Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - habib

Pages: 1 ... 6 7 [8]
106
নামাযের দো‘আ ও যিক্‌র



প্রথমঃ তাকবীরে তাহরীমার পর ইস্তিফতা বা প্রারম্বিক দো‘আ

«اللهم

১. উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বা‘ইদ বাইনী ও বাইনা খাতায়াইয়া কামা বা‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল

মাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্কিনী মিন খাতায়াইয়া কামা ইউনাক্কাস সাওবুল আবয়াদু

মিনাদ্দানাসি, আল্লাহুম্মাগসিলনী মিন খাতায়াইয়া বিল মা-য়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমার এবং আমার গুনাহ্ খাতার মাঝে এমন দূরত্ব সৃষ্টি কর যেরূপ পশ্চিম ও পূর্বের

দূরত্ব সৃষ্টি করেছ। হে আল্লাহ! আমাকে আমার গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার কর যেমন সাদা কাপড়

ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আমার পাপসমূহকে পানি, বরফ ও শিশিরের মাধ্যমে ধৌত

করে দাও। (বুখারী-মুসলিম)

২. উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা ওয়া তা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-

অর্থ: হে আল্লাহ! সকল দোষ হতে তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং তোমারই সকল

প্রশংসা, তোমার নাম মহিমান্বিত, তোমার মর্যাদা-বড়ত্ব অতি উচ্চে এবং তুমি ব্যতীত সত্যিকার

কোনো মা‘বূদ বা উপাস্য নেই।

، اللهم أغسلني من خطاياي بالماء والثلجوالبرد» (رواه البخاري ومسلم)

«سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك» (رواه مسلم)

«وجهت وجهي للذي فطر السموات والأرش حنيفا وما أنا من المشركين، إن صلاتي، ونسكي، ومحياي، ومماتي لله رب العال

مين، لا شريك له وبذلك أمرت وأنا منالمسلمين اللهم أنت الملك لا إله إلا انت، أنت ربي وانا عبدك، ظلمت نفسي وأعتفت بذنب

 وأهدني لأحسنالأخلاق لا يهدي لأحسنها إلا أنت، وأصرف عني سيّئها، لا يصرف عني سيئها إلا أنت لبيك وسعديك، والخير

৩. উচ্চারণ: ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাউঁ ওমা আনা

মিনাল মুশরিকীন, ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়ায়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন, লা-

শারীকালাহু ওয়াবিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন।

আল্লাহুম্মা আনতাল মালিকু লা-ইলাহা ইল্লা আনতা, আনতা রব্বী ওয়া আনা আবদুকা, যালামতু নাফসী

ওয়া‘তারাফতু বিযানবী ফাগফিরলী যুনূবী জামীয়ান ইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুজ্জুনূবা ইল্লা আন্তা, ওয়াহদিনী লি

আহসানিল আখলাক্বি লা-ইয়াহদী লিআহসানিহা ইল্লা আন্তা, ওয়াস্রিফ ‘আন্নী সাইয়্যিয়াহা লা-য়াসরিফু

আন্নী সাইয়্যিয়াহা ইল্লা আন্তা, লাব্বাইকা ওয়াসা‘দাইকা, ওয়াল খাইরু কুল্লুহূ বিইয়াদাইকা ওয়াশ শাররু

লাইসা ইলাইকা,আনা বিকা ওয়া ইলাইকা, তাবারাকতা ওয়া তা‘য়ালাইতা, আস্তাগফিরুকা ওয়া আতুবু

অর্থ: আমি সেই আল্লাহ্ তা‘আলার দিকে একনিষ্ঠভাবে চেহারা ফিরাচ্ছি যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি

করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয় আমার নামায, কুরবানী-হজ্জ, জীবন ও মরণ

বিশ্বজগতের রব্ব আল্লাহ্‌র জন্য নিবেদিত। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আর এই জন্যই আমি আদিষ্ট

হয়েছি এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।

হে আল্লাহ্! তুমি সেই বাদশাহ যে তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মা‘বূদ নেই, তুমি আমার রব্ব এবং আমি

তোমার বান্দা, নিজের প্রতি যুলুম করেছি এবং আমার গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমার যাবতীয়

গুনাহ্ মা‘ফ করে দাও আর নিশ্চয় তুমি ছাড়া তো গুনাহ মাফের কেউ নেই। আর তুমি আমাকে উত্তম

চরিত্রের দিকে পরিচালিত কর। তুমি ব্যতীত উত্তম চরিত্রের দিকে কেউ পরিচালিত করতে পারে না।

আমার চরিত্রের মন্দ গুণাবলী আমার থেকে দূর কর খারাপ গুণাবলী তুমি ব্যতীত কেউ দূরীভূত করতে

পারবে না। আমি তোমার ‌আহ্বানে সাড়া দিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত। যাবতীয় কল্যাণ তোমার হাতে

নিহিত, অকল্যাণ তোমার দিকে সম্পৃক্ত নয়। আমি তোমার জন্য এবং তোমারই দিকে আমার

প্রবণতা। তুমি মহিমান্বিত ও অতি উচ্চ, আমি তোমার নিকট ক্ষমা চাই এবং তোমার নিকট তওবা

«اللهم رب جبرائيل، وميكائيل، وإسرافيل فاطر السماوات والأرض، عالم الغيب والشهادة أنت تحكم بين عبادك فيما كانوا فيه

৪. উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রব্বা জিবরাঈলা ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইসরাফীলা ফাত্বিরাস সামাওয়াতি ওয়ার

আরদি আলিমাল গাইবি ওয়াশ্ শাহাদাতি আন্তা তাহকুমু বাইনা ইবা-দিকা ফীমা কা-নূ ফীহি

ইয়াখতালিফূন, ইহদিনী লিমা উখতুলিফা ফীহি মিনাল হাক্বি বিইযনিকা, ইন্নাকা তাহদী মানতাশা-ঊ ইলা

সিরাতিম মুস্তাক্বীম। (মুসলিম)

অর্থ: হে আল্লাহ! জিব্রাঈল, মীকাঈল ও ইস্রাফীলের রব, আকাশসমূহ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, গায়েব ও

উপস্থিত সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ। তোমার বান্দাগণ যে সব বিষয়ে মতভেদ করে তুমি তার মীমাংসা

কর, সত্য থেকে দূরে সরে যে সব বিষয়ে মতভেদ করা হয় সেগুলিতে তোমার সহায়তায় আমাকে সঠিক

নির্দেশনা দাও। নিশ্চয় তুমি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ প্রদর্শন কর। (মুসলিম)

ي فاغفرلي ذنوبي جميعا إنه لا يغفر الذنوب إلا أنت-

 كله بيديك، والشر ليس إليك أنا بي وإليك تباركتوتعاليت أستغفرك وأتوب إليك» (رواه مسلم)

 يختلفون، إهدني لما اختلف فيه منالحق بإذنك إنك تهدي من تشاء إلى صراط مستقيم» (رواه مسلم)

দ্বিতীয়ঃ রুকুর দো‘আ ও যিক্‌র

উচ্চারণ: ‘‘সুবহানা রব্বীয়াল ‘আযীম’’

অর্থ: আমার মহান রব্বের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। (মুসলিম)

তিনবার বা তার চেয়ে বেশি বলবে।

(رواه أحمد وأبو داود والدار قطني والطبراني والبيهقي)

উচ্চারণ: ‘‘সুবহানা রব্বীয়াল আ‘যীম ওয়া বিহামদিহি’’

অর্থ: আমার মহান রব্বের পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি। (আহমাদ, আবু

দাউদ, দারাকুতুনী, ত্ববারানী এবং বায়হাকী)

কেউ যদি বেশি বলতে চায় তো বলবেঃ

উচ্চারণ: ‘‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী।’’

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের রব্ব তোমার সকল প্রশংসা বর্ণনা করছি এবং সকল দোষ হতে পবিত্রতা

ঘোষণা করছি, আমাকে তুমি ক্ষমা কর। (বুখারী-মুসলিম)

«سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفر لي» (متفق عليه)

«سبوح قدوس رب الملائكة والروح» (رواه مسلم)

উচ্চারণ: ‘‘সুব্বূহুন কুদ্দূ-সুন রব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।’’

অর্থ: ফেরেশতামণ্ডলী ও জিবরাঈলের রব্ব সকল দোষত্রুটি থেকে পবিত্র। (মুসলিম)

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা রাকা‘তু, ওয়া বিকা আ-মান্তু ওয়া লাকা আসলামতু, খাশা‘য়া লাকা সাম‘ঈ ওয়া

বাসারী ওয়া মুখখী ওয়া ‘আজমী ওয়া ‘আসাবী।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্যই রুকু করি, তোমার প্রতি ঈমান এনেছি এবং তোমার নিকটেই

আত্মসমর্পণ করছি, আমার কান, দৃষ্টি, মস্তিষ্ক,হাড় ও মাংশপেশী সকল বস্তু তোমার ভয়ে অবনত

«اللهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، خَشَعَ لَكَ سَمْعِي، وَبَصَرِي، وَمُخِّي، وَعَظْمِي، وَعَصَبِي»

«سبحان ذي الجبروت، والملكوت، والكبرياء، والعظمة» (رواه أبو داود والنسائي)

উচ্চারণ: সুবহানা জীল জাবারূতি ওয়াল মালাকূত ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল ‘আজমাহ্।

অর্থ: সকল দোষ হতে পবিত্র যিনি মহাপরাক্রমশালী, বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী, অসীম গৌরব-

গরিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। (আবু দাউদ ও নাসায়ী)

তৃতীয়ঃ রুকু হতে উঠার দো‘আ

(সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায়)

উচ্চারণ: রব্বানা ওয়ালাকাল হামদ

অথবাঃ রব্বানা লাকাল হামদু

অথবাঃ রব্বানা লাকাল হামদু

উল্লেখিত সবগুলিই বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।

তবে একেকবার একেকটি পড়বে, যদিও উত্তম হলো নিম্নরূপে বলাঃ

«ربنا ولك الحمد حمدا كثيرا طيّبا مباركا فيه ملء السماوات وملء الأرض وملء بينهما وملء ما شئت من شيء بعد أهل الثن

اء والمجد أحق ما قال العبد وكلنا لكعبد لا مانع لما أعطيت ولا معطي لما منعت ولا ينفع ذا الجد منك الجد» (رواه مسلم)

উচ্চারণ: রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু হামদান কাসীরান ত্বইয়্যিবান মুবারাকান ফীহি, মিলয়াস সামাওয়াতি

ওয়া মিলয়ালারদি ওয়া মিলয়া মা বায়নাহুমা ওয়া মিলয়া মা-শি’তা মিন শাইয়িন বা‘দু, আহলাস সানায়ি ওয়াল

মাজদি- আহাক্কু মাক্বলাল আবদু ওয়া কুল্লুনা লাকা আবদুন, লা মা-নি‘য়া লিমা আ‘ত্বাইতা ওয়ালা মু‘ত্বিয়া

লিমা মানা‘তা ওয়ালা ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। (মুসলিম)

অর্থ: হে আল্লাহ্! তোমারই জন্য সর্ববিধ উত্তম ও বরকতপূর্ণ প্রশংসা যা আকাশসমূহ, পৃথিবী ও

উভয়ের মধ্যে যত কিছু রয়েছে সব কিছু পরিপূর্ণ,এগুলি ছাড়াও তুমি যত চাও সমস্ত পরিপূর্ণ প্রশংসা, তুমি

সকল স্তুতি ও মর্যাদার অধিকারী। তোমার বান্দা যে প্রশংসা করে তার চেয়ে তুমি অধিক প্রাপ্য, আমরা

প্রত্যেকেই তোমার বান্দা, তুমি যা দান কর তা বন্ধ করার কেউ নেই। আর তুমি যা বন্ধ রাখ তা

দানকারী কেউ নেই। কোনো সম্মানিত ব্যক্তি সম্মান কাজে আসবে না তোমার নিকট থেকেই প্রকৃত

চতুর্থঃ সিজদার দো‘আ ও যিক্‌র

উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা। (মুসলিম)

(رواه

উচ্চারণ: সুবহানা রবিবয়াল আ‘লা ওয়া বিহামদিহি। (আবু দাউদ, দারা কুতুনী, আহমাদ, ত্ববারানী ও

অর্থ: আমার মহান রব্বের প্রশংসাপূর্ণ পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

অথবা চাইলে নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বেঃ

উচ্চারণ: ‘‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ্ ফিরলী।’’

অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার সকল প্রশংসা বর্ণনা করছি এবং সকল দোষ হতে পবিত্রতা ঘোষণা

করছি, আমাকে তুমি ক্ষমা কর। (বুখারী-মুসলিম)

উচ্চারণ: ‘‘সুববূহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।’’

অর্থ: ফেরেশতামণ্ডলী ও জিবরাঈলের রব্ব সকল দোষত্রুটি থেকে পবিত্র। (মুসলিম)

উচ্চারণ: সুবহানা যিল জাবারূতি ওয়াল মালাকুত ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল ‘আজামাহ্।

অর্থ: সকল দোষ হতে পবিত্র যিনি মহাপরাক্রমশীল, বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী, অসীম গৌরব-

গরিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। (আবু দাউদ ও নাসায়ী)

«سبّوح

«سبحان ذي الجبروت، والملكوت، والكبرياء، والعظمة» (رواه أبو داود والنسائي)

 «اللهم إني أعوذ برضاك من سخطك، وبمعافاتك من عقوبتك وأعوذ بك منك لا أحصى ثناء عليك أنت كما أثنيت على نفسك»

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিরিদ্বা-কা মিন সাখাতিকা, ওয়া বিমু‘য়া-ফাতিকা মিন

উকূবাতিকা, ওয়া আ‘উযু বিকা মিনকা লা উহসী সানা’য়ান ‘আলাইকা, আন্তা কামা আসনাইতা ‘আলা

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টির মাধ্যমে তোমার অসন্তুষ্টি হতে আশ্রয় চাই এবং তোমার

ক্ষমার বিনিময়ে তোমার শাস্তি হতে আশ্রয় চাই,তোমার মাধ্যমেই তোমার নিকট হতে আশ্রয়

চাই, তোমার গুণগান গেয়ে শেষ করতে পারবো না, তুমি যেভাবে নিজের স্তুতি বর্ণনা করেছে। (মুসলিম)

«اللهم اغفرلي ذنبي كله، دقّه وجلّه وأوّله وآخره وعلانيّته وسره» (رواه مسلم)

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলী যাম্বী কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু ও

আলানিয়্যাতাহু ওয়া সির্রাহু।

অর্থ: হে আল্লাহ্! ছোট ও বড় গুনাহ পূর্বের ও পরের গুনাহ এবং প্রকাশ্য ও গোপনীয় সকল গুনাহ খাতা

 «اللهم لك سجدت وبك آمنت، ولك أسلمت، سجد وجهي للذي خلقه وصوره وشق سمعه وبصره، تبارك الله أحسن الخالقين»

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়া বিকা আ-মানতু ওয়ালাকা আসলামতু, সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী

খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সাম‘য়াহু ওয়া বাসারাহু, তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিক্বীন।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমাকেই সিজদা করি, তোমার প্রতি ঈমান এনেছি, তোমার নিকটই

আত্মসমর্পণ করছি, আমার মুখমণ্ডল তাঁর জন্য সিজদায় অবনমিত যিনি উহা সৃষ্টি করেছেন, প্রতিরূপ

দিয়েছেন এবং তার কর্ণ ও চক্ষু আলাদা করে সজ্জিত করেছেন, তিনি মহিমান্বিত আল্লাহ,সর্বোত্তম

পঞ্চমঃ দুই সিজদার মাঝে বসার দো‘আ

উচ্চারণ: রব্বিগফিরলী, রব্বিগফিরলী।

অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ্ তুমি আমাকে ক্ষমা কর। (আবু দাউদ-ইবনে মাজাহ্)

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ার হামনী ওয়া ‘আফিনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুকনী।

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, আমার প্রতি রহম কর, আমাকে সুস্থতা দান কর, সঠিক পথে

পরিচালিত কর এবং রিযিক দান কর। (আবু দাউদ, তিরমিযী)

একটি বর্ণনায় বেশি রয়েছেঃ

অর্থ: আমার ক্ষতিপূরণ কর।

«اللهم اغفرلي، وارحمني، وعافني واهدني، وارزقني» (رواه أبو داود والترمذي)

অর্থ: আমার মর্যাদা বৃদ্ধি কর। (ইবনে মাজাহ)

ষষ্ঠঃ তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু)

 «التحيات لله والصلوات والطيبات والسلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين،

أشهد

«اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد، اللهم بارك على محمد وعل

উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্ব ত্বাইয়্যিবাতু আস্‌সালামু আলাইকা

আইয়্যুহান্নাবিইয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু,আসসালামু আলাইনা ওয়া ‘আলা ইবাদিল্লাহিস্

সালিহীন। আশহাদু আল্-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।

আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া

আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

ى آل محمد كما باركت على إبراهيموعلى آل إبراهيم إنّك حميد مجيد» (رواه البخاري ومسلم)

আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা ‘আ-লা ইবরাহীমা

ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।

(বুখারী-মুসলিম, এছাড়া অন্য বর্ণনায় কাছাকাছি এভাবেই বর্ণিত হয়েছে।)

অর্থ: সকল সম্মান-সম্ভাষণ, সকল সালাত ও সকল পবিত্রতা আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য। হে নবী! আপনার

প্রতি শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক, আমাদের ও নেক বান্দাদের উপর শান্তি অবতীর্ণ

হোক, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে ‘‘মুহাম্মাদ’’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।

হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি রহমত অবতীর্ণ

কর, যেমনভাবে রহমত অবতীর্ণ করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয়

তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।

সপ্তমঃ আত্তাহিয়্যাতু-দরূদের পর সালামের পূর্ব মুহূর্তের দো‘আ

«اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ»

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উযুবিকা মিন আযাবি জাহান্নাম ওয়া মিন আযাবিল ক্বাবরি ওয়ামিন

ফিতনাতিল মাহইয়া-ওয়াল মামাত ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জাল। (বুখারী-মুসলিম)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি জাহান্নাম ও কবরের আযাব হতে তোমার নিকট আশ্রয় কামনা করছি এবং

আশ্রয় কামনা করছি জীবিত অবস্থার ও মৃত্যুর ফিতনা হতে এবং মসীহ দাজ্জালের অনিষ্টকর ফিতনা

অন্য বর্ণনায় বেশি রয়েছেঃ

উচ্চারণ: ‘‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল মা-সামি ওয়াল মাগরামি’’

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় কামনা করছি পাপকর্ম ও ঋণ থেকে।

اللهم إني ظلمت نفسي ظلما كثيرا ولا يغفر الذنوب إلا أنت فاغفرلي مغفرة من عندك وارحمني إنّك أنت الغفور الرحيم"

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাসীরান, ওয়ালা ইয়াগফিরুযযুনূবা ইল্লা

আন্তা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা,ওয়ার হামনী ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি, আর তুমি ব্যতীত গুনাহ খাতা কেউ ক্ষমাকারী

নেই। অতএব তুমি নিজ গুণে আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি রহম কর কেননা তুমি অতিশয়

اللهم إني أغوذ بك من المأثم والمغرم (رواه البخاري ومسلم)

«اللهم اغفرلي ما قدمت، وما أخّرت، وما أسررت، وما أعلنت، وما أسرفت، وما أنت أعلم به مني -

 أنت المقدم، وأنت المؤخر لا إله إلا أنت» (رواه مسلم)

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি মা ক্বাদ্দামতু ওয়ামা আখ্খারতা ওয়ামা আসরারতু ওয়ামা ‘আলানতু ওয়ামা

আন্তাল মু’আখ্খিরু লা-ইলাহা ইল্লা আন্তা। (মুসলিম)

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমার সকল গুনাহখাতা ক্ষমা করে দাও যা পূর্বে ও পরে, গোপনে ও প্রকাশ্যে

করেছি, যা সীমা লঙ্ঘনজনিত গুনাহ এবং যে সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত। তুমি যা চাও

অগ্রগামী কর ও যা চাও পশ্চাতে নিয়ে যাও আর তুমি ব্যতীত প্রকৃত মা‘বূদ বা উপাস্য নেই।

«اللهم إني أعوذ بك من البخل، وأعوذ بك من الجبن، وأعوذ بك أن أرد إلى ارذل العمر، وأعوذ بك من فتنة الدنيا وعذاب القب

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আ‘উযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়া আ‘উযুবিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আ‘উযুবিকা

আন উরাদ্দা ইলা আরযালিল উমরে, ওয়া ফিতনাতিদ দুনিয়া ওয়া আ‘উযু বিকা মিন আযবিল কাবরি।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে আশ্রয় চাই কৃপণতা, কাপুরুষতা ও আশ্রয় চাই চরম বার্ধক্যে

উপনীত হয়ে যাওয়ার এবং আপনার নিকট আশ্রয় চাই পৃথিবীর ফিতনা থেকে ও কবরের আযাব হতে।

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আয়িন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা। (আবু দাঊদ-নাসায়ী)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে তোমার যিক্‌র ও শুকরিয়া জ্ঞাপন এবং উত্তমরূপে ইবাদত করার তাওফীক

«اللهم أعني على ذكرك، وشكرك، وحسن عبادتك» (رواه أبو داؤد والنسائي)

«اللهم إني أسألك الجنة وأعوذ بك من النار» (رواه إبن ماجه وأبو داود)

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনান্নার। (ইবনে মাজাহ - আবু

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।

অষ্টমঃ সালামের পর বর্ণিত যিক্‌র

«اللهم أنت السلام ومنك السلام تباركت يا ذا الجلال والإكرام» (رواه مسلم)

উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ (তিনবার)

অর্থ: আল্লাহুম্মা আন্তাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু, তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।

অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (তিনবার)

হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময়, আর তুমিই শান্তির উৎস। হে মহামহিম ও সম্মানের অধিকারী মহিমান্বিত

«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيءٍ قدير»

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি

শাইয়্যিন কাদীর। (তিনবার) (বুখারী - মুসলিম)

অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্যিকার ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার

নেই, তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও রাজত্ব আর তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيئ قدير، اللهم لا مانع لما أعطيت، ولا معطي لما منعت

উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওলাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি

শাইয়্যিন ক্বদীর। আল্লাহুম্মা লা মানি‘য়া লিমা আ‘ত্বইতা ওয়ালা মু‘ত্বিয়া লিমা মানা‘তা ওয়ালা

ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। (বুখারী - মুসলিম)

অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্যিকার ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি এক তাঁর কোনো অংশীদার

নেই, তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও রাজত্ব আর তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

হে আল্লাহ্! তুমি যে দান কর তা বন্ধ করার কেউ নেই আর তুমি যা বন্ধ রাখ তা দানকারী কেউ নেই।

কোনো সম্মানিত ব্যক্তির সম্মান কাজে আসবে না, তোমার নিকটেই প্রকৃত সম্মান।

«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك، وله الحمد وهو على كل شيء قدير، لا حول ولا قوّة إلا بالله، لا إله إلا الله، ولا نع

بد إلا إيّاه، له النعمة وله الفضل ولهالثناء الحسن، لا إله إلا الله مخلصين له الدين ولو كره الكافرون» (رواه مسلم)

উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি

শাইয়্যিন কাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়ালা না‘বুদু ইল্লা

ইয়্যাহু, লাহুন নি‘মাতু ওয়ালাহুল ফাদলু ওয়ালাহুস সানাউল হাসানু, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসীনা লাহুদদ্বীনা

ওয়ালাউ কারিহাল কাফিরূন। (মুসলিম)

অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্যিকার ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি এক তাঁর কোনো অংশীদার

নেই, তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও রাজত্ব আর তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

، ولا ينفع ذا الجد منك الجد» (رواهالبخاري ومسلم)

আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য ব্যতীত স্বীয় অবস্থা থেকে পরিবর্তনের ক্ষমতা কারো নেই। আল্লাহ্

ব্যতীত সত্যিকার মা‘বূদ নেই, আমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করি, তাঁর পক্ষ থেকে যাবতীয় নেয়ামত ও

অনুগ্রহ তাই তাঁর জন্যই সকল উত্তম প্রশংসা। আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্রিকার মা‘বূদ নেই, তাঁর

দ্বীন আমরা একনিষ্ঠভাবে মান্য করি যদিও কাফেরগণ তা অপছন্দ করে।

অর্থ: আমি আল্লাহর জন্য যাবতীয় দোষ হতে পবিত্রতা ঘোষণা করছি।

‘‘আহামদু লিল্লাহ’’ ৩৩ বার

অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

‘‘আল্লাহু আকবার’’ ৩৩ বার

অর্থ: আল্লাহ্ সবার বড়। অতঃপর বলবেঃ

উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলক ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি

শাইয়্যিন কাদীর। (তিনবার) (বুখারী - মুসলিম)

অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্যিকার ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার

নেই, তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও রাজত্ব আর তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

অথবাঃ সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার ও আল্লাহু আকবার ৩৪ বার। (তিরমিযী, নাসায়ী

"لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير" (رواه البخاري و مسلم)

আয়াতুল কুরসী

  يَعۡلَمُ بِإِذۡنِهِۦۚ إِلَّا عِندَهُۥٓ يَشۡفَعُ ٱلَّذِي ذَا مَن ٱلۡأَرۡضِۗ فِي وَمَا ٱلسَّمَٰوَٰتِ فِي مَا لَّهُۥ نَوۡمٞۚ وَلَا سِنَةٞ تَأۡخُذُهُۥ لَا ٱلۡقَيُّومُۚ ٱلۡحَيُّ هُوَ إِلَّا إِلَٰهَ لَآ﴿ ٱللَّهُ

  وَهُوَ حِفۡظُهُمَاۚ يَ‍ُٔودُهُۥ وَلَا وَٱلۡأَرۡضَۖ ٱلسَّمَٰوَٰتِ كُرۡسِيُّهُ وَسِعَ شَآءَۚ بِمَا إِلَّا عِلۡمِهِۦٓ مِّنۡ بِشَيۡءٖ يُحِيطُونَ وَلَا خَلۡفَهُمۡۖ وَمَا أَيۡدِيهِمۡ بَيۡنَمَا

উচ্চারণ: (আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যূল কাইয়্যূমু লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহূ মা-

ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহূ ইল্লা বিইযনিহী। ইয়া‘লামু মা

বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহীতূনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহী ইল্লা বিমা শাআ। ওয়াসি‘আ

কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুয়াল ‘আলিয়্যূল ‘আযীম)।

অর্থ: “আল্লাহ্, তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে

তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়। আসমানসমূহে যা রয়েছে ও যমীনে যা রয়েছে সবই তাঁর। কে

সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে তা তিনি

জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছে করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে

না। তাঁর ‘কুরসী’ আসমানসমূহ ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে; আর এ দুটোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য

বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।”

ফরয নামাযের পর উক্ত আয়াতুর কুরসী পড়বে কেননা হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ ‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয

নামাযের শেষে আয়াতুল কুরসী পড়বে তার জন্য মৃত্যু ব্যতীত জান্নাতে যাওয়ার আর কোনো বাধা নেই।

‘‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’’, ‘‘কুল আঊযু বিরাবিবল ফালাক’’ ও ‘‘কুল আঊযু বিরাবিবন্ নাস’’ প্রত্যেক নামাযের

(আবু দাঊদ, নাসায়ী ও তিরমিযী)

70-(5) ۝  الرَّحِيْمِ      الرَّحْمٰنِ اللّٰهِ بِسْمِ﴿ اَحَدٌ     اللّٰهُ هُوَقُلْǺ الصَّمَدُ    اَللّٰهُ۝ۚĄ يُوْلَدْ    وَلَمْ ڏ يَلِدْ لَمْ۝ۚǼ  كُفُوًا لَّهٗ يَكُنْ وَلَمْ۝

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (ক্বুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ। আল্লাহুস্ সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম

ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ)।

রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। “বলুন, তিনি আল্লাহ্, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ্ হচ্ছেন ‘সামাদ’ (তিনি কারো

মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী)। তিনি কাউকেও জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয় নি। আর তাঁর

 ۝   الرَّحِيْمِ      الرَّحْمٰنِ اللّٰهِبِسْمِ﴿ الْفَلَقِ    بِرَبِّ اَعُوْذُقُلْǺ خَلَقَ   مَا شَرِّ مِنْ۝Ą وَقَبَ    اِذَا غَاسِقٍ شَرِّ وَمِنْ۝Ǽ  شَرِّ وَمِنْ۝

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (ক্বুল আ‘উযু বিরব্বিল ফালাক্ব। মিন শাররি মা খালাক্ব। ওয়া মিন শাররি গা-

সিক্বিন ইযা ওয়াক্বাব। ওয়া মিন শাররিন নাফফা-সা-তি ফিল ‘উক্বাদ। ওয়া মিন শাররি হা-সিদিন ইযা হাসাদ)।

রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। “বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি  ঊষার রবের। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার

অনিষ্ট হতে। ‘আর অনিষ্ট হতে রাতের অন্ধকারের, যখন তা গভীর হয়। আর অনিষ্ট হতে সমস্ত নারীদের, যারা

গিরায় ফুঁক দেয়। আর অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।”

النَّفّٰثٰتِ فِي الْعُقَدِ    Ć۝  وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ   Ĉ۝﴾،

 ۝  الرَّحِيْمِ   الرَّحْمٰنِ اللّٰهِبِسْمِ﴿ النَّاسِ   بِرَبِّ اَعُوْذُقُلْǺ النَّاسِ   مَلِكِ۝Ą النَّاسِ   اِلٰهِ۝Ǽ الْخَنَّاسِ   ڏ الْوَسْوَاسِ شَرِّ مِنْ۝Ć ۝

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (ক্বুল ‘আউযু বিরাব্বিন্না-স। মালিকিন্না-সি, ইলা-হিন্নাসি, মিন শাররিল

ওয়াসওয়া-সিল খান্না-স, আল্লাযি ইউওয়াসউইসু ফী সুদূরিন না-সি, মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স।)।

রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। “বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের, মানুষের অধিপতির, মানুষের

ইলাহের কাছে, আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে; যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিনের মধ্য

থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে।”

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আসয়ালুকা ইলমান নাফিয়ান ওয়া রিযকান ত্বইয়্যিবান ওয়া আমালান

الَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ   Ĉ۝ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ    Č۝ۧ﴾

«اللهم إنّي أسألك علما نافعا، ورزقا طيبا، وعملا متقبلا» (رواه إبن ماجه)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে উপকারী বিদ্যা, পবিত্র রিযিক এবং গ্রহণযোগ্য আমল কামনা

«رب قني عذابك يوم تبعث عبادك» (رواه مسلم)

উচ্চারণ: রব্বি ক্বিনী আযাবাকা ইয়াওমা তুব‘য়াসু ইবাদুকা। (মুসলিম)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে তুমি তোমার আযাব হতে বাঁচাও যেদিন তোমার বান্দারা উত্থিত হবে।

ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর হলে বলবেঃ

উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলক ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলাকুল্লি

শাইয়্যিন কাদীর। (১০ বার)

অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্যিকার ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি এক তাঁর কোনো অংশীদার

নেই, তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও রাজত্ব আর তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। (তিরমিযী, আহমাদ ও

«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كلّ شيء قدير» (رواه البخاري و مسلم)

সমাপ্ত

যে সব বিষয় নামাযকে বাতিল করে দেয়:

1. ইচ্ছাকৃত কথা বলা

2. সম্পূর্ণ শরীর ক্বিবলার দিক থেকে সরে যাওয়া।

3. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কিছু বের হওয়া।

4. বিনা প্রয়োজনে অধিক নড়াচড়া করা।

5. অট্টহাসি দেয়া।

6. ইচ্ছাকৃত রুকু সিজদা বেশী করা।

7. ইচ্ছা করে ইমামের আগে যাওয়া।


সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ - কমিউনিটি কেন্দ্রিক দাওয়াহ ও শিক্ষা প্রচারমুলক সহযোগী

107
Allah: My belief / আল্লাহ কি নিরাকার???
« on: June 13, 2015, 12:31:16 PM »
আল্লাহ কি নিরাকার???


“যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন

করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান”। (জুমার ১৮)

“আল্লাহ যার বক্ষ ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত

আলোর মাঝে রয়েছে। (সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়) যাদের অন্তর আল্লাহ স্মরণের ব্যাপারে কঠোর, তাদের

জন্যে দূর্ভোগ। তারা সুস্পষ্ঠ গোমরাহীতে রয়েছে। আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যা

সামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। এতে তাদের লোম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার উপর, যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয়

করে, এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথ নির্দেশ, এর মাধ্যমে

আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই”।

• “যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়,

তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব”। (সাজদা ৩২)

সৃষ্টির সেরা মানবজাতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শর্ত হল ঈমান গ্রহন করা । আর ঈমান গ্রহনের পূর্বশর্ত

হল আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীনের সঠিক পরিচয় জানা । তাই সৃষ্টির সেরা হিসেবে আমাদের সর্বপ্রথম স্রষ্টা সম্পর্কে

জানতে হবে । এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলছেনঃ

"সুতরাং জান সেই আল্লাহ্‌কে যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই ।" [সূরা-মুহাম্মদ,আয়াত-১৯]

অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ্‌ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখে না।

আল্লাহ্‌র সঠিক পরিচয় জানবেন কেন?

• (ক) আল্লাহ্‌ সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদা বর্জনের জন্যে

• (খ) আল্লাহর প্রতি সঠিক আক্বীদা রাখার জন্যে।

• (গ) আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে শরীক না করার জন্য।

• (ঘ) ভয়াবহ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য।

আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীনের প্রতি ভ্রান্ত আক্বীদাহ বাদ না দিলে কঠিন শাস্তি পেতে হবে । আল্লাহ্‌ বলেনঃ

"এবং মুনাফিক পুরুষ মুনাফিক নারী ও মুশরিক পুরুষ মুশরিক নারী যারা আল্লাহ্‌ সম্বধে মন্দ ধারণা রাখে তাদেরকে

আল্লাহ্‌ শাস্তি দিবেন।" [সুরা-ফাতহ, আয়াত-৬]

খুবই আশ্চর্য বিষয় অধিকাংশ মুসলিম এর আক্বীদাহ সঠিক না । তারা সঠিকভাবে আল্লাহ্‌কে চেনেন না ।

আল্লাহ সুবাহানাহুয়াতাআলা কোরআনে তাঁর সিফাতে যাত এবং গুনাবলী বর্ণনা করেছেন তাঁর নিজস্ব সত্তার

বর্ণনায় হাত,পা, মুখ, দৃষ্টিশক্তি , শ্রবণ শক্তি, তাঁর সন্তুষ্টি ও ক্রোধ-ইত্যাদি উল্লেখ করছেন ।

রসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র স্বত্তা গুনাবলীর বর্ণনা করেছেন । মুসলিমগণ যে

আল্লাহ্‌র ইবাদত করে তাঁর কোন মূর্তি নেই । তাই যেসব মুসলিম সঠিক আক্বীদার খবর রাখে না তারা হিন্দুদের

সাকার বা মূর্তিমান দেবতার বিপরীতে নিরাকারআল্লাহ্‌র ধারনা গ্রহন করেছে।

এজন্যই পাক-ভারত উপমহাদেশে প্রায়ই শুনা যায়,

আল্লাহ্‌ নিরাকার এবং সর্বত্র বিরাজমান-এ বিশ্বাস হিন্দু ধর্মের মূল বিশ্বাসঃ ব্রহ্ম একক, অদ্বিতীয় , নির্গুণ ।

তিনি নিরাকার ও সর্বত্র বা সর্বভূতে বিরাজমান ! [স্রীমদ্ভগবত গীতা যথাযথ; কৃষ্ণ কৃপাশ্রীমূর্তি শীল

অভয়চরনাবিন্দু ভক্তি বেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ কতৃক সম্পাদিত,অনুবাদঃ শ্রীমদ ভক্তিচারু । ভক্তিবেদান্ত বুক


• অথচ কোরআন ও সহীহ হাদীস থেকে আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালার আকার রয়েছে তা প্রমানিত।

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত ও রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হাদিসে আল্লাহ্‌

সুবাহানাহুয়াতালার চেহারা,হাত,পা,চক্ষু,যাত বা সত্তা, সুরাত বা আকারের উল্লেখ হয়েছে যার অর্থ স্পষ্ট । এর

মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নির্দিষ্ট আকার আকৃতি আছে বলে পাওয়া যায়। যারা বলে আল্লাহ্‌ নিরাকার তারা মূলত

কোরআনের এসব আয়াতকে অস্বীকার করার মত স্পর্ধা প্রদর্শন করে থাকে। কারন যিনি নিরাকার তাঁর এসব

কিছু থাকার কথা নয়। আল্লাহতাআলা বলেনঃ

"তারা আল্লাহ্‌র যথার্থ মর্যাদা নিরুপন করতে পারেনি। কিয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোতে

থাকবে।"[সূরা-যুমার,আয়াত-৬৭]

আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামিন বলেনঃ

(কিয়ামতের দিন) ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে । (হে রাসুল) আপনার মহিমাময় ও মহানুভব রবের চেহারা

অর্থাৎ সত্ত্বাই একমাত্র বাকি থাকবে। [আর-রাহমান-২৬-২৭]

"হে ইবলিস , তোমাকে কোন জিনিসটি তাকে সেজদা করা থেকে বিরত রাখল যাকে আমি স্বয়ং নিজের হাত দিয়ে

বানিয়েছি,তুমি কি এমনি ওদ্ধত্ত প্রকাশ করলে,না তুমি উচ্চমর্যাদা সম্পূর্ণ কেউ" [সূরা-সদ,আয়াত-৭৫]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ

"বরং তাঁর দু হাতই প্রসারিত,যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন।" [সূরা-সদ-৬৪]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা আরও বলেনঃ

"বল -অনুগ্রহ আল্লাহ্‌রই হাতে" [সূরা-আলে ইমরান-৭৩]

অথচ আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা কোরআনে

"সেদিন কোন কোন মুখ খুব উজ্জল হবে । তারাই হবে তাদের প্রতিপালকের দর্শনকারী" [সুরা-আল-কিয়ামাহ,

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা বলেনঃ

"দৃষ্টি শক্তি তাকে প্রত্যক্ষ করতে পারে না বরং তিনিই দৃষ্টি শক্তিকে প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনিই দৃষ্টি

শক্তিকে প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনি সুক্ষদরশি,সম্যকপরিজ্ঞাত ।" [সূরা-আনআম,আয়াত-১০৩]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা বলেনঃ

"আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তাঁর মুখমণ্ডল ব্যতীত সব কিছুই ধ্বংসশীল ।" [সূরা-আল কাসাস, আয়াত-৮৮]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা নবী মূসা(আঃ)কে লক্ষ্য করে বলছেনঃ

"আমি আমার নিকট থেকে তোমার উপর ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত

হও।" [সূরা-ত্বহা, আয়াত-৩৯]

এমনিভাবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে স্বান্তনা দিতে গিয়ে বলেনঃ

"আপনি আপনার রবের নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্যধারন করুন আপনি আমার চোখের সামনেই রয়েছেন।" [সূরা-আত-

"নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ শ্রবণ করেন ও দেখেন ।" [সূরা-মুজাদালাহ, আয়াত-১]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ

আল্লাহ্‌র সাদৃশ্য কোন বস্তুই নেই এবং তিনি শুনেন ও দেখেন ।" [সূরা-আশ-শুরা, আয়াত-১১]

"কিয়ামতের দিনে আল্লাহর হাঁটুর নিম্নাংশ উন্মোচিত করা হবে এবং সাজদা করার জন্য সকলকে আহবান করা হবে,

কিন্তু তারা তা করতে সমর্থ হবে না ।" [সুরা-কালাম,আয়াত-৪২]

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌র রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ

উমর(রাঃ)হতে বর্ণিত, রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ

"কিয়ামতের দিন আল্লাহপাক সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে ভাঁজ করবেন অতঃপর সেগুলোকে ডান হাতে নিয়ে

বলবেন,আমি হচ্ছি শাহানশাহ(মহারাজা)অত্যাচারী আর যালিমরা কোথায় ?অহংকারীরা কোথায় ? [মুসলিম]

রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন,

"পাহাড়-পর্বত এবং বৃক্ষরাজি এক আঙ্গুলে থাকবে,তারপর এগুলোকে ঝাঁকুনি দিয়ে তিনি বললেন,আমিই রাজাধিরাজ

অপর এক বর্ণনায় রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন-

"আল্লাহ্‌ সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে এক আঙ্গুলে রাখবেন,পানি এবং ভু-তলে যা কিছু তা এক আঙ্গুলে রাখবেন।"[বুখারী

আবু সাইয়ীদ আল-খুদরী(রাঃ)বলেন,যে আমি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ

আমাদের প্রতিপালক (আল্লাহ্‌) কিয়ামতের দিনে তাঁর হাঁটুর নিম্নাংশ প্রকাশ করে দেবেন, প্রত্যেক মুমিন, মুমিনা

তাতে সাজদা করবেন এবং যে ব্যক্তি দুনিয়াতে লোক-দেখান ও সম্মানের জন্য তা করত সে সাজদা করতে গেলে তাঁর

পিঠ সমান হয়ে ফিরে আসবে(বা সিজদা করতে সমর্থ হবেনা)। [বুখারী,মুসলিম,তিরমিযী,আহমদ]

এ সকল কোরআনের আয়াত ও হাদীস আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন যে নিরাকার নন

তার অকাট্য প্রমান করে বর্ণনা করে । আল্লাহর সিফাতকে তাঁর কোন মাখলুকের সাথে সাদৃশ্য না করে তাঁর উপর

বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে । সর্বপরিনিরাকার কথাটি কোরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয় । বরং হিন্দু

সংস্কৃতি থেকে আমদানীকৃত বটে । কোন কল্পনার আশ্রয় না নিয়ে কিংবা প্রকৃত স্বরূপ জানতে না চেয়ে এর উপর

বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে ।

• এ প্রসঙ্গে ইবনে কাসীর(রহঃ) বলেছেনঃ

"আল্লাহ্‌ তা'আলা আরশের উপর সমাসীন,

কোন অবস্থা ও সাদৃশ্য স্থাপন ছাড়াই তার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে । কোন জল্পনা কল্পনা করা চলবে না,

যার দ্বারা সাদৃশ্যের চিন্তা মস্তিস্কে এসে যায় ; কারন এটা আল্লাহ্‌র গুনাবলী হতে বহুদুরে। মোটকথা, যা কিছু

আল্লাহতাআলা বলেছেন ওটাকে কোন খেয়াল ও সন্দেহ ছাড়াই মেনে নিতে হবে কোন চুল চেরা করা চলবে না । কেননা

মহান আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্য যুক্ত নন । [তাফসীর ইবনে কাসীর]

এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ

“ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্‌র যে সমস্ত সিফাত (গুন)বর্ণিত হয়েছে যেমন-আল্লাহ্‌র হাত,পা,চেহারা,নফস ইত্যাদি

আমরা তা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি। স্বীকার করি এগুলো হচ্ছে তাঁর সিফাত বা গুণাবলী।

আমরা যেমন কখনও আল্লাহ্‌র সিফাত সম্পর্কে এ প্রশ্ন করিনা বা করবোনা যে,এ সিফাতগুলো

(হাত,পা,চেহারা,চোখ ইত্যাদি) কেমন,কিরুপ বা কিভাবে,কেমন অবস্থায় আছে,তেমনি আল্লাহ্‌র সিফাতের কোন

নিজস্ব ব্যাখ্যা বা বর্ণনা দিতে যাইনা। কেননা তিনি তা বর্ণনা করেন নাই।

যেমন-আমরা একথা কখনো বলিনা যে,

আল্লাহ্‌র হাত হচ্ছে তাঁর কুদরতি হাত,শক্তিপ্রদ পা বা তাঁর নিয়ামত।

এ ধরনের কোন ব্যাখ্যা দেয়ার অর্থ হল আল্লাহ্‌র প্রকৃত সিফাতকে অকার্যকর করা বা বাতিল করে দেয়া বা

অর্থহীন করা । আল্লাহ্‌র হাতকে আমরা হাতই জানবো এর কোন বিশেষণ ব্যবহার করবো না। কুদরতি হাত রূপে

বর্ণনা করবোনা । কোন রকম প্রশ্ন করা ছাড়াই যেরূপ কোরআনে বর্ণিত হয়েছে হুবুহু সে রকমই দ্বিধাহীনে

বিশ্বাস করি”। [আল ফিকহুল আকবার]

• আবু মুতি আল হাকাম ইবনে আব্দুল্লাহ আল বালাখি বলেনঃ

আমি ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ)কে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কেউ যদি বলে যে, আমি জানিনা আল্লাহ্‌ কোথায় -

আসমানে না পৃথিবীতে, তাহলে তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন-সে কাফের,কেননা

"পরম করুণাময় (রাহমান)আরশের উপর সমাসীন। (সুরা-ত্ব হা-৫)


• আবু মুতি বলেছেন, অতঃপর আমি তাঁকে(ইমাম আবু হানিফাকে)জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কেউ যদি বলে যে,আল্লাহ্‌

উপরে অধিষ্ঠিত,কিন্তু আমি জানিনা আরশ কোথায় অবস্থিত আকাশে না পৃথিবীতে তাহলে তার সম্পর্কে আপনার

অভিমত কি? প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন- যদি সে ব্যক্তি "আল্লাহ্‌ আকাশের উপরে "এ কথা অস্বীকার করে তা হলে

সে কাফের। (শারহুল আকিদাহ আত তাহাওইয়াহ লি ইবনে আবিল ইজ আল হানাফি পৃষ্ঠা নং-২২৮)


• ইমাম মালিক(রাহিমাহুল্লাহ)বলেনঃ

“ "আল্লাহ্‌র হাত"বলতে আল্লাহ্‌র হাতই বুঝতে হবে,এর কোন রুপক(মাজাযী)অর্থ করা

যাবেনা,মাজাযী(রুপক)বর্ণনা দেয়া যাবে না। আল্লাহ কেমন,কিসের মত এরকম প্রশ্ন করা বিদআত এমনকি তাঁর হাত

বিশেষণে ভূষিত করে,কুদরতি হাত বলাও যাবেনা কেননা কোরআনে ও সহীহ হাদীসে এভাবে বর্ণনা নাই ”। (আল

আসমা ওয়াস সিফাত পৃষ্ঠা নং-৫২৬)

আল্লাহ্‌র আরশে অধিষ্ঠিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃ

"আল্লাহ্‌ আরশে অধিষ্ঠিত একথা জানি, কিভাবে অধিষ্ঠিত তা জানিনা।

এর উপর দৃঢ় ঈমান পোষণ করা ওয়াজিব

এবং এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা বিদআত।"

ইমাম মালিক(রাহিমাহুল্লাহ)আরও বলেনঃ

“আল্লাহ্‌ তাঁর আরশে অধিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু বর্ণনা দিয়েছেন তার বাইরে কোন প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ

।আল্লাহ্‌ আরশে কিভাবে,কেমন করে সমাসীন বা উপবিষ্ট আছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ্‌তাআলা আমাদেরকে অবহিত

করেননি। তাই এ বিষয়টির কাইফিয়াত আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত।"

-আল্লামা ইবনে হাজর(রাহিমাহুল্লাহ)ফাতহ গ্রন্থে(১৩তম খণ্ড পৃষ্ঠা নং ৪০৬) বলেছেন,উপরক্ত বর্ণনার সনদ

ইমাম শাফীঈ(রাহিমাহুল্লাহ)জোরালো অভিমত ব্যক্ত করেন এ প্রসঙ্গেঃ

"আল্লাহ্‌তালার আরশে অধিষ্ঠিত হওয়া এবং আল্লাহ্‌র হাত,পা ইত্যাদি যা তাঁর সিফাত বলে বিবেচ্য আর তা

কোরআন ও সহীহ সূত্রে সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত হওয়ার পরও যদি কোন ব্যক্তি বিরোধিতা করে,অস্বীকার

করে ,নিষ্ক্রিয় করে তবে সে অবশ্যই কাফের বলে গন্য হবে।

"আমরা আল্লাহ্‌র গুণাবলী স্বীকার করি ও বিশ্বাস করি তবে সৃষ্টির কোন কিছুর সাথে আল্লাহ্‌র গুনাবলীর কোন

আকার সাব্যস্ত করিনা,সাদৃশ্য(তুলনা)করিনা। কেননা আল্লাহ্‌ নিজেই তাঁর সাদৃশ্যের বিষয়টি বাতিল করে দিয়েছেন এ

"(সৃষ্টি জগতের) কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়।" (সূরা-শুরা,আয়াত-১১)

-সিয়ারে আলামিন নুবালা-১০ম খণ্ড,পৃষ্ঠা নং,-৮০;আর দেখুন আইনুল মাবুদ-১৩তম খণ্ড পৃষ্ঠা নং-৪১;তাবাকতে হানাবিল ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা নং-২৮৩

• ইমাম আহমদ বিন হাম্বল(রহঃ)বলেছেনঃ

“আল্লাহ্‌র আসমা ও সিফাতগুলো সম্পর্কে কোরআন ও সহীহ হাদীসগুলোতে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে এগুলোকে

ঠিক সেভাবে সে পর্যায়েই রাখা উচিৎ । আমরা এগুলো স্বীকার করি ও বিশ্বাস করি এবং আল্লাহ্‌র সিফাতের কোন

সাদৃশ্য করি না । আর এটাই হচ্ছে বিচক্ষন ও বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের অনুসৃত নীতি ”। [-ইবনুল জাওযী প্রনীত

মুনাক্বীবে ইমাম আহমদ , পৃষ্ঠা নং-১৫৫-১৫৬]

ইমাম আহমদ (রহঃ)আরও বলেনঃ

“কোরআন ও হাদীসে আল্লাহ্‌র সিফাতগুলোর বর্ণনা যেমনভাবে এসেছে তার বাহ্যিক ও আসল অর্থ স্বীকার

করতে হবে,মেনে নিতে হবে, এর প্রকৃত তথা আসল অর্থকে বাদ দেয়া যাবে না। নিস্ক্রিয় করা যাবে না, খারিজ করা

আল্লাহ্‌র সিফাতগুলো যথা আল্লাহ্‌র আরশের উপর অধিষ্ঠিত হওয়া আল্লাহ্‌র হাত, পা দেখা শোনা ইত্যাদি

সম্পর্কে যেরুপ বর্ণিত আছে তার বাহ্যিক ও আসল অর্থ ছাড়া রূপক , অতিরঞ্জিত অথবা অন্তর্নিহিত কোন

পৃথক অর্থ বা ব্যাখ্যা বা বর্ণনা রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক দেওয়া হয়েছে এমন প্রমান নেই।

আমরা যদি এ সত্য উপলব্ধি করি যে, সালফে সালেহীন আল্লাহ্‌র গুনাবলী সঠিক অর্থ বুঝেছেন । তাহলে আমাদের

জন্য অত্যাবশ্যকীয় হলো তারা এগুলোর যে অর্থ বুঝেছেন,আমাদেরকে ঠিক সেই অর্থই বুঝতে হবে । [-

মাজমুআতুররাসায়িলিল মুনীরিয়্যাহ পৃষ্ঠা নং(১৭৬-১৮৩]

আল্লাহ্‌র অবয়ব বিশিষ্ট অস্তিত্বকে, সত্ত্বাকে গুনাবলীকে অস্বীকার করে (অর্থাৎ নিরাকার করে) সন্যাসী,সুফী,

পীর সাহেবেরা অলীক সাধনা বলে তাদের ক্বলবে বসিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার জন্যই আল্লাহ্‌কে

নিরাকার বানিয়ে ধর্মীয় সমাজে প্রচার করেছেন। এটি ‘তাওহীদ আল আসমা ওয়াস সিফাত’ এর সুস্পষ্ট খেলাফ।

অবয়ব বিশিষ্ট তথা অস্তিত্বময় আল্লাহ্‌কে নিরাকার না করলে তো তাঁকে (আল্লাহ্‌কে) তাদের ক্বলবে বসানো

যাবে না । নিরাকার আল্লাহ্‌কে অলীক সাধনায়,কল্পনায় ক্বলবে বসিয়ে এই মুসলিম রূপধারী পুরোহিতরা নিজেদেরকে

দেবতার মর্যাদায় ভূষিত হয়ে সমাজে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে চলেছেন । আসলে এ সবই ভণ্ডামির বেসাতি,

আল্লাহ আমাদের তাওহীদ বুঝার ও মানার তাওফিক দান করুন, সকল প্রকার শিরক থেকে রক্ষা করুন, আমিন।

সৌজন্যেঃ জুমার খুতবা

108
আল-কোরআন ও সুন্নাহ হতে সংকলিত শরীয়তসম্মত উপায়ে ঝাড়-ফুঁক



শরীয়ত সম্মত উপায়ে ঝাড়-ফুঁক করার শর্তাবলী

১- ঝাড়-ফুঁক হতে হবে আল্লাহর কোরআন অথবা, তাঁর নামসমূহ  অথবা তাঁর গুনাবলীসমূহ দ্বারা।

২- ঝাড়-ফুঁক হতে হবে আরবী বা অন্য যে কোনো ভাষায়, যার অর্থ জানা যায়।

৩- এ কথায় দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে, (রোগ চিকিৎসায়) ঝাড়-ফুঁকের কোনোই ক্ষমতা নাই, বরং রোগ শিফা’র

সকল ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই।

৪- ঝাড়-ফুঁক যেন হারাম অবস্থায় না হয় অর্থাৎ নাপাক অবস্থায় অথবা, কবর বা পায়খানায় বসে ঝাড়-ফুঁক করা


আল-কোরআনে বর্ণিত ঝাড়-ফুঁক সংক্রান্ত আয়াতসমূহ

১-  সূরা আল-ফাতিহা।

﴿  ٱلرَّحِيمِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱللَّهِ بِسۡمِ١  ٱلۡعَٰلَمِينَ رَبِّ لِلَّهِ ٱلۡحَمۡدُ٢  ٱلرَّحِيمِ ٱلرَّحۡمَٰنِ٣  ٱلدِّينِ يَوۡمِ مَٰلِكِ٤  نَسۡتَعِينُ وَإِيَّاكَ نَعۡبُدُ إِيَّاكَ٥  ٱهۡدِنَا

(১) “আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু। (২) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য,

যিনি সকল সৃষ্টিজগতের একাম্ত পরিচালনাকারী ও মালিক (৩) যিনি পরম দয়ালু, অতিশয় করুণাময়। (৪) যিনি

বিচারদিনের মালিক। (৫) আমরা একমাত্র আপনারই ‘ইবাদত করি আর আপনারই নিকট সাহায্য চাই। (৬)

আমাদেরকে সরলপথ প্রদান করুন। তাদের পথে, যাদেরকে আপনি নে‘মত দান করেছেন। (৭) তাদের পথে নয়, যারা

ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧ ﴾ [الفاتحة: ١،  ٧]

আপনার পক্ষ হতে গযবপ্রাপ্ত (অর্থাৎ, ইহুদীগণ)। আর তাদের পথেও নয়, যারা পথভ্রষ্ট (গোমরাহ) হয়েছে”

(অর্থাৎ, খৃষ্টানগণ)। আমীন।   


২- সূরা আল-বাক্বারার ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ আয়াত।

﴿  الٓمٓ١  لِّلۡمُتَّقِينَ هُدٗى فِيهِۛ رَيۡبَۛ لَا ٱلۡكِتَٰبُ ذَٰلِكَ٢  يُنفِقُونَ رَزَقۡنَٰهُمۡ وَمِمَّا ٱلصَّلَوٰةَ وَيُقِيمُونَ بِٱلۡغَيۡبِ يُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ٣  يُؤۡمِنُونَ وَٱلَّذِينَ

بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ وَبِٱلۡأٓخِرَةِ هُمۡ يُوقِنُونَ ٤ أُوْلَٰٓئِكَ عَلَىٰ هُدٗى مِّن رَّبِّهِمۡۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٥ ﴾ [البقرة: ١،  ٥]

অর্থাৎ, (১) “আলিফ লা-ম মী-ম (২) এটা সেই কিতাব যার মধ্যে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই, যারা

আল্লাহভীরু তাদের জন্য পথপ্রদর্শনকারী। (৩) যারা অদেখা বিষয়ের উপর ঈমান আনে এবং সালাত কায়েম করে

আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে খরচ করে। (৪) আর তারা ঈমান এনেছে, যে সব কিছু আপনার প্রতি

নাযিল হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল হয়েছে, আর আখেরাতের প্রতি তারা দৃঢ় বিশ্বাস করে। (৫) তারাই তাদের

মালিক ও সার্বিক তত্বাবধানকারী আল্লাহর পক্ষ হতে প্রাপ্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে আর এরাই

সফলকাম।” (সূরা আল-বাক্বারার ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ আয়াত)।   
             

৩- সূরা আল-বাক্বারার ১৬৪ নং আয়াত।

﴿  مِن ٱلسَّمَآءِ مِنَ ٱللَّهُ أَنزَلَ وَمَآ ٱلنَّاسَ يَنفَعُ بِمَا ٱلۡبَحۡرِ فِي تَجۡرِي ٱلَّتِي وَٱلۡفُلۡكِ وَٱلنَّهَارِ ٱلَّيۡلِ وَٱخۡتِلَٰفِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ خَلۡقِ فِي إِنَّ

  لِّقَوۡمٖ لَأٓيَٰتٖ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلسَّمَآءِ بَيۡنَ ٱلۡمُسَخَّرِ وَٱلسَّحَابِ ٱلرِّيَٰحِ وَتَصۡرِيفِ دَآبَّةٖ كُلِّ مِن فِيهَا وَبَثَّ مَوۡتِهَا بَعۡدَ ٱلۡأَرۡضَ بِهِ فَأَحۡيَامَّآءٖ

“নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের পরিবর্তনে, সমুদ্রে জাহাজসমুহের চলাচলে মানুষের জন্য

কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ তা‘আলা আকাশ থেকে যে পানি বর্ষণ করেছেন, তা দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব করে

তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে ও মেঘমালায় যা তাঁরই হুকুমের

অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে – নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান

সম্প্রদায়ের জন্য।” (আল-বাকারা, আয়াত নং-১৬৪)।


৪- আয়াতুল-কুরসী (সূরা আল-বাক্বারার ২৫৫ নং আয়াত)।

﴿  يَعۡلَمُ بِإِذۡنِهِۦۚ إِلَّا عِندَهُۥٓ يَشۡفَعُ ٱلَّذِي ذَا مَن ٱلۡأَرۡضِۗ فِي وَمَا ٱلسَّمَٰوَٰتِ فِي مَا لَّهُۥ نَوۡمٞۚ وَلَا سِنَةٞ تَأۡخُذُهُۥ لَا ٱلۡقَيُّومُۚ ٱلۡحَيُّ هُوَ إِلَّا إِلَٰهَ لَآ ٱللَّهُ

  وَهُوَ حِفۡظُهُمَاۚ يَ‍ُٔودُهُۥ وَلَا وَٱلۡأَرۡضَۖ ٱلسَّمَٰوَٰتِ كُرۡسِيُّهُ وَسِعَ شَآءَۚ بِمَا إِلَّا عِلۡمِهِۦٓ مِّنۡ بِشَيۡءٖ يُحِيطُونَ وَلَا خَلۡفَهُمۡۖ وَمَا أَيۡدِيهِمۡ بَيۡنَمَا

“আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো সত্য মা‘বুদ নেই, তিনি চিরজীবিত এবং চিরন্তন। তাকে তন্দ্রা (ঝিমানো)

ও ঘূম কখনো স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সবই তারই, এমন কে আছে যে, তাঁর অনুমতি

ব্যতীত তাঁর নিকট সূপারিশ করতে পারে? (মানুষের) চোখের সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি

জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ব্যতীত তাঁর অনন্ত জ্ঞানের কোনো কিছুকেই কেউ আয়ত্ব করতে

পারেনা। তার ‘কুরসী’ সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে

কঠিন কাজ নয়। তিনি সমুন্নত ও মহিয়ান।” (সূরা আল-বাক্বারার ২৫৫ নং আয়াত)।   
 

৫- সূরা আল-বাক্বারার ২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াত।

﴿  وَقَالُواْ رُّسُلِهِۦۚ مِّن أَحَدٖ بَيۡنَ نُفَرِّقُ لَا وَرُسُلِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ بِٱللَّهِ ءَامَنَ كُلٌّ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ رَّبِّهِۦ مِن إِلَيۡهِ أُنزِلَ بِمَآ ٱلرَّسُولُ ءَامَنَ

  ٱلۡمَصِيرُ وَإِلَيۡكَ رَبَّنَا غُفۡرَانَكَ وَأَطَعۡنَاۖسَمِعۡنَا٢٨٥  تُؤَاخِذۡنَآ لَا رَبَّنَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ مَا وَعَلَيۡهَا كَسَبَتۡ مَا لَهَا وُسۡعَهَاۚ إِلَّا نَفۡسًا ٱللَّهُ يُكَلِّفُ لَا

  عَنَّا وَٱعۡفُ بِهِۦۖ لَنَا طَاقَةَ لَا مَا تُحَمِّلۡنَا وَلَا رَبَّنَا قَبۡلِنَاۚ مِن ٱلَّذِينَ عَلَى حَمَلۡتَهُۥ كَمَا إِصۡرٗا عَلَيۡنَآ تَحۡمِلۡ وَلَا رَبَّنَا أَخۡطَأۡنَاۚ أَوۡ نَّسِينَآإِن

“রাসুল ঈমান রাখেন ঐ সমস্ত বিষয়ে, যা তার মালিক ও নিয়ন্ত্রক (আল্লাহর) পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়েছে এবং

মুমিনরাও। সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেস্তাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি এবং তার

নবীগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর নবীগণের মধ্যে (ঈমানের ব্যাপারে) কোনো প্রকার পার্থক্য

করি না। তারা বলে: আমরা শ্রবণ করলাম ও আনুগত্য স্বীকার করে নিলাম। হে আমাদের মালিক ও নিয়ন্ত্রক,

আমরা আপনারই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আপনার দিকেই আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।

কোনো ব্যক্তিকেই আল্লাহ তার সামর্থের বাইরে কোনো কাজের ভার দেন না, সে তাই পাবে যা সে উপার্জন

করে, আর যা সে অর্জন করে তা তারই উপর বর্তায়।

হে আমাদের মালিক ও নিয়ন্ত্রক! যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তাহলে এ জন্য আমাদেরকে ধর-পাকড়

করবেন না। হে আমাদের মালিক ও নিয়ন্ত্রক! আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যেরূপ কঠিন বোঝা অর্পণ করেছেন,

আমাদের উপর তদ্রূপ কোনো বোঝা অর্পণ করবেন না।

হে আমাদের মালিক ও নিয়ন্ত্রক! আমাদের শক্তি-সামর্থের বাইরে কোনো বোঝা বহনে আমাদেরকে বাধ্য

করবেন না। আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক, অতএব

কাফিরগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।” (সূরা আল-বাক্বারার ২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াত)।


৬- সূরা আল-‘ইমরানের ১৯০ ও ১৯১ নং আয়াত।

﴿  ٱلۡأَلۡبَٰبِ لِّأُوْلِي لَأٓيَٰتٖ وَٱلنَّهَارِ ٱلَّيۡلِ وَٱخۡتِلَٰفِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ خَلۡقِ فِي إِنَّ١٩٠  جُنُوبِهِمۡ وَعَلَىٰ وَقُعُودٗا قِيَٰمٗا ٱللَّهَ يَذۡكُرُونَ ٱلَّذِينَ

وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هَٰذَا بَٰطِلٗا سُبۡحَٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ١٩١ ﴾ [ال عمران: ١٩٠،  ١٩١]

“নিশ্চয়ই আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে ও দিবা-রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে

বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে আর বলে,

হে আমাদের রাব্ব্! আপনি এসব বৃথা (অযথা) সৃষ্টি করেননি। অতি পবিত্র আপনি, অতএব আমাদেরকে জাহান্নামের

শাস্তি থেকে বাঁচান।” (আল-‘ইমরানের ১৯০ ও ১৯১ নং আয়াত)।         


৭- সূরা আল-আ‘রাফের ৫৪ নং আয়াত।

﴿  وَٱلۡقَمَرَ وَٱلشَّمۡسَ حَثِيثٗا يَطۡلُبُهُۥ ٱلنَّهَارَ ٱلَّيۡلَ يُغۡشِي ٱلۡعَرۡشِۖ عَلَى ٱسۡتَوَىٰ ثُمَّ أَيَّامٖ سِتَّةِ فِي وَٱلۡأَرۡضَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ خَلَقَ ٱلَّذِي ٱللَّهُ رَبَّكُمُ إِنَّ

“নিশ্চয়ই তোমাদের রব হচ্ছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি

আরশের উপর উঠলেন, তিনি দিনকে রাত দ্বারা ঢেকে দেন এমনভাবে যে, ওরা একে অন্যের পিছে পিছে দ্রুতগতিতে খুজে

বেড়ায়। আর চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্ররাজিসহ সবই তার হুকুমের অনুগত। জেনে রাখো, সৃষ্টি করা ও আদেশ করা

একমাত্র তাঁরই কাজ। তিনিই বরকতময় আল্লাহ, যিনি সারা জাহানের মালিক, নিয়ন্ত্রক ও নির্বাহক।” (আল-

আ‘রাফের ৫৪ নং আয়াত) 


৮- সূরা আল-আ‘রাফের ১১৭, ১১৮, ১১৯ নং আয়াত।

﴿  يَأۡفِكُونَ مَا تَلۡقَفُ هِيَ فَإِذَا عَصَاكَۖ أَلۡقِ أَنۡ مُوسَىٰٓ إِلَىٰ ۞وَأَوۡحَيۡنَآ١١٧  يَعۡمَلُونَ كَانُواْ مَا وَبَطَلَ ٱلۡحَقُّ فَوَقَعَ١١٨  هُنَالِكَ فَغُلِبُواْ

“অতঃপর আমরা অহীযোগে বললাম, এবার তোমার লাঠিখানা নিক্ষেপ করো, এটা সঙ্গে সঙ্গে জাদুকররা জাদুবলে

যা বানিয়েছিল সেগুলোকে গিলতে লাগল।সুতরাং এভাবে প্রকাশ হয়ে গেল সত্য বিষয় আর তাদের বানোয়াট কর্ম

وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا فَٱنصُرۡنَا عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٢٨٦ ﴾ [البقرة: ٢٨٥،  ٢٨٦]

وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتِۢ بِأَمۡرِهِۦٓۗ أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤ ﴾ [الاعراف: ٥٤]

وَٱنقَلَبُواْ صَٰغِرِينَ ١١٩ ﴾ [الاعراف: ١١٧،  ١١٩]

মিথ্যায় প্রতিপন্ন হলো। ফলে, তারা সেখানেই পরাজিত হয়ে গেল এবং অতীব অপদস্থ হল।” (সূরা আল-আ‘রাফের

১১৭, ১১৮, ১১৯ নং আয়াত)।     
   

৯- সূরা ইউনুছের ৭৯, ৮০, ৮১ নং আয়াত।

﴿  عَلِيمٖ سَٰحِرٍ بِكُلِّ ٱئۡتُونِي فِرۡعَوۡنُ وَقَالَ٧٩  مُّلۡقُونَ أَنتُم مَآ أَلۡقُواْ مُّوسَىٰٓ لَهُم قَالَ ٱلسَّحَرَةُ جَآءَ فَلَمَّا٨٠  مَا مُوسَىٰ قَالَ أَلۡقَوۡاْ فَلَمَّآ

“আর ফিরআউন বললো: আমার নিকট সমস্ত সুদক্ষ জাদুকরদেরকে নিয়ে এসো। অতঃপর যখন জাদুকররা এলো,

তখন মূসা তাদেরকে বললেন: নিক্ষেপ করো, যা কিছু তোমরা নিক্ষেপ করতে চাও। অতঃপর তারা যখন নিক্ষেপ

করলো, তখন মূসা বললো: যতো জাদুই তোমরা এনেছ, আল্লাহ নিশ্চয়ই এসব এটাকে পন্ড (ভন্ডুল) করে

দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন ফাসাদকারীদের ‌‘আমলকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে দেন না।” (সূরা ইউনুছের ৭৯, ৮০,

جِئۡتُم بِهِ ٱلسِّحۡرُۖ إِنَّ ٱللَّهَ سَيُبۡطِلُهُۥٓ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُصۡلِحُ عَمَلَ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ٨١ ﴾ [يونس: ٧٩،  ٨١]


১০- সূরা আল-ইসরা (বনী-ইসরাইলের) ৮২ নং আয়াত।

“আর আমরা অবতীর্ণ করি কুরআনে এমন সব বিষয়, যা রোগের শিফা বা সুচিকিৎসা এবং মুমিনদের জন্য রহমত,

আর তা জালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।” (সূরা আল-ইসরা (বনী-ইসরাইলের) ৮২ নং আয়াত)।


১১- সূরা ত্বাহা এর ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮ ও ৬৯ নং আয়াত।

﴿  أَلۡقَىٰ مَنۡ أَوَّلَ نَّكُونَ أَن وَإِمَّآ تُلۡقِيَ أَن إِمَّآ يَٰمُوسَىٰٓ قَالُواْ٦٥  تَسۡعَىٰ أَنَّهَا سِحۡرِهِمۡ مِن إِلَيۡهِ يُخَيَّلُ وَعِصِيُّهُمۡ حِبَالُهُمۡ فَإِذَا أَلۡقُواْۖ بَلۡ قَالَ

٦٦  مُّوسَىٰ خِيفَةٗ نَفۡسِهِۦ فِي فَأَوۡجَسَ٦٧  ٱلۡأَعۡلَىٰ أَنتَ إِنَّكَ تَخَفۡ لَا قُلۡنَا٦٨  كَيۡدُ صَنَعُواْ إِنَّمَا صَنَعُوٓاْۖ مَا تَلۡقَفۡ يَمِينِكَ فِي مَا وَأَلۡقِ

“তারা বললো: হে মূসা, হয় তুমি নিক্ষেপ করো, অথবা আমরাই প্রথমে নিক্ষেপ করি। মূসা বললো: বরং তোমরাই

নিক্ষেপ করো, তাদের জাদুর প্রভাবে হঠাৎ মূসার মনে হলো যে, তাদের দড়ি ও লাঠিগুলো ছুটাছুটি করছে। অতঃপর

মূসা তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করলো। আমি বললাম: ভয় করো না, তুমিই প্রবল (বিজয়ী হবে)। তোমার

ডান হাতে যা আছে, তা নিক্ষেপ করো, এটা তারা যা বানিয়েছে, তা গিলে ফেলবে, তারা যা তৈরী করেছে তা তো শুধু

জাদুকরের কৌশল, জাদুকর যেখানেই আসুক সফল হবে না।” (সূরা ত্বাহা এর ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮ ও ৬৯ নং

﴿ وَنُنَزِّلُ مِنَ ٱلۡقُرۡءَانِ مَا هُوَ شِفَآءٞ وَرَحۡمَةٞ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ وَلَا يَزِيدُ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا خَسَارٗا ٨٢ ﴾ [الاسراء: ٨٢]

سَٰحِرٖۖ وَلَا يُفۡلِحُ ٱلسَّاحِرُ حَيۡثُ أَتَىٰ ٦٩ ﴾ [طه: ٦٥،  ٦٩]


১২- সূরা আল-মুমিনুনের  ১১৫,  ১১৬,  ১১৭ ও ১১৮ নং আয়াত।

﴿  تُرۡجَعُونَ لَا إِلَيۡنَا وَأَنَّكُمۡ عَبَثٗا خَلَقۡنَٰكُمۡ أَنَّمَا أَفَحَسِبۡتُمۡ١١٥  ٱلۡكَرِيمِ ٱلۡعَرۡشِ رَبُّ هُوَ إِلَّا إِلَٰهَ لَآ ٱلۡحَقُّۖ ٱلۡمَلِكُ ٱللَّهُ فَتَعَٰلَى١١٦  يَدۡعُ وَمَن

  ٱلۡكَٰفِرُونَ يُفۡلِحُ لَا إِنَّهُۥ رَبِّهِۦٓۚ عِندَ حِسَابُهُۥ فَإِنَّمَا بِهِۦ لَهُۥ بُرۡهَٰنَ لَا ءَاخَرَ إِلَٰهًا ٱللَّهِمَعَ١١٧  خَيۡرُ وَأَنتَ وَٱرۡحَمۡ ٱغۡفِرۡ رَّبِّ وَقُل

“তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমরা তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট ফিরে আসবে

না? মহিমান্বিত আল্লাহ যিনি সত্যিকারের বাদশাহ, তিনি ব্যতীত কোনো সত্য মা‘বুদ নেই, সম্মানিত ‘আরশের

তিনি রব্ব। যে ব্যক্তি আল্লাহর সহিত অন্য মা‘বুদকে ডাকে, ঐ বিষয়ে তার নিকট কোনো প্রমাণ নেই, তার

হিসাব তার রাব্বের নিকট আছে, নিশ্চয়ই কাফেররা সফলকাম হবে না। বলো, হে আমার রব্ব, ক্ষমা করুন ও দয়া

করুন, দয়ালুদের মধ্যে আপনিই তো শ্রেষ্ঠ দয়ালু।” (সূরা আল-মুমিনুনের  ১১৫,  ১১৬,  ১১৭ ও ১১৮ নং

আয়াত)।     
             

ٱلرَّٰحِمِينَ ١١٨ ﴾ [المؤمنون: ١١٥،  ١١٨]

১৩- সূরা আস-সাফ্‌ফাতের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ১০ নং আয়াত।

﴿  صَفّٗا وَٱلصَّٰٓفَّٰتِ١  زَجۡرٗا فَٱلزَّٰجِرَٰتِ٢  ذِكۡرًا فَٱلتَّٰلِيَٰتِ٣  لَوَٰحِدٞ إِلَٰهَكُمۡ إِنَّ٤  ٱلۡمَشَٰرِقِ وَرَبُّ بَيۡنَهُمَا وَمَا وَٱلۡأَرۡضِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ رَّبُّ٥

  ٱلۡكَوَاكِبِ بِزِينَةٍ ٱلدُّنۡيَا ٱلسَّمَآءَ زَيَّنَّاإِنَّا٦  مَّارِدٖ شَيۡطَٰنٖ كُلِّ مِّن وَحِفۡظٗا٧  جَانِبٖ كُلِّ مِن وَيُقۡذَفُونَ ٱلۡأَعۡلَىٰ ٱلۡمَلَإِ إِلَى يَسَّمَّعُونَ لَّا٨

“সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান ফিরিশতাদের শপথ, এবং যারা কঠোর পরিচালক, আর যারা যিক্‌র আবৃতিতে রত (তাদের

শপথ)। নিশ্চয়ই তোমাদের মা‘বুদ এক, যিনি আসমান, যমীন এবং এদুয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে, এসব কিছুর

রব্ব। এ ছাড়াও উদয়স্থানসমুহের ও রব্ব তিনি। আমি নিকটবর্তী আসমানকে নক্ষত্ররাজির শোভা দ্বারা

সূশোভিত করেছি, আর সংরক্ষণ করেছি প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান হতে। ফলে, তারা উর্ধ্ব জগতের কিছু শুনতে

পায়না, এবং তাদের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয় সকল দিক হতে বিতাড়নের জন্য এবং তাদের জন্য রয়েছে অবিরাম

শাস্তি। তবে কেউ হঠাৎ (ছোঁ মেরে) কিছু শুনে ফেললে জলন্ত উল্কাপিন্ড তাদের পিছন দিকে হতে ধাওয়া করে।” (সূরা

আস-সাফ্‌ফাতের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ১০ নং আয়াত)।   


১৪- সূরা আল- হাশরের ২২ ও ২৩ নং আয়াত।

﴿  ٱلرَّحِيمُ ٱلرَّحۡمَٰنُ هُوَ وَٱلشَّهَٰدَةِۖ ٱلۡغَيۡبِ عَٰلِمُ هُوَۖ إِلَّا إِلَٰهَ لَآ ٱلَّذِي ٱللَّهُ هُوَ٢٢  ٱلۡمُؤۡمِنُ ٱلسَّلَٰمُ ٱلۡقُدُّوسُ ٱلۡمَلِكُ هُوَ إِلَّا إِلَٰهَ لَآ ٱلَّذِي ٱللَّهُ هُوَ

“তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত সত্য কোনো মা‘বুদ নেই। গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছুই তিনি জানেন। তিনিই পরম

দয়ালু ও অতি দয়াময়। তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতিত সত্য কোনো মা‘বুদ নেই। তিনি বাদশা, পবিত্র, শান্তি-

নিরাপত্তাদাতা, অভিভাবক, পরাক্রমশালী, প্রবল, মহাশ্রেষ্ঠ। মানুষ তাঁর সহিত যা কিছুর শির্ক করছে, সে সব হতে

তিনি অতি পবিত্র ও মহান।” (সূরা আল- হাশরের ২২ ও ২৩ নং আয়াত)।


১৫- সূরা আল-ক্বালমের ৫১ নং আয়াত।

﴿  لَمَجۡنُونٞ إِنَّهُۥ وَيَقُولُونَ ٱلذِّكۡرَ سَمِعُواْ لَمَّا بِأَبۡصَٰرِهِمۡ لَيُزۡلِقُونَكَ كَفَرُواْ ٱلَّذِينَ يَكَادُ وَإِن٥١  لِّلۡعَٰلَمِينَ ذِكۡرٞ إِلَّا هُوَ وَمَا٥٢  [القلم: ﴾

“আর কাফেররা এমনভাবে আপনার দিকে তাকায় যে, এক্ষুনি তাদের দৃষ্টি দিয়ে আপনাকে ঘায়েল করে দিবে, তারা

একথাও বলে যে, নিশ্চয়ই সে (রাসূল) একজন পাগল।” (সূরা আল-ক্বালমের ৫১ নং আয়াত)।


১৬- সূরা জ্বীনের ৩ নং আয়াত।

“(আমার প্রতি) আরও অহি করা হয়েছে যে, আমাদের মালিক ও পরিচালনাকারীর (আল্লাহর) মান-মর্যাদা সম্ভ্রম

অতি উর্ধ্বে। তিনি কাহাকেও স্ত্রী বা সন্তান হিসেবে গ্রহন করেননি।”


১৭- সূরা আল-কাফেরুন।

﴿  ٱلۡكَٰفِرُونَ يَٰٓأَيُّهَا قُلۡ١  تَعۡبُدُونَ مَا أَعۡبُدُ لَآ٢  أَعۡبُدُ مَآ عَٰبِدُونَ أَنتُمۡ وَلَآ٣  عَبَدتُّمۡ مَّا عَابِدٞ أَنَا۠ وَلَآ٤  أَعۡبُدُ مَآ عَٰبِدُونَ أَنتُمۡ وَلَآ٥  لَكُمۡ

“বলো, হে কাফিরগণ! আমি তার ইবাদত করি না যার ইবাদত তোমরা করো এবং তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও,

যাঁর ইবাদত আমি করি, এবং আমি ইবাদতকারী নই তাঁর, যার ইবাদত তোমরা করে আসছো, আর তোমরা তাঁর

دُحُورٗاۖ وَلَهُمۡ عَذَابٞ وَاصِبٌ ٩ إِلَّا مَنۡ خَطِفَ ٱلۡخَطۡفَةَ فَأَتۡبَعَهُۥ شِهَابٞ ثَاقِبٞ ١٠ ﴾ [الصافات: ١،  ١٠]

ٱلۡمُهَيۡمِنُ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡجَبَّارُ ٱلۡمُتَكَبِّرُۚ سُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٢٣ ﴾ [الحشر: ٢٢،  ٢٣]

﴿ وَأَنَّهُۥ تَعَٰلَىٰ جَدُّ رَبِّنَا مَا ٱتَّخَذَ صَٰحِبَةٗ وَلَا وَلَدٗا ٣ ﴾ [الجن: ٣]

এবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত আমি করি। তোমাদের দ্বীন (কুফর) তোমাদের জন্য আর আমার দ্বীন (ইসলাম)


১৮- সূরা আল-ইখলাছ।

“বলুন, তিনি আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়, আল্লাহ হলেন – ‘সামাদ’ (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তার

মুখাপেক্ষী), তিনি কাউকেও জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয় নি, আর তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।” (সূরা আল-

﴿ قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ١ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ٢ لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ ٣ وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ ٤ ﴾ [الاخلاص: ١،  ٤]


১৯- সূরা আল-ফালাক্ব।

﴿  ٱلۡفَلَقِ بِرَبِّ أَعُوذُ قُلۡ١  خَلَقَ مَا شَرِّ مِن٢  وَقَبَ إِذَا غَاسِقٍ شَرِّ وَمِن٣  ٱلۡعُقَدِ فِي ٱلنَّفَّٰثَٰتِ شَرِّ وَمِن٤  حَسَدَ إِذَا حَاسِدٍ شَرِّ وَمِن

“বলুন, আমি আশ্রয় চাই আল্লাহর ভোরের রবের (মালিক ও অধিপতির), তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে,

আর অনিষ্ট হতে রাতের অন্ধকারের, যখন তা গভীর হয়। আর অনিষ্ট হতে সে সব নারীদের যারা গিরায় ফুঁক

দেয়। আর অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।” (সূরা আল-ফালাক্ব)।

﴿  ٱلنَّاسِ بِرَبِّ أَعُوذُ قُلۡ١  ٱلنَّاسِ مَلِكِ٢  ٱلنَّاسِ إِلَٰهِ٣  ٱلۡخَنَّاسِ ٱلۡوَسۡوَاسِ شَرِّ مِن٤  لنَّاسِ صُدُورِ فِي يُوَسۡوِسُ ٱلَّذِي٥  ٱلۡجِنَّةِ مِنَ

“বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের, মানুষের অধিপতির, মানুষের মা‘বুদের কাছে, আত্মগোপনকারী

কুমন্ত্রণাদাতার নিকট অনিষ্ট হতে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিন ও মানুষের মধ্য থেকে। (সূরা আন-


সাহীহ হাদীসে বর্ণিত ঝাড়-ফুঁক সংক্রান্ত দো‘আসমূহ

1- সাহীহ মুসলিমে রয়েছে:

‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় তাঁর নিকট আমি তিনি যা সৃষ্টি করেছেন সেগুলোর অনিষ্ট থেকে আশ্রয়

চাই।’ (বিকালে ৩ বার)। (সাহীহ মুসলিম: ৪/২০৮১)।


2-  সাহীহ আল-বুখারীতে রয়েছে:

‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় সকল শয়তান ও বিষাক্ত জীব-জন্তু থেকে ও যাবতীয় ক্ষতিকর চোখ

(বদ নযর) হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সাহীহ আল বুখারী ৪/১৪৭, নং ৩৩৭১)।   
 

3- হিসনূল মুসলিমে রয়েছে:-                                                             

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ (صحيح مسلم (4 / 2081).

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ " (صحيح البخاري (4 / 147(

  فِي ذَرَأَ مَا شَرِّ وَمِنْ فِيهَا، يَعْرُجُ مَا شَرِّ وَمِنْ السَّمَاءِ، مِنَ يَنْزِلُ مَا شَرِّ مِنْ فَاجِرٌ، وَلَا بَرٌّ يُجَاوِزُهُنَّ لَا الَّتِي التَّامَّةِ اللَّهِ بِكَلِمَاتِ«أَعُوذُ

  من المسلم (حصن رَحْمَنُ». يَا بِخَيْرٍ يَطْرُقُ طَارِقًا إِلَّا طَارِقٍ كُلِّ شَرِّ وَمِنْ وَالنَّهَارِ، اللَّيْلِ فِتَنِ شَرِّ وَمِنْ مِنْهَا، يَخْرُجُ مَا شَرِّ وَمِنْالْأَرْضِ،

“আমি আল্লাহর ঐ সকল পরিপূর্ণ বাণীসমূহের সাহায্যে আশ্রয় চাই যা কোনো সৎব্যক্তি বা অসৎ ব্যক্তি

অতিক্রম করতে পারে না, — আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, অস্তিত্বে এনেছেন এবং তৈরী করেছেন তার অনিষ্ট

থেকে। আসমান থেকে যা নেমে আসে তার অনিষ্ট থেকে এবং যা আকাশে উঠে তার অনিষ্ট থেকে, আর যা পৃথিবীতে তিনি

সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, আর যা পৃথিবী থেকে বেরিয়ে আসে, তার অনিষ্ট থেকে,  দিনে রাতে সংঘটিত ফেতনার

অনিষ্ট থেকে, আর রাতের বেলায় হঠাৎ করে আগত অনিষ্ট থেকে। তবে রাতে আগত কল্যাণকর আগমনকারী ব্যতীত,

হে দয়াময়।” (হিসনুল মুসলিম : ২/১৪১)। 


4- হিসনূল মুসলিমে রয়েছে:-

  الكتاب أذكار من المسلم (حصن يَحْضُرُونِ». وَأَنْ  الشَّيَاطِينِ هَمَزَاتِ وَمِنْ عِبَادِهِ، وَشَرِّ وَعِقَابِهِ غَضَبِهِ مِنْ التَّامَّاتِ اللَّهِ بِكَلِمَاتِ«أَعُوذُ

“আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় আশ্রয় চাই তাঁর রাগ থেকে, তাঁর শাস্তি থেকে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট

থেকে, শয়তানদের কুমন্ত্রণা থেকে এবং তাদের উপস্হিতি থেকে।” (আবু দাউদ: ৪/১২, নং : ৩৮৯৩। সাহীহুত-

তিরমিযী ৩/১৭১)।     


5- সাহীহ হাদীসে রয়েছে:-

 ( الْعَظِيمِ». الْعَرْشِ رَبُّ وَهُوَ تَوَكَّلْتُ عَلَيْهِ هُوَ، إِلَّا إِلَهَ لَا اللَّهُ«حَسْبِيَ7 ( داود أبي (سنن . مرات)4  /321  أذكار من المسلم (حصن).

“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো সত্য মা‘বুদ নেই, আমি তাঁর উপরই ভরসা করি, আর তিনি

মহান আরশের রব্ব।” (৭ বার)। (সূনানে আবু দাউদ ৪/৩২১) ও ( হিসনুল মুসলিম ১/৬১)। 


6- সাহীহ মুসলিমে রয়েছে:-

«بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ». (صحيح مسلم (4 / 1718).

“আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাঁড়ফুক করছি, কষ্টদায়ক সকল কিছুর ক্ষতি হতে, যে কোনো মানুষ বা বদনযর অথবা

হিংসুকের হিংসার নজর হতে। আল্লাহ আপনাকে শিফা বা রোগমুক্ত করুন, আমি আপনাকে আল্লাহর নামেই ঝাঁড়ফুক

করছি।” (সাহীহ মুসলিম: ৪/১৭১৮)।


7- সাহীহ হাদীসে রয়েছে:-

“আমি মহান আল্লাহর কাছে চাই, যিনি মহান আরশের রব্ব, তিনি যেন আপনাকে রোগ হতে শিফা দান করেন।” (৭ বার

পড়বেন)। (আবু-দাউদ, ৩/১৮৭)।


8- সাহীহ মুসলিমে রয়েছে:-

তোমার শরীরের যেখানে ব্যথা রয়েছে সেখানে হাত রেখো এবং তিনবার বলো, বিসমিল্লাহ, তারপর সাতবার

«أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَ ». (سنن أبي داود (3 / 187).

«أَعُوذُ بِاللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ». (صحيح مسلم (4 / 1728). 

“এই যে ব্যথা আমি অনূভব করছি এবং যার আমি আশংকা করছি, তা থেকে আমি আল্লাহ তা‘আলার এবং তাঁর

কুদরতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” (সাহীহ মুসলিম: ৪/১৭২৮, নং ২২০২)।       


9- সাহীহ আল-বুখারীতে রয়েছে:-

«اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ، مُذْهِبَ البَاسِ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لاَ شَافِيَ إِلَّا أَنْتَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا». (صحيح البخاري (7 / 132).

“হে আল্লাহ! হে মানুষের রব্ব, আপনি তাদের কষ্ট, সমস্যা, বিপদদূরকারী। আপনি তাদেরকে শিফা (রোগমুক্ত) করে

দিন, আপনিই তো শিফাদানকারী। আপনি ব্যতীত রোগমুক্তকারী কেউই নেই, রোগ হতে এমন শিফা দান করুন,

যাতে রোগের কিছুই শরীরে অবশিষ্ট না থাকে।” (সাহীহ আল-বুখারী: ৭/১৩২)। 


10- অনুরূপভাবে সাহীহ হাদীসে রয়েছে:

«بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ»، (ثَلَاثَ مَرَّاتٍ). (سنن أبي داود (4 / 323). 

“আল্লাহর নামে, যার নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।” (৩ বার)।
আবদুল্লাহ ইবন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন রহ.

অনুবাদ: আবুল কাসেম মুহাম্মাদ মাসুম
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

109
আক্বীদাহ সংক্রান্ত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাহ



১. প্রশ্ন: মহান আল্লাহ কোথায় অবস্থান করেন?

উত্তর: মহান আল্লাহ আরশে আযীমের উপর অবস্থান করেন। আল্লাহর কথাই এর দলীল। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

অর্থ: ‘(তিনি আল্লাহ বলেন) পরম দয়াময় আরশের উপর সমুন্নীত রয়েছেন। [সূরা ত্বা-হা:৫]

মহান আল্লাহ আসমানের উপর বা আরশে আযীমের উপর সমুন্নত আছেন, এই অর্থে কুরআন মাজীদের ৭টি আয়াত

রয়েছে। অতএব যারা দাবী করেন যে, মহান আল্লাহ সর্ব জায়গায় বিরাজমান, অথবা তিনি মুমিন বান্দার ক্বলবের

ভিতর অব্স্থান করেন, আর মু‘মিন বান্দার ক্বলব বা অন্তর হলো আল্লাহর আরশ বা ঘর। তাদের এ সমস্ত দাবী

সবই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।


২. প্রশ্ন: মহান আল্লাহর চেহারা অর্থাৎ মূখমন্ডল আছে কি? থাকলে তার দলীল কী?

উত্তর: হাঁ, মহান আল্লাহর চেহারা অর্থাৎ মূখন্ডল আছে। আল্লাহর কথাই এর দলীল ।

অর্থ: ‘[কিয়ামতের দিন] ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে (হে রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালন কর্তার চেহারা মুবারক অর্থাৎ আল্লাহর সত্তাই একমাত্র বাকী

থাকবে। (আর-রাহমান: ৩৬-৩৭)


৩. প্রশ্নঃ মহান আল্লাহর কি হাত আছে? থাকলে তার দলীল কী?

﴿كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ ـ وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ﴾

উত্তরঃ মহান আল্লাহর হাত আছে, আল্লাহর কথাই এর দলীল।

অর্থ: ‘আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস ! আমি নিজ দুহাতে যাকে সৃষ্টি করেছি, তাকে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাঁধা

﴿قَالَ يَا إِبْلِيْسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ ﴾ (ص:৭৫)


৪. প্রশ্ন: মহান আল্লাহর কি চক্ষু আছে? থাকলে তার দলীল কী?

উত্তরঃ হাঁ, মহান আল্লাহর চক্ষু আছে। আল্লাহর কথাই এর দলীল। যেমন তিনি হযরত মূসা (আঃ) কে লক্ষ্য করে

﴿وَأَلْقَيْتُ عَلَيْكَ مَحَبَّةً مِّنِّيْ وَلِتُصْنَعَ عَلَى عَيْنِيْ﴾ (طـه :৩৯)

অর্থ:‘আমি আমার নিকট হতে তোমার উপর ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম, যাতে তুমি আমার চোখের সামনে

প্রতিপালিত হও। (ত্বা-হা: ৩৯)

এমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে শান্তনা দিতে যেয়ে বলেন:

অর্থ:‘(হে রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি আপনার পালন কর্তার নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্যধারণ

করুন, আপনি আমার চোখের সামনেই রয়েছেন। (আত-তূর: ৪৮)


৫. প্রশ: মহান আল্লাহ শুনেন এবং দেখেন, এর দলীল কী?

উত্তর: মহান অল্লাহ শুনেন এবং দেখেন। আল্লাহর কথাই এর দলীল। যেমন তিনি বলেন,

অর্থ:‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা শ্রবণ করেন ও দেখেন। (আল-মুজাদালাহ: ১)


৬. প্রশ্ন: মানুষের শ্রবণ শক্তি ও দর্শন শক্তি, অপর দিকে মহান আল্লাহর শ্রবণ শক্তি ও দর্শন শক্তি, এ দুয়ের

মাঝে কোন পার্থক্য আছে কী?

উত্তর: হাঁ, মানুষেরা কানে শুনে ও চোখে দেখে, অপর দিকে মহান আল্লাহ শুনেন ও চোখে দেখেন, এ দুয়ের মাঝে

অবশ্যই বিরাট পার্থক্য রয়েছে। মহান আল্লাহর কথাই এর দলীল। যেমন তিনি বলেন,

অর্থ:‘আল্লাহর সাদৃশ্য কোন বস্তুই নাই এবং তিনি শুনেন ও দেখেন (শূরা:১১)।

 বাস্তবতার আলোকে চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারি যে, নি:সন্দেহে মানুষের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির একটা

নির্ধারিত আয়তন, সীমা বা দুরত্ব আছে যার ভিতরের বস্তু গুলি মানুষেরা সহজে চোখে দেখতে পায় এবং আওয়ায বা

শব্দ সমূহ সহজে কানে শুনতে পায়। তবে ঐ নির্ধারিত সীমা বা দূরত্বের বাইরে চলে গেলে তখন মানুষ আর কিছুই

চোখে দেখতেও পায় না আর শুনতে পায় না। অপর দিকে মহান আল্লাহর দর্শনশক্তি ও শ্রবন শক্তির জন্য

নির্ধারিত কোন সীমা বা দুরত্ব বলতে কিছুই নেই। যেমন মানুষেরা ২/৩ হাত দূর থেকে বইয়ের ছোট অক্ষরগুলি

দেখে পড়তে পারে, কিন্তু ৭/৮ হাত দূর থেকে ঐ অক্ষরগুলি আর পড়া সম্ভব হয় না।

এমনিভাবে মানুষের চোখের সামনে যদি সামান্য একটা কাপড় বা কাগজের পর্দা ঝুলিয়ে রাখা হয় তাহলে ঐ কাপড় বা

কাগজের ওপাশে সে কিছুই দেখতে পায় না। এমনিভাবে মানুষেরা গভীর অন্ধকার রাতে কিছুই দেখতে পায় না। অপর

দিকে মহান আল্লাহ তা‘আলা অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার রাতে কাল পাহাড় বা কাল কাপড়ের উপর দিয়ে কাল পিঁপড়া

চলাচল করলেও সেই পিঁপড়াকে দেখতে পান এবং তার পদধ্বনি শুনতে পান।

﴿وَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ فَإِنَّكَ بِأَعْيُنِنَا ﴾ (الطور:৪৮ )

﴿لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيْعُ البَصِيْرُ﴾ (الشورى: ১১)


৭.প্রশ্ন: একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার আর কেউ গায়েবের খবর রাখে কী?

উত্তর: না, একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার আর কেউ গায়েবের খবর রাখে না। আল্লাহ তাআলার কথাই এর

দলীল। যেমন তিনি বলেন:

অর্থ:‘নিশ্চয়ই আমি আাল্লহ আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত আছি এবং

সে সব বিষয়েও আমি জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন রাখ। (বাক্বারাহ: ৩৩)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

অর্থ: “সেই মহান আল্লাহর কাছে অদৃশ্য জগতের সমস্ত চাবি রয়েছে। সেগুলো একমাত্র তিনি ছাড়া আর কেহই

জানেন না।” (আনআম: ৫৯)


৮.প্রশ্নঃ দুনিয়ার জীবনে মুমিন বান্দাদের পক্ষে স্বচক্ষে অথবা স্বপ্নযোগে মহান আল্লাহর দর্শন লাভ করা

অর্থাৎ আল্লাহকে দেখা কি সম্ভব?

উত্তরঃ না, দুনিয়ার জীবনে মু‘মিন বান্দাদের পক্ষে স্বচক্ষে অথবা স্বপ্ন যোগে মহান আল্লাহকে দেখা সম্ভব

নয়। আল্লাহর কথাই এর দলীল। যেমন তিনি বলেন?

অর্থ: “তিনি (হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহকে লক্ষ্য করে) বলেছিলেন, হে আমার প্রভূ! তোমার দীদার আমাকে দাও,

যেন আমি তোমাকে দেখতে পাই। উত্তরে মহান আল্লাহ (হযরত মূসা (আঃ) কে) বলেছিলেন, হে মূসা! তুমি আমাকে

কক্ষনো দেখতে পাবে না। (আ‘রাফ: ১৪৩)

উক্ত আয়াত ও আরো অন্য আয়াত দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, সৃষ্টিজিবের কোন চক্ষু এমনকি নাবী ও

রাসূলগণের কেহই দুনিয়ার জীবনে মহান আল্লাহকে দেখতে পায় নাই আর কেউ পাবেও না। অতএব যারা বা যে সমস্ত

নামধারী পীর সাহেবরা দাবী করে যে, তারা সপ্নে আল্লাহকে দেখতে পায়। প্রকৃতপক্ষে তারা ভন্ড ও মিথ্যুক, এতে

﴿إِنِّي أَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَأَعْلَمُ مَا تُبْدُوْنَ وَمَا كُنْتُمْ تَكْتُمُوْنَ﴾ (البقرة:৩৩)

﴿وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ﴾  (الأنعام :৫৯)

   ﴿قَالَ رَبِّ أَرِنِي أَنْظُرْ إِلَيْكَ قَالَ لَنْ تَرَانِيْ .. ﴾ (الأعراف :১৪৩)


৯.প্রশ্ন: আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি মাটির তৈরি? না নূরের তৈরি?

উত্তর: আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাটির তৈরী। আল্লাহর কথাই এর দলীল।

﴿قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَـهُكُمْ إِلهٌ وَّاحِدٌ﴾

অর্থ:‘আপনি (হে রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার উম্মাতদেরকে) বলে দিন যে, নিশ্চয়ই আমি

তোমাদের মতই একজন মানূষ। আমার প্রতি অহী নাযেল হয় যে, নিশ্চয় তোমাদের উপাস্যই একমাত্র

উপাস্য। (আল-কাহফ: ১১০)

উক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৈহিক চাহিদার

দিক দিয়ে আমাদের মতই মানুষ ছিলেন। তিনি খাওয়া-দাওয়া, পিশাব-পায়খানা,বাজার-সদাই,বিবাহ-শাদী, ঘর-সংসার

সবই আমাদের মতই করতেন। পার্থক্য শুধু এখানেই যে, তিনি আল্লাহর প্রেরীত রাসূল ও নবী ছিলেন, তাঁর কাছে

আল্লাহর তরফ থেকে দুনিয়ার মানুষের হিদায়েতের জন্য অহী নাযিল হত, আর অমাদের কাছে অহী নাযিল হয় না।

অতএব যারা রাসূলের প্রশংসা করতে যেয়ে নূরের নাবী বলে অতিরঞ্জিত করল, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লামএর প্রতি মিথ্যার অপবাদ দিল।


১০. প্রশ্ন: অনেক বই পুস্তকে লেখা আছে, এ ছাড়া আমাদের দেশের ছোট-খাট বক্তা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক

খ্যাতি সম্পন্ন বক্তাদের অধিকাংশই বলে থাকেন যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সৃষ্টি না করলে

আল্লাহ তা‘আলা আসমান-যমীন, আরশ-কুরসী কিছুই সৃষ্টি করতেন না। এ কথাটি সঠিক?     

উত্তর: উল্লিখিত কথাগুলি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানাওয়াটি ও মিথ্যা। কারণ কুর‘আন ও ছহীহ হাদীছ থেকে এর

স্বপক্ষে কোন দলীল নেই। অপরদিকে কুরআন মাজীদের সূরা আয-যারিয়াতের ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা

বলেছেন যে, ‘আমি জ্বিনজাতি এবং মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদাত করার জন্য।


১১. প্রশ্নঃ আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি গায়েব বা অদৃশ্যের খবর

উত্তরঃ না, আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গায়েবের খবর রাখতেন না। আল্লাহর কথাই এর দলীল।

﴿قُل لاَّ أَمْلِكُ لِنَفْسِيْ نَفْعًا وَّلاَ ضَرًّا إِلاَّ مَا شَآءَ اللهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لاَسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوْءُ﴾ (الأعراف:১৮৮)

অর্থঃ :‘(হে মুহাম্মাদ! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি ঘোষণা করে দিন যে, একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা

ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ, লাভ-লোকসান, কল্যাণ-অকল্যাণ ইত্যাদি বিষয়ে আমার কোনই হাত নেই। আর

আমি যদি গায়েবের খবর জানতাম, তাহলে বহু কল্যাণ লাভ করতে পারতাম, আর কোন প্রকার অকল্যাণ আমাকে

স্পর্শ করতে পারত না। (আল-আ‘রাফ:১৮৮)

বাস্তবতার আলোকে আমরা একথা বলতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি গায়েবের খবর

জানতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি ওহুদের যুদ্ধে, বদরের যুদ্ধে, তায়েফে এবং আরো অন্যান্য অবস্থার পরিপেক্ষিতে

কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতেন না।   


১২.প্রশ্ন: অনেক নামধারী বড় আলেম ও বক্তাগণ বলে থাকেন যে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম এর দেহ বা শরীর মুবারক কবরের চারিপার্শ্বে যে সমস্ত মাটি রয়েছে সে সমস্ত মাটির মূল্য বা মর্যাদা

অল্লাহর আরশের মূল্য বা মর্যাদার চেয়েও অনেক বেশী। এ কথাটি সঠিক?

উত্তর: উল্লিখিত কথাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানাওয়াট ও মিথ্যা, কেননা কুরআন ও হাদীছ থেকে এর স্বপক্ষে

কোনই প্রমাণ পাওয়া যায় না।


১৩.প্রশ্ন: অনেকেই নামধারি পীর-মুর্শিদ, অলী-আওলিয়াদের এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর

অসীলা করে আল্লাহর নিকট দু‘আ করে থাকে। এটা জায়েয কি জায়েয নয়?

উত্তর: উল্লিখিত বিষয়টি জায়েয নয়। কেননা মৃত ব্যক্তির অসীলা করে আল্লাহর কাছে দু‘আ করা নিষেধ বা

হারাম। চাই সেই মৃতব্যক্তি কোন নবী বা রাসূল হৌক না কেন।     


১৪. প্রশ্ন: ‘মীলাদ মাহফিল কায়েম করা অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম বার্ষিকী

পালন করা জায়েয কি জায়েয নয়? যদি জায়েয না হয়, তাহলে আমাদের দেশের অধিকাংশ আলেম-উলামাগণ মীলাদ পড়ান

উত্তর: ‘মীলাদ মাহফিল কায়েম করা অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম বার্ষিকী পালন

করা নি:সন্দেহে না জায়েয। কারণ এর স্বপক্ষে কুরআন মাজীদ ও ছহীহ হাদীছ হতে এবং ছাহাবা কিরামের আমল ও

পরবর্তী উলামায়ে মুজতাহিদীনদের তরফ থেকে কোনই প্রমাণ নেই। সেহেতু এটা ইসলামী শরীয়তে নতুন আবিষ্কার

তথা বিদ‘আত। যার পরিণাম গোমরাহী, পথভ্রষ্ঠতা ও জাহান্নাম।     


১৫.প্রশ্ন: মহান আল্লাহকে পূর্ণভাবে ভালবাসা বা আনুগত্য করার উত্তম পদ্ধতি কী?

উত্তর: মহান আল্লাহকে পূর্ণভাবে ভালবাসার উত্তম পদ্ধতি হলো: খালেছ অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য

করা, আর দ্বিধাহীন চিত্তে তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করা। মহান আল্লাহর কথাই

এর দলীল। যেমন তিনি বলেন,     

অর্থ:‘(হে রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার উম্মাতদেরকে) আপনি বলেদিন, তোমরা যদি

আল্লাহকে ভালবাসতে চাও, তাহলে তোমরা আমারই অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন, আর

তোমাদের পাপও ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। (আলু-ইমরান: ৩১)


১৬.প্রশ্ন: আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পূর্ণভাবে ভালবাসা বা অনুসরণ করার

﴿قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ﴾ ( آل عمران:৩১)

উত্তর: আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে পূর্ণভাবে ভালবাসার উত্তম পদ্ধতি হলো:

রাসূল্লুাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রত্যেকটা নির্দেশ ও নিষেধকে মনে-প্রাণে মেনে নেওয়া। মোট

কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাতের উপর যথাযথভাবে আমল করার মাধ্যমে তাঁর

সুন্নাতকে জীবিত রাখা। মহান আল্লাহর কথাই এর দলীল। যেমন তিনি বলেন:

অর্থ:‘অতএব (হে মুহাম্মাদ! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার প্রতিপালকের কসম, তারা কখনই ঈমানদার

হতে পারবে না। যতক্ষণ না তাদের মাঝে সৃষ্ট কোন ঝগড়া বা বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ন্যায় বিচারক হিসাবে

মেনে না নিবে। অত:পর তারা আপনার ফায়ছালার ব্যাপারে নিজেদের মনে কোনরূপ সংকীর্ণতা বোধ না করে তা

শান্তিপূর্ণভাবে কবূল করে নিবে। (আন-নিসা: ৬৫)

 এ মর্মে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

অর্থ:‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত অনুযায়ী আমল করল, সে আমাকে ভাল বাসল, আর যে আমাকে ভাল বাসল সে এর

বিনিময়ে জান্নাতে আমার সাথে অবস্থান করবে।

﴿فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ حَتَّىَ يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُوْا فِيْ أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا﴾

“مَنْ عَمِلَ بِسُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي وَمَنْ أَحَبَّنِي كَانَ مَعِيَ فِي الْجنَّة” (ذم الكلام وأهله)

“مَنْ أَحْيَا سُنَّتِيْ فَقَدْ أَحَبَّنِيْ، وَمَنْ أَحَبَّنِيْ كَانَ مَعِيَ فِي الْجَنَّةِ” (الاعتصام: حَدِيثٌ حَسَنٌ)

অর্থ:‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে জীবিত রাখল সে যেন আমাকে ভাল বাসল, আর যে ব্যক্তি আমাকে ভাল বাসল সে

এর বিনিময়ে জান্নাতে আমার সাথে অবস্থান করবে। (আল-ই‘তেছাম: হাদীছ হাসান)।


১৭. প্রশ্ন: বিদআতের অর্থ কি? বা বিদআত কাকে বলা হয় ?

উত্তর: পারিভাষিক অর্থে সুন্নাতের বিপরিত বিষয়কে ‘বিদআত বলা হয়। আর শারঈ অর্থে বিদআত হলো:

‘আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের উদ্দেশ্যে ধর্মের নামে নতুন কোন প্রথা চালু করা, যা শরীয়তের কোন ছহীহ দলীলের

উপরে ভিত্তিশীল নয় (আল-ইতিছাম ১/৩৭পৃঃ)।


১৮. প্রশ্ন: বিদআতী কাজের পরিণতি কী কী?

উত্তর: বিদআতী কাজের পরিণতি হলো ৩ টি।                 

১. ঐ বিদআতী কাজ আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবেনা।           

২. বিদআতী কাজের ফলে মুসলিম সমাজে গোমরাহীর ব্যাপকতা লাভ করে।

৩. আর এই গোমরাহীর ফলে বিদআতীকে জাহান্নাম ভোগ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি

“مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ ” (متفق عليه)

অর্থ: ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরীয়তে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারী ও

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন:

অর্থ: ‘আর তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হতে সাবধান থাক! নিশ্চয় প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদআত,

আর প্রত্যেক বিদ‘আতই হলো গোমরাহী, আর প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম হলো জাহান্নাম। (আহমাদ,

“وَإِيِّاكُمْ وَ مُحْدَثَاتِ الأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٍ وَ كُلَّ ضَلاَلَةٍ فِيْ النَّارِ”


১৯. প্রশ্নঃ আমাদের দেশে প্রচলিত কয়েকটি বড় ধরনের বিদআতী

কাজ উল্লেখ করুন।

১. ‘মীলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠান করা।

২. ‘শবে-বরাত পালন করা।

৩. ‘শবে-মেরাজ পালন করা।

৪. মৃতব্যক্তির কাযা বা ছুটে যাওয়া নামায সমূহের কাফ্ফারা আদায় করা।

৫. মৃত্যুর পর ৭ম, ১০ম, অথবা ৪০তম দিনে মানুষদেরকে খাওয়ানো বা দুআর অনুষ্ঠান করা।

৬. ‘ইছালে ছাওয়াব বা ছাওয়াব রেসানী বা ছাওয়াব বখশে দেওয়ার অনুষ্ঠান করা।

৭. মৃতব্যক্তির রূহের মাগফিরাতের জন্য অথবা কোন বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে খতমে কুরআন অথবা

খতমে জালালীর অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি।

৮. জোরে জোরে চিল্লিয়ে যিকর করা।

৯. হালকায়ে যিকরের অনুষ্ঠান করা।

১০. পীর সাহেবের কাছে মুরীদ হওয়া।                             

১১. মা-বোন ও স্ত্রীকে পীর সাহেবের কাছে মুরীদ হওয়ার জন্য এবং তাদের খেদমত করার জন্য পাঠানো।

১২. ফরয, সুন্নাত, ও নফল তথা বিভিন্ন ধরনের নামায শুরু করার পূর্বে মুখে উচ্চারণ করে নিয়াত পড়া বিদ‘আত।

১৩. পেশাব করার পরে পানি থাকা সত্বেও অধিকতর পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে কুলুখ নিয়ে ২০, ৪০,৭০ কদম

হাটাহাটি করা, জোরে জোরে কাশি দেয়া, হেলা দুলা করা, পায়ে পায়ে কাচি দেয়া এসবই বেহায়াপনা কাজ ও স্পষ্ট

১৪. অনেকে ধারণা করেন যে, তাবলীগ জাম‘আতের সাথে যেয়ে ৩টা অথবা ৭টা চিল্লা দিলে ১হজের সওয়াব হয়। এ

সমস্ত কথা সবই বানাওয়াট ও মিথ্যা, তথা বিদ‘আত।


২০.প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা হাদীছ তৈরি করে

অর্থাৎ বানাওয়াট ও মনগড়া কথা মানুষের সামনে বর্ণনা করে বা বই পুস্তকে লিখে প্রচার করে, তাহলে তার পরিণতি

উত্তর: যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা হাদীছ রচনা করে মানুষের কাছে

বর্ণনা করে তার পরিণতি হবে জাহান্নাম। রাসূলের কথাই এর দলীল, যেমন তিনি বলেন:

“مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ”

অর্থ: যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যা আরোপ করল, এর বিনিময়ে সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে

প্রণয়নেঃ আবুল কালাম আযাদ

সম্পাদনায়: আব্দুন নূর আব্দুল জব্বার

সূত্র: সালাফী বিডি


ইসলামী আকীদা বিষয়ক কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা

আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য

১। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌ আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন?

১। উত্তর : আল্লাহ্‌ আমাদের সৃষ্টি করেছেন এ জন্য যে, আমরা তাঁর ইবাদত করব, তাঁর আনুহগত্য করব এবং তাঁর

সাথে কাউকে শরীক করব না। তিনি বলেন :

"আমি জ্বিন এবং মানব জাতি এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা শুধু আমার ইবাদত করবে।" সূরা আজ-জারিয়াত : ৫৬

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : "বান্দার উপর আল্লাহ্‌র হক হচ্ছে, তারা তাঁর ইবাদত করবে

এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না।" (বুখারী ও মুসলিম)

২। প্রশ্ন : ইবাদত বলতে কি বুঝায়?

২। উত্তর : ইবাদত একটি ব্যাপক বিষয়। ইসলামি আকিদা, আল্লাহর পছন্দনীয় প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজ,

সব কিছু এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন : দোয়া, নামায, বিনয়, তাকওয়া ইত্যাদি।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"বলুন : আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও মরণ বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ্‌র জন্য।" সূরা আল-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন :

"আমি আমার বান্দার উপর যা ফরজ করেছি, তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো জিনিসের মাধ্যমে বান্দা আমার

সান্নিধ্য লাভ করতে পারেনি। আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে।"(হাদীসে

قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَا وَمَمَاتِيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

৩। প্রশ্ন : ইবাদত কত প্রকার ?

৩। উত্তর : ইবাদতের অনেক প্রকার রয়েছে। যেমন : দোয়া, আল্লাহর ভয়, তাঁর নিকট প্রত্যাশা, তাঁর

ওপর ভরসা, তাঁর নিকট আকাঙ্ক্ষা, তাঁর উদ্দেশ্যে জবেহ-মান্নত-রুকু-সিজদা-তাওয়াফ ও শপথ ইত্যাদি। এর ভেতর

কোন একটি জিনিস আল্লাহর জন্য না হলে ইবাদত বলে গণ্য হবে না।

৪। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌ রাসূললগণকে কেন প্রেরণ করেছেন ?

৪। উত্তর : আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের তাওহীদ ও ইবাদতের দিকে আহ্বান জানাতে রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"আমি প্রত্যেক জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি এই জন্য যে, তোমরা আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে এবং 'ত্বাগুত" বর্জন

করবে।" সূরা আন-নাহাল : ৩৬

ত্বাগুত : আল্লাহ্‌ ব্যতীত মানুষ সেচ্ছায়-সন্তুষ্টি চিত্তে যার ইবাদত করে, যাকে আহ্বান করে সেই ত্বাগুত।

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "...নাবীগণ ভাই-ভাই...আর তাঁদের দ্বীন এক" অর্থাৎ প্রত্যেক

নবী আল্লাহ্‌র একত্ববাদের আহ্‌বান জানিয়েছেন। (বুখারী - মুসলিম)

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلاً أَنِ اعْبُدُوْا اللهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوْتَ

তাওহীদ বা একত্ববাদের প্রকার

৫। প্রশ্ন : তাওহীদে রুবুবিয়্যাত বা আল্লাহর 'রব' সিফাতে তাওহীদ বলতে কি বুঝায়?

৫। উত্তর : আল্লাহর কার্যাবলীতে কাউকে অংশিদার না করা। অর্থাৎ একমাত্র তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিক দাতা,

জীবন-মৃত্যু ও উপকার-অপকারের মালিক ইত্যাদি।

আল্লাহ্‌ তাআলার বাণী :

অর্থ : "সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ্‌র জন্য।" সূরা আল-ফাতেহা : ২

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে সম্বোধন করে বলেন: "...তুমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর

প্রতিপালক...।" (বুখারী - মুসলিম)

৬। প্রশ্ন : ইবাদতে তাওহীদ বলতে কি বুঝায় ?

৬। উত্তর : ইবাদতের মালিক শুধু আল্লাহকেই জ্ঞান করা এবং সকল ইবাদত তাঁর জন্য উৎসর্গ করা। যেমন : দুআ,

জবেহ্‌, মান্নত, বিনয়াবনত অবস্থা, প্রার্থনা, নামাজ, তাওয়াক্কুল ও ফয়সালা ইত্যাদির মালিক আল্লাহকে স্বীকার

করা এবং শুধু তাঁর জন্যই সম্পাদন করা।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

অর্থ : "আর তোমাদের ইলাহ একজন-ই, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি দয়াময় অতি দয়ালু।" সূরা আল-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "সর্ব প্রথম তাদেরকে এ সাক্ষ্য দেয়ার প্রতি আহ্বান করবে

যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।" (বুখারী - মুসলিম)

বুখারীর অন্য বর্ণনায় রয়েছে : "আল্লাহ্‌র একত্ববাদের ঈমানের প্রতি তাদেরকে আহ্‌বান করবে।"

৭। প্রশ্ন : রুবুবিয়্যাত ও ইবাদতের ক্ষেত্রে তাওহীদের লক্ষ্য কি?

৭। উত্তর : রুবুবিয়্যাত বা আল্লাহর সিফাতে 'রব' এবং ইবাদতে তাওহীদের লক্ষ্য হল, মানুষ আল্লাহর বড়ত্ব ও

শ্রেষ্ঠত্ব অন্তরে ধারণ করত সকল ইবাদত তাঁর জন্য উৎসর্গ করবে। নিজ কর্ম ও আচরণে তাঁর অনুসরণ করবে।

অন্তরে ঈমান সু-দৃঢ় রাখবে এবং পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র বিধান প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করবে।

৮। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌র নাম ও গুনাবলিতে তাওহীদ বলতে কি বুঝায় ?

৮। উত্তর : আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর কিতাবে নিজেকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন অথবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশুদ্ধ হাদীসে তাঁর যেসব গুণাবলি বর্ণনা করেছেন তা প্রকৃত অর্থে, কোনরূপ অপব্যাখ্যা,

তাঁর কোন সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য স্থাপন, তাঁর প্রকৃত গুণকে নিষ্ক্রিয় করা এবং কোন বিশেষ আকৃতি ধারনা করা

ব্যতীত যথাযথ রূপেই বর্ণিত গুণাবলি তাঁর জন্য স্থির করা বুঝায়। যেমন : আরশে আসীন হওয়া, অবতরণ করা, হাত

ইত্যাদি আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ শানের উপযোগী পর্যায়ে সাব্যস্ত কর বুঝা যায়। পবিত্র কুরআনের বাণী:

"কোন কিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়, তিনি সর্ব শ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।" সূরা আশ-শুরা : ১১

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "আমাদের রব পৃথিবীর আকাশে প্রত্যেক রাতে অবতরণ

করেন।" (বুখারী - মুসলিম) পৃথিবীর আকাশে আল্লাহ্‌ নিজস্ব শান ও স্বাতন্ত্রতা বজায় রেখে অবতরণ করেন, যার

সাথে অন্য কোন কিছুর তুলনা হয় না।

وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَّاحِدٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيْمُ

সব চেয়ে বড় পাপ

৯। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌র নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কি?

৯। উত্তর : শিরকে আকবার। আল্লাহ্‌ তাআলা লোকমানের উপদেশ উল্লেখ করে বলেন :

"আর যখন লোকমান তার পুত্রকে বলল, হে বৎস ! আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করো না, নিশ্চয় শিরক বড় জুলুম।" সূরা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, সবচেয়ে বড়পাপ কি ? তিনি বললেন : "যে আল্লাহ

তোমাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর সাথে শরীক করা।" (বুখারী - মুসলিম)

১০। প্রশ্ন : বড় শিরক কি ?

১০। উত্তর : যে কোন ইবাদত আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারো জন্য নিবেদন করা। যেমন : দুআ, জবেহ্‌ ইত্যাদি।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ

وَلاَ تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَنْفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِيْنَ

"আর আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য এমন কাউকে ডাকবেনা যে তোমার উপকারও করে না, ক্ষতিও করে না, আর যদি তুমি

তা কর তবে অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।" অর্থাৎ মুশরিকদের মধ্যে গণ্য হবে। সূরা ইউনুস : ১০৬

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "কবীরা গুনার ভেতর সবচেয়ে বড় গুনাহ্‌ হল আল্লাহ্‌র সাথে

শরীক করা, পিতা-মাতার নাফারমানী করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।" বুখারী

১১। প্রশ্ন : বড় শিরকের পরিণাম কি ?

১১। উত্তর : চিরস্থায়ী জাহান্নাম। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"যে কেউ আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করবে আল্লাহ্‌ তার ওপর জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন, এবং তার ঠিকানা

জাহান্নাম, আর জালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।" সূরা আল মায়েদা : ৭২

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে কোন কিছু শরীক করে মৃত্যুবরণ

করল সে জাহান্নামে যাবে।" মুসলিম

১২। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করা অবস্থায় সৎকর্ম কাজে আসবে কি ?

১২। উত্তর : শিরকের সাথে সৎকর্ম কোন উপকারে আসবে না। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"তারা যদি শিরক করত তবে তাদের সমস্তকৃতকর্ম নষ্ট হয়ে যেত।" সূরা আল-আন্‌আম : ৮৮

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন : 'আমি শরীকদের শিরিক থেকে

অনেক দূরে, যে ব্যক্তি তার কৃতকর্মে আমার সাথে অন্যকে শরীক করল আমি তাকে ও তার শিরিককে অগ্রাহ্য

করি।" হাদীসে কুদসী - মুসিলম

إِنَّهُ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأوَاهُ النَّارَ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ

বড় শিরকের প্রকারভেদ

১৩। প্রশ্ন : আমরা মৃত বা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের নিকট ফরিয়াদ করব কি ?

১৩। উত্তর : না, আমরা মৃত বা অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট ফরিয়াদ করব না বরং আল্লাহ্‌র নিকট ফরিয়াদ করব।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"তারা আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য যাদেরকে ডাকে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না বরং তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়। তারা

নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা নেই।" সূরা আন-নাহাল :

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "হে চিরঞ্জীব, সবার ধারক ও বাহক, আমি তোমার রহ্‌মত

ফরিয়াদ করি।" তিরমিজী

১৪। প্রশ্ন : আমরা কি জীবিত ব্যক্তির নিকট ফরিয়াদ করতে পারি ?

১৪। উত্তর : হ্যাঁ ! যেসব ক্ষেত্রে জীবিত ব্যক্তি সামর্থ রাখে সে সব ব্যাপারে সাহায্যের ফরিয়াদ করা যাবে।

আল্লাহ্‌ তাআলা মুসা আলাইহিস্‌ সালামের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন :

"মুসার দলের লোকটি তার শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁর সাহায্য কামনা করল, তখন মুসা তাকে ঘুষি মারল, যার ফলে সে মরে

গেল।" সূরা আল-কাসাস : ১৫

وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ ﴿২০﴾ أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاءٍ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ ﴿২১﴾

فَاسْتَغَاثَهُ الَّذِيْ مِنْ شِيْعَتِهِ عَلَى الَّذِيْ مِنْ عَدُوِّهِ فَوَكَزَهُ مُوْسَى فَقَضَى عَلَيْهِ

১৫। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের সাহায্য প্রার্থনা কি জায়েয ?

১৫। উত্তর : যে সব ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের কোন ক্ষমতা নেই সে ক্ষেত্রে জায়েয নয়। আল্লাহ্‌

"আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি, শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।" সূরা আল-ফাতেহা : ৫

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "যখন প্রার্থনা করবে শুধু আল্লাহ্‌র নিকট করবে, যখন

সাহায্য কামনা করবে আল্লাহ্‌র কাছেই করবে।" তিরমিজী

১৬। প্রশ্ন : আমরা জীবিত ব্যক্তির নিকট সাহায্য প্রার্থনা করব কি ?

১৬। উত্তর : হ্যাঁ, যে সব ক্ষেত্রে জীবিত লোক সামর্থ রাখে। যেমন : ঋণ বা কোন বস্তু প্রার্থনা করা।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন:

"সৎকর্ম ও আল্লাহ্‌ ভীতিতে তোমরা পরস্পর সাহায্য করবে।" সূরা আল -মায়েদাহ্‌ : ২

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

"আল্লাহ্‌ ঐ বান্দার সাহায্যে আছেন যে বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।" (মুসলিম)

কিন্তু রোগ মুক্তি, হিদায়াত, রুযী ও এ ধরনের অন্য কিছু আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের নিকট চাওয়া যাবে না। কেননা

জীবিত ব্যক্তিও এসব ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির মত অপারগ।

ইব্‌রাহীমের কথা বর্ণনা করে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাকে পথ প্রদর্শন করেন। তিনিই আমাকে পানাহার করান এবং

রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগ মুক্ত করেন।" সূরা আশ-শু'আরা : ৭৮,৭৯,৮০

১৭। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে মান্নত করা জায়েয কি ?

১৭। উত্তর : আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে মান্নত করা জায়েয নয়। আল্লাহ্‌ তাআলা ইমরানের স্ত্রীর কথা

اَلَّذِيْ خَلَقَنِيْ فَهُوَ يَهْدِيْنِ وَالَّذِيْ هُوَ يُطْعِمُنِيْ وَيَسْقِيْنِ وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ

"হে আমার প্রতিপালক ! আমার গর্ভে যা আছে তা একান্ত তোমার জন্য আমি উৎসর্গ করলাম।" সূরা আলে-

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র আনুগত্যের মান্নত করল সে যেন তাঁর

আনুগত্য করে, আর যে আল্লাহ্‌র অবাধ্যতার মান্নত করল সে যেন তাঁর অবাধ্যতা না করে।" বুখারী

জাদুর বিধান

১৮। প্রশ্ন : জাদুর বিধান কি ?

১৮। উত্তর : জাদু কাবীরা গুনার অন্তর্ভুক্ত, কখনো কুফরী হতে পারে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল, তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত।" সূরা আল-বাকারা : ১০২

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "সাতটি ধ্বংসাত্নক পাপ থেকে দূরে থাক : আল্লাহ্‌র সাথে শিরক

করা, জাদু...।" (মুসলিম)

وَلَكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ

জাদুকর কখনো মুশরিক, কখনো কাফের ও কখনো ফাসাদ সৃষ্টিকারী হয়ে থাকে। ইসলামি বিধান মোতাবেক তাকে

তার কৃতকর্মের শাস্তি স্বরূপ হত্যা করা ওয়াজিব। জাদুকরের কৃতকর্ম নিম্নরূপ হয়ে থাকে : কোন কিছু নষ্টকরা,

ইন্দ্রজাল বা ভেল্কিবাজি, দ্বীন থেকে পথভ্রষ্ট করা, পরস্পরে বিবাদ সৃষ্টি করা, কৃত অপরাধ গোপন করা,

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা, কোন জীবন নষ্ট করা, অথবা জ্ঞান শুন্য করে ফেলা ইত্যাদি যা অনেক

খারাপ ফলাফল বয়ে নিয়ে আসে।

১৯। প্রশ্ন : আমরা গায়েবের ব্যাপারে গণক এবং ভবিষ্যৎ বেত্তাদের খবর বিশ্বাস করব কি ?

১৯। উত্তর : আমরা তাদেরকে বিশ্বাস করব না, কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"বল, আল্লাহ্‌ ব্যতীত গায়েব বা অদৃশ্যের খবর আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ রাখে না।" সূরা আন-নামল : ৬৫

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "যে ব্যক্তি গণক বা ভবিষ্যৎ বেত্তার নিকট আসল এবং তার

কথা বিশ্বাস করল, সে নিশ্চয় মুহাম্মাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার সাথে কুফরী করল।" মুসনাদে আহ্‌মাদ

قُلْ لاَ يَعْلَمُ مَنْ فِيْ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ الْغَْبَ إِلاَّ اللهُ

ছোট শিরক

২০। প্রশ্ন : ছোট শিরক বলতে কি বুঝায় ?

২০। উত্তর : ছোট শিরক কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। তবে ছোট শিরিককারী জাহান্নামে চিরদিন থাকবে না।

ছোট শিরিক কয়েক প্রকার। যেমন : 'রিয়া' বা লোক দেখানো আমল। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"...সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে

শরীক না করে।" সূরা আল-কাহ্‌ফ : ১১০

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "আমি তোমাদের জন্য সবচেয়ে বেশী যে পাপের ভয় পাই তা

হলো ছোট শিরিক তথা 'রিয়া'। (রিয়া : যে সকল আমল আল্লাহর জন্য করা হয়, তা মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে

সম্পাদন করা।) (মুসনাদে আহ্‌মাদ)

২১। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা জায়েয কি ?

২১। উত্তর : আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা জায়েয নয়। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"বল, নিশ্চয় আমার রবের শপথ ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে।" সূরা তাগাবুন : ৭

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: "যে আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করল সে অবশ্যই শিরক

করল।" মুসনাদে আহ্‌মাদ

তিনি আরো বলেন : "কারো যদি শপথ করার প্রয়োজন হয় সে যেন আল্লাহ্‌র নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে।"

কিন্তু কেউ যদি কোন ওলীর ব্যাপারে এ বিশ্বাস পোষণ করে শপথ করে যে, তার ক্ষতি করার ক্ষমতা রয়েছে তবে

তা বড় শিরকের অন্তুর্ভুক্ত। কারণ এতে প্রতিয়মান হয়, সে উক্ত ওলীর নামে মিথ্যা শপথে ভয় পায়, তাই সে তার

فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْ لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالْحاً وَلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَداً

২২। প্রশ্ন : আরোগ্য লাভের জন্য সুতা বা বালা ব্যবহার করা যায় কি ?

২২। উত্তর : আরোগ্যের জন্য সুতা বা বালা ব্যবহার করা যাবে না, কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন:

"আর আল্লাহ্‌ যদি তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই, পক্ষান্তরে তিনি

যদি তোমার কল্যাণ করেন, তবে তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।" সূরা আল আন্‌আম : ১৭

প্রখ্যাত সাহাবী হুজাইফা থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে জ্বর থেকে বাঁচার জন্য হাতে সুতা পরিহিত অবস্থায়

দেখেন, তখন উক্ত সুতা কেটে ফেলে আল্লাহ্‌র এই বাণী পড়েন :

"তাদের অধিকাংশ আল্লাহ্‌কে বিশ্বাস করে, কিন্তু তাঁর সাথে শরীক করে।" সূরা ইউসুফ : ১০৬

২৩। প্রশ্ন : কুনজর থেকে বাঁচার জন্য পুঁতি, কড়ি বা এ ধরনের অন্য কোন বস্তু ঝুলানো যায় কি?

২৩। উত্তর : কুনজর থেকে বাঁচার জন্য এগুলি ঝুলানো যাবে না, কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"আর আল্লাহ্‌ যদি তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই।" সূরা আন্‌আম :

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "যে ব্যক্তি তাবীজ-কবচ ঝুলাল সে শিরক করল।" মুসনাদে

অসীলা ও তার প্রকারভেদ

২৪। প্রশ্ন: কিসের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র অসীলা বা নৈকট্যের মাধ্যম গ্রহণ করা যায়?

২৪। উত্তর : অসীলা বা নৈকট্য গ্রহণের উপায় দুই ধরনের হয়ে থাকে, (১) বৈধ (২) অবৈধ।

(১) বৈধ ও পালনীয় অসীলা গ্রহণের উপায় হলো :

(ক) আল্লাহ্‌ তাআলার নাম ও গুনাবলির মাধ্যমে

(খ) সৎ কর্মের মাধ্যমে ও

(গ) জীবিত সৎ ব্যক্তিদের দুআর মাধ্যমে

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"আল্লাহ্‌র জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম, অতএব তোমরা তাঁকে সেই সব নামেই ডাকবে।" সূরা আল আ'রাফ : ১৮০

"হে মু'মিনগণ! আল্লাহ্‌কে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর।" আল-মায়িদাহ্‌ : ৩৫

(অর্থাৎ তাঁর আনুগত্য এবং তাঁর পছন্দনীয় কাজের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ কর।)

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহ্‌ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "(হে আল্লাহ্‌ !) আমি তোমার নিকট ঐ সমস্ত নামের

(অসীলায়) মাধ্যমে প্রার্থনা করি যে সমস্ত নামে তুমি নিজের নামকরন করেছ।" (মুসনাদে আহ্‌মাদ)

রাসূল এবং অলীদের প্রতি আল্লাহ্‌র ভালবাসার ওসীলা এবং রাসূল ও অলীদের প্রতি আমাদের ভালবাসার ওসীলা

গ্রহণ জায়েয। কেননা তাদের ভালবাসাও সৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, আমরা এভাবে বলতে পারি : (হে আল্লাহ্‌ ! তোমার রাসূল ও অলীদের প্রতি ভালবাসার ওসীলায় আমাদেরকে

সাহায্য কর এবং তোমার রাসূল ও অলীদের প্রতি তোমার ভালবাসার অসীলায় আমাদের রোগ মুক্ত কর।)"

২। অবৈধ অসীলা গ্রহণের রূপ : মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা, তাঁর নিকট প্রয়োজনীয় বস্তু চাওয়া। যেমন

বর্তমানে কতক মুসলিম দেশে তা রয়েছে, এটি বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"আর আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে না, যা তোমার উপকারও করে না, অপকারও করে না। যদি তা কর তবে

তুমি অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।" সূরা ইউনুস : ১০৬ অর্থাৎ মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

يَأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَابْتَغُوْا إِلَيْهِ الْوَسِيْلَةَ

لاَ تَدْعُوْ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَنْفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِيْنَ

পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদার অসীলা গ্রহণ করা। যেমন, কেউ বলল : "হে

আল্লাহ, মুহাম্মাদের মর্যাদার ওসীলায় আমার রোগ মুক্ত কর।" এ ধরনের কথাতেও চিন্তার বিষয় রয়েছে। কারণ,

সাহাবায়ে কেরাম কখনো এ ধরনের অসীলা করেননি। খলীফা ওমর রা. রাসূলের মৃত্যুর পর তাঁর ওসীলা গ্রহণ না করে

তাঁর জীবিত চাচা আব্বাসের দোআর অসীলা গ্রহণ করেছেন। অতএব, অতএব কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্‌

কোন ব্যক্তির মধ্যস্থতার মুখাপেক্ষী, তবে উক্ত ওসীলা শিরকের পর্যায়ে যেতে পারে। যেমন : আমীর ও রাষ্ট্র

প্রধান মধ্যস্থতার মুখাপেক্ষী। এটা প্রকৃত পক্ষে সৃষ্টিকর্তার সাথে সৃষ্টি জীবের সাদৃশ্য স্থাপন করার ন্যায়।

ইমাম আবু হানীফা বলেন : "আমি আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের মাধ্যমে প্রার্থনা করা মাকরূহ মনে করি।" (দুররে

দুআ ও তার বিধান

২৫। প্রশ্ন : দুআ কবুল হওয়ার জন্য কোন সৃষ্টিজীবকে মাধ্যম করা কি জরূরী?

২৫। উত্তর : দুআর জন্য কোন সৃষ্টিজীবকে মাধ্যম করার প্রয়োজন নেই। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"আমার বান্দাগণ যখন তোমাকে আমার সম্মন্ধে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই।" সূরা আল-বাকারা : ১৮৬

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহ্‌ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "নিশ্চয় তোমরা নিকটতম সর্বশ্রোতাকে ডাকছ, যিনি

তোমাদের সাথেই রয়েছেন।" (মুসলিম) অর্থাৎ তিনি তোমাদের সব কিছু শুনেন ও দেখেন।)

২৬। প্রশ্ন : জীবিত ব্যক্তির নিকটে প্রার্থনা জায়েয কি?

২৬। উত্তর : হ্যাঁ, প্রার্থনা মৃত ব্যক্তির নিকট নয়, জীবিত (উপস্থিত) ব্যক্তির নিকট জায়েয।

আল্লাহ্‌ তাআলা রাসূলের জীবদ্দশায় তাঁকে সম্মোধন করে বলেন:

"আর ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মু'মিন নর-নারীদের পাপের জন্য।" সূরা মুহাম্মাদ : ১৯

তিরমিজী বর্ণীত সহীহ্‌ হাদীসে এসেছে : "দৃষ্টি শক্তিহীন এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর

নিকট এসে বলল : আল্লাহ্‌র কাছে দুআ করেন যেন আল্লাহ্‌ আমাকে আরোগ্য দান করেন। তিনি বলেন : যদি তুমি চাও

দুআ করব, আর যদি চাও ধৈর্যধারন কর, তবে তাই তোমার জন্য উত্তম।

২৭। প্রশ্ন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফাআত কার নিকট চাইতে হবে ?

২৭। উত্তর : রাসূলের শাফায়াত আল্লাহ্‌র নিকট চাইতে হবে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন

"বল, সকল সুপারিশ আল্লাহ্‌রই ইখতিয়ারে..." সূরা যুমার : ৪৪

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক সাহাবীকে শিক্ষাদান কল্পে বলেন, বল, "হে আল্লাহ, তাঁকে আমার

সুপারিশকারী নিয়োগ কর।" অর্থাৎ রাসূলকে আমার সুপারিশকারী বানাও। (তিরমিজী: হাসান, সহীহ)

তিনি আরো বলেন : "আমি আমার উম্মতের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত আমার সুপারিশের প্রার্থনা গোপন রেখেছি।

আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় কিয়ামত দিবসে এ সুপারিশ আমার উম্মতের প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি প্রাপ্ত হবে, যে আল্লাহ্‌র সাথে

কোন কিছু শরীক না করে মৃত্যুবরণ করল।" মুসলিম

২৮। প্রশ্ন : জীবিত ব্যক্তির নিকট কি সুপারিশ চাওয়া যাবে ?

২৮। উত্তর : জীবিত ব্যক্তির নিকট পার্থিব্য জগতের ব্যাপারে সুপারিশ চাওয়া যাবে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন

مَنْ يَّشْقَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةُ يَكُنْ لَّهُ نَصِيْبٌ مِّنْهَا وَمَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةُ يَكُنْ لَّهُ كِفْلٌ مِّنْهَا

"কেউ কোন ভাল কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে এবং কেউ কোন মন্দ কাজের সুপারিশ করলে তাতে

তার অংশ থাকবে...।" সূরা আন-নিসা : ৮৫ (অর্থাৎ সে তার ভাল-মন্দ সুপারিশের জন্য প্রতিদান পাবে)

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহ্‌ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: "সুপারিশ কর প্রতিদান পাবে।" আবু দাউদ


সূফীবাদ ও তার ভয়াবহতা

২৯। প্রশ্ন : সূফী ত্বত্তের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কি?

২৯। উত্তর : সূফীবাদ রাসূল, সাহাবা ও তাবিয়ীদের যুগে ছিল না। পরবর্তী যুগে ইউনান তথা গ্রীক দর্শন আরবী

ভাষায় অনুবাদ হওয়ার পর তা প্রকাশ পায়।

ইসলামের সাথে সূফীবাদের বহুক্ষেত্রে বিরোধ রয়েছে। যেমন :

১। আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনা : অধিকাংশ সূফীগণ আল্লাহ্‌ ব্যতীত মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা

করে, অথচ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহ্‌ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "দুআই হলো ইবাদত।" (তিরমিজী) কারণ,

আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনা করা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত যা সমস্ত সৎকর্ম নষ্ট করে দেয়।

২। অধিকাংশ সূফীগণ বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্‌ তাআলা স্বীয় স্বত্ত্বায় সর্বস্থানে বিরাজমান। অথচ তা কুরআন

বিরোধী। ইরশাদ হচ্ছে :

"দয়াময় 'আরশে' সমাসীন।" (তা-হা : ৫) (এর ব্যাখ্যায় বুখারীর ভাষ্য অনুযায়ী তিনি ওপরে ও উচ্চে অধিষ্টিত।)

৩। কতিপয় সূফীর বিশ্বাস, আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর সৃষ্টি জীবের ভিতরে অবতরণ করেন। যেমন ভ্রান্ত সূফী সম্রাট

ইব্‌নে আরাবী -যার কবর সিরিয়ার দামেস্কে- বলেন :

"বান্দাই তো রব আর রবই তো বান্দা। হায়! কিছুই বুঝিনা, কে আমল করার জন্য আদিষ্ট?"

তাদের আরেক তাগুত বলে: "কুকুর হোক আর শুকর হোক, সেই তো আমাদের মা'বুদ।"

৪। অধিকাংশ সূফীর ধারনা যে আল্লাহ্‌ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দুনিয়া সৃষ্টি

করেছেন। অথচ এটা কুরআন বিরোধী আক্বীদা। ইরশাদ হচ্ছে :

"আমি জ্বিন ও মানুষকে ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।" সূরা আজ-জারিয়াত : ৫৬

"আমি তো পরকাল ও ইহ্‌কালের মালিক।" সূরা আল-লাইল : ১৩

৫। অধিকাংশ সূফীর ধারণা আল্লাহ্‌ মুহাম্মাদকে স্বীয় নূর দ্বারা এবং মুহাম্মাদের নূর দ্বারা সব কিছু সৃষ্টি করেছেন,

মুহাম্মাদই হচ্ছে আল্লাহ্‌র প্রথম সৃষ্টি। তাদের এ ধারণা কুরআন বিরোধী।

৬। সুফীদের ইসলাম বিরোধী আকীদার কতিপয় নমুনা। যেমন: অলীদের নামে মান্নত করা, ওলীদের কবরের চারিপাশে

তওয়াফ করা, কবরের ওপর নির্মাণ কার্য করা, আল্লাহ্‌ ও রাসূল থেকে বর্ণিত হয়নি এমন বিশেষ পন্থায় জিকির

করা, জিকরের সময় নাচা-নাচি, ধুমপান বা গাঁজা খাওয়া, তাবীজ-কবচ, জাদু, ভেল্কিবাজী, অন্যের মাল-সম্পদ নানা

প্রতারনায় ভক্ষণ এবং তাদের উপর বিভিন্ন ছলনা, বাহানা করা প্রভৃতি অনেক ধরনের ভ্রান্ত আক্বীদা ও

কার্যকলাপ দেখা যায় তাদের মধ্যে।

আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের কথার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান

৩০। প্রশ্ন : আমরা আল্লাহ্‌ এবং তার রাসূলের কথার ওপর কারো কোন কথাকে অগ্রাধিকার দেব কি?

৩০। উত্তর : আমরা আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলের কথার ওপর কারো কোন কথা অগ্রাধিকার দেব না। আল্লাহ্‌

َيأَيُّهَا الَْذِيْنَ آمَنُوْا لاَ تُقَدِّمُوْا بَيْنَ يَدَيِ اللهِ وَرَسُوْلِهِ

"হে মু'মিনগণ! আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের সামনে তোমরা কোন বিষয়ে আগে বেড়ে যেও না।" সূরা আল-হুজুরাত : ১

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টিজীবের আনুগত্য চলবে

সাহাবী ইব্‌নে আব্বাস রা. বলেন : "আমি তাদেরকে দেখছি, তারা অতি সত্বর ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি বলি 'নবী

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন', এর বিপরীতে তারা বলে, 'আবু বকর-ওমর বলেছে!" মুসনাদে আহ্‌মাদ ও

৩১। প্রশ্ন : দ্বীনের ক্ষেত্রে মতবিরোধ হলে আমাদের করণীয় কি?

৩১। উত্তর : আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীসের আশ্রয় গ্রহণ করব। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা আল্লাহ্‌ ও রাসূলের দিকে উপস্থাপিত কর, যদি তোমরা আল্লাহ্‌

ও কিয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণ কর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।" সূরা

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "আমি তোমাদের মধ্যে দুটি বস্তুই রেখে গেলাম, যতক্ষণ

পর্যন্ত তোমরা এই দুটি বস্তুকে মজবুতভাবে ধরে থাকবে কোনক্রমেই পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহ্‌র কিতাব আর

আমার সুন্নাত।" হাদীসটি ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন এবং আল-বানী তাঁর সহীহ্‌ জামেতে সহীহ বলেছেন।

৩২। প্রশ্ন : কেউ যদি মনে করে তার প্রতি শরীয়তের আদেশ-নিষেধ রক্ষা করা জরুরী নয়, তবে তার বিধান কি ?

৩২। উত্তর : উক্ত ব্যক্তি কাফের, মুরতাদ এবং মিল্লাতে ইসলাম বহির্ভুত। কারণ, দাসত্ব একমাত্র আল্লাহ্‌র

জন্য। যা কালেমায়ে শাহাদাতের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে প্রমাণ হয়। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত বাস্তব জগতে

আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ ইবাদত না করা হবে ততক্ষণ তাঁর দাসত্ব প্রমাণ হবে না। যার ভেতর রয়েছে ইসলামের মৌলিক

আকীদা, ইবাদতের নিদর্শনসমূহ, শরীয়ত ভিত্তিক ফয়সালা, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র বিধান বাস্তবায়ন

ইত্যাদি। আল্লাহ্‌র নাজিলকৃত বিধানের বাইরে হালাল-হারাম সাব্যস্ত করা সরাসরি শিরকের অন্তর্ভূক্ত এবং তা

ইবাদতে শিরিক করার সমতুল্যও বটে।

فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهَ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرَ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيْلاً

কবর যিয়ারত ও তার আদব

৩৩। প্রশ্ন : কবর যিয়ারতের বিধান কি ? এবং আমরা কেন কবর যিয়ারত করি?

৩৩। উত্তর : মহিলা ব্যতীত শুধু পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত সাধারণত মুস্তাহাব।


কবর যিয়ারতের কিছু উপকারীতা ও কতিপয় আদব নিম্নে বিধৃত হল :

১। জিয়ারতকারীর জন্য কবর যিয়ারত উপদেশ ও নসীহত স্বরূপ। এর ফলে মৃত্যুর কথা স্বরণ হয়, যা সৎকর্মের

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত নিষেধ করেছিলাম, তবে

এখন তোমরা যিয়ারত করতে পারো।" (মুসলিম)

মুসনাদে আহ্‌মাদ ও অন্য কিতাবে একটি বর্ণনায় এসেছে : "কবর যিয়ারত তোমাদেরকে পরকাল স্বরণ করিয়ে দেয়।"

২। আমরা কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য এস্তেগফার করব, ক্ষমা চাইব। আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে তাদের নিকট কোন

প্রার্থনা কিংবা তাদের কোন দুআ কামনা করব না।

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে কবরস্থানে গিয়ে নিম্নের দোয়াটি পড়ার দীক্ষা দিয়েছেন

" اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ ، أَسْاَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ "

অর্থ "হে মু'মিন ও মুসলিম কবরবাসীগণ তোমাদের প্রতি সালাম, ইন্‌শাআল্লাহ্‌ আমরাও তোমাদের সাথে অবশ্যই

মিলিত হবো, আমি আল্লাহ্‌র নিকট আমাদের ও তোমাদের জন্য শান্তি কামনা করছি।" (মুসলিম)

৩। কবরের ওপর বসা ও তার দিক ফিরে নামায পড়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

"কবরের ওপর তোমরা বসবে না এবং তার দিকে ফিরে নামায আদায় করবে না।" (মুসলিম)

৪। কবরস্থানে কোরআন মজীদ এমনকি সূরা ফাতেহাও পড়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

বলেন : "তোমরা তোমাদের ঘর-বাড়ীকে কবরস্থান বানিয়ে নিওনা, কেননা যে ঘরে সূরা বাকারা পড়া হয় শয়তান সে

ঘর থেকে পলায়ন করে।" (মুসলিম)

উল্লেখিত হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, কবরস্থান কোরআন তেলাওয়াতের স্থান নয়, কোরআন তেলাওয়াতের স্থান

বাড়ী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবা থেকে কোন প্রমাণ নেই যে, তাঁরা মৃতদের জন্য

কোরআন পড়েছেন; হ্যাঁ, তাঁরা মৃতদের জন্য দুআ করেছেন। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত

ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করতেন, তার নিকট দাঁড়িয়ে বলতেন : "তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা

কর এবং তার সুদৃঢ় হওয়ার জন্য দুআ কর। যেহেতু এখন সে জিজ্ঞাসিত হবে।" (হাকেম)

৫। কবরে বা মাজারে পুষ্পমাল্য বা ফুল অর্পণ করা যাবে না। এ আমল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও

তাঁর সাহাবাগণ থেকে প্রমাণিত নয়, এটা খৃষ্টানদের কালচার। আমরা যদি উক্ত পুস্পমাল্যের খরচটা ফকীর-

মিসকীনকে দেই তবে তাতে মৃত ব্যক্তি ও ফকীর-মিসকীন উভয়ে লাভবান হবে।

৬। কবর প্লাষ্টার, পেইন্ট ও উঁচু করা এবং কবরে নির্মাণ কার্য করা নিষেধ। হাদীসে বর্ণিত : "রাসূলুল্লাহ্‌

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে নির্মাণ কাজ ও প্লাষ্টার করতে নিষেধ করেছেন।" মুসলিম

৭। প্রিয় মুসলিম ভাই! মৃত ব্যক্তির নিকট দুআ চাওয়া ও তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা থেকে বিরত থাকুন।

মৃতরা সামর্থহীন, বরং এক আল্লাহ্‌কে ডাকুন, তিনি সর্ব শক্তিমান ও দুআ কবুল করেন। উপরুন্তু মৃত ব্যক্তিদের

নিকট কিছু প্রার্থনা করা শিরকে আকবরের অন্তর্ভুক্ত।


কবরে সিজদা ও তাওয়াফ করা

৩৪। প্রশ্ন : কবরে সিজদা ও সেখানে জবেহ্‌ করার বিধান কি ?

৩৪। উত্তর : কবরে সিজদা ও পশু জবেহ করা জাহেলী যুগের মুর্তিপুজা তুল্য এবং বড় শিরক। কারণ, সিজদা ও পশু

উৎসর্গ করা ইবাদত, যা এক আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারো জন্য বৈধ নয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য

কাউকে সেজদা করল কিংবা অন্য কারো উদ্দেশ্যে জবেহ করল, সে মুশরিক হয়ে গেল।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"বল, নিশ্চয় আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু, জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্‌র জন্য

নিবেদিত। তাঁর কোন শরীক নেই, আর আমি এর প্রতি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলমান।" সূরা আল-

আন্‌আম : ১৬২ - ১৬৩)

আল্লাহ্‌ তাআলা আরো বলেন :

قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَا وَمَمَاتِيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ

"আমি অবশ্যই তোমাকে (হাউজে) কাওসার দান করেছি, সুতরাং তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে নামায আদায় কর

এবং কুরবানী কর।" সূরা আল-কাওসার : ১-২

এছাড়া আরো বহু আয়াত রয়েছে যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সিজদা, পশু উৎসর্গ করে জবেহ করা ইবাদতের

অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে করা শিরকে আকবর।

৩৫। প্রশ্ন : অলীদের কবরের চারিপার্শ্বে তাওয়াফ করার বিধান কি ? অলীদের উদ্দেশ্যে পশু উৎসর্গ বা জবেহ

করা অথবা মান্নত করার বিধান কি ? ইসলামের দৃষ্টিতে জীবিত বা মৃত অলীদের নিকট দুআ প্রার্থনা কি জায়েয?

৩৫। উত্তর : মৃত অলীদের উদ্দেশ্যে পশু উৎসর্গ বা জবেহ করা ও মান্নত করা শিরকে আকবর। অলী বলতে বুঝায়

যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র বন্ধুত্ব লাভ করেছে এবং শরীয়তের বিধি-নিষেধগুলো যথাযথ

পালন করে। যদিও তার থেকে কোন কারামত প্রকাশ না পায়।

মৃত অলী বা অন্যদের কাছে দুআ প্রার্থনা জায়েজ নয়, জীবিত সৎ ব্যক্তিদের নিকট দুআ চাওয়া জায়েয। কবরের

চতুর্পাশে তাওয়াফ করা জায়েয নয়, তা একমাত্র কা'বা শরীফের বৈশিষ্ট। কেউ যদি কবরবাসীর নৈকট্য অর্জনের

উদ্দেশ্যে তাওয়াফ করে তবে তা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত বলেই গণ্য। আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য হলেও এটা

জঘন্যতম বিদয়াত। কারণ, কবর ত্বওয়াফ কিংবা নামাজের জন্য নয়। যদিও আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি কামনা উদ্দেশ্য

আল্লাহ্‌র পথে দাওয়াতের বিধান

৩৬। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌র পথে দাওয়াত এবং ইসলামের জন্য কাজ করার বিধান কি ?

৩৬। উত্তর : আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়া প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। কুরআন-হাদীস কর্তৃক প্রত্যেকেই এর

দায়িত্বপ্রাপ্ত। এর জন্য আল্লাহর সরাসরি নিদের্শও বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন :

"তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও উত্তম ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে আহ্বান কর।" সূরা আন-নাহাল : ১২৫

আল্লাহ্‌ আরো বলেন :

"তোমরা আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিত।" সূরা আল-হজ : ৭৮

অতএব, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সার্বিকভাবে জিহাদে অংশ নেয়া। এবং সামর্থের সবটুকু উজাড় করে দেয়া।

বিশেষ করে বর্তমান যুগে ইসলামের কাজ করা, আল্লাহ্‌র পথে দাওয়াত ও তাঁর পথে জিহাদ করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে

পড়েছে বরং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তা আবশ্যক হয়ে গেছে। অতএব, এর থেকে বিমুখ ব্যক্তি আল্লাহ্‌র দরবারে

পাপী-গুনাহ্‌গার বলে বিবেচিত হবে।

৩৭। প্রশ্ন : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর বা অন্য নবী এবং সৎ ব্যক্তিদের কবর স্পর্শ করা

এমনিভাবে মাকামে ইব্‌রাহীম, কাবা ঘরের দেয়াল-গেলাফ এবং দরজা স্পর্শ করার বিধান কি ?

৩৮। উত্তর : কবর স্পর্শ করার ব্যাপারে আবুল আব্বাস রাহেমাহুল্লাহ্‌ বর্ণনা করেন :

উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অন্য কোন নবী বা সৎ

ব্যক্তিদের কবর যিয়ারত করার সময় হাত দিয়ে স্পর্শ কিংবা মুখ দিয়ে চুম্বন করা যাবে না। দুনিয়াতে জড় পদার্থের

মধ্যে হজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) ব্যতীত কোন বস্তু চুম্বন দেয়া বৈধ নয়। বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে,

ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু হজরে আসওয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলেন : "আল্লাহ্‌র শপথ ! নিশ্চয় আমি জানি যে, তুমি

একটি পাথর মাত্র। তুমি ক্ষতিও করতে পারবে না উপকারও করতে পারবে না। অতএব, আমি যদি রাসূলুল্লাহকে

اُدْعُ إِلَى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ

চুম্বন দিতে না দেখতাম তবে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।" আর চুম্বন দেয়া ও স্পর্শ করা শুধুমাত্র

বায়তুল্লাহ্‌র (কাবা শরীফের) কোণের জন্য নির্ধারিত। অতএব আল্লাহ্‌র ঘরের সাথে সৃষ্টি জীবের ঘরের তুলনা

ইমাম গায্‌যালী রাহেমাহুল্লাহ্‌ বলেন : "কবর স্পর্শ করা ইহুদী ও খৃষ্টানদের অভ্যাস।"

মাকামে ইব্‌রাহীমের ব্যাপারে কাতাদা বলেন : "মাকামে ইব্‌রাহীমের নিকট নামায পড়ার জন্য আদেশ করা হয়েছে তা

স্পর্শ করার জন্য আদেশ করা হয়নি।"

ইমাম নবভী বলেন : "মাকামে ইব্‌রাহীম চুম্বন ও স্পর্শ করা যাবে না, এটা বিদআত।"

কাবা ঘরের অন্যান্য অংশ সম্পর্কে আবুল আব্বাস বর্ণনা করেন: চার ইমাম ও অন্যান্য ইমামদের মতে রুকনে

ইয়ামানীকে শুধু হাত দিয়ে স্পর্শ এবং হজরে আসওয়াদকে মুখ দিয়ে চুম্বন ও হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে। এ ছাড়া

অবশিষ্ট দুই কোণ বা কাবা শরীফের অন্যান্য অংশ চুম্বন কিংবা স্পর্শ করা যাবে না। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকনে ইয়ামানী ও হজরে আসওয়াদ ব্যতীত অন্য কিছু স্পর্শ করেননি।

অতএব, যেখানে উক্ত দুই কোণ ব্যতীত কাবার অন্য কোন অংশ স্পর্শ ও চুম্বন জায়েয নেই, অথচ তা

বাইতুল্লাহর অংশ, সেখানে কাবা শরীফের গেলাফ, দরজা ও মক্কা-মদীনা মসজিদের দরজাসমূহ স্পর্শ ও চুম্বন করার

বৈধতার প্রশ্নই আসে না।



অনুবাদক : মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফ্‌ফান
লেখক : শায়খ মুহাম্মাদ জামীল যাইনু
تأليف: محمد جميل زينو
ترجمة: محمد عبد الرب عفان
সম্পাদনা : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
مراجعة: ثناء الله نذير أحمد
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة بمدينة الرياض

110
অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ : ইসলামি দৃষ্টিকোণ




بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله والصلاة والسلام على من لا نبي بعده

সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর জন্য। সালাত ও সালাম নিবেদন করছি আমাদের সর্বশেষ নবী

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সকল সাহাবীগণের প্রতি।

বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইসলাম সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকার কারণে বা ইসলাম সম্পর্কে

উদাসীনতার কারণে ইসলাম ধর্মের নামে অনেক অনাচার, কুসংস্কৃতি, শিরক ও বিদআত প্রচলিত আছে ও প্রচলন

ঘটছে। এর মধ্যে একটি হল, অলী আওলিয়াদের অসীলা দিয়ে দুআ-প্রার্থনা করা, তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া, তারা

ভাল-মন্দ কিছু করতে পারে বলে বিশ্বাস রাখা, তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে

বলে বিশ্বাস করা। এ উদ্দেশ্যে তাদের কবর যিয়ারত করা, তাদের কবর তওয়াফ করা, কবরে উরস উৎসব

আয়োজন করা ইত্যাদি। অনেক মুসলিম এ সকল কাজ এ ধারনার ভিত্তিতেই করে যে, এই কবরে শায়িত অলী

আওলিয়ারা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে। অথবা তাদেরকে অসীলা বা মাধ্যম হিসাবে

গ্রহণ করলে আল্লাহ আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন। তাদেরকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করতে যেয়ে তারা তার মাধ্যমে

বা তার নামে বিপদ থেকে মুক্তি কামনা করে আল্লাহর কাছে। অনেকে সরাসরি তাদের কাছেই নিজেদের প্রয়োজন ও

অভাব পুরণের জন্য প্রার্থনা করে। বিপদ থেকে উদ্ধার কামনা করে। তারা মনে করে এ ধরণের অসীলা গ্রহণ করতে

ইসলামে নিষেধ নয়। বরং এদের অনেকে মনে করে এ ধরনের অসীলা গ্রহণ ইসলামে একটি ভাল কাজ।

কিন্তু আসলে অসীলা গ্রহণ কী? এর বৈধতা কতটুকু?

বইটিতে এ বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ।

সত্যিকার অসীলা হল, আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণের

মাধ্যমে সৎকর্ম করা আর নিষিদ্ধ ও হারাম কথা-কর্ম থেকে বেঁচে থাকা। আর নেক আমল সম্পাদন করার মাধ্যমে

আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা হল সত্যিকার অসীলা। তা ছাড়া আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও গুণাবলির মাধ্যমে

অসীলা গ্রহণের কথা আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন।

কিন্তু মৃত অলী আওলিয়াদের কবরের কাছে যাওয়া, কবর তওয়াফ করা, কবরে-মাজারে মানত করা, কবরে শায়িত

ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা, তার কাছে নিজের অভাব অভিযোগের কথা বলা ইত্যাদি কাজ-কর্মের মাধ্যমে

অসীলা গ্রহণ শুধু নিষিদ্ধই নয় বরং এগুলো শিরক ও কুফরী। এগুলোতে কেহ লিপ্ত হলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।

নাউজুবিল্লাহ!

এ গেল মৃত অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ সম্পর্কে। আবার অনেকে জীবিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে নাজায়েয অসীলা

গ্রহণ করে থাকে। তাদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে থাকে। যেমন গরু, ছাগল, মুরগী জবেহ করার সময় বলে থাকে:

আমাদের পীর সাবের নামে বা আমার বাবার নামে জবেহ করলাম। অথবা নিজের পীর বা পীরের পরিবারের লোকদের

সম্মানের জন্য সেজদা করে থাকে। এগুলো সবই শিরক এবং শিরকে আকবর বা বড় শিরক। অনেকে নিজের জীবিত

পীর ফকীরদের সম্পর্কে ধারনা করে থাকে যে, আল্লাহ তাআলার সাথে তার বিশেষ যোগাযোগ বা সম্পর্ক আছে,

তাই তার মাধ্যমে আল্লাহকে পাওয়া যাবে, এটাও শিরক।

যারা একদিন লাত উজ্জা প্রভৃতি দেব-দেবীর পূজা করতো, তারা কিন্তু এ বিশ্বাস করতো না যে এগুলো হল

তাদের প্রভূ বা সৃষ্টিকর্তা। বরং তারা বিশ্বাস করতো এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বা তাদেরকে

অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে তারা আল্লাহ নৈকট্য অর্জন করবে। তারা এটাও বিশ্বাস করতো না যে, এ সকল দেব-

দেবী বৃষ্টি দান করে বা রিযক দান করে। তারা বলতো :

আমরা তো তাদের ইবাদত করি এ জন্য যে তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। (সূরা যুমার, আয়াত ৩)

তারা এ সম্পর্কে আরো বলতো :

এরা (দেব-দেবী) আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শুপারিশ করবে। (সূরা ইউনূস, আয়াত ১৮)

দেখা গেল তারা এ অসীলা গ্রহণের কারণেই শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়লো। আর এ শিরকের বিরুদ্ধে তাওহীদের দাওয়াতের

জন্যই আল্লাহ তাআলা রাসূলগণকে পাঠালেন যুগে যুগে, প্রতিটি জনপদে। এ সকল দেব-দেবীর কাছে যেমন

প্রার্থনামূলক দুআ করা শিরক তেমনি সাহায্য প্রার্থনা করে দুআ করাও শিরক।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

বল, তাদেরকে ডাক, আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে (উপাস্য) মনে কর। তারা তো তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর

করার ও পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না।  (সূরা ইসরা, আয়াত ৫৬)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:

قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ

বল, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে তাদেরকে আহবান কর। তারা আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যে

অণু পরিমাণ কোন কিছুর মালিক নয়। আর এ দুয়ের মধ্যে তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্য থেকে

কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নয়। আর আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া তাঁর কাছে কোন সুপারিশ কোন কাজে

আসবে না। (সূরা সাবা, আয়াত ২২-২৩)


قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِهِ فَلَا يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنْكُمْ وَلَا تَحْوِيلًا. (الإسراء : 56)

﴿22﴾ وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ. (سبأ : 22-23)

এ সকল আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বললেন: আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা

করা হয় তারা অনু পরিমাণ বস্তু সৃষ্টি করতে পারে না। তারা কোন সৃষ্টি জীবের সামান্য কল্যাণ করার ক্ষমতা

রাখে না। তারা আশ্রয় প্রার্থনাকারীকে কোন আশ্রয় দেয়ার সামর্থ রাখে না।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরকে মসজিদ বানাতে নিষেধ করেছেন। কবরের কাছে নামাজ পড়তে

নিষেধ করেছেন। কবরকে সেজদা দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি ওফাতের সময়ও বলেছেন:

আল্লাহ তাআলা ইহুদী ও খৃষ্টানদের অভিসম্পাত করুন। তারা নবীদের কবরকে ইবাদতের স্থান হিসাবে গ্রহণ করেছে।

আর ইবাদত-বন্দেগীর দ্বারা কবরকে সম্মান করা হল শিরকে লিপ্ত হওয়ার একটি রাস্তা। এভাবে কবরকে পূজা

করার মাধ্যমেই মানুষ মূর্তি পূজার দিকে ধাবিত হয়।

ওমর রা. দুআর সময় আব্বাস রা. কে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, এ বিষয়টি দিয়ে অনেকে মৃত ব্যক্তির অসীলা

গ্রহণ করার বৈধতা দেয়ার প্রয়াস পান। কিন্তু ওমর রা. আব্বাস রা. এর দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছেন তার

ব্যক্তিত্বকে নয়। আর আব্বাস রা. তখন জীবিত ছিলেন। যে কোন জীবিত ব্যক্তির দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ

করা যায়। ওমর রা. তা-ই করেছেন। তিনি বলেছেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত থাকাকালে

আমরা তার অসীলা দিয়ে দুআ করতাম। এখন তিনি নেই তাই আমরা তার চাচা আব্বাসকে দুআ করার ক্ষেত্রে অসীলা

হিসাবে নিলাম। ওমর রা. এর এ বক্তব্যে স্পষ্ট হল যে, তিনি কোন মৃত ব্যক্তিকে দুআর সময় অসীলা হিসাবে গ্রহণ

বৈধ মনে করতেন না। তিনি নবী হলেও না।

বিষয়টা এমন, যেমন আমরা কোন সৎ-নেককার ব্যক্তিকে বলে থাকি, আমার জন্য দুআ করবেন। কোন আলেম বা

বুযুর্গ ব্যক্তির মাধ্যমে আমরা নিজেদের জন্য দুআ করিয়ে থাকি। এটাও এক ধরণের অসীলা গ্রহণ। এটা বৈধ।

কিন্তু কোন বুযুর্গ ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তাকে অসীলা করে দুআ করা, দুআর সময় তার রূহের প্রতি

মনোনিবেশ করা (যেমন অনেকে বলে থাকে আমি আমার দাদাপীর অমুকের দিকে মুতাওয়াজ্জুহ হলাম), তার থেকে

ফয়েজ-বরকত লাভের ধারনা করা, এগুলো নিষিদ্ধ ও শিরক। মৃত ব্যক্তি যত মর্যাদাবান বুযুর্গ হোক সে কারো

ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখে না। যখন সে মৃত্যুর পর নিজের জন্য ভাল মন্দ কিছু করতে পারে না, তখন অন্যের

জন্য কিছু করতে পারার প্রশ্নই আসে না। সে কারো দুআ কবুলের ব্যাপারে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। কাউকে

উপকার করার বা বিপদ থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা তার থাকে না।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে বলেছেন : মৃত ব্যক্তি নিজের কোন উপকার করতে পারে

না। তিনি বলেছেন :

মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু তিনটি কাজের ফল সে পেতে থাকে।

১. ছদকায়ে জারিয়াহ (এমন দান যা থেকে মানুষ অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়ে থাকে)

২. মানুষের উপকারে আসে এমন ইলম (বিদ্যা)

৩. সৎ সন্তান যে তাঁর জন্য দুআ করে। বর্ণনায়: মুসলিম

হাদীসটির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানা গেল মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তিদের দুআ, ক্ষমা প্রার্থনার ফলে উপকার পেতে

পারে। কিন্তু জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের থেকে এরূপ কিছু আশা করতে পারেনা।

যখন হাদীস থেকে প্রমাণিত হল যে, কোন আদম সন্তান যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়।

তার আমল দিয়ে সে কোন উপকার লাভ করতে পারে না, তখন আমরা কিভাবে বিশ্বাস করি যে, অমুক ব্যক্তি কবরে

জীবিত আছেন? তার সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়? তিনি আমাদের উপকার করতে পারেন? আমাদের প্রার্থনা

শুনেন ও আল্লাহর কাছে শুপারিশ করেন? এগুলো সব অসার বিশ্বাস। এগুলো যে শিরক তাতে কোন সন্দেহ নেই।

মৃত ব্যক্তিরা যে কবরে শুনতে পায় না, কেহ তাদেরকে কিছু শুনাতে পারে না এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল

কুরআনে ইরশাদ করেছেন। তিনি নবীকে সম্বোধন করে বলেছেন:

নিশ্চয় তুমি মৃতকে শোনাতে পারবে না, আর তুমি বধিরকে আহবান শোনাতে পারবে না। (সূরা নামল, আয়াত ৮০)

إذا مات الإنسان انقطع عنه عمله إلا من ثلاث : إلا من صدقة جارية أو علم ينتفع به أو ولد صالح يدعو له .  رواه مسلم

إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ. (النمل : 80)

যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মৃতকে কিছু শোনাতে পারেন না, তখন সাধারণ মানুষ

কিভাবে এ অসাধ্য সাধন করতে পারে? কাজেই আমরা মৃতদের কবরে যেয়ে যা কিছু বলি, যা কিছু প্রার্থনা করি তা

তারা কিছুই শুনতে পায় না। যখন তারা শুনতেই পায় না, তখন তারা প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কিভাবে কবুল করবে?

কিভাবে তাদের হাজত-আকাংখা পূরণ করবে?

আল্লাহ তাআলা ব্যতীত যা কিছুর উপাসনা করা হয়, তা সবই বাতিল। আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿106﴾ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ

আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে

না। অতএব তুমি যদি কর, তাহলে নিশ্চয় তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন

ক্ষতি পৌঁছান, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহের

কোন প্রতিরোধকারী নেই। তিনি তার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে তা দেন। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু

(সূরা ইউনূস, আয়াত ১০৬-১০৭)

এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করা হয় তা সবই

বাতিল। আরো স্পষ্ট হল যে, এগুলো কাউকে উপকার করতে পারে না বা ক্ষতি করতে পারে না।

যখন তারা সবই বাতিল, তাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করলে যখন কোন উপকার হয় না তখন কেন তাদের স্মরণাপন্ন

হবে? কেন তাদেরকে অসীলা গ্রহণ করা হবে? কেন তাদের কবরে যেয়ে দুআ করা হবে?

অনেক বিভ্রান্ত লোককে বলতে শুনা যায়, অমুক অলীর মাজার যিয়ারত করতে গিয়েছিলাম। সেখানে যেয়ে এই দুআ

করেছিলাম। দুআ কবুল হয়েছে, যা চেয়েছিলাম তা পেয়ে গেছি ইত্যাদি। এ ধরনের কথা-বার্তা আল্লাহ তাআলার প্রতি

মিথ্যারোপের শামিল।

হ্যা, হতে পারে অলী আওলিয়াদের মাজারে গিয়ে কিছু চাইলে তা যেন অর্জন হবে না এ কথা বলা যায় না। তবে অর্জন

হলে সেটা দু কারণে হতে পারে:

এক. অলীর মাজারে যেয়ে যা চাওয়া হয়েছে তা পুরণ করা কোন সৃষ্টিজীবের পক্ষে সম্ভব হবে অথবা হবে না। যদি

সম্ভব হয়, তাহলে হতে পারে শয়তান প্রার্থীত বিষয়গুলোকে অর্জন করিয়ে দিয়েছে। যাতে শিরকের প্রতি আসক্তি

সৃষ্টি হয়। যা চেয়েছে শয়তান সেগুলো তাকে দিয়েছে। কেননা যে সকল স্থানে আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্যের

ইবাদত করা হয় সে সকল স্থানে শয়তান বিচরণ করে। যখন শয়তান দেখল কোন ব্যক্তি কবর পূজা করছে, তখন সে

তাকে সাহায্য করে থাকে। যেমন সে সাহায্য করে মূর্তিপূজারীদের। সে তাদের এ সকল শিরকি কাজগুলোকে তাদের

কাছে সুশোভিত করে উপস্থাপন করে থাকে বলে আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে বহু স্থানে উল্লেখ করেছেন।

এমনিভাবে শয়তান গণক ও জোতিষিদের সাহায্য করে থাকে তাদের কাজ-কর্মে। তাই অনেক সময় এ সকল গণকদের

কথা ও ভবিষ্যতবাণী সত্যে পরিণত হতে দেখা যায়।

এমনিভাবে শয়তান মানুষের আকৃতি ধারণ করে বিপদগ্রস্ত মানুষকে বলে থাকে অমুক মাজারে যাও, তাহলে কাজ হবে।

পরে সে যখন মাজারে যায় তখন শয়তান মানুষের রূপ ধারণ করে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। ফলে বিপদে পড়া মানুষটি

মনে করে মাজারে শায়িত অলী তাকে সাহায্য করেছে। এমনিভাবে শয়তান মানব সমাজে শিরকের প্রচলন ঘটিয়েছে ও

শিরকের প্রসার করে যাচ্ছে।

দুই. আর যদি প্রার্থীত বিষয়টি এমন হয় যা পুরণ করা শুধু আল্লাহ তাআলার পক্ষেই সম্ভব, তাহলে বুঝতে হবে এ

বিষয়টি অর্জনের কথা তাকদীরে আগেই লেখা ছিল। কবরে শায়িত ব্যক্তির বরকতে এটির অর্জন হয়নি।

তাই সকল বিবেকসম্পন্ন মানুষকে বুঝতে হবে যে মাজারে যেয়ে দুআ করলে কবুল হয় বলে বিশ্বাস করা সর্বাবস্থায়ই

কুসংস্কার। কেহ যদি মাজারে যেয়ে দুআ প্রার্থনা করে, মাজার পূজা করে মানুষ থেকে ফেরেশতাতে পরিণত হয় তাহলেও

বিশ্বাস করা যাবে না যে, এটা মাজারে শায়িত অলীর কারণে হয়েছে। এর নামই হল ঈমান। এর নামই হল নির্ভেজাল

তাওহীদ। তাওহীদের বিশ্বাস যদি শিরকমিশ্রিত হয়, কু সংস্কারাচ্ছন্ন হয় তা হলে ব্যক্তির মুক্তি নেই।

يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ﴿107﴾ (يونس)


কাল্পনিক কারামত

অনেক মানুষই মুজিযা আর কারামতের পার্থক্য জানে না। মুজিযা আর কারামত কি তা বুঝে না। মুজিযা হল এমন

অলৌকিক বিষয় যা নবীদের থেকে প্রকাশ পায়। আর কারামত হল এমন অলৌকিক বিষয় যা আল্লাহ তাআলার

প্রিয় বান্দাদের থেকে প্রকাশ পায়। মুজিযা প্রকাশের শর্ত হল নবী বা রাসূল হওয়া। আর কারামত প্রকাশের শর্ত

হল নেককার ও মুত্তাকী হওয়া। অতএব যদি কোন বিদআতী পীর-ফকির বা শিরকে লিপ্ত ব্যক্তিদের থেকে

অলৌকিক কিছু প্রকাশ পায় সেটা মুজিযাও নয়, কারামতও নয়। সেটা হল দাজ্জালী ধোকা-বাজি বা প্রতারণা।

অনেক অজ্ঞ লোক ধারনা করে থাকে মুজিযা বা কারামত, সাধনা বা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে অর্জন করা যায়। বা

মানুষ ইচ্ছা করলেই তা করতে পারে। তাই এ সকল অজ্ঞ লোকেরা ধারনা করে অলী আউলিয়াগণ ইচ্ছা করলে

কারামতের মাধ্যমে অনেক কিছু ঘটাতে পারেন, বিপদ থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন। কিন্তু আসল ব্যাপার

হল, কারামত কোন ব্যক্তির ইচ্ছাধীন নয়। এটি একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাধীন। মানুষ ইচ্ছা করলে কখনো

কারামত সংঘটিত করতে পারে না, সে যত বড় অলী বা পীর হোক না কেন।

কোন বিবেকমান মানুষ বিশ্বাস করে না যে, একজন মানুষের প্রাণ চলে যাওয়ার পর তার কিছু করার ক্ষমতা থাকে।

আবার যদি সে কবরে চলে যায় তাহলে কিভাবে সে কিছু করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে?

এ ধরনের কথা তারাই বিশ্বাস করতে পারে অজ্ঞতার ক্ষেত্রে যাদের কোন নজীর নেই। অলী তো দূরের কথা

কোন নবীর কবরও পূজা করা জায়েয নেই। নবীর কবরতো পরের কথা, জীবিত থাকা কালে কোন নবীর ইবাদত

করা, বা তাকে দেবতা জ্ঞান করে পূজা করা যায় না। এটা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন :

مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُؤْتِيَهُ اللَّهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُوا عِبَادًا لِي مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَكِنْ كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ

وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُونَ ﴿79﴾ وَلَا يَأْمُرَكُمْ أَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلَائِكَةَ وَالنَّبِيِّينَ أَرْبَابًا أَيَأْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ﴿80﴾. (آل عمران)

কোন মানুষের জন্য সংগত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে,

তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার ইবাদতকারী হয়ে যাও। বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানী(আল্লাহ ভক্ত) হও।

যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে। আর তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না যে,

তোমরা ফেরেশতা ও নবীদেরকে প্রভূ রূপে গ্রহণ কর। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর

নির্দেশ দেবেন? (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৯-৮০)


মুশরিকদের অবস্থা : অতীত ও বর্তমান

যারা কবর মাযার পূজা করে তারা বলে থাকে যে, মুশরিকরা মূর্তি পূজা করত। আমরাতো মূর্তি পূজা করি না। আমরা

আমাদের পীর দরবেশদের মাজার জিয়ারত করি। এগুলোর ইবাদত বা পূজা করি না। তাদের অসীলা দিয়ে আল্লাহর

কাছে দুআ-প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ তাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে আমাদের দুআ-প্রার্থনা কবুল করেন। এটাতো

কোন ইবাদত নয়। এদের উদ্দেশ্যে আমরা বলব, মৃত ব্যক্তির কাছে সাহায্য ও বরকত কামনা করা সত্যিকারার্থে

তার কাছে দুআ করার শামিল। যেমন ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগে পৌত্তলিকরা মূর্তির কাছে দুআ-প্রার্থনা করত।

তাই জাহেলী যুগের মূর্তি পূজা আর বর্তমান যুগের কবর পূজার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এ দুটো কাজই লক্ষ্য

উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে এক ও অভিন্ন। যখন জাহেলী যুগের মুশরিকদের বলা হল তোমরা কেন মূর্তিগুলোর ইবাদত

করো? তারাতো কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। তখন তারা ইবাদতের বিষয়টি অস্বীকার করত এবং বলত:

আমরা তো তাদের ইবাদত করি না, তবে এ জন্য যে তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। (সূরা যুমার,

আয়াত ৩)

এমনিভাবে আমাদের সমাজের কবরপূজারীরাও বলে থাকে যে, আমরা তো কবরে শায়িত অলীর ইবাদত করি না। তার

কাছে দুআ করি না। আমাদের উদ্দেশ্য শুধু এই যে, তারা আল্লাহর কাছে প্রিয়। তাদের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ

অর্জন করা যাবে। এ সকল অলীগণকে আমরা আমাদের ও আল্লাহ তাআলার মধ্যে মাধ্যম মনে করে থাকি।

কাজেই পরিণতির দিক দিয়ে জাহেলী যুগের মুশরিকদের মূর্তি পূজা আর বর্তমান যুগের মুসলমানদের কবর পূজা এক ও

অভিন্ন। দুটো একই ধরনের শিরক।


মুহাব্বাত ভালোবাসার ক্ষেত্রে শিরক

অন্তরের একাগ্র ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আল্লাহ ব্যতীত আর কোন সৃষ্টি পেতে পারে না। এই নির্ভেজাল

শ্রদ্ধাপূর্ণ ভালোবাসা হল একটি ইবাদত। যারা মনে করে আমরা এই কবরের অলী ও বুযুর্গদের অত্যাধিক

ভালোবাসি, তাদের শ্রদ্ধা করি, তাদের সম্মান করি তাহলে এটিও একটি শিরক। আর এই মাত্রাতিরিক্ত

ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার কারণেই তারা অলী-বুযুর্গদের কবরে মানত করে, কবর প্রদক্ষিণ করে, কবর সজ্জিত করে,

কবরে ওরস অনুষ্ঠান করে। কবরবাসীর কাছে তারা সাহায্য চায়, উদ্ধার কামনা করে। যদি কবরওয়ালার প্রতি

মাত্রাতিরিক্ত সম্মান ও ভালোবাসা না থাকতো, তাহলে তারা এগুলোর কিছুই করত না। আর এ ধরনের

ভালোবাসা শুধু আল্লাহর তাআলার জন্যই নিবেদন করতে হয়। আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শিরক।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহকে

ভালবাসার মত তাদেরকে ভালবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালবাসায় দৃঢ়তর। (সূরা আল

বাকারা, আয়াত ১৬৫)

দৃঢ়তর, সত্যিকার ও সার্বক্ষণিক ভালোবাসা একমাত্র তাআলার প্রাপ্য। এটা অন্যকে নিবেদন করলে শিরক হয়ে

যাবে। মুশরিক পৌত্তলিকরা তাদের দেব-দেবীর জন্য এ রকম ভালোবাসা পোষণ করে থাকে।

আল্লাহ মানুষের খুবই কাছে। মানুষ আল্লাহর কাছে তার প্রার্থনা পৌছে দিতে মাধ্যম বা অসীলা খোঁজে। কিন্তু

কেন? আল্লাহ তাআলা কি মানুষ থেকে অনেক দূরে? আর মাজারে শায়িত সে সকল পীর অলীগণ মানুষের কাছে কি

আল্লাহর চেয়েও নিকটে? কখনো নয়। একজন মানুষ যখন প্রার্থনা করে তখন সকলের আগেই তারা সরাসরি

আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়।

আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা নিজে বলেছেন:

আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি

প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি

ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)

মানুষ সরাসরি আল্লাহ তাআলার কাছে তার সকল প্রার্থনা নিবেদন করবে কোন মাধ্যম ব্যতীত। এটাই ইসলামের

একটি বৈশিষ্ট ও মহান শিক্ষা। আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ-প্রার্থনায় কোন মাধ্যম গ্রহণ করার দরকার নেই

মোটেই।

দুআ-প্রার্থনায় মাধ্যম বা অসীলা গ্রহণ একটি বিজাতীয় বিষয়। হিন্দু, বৌদ্ধ খৃষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মের

লোকেরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে মূর্তি, পাদ্রী ও ধর্মযাজকদের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। এ

দিকের বিবেচনায় এটি একটি কুফরী সংস্কৃতি, যা কোন মুসলমান অনুসরণ করতে পারে না।

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ. (البقرة : 165)

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ. (البقرة : 186)

দুআ-প্রার্থনায় আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য সৎকর্মসমূহকে অসীলা হিসাবে নেয়া যায়। তেমনি আল্লাহ রাব্বুল

আলামীনের নামসমূহ অসীলা হিসাবে নেয়ার জন্য আল-কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক। আর তাদেরকে

বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আল

আরাফ, আয়াত ১৮০)

সর্বশেষে বলতে চাই, যারা এ ধরনের অন্যায় অসীলা গ্রহণের মাধ্যমে শিরকে লিপ্ত হচ্ছেন তারা এর থেকে ফিরে

আসুন। আমাদের দায়িত্ব কেবল সত্য বিষয়টি আপনাদের কাছে পৌঁছে দেয়া। এ সকল অসীলা নি:সন্দেহে শিরক। আর

শিরক এমন এক মহা-পাপ যা আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। যে এ শিরকে লিপ্ত হবে জাহান্নামই হবে তার

ঠিকানা।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা

আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা, আয়াত ৭২)

তাই আমাদের জন্য একান্ত কর্তব্য হল, আমাদের সকল ইবাদত-বন্দেগী, দুআ-প্রার্থনা নির্ভেজালভাবে একমাত্র

এক আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদন করা। তিনি যা করতে বলেছেন আমরা তাই করবো। নিজেরা কিছু উদ্ভাবন

করবো না। তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের যেভাবে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন আমরা

সেভাবেই প্রার্থনা করবো। তিনি যেভাবে অসীলা গ্রহণ অনুমোদন করেছেন, আমরা সেভাবে অসীলা গ্রহণ

করবো। এর ব্যতিক্রম হলে আমরা ইসলাম থেকে দূরে চলে যাবো। কাজেই সর্বক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য হবে

কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণ করা। যদি আমরা এভাবে চলতে পারি তবে দুনিয়াতে কল্যাণ আর আখেরাতে চিরন্তন

সুখ ও সফলতা লাভ করতে পারবো। অন্যথা, উভয় জগতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবো। আল্লাহ রাব্বুল

আলামীন আমাদের সকলকে শিরক থেকে হেফাজত করুন। আ-মীন!

وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ. (الأعراف : 180)

إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ. (المائدة : 72)



সংকলন: শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
অনুবাদক: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

111
অবিশ্বাস্য মেসি, জাদুকরী মেসি,অন্য গ্রহের মেসি!!!!!!!

কখনো কখনো যেন ফুটবলার নন। ধ্যানমগ্ন শিল্পী। জাদুর তুলিতে ফুটিয়ে তোলেন আশ্চর্য শিল্প। এই জীবনে কম সুন্দর গোল করেননি। লিওনেল মেসির অবিশ্বাস্য গোল অমনিবাসে ​কাল রাতে যোগ হলো আরও একটি গোল। এই মেসি অবিশ্বাস্য, এই মেসি জাদুকরী। মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসেও এতটুকু ক্লান্তি নেই! বরং আছে সুন্দরের ফুল ফোটানোর আশ্চর্য ক্ষমতা। তাঁর গোলটি যে কোপা ডেল রের ফাইনালের সর্বকালের সেরা গোলগুলোর একটি, এই রায় দিয়ে দিয়েছেন ভাষ্যকারেরা।
ম্যাচের তখন ২০ মিনিট। একদম মাঠের মাঝলাইন থেকে ডান কোনা ঘেঁষে দাঁড়ানো মেসির দিকে বল ঠেললেন দানি আলভেস। মেসিকে তখন ঘিরে ধরেছে তিন তিনজন বিলবাও খেলোয়াড়। অভেদ্য ত্রিভুজ। পালাবি কোথায়! এই বাঘবন্দী খেলায় বল বের করতে একটা রাস্তাই খোলা ছিল। মেসি তাই করলেন। নাট মেগের চরম লজ্জায় ফেললেন বিলবাওয়ের এক খেলোয়াড়কে। দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বের করে আনলেন বল। মেসি যেন বললেন, ‘স্যরি, বন্ধু!’

তিনজনের ঘিরে ধরা জাল থেকে বল বের করে আনছেন মেসি। ভিডিও থেকে নেওয়াতিনজনের দুজনই তখন এই ঘটনায় হতভম্ব। স্থির মূর্তি হয়ে গেলেন যেন। মেসি ততক্ষণে ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়া বল নিয়ে ছুটছেন খ্যাপা ঘোড়ার মতো। তৃতীয়জন তখনো হাল ছাড়েননি। তিনিও ছুটলেন মেসিকে তাড়া করতে। বক্সের প্রান্তে এসে তাঁকে আরেকবার কাটালেন। কাটালেন বক্সের ভেতরে পাহারায় থাকা আরেক ডিফেন্ডারকে। চারজনকে কাটানোর পর বাকি থাকল শুধু গোলরক্ষক। ডান পোস্ট ঘেঁষে মাপা শটে বল পাঠালেন জালে। ঝাঁপিয়ে পড়েও আটকাতে পারলেন না গোলরক্ষক। না আটকাতে পেরে ভালোই হয়েছে। গোলটা না হলে যে পুরো সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে যেত। বলের লাইনে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ। তাঁর গায়েও ধাক্কা লাগতে পারত। অ্যাক্রোব্যাট করে লাফিয়ে সুয়ারেজ বলটাকে বাধামুক্ত করলেন। মেসি যেন বললেন, ‘ধন্যবাদ বন্ধু!’

আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেসি নিজেও তখন উদ্বেলিত। টগবগিয়ে ‘খুন’ হাসছে তাঁর। সব সতীর্থ এসে মেসিকে জড়িয়ে ধরলেন। টের স্টেজেনের জন্য মায়াই লাগল, বেচারা এই উদ্‌যাপনে এসে যোগ দিতে পারলেন না। বার্সা গোলরক্ষক অবশ্য সেটা পুষিয়ে দিলেন একা একাই শূন্যে ঘুষি পাকিয়ে। ভাষ্যকারদের কণ্ঠ রীতিমতো কাঁপছে: ‘গ্রেট কোপা ডেল রে ফাইনাল গোলস, ফ্রম দ্য ম্যাজিকাল, পিকিউরিয়াল, লিওনেল মেসি, লাইটস আপ দ্য ক্যাম্প ন্যু ওয়ান মোর টাইম। মেসি ইজ অ্যামেজিং, অ্যাবসুলুটলি সুপার্ব, হি ইজ জাস্ট আনস্টপেবল, হাউ ডু ইউ স্টপ হিম!’

এটা কোনো সাধারণ গোল নয়, এই গোলের জন্ম অন্য গ্রহে’—বিলবাওয়ের বিপক্ষে লিওনেল মেসির গোলটিকে ঠিক এভাবেই চিহ্নিত করেছেন বার্সেলোনা কোচ লুইস এনরিকে।


Source:

112
Football / Copa America 2015 Shedule
« on: May 30, 2015, 05:38:04 PM »
কোপা আমেরিকা ২০১৫ এর ফিক্সচার
 →অংশগ্রহণকারী দল ←
১. আর্জেন্টিনা   ৭. জামাইকা (আমন্ত্রিত)
২. বলিভিয়া   ৮. মেক্সিকো (আমন্ত্রিত)
৩. ব্রাজিল   ৯. প্যারাগুয়ে
৪. চিলি (আয়োজক দেশ)   ১০. পেরু
৫. কলম্বিয়া   ১১. উরুগুয়ে (বর্তমান বিজয়ী)
৬. ইকুয়েডর   ১২. ভেনেজুয়েলা[/size]



→গ্রুপ এ←   ১.বলিভিয়া
   ২.চিলি
   ৩.ইকুয়েডর
   ৪.মেক্সিকো

→গ্রুপ বি←   ১.আর্জেন্টিনা
   ২.জ্যামাইকা
   ৩.প্যারাগুয়ে
   ৪.উরুগুয়ে

→গ্রুপ সি←   ১.ব্রাজিল
   ২.কলম্বিয়া
   ৩.পেরু
   ৪.ভেনিজুয়েলা

→গ্রুপ পর্ব←
তারিখ   সময়   দেশ   ফলাফল
১২/৬/১৫   সকাল সাড়ে ছয়টা:   চিলি - ইকুয়েডর   
১৩/৬/১৫   সকাল সাড়ে ছয়টা:   মেক্সিকো - বলিভিয়া   
১৪/৬/১৫   রাত দুইটা:   উরুগুয়ে -জ্যামাইকা   
১৪/৬/১৫   ভোর সাড়ে চারটা:   আর্জেন্টিনা - প্যারাগুয়ে   
১৫/৬/১৫   রাত দুইটা:   কলম্বিয়া -ভেনিজুয়েলা   
১৫/৬/১৫   ভোর সাড়ে চারটা:   ব্রাজিল - পেরু   
১৬/৬/১৫   ভোর চারটা:   ইকুয়েডর - বলিভিয়া   
১৬/৬/১৫   সকাল সাড়ে ছয়টা:   চিলি - মেক্সিকো   
১৭/৬/১৫   ভোর চারটা:   প্যারাগুয়ে - জ্যামাইকা   
১৭/৬/১৫   সকাল সাড়ে ছয়টা:   আর্জেন্টিনা - উরুগুয়ে   
১৮/৬/১৫   সকাল সাতটা:   ব্রাজিল - কলম্বিয়া   
১৯/৬/১৫   সকাল সাড়ে ছয়টা:   পেরু - ভেনিজুয়েলা   
২০/৬/১৫   ভোর চারটা:   মেক্সিকো - ইকুয়েডর   
২০/৬/১৫   সকাল সাড়ে ছয়টা:   চিলি - বলিভিয়া   
২১/৬/১৫   রাত দুইটা:   উরুগুয়ে - প্যারাগুয়ে   
২১/৬/১৫   ভোর সাড়ে চারটা:   আর্জেন্টিনা - জ্যামাইকা   
২২/৬/১৫   রাত দুইটা:   কলম্বিয়া - পেরু   
২২/৬/১৫   ভোর চারটা:   ব্রাজিল - ভেনিজুয়েলা   
→কোয়ার্টার ফাইনাল←
তারিখ   অংশগ্রহণকারী   সময়   ফলাফল
২৫/৬/১৫   ১ম কোয়ার্টার ফাইনাল:
এ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন - গ্রুপ পর্বের
সেরা তৃতীয় স্থান অর্জনকারী   সকাল সাড়ে ছয়টা:   
২৬/৬/১৫   ২য় কোয়ার্টার ফাইনাল:
এ গ্রুপ রানার আপ - সি গ্রুপ রানার আপ   সকাল সাড়ে ছয়টা:   
২৭/৬/১৫   ৩য় কোয়ার্টার ফাইনাল:
বি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন - গ্রুপ পর্বের ২য়
সেরা তৃতীয় স্থান অর্জনকারী   সকাল সাড়ে ছয়টা:   
২৮/৬/১৫   ৪র্থ কোয়ার্টার ফাইনাল:
সি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন - বি গ্রুপ রানার আপ   সকাল সাড়ে ছয়টা:   

→সেমি ফাইনাল←
তারিখ   অংশগ্রহণকারী   সময়   ফলাফল
৩০/৬/১৫   ১ম সেমিফাইনাল:
১ম কোয়ার্টার ফাইনাল বিজয়ী - ২য়
কোয়ার্টার ল ফাইনাল বিজয়ী   সকাল সাড়ে ছয়টা:   
১/৭/১৫   ২য় সেমিফাইনাল:
৩য় কোয়ার্টার ফাইনাল বিজয়ী - ৪র্থ
কোয়ার্টার ফাইনাল বিজয়ী   সকাল সাড়ে ছয়টা:   
৪/৭/১৫   →তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচ←
 সকাল সাড়ে ছয়টা:
১ম সেমিফাইনালে পরাজিত - ২য়
সেমিফাইনালে পরাজিত      
→ফাইনাল←
৫/৭/১৫, রাত তিনটা:
১ম সেমিফাইনালে বিজয়ী -২য়
সেমিফাইনালে বিজয়ী
বিঃদ্র :- খেলার সময়সূচী বাংলাদেশের সময়অনুযায়ী উল্লেখ করা হয়েছে. সকল খেলা সরাসরি দেখা যাবে সনি সিক্স এ।

Pages: 1 ... 6 7 [8]