Daffodil International University

DIU Activities => Permanent Campus of DIU => Topic started by: Reza. on March 30, 2017, 11:09:41 PM

Title: My memories of Dhaka in a brief.
Post by: Reza. on March 30, 2017, 11:09:41 PM
ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় থাকি। সূক্ষ ভাবে বলতে গেলে আমার জ্ঞান হয়েছে ঢাকায়। এখন পর্যন্ত ঢাকাতেই আছি। মাঝখানে ৬ বছর কেটেছে পাবনা ক্যাডেট কলেজে। স্মৃতির পাতা ঘাঁটলে এখনো চোখে ভাসে কি অনিন্দ সুন্দর ছিল এই ঢাকা শহর। পেপারের পাতায় আসতো - ঢাকা হল তিলোত্তমা নগরী।
ছোটবেলায় এই ঢাকাতে তিন তলার বেশী উচু বাড়ি ছিলোনা বলতে গেলে। কেননা তখন প্রায় সব বাসাই ছিলো ব্রিক ফাউন্ডেশনের। ব্রিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিন তলার বেশী উচু বিল্ডিং করা যায় না। বড়জোড় চারতলা করা যেত। তাই চারিদিকে তাকালে দেখা যেত বিশাল আকাশ।
তখন কোন বাসাতেই এ সি ছিলো না। আরো সঠিক ভাবে বলতে গেলে তখন এ সি র প্রয়োজন ও পড়তো না। কেননা তখন আবাসিক এলাকাতে বাতাস আটকানোর মত উচু বিল্ডিং ছিলো না। ভাবতেই আশ্চর্য লাগে যে তখন অনেকের কাছেই সামান্য সিলিং ফ্যানও ছিলো বিলাস সামগ্রী তুল্য। টিভি বা ফ্রিজ সব বাসায়  থাকতো না। যে বাসায় টিভি থাকতো সে বাসার জানালায় অনেক দিনই সন্ধ্যায় মানুষের ভীর হত এই টিভি দেখার জন্য। অবশ্য সব বাসাতেই রেডিও ছিলো। যা এখন আমাদের সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।   
কিছু উচু বিল্ডিং ছিলো কমার্শিয়াল এরিয়া গুলোতে। যেমন মতিঝিলে বা দিল্কুশায়। কেবল মাত্র ওই এলাকার কিছু উচু বিল্ডিং এ লিফট ছিলো।
এইবার আসি রেস্টুরেন্টের প্রসঙ্গে। তখন রেস্টুরেন্টে মানুষ প্রতি নিয়ত যেত না। বার্থ ডে পালন তখনো মহামারি আকারে দেখা দেয় নাই। তবে কিছু চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ছিলো। হঠাত হয়ত কোন উপলক্ষে মধ্য বিত্তদের সেখানে যাওয়া হত। আমরাও স্টুডেন্ট লাইফে কখনো দল বেধে খেতে গিয়েছি বলে মনে পড়ে না। আর এখন ফুচকা খেতেও প্রতিদিন যত মানুষ বের হয় আগে পুরো ঢাকাতেও অত মানুষ বাইরে খেতে যেত না। 
উপরের বর্ণনায় মনে হতে পারে তখন ঢাকায় জীবন যাপন করা কত নিরামিষ টাইপের ছিলো। কিন্তু যখন মনে পড়ে যে তখন ৪০ - ৫০ মিনিটে অর্ধেক ঢাকা ঘুড়ে আসা যেত। বা খোলা মাঠের অভাব ছিলো না। কিংবা মহাখালি পর্যন্ত ঢাকা ছিলো। বনানী পার হলেই হাই ওয়ে শুরু হত। কল্যাণপুরে মিরপুর রোডের ব্রিজের নিচে দিয়ে বয়ে যেত ছোট নদী। যেটাতে অনেকেই নৌকায় করে ঘুরতেন। এছাড়াও গাবতলি পার হলে ডানদিকে শালবন দেখা যেত যেখানে পিকনিক করা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিলো ঢাকা বাসির জন্য। ভাবতেও ঢাকার বর্তমানের বাসিন্দাদের আফসোস হবে এটা নিশ্চিত।
আরেকটি হল এই ঢাকাতেই আগে গরুর গাড়ি চলতে দেখেছি। অনেক সময়ই নির্মাণ সামগ্রী গরুর গাড়িতে পরিবহণ করা হত। রিক্সায় করে ফার্ম গেট এমনকি ক্যান্টনমেন্ট সহ যে কোন জায়গায় চলে যাওয়া যেত। রাতে রাস্তায় ইলেকট্রিক পিলারের উপরে বাল্বের হলুদ আলো টিমটিম করে জ্বলত।
দুপুরে বাসায় বসে মনে হত কি নির্জনতা চারিদিকে। রাস্তায় লোকজন নাই। নীরব নিস্তব্ধতা থাকতো চারিদিক ঘিরে। স্কুলের একেবারে প্রথম দিন থেকেই আমরা একা একাই স্কুলে যেতাম ও আসতাম। সবাই তাই করত। বেশ কিছু দূরে বাসা হলেই হয়ত বড় কেউ স্কুলে দিতে আসতো। তাও প্রতিদিন নয়।
আমরাই মনে হয় লাস্ট জেনারেশন যারা ঢাকার বাসার গাছের আম জাম কাঠাল ও অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন ফল গাছ থেকে পেড়ে খেয়েছি।
ধান্মন্ডি সহ বিভিন্ন এলাকাতে এখনো কিছু বাড়ি দেখা যায় সেই সময়কার। যে গুলো এতো বিশাল যে সেগুলো আবাসিক বাসা হিসেবে এখন আনফিট। সব গুলোই এখন অফিস বা স্কুল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বাড়ি গুলোর চারিপাশের খোলা জায়গা দেখলে সেই সময়কার মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপন কেমন ছিল তা অনুমান করা যায়। এখন যেমন আমরা পাশের ফ্ল্যাটের মানুষদেরও চিনি না। কিন্তু তখন পুরো এলাকার মানুষদের সাথে কম বেশী চেনা পরিচয় ছিলো। ঢাকায় চলাচল করতে ভয়ের কিছু ছিল বলে মনে পড়ে না। ভয়ের যা ছিলো তা হল কেবল মাত্র রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুর গুলো। এখন তো সুস্থ মানুষও এখানে চলাচল করতে চিন্তায় পড়ে যায়। শিশু ও বৃদ্ধদের চলাচলের জন্য অনেক আগেই ঢাকা অনুপযুক্ত হয়ে গেছে।
এই গুলো যে ঢাকার অনেক আগের চিত্র তা নয়। ঢাকা হঠাত করেই অনেক বদলে গেছে। আগে যা অনেক ধীরে ধীরে পরিবর্তন হত - তা এখন অতি দ্রুত হচ্ছে। এক মাস পরে গেলেই অনেক জায়গা আর চেনা যায় না।
একটি শহরের মৃত্যু হয় যখন তার বাসিন্দারা এক জন অন্য জনের সুবিধা বা অসুবিধা নিয়ে ভাবে না। একটি শহরের মৃত্যু হয় যখন তার প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যায়। যেখানে মানুষ ছাড়া অন্য কোন পশু পাখি থাকে না। মানুষ খুজে সেই শহর থেকে পালাবার উপায়। কংক্রিটের জঙ্গলে যখন নীরব আর্তনাদ অনুরনিত হয়। 
তাও প্রিয় এই ঢাকা। ভালোবাসি এই ঢাকাকে।