425
« on: December 07, 2011, 08:44:50 AM »
সংগীতশিল্পী জন বন জোভির জন্ম ২ মার্চ ১৯৬২ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। বন জোভি ২০০১ সালে ১৬ মে মনমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এই ভাষণ দেন।
সব গ্র্যাজুয়েটকে অভিনন্দন। এখন পর্যন্ত তোমাদের সবচেয়ে বিশেষ দিনটিতে কিছু বলতে পেরে নিজেকে আসলেই অনেক গর্বিত মনে হচ্ছে। এখানে আসার আগে গত কয়েক সপ্তাহ শুধু এটা নিয়েই ভেবেছি যে আজ কী বললে তোমাদের জীবনের সামনের দিনগুলোর জন্য তা সহায়ক হবে।
এখন আমার মনের মধ্যে অনেক ধরনের আবেগের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক আনন্দ ও প্রতীক্ষা যেমন ভয় ও উদ্বেগে রূপ নেয়— প্রথম দিন কিন্ডারগার্টেনে যাওয়া অথবা স্কুল থেকে কলেজে যাওয়ার দিন, ঠিক তেমন। এখন তোমরা সবাই হয়তো উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করবে অথবা পেশাগত জীবন শুরু করবে। কিন্তু তোমাদের শিক্ষাগ্রহণ এখানেই শেষ নয়। মনে করো, তোমার কর্মক্ষেত্রে আরেকটি স্কুল। তাই এ স্কুল থেকে যত পারো শিক্ষা গ্রহণ করো। কোনো পেশাই ছোট নয়, যদি তুমি সেখান থেকে কিছু শিখতে পারো।
হয়তো সংগীতশিল্পে আমি অনেক সার্থক, কিন্তু যখন আমি অভিনয় শুরু করি, তখন অন্য সবার মতো আমারও কাজ খুঁজতে হতো। সংগীতশিল্পী হয়েও আমাকে অনেক দিন অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে হয়েছিল। সত্যি বলতে, অনেক সময় মনে হয়েছিল সব ছেড়ে দিয়ে চলে যাই। কিন্তু এ ভয় থেকে অতিক্রম করে কিছু করার ইচ্ছাটা ছিল বেশ। তিন বছর অভিনয় শিখেছিলাম। আর এসবের জন্যই তখন পেয়েছিলাম এক নতুন জীবন। তোমরা অনেকেই হয়তো ঠিক করে ফেলেছ তোমরা কী করবে, কোন কোম্পানিতে কাজ করবে। কিন্তু তোমাদের মধ্যে অনেকেই আছে, যারা তা করেনি। লজ্জার কিছু নেই, তাদের জন্যই বলছি, মনে রেখো, জীবনটা হলো একটি ম্যারাথন; জীবনের এই পথ তোমাকে যেখানেই নিয়ে যাক না কেন, তুমি যেকোনো সময়ই তোমার সে পথ পরিবর্তন করতে পারবে। তাই জীবনের মানচিত্র তৈরি করবে, কিন্তু তা করবে পেনসিল দিয়ে।
আর হ্যাঁ, ব্যর্থতা নিয়ে বলতে গেলে বলা যায়, ব্যর্থতা হলো একজন মানুষের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। কিন্তু তাই বলে কারও উচিত নয় এটাকে ভয় পাওয়া। বরং এটাই তোমাকে শিক্ষা দেবে, শেখাবে নিজের ও অন্যের অনেক কিছু। আমরা সবাই জীবনের অনেক কাজে বিকল হই। কিন্তু তা হতে পরিত্রাণ নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমানে প্রতিবছরই অনেক প্রতিভাবান শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন করে, কিন্তু তাদের মধ্যে সবাই ভালো জায়গা থেকে আসে না। এর মধ্যেও তাদের সফল হওয়ার কারণ হলো সাফল্যের প্রতি তীব্র উদ্দীপনা, প্যাশন। আর তা না হলে আমি আজ সফল হতাম না। আমি নিউইয়র্ক বা লস অ্যাঞ্জেলেসের অধিবাসী ছিলাম না, ছিলাম না কোনো ‘রক এন রোল’ বংশের অধিকারী। তবু হয়েছি সফল। হয়তো ছিলাম অনেক প্যাশনেট। অবশ্য তার সম্ভাবনাই বেশি। কোনো কিছু করার প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা, উত্তেজনা কাজের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর একটি সমীকরণ আছে তিনটি ‘পি’-এর: ‘প্যাশন + পারসিসটেনস = পসিবিলিটিস’ অর্থা ৎ কোনো সাফল্যের সম্ভাবনা হলো সে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা, উদ্দীপনার যোগসূত্রের সমন্বয়। মনে হতেই পারে, কীভাবে বিটলসের মতো এত সুন্দর গানের কথা লিখব, অথবা বিল গেটসের মতো এত মেধাবী অথবা আব্রাহাম লিংকনের মতো এত সাহসী হব? কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন হলো বিশ্বাস। আর বিশ্বাস করতে হবে যে সবই সম্ভব। বিশ্বাস করতে হবে ভালোবাসায়, ম্যাজিকে, ধর্মে। বিশ্বাস করতে হবে অন্যের ওপর এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজের ওপর। কারণ, তোমাদের মধ্যে অনেকের কাছেই এমন কিছু আছে, যা অন্যের কাছে নেই। তাই গড়ে তোলো নিজকে স্বতন্ত্র, অনন্য করে। জেগে ওঠো, আওয়াজ দাও, অন্যদের তা বোঝাও। আর এটাকেই তোমার শক্তি হিসেবে গড়ে তোলো। সময় নষ্ট কোরো না। সময় নাও, সময়কে কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ করো। মন দিয়ে সব লক্ষ করো, সব নিয়ে চিন্তা করো। আর এরপর যা করতে ইচ্ছা করবে, তা-ই হবে। কারণ, এখন তোমার মন তাতেই সাড়া দেবে, যা তোমার জন্য ভালো। আর কয়েকটা কথা সংক্ষেপে একসঙ্গে বললে যা হয়:
বড় হও, কিন্তু বৃদ্ধ হোয়ো না।
অলৌকিক ঘটনা প্রতিদিন অনেক হয়। এর সংজ্ঞা পরিবর্তন করো। দেখবে অলৌকিকতা এরপর তোমার আশপাশেই থাকবে।
যতক্ষণ তুমি জীবিত ততক্ষণ জীবনকে উপভোগ করো।
এবং
তোমার মা-বাবাকে ধন্যবাদ জানিয়ো।
সবার সামনে আমি আজ তাঁদের ধন্যবাদ জানাব। তাঁদের সাহায্য ও আরও অনেক কিছুর জন্য আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে। তোমরা চেষ্টা কোরো এবং পৃথিবীকে জানিয়ে দাও তোমার মূল্য। আজ এটা তোমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা, তোমরা আজ স্বাধীন। বিজয়ের এ দিন শুভ হোক। এটাই তোমাদের প্রাপ্য আর তাই এটাই তোমরা অর্জন করেছ। ভালো থেকো, গুড লাক।
সূত্র: ওয়েবসাইট