Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - mushfiq.swe

Pages: [1] 2 3 4
1
Meditation / কোয়ান্টাম মেথড
« on: April 25, 2019, 04:13:27 AM »
আচ্ছা, আপনি কি “কোয়ান্টাম” শব্দটি শুনেছেন? যদি শুনে থাকেন তবে নিশ্চয়ই ভাবছেন যে আমি এখনই “কোয়ান্টাম মেকানিক্সের” কথা বলব। আসলে ব্যাপারটি তা নয়। শিরোনামে কোয়ান্টাম শব্দটি থাকলেও আমার এই লেখার বিষয়বস্তু কিন্তু “কোয়ান্টাম মেকানিক্স” নয় বরং “কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন”। যারা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের নাম শুনেছেন তাদেরকে তো আর এটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আর যারা এর নাম শোনেননি বা এই ফাউন্ডেশন সম্পর্কে যাদের কোন ধারণা নেই- তাদের ঘাবড়ানোর কিছু নেই, এই লেখাটি পড়তে থাকুন – আশাকরি জানতে পারবেন। মনে প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক যে এই ফাউন্ডেশন নিয়ে এত বড় লেখা লিখার কী দরকার ছিল। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের বেশ কিছু ব্যাপার আমার কাছে গড়বর লাগছে। এত বেশি গড়বর লাগছে যে ব্যাপারগুলো আমার জন্য হজম করা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়েছে, এই লেখাটি সেই বদহজমেরই ফলাফল।

লেখার শুরুতেই কিছু ব্যাপার খোলসা করে বলে ফেলি। আমি বিজ্ঞানপ্রিয় একজন মানুষ, কোন বিজ্ঞানী নই। তাই একজন বিজ্ঞানীর চেয়ে আমার বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞান অনেক কম হবে সেটাই স্বাভাবিক। আমি আস্তিক এবং ধর্মবিশ্বাসে মনেপ্রাণে একজন মুসলিম, চেষ্টা করি জীবনের সব ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ মেনে চলতে, তবে আমি কোন মুসলিম পন্ডিত নই কিংবা ইসলাম নিয়ে আমার অগাধ জ্ঞান নেই। আমার এই লেখায় বিজ্ঞান ও ইসলাম নিয়ে যা কিছু চলে এসেছে তার সবই আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর এই সীমাবদ্ধতাকে পাকপোক্ত করার জন্য বিভিন্ন রেফারেন্স ও ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে রেফারেন্সগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে নাম্বার দিয়ে রেফারেন্সগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। মিলিয়ে দেখার সুবিধার জন্য রেফারেন্সগুলো তালিকা আকারে ডান পাশে ও উপরের মেনুতে উল্লেখ করা আছে। আর লেখায় ব্যবহৃত কোয়ান্টাম মেথড সংক্রান্ত সকল তথ্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট [১] এবং তাদের প্রকাশিত বিভিন্ন বই [২][৩] থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সবগুলো বইয়েরই সর্বশেষ সংস্করণ ব্যবহার করা হয়েছে.

Detail in https://quantummethodbd.wordpress.com/

2
Please have a Look on the following topics (of this section)! Important for this month!!
http://forum.daffodilvarsity.edu.bd/index.php/board,644.0.html

You are requested to give your valuable opinion in this poll and reply/comment in the posts!

3
Hadith / হাদীস শরীফে - পর্দা
« on: November 28, 2017, 11:49:29 PM »
পর্দা বিষয়ক কিছু হাদিস
১. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
নারী হল সতর তথা আবৃত থাকার বস্ত্ত। নিশ্চয়ই সে যখন ঘর থেকে  বের হয় তখন শয়তান তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে। আর সে যখন গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করে তখন সে আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে।-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী
এই হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়।
২. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে। (সহীহ বুখারী ৪/৬৩, হাদীস : ১৮৩৮)
কাযী আবু বকর ইবনে আরাবী বলেন, নারীর জন্য বোরকা দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত রাখা ফরয। তবে হজ্বের সময়টুকু এর ব্যতিক্রম। কেননা, এই সময় তারা ওড়নাটা চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিবে, চেহারার সাথে মিলিয়ে রাখবে না। পরপুরুষ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখবে এবং পুরুষরাও তাদের থেকে দূরে থাকবে। (আরিযাতুল আহওয়াযী ৪/৫৬)
৩. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত কাপড় ঝুলিয়ে রাখে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। তখন উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে মহিলারা তাদের কাপড়ের ঝুল  কীভাবে রাখবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক বিঘত ঝুলিয়ে রাখবে। উম্মে সালামা বললেন, এতে তো তাদের পা অনাবৃত থাকবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এক হাত ঝুলিয়ে রাখবে, এর বেশি নয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪১১৭; জামে তিরমিযী ৪/২২৩; সুনানে নাসাঈ ৮/২০৯; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১১/৮২
ইমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীসে নারীর জন্য কাপড় ঝুলিয়ে রাখার অবকাশ দেওয়া হয়েছে। কারণ এটিই তাদের জন্য অধিক আবৃতকারী।
৪. ওকবা ইবনে আমের জুহানী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-তোমরা নারীদের নিকট যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনসারী সাহাবী আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! স্বামী পক্ষীয় আত্মীয় সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি বললে, সে তো মৃত্যু। -সহীহ বুখারী ৯/২৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২১৭২; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৭১; মুসনাদে আহমাদ ৪/১৪৯, ১৫৩
এই হাদীসে বেগানা নারী-পুরুষের একান্ত অবস্থানকে নিষেধ করা হয়েছে এবং এ প্রসঙ্গে স্বামী পক্ষীয় আত্মীয়-স্বজন যেমন দেবর-ভাসুর ইত্যাদির সাথে অধিক সাবধানতা অবলম্বনকে অপরিহার্য করা হয়েছে।
৫. হযরত আয়েশা রা. ইফ্কের দীর্ঘ হাদীসে বলেছেন-আমি আমার স্থানে বসে ছিলাম একসময় আমার চোখ দুটি নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল এবং আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আসসুলামী ছিল বাহিনীর পিছনে আগমনকারী। সে যখন আমার অবস্থানস্থলের নিকট পৌছল তখন একজন ঘুমন্ত মানুষের আকৃতি দেখতে পেল। এরপর সে আমার নিকট এলে আমাকে চিনে ফেলল। কারণ পর্দা বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে সে আমাকে দেখেছিল। সে তখন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলে ওঠে, যার দরুণ আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং ওড়না দিয়ে নিজেকে আবৃত করে ফেলি।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, আমি ওড়না দিয়ে আমার চেহারা ঢেকে ফেলি।-সহীহ বুখারী ৫/৩২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৭৭০; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩১৭৯
৬.  উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম। উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা.ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম উপস্থিত হলেন। এটি ছিল পর্দা বিধানের পরের ঘটনা। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার সামনে থেকে সরে যাও। আমরা বললাম, তিনি তো অন্ধ, আমাদেরকে দেখছেন না?! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছ না?-সুনানে আবু দাউদ ৪/৩৬১, হাদীস : ৪১১২; জামে তিরমিযী ৫/১০২, হাদীস : ২৭৭৯; মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৬; শরহুল মুসলিম, নববী ১০/৯৭; ফাতহুল বারী ৯/২৪৮
৭. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম তখন আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা অতিক্রম করত। তারা যখন আমাদের সামনাসামনি চলে আসত তখন আমাদের সকলেই চেহারার ওপর ওড়না টেনে দিতাম। তারা চলে গেলে আবার তা সরিয়ে নিতাম।-মুসনাদে আহমাদ ৬/৩০; ইবনে মাজাহ,
হাদীস: ২৯৩৫
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখা আবশ্যক।
৮. আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, আমরা পুরুষদের সামনে মুখমন্ডল আবৃত করে রাখতাম। ...-মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৫৪
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, সাহাবা-যুগের সাধারণ মহিলারাও গায়র মাহরাম পুরুষ থেকে নিজেদের চেহারা আবৃত করতেন। কারণ আসমা বিনতে আবি বকর রা. এখানে বহুবচন ব্যবহার করেছেন। যা প্রমাণ করে উম্মুল মুমিনগণ ছাড়া অন্য নারীরাও তাদের মুখমন্ডল আবৃত রাখতেন।
৯. ফাতিমা বিনতে মুনযির রাহ. বলেন, আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রা.-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতাম।-মুয়াত্তা, ইমাম মালেক ১/৩২৮; মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৫৪
হযরত ওমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-যখনই কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে একান্তে সাক্ষাত করে তখন তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান।-জামে তিরমিযী
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, একজন মহিলা পর্দার পিছন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে একটি কাগজ দিতে চাইল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাত গুটিয়ে নিলেন (কাগজটি নিলেন না এবং) বললেন, আমি জানি না, এটা কি পুরুষের হাত না নারীর। মহিলা আরজ করলেন, ‘নারীর হাত।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি যদি নারী হতে তাহলে নিশ্চয়ই নখে মেহেদী থাকত।’-সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসায়ী
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, পীর-মুর্শিদ ও উস্তাদের সাথেও পর্দা করা অপরিহার্য।
হযরত উমাইমা বিনতে রুকাইকা রা. থেকে বাইয়াত সংক্রান্ত একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে যে, নারীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের প্রতি আমাদের নিজেদের চেয়েও মেহেরবান। সুতরাং আপনার হাত মোবারক দিন, আমরা বাইয়াত হই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি নারীদের সাথে হাত মিলাই না। (যা মুখে বলেছি তা মেনে চলাই তোমাদের জন্য অপরিহার্য)।-মুয়াত্তা মালিক
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আল্লাহর কসম! বাইয়াতের সময় তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) হাত কখনো কোনো নারীর হাত স্পর্শ করেনি। তিনি শুধু মুখে বলতেন, তোমাকে বাইয়াত করলাম।-সহীহ বুখারী ২/১০৭১
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
দুই শ্রেণীর দোযখী এখনও আমি দেখিনি। (কারণ তারা এখন নেই, ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশ করবে) এক শ্রেণী হচ্ছে ঐ সকল মানুষ, যাদের হাতে ষাঁড়ের লেজের মতো চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে। (দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে) ঐ সকল নারী, যারা হবে পোশাক পরিহিতা, নগ্ন, আকৃষ্ট ও আকৃষ্টকারী; তাদের মাথা হবে উটের হেলানো কুঁজের ন্যায়। এরা জান্নাতে যাবে না এবং জান্নাতের খুশবুও পাবে না অথচ জান্নাতের খুশবু তো এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে।-মুসলিম ২/২০৫, হাদীস : ২১২৮
এই হাদীসে বেপর্দা নারীদের প্রতি কঠিন হুঁশিয়ারি শোনানো হয়েছে। সুতরাং তাদের মৃত্যুর আগেই তাওবা করে পর্দার বিধানের দিকে ফিরে আসা কর্তব্য।
উপরের আলোচনা থেকে জানা গেল যে, হাদীস শরীফে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পর্দার বিধান দেওয়া হয়েছে। এই বিধান মেনে চলা সকল ঈমানদার নারী-পুরুষের জন্য অপরিহার্য।


http://www.alkawsar.com/topic/14?page=1

4
Quran / কুরআন শরীফে - পর্দার আয়াত
« on: November 28, 2017, 11:42:45 PM »
কুরআন শরীফে - পর্দার আয়াত সমূহ
নারী-পুরুষ উভয়ের পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায় হল ইসলামের পর্দা বা হিজাব বিধান। এই বিধানের অনুসরণের মাধ্যমেই হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। পর্দার এই সুফল স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن
  এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩)

পর্দা একটি কুরআনী বিধান। কুরআন মজীদের অনেকগুলো আয়াত পর্দা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। পর্দা ইসলামের ঐসকল বিধানের অন্যতম, যেগুলোর বিভিন্ন দিক বিস্তারিতভাবে কুরআন মজীদে আছে। তেমনি হাদীস শরীফেও এর আরো দিক পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে। তো পর্দার বিধান হচ্ছে ইসলামের একটি অটল ও অকাট্য বিধান।
 সুতরাং কোনো ঈমানদারের পক্ষে এই বিধানকে হালকা মনে করার সুযোগ নেই। এখানে কয়েকটি আয়াত সংক্ষিপ্ত আলোচনাসহ তুলে ধরা হল।

এক.
يا ايها النبى قل لازواجك وبناتك ونساء المؤمنين ...
  হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব : ৫৯)
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে ওড়না/চাদর টেনে স্বীয় মুখমন্ডল আবৃত করে। আর (চলাফেরার সুবিধার্থে) শুধু এক চোখ খোলা রাখে।-ফাতহুল বারী ৮/৫৪, ৭৬, ১১৪
ইবনে সীরিন বলেন, আমি (বিখ্যাত তাবেয়ী) আবীদা (সালমানী রাহ.)কে উক্ত আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, কাপড় দ্বারা মাথা ও চেহারা আবৃত করবে এবং এক চোখ খোলা রাখবে।

দুই.
واذا سألتموهن فسئلوهن من وراء حجاب ...
তোমরা তাঁদের (নবী পত্নীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। তোমাদের কারো জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া সংগত নয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা ঘোরতর অপরাধ। (সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩)

এই আয়াত থেকেও বোঝা যায়, নারীর দেহের কোনো অংশই পর্দা-বিধানের বাইরে নয়। উম্মুল মুমিনীনগণের আমলও তা প্রমাণ করে।
এই আয়াতে যখন পর্দার বিধানকে সাহাবায়ে কেরাম ও উম্মুল মুমিনীনদের জন্যও অধিকতর পবিত্রতার উপায় বলা হয়েছে তখন উম্মতের আর কে আছে যে এই বিধানের বাইরে থাকতে পারে?

তিন.
قل للمؤمنت يغضنن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن الا ما ظهر منها
তরজমা : (হে নবী!) মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আভরণ প্রদর্শন না করে। (সূরা নূর : ৩১)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, ‘সাধারণত যা প্রকাশিত’ অর্থ হচ্ছে কাপড়।-তাফসীরে তাবারী ১৮/১১৯
এই ব্যাখ্যা অনুসারে প্রতীয়মান হয় যে, গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে নারীর মুখমন্ডলসহ পূর্ণ দেহ আবৃত রাখা অপরিহার্য।

চার.
وليضربن بخمرهن على جيوبهن
তরজমা : তারা যেন গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। ... (সূরা নূর : ৩১)

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন,
يرحم الله نساء المهاجرات الأول، لما أنزل الله : وليضربن بخمرهن على جيوبهن شققن مورطهن فاختمرن بها.
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা প্রথম শ্রেণীর মুহাজির নারীদের প্রতি দয়া করুন। আল্লাহ তাআলা যখন
وليضربن بخمرهن على جيوبهن
আয়াত নাযিল করলেন তখন তারা নিজেদের চাদর ছিঁড়ে তা দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করেছিলেন।-সহীহ বুখারী ২/৭০০
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন-‘ফাখতামারনা’ অর্থ তারা মুখমন্ডল আবৃত করেছেন।-ফাতহুল বারী ৮/৩৪৭
আল্লামা আইনী রাহ. বলেন-‘ফাখতামারনা বিহা’ অর্থাৎ যে চাদর তারা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন তা দিয়ে নিজেদের মুখমন্ডল আবৃত করলেন। (উমদাতুল কারী ১৯/৯২)
আল্লামা শানকীতী রাহ. বলেন, এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, উপরোক্ত মহিলা সাহাবীগণ বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মুখমন্ডল আবৃত করারও আদেশ করেছেন। তাই তারা আল্লাহ তাআলার আদেশ পালনার্থে নিজেদের চাদর ছিঁড়ে তা দিয়ে মুখমন্ডল আবৃত করেছেন।

পাঁচ.
ولا يضربن بارجلهن ليعلم ما يخفين من زينتهن وتوبوا الى الله جميعا ايه المؤمنون لعلهم تفلحون
(তরজমা) তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর :  ৩১)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, পরপুরুষকে আকৃষ্ট করে এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকা ঈমানদার নারীর কর্তব্য। কারণ পরপুরুষকে নুপুরের আওয়াজ শোনানোর উদ্দেশ্যে সজোরে পদবিক্ষেপ যখন নিষেধ করা হয়েছে তখন যে সকল কাজ, ভঙ্গি ও আচরণ এর চেয়েও বেশি আকৃষ্ট করে তা নিষিদ্ধ হওয়া তো সহজেই বোঝা যায়। মুসলিম নারীদের জন্য এটি আল্লাহ রাববুল আলামীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।


http://www.alkawsar.com/topic/14?page=1

5
Prophet Muhammad SAW / Your view on Eid-e-MiladunNabi or Prophet Birthday
« on: November 28, 2017, 08:03:03 PM »
Please have a Look on the following topics (of this section)! Important for this month!!
http://forum.daffodilvarsity.edu.bd/index.php/board,644.0.html

6
বিশ্বজাহানের গৌরব, নবীকুল শিরোমনি বিশ্বশান্তির দূত হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পৃথিবীর প্রতিটি অণু-পরমাণুই তাঁর বিশ্বময় মর্যাদা এবং খ্যাতি ও মাহাত্মের সাক্ষী।
আরব-আজমের সর্দার, শ্রেষ্ঠ রাহবর হযরত মুহাম্মাদ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনন্য ব্যক্তিত্ব ও অনুপম জীবন আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত প্রতিটি যুগ ও স্থানজুড়েই ব্যাপৃত।
বিশ্বজাহানের সবকিছুই রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নবুওয়ত ও রিসালাতের সীমাহীন মাহাত্ম্য ও মাধুর্যের দ্বারা প্রভাবিত। পৃথিবীর প্রতিটি অণু-পরমাণুই তাঁর খ্যাতি ও মাহাত্মের সাক্ষী।
إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ     এবং وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ

এর চিত্তাকর্ষক ধ্বনি গোটা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে প্রতিধ্বনিত। সৃষ্টির সেই শ্রেষ্ঠ মানবের সম্মানিত নাম ‘মুহাম্মাদ’ রাসূলুল্লাহ। আর তাঁর খ্যাতি এতই সমুচ্চ যে, স্থান-কালের সকল উচ্চতা ও বুলন্দি এই পবিত্র নাম ও ব্যক্তিত্বের তুলনায় নেহাৎ তুচ্ছ। পাতাল-ভূমি থেকে উর্ধ্ব আরশ পর্যন্ত সবকিছুই তাঁর স্মরণে মুখর। এত উচ্চ মর্যাদা গোটা জগতে তিনি ছাড়া আর কেউ পায়নি। কেউ পাবেও না। এই অমোঘ সত্য কী সুন্দর করে বলেছেন কবি সাইয়েদ সাবীহ রাহমানী-
كوئى مثل مصطفى كا كبهى تها، نہ ہے، نہ ہوگا
كسى اور كا يہ رتبہ كبهى تها، نہ ہے، نہ ہوگا
অর্থ : মুস্তফা  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মতো কখনো কেউ ছিল না, এখনও নেই আর ভবিষ্যতেও হবে না।

এই মর্যাদা অন্য কারো কখনো ছিল না, এখনও নেই আর ভবিষ্যতেও হবে না।
প্রসিদ্ধ মুফাসসির আল্লামা সাইয়েদ মাহমুদ আলূসী রাহ. (১২৭ হি.)
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
এর তাফসীরে লেখেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদা ও সমুচ্চতা,  তাঁর অনুপম আদর্শ ও নামের খ্যাতি এর চেয়ে অধিক আর কী হবে যে, আল্লাহ তাআলা নিজের নামের সঙ্গে কালিমায়ে শাহাদাতে তাঁর প্রিয়তমের নামটিও যুক্ত করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য করাকে নিজেরই আনুগত্য ঘোষণা করেছেন। ফেরেশতাগণের সাথে তিনিও রাসূলের প্রতি দরূদ প্রেরণ করেছেন এবং মুমিনদেরকেও তাঁর প্রতি দরূদ পাঠের আদেশ দিয়েছেন। আর যখনই সম্বোধন করেছেন অতি সম্মানিত ও সুন্দর উপাধিসহ সম্বোধন করেছেন। যেমন, হে মুদ্দাছছির! (চাদর আবৃত), হে মুযযাম্মিল! (কম্বল আবৃত), হে প্রিয় নবী!, হে প্রিয় রাসূল! ইত্যাদি।
 
পূর্বের আসমানী কিতাবগুলোতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সপ্রশংস উল্লেখ করেছেন এবং সকল নবী ও উম্মত থেকে তাঁর প্রতি ঈমান আনার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন।
এক ঐতিহাসিক ও অনস্বীকার্য বাস্তবতা এই যে, ভূ-পৃষ্ঠে এমন কোনো অঞ্চল নেই, যেখানে দিনরাত সরওয়ারে দো আলম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাত ঘোষিত হয় না। চবিবশ ঘণ্টার ১৪৪০ মিনিটেই পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে, কোনো না কোনো অঞ্চলে আযানের ধ্বনি বাজতে থাকে।
 
আর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার নামের সাথে সৃষ্টির শ্রেষ্ট মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম উচ্চারিত হতে থাকে। সুতরাং তাঁর নামের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য এদিক থেকেও প্রোজ্জ্বল যে, আযানের ধ্বনি যতদিন পৃথিবীতে বাজবে ততদিন আল্লাহর নামের সাথে তাঁর প্রিয়তম পয়গম্বর, সাইয়্যেদুনা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র নামটিও প্রেমিক-হৃদয়ে সুধাবর্ষণ করবে।
 
আজও ধর্মহীনতার এই যুগে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সত্যসরল ধর্মের প্রচার ও তাঁর জীবনচরিত ও বাণী ব্যাপকতর করার প্রয়াস পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে অব্যাহত আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র নাম স্মরণ করে, তাঁর সপ্রশংস আলোচনা করে করে ও তাঁর অনন্য গুণ-বৈশিষ্ট্য শুনে হাজার কোটি মানুষের মনে যে আনন্দ ও প্রফুল্লতা অনুভূত হয় তা ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। আপন-পর নির্বিশেষে এমনকি বিরুদ্ধ শত্রুদেরও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ ছাড়া উপায় নেই।
যে পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে তা সামনে রেখে আয়াতটি তিলাওয়াত করলে নিঃসন্দেহে তিলাওয়াতের স্বাদ ও আনন্দ বহুগুণে বেড়ে যাবে। কুফর-শিরকের ঘোর অন্ধকার, গোটা দুনিয়াই তাঁর বিরুদ্ধে, মক্কার নামকরা সর্দাররা মুস্তফা-প্রদীপ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্বাপিত করার চেষ্টায় লিপ্ত ... এ অবস্থায় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।
কে তখন ভাবতে পেরেছিল যে, মক্কার এই এতীমের পবিত্র আলোচনা পৃথিবীর আনাচে-কানাচে উচ্চারিত হবে! তাঁর ধর্মের আলোয় সভ্য দুনিয়ার বিরাট অংশ আলোকিত হয়ে উঠবে এবং কোটি কোটি মানুষ তাঁর নামে জীবন বিসর্জন দেওয়াকে নিজের জন্য শতসহস্র গৌরব ও সৌভাগ্য বলে মনে করবে। কিন্তু আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর প্রিয় রাসূল ও সম্মানিত বান্দা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যে প্রতিশ্রুতি করেছিলেন তা তো সত্য হওয়ারই ছিল এবং তা সত্য হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত গোটা পৃথিবীর সপ্রশংস আলোচনায় তিনি সূর্যের মতো বিরাজ করবেন।

মাওলানা আবদুল মাজিদ দরয়াবাদী সুন্দর লিখেছেন, ‘স্রষ্টার সাথে যে সৃষ্টির নাম মুখে মুখে উচ্চারিত হয়, আল্লাহর নামের সাথে যে বান্দার নাম শ্রুতিগোচর হয় তা তো দুনিয়ার কায়সার বা কিসরার  নাম নয়, দুনিয়ার কোনো কবি-সাহিত্যিকের নাম নয়, কোনো বিদ্বান বা দার্শনিকের নাম নয়, কোনো নেতা বা সেনাপতির নাম নয়, তা কোনো ঋষি বা পাদ্রীরও নয়, এমনকি অন্য কোনো নবীরও নাম নয়। বরং তা হল আবদুল্লাহর কলিজার টুকরা, আমিনার চোখের মণি, বাতহার ভূমিতে জন্মগ্রহণকারী সেই উম্মি ও এতীমের।
কাশ্মিরের সবুজ ভূমিতে, দাকানের পাহাড়-পর্বতে, আফগানিস্তানের উঁচু ভূমিতে, হিমালয়ের চূড়ায়, গঙ্গার অববাহিকায়, চীন-জাপানে, বার্মা-রাশিয়ায়, মিসরে, ইরাক-ইরানে, ফিলিস্তিন ও আরবের বিস্তীর্ণ ভূমিতে, তুর্কী-নজদে, ইয়ামান-মরক্কোয়, ইস্তাম্বুলে, হিন্দুস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র-লন্ডন, প্যারিস ও বার্লিনেও বছর বা মাস নয়, প্রতি দিন পাঁচ বার সুউচ্চ মিনার থেকে স্রষ্টার নামের সাথে যে নাম ইথারে ছড়িয়ে পড়ে তা এমন এক মহান ও সম্মানিত সত্ত্বার নাম, যাকে অন্তর্দৃষ্টিহীন দুনিয়া একসময় শুধু এতীম বলেই জানত।  তো এ  হল এতীমের রাজত্ব, আর এই হল وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ  এর তাফসীর। কোনো নির্দিষ্ট গোত্র কিংবা প্রদেশ নয়; গোটা পৃথিবীর বুকে, পৃথিবীর হৃদয়ে আজ কারো হুকুমত থাকলে তা এই এতীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরই আছে, কোনো রাজত্ব থাকলে এই উম্মী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরই আছে।

সাহাবী হযরত আবু সায়ীদ খুদরী রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, একবার জিবরীল আমীন আ. আমার নিকট আগমন করলেন এবং বললেন, আমার ও আপনার রব আমাকে প্রশ্ন করেছেন যে, তিনি কীভাবে আপনার স্মরণ সমুচ্চ করেছেন? আমি আরয করলাম আল্লাহই ভালো জানেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, যখন আমার নাম উচ্চারণ করা হবে তখন আমার সাথে আপনার নামও উচ্চারণ হবে।-সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৩৮১; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ১৩৭৫
কবিতার ভাষায়-তাকবীরে-কালিমায়, নামাযে-আযানে/আল্লাহর নামের সাথে মিলেছে  মুহাম্মাদের নাম।

সুতরাং আজ এমন কোন অঞ্চল, এমন কোন মুহূর্ত আছে, যা হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্মরণ ছাড়া অতিবাহিত হয়?
এই পৃথিবীর দশদিকে ভূমির আঙ্গিক আবর্তনের সাথে সাথে প্রতি আযানে নাম উচ্চারিত হয়। উঁচু উঁচু মিনার থেকে সরওয়ারে কায়েনাতের সম্মানিত নামও খালেকে কায়েনাতের মহিমান্বিত নামের সাথে সমুচ্চ স্বরে উচ্চারিত হয়। জলে-স্থলে, শহরে-গ্রামে, জনবসতিতে-বিরাণভূমিতে, পাহাড়ের চূড়ায় সর্বত্র মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম উচ্চারিত হয়।
আরব-আজমের সর্দার, বিশ্বমানবতার রাহবার হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মোবারক নামে মুখরিত থাকে। ষ
অনুবাদ : আবদুল্লাহ ফাহাদ


http://www.alkawsar.com/article/1046

7

যে কোনও নির্মাণকার্যের জন্য নির্মাতাকে কোন মডেল বা আদলের অনুসরণ করতে হয়। অন্যথায় সে নির্মাণকার্য সুচারু হয় না। মডেল যত নিখুঁত ও পরিণত হয়, নির্মাণও সেই অনুপাতে পরিপূর্ণতা পায়। এটা যেমন স্থূল নির্মাণের ক্ষেত্রে সত্য, তেমনি সূক্ষ্ম নির্মাণও  এর ব্যতিক্রম নয়, বরং সেক্ষেত্রে নকশা-নমুনার অনুসরণ আরও বেশি জরুরি। বস্তুত বর্তমানে মডেলের গুরুত্ব বুঝিয়ে বলার কিছু প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কেননা এখন এটা একটা বাস্তব বিষয়। সাম্প্রতিক বিশ্বের প্রতিটি বিভাগ মডেলের উপর ভিত্তি করেই চলছে।

মডেলের যে এত সমাদর ও এত গুরুত্ব সে তো মানুষের বস্তুগত উন্নতিরই স্বার্থে। বস্তুগত উন্নতিও উন্নতি বটে এবং সে উন্নতির প্রয়োজনও নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য, কিন্তু সেই উন্নতি যার স্বার্থে, সেই মানুষের নিজের উৎকর্ষ তো আরও বেশি প্রয়োজনীয়। কেননা মানুষ যদি সুশীল ও সুকুমারমতি না হয়, সে যদি উৎকর্ষমন্ডিত ও সর্বাঙ্গসুন্দর না হয়, তবে বস্তুগত উন্নতি তার সমূহ দুর্ভোগের কারণ হতে পারে। অধুনা বিশ্বকে কি আমরা সেই রকমের দুর্ভোগে জেরবার হতে দেখছি না?

বস্তুগত উন্নতির জন্য যদি মডেলের অনুসরণ প্রয়োজনীয় হয়, তবে মানুষের মানবিক উৎকর্ষের জন্য কেন মডেলের দরকার হবে না? নিঃসন্দেহে দরকার। যুগ-যুগান্তরের আলোকিত মানুষেরা কোন না কোন মডেল তথা আদর্শস্থানীয় ব্যক্তির অনুসরণ করেই নিজেদের জীবনে বিপ্লব এনেছেন। এটাই জীবন গড়ার আসল পন্থা। অনুকরণীয় ব্যক্তির অনুসরণ ছাড়া কারও পক্ষেই নিজেকে আদর্শ মানুষ রূপে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। কেননা যতক্ষণ না সামনে সে রকম কোন ব্যক্তি থাকে ততক্ষণ নিজ ত্রুটি ও কমতি দৃষ্টিগোচর হয় না। অনুকরণীয় ও পরিণত মানুষ অপরের পক্ষে দর্পণস্বরূপ। সে দর্পণের সামনে যারা নিজেদের তুলে ধরে, তারা তাদের অভাব নিরূপণে সক্ষম হয়। এরপর সে অভাব মোচন করতে জীবনকে ঋদ্ধ করে তোলার দিশা পায়।

আম্বিয়ায়ে কেরাম স্ব-স্ব যুগে মানুষের জীবন গড়ার মডেল হিসেবে দুনিয়ায় আগমন করেছিলেন। এ ধারার সর্বশেষ আদর্শ হচ্ছেন শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি মানুষের জীবন রচনার জন্য নিজেকে এক নিখুঁত ও পরিপূর্ণ নকশা হিসেবে জগদ্বাসীর সামনে পেশ করেছিলেন। সে নকশা দেখে যারা নিজেদের গড়ার চেষ্টা করেছেন, তারা সোনার মানুষে পরিণত হয়েছেন। তার শরীরী সত্তা ইহলোক থেকে বিদায় নিয়ে গেছে বটে, কিন্তু তাঁর আদর্শিক সত্তার কোন মৃত্যু নেই। কিয়ামতকাল পর্যন্ত তার অনির্বাণ জীবনাদর্শ মানুষকে তাদের চলার পথের দিশা দিয়ে যাবে। মানুষের কর্তব্য তাঁকে পাঠ করা।
হ্যাঁ প্রিয় পাঠক! আপনি জীবনে অনেক কিছুই পড়ে থাকবেন। আরও অনেক পড়বেন এবং পড়তেই হবে। কেননা জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্য পাঠের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু সেই পাঠের ভেতর আপনার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং সেটা আপনার জীবন নির্মাণের স্বার্থে। আমরা জীবনের মাত্র কয়েকটা ক্ষেত্রে এই প্রয়োজনীয়তার ব্যাখ্যা তুলে ধরছি।

বহিরঙ্গের পরিপাট্যের জন্য
একজন সভ্য-ভব্য ও সুন্দর মানুষ হতে হলে বাহ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রসাধন অপরিহার্য। অপরাপর গুণাবলি যতই উচ্চমানের হোক, যদি বহিরঙ্গ পরিপাটি না হয়, তবে সে মানুষ কখনই সভ্যজনদের মধ্যে গণ্য হতে পারে না। বহিরঙ্গের সৌন্দর্য আনয়নের জন্য চাই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিচর্যা তথা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, চুল-দাড়ির কাট ও বিন্যাস, নখ ও বাড়তি পশমের সাফাই, আতর ও সুগন্ধি ব্যবহার ইত্যাদি। সেই সঙ্গে মার্জিত পোশাক-আশাকও এর এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। কিন্তু রুচিবোধের পার্থক্য, স্থান-কাল ও পরিবেশ-পরিস্থিতির তারতম্য, আত্মমর্যাদাবোধের অভাব, হীনম্মন্যতা ও অনুকরণ-প্রবণতা ইত্যাদি কারণে এক্ষেত্রে নানা রকমের ঢং-ঢাং পরিলক্ষিত হয়, যার অধিকাংশই ভদ্রজনোচিত নয়। আপনি যদি এক্ষেত্রে একজন সুন্দরতম মানুষ হিসেবে নিজেকে অলঙ্কৃত করতে চান, তবে সকল ভদ্রের সেরা ভদ্র মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীগ্রন্থ পাঠ করুন। সেখানেই আপনি পাবেন সুন্দরতম অঙ্গসজ্জা ও শ্রেষ্ঠতম বেশবিন্যাস, যার অনুসরণ আপনাকে করে তুলবে সুদর্শন ও মার্জিত এবং বুদ্ধিদীপ্ত ও রাশভারী।

অন্তর্জগত আলোকিত করার জন্য
বহিরঙ্গের চেয়ে মনোজগতই মানুষের বেশি দামি, বরং এটাই তার প্রকৃত সারবত্তা। এটা বহু গুণের লালন ক্ষেত্র, বিপুল সম্ভাবনার বিচিত্র ভুবন। এ ভুবনের চাষাবাদ, প্রাত্ন-পরিচর্যা দ্বারা একজন  মানুষ লোক থেকে লোকোত্তর পুরুষে পরিণত হতে পারে। আবার অবহেলা অনাদরের ফলে এখানে এতটা আগাছা ও পাশববৃত্তির জন্ম নেয়, যা মানুষকে পরিণত করতে পারে হিংস্রতম হায়েনায়। কিন্তু আফসোস! আজকে এদিকটা নিদারুণভাবে উপেক্ষিত। মানুষের সর্বাত্মক চেষ্টা ব্যয় হচ্ছে বস্তুগত উন্নতির পেছনে। সে আজ তার শারীরিক চাহিদা ও পাশববৃত্তি  চরিতার্থ করার প্রতিযোগিতায় উন্মাতাল আর যে প্রতিযোগিতার যূপকাষ্ঠে বলি হচ্ছে তার সুকুমারবৃত্তিসমূহ। এভাবে ঘটছে মানুষের মানবিক আত্মহনন।
প্রিয় পাঠক! আমাদেরকে এই সর্বনাশা প্রবণতা পরিহার করে মানবিকতার চর্চায় মন দিতে হবে। প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে অন্তর্লোকে নিহিত গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে হবে। তা কোথায় পাব সে পথের দিশা? হ্যাঁ, নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনচরিত। সেখানে পাওয়া যাবে উত্তম চরিত্রের বিকশিত রূপ পরিপূর্ণ মাত্রায়।
আপনি আখেরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠ করুন। যেখানে পাবেন সত্যবাদিতা, সাহসিকতা, কোমলতা, দৃঢ়তা, বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহানুভূতি-সহমর্মিতা, কল্যাণকামিতা, বদান্যতা, ধৈর্য- সহিষ্ণুতা, স্নেহ-মমতা, পরমত সহিষ্ণুতা, আত্মসচেতনতা, আল্লাহর প্রতি পরম আস্থা, আপন কাজে নিষ্ঠা ও অবিচলতা, ন্যায়ের প্রতি আনুকূল্য, অন্যায়ের প্রতি বজ্র-কাঠিন্য, অটুট মনোবল, নিঃস্বার্থ ত্যাগ-তিতিক্ষা। মোদ্দাকথা উন্নত চরিত্রের সকল উপাদান।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনচরিতের এ অধ্যায় নিঃসন্দেহে তার আগ্রহী পাঠককে উন্নত ও মহৎ চরিত্রের পথনির্দেশ করে এবং কালক্ষেপণ না করে অবিলম্বে তার অনুশীলনে অনুপ্রাণিত করে। সুতরাং নিজের ভেতর উন্নত চরিত্রের বিকাশ সাধনের লক্ষ্যে প্রতিটি মানুষের উচিত সীরাত পাঠকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গুরুত্ব দেওয়া।

আচার-আচরণকে শিষ্টতাপূর্ণ করার জন্য
সমাজবদ্ধ প্রাণী হওয়ার কারণে মানুষের পক্ষে আচার-আচরণের শিষ্টতা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মার্জিত আচরণ শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করে, পরকে আপনার করে তোলে এবং সমাজে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করে। পক্ষান্তরে অশিষ্ট আচরণ এর বিপরীত ফল আনয়ন করে, যা মানবসমাজের পক্ষে কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। কিন্তু সমাজে কি সেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিই বিরাজ করছে না? এবং আমাদের শিষ্টতা-বর্জিত আচরণ কি সে পরিস্থিতির জন্য বহুলাংশে দায়ী নয়? সুতরাং আমাদের সংশোধন দরকার। সর্বস্তরের মানুষের উচিত নিজের আচার-আচরণকে মার্জিত ও পরিশীলিত করে তোলা। আর নিঃসন্দেহে সে মার্জিত ব্যবহারের সবক পাওয়া যাবে সীরাত গ্রন্থে। মজলিসে কীভাবে বসতে হবে, আগন্তুককে কীভাবে বিদায় জানাতে হয়, আগন্তুককে কীভাবে সম্বোধন করতে হবে, অতিথিকে কীভাবে বিদায় জানাতে হয়, পথচারী আপনার কাছে কী ব্যবহার চায়, সাথী-সঙ্গী ও ছোট-বড় ভেদে আচরণের কী তারতম্য হওয়া দরকার, ইশারা-ইংগিতের প্রয়োগ কী রকম হওয়া চাই, প্রশ্ন ও উত্তরের ধরণ-ধারণ কেমন হওয়া বাঞ্ছনীয়, ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক ধারণা লাভের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীগ্রন্থ পাঠ করতে হবে।

বিশুদ্ধভাষী ও সদালাপী হওয়ার জন্য
সীরাত পাঠ মানুষকে শুদ্ধ ভাষা শিখতে উদ্বুদ্ধ করে এবং সদালাপী হতে উৎসাহ যোগায়। সীরাতের একজন আগ্রহী পাঠক দেখতে পায়, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাতে বিশুদ্ধ ভাষা শিখতে পারেন, তাঁর শৈশবে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। জীবনভর তিনি বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলেছেন। তাঁর মুখের ভাষা আরবী সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। তাঁর সান্নিধ্যে যারা এসেছেন, তাদেরকেও সুন্দর ও বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে উৎসাহিত করেছেন। তাঁর ভাষা হত সুস্পষ্ট, বাহুল্যবর্জিত ও সহজবোধ্য। তাঁর মধুর ভাষণ শ্রোতাকে মুগ্ধ ও আকৃষ্ট করত। চরম বিদ্বিষ্ট ব্যক্তি পর্যন্ত তার বচন শুনে চমৎকৃত হত। ভাষার রুঢ়তা তিনি পছন্দ করতেন না। গালমন্দ ও অশ্লীলতা তার ভাষায় ঠাঁই পেত না। একদিকে তাঁর স্নিগ্ধ ভাষা হতদরিদ্র বেদুঈন বৃদ্ধার হৃদয় সঞ্জীবিত করত, অন্যদিকে তার শাণিত তেজস্বী বাক্যে দুর্দান্ত আরব্য সর্দারের অন্তরাত্মা প্রকম্পিত হত।
বস্তুত ভাষা আল্লাহ তাআলার কুদরতের এক অনন্য নিদর্শন। এর দ্বারা কেবল মনের ভাবই ব্যক্ত হয় না, এর কার্যকরিতা বহুবিধ। এর কাছে তরবারি হার মানে, যাদু মানে বশ। প্রয়োজন শুধু মোক্ষম ব্যবহারের। অন্তরে সেই তাগিদ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রত্যেকের উচিত সীরাত গ্রন্থসমূহকে নিজের জন্য অবশ্যপাঠ্য করে নেওয়া।

চরিত্রের ভারসাম্য সৃষ্টির জন্য
বলা হয়ে থাকে সবকিছুতে মধ্যম পন্থাই শ্রেষ্ঠ, প্রান্তিক কর্মপন্থা ও একদেশদর্শী মানসিকতা সকলের কাছেই নিন্দনীয়। কাউকে ভালবাসবেন, তো সে ভালবাসার একটা মাত্রা থাকা চাই। আবার সংগত কোন কারণে কারও সাথে শত্রুতা সৃষ্টি হলে, সে শত্রুতাও যেন সীমা না হারায়। অর্থোপার্জন করুন, কিন্তু  উন্মত্ত হয়ে নয়, আবার বিত্তে নিরাসক্তিও যেন বৈরাগ্যে পর্যবসিত না হয়। এমনিভাবে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও পরিমিতি রক্ষা করা চাই। ব্যয়কুণ্ঠা যেমন দোষ, তেমনি অমিতব্যয়ও প্রশংসনীয় কিছু নয়।
মোটকথা আহার-বিহার, আনন্দ-বিপদ, পরিশ্রম ও বিশ্রাম সবকিছুতেই মধ্যমপন্থা অবলম্বন জীবনের পক্ষে সুখকর। কিন্তু আমরা কি করছি? সকল ক্ষেত্রেই আমরা কি প্রান্তিক আচারে অভ্যস্ত নই? আমরা যখন আনন্দ করি তখন সম্পূর্ণ বেসামাল হয়ে যাই, আবার যখন অবসাদে পায়, তখন সম্পূর্ণ অকর্মণ্য হয়ে পড়ি। জীবনের সকল ভুবনেই আমরা প্রচন্ড অমিতাচারী। তাই যে সুখের সন্ধানে আমরা ভবঘুরে, কিছুতেই তার নাগাল পাই না। ব্যর্থ ও পরাস্ত জীবনের বোঝা বয়ে বেড়াই আমৃত্যু। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে জীবনের সমস্ত আচার-আচরণে ভারসাম্য সৃষ্টি করতে হবে। অভ্যস্ত হতে হবে মধ্যমপন্থায় চলতে। আর সে শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাতে। তাই সফল জীবনের প্রত্যাশীকে সীরাত পাঠে মনোযোগী হতে হবে।

আদর্শ পেশাজীবী হওয়ার জন্য
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটা অর্থনৈতিক জীবন ছিল, যেমন আমাদেরও আছে। আমরা জীবন নির্বাহের জন্য বিভিন্ন রকমের পেশা অবলম্বন করে থাকি। চাকরি-বাকরি, চাষাবাদ, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি পন্থায় আমরা অর্থোপার্জন করি। এসকল ক্ষেত্রে আমরা সৎ ও আদর্শ জীবনের প্রতিভূ কি না, তা যাচাই করতে হলে আমাদেরকে সীরাত পাঠ করতে হবে এবং সেই মুকুরে নিজেদের চেহারা দেখতে হবে।
দায়িত্বসচেতন হওয়ার জন্য
মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের উপর নানাবিধ দায়-দায়িত্ব অর্পিত আছে। পারিবারিক, নৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় প্রভৃতি। এসব দায়-দায়িত্বের প্রতি আমরা খুব কমই সচেতন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমরা নিজ দায়িত্ব পালনে উদাসীন থেকে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে মেতে উঠি। বরং সাম্প্রতিক বিশ্বের সর্বাঙ্গন অধিকার আদায়ের আন্দোলনে মুখরিত। অথচ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ আপন আপন দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠাবান থাকলে এসব হিংসাত্মক তৎপরতার কোন প্রয়োজন থাকত না। যে ব্যক্তি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন-চরিত পাঠ করবে, সে নিঃসন্দেহে এই সত্য মরমে মরমে উপলব্ধি করবে। তাঁর গোটা জীবনই ছিল দায়িত্ব সচেতনতার মূর্ত-প্রতীক।

দেখুন, আর সকলের মত তাঁরও ছিল পরিবার-পরিজন। স্ত্রী-পুত্র-কন্যা পরিবৃত একটি পারিবারিক জীবন তিনি যাপন করতেন। এমনিভাবে তাঁর ছিল আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী; ছিল একটি বৃহত্তর সমাজ এবং একটি রাষ্ট্র। যেমন আমাদেরও আছে। তা তিনি কেমন স্বামী ও পিতা ছিলেন? আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর সঙ্গে তাঁর আচরণ কেমন ছিল? এ সকল ক্ষেত্রে একজন দায়িত্ববান মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে তাঁর জীবনের এ সকল অধ্যায় আপনাকে পড়তে হবে। এমনিভাবে রাষ্ট্র ও সমাজ, এমনকি জীব-জন্তু ও পরিবেশ বৈচিত্রের প্রতি আমাদের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, সে ব্যাপারে জাগ্রত-চিত্ত হওয়ার জন্য সীরাতগ্রন্থের পাতা উল্টানো অপরিহার্য। এসকল ক্ষেত্রে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরিত জীবন নিঃসন্দেহে আপনার আমার দায়িত্ববোধকে আন্দোলিত করবে।

সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি আস্থা ও মনোবল সৃষ্টির জন্য
মানবজীবন আগাগোড়াই সংগ্রাম। সর্বাবস্থায় তাকে প্রতিকূল হাওয়ার মধ্যে চলতে হয়। কোন ক্ষেত্রেই তার যাত্রা পথ অবাধ নয়। দেহ-মনের প্রতিপালন, চিন্তা-চেতনা ও আদর্শের লালন, অর্থোপার্জন, সহায়-সম্পত্তির সংরক্ষণ, সভ্যতা-সংস্কৃতির নির্মাণ তথা জীবন-ভুবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষকে একের পর এক লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। নিরন্তর লড়াই নিঃসন্দেহে ক্লান্তিকর। তদুপরি এ লড়াই কখনও এমন ঘোরতর হয়ে ওঠে এবং প্রতিপক্ষ এতটাই শক্তিশালী হয়ে আসে, যার সামনে তিষ্ঠানোই দায় হয়ে পড়ে। এরকম পরিস্থিতিতে নিজ অবস্থান ধরে রাখার জন্য দরকার আল্লাহর প্রতি চরম আস্থা ও দুর্দমনীয় মনোবলের। এরকম আস্থা ও মনোবলের পরাকাষ্ঠা দেখা যায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শে। আবূ তালিব উপত্যকার অবরুদ্ধ জীবন, তায়েফ সফর, হিজরত, হামরাউল-আসাদ ও হুনায়নের যুদ্ধ প্রভৃতি ঘটনা পাঠ করে দেখুন আল্লাহ তাআলার প্রতি আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের এমন নযীর আপনি কোথাও খুঁজে পাবেন না। এসব ঘটনার ভেতর আপনার জীবন-যুদ্ধের রসদ পেয়ে যাবেন। সুতরাং সীরাত পাঠ করুন। আল্লাহ তাআলার প্রতি অবিচল আস্থাশীল হয়ে উঠুন। হৃদয়ে অটুট মনোবল সঞ্চার করুন।

শোকে-দুঃখে সান্ত্বনা লাভের জন্য
জীবনে যেমন প্রাপ্তি-সুখ আছে, তেমনি আছে বিয়োগবেদনাও। জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ একদিকে সুখের অগণ্য উপকরণ লাভ করে, অন্যদিকে সেইগুলোই সে একটি একটি করে হারাতে থাকে। এটা প্রকৃতির সাধারণ নিয়ম। কিন্তু যতই সাধারণ নিয়ম হোক, লব্ধ জিনিস কেউ হারাতে চায় না। তার সাথে একটা প্রীতির বন্ধন গড়ে ওঠে। সে বন্ধনের বিচ্ছেদ কারও কাছেই কাঙ্ক্ষিত নয়। তাই প্রকৃতির সাধারণ ধারায় যখন তা হারিয়ে যায়, তখন হৃদয়ে দুঃখ জাগে, মানুষ শোকাহত হয়।
জন্মাবধি মানুষ কত কি যে হারায় তার কোন ইয়ত্তা আছে? অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, শক্তি-সামর্থ্য, ধন-মান, পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন কত কি! এর কোনোটাই কম দামি নয়। কোনটা অমূল্য। একের পর এক এ সবের বিয়োগ-ব্যথা মানুষকে জর্জরিত করে। কখনও প্রচন্ড শোকে হৃদয় মুহ্যমান হয়ে পড়ে। সেই কাতর অবস্থায় আত্ম-সংবরণের জন্য দরকার আশ্বাস বাক্যের, চাই সান্ত্বনা; অন্যথায় মানব জীবন বিকল ও স্থবির হয়ে পড়ে। অনেক সময় সাংঘাতিক রকমের দুর্ঘটনাও ঘটে যায়, যার প্রতিকারের কোন উপায় থাকে না। তা কোথায় পাওয়া যাবে সেই সর্ব-শোক-হারক সান্তবনা? নিঃসন্দেহে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন-চরিতে। তাঁর জীবনেও বহু দুঃখ-বেদনা এসেছে। অনেক বড় আকারে এসেছে। কত রকমে যে তাকে দুঃখ-জর্জরিত হতে হয়েছে সীরাত-পাঠকের তা অজানা নয়।
আল্লাহ তাআলার এই সর্বপ্রিয় হাবীবকে যখন দুঃখ পোহাতে হয়েছে, তখন আপনাকে আমাকেও পোহাতে হবে বৈকি। এটা আমাদের পক্ষে সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা।

প্রিয় পাঠক! মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাতগ্রন্থ পাঠের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এটা একটা সংক্ষিপ্ত সারণী মাত্র। তাঁর গোটা জীবনই আপনার-আমার জীবন রচনার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। কুরআন মাজীদের ভাষায়-
 لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآَخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا ‘‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তার জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’’-সূরা আহযাব : ২১
আসুন, তাঁর সে আদর্শ জানার লক্ষ্যে আমরা সীরাতবিষয়ক গ্রন্থসমূহ পাঠ করি এবং তার আলোকে নিজেদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি।


(আলকাউসার রবিউল আউয়াল ১৪২৬; এপ্রিল ২০০৫ সংখ্যা থেকে পুনর্মুদ্রিত)

http://www.alkawsar.com/article/1240

8
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক বিস্ময়কর মনীষার উদাহরণ পাওয়া যায় যাদের চিন্তা-চেতনা ও দর্শন সারা পৃথিবীতে বিস্তার লাভ করেছে এবং যাদেরকে তাদের স্বতন্ত্র আদর্শ ও কৃতিত্বের কারণে মানুষ আজো শ্রদ্ধা ও ভক্তির সাথে স্মরণ করে থাকে। এইসব মহামানবদের কারো কারো জ্ঞান ও প্রতিভা সরাসরি ‘ওহিয়ে এলাহী’ থেকে আহরিত ও উৎসারিত আর কারো গ্রহণযোগ্যতা ও প্রতিভা তার নিজস্ব চিন্তা, দর্শন এবং রুচি ও হিকমতের ফসল।

দুজাহানের সর্দার, রাসূলে রহমত, মুহাম্মাদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এইসব মহান ব্যক্তিদের মাঝেও পরিপূর্ণ ও সুমহান ব্যক্তিত্ব। যার পূর্ণতা ও বিশ্বজনীনতা অন্যদের চেয়ে ভিন্ন, যা কোন যুগ, জীবন ও ভৌগলিক সীমানা ছাড়িয়ে জগতের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়ে আছে। জলে-স্থলে, আপন ও পর সকলে তার থেকে উপকৃত হয়েছে এবং হচ্ছে বরং কেয়ামত পর্যন্ত এই ‘ফায়জান’ জারি থাকবে। ইনশা আল্লাহ।

এই মহামানবের শান ও মর্যাদা, জগৎখ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতার স্বাতন্ত্র ও ভিন্নতার এটিও এক বিরাট দলিল যে, আজ পর্যন্ত তার মুবারক ব্যক্তিত্বকে যে পরিমাণ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সাথে দেখা হয় তার শতভাগের একভাগও অন্য কারো ভাগ্যে জুটেনি!

নবুওতে মুহাম্মাদীর জন্য এগুলো এক মু’জিযাস্বরূপ যে, আজ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি কথা, প্রতিটি কাজ, প্রতিটি নড়াচড়া ও ইশারা, সর্বোপরি জনতায় ও নির্জনতায় তাঁর একেকটি ভাব ও ভাষার নমুনা পৃথিবীতে রয়েছে! তাঁর উঠাবসা, চলাফেরা, জীবনযাপন, পোশাক-পরিচ্ছেদ, খানা-পিনা ও চেহারা-সূরত ইত্যাদি সকল কিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা সীরাতের পাতায় পাতায় রয়েছে। সীরাত সংকলকগণ অত্যন্ত আমানতদারির সাথে তা সংরক্ষণ করেছেন এবং আজো সীরাতের সংকলন, চর্চা ও অধ্যয়ন অব্যাহত রয়েছে।

সীরাত অধ্যয়নের ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি
সীরাত অধ্যয়নের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। কারণ একজন মুসলমানের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুবারক সীরাত অধ্যয়ন শুধু জ্ঞান বা জ্ঞানবৃদ্ধির বিষয়ই নয়, এটা তার দ্বীনী প্রয়োজন।
...
...
...
শেষ কথা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অতুলনীয় জীবন-পদ্ধতি ও শিক্ষা দেখতে দেখতেই মানবজাতির রূপ বদলে গিয়েছে। তেইশ বছরের সংক্ষিপ্ত সময়ে আরব ভূখন্ডের মূর্খ, অশিক্ষিত, উসৃঙ্খল, দ্বন্দ্ববাজ এবং  নারীদের জ্যান্ত কবর দানকারী মানুষেরা, একটি সুশৃঙ্খল, সুশিক্ষিত, চরিত্রবান, আদর্শবান, শান্তিপ্রিয় এবং মানুষের অধিকার রক্ষাকারী জাতিতে পরিণত হয়েছিল।
আজও প্রয়োজন সেই সীরাতে নববীর বাণীকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা। যদি বর্তমান বিশ্ব বাস্তবিক পক্ষেই বস্ত্তগত উন্নয়নের সাথে সাথে চারিত্রিক ও আত্মিক উন্নতি চায় এবং মানুষকে একটি নিরাপদ ও সুন্দর জীবন উপহার দেওয়ার স্বপ্ন দেখে তাহলে অবশ্যই রাসূলের আদর্শকে চোখের মণি বানিয়ে চলতে হবে। কারণ, বর্তমান সমস্যার সমাধান একমাত্র সীরাতে নববীর মধ্যেই রয়েছে।


http://www.alkawsar.com/article/851

9
অনেক সময় সাধারণ মানুষের আবেগ-অনুভূতির দিকে লক্ষ্য করে কিংবা কোনো বাস্তবতা বোঝানো কঠিন মনে হলে অনেকে চুপ থাকার পথ বেছে নেন। অথবা দু’ একবার বলে চুপ হয়ে যান। এটা এ কারণে অনুচিত যে, এতে প্রকৃত বিষয় মানুষের অজানা থেকে যাবে এবং ভুল কথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।

ঈদ ইসলামের শাখাগত বিষয় নয়। এটি দ্বীনের ‘শিআর’ তথা প্রতীকের অন্তর্ভুক্ত এবং এমন একটি বিষয়, যা সম্পূর্ণরূপে শরীয়তের নির্ধারণ ও নির্দেশনার উপর নির্ভরশীল (أمر تعبدي وتوقيفي )। অর্থাৎ এটি শুধু বিবেকবুদ্ধি ও কিয়াস দ্বারা অনুধাবন করা যায় না। সরাসরি শরীয়তদাতার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট আদেশ দ্বারাই বিধিত হয়। এজন্য সুন্নতে মুতাওয়ারাসা, স্পষ্ট হাদীস ও ইজমায়ে উম্মতের বিপরীতে তৃতীয় ঈদ আবিষ্কার একটি গর্হিত বিদআত ও মারাত্মক বিকৃতি। ইসলামে কি তৃতীয় কোনো ঈদ আছে?

আর এখন তো বিষয়টি শুধু এই নয় যে, একটি বিদআতকে সুন্নতের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে সম্মিলিতভাবে উদযাপন করা হচ্ছে; বরং এটিকে বানানো হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহববতের মাপকাঠি ও প্রতীক। অথচ শরীয়ত বলে সুন্নাহর অনুসরণ, উসওয়ায়ে হাসানাহ অনুযায়ী জীবনযাপন, সুন্নতকে যিন্দা করা ও বিদআত নির্মূল করার মেহনত হচ্ছে মুহববতের মাপকাঠি ও নিদর্শন।

সাদাচোখে এটি কারো কাছে সামান্য বিষয় মনে হলেও বাস্তবে তা একটি মারাত্মক চিন্তাগত বিকৃতি। আর এই নবআবিষ্কৃত ‘ঈদ’কে জশনে জুলুস আকারে পালন করতে গিয়ে যেসব গর্হিত কাজ, আচরণ ও ভিত্তিহীন বর্ণনার আশ্রয় নেওয়া হয় সে বিষয় তো রইলই।

মনে রাখা উচিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হকসমূহ আদায় করা থেকে উদাসীন হয়ে অন্যায় পন্থায় হক আদায়ের বাহানার দ্বারা নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া নিজের প্রতি ও গোটা উম্মতের প্রতি মারাত্মক জুলুম। আল্লাহ তাআলার নিকট দাবি নয়, আমল গ্রহণযোগ্য। বাহ্যিক চাকচিক্য নয়, অন্তরের তাকওয়াই তাঁর নিকট পৌঁছে। বিদআত নয়, শুধু সুন্নতই তাঁর নিকট বরণীয়।

একটু ভেবে দেখুন, যে নাসারাদের পথ থেকে আমরা সূরায়ে ফাতিহায় প্রতিদিন কমপক্ষে বিশবার আল্লাহ তাআলার নিকট ولا الضالين   বলে আশ্রয় প্রার্থনা করি তাদের থেকে নেওয়া রসম-রেওয়াজে কি উম্মতের কোনো কল্যাণ থাকতে পারে?
اهدنا الصراط المستقيم، صراط الذين انعمت عليهم غير المغضوب عليهم ولا الضالين



http://www.alkawsar.com/article/579

10
ইসলামে মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধের গুরুত্ব
মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

বিদ‘আতের উৎপত্তি যেভাবে হয়
মাত্রাজ্ঞানের অভাব থেকেই উম্মতের মধ্যে নানারকম রসম-রেওয়াজ ও বিদ‘আতের সৃষ্টি হয়েছে। কুফর ও শিরকের পর বিদ‘আতই ইসলামে সর্বাপেক্ষা নিন্দনীয় জিনিস। এর উদ্ভাবক ও অনুসারী নিজের জন্য ছওয়াবের পরিবর্তে লানত ও অভিশাপই কুড়িয়ে থাকে। হাদীস মতে জাহান্নামই বিদ‘আতের শেষ ঠিকানা। সব বিদ‘আত গোমরাহী আর সব গোমরাহীর ঠাঁই জাহান্নামে।

এহেন নিকৃষ্ট জিনিসের জন্ম হয় বাড়াবাড়ি থেকেই। কেবল মুবাহ ও বৈধ স্তরের জিনিসকে এক শ্রেণীর মানুষ খেয়াল-খুশী ও ভাবাবেগের বশবর্তীতে সুন্নত-ওয়াজিবের মত গুরুত্ব দিয়ে বসে। তারা সেই গুরুত্বের সাথে নিজেরাও তা পালন করে এবং অন্যদেরকেও পালন করতে উৎসাহিত ও ক্ষেত্র-বিশেষে বাধ্য পর্যন্ত করে। ফলে যা মূলত দীনের অংশ নয় তা দীনের একটি অংশরূপে পরিচিতি পায় কিংবা যা দীনের যেই স্তরের নয় সেই স্তরের একটি কাজরূপে ধরে নেওয়া হয়। এভাবে পূর্ণাঙ্গ দীনের ভেতর নবসংযোজনরূপে বিদ‘আতের অনুপ্রবেশ ঘটে।

সুতরাং প্রচলিত মীলাদ, ১২ই রবীউল আউওয়ালে ঈদে মীলাদুন নবী উৎযাপন, মৃত ব্যক্তির জন্য চল্লিশা, হযরত আব্দুল কাদের জীলানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মৃত্যু দিবস (ফাতেহায়ে ইয়াযদহম) পালন, বুযুর্গানে দীনের কবরে ওরশ ইত্যাদি মৌলিক বৈধ বিষয়সমূহে এক শ্রেণীর মানুষ মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে এগুলোকে দীনের অংশ বানিয়ে ফেলেছে। তাদের দৃষ্টিতে এসব কাজ ফরয-ওয়াজিব অপেক্ষা কম কিছু নয়। এহেন বাড়াবাড়ির কারণে এসব কাজ তার মূল বৈধতা হারিয়ে বিদ‘আত ও নিষিদ্ধ কাজে পর্যবসিত হয়েছে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্পষ্ট ঘোষণা ‘কেউ আমাদের দীনে যদি এমন কোন নতুন বিষয়ের উদ্ভাবন করে, যা এ দীনের অংশ নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৬৯৭) বলাবাহুল্য এ জাতীয় বাড়াবাড়ি দ্বারা প্রকারান্তরে দীনের ভেতর নতুন উদ্ভাবনই ঘটানো হয়। যা কেবলই বৈধ, তাকে ওয়াজিব ও জরুরি সাব্যস্ত করার দ্বারা দীনে নতুন এক ওয়াজিবেরই কি জন্মদান করা হয় না?

প্রচলিত মীলাদের প্রতি লক্ষ করুন না, এতে যে দরূদ শরীফ পড়া হয়, মৌলিকভাবে তা একটি বৈধ কাজই তো; বরং তা অতি বড় পুণ্য ও বরকতের কাজ। কিন্তু শরীআত এর জন্য নির্দিষ্ট কোন পদ্ধতি দান করেনি এবং সাধারণ অবস্থায় তা পড়াও ওয়াজিব করেনি। বিষয়টা কেবলই ঐচ্ছিক। যে পড়বে সে প্রভূত ছওয়াবের অধিকারী হবে, না পড়লে কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু প্রচলিত মীলাদে দরূদ শরীফ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-নীতি তৈরি করে নেওয়া হয়েছে। সে নিয়মে না পড়লে যেন দরূদ শরীফই পড়া হয় না এবং তা যেন মহাঅপরাধ।
প্রচলিত নিয়মের সেই মীলাদ এখন এমনই এক বাধ্যতামূলক কাজ হয়ে গেছে যে, কেউ তা না করলে সে এর প্রবক্তাদের দৃষ্টিতে দীন থেকে খারিজ হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুশমন হয়ে যায়। যে কারণে তাকে কেবল ব্যঙ্গ-বিদ্রুপই নয় আরও নানাভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

এমনিভাবে মৃত ব্যক্তির জন্য যে চল্লিশা করা হয়, তাতে মূলত যে কাজটি করা হয়, অর্থাৎ মানুষজনকে খাওয়ানো, মৌলিকভাবে তাও একটি বৈধ ও ছওয়াবের কাজ। কিন্তু মৃত ব্যক্তির কল্যাণার্থে এভাবে খানা খাওয়ানো বা কাঙালীভোজ দেওয়া কোন ফরয-ওয়াজিব কাজ নয় কিছুতেই। এটা সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক বিষয়। কিন্তু বিষয়টাকে এ স্তরে রাখা হয়নি; বরং এটাকে সামাজিকভাবে এমন আবশ্যকীয়  কাজে পরিণত করা হয়েছে যে, কেউ পালন না করলে সে নিন্দা-সমালোচনার পাত্র হয়ে যায়। যেন সে শরীআতের মস্ত বড় এক হুকুম অমান্য করেছে। এহেন বাড়াবাড়িই মৌলিক এ বৈধ কাজটিকে নিষিদ্ধ বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত করেছে।

মোটকথা এ রকম আরও যেসব কাজ মৌলিকভাবে বৈধ হওয়া সত্ত্বেও এখন তা বিদ‘আত ও নিষিদ্ধ হয়ে গেছে এবং কুরআন-সুন্নাহর মূলনীতি অনুযায়ী তা গুনাহের কাজে পরিণত হয়েছে, তার এ অবস্থান্তরের জন্য মানুষের বাড়াবাড়িই দায়ী। বৈধ কাজকে তার আপন স্থান থেকে সরিযে কার্যত আবশ্যিকতার স্তরে পৌঁছানোর বাড়াবাড়িতেই তা অবৈধতায় পর্যবসিত হয়েছে। আজ মুসলিম সমাজে যত বিদ‘আত প্রচলিত মূলত এ জাতীয় বাড়াবাড়ি থেকেই তার উৎপত্তি।

(বহুল সংক্ষেপিত)

বিস্তারিত দেখুনঃ
http://www.alkawsar.com/article/987

11
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর ঈমান আনার অর্থই হল, তাঁর নীতি ও সুন্নাহকে আমরা নিজেদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করছি। আল্লাহ তাআলা এজন্যই রাসূল প্রেরণ করেছেন যে, আল্লাহর আদেশে তাঁর অনুসরণ করা হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وما ارسلنا من رسول الا ليطاع باذن الله
 (তরজমা) আমি রাসূল এই উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তার আনুগত্য করা হবে।-সূরা নিসা (৪) : ৬৪

আল্লাহ তাআলার নিকট বান্দা তখনই মুমিন সাব্যস্ত হয় যখন সে রাসূলকে নিজের সকল বিষয়ের সিদ্ধান্তদাতা (হাকাম) বলে স্বীকার করে এবং তাঁর সকল সিদ্ধান্ত মনেপ্রাণে মেনে নেয়। সকল দ্বিধা ও সংশয় ত্যাগ করে তাঁর ফয়সালার সামনে নিজেকে পুরোপুরি সমর্পিত করে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
فلا وربك لا يؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم، ثم لا يجدوا فى انفسهم حرجا مما قضيت ويسلموا تسليما.
   (তরজমা) কিন্তু না, আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসংবাদের বিচারভার আপনার উপর অর্পণ না করে; অতপর আপনার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদের মনে কোনো দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়।-সূরা নিসা (৪) : ৬৫

মুমিনকে আল্লাহ তাআলা একটি ব্যবস্থাই দিয়েছেন, যাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে আল্লাহর নিকট কোনো কিছু আশা করার পূর্বশর্ত। আর তা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত ব্যবস্থা ও তাঁর পবিত্র জীবনাদর্শ।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة لمن كان يرجو الله واليوم الآخر وذكر الله كثيرا.
 (তরজমা) তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।-সূরা আহযাব (৩৩) : ২১

এই উত্তম আদর্শ দ্বারা ঐ জীবনাদর্শই উদ্দেশ্য, যা সূরায়ে জাসিয়ায় এভাবে বলা হয়েছে-
ثم جلعنك على شريعة من الامر فاتبعها ولا تتبع اهواء الذين لا يعلمون. انهم لن يغنوا عنك من الله شيئا وان الظلمين بعضهم اولياء لبعض والله ولى المتقين هذا بصائر للناس وهدى ورحمة لقوم يوقنون.
 (তরজমা)  এরপর আমি আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ বিধানের উপর। সুতরাং আপনি তা অনুসরণ করুন। অজ্ঞদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না।
আল্লাহর মুকাবিলায় তারা আপনার কোনো উপকার করতে পারবে না। যালিমরা একে অপরের বন্ধু আর আল্লাহ তো মুত্তাকীদের বন্ধু।
এই কুরআন মানবজাতির জন্য সুস্পষ্ট দলিল এবং নিশ্চিত বিশ্বাসী জাতির জন্য পথনির্দেশ ও রহমত।-সূরা জাসিয়াহ (৪৫) : ১৮-২০

কালিমায়ে তাওহীদ ও কালিমায়ে শাহাদতে আমরা এই শরীয়ত ও এই আদর্শকে সত্যতা ও যথার্থতার স্বাক্ষ্য দেই এবং মনেপ্রাণে তা কবুল করার ঘোষণা দান করি। এজন্য আমাদের উপর ফরয, এই আদর্শের আলোকে  আমাদের পুরো জীবন, জীবনের প্রতিটি অঙ্গনকে যাচাই করা। অতপর যেখানেই ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা দেখা যায় সংশোধনের চেষ্টা করা।
আজ সময়ের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন এই যে, আমরা প্রত্যেকে এবং সমাজের প্রতিটি শ্রেণী নিজের জীবন ও কর্মকে সেই ‘উসওয়ায়ে হাসানা’র মাপকাঠিতে যাচাই করব ও নিজেকে সংশোধন করব। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সীরাতের চর্চা সেভাবেই করব যেভাবে সাহাবায়ে কেরাম করতেন।

সীরাতে নববিয়্যাহ সম্পর্কে আমাদের অবস্থা সাহাবায়ে কেরামের অবস্থা থেকে ভিন্ন থেকে ভিন্নতর হতে চলেছে। বিশেষত নিম্নের বিষয়গুলোতে -
১. সঠিক জ্ঞান
২. ঈমান ও নির্ভরতা
৩. শ্রদ্ধা ও ভালবাসা
৪. নিজ জীবনে প্রয়োগ
৫. সুন্নতকে জীবিত করা ও বিদআতকে ঘৃণা করা
৬. নিজ সন্তান, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জন্য তা-ই পছন্দ করা
৭. শুধু একটিমাত্র মাপকাঠি
৮. সুন্নাহর ভিন্নতা কিংবা ইজতিহাদের ভিন্নতায় অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা
৯. ঐক্য ও প্রাধান্যের ক্ষেত্রে ধর্মীয় দূরদর্শিতার ব্যবহার
১০. পূর্ণ নির্ভরতা ও তাৎক্ষণিক আমল

এখানে পূর্ণ ঘটনা ও দৃষ্টান্ত উল্লেখ না করেই অতি সংক্ষেপে শুধু দশটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল। উদ্দেশ্য নিজেকে ও পাঠকবৃন্দকে স্মরণ করানো।
আল্লাহ তাআলা তাওফীক দিলে এই বিষয়ে দলিল-প্রমাণ ও ঘটনা-বর্ণনার আলোকে আলাদা নিবন্ধ লিখার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ।

(বহুল সংক্ষেপিত)

বিস্তারিত দেখুনঃ
http://www.alkawsar.com/article/571

12
বেরলভী মতবাদ : ভিত্তিহীন আকীদা ও ভ্রান্ত ধ্যানধারণা

বেরলভী[1]জামাত যাদেরকে রেজাখানী বা রেজভীও বলা হয়, যারা নিজেদেরকে সুন্নী বা আহলে সুন্নাত বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। তাদের অনেক ভিত্তিহীন আকীদা, ভ্রান্ত ধ্যানধারণা ও মনগড়া রসম-রেওয়ায রয়েছে। খুব সংক্ষেপে তার একটি তালিকা এখানে তুলে ধরা হল।
 
ভিত্তিহীন আকীদা
১. গায়রুল্লাহর জন্য ইলমে গায়েবের আকীদা
২. হাযির-নাযির শীর্ষক আকীদা
৩. মোখতারে কুল শীর্ষক আকীদা
৪. নূর-বাশার শীর্ষক আকীদা
৫. কবর পূজা ও অন্যান্য র্শিক

ভ্রান্ত ধ্যানধারণা ও বিদআত ও কুসংস্কারের পক্ষপাত
১. ঈদে মিলাদুন্নবী নামে ইসলামে নতুন ঈদের আবিষ্কার।
২. রসমী মিলাদকেই দ্বীন মনে করা।
৩. উরস করা।
৪. মাজার পাকা করা ও তার উপর গম্বুজ নির্মাণ করা।
৫. কবরে বাতি জ্বালানো।
৬. কবরের উপর চাদর বিছানো ও ফুল ছড়ানো।
৭. মাযারে এক ধরনের মু‘তাকিফ বনে থাকা।
৮. জানাযার পরে দুআর রসম।
৯. কবরের উপরে আযান দেওয়ার রসম।
১০. আযান ও ইকামতে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলার সময় বৃদ্ধাঙ্গুল চুম্বন করে উভয় চোখে লাগানো।
১১. ঈসালে সাওয়াবের জন্য কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করে বিনিময় গ্রহণ করাকে বৈধ মনে করা।
১২. খাবার সামনে নিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে ফাতেহা পড়ার রসম।
১৩. আযানের পূর্বে দুরূদ ও সালামের রসম।

বেরলভী উলামা ও মাশায়েখের কিতাবাদী উল্লেখিত বেদআতসমূহের পক্ষপাতপূর্ণ। এর অধিকাংশ বিষয়ের উল্লেখ তো তাদের প্রসিদ্ধ বই ‘জা-আল হকে’ রয়েছে। এ ছাড়াও মৌলভী আব্দুস সামী‘ সাহেবের লেখা ‘আনওয়ারে সাতেআ’ও দেখা যেতে পারে। আর ঐ সমস্ত বিষয় বিদআত হওয়ার প্রমাণাদী জানতে চাইলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কিতাবাদী দেখুন। উদাহরণস্বরূপ:
১. আল জুন্নাহ্ লি আহলিস সুন্নাহ, মুফতী আব্দুল গণি, সাবেক ছদরে মুদাররিস, মাদারাসায়ে আমিনীয়া দিল্লী।
২. বারাহীনে কাতিআহ, মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী।
৩. ইসলাহুর রুসূম, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী।
৪. রাহে সুন্নাত, মাওলানা সরফরায খান।
৫. ইখতেলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাকীম, মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ লুধিয়ানবী।

এ সংক্ষিপ্ত তালিকায় কয়েকটি মাত্র বিষয়ের উল্লেখ করা হল। বেরলভী মতবাদ সম্পর্কে আরো অধিক জানতে হলে পড়তে পারেন ডা. খালেদ মাহমুদ লিখিত ‘মুতালাআয়ে বেরলভিয়্যাত’ যা অনেক আগেই ছেপে এসেছে। এ গ্রন্থটি বেরলভী মতবাদ সম্পর্কে একটি বিশ্বকোষ যা ঐতিহাসিক তথ্য ও প্রমাণ সমৃদ্ধ।
আর زلزله বইয়ের মিথ্যা অপবাদসমূহের স্বরূপ জানার জন্য পড়ুন : মাওলানা মুহাম্মাদ আরেফ সাম্ভলী নদভী কৃত
 بريلوي فتنہ كا نيا روپ

উল্লেখ্য, বেরলভী ঘরানার কোনো কোনো আলেম এসব শিরক ও বিদআতের অনেক কিছুরই প্রতিবাদ করেছেন।[2] কিন্তু বেরলভী জনসাধারণের উপর তাদের বিশেষ কোনো প্রভাব লক্ষ করা যায় না। কত ভালো হত যদি অন্যান্য বেরলভী আলেমগণও এ আলেমগণের সমর্থন করতেন এবং তাদের চিন্তাগুলো প্রচার করার চেষ্টা করতেন। এ প্রসঙ্গে আমরা পাকিস্তানের বেরলভী ঘরানার প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম নাঈমিয়া করাচীর শাইখুল হাদীস আল্লামা গোলাম রাসূল সাঈদীর কথা উল্লেখ করতে পারি। তার কিতাব শরহে সহীহ মুসলিম সাত খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এতে তিনি ‘ইলমে গাইব’, ‘নূর ও বাশার’, ‘গায়রুল্লাহর জন্য মান্নত’ ইত্যাদি বিষয়ে বেরলভীদের মাঝে প্রচলিত ধ্যানধারণার বিপরীত মতামতকেই দলীলসহ সমর্থন করেছেন।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين
বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
___
[1] ইমাম মুজাহিদ হযরত মাওলানা সায়্যেদ আহমাদ শহীদ বেরলভী (জন্ম ১২০১ হি.- শাহাদত ১২৪৬ হি.) রায়বেরেলীর অধিবাসী ছিলেন। এজন্য তিনিও ‘বেরলভী’বলে প্রসিদ্ধ। কিন্তু আহমদ রেযা খান সাহেব (জন্ম: ১২৭২ হি. মোতাবেক ১৮৫৬ খৃ. মৃত্যু: ১৩৪০ হি. মোতাবেক ১৯২১ খৃ.) রায়বেরেলীর নয় বরং ‘বেরেলীর’অধিবাসী ছিলেন। তাকে বেরলভী বলা হয় বেরেলী এলাকার হিসেবে। বেরলভী জামাত তারই অনুসারী। (আবদুল মালেক)

[2] গায়রুল্লাহর জন্য ‘সিজদায়ে তাহিয়্যা’ বা সম্মানের সেজদা হারাম হওয়ার বিষয়ে আহমদ রেযা খান সাহেবের স্বতন্ত্র পুস্তিকা রয়েছে। যার নাম الزبدة الزكية لتحريم سجود التحية কিন্তু এ পুস্তিকার কোনো প্রভাব মাযারপন্থী বেরলভীদের মাঝে পরিলক্ষিত হয় না।
(বহুল সংক্ষেপিত)

বিস্তারিত দেখুনঃ

http://www.alkawsar.com/article/1847

13
প্রশ্ন:
আমাদের এলাকায় মৃতের রূহের মাগফিরাত কামনার উদ্দেশ্যে তিন, সাত, একুশ ও চল্লিশ ইত্যাদি তারিখে কুরআন খতম, মিলাদ ও দুআর অনুষ্ঠান করা হয় এবং জাঁক-জমকের সাথে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়, যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে বোঝা যায় না যে, রূহের মাগফিরাত না, বিবাহর অনুষ্ঠান। এ ধরনের অনুষ্ঠানে আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, গ্রামবাসী ও এলাকার বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিবর্গ, যেমন চেয়ারম্যান, মেম্বার, মাতবর, পার্টির নেতাসহ সবাইকে দাওয়াত করা হয়। এমনকি অনুষ্ঠানের দিন-ক্ষণ পর্যন্ত দৈনিক পত্রিকায় ঘোষণা করা হয়। যা আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় তামদারী, মজলিস, বেপার, ফয়তা, মিদুনী ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়। যে এলাকাতে যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, উদ্দেশ্যে অভিন্ন।
একশ্রেণীর আলেম এ ধরনের অনুষ্ঠান যথারীতি করে যাচ্ছেন। আরেক শ্রেণীর আলেম এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। ভালো মন্দ কিছুই বলেন না। আরেক শ্রেণীর আলেম এই অনুষ্ঠানগুলোকে বিদআত ও নাজায়েয বলে থাকেন। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। কোনটা সহীহ আর কোনটা ভুল তা পার্থক্য করতে পারছে না। এখন প্রশ্ন এই যে, এই পদ্ধতি শরীয়তসম্মত কি না। সহীহ পদ্ধতি কোনটা তা জানালে আমরা বিভ্রান্তির বেড়াজাল হতে বের হয়ে সেভাবে আমল করার জন্য সচেষ্ট থাকব।

উত্তর:
মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের জন্য দুআ করা এবং বিভিন্ন নফল ইবাদত যেমন-দান-সদকা, তাসবীহ-তাহলীল, তেলাওয়াত ইত্যাদি করে তার সওয়াব মৃতকে পৌঁছানো গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল, যা হাদীস শরীফের বহু দলীল দ্বারা প্রমাণিত। তবে এটি একটি ব্যক্তিগত আমল। কোনো দিন-তারিখ ও আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই যখন ইচ্ছা তখনই এ আমল করা যায়।

কিন্তু বর্তমানে এই সহজ আমলটিকে আনুষ্ঠানিক রূপ দান করে অনেক ক্ষেত্রেই তাকে সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহের কাজে রূপান্তর করা হয়ে থাকে। যেমন-

১. তিন দিনা, সাত দিনা,একইশা, চল্লিশা এ সকল নামে এ অনুষ্ঠান যথাক্রমে মৃত্যুর ৩য়, ৭ম, ২১ শ ও ৪০ তম তারিখে করাকে জরুরি মনে করা হয় বা কমপক্ষে এরূপ ধারণা রাখা হয় যে, এ তারিখগুলোর বিশেষত্ব রয়েছে। অথচ শরয়ী দলীল-প্রমাণ ছাড়া বিশেষ দিন-তারিখ নির্ধারণ করে নেওয়া বিদআত ও নাজায়েয।

২. ঈসালে সাওয়াবের প্রচলিত পন্থায় আরেকটি বড় আপত্তিকর দিক হল এতে যিয়াফত তথা আড়ম্বরপূর্ণ দাওয়াত অনুষ্ঠানকেই ঈসালে সওয়াবের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। অথচ শরীয়র্তে যিয়াফতের আয়োজনের কথা তো আছে আনন্দের মুহূতে, মুসিবতের মুহূর্তে নয়। হাদীস শরীফে এসেছে-হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ আলবাজালী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (তরজমা) ‘আমরা (সাহাবাগণ) দাফনের পর মৃতকে কেন্দ্র করে সমবেত হওয়া ও খাবারের আয়োজন করাকে ‘নিয়াহা’ বলে গণ্য করতাম।’ (মুসনাদে আহমদ ২/২০৪; ইবনে মাজাহ ১৬১২)
কোনো দিন-তারিখ নির্ধারিত না করে গরীব-মিসকীনদেরকে খানা খাওয়ানোটাও ঈসালে সাওয়াবের একটি বৈধ পন্থা। কিন্তু এমন যিয়াফতের আয়োজন করা যাতে অনেক ক্ষেত্রে সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদেরকে  প্রাধান্য দেওয়া হয় এটি আদৌ ঈসালে সাওয়াবের গ্রহণযোগ্য পন্থা নয়।

৩. হাফেযদের দ্বারা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন খতম করা হয়। অথচ এক্ষেত্রে কুরআন পড়ার বিনিময় দেওয়া-নেওয়া নাজায়েয।

৪. অনেক ক্ষেত্রেই এর ব্যয়ভার নির্বাহ করা হয় মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া এজমালী সম্পদ থেকে, ওয়ারিশদের মাঝে কোনো নাবালেগ থাকলেও তার সম্পদ বাদ দেওয়া হয় না। অথচ নাবালেগের সম্পদ তার অনুমতি নিয়েও খরচ করা নাজায়েয। এমনিভাবে বালেগ ওয়ারিশদের ক্ষেত্রেও এটা লক্ষ রাখা হয় না যে, তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুমতি আছে কি না।

৫. এ ধরনের অনুষ্ঠান অনেক ক্ষেত্রেই লোক দেখানোর জন্য বা সামাজিক রেওয়াজে প্রভাবিত হয়ে করা হয়। এটাও নাজায়েয। শরীয়ত বিরোধী এ জাতীয় আরো কর্মকান্ড এসব অনুষ্ঠানে হয়ে থাকে। ফলে এর দ্বারা মৃত ব্যক্তির উপকার হওয়া তো দূরের কথা উল্টো ব্যবস্থাকারীগণ গুনাহগার হয়ে থাকে।
সুতরাং ঈসালে সাওয়াবের প্রশ্নোক্ত পন্থা সম্পূর্ণরূপে পরিহারযোগ্য। মৃতের মাগফিরাত কামনা ও তাকে সাওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগতভাবে দান-সদকা, তেলাওয়াত, যিকির-আযকার ও নফল ইবাদতই যথেষ্ট এবং এটাই করণীয়। আর নির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখের অপেক্ষা না করে নিজ নিজ তাওফীক অনুযায়ী এগুলো মাঝে মধ্যেই করা দরকার। দান-সদকা করার ক্ষেত্রে গরীব দুঃখীদেরকে নগদে প্রদান করা ভালো এবং সদকায়ে জারিয়া হয় এমন খাতে ব্যয় করা উত্তম।

-মুসনাদে আহমদ ২/২০৪; ইবনে মাজাহ পৃ. ১১৭; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/১৭০; শিফাউল আলীল ১/১৭৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/৮১; রদ্দুল মুহতার ২/২৪০


http://www.alkawsar.com/issue/2009/03/section/question-answer?page=7

14
কিছুদিন আগে এক ব্যক্তি ফোন করে বললেন যে, জনৈক বিদআতপন্থী প্রচলিত মিলাদের সমর্থনে বলেছে যে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. নাকি প্রতি বছর মিলাদ করতেন।একবার মিলাদের জন্য তার কাছে খরচপাতি ছিল না তো স্বপ্নে দেখলেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলছেন, কিছু না থাকলে খেজুর দিয়েই মিলাদ কর!!
ওই ব্যক্তি জানতে চাচ্ছিলেন যে, এই রেওয়ায়েত সহীহ কি না এবং তা কোন কিতাবে আছে।

আমি তাকে বললাম, ভাই, এটা তো একদম তাজা বানানো গল্প। মওজু রেওয়ায়েতের কিতাবসমূহেও আপনি তা পাবেন না।
কে না জানে যে, প্রচলিত মিলাদ নবী-যুগ ও খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবা-যুগের শত শত বছর পরে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অনুকরণে শুরু হয়েছে। অতএব এর আলোচনা তো কোনো সহীহ হাদীসের কিতাবে থাকা সম্ভবই নয়।
বিদআতপন্থীদের এই নতুন সৃষ্ট রেওয়ায়েতটি থেকেও বোঝা যায় যে, তাঁদের কাছে মিলাদ মাহফিলের সবচেয়ে বড় বিষয় হল খাবার-দাবার এবং জশন-জুলুস।
অথচ এটা সবাই জানেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মবৃত্তান্ত ও তাঁর পবিত্র সীরাত আলোচনা দ্বীনের একটা জরুরি আমল, যেটা যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে হতে পারে। আর এর জন্য খরচপাতিরও প্রয়োজন নেই, অতএব অর্থ না থাকার কারণে তা থেকে বিরত থাকা বা বঞ্চিত থাকার প্রশ্নই সৃষ্টি হয় না।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নবীপ্রেমের সঠিক অর্থ বোঝার এবং তার হক আদায় করার তাওফীক দান করুন।
আমাদেরকে কথার উম্মত না বানিয়ে কাজের উম্মত বানিয়ে দিন। আমীন।


http://www.alkawsar.com/article/1381

15
আজ উম্মত কোথায়, আর উম্মতের নবী কোথায়! আজ উম্মতের জীবন কোথায়, আর নবীর সুন্নত কোথায়! আজ উম্মতের দিল আর নবীর মুহাববাত কোথায়! জীবন থেকে নবীর সুন্নত হারিয়ে গেছে এবং হৃদয় থেকে মুছে গেছে নবী-প্রেম। এখন শুধু আছে রাজপথের জশনেজুলূস, আছে মিলাদুন্নবী নামের জন্মোৎসব, কিংবা সীরাতুন্নবী নামের আলোচনা। হায়রে উম্মত, তোমার নবী কি এজন্য এসেছিলেন দুনিয়ায়? তুমি কি এজন্যই আসো প্রতিবছর এই পবিত্র ভূমিতে?
হঠাৎ যেন আমার ভিতরের আমি আমাকে প্রশ্ন করে বসলো তিরস্কারের সুরে, তুমি! তুমি কেন এসেছো এ পবিত্র ভূমিতে, এখানে এই পবিত্র ঘরের দুয়ারে?
আমি নির্বাক!
ভিতরের আমি যেন আমাকে বললো, এখানে এই পবিত্র ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আজ শপথ নাও, যত দিন বেঁচে থাকবে নবীর সুন্নতের উপর অবিচল থাকবে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে নবীর সুন্নতকে যিন্দা করার মেহনতে নিবেদিত থাকবে। নবীর শাফা‘আত লাভের এবং আবে কাউছারের পেয়ালা হাছিলের এছাড়া অন্য কোন পথ নেই।
পবিত্র কক্ষের দ্বারপ্রান্তে এসেছিলাম অভূতপূর্ব এক ভাবতন্ময়তা নিয়ে, এখান থেকে বিদায় নিলাম নতুন এক ভাবনা ও চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে।


http://www.alkawsar.com/article/1385

Pages: [1] 2 3 4