Daffodil International University

Educational => Online Education => Topic started by: Riyad on December 26, 2010, 12:09:58 AM

Title: মৌমিতার হাসি রহস্য
Post by: Riyad on December 26, 2010, 12:09:58 AM
আমাদের এই ঢাকা শহরটা খুবি অদ্ভুত এক শহর। এখানে অনেক সমস্যা তবুও মাঝে মাঝে সেই সমস্যা গুলোই মজার মনে হয়। সেদিন ক্লাস শেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরব, ৩৬ নং বাসের বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, মোটামুটি ১ ঘন্টা পর আমি বাসে উঠতে পারলাম, মনে মনে খুশি হলাম, এখন সিটে  বসে ঘুমিয়ে যাবো। কিন্তু কিসের সিট, সিটিং বাসে সবাই সিট পেয়েছে শুধু আমিই বাড়তি হিসেবে উঠেছি। কন্ট্রাক্টর বলে ভুলে বেশি উঠেয়েছি যদিও এই ভুল তারা প্রতিদিনই করে। যাই হোক, না ঘুমাতে পারার বেদনায় জর্জরিত হয়ে ঝুলে ঝুলে বাড়ী ফিরছি, হঠাৎ চিকন কন্ঠে হাসির শব্দে চমকে উঠি। পেছনে তাকিয়ে দেখি ছোট্ট এক মেয়ে মায়ের সাথে কথা বলছে আর শুধু হাসছে। বাসের সবাই তাকে নিয়ে ব্যস্ত, যে যাই বলে তাতেই সে খিল খিল করে হাসে। কিন্তু সমস্যা হল এক জায়গায়, তার সামনের ৩ তা দাত নেই। আমি কাছি গিয়ে বললাম,” নাম কি তোমার”, তাতেও সে কিছুটা হেসে উত্তর দিল ‘মৌমিতা’।

আমি বললাম, ” মৌমিতা, তোমার সামনের দাত গুলো কোথায়, ভুলে বাসায় রেখে এসেছো?” এবারো খিল খিল হাসি, শুধু একটা পার্থক্য। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাসি। এই দৃশ্য দেখে বাসের সবার মুখেও হাসি। কিছুক্ষন পরে আমার মাথায় চিন্তা এলো, আমি জানলাম কিভাবে যে মৌমিতার ৩টা দাত নেই, অথবা ৩ টা দাত ছিলো? পাঠক কি বলতে পারেন?

প্রশ্ন শুনে নিশ্চই বিরক্ত হচ্ছেন। সহজ উত্তর হল সবার মুখেই সামনে দাত থাকে, আর মৌমিতার মুখেও অনেক গুলো দাত ছিল, দেখলেই বুঝা যায় সেখানে আরো ৩ টা দাত ছিল। হ্যা, এটাই উত্তর। এখন আরেকটা প্রশ্ন করা যাক, মৌমিতার আরো ৩ টা দাত ছিল, এই কথাটা আমি কিসের ভিত্তিতে বলেছি, গণিত নাকি বিজ্ঞান?
এবার পাঠক নিশ্চই আমার বোকামি দেখে হেসে উঠেছেন, ঐ কথা বলার জন্য গনিত, বিজ্ঞানের আশ্রয় নেয়া লাগে নাকি? আসলে এই ব্যপারটা নিয়েই আমার আজকের লেখা। আমাদের জীবনে আমরা অনেক কিছু দেখি, পর্যবেক্ষন করি। এই পর্যবেক্ষন যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজে ব্যাবহার করি তখন সেটাই বিজ্ঞান।
যেমন, আমরা দেখেছি মানুষের মুখে সামনে দাত থাকে, এইটাই পর্যবেক্ষন। আমি মৌমিতার ক্ষেত্রে এই পর্যবেক্ষন ব্যবহার করেছি, তার মানে হল আমি এই ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়েছি। তাহলে গণিত কি?

কোনো বিজ্ঞনের থিওরি আর গানিতিক থিওরির মাঝে পার্থক্য হল- বিজ্ঞানের থিওরির প্রথম অংশটা আসে পর্যবেক্ষন থেকে, পরে সেটাকে একটা গানিতিক আকার দেয়া হয়। গনিত হল বিজ্ঞানের ভাষা। বিজ্ঞনের থিওরি গুলো দেয়ার সময় পর্যবেক্ষন কম হলে থিওরিতে ভুল হতে পারে, সেই জন্য থিওরি গুলো পরিবর্তণ করা হতে পারে। এই মুহুর্তে মনে পড়ছে অনু পরমানু আবিস্কারের কথা। ডেমক্রিটাস প্রথম বলেন পদার্থকে যত ইচ্ছা তত ভাগ করা যায়, পদার্থের আবিভাজ্য অংশ বলে কছু নেই। কিছু দিন পরে অ্যা্রিস্টটল বললেন- পদার্থকে ভাংতে ভাংতে এক পর্যায়ে ক্ষুদ্রতম কনা আসবে যাকে আর ভাঙ্গা যাবে না, তার নাম দিলেন পরমানু। আরোও কিছুদিন পরে রাদারফোর্ড দেখালেন পরমানু বিশ্নেষন যোগ্য যার কেন্দ্রে রয়েছে নিউক্লিয়াস আর বাইরে রয়েছে ঋনাত্বক চার্জ সম্পন্ন কনা যাকে জে.জে থমসন পরবর্তিতে নাম দেন ইলেক্ট্রন।আরো কিছুদিন পর দেখা গেল, নিউক্লিয়াসকেও ইচ্ছা করলে বিশ্লেষন করা যায় ফলে পাওয়া যাবে প্রোটন ও নিউট্রন। এখন আধুনিক কালে দেখা যায় এই প্রোটন ও নিউট্রনকেও বিশ্লেষন করে পাওয়া যায় কোয়ার্ক। এর শেষ কোথায় হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আর গণিতের ক্ষেত্রে কি হয়? ইউক্লিড শত শত বছর আগে প্রমান করে গেছেন “ত্রিভুজের যে কোনো দুই কোনের সমষ্টি ৩য় কোনের চেয়ে বড়” ।

আমরা এখন স্কুলে এই উপপাদ্য পড়ি এবং ভবিষ্য্যেও পড়ব। এত গুলো কথা বলার উদ্দ্যেশ্য হল গণিত আর বিজ্ঞানের মুল পার্থক্য গুলো বুঝানো। গণিতে কোনো থিওরি একবার প্রমান হয়ে গেলে সেটাকে অপ্রমানিত করার কোনো সুযোগ নেই। তবে গণিতেও পর্যবেক্ষন ভিত্তিক অনুমানের সুযোগ রয়েছে, এই মুহুর্তে তেমন একটা বিখ্যাত অনুমানের কথা মনে পড়ছে যেটা গোল্ডব্যাক কনজেকচার নামে পরিচিত- জার্মান গণিতবিদ গোল্ডব্যাক পর্যবেক্ষন করেন, যে কোনো জোড় সংখ্যাকে(২ ব্যতিত) ইচ্ছে করলে দুইটি প্রাইম বা মৌলিক নাম্বারের যোগফল হিসেবে লিখা যায়, যেমন-
৬=৩+৩
১২=৫+৭

অনেক বড় বড় সংখ্যা নিয়েও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে কিন্তু সব সময়েই দেখা যায় এটা সত্য। কিন্তু ঝামেলা হল, এইটা গানিতিক ভাবে কেউ এখনো প্রমান করতে পারেনি, তাই এটাকে কোনো থিওরি বলা যাবে না, বলতে হবে কনজেকচার বা অনুমান। যারা বিখ্যাত হতে চান, তারা একবার প্রমান করার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

একটা গানিতিক থিওরি প্রমান করার অনেক পদ্ধতি আছে, তার মাঝে একটা মজার পদ্ধতির নাম হল contradiction বা অসঙ্গতি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কোন থিউরি প্রমানের প্রথমে যেটা প্রমান করা হবে তার উল্টোটা ধরে নেয়া হয়, তার পর ক্যলকুলেশন করতে করতে একসময় দেখা যায় প্রথমে যেটা ধরে নেয়া হয়ছিল তার বিপরীত একটা ফলাফল আসে, তখনি বলা হয়, প্রথমে ধরে নেয়া হয়েছিল সেটা ভুল বলে এই অসঙ্গতি। গণিত পাঠশালায় এই পদ্ধতিতে প্রমান করা দুইটি চমৎকার লেখা আছে,আমার লেখা মৌলিক সংখ্যার অসীমত্ব ম্যভেরিক ভাই এর লেখা ভয়ঙ্কর এক সংখ্যার জন্ম, নিষ্ঠুর এক খুনের গল্প ( শেষ পর্ব )।

http://www.gonitpathshala.org
Title: Re: মৌমিতার হাসি রহস্য
Post by: nusrat-diu on February 09, 2011, 04:19:45 PM
The beginning of this writing is very interesting!
Title: Re: মৌমিতার হাসি রহস্য
Post by: Riyad on February 09, 2011, 09:13:34 PM
Thanks Mam.......