Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - habib

Pages: 1 [2] 3 4 ... 8
16
পরিশ্রম না করলে ‘আফতাব’ হবে!

আফতাব আহমেদ

আফতাব আহমেদ কোচ! ভাবতেই অবাক লাগে। পরিশ্রমের কথা শুনলেই যাঁর জ্বর উঠত, সেই তিনিই কিনা এখন তরুণ ক্রিকেটারদের বলেন, ‘ওয়ার্ক হার্ড’!
গত পরশু দুপুরে প্রিমিয়ার লিগের ‘প্লেয়ার ড্রাফটের’ ফাঁকে লা মেরিডিয়ান হোটেলের পুলপাড়ে কথা হচ্ছিল আফতাবের সঙ্গে। লম্বা দাড়িতে মুখ ঢেকে গেলেও সারল্যমাখা হাসিটা এখনো অমলিন। গত কয়েক বছরে মনের সাগরে বহুবার ঝড় উঠে থেমে গেছে। কিন্তু আফতাবের সঙ্গে কথা বলে সেসব বোঝার উপায় নেই। চরম দুঃখের কথাটি বলেও ‘হা হা’ করে হাসেন।

চট্টগ্রামে বছর খানেক ধরে নিজের নামে ক্রিকেট একাডেমি চালাচ্ছেন। এবার প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের ব্যাটিং কোচেরও দায়িত্ব পেলেন। তা কোচ তিনি হতেই পারেন। ২০১০ সালের মাঝামাঝি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যাওয়া আফতাব ১৬টি টেস্ট খেলেছেন, ৮৫টি ওয়ানডে ও ১১টি টি-টোয়েন্টি। তবে সহজাত প্রতিভা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকলেও পরিশ্রমে অরুচি ছিল সর্বজনবিদিত। কোচ আফতাবের আবির্ভাব তাই প্রশ্ন জাগায়, অন্য কোচদের মতো তিনিও কী করে খেলোয়াড়দের ‘ওয়ার্ক হার্ড’ বলেন!

প্রশ্নটা আফতাবকেই করা হলো। পাওয়া গেল দারুণ এক উত্তর—
‘প্রথম কথা বলব, যদি পরিশ্রম না করো, তাহলে আমার মতো খেলোয়াড় হবে। আর পরিশ্রম করলে আমার চেয়ে অনেক ভালো খেলোয়াড় হতে পারবে। যেটা আমি করিনি, আমার যে ভুল ছিল, সেটা আমি কোনো খেলোয়াড়ের মধ্যে দেখতে চাই না। অনেক ছাত্র আছে আজ আসে, কাল আসে না। পরশু আসে, তরশু আসে না। নো ওয়ে, পরিশ্রম করতেই হবে।’

ক্রিকেটার আফতাবের পরিণতি নিয়ে তাঁর দুঃখটাও বোধ হয় অনুমান করা গেল এ কথায়। পরে পরিষ্কারই বললেন, ‘আমি অবশ্যই ভুল করেছি। বাবা-মা বকা দিলে বাচ্চারা অনেক সময় বোঝে না। কেন বকা দেওয়া হলো, তা কেবল বাবা-মাই বোঝে। আমাকেও তখন অনেকে অনেক কথা বলত, আমি বুঝতে পারিনি। তখন আমিও বাচ্চাই ছিলাম মনে হয়। এখন বুঝতে পারছি, অনেক সিদ্ধান্তই ভুল ছিল।’

আফসোস বেশি হয় বাংলাদেশের খেলা দেখার সময়। সাব্বির আর সৌম্যের ব্যাটিং নেশা ধরিয়ে দেয় চোখেও। কেউ হয়তো ১৫ বলে ৩০ রানের ঝোড়ো ইনিংসে দল জিতিয়ে দিচ্ছে, ইগলের ক্ষিপ্রতায় লুফে নিচ্ছে ক্যাচ। এসব দেখলে আফতাবের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। দর্শকদের চিৎকারের ভেতর লুকিয়ে থাকা অদ্ভুত বাজনা প্রবলভাবে টানতে থাকে। আরেকটিবার যদি ওই বাইশ গজে গিয়ে দাঁড়ানো যেত! হাতে ব্যাট, মাথায় লাল-সবুজ স্কার্ফ...। আফতাব এই দৃশ্য এখন শুধু কল্পনাতেই দেখেন। বাস্তবতা যদিও পুরোই ভিন্ন। সেটার বর্ণনায় কাতর হয়ে ওঠে তাঁর কণ্ঠ, ‘ক্রিকেট ছাড়ার পর বুঝতে পারি, আমাদের দেশের মানুষ বর্তমান নিয়েই ভাবে বেশি। কেউ একটু পিছিয়ে গেলেই তাঁকে সবাই ভুলে যায়। আউট অব সাইট, আউট অব মাইন্ড।’

আফতাব কেন অসময়ে ‘আউট অব সাইট’ হয়ে গেলেন, সেটাও অবশ্য প্রশ্ন। ৩০ বছর বয়সেই খেলা ছেড়ে কোচ হয়ে যাওয়া আফতাব এই প্রশ্নে কিছুটা আবেগপ্রবণ, ‘বাংলাদেশে একটা কথা আছে, সেটা হচ্ছে গিয়ে “চলে না”। এ কথাটা আমি কখনো শুনতে চাইনি। শেষ দিকে আমি ও রকম অবস্থায় চলে আসছিলাম। খেলাটা উপভোগ করছিলাম না। মনে হয়েছিল, সম্মান নিয়ে সরে যাই।’ তবে ভুলের শুরুটা আইসিএলে যাওয়ার মাধ্যমেই হয়েছিল বলে মনে হয় তাঁর। বিসিবির নিষেধাজ্ঞার কারণে ফিরে আসার পরও এক বছর মাঠে নামতে পারেননি। আফতাবের ভাষায়, ‘বসে থেকে থেকে আমাদের শরীর হয়ে গিয়েছিল ইয়া বড়। ফেরাটা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল।’

এক বছরে শরীরে জমা মেদ আর ব্যাটে ধরা মরচে ঝরাতে কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন ছিল। আরামপ্রিয় আফতাবের সেটা পছন্দ না হওয়ারই কথা। কিন্তু কোচের কাজও অনেক, অনেক পরিশ্রম। আফতাবের দৃষ্টিতে তো খেলোয়াড়দের চেয়ে কোচের পরিশ্রমই বেশি, ‘একজন ক্রিকেটার যখন মাঠে আসে, সে ব্যক্তিগত চিন্তা করে। ব্যাটিং শেষ, ওর কাজ শেষ। কিন্তু একজন কোচ, তিনি যদি একাডেমির হন তাকে ৭০-৮০ জনের দায়িত্ব নিতে হবে। দলের কোচ হলে অন্তত ১৫-২০ জনের দায়িত্ব। কোচিংটা পুরোপুরি ভিন্ন। অনেক পরিশ্রম। হা হা হা...।’

পরিশ্রমের কথা হাসতে হাসতে বলতে পারছেন আফতাব! পারছেন, কারণ কোচ-খেলোয়াড়ের পরিশ্রমে ভিন্নতা দেখেন তিনি, ‘পরিশ্রম দুই ধরনের। একটা শারীরিক, আরেকটা মানসিক। ক্রিকেট খেললে শারীরিক পরিশ্রম হতো। শারীরিক পরিশ্রম আমার পছন্দ না। কোচিংয়ে মানসিক পরিশ্রম বেশি। অনেক কাজ একসঙ্গে করতে হয়। চাপ থাকে বেশি। একটা মিনিটও বসতে পারবেন না।’ দ্বিতীয় ধরনের পরিশ্রমের সঙ্গে আফতাব এতটাই মানিয়ে নিতে পেরেছেন যে, একদিন একাডেমিতে না গেলেই কেমন কেমন লাগে। কীভাবে এটা পারছেন তা ভেবে অবাক হন আফতাবও, ‘নিজেও জানি না, এটা আমার মধ্যে কীভাবে এল।’

যেভাবেই আসুক, এসে তো গেছে! এখন কোচ হিসেবেও শীর্ষে যাওয়ার লক্ষ্য। সে জন্য অবশ্য আফতাবের নিজেকেও নিজে বলতে হবে, ‘ওয়ার্ক হার্ড’।

17
‘বাংলাদেশের উন্নতি দেখে আমি মুগ্ধ’

     
বেঙ্গালুরুর রিটজ-কার্লটন হোটেলে প্রথম আলোর মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ l ছবি: উৎপল শুভ্র

অস্ট্রেলিয়ার তো বটেই, অনেকের চোখে তিনি সর্বকালেরই অন্যতম সেরা অধিনায়ক। কারও চোখে তিনি ক্রিকেট দার্শনিক। তবে স্টিভ ওয়াহ এখন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। ব্যস্ত নিজের চ্যারিটি আর লেখালেখি নিয়েও। বেঙ্গালুরুর রিটজ-কার্লটন হোটেলে সেই স্টিভ ওয়াহর মুখোমুখি উৎপল শুভ্র। দীর্ঘ আলাপচারিতায় বড় ওয়াহ নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের বাইরেও কথা বলেছেন সর্বকালের সেরা দল, টেন্ডুলকার-লারা, ওয়ার্নের সঙ্গে তিক্ততা ও বাংলাদেশ নিয়ে—

উৎপল শুভ্র: আপনার মতো ক্রিকেটারদের বেশির ভাগই যেখানে ধারাভাষ্য হোক বা কোচিং, ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকেন, সেখানে আপনি কিনা হয়ে গেলেন ব্যবসায়ী...

স্টিভ ওয়াহ: যখন খেলতাম, তখন থেকেই ব্যবসা, চ্যারিটি, বই লেখা ক্রিকেটের বাইরের এমন সব বিষয়ে আমার আগ্রহ ছিল। তখন থেকেই আমি ক্রিকেট-পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। আমার পরিবার আছে, তিনটি সন্তান আছে। এ কারণেই ঠিক করেছিলাম, আমি ক্রিকেটের সঙ্গে থাকব না। নইলে খেলা ছেড়ে লাভ কী হলো? আমি পরিবারকে সময় দিতে চাই, আমার চ্যারিটি নিয়ে কাজ করতে চাই। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে আমার চ্যারিটি নিয়ে ব্যস্ত হতে চেয়েছি। ব্যবসা করার আগ্রহটাও ছিল। তবে ক্রিকেটের কথা যদি বলেন, এমসিসি ও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের হয়ে কিছু কাজ করেছি। মেন্টর হিসেবেও। ক্রিকেট থেকে একেবারে হারিয়ে গেছি, তা বলা যাবে না।

শুভ্র: সর্বকালের অন্যতম সেরা একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আপনি, আপনার নিজের দৃষ্টিতে কী উত্তরাধিকার (লিগ্যাসি) রেখে গেছেন?
স্টিভ ওয়াহ: আমি ঠিক জানি না, একে লিগ্যাসি বলা যায় কি না, আমি অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়দের অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠায় অনেক বড় ভূমিকা রেখেছি। সফরে যেন ক্রিকেটাররা পরিবারের সান্নিধ্য পান, এটাও নিশ্চিত করেছি। শুধু খেলার কথা যদি বলেন, সেটি হবে সব সময় জেতার জন্য খেলা, ইতিবাচক খেলা। দর্শক-সমর্থকদের কথা ভেবেছি। সবার মধ্যে এই বোধটা জাগিয়েছি, ব্যাগি গ্রিন মাথায় দিতে পারাটা একটা সৌভাগ্য।

শুভ্র: ১৯৯৯ বিশ্বকাপে আপনারা নতুন কিছু জিনিস শুরু করেছিলেন। জার্সিতে নম্বর দেওয়া, ক্যাপের পেছনে নম্বর দেওয়া। প্রতি ম্যাচের আগে দলের সবাইকে কবিতা লিখতে বলা। ফাইনালের আগে লিখেছিলেন আপনি, প্রথম লাইনটা বোধ হয় ছিল, ‘চলো, শোয়েব আখতারের পশ্চাদ্দেশে লাথি মেরে শুরু করি।’ এর সবই তো ছিল গতানুগতিক চিন্তাভাবনার বাইরে!
স্টিভ ওয়াহ: (হাসি) ঠিক কবিতা বলব না, অনুপ্রেরণামূলক কিছু লেখা আর কী! আইডিয়াটা ছিল আমাদের ফিটনেস ট্রেনারের। তো আমি ভাবলাম, শুধু অধিনায়ক কেন, সবাই সবাইকে অনুপ্রেরণা দিই। আর জার্সি-ক্যাপে কে দেশের কত নম্বর টেস্ট বা ওয়ানডে ক্রিকেটার, সেটি তো এখন সব দেশই করে। এটা আমার অনেক গর্বের বিষয়। এ ছাড়া অভিষিক্তদের আয়োজন করে ব্যাগি গ্রিন দেওয়াটাও আমিই ঘটা করে শুরু করেছিলাম। আরেকটি বিষয় মানুষ ভুলেই গেছে, হাতের উল্টো দিক দিয়ে স্লোয়ার বল করা। এটা তো আমারই আবিষ্কার।
 
শুভ্র: আমার মনে আছে। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে ডেথ ওভারে স্লোয়ার বল করে আপনি মাত করে দিয়েছিলেন। আপনাকে ‘আইসম্যান’ বলা শুরু হলো তখনই...
স্টিভ ওয়াহ: হ্যাঁ, এখন তো প্রায় সবাই স্লোয়ার বল করে। তাদের অনেকেই জানে না, আমিই এটি প্রথম করেছি। এটাও আমার জন্য অনেক গর্বের। কারণ সবাই আমাকে ব্যাটসম্যান হিসেবেই দেখে, কিন্তু বোলার হিসেবেও আমার অবদান আছে।
 
শুভ্র: আপনি ব্যাগি গ্রিনের মহিমার কথা বললেন। কিন্তু ইয়ান চ্যাপেলের মতো কেউ কেউ এটাকে আদিখ্যেতা মনে করেন। চ্যাপেল তো এমনও বলেছেন, নিজের ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ কোথায় ছুড়ে ফেলেছেন, তা জানেনও না...
স্টিভ ওয়াহ: আমি তাঁদের কথাকে পাত্তা দিই না। আমার ক্যারিয়ারজুড়েই এমন কয়েকজন সব সময় নেতিবাচক কথা বলে গেছেন। আমি জানি না তাঁদের সমস্যাটা কী, ঈর্ষা নাকি অন্য কিছু। হয়তো আমি তাঁদের কাছ থেকে খুব বেশি উপদেশ চাইনি। আমি সব সময় নিজের মতো চলেছি, নিজেই নিজের পথ তৈরি করতে চেয়েছি। আমি চেয়েছি কোনো ভুল করলে সেটি যেন আমার নিজেরই ভুল হয়, অন্য কারও করা ভুল যেন নতুনভাবে না করি। এটা সবার ভালো না-ও লাগতে পারে। আমার ধারণা, ব্যাগি গ্রিন সব সময়ই বিশেষ কিছু হয়ে থাকবে। আমার সময় তো বটেই, এখন নতুন ছেলেরাও সেই ধারা বজায় রেখেছে। গর্ব করার মতো একটি ট্র্যাডিশন তৈরি করেছি আমি। অন্য দলগুলো কীভাবে এটি দেখে, তা-ও জানি। তাদের নিজেদের এ রকম কিছু নেই, এ নিয়ে তারা অবশ্যই হতাশ।
 
শুভ্র: এটির বোধ হয় একটা প্রতীকী অর্থও আছে। আমি দেশের জন্য খেলছি, নিজের সেরাটা ঢেলে দিতে হবে, এসব মনে করিয়ে দেয়...
স্টিভ ওয়াহ: অবশ্যই। এসব প্রতীক, রং, নাম সবকিছু একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর মানে আপনি বড় কিছুর অংশ। আপনি দলবদ্ধ হয়ে কিছু করলে সেটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, আর এর সঙ্গে একটি প্রতীক যুক্ত হলে সেটি আরও শক্তিশালী হয়ে যায়। প্রতিপক্ষের কাছে আপনাকে আরও দুরূহ মনে হয়। আপনি কিসের জন্য খেলছেন, এসব প্রতীক দিয়েই তা বোঝা যায়।

শুভ্র: এবার আপনার দল নিয়ে শুনতে চাই। মার্ক টেলরের সময়ই অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের এক নম্বর দল। নিজে দায়িত্ব পেয়েই প্রথমে কী করেছিলেন? বড় অধিনায়কেরা তো দলে তাঁর নিজের ছাপ রাখতে চায়...
স্টিভ ওয়াহ: আমি প্রথমেই ডেড রাবারে হেরে যাওয়ার অভ্যাসটা দূর করতে চেয়েছি। দেশে তো বটেই, দেশের বাইরেও প্রতিটি ম্যাচই জেতার লক্ষ্য ঠিক করেছি। এর আগে সবাই বলত, আপনি সব টেস্ট জিততে পারবেন না। আমরাই প্রশ্ন করলাম, কেন নয়? কেউ পারবে না বললেই মেনে নিতে হবে নাকি! নিজেরাই একটা বেঞ্চমার্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছি। চেয়েছি, সবকিছুই একটু ভিন্নভাবে করতে। এসব পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন জন বুকানন। আমিই তাঁকে কোচ হিসেবে চেয়েছিলাম। কারণ আমি জানতাম, দলে অনেক নতুন খেলোয়াড় আসবে। পরের ধাপটায় যেতে তাঁকেই আমাদের দরকার ছিল।
 
শুভ্র: আপনার দলে তো অনেক গ্রেট খেলোয়াড় ছিলেন। আর গ্রেট প্লেয়ার মানেই ইগো। এত তারকার ইগো সামলানোটাই কি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল?
স্টিভ ওয়াহ: হ্যাঁ, অবশ্যই। এর আগেও অনেক দারুণ সব দল ছিল, যারা এটা পারেনি বলে সফল হয়নি। চ্যালেঞ্জের বড় একটা অংশই ছিল সবাই সন্তুষ্ট, এ ব্যাপারটি নিশ্চিত করা। সবার মনোযোগ এক দিকেই আছে কি না। মাঝেমধ্যে নিজের ইগোকেও পাশে সরিয়ে রাখতে হয়। দলের সিনিয়রদের সহযোগিতা খুব দরকার হয়। আমি যেটা করেছি, দলে একজন না, দশজন সহ-অধিনায়ক সৃষ্টি করেছিলাম। ওরা ছিল আমার চোখ ও কান। দলে কোনো সমস্যা হলে যেন সেটা আমার নজর না এড়ায়। দল সামলাতে হলে অন্যদের সহযোগিতা লাগবেই। কিন্তু দিন শেষে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কঠিন সিদ্ধান্তগুলো জানাতে হবে।
 
শুভ্র: কাকে সামলাতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে?
স্টিভ ওয়াহ: আমি এ প্রশ্নের উত্তর দেব না। আমি দলের খেলোয়াড়দের দুই ভাগে ভাগ করতাম। একটা দল যাদের দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। আরেকটা দল যাদের কম। কারও কারও ক্ষেত্রে একটু বাড়তি মনোযোগ কিন্তু লাগেই। এটাই ভালো, একটা দলে সব ধরনের খেলোয়াড়ই থাকতে হয়। সবাই এক রকম হলে হবে না, এমন কিছু খেলোয়াড় থাকা উচিত, যারা আপনাকে প্রশ্ন করবে। এটা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই সত্যি, সবাই আপনাকেই সমর্থন করবে না। তবে বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা একটা জায়গায় এসে মিলতে হবে। শেষ পর্যন্ত সবাই একই জিনিস চাইছে কি না, সেটাই আসল কথা।

শুভ্র: আপনার ক্যারিয়ারের শুরু তো অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ঘোর দুঃসময়ে। সেই সময়ে একের পর এক পরাজয়ের অভিজ্ঞতা কি আপনার অধিনায়কত্বে কোনো সাহায্য করেছে?
স্টিভ ওয়াহ: অবশ্যই। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। টেস্ট ক্যারিয়ারে আমার প্রথম জয় পেয়েছি ১৩তম টেস্টে। ২৬ টেস্ট পর প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছি। আমার প্রথম চার বছর ভয়াবহ কেটেছে। তখন আমরা এমন হেরে চলেছি যে, সমর্থকেরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ওই সময়টা আমি কখনো ভুলিনি। চাইনি, সেটি আবার কখনো ফিরে আসুক। আমি তাই কখনোই আত্মতৃপ্তিতে ভুগিনি, কখনোই কোনো ঢিলেমি আসেনি আমার মধ্যে। কখনো কখনো ভালো হতে চাইলে সবচেয়ে খারাপটা দেখে নেওয়া ভালো, ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি তা যথেষ্ট দেখেছি।

শুভ্র: এবার ব্যাটসম্যান স্টিভ ওয়াহ নিয়ে কথা বলি। অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকদের মুখে শুনেছি, তরুণ বয়সে আপনি নাকি খুব মেরে খেলতেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুতেও ওভাবেই খেলতেন। কিন্তু আমরা যে স্টিভ ওয়াহকে দেখেছি, তিনি তো অন্য রকম। পুল-হুক বলতে গেলে করতেনই না...
স্টিভ ওয়াহ: এটিকে বলতে পারেন, কমন সেন্স প্রয়োগ করার ব্যাপার। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেস অ্যাটাকের তুঙ্গ ওই সময়টায় পুল-হুক করতে গেলে হয় আপনি আহত হবেন বা খুব দ্রুত আউট হয়ে যাবেন। আমি তাই ওসব খেলা ছেড়ে দিয়েছিলাম। প্রথম দিকে আমি দর্শকদের কথা ভেবে খেলতাম। দ্রুত রান নিতাম, ছক্কা মারতাম। কিন্তু ওভাবে খেলে বড় রান পাচ্ছিলাম না। তবে ক্যারিয়ারের শেষ দিকে কিন্তু আমি আবারও সেই তরুণ বয়সের মতো খেলতে শুরু করেছিলাম। মাঝে মাঝে ভাবি, পুল শট খেলাটা চালিয়ে যাওয়া উচিত ছিল, কারণ শটটা আমি ভালোই খেলতাম। তবে একটি রুটিনে ঢুকে পড়লে তা বদলানো খুব কঠিন। বিশেষ করে পুল-হুক বাদ দিয়ে যখন রান করতে শুরু করলাম, তখন আর খেলায় খুব বেশি পরিবর্তন আনতে চাইনি।
 
শুভ্র: আমি আপনাকে যেমন পছন্দ করতাম, তেমনি মার্ক ওয়াহকেও। অবশ্যই ভিন্ন কারণে। আপনাকে ব্যাটিংয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা আর হার না-মানা মানসিকতার জন্য। মার্কের ক্ষেত্রে মনে হয় কারণ বলার দরকার নেই। কিন্তু আপনার কি কখনো মনে হয়নি, ইশ্‌, যদি মার্কের মতো ব্যাটিং করতে পারতাম! মার্ক ওয়াহর ব্যাটিং দেখে মনে হতো, ব্যাটিং এত সহজ!
স্টিভ ওয়াহ: না, মার্কের ব্যাটিং আসলে সহজ ছিল না। দেখতেই মনে হতো সহজ। ছোটবেলায় আমরা দুজন যখন একসঙ্গে খেলতাম, তখন কিন্তু আমিই বেশি দ্রুত রান করতাম। আমি খেলার ধরন বেশি পাল্টেছি। কে জানে, মার্কেরও মনে হয়ে থাকতে হতে পারে, ‘ব্যাটিংয়ের ধরন একটু পাল্টালে আমি হয়তো আরও বেশি রান করতে পারতাম। তা হয়তো দৃষ্টি সুখকর হতো না, কিন্তু রান তো...। শেষ দিকে ও কিন্তু একটু পরিবর্তন এনেছিল। আরেকটু আগে তা করলে হয়তো আরও কিছু রান পেত। তবে তখন সে আর একই ব্যাটসম্যান থাকত না। আমার ব্যাটিং অবশ্যই ওর মতো দৃষ্টিনন্দন ছিল না। তবে দিন শেষে কিন্তু কথা একটাই—রান এল কি না। আর একটা দল আক্রমণাত্মক আকর্ষক ক্রিকেট খেলতে চাইলে সব ধরনের ক্রিকেটারই দরকার।
 
শুভ্র: ধরুন, আশির দশকের ওই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে আপনার দলের খেলা হলো, কে জিতত?
স্টিভ ওয়াহ: দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো। ম্যাচগুলো খুব ক্লোজ হতো। তবে এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। কোথায় খেলা হচ্ছে, পিচ কেমন। ৯০ মাইল গতিতে চারজন ফাস্ট বোলার বল করছে, হেলমেট ছাড়া তাঁদের খেলা যা-তা কথা নয়। আর তখন তো বাউন্সার দিতেও কোনো বাধা ছিল না। আমার ধারণা, হেলমেট-যুগে ও বাউন্সার বাধ্যবাধকতার সময়ে আমরাই জিততাম। আর ওসব কিছু না থাকলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই হয়তো এগিয়ে রাখতে হবে।
 
শুভ্র: আপনি তো ক্রিকেটের ইতিহাসের মনোযোগী ছাত্র। আপনাকে যদি ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ৩টি দল বেছে নিতে বলি...লোকে ১৯২১ সালের ওয়ারউইক আর্মস্ট্রংয়ের টিমের কথা বলে, ১৯৪৮ সালে স্যার ডনের ‘দ্য ইনভিন্সিবলস’ আসে, আশির দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এর পর আপনার দল...
স্টিভ ওয়াহ: খুব কঠিন প্রশ্ন। আশির দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আমি দেখেছি, টানা পনেরো বছর অপরাজিত ছিল তারা। ২২ বছর আমরা ওদের হারাতে পারিনি। অবিশ্বাস্য এক রেকর্ড! তত দিনে নিরপেক্ষ আম্পায়ার চলে এসেছে, তার পরও আমরা অনেক দিন তাদের হারাতে পারিনি, এতেই প্রমাণ হয় তারা কতটা ভালো ছিল। এই দলটি নিশ্চয়ই সেরাদের মধ্যেই থাকবে। ১৯৪৮ সালের অস্ট্রেলিয়ার কথা বললেন...১৯২১ সালের অস্ট্রেলিয়ান দল...কে জানে! এগুলোর মধ্যে বেছে নেওয়া খুব কঠিন। এই বিচারের ভারটা তাই অন্যদের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি। তবে এটা বলতে পারি, আমি যে দলটিতে খেলেছি, সেটি যেকোনো দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারত।

শুভ্র: ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনার খেলা সবচেয়ে কঠিন স্পেল কোনটি?
স্টিভ ওয়াহ: পার্থে (কার্টলি) অ্যামব্রোস ও (ইয়ান) বিশপ। লেংথ থেকে বল ফণা তুলে উইকেটের ৩০ মিটার পেছনে চলে যাচ্ছিল। সম্ভবত প্রথমবারের মতো ব্যাট করতে নেমে আমার মনে হয়েছিল, আমি কীভাবে রান করব! অ্যামব্রোস তখন নিজের সেরা সময়ে, পার্থের ওই বাউন্সি পিচ, অন্য প্রান্তে বিশপ...পিঠের ইনজুরিতে না পড়লে যে হতো সর্বকালের সেরাদের একজন।
 
শুভ্র: নির্দিষ্ট কোনো উইকেট বা বিশেষ কোনো দিনে নয়, সব মিলিয়ে আপনার খেলা কঠিনতম বোলার কে?
স্টিভ ওয়াহ: খুব, খুব কঠিন প্রশ্ন। অ্যালান ডোনাল্ড দারুণ ছিল, আকরাম ও ইউনিস—দুর্দান্ত এক কম্বিনেশন। আমি যখন শুরু করি, ম্যালকম মার্শাল তখনো দুর্দান্ত। হয়তো সেরা সময় পার করে এসেছেন, তার পরও। অ্যামব্রোস...একজন কার কথা বলি, আবদুল কাদিরও দারুণ এক বোলার ছিলেন। প্রথম দিকে তাঁর বলে আমি হাবুডুবু খেয়েছি, কিছুই বুঝতে পারতাম না। তবে যদি একজনকে বেছে নিতেই হয়, আমি বলব অ্যামব্রোস।

শুভ্র: ঠিক জানি না, আমার সঙ্গে একমত হবেন কি না, অনেকে শেন ওয়ার্নকে যে লেগ স্পিনকে পুনর্জন্ম দেওয়ার কৃতিত্ব দেন, আমার মতে তা আবদুল কাদিরের প্রাপ্য। ওয়ার্ন লেগ স্পিনকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন, কিন্তু হারিয়ে যাওয়া লেগ স্পিনকে আবার ফিরিয়ে এনেছেন কাদির...
স্টিভ ওয়াহ: হ্যাঁ, তাঁর আরও কৃতিত্ব প্রাপ্য। সে ছিল গ্রেট বোলার। আপনি ঠিকই বলেছেন, কাদির ছিল জাদুকরের মতো, বল অনেক টার্ন করাতে পারত, মুহূর্তের মধ্যে ঘুরিয়ে দিতে পারত ম্যাচ। অন্যদিকে বল ঘুরিয়ে মুরালি যেমন অফ স্পিনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তবে কোনো একজন বোলার যদি খেলাটা পুরো বদলে দিয়ে থাকে, সেটি হলো শেন (ওয়ার্ন)। আবদুল কাদিরের পর ও লেগ স্পিনকে নতুন একটা উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তবে আবদুলও অসাধারণ এক বোলার ছিলেন।

শুভ্র: আপনার কী মনে হয়, ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনি প্রাপ্য স্বীকৃতি পাননি? শচীন টেন্ডুলকার বা ব্রায়ান লারার সঙ্গে তো আপনার নাম সেভাবে বলা হয়নি...
স্টিভ ওয়াহ: ইন্টারেস্টিং! টেন্ডুলকার ও লারা যখন তাদের সেরা সময়ে, আমার রেকর্ডও ওদের সমতুল্য ছিল। কখনো কখনো হয়তো আরও ভালো। ৯৫ টেস্টে আমি বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ব্যাটসম্যান ছিলাম। ওরা যখন খেলছিল, তখন প্রায় দুই বছর আমি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। তার পরও লোকে ওদের কথাই বেশি বলত হয়তো ওদের খেলার ধরনের কারণে। তবে আমি রান করতে পেরেই খুশি ছিলাম। আমি ওদের সময়ে খেলতে পেরে খুশি। ওরা নিজেদের দলের জন্য যা করত, আমিও আমার দলের জন্য ততটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিলাম।
 
শুভ্র: একটা ক্লিশে প্রশ্ন করি, টেন্ডুলকার-লারার মধ্যে আপনার কাকে পছন্দ ছিল?
স্টিভ ওয়াহ: আবারও একটি কঠিন প্রশ্ন। ওরা দুজনই ছিল দুর্দান্ত। দুজনই গ্রেট প্লেয়ার। এমনকি প্রতিপক্ষ দলে থাকলেও ওদের ব্যাটিং উপভোগ করতে আপনি বাধ্য। আমার ধারণা, কঠিন সময়েই নিজের সেরাটি বের করে আনার ক্ষমতা ছিল লারার, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের খেলাটাকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যেত, তবে টেন্ডুলকারও তা-ই। আমি আসলে এভাবে কাউকে বেছে নেওয়ার ব্যাপারটি পছন্দ করি না।

শুভ্র: গত কিছুদিন বাংলাদেশের খেলা দেখেছেন, খোঁজখবর রাখেন?
স্টিভ ওয়াহ: হ্যাঁ, গত এক যুগে বাংলাদেশের উন্নতি দেখে আমি মুগ্ধ। তবে আমি চাই, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টির বদলে ওরা টেস্ট ক্রিকেটে আরও মনোযোগ দিক। বাংলাদেশকে উন্নতি করতে চাইলে অবশ্যই টেস্টে ভালো করতে হবে। তরুণদের বোঝাতে হবে, টেস্ট ক্রিকেটই আসল ক্রিকেট, টি-টোয়েন্টি না। আর এটা জানানোর দায়িত্ব অধিনায়ক কিংবা সিনিয়রদের।


শুভ্র: ২০০৩ সালে বাংলাদেশের যে ক্রিকেটাররা অস্ট্রেলিয়া সফর করেছিলেন, তাঁরা আপনার ব্যাপারে মুগ্ধ হয়ে ফিরেছিলেন। আপনি বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে গিয়ে ওঁদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, টিপস দিয়েছিলেন...
স্টিভ ওয়াহ: কেউ আমাকে ক্রিকেট নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে আমি সব সময় উত্তর দিই। আমি নিজের চেষ্টায় সফল হয়েছি, তাই কেউ যখন আমার সাহায্য চায়, সেটিকে আমার প্রতি শ্রদ্ধা হিসেবে দেখি। বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে আমার ভালো সময় কেটেছিল। কেয়ার্নসে প্রথম ইনিংসে ওরা খুব ভালো খেলেছিল। ডারউইনে পরের টেস্টেও খারাপ না। ওদের একটু সাহায্য করতে পেরে ভালো লেগেছিল।

শুভ্র: এই যুগে খেলতে পারলে কি ভালো লাগত? আপনার সময় তো টি-টোয়েন্টি ছিল না, এমনকি মনে হয় যদি টি-টোয়েন্টি খেলা যেত...
স্টিভ ওয়াহ: অবশ্যই। এটি দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ। নিজেকে অনেক বেশি প্রকাশ করা যায়। অর্থনৈতিক দিক থেকেও ভালো। সবচেয়ে বড় কথা, এটি বিনোদনের মতো, পরিবারের সবাই মিলে উপভোগ করা যায়।
 
শুভ্র: আপনি বোধ হয় জানতেন, এই প্রসঙ্গটা আসবেই। বিষয় শেন ওয়ার্ন, আপনার সম্পর্কে তো যা-তা বলে যাচ্ছে...
স্টিভ ওয়াহ: সব সময়ই এ ধরনের কেউ না কেউ থাকে। অবসর নেওয়ার পর ওর মুখে খই ফুটছে, এই যা। আমাদের সম্পর্ক কিন্তু স্বাভাবিকই ছিল। আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা ছিলাম সুখী এক দল। আমাদের দারুণ সব স্মৃতি আছে। আমি সেসব নিয়েই থাকতে চাই।

শুভ্র: শেন ওয়ার্ন তো তাঁর সময়ে সেরা অস্ট্রেলিয়া দলেও আপনাকে রাখেননি। অবিশ্বাস্য!
স্টিভ ওয়াহ: (শ্লেষ মেশানো হাসি) আমি জানতাম না সে নির্বাচক হয়েছে!

Source: http://www.prothom-alo.com/sports/article/808606/%E2%80%98%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BF-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E2%80%99

18
এশিয়া কাপ মাতিয়েছেন সাব্বির রহমান, এখানে প্রথম দুই ম্যাচেই দারুণ দুটি ইনিংস খেলেছেন তিনি নিজে (তামিম ইকবাল) । তার পরও কাল ধর্মশালায় উৎপল শুভ্রকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তামিম ইকবাল দাবি করলেন, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের সেরা ব্যাটসম্যান তাঁরা কেউই নন!

২২ গজে তামিম যখন ছন্দে l

*ব্যাটসম্যানদের কখনো কখনো এমন একটা সময় আসে, যখন ব্যাটিং করাটা খুব সহজ মনে হয়। আপনার কি এখন সেই সময় চলছে?
তামিম ইকবাল: সেই সময় বা সেরা সময়, যা-ই বলুন আমি ঠিক জানি না। তবে এটা জানি, ভালো ব্যাটিং করছি। মূল কথা প্ল্যান, প্ল্যানটা ভালো থাকলেই ব্যাটিংও ভালো হয়। মাঠে প্ল্যানটা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারাটাই আসল।

* সাম্প্রতিক সময়ের কথা যদি বলি, সেই প্ল্যানটা কী? এটা নিশ্চয়ই প্রতিপক্ষ, ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী বদলে যায়...
তামিম: তা তো যায়ই, তবে এখন আমি যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করি। হঠাৎ করে তাড়াহুড়ো করতে গেলে শট যা পারি তা না মেরে ওই শট মারতে হবে, জোরে মারতে হবে এসব মাথায় চলে আসে। রান করার অনেক সুযোগ উল্টো হাতছাড়া হয়ে যায়। তা ছাড়া টি-টোয়েন্টি এমন দ্রুতলয়ের খেলা যে, মাথা খুব ঠান্ডা রাখতে হয়।
 
* এটা তো সবাই জানে, কিন্তু জানা আর করা ভিন্ন ব্যাপার। তা করতে ভিন্ন কিছু কি করছেন, মেডিটেশন-জাতীয় কিছু?
তামিম: আমি নিজের সঙ্গে কথা বলি। নিজেই নিজেকে বলি—শান্ত থাকো, শান্ত থাকো। দলের অনেক সিনিয়র আমাকে মেডিটেশন করতে বলেছে। বিশ্বের সব বড় অ্যাথলেটই এটি করে। আমিও হয়তো করব, তবে আপাতত এমন কিছু করছি না।

* টি-টোয়েন্টিতে আপনার রেকর্ড খুব ভালো ছিল না। ইদানীং যে ভালো খেলছেন, সেই রহস্যটা কী?
তামিম: টি-টোয়েন্টি নিয়ে আমার খুব হতাশা ছিল। আসলেই ভালো করছিলাম না। কোচের সঙ্গে অনেক কথা বলেছি। উনি আমাকে ভালো কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। গত বিপিএলে কঠিন উইকেটে খেলাটাও খুব কাজে এসেছে। কঠিন উইকেটে আপনি যা খুশি তা করতে পারবেন না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, আমি এখন টি-টোয়েন্টিটা উপভোগ করতে শুরু করেছি। কোনো কিছু উপভোগ না করলে ভালো করা যায় না।

* আমরা তো আমাদের মতো বুঝি। আপনার চোখে টেস্ট-ওয়ানডের তুলনায় টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ে মূল পার্থক্যটা কী?
তামিম: কয়েক দিন আগে বিরাট কোহলির একটা ইন্টারভিউ দেখছিলাম। ও বলছিল, আমি বিগ হিটার না। গায়ে এমন শক্তিও নেই যে, গেইলের মতো প্রথম বলেই ছক্কা মেরে দেব। আমি তাই প্রপার ক্রিকেট শটই খেলি। টেস্টে যেমন খেলি, তেমনই খেলি। কোহলির ওই কথাটা থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। টি-টোয়েন্টিতে ওর গড় ৫০, এটা কিন্তু বিরাট ব্যাপার।
টেস্ট ম্যাচ আলাদা। ওটার সঙ্গে আমি তুলনাই করব না। ওখানে সময় পাওয়া যায়, সময় নিতে হয়। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি আমি একইভাবে দেখি। প্রথম বল ভালো হলে ঠেকাব, মারার হলে মারব। তবে টি-টোয়েন্টিতে একটু বাড়তি ঝুঁকি নিতে হয়। প্রথম ৬ ওভার পাওয়ার প্লেটা কাজে লাগাতে হয়।

* এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা তো আপনার দারুণ শুরু হলো। পরপর দুটি ভালো ইনিংস খেললেন...
তামিম: দেখেন, একটা টুর্নামেন্টে সবাই ভালো খেলে না। ২০১৫ বিশ্বকাপে যেমন রিয়াদ ভাই আর মুশফিক ভালো খেলেছে। সবাই সব সময় রান করবে না, এটাই নিয়ম। যারা করবে, তারা যদি প্রতি দ্বিতীয় ইনিংসে রান করে, তাহলে দলের কাজটা সহজ হয়।

* বিশ্বকাপ হলো সুপার স্টার হওয়ার সুযোগ। ২০১৫ বিশ্বকাপে দুটি সেঞ্চুরি যেমন অমর হয়ে গেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বলে কি ভালো করার তাড়নাটা একটু বেশি?
তামিম: তা তো অবশ্যই। টিমের প্রত্যেকের মধ্যেই এটি আছে। পুরো বিশ্ব দেখছে, ইডেন গার্ডেনের মতো বিখ্যাত সব স্টেডিয়ামে খেলা হবে। এখানে ভালো খেললে আনন্দটা অনেক বেশি হবে। আমি হয়তো আমার ক্যারিয়ারে ১০০টা ছয় মেরেছি, মানুষ কিন্তু এখনো একটা ছয় নিয়েই কথা বলে। জহির খানকে ত্রিনিদাদে মারা ওই ছয়টা। কারণ ওটা ছিল বিশ্বকাপ। আমি হয়তো ১০-১২টা সেঞ্চুরি করেছি। কিন্তু রিয়াদ ভাইয়ের দুটি সেঞ্চুরি আলাদা। কারণ তা ছিল বিশ্বকাপে। এখানে ভালো করলে সবাই তা মনে রাখে।

* আপনার আর সৌম্যর ভালো একটা শুরুর ওপর দলের আশা-নিরাশা দোলে। সৌম্য যে বড় রান পাচ্ছেন না, এটা নিয়ে সিনিয়র পার্টনার হিসেবে ওর সঙ্গে কোনো কথা বলেছেন?
তামিম: আমি আবারও বলি, সৌম্য হলো বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। মনে হয়, পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পর সংবাদ সম্মেলনে সৌম্যকে নিয়ে প্রশ্ন করায় আমি এই কথাটা বলেছিলাম। পরের ম্যাচেই ও সেঞ্চুরি করেছিল। এখনো আমি একই কথা বলব। এটা এমন একটা ফরম্যাট, যাতে একটা-দুটি ম্যাচে খারাপ করলেই প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। ওর যে ক্ষমতা, বড় রান পাওয়াটা শুধু সময়ের ব্যাপার। মুশফিককে নিয়েও একই কথা বলব। ওরা ফর্মে ফিরলে আমাদের দলের অবস্থা কী হবে ভাবেন।

* মুশফিকের প্রসঙ্গটা আমিই তুলতাম। সম্প্রতি তিনি যে রান পাচ্ছেন না, আপনার ব্যাখ্যাটা কী?
তামিম: আমি জানতাম, হি ওয়াজ ডিউ টু ফেইল। গত ২-৩ বছরে সব ফরম্যাটে ও ছিল বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। এমন একটা সময় তো আসতে বাধ্য। তবে আমি এখনো মনে করি, ও বাংলাদেশের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান। পিএসএলে ওকে যখন বসিয়ে রেখেছিল, কোচ মুশতাক আহমেদকেও এ কথাই বলেছি। ওর হাতে যে শট আছে, ওর যে ক্ষমতা, আমার কোনো সন্দেহই নেই, মুশফিকই টি-টোয়েন্টিতে আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান।
 
* বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাফল্যে মাশরাফি বিন মুর্তজার অধিনায়কত্বের বড় ভূমিকা দেখেন সবাই। অধিনায়ক মাশরাফি সম্পর্কে আপনার কী মূল্যায়ন?
তামিম: এভাবে বলি, আমি যদি দল থেকে বাদ পড়ে যাই, কেউ না কেউ আমার জায়গা পূরণ করে ফেলবে। কিন্তু মাশরাফি ভাইয়ের জায়গা কখনো পূরণ করা যাবে না। উনি যখন অবসর নেবেন, বিরাট একটা শূন্যতা তৈরি হবে। উনি হয়তো নিয়মিত ৫ উইকেট নেন না বা ফিফটি করেন না, কিন্তু যেভাবে তরুণ খেলোয়াড়দের আগলে রাখেন, ভালো খেলি-খারাপ খেলি যেভাবে আমাদের উৎসাহ দেন, এটা স্পেশাল কোয়ালিটি। এটা সবার মধ্যে থাকে না। আমরা খুব লাকি যে, ওনার মতো একজনকে পেয়েছি।
 
* আপনি যত অধিনায়কের অধীনে খেলেছেন, মাশরাফিই কি সেরা?
তামিম: আমি ৬-৭ জন অধিনায়কের আন্ডারে খেলেছি। তুলনা করতে বললে শুধু মাহেলা জয়াবর্ধনের কথাই বলব। তবে জয়াবর্ধনের সঙ্গে যেহেতু আমি সবকিছু শেয়ার করতে পারি না, মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে পারি, তাই ওনাকেই এগিয়ে রাখব। বিশ্বকাপে আমার কেমন অবস্থা হয়েছিল, আপনি তো জানেন। উনি তখন যা করেছেন, তা স্পেশাল।

* আপনার চোখে বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান কে?
তামিম: বিরাট কোহলি ও এবি ডি ভিলিয়ার্স।

* দুজন তো দুই রকম। কোহলির দর্শনটা তো আপনিই বললেন। ও প্রথাগত, আর এবি ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং সব ব্যাকরণ ভেঙেচুরে দেয়...
তামিম: আসলেই তাই। তবে দুজনের মধ্যে যদি একজনকে আমার দলে নিতে হয়, আমি কোহলিকেই নেব।

19
‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আমার শুধু ভালোবাসাই আছে’

রমিজ রাজা
     
আমি মনে করি, বাংলাদেশ হ্যাভ টু টেক ইট ইজি। বাংলাদেশ দারুণ একটা ক্রিকেট জাতিতে পরিণত হচ্ছে, তবে সেটির সঙ্গে দায়িত্ববোধের ব্যাপারও চলে আসে ।

নানা সময়ে নানা মন্তব্যে বাংলাদেশে তুমুল বিতর্কিত তিনি। বাংলাদেশ-বিরোধী হিসেবেও একটা পরিচিতি হয়ে গেছে। কিন্তু কাল ধর্মশালা স্টেডিয়ামের ধারাভাষ্যকক্ষে উৎপল শুভ্রকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে রমিজ রাজা দাবি করলেন, তাঁকে ভুল বোঝা হয়েছে।

* মোহাম্মদ আমিরকে না ফেরানোর ব্যাপারে আপনার তো শক্ত অবস্থান ছিল। আমির তো ঠিকই ফিরলেন। আপনার কী প্রতিক্রিয়া?
রমিজ: আমার অবস্থান এখনো পরিষ্কার। ওই বিতর্কে আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্ধকার একটা অধ্যায় আমি দেখেছি, ওই সময়টায় খেলেছি। আমিরের ব্যাপারে আমি যে অবস্থান নিয়েছিলাম, তা ছিল ক্রিকেট, আবেগ ও যুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে। আমি শুধু আমার মতটাই জানিয়েছিলাম। তার পরও আমির ফিরেছে, এখন ও মাঠে কেমন করছে, তা নিয়েই আলোচনা হওয়া উচিত। ওকে আবার দেশের পক্ষে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, আমাকে ধারাভাষ্য দিতে হচ্ছে, আমি সেটি নির্মোহভাবে দেব। তবে কলঙ্কিত খেলোয়াড়দের আবার খেলায় ফেরানোর ব্যাপারটা আমার পছন্দ নয়।

* আমির যখন বোলিং করেন আর আপনি ধারাভাষ্যে, আপনার অপছন্দ বেরিয়ে এল, এমন কোনো চাপ কি অনুভব করেন?
রমিজ: মোটেই না। আমার কাজ হলো, আবেগ-টাবেগ সব বাদ দিয়ে মাঠে যা হচ্ছে তা বর্ণনা করা। আমি সেটাই করি।

* ফেরার পর আমিরের সঙ্গে কি দেখা হয়েছে?
রমিজ: না, হয়নি। খেলোয়াড়দের জগৎ আলাদা, আমাদের আলাদা। পেশাগত প্রয়োজন ছাড়া আমি ওদের সঙ্গে কথা বলতে যাই না।

* পেশাগত প্রয়োজনেই যদি কখনো আমিরের সাক্ষাৎকার নিতে হয়, নেবেন?
রমিজ: ওই যে বললাম, পেশায় আবেগের স্থান নেই।

* আমিরের দুর্দান্ত কামব্যাকে আপনি কি একটু বিস্মিত?
রমিজ: অবশ্যই বিস্মিত। ওর ওপর নিশ্চয়ই প্রচণ্ড চাপ ছিল। আমি ভেবেছিলাম, পাঁচ বছর নির্বাসনে থাকার ধাক্কা ও সামলাতে পারবে না। কারণ পাঁচ বছরে টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং, ওয়ানডে ব্যাটিং অনেক বদলে গেছে। ও বরাবরই খুব স্মার্ট বোলার ছিল। শুধু ওই পাঁচ বছরের বিরতির ধাক্কা সামলানোই নয়, ওকে যখন পাকিস্তানের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বোলিং করতে হচ্ছে, ক্রিকেটীয় চাপ, পরিস্থিতির চাপ, দর্শকদের চাপ সবকিছুই একসঙ্গে সামলাতে হচ্ছে । ও দারুণভাবে তা সামলাচ্ছে।

* আপনি তো একসময় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। এখনো তা থাকলে কি আমিরকে ফিরতে দিতেন?
রমিজ: আমার যদি ক্ষমতা থাকত, আমি খেলাটাকে কলঙ্কিত করা সব খেলোয়াড়কেই বের করে দিতাম। কারণ অনেক বছর ধরে এদের কারণে পাকিস্তান ক্রিকেটের অনেক ক্ষতি হয়েছে এবং এরা বরাবরই বেনিফিট অব ডাউট পেয়ে এসেছে। আমার কথা হলো, আমির ভুল করেছে, গুরুতর ভুল করেছে। কিন্তু স্যরি, আমাদের কিছু করার নেই। কারণ এটি খেলাটির সমর্থক ও দর্শকদের বিশ্বাসটা ধ্বংস করে দেবে। আমরা তা চাই না।

* আপনি শুনেছেন কি না পিএসএলে আপনাকে নিয়ে বাংলাদেশে বড় একটা বিতর্ক হয়েছে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আপনি তামিম ইকবালের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, “ইংলিশ অর হোয়াট?” যেটিকে অনেকের কাছেই মনে হয়েছে তামিমকে দিয়ে আপনি উর্দুতে কথা বলাতে চেয়েছিলেন...
রমিজ: (হাসি) ওরা পুরোপুরি ভুল বুঝেছে। তামিমকে আমি প্রশ্নটা করেছিলাম, কারণ আমি বাংলা বলতে পারি না। সে হয়তো উর্দু জানে না। তাহলে কী হবে—ইংলিশ না উর্দু? এটা ছিল খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। কিন্তু পরে আমি বুঝেছি, এটিকেই অনেক বড় বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। একটা নন-ইস্যুকে এমন বিশাল বিতর্কিত ব্যাপার বানিয়ে ফেললে সেটি নিয়ে দিনের পর দিন ব্যাখ্যা দিয়ে যাওয়া কঠিন।

* এর আগেও কি কেউ আপনার কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছে?
রমিজ: না, কেউ একজন আমাকে এটা বলেছে।

* এমন তীব্র প্রতিক্রিয়ার একটা কারণ হলো, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে যাঁরা ভালো ইংরেজি বলতে পারেন, তামিম সম্ভবত তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে। এটা তো আপনার জানা না থাকার কারণ নেই...
রমিজ: না, আমি জানতাম না। ওর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল না।

* আগে কখনো আপনি তামিমের ইন্টারভিউ করেননি?
রমিজ: না, করিনি।

* এই যে আপনি দাবি করছেন, একটা নন-ইস্যুকে বিরাট বিতর্কিত ব্যাপার বানিয়ে ফেলা হয়েছে, এ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
রমিজ: আমি মনে করি, বাংলাদেশ হ্যাভ টু টেক ইট ইজি। বাংলাদেশ দারুণ একটা ক্রিকেট জাতিতে পরিণত হচ্ছে, তবে সেটির সঙ্গে দায়িত্ববোধের ব্যাপারও চলে আসে। বাংলাদেশকে এমন ভালো করতে দেখাটা দারুণ ব্যাপার, তবে একটা ভারসাম্য কিন্তু রাখতে হবে। সব সময়ই এমন আক্রমণাত্মক হয়ে থাকলে কীভাবে হবে? আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশের কিছু সমর্থক মনে করে পুরো বিশ্বই বাংলাদেশের বিপক্ষে। সবাই মিলে বাংলাদেশকে টেনে ধরার চেষ্টা করছে। এটা একদমই ঠিক নয়। আমাদের পেশাটা খুব স্বচ্ছ। ভালো কোনো পারফরম্যান্স দেখলে আমরা তা বর্ণনা করি, সেটির প্রশংসা করি, খুশিও হই। পারফরম্যান্স খারাপ হলে সেটিও আমাদের বলতে হবে। পাকিস্তানেও লোকজন মনে করে, আমি পাকিস্তানের স্বার্থ সেভাবে তুলে ধরি না। আমি বারবারই বলে এসেছি, আমার কাজ হলো যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ থাকা। বাংলাদেশ আধুনিক মানসিকতার একটা জাতি, অর্থনীতি ও অন্য অনেক ক্ষেত্রেই খুব ভালো করছে। এখন এটা বোঝার সময় এসেছে যে, কারও কোনো মন্তব্য পছন্দ না-ই হতে পারে। সবকিছুতেই এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখালে তাতে নিজেদেরই ক্ষতি।

* আপনি যা বললেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটকে টেনে নামানোর চেষ্টা হচ্ছে, এমন একটা ধারণা কিন্তু বাংলাদেশে আছে। তাসকিন-সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাকেও যেমন দেখা হচ্ছে একটা ষড়যন্ত্র হিসেবে...
রমিজ: এটি এই উপমহাদেশেরই চরিত্র—যেন পুরো বিশ্বই আমাদের বিপক্ষে। ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব খুব বাজার পায় এখানে। পাকিস্তানের বোলারদের অ্যাকশন প্রশ্ন ওঠার সময়ও পাকিস্তানে সবাই বলতে শুরু করল, অন্য দেশের বোলারদের কেন ধরা হচ্ছে না, ওই বোলার কেন খেলে যাচ্ছে...। এসব না ভেবে যেখানে নিজেদের সমস্যা সমাধান করা উচিত।

* বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উত্থান কি আপনাকে চমকে দিয়েছে?
রমিজ: কিছুটা তো বটেই। তবে এর কারণ হলো, বাংলাদেশ দারুণ কিছু নতুন খেলোয়াড় পেয়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে আত্মবিশ্বাস। ওরা খুব অনুপ্রাণিত, আগের ১০ বছরে যত হতাশা জমেছে, ম্যাচ জিতে যেন সেই হতাশা ঘোচাতে চাইছে। এটা দারুণ ব্যাপার। হতাশা-ক্ষোভ এসব মেটানোর মাধ্যম যদি পারফরম্যান্স হয়, এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে! কে কী বলল, তাতে পাত্তা দেওয়ার কী দরকার? এখন বাংলাদেশ এমন এক দল যেটি ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সমানে সমানে লড়তে পারে। গত দুই-আড়াই বছরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স দারুণ এক গল্প। এটা বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য ভালো, এশিয়ান ব্লকের জন্য আরও বেশি ভালো।

* পাকিস্তান তো ব্যতিক্রমী বোলার উপহার দেওয়ার জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশও এমন একজনকে পেয়েছে। মুস্তাফিজুর রহমানকে কি দেখেছেন?
রমিজ: হ্যাঁ, দারুণ বোলার। মুস্তাফিজ অনেকটা মোহাম্মদ আমিরের মতো। কীভাবে উইকেট নিতে হয়, তা জানে। আমাদের এদিকে তো অল্প বয়সে সব হাতে ধরে শেখাতে হয়। কিন্তু ও বয়সের তুলনায় অনেক পরিণত। মাঠে ওকে দেখে মনেই হয় না নতুন এসেছে। ও স্লোয়ার দিচ্ছে, বোঝার পরও অনেক সময়ই ব্যাটসম্যানদের কিছু করার থাকে না। তার মানে ওর মধ্যে বিশেষ কিছু আছে। ম্যাচ রিড করার ক্ষমতা দারুণ, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভয় পাওয়ার বদলে উল্টো জ্বলে ওঠে। শুধু বোলিং না, যেভাবে ও চ্যালেঞ্জ নেয়, সেটাই বুঝিয়ে দেয় ও মানসিকভাবে কত পরিণত।

* আপনি জানেন কি না, মুস্তাফিজের আইডলও তো কিন্তু আমির...
রমিজ: আমির আর মুস্তাফিজ এশিয়ার সবচেয়ে স্মার্ট দুই বোলার। ওর এখন উচিত, টেস্টে ভালো করার দিকে মন দেওয়া। টেস্টে ভালো করলে বাকি সব ফরম্যাটেও ভালো করবে।

* আগের বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশের মধ্যে কী পার্থক্য দেখেন?
রমিজ: নিজেদের ওপর বিশ্বাস। এই বিশ্বাস তখনই আসে, যখন জানবেন আপনি ভালো। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এখন বিশ্বাস করে, ওরা সেরাদের সমকক্ষ। যে কারণে চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পায় না। মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রভাবও ভুলে গেলে চলবে না। ও খুব আক্রমণাত্মক, বাংলাদেশের উত্থানে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ কারণেই বাংলাদেশ খুব আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে। দারুণ কিছু ফাস্ট বোলার পেয়ে যাওয়ায় বোলিং এখন খুব ভালো, ফিল্ডিংটায় আরেকটু উন্নতি করতে হবে। ব্যাটিংটা এমনিতেই ভালো হবে, কারণ এখনো ওরা তরুণ।

* শেষ প্রশ্ন ও অপ্রীতিকর প্রশ্ন—বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে বাংলাদেশ-বিরোধী মনে করে। এটা শুনে আপনার কেমন লাগছে?
রমিজ: আমার জন্য এটা খুব দুঃখজনক। কারণ "বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আমার শুধু ভালোবাসাই আছে।" কিছু কথার ভুল ব্যাখ্যা হওয়ায় আমাকে সবাই ভুল বুঝেছে। আমি আশা করব, এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সবাই আমাকে একটু বুঝতে পারবে।

20
Dear Mr. Shakil,

You know that you can post only sports related document in this page. So, I request you to delete your post from here as early as possible and place your content in suitable place.

21
Thanks.....

22
সৌরভ গাঙ্গুলীর সাক্ষাৎ​কার
বাংলাদেশ অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে


সৌরভ গাঙ্গুলী: উত্তরার রূপায়ন সিটিতে প্রথম আলোর মুখোমুখি

যুব ক্রিকেট দলের সদস্য, ভারতীয় দলের সাধারণ সদস্য, অধিনায়ক, ধারাভাষ্যকার—বিভিন্ন ভূমিকায় বাংলাদেশে এসেছেন সৌরভ গাঙ্গুলী। এবার এলেন রূপায়ন সিটি উত্তরার শুভেচ্ছাদূত হিসেবে। নিজের খেলোয়াড়ি ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে মুখোমুখি হলেন প্রথমআলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাইর ইকবাল

* বাংলাদেশে আসাটা আপনার জন্য নিয়মিত ব্যাপারই । এ দেশে প্রথম সফরের স্মৃতিটা মনে পড়ে?

সৌরভ গাঙ্গুলী: খুব মনে পড়ে। আমি প্রথম এখানে এসেছিলাম ১৯৮৯ সালে। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের আসর ছিল ওটা। এরপর ১৯৯১ সালে, পশ্চিম বাংলা দলের হয়ে।

* ১৯৯২ সালে ভারতীয় দলে অভিষেকের পর মাঝখানে চার বছরের বিরতি।ভারতীয় দলে ফিরলেন ১৯৯৬ সালে।একেবারে নতুন চেহারায়।এই চার বছরের বিরতিকে কি আপনি আশীর্বাদ মনে করেন?

সৌরভ: না না, আশীর্বাদ মনে করার কোনো কারণই নেই। এই চারটি বছর ভারতীয় দলে নিয়মিত খেললে আমি হয়তো আর ৫ হাজার রান বেশি করতাম। তবে এটা ঠিক, প্রথমবার যখন আমার অভিষেক হলো, তখন বয়সটা ছিল অনেক কম। অনেক কিছু বোঝার বয়স তখনো হয়নি। মাঝখানের বিরতিটার সময় আমি অনেক কিছুই শিখেছি। পরিণত হয়েছি। তাই সে হিসেবে চার বছরের বিরতিটা আমার জন্য খুব একটা ক্ষতির কারণ হয়নি। তার পরও চার বছর কিন্তু অনেকটা সময়।

* আপনি ক্রিকেট ছেড়ে এখন অনেক কিছুই করছেন।টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন।ক্রিকেটের সঙ্গে সংস্কৃতিজগতের কি কোনো মিল খুঁজে পান, না
কি এই দুটি ক্ষেত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন? ক্রিকেটার ছিলেন, এখন জনপ্রিয় উপস্থাপক।এর রহস্যটাই বা কী?

সৌরভ: সম্পূর্ণ ভিন্ন। ক্রিকেট আর বিনোদন-সাংস্কৃতিক জগৎ সম্পূর্ণ আলাদা। এই দুটির মধ্যে কোনো মিল নেই। আর ভিন্ন এই দুই জগতে সাফল্য পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ‘সেরা’ হতে হবে। জীবনে যা-ই করেন, সেরা হওয়ার বিকল্প নেই। আপনি ক্রিকেটই খেলুন কিংবা টেলিভিশন ব্যক্তিত্বই হোন, আপনাকে সেরাই হতে হবে। আর ক্রিকেটার ছিলাম, এখন উপস্থাপনা করছি কীভাবে—এ প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, উপস্থাপনাকে আমি অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছি।

* অনেকে বলেন, আপনার হাতে ভারতীয় ক্রিকেট দল একধরনের নবজন্ম লাভ করেছিল। ভারত পরিণত হয়েছিল আক্রমণাত্মক একটি দলে। এটা কীভাবে করলেন?

সৌরভ: এটা কিছুই না। খেলার একটা ধরন। আমাদের দলটা খুব ভালো ছিল। দারুণ ক্রিকেট খেলছিল। দলের প্রতিটি খেলোয়াড়েরই মনোভাব ছিল আক্রমণাত্মক। প্রতিটি খেলোয়াড়ই লড়তে উদ্‌গ্রীব ছিল। আমি কিছুই করিনি।

* বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আপনার মূল্যায়নটা জানতে চাচ্ছি। কেমন লাগছে মাশরাফিদের খেলা?

সৌরভ: আমি খুবই খুশি বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি দেখে। দুর্দান্ত উন্নতি করছে দলটা। ২০০০ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্টটা ছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে আমার প্রথম টেস্ট। সেই জায়গা থেকে আজকে বাংলাদেশের ক্রিকেট কত দূর চলে এসেছে। খুব ভালো লাগে। কেবল সিনিয়র ক্রিকেটে নয়, বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেও বাংলাদেশ অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে। এবারের যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেটই তার প্রমাণ। যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অল্পের জন্য হেরে ফাইনালে ওঠা হয়নি বাংলাদেশের, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজই তো শেষ পর্যন্ত যুব বিশ্বকাপ জিতে নিল। যেহেতু বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে উন্নতি হচ্ছে, তাই বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নত হতে বাধ্য।

* আপনি দুজন বিদেশি কোচের অধীনে খেলেছেন। আমি গ্রেগ চ্যাপেলের প্রসঙ্গ আনব না। যদি প্রশ্ন করি, জন রাইট ভারতীয় দলের উত্থানে কী ধরনের ভূমিকা রেখেছিলেন?

সৌরভ: গ্রেগ চ্যাপেল নিয়ে আমিও কিছু বলতাম না (হাসি)। জন রাইটের কথা বলি, ওর অনেক ভূমিকা। রাইট ছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম বিদেশি কোচ। প্রথম যেকোনো কিছুরই একটা প্রভাব থাকে। রাইটেরও ছিল। সে ভারতীয় ক্রিকেটের চেহারাটাই বদলে দিয়ে গিয়েছিল।

* একটা ক্রিকেট দলে অধিনায়ক আর কোচের ক্ষমতার ভারসাম্য কেমন হওয়া উচিত? ধরুন, কোচ যদি তাঁর নিজের ক্যারিয়ারে খুব বড় তারকা হয়ে থাকেন...

সৌরভ: পুরো বিষয়টিই আসলে সমন্বয়। ব্যবস্থাপনা। আর কিছুই নয়। আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম, তখন আমার দলে পাঁচটা মহা মহা তারকা ছিল। কেউ কারও থেকে কম নয়—শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, অনিল কুম্বলে আর বীরেন্দর শেবাগ। আমার তো কোনো সমস্যা হয়নি। এখানে আপনার মনোভাবটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বোঝাপড়াটা নির্ভর করে অনেকটাই এর ওপর।

* শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, অনিল কুম্বলে কিংবা বীরেন্দর শেবাগ—এঁদের সম্পর্কে যদি আলাদাভাবে কিছু বলতে বলা হয় আপনাকে...

সৌরভ: (হেসে) দেখুন, এদের নিয়ে আমি নিজেই অনেকবার অনেক কিছু বলেছি। বলার তো কিছু বাকি নেই। শুধু বলি, ক্রিকেটার হিসেবে তারা ছিল অনন্যসাধারণ। ক্রিকেটার বলি কেন, মানুষ হিসেবেই তারা অন্য রকম। দুর্দান্ত। শচীন, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ, শেবাগ—সবাই আমার খুব ভালো বন্ধু। একসঙ্গে ১৫ বছর খেলেছি। দারুণ কেটেছে সেই সময়টা।

* ক্রিকেট কীভাবে একটা দেশকে ব্র্যান্ডিং করতে পারে?

সৌরভ: ব্র্যান্ডিং তো করছেই। বাংলাদেশের কথাই ধরুন। ক্রিকেট দিয়েই তো সারা দুনিয়া চেনে বাংলাদেশকে। শুধু ক্রিকেট কেন, যেকোনো খেলাধুলাই তো এই কাজটা করে। ব্রাজিলকে মানুষ তো চেনে ফুটবল দিয়েই। ব্রাজিলে খুব ভালো কফি হয় ঠিকই, কিন্তু বিশ্বে তাদের পরিচিতিটা তো ফুটবলের জন্যই। আর্জেন্টিনা নামটা বললেও তো প্রথমেই আসে ফুটবলের কথা। তাই নয় কি!

* ফুটবলের প্রসঙ্গ যখন এলই, তখন ভারতীয় ফুটবলে আপনার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টা চলেই আসে, ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) আপনার একটি দল আছে। এটা কেন করলেন? আপনি ফুটবলেরও ভক্ত, এটা সবাই জানে। কোনো নস্টালজিয়া কি কাজ করেছে, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ইত্যাদি?

সৌরভ: আইএসএল তো দারুণ একটা ব্যাপার। সত্যি কথা বলতে কী, আইএসএল সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের প্রভাবও ছাড়িয়ে গেছে এই আইএসএল।

* আপনি ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে যেখানে দলীয় রাজনীতি, দলীয় আনুগত্যের ওপর অনেক কিছু চলে, সেখানে একজন ‘ব্যক্তি সৌরভ’ তাঁর ব্যক্তিত্ব নিয়ে কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন?

সৌরভ: প্রশাসক হয়ে খুব ভালো লাগছে। যে যা-ই বলুক, আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আশা করি, হবেও না।

* আপনি শিক্ষাপ্রসারেও কাজ করছেন...

সৌরভ: তিনটি স্কুল করছি। বলতে পারেন, এটা আমার একটা শখ। বাচ্চাদের খুব ভালো লাগে। আমি চাই, শিক্ষিত হয়ে বড় হোক ওরা। ওখানে পড়াশোনা, খেলাধুলা সবই হবে। একটা স্কুল ১০ একর জমির ওপর দাঁড়াচ্ছে। আমি নিজে একটা ক্রিকেট একাডেমিও করছি। ওটা হচ্ছে ৫ একর জমির ওপর।

* তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করছেন পশ্চিম বাংলায়, এর প্রভাব কেমন দেখছেন?

সৌরভ: ‘এগিয়ে বাংলা’ নামের একটা প্রকল্প করেছি আমাদের ওখানে। পশ্চিম বাংলার মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী করতে বললেন, রাজি না হয়ে পারিনি। প্রভাব ভালোই। আমার বেশ ভালো লাগছে। তবে প্রভাব অবশ্যই ‘দাদাগিরি’র মতো নয় (হাসি)।

* কোথায় যেন পড়েছি, আপনার মেয়ে সানা বাবার কাছে পড়াশোনা করতে খুব ভালোবাসে। সৌরভ গাঙ্গুলী তাহলে একজন ভালো শিক্ষকও...

সৌরভ: (হাসি) আরে, ওটা কিছু নয়। সানা আমার কাছে পড়তে চায়, কারণ আমি বকুনি দিই না। কম পড়াই। ওর মার কাছে পড়তে বসলে বেশি পড়তে হয়, আমার কাছে কম, এই তো! যখন সে বলে, বাবা আর পড়তে ইচ্ছা করছে না; ব্যস, আমিও বলি, ঠিক আছে, আর পড়তে হবে না।

23
বিদায়বেলায় ম্যাককালাম
'এই নিউজিল্যান্ড নতুন উচ্চতায় উঠবে’


আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের বিদায়ী মুহূর্তের সাক্ষী হতে কাল মাঠে এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী এলিসা ও তিন সন্তান। বিদায়ী বক্তৃতায় আলাদা করে পরিবারকে ধন্যবাদ দিয়ে নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন ম্যাককালাম l এএফপি

তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটা ব্যক্তিগত অর্জনে উজ্জ্বল। কিন্তু সেই অর্জনের উল্টো পিঠেই রইল দলের নিদারুণ হারের বেদনা। মিশ্র অনুভূতি নিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শেষ করলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। সিরিজ শেষের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে খুব স্বাভাবিকভাবেই বি-ম্যাক ছিলেন আবেগাপ্লুত। তাঁর বিদায়ী বক্তৃতায় উঠে এল ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, সতীর্থ-প্রতিপক্ষ-পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞতা। শোনালেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট নিয়ে আশার কথাও—

অস্ট্রেলিয়া দল নিয়ে
তোমরা প্রমাণ করেছ, কেন তোমরা বিশ্বের এক নম্বর দল। যখন এ সিরিজটা খেলতে তোমরা এখানে এসেছিলে, আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের ভালোই সুযোগ আছে। কিন্তু দুটি টেস্টেই অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়েছে এবং তোমরা দেখিয়েছ তোমরা কতটা ভালো। তোমরা সবাই তোমাদের দেশের দারুণ দূত এবং তোমাদের দলে স্টিভেন স্মিথের মতো একজন দুর্দান্ত নেতা আছে। তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইল। আশা করি, সামনের বছরগুলোয়ও আমরা একসঙ্গে অনেক বিয়ার পান করতে পারব।

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকে
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই, যাঁরা সর্বশেষ কয়েক বছর সব সময় এ দলটির পাশে থেকেছেন, আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা যে অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েছিলেন, যখন ছাড়বেন তার চেয়ে ভালো অবস্থায় থাকবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট।

কিউই ক্রিকেটপ্রেমীদের

আমরা অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছি। কিন্তু আপনারা সব সময় আমাদের পাশে ছিলেন। শুধু এই সিরিজে নয়, অনেক বছর ধরেই। সর্বশেষ ৬ কিংবা ১২ মাসে আপনারা যেভাবে প্রতিটি মাঠে এসেছেন আমাদের সমর্থন দিতে, এটা ছিল অসাধারণ ব্যাপার। আশা করছি, এই সমর্থন ভবিষ্যতেও থাকবে। আমি নিশ্চিত থাকবেই।

সতীর্থদের প্রতি
সর্বশেষ কয়েকটা বছর ছিল আমাদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমরা কিছু দারুণ কীর্তি গড়েছি, আবার কিছু ম্যাচ হেরেছিও। কিন্তু কখনোই আমাদের মন ভাঙেনি। তোমরা সবাই বাকি জীবন আমার হৃদয়ে থাকবে। নিউজিল্যান্ড দলের হয়ে দেশে ও দেশের বাইরে আমাদের সময়টা আমি সব সময় মনে রাখব। আমি জানি, এ দলটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তোমাদের মধ্যেই কিছু দারুণ নেতা আছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই নিউজিল্যান্ড আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে নতুন উচ্চতায় উঠবে। আর আমার দর্শনটা ধারণ করার জন্য ধন্যবাদ। তোমাদের সবার জন্য শুভকামনা। আমাদের কিন্তু একসঙ্গে অনেক বিয়ার পান করা বাকি।

পরিবারের প্রতি
একজন ক্রিকেটারের জন্য এত দীর্ঘদিন খেলে যাওয়া এবং পরিবারকে ছাড়া কাটানো খুব কঠিন ব্যাপার। পরিবারের সমর্থন ও ভালোবাসা না পেলে সেটা সম্ভব না। তোমরা আমাকে সুযোগ দিয়েছ সর্বশেষ ১৪টি বছর আমার স্বপ্নের পথে হাঁটতে। লিস (স্ত্রী এলিসা), তোমাকে বলছি, বাকি জীবন আমি এটার প্রতিদান দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। আর এটা কোনো কথার কথা নয়। ২০ বছর বয়সী এক তরুণ হয়ে এসেছিলাম নিউজিল্যান্ড দলে, ৩৪ বছর বয়সে ৩টি ফুটফুটে বাচ্চার বাবা এবং দারুণ একজন স্ত্রীকে নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। এটাও দারুণ ব্যাপার।

24
নায়ক বনে গেছেন রেফারিকে লাল কার্ড দেখানো ফুটবলার !!

          
রেফারিকেই লাল কার্ড দেখাচ্ছেন সালিহ দারসুন।

রেফারিকেই লাল কার্ড!

ফুটবল মাঠে অভূতপূর্ব এক ঘটনারই জন্ম দিয়েছিলেন সালিহ দারসুন। সতীর্থকে লাল কার্ড দেখানোর প্রতিবাদ জানিয়ে রেফারিকেই লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তুরস্কের এই ফুটবলার। রেফারির সঙ্গে এমন বিরুদ্ধাচারণের জন্য দারসুনকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে, এমন আশঙ্কা ছিল অনেকের। কিন্তু উল্টো এখন নায়ক বনে গেছেন রেফারিকে লাল কার্ড দেখানো সেই ফুটবলার। গ্যালাতাসারাইয়ের মাঠ থেকে ২-১ গোলের হার নিয়ে ফেরার পর দারসুনকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে ত্রাবজোন্সপোরের সমর্থকরা। দারসুনের সমর্থনে হাতে লাল কার্ড নিয়ে রাস্তায় মিছিল করেছে শত শত মানুষ।

গ্যালাতাসারাইয়ের বিপক্ষে বিতর্কিত সেই ম্যাচে ৭০ মিনিটের মধ্যেই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছিলেন ত্রাবজোন্সপোরের দুই খেলোয়াড়। নয় জনের দল নিয়েও হার এড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিল তুরস্কের শীর্ষ লিগের মধ্যম সারির ক্লাবটি। কিন্তু ৮৭ মিনিটের মাথায় বিতর্কিতভাবে ত্রাবজোন্সপোরের আরেক খেলোয়াড়কে সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়েছিলেন রেফারি। এর পরই সেই লাল কার্ড কাণ্ড ঘটান দারসুন। তাঁকেও মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয় লাল কার্ড দেখে। সাতজনের দল নিয়ে খেলা শেষ করে ত্রাবজোন্সপোর। ম্যাচটাও তারা হেরে যায় ২-১ গোলে। তবে মাঠে রেফারিকে লাল কার্ড দেখানোর দুঃসাহসের জন্য এখন প্রশংসার জোয়াড়ে ভাসছেন দারসুন। তাঁর সেই লাল কার্ড দেখানোর ছবি দিয়ে একটি টি-শার্টও বিক্রি করছে ত্রাবজোন্সপোর।

তুরস্কের ত্রাবজোন শহরে শত শত মানুষ হাতে লাল কার্ড নিয়ে সমর্থন জানিয়েছেন দারসুনের প্রতি। ক্লাবের চেয়ারম্যান মুহাররেম উস্তা বলেছেন, ‘দারসুন তুরস্কের ফুটবল অঙ্গনকেই লাল কার্ড দেখিয়েছে। এটা বিদ্রোহের প্রতীক না। এটা হলো পুনর্জাগরণের প্রতীক।’ ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ ও ‘বিদ্বেষ ছড়ানোর’ দায়ে তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে রেফারির বিরুদ্ধে।

তুরস্কের রেফারিদের কেন্দ্রীয় কমিশনের প্রধান কুদ্দুসি মুফতোগলুও দাঁড়িয়েছেন ত্রাবজোন্সপোরের পাশে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ত্রাবজোন্সপোরের হতাশাটা বুঝতে পারছি। আমরা সফল রেফারিদের যেমন পুরস্কার দেই, তেমনি ব্যর্থ রেফারিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেই।’ গণহারে লাল কার্ড দেখানোর দায়ে এখন সেই রেফারিকেই শাস্তির মুখে পড়তে হয় কি না, সেটাই দেখার বিষয়।

25
Cricket / বিদায় ‘বি-ম্যাক’
« on: February 23, 2016, 01:59:33 PM »
বিদায় ‘বি-ম্যাক’

 
লারার মতো মুখে হয়তো ‘ডিড আই এন্টারটেইন ইউ?’ বলেননি, তবে নির্মল বিনোদন দেওয়ার তৃপ্তি নিয়েই শেষবারের মতো ব্যাট হাতে মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। কাল ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে l ছবি: এএফপি


আগের বলেই জশ হ্যাজলউডকে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মেরেছিলেন মাঠের বাইরে। ২৬ বলে ২৫ রান হয়ে গেল তাঁর। বেসিন রিজার্ভে ফিসফিসানি, চাপা স্বরে জল্পনাকল্পনা—শেষবারের মতো আরেকটি ঝড় তুলবেন ম্যাককালাম? আগের ইনিংসে ৭৯ বলে ১৪৫ রানের তাণ্ডবের মতো না হোক, ছোটখাটো একটা ঝড় হলে মন্দ কী!

হলো না। হ্যাজলউডের পরের বলটাও উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে লেগ সাইডে উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন। মিড উইকেটে ছোঁ মেরে অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ নিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। মাঠে কয়েক মুহূর্ত পিনপতন নীরবতার মধ্যে শুধু শোনা গেল অস্ট্রেলীয়দের উল্লাসধ্বনি। গ্লাভস খুলে যখন প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা শুরু করলেন, পুরো বেসিন রিজার্ভ উঠে দাঁড়াল তাঁর সম্মানে। মাঠ পেরিয়ে ড্রেসিংরুমে ঢোকার টানেলে যতক্ষণ তাঁকে দেখা যায়, করতালি চলল ততক্ষণ। ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসটা খেলে ফিরলেন ব্রেন্ডন ব্যারি ম্যাককালাম। কারও কাছে যিনি ‘বি-ম্যাক’, কারও কাছে ‘বাজ’।

নিজের হাতে লেখা চিত্রনাট্য অনুযায়ীই যেন খেলেছিলেন বিদায়ী টেস্টের প্রথম ইনিংসটা। ৩২ রানে দলের ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ক্রিজে এসে ৫৪ বলে বিশ্ব রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি। কাল দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ব্যাট করতে নামেন, পরিস্থিতি প্রায় একই রকম। অস্ট্রেলিয়ার ৫০৫ রানের পর ১৩৫ রান পিছিয়ে থাকা নিউজিল্যান্ড জেমস প্যাটিনসনের আগুনে বোলিংয়ে আবার ৩ উইকেট হারাল ৭২ রানে! এবার আর ম্যাককালাম উদ্ধার করতে পারলেন না দলকে। তাঁর উইকেটটাও চলে যাওয়ায় দিন শেষে নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেটে ১২১। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সামনে শেষ বড় বাধা হয়ে ছিল শুধু কেন উইলিয়ামসন আর কোরি অ্যান্ডারসন জুটি। এখান থেকে এই টেস্টটা অবিশ্বাস্যভাবে ড্র হলেও ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে যাবে অস্ট্রেলিয়া।

সব সময় দলকেই প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন। সেই দলের পারফরম্যান্স অবশ্য খুব একটা ভালো হলো না ম্যাককালামের বিদায়ী সিরিজে। তবে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে দুর্দান্ত সব রেকর্ড এসে ধরা দিয়েছে তাঁর ব্যাটে। টেস্টে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন, শুধুই নিজের করে নিয়েছেন টেস্টে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডও। কাল বিদায়ী ইনিংসটা খেলার পর আরও একটা রেকর্ড তাঁর হয়ে গেছে। প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ১৪৫, দুই ইনিংস মিলিয়ে রান হয়েছে ১৭০, যা বিদায়ী টেস্টে কোনো অধিনায়কের সবচেয়ে বেশি রান। ১৯৩০ সালে কিংসটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক রবার্ট কার্ল নুনেস নিজের শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৮ (৬৬ ও ৯২) রান করে এত দিন সেই রেকর্ডের মালিক হয়ে ছিলেন। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে সেঞ্চুরি করা প্রথম অধিনায়কও একমাত্র ম্যাককালামই।

ব্যক্তিগত অর্জনে এমন ঝলমলে শেষই বা আর কার হয়েছে!

ম্যাককালামের যত রেকর্ড

টেস্ট

সবচেয়ে বেশি ছক্কা          ১০৭

একবারও বাদ না পড়ে      ১০১

সবচেয়ে বেশি ম্যাচ         

দ্রুততম সেঞ্চুরি              ৫৪ বল

দ্রুততম ১৫০                ১০৩ বল

ওয়ানডে

বিশ্বকাপের দ্রুততম ফিফটি      ১৮ বল

টি–টোয়েন্টি

সবচেয়ে বেশি রান          ২১৪০

সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি       ২

সবচেয়ে বেশি চার           ১৯৯

সবচেয়ে বেশি ছয়           ৯১

অধিনায়কত্বের রেকর্ড

                  ম্যাচ   জয়      হার  ড্র/টাই/পরি.           

টেস্ট             ৩১*    ১১      ১০          ৯

ওয়ানডে        ৬২     ৩৬      ২২         ১/৩

টি-টোয়েন্টি    ২৮     ১৩      ১৪         ০/১

* অসমাপ্ত

ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ব্যাটিং ক্যারিয়ার

                      ম্যাচ   ইনিংস       অপ.     রান     সর্বোচ্চ          গড়    ১০০/৫০   ক্যাচ/স্টাম্পিং

টেস্ট                ১০১      ১৭৬        ৯       ৬৪৫৩       ৩০২      ৩৮.৬৪      ১২/৩১       ১৯৭/১১

ওয়ানডে           ২৬০      ২২৮       ২৮      ৬০৮৩       ১৬৬      ৩০.৪১      ৫/৩২        ২৬২/১৫

টি-টোয়েন্টি        ৭১        ৭০        ১০      ২১৪০        ১২৩      ৩৫.৬৬      ২/১৩          ৩৬/৮


 

26
জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হচ্ছেন মাশরাফি

     
মাশরাফির মুকুটে আরেকটি পালক

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছিল আলোচনা। তাঁর খেলোয়াড়ি ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও নেওয়া হয়েছে অনেক খোঁজখবর। যাচাই করা হয়েছে দেশের সর্বসাধারণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা। সবকিছুতেই দশে দশ পেয়ে বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তিত্ব হিসেবে জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হচ্ছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকায় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার কথা।

মুঠোফোনে মাশরাফিও বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘জাতিসংঘের ঢাকা অফিস থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমাকে জানানো হয়েছে, আমাকে তাদের শুভেচ্ছাদূত করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো কাগজপত্র এখনো পাইনি।’ তবে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত কিছুদিনের আলোচনার সূত্র ধরেই শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিজের দায়িত্বটা বুঝতে পারছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘শুনেছি একটা দেশ থেকে এ রকম একজনকেই নেওয়া হয়। আর্জেন্টিনায় যেমন লিওনেল মেসি, শ্রীলঙ্কায় মুত্তিয়া মুরালিধরন। মাস খানেক ধরে আমার সঙ্গে কথা বলে এবং অনেক খোঁজখবর নিয়ে ওনারা এটি করেছেন বলে শুনেছি।’

বাংলাদেশ থেকে এর আগে ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হয়েছিলেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও চিত্রনায়িকা মৌসুমী। তবে বাংলাদেশের কারও জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হওয়াটা হবে এটাই প্রথম। ‘জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আমার কাজের পরিধি হবে অনেক বড়। ইউনেসকো ও ইউনিসেফের মতো তাদের যেকোনো অঙ্গসংগঠনের হয়েই আমাকে কাজ করতে হতে পারে। আমি মনে করি, এটা শুধু আমার নয়, পুরো দেশের জন্যই একটা গর্বের ব্যাপার।

27
Football / লা লিগায় মেসির ৩০০ গোল
« on: February 18, 2016, 02:30:23 PM »
লা লিগায় মেসির ৩০০ গোল

     
লা লিগায় ৩০০ গোল করে রেকর্ড গড়লেন লিওনেল মেসি।

অনন্য এক গৌরবের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন লিওনেল মেসি। এমন একটা গৌরব, যার স্বাদ পাননি আর কোনো ফুটবলার—লা লিগায় ৩০০ গোল। এই মাইলফলক ছোঁয়ার জন্য আর মাত্র একটি গোলের দরকার ছিল বার্সার আর্জেন্টাইন প্লে-মেকারের। গতরাতে স্পোর্টিং গিজনের বিপক্ষে মাঠে নেমে এই মাইলফলক ছোঁয়ার জন্য খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। গিজনের মাঠে ম্যাচের ২৫ মিনিটেই গোল করলেন। লা লিগায় ৩০০ গোল হয়ে গেল মেসির।

ম্যাচ শেষে লা লিগায় মেসির নামের পাশে ৩০১ গোল। তাঁর জোড়া গোলের রাতে গোল পেয়েছেন লুইস সুয়ারেজও। বার্সেলোনা জিতেছে ৩-১ ব্যবধানে।

মেসির দুই গোলের মাঝখানে সময়ের ব্যবধান ৬ মিনিট। তবে এর মধ্যে একটি গোল করে গিজনকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন কার্লোস কাস্ত্রো।
এই জয়ে লিগে শীর্ষে নিজেদের অবস্থানটাকে আরও সুসংহত করল বার্সেলোনা। ২৪ ম্যাচে ৬০ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার সঙ্গে দ্বিতীয়স্থানে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের পয়েন্টের ব্যবধান ৬। সমান ম্যাচ খেলে তিনে থাকা রিয়ালের পয়েন্ট ৫৩।

২৫ মিনিটে বার্সেলোনাকে এগিয়ে দেন মেসি। একটু আড়াআড়ি দৌড়ে বক্সের সামান্য বাইরে থেকে জোরালো শটে করেন গোলটি। বার্সেলোনার উচ্ছ্বাস অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দুই মিনিট পরেই স্পোর্টিং গিজনকে সমতায় ফেরান কার্লোস কাস্ত্রো। একটি প্রতিআক্রমণে মেনেনদেসের এক নিচু ক্রসে মাটিতে শুয়ে পা লাগিয়ে গোল করেন তিনি।

৪ মিনিট পরেই আবার মেসির গোল। তাঁর কাছ থেকে বল পেয়ে সুয়ারেজ এগিয়ে গিয়ে বল আবার বাড়িয়ে দেন মেসিকে। দারুণ এক শটে গোল করেন মেসি।
৬২ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েও গোল করতে পারেননি সুয়ারেজ। এই মৌসুমে এটি বার্সেলোনার অষ্টম পেনাল্টি-হতাশা। নিজের পেনাল্টি ব্যর্থতার আক্ষেপ উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার ঘুচিয়ে দেন ৬৭ মিনিটে। গিজনের বক্সের ডানপ্রান্তে বেশ কয়েকজন রক্ষণ-সেনার মধ্যে থেকে দুর্দান্ত এক শটে গোল করেন সুয়ারেজ। ২৪টি গোল করে এই মৌসুমে এখনো পর্যন্ত লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনেই তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ গোল রোনালদোর। কালকের দুটি নিয়ে মেসির গোল সংখ্যা—১৫।

ম্যাচ শেষে বার্সেলোনা কোচ লুইস এনরিকের কণ্ঠে ছিল তৃপ্তির সুর, ‘আমরা এই মুহূর্তে সে অবস্থানে আছি, সেই অবস্থানটাই আমরা প্রত্যাশা করি। নিজেদের খেলা দিয়েই আমরা এই জায়গায় এসেছি।’
ম্যাচে ৮০ শতাংশ সময়ই বল বার্সেলোনার দখলে ছিল। গোলের সুযোগও যথেষ্ট তৈরি হয়েছিল। গোলের ব্যবধান আরও বড় হতে পারত বলে মনে করেন এনরিকে। না হওয়ার জন্য গিজনের অতি রক্ষণাত্মক কৌশলকেই দায়ী করেছেন বার্সা কোচ, ‘আমরা প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি করেছি। ম্যাচটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করেছি। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, যখন কোনো দল অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক হয়ে যায়, তখন তাদের বিপক্ষে গোল করা একটু কঠিনই।’

মাইলফলক ছোঁয়া মেসির প্রশংসাও ঝরল এনরিকের কণ্ঠে, ‘প্রতিপক্ষ যে-ই হোক দলে মেসির উপস্থিতি কোচ হিসেবে আপনাকে বাড়তি সুবিধাই দেবে।’

28
মাবিয়ার কাছে লজ্জিত বাংলাদেশ !!
   
সেদিন পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে থাকা মাবিয়ার চোখে জল!

ভাবুন তো একবার, জাতীয় ক্রিকেট দল বিদেশ থেকে কোনো সিরিজ জিতে ফিরে এসেছে, কিংবা জাতীয় ফুটবল দল দেশে ফিরেছে কোনো বড় দলকে হারিয়ে। বিমানবন্দরে ঠিক ওই মুহূর্তের পরিস্থিতি কেমন হতো! সংবাদকর্মীরা ভিড় করতেন, বোর্ড কিংবা ফেডারেশনের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে থাকতেন ফুলের মালা নিয়ে। লোকে লোকারণ্য। অগুনতি আলোকচিত্রীর মুহুর্মুহু ক্যামেরার ঝলকানি। টেলিভিশন ক্যামেরাগুলোর হুল্লোড়।

এসএ গেমসের স্বর্ণ-কন্যা মাবিয়া আক্তার শিলং থেকে দেশে ফিরেছেন সদ্যই। বিমানবন্দর দিয়ে নয় অবশ্য। ফিরেছেন সীমান্ত হয়ে। মাবিয়া অত কিছু আশাও করেননি। অত গিজগিজে ভিড়। অত আয়োজন, সংবর্ধনা। কিন্তু নিদেনপক্ষে শুধু একটা ফুলেল শুভেচ্ছা কি পেতে পারতেন না? হলো না কিছুই! এসএ গেমসে ভারোত্তোলনে সোনার পদক জিতে মাবিয়া দেশে ফিরলেন নীরবে-নিভৃতে। দেশকে সাফল্যের রঙে রাঙানো এই ক্রীড়াবিদ কারও কাছ থেকে পাননি ছোট্ট একটা ফুলের পাপড়ি। একটা ফোন কলও। মাবিয়া অভিমানে কেঁদেছিলেন। হয়তো গোপন সেই কান্না।

সোনার পদক জিতে জাতীয় সংগীতের সুরে পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে অঝোর কান্নায় কেঁদেছিলেন মাবিয়া। জাতীয় পতাকাকে স্যালুট দেওয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে তাঁর কান্না কাঁদিয়েছিল দেশের মানুষকেও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই কান্নার দৃশ্য ছড়িয়ে উত্তাল এক আবেগ তৈরি করেছিল সবার মধ্যে। এসএ গেমস হয়তো বিশ্ব মানচিত্রে বড় কোনো ক্রীড়া আসর নয়। কিন্তু তবুও দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের সেই আসরেও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বেজে ওঠে খুব কমই। কেউ সোনা জিতলেই তবে পদক অনুষ্ঠানে গর্বিত ভঙ্গিতে ওড়ে লাল-সবুজ পতাকা। নেপথ্যে ভেসে আসে সেই সুর, যে সুরের মধ্যে কী যেন একটা আছে, বাংলার মানুষ আবেগতাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলে।

মাবিয়ার অর্জনটি আরও বড় ছিল। এবারের এসএ গেমসে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম সোনা এনে দিয়েছিলেন তিনিই। দেশকে এমন সম্মান এনে দেওয়া মাবিয়ারা রাজসিক অভ্যর্থনার স্বপ্ন দেখেন না। কিন্তু চান না অবহেলাও। দেশের মাটিতে পা রেখে যখন এতটুকু সম্ভাষণও মেলে না, কেউ পিঠটা পর্যন্ত চাপড়ে দেওয়ার থাকে না; তখন কষ্টে বুক তাঁদের ভেঙে যাওয়াই কি স্বাভাবিক নয়?

এমনিতেই শত অবহেলার বাধা ডিঙিয়ে সোনার পদক জিততে হয় আমাদের ক্রীড়াবিদদের। ভারোত্তোলক মাবিয়া ওজন বিশাল ভারী ওজনের ভার তোলেন, সেই ভারের সঙ্গে মিশে থাকে অনেক প্রতিকূলতা, সমাজের চাপিয়ে দেওয়া নানা বাধা-নিষেধের গল্পও।

দেশের মাটিতে পা রাখার পর তাঁকে প্রাপ্য সম্মানটুকু না দেওয়ায় আমরা আবার নতুন করেই কী লজ্জিত হলাম না!

মাবিয়ার অবশ্য এসব নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। সারল্যমাখা গলায় বললেন, ‘নিশ্চয়ই কোনো ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে দেখে আমাদের ফেরার দিনটা কারও মাথায় ছিল না। দেশকে সোনার পদক জিতিয়েছি, এটাই আমার আনন্দ। সোনার পদক জিতেই আমি অনেক সম্মানিত। বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে একটা ফুলের মালা না হয়, না-ই বা পেলাম।’

দেশকে যাঁরা দেন, তাঁরা কোনো কিছু ফেরত পাওয়ার আশায় দেন না। মাবিয়া সেই কথাটিই যেন তাঁর মন্তব্যের ভেতর আমাদের সবাইকে নতুন করে বুঝিয়ে দিলেন। এমনিতেই তো না–পাওয়ার অভ্যাস তাঁদের আছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এঁদো জিমনেশিয়ামে ঘামে ভিজে, মশার কামড় খেয়ে বড় কোনো প্রতিযোগিতার জন্য নিজেদের তৈরি করাটা ভারোত্তোলনের মতো খেলার ক্রীড়াবিদদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। বিমানবন্দরে ফুল না পাওয়ার ব্যাপারটা তাদের তাই নতুন করে মন খারাপ করে দেয় না।

‘কষ্ট’ শব্দটার সঙ্গে মাবিয়াদের পরিচয় যে শৈশব থেকেই। ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সেক্রেটারি উইং কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদের প্রতিদিন আসা-যাওয়ার ভাড়া দিতেন নিজের পকেট থেকে। টাকার অঙ্কটি খুবই ক্ষুদ্র, মাত্র ৫০ টাকা। কিন্তু মাবিয়ার জন্য সেটাই ছিল অনেক বড় কিছু। দোকানি বাবা কী যে কষ্ট করে তাঁদের তিন ভাই-বোনকে বড় করেছেন, সেটা ভেবে আজও শিউরে ওঠেন এই নারী ভারোত্তোলক।

খেলাটিতে শরীর থেকে যে প্রাণশক্তি ক্ষয় হয়, সেটা পুষিয়ে দিতে প্রতিদিন খাদ্য-তালিকায় আমিষের উপস্থিতি আবশ্যক। দুপুরে মাছ হলে রাতে মাংস, কিংবা দুপুরে মাংস হলে রাতে মাছ। সকাল-বিকেল দুধ-ডিমের খরচটা তো আছেই। কিন্তু মাবিয়ার বাবা কষ্ট হলেও মেয়েকে এগুলো জুগিয়ে গেছেন। রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থায় মেয়েদের খেলাধুলাকে নিরুৎসাহিত করার যে প্রবণতা আছে, পাড়া-প্রতিবেশী কিংবা হঠাৎ বেড়াতে আসা আত্মীয়-স্বজনের ঠোঁট উল্টে করা কটুকাটব্যগুলো পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে বারবারই মনে পড়ছিল মাবিয়ার।

যতই বলুন কোনো আক্ষেপ নেই, কোনো অভিযোগ নেই; সোনা জয়ের পর সরকারের তরফ থেকে নিদেনপক্ষে একটি ফোন কলের আশা করেছিলেন মাবিয়া। সেটা তিনি নিজের মুখেই বললেন, ‘দেশ থেকে উচ্চ পর্যায়ের কারও একটা ফোন পেলে খুব ভালো লাগত। আমরা তো দেশের জন্যই খেলি। সব সময় সঙ্গে থাকে লাল-সবুজ পতাকা। কেউ আমার সঙ্গে কথা বলেনি। হয়তো তাঁদের সময় হয়নি। তবে কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।’

নিজের জন্য কোনো চাওয়াও নেই। বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা চাইছেন না। চাইছে যে ভারত-শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীদের সঙ্গে লড়তে হয়, অন্তত তাদের মানের প্রশিক্ষণ সুবিধা যেন দেশের ভারোত্তোলকেরা পায়। ‘আমরা কী পরিবেশে অনুশীলন করি। কী ধরনের পোশাক বা কোন ব্র্যান্ডের জুতা পরি, এসব শুনে ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কান বন্ধুরা খুব অবাকই হয়েছে। আমাদের বারবার বলছিল, “কীভাবে তোমরা এমন অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ভারোত্তোলনের মতো একটি খেলা খেলার সাহস পাও!” আমরা কেউই তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারিনি’—বলছিলেন তিনি।

এসএ গেমসের ঠিক আগেই অনুশীলন করতে গিয়ে হাতের হাড় ভেঙে গিয়েছিল মাবিয়ার। গেমসেও ৮২ কেজি তিনি তুলেছেন ভাঙা হাড় ঠিকমতো জোড়া লাগার আগেই। প্রসঙ্গটা তুলতেই হেসে ফেললেন। যেন কোনো ব্যাপারই নয়।

জীবন-যুদ্ধে জয়ী মাবিয়ার কাছে কোনো কিছুই এখন আর অসম্ভব মনে হয় না।

29
মেসি-সুয়ারেজের ‘শতাব্দী সেরা’ পেনাল্টি!

     
মেসির পেনাল্টিতে সতীর্থরাও অবাক। সুয়ারেজ​ তখনো বুঝিয়ে দিচ্ছেন আলবাকে! ছবি: রয়টার্স

ডিয়েগো ম্যারাডোনার শতাব্দী সেরা গোল তিনি অনেক আগেই করে দেখিয়েছেন। হ্যান্ড অব গড গোলও। এবার লিওনেল মেসি যা করলেন, সেটি ম্যারাডোনারও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে নেই। আছে ফুটবলের সবচেয়ে তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী একজনের—ইয়োহান ক্রুইফ। ক্রুইফের বহুল আলোচিত পেনা​ল্টি শটের কথা মনে করিয়ে দিলেন মেসি। কাল মেসি-সুয়ারেজের যুগল-বন্দী হলো এমনই এক গোল। যেটিকে বলা হচ্ছে ‘পেনাল্টি অব দ্য সেঞ্চুরি’।

ম্যাচের ৮০ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল বার্সা। সেল্টা ডিফেন্ডার কাস্ত্রোর বাঁয়ে বল ঠেলে ডান দিক দিয়ে বের হয়ে ছিলেন মেসি। ডান-বামের এই বিভ্রান্তিতে পড়ে কাস্ত্রো বক্সে ফেলে দিল মেসিকে। পেনাল্টি। মেসি তখন দাঁড়িয়ে মাইলফলকের সামনে। লা লিগায় নিজের ৩০০তম গোল!

পেনাল্টি শট মেসিই নিলেন। কিন্তু গোলে শট না করে আলতো পাস বাড়িয়ে দিলেন। যেন সুয়ারেজকে দিয়ে হ্যাটট্রিকটাই করাতে চান! মেসির আলতো পাস থেকে গোল করার জন্য ছুটে এসেছিলেন নেইমারও। কিন্তু সুয়ারেজের উসাইন বোল্টীয় দৌড়ের কাছে হেরে গেলেন। সুয়ারেজের জোরালো শট জালে জড়াল। শট আলতো করে নিলেও সমস্যা হতো না। এমন পেনাল্টিতে যে গোলরক্ষক রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিল।

শুধু গোলরক্ষক? সেল্টা ডিফেন্ডাররা হতবুদ্ধি, রেফারিরও যেন বাঁশিয়ে ফুঁ দিতে খানিকটা দেরিই হলো। সত্যি বলতে কি বার্সা খেলোয়াড়দের সবাইও এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। এক-দুজন তো গোল উদযাপনের সময় মেসির কানে কানে কী যেন জানতেও চাইলেন। মেসি তখন দুষ্টুমিষ্টি হাসছেন। বার্সা কোন এনরিকে তাঁর সহকারীর দিকে তাকালেন। সহকারীও আলতো চোখ টিপে বললেন, ‘সব ঠিক আছে।’

এমন যে একটা পেনাল্টি নেওয়া হবে, সেটি অনুশীলনেই ঠিক করা ছিল বলে জানিয়েছেন নেইমার। তবে সেটি মেসি-সুয়ারেজ নয়, মেসি-নেইমার যুগলবন্দীতেই নাকি হওয়ার কথা ছিল, ‘এটা আমার জন্যই পরিকল্পনা করা ছিল। আমরা এটা অনুশীলনও করেছি। কিন্তু লুইস বলের কাছে আগে চলে গেছে। যা-ই হোক, ব্যাপার না। ও গোল ​করেছে, পরিকল্পনাটা তাই কাজেই লেগেছে।’

ক্যারিয়ারে ৮৩ পেনাল্টির ১৭টি মিস করা মেসি​র পেনাল্টি নিয়ে আলোচনা এই প্রথম নয়। তবে এবারেরটি যেন ছাপিয়ে গেল বাকি সবকিছুকেই। স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক তো এরই মধ্যে এর নাম দিয়েছে ‘শতাব্দীর সেরা পেনাল্টি’। বার্সা কিংবদন্তি ক্রুইফ ১৯৮২ সালে আয়াক্সের হয়ে এমন একটি পেনাল্টি নিয়েছিলেন। হেলমন্ড স্পোর্টের বিপক্ষে ওই ম্যাচটিতে পেনাল্টি থেকে সরাসরি গোলে শট না নিয়ে সতীর্থ জেসপার ওলসেনের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলেন। এরপর ফিরতি পাস থেকে ক্রুইফের গোল। ২০০৫ সালে আর্সেনালের থিয়েরি অঁরি আর রবার্ট পিরেস ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে একই চেষ্টা করেছিলেন। যদিও তাতে গোল করতে তাঁরা ব্যর্থ হন।

মেসি-সুয়ারেজের যুগলবন্দীর এই গোল একই সঙ্গে প্রশংসা আর বিতর্ক তৈরি করেছে। প্রতিপক্ষের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান দেখানোর প্রশ্নও উঠেছে। এভাবে গোল করা তো প্রতিপক্ষের অপমান। মেসিরা কি তবে লিগের প্রথম সাক্ষাতে ৪-১ গোলে হেরে যাওয়ার শোধই এভাবে দিতে চাইলেন সেল্টা ভিগোকে?

টিভিতে দেখে মনে হয়েছে, মেসি যে এমন কিছু করবেন বার্সার অনেকেই জানত না। এমনকি কোচ এনরিকেও। এ গোল নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘ক্রুইফের সেই গোলটা তো আমাদের সবারই মনে আছে। আমি হলে অবশ্য এটা করার সাহস পেতাম না। আমি সরাসরি বলে কিকই নিতাম।’

এমন গোল কি করা উচিত? এনরিকের উত্তর, ‘কেউ এটা পছন্দ করবে, কেউ করবে না। তবে বার্সার খেলোয়াড় কিংবা এই ক্লাবের সদস্যরা মনে করে, শিরোপা জয়ের চেয়েও মুগ্ধকর খেলা দিয়ে ফুটবলটা উপভোগ করা জরুরি। আমাদের ফুটবল উপভোগ করতে হবে, প্রতিপক্ষকে সম্মানও দেখাতে হবে। দেখাতে হবে, আমরা যেভাবে খেলি, এতে আমরাই সেরা।’ এ নিয়ে ম্যাচের পরপরই একটু বেশিই কথা হচ্ছিল জন্যই হ​য়তো এনরিকে পাল্টা জবাব দিতেও কসুর করলেন না, ‘স্পেন এমন একটা দেশ, যেখানে স্কিলের এক টুকরো প্রদর্শনীর চেয়ে বলে শুধু লাথি মারাটা বেশি হাততালি পায়। এ নিয়ে আমরা তাই ভাবি না।’

সেল্টা কোচ এদুয়ার্দো বেরিজ্জোও মনে করেন, এটা প্রতিপক্ষকে অসম্মান নয়। তবে এমন পেনাল্টি নেওয়া হতে পারে, সেটা তিনিও ভাবতে পারেননি।

প্রতিপক্ষের কথা বাদই দিন, খোদ জর্ডি আলবাও ​স্বীকার করলেন, এমনটা হবে তাঁরা জানতেনই না। বার্সা ফুলব্যাক বলেছেন, ‘লিও সব সময়ই কিছু না কিছু আবিষ্কার করে, আর এটা নিখুঁতভাবে কাজেও লাগে। আমরা অবশ্য অনুশীলনে এর কিছুই দেখিনি, আমরা কিছুই জানতাম না।’ তবে কি শুধু নেইমারই জানতেন? এমনকি সুয়ারেজও নয়?

30
Dear Sir,

Please  re-size your post font to read smoothly.

Pages: 1 [2] 3 4 ... 8