Daffodil International University
Bangladesh => Heritage/Culture => Topic started by: Lazminur Alam on July 11, 2016, 10:51:39 AM
-
We will post here recognized, beautiful & rare birds of Bangladesh.
-
ডাকাত স্বভাবের পাখি। কাঠবিড়ালির বাসা ছিঁড়ে-খুঁড়ে ছানা বের করে খায়। অন্য শিকারি পাখিদের থোড়াই কেয়ার করে। দুঃসাহসী, তবে বাজ বা দস্যুবাজের মতো এরা জলাভূমিতে তেমন থাকে না, অন্য পাখিদের ধাওয়াও সহজে করে না। এই দুই ভাইয়ের আকার-গড়ন-ধরন-রং ইত্যাদির ভেতর এতটাই মিল যে মনে হয় যমজ ভাই, হাতে ধরেও বোঝা দুঃসাধ্য—এটি কি দারোগাবাজ নাকি তার ছোট ভাই (Indian Spotted Eagle)।
একনজরে কালচে-বাদামি পাখি। ডানার উপরিভাগে কালচে-বাদামি ছোট ছোট ছিট-ছোপ। ঋতুভেদে রং বদলায়। তখন হতে পারে ঘন চকলেট-বাদামি রং। পা হলুদাভ। পায়ের পাতা ঘোলাটে-হলুদ। নখর কালো। লেজের আগা সাদা। ঠোঁট অপেক্ষাকৃত ছোট। আমাদের আবাসিক এই পাখিটির ভেতর কেমন যেন একটা ‘বাউল বাউল’ ভাব আছে, বাউন্ডুলে স্বভাব এদের। শরীরের তলদেশ ও পায়ের পালক ফিকে-বাদামি, চোখ হলুদাভ-বাদামি বা গাঢ়, ঠোঁটের কিনারা হলুদ।
বিপদাপন্ন এই শিকারি পাখিটির চারণক্ষেত্র বন-বাগান-খোলা মাঠ-উঁচু ভূমি। বৈজ্ঞানিক নাম aquila pomarina. দৈর্ঘ্য ৬০-৬৫ সেন্টিমিটার। বাংলা নাম ছোট চিত্রা ইগল বা গুটি ইগল।
মূল খাদ্য এদের ছোট ও মাঝারি পাখি, গেছো ইঁদুর, ধেনো ইঁদুর, বেঁশো ইঁদুর, গিরগিটি, ব্যাঙ-হাঁস-মুরগির ছানা ও নির্বিষ ছোট সাপ, কাঁকড়া ইত্যাদি। পাখি শিকার করে এরা গেরিলা কৌশলে। বেছে নেয় দুর্বল, আহত বা আনাড়ি পাখিদের। কণ্ঠ তীক্ষ্ণ সুরেলা, মনে হয় আশপাশের সবাইকে ধমক দিচ্ছে।
বড় বড় গাছের মগডালে সরু ডালপালা-পাটকাঠি-কঞ্চি-বাঁশের চটা-নারকেলের ছোবড়া ইত্যাদি দিয়ে বড়সড় ডালার মতো বাসা বানায়। পুরুষটি উপকরণ আনে, মেয়েটি বাসা বানায় ও মনমতো সাজায়। ডিম পাড়ে ১টি। ক্বচিৎ ২-৩টি। মেয়েটি একাই তা দেয় ডিমে। পুরুষ থাকে পাহারায়। বউকে সে মাঝেমধ্যে পরম সোহাগে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়। ডিম ফোটে ৪২-৪৪ দিনে।
-
এরা এ দেশের দুর্লভ এক সুন্দর প্রজাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক ড. বাশার ওদের নাম দিয়েছেন ফটিক সিন্ধু (Common Bluebottle বা Blue Triangle)। পশ্চিমবঙ্গে এটি তুঁতচিল নামে পরিচিত। Papilionidae পরিবারভুক্ত প্রজাপতিটির বৈজ্ঞানিক নাম Graphium sarpendon।
প্রসারিত অবস্থায় ফটিক সিন্ধুর সামনের এক ডানার প্রান্ত থেকে অন্য ডানার প্রান্ত পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৮০-৯০ মিলিমিটার। ডানা ও দেহের ওপরটা কালো ও নিচটা বাদামি। সামনের ডানার শীর্ষ থেকে পেছনের ডানার ভেতরের প্রান্ত পর্যন্ত ওপর ও নিচে একটি ফ্যাকাশে সবুজ বা নীলচে-সবুজ থেকে গাঢ় নীল ডোরা চলে গেছে। পেছনের ডানার নিচের কিনারার দিকে এক সারি নীল ফোঁটা, অতিরিক্ত এক সারি লাল ফোঁটা ও ডানার গোড়ায় একটি লাল ফোঁটা রয়েছে। লম্বালম্বি সাদা ডোরাসহ দেহ ধূসর। শুঙ্গ (অ্যান্টেনা) ও চোখ কালো। শুঁড় ও পা ধূসর। পুরুষ ও স্ত্রী প্রজাপতি দেখতে একই রকম।
ফটিক সিন্ধু সচরাচর কম দেখা যায়। মূলত ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বন ও বনের কিনারা, উন্মুক্ত তৃণভূমি, ফুলের বাগানে বিচরণ করে। এরা বেশ চটপটে। দ্রুততার সঙ্গে গাছের ওপরের দিকে ওড়ে। বিভিন্ন ধরনের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের ফুলের রস পান করে।
স্ত্রী দেবদারু, কর্পূর, দারুচিনি, অ্যাভোকাডো প্রভৃতি গাছের কচি পাতার ওপর পাতাপ্রতি একটি করে হলদে ও গোলাকার ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে তিন দিনে। শূককীট প্রথম দিকে কালচে বা গাঢ় সবুজ হলেও পরে সবুজাভ হয়। ১২ দিনে পাঁচবার রূপান্তরিত হয়ে শূককীট সবুজ রঙের মূককীটে পরিণত হয়। ১০ দিন পর মূককীটের খোলস কেটে পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতি বের হয়ে নীল আকাশে ডানা মেলে।
বাংলাদেশ ছাড়াও পুরো ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও অস্ট্রেলিয়ায় এদের দেখা যায়।
-
শীত বিকেলে পাতাঝরা মাদারগাছটার সরু ডালপালায় বুক-পেট মিশিয়ে বসে আছে ৯-১০টি পাখি। রোদ পোহাচ্ছে পরম আয়েশে। ওর ভেতরে চারটি আছে সদ্য উড়তে শেখা ছানা।
দুরন্ত তিন বালক গুলতি হাতে এগিয়ে এল গাছটার তলায়, একজন খুব নিরিখ করে ছুড়ল গুলতি—একখানা ডালে গুরোল লেগে শব্দ হতেই ঝট করে উড়াল দিল সব কটি পাখি, একটু দূরে গিয়ে ঝাঁক বেঁধে চলে এল পশ্চিম দিকে।
এই পাখিদের নামও মটরঘুঘু। জাঁতায় যখন দ্রুতবেগে মসুর-মুগ বা মটর ডাল ভাঙা হয়, তখন যে রকম শব্দ হয় ‘মটর মটর’, এদের ডাকের শব্দটাও তেমনি। উঁচু গাছের ডালে বসে প্রজনন মৌসুমে পুরুষটি দ্রুততালে ডাকে, মাথা দোলায় নান্দনিক ভঙ্গিতে, বুক ফুলিয়ে আর ঘাড়-মাথা দুলিয়ে তালে তালে নাচে আর ডাকেও দ্রুততালে। ঠোঁট-পা ঠোকে গাছের ডালে, লম্ফঝম্ফ করে—মনের আনন্দে পতপত ডানায় উড়াল দিয়ে খাড়া উঠে পড়ে শূন্যের দিকে। স্ত্রী-পাখিটি চুপচাপ বসে তা উপভোগ করে।
বাসা করে জিকল, খুদিজাম, লোহাজাম, বাবলা, বরই, কলা, তাল ও খেজুরগাছের ডালে। শুকনো সরু ঘাস-লতা হলো বাসার প্রধান উপকরণ। তবে এদের বাসায় শরতে দুয়েক টুকরো কাশফুল ও গ্রীষ্মে দু-চারটা সাদা ঘাসফুল দেখা যাবেই। এরা সারা বছরই বাসা করে। দুজনে মিলে বাসার জায়গা নির্বাচনে ব্যয় করে দুই থেকে পাঁচ দিন। বাসা বানাতে সময় লাগে তিন থেকে ছয় দিন। তারপর স্ত্রী-পাখি ডিম পাড়ে দুটি, কখনো তিনটি। দুজনেই পালা করে তা দেয় ডিমে। ছানা ফোটে ১০-১৫ দিনে। প্রথম প্রথম ছানাদের কবুতরের দুধ (Pegion Milk) পান করায় এরা।
মটরঘুঘুর প্রধান খাবার নানা রকম শস্যবীজসহ ধান-তিল-কাউন-ডাল-সরষে ও ধুলোমাটি। ধুলোমাটি খায় শরীরের লবণের চাহিদা পূরণের জন্য। মটর ডাল এদের সবচেয়ে প্রিয়। শীতে এরা নাড়া ও ঘাসবনে নেমে ডানা ঝাপটে শিশির পান করে।
এদের ইংরেজি নাম Red Collared Dove। বৈজ্ঞানিক নাম Streptopelia tranquebarica। দৈর্ঘ্য ২৩ সেন্টিমিটার। ওজন ৯০ থেকে ১১০ গ্রাম। এদের পিঠের রং ইটগুঁড়ো করা সুরকির মতো লাল, তাতে হালকা গোলাপি আভা, ঘাড়-মাথা ঘন ছাই ও ধূসর। ঘাড়ে সাদা টানের ওপরে কালো বন্ধনী। চিবুক ও লেজের তলা সাদাটে। বুক হালকা গোলাপি। কালচে ঠোঁট। গোলাপি পা। মেয়েটি এক নজরে বাদামি রঙের পাখি। এদের দেখা মেলে সারা দেশেই। না দেখেও ডাক শুনে অনায়াসে শনাক্ত করা যায় পাখিটিকে। ঢোল ঘুঘু, ছোট ঘুঘু, পেঁচি ঘুঘু ও জংলাঘুঘু নামেও পরিচিত এরা।
-
ধূসর এই পাখি এ দেশের সাবেক আবাসিক পাখি পুটিয়াল ধনেশ (Common Grey Hornbill or Indian Grey Hornbill)। Bucerotidae গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Ocyceros birostris।
পুটিয়াল ধনেশ লম্বায় প্রায় ৬১ সেন্টিমিটার। পুরুষের ওজন প্রায় ৩৭৫ গ্রাম। একনজরে পুরো দেহ রুপালি-ধূসর। চোখের ওপরের পালক ফ্যাকাশে ও কান-ডাকনি কালচে। পেট হালকা ধূসর। লেজের আগা সাদা এবং তাতে কালো বন্ধনী। চোখের মণি বাদামি-লাল ও চোখের পাতায় লোম থাকে। পায়ের পাতা ও নখ কালো। পুরুষের ওপরের ঠোঁট গাঢ় ও নিচের ঠোঁট হলদে। স্ত্রীর হলুদ ঠোঁটের গোড়া কালো। ওপরের ঠোঁটের বর্ধিত অংশ বা বর্ম কালো, যা অন্যান্য ধনেশ প্রজাতির তুলনায় ছোট ও চোখা। পুরুষের বর্ম স্ত্রীর তুলনায় বড়। বাচ্চাদের বর্ম নেই।
রাজশাহী বিভাগের একসময়ের আবাসিক পাখি পুটিয়াল ধনেশ বর্তমানে এ দেশে আবাসিক না অনিয়মিত, তা জানতে গবেষণার প্রয়োজন। তবে আশার কথা, ওরা হারিয়ে যায়নি এ দেশ থেকে। এরা মূলত ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের আবাসিক পাখি। শুষ্ক বন, ফলের বাগান ও কুঞ্জবনে এরা বাস করে। শহরাঞ্চলের খোঁড়লযুক্ত পুরোনো গাছসমৃদ্ধ রাজপথেও এদের দেখা যায়। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ১ হাজার ৪০০ মিটার উচ্চতায়ও থাকতে পারে। এরা মূলত বৃক্ষচারী। পাকা ফল ও বাসার জন্য মাটি সংগ্রহ ছাড়া সহজে মাটিতে নামে না। মূলত ফলখেকো হলেও ফুলের পাপড়ি, কীটপতঙ্গ, গিরগিটি, ইঁদুর ইত্যাদিও খায়। চেঁচামেচি আর মারামারিতে ওস্তাদ।
এপ্রিল-জুন প্রজননকাল। ডিমের রং সাদা ও সংখ্যায় এক থেকে পাঁচটি। জন্মের ১৩ দিন পর বাচ্চারা উড়তে শেখে।
-
নলখাগড়ার নাড়ার ওপর চমৎকার ভঙ্গিতে বসে ছিল কালো মাথা ও কমলা বুকের সুদর্শন পাখিটি। রোদের আলোয় ওর কালো মাথাটি চকচক করছিল। পাখিটাকে কিছুটা ছটফটে স্বভাবের মনে হলো। হঠাৎই লাফ দিয়ে চরের বালুমাটিতে নেমে পড়ল। পোকা মুখে ফিরে এল নলখাগড়ার নাড়ার ওপর। আয়েশ করে খেল পোকাটি। কিছুক্ষণ পর আবারও পোকা ধরতে নিচে নামল। ওর ঠিক দু-তিন ফুট পাশেই অন্য একটি নলখাগড়ার নাড়ার ওপর একই ধরনের আরেকটি পাখি এসে বসল। তবে ওর দেহের রং বেশ মলিন, মাথা-বুকে নেই রঙের চাকচিক্য। তবে সে-ও একই কায়দায় পোকা শিকার করে ক্ষুধা মেটাতে লাগল।
এরা হলো বিরল সাদালেজি শিলাফিদ্দা (White-tailed Stonechat or White-tailed Bushchat)। সুদর্শন পাখিটি পুরুষ আর মলিন পাখিটি স্ত্রী। Muscicapidae গোত্রের এই পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Printicola leucura.
সাদালেজি শিলাফিদ্দা দৈর্ঘ্যে মাত্র ১২-১৪ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী-পুরুষের পালকের রঙে ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষের মাথা, মুখ ও গলা কালো। পিঠ ও দেহের ওপরটা কালচে-বাদামি। ঘাড়ের সুস্পষ্ট সাদা পট্টি গলার পাশ পর্যন্ত চলে গেছে। বুক গাঢ় কমলা ও পেট ফিকে সাদাটে। ডানার পট্টি, কোমর ও লেজের মাঝের অংশ সাদা। স্ত্রীর মাথা, ঘাড় ও মুখণ্ডল ধূসর-বাদামি। পিঠে ধূসর-বাদামি লম্বা দাগ। গলা সাদা। বুক-পেট-দেহতল ফিকে ও তাতে পীতাভ আভা। ডানার পট্টি সাদা, পালকের ফিকে প্রান্তদেশসহ লেজ ফিকে বাদামি। চোখ, ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা ও নখ কালো। লেজের সাদা অংশ ছাড়া পুরুষটি দেখতে অনেকটা পুরুষ পাতি শিলাফিদ্দার (Common Stonechat) মতো, তবে মাথা ও পিঠ বেশি কালো। অন্যদিকে স্ত্রীটিও অনেকটা স্ত্রী পাতি শিলাফিদ্দার মতো তবে দেহের ওপরটা বেশি ধূসর ও নিচটায় কমলার আভা রয়েছে।
সাদালেজি শিলাফিদ্দা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, ভারত ও মিয়ানমারে দেখা মেলে। এ দেশে এরা মূলত পদ্মা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বাস করে। চরাঞ্চলের বড় বড় ঘাস, নলখাগড়া ও ঝোপঝাড়ে বসে থাকে। এরা ঘাস বা নলখাগড়ার ওপর থেকে মাটিতে নেমে কীটপতঙ্গ ধরে খায়।
মার্চ থেকে মে প্রজননকাল। পানির ধারে উঁচু ঘাস, নলখাগড়া বা ঝোপঝাড়ে শেওলা, শিকড়, লোম ও পালক দিয়ে বাটির মতো বাসা বানায়। স্ত্রী তাতে তিনটি ধূসরাভ-নীল ডিম পাড়ে। ডিম ফোটা ও প্রজননসংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য খুব একটা জানা যায় না।
-
ছোট্ট-সুন্দর পাখিটির নাম হলদেলেজি ফুলঝুরি। পেটের তলা থেকে শুরু করে লেজের তলাটা এদের টকটকে হলুদ। ঋতুভেদে এই হলুদের সঙ্গে হালকা কমলা রঙের আভা দেখা যায়। গলা, বুক ও শরীরের দুপাশজুড়ে লম্বালম্বি রেখা টানা; রং কালচে-বাদামি। মাথা ও পিঠ জলপাই-বাদামি, ডানা ও খাটো লেজের উপরিভাগ কালচে-বাদামি। আগার দিকটা সামান্য বাঁকানো ছোট ঠোঁটটির রং কালচে। পা ও আঙুল কালচে-সবুজ।
এরা মূলত টিলা ও পাহাড়ি বনের পাখি। সমতলের জাতভাইদের (অন্যান্য ফুলঝুরি) মতোই স্বভাব-চরিত্র। খাদ্যসহ বাসার ধরন-গড়ন একই রকম। বসন্ত-বর্ষায় গাছের ডালে থলের মতো বাসা বানায় এরা নরম তন্তুজাতীয় উপকরণ দিয়ে। যেমন মাকড়সার জাল-মস-ঘাস-তুলা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে দু-তিনটি।
মূল খাদ্য এদের নানান রকম ফল। পাকা আতা, বিলেতি গাব, সাগরকলা ইত্যাদি বড় ফল খেতে খেতে এরা ভেতরে ঢুকে পড়ে। ঠোকরায়, ফল নড়ে, ব্যাপারটি ভৌতিক বলেই মনে হয় তখন।
উড়লেই ডাকে, বাসা বাঁধার সময়ও ডাকে। কণ্ঠস্বর ধাতব ‘ডিজিপ ডিজিপ’ ধরনের। এরা এবং এদের জাতভাই অন্যান্য ফুলঝুরি হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট পাখি। এদের খাদ্যতালিকায় আরও আছে পোকামাকড়সহ বিভিন্ন ফুলের মধুরেণু। এরা দুলে দুলে ওড়ে।
ইংরেজি নাম Yellow-vented Flowerpecker। বৈজ্ঞানিক নাম Dicaeum chrysorrheum। দৈর্ঘ্য ৯-১০ সেন্টিমিটার।
-
মোংলা থেকে যাত্রা করে পশুর নদ পেরিয়ে কুঙ্গা নদী। কুঙ্গা নদী তিনকোনা দ্বীপের কাছে যেখানে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে কোকিলমণির দিকে গেছে, সেই পয়েন্ট দিয়ে কিছুটা ভেতরে ঢুকতেই মরা পশুর নদ, খেজুরবাড়ি খাল, কাগাবগা খাল ও জাফা গাঙের মোহনা। পরপর দুই রাত চমৎকার এই মোহনায় আমাদের লঞ্চ নোঙর করল। এমন সুন্দর জায়গা সুন্দরবন ছাড়া আর কোথাও আছে কি না, জানা নেই। দ্বিতীয় দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মোহনা থেকে বের হয়ে মরা পশুর নদ দিয়ে কিছুক্ষণ এগিয়ে একটি খালের সামনে লঞ্চ নোঙর করল। লঞ্চ থেকে আমরা ছয়জন ডিিঙতে উঠে বাঁ দিকের একটি সরু খালে ঢুকলাম। সুন্দর এই খালের নাম ক্ষেতখেরা।
খালে ঢোকার মুখেই নানা ধরনের মাছরাঙা দেখলাম। এ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম থোরমোচা মাছরাঙার দেখাও মিলল এখানে। এরা ইংরেজিতে Brown-winged Kingfisher নামে পরিচিত। Alcedinidae পরিবারের মাছরাঙাটির বৈজ্ঞানিক নাম pelargopsis amauroptera.
ঠোঁটের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত দৈর্ঘ্যে থোরমোচা ৩৬ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৭.৬ সেমি ও ওজন ১৬২ গ্রাম (পুরুষ)। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা, ঘাড়, গলা, বুক, পেট ও লেজের তলা কমলা-বাদামি। পিঠ ও কোমর নীল। ডানা ও কাঁধ-ঢাকনি কালচে-বাদামি, তবে ডানার কিনারার পালকগুলো গাঢ় বাদামি। চোখ বাদামি ও চোখের পাতা ইটের মতো লাল। পা ও পায়ের পাতা লাল। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহে কমলার আধিক্য বেশি। ডানার পালক-ঢাকনি ও কাঁধ-ঢাকনির কিনারা ফিকে। দেহতল কালো, ঘাড়ে কালো ডোরা রয়েছে।
থোরমোচা সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক পাখি হলেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় লোনাজলের বন ও সুন্দরবন ছাড়া দেশের আর কোথাও দেখা যায় না। কিন্তু দিনে দিনে সুন্দরবন বিপন্ন হওয়ার কারণে এদের আবাস এলাকা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে। আর সে কারণেই সম্প্রতি এদের IUCN বাংলাদেশ সংকটাপন্ন (Vunerable) বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের সুন্দরবন এবং মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল পর্যন্ত এদের দেখা পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে বিশ্বে এরা প্রায়-বিপদগ্রস্ত (Near Threatened) বলে বিবেচিত।
পানির সামান্য ওপর দিয়ে দ্রুত উড়ে চলে। সচরাচর নদী-খালপাড়ের গাছের নিচু ডালে বসে পানিতে মাছ খোঁজে ও মাছ দেখলে দ্রুত পানিতে ঝাঁপ দিয়ে শিকার করে। মূল খাদ্য ছোট মাছ হলেও কাঁকড়া ও জলজ পোকমাকড় খেতে পারে।
এরা মার্চ-এপ্রিলে প্রজনন করে। এ সময় নদী-খালের খাড়া পাড়ে ৩০-৪০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ১০ সেন্টিমিটার চওড়া সুড়ঙ্গ তৈরি করে বাসা বানায় এবং তাতে চারটি গোলাকার সাদা ডিম পাড়ে। এরা ৫-৬ বছর বাঁচে।
-
এই বিরল পাখিটি হলো আমাদের আবাসিক বুনো কবুতর ধুমকল। ইংরেজি নাম Green Imperial Pigeon বা Northern Green Imperial Pigeon। Columbidae গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Ducula aenea।
ধুমকল বড় আকারের বুনো কবুতর। ঠোঁটের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৪৩-৪৭ সেমি ও ওজন ৫০০ গ্রাম। পিঠ, ডানা ও লেজের উপরিভাগ ধাতব সবুজ। মাথা, ঘাড় ও দেহের নিচটা মেটে-ধূসর। লেজের তলা খয়েরি-লাল। নীলচে ঠোঁট ও গাঢ় লাল চোখ। পা ও পায়ের পাতা গোলাপি লাল থেকে প্রবাল লাল। নখ কালচে-ধূসর। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম।
ধুমকল সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়-টিলাময় চিরসবুজ বনের পাখি। সচরাচর একাকী, জোড়ায় বা চার-পাঁচটির ছোট দলে দেখা যায়। তবে অনেক সময় ৫০-৬০টির বড় দলেও বিচরণ করতে পারে। গাছের পাতার ছাউনির নিচে এমনভাবে বসে থাকে, যেন সহজে চোখে পড়ে না। বিভিন্ন ধরনের বট, পাকুড় ও এ-জাতীয় ছোট ছোট পাকা ফল খেতে পছন্দ করে। এরা গাছে গাছেই বিচরণ করে। তবে পানি পান করতে ও লবণযুক্ত মাটি খেতে মাঝেমধ্যে মাটিতে নামে। অত্যন্ত দ্রুত ও সোজাসুজি উড়তে পারে।
মার্চ থেকে জুন প্রজননকাল। স্ত্রী সচরাচর একটি ও ক্বচিৎ দুটি ধবধবে সাদা ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১৫-১৯ দিনে। প্রায় ছয়-সাত বছর বাঁচে। দিনে দিনে আবাসস্থল সংকুচিত হওয়ার কারণে এদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
-
গ্রামবাংলার চেয়ে শহরে দেখা যায় বেশি। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা শহরে দেখা মেলে হাজারে হাজার। ঊর্ধ্বাকাশে ওদের নানান রকম মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে যেন জঙ্গিবিমানের ডগফাইট। একজন প্রেমিকাকে ঘিরে দুই বা ততোধিক প্রেমিক পুরুষ যখন পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় মাতে বা ঝাঁক বেঁধে অনেক উঁচুতে উঠে দলবদ্ধভাবে ছন্দময় বৃত্তাকার ঘূর্ণনদৃশ্য দেখলে মুগ্ধ হতে হয়। মূল খাদ্যস্থল এদের ময়লার ভাগাড় ও সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং এলাকা। ঢাকার পূর্বাঞ্চলের কাজলার বিশাল ডাম্পিং এলাকায় কয়েক হাজার পাখি জড়ো হয় রোজ। খাদ্যের তালিকায় আরও আছে মাছ, ব্যাঙ, অঞ্জন, কাঁকড়া, ইঁদুর, তেলাপোকা, ছোট পাখি ইত্যাদি। সুযোগ পেলে হাঁস-মুরগির ছানাও খায়। খাড়া ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে যেমন শূন্য থেকে মাটির দিকে নামতে পারে তিরবেগে, উঠতেও পারে তেমনি। দুর্দান্ত ডাইভার, দক্ষ শিকারি ও প্রখর দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন এসব শিকারি পাখি ঢাকা শহরে রোজই ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যায়।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় উঁচু উঁচু অনেকগুলো লাইটিং টাওয়ার আছে, ওর ভেতরের যেকোনো দু-তিনটি টাওয়ারের মাথায় প্রতি মৌসুমেই বাসা করে এই পাখিরা। কিন্তু ডিম পেড়ে যেমন স্বস্তি নেই, তেমনি ছানারা বড় না হওয়া পর্যন্ত বাবা ও মা পাখির যেকোনোটিকে কড়া পাহারায় থাকতে হয়। কেননা, পাতিকাকেরা সেই বাসা বাঁধা শুরু করার আগ থেকেই সুপরিকল্পিতভাবে ঝাঁক বেঁধে পেছনে লাগে এদের। উত্ত্যক্ত করে, বাসার উপকরণ সুযোগ পেলেই ফেলে দেয়। এমনকি ভুবন চিলেরা যাতে বাসা বাঁধতে না পারে, সে জন্য নিজেরাই একটা নকল বাসা বানায়। ডিমে তা দিচ্ছে? ছানা ফুটেছে? পাতিকাকেরা কত রকমভাবে যে জ্বালিয়ে মারে ওদের! ত্যক্তবিরক্ত হয়ে এই পাখিরা যখন ধাওয়া করে কাকেদের, তখন কাকেরা ছিটকে যায় ভয়ে।
পাখিটির নাম ভুবন চিল। মেঘচিল নামেও পরিচিত। বাসা করে টাওয়ার, উঁচু গাছের মগডালে ও অন্যান্য যুৎসই স্থানে। খোদ মতিঝিলের আকাশে ভুবন চিলদের ঘুড়ি ওড়াতে দেখা যায়—কাঁচা ডালপালা-পাতা ঠোঁটে-পায়ে ধরে উড়ে চলে যখন বাসা বাঁধতে।
ভুবন চিলের ইংরেজি নাম Black Kite। বৈজ্ঞানিক নাম Milvus migrans। দৈর্ঘ্য ৬১ সেন্টিমিটার, ওজন ৬৩০-৯৪০ গ্রাম। একনজরে দেখতে কালচে-বাদামি পাখি, খয়েরির আভা থাকে। চোখে যেন কাজল লেপ্টানো। কালচে ঠোঁট। হলুদ পা। লেজের আকার ইলিশ মাছের লেজের মতো। বাসা করে হেমন্ত থেকে শীতের মধ্যে। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটে ছানা হয় ২৯ থেকে ৩৩ দিনে।
-
ছবির এই পাখিটির লেজ খোয়া গেছে। এই পাখিরা বন-বাগানের ঝোপঝাড়ে চরে। লাফিয়ে লাফিয়ে এই ঝোপ থেকে সেই ঝোপে যায়, পোকামাকড়, শূককীট ও লার্ভা খায়। হাবাগোবা ও নিরীহ শান্ত স্বভাবের এই পাখিদের গলায় আছে চার রকমের মিষ্টি সুর। মোলায়েম মিষ্টি সুরেলা গলা। খুব ভোরে জেগে পাতাঢাকা কোনো গাছের ডালে বুক-পেট মিশিয়ে বসে একটানা ডাকবে অনেকক্ষণ। গানের ভাষাটা অনেকটাই ‘টিউ টু টু টুউও’ ধরনের। শৈশব-কৈশোরে গ্রামের বাড়িতে এই পাখিদের ডাকে ঘুম ভাঙত। এখনো গ্রামের বাড়িতে গেলে ঘুম ভাঙে এদেরই গানে। এদের বাংলাদেশের নাইটিঙ্গেল বলা যেতে পারে। বাগেরহাটের গহিন ঘন ছায়াময় বাগানে এরা আজও আছে বহাল তবিয়তে। জোড়ায় জোড়ায় চলে। উদাসী বাউল স্বভাব যেন এদের—সতর্কতা কম। আপন জগতেই মগ্ন থাকে। গ্রামবাংলার বসতবাড়ির পর্দা-বেড়ায় ঝোলানো শুকনো সুপারি পাতা, নারকেল-সুপারি-খেজুর ও তালের ঝুলে পড়া জ্যান্ত বা মরা পাতা এদের প্রিয় খাদ্য অন্বেষণের স্থান। অতএব, ঝোপঝাড়ে থাকা সোনাব্যাঙেরা লাফ দিয়ে উঠে মুখে পুরতে পারে, বনবিড়াল-বেজিরা দিতে পারে থাবা, দুষ্টু ছেলেপুলেরা চুপিসারে এগিয়ে গিয়ে ধরতে চাইতে পারে পাখিটিকে। এ রকম কোনো একটি কারণেই হয়তো ছবির পাখিটির লেজ খোয়া গেছে। অবশ্য লেজ আবার গজায়।
নিরীহ-শান্ত ও আনমনা-বোকাসোকা ধরনের পাখিটির নাম ‘ভ্যাদাটুনি’। ‘ভ্যাদা’ অর্থে বৃহত্তর খুলনায় বোঝায় মার খেয়েও যে প্রতিবাদ করতে পারে না বা ভয় পায়। বোধবুদ্ধিও কম। এই পাখিটার অন্য নাম ‘মোটা ঠোঁট ছাতারে’। ইংরেজি নাম Abbott’s Babbler। বৈজ্ঞানিক নাম Malacocincla abbotti। দৈর্ঘ্য ১৭ সেন্টিমিটার, ওজন ৩০ গ্রাম।
এদের মাথার তালু-পিঠ-লেজ ও পাখার উপরিভাগও জলপাই-বাদামি। গলা ধূসর-সাদাটে এবং চোখের ওপর দিয়ে একটি অস্পষ্ট সাদাটে-ধূসর রেখা বয়ে গেছে। বুকের কিছু অংশ ও তলপেট সাদাটে। পা ধূসর-গোলাপি। ঠোঁট ধূসর।
আলসে স্বভাবের ভ্যাদাটুনিরা অনেক সময় আশ্চর্য-অবিশ্বাস্য জায়গায় বোকার মতো বাসা করে। আনারসগাছের মাথায়, ঝুলে পড়া শুকনো সুপারি পাতার ভেতরে, বাঁশের কঞ্চির গোড়াসহ অন্যান্য যুৎসই স্থানে বাসা করে, তাতে ডিম পাড়ে দুই থেকে চারটি। ডিম গোলাপি। ডিম ফুটে ছানা হয় ১৩ থেকে ১৭ দিনে। বহুবার আমি এদের বাসা দেখেছি, প্রতিটি বাসার তলদেশেই দেখেছি তিন-চারটি কালো সরু বুনো লতা। নাম জানতে পারিনি। জানি না, ওই লতায় ডিম-ছানাদের জন্য কোনো প্রতিরোধী দ্রব্যগুণ আছে কি না!
এদের বাসায় কখনো কখনো কোকিলের মতো গোপনে ডিম পেড়ে যায় কোকিলের জাতভাই ‘বেগুনি কোকিল’ (Violet Cuckoo)। আকারে এটি ভ্যাদাটুনিরই সমান। সারা বাংলাদেশেরই বন-বাগান ও ঝোপঝাড় ছায়াছন্ন এলাকায় ভ্যাদাটুনিদের দেখা যায়। বাগেরহাটে এরা সুলভ পাখি। উঠান-বাড়ির কিনারের লাউ-শিমের মাচা বা অন্য গাছেও নির্ভয়ে চরে বেড়ায়।
-
ইংরেজি নাম Pallas’s Gull বা Greater Black-headed Gull। Laridae গোত্রের এই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Larus ichthyaetus।
গাঙচিলদের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম পালাসের গাঙচিলের দৈর্ঘ্য ৬০-৭২ সেন্টিমিটার, প্রসারিত ডানা ১৫৫-১৭০ সেন্টিমিটার এবং ওজন ০.৯- ২.০ কেজি। প্রজননকালীন প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা, গলাসহ মুখমণ্ডল ভেলভেট কালো। পিঠের পালক ধূসর ও বুক-পেটের নিচের পালক ধবধবে সাদা। ডানার বাইরের কয়েকটি পালকের আগা কালো, এ ছাড়া বাকি সব পালক সাদা। লম্বা ও সরু ঠোঁটটি কমলা-হলুদ ও আগা গাঢ় রঙের। চোখের ওপরে ও নিচে অর্ধচন্দ্রাকৃতির পট্টি রয়েছে। প্রজননহীন পাখির মুখমণ্ডল সাদা; তবে চোখের চারদিক, কান-ঢাকনি ও মাথার পেছনে বাদামি ছিটেফোঁটা থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের ওপরটা গাঢ় বাদামি, নিচটা ফ্যাকাশে ও ঠোঁট ধূসরাভ।
এরা সচরাচর দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি। উপকূলীয় এলাকা, জাহাজ বা লঞ্চঘাট, নদী ও হ্রদে বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুম ছাড়া অন্য সময় সচরাচর একাকী বা দু-তিনটিতে একসঙ্গে থকে। তবে মাছের আধিক্য থাকলে একসঙ্গে বহু পাখি দেখা যায়। মাছ মূল খাদ্য হলেও প্রয়োজনে কাঁকড়া, চিংড়িজাতীয় প্রাণী, কীটপতঙ্গ, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, সরীসৃপ, পাখি, ডিম ইত্যাদিও খেতে পারে। পানির সামান্য ওপরে উড়ে উড়ে খাদ্য সংগ্রহ করে। শীতে সচরাচর নীরব থাকে, কিন্তু মাঝে মাঝে উচ্চকণ্ঠে ‘ক্রি-অ্যাব ক্রি-অ্যাব ক্রি-অ্যাব’ স্বরে ডাকে।
গ্রীষ্মে মধ্য এশিয়া, উত্তর-পশ্চিম মঙ্গোলিয়া, চীনের উত্তরাঞ্চল ও তিব্বতে প্রজনন করে। সচরাচর মাটির ওপর অনেক পাখি একসঙ্গে কলোনি করে থাকে। শুকনো ঘাস-লতা ও দেহের ঝরা পালক দিয়ে মাটিতে বাসা বানায়। স্ত্রী দুই থেকে চারটি ঘিয়ে রঙের ডিম পাড়ে, যার ওপর থাকে কালো, খয়েরি বা ধূসর ছিটছোপ। ডিম ফোটে ২৫ দিনে। সদ্য ফোটা বাচ্চার কোমল পালকের রং ঘিয়ে-হলুদ বা রুপালি-সাদা। বাচ্চারা প্রায় পাঁচ দিনে বাসা ছাড়ে এবং চার-পাঁচ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়।
-
রামগাংরা মারকুটে-ঝগড়াটে অতি চঞ্চল ও কোলাহলপ্রিয় পাখি। চালচলনে আছে একটা বেপরোয়াভাব। ডাকাডাকি করে সর্বক্ষণ জানান দেয় নিজের উপস্থিতি। পোকামাকড়ের বা প্রিয় ফলের নাগাল পেতে এরা গাছের সরু ডাল-পাতার শীর্ষে ঝুলে-দুলে প্রায়ই অ্যাক্রোবেটিক শো প্রদর্শনে খুবই পারঙ্গম। সাহসী পাখি বলে নিজের চেয়ে বড় পাখির দিকেও ধেয়ে যায় এরা। এই পাখিটিকে দেখলে হঠাৎ করে পুরুষ
চড়ুই বলেও মনে হতে পারে। তাই বোধ হয় এদের আরেক নাম ‘গাইছা চড়ুই’, তিতপোখ নামেও পরিচিত।
মূল খাদ্য গাছের ডাল-পাতা-বাকলের পোকামাকড়। পলেস্তারা খসা দালানের ইটের ফাঁকফোকরেও তল্লাশি চালায় পোকামাকড়ের খোঁজে। আখখেত, পাটখেত ও বেগুনখেতের পোকামাকড়ও খায়। খায় সফেদা, পেঁপে, আতাসহ আরও কিছু ছোট-বড় ফল।
দলে চলে, জোড়ায় চলে, চলে একাকীও। পাখিটির মাথার তালু ও গলা কুচকুচে কালো, চোখের নিচ থেকে প্রায় গলা পর্যন্ত ধবধবে সাদা। বুকের দুপাশ সাদা, গলার কালোটা একেবারে বুকের মধ্যিখান দিয়ে রেখার মতো বয়ে গিয়ে শেষ হয়েছে তলপেটে। পিঠ ও লেজের আগার উপরিভাগ ঘন-ধূসর, ডানার উপরিভাগে সাদা সাদা সরু রেখা আছে কয়েকটা। ছোট ঠোঁটটির রং কালো। ধূসর-কালচে পা। পুরুষ ও মেয়ে পাখি দেখতে একই রকম।
এরা বাসা করে সুপারিগাছ, খেজুরগাছ, মোটা বাঁশগাছের ছোট মুখওয়ালা কোটর-ফোকরে। দরদালানের দেয়ালের ফোকরেও বাসা করে থাকে। স্টিলের খাম্বার বা পিলারের ফোকর থাকলে সেখানেও বাসা করতে পারে এরা।
বাসা সাজায় শুকনো সুপারির খোসা, আখের ছোবড়া, নারকেলের খোসা, শুকনো ঘাস ইত্যাদি দিয়ে। দুজনে মিলে বাসা সাজায়। খোঁড়লের গভীরতা বেশি হলে ওপরমুখো হয়ে পা আঁকড়ে বেয়ে বেয়ে তলায় নামে, ওঠেও বেয়ে বেয়ে একই কায়দায়। আমি ৫ ফুট থেকে ৯ ফুট গভীরতায় এদের বাসা সাজাতে দেখেছি। ছানাদের খাওয়াতে গিয়ে এরা পেরেশান হয়ে যায়। ডিম পাড়ে ৩ থেকে ৭টি। তা দেয় পালা করে। বউ যখন তায়ে থাকে, তখন পুরুষটি পরম মমতায় খাবার এনে বউটিকে খাওয়ায়।
রামগাংরার ইংরেজি নাম Great Tit। বৈজ্ঞানিক নাম Parus major। দৈর্ঘ্য ও ওজন যথাক্রমে ১৩ সেমি ও ১৩ গ্রাম। এরা আমাদের আবাসিক পাখি। ঢাকা শহরসহ সারা দেশেই দেখা মেলে এদের।
-
চমৎকার তথ্যবহুল লেখা (সূত্র: প্রথম আলো (http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1245256/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A7%9F-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B0%E0%A6%BE))। উইকিপিডিয়াতে এই পাখির উপর অনেক ছবিসহ নিবন্ধ (https://en.wikipedia.org/wiki/Great_tit) আছে; কিন্তু ইংরেজি, অসমীয়া সহ অনেক ভাষাতে থাকলেও বাংলা ভাষাতে নাই।
-
এ দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি তামাটে মুনিয়া। কালোমাথা মুনিয়া নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Chestnut Munia, Indian Black-headed Munia বা Eastern Black-headed Munia. Estrildae পরিবারের সদস্য তামাটে মুনিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম lonchura atricapilla. আগে এরা Lonchura malacca বা তিনরঙা মুনিয়ার (Tricolored Munia) একটি উপপ্রজাতি হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু ২০০০ সালে এদের তামাটে বা কালোমাথা মুনিয়া ও তিনরঙা বা খয়েরি মুনিয়া নামে দুটি পৃথক প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
তামাটে মুনিয়া ছোট আকারের পাখি। লম্বায় প্রায় ১১ সেন্টিমিটার ও ওজনে মাত্র ৯ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা, ঘাড় ও গলা চকচকে কালো। ডানা, পিঠ, বুক, পেট ও লেজ গাঢ় তামাটে। কোনো কোনো বংশধারার (Race) পাখির পেট ও লেজের তলা কালো এবং লেজের পালকে হলদে বা কমলার আভা দেখা যায়। শক্তপোক্ত ত্রিকোণাকার ঠোঁট হালকা নীলচে-ধূসর। পা, আঙুল ও নখ কালো। গাঢ় রঙের চোখ। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের পালক অনুজ্জ্বল দারুচিনি-বাদামি ও দেখতে হুবহু তিলা মুনিয়ার বাচ্চার মতো। মাথা-ঘাড়-গলায় কালো রং নেই। ঠোঁট গাঢ় নীলচে-ধূসর।
তামাটে মুনিয়া দীর্ঘ ঘাসবন, ধানখেত, জলাভূমি, আবাদি জমি ও বনের ভেতরের খোলা জায়গায় বা বনের কিনারায় বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট দলে দেখা যায়। তবে তিনরঙা মুনিয়ার সঙ্গে মিশ্র ঝাঁকেও দেখা যেতে পারে। মিশ্র ঝাঁকে থাকলে ঝাঁকের চার-পাঁচ ভাগের এক ভাগ মাত্র হয় তামাটে মুনিয়া। অন্যান্য মুনিয়ার মতো বীজজাতীয় খাদ্য, যেমন ঘাসবিচি ও ধান-কাউন এদের প্রধান খাদ্য। মাটিতে খুঁটে খুঁটে বা ঘাস-ধান-কাউনের ছড়ায় উঠে খাবার খায়। শুধু পুরুষই ডাকে। ‘পি পি’ বা ‘পিট পিট’ শব্দে ডাকতে থাকে।
মে-নভেম্বর প্রজননকাল। মাটি থেকে ১-২ মিটার উচ্চতায় নলখাগড়া, ঝোপ, লম্বা ঘাস বা তাল-খেজুরগাছে শুকনো ঘাস ও চিকন কাঠিকুটি দিয়ে ডিম্বাকার বাসা বানায়। ডিম হয় ৫-৬টি। ডিমের রং সাদা। বাচ্চা ফুটতে ১২-১৫ দিন সময় লাগে। বাচ্চারা উড়তে শেখে প্রায় দুই সপ্তাহে। এরপর আরও ১-৩ সপ্তাহ বাবা-মায়ের সঙ্গে বাসায় থাকে। দুর্লভ এই মুনিয়াগুলো এ দেশের প্রকৃতিতে অনন্তকাল বেঁচে থাকুক।
-
Nice post
-
ছবির এই দুধসাদা পুরুষ পাখিটি বাসায় বসে ডিমে তা দিচ্ছে কী সুন্দর মোহনীয় ভঙ্গিতে! লেজের লম্বা ফিতাপালক দুখানা টানটান করে ছড়িয়ে দিয়েছে। আসলে পুরুষ পাখিরা ডিমে তা দেয় না, ডিমে তা দিতে দিতে ক্লান্ত বা ক্ষুধার্ত হলে মেয়েপাখিটি যখন বাসা ছেড়ে উড়াল দেয় ডানার আড়ষ্টতা কাটানোর জন্য বা খাবার খেতে, তখন পুরুষটি ডিমে বসে, তায়ে সুবিধার জন্য ঠোঁট দিয়ে ডিম উল্টেপাল্টে দেয়। দুঃসাহসী এই পুরুষ পাখিরা বাসার চারপাশ কড়া পাহারায় রাখে। বাসার ত্রিসীমানায় বেজি-বনবিড়াল, পোষা কুকুর-বিড়াল, গুইসাপ-বিষধর সাপসহ শিকারি পাখিরা এলেই বাতাসচেরা কর্কশ ধাতব ডাক ছেড়ে আক্রমণ করে। আক্রমণের গতি ও আকস্মিকতায় শত্রুরা ভড়কে যায়। এই সুবিধা নেওয়ার জন্য এই পাখিদের বাসার কাছাকাছি বাসা করে কমলা দোয়েল, হলদে বউ, চশমা পাখি, নাচুনে, ভ্যাদাটুনি, বুলবুলিসহ নিরীহ ও কিছুটা সাহসী পাখি।
অনেকটাই গেরিলা কৌশলে ওড়াউড়ি এদের। পছন্দ ছায়া ছায়া বনবাগান। সবচেয়ে বেশি পছন্দ বাঁশবন বা বাঁশমহাল। বাঁশের ঝুলন্ত কঞ্চিতে বাসা করতেও পছন্দ করে খুব। আম-কাঁঠালগাছ বেশি পছন্দ। তবে বাসা করবে কিছুটা ঝুলন্ত সরু ডালে। বছর বছর একই এলাকায় বা একই গাছের ভিন্ন ভিন্ন ডালে বাসা বাঁধার প্রবণতা এদের প্রবল। বাসা করে বসন্ত-বর্ষায়। বাসা বাঁধা শেষ করতে সময় লাগে চার থেকে সাত দিন। চারটি গোলাপি রঙের ডিম পেড়ে ১৫-২১ দিনের তায়ে ছানা ফোটায় এরা। মূল খাদ্য এদের উড়ন্ত কীটপতঙ্গ, লার্ভা ও ফুলের নির্যাস। সুযোগ পেলে তাল-খেজুরের রসও পান করে। পুরুষ ছানারা দু-তিন বছর পর্যন্ত লালচে বা লালচে-বাদামি থাকে, তারপরে একেবারে দুধসাদা রঙের হয়ে যায়। মেয়েটি সারা জীবনই লালচে-বাদামি পাখি থাকে, তার লেজে ফিতাপালক থাকে না। পুরুষটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর পাখি। সুদৃশ্য লম্বা লেজ দুটি এদের শরীরের তুলনায় চার–পাঁচ গুণ বড়। বাতাসে এই সুদৃশ্য লেজ-ফিতা যখন দোলে, তখন নান্দনিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়।
সারা দেশেই আছে এরা; তবে চালচলনে লুকোছাপা থাকার কারণে মানুষের নজরে পড়ে না সহজে।
চতুর-সাহসী-বুদ্ধিমান ও তুখোড় প্রেমিক এই পাখিদের নাম দুধরাজ। মেয়েটি হলো দুধরানি। দুধরানির যেকোনো বিপদে দুধরাজ কী রকম আহাজারি আর ক্রন্দন যে করে! লেজঝোলা, সাদা সিপাহি, লাল সিপাহি ও সাহেব বুলবুলি নামেও পরিচিত এরা। ইংরেজি নাম Asian Paradise Flycatcher। বৈজ্ঞানিক নাম Terpsiphone paradise। লেজসহ দৈর্ঘ্য ২০ সেন্টিমিটার। ওজন ২০ গ্রাম।
(সূত্র: প্রথম আলো)
-
মুনিয়া এ দেশের আবাসিক পাখি তিনরঙা মুনিয়া। খয়েরি মুনিয়া নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Tricolored Munia, Three-colored Munia Black-headed Munia। একসময় এরা কালোমাথা মুনিয়া নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে এরা দুটি আলাদা প্রজাতিতে ভাগ হয়ে গেছে; খয়েরি বা তিনরঙা মুনিয়া ও তামাটে বা কালোমাথা মুনিয়া (Chestnut Munia)। Estrildae পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Lonchura malacca।
তিনরঙা মুনিয়া লম্বায় প্রায় ১১ সেন্টিমিটার এবং ওজনে মাত্র ১২ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা, ঘাড়, গলা, বুকের কেন্দ্র, অবসারণী ও লেজের তলা চকচকে কালো। বুকের বাকি অংশ সাদা। ডানা, পিঠ ও লেজ লালচে-বাদামি বা খয়েরি। ঠোঁট বেশ শক্ত, ত্রিকোণাকার ও হালকা নীলচে। পা, আঙুল ও নখ কালো।
তিনরঙা মুনিয়া লম্বা ঘাসবন, জলা, ধানখেত ও ছোট ঝোপে বিচরণ করে। মুনিয়ারা ছোট থেকে বড় মিশ্র ঝাঁকে থাকে। কখনো কখনো ডোরা বাবুই এবং কালোবুক বাবুইয়ের সঙ্গেও চরতে দেখা যায়। ঘাসবীচি, কাউন, ধান ইত্যাদি প্রিয় খাদ্য। ঘাসবন বা ধান-কাউনের খেতে দলে দলে খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায়। এমনিতে নিরীহ হলেও ঝাঁক বেঁধে ফসলের বেশ ক্ষতি করে।
মে-নভেম্বর প্রজননকাল। এ সময় জলার ধারে পাতা ও ঘাস দিয়ে বড় বলের মতো বাসা বানায়। বাসায় ঢোকার জন্য লম্বা সুড়ঙ্গের মতো পথ থাকে, ঘাসফুল দিয়ে যার চারপাশটা মুড়ে নেয়। ডিম পাড়ে চার থেকে সাতটি, ধবধবে সাদা। স্বামী-স্ত্রী মিলে ১২-১৩ দিন তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। বাচ্চারা ১৪-১৫ দিনে উড়তে শেখে।
(সূত্র: প্রথম আলো)
-
পোড়া ইটের মতো লালচে রঙের বকেরা দিনে ক্যামোফ্লেজ হয়ে চুপচাপ থাকে নলবন, কাশবন, হোগলাবন, বাগানের ঝোপঝাড় ও বাঁশবনের গোড়ায়। কচুরিপানার দঙ্গলের ভেতরে বাসা যখন করে, তখন কচুরিপানার ভেতরেই দিনের আশ্রয় নেয়। এদের ঠোঁট তীক্ষ্ণ, ধারালো। বাসা করে গ্রীষ্ম-শরতে। বাসা তৈরির সময় এরা খুব ভোরে অথবা চাঁদনি রাতে উপকরণ আনে, যেন সহজে কেউ দেখতে না পায়। বাসা বাঁধতে সময় লাগে ৩-৫ দিন। ৩-৪টি ডিমে পালা করে তা দেয় মেয়ে ও পুরুষটি। ডিম ফুটে ছানা বের হয় ১৭-২২ দিনে। ছানারা উড়তে পারে ২৫-২৮ দিনে। সদ্য ফোটা ছানা দেখতে খুবই সুন্দর। ঘন লালচে রঙের শরীরে থাকে বিচিত্র রঙের চমৎকার আঁকিবুঁকি। পাখিটির নাম নলঘোঙ্গা। লালবক নামেও পরিচিত।
নিরীহ-ভীত ও নিজেকে আড়াল করার জন্মগত প্রবণতা এদের প্রবল। বিপদের গন্ধ পেলে দুই পাসহ শরীর ও ঘাড়-মাথা-ঠোঁট নলের মতো সোজা করে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে টানটান থাকে। এমনভাবে থাকে যে দেখাই যায় না।
সদ্য উড়তে শেখা ছানাদের নিরাপত্তার জন্য এরা প্রথম প্রথম ফুটফুটে জোছনা রাতে বেরোবে। মূল খাদ্য এদের বিভিন্ন রকম পোকামাকড়-কীটপতঙ্গ। মেটেসাপ বা জলসাপসহ ব্যাঙ-কাঁকড়াও গেলে। এরা হাঁটে একেবারে পেশাদার সৈনিকের মতো প্যারেড করে বা মার্চ করে।
অপেক্ষাকৃত খাটো লেজের লাজুক স্বভাবের এই বকদের ইংরেজি নাম Cinnamon Bittern. বৈজ্ঞানিক নাম ixobrychus cinnamomeus. দৈর্ঘ্য ৩৬-৩৮ সেন্টিমিটার। হলুদাভ ঠোঁট ও পায়ের অধিকারী এই পাখিদের পুরুষটি খুবই সুন্দর। চকচকে গলা-বুক। মেয়েটির ঘাড়-গলায় কালচে-বাদামি রেখা টানা থাকে। ঢাকা শহরতলি থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশেই আছে এরা।
-
এরা বনমোরগ। বনমুরগি বা জংলি মুরগি নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Red Jungle Fowl। Phasianidae পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Gallus gallus murghi. গৃহপালিত মুরগির উৎপত্তি কিন্তু এই বনমোরগ থেকেই। তবে এ নিয়ে মতপার্থক্য আছে।
বনমোরগ ও মুরগি লম্বায় ৬৫-৭৫ ও ৪২-৪৬ সেন্টিমিটার। মোরগের ওজন এক কেজি, আর মুরগির কিছুটা কম। মোরগের মাথার খাঁজকাটা বড় ঝুঁটি, মুখমণ্ডল ও ঠোঁটের নিচের লতিকা টকটকে লাল। পিঠ কমলা-লাল। ডানার পালক লাল-কালো-সোনালি। ঘাড় থেকে সোনালি-হলুদ সরু পালক পিঠে নেমে গেছে। কাস্তের মতো লম্বা কেন্দ্রীয় পালকসহ লেজের পালক সবুজাভ কালো। বুক-পেট কালচে-বাদামি। মুরগি একনজরে বাদামি। মাথা তামাটে, ঝুঁটি ছোট ও লাল। মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে লাল। লেজ কালচে। পিঠ ও ডানা কালচে-বাদামি, তাতে অসংখ্য ছোপ। উভয়েরই ঠোঁট কালচে-বাদামি এবং পায়ের পাতা, নখ ধূসর-বাদামি।
বনমোরগ সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক পাখি। চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের সব বনে এবং সুন্দরবনে বাস করে। ভারত, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে দেখা যায়। এককালে দেশের প্রায় সব বনজঙ্গলেই দেখা যেত। ব্যাপক শিকারের কারণে পাহাড়ি বনে এরা হুমকির মুখে। এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো কোনো হাটবাজারে বনমোরগ বিক্রি হয়। তবে সিলেটের চা-বাগান ও সুন্দরবনে এরা ভালো আছে। খুব ভোরে ও সন্ধ্যার আগে মাটি থেকে কুড়িয়ে বিভিন্ন শস্যদানা, ঘাসের গোড়া, কীটপতঙ্গ, ফল ইত্যাদি খায়। রাত কাটায় উঁচু গাছের ডালে বা বাঁশঝাড়ে। ভালো উড়তে পারে। কক্ কক্ শব্দে ডাকে।
মার্চ-মে প্রজননকাল। বনের মধ্যে পায়ের নখ আঁচড়িয়ে মাটিতে সামান্য গর্ত করে শুকনো ঘাস ও কাঠিকুটি বিছিয়ে বাসা বানায়। ৪-৬টি ডিম পাড়ে। ২০-২১ দিনে ডিম ফোটে। বাচ্চাগুলো ফোটার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসা ছাড়ে ও মায়ের সঙ্গে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। প্রায় পাঁচ বছর বাঁচে।
Source: Prothom Alo
-
আবাসিক এই পাখির নাম চিত্রিত গলা কাঠঠোকরা। সবুজ ডোরা কাঠঠোকরা নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Streak-throated woodpecker। বৈজ্ঞানিক নাম picus xanthopygaeus। দৈর্ঘ্য ৩০ সেন্টিমিটার। ওজন ১০০ গ্রাম। মাটিতে চলতে চলতে ক্লান্ত হলে এরা লেজের পালক মেলে দিয়ে, সেই শক্ত পালক মাটিতে ঠেকিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসার মতো বসতে পারে খাড়া হয়ে। লেজটাকে এরা তৃতীয় পা হিসেবে ব্যবহার করে। গাছের চেয়ে মাটিতেই থাকে বেশি।
মূল খাদ্য এদের পিঁপড়া, পিঁপড়ার রসালো সাদা ডিম, বাচ্চা উইপোকাসহ ওদের রস টসটসে ডিম-বাচ্চা, বিটল পোকা-কেঁচো, নানান রকম পোকামাকড়-লার্ভা ইত্যাদি। এ ছাড়া পান করে ফুলের মধুরেণু, তাল–খেজুরের রসসহ শিশিরকণা।
পুরুষ পাখিটির মাথার চূড়া ও তালু শুকনো আলতার মতো লাল, লেজের গোড়ার উপরিভাগ ও পিঠে এক ছোপ করে হলুদ রং, পিঠ হলুদাভ সবুজ, কানের পাশটা চকচকে ছাই বাদামি, চিবুক ধূসরাভ সাদা। তাতে সরু সরু কালচে রেখা টানা। কালচে কমলা রঙের আভা থাকে ঘাড়ে। চোখের ওপর দিয়ে সাদাটে টান থাকে। বোজানো অবস্থায় পাখার প্রান্তদেশ সাদাটে বাদামি ছোপের সারির অপূর্ব বিন্যাস। গলা-বুক-পেটেও শিল্পীর বাদামি ডোরা ও ছিট-ছোপের আশ্চর্য চিত্রিত শিল্পকর্ম।
-
সদা সতর্ক হুঁশিয়ার লম্বা পা ও নলাকৃতির লম্বা গলার এই পাখি বিপৎসীমানার ভেতরে মানুষ বা অন্য কোনো শত্রু দেখলে ঘাড়-মাথা ও পুরো শরীর টানটান করে, ঠোঁটটি আকাশমুখো করে স্থির হয়ে যায়। আর যদি ঘাসবন, কাশবন, হোগলাবন বা অন্য কোনো জলজ ঝোপঝাড়ের ভেতরে থাকে, তাহলে মুহূর্তেই নিজেকে আড়াল করে ফেলে। শরীরের রংটাও এদের গাছপালার সঙ্গে মিশে যাওয়ার উপযোগী। ঘাড়ের ওপরের কিছু অংশসহ পিঠ-ডানার উপরিভাগও বেগুনি আভা মাখানো ছাই-ধূসর। পিঠের নিচের দিকটা হালকা লালচে। উড়াল দেওয়ার মুহূর্তে দুই ডানা অনেকটাই খেপজালের মতো খুলে যায়। তখন ডানার প্রান্তের কালো পালকগুলো নজরে পড়ে। চিবুকসহ ঘাড়ের উপরিভাগটা লালচে। গলার কাছ থেকে একটি করে মোট দুটি কালো-সরু রেখা গলার দুই পাশ থেকে নেমে বুকের উপরিভাগে মিশেছে। টিকির মতো দুগাছি কালো সুতাপালক কানের কাছ থেকে পেছন দিকে গিয়েছে। মাথার চাঁদি কালো। ঠোঁটের নিচের গলাটুকু সাদা। হলুদাভ পা-ঠোঁট। বুক ও ঘাড়ের দুই পাশ থেকে সেমাইয়ের মতো সরু কিছু সুতাপালক ঝুলে থাকে।
পাখিটির নাম বেগুনি বক। ঝুঁটিকাক ও খয়রা কানা নামেও দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশে ব্যাপক পরিচিত ছিল। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত নদীচর-মোহনা-উপকূল-কাপ্তাই হ্রদ, বৃহত্তর খুলনা ও সিলেট অঞ্চলের হাওর-বিলে দেখা মিলত। এরা আমাদের আবাসিক পাখি। কিন্তু এই ২০১৭ সালে এটি এখন বাস্তুচ্যুত পাখি। হেমন্ত-শীতে কিছু পাখি আমাদের দেশে আসে। পরবাসী এই পাখির ইংরেজি নাম Purple Heron. বৈজ্ঞানিক নাম Ardea perpurea. দৈর্ঘ্য ৭০-৯০ সেন্টিমিটার। ওজন প্রায় দেড় কেজি।
মূল খাদ্য এদের মাছ-ব্যাঙ-জলজ নির্বিষ সাপ-পোকামাকড়-ছোট কাঁকড়া ও দু-চার দিন বয়সী কচ্ছপছানা। এদের বাসা হয় গাছে, সরু-শুকনো কঞ্চি ও ডালপালা দিয়ে বড়সড় বাসা বানায়। সেই গাছে থাকতে পারে অন্যান্য বকের বাসাও। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ফোটে ২৫-২৬ দিনে।
Source:http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1349271/বেগুনি-বক
-
এরা ডিম পাড়ে ছয়-সাতটি করে। মেয়ে ও পুরুষ পাখি পালা করে ডিমে তা দেয়। বাসা করার সময়ও দুজনে পালা করে গর্ত খোঁড়ে। এরা অঙ্ক ও জ্যামিতিতে পাকা। মৃত্তিকাবিজ্ঞানীও বলা যায়। বাসা করে মাটি পরীক্ষার পর মাপজোখ করে।
গাঙশালিকেরা নদীর খাড়া পাড়ে বা পুল-কালভার্টের তলায় এমন জায়গায় বাসা বাঁধে, যেখানে শিয়াল-খাটাশ-বনবিড়ালেরা চড়তে গেলেই পিছলে পড়বে। দুষ্টু ছেলেমেয়ে ও বাজ-ইগলেরা ডিম-ছানা নাগালে পাবে না। বৃষ্টির পানি খাড়া পাড় বেয়ে নামার সময় সহজে সুড়ঙ্গের ভেতর ঢুকবে না। বাসা শেষ করতে সময় লাগে ছয় থেকে নয় দিন। কয়েক জোড়া পাখি মিলে কলোনি বাসা করার আগে জুতসই জায়গাটা নির্বাচন করে। তারপরও বাসার মুখ থাকে ছোট। গভীরতা দুই থেকে চার ফুট ও একটু ডানে বা বামে ঘুরে গিয়ে থাকে ডিম-বাচ্চার চেম্বার। ডিম ফুটে ছানা হয় ১৫ থেকে ২১ দিনে। ছানারা উড়তে শেখে ১৯ থেকে ২৪ দিনে।
বুদ্ধিমান গাঙশালিকদের বেশি দেখা যায় ছোট-বড় নদী এলাকার আশপাশে। বলা যায়, নদীকেন্দ্রিক জীবন এদের। দলে চলে। গলার স্বর অনেকটাই ভাতশালিকের (Common Myna) মতো। তবে খুব মিষ্টি ও মোলায়েম শব্দে গলার ভেতরে এরা যেন জলতরঙ্গ বাজায়। মূল খাদ্য এদের ফল-পোকামাকড়-কীটপতঙ্গ ও নানান রকম শস্যদানা। নিয়মিত বালুস্নান করে, ধানগাছে জমে থাকা শিশিরে ডানা ঝাপটে মজা করে শিশির-স্নানও করে।
গাঙশালিক একনজরে নীলচে ধূসর পাখি। ডানার প্রান্ত ও লেজ কালো, লেজের অগ্রভাগ গোলাপি-সাদা। ঘন-কমলা রঙের চোখের পাশটার সঙ্গে একই রঙের ঠোঁটটা খুবই মানানসই। ঠোঁটের গোড়ায় আবার কপালমুখো ছোট একগুচ্ছ ঝুঁটি। ডানার প্রান্তে সাদা ছোপ। পা গোলাপি হলুদ। ইংরেজি নাম Bank Myna. বৈজ্ঞানিক নাম Acridotheres ginginianus. দৈর্ঘ্য ২১ সেমি। ওজন ৭২ গ্রাম।
Source: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1351286/ওরা-অঙ্ক-জ্যামিতি-জানে
-
বিপদে পড়লে এই পাখিরা কামড় বসাতে মহা ওস্তাদ। মোটা-শক্ত ঠোঁটের আগা তীক্ষ্ণ-ধারালো। পেশাদার জাল-ফাঁদ শিকারিরা এদের জালফাঁদ থেকে ছাড়ানোর সময় সাবধানতা অবলম্বন করেন। বন্দুক শিকারিরাও আহত পাখি ধরতে সতর্ক থাকেন। কামড় বসাতে পারলে ছাড়ানো কষ্ট। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর খুলনার ফকিরহাট-চিতলমারী-মোল্লাহাট-তেরখাদা-ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হতো। বন্দুক শিকারিরা গুলি করে মারতেন। হাটবাজার থেকে পাখি কিনে ক্রেতার হাতে ধরিয়ে দেওয়ার আগে বিক্রেতারা পাখিটির নাকের ভেতর দিয়ে এই পাখিটিরই ডানার একটি পালক ছিঁড়ে নাকের এপাশ-ওপাশ দিয়ে বের করে ঠোঁটে পালক বেঁধে দিতেন। ক্রেতারা মুরগির মতো পা ধরে উল্টো করে ঝুলিয়ে বাড়িমুখো হতেন। ২০১৭ সালেও এ পাখি বিক্রি হচ্ছে। তবে অতি গোপনে। দেশের হাওরাঞ্চলে ধরা-মারা-বেচাবিক্রি চলে আজও। চাহিদা ভালো। মাংসমূল্যের জন্যই পাখিটি আজ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। অথচ বন্য প্রাণী আইনে দেশের যেকোনো পাখিই ধরা-মারা-বিক্রি ও পোষা দণ্ডনীয় অপরাধ।
দুঃসাহসী-লড়াকু ও বদমেজাজি এই জলাজমির পাখিটির নাম কালিম। ফকিরহাট-বাগেরহাট তথা বৃহত্তর খুলনায় এটি ‘বুরি’ নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। ইংরেজি নাম purple swamphen। বৈজ্ঞানিক নাম porphyrio porphyrio। দৈর্ঘ্য ৪৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৬৫০ গ্রাম। মারকুটে এই পাখিরা একনজরে চকচকে নীলচে-বেগুনি। রোমান যোদ্ধাদের মতো কপাল-মাথা জোড়া আলতা রঙের দর্শনীয় বর্ম। লালচে রঙের পা ও পায়ের লম্বাটে
আঙুল। লেজের তলা কার্পাস তুলোর মতো সাদা। চোখের পাশে বৃত্তাকারে সাদাটে ছোপ। বেশ নাদুসনুদুস স্বাস্থ্যবান এই পাখিরা সব সময় যেমন সতর্ক থাকে, তেমনি যেন রেগেও থাকে। প্রজনন মৌসুমে পোষা মোরগের কায়দায় দুটি পুরুষ যখন লড়াই করে, তখন কপালের বর্মে বর্মে শব্দ বাজে। বন্দুকের গুলির ছররায় যদি একখানা পা আহত হয়, তাহলে পা মুখে কামড়ে ধরে উড়ে পালায়।
এদের মূল খাদ্য জলজ উদ্ভিদ-গুল্মের কচি-নরম পাতা-ডগাসহ পদ্মফুলের ভেতরের অংশ, ব্যাঙের বাচ্চা, ছোট মাছ। ৫০ বছর আগেও হেমন্ত-শীতে ঢাকার শহরতলির বিল-ঝিলসহ সারা বাংলাদেশের বিল-হাওরে দেখা মিলত। এখন এরা কোণঠাসা দেশের কয়েকটি হাওরাঞ্চলে। গ্রীষ্ম-শরতে ভাসমান জলজ উদ্ভিদ-গুল্ম-কচুরিপানা ও ঝোপঝাড়ের তলায় ডাল-লতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে তিন-সাতটি। ছানা ফোটে ১৮-২৩ দিনে। ছানারা হয় শ্লেটি-কালো। তাতে ধূসরের আভা ছড়ানো। মাথা-কপাল জোড়া শিল্ড থাকে, রং ওই লালই। পা ও পায়ের আঙুলও লাল। মা-বাবা পাখি ছানাদের নিয়ে চরাই করে। মুরগিছানাদের মতো ছানারা মা-বাবার পিঠে চড়ে, তেমনি মায়ের দুই পাখা ও বুকের তলায় বসে অদৃশ্য হয়ে থাকে। কিশোরগঞ্জ ও শেরপুর-জামালপুরে পোষা পাখি তথা গৃহপালিত বুরি পাখি দেখা যায়।
Source: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1371091/দুঃসাহসী-কালিম-পাখি
-
পুরুষ বুক ফুলিয়ে আর লেজ-মাথা শৈল্পিক ভঙ্গিতে দুলিয়ে দুলিয়ে বউটিকে কত প্রেম-সংগীত যে শোনায়! এরা ২টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। পালা করে তা দেয় দুজনে। ছানা হয় ১২-১৫ দিনে। বাচ্চারা উড়তে শেখে ২১-২৭ দিনে। অন্য ঘুঘুদের মতো এরাও ছানাদের প্রথম দিকে ৪-৫ দিন ঘুঘুর দুধ পান করায়। তারপর অল্প অল্প করে খাওয়াতে শুরু করে মূল খাবার। খাবার তালিকায় আছে নানান রকম ফল। মিষ্টি বরই এদের খুবই পছন্দ। শুধু ফুল নয়, ফুলের নরম পাপড়ি ও কলিও খায়। বাগেরহাট অঞ্চলে ‘উড়ে আম’ (Bischofia javanica) একটি গাছ বেশ সুলভ, ওই গাছের ফলের আকৃতি যেমন অনেকটাই আঙুরের মতো। ওই ফল এই পাখিদের অতি প্রিয়। ‘বলা’ ফলও খেতে ভালোবাসে খুব। এই গাছটিও বাগেরহাটে সুলভ। বন্দুকধারী শিকারিরা এবং আদিবাসী গোষ্ঠীর তির-ধনুকধারীরা এদের শিকার করে। আঠার ফাঁদেও আটকায়। তবে ওদের শিকার করা মোটেই সহজ কাজ নয়। অতিশয় হুঁশিয়ার এরা। মুহূর্তের মধ্যে গাছের ডালে বসে স্টিল যেমন হতে জানে, তেমনি ঝট করে উড়াল দিয়ে পালাতেও পারে।
এদের একজন দলপতি থাকে। পুরো দল দলপতির শারীরিক ভাষা বুঝতে পারে। সব নির্দেশনা পালন করে। ত্রুটি হলে দলপতি ও অন্যরা মিলে শাস্তি দেয়। আবার, তরুণ পাখিরা দলপতির আসনে বসতে চেয়ে দলপতির সঙ্গে মরণপণ লড়াইয়েও নামে। অস্ত্র মূলত দু-পাখার চটপট থাপ্পড়। সুখের সময় আপন মনে চাপা-মিষ্টি শিস যেমন বাজায়, তেমনি আহাজারি করার মতোও ডাকে।
এই পাখির নাম কমলাবুক হরিয়াল। বাগেরহাটে ‘কমলা হরেল’ নামে ৫০ বছর আগেও ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিল। নির্বিচার শিকার, ওদের খাদ্য-গাছ দ্রুত হারে কমে যাওয়ায় এখন দুর্দশা। এদের দৈর্ঘ্য ২৯ সেমি, ওজন ১৫০-২২০ গ্রাম। কমলাবুক হরিয়ালের ইংরেজি নাম Orange-breasted Green Pigeon. বৈজ্ঞানিক নাম Treron bicinctus.
৫৫ বছর আগে গ্রামবাংলায় সুলভ থাকলেও এখন প্রাকৃতিক বনে কোণঠাসা। সুন্দরবনসংলগ্ন জেলাগুলোতে অল্প সংখ্যায় দেখা যায় আজও। এদের বুকের নিচটা কমলা রঙের, বাকি বুক ও পেট কমলাটে-গোলাপি। মাথার তালু ও ঘাড় ধূসরাভ জলপাই-বাদামি। ডানার প্রান্তে চওড়া কমলা-হলুদ ব্যান্ড। জলপাই-সবুজ পিঠ। লেজের উপরিভাগ শ্লেটি-ধূসর। পাখার শেষ প্রান্ত কালো। লেজের তলাটা লালছে। গলা হলদেটে নীলচে ঠোঁট, লালছে পা।
Source: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1373141/কমলাবুক-হরিয়াল
-
Thanks a lot for the informative post.
-
পাখিটি আদতে অতি নিরীহ। চোখে সব সময় ভয় ভয় ভাব লেপ্টে থাকে। তবে সে গায়ক। এই পাখিদের পছন্দ হলো ছায়া ছায়া, মায়া মায়া বন-বাগান আর ঝোপঝাড়পূর্ণ এলাকা। আবার গেরস্থ বাড়ির উঠোন-বাড়িতেও এদের নির্ভয় যাতায়াত। মাটির ওপর দিয়ে ছন্দময় ভঙ্গিতে লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যায় এরা।
পাখিটির নাম কমলাবউ। গ্রীষ্ম থেকে শরতে বাসা করে গাছের ঝোপালো ডালে বা সুপারির ৭-৮ ফুট উঁচু চারার পাতার ডগার গোড়ায়। বাসা চমৎকার গোলাকার। দ্বিস্তরবিশিষ্ট বাসাটার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, চামচের হাতার মতো বাসারও একটা হাতা থাকে, সেটি সুপারি পাতার সঙ্গে শক্ত করে জুড়ে দেয়। যাতে ঝড়ে বাসা উড়ে না যায়। আমার নিজের গ্রামের সুপারিবাগানগুলোতে এদের বাসা প্রতি মৌসুমে কমপক্ষে ৫০টি দেখা যায়। পিরিচের ওপর স্যুপের বাটি বসালে যেমন দেখায়, বাসাটি দেখতে প্রায় তেমন।
এরা ঝরাপাতা-ডালপালা ওল্টায় ঠোঁট দিয়ে। নানা রকমের পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, টিকটিকি-অঞ্জনের বাচ্চা, ব্যাঙাচি, ব্যাঙের পিচ্চি ছানা তাদের খাবার। উইপোকার ডিম-বাচ্চা এদের কাছে পোলাও ভাত। কেঁচো গেলে নুডলসের মতো।
বিপদের গন্ধ পেলে তীক্ষ্ণ-সুরেলা-ধাতব কণ্ঠে ‘হুইসেল’ বাজিয়ে দ্রুত উড়াল দেয়। আশপাশের সব পাখি এই সতর্কসংকেতের অর্থ বোঝে। শীতে পরিযায়ী পাখি ধূসর দামা ও রঙিলা দোয়েলরা এদের সঙ্গে মিলে একত্রে খাবারের সন্ধান করে।
মেয়ে পাখি গোলাপি-মাখন রঙা ডিম পাড়ে ৪টি। ডিম ফুটে ছানা হয় ১৪ দিনে। ১০ থেকে ১৫ দিনে তারা উড়তে শিখে যায়। কিশোর বয়সী ছানাদের বুক-ঘাড়-মাথা ও ডানার উপরিভাগে অসংখ্য বাদামি রঙের ছিট থাকে। মা পাখিটিকেও অনেকটাই ও রকম দেখায়। ছেলে পাখির মাথা-ঘাড়-বুক-পেট কমলা অথবা লালচে কমলা। পিঠ ধূসর-নীলচে। ডানার প্রান্তে এক সারিতে গোল ফোঁটা থাকে ৫-৬টি। লেজের তলা সাদা। গলা সাদাটে, ঠোঁট কালো। গোলাপি পা।
এরা রাতে আশ্রয় নেয় বাঁশের কঞ্চি, পেঁপে পাতার ডগা ও মোটা লতার ওপরে। শীতে মা-বাবা পাখি যখন পাশাপাশি হয়ে শরীর ফুলিয়ে গোলগাল পটকা মাছের মতো হয়ে ঠোঁট পিঠে গুঁজে দিয়ে ঘুমায়, তখন এদের দেখতে দারুণ লাগে। টর্চলাইটের আলোয়ও ওদের ঘুম ভাঙে না। গভীর হয় ঘুম।
কমলাবউয়ের ইংরেজি নাম অরেঞ্জ–হেডেড থ্রাস। বৈজ্ঞানিক নাম zoothera citrina। এরা মেটে দোয়েল, দামা, গুয়ে হালতি ও কমলা দোয়েল নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ২১ সেন্টিমিটার। ওজন ৬০ গ্রাম।
দক্ষিণ এশিয়ায় এই পাখির ১৫টি প্রজাতি আছে। এর মধ্যে কমলাবউ বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। সুরেলা কণ্ঠে গান গায় বলে অনেকে একে রসিক পাখিও বলে।
-
বাংলাদেশের পাখির তালিকায় সদ্য সংযোজিত পাখিটি এক বিরল আবাসিক প্যাঁচা। এত দিন চোখের আড়ালেই ছিল। এর কোনো বাংলা নাম নেই। ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান স্কপস আউল। এর আগে ওকে নিমপোখ, নিম প্যাঁচা বা শিঙ্গেল প্যাঁচার (কলারড স্কপস আউল) একটি উপপ্রজাতি হিসেবে গণ্য করা হতো। কাজেই পাখিটিকে দেশি নিমপোখ অথবা দেশি নিম বা শিঙ্গেল প্যাঁচা বলা চলে। বৈজ্ঞানিক নাম otus bakkamoena। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় বাস করে এরা। দেশি নিমপোখ পরিযায়ন করে না।
প্রাপ্তবয়স্ক দেশি নিমপোখের দৈর্ঘ্য ২২ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার। ওজন ১৪৩ থেকে ১৮৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম, তবে পুরুষের চেয়ে স্ত্রী কিছুটা বড় হয়। এর দুটি রং—একটি ফ্যাকাশে বাদামি ও অন্যটি লালচে। প্রধানত দক্ষিণাঞ্চলের পাখিগুলো লালচে রূপের, যাদের দেহের বর্ণে গৈরিক আভা থাকে। রূপ অনুযায়ী মুখমণ্ডলের গোলক দুটো কালো বর্ডারযুক্ত ফ্যাকাশে ধূসর বা লালচে। কপাল, ভ্রু ও কানের ওপরের লম্বা শিং ও পালকগুলো সেই তুলনায় বেশ ফ্যাকাশে। মাথা কালচে ফোঁটাযুক্ত। দেহের ওপরটা ছিটছোপযুক্ত গাঢ় বাদামি থেকে কালচে। ঘাড়ে রয়েছে হলদে বন্ধনী। বুক ধূসর–হলদে বা লালচে হলুদ ও তাতে রয়েছে অল্প কিছু লম্বালম্বি দাগ। পেটের দিকটা সাদাটে। চোখ বাদামি বা কমলা। পায়ের পালক ধূসরাভ বাদামি, যা আঙুলের কাছে এসে সাদাটে হয়েছে। আঙুল মাংসল, বাদামি। নখ ফ্যাকাশে, শিং বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি ফ্যাকাশে ধূসর বা হলদে বাদামি, যার ওপর ডোরা থাকে।
দেশি নিমপোখ গ্রামীণ বন, আম ও ফলের বাগান, কুঞ্জবন ও কৃষিজমিতে বাস করে। তবে এ পর্যন্ত রাজশাহীর শহরসংলগ্ন সিমলা ছাড়া দেশের কোথাও এদের দেখা যায়নি। এরা নিশাচর। ঘাসফড়িং, গুবরে পোকা, মথ ইত্যাদি খায়। সুযোগ পেলে গিরগিটি, ইঁদুর, ছোট পাখিও খায়। ঢেউয়ের মতো উড়ে বেড়ায়। ‘ওক-ওক-ওক-ওক’ শব্দে ডাকে।
ডিসেম্বর থেকে মে প্রজননকাল। মাঝারি উচ্চতায় কোনো গাছের খোঁড়লে বাসা বানায়। একই বাসা বছরের পর বছর ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে তিন–চারটি। ফোটে ২৭ থেকে ২৯ দিনে। ছানারা চার-পাঁচ সপ্তাহে উড়তে শেখে। স্বাবলম্বী হতে আরও তিন-চার সপ্তাহ লাগে। আয়ুষ্কাল তিন-চার বছর।
-
ডানা পিছমোড়া করে দাঁড়িয়ে থাকা পাখিটি সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক বক কালিকাক। শীতলে কাক, খাইরা, পিদালি, ধূসর বা ডাইং বক নামেও পরিচিত এরা। ইংরেজি নাম গ্রে হেরন। বৈজ্ঞানিক নাম ardea cinerea. বাংলাদেশসহ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকায় এদের দেখা মেলে।
কালিকাক লম্বায় ৮৪ থেকে ১০২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। গড়ে ১ কেজি ৩৫০ গ্রামও ওজন হয়। মাথা-গাল-গলা বাদে শরীরের বাকি অংশ ফ্যাকাশে থেকে নীলচে ধূসর। মাথা, গাল ও গলা সাদা। মাথার দুপাশ থেকে দুটো কালো ডোরা মাথার পেছনে গিয়ে অগোছালো সুতাপালকের ঝুঁটি তৈরি করেছে। বুক, পেট ও লেজতল সাদাটে ধূসর। চোখ সোনালি হলুদ। চঞ্চু কালচে বাদামি। পা ও পায়ের পাতা হলদে সবুজাভ বাদামি। প্রজননকালে চঞ্চু কমলা-হলুদ এবং পা ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল হলুদ রং ধারণ করে। পুরুষের তুলনায় মেয়েরা আকারে ছোট। এর ঝুঁটিও ছোট। ধূসর মাথা, ঘাড়সহ অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির শরীর অনুজ্জ্বল।
সারা দেশের অগভীর হাওর, বিল, হ্রদ, নদী, খাল, জলাভূমি, আবাদি জমি, পুকুর, মোহনা ইত্যাদিতে একাকী বা ছোটা দলে বিচরণ করে কালিকাক। পানি, কাদা বা মাঠে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে বল্লমের মতো চোখা চঞ্চু দিয়ে মাছ, ব্যাঙ, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, শামুক-ঝিনুক, কাঁকড়া-চিংড়ি, কেঁচো, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি শিকার করে খায়। ওড়ার সময় ‘কারার-কারার...’ স্বরে ডাকে।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এদের প্রজননকাল। এ সময় জলাশয়ের আশপাশের উঁচু গাছের শাখায় ডালপালা ও ঘাস দিয়ে বড় মাচার মতো বাসা বানায়। পুরুষ বাসা তৈরির জায়গা পছন্দ করে ও সরঞ্জাম জোগাড় করে। স্ত্রী সেগুলো দিয়ে বাসা বানায়। হালকা নীলচে সবুজ রঙের ২ থেকে ৫টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ২৫ থেকে ২৬ দিনে। স্ত্রী-পুরুষ মিলেমিশে ডিমে তা দেয় এবং ছানাদের লালন-পালন করে। ছানারা প্রায় ৫০ দিনে উড়তে শেখে। একেকটি কালিকাক ১০ বছরের বেশি সময় বাঁচে।
-
একবারই এদের একটি বাসা পাওয়ার রেকর্ড আছে বাংলাদেশে। পাখিটির ইংরেজি নাম ব্লু–থ্রোটেড ব্লু–ফ্লাইকেচার। সরাসরি বাংলা করলে অর্থ দাঁড়ায় নীলগলার নীল চটক। বৈজ্ঞানিক নাম Cyornis rubeculoides.
পুরুষ পাখির গলা-মাথা-ঘাড়-পিঠসহ লেজের উপরিভাগ গাঢ় নীল। বুকটা চমৎকার কমলারঙা। তার নিচ থেকে শুরু করে পেটটা সাদা। মেয়ে পাখির গলা ক্রিম মাখানো কমলাটে, বুক কমলা, পেট সাদা। পা ধূসর। দৈর্ঘ্যে এরা ১৪ সেন্টিমিটার হয়। ওজন গড়পড়তা ১৬ গ্রাম। ঠোঁটের গোড়ায় গোঁফপালক আছে।
তীক্ষ্ণ–সুরেলা কণ্ঠে ‘ছিক্ ছিক্ ছিক্ ছিক্’ শব্দে অনবরত গান গেয়েই চলে। এদের চারণক্ষেত্র ঘাসবন, হোগলাবন, ধানখেত, ঝোপঝাড়। মূল খাদ্য পোকামাকড়। শিকার দেখলেই অনেকটা খেলনা কাগজের প্লেনের মতো বাতাসে সাঁতার কেটে গিয়ে শিকার ঠোঁটে পুরে নেয়। তারপর শিকার নিয়ে গিয়ে অন্য কোনো জায়গায় বসে সাবাড় করে। প্রয়োজনে ঘাসবনের তলায় নেমে মাকড়সা-ঘাসফড়িং পাকড়াও করে। গান গাওয়ার সময় লেজটা নাচিয়ে এরা নান্দনিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করে।
-
গাছের সরু ডাল-পাতা ও লতায় ঝুলে-দুলে খাবার তল্লাশি করে এরা। সেটা দেখতে অনেকটা অ্যাক্রোবেট (শারীরিক শৈলী) প্রদর্শনের মতো। পাঁচ-ছয়টি পাখি মিলে যখন লতা-পাতায় ঝুলে খাবার খুঁজতে শুরু করে, তখন তা মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে এই দেহভঙ্গির কারণে। এদের সৌন্দর্যও চেয়ে থাকার মতো। নীলপরি নাম তো আর এমনি এমনি হয়নি।
‘হুইট চি, হুইট চি, হুইট চি, হুইটইউ’ গানেও প্রাণ জুড়ায়। পুরুষ পাখির কপাল-ঘাড়-পিঠ ধাতব চকচকে-ভেলভেটি নীল। চিবুক-গলা-বুক ও লেজের প্রান্তের উপরিভাগসহ ডানার প্রান্ত মখমলি কালো। ডানার কালো রঙের ওপর নীলের আভা ছড়ানো। ঠোঁট-পা কালো। হলুদ বৃত্তের ভেতরে কালো চোখের মণি।
মেয়ে পাখি নীলচে-সবুজ রঙা। গহিন টিলা-পাহাড়ি বনে এদের বাস। চঞ্চল নীলপরিরা ৪ থেকে ১২টির দলে ভাগ হয়ে গাছে গাছে উড়ে বেড়ায়। আমুদে-খেলুড়ে এরা অন্য কিছু পাখির ডাক নকল করতেও পারে। এদের মূল খাদ্য পাকা ফল ও ফুলের মধুরেণু। জাম ও ডুমুর বেশি প্রিয়।
শীত থেকে গ্রীষ্ম, এই সময়ে গাছের ডালে বাসা করে। জলপাই-ধূসর বা সবজেটে-সাদা রঙের ২-৩টি ডিম পেড়ে মেয়েটি একাই তা দিয়ে ছানা ফোটায়।
নীলপরির ইংরেজি নাম এশিয়ান ফেইরি-ব্লুবার্ড। বৈজ্ঞানিক নাম lrena puella।