা এভাবে টিকিট কিনে অভ্যস্ত নন। তাই অনলাইনে মানুষকে নতুন নতুন এ ধরনের সেবায় অভ্যস্ত করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন মালিহা এম কাদির।

সূত্র: http://www.bonikbarta.com/

11
কী ছিল আর কী হল। মাঝের চার দশকে আমূল পরিবর্তন। একাত্তরে স্বাধীন হওয়ার পর মুমূর্ষু বাংলাদেশ। অন্নের সঙ্গে ওষুধের সংকট। বাঁচতে হলে দুটোই দরকার। সুজলা সুফলা বাংলাদেশের মাটিতে তখনও রক্তের দাগ। বিপন্ন চাষিদের মাঠে যেতেই ভয়। প্রতিবেশী দেশের বদন্যতায় অন্ন সংস্থান যদিও বা হল, ওষুধ কোথায়। রোগশয্যার রোগীর পাশে দাঁড়িয়ে প্রেসক্রিপশন লিখতে লিখতে ডাক্তার জানিয়ে দিচ্ছেন, এ সব ওষুধ আপনাদের যোগাড় করতে হবে। না পেলে কিছু করার নেই। ওষুধ তো আকাশের মেঘ নয় যে বৃষ্টি হয়ে টুপটাপ ঝরবে। অনেক কষ্টে ২০ শতাংশ ওষুধ দেশে তৈরি। বাকি ৮০ শতাংশ আসবে কোত্থেকে। পাকিস্তান দিতে পারত। তারা দেওয়া বন্ধ করেছে। প্রকারান্তরে বলতে চাইছে, বোঝ এবার স্বাধীন হওয়ার জ্বালা। ইউরোপ, আমেরিকার বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিও ওষুধ দিতে নারাজ। তাদের সাফ কথা, ডলার দাও, ওষুধ নাও। সদ্য স্বাধীন দেশে ডলারের রিজার্ভ তখন শূন্য। দুঃসময়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় পূর্ব ইউরোপের হাঙ্গেরি। সেখানকার ওষুধ সংস্থা ইগিস, গেইডেন, রিখটার কাইরন, মেডিম্পেস বাংলাদেশে ওষুধ সরবরাহে রাজি হয়। তারা জানিয়ে দেয়, বার্টার সিস্টেমে বা পণ্যের বিনিময়ে ওষুধ দেবে। এ তো হাতে চাঁদ পাওয়া। হাঙ্গেরিতে যেতে লাগল বাংলাদেশের পাট আর অন্যান্য কাঁচা পণ্য। পরিবর্তে এল ওষুধ।

অন্যের করুণায় বাঁচাটাও তো সম্মানের নয়। ধীরে ধীরে ওষুধ উৎপাদন শুরু বাংলাদেশে। বিদেশি সংস্থার মাথায় হাত। বাংলাদেশের বাজার হারালে যে বিরাট ক্ষতি। ১৯৮২তে অর্ডিন্যান্স জারি করে বিদেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ। কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার মতো পাপড়ি মেলল বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প। এই মুহূর্তে বিশ্বের অনুন্নত ৪৮ দেশের মধ্যে ওষুধ উৎপাদনে শীর্ষে বাংলাদেশ। ২৫৭ কোম্পানির ২৪ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ। বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে যাচ্ছে। রফতানি বাড়ছে দ্রুত। কর্মসংস্থান দু’লাখের। উল্টো দিকে এখন আতান্তরে পাকিস্তান। তাদের ওষুধ শিল্পে ভাটার টান। অভাব মেটাতে বাংলাদেশের কাছে ওষুধ চাওয়ারও মুখ নেই।

বাংলাদেশের ওষুধ সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে মায়ানমারে। তারপর শ্রীলঙ্কায়। পাঁচ বছরে রফতানি দ্বিগুণ। ১২ মাসে রফতানি ৮ কোটি ডলারের বেশি। কাঁচামাল আমদানিতে এখনও যে খরচ হচ্ছে সেটা বন্ধ হবে ১০ বছরে। বাংলাদেশই তৈরি করবে যা দরকার। তখন রফতানি বেড়ে দাঁড়াবে ৩০০ কোটি ডলারে। বর্তমানে রফতানি বাণিজ্যে সবচেয়ে এগিয়ে পোশাক শিল্প। টাকার অঙ্কে ওষুধ রফতানি তাদেরও ছাপিয়ে যাবে। ওষুধ রফতানির পথিকৃত বেক্সিমকো। ১৯৯২এ ইরাক, হংকং, ভিয়েতনাম, কোরিয়ায় পেনিসিলিন পাঠিয়ে চমক দেয়। পরের জায়গাটা নেয় প্যারাসিটামল। এবার যাবে কার্ভিডিলোল। আমেরিকার অনুমোদন পাওয়ায় হৃদযন্ত্রের ব্যাধি নিরাময়ের এই দুর্লভ ওষুধটি রফতানিতে কোনও বাধা নেই। আপাতত বাংলাদেশের ওষুধ যাচ্ছে ১৬০ দেশে। চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। অতিরিক্ত রফতানিতে ডলারের রিজার্ভে আর কোনও সংকট নেই। জীবনদায়ী ওষুধ দিয়ে বিশ্বকে বাঁচাচ্ছে বাংলাদেশ। সেই ওষুধেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রাণের জোয়ার।

source: http://www.anandabazar.com/

12
Successful Entrepreneur / The Singer Story
« on: November 16, 2016, 11:19:58 AM »
SINGER, from a single product sewing machine company evolved into a multi-product consumer durable company in 1985 for further growth and expansion.
SINGER has been operating in this region since 1905, when the first SINGER sewing machines went on Sale at Chittagong and Dhaka shops. Today, SINGER Bangladesh Ltd. is a large, diversified company with unmatched presence throughout Bangladesh. The brand SINGER is a household name and a synonym of quality, trust and reliability.

Abu Muhammad Hamim Rahmatullah, Managing Director & Chief Executive Officer, Singer
Abu Muhammad Hamim Rahmatullah, Managing Director &
Chief Executive Officer, Singer
THE ORIGIN STORY
SINGER’s history can be traced back to 1851, when Sir Isaac Merritt SINGER with $40 in borrowed capital began to manufacture and sell a machine to automate and assist in the making of clothing was also known as the sewing machine. This revolutionary product was the first offering from the newly formed I.M. SINGER & Company, which later evolved into the world as the leader in manufacturing and distribution of sewing related products better known as SINGER.
The first electric machine was introduced in 1889 and by the turn of the century, annual sales had reached $1.35 million. As it expanded, a separate subsidiary was established to handle sales and distribution in the western hemisphere which was called the SINGER Sewing Machine Company.
Capitalizing on its famous brand name, its hire-purchase plan and its vast network of retail outlets and other distribution points around the world, SINGER introduced electronics, home appliances, and other consumer durables especially in the Asia Pacific Rim, Latin America and the Caribbean. As its reach grew wider, it slowly became a household name throughout the world.

SINGER BANGLADESH HISTORY
SINGER’s presence in Bangladesh dates back to the British colonial era around 1905 when the country was a part of the Indian subcontinent. After the partition of the sub-continent in 1947, and the emergence of two separate states, SINGER in East Pakistan operated as a branch of SINGER Pakistan and the products came from Western Pakistan. At the initial stage, marketing operation was carried out through only 10 shops, which increased to 43 by the late 1960s.
After the emergence of Bangladesh on December 16, 1971, the East Pakistan Branch Office was elevated to a country Office and the Sewing Machines were made available from different SINGER overseas sources. However, its number of shops declined to 23 because of the decreased volume of business.
A change in the investment policy in 1979 created new business opportunities and SINGER was registered as an operating company, with 80% of the share held by SINGER Sewing Machine Company (SSMC), USA, and 20% by local shareholders. In 1983, the company was enlisted with Dhaka Stock Exchange (DSE) and offered 20% of its total capitalization- 2,565 ordinary shares of Taka 100 each. In 2001, it was also enlisted with the Chittagong Stock Exchange (CSE).

DIVERSIFICATION
SINGER’s name has always been synonymous with the sewing machine. Although sewing happy wheels demo machines are still at the heart of SINGER’S business, the management realized that this product alone could not sustain their desired level of growth for the company. This realization led to diversification into numerous product ranges through which the transformation began.
SINGER, from a single product sewing machine company evolved into a multi-product consumer durable company in 1985 for further growth and expansion.
This diversification into consumer durables has continued unabated. Over the years SINGER has introduced Refrigerators, LCD/LED TV, Color Televisions, Furniture, Air Conditioners, Fans, Washing Machines, Irons, Microwave Ovens, Rice Cookers, Instant Power supply and so on. Even now new items are being added to its existing large list of electronic appliances.
FURNITURE BUSINESS
SINGER has been a reliable household name in Bangladesh for decades. As a part of its continuous effort, SINGER has also introduced SINGER Furniture, ensuring the same SINGER quality. The state of the art manufacturing plant of SINGER Furniture is situated in Jhamur, Rajfulbaria near Savar. Within a short span of time, SINGER is now manufacturing complete living room, bedroom, lifestyle furniture and dining solutions for its consumers.

FINANCIAL SERVICES
In order to interact with consumers’ in their day to day life SINGER is now offering financial services such as Western Union, Bikash, Billpay and Flexiload from most of its SINGER Mega and SINGER Plus outlets.

HIRE PURCHASE
SINGER is the pioneer in offering Hire Purchase Scheme (Easy Monthly Installment) to its consumers in Bangladesh. This scheme is appropriate for our socio-economic condition.

SERVICE
SINGER Service Plus Centers are equipped with state of the art machineries and skilled manpower. With one Central Service Center in Dhaka, there are Regional SINGER Service Plus Centers in Chittagong, Jessore, Bogra, Sylhet, Barisal and Rajshahi. In addition, SINGER has 205 authorized Franchise Workshop across the country for the convenience of customers.

RETAIL ROLE
After 2006, the gradual transformation of SINGER Shops into ‘SINGER Mega’ and ‘SINGER Plus’ began as part of its multi-branding strategy. The main focus of the strategy was to give customers the access to choose world famous brands under the same product category under the same roof. As such SINGER Mega and SINGER Plus Shops now offer world famous brands like BEKO, Grundig, Apple, Samsung, Siemens, Skyworth, Videocon, Preethi, Singtech, Dell, Toshiba, Prestige, Lifestraw and many more alongside with SINGER itself.

WHOLESALE CHANNEL
Despite having its own retail chain for Consumer Electronics and Home Appliance industry in the country, more than 300 dealers are located across the country to make Consumer Electronics & Home Appliances of SINGER and other brands available to more consumers.
Its multi brand multi channel business model has made SINGER the number one retailer in Bangladesh. SINGER’s wide range of products namely Electronics, Home Appliances, Furniture and IT products touch every aspect of modern life.
SINGER lives up to the expectations of a responsible retailer by contributing to the improvement in the quality of life of its customers through outstanding product and services. Customer satisfaction is at the top of SINGER’s priority and it offers world’s best brands and technology to consumers.

source: ICE Business Times

13
মেসার্স’ (MESSRS), এই ইংরেজি শব্দটি কেন ব্যবহার হয়

মেসার্স’ (MESSRS), এই ইংরেজি শব্দটি সাধারণত বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নামের আগে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। কিন্তু এই শব্দটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুলভাবে ব্যবহার করা হয় আমাদের দেশে। অজ্ঞতা এবং অসচেতনতার কারণেই এটা হয়ে থাকে।
‘মেসার্স’ শব্দটি ইংরেজি ‘মিস্টার’ শব্দের বহুবচন। সুতরাং যেসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নাম কোনো মানুষের নামে এবং তার সঙ্গে অন্য আরো মানুষের সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ করে (যেমন ‘আলম অ্যান্ড ব্রাদার্স’ বা ‘গণেশ অ্যান্ড কম্পানি’), সেসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নামের ক্ষেত্রে ‘মেসার্স’ শব্দটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যেসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নাম কোনো মানুষের নামে নয় (যেমন ‘কর্ণফুলী ট্রেডার্স’ বা ‘সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস’), সেসব প্রতিষ্ঠানের নামের আগে ‘মেসার্স’ শব্দটির ব্যবহার সঠিক নয়। আবার আমরা যেমন নিজেরা নিজেদের নাম বলার ক্ষেত্রে ‘মিস্টার’, ‘জনাব’ বা ‘শ্রী’ বলি না (উদাহরণস্বরূপ কারো নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি যেমন নিজের নাম ‘আমার নাম মিস্টার নূরুল আলম’ বা ‘আমার নাম শ্রী মোহন লাল মহাজন’ বলেন না), বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ‘মেসার্স’ শব্দটির ব্যবহার অনুরূপ হওয়া উচিত। অর্থাৎ কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নাম (আলম অ্যান্ড ব্যাদার্স বা ‘গণেশ অ্যান্ড কম্পানি’ হলেও নিজে ‘মেসার্স’ শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না (যেমন সাইন বোর্ডে, লেটার হেডে, বিভিন্ন লাইসেন্সে ইত্যাদি)। এই ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্দেশ্য করে বাইরে থেকে কেউ যখন যোগাযোগ করবেন (যেমন চিঠি বা ই-মেলের মাধ্যমে), তখন তাঁরা লিখবেন ‘মেসার্স আলম অ্যান্ড ব্রাদার্স’ বা ‘মেসার্স গণেশ অ্যান্ড কম্পানি’। এটাই অভিপ্রেত এবং শোভনীয়।
আবার ‘মিস্টার’ শব্দটি পুংলিঙ্গ এবং ‘মেসার্স’ শব্দটি তার বহুবচন হলেও কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নামে, কোনো স্ত্রীলোকের নামে হলে এবং তার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকলে (যেমন ‘নাসিমা অ্যান্ড ব্রাদার্স’), উপরিউক্ত নিয়মে এই ক্ষেত্রেও ‘মেসার্স’ শব্দটি ব্যবহার করা যায়।

14
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ঋণ দেয় না, অংশীদার হয়’

বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক তরুণ  ‘উদ্যোক্তা ’ হতে চান।কিন্তু তাদের প্রধান সমস্যা-মূলধন। এ সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল। আশার কথা, অনেক দেরিতে হলেও বাংলাদেশে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নীতিমালা হয়েছে। তবে পরিতাপের বিষয়, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা নেই অনেক তরুণের মধ্যেই। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কী, কেন, তরুণ উদ্যোক্তাদের কীভাবে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সহায়তা করতে পারে এসব নানা বিষয় নিয়ে  দি প্রমিনেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেডের (বিভিসিএল) সমন্বয়ক মো. রাশেদুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন  মারুফ ইসলাম।
________________________________________
প্রমিনেন্ট: শুরুতেই আপনার কাছে জানতে চাই, ভেঞ্চার ক্যাপিটালের কাজ কী?

রাশেদুল ইসলাম: একজন উদ্যোক্তার মাথায় যখন ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আসে, তখন নিজের সাধ্যমত অর্থ দিয়ে তিনি ব্যবসা শুরু করেন৷ তারপর হাত পাতেন পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের কাছে৷ এরপর চড়াই উত্রাই পার করার পর ব্যবসায় সাফল্য এলে উদ্যোক্তা আগ্রহী হন ব্যবসাটাকে বাড়ানোর জন্য৷ কিন্তু এখন এই অর্থের যোগান আসবে কোথা থেকে? কে দেবে এই অর্থ? অনেকের কাছেই যেতে হয় অর্থের যোগানের জন্য কিন্তু হতাশার বাণী ছাড়া আর কিছুই মেলে না৷ শেষ ভরসা ব্যাংক৷ কিন্তু ব্যাংক যখন দেখে, এখনো ব্যবসা লাভের মুখ দেখিনি আবার ব্যবসার বয়স এখনো দুই বছর পার হয়নি, তখন উদ্যোক্তাকে কোন আশার বাণী শোনাতে পারে না৷ ব্যাংক এবং লিজিং কোম্পানির সাথে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল; তারা ঋণ দেয় না৷ তারা কোম্পানির অংশীদার হিসেবে কাজ করে; এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তার কোম্পানি পরিচালনায় অংশ গ্রহণ করে যাতে কোম্পানি লোকসানের মুখে না পড়ে৷ যেহেতু কোম্পানির সাফল্য মানে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের সাফল্য সেহেতু কোম্পানিকে লাভজনক করার জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি  থাকে না৷ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োজিত কোম্পানিতে চিরদিন অংশীদার হিসেবে থাকার জন্য আসে না৷

প্রমিনেন্ট: আপনি বলছিলেন, ব্যাংক তরুণ উদ্যোক্তাদের আশার বাণী শোনাতে পারে না। শুধু এ কারণেই কী উদ্যোক্তারা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের কাছে যাবে?

রাশেদুল ইসলাম: ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা পাওয়া ভালো, তবে বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। যেমন:
•   যে পরিমাণ টাকা আপনি ব্যাংক বা অন্যন্যা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করবেন, লাভ ক্ষতি যেটাই করেন আপনাকে সুদের হার দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
•   এই সুদের হার প্রদান করা আপনার জন্য ব্যয়বহুল হবে কারণ আপনার প্রতিষ্ঠান সবে মাত্র ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছে।
•   ব্যাংক কখনই আপনার প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হবে না। যেহেতু ব্যাংক আপনার পার্টনার নয়, সেহেতু ব্যাংক থেকে কোনো প্রকার উপদেশ, কোম্পানি গঠন বা সৃজনশীলতায় সহায়তা করবে না এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কোনো প্রকার সহোযোগিতা পাবেন না।
•   কিন্তু ভেঞ্চার ক্যাপিটাল আপনার পার্টনার (অংশীদার) হবে এবং অল্প পরিমাণ শেয়ার নিবে, মজার ব্যপার হচ্ছে প্রাধান্য আপনারই বেশি থাকবে যাকে ইংরেজিতে মেজরেটি বলে থাকি।
•   ভেঞ্চার ক্যাপিটাল আপনার পার্টনার ফলে আপনি যদি ব্যর্থ হন এটা শুধু আপনার ব্যর্থতা নয়; যে পার্টনার তারও। সেজন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল চাইবে আপনাকে কীভাবে সফলতায় নিয়ে যাওয়া যায়।
এখন আমরা বলতে পারি ব্যাংক এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে টাকা নেয়া আকাশ–পাতাল ব্যবধান। কারণ আপনি ব্যাংক থেকে টাকা পেতে পারেন কিন্তু ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে স্মার্ট টাকা পাবেন, স্মার্ট টাকা বলতে টাকা পাওয়ার সাথে সাথে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা বিনিয়োগ সংক্রান্ত সকল প্রকার সহোযগীতা পাবেন।

প্রমিনেন্ট: ব্যাংকঋণ ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মধ্যে পার্থক্য যদি আর একুট বিস্তারিতভাবে বলতেন...

রাশেদুল ইসলাম: ব্যাংক এবং লিজিং কোম্পানির সাথে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল; তারা ঋণ দেয় না৷ তারা কোম্পানির অংশীদার হিসেবে কাজ করে; এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তারা কোম্পানি পরিচালনায় অংশ গ্রহন করে যাতে কোম্পানি লোকসানের মুখে না পড়ে৷ যেহেতু কোম্পানির সাফল্য মানে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের সাফল্য সেহেতু কোম্পানিকে লাভজনক করারার জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি  থাকেনা৷ ব্যাংক সাধারণত নতুন উদ্যোক্তাদের ফাইন্যান্স করতে পারে না৷ ব্যাংক যখন কোনো উদ্যোক্তাকে ফাইন্যান্স করবে তখন তার পূর্বের ব্যবসায়িক রেকর্ড চেক করার পাশাপাশি ব্যবসাটি লাভজনক কিনা, জামানত দিতে পারবে কিনা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কি পরিমাণে আছে এবং ট্রেড লাইসেন্সের বয়স নূন্যতম ২ বছর হয়েছে কিনা তা যাচাই করবে৷ সেক্ষেত্রে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম-ই একমাত্র ভরসা৷ শুধু তাই নয় ব্যাংক থেকে টাকা নেয়ার ২ বা ৩ মাস গ্রেস পিরিয়ড পার হলেই সুদ সহ ঋণ পরিশোধ করতে হবে৷ অপরদিকে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োজিত কোম্পানীর লাভ-লোকসান সমানভাবে শতাংশ অনুযায়ী বহন করে৷ এজন্যই বিনিয়োজিত কোম্পানিতে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম অনেক বেশি জড়িত থাকে৷

প্রমিনেন্ট: ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ধারনাটি আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে নতুন। উদ্যোক্তারা অনেকেই এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত জানে না। ভেঞ্চার ক্যাপিটালকে পরিচিত করানোর ক্ষেত্রে আপনারা কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?

রাশেদুল ইসলাম: উদ্যোক্তারা বিষয়টি নিয়ে জানে না বললে ভুল হবে। সকল ভেঞ্চার ক্যাপিটালই স্বস্ব ক্ষেত্রে প্রচারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। গেল ২০ তারিখে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নিয়ে একিট সেমিনার হয়ে গেল। প্রচুর উদ্যোক্তার সমাগম ছিল সেখানে। এই খাতকে আরো কিভাবে বিনিয়োগ-বান্ধব করা যায় তা নিয়ে একটি Venture Capital & Private Equity Association of Bangladesh (VCPEAB) কাজ করে যাচ্ছে।

প্রমিনেন্ট: বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়, আমাদের দেশেও কি একই উপায়ে পরিচালিত হয়? নাকি ভিন্নতা রয়েছে?

রাশেদুল ইসলাম: ভিন্নতা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। ভিন্নতার কারণটা প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের কালচারের কারণে হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু তাদের দেখানো পথই আমাদের দেশে অনুসরণ করা হচ্ছে।

প্রমিনেন্ট: একজন উদ্যোক্তা কীভাবে ফান্ড পেতে পারেন। ফান্ড পেতে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের পক্ষ থেকে কী ধরনের শর্ত দেওয়া হয়।

রাশেদুল ইসলাম: ব্যাংক, লিজিং কোম্পানি, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগের আগে বেশ কিছু কাগজ পরীক্ষা করে৷ আর সেই বিষয়গুলো একজন উদ্যোক্তাকে অবশ্যই পালন করতে হবে বিনিয়োগ নিশ্চিত করার আগে৷ ১. আমি যা করছি মানে 'আইডিয়া' ঠিক আছে কিনা ২. প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে চলছে কিনা এবং ৩. প্রতিষ্ঠানটি চালানোর মতো যোগ্য, দক্ষ কর্মী আছে কি না। মূলত এই তিনটি বিষয় ঠিক থাকলে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল পাওয়া সহজ হয়।
আরো কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন:
১৷ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা (Business Proposal) তৈরি করা ২৷ ব্যবসার ধরণ বা প্রকৃতি নির্ধারণ করা ৩৷ ব্যক্তি মালিকানা/যৌথ উদ্যোগ/কোম্পানি হবে তা নির্ধারণ করা ৪৷ ব্যবসার একটি সুন্দর, সহজ এবং যুতসই নাম ঠিক করা ৫৷ ব্যবসায়ের স্থান নির্ধারণ করা ৬৷ বাণিজ্যিক লাইসেন্স এবং অন্যান্য দলিলপত্রাদি তৈরি করা ৭৷ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ব্যবসায়িক TIN (Tax Identification Number) সংগ্রহ করা

প্রমিনেন্ট: উদ্যোক্তা তৈরির ব্যাপারে যেভাবে সর্বত্র আলোচনা শোনা যায় সেভাবে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের ব্যাপারে আলোচনা হয় না।কারণ কী? গণমাধ্যমের অসহযোগিতা?

রাশেদুল ইসলাম: আসলে এতদিন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নিয়ে কোনো নীতিমালা না থাকার কারণে এমনটি হয়েছে বলে আমার ধারনা। ২২ জুন ২০১৫ তে সিকিউরিটি অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন অলটারনেটিভ ইনভেষ্টমেন্ট ফান্ড এর একটি নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছেন। নীতিমালা তৈরির জন্যও কিন্তু গণমাধ্যম বিভিন্ন ভাবে আমাদেরকে সহযোগীতা করেছেন। আসলে গণমাধ্যমেরও কিছু বাধ্যবাধকতা আছে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে তাই হয়তো কিছুটা সময় নিয়েছেন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইন্ড্রাষ্টিটা বোঝার জন্য।

প্রমিনেন্ট: ভেঞ্চার ক্যাপিটালের প্রসারের ব্যাপারে সরকার কতটা আন্তরিক?

রাশেদুল ইসলাম: সরকার অবশ্যই আন্তরিক। নীতিমালা প্রণয়ন থেকে শুরু করে টাক্স সব বিষয়গুলোর সঙ্গে সরকার অতোপ্রতো ভাবে জড়িত। ববং সরকার প্রাইভেট ইনভেষ্টর এবং ব্যাংকগুলোকে স্পন্সর হিসেবে এগিয়ে এসে উদ্যোক্তা উন্নয়নে কাজ করার জন্য অনুরোধ করে যাচ্ছে।

প্রমিনেন্ট: আমরা জানি ভেঞ্চার ক্যাপিটালের লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি)।কিন্তু কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল, লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নাকি আন্তরিক নয়।এব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?

রাশেদুল ইসলাম: এই বিষয়ে মন্তব্য করা বেশ কঠিন কাজ। সব প্রতিষ্ঠানেরই কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি)যদি আন্তরিকই না হবে তাহলে ৪টি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট রুলসের অধীনে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের জন্য অনুমোদন দেওয়া হলো কীভাবে।

প্রমিনেন্ট: আপনারা দীর্ঘদিন যাবৎ ভেঞ্চার ক্যাপিটালের ওপর থেকে কর অব্যাহতির আহ্বান জানিয়ে আসছেন।কেন কর অব্যাহতি চাইছেন সে বিষয়টি যদি ব্যাখ্যা করতেন।

রাশেদুল ইসলাম: ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানগুলোতে (ফান্ড ব্যাবস্থাপনা পর্যায়) তিন দফা ট্যাক্স  (উদ্যোক্তা পর্যায়, ফান্ড ব্যাবস্থাপনা পর্যায় ও বিনিয়োগকারী পর্যায়) থাকায় স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের সফটওয়্যার ও আইটি সেবা খাত থেকে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সাথে মতবিনিময় করেছেন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিইএবি) এর প্রতনিধিরিা। তারা ২০২১ সাল পর্যন্ত আয়কর অব্যহতি চেয়েছেন। অপরদিকে  ই-কমার্স ও অনলাইন শপিং থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যহতি থাকা সত্ত্বেও গত বাজেটে এ সুবিধা তুলে দেওয়া হয়েছে তা পূর্নবহাল করার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রমিনেন্ট: এবার বিভিসিএল সম্পর্কে কিছু কিছু জানতে চাই। বিভিসিএলের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হয়? এ পর্যন্ত কতজন উদ্যোক্তাকে সহায়তা প্রদান করেছেন।

রাশেদুল ইসলাম: ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম বা কোম্পানি নির্দিষ্ট উদ্দেশে তহবিল বা ফান্ড উত্তোলন করে৷ সাধারণত বিত্তশালীদের এই ফান্ডে বিনিয়োগ করার জন্য উত্সাহিত করা হয়৷ ঝুঁকি বেশী থাকার কারণে সাধারণ এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের আহ্বান করা হয় না৷ যেহেতু ফান্ড বা তহবিল সংগ্রহ করে বিনিয়োগের জন্য, এজন্য তারা ব্যবস্থাপনা ফি নিয়ে থাকে৷ ভেঞ্চার এর মেয়াদ ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত হয়৷ ভেঞ্চার ফান্ডে যারা বিনিয়োগ করে তাদের লিমিটেড পার্টনার বা এলপি বলে, আর যারা ফান্ড ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ করে তাদের জেনারেল পার্টনার বা জিপি বলে৷ ভেঞ্চার ফার্ম বিনিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়৷ এই বিনিয়োগ সাধারণত ৩ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে৷ বিনিয়োগ পার্টনারশীপের মাধ্যমে হয় তাই মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে সুবিধাজনক সময়ে ফার্ম সে শেয়ার বিক্রি করে বা সমঝোতার মাধ্যমে ভেঞ্চার ক্যাপিটালকে একক মালিকানা বা অন্য কোনো ব্যক্তি বা ফার্মের সাথে আবার পার্টনারশীপ করতে পারে৷ উদ্যোক্তাদের শেয়ারের পরিমাণ বেশি থাকায় তাদের অধিকারকেই প্রাধাণ্য দেওয়া হয়।
আমরা ৮টি ভেঞ্চার নিয়ে এই মূহুর্তে কাজ করছি। বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল একটু অন্যভাবে ৮টি প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছে। আমরা ট্রায়াল অ্যান্ড এরর করে দেখতে চাই আমাদের কোন জায়গাগুলোতে বেশি মনোযোগ দেয়া দরকার। আমরা শুধু কম্পিটিশনে অংশ নেয়া উদ্যোক্তা খুঁজে পেতে চাই না। আমরা চাই আসল উদ্যোক্তা, যে প্রতিক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করবে। কারণ উদ্যোক্তার মনোবলটাই দেখার বিষয়।

প্রমিনেন্ট: কোনো নবীন উদ্যোক্তা যদি বিভিসিএল থেকে ঋণ সহায়তা পেতে চায় সেক্ষেত্রে তার করণীয় কি?

রাশেদুল ইসলাম: আমরা সকল ধরনের উদ্যোক্তাদের জন্যই কাজ করার আশা রাখি। কিন্তু সময় উপযোগী পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের আগ্রহটা বেশি থাকে। আমরা মাঝে মাঝেই আমাদের আগ্রহের জায়গাগুলো আমাদের ফেসবুক এবং ওয়েব সাইটে জানিয়ে থাকি। কেউ যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চায় তাহলে ফেসবুক বা ইমেইলে (info@venture.com.bd) যোগাযোগ করতে পারবেন। প্রাথমিক অবস্থায় আপনি আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আমাদেরকে ইমেইল বা কুরিয়ার করতে পারেন। পরবর্তিতে আমরাই আপনার সাথে যোগাযোগ করবো যদি পরিকল্পনাটা আমাদের ভালো লাগে। কারণ শুধু নিয়মনীতির কারণে একটা ভালো পরিকল্পনা বাদ পড়ে যাক আমরা কখনই তা চাই না।

প্রমিনেন্ট: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
রাশেদুল ইসলাম: প্রমিনেন্টকেও ধন্যবাদ।


15
মারমেইডের পথচলা শুরু হয়েছিল কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতে ছোট্ট একটি রেস্তোরাঁ দিয়ে। সময়টা ২০০৪ সাল। কর্মী ছিল তখন মাত্র পাঁচজন। এখন সেই কর্মীবাহিনী ৪০০ সদস্যের। রেস্তোরাঁর পাশাপাশি এখন আমরা গড়ে তুলেছি রিসোর্ট, যা দিনে দিনে হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। এখানে বেড়াতে এসে নিজস্ব সৈকত, দ্বীপ, বিচ রাইড থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মানের সেবা পাচ্ছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা।
তবে এই অবস্থানে আসতে পোড়াতে হয়েছে অনেক কাঠখড়। হোঁচট খেয়েছি। আবার উঠে দাঁড়িয়েছি। ছোট ছোট জায়গায় দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করেছি। সেই দক্ষতাই বড় কাজের প্রেরণা দিয়েছে।
সেই কাহিনি শোনাতে একটু পেছনে যেতে হবে। বয়স তখন ১৭ কি ১৮। তারুণ্যের উন্মাদনা তুঙ্গে। যা ভালো লাগছে, তা-ই হাসিল করা চাই। কখনো ট্রাভেলার, কখনো সার্ফার, কত্ত কী! তবে সবকিছুই পরিপাটিভাবে করার চেষ্টা থাকত।
একসময় যোগ দিলাম থিয়েটারে। বিস্ময় জাগাত তাদের কাজ। সবকিছুর পেছনে গল্প। কাজ করতে থাকলাম মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর সঙ্গে। নাটকে অভিনয়, সিনেমায় পার্ট। সবই চলতে থাকল সমানতালে। তারপরও কোথায় যেন ঘাটতি। ভাবলাম, এ জন্য চাই আরও দক্ষতা, পড়াশোনা। ব্যস, পাড়ি জমালাম ভারতের মুম্বাই। সেখানকার একটি থিয়েটার স্কুলের সঙ্গে যুক্ত হলাম। এর ফাঁকে ঘুরে বেড়িয়েছি ভারতের বিভিন্ন স্থানে। একবার গেলাম গোয়া। সমুদ্রশহরটি দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় ছিল না। সৈকত ঘিরে সেখানকার মানুষের জীবনধারা বেশ উপভোগ্য। সৈকতে সংগীত, রেস্তোরাঁ, সার্ফিং, বিচ বাইক—মজার এক জীবন।
গোয়া আমাকে টানল। পরের মাসে আবার গেলাম। কিন্তু শুধু গেলে তো হবে না। এ জন্য খরচ লাগে। খরচের সংস্থান করতে সৈকতে একটি রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজ নিলাম। এই দিনগুলো আমার জীবনে নতুন বাঁক এনে দিল। গোয়ায় নানা ভাষার পর্যটক আসেন। রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন করতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা। নানান অভিজ্ঞতার গল্প শোনা। তা ছাড়া একসঙ্গে অনেক মানুষকে খাবার দেওয়া, ঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা। সবকিছু সামলাতে গিয়ে অন্য এক অভিজ্ঞতা হলো। এভাবে টানা চার মাস গোয়া গিয়ে ১৫ দিন করে কাটিয়েছি। এরপর দেশে এলাম। এদিকে অভিনয়ে কেটে গেল তিন বছর। কিন্তু এবার আর কাজে মন বসছে না। মনে হচ্ছে অভিনয়টা আমার জন্য নয়। আমার পথ হয়তো ভিন্ন। ইস্তফা দিলাম অভিনয়জীবনে। ঘুরপাক খেতে থাকল অন্য স্বপ্ন—এমন একটা ক্যারিয়ার হবে, যার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ থাকবে।
এর মধ্যে মাথায় ঢুকল সার্ফিংয়ের পোকা। এলাম কক্সবাজার। এখানেও গোয়ার সেই সমস্যা। খরচ। হোটেলের ভাড়া বেশি। তবে দমে যাইনি। কাজে লাগল গোয়ার অভিজ্ঞতা। লক্ষ করলাম সমুদ্রের পাড়ে কোনো রেস্তোরাঁ নেই, সংগীত নেই। ভালো মানের রেস্তোরাঁ হলে পর্যটকেরা আসবেনই। কিন্তু রেস্তোরাঁ হবে কীভাবে? না আছে জমি-জিরাত, না আছে যথেষ্ট টাকা। সম্বল বলতে নিজের জমানো ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। তারপরও চেষ্টা করতে থাকলাম। সাগরপাড়ে জমির মালিকদের কাছে ধরনা দিলাম। একজন ভাড়ায় জায়গা দিলেন।

শুরু হলো সৈকতজীবন। কলাতলীতে জায়গা পেয়ে তাঁবু খাঁটিয়ে শুরু হলো থাকা। রেস্তোরাঁ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য মাটি কামড়ে পড়ে রইলাম। এই সময়ে সাহস জোগালেন আমার বড় ভাই, বন্ধু নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি জিয়াউদ্দিন খান। তাঁর সহযোগিতায় দাঁড়িয়ে গেল ২০ থেকে ২৫ আসনের রেস্তোরাঁ। নাম ‘মারমেইড ক্যাফে’।

হোঁচট খেয়েছি। আবার উঠে দাঁড়িয়েছি। ছোট ছোট জায়গায় দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করেছি। সেই দক্ষতাই বড় কাজের প্রেরণা দিয়েছে
শুরু থেকে একটি ব্যাপারে কোনো আপস ছিল না। তা হচ্ছে, মানসম্মত খাবার ও পরিবেশবান্ধব স্থাপনা। এ জন্য দরকার ভালো একজন শেফ। ঢাকায় এক বন্ধুর মাধ্যমে এমন একজনকে পেলাম, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে শেফ হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। তাঁকে বললাম, ‘আসুন, দেশের জন্য কিছু করি।’ তিনি আমাকে একটা শর্ত দিলেন রান্নাঘর থাকতে হবে ‘পবিত্র’। আমি আশ্বাস দিলাম, তিনি আস্থা রাখলেন। চলে এলেন কক্সবাজার।
এবার রেস্তোরাঁর বিপণন। নিজেরাই প্রতিদিন সৈকতে হেঁটে হেঁটে কিংবা বাসস্টেশনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে পৌঁছে দিতে লাগলাম মারমেইড রেস্তোরাঁর খবর। পর্যটকেরা রেস্তোরাঁয় এসে দেখল পবিত্র রান্নাঘর। এই আমাদের পুঁজি। দিনে দিনে পর্যটকেরা মারমেইড ক্যাফেমুখী হলো। একটা সময় তো রীতিমতো লাইন পড়ল খাবারের জন্য।
একদিন হঠাৎ মাথার ওপর বাজ পড়ল। জমির মালিক এসে বললেন, জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। বেকায়দায় পড়ে গেলাম। শেষে পাশেই আরেকটি জায়গায় স্থানান্তরিত হলো মারমেইড ক্যাফে। এত দিনের রেস্তোরাঁর আয় পুরোটা বিনিয়োগ করলাম। পর্যটকদের জন্য চালু করলাম মন্তব্য খাতা। এসব মন্তব্যে তাঁরা আমাদের রিসোর্ট করার কথা বলত। বিষয়টা আমাকে ভাবাতে লাগল। আবার বড় ভাই জিয়াউদ্দিন খানের শরণাপন্ন হতে হলো। তিনি বললেন, ‘হুট করে কোনো কিছু নয়। এগোতে হবে ধীরে ধীরে।’
রেস্তোরাঁ চালানোর ফাঁকে জমি খোঁজা শুরু হলো। তবে কক্সবাজার শহরের আশপাশে হবে না। এখানে জমির অনেক দাম। চলে এলাম ২০ কিলোমিটার দূরের রেজুখালের পাশে প্যাঁচার দ্বীপ সমুদ্রসৈকতে। সামান্য জমি কিনলাম। প্রথম দিকে কেনা আধা কানি জমিতে একটি মাটির ঘর তৈরি করলাম। পর্যটকদের জন্য প্যাকেজ বানালাম। সারা দিন নির্জন সৈকতে ঘোরাঘুরি আর দুপুরের খাবার। অনেকেই লুফে নিলেন। এর মধ্যে আমার জীবনে যুক্ত হলো সামিহা আলম চৌধুরী, আমার স্ত্রী। দুজন মিলে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
স্বপ্ন পূরণের পথে এগোনোর প্রাথমিক ভিত্তি গাড়া হলো। জিয়াউদ্দিন খান, সামিহা আর আমি মিলে গঠন করলাম ‘মারমেইড ইকো টুরিজম লিমিটেড’। প্রথম প্রকল্প ‘মারমেইড ইকো রিসোর্ট’। ১৫টি কক্ষ দিয়ে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু। বছর খানেক যাওয়ার পর আবার বিপত্তি। প্রশাসন ভুল বুঝে ভেঙে দিল ইকো রিসোর্টের অর্ধেকটা। মন ভেঙে গেল। ঢাকায় ফিরে গেলাম। তবে বসে থাকলাম না। হাত দিলাম রেস্তোরাঁ গড়ার কাজে। মাথায় ছিল ভালো সেবা ও মানসম্মত খাবার দিলে সব জায়গায় গ্রাহক পাওয়া যাবে। শেষমেশ ঢাকায় চালু হলো ‘মারমেইড গ্যালারি ক্যাফে’। খাবেন তো বটেই, একই সঙ্গে চিত্রকর্মও উপভোগ করুন। ঢাকার মানুষও আমাদের আপন করে নিল।
এর মধ্যে কক্সবাজারের ভাঙা ইকো রিসোর্টও আবার চালু হলো। কর্মীরা কেউ আমাকে ছেড়ে যায়নি। নতুন উদ্যমে ফেরা। এবার অনেক বেশি পরিণত, বাস্তবমুখী। বাড়তে থাকল আয়, সঙ্গে কাজের পরিধিও। এরপর আরও এক ধাপ এগোলাম। আর্ট রেসিডেন্সের আদলে প্যাঁচার দ্বীপে গড়ে তুললাম ‘মারমেইড আশ্রম বিচ ভিলাস’।
এবার স্বপ্ন আরও বিস্তৃত। গড়ে তোলা হলো ‘মারমেইড বিচ রিসোর্ট’। সেটি চালু হয়েছে ২০১২ সালে। এখন তিনটি রিসোর্ট মিলে ৫৩টি কক্ষ।
মারমেইড এখন সারা বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। পর্যটন-বিষয়ক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট ‘ট্রিপ অ্যাডভাইজার’ থেকে এক্সেলেন্স সনদ পেয়েছে। আরেক বিশ্ববিদিত ওয়েবসাইট ‘লোনলি প্ল্যানেট’-এরও সেরা তালিকায় আছে মারমেইড। শুধু তা-ই নয়, চীনের হাইনান প্রদেশের সানায়া সমুদ্রসৈকত এলাকায় যৌথ ব্যবসায় চালু হয়েছে ‘মারমেইড-লা পা মিয়ার’।
আমাদের মূল ভাবনা অর্গানিক খাবার। সেটি দিয়েই এত দূর এসেছি। আমি ইতালীয় দার্শনিক কার্লো প্যাতরিনির ভক্ত। তাঁর ‘স্লো ফুড’ আন্দোলন আমাকে নাড়া দিয়েছে। তিনি বলেছেন, নিজের খাদ্য নিজেই উৎপাদন করতে।
আমাদের এখানেও গ্রামের মানুষের নিজস্ব পদ্ধতিতে জৈব সারে ফলানো ফল-সবজি পর্যটকদের পরিবেশন করা হয়। সেসব সংগ্রহ করা হয় রিসোর্টের ১০ কিলোমিটার এলাকা থেকে। তাজা মাছ দেওয়া হয় সাগর থেকে তুলে এনে। এর ফলে আশপাশের মানুষ ভালো দামে সবজি ও মাছ বিক্রি করতে পারেন। তাঁদের আর্থসামাজিক অবস্থায়ও মারমেইড ভূমিকা রাখতে পারছে।
একদিন পাঁচজনের দল দিয়ে শুরু করা মারমেইড ক্যাফে রেস্তোরাঁর সংখ্যা এখন এসে দাঁড়িয়েছে পাঁচটিতে। রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁর পাশাপাশি অন্য ক্ষেত্রেও প্রসারিত হয়েছে মারমেইড। গড়ে তোলা হয়েছে পোশাকের ব্র্যান্ড ‘মারমেইড মারম্যান’ ও শিল্পকলা-বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘মারমেইড আর্ট ফাউন্ডেশন’।
আমি মনে করি, কর্মীরা সবাই এই প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাঁরা শ্রম দিচ্ছেন, আমরা বিনিয়োগ ও পরিচালনা করছি। তাঁরা মনে করেন, এটি তাঁদের সম্পদ। তাঁদের সেই পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে।
আমার অভিজ্ঞতা হলো, শুরু করতে হবে ছোট কিছু দিয়ে। তাহলে বড় কিছু কীভাবে পরিচালিত হয়, তার অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব। বড় কিছু দিয়ে শুরু করলে সেটার ভগ্নাংশ হয়ে থাকতে হয়।
আসলে ভালোবাসা আর একাগ্রতা থাকলে যেকোনো বাধার পাহাড় ডিঙানো সম্ভব। বাধার পেছনেই থাকে সাফল্যের মন্ত্রগাথা। বাধা পেলে তাই পথ ছেড়ে সরে যেতে হয় না।

Pages: [1] 2