Daffodil International University

Faculties and Departments => Business Administration => Business & Entrepreneurship => MBA Discussion Forum => Topic started by: MD. ABDUR ROUF on September 25, 2018, 12:05:36 PM

Title: ত্রীকে খুশি করতে শিশুটিকে পিটিয়ে রাখতেন টয়লেটে
Post by: MD. ABDUR ROUF on September 25, 2018, 12:05:36 PM
স্ত্রীকে খুশি রাখতে কাজের ভুল ধরে শিশু গৃহকর্মী আল-আমিনকে উঁচু করে মাথায় তুলে আছাড় মারা হতো। অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত লাঠি দিয়ে পেটানো হতো। এরপর টয়লেটের ভিতর ফেলে দরজা বন্ধ করে রাখা হতো। জ্ঞান ফিরলে জুটত পচা খাবার। টানা ছয় মাস ধরে গৃহকর্মী আল আমিনের (১২) ওপর মধ্যযুগীয় এমন বর্বরতা চালিয়ে গৃহকর্ত্রী ও গৃহকর্তা পৈশাচিক আনন্দ পেতেন। এ রকম নির্যাতন করেও সাধ মেটেনি তাদের। পরে ঘাড় মটকে আল-আমিনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আদাবর থানায় গৃহকর্তা শেখ জোবায়ের আলম ও গৃহকর্ত্রী সাইয়েদা রহমান তমার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। এ মামলার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অভিযোগপত্রে উঠে আসে এসব তথ্য। গতকাল এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু কারাগার থেকে আসামি আদালতে হাজির না করায় ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল আমিন বিপ্লব আগামী ২৪ অক্টোবর নতুন তারিখ ধার্য করেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার সাব-ইন্সপেক্টর মনিরুজ্জামান মনি আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, স্ত্রীকে খুশি রাখতে গৃহকর্তা আসামি শেখ জোবায়ের আলমও ভিকটিম আল-আমিনকে মারধর করতেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন অনাহারে, অনিদ্রায়, অসুস্থ হয়ে ঠিকভাবে কাজ করতে না পারায় আসামিরা নির্মমভাবে মারধর করে আল-আমিনকে মেরে ফেলেন। বিচারকের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি সাইয়েদা রহমান তমা বলেন, ‘ঘটনার পাঁচ মাস আগে রাজধানীর আদাবরের শেখের টেকের ৪ নম্বর রোড, ২৩/২৫ নম্বর বাসায় আমার স্বামী আল-আমিন নামের একটি ছেলেকে গৃহস্থালির কাজের জন্য নিয়ে আসে। আল-আমিন সঠিকভাবে কাজ না করায় তাকে আমি মাঝেমধ্যে স্টিলের স্কেল ও লাঠি দিয়ে মারধর করতাম। এ ছাড়া তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য রাতে বাথরুমে রেখে দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে দিতাম। আমাদের ফ্ল্যাটে দুটো বাথরুমের একটিতে ওকে আটকে রাখতাম এবং অন্যটি আমরা সবাই ব্যবহার করতাম। ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আল-আমিনকে রান্নাঘরে কাজ করার নির্দেশ দিলে সে সঠিকভাবে কাজ না করায় আমি তাকে মারধর করি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সে বাচ্চার ফিডার পরিষ্কার করতে গিয়ে ফেলে দেয়। তখন আমি আবারও তাকে মারধর করি। আমার স্বামী এগিয়ে এসে আল-আমিনকে উঁচুতে তুলে মেঝেতে আছাড় মারে। আল-আমিন গিয়ে ময়লার ঝুড়ির ওপর পড়ে। মারধরের ফলে আল-আমিনের আগের জখমে আঘাত লেগে রক্ত ঝরতে থাকে। তার শরীরের রক্ত ও ময়লা ধোয়ার জন্য আমার স্বামী তাকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে রক্ত ও ময়লা পরিষ্কার করে। পরে বাথরুমের সামনে ভাত দিয়ে আল-আমিনকে খেতে বলে। আল-আমিন ভেজা প্যান্ট পরা অবস্থায় বাথরুমের মেঝেতে শোয়া থেকে বারবার উঠে বসার চেষ্টা করলেও পড়ে যাচ্ছিল। রাত দেড়টার দিকে আমার ছোট ভাই আল-আমিনের বাথরুম থেকে শব্দ শুনতে পেয়ে আমাকে বলে। আমি তখন বাথরুমের সামনে যাই। গিয়ে দেখি আল-আমিন শুয়ে কাতরাচ্ছে। আমি মনে করি সে ইচ্ছা করে এমন অভিনয় করছে। এই ভেবে আমার রাগ উঠলে আমি তার ঘাড়ে লাথি মেরে বাথরুমের ভিতরে ঠেলে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিই। কিছুক্ষণ পরে আল-আমিনকে আমার স্বামী বাথরুম থেকে বের করতে চাইলে আমি তাকে রাগান্বিত হয়ে নিষেধ করি। এরপর আমি শুয়ে পড়ি। সকালে আমার স্বামী আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জানায়, আল-আমিন অজ্ঞান অবস্থায় বাথরুমে পড়ে আছে। আমার স্বামী তখন আল-আমিনকে বাথরুম থেকে রান্নাঘরের সামনে নিয়ে এসে ভেজা কাপড় পরিবর্তন করে এবং হাত-পায়ে তেল মালিশ করে। পরে বাসার পাশের ফার্মেসি থেকে একজন লোক নিয়ে আসে। তিনি জানান, আল-আমিন মারা গেছে।’ সূত্রে জানা গেছে, আল-আমিন মারা যাওয়ার পর মোবাইল ফোনে তার পরিবারকে আসামিরা জানান, আল আমিন গুরুতর অসুস্থ। পরে চাচা হারুন ও অন্য স্বজনরা এসে আল-আমিনের লাশ দেখতে পান। সে সময় গৃহকর্তা জোবায়ের আড়াই লাখ টাকা দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এদিকে আদালতে দাখিল করা ছবিতে আল-আমিনের শরীরের সর্বত্র ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। ছবি দেখে মনে হয়েছে, একটি কঙ্কালের ওপর চামড়া লাগিয়ে রাখা হয়েছে।

মামলাসূত্রে জানা গেছে, এ মামলার বাদী নিহত আল-আমিনের চাচা হারুন-অর-রশীদ চলতি বছর ২৭ মে আদালতে হলফনামা দিয়ে বলেছেন, ‘আমার ভাতিজা আল-আমিন আসামিদের বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার শ্বাসকষ্ট, কিডনি ও লিভারে সমস্যা ছিল। পরে মারা যায় বলে আমি জানতে পারি। পরে স্থানীয় লোকজনের কথায় শেখ জোবায়ের আলম, সাইয়েদা রহমান তমা, আনজু আরা পারভীন ও শাকিল আহম্মেদের বিরুদ্ধে মামলা করি। তাদের আসামি করায় আমি খুবই মর্মাহত ও দুঃখিত হয়েছি। তাই এই আসামিরা অভিযোগের দায় হইতে অব্যাহতি ও জামিনে মুক্তি পাইলে আমার ওজর-আপত্তি নাই।’

রকাশ : মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, Bangdesh potidin.