Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Linkon Ruhul

Pages: [1]
1


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে যদি খেয়াল করেন আপনার অবশ্যই মনে হবে যে নার্সিসিজম্ বা আত্ম-প্রেমে ডুবে যাচ্ছে বিশ্বের সব দেশের মানুষ- অন্তত ডিজিটাল বিশ্বে এই প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।

আর এটা কিন্তু মোটেই ভ্রান্ত কোন ধারণা নয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে একমত যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই আত্ম-প্রেম এখন একটা বিরাট জায়গা করে নিয়েছে এবং আগের তুলনায় তা এখন খুবই প্রকট হয়ে উঠেছে।

আর এই প্রবণতা এমনভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লেখালেখি হচ্ছে প্রচুর। বাজারে নার্সিসিস্টদের এই মানসিক প্রবণতার বিশ্লেষণ করে বইও বের হয়েছে অনেক।

মোটের ওপর, এই আত্ম-প্রেমীদের খুঁজে বের করতে হলে আপনাকে অবশ্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেতে হবে- কারণ "সেলফি প্রজন্মের" বিচরণ ক্ষেত্র মূলত এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

কিন্তু অতীতের তুলনায় এই আত্ম-প্রেমীদের সংখ্যা হঠাৎ করে এভাবে বেড়ে ওঠার পেছনে রহস্যটা কী? ‌ বিষয়ে গবেষণা করেছেন বিবিসির সাংবাদিক জলিয়ন জেনকিন্স।

নার্সিসিজম্ বা আত্ম-প্রেম আসলে কী?

সেটা বোঝার আগে দেখা যাক "আত্ম-প্রেমী" বলতে আমরা কাদের বোঝাই?

কলিন্স ইংরেজি অভিধান আত্ম-প্রেমকে ব্যাখ্যা করেছে এভাবে: "নিজের প্রতি অতিমাত্রায় ভালবাসা বা আগ্রহ - বিশেষ করে নিজের চেহারা দেখানোর ব্যাপারে।"

এটা হল আত্ম-প্রেমের মাত্রাতিরিক্ত বহি:প্রকাশ এবং সেটা প্রায়শই হয় কারো নিজের গুরুত্ব ও ক্ষমতাকে বাড়াবাড়ি রকমে জাহির করার প্রবণতা।

ব্যক্তি বিশেষের কিছু আচরণের সমষ্টিগত একধরনের বহি:প্রকাশ হল নার্সিসিজম্। এই আচরণ কমবেশি হয়ত আমাদের সবার মধ্যেই আছে।

কিন্তু সেটা যখন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছয়, তখন সেটাকে একটা মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা হিসাবে চিহ্ণিত করা হয়, যেটাকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (এনপিডি)।

একজন আত্ম-প্রেমীকে চিহ্ণিত করবেন কীভাবে?

ড: টেনিসন লী, যিনি ব্রিটেনে এনপিডি বিষয়ে একজন গবেষক ও বিশেষজ্ঞ, বলছেন এই মানসিক অসুস্থতা নির্ণয়ের নয়টি লক্ষ্মণ লিপিবদ্ধ রয়েছে বিশ্বে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের এই রোগ নির্ণয়ের নির্দেশিকা বইতে।

কাউকে আত্ম-প্রেম বা নার্সিসিজমের রোগী আখ্যা দিতে হলে তার মধ্যে নিচের লক্ষণগুলোর অন্তত পাঁচটি থাকতে হবে:

নিজের গুরুত্ব সম্বন্ধে তার অতি উচ্চ ধারণা
সাফল্য ও ক্ষমতা নিয়ে তার অলীক কল্পনা
নিজেকে বিশেষ কেউ এবং অতুলনীয় বলে বিশ্বাস
নিজেকে উচ্ছ্বসিত মাত্রায় প্রশংসা করার প্রবণতা
নিজের সম্পর্কে অধিকারবোধ
অন্যদের ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ হাসিল করার প্রবণতা
অন্যদের অনুভূতির প্রতি অবজ্ঞার মনোভাব
অন্যদের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণতা
উদ্ধত আচরণ এবং নিজেকে বড়াই করার প্রবণতা
এধরনের কিছু কিছু প্রবণতা রয়েছে এমন মানুষকে আপনি নিশ্চয়ই চেনেন।

কিন্তু এটা রোগের পর্যায়ে কখন পৌঁছয় সেটা ব্যাখ্যা করেছেন ড: লী। "যখন এধরনের আচরণ একটা তীব্র মাত্রা নেয় এবং সেটা শুধু সেই ব্যক্তির জন্যই যে একটা মানসিক তাড়নার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা নয়, তার পরিচিতজনদের জন্যও সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে, তখন এটাকে একটা মানসিক অসুস্থতা হিসাবে গণ্য করা হয়।"

এই সমস্যা আসলে কতটা ব্যাপক?
এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে আমেরিকার জনসংখ্যার শতকরা ছয় ভাগ আত্ম-প্রেমের এই চরম পর্যায়ে পড়ে। এই রোগ নির্ণয়ের নির্দেশিকা ব্যবহার করে এদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে আবার আরও পাঁচটি গবেষণার ফলাফল বলছে বেশ কিছু মানুষের মধ্যে জরিপ চালিয়ে এবং রোগ নির্ণয়ের জন্য আরও কঠোর লক্ষ্মণ ব্যবহার করেও তারা কারো মধ্যে আত্ম-প্রেমের এই বাড়াবাড়ি খুঁজে পাননি।

কাজেই প্রশ্ন উঠতে পারে এনপিডিতে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই বেশি অথবা এটা আদৌ কোন রোগ নয়।

অনেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন কোনো নির্দেশিকা ব্যবহার করে এটাকে রোগ হিসাবে চিহ্ণিত করা ঠিক নয়।

তবে ড: লী মনে করেন এটা যে একটা মানসিক অসুস্থতায় রূপ নিচ্ছে সেটা আমরা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছি। "আমি মনে করি ডাক্তাররা বিষয়টাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন না, ফলে এটা যে একটা রোগ তা যথেষ্টভাবে সামনে আসছে না।"

আনুষ্কা মার্চিনের স্বামীর মধ্যে এই আত্ম-প্রেমের প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাবার পর তিনি স্বামীকে ছেড়ে যান। এখন তিনি একটি মনোরোগ বিষয়ে পরামর্শ কেন্দ্র চালান। তিনি অন্যদের পরামর্শ দেন আত্ম-প্রেম রোগের পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে কিন তা কীভাবে বোঝা যায়।

তিনি বলছেন, "নার্সিসিজম্ মহামারির মত বাড়ছে। প্রচুর মানুষ অবশ্যই এই প্রবণতায় আক্রান্ত।"

এনপিডির কি কোন চিকিৎসা আছে?

ড: লী বলছেন এনপিডি (নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার) অর্থাৎ আত্ম-প্রেমের আচরণগত সমস্যা নিয়ে অনেক মানুষ তার দ্বারস্থ হয়েছেন যারা এসে বলেছেন তারা মানসিক অবসাদে ভুগছেন। কিন্তু এইধরনের মানসিক সমস্যায় অবসাদ কাটানোর ওষুধ কখনই কাজ করে না।

তিনি বলছেন, "এনপিডির চিকিৎসা খুব সহজ নয়।"

কারণ তিনি বলছেন এধরনের প্রবণতা আছে এমন মানুষ কখনই স্বীকার করতে চান না যে এটা কোন রোগ। তারা মনে করেন এটা তাদের কোন সমস্যা নয়- সমস্যাটা অন্যদের।

তাই তারা কোনরকম চিকিৎসার ব্যাপারে আগ্রহও দেখান না। তবে ড: লী বলছেন সুখের কথা একটাই যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রবণতাও নিজের থেকেই কমে যায়।

আমেরিকায় ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিষয়ক অধ্যাপক ব্রেন্ট রবার্টস বলছেন, "বিশ্বের সর্বত্রই দেখা গেছে বয়স্ক মানুষ অল্পবয়সীদের তুলনায় কম আত্ম-প্রেমের প্রবণতায় ভোগেন।"

"বিভিন্ন দেশে চালানো জরিপের ফলাফল থেকে বারবার দেখা গেছে তরুণ বয়সে এই প্রবণতা যতটা বেশি থাকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা যথেষ্ট মাত্রায় কমে যায়।"


সামজিক মাধ্যম ও আত্ম-প্রেম

ক্যালিফোর্নিয়ায় স্যান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোরোগ অধ্যাপক জিন টোয়েংগ তার বই "দ্য নার্সিসিজম্ এপিডেমিক"-এ লিখেছেন আত্ম-প্রেমের চরম বহি:প্রকাশ যে দ্রুত বাড়ছে তার স্বপক্ষে জোরালো যুক্তি রয়েছে।

তার গবেষণা বলছে আমেরিকার কলেজ পড়ুয়ারা আগের তুলনায় অনেক বেশি আত্ম-প্রেমী হয়ে উঠেছে।

তিনি বলছেন ১৯৮২ থেকে ২০০৯-এ কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চালানো এক জরিপের সঙ্গে তুলনা করার জন্য একইধরনের প্রশ্ন করা হয়েছিল আজকের শিক্ষার্থীদের। তাতে দেখা গেছে আজকের শিক্ষার্থীরা নিজেদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে অতিরিক্ত আত্ম-প্রেমের পরিচয় দিয়েছে। তাতে অনেক বেশি বড়াই করার ব্যাপক প্রবণতা দেখা গেছে।

"এদের মধ্যে দেখা গেছে নিজেদের নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা জাহির করার ব্যাপক প্রবণতা, সামাজিক পর্যায়ে তারা খুবই ক্ষমতাবান বলে বড়াই করার এবং নিজেদের বুদ্ধির মাত্রা কত উঁচু তা জাহির করার একটা বিশাল প্রবণতা।"

ব্রিটেনের একজন সুপরিচিত আত্মপ্রেমী এইচ জি টিউডর বলেছেন তরুণ বয়সে তিনি খুবই নার্সিসিস্ট ছিলেন। মনে করতেন বিদ্যায় বুদ্ধিতে তাকে টপকে যাবার ক্ষমতা আরও কারো নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করার পর তার সেসময়কার এক বান্ধবী তাকে বলেন তার আত্ম-প্রেম রোগের পর্যায়ে পৌঁছেছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞও বলেন তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ- এনপিডির শিকার।

এখন তিনি এই অবস্থা কটিয়ে উঠেছেন - বই লিখেছেন- অন্যদের পরামর্শও দিচ্ছেন।

তার এখন রমরমা ব্যবসা। বইএর কাটতি প্রচুর। তার কাছে পরামর্শ নিতেও আসে বহু মানুষ। যা প্রমাণ করে আত্ম-প্রেম এখন মানসিক ব্যাধির পর্যায়ে চলে গেছে এবং অনেকেই এই রোগে ভুগছেন।

"আমার বিশ্বাস সমাজ এখন মানুষকে আত্ম-প্রেমে উদ্বুদ্ধ করছে। সমাজ যেভাবে বদলেছে তাতে মানুষ এই প্রবণতাকে লালন করছে, এ নিয়ে রীতিমত চর্চ্চা করছে এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।"

বিশেষজ্ঞরা বলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয়তা ও বিস্তার এই প্রবণতাকে উস্কে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা পালন করছে।

2


আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যতম আশীর্বাদ হলো অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার। এর ফলে এমন অনেক রোগের চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে, যেগুলোর কারণে একসময় মানুষ মারা পর্যন্ত যেত। কিন্তু এখন অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে মানুষ কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে, দিব্যি হেঁটে-চলে বেড়াতে পারছে। সুতরাং অ্যান্টিবায়োটিকের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তবে সম্প্রতি নতুন করে সামাজিক মাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, এবং তা মোটেই ইতিবাচক কোনো কারণে নয়। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট একপ্রকার ব্যাকটেরিয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, যা নাকি অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর বুক থেকে প্রাণের অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে পারে। তাই আর দেরি না করে, চলুন এ বিষয়ে প্রাথমিক ধারণাটুকু নিয়ে আসি।

ব্যাকটেরিয়া কী?

মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমাদের জেনে নেয়া দরকার, ব্যাকটেরিয়া কী। এটি মূলত সংগঠিত নিউক্লিয়াসবিহীন এককোষী, আণুবীক্ষণিক একদল অণুজীব। এর প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ১৫,০০০। সব ব্যাকটেরিয়াই খারাপ নয়। বরং অনেক ব্যাকটেরিয়াই, এমনকি আমাদের অন্ত্রে বাস করা বেশিরভাগই, অত্যন্ত উপকারী। তবে ব্যাকটেরিয়ার ক্ষতিকর দিকই সচরাচর আমাদের নজরে বেশি পড়ে।

অ্যান্টিবায়োটিক কী?
অ্যান্টিবায়োটিকের অপর নাম অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ড্রাগ। এগুলো হলো এমন একধরনের ওষুধ যা মানুষ এবং পশু উভয়ের শরীরেই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এক্ষেত্রে তারা হয় ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে, নয়তো ব্যাকটেরিয়ার দৈহিক বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার রোধ করে। তবে অ্যান্টিবায়োটিক কেবল নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়াঘটিত ইনফেকশনই প্রতিরোধ করে। ভাইরাসের উপর এরা কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কী?


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হলো এমন একটি অবস্থা যা সংগঠিত হয়, যখন কতিপয় ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার ক্ষমতা অর্জন করে। এসব ব্যাকটেরিয়াকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া। এরা অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতিতে অভিযোজিত হয়ে যায় বলে, নিজেদের স্বাভাবিক গতিতে বেড়ে উঠতে ও বংশবিস্তার করতে পারে। ফলে মানুষ বা পশুর শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। আগে যে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে তাদের রোগ সেরে যেত, এখন আর সেই অ্যান্টিবায়োটিকে তা সারে না, বরং ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং এসব রোগাক্রান্ত মানুষ বা পশু অন্য কারো উপস্থিতিতে হাঁচি-কাশি প্রভৃতির মাধ্যমে তাদের শরীরের আভ্যন্তরীণ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দেয়, এবং তারাও একই রকম দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কেন ঘটে?
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ঘটে ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ-তে পরিবর্তন বা পরিব্যক্তির ফলে। এছাড়া জিন অপসারণের মাধ্যমেও এক প্রজাতির অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার জিন থেকে অন্য প্রজাতির সাধারণ ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স লাভ করতে পারে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে এমন সব পরিবর্তন আসে যে, ওই ব্যাকটেরিয়ার জন্য বিদ্যমান অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হলেও, সেটি কোনো ক্ষতি ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে। বিষয়টি অনেকটা এমন যে, দশটি ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে আটটি হয়তো সাধারণ, কিন্তু দুটি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট। এখন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হলে, সাধারণ আটটি ব্যাকটেরিয়া মরে যাবে, কিন্তু বাকি দুটি ব্যাকটেরিয়া টিকে থাকবে, এবং তারা শারীরিক বৃদ্ধি ও বংশবিস্তারের মাধ্যমে অসুস্থ ব্যক্তির রোগকে অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে থাকবে।


অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কেন বাড়ছে?
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স একটি বিশাল বড় চিন্তার কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কেননা সময়ের সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়াদের অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ক্ষমতা লাভের প্রবণতা কমছে না, বরং হু হু করে বেড়ে চলেছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো সাম্প্রতিক সময়ে অত্যধিক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার। সামান্য কোনো অসুখ হলেই মানুষ অ্যান্টিবায়োটিকের দিকে ঝুঁকছে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ব্যতিক্রমী দুই-এক ক্ষেত্রে রোগীর দেহে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া থেকে যাচ্ছে যাদের উপর অ্যান্টিবায়োটিক কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না। এদিকে তারা অ্যান্টিবায়োটিকের সান্নিধ্যে আসার মাধ্যমে, অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল শিখে ফেলছে, এবং পরবর্তীতে তাদের মাধ্যমে সৃষ্ট নতুন ব্যাকটেরিয়ার মধ্যেও একই গুণাগুণ দেখা দিচ্ছে। এভাবে তারা নিজ হোস্টের (যার শরীরে বাসা বেঁধেছে) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তো কমিয়ে দিচ্ছেই, পাশাপাশি সেই হোস্ট অন্যদের কাছে গেলে, অন্যদের শরীরেও তারা ঢুকে পড়ার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। এভাবে একজনের শরীরে এক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ক্ষমতা লাভ করলে, পরবর্তীতে সেটি অন্য আরো অনেকের শরীরেও সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।


কীভাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স দূর করা যায়?
যেমনটি আমরা আগেই জেনেছি, কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পরও সব ব্যাকটেরিয়া মারা যাচ্ছে না বা নিষ্ক্রিয় হচ্ছে না, এবং তারাই পরবর্তীতে নতুন আরো অনেক অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দিচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো, অনেক রোগীই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পুরো কোর্স সম্পন্ন করে না। একজন রোগীকে হয়তো সাতদিনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে দুদিন ওষুধ খেয়েই সুস্থ অনুভব করায় আর ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন মনে করল না। এক্ষেত্রে যা হতে পারে তা হলো: ওই ব্যক্তির শরীরের অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়াই মারা গেছে, কিন্তু সামান্য কিছু ব্যাকটেরিয়া টিকে আছে। ওষুধের পুরো কোর্স সম্পন্ন করা হলে তারাও হয়তো মারা যেত। কিন্তু যেহেতু পুরো কোর্স সম্পন্ন করা হয়নি, তাই তারা বহাল তবিয়তে আছে, এবং অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতিতে অভিযোজনের কৌশল রপ্ত করে ফেলেছে। তাই ভবিষ্যতে তারা আবারো বংশবিস্তারের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে রোগাক্রান্ত করে তুলবে। কিন্তু এবার আর আগের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহারের পরও ওই ব্যক্তির রোগমুক্তি ঘটবে না। এজন্য একজন ব্যক্তিকে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মনে হলেও, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে নির্ধারিত কোর্স অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে।

এছাড়াও আরো যেসব ব্যাপার মেনে চলতে হবে:

কেবলমাত্র সার্টিফাইড চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে;
চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীকে জোর করা যাবে না অ্যান্টিবায়োটিক দিতে;
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর বলে দেয়া সকল নিয়মকানুন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে;
অন্যের বেঁচে যাওয়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না, কিংবা নিজের অ্যান্টিবায়োটিক অন্যকে দেয়া যাবে না;
সংক্রমণ রোধে নিয়মিত হাত ধুতে হবে, স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে, যেখানে-সেখানে কফ-থুতু ফেলা যাবে না, পরিষ্কার রুমাল বা টিস্যুতে নাক-মুখ চেপে হাঁচি দিতে হবে, রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সংসর্গ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে, নিরাপদ শারীরিক মিলন করতে হবে, ভ্যাক্সিনেশন হালনাগাদ করতে হবে;
এছাড়াও দেশের ফার্মেসিগুলোকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি, যাতে কেউ বিনা প্রেসক্রিপশনে ক্রেতার কাছে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি না করে।

শেষ কথা
মানুষ ও পশুর দ্রুত রোগমুক্তি ও গড় আয়ু বৃদ্ধিতে অ্যান্টিবায়োটিকের অবদানের শেষ নেই। কিন্তু কথায় আছে না, লেবু বেশি কচলালে তেতো হয়ে যায়, অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রেও ঠিক যেন তেমনটাই হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে অপেক্ষাকৃত দ্রুত রোগমুক্তি ঘটে বটে, কিন্তু তাই বলে এর যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদেরকে খুবই ভয়ংকর পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। সামান্য একটু অসুস্থ হলেই আজকাল আমরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠি, চিকিৎসককে বলে অ্যান্টিবায়োটিক নিই। অনেকে তো আবার চিকিৎসকের তোয়াক্কা না করে নিজেরাই ফার্মেসিতে গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে আনি। এর মাধ্যমে আমরা নিজেদের শরীরটাকে এমন বানিয়ে ফেলছি যে, অন্যান্য সমস্যা তো আছেই, এমনকি আমাদের শরীর অতি সাধারণ কোনো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধেও একা একা লড়াইয়ের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এভাবে নিজেদের অজান্তেই আমরা অ্যান্টিবায়োটিক-পরবর্তী যুগের দিকে এগিয়ে চলেছি, যখন অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করবে না, ফলে নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস, স্ট্রেপ থ্রোট, টিউবারকুলোসিস, লাইম ডিজিজ, কানে পচন কিংবা দেহত্বকে ঘায়ের মতো ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে আবারো মানুষ প্রাণ হারাতে শুরু করবে। অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রাতিরিক্ত ও যথেচ্ছ ব্যবহারে যদি লাগাম না টানি, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বড় কঠিন সময়ের মোকাবেলা করতে হবে।

3

কেমন হতো, যদি টাইম মেশিনে করে সহজেই ফিরে যেতে পারতাম ছেলেবেলায়। আবার পেতাম নির্ঝঞ্ঝাট সহজ-সরল জীবন। কিংবা যদি এক লাফে দশ বছর পরের ভবিষ্যতে চলে যেতাম, আর পড়াশোনার ঝামেলায় পড়তে হতো না, তা-ই না? কিন্তু, সেরকম কি আসলে সম্ভব?

২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া সাড়া জাগানো মুভি Predestination নিশ্চয়ই অনেকেই দেখেছেন। টাইম মেশিনে করে সহজেই কীভাবে অনেক বছর অতীতে চলে যাওয়া যায়, কীভাবে নিজের বাচ্চাকালকে চোখের সামনে দেখা যায়। যারা দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই ধরেই নিয়েছেন যে, এসব নিছকই সায়েন্স ফিকশন! বাস্তবে অতীত বা ভবিষ্যতে আবার যাওয়া যায় নাকি! সে প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজবো আজ আমরা। বিজ্ঞানের আলোকে বোঝার চেষ্টা করবো- আসলেও সময় পরিভ্রমণ সম্ভব কি না।


সময় পরিভ্রমণ- সম্ভাবনা ও বাস্তবতা:
https://assets.roar.media/assets/AK2zarZd8sa4apJM_images-%282%29.jpeg?fit=clip&w=700
সময় পরিভ্রমণ বলতে সহজ ভাষায় অতীতে বা ভবিষ্যতে যেতে পারাকে বোঝায়। আমি যদি ২০০০ সালে ফিরে যেতে পারি বা ২০৩০ সালের পৃথিবীতে চলে যেতে পারি, তবে তাকে সময় পরিভ্রমণ বলবে। শুনতে যতটা সহজ লাগছে বাস্তবে কিন্তু সেটা ততটা সহজ না। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন! ততটা সহজ না, তবে অসম্ভব কিছুও না! টাইম ট্রাভেল কীভাবে সম্ভব তা জানতে হলে আমাদের একটু গভীরে যেতে হবে। জেনে আসতে হবে সময় পরিভ্রমণ নিয়ে বিজ্ঞানের কিছু তত্ত্ব। 

সময় পরিভ্রমণ বোঝার জন্য আপনাকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা ও আলোর গতিসূত্র বুঝতে হবে। আইনস্টাইন সময় জিনিসটাকে আলোর মাধ্যমে ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছেন। কোনো বস্তু যত দ্রুত গতিতে চলবে, তার সাপেক্ষে সময় তত স্থির হয়ে থাকবে। অর্থাৎ, আপনি যদি আলোর কাছাকাছি গতিতে চলতে পারেন, তবে আপনার সাপেক্ষে সময় প্রায় স্থির থাকবে। আপনি দুই ঘন্টা ভ্রমণ করে আসার পর দেখবেন পৃথিবীতে হয়তো এর মাঝে দুই বছর সময় চলে গিয়েছে! এ তো গেল আলোর কাছাকাছি গতিতে ভ্রমণ করতে পারলে কী হবে সেই কথা। আর আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে যেতে পারলে আপনি সময়কেই অতিক্রম করে ফেলতে পারবেন!

একটি সহজ উদাহরণ দেয়া যাক। মনে করুন, আপনি পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের কোনো একটি নক্ষত্রকে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখছেন। এই মুহূর্তে আপনি যে জ্বলজ্বলে নক্ষত্রটি দেখছেন সেটি কিন্তু নক্ষত্রটির বর্তমান অবস্থা না। আমরা কোনো বস্তু তখন দেখতে পাই যখন সেটি থেকে আলো এসে আমাদের চোখে পড়ে। অর্থাৎ, এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে থাকা সেই নক্ষত্রটি থেকে আলো এসে পৃথিবীতে পৌঁছাতে এক লক্ষ বছর লেগেছে। আপনি এই মুহুর্তে নক্ষত্রটিকে যেমন দেখছেন সেটি আপনার কাছে বর্তমান হলেও, নক্ষত্রটির কাছে সেটি এক লক্ষ বছর অতীতের ঘটনা।

এখন, কল্পনা করে নিন, সেই নক্ষত্রটি ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে সেখানে বাস করা একটি এলিয়েন ১ লক্ষ আলোকবর্ষ/সেকেন্ড গতিতে পৃথিবীতে চলে আসলো। সে আসার পরও কিন্তু সে নক্ষত্রটিকে একই অবস্থায় দেখতে পাবে পৃথিবী থেকে। তারও এক লক্ষ বছর পর পৃথিবীবাসীরা সেই নক্ষত্রকে ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যেতে দেখবে। তাহলে এ থেকে আমরা কী বুঝলাম? পৃথিবীবাসীরা যা এক লক্ষ বছর পর দেখবে, যা তাদের কাছে এক লক্ষ বছর ভবিষ্যতের ঘটনা, সেই ঘটনাটি পৃথিবীতে চলে আসা এলিয়েনের কাছে নিকট অতীত!


স্পেস-টাইম ফেব্রিক

এখন, এখানে একটি ছোট সমস্যা রয়ে গেছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে তো খুব করে বললাম, এলিয়েনটি এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরত্ব এক সেকেন্ডে চলে আসবে। কিন্তু, তা কি আদৌ সম্ভব? উত্তর, সম্ভব নয়। আইনস্টাইনের সূত্রমতে, আলোর গতি ধ্রুব এবং কোনো কিছুই আলোর চেয়ে অধিকতর গতিশীল হতে পারবে না। সেই হিসেবে এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরত্বও এক মুহূর্তে অতিক্রম করা সম্ভব না। তাহলে ভবিষ্যতে পরিভ্রমণ করার উপায় কী? আসুন, এবারে আর দ্বিধায় না রেখে সহজে বুঝিয়ে দেই।

আমরা কোনো বিন্দুর অবস্থান বের করি  XYZ অক্ষ দ্বারা। অর্থাৎ, দৈর্ঘ্য নির্ণয়ে X, প্রস্থ নির্ণয়ে Y আর উচ্চতা নির্ণয়ে Z অক্ষ ব্যবহার করি। কিন্তু কোনো ঘটনার প্রকৃত অবস্থান জানতে এ তিনটি মাত্রা বাদেও আরেকটি মাত্রার প্রয়োজন। তা হলো সময়। এ চতুর্থ মাত্রাকে আইনস্টাইন স্পেস-টাইম বলেছেন। এখন, মহাবিশ্বে জালের মতো ছড়ানো যে স্পেস টাইম ফেব্রিক রয়েছে, তা দিয়ে সময়/আলো প্রবাহিত হয়। যেহেতু আলোর গতিকে অতিক্রম করা সম্ভব না, সেহেতু আমাদের সময় পরিভ্রমণের জন্য বিকল্প উপায় খুঁজতে হবে। একটি ব্যবহারিক উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি। একটি কাগজের পৃষ্ঠা হাতে নিন। পৃষ্ঠাটির বরাবর উপরে নিচের দুই প্রান্তে দুটি আলাদা ফুটো করুন। এবারে মাঝ বরাবর পৃষ্ঠাটি দুই ভাঁজ করে কী দেখতে পেলেন? ফুটো দুটি একসাথে লেগে আছে, তাই তো? এবার পৃষ্ঠাটি আবার আগের মতো খুলে ধরুন। খুলে রাখা পৃষ্ঠায় দুটি ছিদ্র যতটা দূরে, ভাঁজ করা পৃষ্ঠার ক্ষেত্রে বলতে গেলে তা একদমই নেই।


ওয়ার্মহোল

এখন যদি এই পৃষ্ঠাটিকে আমরা একটি স্পেস-টাইম ফেব্রিক হিসেবে কল্পনা করি তাহলে বুঝতে পারি, স্বাভাবিকভাবে দুটি ঘটনা বিন্দু অনেক দূরত্বে থাকলেও, ফেব্রিকের সংকোচনের ফলে দুটি ঘটনা বিন্দুকে খুব অল্প দূরত্বে নিয়ে আসা সম্ভব। অর্থাৎ, সাধারণভাবে যে ঘটনা বিন্দুটি অনেক পরে দেখতে পাওয়ার কথা, সেখানে শর্টকাটে অনেক আগেই পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। এ ধারণার উপর ভিত্তি করেই ওয়ার্মহোল বা সময় সুড়ঙ্গের ধারণাটি এসেছে।

ওয়ার্মহোল হচ্ছে এমন একটি ক্ষুদ্র সুড়ঙ্গ, যা অনেক অনেক আলোকবর্ষ দূরের দুটি ঘটনা বিন্দুকেও স্পেস ফেব্রিকের সংকোচনের মাধ্যমে খুব কাছাকাছি দূরত্বে নিয়ে আসে। সুতরাং, ওয়ার্মহোলের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে আলোর অধিক গতিবেগ ছাড়াই ভবিষ্যৎ পরিভ্রমণ সম্ভব। প্রশ্ন থাকতে পারে, এখন পর্যন্ত কেউ ওয়ার্মহোলে করে কেন তাহলে ভবিষ্যত ভ্রমণ করেনি। এর উত্তর হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, মহাবিশ্বে ওয়ার্মহোল খুব মাঝে মাঝে সামান্য কিছু সময়ের জন্য আবির্ভূত হয়। তাছাড়াও এ ওয়ার্মহোলগুলোর ব্যাস হয় এক সেন্টিমিটারের লক্ষ কোটি ভাগের কম। সুতরাং এত কম সময় স্থায়ী ও এত ক্ষুদ্র ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে ভ্রমণ করা প্রায় অসম্ভব! সুতরাং, ভবিষ্যত পরিভ্রমণ তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব হলেও বাস্তবিকভাবে এখন পর্যন্ত ভবিষ্যত পরিভ্রমণ করার মতো প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি।


চতুর্থ মাত্রা

ভবিষ্যত পরিভ্রমণ নিয়ে আলোচনা গেল। এবার আসা যাক অতীত পরিভ্রমণে। তাহলে তো অতীত পরিভ্রমণও একইভাবে ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে করা যাবে, তাই না? উত্তর, না। এখানে দুটি ঝামেলা আছে। এই ঝামেলাগুলোকে 'সেলফ কনসিস্টেন্সি থিওরি' ও 'গ্রান্ডফাদার প্যারাডক্স থিওরি' বলে।

আমি ভবিষ্যতে গিয়ে যদি সব ভেঙেচুরে একাকার করে ফেলি, তাহলে সেটি বড় কোনো প্রাকৃতিক সমস্যা দাঁড় করাবে না। আমি ১০০ বছর ভবিষ্যতে গিয়ে ভাংচুর করে চলে আসার পর, স্বাভাবিকভাবে ১০০ বছর পরের ভবিষ্যতে এই ঘটনাটিই হবে। কিন্তু সমস্যা হবে অতীতে গিয়ে কোনো অদ্ভুত ঘটনা ঘটালে। মনে করুন, ১৯৪৬ সালের ৬ জুলাইয়ে আমি গিয়ে যদি সদ্য জন্ম নেয়া জর্জ বুশকে মেরে ফেলি, তাহলে আবার বর্তমানে এসে বুশকে কীভাবে দেখবো? সে তো জন্মের দিনই মারা গিয়েছিল, তা-ই না? জটিল লাগছে খুব? এ প্রশ্নের উত্তরই আছে দুটি থিওরিতে।

আসুন দেখে নেই থিওরি দুটির মূলকথা।

সেলফ কনসিস্টেন্সি থিওরি: এ থিওরি অনুযায়ী, কেউ অতীত ভ্রমণ করলেও সে প্রকৃতির কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না। প্রকৃতি তাকে কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে দেবে না। কেউ চাইলে ওয়ার্মহোলে করে অতীতে গিয়ে ঘুরে আসতে পারবে, সবকিছু দেখতে পারবে, কিন্ত কোনো ঘটনায় প্রভাব রাখতে পারবে না। ছায়ার মতো শুধুই দর্শনার্থী হয়ে থাকতে হবে। সুতরাং, এক্ষেত্রে কোনো ঘটনার পরিবর্তন বা কোনো ধরনের প্যারাডক্স সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।


প্যারালাল ইউনিভার্স

গ্রান্ডফাদার প্যারাডক্স: ধরে নিচ্ছি, আমি ৮০ বছর অতীতে গিয়ে দেখলাম আমার দাদা কাদা মাখামাখি করে হা-ডু-ডু খেলছে। এখন, আমি যদি সাথে করে নিয়ে যাওয়া রিভলবার দিয়ে আমার দাদাকে গুলি করে মেরে ফেলি, তাহলে আমি আসবো কোথা থেকে? আমার দাদা যদি শিশু বয়সে মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে তো তার আর বিয়েও হবে না। তার ছেলে, মানে আমার বাবাও পৃথিবীতে আসবে না কোনোদিন। আমার বাবা যদি জন্মই না নেয় তাহলে তো আমারও জন্ম নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্ত আমি তো আছি! তাহলে আমি আসলাম কোথা থেকে! অতীত পরিভ্রমণ সম্পর্কিত এই গোলমেলে সমস্যাকে বলে গ্রান্ডফাদার প্যারাডক্স।

এ সমস্যা সামনে আসার পর বিজ্ঞানীরা এর আপাত সমাধান হিসেবে প্যারালাল ইউনিভার্সের কথা বলেছেন। প্যারালাল ইউনিভার্স থিওরি মতে, প্রতিটি ঘটনার অসংখ্য সম্ভাবনা থাকতে পারে। অর্থাৎ, একই ধরনের ঘটনা আরো অনেকগুলো ইউনিভার্সে থাকা সম্ভব। দুটি সমান্তরাল রেখার যেভাবে কখনো দেখা হয় না, একইভাবে দুটি প্যারালাল ইউনিভার্সেরও কখনো দেখা হবে না। দুটি সমান্তরাল রেখার মাঝে ছোট আরেকটি রেখা টেনে যেভাবে দুটি রেখাকে যুক্ত করা যায়, একইভাবে ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে দুটি প্যারালাল ইউনিভার্সের মাঝে ভ্রমণ করা হয়। সুতরাং, আপনি অতীতে যেতে চাইলে কখনোই আপনার নিজের ইউনিভার্সের অতীতে যেতে পারবেন না। আপনি ওয়ার্মহোলে ঢোকামাত্র অন্য কোনো প্যারালাল ইউনিভার্সে চলে যাবেন। সেখানে গিয়ে আপনি আপনার দাদাকে হত্যা করলেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ সেই ইউনিভার্সের ভবিষ্যতে আপনার কোনো অস্তিত্বই নেই!


গ্রান্ডফাদার প্যারাডক্স

এই ছিলো মোটামুটি সময় পরিভ্রমণ নিয়ে আলোচনা। XYZ অক্ষের মতো হয়তো বা একদিন সময়কেও মানুষ নিজের মতো করে ভ্রমণের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। বিজ্ঞানের বহুর্মুখী অগ্রযাত্রার নিরিখে বলতে পারি, আপাতত সম্ভব না হলেও, হয়তো সেই দিন আর বেশি দূরে নয়!

Source: Roar Bangla

Pages: [1]