Daffodil International University

Career Development Centre (CDC) => Parents Guidance => Topic started by: shilpi1 on June 10, 2013, 11:03:50 AM

Title: আম্মু আজ স্কুল যাবো না !
Post by: shilpi1 on June 10, 2013, 11:03:50 AM
জিসা। বয়স ৮। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। ভোরে মা স্কুলে যাওয়ার জন্য ডেকে তুলতেই চোখ ডলতে ডলতে স্কুলে না যাওয়ার বায়না। প্রথম প্রথম মা ভাবতেন হয়ত সকালে ঘুমের ব্যাঘাতই এর কারণ। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে জিসার এ প্রবনতা যেন আরও বেড়ে যাচ্ছে। ইদানিং সে আবার স্ক‍ুলে না যাওয়ার জন্য নানা ধরনের অযুহাতও তৈরি করছে। প্রথমে বিষয়টা স্বাভাবিক মনে হলেও ইদানিং চিন্তিত হয়ে পড়েছেন জিসার মা-বাবা।

এমন অনেক পরিববারই আছে সকাল হতে না হতেই যাদের মুখোমুখি হতে হয় বাচ্চাদের এ ধরনের বায়নার। বাচ্চাদের স্কুলে যেতে না চাওয়ার বিষয়টি এখন বাবা-মা আর স্কুলের শিক্ষকদের কাছে একটি ভাবনার বিষয়। schoolআগে একে ‘স্কুল ফোবিয়া (School Phobia)’ বলা হলেও এখন একে ‘স্কুল রিফিউজাল (School Refusal )’ বলা হয় । স্কুলে যেতে ভয় পাওয়া আর বাসা থেকে বিভিন্ন কারণে স্কুলে যেতে না চাওয়া এককথা নয় ।

‘স্কুল রিফিউজাল’ পরিভাষাটি শিশুর স্কুল ভীতিসহ অন্য কারণগুলোকেও অর্ন্তভুক্ত করে। তবে ‘স্কুল রিফিউজাল’ কোনো রোগের নাম নয়। বরঞ্চ এটি অভিভাবকের একধরণের অভিযোগ যার মাধ্যমে শিশুর নিজস্ব, তার পরিবারের কিংবা তার বিদ্যাপিঠের কোনো একটি ক্ষেত্রে অসঙ্গতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

শিশু মনোরোগবিদ্যায় নানাবিধ  অভিযোগের পরিসংখ্যানে স্কুল রিফিউজালের হার শতকরা ৫ ভাগ। স্কুল এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র  যার সঙ্গে শিশুর দৈহিক ও মনোজাগতিক বৃদ্ধি সরাসরি জড়িত। শিশুর সামাজিক উপাদান হিসেবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে স্কুলের গুরুত্ব অনুধাবন করেই ‘স্কুল রিফিউজাল’কে  শিশু মনোরোগবিদ্যা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করে।

কি ঘটে?
সাধারণত  অনেক বাচ্চা-ই  প্রতিদিন এ ধরনের বায়না ধরে। তবে বাবা-মায়েরা পরবর্তীতে তাকে বুঝিয়ে স্কুলে পাঠাতে সক্ষম হন। গবেষণায় দেখা গেছে ১০-১১ বছরের বাচ্চাদের তুলনায় ১৪-১৫ বছরের বাচ্চাদের ‘স্কুল schoolরিফিউজাল’র  হার বেশি। এক্ষেত্রে সাধারণত বাচ্চারা স্কুলে যেতে অস্বীকৃতি জানায় অথবা ঘর হতে বের হয়ে অল্প দূর গিয়ে আবার ফিরে আসে। এমনকি স্কুলে গিয়েও অল্পক্ষণ পরই বাসায় ফিরে আসে। অনেক ক্ষেত্রে শিশু স্কুলে যেতে বা বাড়ি ছাড়তে ভয় পায়। ক্ষেত্র বিশেষে বাচ্চা স্কুলে যাওয়ার প্রাক্কালে তার নানা শারীরিক উপসর্গের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ‘স্কুল রিফিউজাল’ করে। যেমন, মাথা ব্যথা, গায়ে ব্যথা, পেটে ব্যথা, বুক ধরফর করা ইত্যাদি।

এক্ষেত্রে ছুটির দিনে বাচ্চার এসব শারীরিক উপসর্গের অনুপস্থিতি মা-বাবাকে তার সমস্যার মূল কারণ (স্কুল রিফিউজাল) সম্পর্কে খানিকটা ইঙ্গিত দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথাগতভাবে বোঝাতে ব্যর্থ হলে অভিভাবকরা  বকুনি, জোর জরবরদস্তি, মারধর করেন। যা লাভের চাইতে ক্ষতি-ই বরং বেশি করে।

কারণ কি?
‘স্কুল রিফিউজাল’র বাচ্চাদের তুলনায় দুষ্ট প্রকৃতির শিশুদের পার্থক্য হলো, দুষ্ট শিশুরা স্কুলে অনুপস্থিতির বিষয়টি কখনোই মা-বাবাকে জানতে দেয় না। তারা মা-বাবা কিংবা শিক্ষকদের অগোচরে ধীরে ধীরে নানা ধরনের উশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে  এবং তারা কখনোই স্কুলে উপস্থিত হতে বা অনুপস্থিতির জন্য চাপ অনুভব করেনা। school

স্কুল রিফিউজাল এর সঙ্গে বাচ্চাদের জীবনের  নির্দিষ্ট ধাপ  যেমন, প্রথম স্কুলে ভর্তি হওয়া, প্রাথমিক ধাপ থেকে মাধ্যমিক ধাপে উন্নিত হওয়া, কোনো লম্বা সময় ছুটির বন্ধের পর আবার স্কুলে ফেরা বা সপ্তাহের শেষদিন ইত্যাদি সম্পর্কযুক্ত। কিছু কিছু বিষয় যেমন, আবাসস্থল পরিবর্তন, স্কুল পরিবর্তন, প্রিয় কারো মৃত্যু, কিংবা বাবা মায়ের বিচ্ছেদ বা দাম্পত্য সম্পর্ক বা ইত্যাদি বাচ্চাদের ‘স্কুল রিফিউজাল’র প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। পুরো বিষয়টি যদি সঠিকভাবে পর্যালোচনার মাধ্যমে সমাধান করা না হয় তবে পরবর্তীতে শিশুর পড়াশোনার  ক্রমাবনতি, সমাজের কারো সঙ্গে মিশতে না পারা, পারিবারিক কোন্দলে জড়িয়ে যাওয়া, প্রাপ্তবয়সে নানান অনুভূতিজনিত মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার উদ্ভব হতে পারে।

স্কুল রিফিউজালের অন্যসব কারণের মধ্যে পারিবারিক কারণসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চার স্কুলে না যাওয়ার প্রবনতার সঙ্গে অভিভাবকের উদাসীনতাও অনেক ক্ষেত্রে দায়ী। তবে ক্ষেত্র বিশেষে অভিভাবকরা বাচ্চার কষ্টের কথা বিবেচণা করে কিছু বলেন না । তবে মোটা দাগে ৩টি বিষয় পারিবারিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ:

school
•    পারিবারিক সমন্বয়হীনতা বা নিয়মকানুনের বালাই না থাকায় বাচ্চাদের ‘স্কুল রিফিউজাল’ আরো বেগবান হয়। এছাড়া পরিবারে বাবা/মায়ের অনুপস্থিতি, অবজ্ঞা কিংবা নীরব দর্শকের ভূমিকার কারণেও তা হতে পারে।


•    অতি মাত্রায় বাচ্চার প্রতি আবেগ এক্ষেত্রে সমস্যা বাড়ায়। মা কখনো বাচ্চাকে কষ্ট দিতে চান না বা এমন আচরণ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন যা বাচ্চাকে তার প্রতি বিরুপ মনোভাব পোষণে সহায়তা করে  কিংবা অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চাকে কাছে রেখে মা খুশি এবং সুখী বোধ করেন। অনেক মা তার বাচ্চাকে গুরুত্বপূর্ণ এবং নাজুক ভাবেন ( প্রসবকালীন নানা জটীলতার পর বাচ্চা আরোগ্য লাভের ঘটনা থাকলে ) এবং সেক্ষেত্রে আগলে রাখার প্রবণতাটা প্রকট থাকে। এধরণের মনোভাব থেকেও ‘স্কুল রিফিউজাল’র প্রবণতা বাড়তে পারে।


•    স্কুলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বোঝাপড়া বা যোগাযোগের অভাব, স্কুলের নানা প্রতিকূলতা ( পাঠ্যসূচি সম্পাদন, schoolপড়াশোনার চাপ, সহপাঠীদের টিপ্পনি ) কে গুরুত্ব না দেওয়াও শিশুকে স্কুল বিমুখ করতে পারে।

নানা কারণে বাচ্চারা হয়ত স্কুলে যেতে চায় না। এক্ষেত্রে বাচ্চাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করে তাদের আদর করে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করা উচিত কেন সে স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। প্রয়োজনে স্কুলে গিয়ে শিক্ষক এবং বাচ্চার সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা যে তাদের সমস্যাটা আসলে কোথায়। মা-বাবা এবং শিক্ষকদের আন্তরিকতাই পারে স্কুলের প্রতি শিশুদের আগ্রহী করতে।