Daffodil International University

Faculties and Departments => Allied Health Science => Genetic & Biotechnology => Topic started by: nafees_research on September 08, 2018, 09:11:20 PM

Title: জাতীয় মাছ ইলিশের জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্স)
Post by: nafees_research on September 08, 2018, 09:11:20 PM
জাতীয় মাছ ইলিশের জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্স)

কোনো একটি সূত্র ধরেই আসে সাফল্য। স্বাভাবিকভাবে সাফল্যের ফল নিয়েই আলোচনাটা হয় বেশি। যা পাওয়া গেল অর্থাৎ যা আবিষ্কার হলো তা কী কী কাজে লাগবে— এমন প্রশ্নই আসে সব তরফ থেকে। সেই উত্তর জানার জন্য কৌতূহলের কোনো শেষ নেই। আবিষ্কারের এই ধাপটি আবিষ্কারকের কাছেও দারুণ উপভোগ্য। তবে সাফল্যের পেছনের গল্পগুলোও কম আকর্ষণীয় নয়। নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্র যতটা আলোচনায়, সমান্তরালভাবে সূত্র আবিষ্কারের পেছনের ঘটনাও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। কে না জানেন, তিনি আপেল গাছের নিচে বসেছিলেন, একটি আপেল গাছ থেকে মাটিতে পড়ার পর থেকেই তিনি ভাবতে থাকেন আপেল কেন ওপরে না গিয়ে নিচে পড়ল।

জাতীয় মাছ ইলিশের জীবন রহস্য বা জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্স) বের করার পেছনের গল্পটিও সমান উপভোগ্য। দোকানে গিয়ে ইলিশের দাম বেশি মনে হওয়ায় না কিনে ফিরে এসেছিলেন এক বিজ্ঞানী। আর সেই ফিরে আসা থেকেই ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম হয়েছে। ইলিশ কীভাবে সমুদ্রের নোনা জল ও স্বাদু পানি দুটোতেই বসবাস করে, ইলিশের রোগ বালাই কী, ইলিশ কী বদ্ধ জলাশয়ে চাষযোগ্য মাছ, কেন ইলিশ এত সুস্বাদু, কেন একেক এলাকায় ইলিশের স্বাদ পাল্টায়, পদ্মার ইলিশই বা কেন বেশি সুস্বাদু, স্বাদ অটুট রেখে ইলিশ কী চাষ করা যাবে- এমন সব প্রশ্নের জবাব পাওয়ার দরজাটা এখন খুলে গেছে ইলিশের জিনোম বিন্যাস উদ্‌ঘাটনের ফলে। তবে কী ইলিশকে ‘পোষ’ মানানো যাবে? উত্তর খোঁজা হচ্ছে এই প্রশ্নেরও।

জীববিজ্ঞানের ভাষায় জিনোম বলতে জীবের সমস্ত বংশগতিক তথ্যের সমষ্টিকে বোঝায়। জীবদেহে বহুসংখ্যক কোষ থাকে। জিনোম সিকোয়েন্স হলো কোষের সম্পূর্ণ ডিএনএ বিন্যাসের ক্রম। জিনোম যত দীর্ঘ, তার ধারণ করা তথ্যের পরিমাণ তত বেশি। প্রতিটি কোষ সেই জীবের বিকাশ ও গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বহন করে। জিনোম ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) বা আরএনএ (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) দিয়ে গঠিত।

ইলিশের জীবন রহস্য উদঘাটনের অভিযানে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খানের নেতৃত্বে দেশের কয়েকজন গবেষক। এর মধ্যে দুজন প্রবাসে রয়েছেন। ইলিশের জিনোম সিকোয়েন্স বা জিনোম বিন্যাস যার হাত ধরে এসেছে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. মং সানু মারমার কাছ থেকেই শোনা যাক সেই গল্প।

দাম বেশি হওয়ায় ইলিশ না কিনে ফেরেন, শুরু করেন গবেষণা:
ড. মং সানু এখন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহরে বাস করছেন। সেখানে নতুন প্রজন্মের ডিএনএ বিন্যাস প্রযুক্তির একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত। গতকাল শুক্রবার রাতে টেলিফোনে প্রথম আলোর সঙ্গে প্রায় ৫০ মিনিটের দীর্ঘ আলাপে জানিয়েছেন অনেক কথাই। উঠে এসেছে দেশের প্রতি তাঁর ভালোবাসা। তিনি বলেন, এ অর্জন বাংলাদেশের মানুষের। খাগড়াছড়িতে বেড়ে ওঠা মং সানু বললেন, ‘আমি একেবারেই গ্রামে বড় হওয়া মানুষ। মানুষের দুঃখ, কষ্ট দেখে বড় হয়েছি’।

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার সিংগিনালা গ্রামে বড় হয়েছেন। বাবার নাম মং চাই উরি মারমা ও মায়ের নাম আবাইমা মারমা। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। ১৯৯৭ সালে মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় ও জৈব রসায়ন বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এ বিভাগে তিনি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। এরপর তিনি জাপানে বৃত্তি নিয়ে আরেকটি মাস্টার্স ডিগ্রি নেন এবং ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় পিএইচডি শুরু করেন। ২০০৫ সালে তাঁর পিএইচডি শেষ হয়। পরে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রজন্মের জিন উদ্ভাবন কাজে যুক্ত হন। ২০০৭ সালে নতুন প্রজন্মের ডিএনএ বিন্যাস প্রযুক্তির একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন। ওই প্রতিষ্ঠানে এখন তিনি জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও নিউক্লিওটাইড রসায়ন বিভাগের প্রধান। স্ত্রী মাফুই চিং রোয়াজা এবং ১১ বছর বয়সী উমা মারমা ও সাত বছর বয়সী মাশুই নুই মারমা নামে দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে বোস্টনে তিনি বসবাস করছেন।

ইলিশের জীবন রহস্য বের করার চিন্তা এল কেন? তাঁর কাছে প্রথম প্রশ্নটি ছিল এটি।
মং সানু জানালেন, ঘটনাটি প্রায় আড়াই বছর আগের। বোস্টনের একটি দোকানে গেছেন মাছ কিনতে। সেখানে গিয়ে ইলিশ দেখেই কিনতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু দাম খুব বেশি মনে হলো। এক পাউন্ডের দাম ১৫ ডলার। অর্থাৎ কেজিতে পড়ছে প্রায় ৩০ ডলার। পাশাপাশি স্যামন মাছের দাম প্রতি পাউন্ড ৫ ডলার। স্বাদে পার্থক্য থাকলেও ইলিশের সঙ্গে স্যামন মাছের মিল হচ্ছে-দুটোই স্বাদু ও লোনা পানিতে টিকে থাকে। মাছ না কিনেই বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল ইলিশ ও স্যামন। স্যামনের জিনোম বিন্যাস আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে স্যামনের জীবন রহস্য এখন বিজ্ঞানীদের হাতের মুঠোয়। এই কাজটি তো তিনিই জানেন। তাঁর আবিষ্কৃত প্রযুক্তি ডিএনএ বিন্যাস কাজে ব্যবহৃত হয়। তাহলে ইলিশের জন্য নিজের প্রযুক্তি কেন কাজে লাগাচ্ছেন না! দেশের মানুষের জন্য কিছু করার জন্য ছটফট করতে থাকেন। ইন্টারনেটে ইলিশ নিয়ে খোঁজ খবর শুরু করেন। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বাংলাদেশ চার লাখ ৯৬ হাজার ৪১৭ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে।

মং সানু বলেন, ‘প্রথমেই জেনে নিই বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন কেমন হয়। দেখলাম ইলিশ থেকে হাজার কোটি টাকা দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়। তার মানে ইলিশ হতে পারে বাংলাদেশের জন্য “সোনার খনি”। সোনার খনিও শেষ হয়, কিন্তু ইলিশের খনি শেষ হওয়ার কথা নয়। হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের মাছে ১০০ কোটি টাকা তো অন্তত গবেষণায় বরাদ্দ রাখা উচিত। অথচ তেমন কোনো তথ্য পেলাম না। মনে হলো, দেশের মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ রয়েছে। আমি যে লাইনে আছি, তা দিয়েই দেশের মানুষের জন্য এই কাজটি করা যায়। দেশে এক বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করি, এ কাজে বাংলাদেশ সরকারের কোনো ফান্ড পাওয়া যাবে কিনা।’
তবে ফান্ডের ব্যাপারে ইতিবাচক কিছু না শুনে নিজের প্রযুক্তি প্রয়োগ করার চিন্তা করেন। তবে একটা সমস্যা ছিল, তিনি যেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, সেটি নতুন প্রজন্মের ডিএনএ বিন্যাস প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উৎকর্ষের জন্য। তবে সেটি মাছের ডিএনএ বিন্যাসের দৈনিক রুটিন কাজের জন্য নয়। এ নিয়ে আলোচনা করেন তাঁর বন্ধু বুলগেরিয়া বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক বিজ্ঞানী ড. পিটার ইনাকেভের সঙ্গে। তিনি তাঁর গবেষণাগারটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে দিতে রাজি হন। শুধু গবেষনায় প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য তিনি কিনে নেন। বন্ধুর কাছ থেকে সাড়া পেয়ে এবার ডিএনএ বিন্যাসের জন্য বোস্টনের একটি দোকান থেকে ইলিশ মাছ কিনে আনেন। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট খান। মাছটি বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা। ভালোভাবে সংরক্ষণ না হওয়ায় ডিএনএ গুণাগুণ ভালো ছিল না। তাই মাছটি কোনো কাজেই আসেনি তাঁর। বুঝতে পারলেন দেশ থেকে গবেষণা উপযোগী নমুনা হাতে পেলেই কাজটি করা সম্ভব।
এরপরই যোগাযোগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষক এখন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজিজের সঙ্গে। মং সানু বলেন, ‘এক বছর আগে শ্রদ্ধেয় স্যার আমার কথা শুনে ব্যাপক উৎসাহ দেন। তিনি আলাপ করিয়ে দেন অধ্যাপক হাসিনা খানের সঙ্গে। ম্যাডাম পাটের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কারের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তাঁর কাজ সম্পর্কে আমার খুব ভালো ধারণা ছিল। তবে চিন্তা ছিল, তিনি আমাকে কীভাবে নেন। পুরো বিষয়টি শুনে তিনি সাদরে তা গ্রহণ করলেন। মনে অনেক জোর পেলাম যে, এবার কিছু হবে।’

যাত্রা হলো শুরু:
মং সানুর কাছ থেকে জানা গেল, কাজটি শুরুর আগে এর মেধাস্বত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তিনি অধ্যাপক হাসিনা খানকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে গবেষণা করলেও এর মেধাস্বত্ব থাকবে বাংলাদেশের নামে। বাংলাদেশের জনগণ ও রাষ্ট্র পাবে এই মালিকানা। মং সানু বলেন, ‘আমরা গবেষকেরা প্রতিশ্রুতি দিই, এই আবিষ্কার, পেটেন্ট যা কিছু হবে সব বাংলাদেশের জনগণ পাবে। আমরা কোনো মেধাস্বত্ব নেব না। ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দেশের অর্জনকে আমরা বড় করে দেখছি। সেভাবেই সব কাগজপত্র লিপিবদ্ধ হয়েছে’।

এরপর অধ্যাপক হাসিনা খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইলিশ গবেষক এম নিয়ামুল নাসেরের সঙ্গে কথা বলেন। নিয়ামুল নাসেরের নেতৃত্বে দেশের সাতটি স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয় অত্যন্ত উচ্চ মানের টিস্যু নমুনা।
নিয়ামুল নাসের প্রথম আলোকে জানান, সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে গবেষণাটি হয়েছে। গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর কাজটি শুরু হয়। নমুনা সংগ্রহ করা হয় ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। গভীর সমুদ্র, মেঘনা নদীর মোহনা, পদ্মা ও মেঘনা নদীর সংগমস্থল, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মার উপরিভাগ ও হাকালুকি হাওর—এই সাতটি এলাকা থেকে ইলিশের ডিএনএ, আরএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন ধরনের টিস্যু আধুনিক প্রযুক্তিতে সংগ্রহ করা হয়। তিনি বলেন, ইলিশের জীবনে নানা রহস্য রয়েছে। আমরা ইলিশের আচরণগত বৈশিষ্ট্য শুধু জানি। ইলিশ সমুদ্রে থেকে নদীতে আসে, আবার নদী থেকে সমুদ্রে ফিরে যায়, কেন ইলিশের এই আসা-যাওয়া, প্রকৃতি নাকি জিন নিয়ন্ত্রণ করে ইলিশের এই আচরণ— তা আমরা জানি না। এই আবিষ্কার, এই সব রহস্য জানার দ্বার খুলে দিয়েছে। এই জিনোম বিন্যাস আবিষ্কৃত হওয়ায় ইলিশের জীবনের সব রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হবে। ইলিশের জেন্ডার সম্পর্কে জানা যাবে। বড় ইলিশগুলোকে মেয়ে ইলিশ ও ছোট ইলিশগুলোকে পুরুষ ইলিশ হিসেবে পাওয়া যায়। সমুদ্রের কিছু মাছের মতো ইলিশের জেন্ডার পরিবর্তনের রহস্য আছে কিনা তা জানা যাবে। ইলিশের রোগ বালাই আছে, মৃত্যু আছে। সেগুলো কেন ঘটে তা জানা যাবে।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যাপক হাসিনা খান প্রথম আলোকে বলেন, নমুনা সংগ্রহে মান ঠিক রাখতে অত্যন্ত সতর্ক থাকা হয়েছে। তাঁর বিভাগের তরুণ গবেষক অভিজিৎ দাস ও অলি আহমেদ স্থানীয় পর্যায় থেকে ইলিশ মাছের বিভিন্ন অংশ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে নমুনা সংগ্রহ করে ড্রাই আইসে (কার্বন ডাই অক্সাইডকে ঠান্ডা করে বরফের মতো জমিয়ে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় রাখা) সংরক্ষণ করে ঢাকায় নিয়ে আসেন। বিশেষ অনুমতির মাধ্যমে বিশেষভাবে প্যাকেটজাত করে বিমানে করে সেই নমুনা পাঠিয়ে দেওয়া হয় মং সানুর কাছে।

হাসিনা খান জানান, গবেষণায় ইলিশের বংশানুগতি সম্পর্কিত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা গেছে, ইলিশের পুরো ডিএনএ (জিনোম) এর ক্ষেত্রে প্রায় ১০০ কোটি বেসপেয়ার (কেমিকেল ইউনিট) রয়েছে এবং জিন রয়েছে ৩১ হাজার ২৯৫টি। (মানবদেহে পুরো ডিএনএ রয়েছে ৩২০ কোটি বেসপেয়ার। ইলিশের দেহে কতগুলো জিন আছে জানা গেছে, এখন জিনগুলো কীভাবে কাজ করবে তা বের করা হবে। মং সানু এ বছরের ১ মার্চ ডিএনএ বিন্যাসের কাজ শেষ করেন। এরপরের কাজটি ডিএনএ অ্যাসেম্বলি বা বিন্যাস করা ডিএনএ আবার মালার মতো করে সাজানোর কাজটি করেন আরেক বাংলাদেশি বিজ্ঞানী একেএম আবদুল বাতেন।
এই তথ্য একটি সুপার কম্পিউটারে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন হয়। যেটি বাংলাদেশে নেই। বিজ্ঞানী আবদুল বাতেন অস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন ক্রস ইউনিভার্সিটিতে এই বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করে ডিএনএ অ্যাসেম্বলির কাজটি শেষ করেন। পরে তিনি নিউজিল্যান্ডে চলে গেলে আরএনএ ডেটা বিশ্লেষণের কাজটি তাঁর পক্ষে আর করা সম্ভব হয়নি।
তবে ইলিশের ডিএনএ তথ্যের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরএনএ ডেটা বিশ্লেষণ জরুরি। মানুষ, মাছ, উদ্ভিদ ও অন্যান্য উন্নত জীবের ক্ষেত্রে ডিএনএ-তে বংশগতির তথ্যগুলো সংরক্ষিত থাকে। সেই ডিএনএ থেকে তথ্য নিয়ে আরএনএ তৈরি হয়। আর আরএনএ থেকে তথ্য নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন তৈরি হয়। আরএনএ বিশ্লেষণে গেলে ইলিশে কী রকম প্রোটিন তৈরি হয়, সেটা জানা যাবে এবং ডিএনএতে যে তথ্যগুলো সংরক্ষিত রয়েছে বলে পাওয়া গেছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ কারণে ইলিশের ডিএনএ অ্যাসেম্বলির পর আরএনএ বিশ্লেষণের কাজের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

হাসিনা খান জানান, বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্কের গবেষণাগারে উচ্চ মানের কম্পিউটারে তাঁর ছাত্রছাত্রীরা আরএনএ ডেটা বিশ্লেষণের কাজটি করছেন।
ইলিশের এই গবেষণায় রয়েছেন প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম, প্রভাষক ফারহানা তাসনিম চৌধুরী, তরুণ গবেষক অলি আহমেদ, অভিজিৎ দাস, তাসনিম এহসান, জুলিয়া নাসরিন ও রিফাত নেহলিন।

ইলিশ কী তবে চাষ হবে?
ইলিশের জিনোম বিন্যাসের যুগান্তকারী আবিষ্কারের তথ্য জানার পর গবেষকেরা সবচেয়ে বেশি মুখোমুখি হচ্ছেন এই প্রশ্নের— ইলিশ কী চাষ করা যাবে? উত্তরটি শোনা যাকে মং সানুর কাছ থেকে। প্রশ্নটি শুনে হাসলেন এই বিজ্ঞানী। বললেন, কাজটি সবে শুরু হয়েছে। যেতে হবে আরও বহু দূর। তবে ইলিশের ব্যাপারে কোনো কিছুই অসম্ভব না—এ কথাটি বলা যেতে পারে। এমন প্রযুক্তি আছে যে, ইলিশের জিনকে প্রয়োজনে পরিবর্তন করে চাষ উপযোগী করা যেতে পারে। স্যামন মাছের জিনোম বিন্যাসের পর যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলো তাতে দেখা গেছে, সমুদ্রের স্যামন থেকে তা দ্রুত বড় হয়। ইলিশের ক্ষেত্রেও এ রকম করা যায় কিনা তা দেখা যাবে। ইলিশের খাদ্য বা প্ল্যাংটনের ওপর এর স্বাদ নির্ভর করে। তাই দেহে থাকা যে চর্বির কারণে একেক জায়গার ইলিশের স্বাদ একেক রকম হয়, সেটা জিনোমে লেখা থাকলে সেই তথ্য ব্যবহার করে ইলিশের স্বাদও একই রকম রাখা সম্ভব। সেই জিন শনাক্ত করা গেলে একই স্বাদের ইলিশ চাষ করা সম্ভব। এমনকি ইলিশের এই স্বাদ অন্য মাছের মধ্যেও স্থানান্তর করা সম্ভব। ইলিশের রোগ নির্ণয় করে মৃত্যু কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানোও সম্ভব। তবে এই সব কিছুর জন্য আরও গবেষণা ও আরও অপেক্ষা করতে হবে। ইলিশ মাছকে ঘিরে এই সব সম্ভাবনা মাথায় নিয়ে গবেষণা করতে হবে। তাঁর ভাষায়, মূল দরজাটি খুলে গেছে, এখন শুধু এগিয়ে যাওয়া।

এর আগে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে একদল বাংলাদেশি গবেষক পাটের জীবনরহস্য (জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করেন ২০১৩ সালে। বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে গত বছর। এর আগের বছর বাংলাদেশের জামদানি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ইলিশের জীবন রহস্য উদ্‌ঘাটনের পর এবার এর পেটেন্টের জন্য আবেদন করতে পারবে বাংলাদেশ।

Source: https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1556723/%E0%A6%87%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A8-%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%89%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E2%80%8C%E0%A6%98%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A8

Title: Re: জাতীয় মাছ ইলিশের জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্স)
Post by: Masuma Parvin on September 09, 2018, 05:15:33 PM
Very interesting and good news also.
Title: Re: জাতীয় মাছ ইলিশের জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্স)
Post by: tokiyeasir on September 10, 2018, 09:10:01 AM
Informative
Title: Re: জাতীয় মাছ ইলিশের জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্স)
Post by: Nahian Fyrose Fahim on September 10, 2018, 10:25:39 AM
Good news indeed :)
Title: Re: জাতীয় মাছ ইলিশের জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্স)
Post by: Raisa on September 11, 2018, 10:24:30 AM
 :)
Title: Re: জাতীয় মাছ ইলিশের জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্স)
Post by: drrana on September 16, 2018, 05:52:58 PM
 :)