Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Md.Towhiduzzaman

Pages: [1] 2 3 ... 5
1


    জীবনযাপন
    জেনে নিন

জীবনযাপন সংবাদ
পৃথিবীর ভয়ংকর ৭ ভাইরাস
মইনুল হাসান
১৩ মার্চ ২০২০, ০৮:৩০
আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২০, ০৮:৩০
 
 


সেই আদিকাল থেকে মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলছে যে ক্ষুদ্র দানব, তার নাম ‘ভাইরাস’। লাতিন শব্দ ‘ভাইরাস’–এর অর্থ ‘বিষ’। আবার মানুষ এই ‘বিষ’কে মানবকল্যাণেও কাজে লাগাচ্ছে ইদানীং। তবে এটা নিশ্চিত যে এই ভয়ংকর ক্ষুদ্র দানবদের পুরোপুরি আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপে বন্দী করতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

অতি ক্ষুদ্র ভাইরাসের আছে ভয়ংকর মারণ ক্ষমতা। শুধু বিশ শতকেই গুটিবসন্ত প্রাণ কেড়ে নিয়েছে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের। প্রথম কে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তা জানা না গেলেও এ পৃথিবীর সর্বশেষ আক্রান্ত ব্যক্তিটি ছিলেন আমাদের বাংলাদেশের রহিমা বানু। বর্তমানে এই দানবটিকে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। আরেকটি বিভীষিকার নাম স্প্যানিশ ফ্লু। ১৯১৮ থেকে ১৯১৯ সালের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণে প্রাণ হারায় পাঁচ থেকে দশ কোটি মানুষ, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় তিন শতাংশ।

পৃথিবীতে জানা-অজানা বহু ভাইরাস আছে। এর মধ্যে ছয়টি ভাইরাসকে সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সে ছয়টি ভাইরাসের সঙ্গে ইদানীং যোগ হয়েছে করোনাভাইরাস।

প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটে কর্মরত বিজ্ঞানীরা। ছবি: লেখকপ্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটে কর্মরত বিজ্ঞানীরা। ছবি: লেখকইবোলা ভাইরাস
এ পর্যন্ত ঘাতক ভাইরাসের শীর্ষে আছে ইবোলা ভাইরাস। এখন পর্যন্ত এর ছয়টি প্রকরণ শনাক্ত করা গেছে। প্রকরণভেদে ইবোলা ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর হার ২৫ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশের বেশি হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনতে পারলে তাকে বাঁচানো সম্ভব। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রথম দেখা যায় ১৯৭৬ সালে। একই সঙ্গে নাইজার, সুদান, ইয়াম্বুকু ও রিপাবলিকান কঙ্গোতে। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালে ইবোলা মহামারিতে আফ্রিকার পশ্চিমাংশের দেশগুলোতে ১১ হাজার ৩৩৩ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ২০১৯ সালে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ইবোলা ভাইরাসে ২ হাজার ৯০৯ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় এবং এদের মধ্যে ১ হাজার ৯৫৩ জন প্রাণ হারায়। আজ পর্যন্ত এ ভাইরাসের কোনো কার্যকর প্রতিষেধক তৈরি করা যায়নি। ইবোলা ভাইরাস সংক্রামিত মানুষের রক্ত, লালা বা যেকোনো নিঃসৃত রস থেকে কিংবা শরীরের ক্ষতস্থানের মাধ্যমে অপরের শরীরে সংক্রামিত হয়ে থাকে।

রেবিজ ভাইরাসের থ্রিডি ছবি। ছবি: উইকিপিডিয়ারেবিজ ভাইরাসের থ্রিডি ছবি। ছবি: উইকিপিডিয়া
রেবিজ ভাইরাস
রেবিজ ভাইরাস নিউরোট্রপিক অর্থাৎ এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। এ ভাইরাসের সংক্রমণে যে রোগটি হয়, তার নাম জলাতঙ্ক। প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবছর পুরো পৃথিবীতে জলাতঙ্কের আক্রমণে প্রাণ হারায় ৫৯ হাজার মানুষ। সংক্রামিত প্রাণীর লালায় রেবিজ বা জলাতঙ্ক রোগের ভাইরাস বিচরণ করে। সেসব প্রাণী মানুষকে কামড়ালে মানুষ সংক্রামিত হয়। কার্যকর ভ্যাকসিন থাকা সত্ত্বেও আক্রান্ত ব্যক্তিকে সময়মতো ভ্যাকসিন না দেওয়ার কারণে জলাতঙ্কের আতঙ্ক থেকে এখনো মুক্ত হওয়া যাচ্ছে না।

ভাইরাসটি সরাসরি মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে এবং এর স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে। সময়মতো টিকা না দিতে পারলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু অবধারিত। মস্তিষ্কে রেবিজ ভাইরাস যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখনই রেবিজের লক্ষণগুলো দেখা দিতে থাকে। লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে তীব্র খিঁচুনি ও পক্ষাঘাতে রোগীর মৃত্যু হয়।

এইচ৫এন১ ভাইরাসের একটি সাব টাইপ এইচ১এন১। ছবি: উইকিপিডিয়াএইচ৫এন১ ভাইরাসের একটি সাব টাইপ এইচ১এন১। ছবি: উইকিপিডিয়া
এইচ৫ এন ১ (H5 N1) রূপান্তরিত এবং মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
এই ভাইরাসটি মিউট্যান্ট। ডাচ ভাইরোলজিস্ট রন ফুচিয়ে গবেষণাগারে বার্ড ফ্লু ভাইরাসকে রূপান্তরিত করেন। এ ভাইরাসটি মারাত্মক সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ভীষণ বিপজ্জনক বিধায় ২০১১ সালে আমেরিকান বায়োসফটি এজেন্সি (এনএসএবিবি) এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা ও প্রকাশনার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। গবেষকেরা আশ্বস্ত করেছেন, এই দানব ভাইরাসটির স্থান হয়েছে গবেষণাগারের অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রকোষ্ঠে। সেখান থেকে পালানোর কোনো পথ খোলা নেই। এমনিতেই সাধারণ বার্ড ফ্লু ভাইরাসের মারণ ক্ষমতা ৬০ শতাংশের ওপরে। এরপরও উচ্চ মারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ ভাইরাসটি নিজে থেকেই ভোল পাল্টাতে অর্থাৎ রূপান্তরিত হতে পারে। সে জন্য এটি নিয়ে বিশেজ্ঞরা বিশেষ বেকায়দায় আছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ২ লাখ ৯০ হাজার থেকে সাড়ে ৬ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা দায়ী। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে এই মৌসুমে তিন কোটির বেশি মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েছে এবং কমপক্ষে ১৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এ ভাইরাসে ফ্রান্সে ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে প্রাণ হারিয়েছে ৮ হাজার ১০০ জন।

মারবুর্গ ভাইরাস নিউক্লিয়োক্যাপসিডের ক্রিও ইএম পুনর্নির্মাণ। ছবি: উইকিপিডিয়ামারবুর্গ ভাইরাস নিউক্লিয়োক্যাপসিডের ক্রিও ইএম পুনর্নির্মাণ। ছবি: উইকিপিডিয়া
মারবুর্গ
জার্মানির একটি শহরের নামে এই ফিলোভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে। যদিও এটি ইবোলা ভাইরাসের চেয়ে কম মারাত্মক। তবে এ দুটি ভাইরাসের অনেক মিল আছে। উচ্চ মারণক্ষমতা অর্থাৎ প্রায় ৮০ শতাংশ আক্রান্ত মানুষ এ ভাইরাসে মারা যায়। মারবুর্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পঞ্চম বা সপ্তম দিনে সংক্রামিত ব্যক্তির প্রচণ্ড জ্বর এবং সেই সঙ্গে রক্তবমি, মলের সঙ্গে রক্ত, নাক, দাঁতের মাড়ি এবং যোনিপথে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহ অসুস্থতার পরে পুরুষদের মধ্যে অর্কিটিস নামক অণ্ডকোষের প্রদাহও দেখা দিতে পারে। আশার কথা, এ ভাইরাস খুব সহজে সংক্রামিত হয় না। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে খুব বেশি মেলামেশার কারণে তার মল, প্রস্রাব, লালা বা বমির মাধ্যমে মারবুর্গ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।

একটি টিইএম মাইক্রোগ্রাফে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাস। ছবি: উইকিপিডিয়া।একটি টিইএম মাইক্রোগ্রাফে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাস। ছবি: উইকিপিডিয়া।
ডেঙ্গু
ডেঙ্গুর আরেকটি নাম আছে, তা হলো ‘ট্রপিক্যাল ফ্লু’। এডিস মশার কামড় দ্বারা সংক্রামিত হয় ডেঙ্গু। অন্যান্য ভাইরাসের চেয়ে কম বিপজ্জনক। ডেঙ্গু ভাইরাস সাম্প্রতিককালে ইউরোপেও হানা দিয়েছে। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ১৪১টি দেশে আনুমানিক ৩৯ কোটি ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ডেঙ্গু জ্বরে প্রায় পাঁচ লাখ ব্যক্তি মারাত্মক রক্তক্ষরণকারী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে প্রাণ হারায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ এবং কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

এইচআইভি ভাইরাসের ডায়াগ্রাম। ছবি: উইকিপিডিয়া।এইচআইভি ভাইরাসের ডায়াগ্রাম। ছবি: উইকিপিডিয়া।
এইচআইভি বা এইডস ভাইরাস
এই ভাইরাসটি পোষক কোষে আট থেকে দশ বছর পর্যন্ত ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। সক্রিয় হয়ে উঠলে পোষক দেহের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিকল করে দিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, এইডস মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে সাত কোটি মানুষ এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ এইচআইভিতে মারা গেছে।

১০ মার্চ ২০২০, ব্রিটিশ মেডিকেল বৈজ্ঞানিক জার্নাল The Lancet খবর দিয়েছে, এইডসে আক্রান্ত একজন ব্রিটিশ ব্যক্তির অস্থি–মজ্জা–কোষ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তাকে পুরোপুরি সরিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। তিনি হচ্ছেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যাকে এইডসের কবল থেকে মুক্ত করা গেছে। এইডসের মোকাবিলায় এটি একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্সকরোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
নভেল করোনা (Covid-19)
ইদানীং যে ভাইরাসটি সারা বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে, তা হলো করোনাভাইরাসের একটি প্রকরণ নভেল করোনা (Covid-19)। এ পর্যন্ত যে তথ্য আমাদের হাতে আছে, তাতে দেখা যায়, এ ভাইরাসে আক্রান্ত ১০০ জনে প্রাণ হারিয়েছে ৪ জনের কম ব্যক্তি এবং অর্ধেকের বেশি ইতিমধ্যে সেরে উঠেছে। করোনা নামের ভাইরাসের নতুন রূপটি এখনো পুরোপুরি উন্মোচন করেনি। বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন এর মতিগতি বুঝতে এবং উঠেপড়ে লেগেছেন এর প্রতিষেধক উদ্ভাবনের। এ ব্যাপারে প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা অচিরেই বিশ্ববাসীকে সুখবর দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

(তথ্যসূত্র: ব্যানিয়ার্ড এসি ও ট্রুডো এন, ‘রেবিজ প্যাথজেনেসিস অ্যান্ড ইমিনোলজি’, ২০১৮)

লেখক: অণুজীববিজ্ঞানী এবং ফরাসি বিচার বিভাগে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত।

4
Common Forum / হৃদরোগের আগাম ৫ লক্ষণ
« on: February 18, 2020, 12:08:21 PM »
হৃদপিণ্ডের কোনো শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করলেই হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ হয়। বয়স, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, উচ্চ কোলেস্টোরলের সমস্যা, অতিরিক্ত মেদ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, মানসিক চাপ— এগুলো মূলত হৃদরোগের কারণ। আবার অনেক সময় হৃদরোগ হলেও সঠিকভাবে বোঝা সম্ভব হয় না। সমস্যা হলো কখনো কখনো বুকে কোনো ধরণের ব্যথা ছাড়াই হৃদরোগ হতে পারে, ফলে হৃদরোগ হয়েছে কিনা তা খুব ভালো করে বোঝা যায় না। আগেভাগে বুঝতে পারলে কিন্তু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সহজেই।

তাই জেনে নেয়া যাক হার্ট অ্যাটাকের অন্যান্য লক্ষণগুলো সম্পর্কে।

১) হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, হার্ট অ্যাটাকের প্রায় এক মাস আগে থেকেই দুর্বলতা এবং ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা শুরু হয়ে যায়। কোনো কারণ ছাড়াই শারীরিক দুর্বলতা এবং খুব সহজেই হাঁপিয়ে উঠে ঘন ঘন শ্বাস নেয়ার সমস্যা শুরুর বিষয়ে সতর্ক থাকুন। এই রকম শারীরিক দুর্বলতা এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা হলে বুঝতে হবে হৃদপিণ্ডের বিশ্রামের প্রয়োজন।

২) হটাৎ করে অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়ার সমস্যা শুরু হলে সে তা অবহেলা করবেন না। কারণ, এটিও হার্ট অ্যাটাকের একটি লক্ষণ। যখন হার্ট ব্লক হয় তখন রক্ত সঞ্চালনে হৃদপিণ্ডের অনেক বেশি কাজ করতে হয়। এই অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে ঘামের সৃষ্টি হয় এবং এই ঘাম সাধারণত অনেক ঠাণ্ডা হয়ে থাকে। এই ধরনের সমস্যাকে অবহেলা না করে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।


৩) একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাকের আগে থেকে বেশিরভাগ আক্রান্তরই বদহজমের সমস্যা এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও বুক জ্বালা যা আমরা অনেকে স্বাভাবিক বদহজমের সমস্যা ভেবে অবহেলা করি, তা-ও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত। এর পাশাপাশি আচমকা কোনো কারণ ছাড়াই মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব এবং বমি করার বিষয়গুলো অবহেলা করবেন না।

৪) অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের সময় বুকে ব্যথা অনুভূত হয় না। এ ক্ষেত্রে বুকে অস্বস্তিকর অনুভূতি এবং বুকে চাপ ধরা ভারি ভাব অনুভব করার বিষয়টিতে নজর দিতে হবে। এই সময় শ্বাস নিতেও সমস্যা হতে পারে। এ সব বিষয় নজরে পড়লে দ্রুত চিকিত্সকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

৫) শুধু বুকে ব্যথাই নয়, শরীরের অন্যান্য বিশেষ কিছু অঙ্গে ব্যথা অনুভব হওয়াও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। পেটের উপরের অংশ, কাঁধ, পিঠ, গলা, দাঁত ও চোয়াল এবং বাম বাহুতে হুট করে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া বা চাপ অনুভব অথবা আড়ষ্টতা অনুভব করাও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। তাই এই বিষয়গুলোকে মোটেই অবহেলা করবেন না।

5
চীন থেকে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। সংক্রমণের ব্যাপকতা ও প্রাণহানির কারণে ভাইরাসটি নিয়ে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, কী করলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকা যায়। এ ক্ষেত্রে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকলেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব।

করোনাভাইরাস আক্রমণ করে আচমকা। ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশের পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন সময় লাগে। প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর। তারপর দেখা দেয় হাঁচি ও শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ফুসফুসে সংক্রমণ যত বাড়ে, শ্বাসকষ্টও তত বাড়তে থাকে। বুকে ব্যথা হতে পারে। তবে এ ব্যথার ধরন একেবারে আলাদা। গভীর বা লম্বা শ্বাস নেওয়ার সময়ে বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে। মূলত ফুসফুসে সংক্রমণজনিত প্রদাহের ফলে এ ব্যথা হয়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জ্বর না–ও থাকতে পারে। ক্রমে শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। তবে কাবু করে নিউমোনিয়া। অনেকের ক্ষেত্রে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) দেখা দেয়। ভাইরাসটি পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পরিণামে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকার্যকর (প্রথমে কিডনি বিকল হয়) হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধের উপায়

এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনো চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে সচেতন থাকলে ও কিছু নিয়ম মেনে চললে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে অনেকাংশেই রেহাই পাওয়া সম্ভব।

• বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

• বাইরে পরা ময়লা কাপড় দ্রুত ধুয়ে ফেলতে হবে।

• বাইরে থেকে ফিরে সাবান–পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে।

• কিছু খাওয়া কিংবা রান্না করার আগে হাত ভালো করে ধুতে হবে।

• চোখ, নাক ও মুখের সংস্পর্শ থেকে যত দূর সম্ভব হাত সরিয়ে রাখতে হবে।

• সর্দি-কাশি, জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি যাওয়া যাবে না।

• অসুস্থ জীবজন্তু থেকে দূরে থাকতে হবে।

• খামার, গোয়ালঘর কিংবা বাজারের মতো জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে।

• কোনো পশু স্পর্শ করার পর ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।

• অপুষ্টি, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ নেন এবং যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাঁদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

• ফলের রস এবং পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।

• ডিম কিংবা মাংস রান্নার সময় ভালো করে সেদ্ধ করতে হবে।

• উচ্চ তাপমাত্রায় ও রোদে ভালোভাবে কাপড়, তোয়ালে, চাদর ইত্যাদি শুকিয়ে নিতে হবে।

• ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের যতটা সম্ভব গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে।

ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, লালবাগ, ঢাকা।

6
Common Forum / গবেষণা নিয়ে ৫ প্রশ্ন
« on: January 15, 2020, 10:11:41 AM »

গবেষণা নিয়ে ৫ প্রশ্ন

আমাদের দেশের বহু তরুণ এখন দেশ-বিদেশে গবেষণা করছেন। নামী জার্নালেও প্রকাশিত হয়েছে অনেকের গবেষণাপ্রবন্ধ। গবেষণায় আগ্রহ আছে অনেকের। কিন্তু নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খায় শিক্ষার্থীদের মনে। এমনই পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর থাকছে এবারের মূল রচনায়।

গবেষণা নিয়ে ৫টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ৫ জন বাংলাদেশি গবেষক।

১.

রাগিব হাসান
সহযোগী অধ্যাপক, কম্পিউটারবিজ্ঞান বিভাগ, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যালাবামা অ্যাট বার্মিংহাম
গবেষণা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্নাতকে যাঁরা গবেষণা করছেন, গবেষণাপত্র প্রকাশ করছেন, তাঁদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ অনেক বেশি। বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র, প্রবন্ধ, পোস্টার উপস্থাপনকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার অভিজ্ঞতা বিদেশে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। দেশে গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে অনুদান, ফেলোশিপ, অ্যাসিস্ট্যান্সি, বৃত্তির মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ থাকে।

গবেষণা শুধু উচ্চশিক্ষার সুযোগকে বিস্তৃত করে না, ভবিষ্যতের কর্মবাজারেও দারুণ কার্যকর। যে বিষয়ে গবেষণা করছেন, সে বিষয় নিয়ে কাজ করা কোনো না কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আপনার কর্মস্থল হতে পারে। গবেষণারত অবস্থায় অনেক প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে কাজের সুযোগ পান গবেষকেরা। গবেষণাকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশে পেপার উপস্থাপন ও কনফারেন্সে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে।

যাঁরা ভবিষ্যতে শুধু শিক্ষক বা গবেষক হতে চান, তাঁদের জন্যই শুধু গবেষণা নয়, গবেষণা আসলে উচ্চশিক্ষার একটি অংশ। স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণায় আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন।

২.

সাইফুল ইসলাম
পিএইচডি গবেষক, কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া
গবেষণার কাজ কোন সময়ে শুরু করা উচিত?

আমাদের দেশে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই স্নাতক পর্যায়ে গবেষণার দিকে তেমন মনোযোগী নন। কিন্তু গবেষণা নিয়ে ভাবনা আসলে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই করা উচিত। যে বিষয়েই পড়ুন না কেন, প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে গবেষণা করতে চান, তা খুঁজতে থাকুন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ গবেষণার মনন বিকাশের দারুণ সময়। হুট করে তো একদিন গবেষক হয়ে ওঠা যায় না, তাই এই সময়কে গোছানোর জন্য কাজে লাগানো প্রয়োজন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অনেকে তাড়াহুড়া করে গবেষণা শুরু করেন। তখন একটু বেশি চাপ হয়ে যায়। যত আগে শুরু করা যায়, যত আগে গবেষণার কৌশল সম্পর্কে শেখা যায়, আর্টিকেল লেখার চর্চা করা যায়, ততই নিজেকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে। বিভিন্ন জার্নাল পেপারে আর্টিকেল জমা দেওয়ার নিয়ম জানতে হবে। বিভিন্ন সেমিনার ও সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কোন কোন ক্ষেত্রে নিজেকে গবেষক হিসেবে তৈরি করবেন, তা জানার সুযোগ আছে। যে বিষয়ে গবেষণা করতে চান, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ইমেইলে যোগাযোগের চেষ্টা করতে পারেন। গবেষক হিসেবে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাও জরুরি।বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই গবেষণার বিষয়ের খোঁজ করতে হবে। আর সে জন্য বেশি বেশি পড়তে হবে, জানতে হবে। ছবি: খালেদ সরকারবিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই গবেষণার বিষয়ের খোঁজ করতে হবে। আর সে জন্য বেশি বেশি পড়তে হবে, জানতে হবে। ছবি: খালেদ সরকার

৩.

শরিফা সুলতানা
পিএইচডি ইন ইনফরমেশন সায়েন্স, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র
কীভাবে বেছে নেব গবেষণার বিষয়?

গবেষণার দুনিয়া অনেক বড়, উন্মুক্ত। নানা বিষয়ে গবেষণার সুযোগ আছে। যাঁরা গবেষণার অ আ ক খ মোটামুটি জানেন, তাঁদের জন্য পুরো প্রক্রিয়া বোঝা সহজ। যে বিষয়ে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, তা নিয়ে যেমন গবেষণার সুযোগ আছে, তেমনি নিত্যনতুন অসংখ্য বিষয় আছে। আমি যেমন মানুষ ও কম্পিউটারে মিথস্ক্রিয়া ও ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসের মতো বিষয় নিয়ে গবেষণা করছি। নিজের বিষয়ের বাইরেও আমাকে জানতে হচ্ছে, শিখতে হচ্ছে। প্রকৌশলের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও কবিরাজি চিকিৎসা নিয়ে আমার একটি গবেষণাপত্র ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়।

গবেষণার ক্ষেত্রে আসলে নিজের পছন্দের বিষয়কে যেমন গুরুত্ব দিতে হয়, তেমনি যে বিষয় নিয়ে কাজের সুযোগ আছে, তা ভাবা জরুরি। প্রকৌশল কিংবা জীববিজ্ঞানের কোনো বিষয়ে পড়েও সামাজিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো গবেষণাপত্র তৈরি করতে পারেন। স্নাতকে যে বিষয়ে পড়ছেন, বা যে কোর্সে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তা নিয়েই শুরু করুন। ধীরে ধীরে জানার দুনিয়া বড় করতে হবে, গবেষণাকে বিস্তৃত করতে হবে। গবেষণায় তাত্ত্বিক পড়াশোনার দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন গবেষণা কৌশল, তথ্য বিশ্লেষণ, তথ্য সংগ্রহের মতো বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। ধীরে ধীরে আপনার গবেষণার বিষয় ও আগ্রহ সম্পর্কে জেনে যাবেন।

৪.

আলিয়া নাহিদ
প্রধান, ইনিশিয়েটিভ ফর নন কমিউনিকেবল ডিজিজেস, আইসিডিডিআরবি ও ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ
একজন গবেষকের মধ্যে কী কী দক্ষতা বা গুণ থাকা উচিত?

আগ্রহ আর ধৈর্যশক্তির জোরে যেকোনো শিক্ষার্থীই গবেষক হয়ে উঠতে পারেন। বুদ্ধিমত্তা ও কৌতূহল গবেষক হওয়ার জন্য ভীষণ জরুরি। অন্যদের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ, নেতৃত্বদান, অন্য গবেষকের অধীনে কিংবা দলের সঙ্গে কাজ করার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। নিজেকে যেমন বুঝতে হবে, তেমনি নিজের যোগ্যতাকে বিকাশে সময় দিতে হবে। তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের সক্ষমতা থাকতে হবে।

গবেষণায় শেষ বলে কিছু নেই, তাই সব সময় পর্যবেক্ষণ মনোভাবে থাকতে হবে। অনুসন্ধিৎসু হতে হবে।

গবেষকদের আরেকটি গুণ থাকা ভীষণ জরুরি—তা হচ্ছে সততা ও নৈতিকতা। মানসিকভাবে সৎ ও নৈতিক হওয়া প্রত্যেক গবেষকের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কাজের ক্ষেত্রেও নৈতিক থাকতে হবে। গবেষক হিসেবে গবেষণা নিয়ে অনেক সমালোচনা কিংবা নেতিবাচক ফল আসতে পারে, তাই বলে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।

শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীদের সঙ্গে গবেষণার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। বর্তমান সময়ে গবেষণার ক্ষেত্রে যেসব টুলস বা প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যেমন এসপিএসএস, ম্যাটল্যাব—এগুলোর ব্যবহার শিখতে হবে।

৫.

নিগার সুলতানা
পিএইচডি, ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা
গবেষণার মাঝপথে এসে থমকে গেলে কী করব?

গবেষণা অনেক সময়ের বিষয়। হুট করে শুরু করা যায় না। তবে বাস্তবতার কারণে গবেষণায় বাধা আসতেই পারে, থেমে যেতে হতে পারে। গবেষণায় হয়তো ফান্ড কমে গেল কিংবা বন্ধ হয়ে গেল। হয়তো
গবেষণা করছেন, কিন্তু ফল পাচ্ছেন না। গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক, সহগবেষকদের সঙ্গে অনেক বিষয়ে তর্ক ও বিতর্কের অবকাশ থাকে।

একজন গবেষককে সব পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। প্রয়োজনে সুপারভাইজার ও অন্যান্য গবেষকদের সহায়তা নিতে হবে। গবেষণা আসলে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা। কাজটাকে ছোট ছোট ভাগ করে নিতে হবে। অনেকেই গবেষণা শুরুর পরে হাল ছেড়ে দেন। তরুণ গবেষকদের মধ্যে এই প্রবণতা খুব বেশি। প্রয়োজনে শিক্ষক ও মনোবিদদের পরামর্শ নিতে হবে।

গবেষক হিসেবে আপনার জীবনের চাপ অন্যরা গুরুত্ব না–ও দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। প্রয়োজনে একটু বিরতির পর আবার জেদ নিয়ে ফিরে আসুন। কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা তরুণ গবেষকদের সাধারণ সংকট বলা যায়। এ ক্ষেত্রে জীবনের অন্যান্য বিষয় আর শখকেও গুরুত্ব দিতে হবে। গবেষণাকাজ ও জীবনের মধ্যে ‘সামঞ্জস্য’ এনে নিজেকে উজ্জীবিত করতে হবে।

7
চোখের উপযোগী ব্যায়াম নিয়মিত করা উচিত। এতে চোখের অতিরিক্ত ক্লান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি আর্দ্রতা ধরে রাখা সহজ হবে।

শীতে ত্বক ও চুলের পাশাপাশি চোখের যত্নও নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, এ সময় পরিবেশে ধুলাবালি বেশি থাকে এবং আবহাওয়া শুষ্ক হওয়ায় চোখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা নষ্ট হয়। ফলে চোখের অ্যালার্জি, চুলকানি, শুষ্ক চোখ, খচখচ করার মতো সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। শীতকালে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

চশমা ব্যবহার করুন: বাইরে বের হলে চশমা বা রোদচশমা ব্যবহার করুন। সরাসরি সূর্যের আলো যাতে না পড়ে, সে জন্য পুরো চোখ ঢেকে থাকে—এমন ফ্রেমের চশমা ব্যবহার করুন।
Vaseline Veer

শরীর আর্দ্র রাখুন: শরীর আর্দ্র রাখতে প্রচুর তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। এমনিতেই শীতে পানি পান কমে যায়। তাই পানি ছাড়াও ফলের রস, গরম স্যুপ ইত্যাদি খেতে পারেন, যা শরীর উষ্ণ ও আর্দ্র রাখতে সাহায্য করবে। এতে চোখের শুষ্কভাবও কমে যাবে।

ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার খান: ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ বেশি খেতে হবে। এতে চোখে অশ্রু বেশি তৈরি হবে।

শাকসবজি খান: শাকসবজিতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, ক্যারোটিন ইত্যাদি আছে, যা চোখ ভালো রাখে। ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন–এ চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। চোখের পুষ্টি উপাদানের ‘পাওয়ার হাউস’ বলা যেতে পারে মিষ্টিকুমড়াকে।

চোখের ব্যায়াম

চোখের উপযোগী ব্যায়াম নিয়মিত করা উচিত। এতে চোখের অতিরিক্ত ক্লান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি আর্দ্রতা ধরে রাখা সহজ হবে।

ব্যায়াম ১: মাথা সোজা রেখে চোখ হাতের ডান থেকে বাঁয়ে ও বাঁ থেকে ডানে ১০ বার ঘোরাতে হবে। প্রতিদিন সম্ভব না হলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন করা যেতে পারে।

ব্যায়াম ২: কাজের ফাঁকে কিছু সময় চোখ বন্ধ রাখুন। হাতে হাত ঘষে হাতের তালু কিছুটা গরম করে বন্ধ চোখের ওপর রাখুন। হাতের তালু এমনভাবে রাখুন, যাতে ভেতরে কোনো আলো না যেতে পারে। দুই মিনিট এভাবে থাকুন। দিনে বেশ কয়েকবার এমন করলে চোখের বিশ্রাম হবে।

ব্যায়াম ৩: যাঁরা কম্পিউটার ও মুঠোফোন বেশি ব্যবহার করেন, তাঁদের চোখ শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। কাজেই একটানা তাকিয়ে না থেকে কম্পিউটার ও মুঠোফোন ব্যবহারের সময় ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলুন। নিয়মিত পানির ঝাপটা দিয়ে চোখ পরিষ্কার করুন।

ব্যায়াম ৪: রাতে ঘুমানোর সময় বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে চোখের পাতা আঙুলের ডগা দিয়ে হালকা করে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। ভ্রুর নিচের দিকে ও চোখের নিচের দিক এভাবে দুই মিনিট ম্যাসাজ করুন। এতে ঘুমও ভালো হবে, চোখের অতিরিক্ত ক্লান্তিও দূর হবে।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, গ্লকোমা বিভাগ, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

8
Common Forum / মেডিটেরিনিয়ান ডায়েট
« on: December 23, 2019, 09:25:43 AM »

মেডিটেরিনিয়ান ডায়েট
২১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:৫৪
আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৩৫
প্রিন্ট সংস্করণ
 
 
মেডিটেরিনিয়ান ডায়েট

বিশ্বজুড়ে মেডিটেরিনিয়ান ডায়েট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গবেষণা বলছে, এই বিশেষ ধরনের ডায়েট মেনে চললে টাইপ–২ ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক ও স্থূলতার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে। এতে শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, মটরশুঁটি, শস্য, মাছ ও অলিভ অয়েলের মতো অসম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি। সেই সঙ্গে মাংস এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার কম খাওয়ার পরামর্শও থাকে এই ডায়েটে।

মেডিটেরিনিয়ান  ডায়েটে অভ্যস্ত হতে কিছু পরামর্শ

সকালের নাশতা নিয়ে অযথা আলস্য বা কালক্ষেপণ করবেন না। ঘুম থেকে উঠে ফল, ওটস, লাল আটার রুটি এবং অন্যান্য ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার পেট ভরে খান।

সপ্তাহে দুবার সামুদ্রিক মাছ খাবেন। টুনা, স্যামন, সার্ডিন জাতীয় মাছ ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ।

স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করুন। জলপাই তেল, বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, জলপাই ও অ্যাভোকাডো আপনার প্রতিদিনের স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় থাকতে পারে। দিনে ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করুন। সপ্তাহে দুই দিন নিরামিষ খান। শাকসবজি, রুটি, ননিহীন দই বা পনির এবং নানা ধরনের ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দুই দিন না পারলে অন্তত এক দিন এ ধরনের খাবারে অভ্যস্ত হোন।

ডেজার্ট হিসেবে তাজা ফল খেতে পারেন। আইসক্রিম, কেক বা অন্যান্য বেকড সামগ্রীর পরিবর্তে স্ট্রবেরি, তরমুজ, আঙুর বা আপেল বেছে নিন।

একটি মেডিটেরিনিয়ান ডায়েট খাবারের নমুনা

সকালের নাশতা: সেদ্ধ ডিম ১টি, লাল আটার রুটি ২টি এবং সবজি (টমেটো, ব্রকলি, পালংশাক, ফুলকপি, গাজর, ব্রাসেলস স্প্রাউটস, শসা ইত্যাদি)

স্ন্যাকস: একটি ফল (আপেল, কলা, কমলা, নাশপাতি, পেয়ারা ইত্যাদি)

দুপুরের খাবার: লাল চালের ভাত, সবজি, মাছ

বিকেলের নাশতা: বীজ বা বাদাম (বাদাম, আখরোট, হ্যাজেলনাট, কাজু, সূর্যমুখীর বীজ, কুমড়ার বীজ ইত্যাদি), এক থেকে দুই কাপ ননিহীন দই বা পনির

রাতের খাবার: মাঝারি আকারের লাল আটার দুটি রুটি, সবজি এবং একটি ফল।

আগামীকাল পড়ুন: শীতে শিশুর যত্ন

ডা. আ ফ ম হেলালউদ্দিন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

লেখক: লাজিনা ইসলাম চৌধুরী: পিপলস হাসপাতাল খিলগাঁও, ঢাকা।

9
কথা বলা বা ভাষা বোঝার জন্য মস্তিষ্কের কিছু বিশেষ এলাকা ব্যবহৃত হয়। কোনো কারণে স্ট্রোক, আঘাত বা মস্তিষ্কের নানা সমস্যায় এই এলাকাগুলো আক্রান্ত হলে কথা বুঝতে ও বলতে রোগীর সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যাগুলো নানা রকমের। যেমন ভাষা বা কথা বুঝতে সমস্যা হলে তাকে বলা হয় এল রিসেপটিভ অ্যাফেসিয়া বা ভার্নিকস অ্যাফেসিয়া। আবার কারও বুঝতে অসুবিধা নেই, অন্যরা কী বলছে, তা ঠিক বুঝতে পারেন কিন্তু তার উত্তরে কিছু বলতে পারেন না ঠিকমতো। এটি হলো মটর অ্যাফেসিয়া। কারও আবার বুঝতে বা বলতে—কোনোটাতেই সমস্যা নেই কিন্তু মুখের পেশিগুলোর দুর্বলতার কারণে উচ্চারণে সমস্যা হয়, কথা অস্পষ্ট হয়, একে বলে ডিসআরথ্রিয়া। আবার ডিসপ্রেক্সিয়া মানে হলো, কথা বলার প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলো যেমন জিব, ঠোঁট, তালু ঠিকমতো ব্যবহার না করতে পারা।

স্ট্রোকের পর প্রায় ৪০ শতাংশ রোগীর অ্যাফেসিয়া হয়, মানে তাদের বাক্‌শক্তি রহিত হয়। মস্তিষ্কের কোন এলাকা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে এর ধরন। তবে এই অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ বা আংশিক উত্তরণ সম্ভব, যদি সময়মতো ও ঠিকমতো থেরাপি নেওয়া যায়। আসুন, দেখা যাক কীভাবে তা করতে পারেন।

শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম: নাক দিয়ে নিশ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়তে বলুন। এতে কথা বলার সময় শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ উন্নত হয়। জিব, ঠোঁট ও গালের পেশির ব্যায়াম: জিব বাইরে বের করা এবং আবার ভেতরে নেওয়ার ব্যায়াম করতে হবে বারবার। জিব ডানে–বাঁয়ে নেওয়া, জিব ঠোঁটের চারপাশে ঘোরানো, জিব ওপরে–নিচে নেওয়ার ব্যায়াম করান। গাল ফোলানোর ব্যায়ামে গালের পেশি শক্ত হয়। দুই দাঁতে কামড় দিয়ে ঠোঁট দুই পাশে বিস্তৃত করতে হবে—অনেকটা ইংরেজি ই বলার মতো করে। উ উ বলার মতো করে ঠোঁট গোল করে ধরে রাখুন।

কথা বলার অনুশীলন
শব্দ দিয়ে বাক্য গঠনের অনুশীলন করান। যেমন আম, আম খাব, আমি আম খাব—এভাবে ধীরে ধীরে দক্ষতা বাড়ান।

হিমিকা আরজুমান, বিভাগীয় প্রধান, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি অ্যান্ড রিসার্চ ইউনিট, বাংলাদেশ থেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ফাউন্ডেশন

আগামীকাল পড়ুন: অ্যান্টিবায়োটিক
প্রশ্ন-উত্তর
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রয়েছে নানা স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক সময় ঘরে বসে কিংবা জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব। আপনার সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন পাঠান। উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। বয়স লিখতে ভুলবেন না।

10

চোখে একটি বস্তু দুটি দেখলে কী করবেন
ডা. মো. ছায়েদুল হক
০৬ নভেম্বর ২০১৯, ১১:০৫
আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৫২
প্রিন্ট সংস্করণ
 
 
চোখে একটি বস্তু দুটি দেখলে কী করবেন

আমাদের দুই চোখ একটি বস্তুর ত্রিমাত্রিক ছবি মস্তিষ্কে উপস্থাপন করে। সেভাবেই আমরা দেখি এবং এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ কেউ একটি বস্তুকে দুটি দেখেন। একে বলে ডিপ্লোপিয়া বা ডাবল ভিশন।

বিভিন্ন কারণে ডাবল ভিশন হতে পারে। এ সমস্যার জন্য চোখের ভেতরের পেশির ভারসাম্যহীনতা দায়ী। চোখের পেশিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েকটি নির্দিষ্ট স্নায়ু আছে। যেমন অকুলোমটর নার্ভ, ট্রকলিয়ার নার্ভ, এবডুসেন্ট নার্ভ। এই স্নায়ুগুলো মস্তিষ্কের ভেতর থেকে এসে চোখের পেছন দিকে চক্ষুকোটরে (অরবিট) প্রবেশ করে এবং সবশেষে চোখের পেশিগুলোয় পৌঁছায়। মস্তিষ্ক বা চক্ষুকোটরে (অরবিট) টিউমার, আঘাত, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের কারণে এসব স্নায়ুতে বৈকল্য দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, স্নায়ুরোগ মাল্টিপল স্লেরোসিসের জন্যও স্নায়ুবৈকল্য দেখা দিতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা বা মায়াসথেনিয়া রোগেও পেশিগুলো আক্রান্ত হতে পারে। ডিপ্লোপিয়ার সঙ্গে চোখ ট্যারা, চোখ বা মাথাব্যথা, চোখের পাতা ঝুলে যাওয়া, চোখের নড়াচড়া সীমিত হয়ে আসা ইত্যাদি উপসর্গও থাকতে পারে।

বয়স্কদের বেলায় হঠাৎ করেই ডিপ্লোপিয়া দেখা দেয়। একে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। প্রথমত একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞের মাধ্যমে চোখ পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হতে হবে। রোগীর ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। মস্তিষ্কের কারণগুলোর মধ্যে ব্রেইন টিউমার, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ, মস্তিষ্কের প্রদাহ অন্যতম। এই কারণগুলো চিহ্নিত করতে সিটি স্ক্যান বা এমআরআই ইত্যাদি পরীক্ষার সাহায্য নিতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত একজন নিউরোসার্জনের তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে। হরমোনের সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার।

দ্রুত ডিপ্লোপিয়ার চিকিৎসা না নিলে এ সমস্যা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। টিউমার, হরমোন, স্ট্রোক ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা হলে সামান্য অবহেলাও জীবন সংশয়ের কারণ হতে পারে।

চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

11
Common Forum / পায়ুপথের যত সমস্যা
« on: October 17, 2019, 12:24:46 PM »
সাধারণত পায়ুপথের সব রোগকেই বেশির ভাগ মানুষ পাইলস বলে জানে। পায়ুপথের রোগ মানেই পাইলস নয়। পায়ুপথে ফিসার, ফিস্টুলা, হেমোরয়েড, ফোড়া, প্রোলাপস, রক্ত জমাট, পলিপ বা টিউমার হতে পারে। সবগুলো ক্ষেত্রেই কোষ্ঠকাঠিন্য অন্যতম কারণ।

ফিসার

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পায়ুপথের সামনে অথবা পেছনে ফেটে গিয়ে ক্ষত তৈরি হলে তাকে ফিসার বলে। বাংলায় বলে ভগন্দর। এই সমস্যায় তীব্র বা মাঝারি ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হয়। মলত্যাগের সময় সামান্য রক্ত যায়। পায়ুপথ সরু হয়ে আসে। অনেক দিন ধরে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের অস্ত্রোপচারের দরকার হয়। প্রাথমিক অবস্থায় খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, জিটিএন মলম ব্যবহার, পভিসেপ লোশন মেশানো কুসুম গরম পানিতে ছেঁক দিলে ভালো থাকা যায়।

পাইলস

চিকিৎসকেরা একে বলেন হেমোরয়েড। বাংলায় অর্শ। পাইলস ক্রমান্বয়ে আকারে বৃদ্ধি পেয়ে নিচে নেমে আসে। পায়ুপথকে ঘড়ির সঙ্গে তুলনা করলে ৩টা, ৭টা ও ১১টার কাঁটার জায়গায় তিনটি রক্তের শিরা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে চাপ খেয়ে ফুলে ক্রমশ নিচের দিকে নামতে থাকে। এর পাঁচটি পর্যায় আছে। পাইলস ব্যথাহীন হলেও প্রচুর রক্তপাত হতে পারে। প্রথম পর্যায়ের পাইলস খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, মল নরম করার ওষুধ এবং কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ দিয়ে সারানো সম্ভব। দ্বিতীয় পর্যায়ের পাইলসে ব্যান্ড লাইগেশন খুবই কার্যকরী অস্ত্রোপচার। তৃতীয় ও চতুর্থ মাত্রার পাইলসে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাইলসগুলো কেটে ফেলা হয়।

ফোড়া বা এবসেস

পায়ুপথের ভেতরে ও বাইরে ছোট-বড় নানা ধরনের ফোড়া হতে পারে। ডায়াবেটিস এর অন্যতম কারণ। অস্ত্রোপচার না করলে এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরে ফিস্টুলা হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি।

ফিস্টুলা

ফিস্টুলা হলো একটি ঘা, যার একটি মুখ পায়ুপথের বাইরে, অপরটি ভেতরে থাকে। ফোড়া হওয়ার কারণে এটি হয়। এরও চিকিৎসা অস্ত্রোপচার। তবে নালির ভেতরের মুখ যদি খুব ওপরে হয় বা আঁকাবাঁকা হয়, তবে অস্ত্রোপচার ব্যর্থ হতে পারে। কাজেই অস্ত্রোপচারের আগে ফিস্টুলোগ্রাম, এমআরআই করে নেওয়া ভালো।

প্রোলাপস

পায়ুপথ দিয়ে অনেক সময় বৃহদন্ত্রের কোনো অংশ আংশিক বা পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারে। একে প্রোলাপস বলে। ল্যাপারোসকপি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা যায়।

হেমাটোমা

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পায়ুপথের রক্তনালি ফেটে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। কখনো কখনো প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার করা লাগতে পারে।

12
ত্রিশ বছর বয়সকে জীবনের একটি বাঁকও বলা হয়ে থাকে। এ সময় শরীর ও মনে অনেক পরিবর্তন হয়। তাই খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। কারণ ত্রিশ বছর পেরিয়ে গেলে কিছু খাবার বাদ দিলে আপনি সুস্থ থাকবেন।

ত্রিশের পর সুস্থ থাকতে খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন চারটি খাবারের বিষয়ে জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ডেমিক।

আসুন জেনে নেই ত্রিশের পর যে ৪ খাবার এড়িয়ে চললে সুস্থ থাকবেন।

১.৩০ বছরের পরে কৃত্রিম চিনি অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। কৃত্রিম চিনি অতিরিক্ত খেলে নসার ও টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

২.অ্যালকোহলে ক্যালরি থাকায় ৩০ বছরের পর শরীরের বাড়তি ক্যালরি ঝড়াতে কষ্ট হয়। এছাড়া অ্যালকোহল শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৩.চায়ে থাকা ক্যাফেইন ও দুধে থাকে ক্যাজেইন। যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া দুধ চা শরীরকে পানিশূন্য করে দেয়। আর ৩০ বছরের পর যেহেতু ত্বক ধীরে ধীরে বার্ধক্যের দিকে এগোতে থাকে তাই চা কফি না খাওয়াই ভালো।

৪.ত্রিশের পর সাদা আটার রুটি এড়িয়ে যেতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ শরীর আটাকে গ্লুকোজে রূপান্তর করে। ফলে দ্রুত চর্বি জমায়।তাই সাদা আটা না খেয়ে লাল আটার রুটি খাওয়া পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

13
ঢাকার রায়েরবাজার বস্তির ঘিঞ্জি পরিবেশে বেড়ে ওঠা। মালিকের পক্ষে একটি বস্তির দেখভাল করে যা কিছু আয়, তাই দিয়ে সিয়াম হোসেনের বাবা সংসার চালান। ওই পরিবেশ থেকে ঠিকমতো পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে কি না, তারও নিশ্চয়তা ছিল না। বড় স্বপ্নের পথ তো বহুদূর। তবে সিয়াম পেরেছে। সে আমেরিকার ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজে (ইউডব্লিউসি) পড়ার জন্য নিউ মেক্সিকোতে যাচ্ছে।

বুধবার রাজধানীর বনানীতে জাগো ফাউন্ডেশনের অফিসে সিয়ামকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। জাগো ফাউন্ডেশন স্কুলের শিক্ষার্থী সিয়াম হোসেন গত বছর এ-গ্রেড পেয়ে এসএসসি পাস করে। ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজের শতভাগ বৃত্তি নিয়ে সিয়াম আমেরিকায় পড়তে যাবে। আগামী ৩০ আগস্ট থেকে তার ক্লাস শুরু।

ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজ একটি বৈশ্বিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষার মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতিকে এক করতে সাহায্য করে। সারা বিশ্বের চারটি মহাদেশে ইউডব্লিউসির ১৮টি স্কুল ও কলেজ রয়েছে। প্রতিবছর বিশ্বের ১৫৫টি দেশ থেকে সাড়ে ৯ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সেখানে পড়ার সুযোগ পায়। বাংলাদেশ থেকে এ বছর সিয়ামসহ ৩০ জন শিক্ষার্থী ইউডব্লিউসির বিভিন্ন কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে এদের মধ্যে সিয়ামসহ চারজন শতভাগ বৃত্তিতে পড়তে যাবে। বাংলাদেশে ইউডব্লিউসি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এই শিক্ষার্থীদের মনোনীত করেছে।

ইউডব্লিউসির ‘ডেয়ার টু ড্রিম’ বৃত্তিটি পেয়েছে সিয়াম হোসেন। অর্থাৎ সিয়ামের আর্থিক দিক বিবেচনাতেই এই বৃত্তির জন্য সে মনোনীত হয়েছে। সিয়ামের অবস্থা থেকে বৈশ্বিক মানের একটি কলেজে পড়তে যাওয়া সাহসেরই বটে। সিয়াম হোসেন বলে, ‘এমন একটা পরিবার থেকে আসছি, যেখান থেকে আমেরিকায় যাওয়া আসলেই কখনোই সম্ভব ছিল না। হয়তো পড়াশোনা হতো, হয়তো থেমেও যেত। কিন্তু আমার স্কুল জাগো ও যাঁরা পড়াশোনার জন্য আমাকে সহায়তা করেছেন, তাঁদের জন্যই সম্ভব হয়েছে। আমি এখন বড় বড় স্বপ্ন দেখতে পারি।’

ইউডব্লিউসির আমেরিকার কলেজটি নিউ মেক্সিকোতে অবস্থিত। সিয়াম দু বছর সেখানে পড়াশোনা করবে। সে জানায়, সেখানে থাকা অবস্থাতেই তার লক্ষ্য থাকবে নামকরা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তির জন্য চেষ্টা করা।

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় সিয়াম জিপিএ-৫ পেলে বাবা মো. বেলাল হোসেন ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘এ প্লাস পাওয়ায় ভাবি, আমার ছেলের জন্য কিছু হবে।’ জাগো ফাউন্ডেশন স্কুলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বেলাল হোসেন বলেন, ‘এখানে খুব ভালো পড়াশোনা হয়। যার প্রমাণ আমার ছেলে। এখন সে আমেরিকায় পড়তে যাচ্ছে।’

সিয়ামের সঙ্গেতার বাবা-মা, জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভী রাকসান্দসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যরা ও কাতার এয়ারওয়েজের প্রতিনিধিরা। ছবি: সংগৃহীতসিয়ামের সঙ্গে তার বাবা-মা, জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভী রাকসান্দসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যরা ও কাতার এয়ারওয়েজের প্রতিনিধিরা। ছবি: সংগৃহীতনিজের প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী বৃত্তি নিয়ে আমেরিকায় পড়তে যাওয়ায় নিজেকে খুবই গর্বিত মনে করছেন জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভী রাকসান্দ। তিনি বলেন, ‘অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা বলতে কোনোভাবে পাস করানো দরকার। কিন্তু জাগোর লক্ষ্য তা নয়। ওদের ইংলিশ ভার্সনে পড়াশোনা করানো হয়। যাতে ওরা শুধু বাংলাদেশে আটকে না থেকে বিশ্বমানের হয়ে গড়ে ওঠে।’ এ ছাড়া তিনি আশা প্রকাশ করেন, সিয়ামরা একদিন বড় হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে এবং জাগোকে সহায়তা করবে।

ইশরাক শাবীব ও তাঁর স্ত্রী শরীফ সুরাইয়া দীর্ঘদিন সিয়ামকে পড়াশোনার জন্য সহায়তা করেছেন। তাঁদের পরে ফারহানা রশিদ সিয়ামের পড়াশোনায় সহায়তা করে আসছেন। ইশরাক ও ফারহানা বলেন, দেশ ও সমাজের দায়বদ্ধতা থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য তাঁরা সিয়ামের সহযোগী হয়েছেন।

রায়েরবাজার বৈশাখী খেলার মাঠের পাশে একটি বস্তিতে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাগো ফাউন্ডেশন। ১৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু হয়। সিয়াম হোসেন সেই ১৭ জনের একজন। অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠান বিনা মূল্যে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা দেয়। বর্তমানে সারা দেশে তাদের ১২টি স্কুল রয়েছে।

আমেরিকায় যাওয়ার জন্য সিয়ামকে বিমানের টিকিট দিয়ে সহায়তা করেছে কাতার এয়ারওয়েজ। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউডব্লিউসি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ থেকে খাদিজা আফজাল, আয়েশা দাদা, জাগো ফাউন্ডেশন স্কুলের প্রিন্সিপাল নিজামুল করিম, সমন্বয়কারী শারমিন আহমেদ, সিয়ামের মা শিউলি বেগম প্রমুখ।

14
ব্যস্ততা, দুশ্চিন্তা, হতাশা, আক্ষেপসহ নানা কারণে আমাদের মনের জোর কমে যায়। মনকে কি আর সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক রিদওয়ানুল হক জানান, ‘মনের জোরে চলতে পারি বলেই আমরা মানুষ। যেকোনো সমস্যার সমাধান থেকে শুরু করে ইতিবাচক জীবনযাপনে মনের বিকাশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনার আর্থিক ক্ষমতা কিংবা জোর যা–ই থাকুক না কেন, সতেজ মন থাকলে আপনার জীবন সব সময় রঙিন।’ প্রাত্যহিক জীবনে মনের জোর বাড়ানোর জন্য রিদওয়ানুল হক ১০টি নিয়ম অনুসরণ করার পরামর্শ দেন

এখনই কাজ করা


আপনার বসকে পদোন্নতির কথা বলেও বলতে পারছেন না? এখনই বলে ফেলুন। কিংবা আপনার প্রতিষ্ঠানের কোনো গ্রাহককে আপনার না বলতে হবে, আপনি না বলা নিয়ে দ্বিধায় আছেন। বলে ফেলুন। আপনার যখন কিছুর প্রয়োজন হবে, তার গুরুত্ব বুঝে করে ফেলুন।

মোকাবিলা করতে শিখুন

আপনি যা এড়িয়ে চলবেন, তা আপনাকে বেশি বিপদে ফেলতে পারে। যেকোনো বিপদ বা সমস্যা সরাসরি মোকাবিলা করতে শিখুন। আপনি যদি কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে ভয় পান, তাহলে সেই ভয় আপনাকে পরাজিত করবে।

ভুল স্বীকার করুন

জীবনে চলার পথে ব্যক্তিজীবন কিংবা কর্মক্ষেত্রে কোনো ভুল করলে তা স্বীকার করুন। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যান।

বিনয়ী হোন

আপনার যখন সুসময়, তখন অবশ্যই বিনয়ী থাকবেন। সাধারণ মানুষ উদ্ধত ও অহংকারীদের পছন্দ করে না। আপনার সুসময় কিংবা দুঃসময় সব সমই বিনয়ী হয়ে চলুন। নিজের ইগো ও ব্যক্তিত্বের ইতিবাচক বিকাশে মনোযোগী হোন।

বেশি বেশি শুনুন

সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা কথা বলতেই বেশি পছন্দ করি। নিজের দৃঢ় মনন প্রতিষ্ঠার জন্য মনোযোগী হয়ে শোনার অভ্যাস করুন। সবার কথা শুনুন। প্রয়োজনীয় মতামত দিন।

শিখতে সময় দিন

আপনার দুর্বলতা থাকতেই পারে। সে ক্ষেত্রে দুর্বলতা কাটিয়ে তোলার জন্য শিখুন। শিখতে নিজেকে সময় দিন।

কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কে জানুন

কর্মক্ষেত্রে আপনার ভুলের কারণে প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে, আবার আপনার চাকরি চলে যেতে পারে। সব সময়ই কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা রাখুন, এতে আপনার দায়িত্বশীলতা বাড়বে।

অন্যকে সম্মান করতে শিখুন

আপনার চেয়ে বয়সে কিংবা পদবিতে ছোট-বড় সবাইকে সম্মান দিন। তুই-তুকারি করে সম্বোধন সব সময়ই এড়িয়ে চলবেন। অন্যকে সম্মান দিলে ইতিবাচক মননের প্রভাব প্রকাশিত হয়।

কৌতূহলী হোন

স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সব শিখে এসেছেন, তা ভাববেন না। কিংবা নিজে সব জানেন ও পারেন, এমনটা কখনোই মনে করবেন না। কৌতূহলী মন তৈরি করুন।

নিজের দুর্বলতা জয় করুন

দুর্বলতা কাটিয়ে সামনে চলা আর দুর্বলতা ছাপিয়ে সামনে চলা ভিন্ন বিষয়। আপনার দুর্বলতা কাটানোর দিকে মনোযোগ দিন।

15

পাস করা ও ফেল করা কলেজের গল্প

কয়েক দিন আগে বেসরকারি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক এসেছিলেন প্রথম আলো কার্যালয়ে তাঁদের দুঃখ–কষ্টের কথা জানাতে। তাঁরা সবাই সরকারের এমপিওভুক্ত কলেজের নন–এমপিওভুক্ত শিক্ষক। তাঁদের সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০। এমপিওভুক্ত হলে সরকারের বাড়তি খরচ হবে বছরে ১০৪ কোটি ৯ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিওভুক্তি নীতিমালায় তাঁদের দাবি গ্রাহ্য না হওয়ায় শিক্ষকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছয় দিন অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন। কিন্তু সরকারের শিক্ষামন্ত্রী বা উপমন্ত্রী—কারও দেখা পাননি। শিক্ষাসচিব বলেছেন, সরকার শিক্ষকদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সহানুভূতিশীল। এই সহানুভূতিটুকু নিয়েই তাঁরা ঘরে ফিরে গেছেন। শিক্ষকেরা আশা করছেন, আগামী অর্থবছরে তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া হবে।

এই শিক্ষকেরা স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদান করেন। কলেজগুলো এমপিওভুক্ত হওয়ার সময় সরকার ঠিক করে দেয় কোন বিভাগে কতজন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হবে। কিন্তু তাঁদের দিয়ে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়। তাই বাড়তি শিক্ষক নিতে হয়। এঁরাই হলেন এমপিওভুক্ত কলেজের নন–এমপিওভুক্ত শিক্ষক। এখানে একই সমাজে দুটি শ্রেণি নয়, একই কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে দুটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে। কেউ নিয়মিত বেতন পান, কেউ পান না। সরকার বলবে, তাঁদের বেতন–ভাতা দেওয়ার দায়িত্ব কলেজ কর্তৃপক্ষের। কিন্তু দায়িত্ব যারই থাকুক না কেন, শিক্ষকেরা তো অভুক্ত থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে পারেন না।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বাংলার শিক্ষার দুরবস্থা প্রসঙ্গে ‘আধা পেট খেয়ে নামতা মুখস্থ’ করার কথা বলেছিলেন। অর্থাৎ আমাদের গ্রামাঞ্চলে যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, তাদের বেশির ভাগই পেট ভরে খেতে পায় না। হালে গ্রামীণ অর্থনীতি কিছুটা চাঙা হলেও, শিক্ষার্থীরা ভরা পেটে নামতা মুখস্থ করতে পারলেও নিজের আয়ে চলতে পারে, এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুব বেশি নেই। কাগজে খাতা–কলমে যা–ই লেখা থাকুক না কেন, বেশির ভাগ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারের দেওয়া অর্থের বাইরে খুব বেশি আর্থিক সুবিধা শিক্ষকদের দেয় না, দিতে পারে না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা সরকারি খাত থেকে বেতন-ভাতার সিংহভাগ পেয়ে থাকেন (মূল বেতনের শতভাগ এবং কিছু ভাতা। বাংলাদেশে সবচেয়ে অবহেলিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা, সেটি স্কুল কিংবা কলেজ হোক। তাঁদের অধিকাংশ নিয়মিত বেতন-ভাতা পান না। চাকরি শেষ হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মতো নিয়মিত পেনশন পান না। পেনশনের নামে যে সামান্য টাকা দেওয়ার কথা, তা–ও পেতে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ লাখ বলে সরকারি হিসাবে জানা গেছে। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতেই আছে ২৮ লাখ। আর সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে বাকি যে ১৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, তাদের শিক্ষার্থী মাত্র ৭ লাখ। সরকার প্রতি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ জাতীয়করণ করা হচ্ছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন কিংবা নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করায় যে বিশাল ব্যয় হবে, সেই তুলনায় ৩ হাজার ৫০০ নন–এমপিওভুক্ত শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার খরচ খুবই নগণ্য। বিনিয়োগ তখনই লাভজনক হয়, যখন কম ব্যয় করে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। এখানে মুনাফা হলো উচ্চশিক্ষিত জনবল। সরকার যদি সত্যি সত্যি উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন চায়, তাহলে ২৮ লাখ শিক্ষার্থীকে উপেক্ষা করতে পারে না। আর শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভাবলে তাঁদের পাঠদানকারী শিক্ষকদের বেতন–ভাতা সমস্যারও সুরাহা করতে হবে।

Eprothom Alo
২ মার্চ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অধীন কলেজগুলোর পারফর্মিং র্যাঙ্কিং বা শিক্ষা মানক্রম ঘোষণা উপলক্ষে আন্তর্জাতিক ভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল, যাতে পুরস্কার পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইনও। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশিদ কলেজশিক্ষার মানক্রমের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘পূর্বনির্ধারিত সূচকের ভিত্তিতে অনার্স পর্যায়ের কলেজসমূহের বার্ষিক পারফরম্যান্স র্যাঙ্কিং করে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে শীর্ষ কলেজসমূহকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কৃত ও সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ৩১টি সূচকের ভিত্তিতে এই পুরস্কার দিয়ে থাকে, যার মধ্যে আছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সংখ্যা, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও এমফিল, পিএইচডিধারী শিক্ষকের সংখ্যা, প্রকাশনা, অবকাঠামোগত সুবিধা, একাডেমিক উৎকর্ষ, পরীক্ষার ফল, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদান ইত্যাদি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ ৭১৮টি। এর মধ্যে সরকারি ২৭৭, বেসরকারি ৪৪১। প্রতিযোগী ৩৫৪টি কলেজের মধ্যে মানক্রমে উত্তীর্ণ হয় ১৭৯টি। এর মধ্যে রাজশাহী কলেজ পরপর দুই বছর (২০১৬ ও ২০১৭) প্রথম হয়েছে ১০০ নম্বরের মধ্যে যথাক্রমে ৬৮ দশমিক ১৩ ও ৭২ নম্বর পেয়ে। দ্বিতীয় স্থান পাওয়া বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ পেয়েছে ৬৩ দশমিক ৯৫ ও ৬৬ দশমিক ১৫ নম্বর। তৃতীয় অবস্থানে থাকা সরকারি আজিজুল হক কলেজের নম্বর ৬৩ দশমিক ৭০ ও ৬৬ দশমিক ১১। ৬৫ দশমিক ৯৬ ও ৬৪ দশমিক ৩১ নম্বর পেয়ে চতুর্থ হয়েছে পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ। পঞ্চম অবস্থানে থাকা কারমাইকেল কলেজ পেয়েছে ৬৪ দশমিক ৫ ও ৬৫ দশমিক ৭৯ নম্বর। এরপর রয়েছে আনন্দ মোহন কলেজ, খুলনা ব্রজলাল কলেজ, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ, সা’দত কলেজ, মধুসূদন কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, দিনাজপুর সরকারি কলেজ ও ফেনী সরকারি কলেজ। মেয়েদের কলেজের মধ্যে এগিয়ে আছে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ ও সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ। জাতীয় পর্যায়ে শীর্ষে থাকা পাঁচটি কলেজের মধ্যে চারটিই উত্তরাঞ্চলের।

তালিকায় সর্বনিম্ন ১৯ দশমিক ৬৩ নম্বর পাওয়া ১৮৯টি কলেজ স্থান পেলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, যারা ৫০ নম্বর পেয়েছে, তাদেরই আমরা উত্তীর্ণ বলে ধরে নিয়েছি। যারা এর কম পেয়েছে, তারা সবাই ফেল। সে ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৩৫৪ কলেজের মধ্যে ৯২টি উত্তীর্ণ হয়েছে। ফেল করা কলেজের পাল্লাই ভারী।

ওই দিনের অনুষ্ঠানে বক্তারা শিক্ষার মানোন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এত দিন আমরা সংখ্যায় এগিয়েছি। এখন মানের দিকে জোর দিতে হবে। কিন্তু শিক্ষা এমন একটি বিষয়, যেখানে আগে সংখ্যা, পরে মানের কথা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। দুটো একসঙ্গে এগোতে হয়। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর দেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ নিরক্ষর। তাহলে আমরা কতটা এগোলাম? শিক্ষার ভিতটি শক্ত করতে হয় প্রাথমিক থেকে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে দুর্বল থাকলে ওপরে ঘষামাজা করলে খুব লাভ হয় না। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অনেক শিক্ষকের কাছ থেকে এই অভিযোগ পেয়েছি।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৭১৮টি কলেজের মধ্যে ৪৬৪টি প্রতিযোগিতায়ই অংশ নেয়নি। অর্থাৎ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মানক্রমে যেসব নম্বর বেঁধে দিয়েছে, সেগুলো অর্জন করার সামর্থ্য তাদের নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মানক্রমে দেখা যায়, পরীক্ষায় শুধু শিক্ষার্থীরা পাস বা ফেল করে না। তাদের শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও পাস বা ফেল করে থাকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা কলেজগুলোকে পুরস্কৃত করেছে। আমরাও তাদের অভিনন্দন জানাই। একই সঙ্গে ফেল করা এবং প্রতিযোগিতায় না আসা কলেজগুলোর জন্য তিরস্কারের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

রাজশাহী কলেজ যদি পরপর দুবার সর্বোচ্চ নম্বর পেতে পারে, তাহলে অন্যরা তার ধারেকাছেও কেন আসতে পারবে না? শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পুরস্কার ও তিরস্কার তথা শাস্তির ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অন্যথায় উচ্চশিক্ষার নিম্নগতি ঠেকানো যাবে না।

সোহরাব হাসান: প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি

Pages: [1] 2 3 ... 5