Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Nazia Nishat

Pages: 1 [2] 3 4 ... 6
16

An amazing video on Allah's creation and the rule settle in it.Allah's Sovereignty.

17
Software Engineering / HOW QURAN IS AHEAD OF SCIENCE!!
« on: May 04, 2017, 03:46:44 PM »
Would the science will prove that Quran is scientific? Or
Quran will prove the facts that has not been discovered by science?
 There may have controversies in scientific facts but there is no controversy in Al Quran. :)





18
Software Engineering / What is Ontology?
« on: May 04, 2017, 12:02:51 PM »
 :)  :)
In philosophy, ontology is the study of what exists. In AI, an ontology is a specification of the meanings of the symbols in an information system. That is, it is a specification of a conceptualization. It is a specification of what individuals and relationships are assumed to exist and what terminology is used for them. Typically, it specifies what types of individuals will be modeled, specifies what properties will be used, and gives some axioms that restrict the use of that vocabulary.

OWL (the Web Ontology Language) is an ontology language for the World Wide Web. It defines some classes and properties with a fixed interpretation that can be used for describing classes, properties, and individuals. It has built-in mechanisms for equality of individuals, classes, and properties, in addition to restricting domains and ranges of properties and other restrictions on properties (e.g., transitivity, cardinality). There have been some efforts to build large universal ontologies, such as cyc (www.cyc.com), but the idea of the semantic web is to allow communities to converge on ontologies. Anyone can build an ontology. People who want to develop a knowledge base can use an existing ontology or develop their own ontology, usually built on existing ontologies. Because it is in their interest to have semantic interoperability, companies and individuals should tend to converge on standard ontologies for their domain or to develop mappings from their ontologies to others' ontologies.

Link:http://artint.info/html/ArtInt_316.html

19
Software Engineering / Ontology of Quranic Concepts
« on: May 03, 2017, 07:50:20 PM »
The Quranic Ontology uses knowledge representation to define the key concepts in the Quran, and shows the relationships between these concepts using predicate logic. The fundamental concepts in the ontology are based on the knowledge contained in traditional sources of Quranic analysis, including the hadīth of the prophet muhammad , and the tafsīr (Quranic exegesis) of ibn kathīr. Named entities in verses, such as the names of historic people and places mentioned in the Quran, are linked to concepts in the ontology as part of named entity tagging.

Link:http://corpus.quran.com/ontology.jsp

20
Software Engineering / Social Networking
« on: April 28, 2017, 05:39:59 PM »
Discover information and findings on the phenomenon of social networking and how to use social networking sites and social media sites creatively and safely. This section provides tips for evaluating these online resources, helpful advice and ideas for promoting safe social networking and shares examples of how social networks can and are being used in schools, at home, and on mobiles worldwide to support informal and formal learning.'
Link:http://www.digizen.org/socialnetworking/

21
নিম্নলিখিত পরিসংখ্যানে প্রতীয়মান হয় যে বিপরীত  অর্থসম্বলিত শব্দগুলোর সংখ্যা একই যেমন

পুরুষ ২৪ মহিলা ২৪
ফেরেস্তা ও শয়তানের উল্লেখ ৮৮বার
ইবলিস অর্থাৎ শয়তানের রাজা এবং ইবলিস থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উল্লেখ ১১
সোনা ও স্বাচ্ছন্দপূর্ণ জীবন ৮
মৃত্যুর পর কি জীবন নাই?
জীবন ও মরণ ১৪৫ বার
 কঠিন জীবন ১১৪ এবং  ধৈর্য ১১৪ বার
   
উপকার ৫০; দুর্নীতি ৫০(দুর্নীতি থেকে মুক্তির কথা বলা হয়নি)
 মুসলমান ৪১; জেহাদ ৪১ (ভয়ের?)
 
(উৎকৃষ্ট উপদেশ?) 
যাকাত(গরীবের অংশ) ৩২; বরকত(সম্পদের উপর আল্লাহ্‌র আশীর্বাদ) ৩২
 (Fear is fear itself. FDR was right too)
ভীতি = ৮; ভয় = ৮
 
এবং বিস্ময়কর সংখ্যায় গ্রহ সম্পর্কিত শব্দগুলো বলা আছে 
 
 (matching CE calendar?)
মাস - ১২; দিন ৩৬৫; (ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সাথে মিলে?)
 সাগর ৩২; ভূপৃষ্ঠ = ১৩

  এখানে সহজ অংক করা যাক
সাগর + ভূমি ৩২ + ১৩ = ৪৫
সাগর =(৩২/৪৫)x১০০ = ৭১.১১%
ভূমি= (১৩/৪৫)x১০০= ২৮.৮৮%
এই গ্রহে ভূমির পরিমাণ ২৮.৯% এবং সাগর এর পরিমাণ ৭১.১%; এই ভৌগলিক তথ্যের সাথে   এটা কি কাকতালীয় মিল?   


22
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
           আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
পাপ থেকে কেউ যদি দূরে থাকতে চায়...ইব্রাহিম(আলাইহিসসালাম)এটার সমাধান পাঁচটি বিষয় ধরে দিয়েছেন।  তোমার যদি পাঁচটা বিষয়ের অভ্যাস করার ক্ষমতা থাকে তবে তোমার মধ্যে আর কোনদিন পাপীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দুশ্চিন্তা থাকবেনা!!!
একটা লোক ইব্রাহিম ইবনে আদম (রাহমাতুল্লাহ) এর কাছে আসলো, যিনি ছিলেন অন্যতম বিদ্বান ব্যক্তি যার বাণী ছিল হৃদয়ের অন্তর্নিহিত আরোগ্য লাভের মাধ্যম, লোকটা বললঃ-
ني مسرف على نفسي فاعرض على ما يكون زاجرا لها
“আমি বার বার পাপ করে সীমা লঙ্ঘন করেছি; আমাকে এমন একটা কিছু দেন যা আমাকে এভাবে বারবার পাপ কাজ চালিয়ে যাওয়া থেকে দমন করবে... ”
তখন ইব্রাহিম (রাঃ) বললেনঃ-
“যদি তোমার পাঁচটি বিষয় অভ্যাস করার ক্ষমতা থাকে তোমার আর কোনদিনই পাপী দের দলভুক্ত হওয়ার দুশ্চিন্তা থাকবেনা।”
লোকটি এই বিশেষ উপদেশ শোনার জন্য গভীর আগ্রহ দেখাল এবং বললঃ-
“হে ইব্রাহিম আমাকে ঐ পাঁচটি জিনিষ দেন! ”
তখন তিনি বললেনঃ-
“প্রথমতঃ তুমি যদি আল্লাহ্‌র অবাধ্য হতে চাও,...
তখন...
আল্লাহ মানুষের জন্য যে যে খাবারের সুন্দর বন্দোবস্ত করে রেখেছেন তা থেকে খাবেনা।”
লোকটি এই কথা শুনে বিস্মিত হল এবং প্রশ্ন করলোঃ-
“হে ইব্রাহিম এটা আপনি কিভাবে বলছেন যখন সমস্ত বন্দোবস্ত তো আল্লাহ্‌ই করে রেখেছেন? !”
তখন ইব্রাহিম(রাঃ) বললেনঃ-
“বেশ যদি তুমি এটা জানো তখন কিভাবে তোমার আস্পর্ধা হবে যে তুমি তাঁর বন্দোবস্ত করা খাবার খেয়ে তাঁর প্রতি অবাধ্য হও?!!”
তখন লোকটি বললঃ-
“না, আপনি ঠিক বলেছেন, আমাদের আস্পর্ধা থাকবেনা! আমাকে দ্বিতীয়টি বলুন!”
তখন ইব্রাহিম(রাঃ) বললেন...
“দ্বিতীয়তঃ যদি তুমি আল্লাহ্‌র অবাধ্য হতে চাও তাহলে...এই পৃথিবীতে জীবন যাপন করোনা...!”
লোকটি এটা শুনে অবাক হয়ে বললঃ-
“হে ইব্রাহিম আপনি এটা কিভাবে বলতে পারেন যখন সমস্ত জগত ই তো আল্লাহ্‌র সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত?!”
তখন ইব্রাহিম(রাঃ) বললেনঃ-
“বেশ যদি তুমি এটা জানো তখন কিভাবে তোমার আস্পর্ধা হবে যে তুমি তাঁর সৃষ্ট   জগতে বসবাস তাঁর প্রতি অবাধ্য হও? ! ! ” 
তখন লোকটি বললঃ-
“না, আপনি ঠিক বলেছেন, আমাদের আস্পর্ধা থাকবেনা! আমাকে তৃতীয়টি বলুন!”
তখন ইব্রাহিম(রাঃ) বললেন...
“তৃতীয়তঃ যদি তুমি আল্লাহ্‌র অবাধ্য হতে চাও তবে...একটা জায়গা খোঁজো যে জায়গায় থাকলে তিনি তোমাকে দেখতে পাবেন না...! ”
তখন লোকটি বললঃ-
“হে ইব্রাহিম আপনি এটা কিভাবে বলছেন, আল্লাহ্‌ তো হৃদয়ের গোপন কথা জানেন আর জানেন যা কিছু লুকানো আছে?!
তিনি রাতের আধারে মসৃণ নুড়ি পাথরের উপর পিঁপড়ার হামাগুড়ির শব্দও শুনতে পান! ”
তখন ইব্রাহিম(রাঃ) বললেনঃ-
“বেশ যদি তুমি এটা জানো তখন কিভাবে তোমার আস্পর্ধা হবে যে তুমি তাঁর প্রতি অবাধ্য হও?!”
তখন লোকটি বললঃ-
“না, আপনি ঠিক বলেছেন, আমাদের আস্পর্ধা থাকবেনা! আমাকে চতুর্থটি বলুন!”
তখন ইব্রাহিম(রাঃ) বললেন...
“চতুর্থটি হচ্ছেঃযদি জান কবজ কারী ফেরেশতা তোমার জান কবজ করতে আসে তখন তাকে বলঃ-
আমার জান নেয়ার জন্য পরবর্তী সময়ের অপেক্ষা কর!”
তখন লোকটি বললঃ-
“হে ইব্রাহিম আপনি এটা কিভাবে বলছেন, যখন আল্লাহ্‌ বলেনঃ
فإذا جاء أجلهم لا يستأخرون ساعة ولا يستقدمون
 যখন তাদের জন্য নির্ধারিত সময় চলে আসবে সে সময়কে বিলম্বিত করা যাবেনা অথবা তরান্বিত ও করা যাবেনা ”
(উৎসঃ- ‘কুরআন’~ সূরা ‘আল আরাফ’~ #৭~ আয়াত # ৩৪)
তখন ইব্রাহিম(রাঃ) বললেনঃ-
“বেশ যদি তুমি এটা জানো,তবে যখন তুমি আল্লাহ্‌র প্রতি অবাধ্য হও তখন কিভাবে তুমি আশা কর যে তুমি তোমার মৃত্যুর সময় সফলকাম হবে? !  ” 
তখন লোকটি বললঃ-
“হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলেছেন, আমাকে পঞ্চমটি বলুন! ”
তখন ইব্রাহিম(রাঃ) বললেন...
“পঞ্চমটি হচ্ছেঃ যখন জাবানিয়াহ [অর্থাৎ যে ফেরেশতা দোজখের আগুন পাহারা দেয়] তোমাকে দোজখের আগুনের দিকে নিয়ে যায়, তখন তাদের সাথে যেওনা! ”
লোকটি আর এই পঞ্চম বিষয়টি সামলাতে পারলনা এবং কাঁদতে কাঁদতে বললঃ-
“যথেষ্ট হয়েছে হে ইব্রাহিম! যথেষ্ট হয়েছে! আমি আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাঁর দয়া কামনা করবো এবং অনুতপ্ত হয়ে তাঁর সম্মুখে যাবো!!! ”
......লোকটি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অবিচল ভাবে আল্লাহ্‌র বাধ্য থাকলো...!
উৎসঃ এই বর্ণনাটি আবু নুয়াইম আল আসবাহানি (রাহমাতুল্লাহ) এর হিলায়াতুল আওলিয়া বই থেকে নেয়া

23
১) ধৈর্যঃ
“এবং আল্লাহ্‌ তাদেরকে ভালবাসেন যারা (সাবিরুন) ধৈর্য ধারনকারী।”(সূরা ইমরান ৩:১৪৬)

২) ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং পক্ষপাতহীন হওয়াঃ
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার কর এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে খুব জ্ঞাত।  (সূরা মায়িদা ৫:৮)
“আল্লাহ্‌ তাদেরকে ভালোবাসেন যারা সুবিচার করে এবং নায়বান।”[সূরা আল হুজুরাত ৪৯:৯]

৩) আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস রাখা:
“অবশ্যই, আল্লাহ্‌ তাদেরকে ভালোবাসেন যারা তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখে।”(সূরা ইমরান ৩:১৫৯)

৪) দয়া:
আয়েশা (رضي الله عنها)বলেছেন:আল্লাহ্‌র নবী ( صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) বলেন:
“আল্লাহ্‌ প্রতি বিষয়ে দয়া ভালোবাসেন।”(বুখারি)

৫) অনুশোচনা:
“যথার্থভাবে,আল্লাহ্‌ তাদেরকে ভালোবাসেন যারা অনুশোচনায় আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।”(সূরা বাকারা ২:২২২)

৬)দয়া:
“যথার্থভাবে, আল্লাহ্‌ তাদেরকে পছন্দ করেন যারা আল-মুত্তাকুন(দয়ালু)। ”(সূরা ইমরান ৩:৭৬)
 “আল্লাহ্‌ ভালোবাসেন ন্যায়পরায়ণদের (দয়ালু)”[সূরা আল তওবা ৯:৪]
সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস (رضي الله عنه ) বলেছেন: আল্লাহ্‌র নবী ( صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ) বলেছেন, “আল্লাহ্‌ একজন দাসকে  ভালোবাসেন যে দয়ালু,যার কোন চাহিদা নেই এবং যাকে কেউ গ্রাহ্য করেনা। ”

 ৭) ভালো কাজ করা:
“প্রকৃতপক্ষে,আল্লাহ্‌ ভালোবাসেন আল-মুহসিনুন(যে ভালো কাজ করে)।”(সূরা বাকারা ২:১৯৫)   

৮) পবিত্রতা:
“এবং আল্লাহ্‌ তাদেরকে ভালোবাসেন যারা নিজেদেরকে পরিষ্কার এবং পবিত্র রাখে।”(সূরা তওবা ৯:১০৮)
 
 ৯) ধনীদের নম্রতা:
সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস(رضي الله عنه )বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র নবী ( صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ) বলেছেনঃ “আল্লাহ্‌ বিশ্বাসীদের ভালোবাসেন যারা ধার্মিক এবং ধনী ,কিন্তু অহংকার করে দেখিয়ে বেড়ায় না। ”(মুসলিম)

১০) মহানুভবতাঃ
আল হাকিম বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র নবী ( صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ) বলেছেনঃ “আল্লাহ্‌ সর্বাপেক্ষা মহানুভব এবং তিনি ক্রয়,বিক্রয় এবং বিচারের রায়ে উদারতা ভালোবাসেন।”
 
১১)নীতিবানঃ
আল্লাহ্‌র নবী( صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) বলেছেনঃ “আল্লাহ্‌ ভালবাসেন সেই সব গরীব বিশ্বাসীদের যাদের অনেক সন্তান আছে কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত থাকে। ”(মুসলিম এবং আহমেদ)

১২)আল্লাহ্‌কে খুশি করার জন্য ভালবাসাঃ
আল তারাবানি, ইবনে ইয়াহিয়া,ইবনে হিব্বান এবং আল-হাকিম বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র নবী ( صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) বলেছেনঃ “যদি দুই জন একে অপরকে আল্লাহ্‌র কাজ বা আল্লাহ্‌ কে খুশি করার জন্য ভালবাসে তাহলে যে তুলনামূলক অপরকে বেশি ভালবাসে,তাঁকে আল্লাহ্‌ ও বেশি ভালোবাসবেন।”

১৩)ক্রমাগত সৎকর্ম করে যাওয়াঃ
আল্লাহ্‌র নবী  ( صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) বলেছেনঃ “আল্লাহ্‌ সবচেয়ে পছন্দনীয় কাজ হলো সেসব যেগুলো সংখ্যায় অনেক কাজ না হলেও অনবরত করে যাওয়া হয়।”(বুখারি এবং মুসলিম)

১৪)সাবর(ধৈর্য):
“এবং আল্লাহ্‌ ভালোবাসেন যারা দৃঢ় এবং অবিচল (আস-সাবিরিন(ধৈর্যধারণকারী))।”[সূরা আল ইমরান ৩:১৪৬]


 ১৫)সময়মত নামাজ আদায় করাঃ
“আল্লাহ্‌ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন যখন তাঁর বান্দারা সময়মত নামাজ আদায় করে।”(হাদিস-বুখারি)

১৬)ভালো ব্যবহার ও ভালো আচরণঃ
আল-তিরমিধির বর্ণনায়ঃ আল্লাহ্‌র নবী ( صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) বলেছেনঃ “তারাই আমার সবচেয়ে ভালবাসার মানুষ এবং শেষ বিচারের দিনে আমার সবচেয়ে কাছের আসনে বসবে যাদের  ব্যবহার ও আচরণ তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো, যারা আন্তরিক,অন্যদের সাথে ভালো সম্পর্ক রেখেছে এবং বিনয়ী এবং তারা আমার দ্বারা সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত হবে এবং সবচেয়ে দূরের আসনে বসবে যারা বাঁচাল এবং উগ্র। ”
আল্লাহ্‌র প্রতি ভালো বাসা হচ্ছে আমাদের প্রার্থনা যা একমাত্র তাঁর প্রতি সরাসরি করা হয়।  অন্য ভালবাসাগুলিও তাঁকে খুশি করার জন্য হতে হবে। আল্লাহ্‌ যা আদেশ করেছেন তা মেনে চলা এবং যা নিষেধ করেছেন তা এড়িয়ে চলা,এর সাথে রাসুলুল্লাহ ( صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) এর সুন্নাতকে অনুসরণ করাই আল্লাহ্‌র প্রতি ভালোবাসা। যারা আল্লাহ্‌ এবং তাঁর নবী( صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ),  ছাড়া অন্য কেউ বা অন্য কিছুকে মেনে চলে,অথবা তাঁদের ছাড়া অন্য কারো বানীকে মেনে চলে ,অথবা আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কিছুকে ভয় করে অথবা আল্লাহ্‌কে এড়িয়ে নিজের সুখ খুঁজে,অথবা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে সে আল্লাহ্‌ অথবা তাঁর নবী( صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) কাউকেই ভালবাসেনা।  মুসলিমদের একে অপরকে ভালবাসা উচিৎ এবং অপরের ভালো কামনা করা উচিৎ। আল্লাহ্‌র নবী ( صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) বলেছেনঃ “বিশ্বাসী সেই যে নিজের জন্য যা পছন্দ করে তা নিজের ভাই এর জন্যও পছন্দ করে।”(বুখারি)



24
‘হে আমার বার্তা বহনকারীগন! সব ভালো এবং খাঁটি জিনিসগুলো উপভোগ কর, এবং সঠিক কাজ করঃ তোমরা যা কর আমি তা ভালভাবে জানি।’
{উৎসঃ কুরআন সূরা আল মুমিনুন ২৩-আয়াত#৫১}
১। বার্লি (جو জাউ):জ্বরের জন্য ভালো, যখন ঝোল (সুপ) হিসেবে ব্যবহার হয়।
 

২।খেজুর (کھجور):
নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে বাড়িতে খেজুর নেই সেখানে কোন খাবারই নেই। বাচ্চা প্রসবকালীন সময়েও এটা খাওয়া উচিৎ।
৩। ডুমুর ( انجير ): এটি বেহেস্তের ফল এবং এতে পাইলস রোগের উপশম হয়।

৪। আঙ্গুর ( انگور ): নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আঙ্গুর ফল খুব পছন্দ করতেন – এটা রক্ত পরিষ্কারক, সুস্বাস্থ্য এবং প্রাণশক্তি প্রদানকারী, কিডনির শক্তিবর্ধক এবং অন্ত্র পরিষ্কারক।জ্জজ
৫।মধু( شہد ): ধারণা করা হয় যে ডায়রিয়ার সর্বত্তম প্রতিকারক হচ্ছে মধু যখন তা গরম পানিতে মিশানো হয়। এটা খাবারের মধ্যে সর্বোত্তম, পানীয়ের মধ্যে সর্বোত্তম এবং ঔষধের মধ্যে সর্বোত্তম। এটি রুচি তৈরি করতে ,পাকস্থলি শক্তিশালী করতে,কাশির শ্লেষ্মা দূর করতে,মাংস সংরক্ষনে,চুলকে নমনীয় রাখতে,চোখের পরিষ্কারক হিসেবে এবং মুখগহ্বর পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সকাল বেলা উষ্ণ পানির সাথে এটা খুব উপকারি।   

৬। তরমুজ( تربوز - خربوزا - سردا ): নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের স্ত্রীলোক যারা গর্ভবতী এবং তরমুজ খায় তাদের সন্তান ভালো কাজে সমর্থন দিবে এবং ভালো চরিত্রের হবে।

৭। দুধঃ নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে দুধ হৃদয়ের তাপ মুছে দেয় ঠিক যেমন হাতের আঙ্গুল ভ্রু থেকে ঘাম মুছে দেয়। এটা পিঠকে শক্ত করে,বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়, দৃষ্টিশক্তিকে নবজীবন দেয় এবং স্মরণশক্তি বাড়ায়।
 
৮। মাশরুম( کھمبي ): নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন মাশরুম চোখের ভালো প্রতিকারক; এটা জন্ম নিয়ন্ত্রণ এ সাহায্য করে এবং পক্ষাঘাতের প্রতিরোধক হিসেবে ভুমিকা রাখে।

৯।জলপাইয়ের তেল( زيتون ): এটা চুল এবং ত্বকের চমৎকার চিকিৎসা,বার্ধক্যকে বিলম্বিত, এবং পাকস্থলীর জ্বালাপোড়ায় চিকিৎসা করে।     

 
১০। ডালিম ( انار ):নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন এটা শয়তান এবং খারাপ উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে ৪০ দিনের জন্য তোমাকে পবিত্র রাখে।

১১। সিরকা( سرکہ ):নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জলপাই এর তেলের সাথে এটা খেতেন।[এটা এখন ইতালির সেরা রেস্তোরা গুলোতে রেওয়াজ এ পরিণত হয়েছে।]
 
১২। পানি( پاني ): নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন পানি হচ্ছে বিশ্বের সর্বোত্তম পানীয়, যখন তুমি তৃষ্ণার্ত একটু একটু করে  চুমুক দিয়ে পানি খাও এবং গবগব করে ঢোক গিলে নয়, এভাবে মুখ ভর্তি করে পানি খেলে যকৃতের অসুখ হয়।


 





25
এই প্রবন্ধটির ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশিত হয় শুক্রবার, ১৭ মে,২০১৩ , দি নিউজ টুডে,বাংলাদেশ এ প্রকাশনা (২৭৮)এ । এর লিঙ্ক
http://www.scribd.com/doc/141892547/Does-the-human-brain-have-a-purpose

লেখক: ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম

অনুবাদক: নাজিয়া নিশাত
আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক বস্তু ব্যবহার করে থাকি। কোন বস্তুকে তার পরিকল্পিত উদ্দেশ্যের বাইরে অন্য কোন কাজে কি ব্যবহার করা উচিৎ? যখন কোন বস্তু তৈরি করা হয় তার পিছনে একটা নকশা থাকে এবং একটা উদ্দেশ্য থাকে। কি ঘটে, যখন যে উদ্দেশ্যে বস্তুটি তৈরি হয়েছে সেটি ছাড়া অন্য কোন কাজে তা ব্যবহার হয়? প্রায়ই আমরা চাকু অথবা ছুরিকে স্ক্রুড্রাইভার হিসেবে ব্যবহার করি। এটা করার ফলে চাকু অথবা ছুরির মাথার কি হয় অথবা স্ক্রু এর মাথার কি অবস্থা হয়? যেকোনো একটা অথবা দুটাই নষ্ট হয়ে যায়। একইভাবে মানুষ যদি সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে তাদের সৃষ্টি হওয়ার পেছনে অবশ্যই পরিকল্পিত উদ্দেশ্য আছে। একইভাবে শরীরের প্রতিটি অংশ যেমন: বুদ্ধি, চোখ, হাত, পা, পাঁচটা ইন্দ্রিয়, তন্ত্র, জননতন্ত্র প্রত্যেকটির কিছু না কিছু পরিকল্পিত নকশা এবং উদ্দেশ্য আছে। উদাহরণস্বরূপ: আমরা কি চিন্তা করতে পারি যে সৃষ্টিকর্তা বুদ্ধিমত্তা কেন তৈরি করেছেন?
মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশের কাজের  দিকে দৃষ্টিপাত করার আগে আমাদের বুঝতে হবে যে, অবশ্যই প্রতিটি বস্তুকে কাজের উপযোগী করে তৈরি করার পেছনে নকশাকারী অথবা প্রস্তুতকারীর সংকল্প অথবা ব্যক্তিগত আগ্রহ বা উদ্দেশ্য আছে। তাই মগজের কাজের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার আগে আমরা কি একটি সহজ প্রশ্ন করতে পারি? যেমন:মানুষের বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টি করার পেছনে সৃষ্টিকর্তার নিজস্ব কি আগ্রহ থাকতে পারে?
অথবা তিনি এত জটিলভাবে যে মগজ তৈরি করলেন তা কি মজা করার জন্য তৈরি করেছেন?
মস্তিস্ক একইসাথে কিভাবে অনেকগুলি কাজ করে অ্যাডামসন তার লেখার ভিতরে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
আমরা অ্যাডামসন এর ব্যাখ্যাকে সহজভাবে উপস্থাপন করে যা পাই তা হলঃ
“মানুষের মগজ একই সাথে অনেক প্রকারের তথ্য প্রক্রিয়া করতে পারে, আপনি যে জিনিষ চোখে দেখেন তার রঙ, পরিবেশের তাপমাত্রা, মেঝেতে আপনার পায়ের চাপ, আপনার চারিদিকের শব্দ, আপনার মুখের শুষ্কতা, এমনকি আপনার কী-বোর্ড স্পর্শ করে এর ধরণ বুঝতে পারে। আপনার সব অনুভূতি ধরে রাখে ও প্রক্রিয়া করে এবং ধরে রাখে সব চিন্তা ও স্মৃতি। একই সময়ে আপনার মগজ আপনার শরীরের চলমান প্রক্রিয়া যেমন নিঃশ্বাস আদান প্রদান, চোখের পাতার নড়াচড়া, ক্ষুধা, আপনার হাতের পেশীর নড়াচড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। এক সেকেন্ডে দশ লক্ষ বার্তা প্রক্রিয়া করে। মগজ অপ্রয়োজনীয় তথ্য থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বাছাই করে এবং ধরে রাখে। এই পদ্ধতিটা, আপনার চেতনাকে কেন্দ্রীভূত করতে সহায়তা করে। অতএব মস্তিস্ক শরীরের অন্যান্য অঙ্গের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে কাজ করে। এতে বুদ্ধিমত্তা রয়েছে, এটির কার্যকারণ নির্ণয় করার, অনুভূতি তৈরি করার, স্বপ্ন দেখার, পরিকল্পনা তৈরি করার ও সেটা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এবং অন্য মানুষের সাথে সম্পর্ক বোঝার ক্ষমতা রয়েছে। ”{১}
কি বিস্ময়কর যন্ত্র এই মগজ! মগজ লিখিত শব্দ প্রক্রিয়াজাত করতে পারে, যেমনঃপড়া, সারসংক্ষেপ করা, লিখা। এখন প্রশ্ন হল যে, বিধাতা কেন এত জটিলতা দিয়ে এই বিস্ময়কর যন্ত্র তৈরি করেছেন? বিধাতার কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে?
এটা কি হতে পারে যে, সৃষ্টিকর্তা চেয়েছেন যে মানুষ বুদ্ধি ব্যবহার করে তাঁর বিস্ময়কর কাজ অনুধাবন করে এবং বিনিময়ে তাঁকে ধন্যবাদ ও ভালবাসা জানায়?
বাইবেলে আছে,
“আমাকে সন্ধান করে খুঁজে পাবে তখনই, যখন আমাকে খুঁজবে তোমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে। ”
[যেরেমিয়াহ্, ২৯:১৩]{২}
বিধাতার সাথে আচরণের সম্বন্ধে প্রশ্ন করাতে বাইবেলের এক জায়গায় যীশু উত্তর দিলেন যে,
“তোমার অধিপতি, তোমার রব কে ভালোবাসো তোমার সমস্ত হৃদয়,মন এবং আত্মা দিয়ে। ”
[ম্যাথিউ, ২২:৩৭]{৩}

যীশু আমাদের (সকল ধর্ম ও মত নির্বিশেষে)অভিন্ন সেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি সম্পূর্ণ ভালোবাসা জানাতে বলেছেন। [জন, ২০:১৭] {৪}
একই বিষয়ে আমরা কোরান এর ৩.৫১ আয়াত থেকে পাই,
“হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা অবিরামভাবে আল্লাহ্‌র প্রশংসা কর এবং সকাল সন্ধ্যা তাঁর গুণগান করো। তিনিই ফেরেশতাদের মাধ্যমে নেয়ামত দিয়ে থাকেন যাতে তোমরা অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আসো। তিনি অসীম দয়াময়। ” [৩৩.৪১– ৩৩.৪৩]
তাঁরাই ব্যক্তিগতভাবে সৃষ্টিকর্তাকে নিজের বুদ্ধি থেকে চিনতে পারেন এবং অন্ধকার থেকে বের হয়ে জ্ঞানের আলোতে আসতে পারেন যারা জ্ঞানকে প্রক্রিয়া করে এবং সত্যমিথ্যা যাচাই করার বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। যে মানুষ আলোর পথে আসে এবং সঠিক কাজ করে সে ক্রমাগতভাবে সৃষ্টিকর্তাকে জানতে পারে, সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির প্রতি বিস্মিত হয় এবং তাঁকে সম্মান ভালোবাসা ও ধন্যবাদ জানায়।
“হে মানুষ! ভালোবাসা জানাও তোমার মালিকের প্রতি, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের প্রতিও ভালোবাসা জানাও যারা তোমার সামনে এসেছে তোমাকে সঠিক পথে আনার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। ”
তিনিই একজন ন্যায়নিষ্ঠ মানুষ যিনি সৃষ্টিকর্তা ব্যক্তিগতভাবে যা দিয়েছেন তার জন্য তাঁকে ভালোবাসা জানান।
“কিভাবে তুমি আল্লাহ্‌র প্রতি অবিশ্বাস করতে পারো? এটা দেখার পর যে একসময় তোমার জীবন ছিলোনা এবং তিনি তোমাকে জীবন দিয়েছেন; তিনি তোমাকে মৃত্যু দিবেন এবং তোমাকে আবার জীবিত করা হবে; এবং তুমি তাঁর কাছেই ফিরে যাবে। তিনিই তোমার জন্য পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন;......... ”[২.২৮-২.২৯]
সৃষ্টিকর্তা মানুষের জন্য শুধু পৃথিবীর সব সৃষ্টিই করেননি তিনি মানুষের সুবিধার জন্য মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশের কার্যকলাপ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যা এক একটি বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য। যখন মানুষ সৃষ্টিকর্তার দেওয়া নেয়ামত উপভোগ করে তাঁর প্রতি ভালোবাসা জানানোর পরিবর্তে সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পিত উদ্দেশ্যের বাইরে কাজ করে, তখন সৃষ্টিকর্তার প্রতিক্রিয়া কি হওয়া উচিৎ? আমরা কি আশ্চর্য হব এটা জেনে যে সৃষ্টিকর্তা সদম এবং গমরাহ জাতিকে তাদের সমকামিতা ও অশ্লীল যৌন আচরণের মন্দ অভ্যাসের জন্য স্বাভাবিক মৃত্যু না দিয়ে  পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছেন? বাইবেল এবং কুরআন উভয় গ্রন্থেই সৃষ্টিকর্তা কিভাবে দুটি শহর ধ্বংস করেছেন তার বর্ণনা আছে।
“এবং তোমরা ভুলে যেওনা সদম, গমরাহ এবং তাদের নিকটবর্তী শহরগুলো যেগুলো পাপাচার এবং সব রকমের বিকৃত যৌন কর্ম দ্বারা নিমজ্জিত ছিল। ঐ শহরগুলিকে আগুন পাথর দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে এবং এটি সৃষ্টিকর্তার বিচারের চিরস্থায়ী আগুনের সতর্কবার্তা বহন করে। ”
[জুড ,১:৭]{৬}
কুরআন থেকে নেওয়া নিচের আয়াতগুলি এই ঘটনার লক্ষণীয় বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত।
৭.৮০“আমি লূতকেও পাঠিয়েছি:তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন :তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করো যা তোমাদের পূর্বে আর কোন জাতি করেনি? ”
অশ্লীল কাজ কি ? এটা পরের আয়াতে বর্ণিত আছে।
৭.৮১“তোমরা নারীদের পরিত্যাগ করে পুরুষদের সাথে যৌন বাসনা নিবারণ করছ:তোমরা প্রকৃতপক্ষে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করছ। ”
সদম এবং গমরাহ জাতি তাদের অস্বাভাবিক কাজ দৃঢ়তার সাথে করে যেতে থাকলো এবং লূতকে তাদের শহর থেকে বের করে দিতে চাইলো।
৭.৮২“এবং তাঁর সম্প্রদায় একটি কথা ছাড়া আর কোন উত্তর দিতে পারলো না। তারা বলল:
“এদেরকে শহর থেকে বের করে দেওয়া হোক এরা প্রকৃতপক্ষেই পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অবলম্বনকারী! ”
৭.৮৩“কিন্তু আমি লূত এবং তাঁর পরিবারকে রক্ষা করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া:তাঁর স্ত্রী পাপীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ”
ইবনে কাসির{৭}পৃষ্ঠা ১৩১, এ বর্ণিত আছে, লূতের স্ত্রী আল্লাহ্‌র বানীতে বিশ্বাসী ছিলোনা।
৭.৮৪“এবং আমি তাদের উপর গন্ধকের বৃষ্টি(আগ্নেওগিরির লাভা) বর্ষণ করলাম: তাহলে তাদের পরিনতি দেখ যারা অপরাধ ও পাপকর্মে লিপ্ত ছিল! ”
{নোট}:
{১}http://www.everystudent.com/features/isthere.html?gclid=CJ_bhpuY9LYCFU1_6wodYGYAcQ
{২}http://biblehub.com/jeremiah/29-13.htm
{৩}http://biblehub.com/matthew/22-37.htm
{৪}http://www.mostmerciful.com/myfather.htm
{৫}http://en.wikipedia.org/wiki/Sodom_and_Gomorrah
{৬}http://biblehub.com/jude/1-7.htm
{৭}http://www.quran4u.com/Tafsir%20Ibn%20Kathir/PDF/007%20A%27raf.pdf


26

প্রিয় সন্তান,

আমি যখন বার্ধক্য উপনীত হবো আমি আশা করবো তুমি আমাকে বুঝবে এবং আমার সাথে ধৈর্যশীল হবে।

ধরো আমি যদি হঠাৎ থালা ভেঙ্গে ফেলি অথবা টেবিলে স্যুপ ফেলে নষ্ট করি, কারণ আমি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছি, আশা করি তুমি আমার প্রতি চিৎকার করবে না।

বয়স্ক মানুষ খুব স্পর্শকাতর

তুমি যখন চিৎকার করে কথা বলো তখন তারা নিজের কাছে খুব ছোট হয়ে যায়, অসহায় আর অপরাধী মনে করে নিজেকে। ।

যখন আমার শ্রবণ শক্তি শেষ হয়ে আসছে এবং আমি শুনতে পাচ্ছি না তুমি কি বলছ ।।

তোমার তখন আমাকে বধির বলা উচিত নয়।
দয়া করে তুমি পুনরায় বলো অথবা লিখে দেখাও।

আমি দুঃখিত বাবা আমি বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি, আমার পা দুর্বল হয়ে আসে

আমি মনে মনে চাই তোমার সে ধৈর্য্য থাকবে আমাকে দাঁড়াতে সাহায্য করার জন্য।
যেভাবে আমি তোমার পাশে ছিলাম, যখন তুমি ছোট ছিলে হাঁটতে শিখছিলে পা পা করে....

আমার কথা শোন

যখন আমি অসহায়ের মত তোমার নিকট কথা বলবো.. ভাঙ্গা রেকর্ডের মত

আমি চাইবো তুমি শুধু আমার কথাটুকু শুনবে........
আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করো না... অথবা আমার কথা শুনে বিরক্ত হয়ো না.....
তোমার মনে আছে??

তুমি ছোট থাকতে আমার কাছে একটা বেলুন চেয়েছিলে!!!!!
সেটা না পাওয়া পর্যন্ত তুমি বারবার আমাকে সেটাই বলতে.... সারাক্ষণ জিজ্ঞাসা করতে..... “কখন দেবে কখন দেবে...”

এবং আমার গন্ধ সহ্য করো...
বৃদ্ধের মতই আমার গন্ধ হবে....
এজন্য

দয়া করে আমাকে গোসল করার জন্য জোর করো না।

আমি যখন সহজে রেগে যাই............

এটা বয়স্ক হবার একটা সাধারণ দোষ,

বার্ধক্য আসলে তুমি নিজেই বুঝতে পারবে।
আর যখন তোমার অলস সময় থাকবে

আমি আশা করবো তুমি আমার সাথে একটু সময়ের জন্য হলেও কথা বলো............
আমি এ সময় সর্বদা একাকীত্বে ভুগি এবং কথা বলার মানুষ পাই না ।
আমি জানি তুমি ব্যস্ত থাকো কাজের মাঝে.....
যদিও তুমি আমার কথায় ও গল্পে আনন্দ না পাও.....
আমার জন্য কিছু সময় রেখো
তুমি যখন ছোট ছিলে তোমার কি মনে পড়ে ?
তোমার খেলনা টেডিবিয়ারের কথাও আমি শুনতাম.....

যখন সময় আসবে আমি অসুস্থ হয়ে পড়বো এবং
বিছানায় শায়িত হয়ে পড়বো

আমি আশা করি তুমি এটুকুধৈর্য্য রাখবে জীবনের শেষ মুহুর্তগুলো আমাকে দেখে রাখা জন্য।

আমি আর বেশি দিন বেঁচে থাকব না.....
যাই হোক
যখন আমার মৃত্যু আসবে......
তুমি কি আমার হাত ধরে থাকবে না, যা আমাকে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য সাহস যোগাবে?

এবং চিন্তা করো না.....
যখন আমার সৃষ্টিকর্তার সাথে দেখা হবে
আমি তার কানে অবশ্যই বলবো........

তোমাকে অনুগ্রহ করতে....

কারণ তুমি তোমার বাবা-মাকে ভালোবেসেছিলে
তোমার যত্ন ও সহমর্মিতার জন্য ধন্যবাদ
আমরা তোমাকে ভালবাসি ।। ।।


27
আমরা প্রায়ই বিখ্যাত ব্যাক্তিদের জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে থাকি। আমাদের কি পবিত্র ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত নবীদের জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ? এটাই ডঃ ইউসুফ মাহাবুবুল ইসলাম এর প্রশ্ন।

আমরা প্রায়ই মহিলা বা পুরুষ নির্বিশেষে বিখ্যাত ব্যাক্তিদের জীবনী বা আত্মজীবনী পড়ে থাকি।  কেন পড়ি?  এর এক বা একাধিক কারণ থাকতে পারে।  আমরা তাঁদের ব্যক্তিত্ব থেকে শিক্ষা নিতে পারি, আমরা জানতে পারি তারা কি অবদান রেখেছেন,  কিভাবে তাঁরা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেছেন,  তাঁরা মানুষের সাথে কিরকম আচরণ করেছেন এবং অন্যদের প্রভাবিত করেছেন অথবা তাঁরা কেন বিখ্যাত হয়েছেন।  আমরা কাদের বিষয়ে অধ্যয়ন করবো, এই প্রসঙ্গে বলা যায় কুরআনে যেসব ব্যক্তিদের ব্যাপারে বলা হয়েছে আমরা কি তাঁদের সম্পর্কে শিখবো?
বাইবেলের জেনেসিস ৩৭-৫০ এ ৪০০০ বছর{১} আগে বসবাসকারী নবী ইউসুফ (আঃ) অধিকাংশ কাহিনী বর্ণিত আছে।  ১৮৭১ সালে উইলিয়াম ব্রুস তার বই  The story of Joseph and his brethren: its moral and spiritual lessons. এ গুরুত্ব সহকারে লিখেছিলেন যে-
“নবী ইউসুফ (আঃ) এর  কাহিনী বাইবেল অথবা অন্যান্য বই থেকে পাওয়া সবচেয়ে সুন্দর ও নির্দেশনামূলক কাহিনী।  ওল্ড টেস্টামেন্টে যেসব চরিত্রের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে  নবী ইউসুফ (আঃ) এর চরিত্রকে সর্বাপেক্ষা নিখুঁত বলা হয়েছে,...মুসা (আঃ) ছিলেন নম্র, দাউদ (আঃ) ছিলেন উদার, সোলাইমান (আঃ) ছিলেন জ্ঞানী, কিন্তু প্রত্যেকের কিছু ত্রুটি ছিল যা তাঁদের গুণাবলীর দীপ্তিকে কিছুটা ম্লান করে দিয়েছিলো।  ইউসুফ (আঃ) এর এইসব ভাল গুণাবলী ছিল, কিন্তু কেউ তাঁকে দোষী প্রমাণ করতে পারেনি।  আমরা অবশেষে এটা বলবনা যে, তিনি ত্রুটিমুক্ত ছিলেন, কিন্তু তিনি  অধিকাংশ মানুষের থেকে কম ত্রুটিযুক্ত ছিলেন।......”{১}
পবিত্র কুরআনেও নবী ইউসুফ (আঃ) এর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।  যদিও কুরআনে যে বিস্তারিত বর্ণনা আছে তাতে কিছুটা পার্থক্য আছে,তবে কুরআনেও এর নির্দেশনামূলক মান নিশ্চিত করা আছে,
“প্রকৃতপক্ষেই ইউসুফ এবং তার ভাইরা সত্য অনুসন্ধানকারীদের জন্য চিহ্ন বা নিদর্শন স্বরূপ।” [১২:৭]
কুরআনে সম্পূর্ণ সূরা ১২ একান্তভাবে ইউসুফ (আঃ) এর কাহিনী নিয়েই রচিত হয়েছে এবং তাঁর নামেই নামকরন করা হয়েছে , এতেই বুঝা যায় সৃষ্টিকর্তা ইউসুফ (আঃ) এর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে কত গুরুত্ব দিয়েছেন। এই গল্পটি ইউসুফ (আঃ) ও তাঁর পরিবারকে নিয়ে।  ইউসুফ (আঃ) এর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর ধৈর্য্য ও চরিত্রের পরিচয় এখানে প্রদর্শিত হয়েছে। তিনি ছিলেন ছোট ও সৎ ভাই ,তিনি ছিলেন বড় সৎ ভাইদের ঘৃণার পাত্র, এবং বাবার আদরের ছেলে,যাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছিলো কূপের ভিতর, যাকে দাস হিসেবে বিক্রয় করা হয়েছিলো, যিনি দাসত্ব করেছিলেন,তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিলো এবং অবশেষে তাঁর হাতে মিশরের শাসন কাজ তুলে দেওয়া হয়।  তাঁর জীবনের কষ্ট থেকে শিক্ষা নেওয়া যায় যে- তিনি কি ভূমিকা পালন করেছেন এবং সবশেষে আল্লাহ্‌র হাতেই সকল ক্ষমতা নিহিত, তিনি রক্ষাকর্তা এবং পুরষ্কারদাতা।
সৎ ভাইরা ইউসুফ (আঃ) কে কূপের তলদেশে ফেলে রাখার একটা চক্রান্ত করলো।  কূপ থেকে পানি উঠানোর সময় এক ক্রীতদাস ব্যবসায়ী তাঁকে আবিষ্কার করলো।  ব্যবসায়ী ইউসুফ (আঃ)কে খুঁজে পাওয়ার পর সৎ ভাইরা তাঁকে মাত্র কয়েক দিরহামের বিনিময়ে বিক্রয় করে দিলো!  তারা তাদের বাবার সাথে প্রতারণা করার জন্য ইউসুফ (আঃ) এর জামায় ছাগলের রক্ত মেখে নিল এবং বাড়িতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে বলল যে, নেকড়ে ইউসুফকে খেয়ে ফেলেছে,
    “তারপর তারা রাতের প্রথম প্রহরে কাঁদতে কাঁদতে বাবার কাছে আসলো।”[১২.১৬]
১২.১৭“তারা বললঃ বাবা, আমরা একে অন্যের সাথে  দৌড় প্রতিযোগিতা করতে গিয়েছিলাম এবং ইউসুফকে মালপত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম। অতঃপর তাকে নেকড়ে  খেয়ে ফেলে। কিন্তু আপনি তো আমাদেরকে বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী।”
এখানে আমরা দেখতে পাই যে ইউসুফ (আঃ) এর  প্রতি ঘৃণা থেকে ভাইরা তাঁকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করে এবং তাঁদের বাবার জন্য একটি মনগড়া গল্প তৈরি করে। এই যুগেও কি  সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবারে এই একই ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে? আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে সমানভাবে সৃষ্টি করেছেন।  আমরা সবাই যেন একে অপরের  ভাইএর মতো।  প্রত্যেক সৃষ্ট মানুষের সমান অধিকার আছে নিজের জীবন এবং আল্লাহ্‌র দেয়া নেয়ামত উপভোগ করার।  এভাবে কাউকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করে আমরা সৃষ্টিকর্তার দেয়া বেঁচে থাকার অধিকারের প্রতি অবিশ্বাস প্রদর্শন করছি। যখন আমরা অযথাই অন্য এক ভাইএর জীবন কেড়ে নেই তখন সৃষ্টিকর্তার কি প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিৎ।

১২.১৮ “তারা ইউসুফের জামায় কৃত্রিম রক্ত লাগিয়ে নিল।  ইয়াকুব বললেন “এটা হতে পারেনা, বরং তোমরা নিজেদের  মনগড়া গল্প বলছ।  যাইহোক তোমরা যা দাবী করছ তার জন্য আমার ধৈর্য্য ধরাই একমাত্র পথ।  তোমরা যা বর্ণনা করছ, সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্য স্থল।””

তাদের বাবা ইয়াকুব তাদের সাজানো গল্প বিশ্বাস করলেননা।  যাইহোক, যেহেতু সব ভাইরা এই গল্পকে সমর্থন করলো তিনি বুঝতে পারলেন না কিভাবে আসল ঘটনা জানতে পারবেন। সুতরাং তিনি ধৈর্য্য ধারণ করলেন এবং আল্লাহ্‌র উপর বিশ্বাস রাখলেন।

 “হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই  আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।”[২.১৫৩]
১২.১৯ “তারপর সেখানে এক দল ভ্রমণকারী এল। অতঃপর তাদের পানি সংগ্রাহককে প্রেরণ করল। সে কূপের ভিতর বালতি ফেলল। সে বললঃ “কি আনন্দের কথা। এ তো একটি কিশোর!”   তারা তাঁকে পন্যদ্রব্যের মতো গোপন করে ফেলল(যাতে তাঁকে দাস হিসেবে বিক্রয় করা যায়)!  আল্লাহ খুব জানেন যা কিছু তারা করেছিল!”
এক লোক কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে ইউসুফ (আঃ) কে খুঁজে পেলো।  যাইহোক ইউসুফ (আঃ) এর ভাইরা দেখছিল কূপ থেকে কি বের করা হচ্ছে।  যখন তারা দেখল যে ভ্রমণকারী দল ইউসুফ (আঃ) কে নিয়ে চলে যেতে চাচ্ছে, তখন তারা আসলো এবং টাকা দাবী করলো-তারা তাঁকে কে দাস হিসেবে বিক্রি করতে সম্মত হল। ভাই হিসেবে ইউসুফ (আঃ)কে তারা কত সামান্য মূল্য দিলো!
১২.২০ “তারা তাঁকে মাত্র কয়েক দিরহামের বিনিময়ে বিক্রয় করে দিলো এবং তাদের অনুমানে ইউসুফের মূল্য কত সামান্য ছিল!”
ইউসুফ (আঃ) এর ভাইরা ইউসুফের প্রকৃতি বুঝলনা এবং তাঁর বিশ্বাসের শক্তিকেও বুঝলনা।  এখানে আমরা দেখতে পাই যে সৃষ্টিকর্তা ভাইদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দিলেন এবং এভাবে তিনি তাদের প্রকৃতি দেখিয়ে দিলেন।  একই সময়ে তিনি নিশ্চিত করলেন যে ইউসুফ (আঃ) নিরাপদে থাকবেন এবং একদিন  তাঁর ভাইদের  শিক্ষা দিবেন।
১২.২১ “মিসরে যে ব্যক্তি তাকে ক্রয় করল, সে তার স্ত্রীকে বললঃ একে সম্মানের সাথে (আমাদের মাঝে) রাখ। সম্ভবতঃ সে আমাদের কাজে আসবে অথবা আমরা তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করে নেব। এমনিভাবে আমি ইউসুফকে এদেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম এবং এ কারণে যেন তাঁকে ঘটনার  ব্যাখ্যা করার  শিক্ষা দেই।(উদাহরণস্বরূপ স্বপ্ন )। আল্লাহ নিজ কাজের উপর পূর্ণ ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ রাখেন , কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।”
এই গল্পে আমরা দেখি যে সৃষ্টিকর্তা ইউসুফ (আঃ) কে রক্ষা করলেন এবং অবশেষে তাঁকে মিশরের শাসনকর্তা বানালেন। অনেক কষ্ট, ধৈর্য্য ও দৃঢ়তা প্রদর্শনের পর আল্লাহ্‌ তাঁকে রাজক্ষমতা দান করেন।  আল্লাহ্‌ কুরআনের ৯৪ নং সূরায় বলেছেন,

“আমি কি আপনার বক্ষ প্রসারিত করে দেইনি (আপনার হৃদয়ে খুশি দেইনি)? এবং আমি লাঘব করেছি আপনার বোঝা, যা ছিল আপনার জন্যে অতিশয় দুঃসহ। আমি আপনার খ্যাতিকে  সমুচ্চ করেছি। কিন্তু দেখুন কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে; নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। অতএব,  আপনি যখন অবসর পান তখনও পরিশ্রম করুন আপনার পালনকর্তাকে খুশি করার জন্য।” [৯৪:১-৯৪:৮]
আমরা নিজের জীবনের জন্য কি শিক্ষা নিতে পারি? আল্লাহ্‌  ধৈর্য্য ধরার জন্য শুধু পুরষ্কারই দেন না বরং আমাদের মর্যাদাও উন্নত করেন তাদের সামনে যারা সৃষ্টিকর্তাকে মূল্য দেয়না। এত কষ্টের ভিতরেও ইউসুফ (আঃ) সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাঁর বিশ্বাস হারাননি।  বরং তিনি ধৈর্য্য ও দৃঢ়তার সাথে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য প্রার্থনা করেছেন এবং তাঁর প্রতি সর্বদা কৃতজ্ঞ ছিলেন । আমাদের জীবনে সৃষ্টিকর্তা কতবার কষ্টকে স্বস্তিতে রূপান্তর করেছেন। যাইহোক আমরা কি কৃতজ্ঞ ছিলাম এবং তাঁকে খুশি করার চেষ্টা করেছি?


----------
{Notes}:
{1} https://archive.org/details/storyjosephandh00brucgoog



28
আমরা প্রায়ই মানুষের সাথে মানুষের অন্যায় আচরণ নিয়ে আলাপ আলোচনা করি। আলাপ করার সময়ে আমরা কি ভেবে দেখেছি যে, মানুষ সৃষ্টিকর্তার প্রতি অন্যায় করে কিনা? এটাই ডঃ ইউসুফ ইসলামের নিজের কাছে প্রশ্ন।
আমরা যখন বন্ধু বান্ধবীর সাথে আড্ডা দেই, প্রায়শই ন্যায়নীতি বিষয়ক আলাপ আলোচনা হয়।  বেশির ভাগ সময় আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ঃ  মানুষের সাথে মানুষের অন্যায়।  এইসব আলোচনার মধ্যে কখনো কি সৃষ্টিকর্তার সাথে মানুষের অন্যায় বিষয়ক কথা বার্তা হয়? এর উত্তরে একজন বলে বসতেই পারে যে, সৃষ্টিকর্তা তো সর্বশক্তিমান–কিভাবে কেউ তাঁর সাথে অন্যায় করতে পারে?     
কারো ক্ষতি করা আর তার সাথে অন্যায় করা এক জিনিস না।  আমরা যতই অন্যায় করিনা কেন তাতে আসলে সৃষ্টিকর্তার কোন ক্ষতি হয়না! অন্যায় কাজ প্রকৃতপক্ষে অন্যায়কারীর চরিত্রের প্রতিফলন ঘটায়।  সাধারণত আমরা যখন কোন উপহার পাই তখন যে উপহার দিলো তাকে ধন্যবাদ জানাই। কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ না হলে আমাদের ভিতরে একরকম অপরাধবোধ কাজ করে।  একই সাথে যারা উপহার দেয়নি তাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর কথা কি কখনো ভাবি? সৃষ্টিকর্তার ক্ষেত্রে একইভাবে, এটা কি অন্যায় হবে যদি আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করি যাদের সৃষ্টিকর্তার দেয়া নেয়ামতের সাথে কোন সম্পর্ক নেই? উদাহরণস্বরূপ আমরা জানি যে একমাত্র তিনিই আমাদের পরীক্ষায় সাফল্য দিতে পারেন।  তাই পরীক্ষার আগে সাফল্য পাওয়ার  জন্য আমরা অতিরিক্ত নামাজ পড়ে প্রার্থনা করি যাতে সৃষ্টিকর্তা আমাদের সাফল্য দেন।  আমাদের সৃষ্টিকর্তা কুরআন শরীফে উল্লেখ করেছেনঃ
“তারা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহকে চিনতে পারলো; অতঃপর অস্বীকার করলো, এবং তারা বেশির ভাগই অকৃতজ্ঞ।”[১৬.৮৩]
একবার যখন আল্লাহ্‌ তালা পরীক্ষায় সাফল্য দিয়ে দেন তখন কি আমরা এর প্রেক্ষিতে সরাসরি তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই?  বরং কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের জন্য শিক্ষকের বাসায় মিষ্টি নিয়ে যাই এবং নিজেদের সাফল্যের উপর খুশি হই এবং মনে করি আমরা নিজেরাই কেবল এই অর্জনের জন্য দায়ী।  আরেকটা এমন অবস্থার কথা চিন্তা করি যেখানে আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে কিছু চাচ্ছি, ধরে নেই, আমাদের একটি চাকরি দরকার এবং আমাদের ইন্টার্ভিউতে ডাকা হয়েছে।  এ অবস্থায় আমরা কি করি? আমরা সৃষ্টিকর্তার  কাছে প্রার্থনা করি! কিন্তু আমাদের প্রার্থনার প্রতি সৃষ্টিকর্তার উত্তরের জন্য ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা না করে আমরা পাথরের আংটি কিনে ফেলি – যদি আংটি বা পাথর দ্বারা সৌভাগ্য লাভ হয়ে যায়! অতঃপর একজন হয়ত পীরের কাছে যাওয়ার উপদেশ দেয় অথবা ইন্টার্ভিউ বোর্ডের সদস্যদের সাথে দেখা করার  অথবা কোন ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক নেতার সাথে দেখা করার উপদেশ দিতে পারে।  এ অবস্থায় আমরা সঙ্গে সঙ্গে এসব করতে যাই এটা ভেবে যে, যদি যেকোনো কিছুর দ্বারা কাজ হয়ে যায়, অর্থাৎ- সৃষ্টিকর্তা যদি আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিয়ে দেন অথবা আংটি কাজ করে অথবা যদি ইন্টার্ভিউ বোর্ডের সদস্য সাহায্য করে অথবা ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক নেতা আশাবাদী কথাবার্তা বলেন।  যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা চাকরি পাচ্ছিনা ততক্ষন পর্যন্ত যদি সবকিছুই কাজ করে তাহলে তো বেশ ভালো! আমাদের এই কাজগুলো প্রমাণ করে যে আমরা যুক্তি সহকারে বিশ্বাস করি যে- আংটি, পীর, বোর্ডের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা সবকিছুরই সমান ক্ষমতা আছে আমাদের চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে! এটা চিন্তা করে আমরা কি সৃষ্টিকর্তার প্রতি অন্যায় করছিনা? এ সম্পর্কে আল্লাহ্‌ আমাদের কোরআনে বলেছেন যে তিনি শেষ বিচারের দিনে এসব শরীকদের আমাদের সামনে হাজির করে প্রশ্ন করবেন। 
“মুশরিকরা যখন ঐ সব বস্তুকে দেখবে, যেসবকে তারা আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করেছিল, তখন বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা এরাই তারা যারা আমাদের শেরেকীর উপাদান, তোমাকে সহ আমরা যাদেরকে ডাকতাম। তখন ওরা তাদেরকে বলবেঃ তোমরা মিথ্যাবাদী।” [১৬:৮৬]
প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টিকর্তা একজনই এবং বাস্তবে তিনিই সকল ক্ষমতার অধিকারী অর্থাৎ অন্য কোন সত্তা বা বস্তুর আমাদের উপকার করার কোন ক্ষমতাই নেই।  যখন আমরা ভাবি যে অন্যান্য জিনিসের ক্ষমতা আছে তখন আমরা অবিশ্বাস প্রদর্শন করি এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি অন্যায় করি যিনি আমাদের যা প্রয়োজন সবকিছু দেন। সৃষ্টিকর্তা ন্যায়কারী,  তিনি অন্যায়কারী মানুষের মতো না।  তিনি তাঁদের পুরষ্কার দিবেন যারা তাঁর প্রতি ন্যায় করেছে যেরকম পবিত্র কিতাবসমূহে বলা হয়েছে।  নিচের এই গল্পটি বর্ণনা করে কিভাবে ইউসুফ (আঃ) ন্যায় দাবী করেছিলেন যাতে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার আগে তাঁর উপর থেকে মিথ্যা অভিযোগগুলো সরে যায় এবং কিভাবে সৃষ্টিকর্তা তাঁকে পুরস্কৃত করলেন।
১২:৫০ “এবং মিশরের বাদশাহ বললেন,”তাঁকে আমার কাছে নিয়ে আসো।” কিন্তু যখন বার্তা বাহক তাঁর কাছে আসলো।  ইউসুফ বললেন “তোমার মালিকের কাছে ফিরে যাও এবং জিজ্ঞাসা কর, “ঐ মহিলাদের মামলার কি হল যারা নিজেদের হাত কেটেছিল?” প্রকৃতই আমার রব তাদের পরিকল্পনা সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে জানেন।”
কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার আগে ইউসুফ (আঃ) চাইলেন বাদশাহ যাতে তাঁর নির্দোষ হওয়ার ব্যাপারটা ঐ মহিলাদের কাছ থেকে যাচাই করে নেয়। 
১২:৫১ “বাদশাহ মহিলাদের বললেন, “মামলাটি কি ছিল যখন তোমরা ইউসুফকে অশ্লীলতায় অভিযোগ দেখেছিলে?” মহিলারা বাদশাহকে বলল, “আল্লাহ্‌ তালা নিখুঁত (যিনি ইউসুফের মতো নির্মল চরিত্র সৃষ্টি করেছেন)!  তাঁর বিরুদ্ধে কোন খারাপ কিছু আমাদের জানা নেই!”  আযীযের স্ত্রী বলল , “এখন সত্য সামনে এসে গেছে; প্রকৃতপক্ষে আমিই তাঁকে অশ্লীল কাজে লিপ্ত করতে চেয়েছিলাম, সে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।”
ইউসুফ (আঃ) এর দীর্ঘ সময় ধরে ধৈর্যসহ কারাবাসের পর আযীযের স্ত্রী শেষপর্যন্ত নিজের দোষ স্বীকার করে নিল।  সে বাদশাহের সামনে ইউসুফ (আঃ) কে সব রকম দোষারোপ থেকে মুক্তি দিলো এবং নিজেকেও তার স্বামীর কাছে এই ব্যাপার নিয়ে সকল রকম সন্দেহ থেকে মুক্ত করতে চাইলো।
১২:৫২ “আযীযের স্ত্রী বলল, “এটা এজন্য বলছি, যাতে আযীয জেনে নেয় যে, আমি গোপনে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি।  আরও এই যে, আল্লাহ বিশ্বাসঘাতকদের প্রতারণাকে এগুতে দেন না।””
১২:৫৩ “আযীযের স্ত্রী বলল , “আমি নিজেকে (দোষমুক্ত) পাপমুক্ত করছিনা।  নিশ্চয় মানুষের আত্মা মন্দ কর্মের দিকে ঝুঁকে রয়েছে কিন্তু আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন সে এর অন্তর্ভুক্ত নয়।  নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল,অসীম দয়ালু।””   
আযীযের স্ত্রী নিজের দোষ স্বীকার করলো যে, সেই ইউসুফ (আঃ) কে অশ্লীল প্ররোচনা  দিয়েছিলো।  যাহোক, যেহেতু আর বেশি কিছু ঘটেনি সে মাফ চেয়ে নিল।  বাদশাহ ইউসুফ (আঃ) এর চরিত্রের প্রতি মুগ্ধ হয়ে গেলেন যে, তিনি শুধুমাত্র ভালো চরিত্রের অধিকারীই নন, তিনি অন্যদের ভিতরকার ভালো সত্তাকে জাগাতেও সক্ষম।  তাই বাদশাহ চাইলেন এই ভালো চরিত্রের মানুষ তার কাজে নিযুক্ত হোক। 
১২:৫৪ “বাদশাহ বললেন, “তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো; আমি তাকে আমার নিজের বিশ্বস্ত হিসেবে নিযুক্ত করবো।” অতঃপর যখন বাদশাহ ইউসুফের সাথে মতবিনিময় করল, তখন বললঃ “আপনি নিশ্চিত থাকুন যে আজ থেকে আপনার বিশ্বস্ততা পূর্ণরূপে প্রমানিত হল এবং আপনি বিশ্বস্ত হিসাবে মর্যাদার স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন!”
বাদশাহ শুধুমাত্র ইউসুফ (আঃ) কে সকল রকম মিথ্যা অভিযোগ থেকে মুক্তই করলেন না, আদালতে তিনি তাঁকে একটি দায়িত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিলেন।  এভাবে ইউসুফ (আঃ)এর ধৈর্য এবং পূর্ণ বিশ্বাসের কারণে আল্লাহ্‌ তাঁকে পুরস্কৃত করলেন।     
১২:৫৫ “ইউসুফ বললেন, “আমাকে দেশের রাজকোষের তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করুন।  আমি এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করবো তাঁর মতো যে জানে এগুলোর গুরুত্ব কতটুকু।””
 ১২:৫৬ “এবং এভাবে আমি এই ভূমির উপর আধিপত্য দিয়ে ইউসুফকে প্রতিষ্ঠিত করলাম এবং সে যেখানে চায় তাঁকে সেখানেই নিযুক্ত করলাম। আমি যার উপর খুশি হই তাঁর প্রতি দয়া দেখাই এবং যে ভালো কাজ করে তাঁর প্রতিদান নষ্ট করিনা।”
যেহেতু আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কোন ক্ষমতা নেই, এটাই সঠিক এবং ন্যায় কাজ যে নামাজ পড়ার পর আমরা ধৈর্য সহকারে তাঁর দেওয়া সমাধানের জন্য অপেক্ষা করি- এটাই ন্যায়পরায়ণতা।  আমাদের মনে রাখতে হবে যে, যদি আল্লাহ্‌ কোন সমস্যার সমাধান না করেন অথবা উপশম না করেন, আর কেউ সেটা করতে পারবেনা! আমরা যদি নামাজ এবং ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস প্রদর্শন (সমস্যার ভয় না পেয়ে এবং কল্পনায় বানানো শক্তির পিছে না ছুটে) করতে পারি তবে, আল্লাহ্‌র নেয়ামতের কোন সীমানা নেই।  তাঁর আসল পুরষ্কার শেষ বিচারের দিনের পরই সকলেরই বোধগম্য হবে।
১২:৫৭ “কিন্তু সত্যই পরকালের পুরষ্কারই সর্বোত্তম তাঁদের জন্য যারা আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং দৃঢ়তার সাথে ন্যায়পরায়ণ থাকে।”

29
সাধারণ পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে মানুষ একটি আবেগপূর্ণ সত্তা। আমাদের আবেগপ্রবন চিন্তায় যদি যুক্তির ভিত্তি না থাকে, তবে আমরা কি সমস্যায় পড়তে পারি? প্রশ্ন করছেন ডঃ ইউসুফ মাহাবুবুল ইসলাম।
এটা প্রায়শই বলা হয় যে মানুষ আবেগতাড়িত প্রাণী। এটা কি সত্যি? বিজ্ঞানীরা অবশ্য সেটাই মনে করেন। আমাদের মস্তিস্কে একটি অংশ আছে যেখানে আবেগ তৈরি হয়। স্নায়ুবৈজ্ঞানিক দামাসিও এটি আবিষ্কার করেছেন যে, ঐসব মানুষ যাদের মস্তিস্কের এই অংশে ক্ষতি হয়েছে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে কষ্ট হয়। - এমনকি সিদ্ধান্তটা খুব সহজ হলেও।  এই ধরণের চিন্তার সমর্থনে, আমেরিকান লেখক কার্নেগী (১৮৮৮-১৯৫৫) বলেছিলেন,
“মানুষের সাথে লেনদেন করার সময় মনে রাখবে যে, তুমি যুক্তিবাদী প্রাণীর সাথে লেনদেন করছোনা তুমি আবেগতাড়িত প্রাণীর সাথে লেনদেন করছো।”
যদিও আবেগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মূল একটি ভূমিকা পালন করে তবুও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কিছু যুক্তিসম্পন্ন চিন্তা অন্তর্ভুক্ত করা দরকার, তা না হলে যখন আবেগ ফুরিয়ে যায়, ভরসা হিসাবে আর কিছুই থাকেনা –মানুষ চিন্তায় পড়ে যেতে পারে যে শুরুতে ঐ সিদ্ধান্তটা কি কারণে নেয়া হয়েছিল।  এটাও মনে রাখতে হবে যে যুক্তিহীন আবেগ পরিবর্তনশীল।   
 মানব চরিত্রের এই অবস্থা বুঝার পর, উদাহরণস্বরূপ এটাও বুঝা দরকার যে আদালতের সিদ্ধান্ত আবেগ বা অনুভূতি দিয়ে নেওয়া যায়না; কারণ আবেগপূর্ণ চিন্তার উপর ভিত্তি করে আদালতের সিদ্ধান্ত হতে পারেনা।  সিদ্ধান্ত নিতে হবে যুক্তির উপর ভিত্তি করে।  যুক্তি-প্রয়োগ হচ্ছে প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে একটি  সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়া।  আদালতের আইনে,একবার যখন যুক্তি প্রয়োগ করে সাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে একটি মামলা উপস্থাপন করা হয়ে যায়, রায় ঘোষণা দেওয়ার সময় সেখানে আবেগ থাকতে পারে। 
তাই, সুস্থ সিদ্ধান্তে অবশ্যই যুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে যেটা ফলপ্রসূ করার সময় অনুভুতির আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে।  উপরোক্ত আলোচনায় আমরা জানলাম যে, মানুষ কিভাবে চিন্তা করে; এখন পবিত্র কুরআন থেকে নবী ইউসুফ (আঃ) এর গল্পের একটি অংশ পর্যবেক্ষণ করা যাক।  আমরা গল্পের ঐ অংশ উল্লেখ করছি যেখানে ইউসুফ (আঃ) সৃষ্টিকর্তার অনুপ্রেরণায় তাঁর নিজ ভাই বেনইয়ামিনের জন্য পরিকল্পনা করলেন যে কিভাবে তাঁকে নিজের সাথে রাখা যায়।  নিচের গল্পে কে কি ধরণের চিন্তা করলো তা পরীক্ষা করা যাক, অর্থাৎ ইউসুফ (আঃ) ও তাঁর বৈমাত্রেয় ভাইদের নেওয়া সিদ্ধান্ত আবেগপূর্ণ ছিল, নাকি যুক্তিযুক্ত? যখন শাস্তির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হল, তারা নিজেদেরকে সৎ ও ন্যায়পরায়ন দেখানোর জন্য অহংকার ও আবেগে পরিপূর্ণ এক উত্তর দিলো, এতে তাদের যেকোন ভাই যে বিপদে পড়তে পারে, এটা সম্পর্কে কোন চিন্তাই করলোনা।   
“তারা(ভাইরা) বললঃ এর শাস্তি এই যে, যার মালামাল থেকে মাপন পাত্র পাওয়া যাবে, শাস্তিস্বরূপ সে দাসত্বে যাবে। আমরা অন্যায়কারীদের এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকি।” [১২.৭৫]
ইউসুফ ১০ জন বৈমাত্রেয় ভাইদের ব্যাগ অনুসন্ধান করলেন এবং শেষে বেনইয়ামিনের ঘোড়ার সাথে আটকানো ব্যাগ অনুসন্ধান করলেন। 
১২.৭৬ “অতঃপর ইউসুফ তাদের(বৈমাত্রেয় ভাইদের) ব্যাগ অনুসন্ধান শুরু করলেন আপন ভাই বেনইয়ামিনের ব্যাগ অনুসন্ধানের পূর্বে।  অবশেষে সেই মাপন পাত্র আপন ভাইয়ের ব্যাগের মধ্য থেকে বের করলেন। এমনিভাবে আমি ইউসুফের জন্য পরিকল্পনা করেছিলাম।  সে বাদশাহর আইনে আপন ভাইকে কখনও সাথে রাখতে পারত না,  আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত।  আমি যাকে ইচ্ছা (জ্ঞানে) উন্নীত করি এবং প্রত্যেক জ্ঞানীর উপরে আছেন সর্বজ্ঞানী একজন।” 
আল্লাহ্‌র অনুপ্রেরণায় ইউসুফ (আঃ) তাঁর ভাই বেনইয়ামিনের ব্যাগে মাপন পাত্র গোপনে রেখেছিলেন যাতে সেই অজুহাতে আপন ভাইকে নিজের সাথে রেখে দিতে পারেন। বেনইয়ামিনের উপর দয়া দেখাতে গিয়ে তিনি এ কাজ করেছিলেন।  এখানে চিন্তার প্রক্রিয়া ছিল যুক্তিসম্পন্ন - কিভাবে বেনইয়ামিনকে তাঁর বৈমাত্রেয় ভাইদের থেকে রক্ষা করা যায় - সৃষ্টিকর্তা হযরত ইউসুফ (আঃ) কে এই পরিকল্পনা  দিলেন।
১২.৭৭ “তারা বলতে লাগলঃ “যদি সে চুরি করে থাকে - তবে তার আরেক আপন ভাইও ইতিপূর্বে চুরি করেছিল।” তখন ইউসুফ প্রকৃত ব্যাপার নিজের মনে গোপন করে রাখলেন এবং তাদেরকে জানালেন না।  তিনি মনে মনে বললেনঃ “তোমরা এই ব্যাপারে মন্দ ব্যাখ্যা করছো এবং আল্লাহ এই সম্বন্ধে সম্পূর্ণ জ্ঞান রাখেন যা তোমরা বর্ণনা করছ!””
ভাইদের আবেগের তাৎক্ষনিক পরিবর্তন লক্ষ্য করে দেখুন।  মাপন পাত্রটা বেনইয়ামিনের ব্যাগ থেকে বের করতে দেখে ভাইরা আবেগের বশবর্তী হয়ে বেনইয়ামিনের আপন মায়ের উপর দোষারোপ আরম্ভ করলো – বলল, বেনইয়ামিনের আপন ভাইও ইতিপূর্বে চুরি করেছে!  অপরপক্ষে ইউসুফ (আঃ) আবেগতাড়িত হয়ে বৈমাত্রেয় ভাইদের এই নিষ্ঠুর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে উদ্যত হলেন না।  তিনি যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলেন যে আল্লাহ্‌ তো সব গোপন কথাই জানেন; তাই ভাবলেন যে, আবেগের আশ্রয় নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে ভাইদের কথার উত্তর দেওয়ার দরকার নেই।   
১২.৭৮ “তারা বলতে লাগলঃ “হে আযীয(ইউসুফের দিকে সম্বোধন করে যিনি এখন এই পদে অধিষ্ঠিত), তার পিতা আছেন, যিনি খুবই বৃদ্ধ (যিনি ছেলের জন্য দুঃখ করবেন), সুতরাং আপনি আমাদের একজনকে তার বদলে রেখে দিন; আমরা আপনাকে অনুগ্রহশীল ব্যক্তিদের একজন হিসেবে জানি।””
আবেগের আশ্রয় নিয়ে ভাইকে দোষারোপ করার পর বৈমাত্রেয় ভাইরা তাদের পিতাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করলো-যে ঘটনাটি ছিল যুক্তিযুক্ত। 
এখন তারা ইউসুফ (আঃ) কে মানবীয় দিক থেকে(আবেগের অংশে) আবেদন করলো যে- আমরা জানি যে আপনি অনুগ্রহশীল ব্যক্তি।
১২.৭৯ “তিনি বললেনঃ “যার কাছে আমরা আমাদের চুরি যাওয়া জিনিস পেয়েছি, তাকে ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করা আল্লাহর বিধান পরিপন্থী।  (যদি এটা করি) তাহলে তো আমরা নিশ্চয়ই অন্যায়কারী হয়ে যাব।”” 
কিভাবে একজন ব্যক্তিকে অন্য কারো অপরাধের জন্য দণ্ডিত করা যাবে? – ইউসুফ(আঃ) যুক্তির সঙ্গে উত্তর দিলেন।  ১০ ভাই এর আবেদন ইউসুফ (আঃ) এর দেওয়া যুক্তির মোকাবেলায় টিকতে পারলোনা।
১২.৮০ “অতঃপর যখন তারা নিরাশ হয়ে গেল,  তখন তারা আড়ালে পরামর্শ করলো।  তাদের জ্যেষ্ঠ ভাই বললঃ তোমরা কি জানোনা যে, পিতা তোমাদের কাছ থেকে আল্লাহর নামে অঙ্গীকার নিয়েছেন এবং পূর্বে ইউসুফের ব্যাপারেও তোমরা অন্যায় করেছো?  অতএব, আমি তো কিছুতেই এদেশ ত্যাগ করব না, যে পর্যন্ত না পিতা আমাকে আদেশ দেন অথবা আল্লাহ আমার পক্ষে কোন ব্যবস্থা করে দেন-তিনিই সর্বোত্তম বিচারক।”
অনেক বছর আগে করা একই ধরণের অপরাধের পুনরাবৃত্তি হবে এটা ভাইদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ভাই আর সহ্য করতে পারেনি।  এখানে যে তর্কবিতর্ক উপস্থাপিত হয়েছে তা যুক্তিসম্মত - তারা শপথ নিয়েছিল যে তারা বেনইয়ামিনের কোন ক্ষতি হতে দিবেনা।
১২.৮১ “তোমরা তোমাদের পিতার কাছে ফিরে যাও এবং বলঃ “হে পিতা! প্রকৃতই আপনার ছেলে চুরি করেছে, আমরা তার সাক্ষ্য দিচ্ছি যা আমরা জানি এবং আমরা তো অদৃষ্টকে বাধা দিতে পারিনা!””  যেহেতু তারা নির্ণয় করতে পারলো না যে, বেনইয়ামিনের এর ব্যাগে কিভাবে মাপন পাত্র পাওয়া গেলো ; তাই তাদেরকে এটাই সত্য বলে মেনে নিতে হল যে, বেনইয়ামিন চুরি করেছে।  পিতার সামনে অন্যদের সাক্ষী হিসাবে এনে বলল যে-   
১২.৮২ “জিজ্ঞেস করুন ঐ জনপদের লোকদেরকে যেখানে আমরা ছিলাম এবং ঐ কাফেলাদের যাদের সাথে আমরা এসেছি। তাহলে আপনি নিশ্চিত হবেন যে, আমরা সত্য বলছি।”
এখন বাবাকে সন্তুষ্ট করার জন্য, ভাইরা চাইলো যে - বেনইয়ামিন প্রকৃতপক্ষেই চুরি করেছে; তাদের এ দাবির সমর্থনে অন্যরা তাদের পিতার সামনে যুক্তি আর প্রমাণ উপস্থাপন করুক।  গল্প জুড়ে আমরা দেখতে পাই যে, ভাইরা তাদের এলোপাথাড়ি আবেগ ব্যবহার করে চিন্তা করার কারণে কিভাবে সমস্যায় পড়ে।  তবে দেখা যাচ্ছে যে, এপর্যন্ত ইউসুফ (আঃ) এর চিন্তাই ছিল সবচেয়ে যৌক্তিক কারণ আল্লাহর প্রতি তাঁর ভরসা ছিল সর্বাধিক।

Pages: 1 [2] 3 4 ... 6