Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - shilpi1

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 8
31
চর্বি খাওয়া মানেই মৃত্যুকে কাছে ডেকে আনা! এইতো ছিলো এতদিনকার কথা। কতো কিই না বলা হয়েছে! আর্টারিতে ব্লক হবে, হার্ট অ্যাটাক হবে... আরও কত কী? আর পাস্তাকে স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে দেখা হয়েছে। বলা হয়েছে ওতেই রক্ষা।

কিন্তু এই তত্ত্বের বাইরে কথা বলছেন এখন গবেষকরা। আর চর্বিকে এখন মানুষের শক্তির অন্যতম উৎস বলে জ্ঞান করছেন। চর্বিকে তো রিতিমতো ওষুধ বলতেও ছাড়ছেন না তারা।

যুক্তরাজ্যে একটি গবেষণা দলের নেতৃত্বে ড. অসীম মালহোত্রা। তার মতে, চর্বি হৃৎযন্ত্রের সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তার দাবি পূর্ণ ননীযুক্ত দুধ পান করলে আপনি বরং হৃদরোগ আর অন্তত দুই ধরনের ডায়াবেটিস থেকে রেহাই পাবেন। 

মেন’স হেলথ নামের ম্যাগাজিনে এ নিয়ে তার লেখাও ছাপা হয়েছে। তাতে নিজের এই বিতর্কের উদ্রেককারী বক্তব্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে কিছু ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।

মালহোত্রা তার অন্য অনেক সকালের মতো একটি সকালের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আজও আমি নাস্তায় তিন-ডিমের অমলেট খেয়েছি নারকেল তেলে ভেজে। সঙ্গে ছিলো পূর্ণ চর্বিযুক্ত পনিরের গুড়ো ছেটানো। আর পুরো ননীযুক্ত দুধসহকারে এক মগ কফিও সাবাড় করেছি। সন্ধ্যায় সালাদের প্লেটে জলপাইয়ের তেলটা একটু বেশিই ঢেলে নেই, আর গোটা দিন বাদামের ওপরেই থাকি বলতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘মোদ্যা কথা চর্বি আমি খেতে কম খাই না, আর নিজে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে বলতে পারি, অনেকের কাছে অস্বাভাবিক ঢেকলেও আমি কিন্তু বেশ ভালোই আছি।’ 

মালহোত্রা বলেন, চর্বি আমাদের আর্টারিতে লেপ্টে যায় আর জমাট বেধে আটকে দেয়, এই তো বছর বছর ধরে চিকিৎসকরা বলে আসছেন। আর আমরাও তাতে বিশ্বাস করে আসছি। আর অবধারিতভাবেই আমরা সবাই বছর গুলো কাটিয়ে দিচ্ছি পূর্ণ চর্বিযুক্ত খাদ্য ছাড়া। স্রেফ লো ফ্যাট নির্ভর হয়ে থাকছি এই আশায় যে এতেই আমাদের শরীরখানা ভালো থাকবে।

কিন্তু আমি বলবো, আমরা বরং এটা করে কিছু ক্ষতিই করে ফেলেছি, যার কথা কেউ বলে না। আমি নিশ্চিত করে বলছি, ওইসব কম চর্বির খাদ্য আপনার ওজন কমানোয় ভূমিকাতো রাখেই না, বরং তার উল্টোটা করে।

আমি আরও এগিয়ে গিয়ে বলতে চাই, যুক্তরাজ্যে ১৯৭৭ সালে এই ধরনের চর্বিযুক্ত খাদ্য বন্ধ করার যে পরামর্শ দেওয়া শুরু হয়, তারপর থেকে গোটা জাতি বরং মেদেই আক্রান্ত হতে শুরু করে। তারই ফল আজ মহামারি আকারে দেখা যাচ্ছে।

কথাগুলো শুনতে একটু বেশি কড়া শোনাচ্ছে বটে, কিন্তু এতো গবেষণা প্রসূত, বলেন ড. অসীম মালহোত্রা। 

তিনি বলেন, আমার রোগীদের আজকাল খুব খুব চর্বিযুক্ত খাবার খেতে বলি। যাদের অনেকেরই হৃদরোগ গুরুতর পর্যায়ে। কম চর্বির খাবারের ঝামেলা এড়াতেই এই উপদেশ। অনেকেই শুনে হা হয়ে যায়। কিন্তু গবেষণা বলছে, অনেক ক্ষেত্রে রোগীর শরীরে কলেস্টেরলের স্তর কমে গেলে তার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও হতে পারে, আর ষাটোর্ধ কারো শরীরে উচ্চমাত্রার কলেস্টেরল তার মৃত্যুঝুঁকি কমায়।

প্রথমেই বলে নেই, দিন কয়েক আগে আমিও কিন্তু ওই একই কথা বলতাম, শরীরে চর্বি কম থাকলে শরীর ভালো থাকবে। তখন আমার নিজের খাদ্যাভ্যাসও ভিন্নরকম ছিলো। সকালে সিরিয়াল, টোস্ট আর কমলার জুস খেতাম, দুপুরের খাবারে পানিনি আর রাতে পাস্তা। এর বাইরে খুব একটা যেতামই না। 

কিন্তু শরীরের জন্য চাই ভালো যুৎসই খাবার। আমি নিয়মিত দৌড়াই, ব্যায়াম করি। তার পরেও ভুড়িটা কিন্তু বলের আকারে চর্বি জমিয়ে রেখেছে। কিন্তু সে কারণে আমি কিন্তু খাওয়া বন্ধ করে দেইনি।

২০১৩ সালে একদল শিক্ষাবিদ সত্তুরের দশকের গোড়ার দিকে সিডনি ডায়েট হার্ট স্টাডি নামে প্রকাশিত গবেষণা লব্দ জ্ঞানের ওপর বিশ্লেষণ শুরু করেন। তারা দেখলেন হৃদরোগাক্রান্ত যে রোগীরা মাখন বাদ দিয়ে মার্জারিন খেতে শুরু করলো তাদের মৃত্যুহার বেড়ে গেলো। অথচ তারা তাদের শরীরের ১৩ ভাগ কলেস্টেরল কমেও গিয়েছিলো।

২০০১ সালে হনুলুলুতে একটি হৃদরোগ বিষয়ক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয় ষাটোর্ধদের ক্ষেত্রে শরীরে কলেস্টেরলের মাত্রা কমে গেলে তার বরং উল্টো ফল হয়।

সবাই বিষ্মিত! তাই নয়? সত্যি কি শরীরে কম কলেস্টেরল শরীরের ভেতরকার উন্নয়নে কাজ করতে পারে না, বরং অন্য বিষয়গুলোতে ভূমিকা রাখে যেমন এতে আপনার কোমর পাতলা হবে। 

বরং এটাই বলা হচ্ছে, পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাতীয় খাবার খেলে তা হৃদরোগে আক্রান্তদের আর অন্তত দুই ধরনের ডায়াবেটিস আক্রান্তদের সুবিধা দেয়।

২০১৪ সালে ক্যামব্রিজ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল একটি গবেষণায় দেখিয়েছে দুগ্ধজাতীয় খাবার থেকে আসা স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের প্রবাহে থাকলে তা দুই ধরনের ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখে।

এর মানে হচ্ছে কেউ হালুম হালুম করে পনির খেতে বলছে না তবে পরিমিত পরিমানে পনির, মাখনসহ দুগ্ধজাতীয় খাবার ও চর্বি অবশ্যই খাওয়া যাবে। যাতে শরীর সুস্থ্য থাকবে, আয়ু বাড়বে।

এই এই গবেষণায় এও দেখা গেছে চিনি, অ্যালকোহল আর শ্বেতসার জাতীয় খাবার আপনার শরীরে ফ্যাটি অ্যাসিড বাড়িয়ে দেয়, যা অনেক ঘাতক ব্যাধীর কারণ হতে পারে।

32
প্রতিটি শিশুই আলাদা, এবং প্রত্যেকেই নিজস্ব সময়ে বেড়ে ওঠে। একটা সময়ে সে কথা শেখে, খেলা শেখে, বসে, হাঁটে। কিন্তু অটিজমের শিকার শিশুদের ক্ষেত্রে এমন স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ঘটনা দেখা যায় না। সঠিক ট্রিটমেন্টের জন্য যতো দ্রুত সম্ভব শিশুর মাঝে অটিজমের লক্ষণগুলো শনাক্ত করা যায়, তত ভালো। জেনে নিন কম বয়সে শিশুর মাঝে অটিজমের লক্ষণ খুঁজে পাওয়ার কিছু উপায়।
অটিজম স্পেকট্রাম ডিজর্ডারের ট্রিটমেন্ট যতো কম বয়সে শুরু করা যায়, শিশু পরবর্তীতে ততটাই বেশি উপকার পায়। আর তার মানসিক দক্ষতার উন্নতি ঘটানোর জন্য এই ট্রিটমেন্ট খুবই জরুরী। কিন্তু সমস্যা হলো, সাধারণত শিশুর বয়স ১২-১৮ মাস হলে এসব লক্ষণ দেখা যায়। বিভিন্ন রকমের লক্ষণ দেখা যেতে পারে এবং পিতামাতার পক্ষে এসব লক্ষণ শনাক্ত করাটাও কঠিন হয়। বাচ্চার শারীরিক কিছু লক্ষণ থাকতে পারে, বাবা-মা অথবা অন্য শিশুদের সাথে তার আচরণেও কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। Huffington Post এর একটি সংবাদ অনুযায়ী, অটিজম স্পিকস নামের একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণগুলো নিয়ে একটি ছোট্ট ভিডিও প্রকাশ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পাঁচটি লক্ষণের ব্যাপারে পিতামাতার সতর্ক থাকা উচিৎ-
১) নিজের নাম শুনলে সাড়া না দেওয়া

একটি সুস্থ শিশু বাবা-মা অথবা তার যত্ন নেয় এমন কারও মুখে নিজের নাম শুনলে সাড়া দেবে। অটিজম আছে এমন শিশুদের বেশভাগই নিজের নাম শুনলে সাড়া দেয় না।
২) অন্য কারও মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে না

এক্ষেত্রে “জয়েন্ট অ্যাটেনশন” কথাটা ব্যবহার করা হয়। খুব সহজ একটি উদাহরণ দিলে জিনিসটি বোঝা যায়। সুস্থ একটি বাচ্চা চাঁদ দেখে মুগ্ধ হলে যে একবার চাঁদের দিকে তাকায়, আরেকবার মায়ের দিকে তাকায়, চাঁদের দিকে হাত ইশারা করে, মুখে শব্দ করে। কিন্তু অটিজমে আক্রান্ত শিশুর মাঝে এই কাজটা করতে দেখা যায় না। তারা নিজেদের উৎসাহ অন্য কারও সাথে শেয়ার করে না বা করতে পারে না।
৩) অন্যদের আচরণ অনুকরণ করে না

অন্য বাচ্চারা যেভাবে নড়াচড়া করে, একজন আরেকজনের দেখাদেখি তালি দেয়, অন্যদের দেখে হাত নাড়ায় তেমনটা সাধারণত করে না অটিস্টিক বাচ্চারা।
৪) মিছিমিছি খেলার প্রবণতা দেখা যায় না

বাচ্চারা নিজেকে মা ধরে নিয়ে পুতুলকে বাচ্চা বানিয়ে ঘরবাড়ি খেলা করে। খেলনা টেলিফোন নিয়ে কথা বলার ভান করে। ছোট্ট ছোট্ট হাঁড়িপাতিল নিয়ে রান্নার ছলে খেলা করে। কিন্তু অটিজম থাকলে এমন খেলার প্রবণতা দেখা যায় না।
৫) অন্যের আবেগের প্রতি তারা স্পর্শকাতর হয় না

সাধারণত বাচ্চারা অন্যদের আবেগ দেখলে নিজেরাও আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে। যেমন অন্যকে হাসতে দেখলে তারাও না বুঝেই হাসে। কিন্তু অটিজম আছে এমন শিশুরা এটা সাধারণত করে না।
পিতামাতা যা করতে পারেন
বাচ্চার বয়স ১২ মাস হবার সময় থেকেই পিতামাতার এই ব্যাপারগুলোর দিকে নজর রাখা উচিৎ। কোনো কিছুতে খটকা লাগলে শিশুর ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিৎ। ১২ মাস অর্থাৎ এক বছর বয়সে এগুলো ছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে যেমন বাবা, মা এসব কথা না বলা, হামা না দেওয়া, ধরে ধরে হাঁটার চেষ্টা না করা ইত্যাদি। এসব লক্ষণের প্রতি থাকুন সতর্ক।

33
 BanglaNews24.com Logo স্বাস্থ্য
radio
হোম
জাতীয়
রাজনীতি
অর্থনীতি
আন্তর্জাতিক
খেলা
বিনোদন
তথ্যপ্রযুক্তি
ইচ্ছেঘুড়ি
ফিচার
শিল্প-সাহিত্য
প্রবাস
লাইফস্টাইল
শেয়ার
এভিয়াট্যুর
চট্টগ্রাম প্রতিদিন
ইসলাম
মুক্তমত
রাশিফল
ট্রাভেলার্স
উপকূল থেকে
স্বাস্থ্য
শিক্ষা
বিদ্যুৎ/জ্বালানি
জেলা
ক্লাসিফায়েড

প্রচ্ছদ  »  স্বাস্থ্য
৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ২:১২:০০ এএম মঙ্গলবার   Print
হিমোগ্লোবিন বাড়াবে যেসব খাবার
স্বাস্থ্য ডেস্ক
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
x





Decrease font   Enlarge font
ঢাকা: আমাদের রক্তকোষে আয়রনসমৃদ্ধ প্রোটিন হচ্ছে হিমোগ্লোবিন। এই প্রোটিন সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবাহিত করতে সাহায্য করে।

হিমোগ্লোবিনের কাজ
হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ ফুসফুস থেকে অক্সিজেন নিয়ে তা শরীরের বিভিন্ন কোষে ছড়িয়ে দেওয়া। এর ফলে জীবিত কোষগুলো ভালোভাবে কাজ করতে পারে। এছাড়াও হিমোগ্লোবিন কোষ থেকে কার্বোনডাইঅক্সাইড বের করে দেয়।

সুস্থ জীবনযাপনে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক থাকা প্রয়োজন। কিছু খাবার খেয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মান ঠিক রাখা যায়। দেখে নিই এক নজরে।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
শরীরে লোহার ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম সাধারণ কারণ। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে লোহা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
আয়রন সমৃদ্ধ কিছু খাবার হলো- কলিজা, লাল মাংস, চিংড়ি, পালংশাক, আমন্ড, খেজুর, শতমূলী ইত্যাদি।

ভিটামিন সিভিটামিন সি এর অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। তাছাড়া ভিটামিন সি ছাড়া আয়রন পুরোপুরিভাবে শোষণ হয় না। পেঁপে, কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, গোলমরিচ, ব্রোকোলি, আঙুর, টমেটো ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে।
 BanglaNews24.com Logo স্বাস্থ্য
radio
হোম
জাতীয়
রাজনীতি
অর্থনীতি
আন্তর্জাতিক
খেলা
বিনোদন
তথ্যপ্রযুক্তি
ইচ্ছেঘুড়ি
ফিচার
শিল্প-সাহিত্য
প্রবাস
লাইফস্টাইল
শেয়ার
এভিয়াট্যুর
চট্টগ্রাম প্রতিদিন
ইসলাম
মুক্তমত
রাশিফল
ট্রাভেলার্স
উপকূল থেকে
স্বাস্থ্য
শিক্ষা
বিদ্যুৎ/জ্বালানি
জেলা
ক্লাসিফায়েড

প্রচ্ছদ  »  স্বাস্থ্য
৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ২:১২:০০ এএম মঙ্গলবার   Print
হিমোগ্লোবিন বাড়াবে যেসব খাবার
স্বাস্থ্য ডেস্ক
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
x





Decrease font   Enlarge font
ঢাকা: আমাদের রক্তকোষে আয়রনসমৃদ্ধ প্রোটিন হচ্ছে হিমোগ্লোবিন। এই প্রোটিন সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবাহিত করতে সাহায্য করে।

হিমোগ্লোবিনের কাজ
হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ ফুসফুস থেকে অক্সিজেন নিয়ে তা শরীরের বিভিন্ন কোষে ছড়িয়ে দেওয়া। এর ফলে জীবিত কোষগুলো ভালোভাবে কাজ করতে পারে। এছাড়াও হিমোগ্লোবিন কোষ থেকে কার্বোনডাইঅক্সাইড বের করে দেয়।

সুস্থ জীবনযাপনে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক থাকা প্রয়োজন। কিছু খাবার খেয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মান ঠিক রাখা যায়। দেখে নিই এক নজরে।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
শরীরে লোহার ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম সাধারণ কারণ। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে লোহা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
আয়রন সমৃদ্ধ কিছু খাবার হলো- কলিজা, লাল মাংস, চিংড়ি, পালংশাক, আমন্ড, খেজুর, শতমূলী ইত্যাদি।

ভিটামিন সি

ভিটামিন সি এর অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। তাছাড়া ভিটামিন সি ছাড়া আয়রন পুরোপুরিভাবে শোষণ হয় না। পেঁপে, কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, গোলমরিচ, ব্রোকোলি, আঙুর, টমেটো ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে।

ফলিক এসিডফলিক এসিড এক প্রকার ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এটি লাল রক্ত কণিকা তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপাদান। সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, কলিজা, ভাত, শিমের বিচি, বাদাম, কলা, ব্রোকোলিতে অনেক ফলিক এসিড পাওয়া যায়।
বিট হিমোগ্লোবিন বাড়াতে বিটের রস খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, ফলিক এসিড, ফাইবার ও পটাশিয়াম। এর পুষ্টিমান শরীরের লাল রক্ত কণিকা বাড়ায়।
আপেল
দিনে একটি করে আপেল খেয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে পারেন। আয়রনের উৎস আপেলে আরও নানাপ্রকার পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রতিদিন খোসাসহ একটি আপেল খান। অথবা সমানুপাতে আপেল ও বিটের রস মেশাতে পারেন।


34
পিতামাতার সাথে সন্তানের সম্পর্ক বন্ধুর মত হতে হয় যেন তাঁরা তাদের  সব কথা একে অন্যের সাথে শেয়ার করতে পারে। যদি সন্তান পিতামাতার সাথে কথা বলতে লজ্জা পায় কিংবা পিতামাতার ব্যস্ততার জন্য যদি সন্তানকে সময় দিতে না পারেন, তাহলে সেটা সন্তানের জন্য মোটেই ভালো নয়। জীবনের গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় গুলো সন্তানকে শেখানোর দায়িত্ব তাঁর পিতামাতার। শিশুর মন কাদা মাটির মত, তাই এই সময় সে যা শুনে এবং দেখে তা তাঁর মনে গেঁথে যায়। শিশুরা নিষ্পাপ ও সংবেদনশীল এবং ওদের স্নেহ ও মমতা দিয়ে বড় করতে হয়। পিতামাতার উচিৎ সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া। শব্দ অনেক বড় প্রভাবক। আপনার ছোট একটি বাক্যই তাকে আপনার প্রতি অনুগত হতে সাহায্য করবে, এর ফলে আপনি তাকে ভালো আচরণ শেখাতে পারবেন। আজ আমরা এমনই কিছু কথা জেনে নিই আসুন।
১। “সারা দিন তোমার কেমন কাটলো”?
সন্তানের প্রতিদিনের কাজের প্রতি পিতামাতার আগ্রহ প্রকাশ করা প্রয়োজন। সে যখন স্কুল থেকে ফিরবে অথবা রাতে খাওয়ার সময় আপনি তাঁকে আগ্রহ নিয়ে বলুন  সারা দিন তোমার কেমন কাটলো? এতে সে বুঝবে যে আপনি তাঁর বিষয়ে অনেক আগ্রহী তখন সে আপনাকে সব কথা বলার আগ্রহ পাবে এবং বলবে যা শুনতে আপনারও খুব ভালো লাগবে।
২। “তুমি জয়ী হয়েছো”! 
একটা উৎসাহদায়ক শব্দই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিতে পারে বহুগুণ। যদি আপনার সন্তান কোন খেলায় জয়লাভ করে অথবা ছোট একটি ধাঁধাঁর সমাধান করতে পারে তাহলে তাকে বলুন তুমি জয়ী হয়েছো। এটা আপনার সন্তানকে সাফল্যের অনুভূতি দিবে যা তাকে জয়ী হওয়ার প্রেরণা যোগাবে।
৩। “আমি তোমাকে বিশ্বাস করি”
আপনি যখন এই কথাটি আপনার সন্তানকে বলবেন যে, ‘আমি তোমাকে বিশ্বাস করি’ তখন সে ও আপনাকে বিশ্বাস করা শুরু করবে। এর ফলে আপনার বিশ্বাসের অমর্যাদা হয় এমন কোন কাজ করতে সে অনেকবার ভাববে।
৪। “হাল ছেড়ে দিয়োনা”
‘হাল ছেড়ে দিয়োনা’ এই কথাটি বলে আপনি আপনার সন্তানকে ধৈর্যশীল হতে শেখাবেন। কোন কাজ একবার না পারলেই যেন সে হতাশ না হয়ে যায় এবং একটি কাজে বার বার চেষ্টা করেও যদি সে সফল হতে না পারে তাহলে কাজটি অন্য কোন পন্থায় করতে হবে, সেটা যেন সে চিন্তা করতে পারে এই বিষয়টি তাঁকে শিখাবে এই বাক্যটি।
৫। “না বলতে শেখান”     
শিশু যখন বড় হতে থাকে তখন সে কী চায় এবং কী চায়না এই বিষয়ে যেন সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেটা শেখাতে হবে। এতে করে আপনার সন্তান প্রফুল্ল থাকবে এবং মর্যাদা অনুভব করবে যার ফলে তার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যতা তৈরি হবে। এর ফলে যদি কোন মানুষ তাকে জ্বালাতন করে সে তাদেরকে চিহ্নিত করতে পারবে। ভালমন্দের পার্থক্যটা যদি সে বুঝতে শেখে তাহলে সে ধরতে পারবে কোনটা তাঁর জন্য ভালো আর কোনটা তাঁর জন্য খারাপ এবং তাঁরা ঠিক পথে এগুচ্ছে কিনা এটা সব সময় খেয়াল রাখতে হবে বাবা মাকেই।
৬। “অন্যকে সাহায্য কর” 
সামাজিক ও মানবিক আচরণ শেখানোর মূল দায়িত্ব ও বাবামায়ের। আপনার সন্তানকে বলুন অন্যের প্রয়োজনে সাহায্য করতে তাহলে সেও তাঁর প্রয়োজনে অন্যদের পাশে পাবে। অসহায় ও দুর্বল মানুষের পাশে দাড়াতে সেখান আপনার সন্তানকে। ভালো কাজের ভালো ফল এবং খারাপ কাজের খারাপ ফল মানুষকে ভোগ করতে হয় এই কথাটি তাকে বুঝিয়ে বলুন। এভাবেই সে মানবিকতা ও সামাজিকতার বিষয় গুলো বুঝতে ও শিখতে পারবে।
আপনি আপনার সন্তানকে যে বিষয় গুলো শিখাচ্ছেন সেই বিষয় গুলো আপনাকেও পালন করতে হবে না হলে আপনার প্রতি তাঁর আস্থা তৈরি হবেনা

35
মাথায় ব্যথা
‘মাথাব্যথা’র মতো মাথায় ব্যথার কারণ হতে পারে দিনভর নানা স্ট্রেস। যে কারণে প্রতিদিন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় বের করুন।

ঘাড়ে ব্যথা
যদি আপনি ঘাড়ে ব্যথা অনুভব করেন তবে বুঝতে হবে আপনি অন্যকে বা নিজেকে কোনো কারণে ক্ষমা করতে পারছেন না। যদি ঘাড় ব্যথায় ভোগেন, তবে মানুষের যে বিষয়গুলো ভালো লাগে সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

কাঁধে ব্যথা
কাঁধে ব্যথা নির্দেশ করে, আপনি গভীরভাবে আবেগে আটকে আছেন। অন্য কেউ সৃষ্ট বা আপনার জীবনের সাধারণ সমস্যা সমাধানে নজর দিন। একই সঙ্গে বিরক্তিকর সব বিষয়গুলো এড়ানো চেষ্টা করুন।

পিঠের উপরাংশে ব্যথা
পিঠের উপরাংশে ব্যথার কারণ হিসেব বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আপনি যথেষ্ঠ মানসিক সমর্থনের অভাবে ভুগছেন। আপনি ভালোবাসার অভাবে ভুগছেন এবং মনে হতে পারে কেউ আপনাকে পছন্দ করছে না। সমাধান হিসেবে তারা বলছেন, যদি আপনি অবিবাহিত হয়ে থাকেন, তবে বুঝতে হবে আপনার সঙ্গী খোঁজার সময় হয়েছে।

পিঠের নিম্নভাগে ব্যথা
পিঠের নিম্নভাগে ব্যথা হওয়ার মানে হলো আপনি অতিমাত্রায় অর্থ চিন্তায় ভুগছেন। অর্থাৎ, সময় এসেছে অর্থ সংক্রান্ত সঠিক পরিকল্পনার।

কনুইয়ে ব্যথা
কনুই ব্যথা প্রকাশ করে আপনার প্রাত্যহিক জীবনের সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন সহ্য করার ক্ষমতা কতটা। যদি আপনার কনুই শক্ত হয়, তবে বুঝতে হবে আপনার অস্তিত্বও এক সময় শক্ত হবে। তাই ভেঙে না পড়ে বিষয়টির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া চেষ্টা করুন।

হাতে ব্যথা
হাতে ব্যথা হলে বুঝতে হবে, আপনি মানুষের কাছে যেভাবে পৌঁছাতে চাইছেন, ঠিক সেভাবে হচ্ছে না। তাই নতুন বন্ধু গড়ে তুলুন, সহকর্মীর সঙ্গে দুপুরের খাবার খান এবং নতুন নতুন যোগাযোগ তৈরি করুন।

নিতম্বে ব্যথা
নিতম্বে ব্যথা হওয়ার অর্থ হলো, আপনি পরিবর্তনে ভয় পাচ্ছেন। অতএব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার আরও সচেতন হওয়া দরকার।

হাঁটুতে ব্যথা
হাঁটু ব্যথা নির্দেশ করে আপনার অহং একটু বেশি। ফলে নিজের সম্পর্কেও আপনি উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ ক্ষেত্রে আপনার নম্র হওয়া দরকার। কিছুদিন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও কাজ করা যেতে পারে। ভুলে গেলে চলবে না ‘মানুষ মরণশীল’।

36
পালং শাক: এই শাকে আছে প্রচুর পরিমানে আয়রন। যা চুলকে তাড়াতাড়ি বেরে উঠতে সাহায্য করবে। আর অক্সিজেনও চুলে পৌঁছবে দ্রুত।

ডিম: চুলের গোড়া মজবুত ও চুল পড়া রোধ করতে হলে আপনাকে নিয়মিত ডিম খেতে ও মাথায় রাগাতে হবে। কারণ ডিমের ভিটামিন চুলের জন্য অনেক উপকারি।

ক্যাপসিকাম: ভিটামিন সি খেলে আপনার চুল রুক্ষ হবে না ও চুল পড়াও বন্ধ হবে। আর ক্যাপসিকামে রয়েছে প্রেচুর ভিটামিন সি।

ডাল: আয়রন ও প্রোটিনের জন্য আপনাকে খেতে হবে ডাল। কারণ ডালে্ে এগুলোর উৎস। তাই চুল ভাল রাখেতে এর কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিন খাবারের ম্যানুতে নিয়মিত ডাল রাখুন।

37
 চীন ও ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় তোকমা অন্যতম একটি উপাদান। এশিয়ার বিভিন্ন মিষ্টি পানীয়, জুস ও স্মুদিতে এর ব্যবহার রয়েছে।

সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তোকমার বেশি ব্যবহার দেখা যায়। তবে ভারত, তাইওয়ান ও ইন্দোনেশিয়াসহ আরও কয়েকটি স্থানে এটি অনেক জনপ্রিয় ভেষজ উপাদান।

একশো গ্রাম তোকমাতে রয়েছে দুইশো ৩৩ কিলোক্যালরি পরিমাণ শক্তি, ২৩ গ্রাম প্রোটিন ও ৪৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট।

সাধারণভাবে তোকমা শরীরে উদ্দীপক, অ্যাসিডিটি নিরাময়ক ও তৃষ্ণা নিবারক হিসেবে কাজ করে। এটি ঘর্মগ্রন্থিকে সচল রাখে, জ্বর কমায়, ঠান্ডাজনিত শ্লেষ্মা দূর করে।
 চীন ও ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় তোকমা অন্যতম একটি উপাদান। এশিয়ার বিভিন্ন মিষ্টি পানীয়, জুস ও স্মুদিতে এর ব্যবহার রয়েছে।

সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তোকমার বেশি ব্যবহার দেখা যায়। তবে ভারত, তাইওয়ান ও ইন্দোনেশিয়াসহ আরও কয়েকটি স্থানে এটি অনেক জনপ্রিয় ভেষজ উপাদান।

একশো গ্রাম তোকমাতে রয়েছে দুইশো ৩৩ কিলোক্যালরি পরিমাণ শক্তি, ২৩ গ্রাম প্রোটিন ও ৪৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট।

সাধারণভাবে তোকমা শরীরে উদ্দীপক, অ্যাসিডিটি নিরাময়ক ও তৃষ্ণা নিবারক হিসেবে কাজ করে। এটি ঘর্মগ্রন্থিকে সচল রাখে, জ্বর কমায়, ঠান্ডাজনিত শ্লেষ্মা দূর করে। উপকারিতা
লিভার ও জরায়ুর সুস্থতায় তোকমা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তোকমার পাতা  ক্যানসার ও টিউমার প্রতিরোধক হিসেবে পরিচিত। বাতের রোগীদের জন্য এর পাতার রস বিশেষ উপযোগী।

পেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ পাকস্থলীর যে কোনো সমস্যা দূর করে। পাইলস উপশমকারী তোকমার বীজের রস প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধক। তোকমার তেলে এন্টিব্যক্টেরিয়াল উপাদান রয়েছে, যা ত্বক ভালো রাখে ও চর্মরোগ নিরাময় করে।ব্যবহার
তোকমা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে খালি পেটে সে পানি পান করুন। ভালো ফলাফলের জন্য নিয়মিত খান। এতে গ্যাস্ট্রিক ও পেটের যেকোনো সমস্যা সহজেই দূর হয়ে যাবে। তবে তোকমা পানিতে ভেজানোর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরই তা খাওয়া যায়। চাইলে জুস ও প্রিয় যেকোনো পানীয়তে ব্যবহার করতে পারেন নানা গুণের এ ভেষজ উপাদানটি।

38
১) আপনি অতিরিক্ত দুর্বলতা অনুভব করেন

আপনি দিনের বেশীরভাগ সময়েই অনেক দুর্বলতা অনুভব করেন। কাজে-কর্মে একেবারেই উৎসাহ পান না দুর্বলতার কারণে। কিছুটা দুর্বলতা অনেক কারণেই হতে পারে, কিন্তু বেশীরভাগ সময়েই দুর্বল বোধ করা আয়রনের অভাবের লক্ষণ।
২) আপনাকে ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে

আয়নায় নিজেকে ভালো করে লক্ষ্য করুন। আপনাকে যদি অনেক বেশি ফ্যাকাসে দেখাতে পারে তাহলে বুঝে যাবেন রক্তস্বল্পতা রয়েছে আপনার যা আয়রনের অভাবে দেহে বাসা বেঁধেছে। আরও নিশ্চিত হতে চোখের নিচের ভেতরে অংশ দেখুন। যদি রক্তিমভাব একেবারেই না থেকে সাদাটে দেখায় তাহলে সর্তক হয়ে যান।
৩) খুব সহজেই হাঁপিয়ে ওঠেন এবং ছোট ছোট নিঃশ্বাস

আয়রনের অভাবে দেহ অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়ে যার কারণে অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে উঠতে দেখা যায় এমনকি সিঁড়ি দিয়ে একতলা উঠেই হাঁপিয়ে উঠেন। এবং কিছুক্ষণ কাজ করলেই হাঁসফাঁস ও আরও বেশি দুর্বলতা অনুভূত হতে থাকে। সেই সাথে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক ছোট ছোট নিঃশ্বাস ফেলতে দেখা যায়।
৪) অযথাই মাথাব্যথায় ভোগেন

মাথাব্যথার নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই মাথাব্যথা থাকা, দিনে দিনে মাথাব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকা এবং হুটহাট মাথাব্যথা শুরু হয়ে যাওয়া মাইগ্রেন নয় আয়রনের অভাবেও হয়ে থাকে। সুতরাং সতর্ক থাকুন।
৫) চুল, ত্বক ও নখের পরিবর্তন

আয়রনের অভাবে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চুল। অতিরিক্ত মাত্রায় চুল পড়তে থাকা, ত্বক ফ্যাকাসে ও রক্তশূন্য হয়ে রুক্ষ দেখানো এবং নখের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পাওয়া সবই আয়রনের অভাবের লক্ষণ।
-

39
একটা সময়ের পর আমরা নিজেদের কর্মজীবন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে, কখনও কখনও ভুলে যাই, বাড়িতে আরও দু’জন ব্যক্তি রয়েছেন যাদের বয়সও বাড়ছে বৈকি!

বলছি, আমাদের পরম প্রিয় বাবা-মা’র কথা। ছোটবেলা থেকে জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত সব অর্জনের পেছনে রয়েছে বাবা-মা’র ভূমিকা। পড়ালেখার হাতেখড়ি থেকে শুরু করে সব কাজে উৎসাহ দেন তারা।

সময়ের পালাবদলে আমরা বড় হয়েছি, হয়ত কর্মজীবনেও প্রতিষ্ঠিত। পাশাপাশি তাদের বয়সও কিন্তু থেমে নেই। আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় শরীরের নানান সমস্যা। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, আলজেইমার্স ইত্যাদি। এছাড়াও বয়স বাড়ার কারণে অনেকে হয়ে পড়েন ছোট শিশুদের মতো।

বাড়তে থাকে মানসিক চাহিদা ও একাকীত্ববোধ। তাই তাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে দরকার বাড়তি যত্ন, হাসিখুশি পরিবেশ, যোগ্য সম্মান ও সদয় ব্যবহার।
যদিও এখনকার দিনে কমবেশি সবাই ঘরের বাইরে কাজ করে। তবুও যতটুকু সম্ভব বাবা-মা’র প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

সময় দিন
দিনের বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকার ফলে যদিও আপনি ক্লান্ত, তবুও বাড়ি ফিরে বাবা-মা’র পাশে বসুন। জিজ্ঞেস করুন, তারা কেমন রয়েছেন। সারাদিনের খাবার ও ওষুধ খেয়েছেন কিনা। তাদের সঙ্গে গল্প করুন ও হাসিখুশি রাখতে চেষ্টা করুন। মাঝে মাঝে তাদের পছন্দের খাবার এনে চমকে দিতে পারেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানান
আপনার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও বিশেষ কোনো কাজে হাত দেওয়ার আগে বাবা-মাকে সেটার সম্পর্কে জানান। তাদের বোঝাতে চেষ্টা করুন আপনার জীবনে তারা অতি গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কাজ করার আগে তাদের অনুমতি নিন। এতে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বজায় থাকবে যে, তাদের সিদ্ধান্ত দেওয়ার ও নেওয়ার ক্ষমতা আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
কথা বলার আগে ভাবুন
বয়স্ক বাবা-মা’র সঙ্গে কোনো কারণে উত্তেজিত হবেন না। ধৈর্য্য ধরে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিন। এমন কোনো কথা বলে বসবেন না যাতে তাদের কষ্ট হয়। কোনো বিষয় সম্পর্কে যদি ভুলে যাওয়ার কারণে বারবার একই প্রশ্ন করে থাকেন তাহলে তাদের ওপর রাগ করা উচিত নয়। কখনও তাদের ভুলে যাওয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে।

ইতিবাচক ভঙ্গিতে না বলুন
কোনো কিছু চাইলে তার যদি নেতিবাচক প্রভাব থাকে তাহলে ইতিবাচক ভঙ্গিতে বুঝিয়ে বলুন, বিষয়টি তার জন্য খারাপ। যেমন, ডায়াবেটিস থাকাকালীন মিষ্টি খাবার খেতে চাইলে তাকে বুঝিয়ে বলুন, এটা তার শরীরের জন্য খারাপ। এক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা রাখুন। যেমন- ফল, দুধ, ওটমিল বা জুস দিতে পারেন।

হাতখরচ
বাবা-মা বাড়িতে থাকলেও নির্দিষ্ট পরিমাণ হাত খরচ তাদের দিন। এতে তাদের মধ্যে স্বাধীনতাবোধ বজায় থাকবে।
খাবার ও ওষুধ
বাবা-মা’র জন্য ভালো কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে সঠিক ডায়েট চার্ট তৈরি করে আনুন। সঠিক সময়ে সেই অনুযায়ী খাবার খাওয়ান। খাদ্য তালিকায় তাদের পছন্দের কিছু আইটেম রাখুন। এছাড়াও পর্যাপ্ত প্রোটিন, পানি, ভিটামিন সি রাখুন। সময়মতো ওষুধ খাওয়ান বা প্রেসক্রিপশন দেখে আলাদা ওষুধের চার্ট তৈরি করে রাখতে পারেন। এতে ভুল হবে না।

সঠিক ঘর নির্বাচন
বাবা-মা’র থাকার জন্য সঠিক তাপমাত্রার ঘর নির্বাচন করুন। খেয়াল রাখুন, ঘরের রঙ যেন হালকা ও আরামদায়ক একইসঙ্গে যেন পর্যাপ্ত আলোবাতাস ঢোকে। 
বিনোদন
এ বয়সে অনেকেই একাকীত্বে ভোগেন। ঘর থেকে বাইরে বের হতে চান না। লোকজন পছন্দ করেন না। বাবা-মা’র সঙ্গে সময় কাটান। টিভিতে তাদের পছন্দের অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ করে দিন। সকালে বাবা-মাকে নিয়ে হাঁটতে বের হতে পারেন। গল্পের বই পড়ে শোনান। এছাড়াও বারান্দায় ও ছাদে গাছ রাখতে পারেন। আর সেই গাছের যত্নের দায়িত্ব তাদের হাতে ছেড়ে দিন। প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকলে তাদের মন এমনিতেই ভালো থাকবে।
মূল্যবোধ
কেনাকাটায় যাওয়ার সময় বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করুন তাদের কিছু প্রয়োজন রয়েছে কিনা। অসুস্থ হলে পাশে গিয়ে বসুন, জিজ্ঞেস করুন, কেমন লাগছে।

যা যা করা উচিত নয়
অনেকে নিজের বাচ্চাদের দাদা-দাদির ঘরে যেতে বারণ করেন। এটা বাবা-মা’র মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর। আবার অনেক সময় বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন এলে অসুস্থ বাবা-মাকে সামনে আনতে চান না। এটা তাদের মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সুতরাং এসব করা থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন, ইতিবাচক পদ্ধতিতে পৃথিবীর সব দূরহ কাজও সম্পন্ন করা সম্ভব।

40
 শীত পেরিয়ে যখন গরম পড়তে শুরু করে,তখন আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের সময়ে দেখা দেয় নানা অসুখ-বিসুখ। এ সময়ে ছড়ায় এমনি একটি মারাত্মক রোগের নাম টাইফয়েড। টাইফয়েড রোগ পানিবাহিত। সালমনেলা টাইফি ও প্যারাটাইফি জীবাণু থেকে টাইফয়েড রোগ হয়ে থাকে।
টাইফয়েডের লক্ষণ
প্রচণ্ড মাথাব্যথা, গলাব্যথা, পেটব্যথা, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, জ্বরে শরীরের তাপমাত্রা ১০৩-১০৪ ফারেনহাইট, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, চামড়ায় লালচে দানা দেখা দেওয়া টাইফয়েডের প্রাথমিক লক্ষণ। অনেক ক্ষেত্রেই এই জ্বর প্রথম সপ্তাহে ধরা পড়ে না। দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে জ্বর ধরা পড়ে এবং মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ওষুধ চলা অবস্থায়ও সপ্তাহ খানেক জ্বর থাকতে পারে।
টাইফয়েডের কারণ
টাইফয়েডের অন্যতম কারণ হলো দূষিত খাবার গ্রহণ। এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এবং পানির মাধ্যমেও এই রোগের জীবাণু ছড়ায়। এ রোগের জটিলতাও নেহাত কম নয়। রক্তক্ষরণ, অগ্নাশয়ে প্রদাহ, মেরুদণ্ডে সংক্রমণ এমনকি কিডনিতেও বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে টাইফয়েড থেকে।

কী করবেন

টাইফয়েড হলে কী করতে হবে সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজের চিকিত্সক ড. দীনা শারমিন—

রক্ত পরীক্ষা

টাইফয়েড পানিবাহিত জীবাণুর মাধ্যমে ছড়ায়। তাই টাইফয়েড হয়েছে কি না, তা বুঝতে সবার আগে অসুস্থ ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষা করতে হবে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা

সব সময় পরিষ্কার পোশাক পরতে হবে। নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। অবশ্যই হাত ভালোভাবে ধুতে হবে। ঘরের জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহূত জিনিসপত্র আলাদা করে রাখতে হবে।

পানি, খাবারে সতর্কতা

পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। খাবার গরম করে খেতে হবে। বাইরের খাবার খেলে সব সময় সচেতন থাকতে হবে। অপরিষ্কার শাক-সবজি ও কাঁচা-ফলমূল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

বাসস্থান ও টয়লেটের সুব্যবস্থা

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন টয়লেটে ময়লা বা পানি জমে না থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির টয়লেট নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে খোলামেলা ও পরিষ্কার বাসায় রাখতে হবে।

টাইফয়েড হয়েছে কি না, তা যেমন রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে, তেমনি ওষুধ খাওয়ার জন্যও অবশ্যই রোগীকে একজন চিকিত্সকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

41
শরীরের অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগগুলোর সমষ্টি হলো ক্যান্সার বা কর্কটরোগ। যা বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী মরণব্যাধি হিসেবেই পরিচিতি।

কারণ প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ সহজে ধরা পড়ে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে সম্ভব হয় না ভালো কোনো চিকিৎসা দেওয়া।

মানবদেহে শ’ ধরনের বেশি ক্যান্সার হতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এসব ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা।

ঠিক কি কারণে ক্যান্সার হয় তা এখনও নিশ্চিত করে বলা না গেলেও সাধারণ কিছ‍ু কারণ খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। এরমধ্যে বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন
ভুট্টার তৈরি খই পপকর্ন যে কখনও মরণব্যাধি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে তা কোনোদিন হয়তো কল্পনাই করেন নি কেউ। কিন্তু সত্য হলো এই পপকর্ন স্বাস্থ্যের জন্য বেশ বিপজ্জনক হতে পারে।

প্রথমে বলা যেতে পারে পপকর্ন রাখা প্যাকেট বা ব্যাগের কথা! এই ব্যাগে থাকা বিষাক্ত পারফ্লোরো অক্টানয়িক অ্যাসিড মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। নন-অর্গ্যানিক ফল
বিভিন্ন ধরনের নন-অর্গ্যানিক ফল-ফলাদিতে বিশেষ করে ‍অ্যার্টাজিন, থায়োডিকার্ব এবং অর্গানাপসফেটসে উচ্চ নাইট্রোজেন থাকে। কীটনাশক বা রাসায়নিক সার হিসেবে ব্যবহার হওয়া ইউরিয়াও খাদ্যে প্রয়োগ করা হয় হয়। যেগুলো ক্যান্সারের মতো রোগের কারণ হতে পারে।

এছাড়া নীরব ঘাতক নন-অর্গানিক বা অজৈব ফল প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে ফেলে।  রেডিমেড খাবার
বাস্তবিক অর্থে বেশির ভাগ টিনজাত খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি হতে পারে। এসব খাদ্য বিশপেনল-এ বা বিপিএ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। রেডিমেড টমেটো বা টিনজাত বা প্যাকেটজাত টমেটোও এর আওতায় রয়েছে।

২০১৩ সালে জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির এক গবেষণা দেখা যায়, বিপিএ শরীরে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। যা ব্রেনেও প্রভাব পড়ে। টমেটোর অধিক অম্লতাও খুব বিপজ্জনক! প্রক্রিয়াজাকরণ মাংস

মাংস প্রক্রিয়াকরণে কী থাকে? দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ মেশানো হয়ে থাকে মাংসে।
এরমধ্যে হট ডগ, বেকনসহ বিভিন্ন ধরনের লাঞ্চের মাংস রয়েছে। যা কেমিক্যাল মিশ্রিত থাকে। এসব খাদ্য ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করতে পারে। চাষ করা স্যালমন

মাছ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু যতটা সম্ভব এই মাছটি ত্যাগ করা উচিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ ভাগেরও বেশি চাষের স্যালমনের ভোক্তা রয়েছে।
চাষের এই মাছকে কৃত্রিম খাদ্য ও রাসায়নিক, জীবাণুমুক্ত, কীটনাশক এবং অন্যান্য খাদ্য দেওয়া হয়। যা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী।
যদিও এই মাছে স্বাস্থ্য ও মস্তিস্কের জন্য উপকারী ওমেগা-৩ রয়েছে, তবু চাষের ক্ষেত্রে তা পরিপূর্ণ থাকে না। পটেটো চিপস

হ্যাঁ, পটেটো চিপস খুবই রুচিকর একটি খাদ্য। মজাদার, সস্তা, জলখাবার হিসেবে এর জুড়ি নেই। তবে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এই জলখাবার নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পটেটো চিপসে থাকা উচ্চ ক্যালরি শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে।

নিউ ইংল্যান্ডের চিকিৎসা জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি আলুর চিপস যথেষ্ঠ। এছাড়া রক্তচাপ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এটা দায়ী হাইড্রোজেনেটেড অয়েল

প্রথমে উদ্ভিজ্জ তেল দিয়েই শুরু করা যাক। কিন্তু উদ্ভিজ তেল তার উৎসের কেমিক্যাল বাদ দিতে পারে না। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

সব ধরনের উদ্ভিজ তেলেই উচ্চ মাত্রার ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড থাকে। ওমেগা-৬ স্বাস্থ্যের জন্য নানা-সমস্যা ও রোগসহ নানা ধরনের ক্যান্সার বাড়ায়। বিশেষ করে ত্বক ক্যান্সার সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখে।

অন্যদিকে হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। এই তেল শরীরের সেল গঠনে প্রভাব ফেলে, যা ক্যান্সারের সাথে সম্পৃক্ত। খাদ্যে উচ্চ লবণাক্ততা বা স্মোকিং ফুড
 
খাদ্য সংরক্ষণে নাইট্রেট বা নাইট্রেস ব্যবহার করা হয়। এছাড়া মাংসের রঙের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয়। তবে এটা ক্যান্সারের কারণ হয় না।

ধূমপান ও নন-নাইটেসো সমৃদ্ধ খাবারের কেমিক্যাল ক্যান্সারে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

পুড়িয়ে অথবা ভেজে তৈরি করা খাবার মাংসের কাবাব কিংবা বাদাম স্মোকিং ফুড হিসেবে পরিচিত। মাংসের তৈরি খাবার যেমন বেকন, সস, বোলোগনা এবং সালামিতে প্রচুর চর্বি ও লবণ থাকে। আচারেও অধিক পরিমাণে লবণ রয়েছে।

এসব খাবার কলোরেক্টাল ক্যান্সার এবং পেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রক্রিয়াজাত সাদা আটা

অ‍াটা শর্করা জাতীয় খাবার। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু প্রক্রিয়াজাতকরণ সাদা আটা খুবই অপকারী।
রিফাইনের ফলে এই আটা তার সাধারণ পুষ্টিগুণাগুণ হারিয়ে ফেলে। আটার মিলগুলো তা সংরক্ষণের জন্য বর্তমানে ক্লোরাইন গ্যাসে নামে একটি কেমিক্যাল ব্যবহার করছে যা খুব ক্ষতিকর। পরিশোধিত চিনি

পরিশোধিত চিনির ঝুঁকি বিস্তর। এই চিনি স্থূলতার জন্য দায়ী। যুক্তরাজ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় ভুগছে।

পরিশোধিত চিনি নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছাড়াও এর দ্বারা নানা খাদ্য ক্যান্সার সেলের জন্ম দিচ্ছে। চিনির তৈরি বিভিন্ন পানীয়ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কৃত্রিম চিনি
অনেকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী খাবারে চিনির বিকল্প হিসেবে আর্টিফিসিয়াল সুইটেনার্স বা কৃত্রিম চিনি খান। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, এই কৃত্রিম চিনি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় সোডা ও কফি সুইটেনার্স।

বাস্তবিক অর্থে এ কৃত্রিম চিনি রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণেও প্রভাব ফেলে। এতে ডায়েবেটিস বৃদ্ধিসহ ক্যান্সারও হতে পারে। অ্যালকোহল
অতিমাত্রায় মদ্যপানের (অ্যালকোহল) কারণে মানুষের ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানান, মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন করলে শরীরে এমন এক ধরনের প্রবণতা সৃষ্টি হয়, যা মানবদেহ সূর্যের সংস্পর্শে এলে ত্বকের ওপর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

তারা বলেন, ইথানল মানবদেহে প্রবেশ করে এক ধরনের তেজষ্ক্রিয়তা বা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে যা ত্বককে অতিবেগুনি রশ্মির প্রতি আরো সংবেদনশীল করে তোলে।

আর এই সময় মদ্যপায়ীরা সূর্যের আলোর কাছাকাছি গেলে এবং সানস্ক্রিনের মতো দেহকে সূর্য থেকে রক্ষার কোনো ব্যবস্থা না নিলে কয়েকগুণ বেশি মাত্রায় অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতির শিকার হয়। অ্যালকোহলের মাত্রা বেশি হলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। রেড মিট
মাংস অনেকেরই প্রিয়। কিন্তু লাল মাংস স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। হতে পারে প্রাণঘাতী ক্যান্সারও। তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন, অধিক পরিমাণে লাল মাংস ভোজন ত্যাগ করতে হবে।

এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, লাল মাংসে এন-নিট্রোসোডিয়েথিলামিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এ‌ পদার্থের মাত্র দশমিক ০০০০৭৫ শতাংশ গ্রাম-ই শরীরে ক্যান্সার উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট।

এছাড়া  লাল মাংসে থাকা উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর কোলেস্টরল অন্ত্র ও পাকস্থলীর ক্যান্সার সংক্রমণেই কাজ করে না, এটি ভয়ংকরভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ক্যান্সার ছড়িয়ে দেয়।

তাই এই মাংস ভক্ষণে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

42
ফেসবুকে এক বন্ধু লিখেছে, আয়নায় যদি চেহারা দেখা না গিয়ে চরিত্র দেখা যেত তাহলে কেউই আর আয়না ব্যবহার করতো না–সামগ্রিকভাবে কথাটা আমাদের দরিদ্র চরিত্রের উদাহরণ অবশ্যই।

আমার আরও মনে হয় পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ আত্মজীবনী লেখা। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘটনা যা আমার শঠতায় ভরা, অসৎ চিন্তায় ভরা, পরশ্রীকাতরতায় ভরা, হিংসায় ঠাসা, সুক্ষ্ম অহঙ্কারের কুটচালে ভরা, লোভ, লালসা, অপরকে হেয় করা, মিথ্যা কথা, মিথ্যা আশ্বাস, কারণে অকারণে মিথ্যা বলা, আমানতের খেয়ানত করা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, কারো সঙ্গে মতের অমিল হলে তাকে গালিগালাজ করা ইত্যাদি আরও অনেক অনেক কু-রিপুর কথা যা শুধু আমি জানি তা কি সততার সঙ্গে লেখা সম্ভব? শুধু আমি নই,  যে কাউকে এই ব্যাপারে লিখতে বসালে ভয়ঙ্কর বিপদে আপতিত হবে সে। এই লেখার জন্য যত বড় পুরস্কারই থাকুক না কেন আমি বা আমরা কেউ লিখতে পারবো না। কারণ মনে এক মুখে আর এক, এই হলাম আমি।

এসবের একটাই কারণ তা হলো আমার অহঙ্কার, আমার বড়ত্ব, আমিত্ব। সেজন্য আল্লাহর একনিষ্ঠ এক বান্দা বলেছেন, পাপী অহংকারী অপেক্ষা শ্রেয়। কেননা পাপী নিজের পাপ স্বীকার করে। কিন্তু অহংকারী অহমিকার কারণে বন্দি থাকে।

অন্য একজন বলেছেন, মানুষের বিপদ আসে তিনটি বস্তু থেকে। যথা- (ক) স্বাভাবিক রোগ, (খ) অভ্যাসগত রোগ ও (গ) অসৎ সঙ্গ রূপ রোগ। অবৈধ খাদ্য থেকে স্বাভাবিক রোগ হয়। নিষিদ্ধ ও ত্রুটিযুক্ত বস্তুর দৃষ্টির ও পরনিন্দা শোনার অভ্যাস থেকে অভ্যাসগত রোগের উৎপত্তি। আর রিপুর দাসত্ব থেকে অসৎ সঙ্গ রোগ দেখা দেয়।

অবৈধ আয় থেকে অবৈধ খাদ্য আর নিষিদ্ধ ও ত্রুটিযুক্ত বস্তুর দৃষ্টি ও পরচর্চা, পরনিন্দা যা শয়তান এতোই আমাদের কাছে শোভন করেছে যে কখন তা আমার অভ্যাস রোগ হয়ে গেছে যে বুঝতেই পারিনা। আর কু-মতলব হাসিলের জন্য তো কু লোকেরই দরকার।

অন্য একজন বলেছেন, খাঁটি হতে হলে চারটি বস্তু বিশেষ প্রয়োজন। তা হলো- সত্য কথা, সত্য কাজ, খাঁটি বন্ধুত্ব ও খাঁটি আমানত।

আমি বা আমরা আজ এসব রোগাক্রান্ত। সমাজ আমার কারণে দূষিত। একবেলা নামাজ পড়ি তাতে আমার গর্বে বুক ফুলে যায় কিন্তু ঠিক নামাজের পরেই ফিতনা করি তাতে আমার আল্লাহ্‌র ভয় আসে না মনে। এই আমি আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত চরিত্রবান। এই হচ্ছে মুখে এক অন্তরে আর এক। যা আজকের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে বাস করে যেমন বাংলাদেশের আইন ভঙ্গ করার কোনো অবকাশ নেই তেমনি পৃথিবীর কোথাও বা কোনো দেশে বা সমাজে বাস করে সে দেশের বা সমাজের আইন ভঙ্গ করারও কোনো অবকাশ নেই। দেশ বা সমাজের আইন ভেঙে যেমন কারো পার পাওয়ার উপায় নেই, সমাজ বা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে পাকড়াও হতে হবে। তেমনি কেউ দেখুক বা না দেখুক ছোট বড় কোনো পাপ করে বাঁচার অবকাশ নেই। মহান আল্লাহ্‌র বিচারের সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।

মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, তোমাদের মনের কথা তোমাদের রব জ্ঞাত, সৎকর্মী হলে তিনি তওবাকারীদের দোষ ক্ষমাকারী”। সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-২৫।

আরও একজন আল্লাহর ঈমানদার বান্দা বলেছেন, যদি বান্দাকে তার নিজের অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হতো তবে গুনাহ ও গোমরাহ ছাড়া অন্য কিছু বের হতো না।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি দোয়া ছিল,  হে আল্লাহ্! আমি আমার তত্ত্বাবধানে থাকার চেয়ে আপনার আশ্রয় চাই, আমাকে সার্বক্ষণিক আপনার তত্ত্বাবধানে রাখুন।

মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে কিছু কঠিন কথা সহজ ভাষায় বলেছেন। তাই আমি একে পড়লেও মনে ভয় আসে না আমার দুনিয়া প্রীতি, প্রতিযোগিতা, মোহ, লোভ, লালসার কারণে। কোরআন বুঝে না পড়ার কারণে। কারণ চাক্ষুষ প্রমাণ আমাকে প্রভাবিত করে। পুলিশের ভয়ে আমি চুরি করি না কিন্তু মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর ভয়ে রিপুর ঘৃণিত স্বভাব গুলো আমি ত্যাগ করি না। পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারায় মহান আল্লাহ্ বলেছেন, ইহা সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য পথ প্রদর্শক। যারা গায়েবে বিশ্বাস করে, ঠিকভাবে নামাজ পড়ে ও তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা হতে খরচ করে। আয়াত-২-৩।


প্রথমেই মহান আল্লাহ্ বলেছেন, ইহা সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই। কোনো প্রকার সন্দেহের স্থান নেই এই কিতাবে। যা বলা হয়েছে সহজ সরল ও হিকমতের সাহায্যে তাই সত্য, অকাট্য। যা মুত্তাকীদের  জন্য পথ প্রদর্শক। মুত্তাকীদের প্রাথমিক পরিচয়ে তাদের তিনটি পরিচয় দিয়েছেন যেমন- তারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, নামাজ পড়ে ও তাদের যে রিজিক দেওয়া হয়েছে তা সৎ পথে ব্যয় করে।

যে সব গোপন পাপ আমরা করি, যার কোনো সাক্ষী নাই। এসব পাপের জন্য আমরা কোনো অনুতাপ করিনা,  অনুশোচনাও করিনা এমন কি বুঝিও না যে এটা পাপ। পুলিশ নেই বলে নাকি সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি হয় না বলে আমরা এমন করি? আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি যে এখন যে পাপ আমরা করলাম তার নগদ শাস্তি যদি হতো তাহলে আমাদের কি গতি হতো? আমি এতোই মোহাচ্ছন্ন যে পাপ পূণ্যের হিসাব করতে ভুলে গেছি।

মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এমন চারটি চরিত্র দোষ আছে যে কোনো ব্যক্তির মধ্যে তার সমষ্টি পাওয়া গেলে সে পুরোপুরি মোনাফেক পরিগণিত হবে ও তার কোনো একটি পাওয়া গেলেও তার মধ্যে মোনাফেকের স্বভাব আছে বলা যাবে। এ দোষগুলো হলো-আমানতের খেয়ানত করা, কথায় কথায় মিথ্যা বলা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা ও কারো সঙ্গে মতানৈক্য বা বিরোধ হলে তাকে গালিগালাজ করা। সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা.) হতে বর্ণিত। বোখারি শরীফ, প্রথম খণ্ড, হাদিস নম্বর-৩০।

পরিস্থিতির আলোকে মনে হয় এগুলো কোনো পাপই নয়, কেহ দেখেনা, লোক চক্ষুর অন্তরালে করা যায় ইত্যাদি। কিন্তু আসলে কি তাই?
যে সব মোনাফেকি করে আজ পার পেয়ে যাই, কু-রিপুর তাবেদারি করে সাময়িক লাভ করি তার হিসেব দিতেই হবে। দুনিয়ায় আত্মজীবনী সৎভাবে লিখতে না পারলেও আখিরাতে অবশ্যই লিখিত হিসেবে পাওয়া যাবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে বলেছেন-আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবে, হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না। সুরা আল-কাহফি, আয়াত-৪৯।

এবং নিজেকে নিজের কৃতকর্মের কিতাব পড়তে দেয়া হবে এটা ও মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে সুরা বনি ইসরাইলে বলেছেন, আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার গ্রীবলগ্ন করে রেখেছি। কেয়ামতের দিন বের করে দেখাব তাকে একটি কিতাব, যা সে খোলা অবস্থায় পাবে।পাঠ কর তুমি তোমার কিতাব। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্যে তুমিই যথেষ্ট।
-

43
রোজা ফারসি শব্দ। এর আরবি হচ্ছে সওম। বহুবচন সিয়াম। অর্থ- বিরত থাকা।

ইসলামী শরীয়তে সওম হলো আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশে নিয়তসহ সুবহে সাদিকের প্রারম্ভ হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও সহবাস থেকে বিরত থাকা।

২য় হিজরীর শাবান মাসে মদীনায় রোজা ফরজ সংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয়। আয়াতটি হলো-হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা সংযমী হও। সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ আরো বলেন-  তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাসকে পায় সে যেন রোজা রাখে। সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৫। পবিত্র রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসের কিতাবগুলোতে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্য থেকে কিছু হাদিস বর্ণিত হচ্ছে। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় ও দোজখের  দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম)। অপর হাদিসে হজরত সাহ্ল ইবনে সা’দ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, বেহেশতের আটটি দরজা রয়েছে। তারমধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)।

বিখ্যাত হাদিস বিশারদ সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রাত্রিতে এবাদত করবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত্রি এবাদতে কাটাবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।  (বুখারী, মুসলিম)।

আরো এসেছে, প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য। তবে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। রোজা (জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য) ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ রোজা রেখে অশ্লীল কথাবার্তায় ও ঝগড়া বিবাদে যেন লিপ্ত না হয়। কেউ গালমন্দ বা ঝগড়া বিবাদ করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার। সেই মহান সত্ত্বার কসম যার করতলগত মুহাম্মদের জীবন, আল্লাহর নিকট রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরির সুঘ্রান হতেও উওম। রোজাদারের খুশির বিষয় দু’টি। যখন সে ইফতার করে তখন একবার খুশির কারণ হয়। আর একবার যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোজার বিনিময় লাভ করবে তখন খুশির কারণ হবে। (বুখারী)।

অপর একটি হাদিসে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রোজা ও কোরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমজানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে)। বায়হাকী। হাদিস শরীফে আরো এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন রমজানের প্রথম রাত্রি আসে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। দোজখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই খোলা হয় না। বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই বন্ধ করা হয় না। এ মাসে এক আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, হে ভালোর অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে মন্দের অন্বেষণকারী! থামো। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে বহু ব্যক্তিকে দোজখ থেকে মুক্তি দেন। আর এটা প্রতি রাতেই হয়ে থাকে। তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যখন রমজান মাস উপস্থিত হতো রাসুল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব কয়েদিকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক যাঞ্চাকারীকে দান করতেন। বায়হাকী।

প্রিয় পাঠক! আমাদের উচিৎ রমজান মাসে এবাদত-বন্দেগি বাড়িয়ে দেওয়া। সাধ্যের মধ্যে সবচে’ বেশি দান করার চেষ্টা করা। রোজা রেখেও আমরা অনেকে অনেক অন্যায় করি। মিথ্যা বলি। অপরাধ করি। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায়, নবী করীম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি (রোজা রেখেও) মিথ্যা কথা বলা ও তদনুরূপ কাজ পরিত্যগ না করে তবে তার শুধু পানাহার ত্যাগ করা দিয়ে (অর্থাৎ উপবাস ও তৃষ্ণার্ত থাকায়) আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। বুখারী । অর্থাৎ রোজা রেখে মিথ্যা বললে, অন্যায়-অপরাধ করলে আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কারের আশা করা যায় না। মহান আল্লাহ আমাদের রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে বেশি বেশি এবাদত-বন্দেগি করার তৌফিক দান করুন। - See more at: http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/302808.html#sthash.HhfpkafL.dpuf

44
সৃষ্টির শুরু থেকে আল্লাহ পাক কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করে রেখেছেন। পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে অনেক উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটেছে কিন্তু এসব নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন হয়নি তার। যুগে যুগে তার এমন অমোঘ বিধি-বিধান এবং নির্দেশনাসমূহের বাস্তবায়ন লিপিবদ্ধ হয়ে আছে পৃথিবীর ইতিহাসে।

যে কয়েকটি বিষয় আল্লাহ পাক নিজের জন্যও নিষিদ্ধ করে রেখেছেন- সেসবের মধ্যে সর্বপ্রথম বিষয়টি হচ্ছে জুলম বা অন্যায়। মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ পাক আমাদের লক্ষ্য করে বলছেন, হে আমার বান্দারা! আমি নিজেই আমার ক্ষেত্রে জুলম হারাম করে নিয়েছি ও এ বিষয়টিকে তোমাদের পরস্পরের জন্যও নিষিদ্ধ করে দিলাম। তোমরা একে অন্যের ওপর জুলম করো না।

আজকের সমাজজীবনে একেবারে সাধারণ বিষয়ে একে অন্যের ওপর বিরাজমান জুলম করা কিংবা শাসকের পক্ষ থেকে দেশের জনগোষ্ঠীর ওপর অবৈধভাবে শাসনক্ষমতা প্রয়োগের ভয়াবহতা আল্লাহ পাকের কাছে অমার্জনীয় অপরাধ। এর কঠিন শাস্তি ও পরিণতির প্রতি সতর্ক করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা জুলম বা অন্যায় করা থেকে বিরত থাকো। এই জুলম কিয়ামতের দিন ঘোর অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে। (মুসলিম)
 
তিনি অন্যায় থেকে এভাবে বিরত থাকার পাশাপাশি মজলুম ব্যক্তির প্রার্থনার শক্তি সম্পর্কেও সজাগ করেছেন আমাদের। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মজলুমের বদদুআ থেকে বেঁচে থাকো। যদিও সে কাফের হয়। কারণ তার দুআ সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়।

পৃথিবীতে আজ প্রতিনিয়ত কতো কতো জালেমের অন্যায়-অত্যাচার আর অবৈধ শক্তির ভয়ে মানুষ আতঙ্কিত ও ভীত। কতো অসহায় মানুষ দু’হাত তুলে জালেমের ধ্বংস প্রার্থনা করেন অথচ এর প্রতিফলন তাৎক্ষণিক ঘটছে না। অশ্রু শুকিয়ে আশার প্রদীপ নিভে যায় অথচ জালেমের জুলম অব্যাহত থেকে যায়। এর রহস্য কী? কেন মহান স্রষ্টার এমন নিরবতা?

উম্মতের এমন ব্যথাতুর কৌতূহলের জবাব দিয়েই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গেছেন, আল্লাহ পাক জালিমকে ছাড় দিতে থাকেন- তারপর যখন ধরেন তখন আর তাকে কোনো সুযোগ দেন না। (বুখারী)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ হাদীসের স্বপক্ষে পবিত্র কুরআনে বেশ কিছু আয়াতও রয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, জালেমরা যা করছে সে সম্পর্কে তোমরা আল্লাহকে উদাসীন ভেবো না, তিনি তাদের ছাড় দিয়ে যাচ্ছেন ওই দিন পর্যন্ত যেদিন চোখগুলো সব আতঙ্কে বড় বড় হয়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম-৪৩) অন্য আয়াতে তিনি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, এমনই ছিল তোমার রবের ধরপাকড়-যখন তিনি ধরেছিলেন ওই জালেম বসতিগুলোকে- নিশ্চয়ই তার ধরা অনেক কঠিন যন্ত্রণাময়। (সূরা হুদ-১০২) পবিত্র কুরআনে জালেম বা অন্যায়কারীর ওপর আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে অভিশাপ ও কঠিন শাস্তির বর্ণনা সম্বলিত অনেক আয়াত রয়েছে।

কারো ওপর যে কোনো ধরনের অন্যায়- এর পেছনে যে ধরনের স্বার্থই থাকুক- চাই তা সামাজিক, রাজনৈতিক বা ইসলামের নামে হলেও তা মহান শক্তিমান আল্লাহ পাকের কাছে অন্যায় এবং অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য। অন্যের ওপর অন্যায় কিংবা জুলম এতোই নিন্দনীয় যে স্বয়ং জালেমও তার জন্য বিষয়টিকে মেনে নিতে পারে না। একজন ঘোরতর জালেমও অন্যের কাছে নিজের ক্ষেত্রে ন্যায়ের কামনা করে থাকে।

আল্লাহ পাকের কিছু অলঙ্ঘনীয় বিধানসমূহের একটি অন্যতম বিধান হলো-তিনি জালেম মুসলমানের বিপক্ষে মজলুম কাফেরকেও সাহায্য করেন। তবুও তিনি জালেমকে কোনো ছাড় দেন না। জুলুমের শাস্তি এতো ভয়াবহ ও দ্রুত যে দুনিয়া থেকেই এর সূচনা হয়। আখেরাতে এর পরিণতি কতো মারাত্মক ও ভয়াবহ তা স্বয়ং এক আল্লাহ পাকই জানেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সা.) এক হাদীসে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কোন জালেম শাসক রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ পাবে না রোজ হাশরের মাঠে।
 
তাই ক্ষমতার মসনদে সমাসীন ব্যক্তিবর্গ অস্ত্র কিংবা শক্তিবলে প্রজা অথবা জনসাধারণের ওপর যে কোনো অন্যায় বা অবৈধ কার্যকলাপ চাপিয়ে দিয়ে সমর্থকদের ক্ষণিকের হাততালি পেতে পারেন, কিন্তু চিরস্থায়ী পরকালের সূচনায় কাল কিয়ামতের মাঠে তারা বঞ্চিত হবেন সব ধরনের দয়া ও করুণা থেকে। একটি ছাগলও যদি অন্যায়ভাবে আরেকটি ছাগলকে শিং দিয়ে সামান্য আঘাত করে থাকে- পরম শক্তিমান সেদিন দু’টি ছাগলকেই জীবিত করে জুলুমের শিকার নির্বাক প্রাণীকেও সুযোগ করে দেবেন শিংধারী ছাগলকে আঘাত করে তার প্রতিশোধ নিতে। অবলা প্রাণীর বেলায় যদি এই হয় দেনা-পাওনার হিসাব, তাহলে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের ক্ষেত্রে জালেম-মজলুমের হিসাব নিকাশ কতোটা নিখুঁত ও ভয়াবহ হবে তা সহজেই অনুমেয়।

আল্লাহ পাকের সাহায্য মজলুমের সঙ্গে, তাঁর মদদ অতি সন্নিকটে। যুগ যুগান্তরে অসহায় নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষগুলোর জন্য এ অভয় বাণীই সবচেয়ে বড় সান্তনা ও বেঁচে থাকার প্রেরণা।
- See more at: http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/291882.html#sthash.p6nfQbQn.dpuf

45
দেশজুড়ে প্রচণ্ড গরম পড়ছে গত কয়েকদিন ধরে। বৈশাখী বৃষ্টির সময়টুকু বাদে যখন সূর্য প্রখর হয়ে ওঠে, তখন অসহনীয় তাপে ক্লান্ত হয়ে পড়ে মানুষ।

একটু ছায়ার আশায় পথ ছেড়ে পাশে কোথাও আশ্রয় নেয় পথচারী, পিপাসার্ত শ্রমিক খুঁজে ফেরে একটু পানি।

প্রকৃতির এ তীব্র দাবদাহে আমরা চাইলে খুব সহজেই অসীম পূণ্যবান হতে পারি। জীবনযাপনে মানুষের যা যা প্রয়োজন, ইসলাম সে সব কিছুর মধ্যেই আমাদের জন্য নেকি ও পূণ্যের ব্যবস্থা করেছে। শুধু পরকালীন নেকি-পূণ্যের হিসেব নয় বরং এসবে ইহজগতে নিজেদের মানবিকতা চর্চারও নানা উপায় লুকানো রয়েছে।

কাউকে পানি পান করানোর বিষয়টি আজ আমাদের কাছে হয়তো আহামরি কোনো দান কিংবা বিষয় নয়, অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এ সামান্য কাজটিও অসীম পূণ্যের কাজ। হাদিসের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ বুখারি শরিফে একটি পূর্ণ অধ্যায়ের নামকরণ করা হয়েছে- পানি পান করানোর ফজিলত শিরোনামে। এতে এ বিষয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিসগুলোকে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম সদকা হলো মানুষকে পানি পান করানো। (আহমদ, আবু দাউদ)
 
হজরত সাদ বিন উবাদা (রা.) এসে নবীজিকে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি তার জন্য কোনো কিছুর ওসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষ হয়ে কিছু সদকা করি, তবে কি তা আমার মায়ের কোনো উপকারে আসবে? নবীজি বললেন, হ্যা, হবে। তুমি মানুষকে পানি পান করাও।

হজরত ইবনে আব্বাসকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন দানটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন, অন্যকে পানি পান করানো। ইমাম কুরতুবি একটি আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে বলেছেন, যার গোনাহ বেশি হয়ে গেছে, সে যেন মানুষকে পানি পান করায়।
সহিহ বুখারি শরিফে বর্ণিত হাদিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর বদৌলতে এক পাপী ব্যক্তিকেও আল্লাহ পাক মাফ করে দিয়েছেন।

সামান্য কুকুরের তৃষ্ণা মেটানোয় যদি এতো বড়ো পুরস্কার হয়, তবে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে পানি পান করানোর বিনিময় আরও কতো মহান হতে পারে- তা কি কখনো ভেবে দেখেছি!

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোথাও একটি কূপ খনন করে দেয় এবং তারপর সেখান থেকে কোনো মানুষ, পশু-পাখি অথবা কোনো প্রাণীও যদি পানি পান করে, তবে প্রত্যেকটির বিনিময়ে আল্লাহ পাক তাকে কিয়ামতের দিন নেকি দান করবেন। এখানে শুধু কূপ নয়, বরং শহর ও অঞ্চল ভেদে যে কোনোভাবে পানি পান করার ব্যবস্থা করে দেওয়ার ফজিলত বোঝানো উদ্দেশ্য।

কোনো আততারগিব ওয়াততারহিব গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, হাদীস শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ ইমাম হাকেম একবার অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তার চেহারায় ফোড়া দেখা দিল এবং আকৃতি যেন বদলে গেল। তখন তিনি তার বাড়ির দরজায় সাধারণ পথচারীদের জন্য পানি পানের ব্যবস্থা করে দিলেন। লোকেরা চলতিপথে পিপাসার্ত হলে সেখান থেকে পানি পান করে নিত। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। তার চেহারায় আগের চেয়েও সৌন্দর্য বেড়ে গেল। ইমাম হাকেম মূলত ওই হাদীসের ওপর আমল করেছিলেন, যেখানে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য সদকা করো, এতে তাদের সুস্থতা নিহিত।

প্রসিদ্ধ ইমাম ও বুজুর্গ হজরত আব্দুল্লাহ বিন মুবারকের কাছে এক লোক এসে তার হাঁটুতে ক্ষত সম্পর্কে জানালো। লোকটি বললো, আমি অনেক ধরনের চিকিৎসা করিয়েও কোনো সুফল পাচ্ছি না। আব্দুল্লাহ বিন মুবারক তখন তাকে বললেন, যাও, অমুক জায়গায় গিয়ে সেখানে একটি কূপ খনন করে দাও। ওখানকার মানুষ পানির জন্য কষ্ট পায়। আমি আশা করি, এতে তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে। লোকটি তার কথা মতো সেখানে একটি কূপ খনন করে দিল ও সত্যিই কয়েকদিন পর সে সুস্থ হয়ে উঠলো।

শহরে নগরে রাজপথে হেঁটে চলা ক্লান্ত পথিকের সংখ্যা মোটেও কম নয়। আপনার আমার বাসা-বাড়ি কিংবা দোকানের সামনে দিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য পথচারী পথ চলছে। তাদের সেবায় যদি একটি ড্রামভর্তি বিশুদ্ধপানি আর দু’য়েকটি গ্লাস আমরা কোথাও রেখে দিই, তবে নিজেদের মানবিকতার বিশুদ্ধ চর্চার পাশাপাশি তা আমাদের আখেরাতেও অসীম পূণ্যের দুয়ার খুলে দেবে।

আজকের আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় নিজেদের পরকালীন আমলনামাকে সমৃদ্ধ করতে খুব বেশি কিছু করার সুযোগ আমাদের সবার হয়ে ওঠে না। অর্থ ও সাধ্যের অভাবে বড় অঙ্কের দান-খয়রাতও আমাদের সবার জন্য সম্ভব নয়। সার্বজনীন সুন্দর ও মানবতার ধর্ম ইসলাম এমন সবার জন্য খুব সহজেই পূণ্যবান হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা যদি স্ব স্ব অবস্থানে থেকে পিপাসার্ত মানুষের পিপাসা মেটাতে কিছু করার উদ্যোগ নিই, তবে কাল কিয়ামতের মাঠে এটুকুই হয়তো আমাদের জন্য অনেক বড় সঞ্চয় হয়ে থাকবে। সামান্য এক গ্লাস পানির বিনিময়ে যদি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পাক আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান, তবে এমন সৌভাগ্যবান আর কে আছে!

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 8