Daffodil International University

Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Zakat => Topic started by: imam.hasan on July 21, 2014, 03:53:30 PM

Title: জাকাত ও সদকায়ে ফিতরের গ্রহীতা কারা?
Post by: imam.hasan on July 21, 2014, 03:53:30 PM
জাকাত আদায় হবে তখনই যখন ওই সম্পদের ওপর জাকাত গ্রহীতার সম্পূর্ণ অধিকার বা সত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ যাকে জাকাতের টাকা বা বস্তু দেওয়া হবে তিনি তা পাওয়ার যোগ্য হলেই কেবল জাকাত আদায় হবে।

সেজন্য লা ওয়ারিশ মৃতদেহের দাফনও জাকাতের টাকায় করা যাবে না। কারণ মৃতের মালিক হওয়ার যোগ্যতা থাকে না। আবার মৃত ব্যক্তির ঋণও সরাসরি জাকাতের টাকায় আদায় করা যাবে না। কারণ মৃতের দুনিয়ার সঙ্গে সকল বন্ধন শেষ। যেহেতু তিনি কোনো কিছুর মালিক হতে পারবেন না সেহেতু ওই টাকা তিনি গ্রহণও করতে পারবেন না। তাই ঋণ পরিশোধ করার প্রশ্নই আসে না। তবে মৃতের ওয়ারিশ যদি থাকে ও তারা যদি জাকাত গ্রহণের যোগ্য হন এবং মৃতের ঋণ পরিশোধে অসমর্থ হন তবে তাদের জাকাতের টাকা দেওয়া যাবে এবং ওই টাকা থেকে ওয়ারিশ মৃতের ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন।

ঠিক তেমনি মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, এতিমখানাও জাকাতের টাকায় করা যাবে না। কারণ যাদের জন্য মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল ও এতিমখানা করা হবে, তারা কখনো এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা পান না।

চার ঈমামসহ উম্মাহর ফেকাহবিদদের অধিকাংশ এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।

মূল কথা হলো, মালিক হওয়ার যোগ্য যিনি তাকে দিলেই জাকাত আদায় হবে।

আল্লাহ্‌র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হযরত মুয়াযকে (রা.) ইয়ামেন পাঠানোর সময় জাকাত সম্পর্কে হেদায়েত দিয়েছিলেন যে জাকাতের অর্থ শুধু মুসলিম ধনী থেকে নেওয়া হবে ও মুসলিম দরিদ্রকে দেওয়া হবে। তাই জাকাতের অর্থ শুধু মুসলমান ফকির-মিসকিনদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। জাকাত ছাড়া অন্যান্য ছদকা খয়রাত এমনকি সদকায়ে ফিতরও অমুসলিমদের দেওয়া জায়েজ। (হেদায়া)
 
শুধুমাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের বংশধর তথা হাশেমি ও মুত্তালিব বংশীয় লোকদের জন্য জাকাত নিষিদ্ধ। এছাড়া যে কোনো মুসলমান স্বাধীন ব্যক্তি যার মধ্যে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আটটি গুণের একটি রয়েছে তিনি জাকাত পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

মহান আল্লাহ্‌ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, জাকাত হলো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্থ, জাকাত আদায়কারী (সদকা ভাণ্ডার পরিচালনাকারী) ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ (যাদের হৃদয় সদ্য সত্য গ্রহণ করেছে) প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস মুক্তির জন্য, ঋণ গ্রস্থদের জন্য, আল্লাহ্‌র পথে জেহাদকারীদের জন্য ও মুসাফিরদের জন্য, এই হলো আল্লাহ্‌র নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। সূরা তওবা, আয়াত-৬০।

নিজের অভাবগ্রস্থ সন্তান ও তাদের বংশ এবং নিজের বাবা-মা ও তাদের বাবা-মা পূর্ব পুরুষ কাউকে ও জাকাত ফিতরা ইত্যাদি ফরজ এবং ওয়াজিব দান হতে দেওয়া হলে তা আদায় হবে না। তবে তাদের নফল এবাদতের উদ্দেশে দান করলে পূর্ণ নয় দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যাবে। এতে আত্মীয়ের হকও আদায় হবে।

এছাড়া স্বামী স্ত্রীকে নিজের জাকাত-ফিতরা দিলে তা আদায় হবে না। স্ত্রী স্বামীকে দিলে তা আদায় হবে কি না তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ঈমাম আবু হানিফা (র.) বলেন, স্ত্রী স্বামীকে জাকাত-ফিতরা দিতে পারে না; ঈমাম আবু ইয়ুসুফ (র.) ও মোহাম্মদ (র.) বলেন, দিতে পারে। (শামি ২-৮৭)

ফিতরা মূলত রোজার জাকাত। জাকাত যেমন ধন-সম্পদকে পবিত্র করে তেমনি ফিতরা ও রোজার মধ্যে যে সকল ত্রুটি থাকে তা দূর করে।

সদকায়ে ফিতর ফরজ না ওয়াজিব তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু আদায়ের আবশ্যকতা যে অলঙ্ঘনীয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সহিহ মুসলিম শরীফের ৩য় খণ্ডের ২১৪৯ নম্বর হাদিসে ইবন উমার (র.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম মুসলমান দাস-দাসি ও স্বাধীন নর-নারীর ওপর এক সা’ পরিমাণ খেজুর বা যব রমজান মাসে সদকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন।

উক্ত হাদিসের ব্যাপারে টিকায় বলা হয়েছে, নির্ধারণ করেছেন এর মূলে ফরজ শব্দ রয়েছে। এর অর্থ অবশ্য করণীয় ও পালনীয়। ঈমাম শাফেয়ী প্রথম অর্থ ও ঈমাম আবু হানিফা (র.) দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করেছেন।

বিভিন্ন হাদিসের ভিত্তিতে ফিতরার শরয়ী হুকুম সম্পর্কে ঈমামদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ঈমাম শাফেয়ী ও আহমেদের মতে ফিতরা ফরজ।

ঈমাম আবু হানিফার মতে ফিতরা ওয়াজিব। ঈমাম মালিক এবং কোনো কোনো ইরাকী ও কিছু সংখ্যক শাফেয়ীর মতে ফিতরা সুন্নতে মোয়াক্কাদা।

আলোচ্য হাদিস থেকে আরও প্রমাণিত হয় যে রমজান অতিবাহিত হলে ফিতরা ওয়াজিব হয়। তাই ঈমাম শাফেয়ী বলেছেন, রমজানের শেষদিনের সূর্যাস্তের পর ফিতরা ফরজ হয়। আবু হানিফা বলেছেন, ঈদুর ফিতরের দিন সূর্যোদয় থেকে ফিতরা ওয়াজিব হয়।

আতা (র.) ইবনে ছিরিনসহ (র.) বিশিষ্ট তাবেয়িরা বলেছেন, ছদকায়ে ফিতর আদায় করা ফরজ। হানাফি ফেকার কিতাবে ওয়াজিব লেখা হয়।

ওয়াজিব কার্যতঃ ফরজই বটে। উভয়ের মধ্যে শুধু সুক্ষ্ম মর্মগত সামান্য পার্থক্য রয়েছে।(বোখারি শরীফের ২য় খণ্ডের ছদকায়ে ফেতর অধ্যায়).

ফিতরা ফরজ না ওয়াজিব তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও ফিতরা দিতে হবে কি না সে ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই। তাই অবশ্য পালনীয় মনে করে ফিতরা দেওয়াই শ্রেয়।