ছাতিম
সংস্কৃত : সপ্তপর্ণ, 'সপ্তপর্ণা।
বাংলা : ছাতিম, ছাতিবন।
ইংরেজি : Blackboard tree, Indian devil tree, Ditabark, Milkwood pine।
বৈজ্ঞানিক নাম : Alstonia scholaris
Apocynaceae গোত্রের অন্তর্গত Alstonia গণের এক প্রকার গাছ। এই ভারত উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়াতে প্রচুর জন্মে। ভারত উপমহাদেশের বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তানে এই গাছ দেখা যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কম্বোডিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, ফিলিপাইন, চীনের গুয়াংজি, ইউনান প্রদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড-এ প্রচুর জন্মে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এটি প্রাদেশিক বৃক্ষ।
(http://www.onushilon.org.bd/plant/image/chatim.jpg)
ছাতিম পাতা ও ফুল
আর্দ্র, কর্দমাক্ত, জলসিক্ত স্থানে ছাতিম ভালো জন্মে। এই গাছ ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছটি বহুশাখাবিশিষ্ট। এর ছাল গন্ধহীন, অসমতল ও ধুসর। কাঠের রঙ সাদা। এর কাঠ বেশ নরম।
ছাতিমের মূলাবর্তে সাতটি পাতা এক সঙ্গে থাকে বলে, সংস্কৃতে এবং হিন্দিতে একে 'সপ্তপর্ণ' বা 'সপ্তপর্ণা' নামে ডাকা হয়। এর শাখা পত্রমূলাবর্তবিশিষ্ট। একই মূলাবর্তে ৪ থেকে ৭টা পর্যন্ত পাতা থাকে। পাতাগুলো ১০ থেকে ১৫ সে.মি. লম্বা হয়। চওড়া হয় ২-৪ সেন্টিমিটার। ছাতিম পাতা চামড়ার মতো পুরু। এর উপরের দিক চকচকে আর তলার দিক ধুসর থাকে।
পাতায় সূক্ষ্ণ লোম থাকে।এর বোঁটা ০.২৫-০.৬০ সেন্টিমিটার হয়।
পত্রশাখার শীর্ষে সবুজ মেশানো সাদা রংয়ে থোকায় থোকায় ক্ষুদ্রাকৃতি ফুল ফোটে। এর পুষ্পদণ্ড ২-৩ সেন্টিমিটার লম্বা হয়।
এর ফল চ্যাপ্ট। ফলগুলো ৩০ থেকে ৬০ সে.মি. লম্বা হয়। এক বৃন্তে সাধারণতঃ দুটো ক’রে ফল ঝুলে থাকে। ছাতিমের বীজ লম্বাটে ডিম্বাকার, কিনারায় আঁশ থাকে আর শেষ প্রান্তে এক গোছা চুল থাকে। ফল পাকলে ফেটে যায় এবং বাতাসে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফুল ধরে শরৎকালে এবং ফল ধরে শীতকালে।
ছাতিম গাছের অভ্যন্তরে দুধের মতন সাদা এবং অত্যন্ত তেতো কষ থাকে। অনেকে ছাতিমের কষ ওষুধরূপে ঘা বা ক্ষতে লাগিয়ে থাকেন। ছাতিম গাছের শুকনো ছাল আমাশয়ে এটি অত্যন্ত উপকরী। ভারতীয় চিকিৎসাশাস্ত্রে এর ছালের ক্বাথ কুষ্ঠ রোগীরা পান করে বা স্নানের সময় ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। এর কাঠ মাজন হিসাবে ব্যবহার করলে দাঁতের মাড়ি ফোলা রোগের নিরাময় হয়। এর ছাল জ্বর নাশক। চর্মরোগে ছাতিমের ছাল বিশেষ উপকারী।
ছাতিমের কাঠ দিয়ে খুব সাধারণ মানের আসবাবপত্র, প্যাকিং কেস, চায়ের পেটি, পেনসিল এবং দেশলাইযের কাঠি তৈরি হয়। ছাতিমের হালকা কাঠ দিয়ে শ্রীলংকায় কফিন বানানো হয়।
সূত্র :
ভারতীয় বনৌষধি। তৃতীয় খণ্ড। কলিকাতা ২০০২।
http://en.wikipedia.org/wiki/Alstonia_scholaris