Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - kekbabu

Pages: 1 ... 4 5 [6]
76
আসুন, সবাই মিলে ঢাকাকে বাসযোগ্য করি
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু  ২৭ আগষ্ট, ২০১৭ ইং

বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত ঢাকা শহরে যারা বসবাস করছেন, তারা নিশ্চয় প্রতি বর্ষায় ঢাকার রাস্তার আসল রূপ তথা জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগ দেখতে পান। এর পাশাপাশি ঢাকার অনেক রাস্তা খোঁড়া-খুঁড়ির ফলে সৃষ্ট দুর্ভোগ ও সেই সঙ্গে যানজট তো রয়েছেই। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) বছরখানেক আগে বিশ্বের ১৪০টি শহরের বাসযোগ্যতার একটি তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিবছরই ওই প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা, ভৌত অবকাঠামো এবং স্থিতিশীলতা বা শৃঙ্খলা—এই বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে তালিকা করে। এ তালিকায় বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে প্রথম হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহর আর ঢাকার অবস্থান একদম তলানিতে (১৩৭তম)। ২০১৫ সালে ওই প্রতিষ্ঠানের জরিপে সারাবিশ্বে বসবাসের জন্য সবচেয়ে অনুপযোগী (দ্বিতীয়) শহর হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল ঢাকা আর ২০১৪ সালে বসবাসের দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে অযোগ্য শহর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। এ ধরনের খবরগুলো ঢাকাবাসীর জন্য নিশ্চয় আনন্দ-উল্লাস করার মতো কোনো খবর নয়। বরং তা উদ্বেগের এবং নিরানন্দের। ঢাকার এ অবস্থানের মূল কারণ ঢাকার ধ্বংসাত্মক উন্নয়ন নীতি। ঢাকার ধ্বংসাত্মক উন্নয়ন নীতির বিষয়টি আজ হতে বহুকাল পূর্বেই হয়তো গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাইতো তিনি বলেছিলেন, ‘ভাইসব, তোমরা প্রাচুর্য, সম্পদ আহরণের জন্য এত কঠোর পরিশ্রম করে প্রত্যেকটি ইট,পাথর উল্টিয়ে আঁচড়ে দেখছ; কিন্তু যাদের জন্য তোমাদের সমস্ত জীবনের কঠোর শ্রমের ফল রেখে যাবে, সেই সন্তানদের যথার্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য কতটুকু সঠিক পরিকল্পিত নগরায়ণ করেছো’। ঢাকার ধ্বংসাত্মক উন্নয়ন নীতির দিকে তাকালে গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের কথার শতভাগ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বলা হয়ে থাকে, বিপদ-আপদ, দুর্ঘটনা, ভূমিকম্প, সুনামির ওপর কারো হাত নেই এবং তা রোধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু একটু সচেতন হলে জলাশয় ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ, অপরিকল্পিত ফ্যাক্টরি-কারখানা নির্মাণ করে একটি শহরের উপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি করা; একটি শহরকে জ্বলন্ত চুল্লিতে পরিণত করা; একঘণ্টার বৃষ্টিতে পুরো একটি শহরকে পানির নিচে তলিয়ে দেওয়া; একই রাস্তা অসত্ উদ্দেশে বারবার খোঁড়াখুঁড়ি করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলা; যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে দুর্গন্ধময় পরিবেশ তৈরি করা; যানজট, ধূলা-বালি, ধোঁয়া আর মশার উপদ্রবকে জনগণের নিত্যসঙ্গী বানানো; জনগণের চলাচলের রাস্তার ওপর হাট-বাজার বসানো; পানি-বিদ্যুত্-গ্যাস সংকটে শহরবাসীকে ভোগান্তির হাত থেকে তো অন্ততপক্ষে রক্ষা করা যেতে পারে। নাকি সেটাও পারা যায় না? নিশ্চয় পারা যাবে, নিশ্চয়।

ঢাকাকে আতঙ্কিত ও অপ্রস্তুত শহর হিসেবে প্রায়ই উল্লেখ করা হয়। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও কম হয় না। কিন্তু বিষয়টি যেন ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে’?—এই অবস্থার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ ও যানজটমুক্ত করতে নানা পরিকল্পনার কথা শোনা যায়। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নিত্য নতুন পরিকল্পনাও নেওয়া হয়। এসব নিয়ে প্রায়ই সভা-সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সে সব পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। ইআইইউ-এর গত কয়েক বছরের জরিপ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট। আর তা হচ্ছে;  ঢাকাকেন্দ্রিক নগরায়ণ টেকসই নয়—যা প্রত্যেক সচেতন নগরবাসীই উপলব্ধি করতে পারেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন আমরা এত পিছিয়ে? স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অবস্থা তো ভালোই। ঢাকায় নেই কোনো সামরিক যুদ্ধের হুমকি বা বড় ধরনের সহিংস অপরাধের উপস্থিতি, নেই কোনো সাম্প্রদায়িক বা গোষ্ঠীগত সহিংসতায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড।

এখানে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাব্যবস্থা ধনী দেশগুলোর মতো না হলেও একবারে যে অপ্রতুল তা কিন্তু নয়। কিন্তু পাবলিক পরিবহণ ব্যবস্থা বলতে যা বোঝায়, তা ঢাকায় নেই। প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তার স্বল্পতা, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থা, জনগণ কর্তৃক ট্রাফিক আইন না মানার পাশাপাশি সুষ্ঠু গণপরিবহণ ব্যবস্থার অভাবে ঢাকার রাস্তা-ঘাটে নিত্য সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। যানজটের কারণে মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে কার্যক্ষমতা ও মনোযোগ। ঢাকা এমন একটি শহর যেখানে পথচারীদের চলাচলের জন্য সামান্যতম যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত, সেটুকুও নেই। যতটুকু আছে সেখানেও হকাররা পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদেরকে ‘ম্যানেজ’ করে বসায় দোকান-পাট। ঢাকা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এখানে বড় আকারের অঘটন ঘটলে যে পরিমাণ ক্ষতি হবে, তা হবে অকল্পনীয়। শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির কারণে ওই অংশে টিউমার, গোদ রোগ বা মরণব্যাধি ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষ যেমন স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়, ঠিক তেমনিভাবে ঢাকার উপর নানাদিক থেকে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ যেন টিউমার, গোদ রোগ বা মরণব্যাধি ক্যান্সারের মতোই অবস্থা—যা ধ্বংসাত্মক উন্নয়ন নীতিরই প্রতিচ্ছবি।               

রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট টুলস ফর ডায়াগনসিস অব আরবান এরিয়াস-এর জরিপে ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্বের ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। ঢাকার প্রায় তিন লাখ ২৬ হাজার পাকা ভবনের মধ্যে ৭২ হাজার ভূমিকম্প ঝুঁকি মধ্যে আছে। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি হাইতির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সে ২৫ কি.মি. বিস্তৃৃতব্যাপী ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিল তিন লক্ষাধিক মানুষ। গৃহহীন হয়েছিল দশ লক্ষাধিক এবং প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস, অ্যাসেম্বেলি বিল্ডিং, প্রিন্স ক্যাথেডাল ও মেইন জেল-এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঢাকায় প্রায় আড়াই কোটি মানুষের বসবাস। দেশের বিপুল সংখ্যক জনগণ কর্মসংস্থানের জন্য রাজধানীমুখী হওয়ায় এ সংখ্যা প্রতিদিনই অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে। ঢাকার ওপর বর্তমানে জনসংখ্যার চাপ যেহারে বাড়ছে, তাতে ভূমিকম্পের উত্পত্তিস্থল ঢাকায় হলে এবং তা রিখটার স্কেলে ৭ কিংবা তার একটু উপরের মাত্রার হলেই ঢাকা ধূলিসাত্ হয়ে যেতে পারে। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ ঘটলে বাড়িঘর, অফিস-আদালত, ফ্যাক্টরি, শিল্প-কারখানা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। এর পাশাপাশি বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেলে এবং পানি ও গ্যাসের পাইপলাইন ফেটে গেলে যে কি ভয়াবহ অবস্থা দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়।

তাই ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমানোর জন্য ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ এখন অত্যন্ত জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকাকে পরিষ্কার রাখতে ঢাকা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালকে পরিচ্ছন্ন বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ঢাকাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কর্মসূচির উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাননীয় মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ইতিপূর্বে বলেছিলেন, ঢাকাকে পরিষ্কার রাখতে প্রত্যেককে মেয়রের ভূমিকা পালন করতে হবে। ঢাকাকে বসবাসের একটি যোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে সবাই মিলে ঢাকাকে নিজের ঘরের মতো সাজানোরও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মহোদয়ের পক্ষ থেকেও এ ধরনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করাসহ নানা কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে—যা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। মাননীয় মেয়রদ্বয়ের এসব বক্তব্য ও পরিষ্কারকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, ঢাকাকে পরিষ্কার রাখাসহ এটিকে বসবাসের যোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু তাঁদের দু’জনের পক্ষে কি ঢাকাকে পরিষ্কার রাখা ও বসবাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব? নিশ্চয় সম্ভব নয়। তাই ঢাকাকে বসবাসযোগ্য করে তোলার জন্য নাগরিক সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ কতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যম, সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এ ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা আবশ্যক। যেন সত্যিকার অর্থেই বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে ওঠে আমাদের রাজধানী শহর ঢাকা। এজন্য আমাদের প্রত্যেককেই এসব বিষয়ে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি মেয়রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে কাজের কাজ শুরু করতে হবে এই মুহূর্ত থেকেই।
n লেখক: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক; বর্তমানে ফিলিপাইনের লাইসিয়াম অব দ্যা ফিলিপাইন্স ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কর্মরত। ই-মেইল:kekbabu@yahoo.com

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/sub-editorial/2017/08/27/219161.html

77
ড. কুদরাত- ই- খুদা বাবু    |    প্রকাশ : ২৭ আগস্ট, ২০১৭[/b]

                                                                             বাংলাদেশ কি ‘ধর্ষণের দেশ’ হতে চলেছে?

সংবাদপত্রের পাতা খুললে প্রায় প্রতিদিনই চোখে পড়ে ধর্ষণ সংক্রান্ত খবর। এসব খবর পড়তে পড়তে মানুষ যেন আজ রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছেন। এ দেশে ধর্ষণের হাত থেকে প্রাপ্তবয়স্ক নারী, গৃহবধূ, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থেকে শুরু করে পাঁচ বছরের কোমলমতি মেয়েশিশু পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করার ঘটনা তো সমাজে অহরহই ঘটে চলেছে। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলে সমাজ ও মান-সম্মানের ভয়ে তা কাউকে জানান না। তখন বিষয়টি লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যায়। আবার অনেক সময় এও দেখা যায়, ধর্ষণের ঘটনা ধর্ষক বা তার সহযোগী কর্তৃক ভিডিও আকারে ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে কিংবা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার ভয়-ভীতি দেখিয়ে ওই মেয়েকে পুনরায় ধর্ষণ করা হচ্ছে অথবা তার কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নেয়া হচ্ছে। কোনো নারী যখন ধর্ষণের শিকার হন, তখন তার মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে, তা কি সবার ভেবে দেখা উচিত নয়? পাশাপাশি ওই মেয়েটিকে বা ওই মেয়েটির পরিবারকে আমাদের ‘সমাজ’-ই বা কোন চোখে দেখে থাকে, তা কি আমরা ভেবে দেখি? আমরা কি ভেবে দেখেছি, একজন মেয়ে যখন ধর্ষণের শিকার হন, তখন তার সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ধর্ষণের ওই ঘটনা তাকে সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়ানোর ফলে তার মানসিক শান্তি থাকে না। থাকে না ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন এবং শেষ পর্যন্ত তার আত্মবিশ্বাসটুকুও দিনে দিনে লোপ পেতে থাকে। সর্বোপরি ধর্ষণের শিকার মেয়েটি মানসিকভাবে এমন অশান্তি এবং যন্ত্রণাময় জীবন অতিবাহিত করেন যে, তিনি যেন জীবিত থেকেও মৃত। আবার অনেক সময় অনেক মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে বাধ্য হন। অনেক সময় দেখা যায়, ধর্ষণের মতো ফৌজদারি অপরাধ, ন্যক্কারজনক ও জঘন্য ঘটনা ঘটলেও ধর্ষিতা কিংবা তার পরিবার ন্যায়বিচারটুকু পর্যন্ত পাচ্ছেন না। একটি স্বাধীন, সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে এর চেয়ে বড় লজ্জার, দুঃখের ও আশ্চর্যের বিষয় আর কী হতে পারে? গত ৮ জানুয়ারি বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে গত বছর (২০১৬) এক হাজারেরও বেশি নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তিনশ’র বেশি শিশু। আর ধর্ষণের এই সংখ্যা যে চলতি বছরে অনেক বেশি হবে, তা বলাইবাহুল্য। ধর্ষণের ধারাবাহিক ঘটনা নিঃসন্দেহে দেশের সবার জন্যই উদ্বেগজনক একটি বিষয় এবং তা সবার সামনে একটি দুর্বল আইন ও সমাজব্যবস্থারই প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। ধর্ষণের ঘটনার ফলশ্রুতিতে বিশ্ব দরবারেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে মারাত্মকভাবে। দেশে প্রতিদিন যেভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে তাতে স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশ কি ‘ধর্ষণের দেশ’ হতে চলেছে? বলার অপেক্ষা রাখে না, যে কোনো সমাজে ধর্ষণ বিস্তৃত হলে এবং ধর্ষকদের সাজার ব্যবস্থা করা না হলে সেই সমাজে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বলে কিছুই থাকে না। এ ধরনের ঘটনা সমগ্র সমাজ, দেশ ও জাতিকে বিশৃঙ্খলা ও পাপাচারের দিকে ধাবিত করে- যা কখনই ভালো কোনো বিষয় হতে পারে না।

যেভাবেই ধর্ষণ সংঘটিত হোক না কেন, তা এক প্রকার যৌন অত্যাচার এবং এটি একটি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ বটে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা মোতাবেক, যদি কোনো ব্যক্তি নিন্মোক্ত পাঁচ প্রকারের যে কোনো অবস্থায় কোনো নারীর সঙ্গে যৌন সহবাস করে, তবে উক্ত ব্যক্তি ধর্ষণ করেছে বলে গণ্য হবে। প্রথমত, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে; দ্বিতীয়ত, তার সম্মতি ব্যতিরেকে; তৃতীয়ত, তার সম্মতিক্রমে, যে ক্ষেত্রে তাকে মৃত্যু বা আঘাতের ভয় প্রদর্শন করে তার সম্মতি আদায় করা হয়; চতুর্থত, তার সম্মতিক্রমে, যে ক্ষেত্রে লোকটি জানে যে, সে তার স্বামী নয় এবং নারীটি এ বিশ্বাসে সম্মতিদান করে যে, পুরুষটির সঙ্গে সে আইনানুগভাবে বিবাহিত অথবা সে নিজেকে আইনানুগভাবে বিবাহিত বলে বিশ্বাস করে এবং পঞ্চমত, তার সম্মতিক্রমে বা ব্যতিরেকে, যে ক্ষেত্রে সে ১৪ বছরের কম বয়স্ক হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)-এর ৯ ধারা অনুযায়ী, ধর্ষণের অপরাধে যেসব শাস্তির বিধান রয়েছে, তা হল- ধর্ষণের ফলে কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে ধর্ষণকারীর জন্য রয়েছে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত কমপক্ষে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড। একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করলে ধর্ষণকালে বা ধর্ষণের পর যদি তার মৃত্যু ঘটে, তবে উক্ত দলের সবার জন্যই এ শাস্তি প্রযোজ্য হবে। ধর্ষণের চেষ্টা করলে ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ দশ বছর এবং সর্বনিন্ম পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেরও বিধান রয়েছে। কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানো বা আহত করার চেষ্টা করলে ধর্ষণকারী যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। বিচারক সাধারণত শাস্তির পরিমাণ নির্ধারণ করেন অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে। মামলার বিষয়বস্তু (ধর্ষণের শিকার নারীর জবানবন্দি, ডাক্তারি পরীক্ষার ফলাফল এবং অন্যান্য সাক্ষ্য) পর্যালোচনা করে নিজস্ব বিচার-বিবেচনার ভিত্তিতে বিচারক রায় দেন এবং অপরাধীর শাস্তি নির্ধারণ করেন। তবে ধর্ষণের ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার নারীর উচিত হবে ঘটনাটি দ্রুত কাছের কাউকে জানানো। ধর্ষণ প্রমাণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার নারীর শরীর। এ জন্য ধর্ষণের ঘটনার পর যে অবস্থায় আছে, তেমনি থাকা প্রয়োজন। নিজেকে পরিষ্কার বা গোসল করা এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই ঠিক হবে না। ডাক্তারি পরীক্ষার দ্বারা নারীর শরীর থেকে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য-প্রমাণাদি এবং আলামত সংগ্রহ করা যায়, যা ধর্ষণের ঘটনাকে প্রমাণ ও ধর্ষণকারীকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। ঘটনার সময় যে কাপড় শরীরে ছিল, তা অবশ্যই সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। মামলায় এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। আর এ ক্ষেত্রে দ্রুত থানায় অভিযোগ দায়ের কিংবা আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। যত দ্রুত অভিযোগ দায়ের করা যায়, ততই মঙ্গল। কারণ ধর্ষণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষা না করালে এর প্রমাণ তেমন একটা পাওয়া যায় না। তবে থানায় অভিযোগ দায়ের করে কিংবা আদালতে মামলা করে বিচার পাওয়ার চেয়ে সমাজে যেন ধর্ষণের ঘটনা না ঘটে, সে ব্যবস্থা করা অধিকতর মঙ্গলজনক। কারণ Prevention is better than cure (প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম)। সমাজে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সম্মিলিত কণ্ঠে প্রতিবাদ হওয়াটা খুবই জরুরি। ধর্ষকরা অনেক সময় শাস্তি পায় না বলে পরবর্তীকালে স্পর্ধা পেয়ে যায় এবং বীরদর্পে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। এটা দেখে অন্যরাও একই কাণ্ড করতে উৎসাহিত হয়। এভাবে সমাজ, দেশ ও জাতি কলুষিত হয়। প্রতিটি পরিবার থেকে প্রতিটি শিশুকে ছোটবেলা থেকেই নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা প্রয়োজন। কারণ পরিবারই শিশুর আচরণ, মূল্যবোধ, নৈতিকতা ইত্যাদির ভিত্তি তৈরি করে দেয়। এর পাশাপাশি ধর্ষণ রোধে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজসহ সবার একযোগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। প্রয়োজন ধর্ষণকে যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করা। এ ক্ষেত্রে সবাইকে মনে রাখতে হবে, আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্ষণ যেমন একটি বড় ধরনের ফৌজদারি অপরাধ, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও তা বড় ধরনের পাপ। আবার সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও ধর্ষণকে অত্যন্ত ঘৃণ্য, নিন্দনীয় ও খারাপ প্রকৃতির কাজ হিসেবে দেখা হয়। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, যে সমাজে নারীরা বেশি মাত্রায় ধর্ষণের শিকার হন, সেই সমাজের নারীরা দেশ-জাতির উন্নয়নে স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন না। অথচ নারীদের পশ্চাতে রেখে একটি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই সমাজ, দেশ ও জাতির উন্নয়ন, অগ্রগতিসহ সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এবং একটি সুখী, সুন্দর দেশ ও জাতি গঠনে ধর্ষণকে কঠোর হস্তে দমন করা অপরিহার্য।
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু : ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক; বর্তমানে ফিলিপাইনের লাইসিয়াম অব দ্য ফিলিপাইন্স ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কর্মরত
kekbabu@yahoo.com

http://www.jugantor.com/window/2017/08/27/151374/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E2%80%98%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A3%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E2%80%99-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A7%87?


78
বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি কতটুকু?
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু
কালের কন্ঠ, ২২ আগস্ট, ২০১৭

http://www.kalerkantho.com/print-edition/sub-editorial/2017/08/22/534572

দেশের মানুষকে প্রতিবছর ভাগ্যদেবীর যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়ে নানা সমস্যায় জর্জরিত হতে হয়, বন্যা তার অন্যতম। বিগত বছরগুলোর মতো চলতি বছরও দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চলসহ ২১টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকারে দেখা দিয়েছে। পানির ঢল, ব্যাপক নদীভাঙন আর প্রবল বন্যায় গৃহহীন, সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। বন্যার কারণে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে রাস্তায়, স্কুল-কলেজে নির্ঘুম ও দুশ্চিন্তাযুক্ত মনে রাত পার করছে অসহায় ওই মানুষগুলো। প্রতি মুহূর্তে তারা ভোগ করছে নিদারুণ ও অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট আর যন্ত্রণা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর বন্যা বিপর্যয়ে এ পর্যন্ত ১১৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, দেশের ২১ জেলায় ৩২ লাখ ৮৭ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে অবশ্য বন্যার ভয়াবহতার মাত্রা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বন্যাকবলিত এ পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ওই বিপুল জনগোষ্ঠীকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ, সাহায্য-সহযোগিতা ইত্যাদি সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কি না? পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বন্যার্ত মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বটে; কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় সামান্য। বন্যাকবলিত জেলাগুলোর শহর ও উপজেলা পর্যায়ে বা যাতায়াত করা সহজ—এমন এলাকাগুলোতে কিছু ত্রাণ তত্পরতা থাকলেও বন্যাকবলিত অনেক জেলায়, বিশেষ করে যেসব জেলায় দুর্গম চরাঞ্চল রয়েছে, সেখানে ত্রাণ নিয়ে তেমন কেউ যাচ্ছে না বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে এমন অনেক চর রয়েছে, যেখানকার লোকজন স্বাভাবিক শুষ্ক মৌসুমেই অভাব-অনটনের মধ্যে থাকে।

তারা এখন কতটা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে বন্যার গত পাঁচ দিনে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ত্রাণ যায়নি এমন খবরও পাওয়া গেছে। আর বন্যাকবলিত এসব জেলার অনেক মানুষই যে এখন ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত সে কথা বলাই বাহুল্য। এবারের ভয়াবহ বন্যায় জনজীবন যেভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, যত টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে, তা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘটেনি বলে জানা যায়। বন্যার প্রভাবে কিছু কিছু এলাকার চিত্র এমন দাঁড়িয়েছে যে যেসব জায়গায় এই কিছুদিন আগেও যেখানে লোকালয় ছিল; কিন্তু বন্যার কারণে আজ সেখানে লোকালয় বলে কিছু নেই। বন্যায় বসতবাড়ি ডুবে যাওয়ার কারণে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বাঁধ বা উঁচু স্থানে।
এবারের বন্যায় বন্যাকবলিত জেলাগুলোর বেশির ভাগ স্থানের নলকূপ ডুবে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকটও দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ-ব্যাধি। এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয় যে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বন্যা ও বন্যাপরবর্তী সময় নানা ধরনের রোগ-বালাই দেখা যায়। এর মধ্যে পানিবাহিত রোগের প্রভাবই বেশি দেখা যায়। বন্যার সময় ময়লা-আবর্জনা, মানুষ ও পশু-পাখির মলমূত্র এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা একত্র হয়ে এসব উৎস থেকে জীবাণু বন্যার পানিতে মিশে যায় এবং তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে বন্যায় সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার বেড়ে যায়। বন্যায় আক্রান্ত মানুষ যেন পানিবাহিত রোগ থেকে সহজেই রক্ষা পেতে পারে সে জন্য সরকারি-বেসকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে অবশ্যই সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে। আর এসব মানুষ যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কাজেই নিরাপদ পানি ব্যবহার করে তা জানাতে হবে। এর পাশাপাশি এও জানাতে হবে যে তারা যেন বন্যার পানি বা বন্যায় তলিয়ে যাওয়া নলকূপ, কুয়া বা অন্য কোনো উেসর পানি জীবাণু দ্বারা দূষিত থাকায় কোনো অবস্থায়ই এসব পানি দিয়ে হাত-মুখ না ধোয়, কুলি না করে বা পান করা থেকে বিরত থাকে। বন্যার পানিতে গোসল করা, কাপড়চোপড় ধোয়া, থালাবাসন পরিষ্কার করা থেকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। বন্যার পানি ফুটিয়ে পান করার ব্যাপারেও বন্যায় আক্রান্তদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। তবে পানিফোটানোর জন্য জ্বালানির সংকট থাকলে বা ফোটানো সম্ভব না হলে ক্লোরিনের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

চলতি বছর দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলসহ ২১টি জেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে এক প্রকার বাধ্য হয়েছে। দেখা গেছে, উত্তরাঞ্চলের পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতিবছর দেশে বন্যা হলেও বন্যা মোকাবেলায় সরকারসহ জনগণের পক্ষ থেকে কেন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকে না? কেন বন্যা প্রতিরোধ করার জন্য উপযুক্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না? এ ক্ষেত্রে সমস্যা কী কী কিংবা সমস্যা কোথায়? আবার সরকার, বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠনসহ সবার পক্ষ থেকে বন্যা মোকাবেলায় চলতি বছর বন্যাকবলিত মানুষের জন্য উল্লেখযোগ্য তেমন কী করা হয়েছে? সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছরই বন্যার সময় বলতে শোনা যায় যে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে; বন্যায় আক্রান্ত এলাকায় ত্রাণের অভাব নেই ইত্যাদি। এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিবছর দেশের বন্যাকবলিত জেলায় যে পরিমাণ আশ্রয়কেন্দ্র থাকা প্রয়োজন, সেই তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্র নেই। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে স্থান পাওয়া মানুষের সংখ্যা নগণ্য। অসংখ্য মানুষ তখন এক প্রকার বাধ্য হয়েই খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করে, যা মানবিকতা বিপর্যয়ের ভয়াবহ রূপ। এসব মানুষের জন্য শুধু চালই যথেষ্ট নয়। বিশুদ্ধ খাবার পানি, শিশুখাদ্য, ওরস্যালাইনসহ জরুরি ওষুধ-পথ্যেরও প্রয়োজন এসব মানুষের। পাশাপাশি সরকারি ত্রাণসামগ্রী সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করাও জরুরি। বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বন্যাত্রাণের যে সংস্কৃতি কিছুকাল আগেও ছিল। বন্যাদুর্গত মানুষগুলোর প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া আমার, আপনারসহ সবার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। কারণ ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’। তবে এ কথা সবারই স্মরণ রাখা প্রয়োজন, বন্যাকবলিত হওয়ার পর বন্যার্তদের সাহায্য-সহযোগিতা করার চেয়ে বন্যা যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা করা উত্তম। কারণ ‘Prevention is better than cure’। আগামী দিনগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে যেন বন্যায় আক্রান্ত জেলাগুলোর বিভিন্ন জায়গা চিহ্নিত করে সঠিক উপায়ে বাঁধ ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়, নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোয় জিও টিউব (বালুর বড় বড় বস্তা) ফেলার ব্যবস্থা করা, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করাসহ এমন সব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় যেন সহজেই বন্যা মোকাবেলা করা যায়। আর এসব কিছু সম্ভব হলে অর্থাৎ বন্যা মোকাবেলা করার সব প্রস্তুতি পর্যাপ্ত হলে এবং শেষ পর্যন্ত এর সঠিক বাস্তবায়ন ঘটলে নিশ্চয় দেশের জনগণকে তখন আর বন্যার ফলে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে না।

 

লেখক : ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক

kekbabu@yahoo.com

Pages: 1 ... 4 5 [6]