Daffodil International University

Faculties and Departments => Business & Entrepreneurship => Topic started by: Md. Alamgir Hossan on June 13, 2018, 10:51:12 PM

Title: আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা: পিএইচডির পর কী?
Post by: Md. Alamgir Hossan on June 13, 2018, 10:51:12 PM
আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়, আমি নিজেও এ-নিয়ে অনেক লিখেছি। কিন্তু একটি বিষয়ে খুব বেশি আলোচনা দেখি না, তা হলো উচ্চশিক্ষা যেমন পিএইচডির পরে কীভাবে ক্যারিয়ার গড়তে হবে। এ নিয়েই আজকের লেখা।

স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আমেরিকায় দুইটি অপশন—মাস্টার্স, অথবা পিএইচডি। ডিগ্রি শেষ হওয়ার আগে থেকেই চাকুরি খোঁজার কাজটি শুরু করতে হয়, কারণ চাকুরির সাক্ষাৎকার থেকে শুরু করে অফার পাওয়া এবং কাজ করার অনুমতি অর্জন পর্যন্ত অনেকদিন সময় লেগে যায়। তাই যদি কেউ স্প্রিং সেমিস্টারে পড়া শেষ করেন, তাহলে মোটামুটি আগের বছরের ফল সেমিস্টার থেকে চাকুরি খুঁজতে হবে।

পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের জন্য চাকুরির বাজারটা একটু ছোট। মানে কোয়ালিফিকেশন অনুসারে চাকুরি চাইলে সুযোগের সংখ্যাটা কম। আমেরিকার অধিকাংশ কোম্পানিতেই মাস্টার্স লেভেলের ডিগ্রি হলেই চলে, পিএইচডির খুব একটা দরকার নাই। এ কথাটা রিসার্চ ল্যাব আর ইউনিভার্সিটি ছাড়া মোটামুটি সব কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য। পিএইচডি করার পরে কোথায় চাকুরি করবেন সেটি আগে ঠিক করেন। এক সাথে একাধিক দিকে চেষ্টা চালাতে অসুবিধা নাই।

পিএইচডিধারীরা সাধারণত অ্যাকাডেমিয়া, রিসার্চ ল্যাব, বা ইন্ডাস্ট্রি—এ তিনটি জায়গায় যথোপযুক্ত চাকুরি পেতে পারেন। দেখা যাক কোথায় কীভাবে নিয়োগ হয়—

প্রায় সব পিএইচডি শিক্ষার্থীরই স্বপ্নের সোনার হরিণ হলো টেনিউর ট্র্যাক অ্যাকাডেমিক চাকুরি। পিএইচডি শেষ করার পর সরাসরি অথবা কয়েক বছর পোস্ট ডক করে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসাবে টেনিউর ট্র্যাকের চাকুরিতে যোগ দেয়া যায়। তার পরে ছয় বছর গবেষণা ও শিক্ষকতায় ভালো কাজ দেখালে এবং রিসার্চ গ্রান্ট বা ফান্ডিং বাগাতে পারলে টেনিউর পাওয়া যায় এবং মোটামুটি সারাজীবনের জন্য পাকা চাকুরি পাওয়া যায়। আর অ্যাকাডেমিক চাকুরির সম্মানও অনেক। বেতনের দিক থেকে কোম্পানির চাকুরির চাইতে কিছুটা কম হলেও নানা সুযোগ-সুবিধার বিচারে অ্যাকাডেমিক চাকুরির তুলনা নেই। আর গবেষণা করাটা পেশার সাথে সাথে যাদের নেশাও বটে, তাদের জন্য প্রফেসর হিসেবে চাকুরি করাটা সবচেয়ে ভালো।

নানা ইউনিভার্সিটিতে টেনিউর ট্র্যাক বা টিচিং/রিসার্চ প্রফেসর হিসেবে চাকুরি পেতে হলে পিএইচডি শেষের বছরখানেক আগে থেকে প্রক্রিয়াটি শুরু করতে হয়। আপনার রিসার্চ ফিল্ডের নানা ম্যাগাজিন/সোসাইটি ইত্যাদির সাইটে চাকুরির বিজ্ঞাপন পাবেন। যেমন, কম্পিউটার সাইন্সে কম্পিউটিং রিসার্চ এসোসিয়েশন (CRA)-এর সাইটে এসব প্রফেসর চাকুরির বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়। সিভি, রিসার্চ/টিচিং স্টেটমেন্ট, কাভার লেটার এগুলোসহ আবেদন করতে হয়। সাথে দিতে হয় ৩-৪টি রেফারেন্স লেটার। সিলেকশন কমিটি এসব আবেদন দেখে প্রথমে ফোন ইন্টারভিউ এবং পরে অন-সাইট ইন্টারভিউতে ডাকতে পারে। অন-সাইট ইন্টারভিউতে মূলত রিসার্চের উপরে একটি লেকচার, এবং কখনো কখনো ক্লাস লেকচার দিতে হয়। আর সারাদিনের বাকি সময় থাকে সার্চ কমিটি বা অন্যান্যদের সাথে ইন্টারভিউ। এমনকি ব্রেকফাস্ট/লাঞ্চ বা ডিনারের সময়েও গল্পের ছলে ইন্টারভিউ চলে। অধিকাংশ জায়গায় ফল থেকে শুরু করা অ্যাকাডেমিক চাকুরির ইন্টারভিউ জানুয়ার-মার্চের মধ্যে হয়ে যায়। এগুলো অবশ্য টেনিউর ট্র্যাকের জন্য, টিচিং বা রিসার্চ প্রফেসর, যা আসলে অস্থায়ী পদ, সেগুলোর জন্য আলাদাভাবে ইন্টারভিউ হতে পারে অন্য সময়েও। আর সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পরিচিত লোকজনের মাধ্যমে হয়, যেমন কনফারেন্সে কোনো প্রফেসরের সাথে দেখা হওয়ার পর তাঁকে অনুরোধ করে বা আপনার অ্যাডভাইজরের যোগাযোগের মাধ্যমে এগুলো অনেক সময়ে পাওয়া যায়।

তবে কিছু তিক্ত সত্য জানিয়ে রাখি—অ্যাকাডেমিক টেনিউর ট্র্যাক চাকুরি পাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার হয়ে গেছে। প্রতিটি পদের বিপরীতে প্রায় ৪০০-৫০০টি আবেদন আসে। এর মধ্যে প্রাথমিক ফোন বাছাইতে সুযোগ পেতে হলে আসলে আপনার অ্যাপ্লিকেশনটাকে কারো ঠেলা দেয়া লাগবে। এর জন্য আপনার পিএইচডি অ্যাডভাইজর হলেন মোক্ষম ব্যক্তি। আর আপনার পরিচিতি থাকলে একটু ঠেলা দিলে প্রাথমিক বাছাইতে সামনে আসতে পারেন। কিন্তু যাই হোক, প্রতি বছর যতো পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়, তার মাত্র ১০-১৫% অ্যাকাডেমিক টেনিউর ট্র্যাকের চাকুরি পান। সেই সংখ্যাও কমছে। আর অনেক ক্ষেত্রেই সদ্য পিএইচডি পাশ করা কারোর বদলে কয়েক বছর পোস্টডক করাদের প্রাধান্য দেয়া হয়। কাজেই চরম ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকতে হবে অ্যাকাডেমিক টেনিউর ট্র্যাক চাকুরি পেতে হলে।

অ্যাকাডেমিক চাকুরি পেতে হলে কী করতে হবে? প্রথমত, ভালো মানের গবেষণা করতে হবে, নামকরা কনফারেন্স বা জার্নালে পেপার ছাপাতে হবে। সংখ্যার চাইতে মান গুরুত্বপূর্ণ। তাই পিএইচডি করার সময়ে দরকার হলে সময় নিয়ে ভালো কাজ করুন। দ্বিতীয়ত, আপনার অ্যাডভাইজরও বাছতে হবে দেখে শুনে। ইউনিভার্সিটির পরিচিতির পাশাপাশি আপনার অ্যাডভাইজর কেমন নামকরা সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয়ত, নেটওয়ার্কিং করতে হবে। এবং চতুর্থত, ইন্টারভিউতে গেলে সেখানে সবাইকে পটাতে হবে ভালো লেকচার দিয়ে আর কথোপকথনে সঠিকভাবে প্রফেশনাল কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে। খুব ভালো রিসার্চ করেছে কিন্তু আচার-আচরণে অপেশাদার কিংবা অভদ্র এরকম হলে কাজ হবে না। ইন্টারভিউর পুরো সময়টিতে সবাইকে ভালো করে বিমুগ্ধ করতে হবে সবভাবে।

অ্যাকাডেমিক চাকুরি আবার বেশ কয়েক রকমের হতে পারে—টেনিউর ট্র্যাক ফ্যাকাল্টি (প্রফেসর), নন-টেনিউর ট্র্যাক টিচিং বা রিসার্চ ফ্যাকাল্টি (প্রফেসর বা সাইন্টিস্ট), অথবা স্বল্পমেয়াদী পোস্ট-ডক্টোরাল ফেলো। এগুলোর মধ্যে পার্থক্যটা একটু বলা দরকার। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে টেনিউর সিস্টেম চালু। টেনিউর হচ্ছে অনেকটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো, মানে চাকুরি আজীবন পাকা করার ব্যবস্থা। যেসব প্রফেসরের টেনিউর আছে, তাঁদের চাকুরি যাবার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। আমেরিকার আর কোনো চাকুরিতে এরকম জব সিকিউরিটি নাই। অন্যান্য এলাকা যেমন কোম্পানির চাকুরিতে যেমন লে-অফ-এর মাধ্যমে ছাঁটাই হওয়ার আশংকা থাকে, সেখানে টেনিউরপ্রাপ্ত প্রফেসররা কেবল চারিত্রিক স্খলন বা এরকম গুরুতর অপরাধ, ইউনিভার্সিটির পুরো ডিপার্টমেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়া—এসব কারণেই কেবল চাকুরি হারাতে পারেন। তবে টেনিউরের এ নিরাপত্তা পেতে হলে অনেক কষ্ট করতে হয় বটে। অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসাবে যোগ দেয়ার পর প্রথম ছয় বছর প্রচণ্ড খেটেখুটে গবেষণা, শিক্ষা, এবং প্রশাসনিক নানা কাজে দক্ষতা প্রমাণ করতে হয়, পেতে হয় বড় অংকের ফান্ডিং/গ্রান্ট। এসবের পরে টেনিউর রিভিউর বৈতরণী পেরুতে পারলে মিলে টেনিউর। তাই টেনিউর ট্র্যাকের চাকুরির প্রথম ছয় বছর বেশ খাটাখাটুনি যায়।

প্রফেসর হিসেবে ক্যারিয়ারের সুবিধা-অসুবিধা দুইটাই আছে। অসুবিধার মধ্যে আছে কাজের কোনো সময় অসময় না থাকা। নিজের খাতিরেই হয়তো রাতে বা সপ্তাহান্তে কাজ করতে হয়। অন্যান্য কোম্পানির চাকুরিতে যেমন ৫টার সময় অফিস থেকে বেরুলেই কাজ শেষ। প্রফেসরদের কাজ আসলে কেবল পেশা না, নেশাতেও পরিণত হয়। ফলে বাসায় ফিরেও হয়তো সময় বের করে পেপার লেখা, গ্রান্ট প্রপোজাল লেখা, অথবা কোর্স গ্রেডিং/শিক্ষার্থীদের ইমেইলের জবাব দেয়ার কাজ করতে হয়। প্রফেসরি তাই দিনে আট ঘণ্টার কাজ না, বরং এটা একটা লাইফস্টাইলে পরিণত হয়।

কিন্তু সুবিধা? প্রচুর সুবিধা আছে। অনেকেরই ধ্যান-জ্ঞান সবই হয় গবেষণাকে ঘিরে। আর প্রফেসর হিসাবে এ কাজটি অনেক ভালো করে করা চলে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ল্যাবে যেমন কোম্পানির সুবিধামত বাণিজ্যিক লাভ আছে এমন কাজই কেবল করা যায়, প্রফেসর হিসেবে স্বাধীনতা অনেক। আর শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়মিত মেশা, তাদের জীবন গড়তে সাহায্য করা, এসব তো অমূল্য! এর পাশাপাশি অন্যান্য অনেক স্বাধীনতা আছে। যেমন, আটটা-পাঁচটা অফিস ঘড়ির কাঁটা ধরে করার বাধ্যবাধকতা নাই। প্রায় সব প্রফেসরই নিজেই নিজের বস, কাজেই সময় ম্যানেজ করাটা নিজের উপরেই। আর সামারে কিংবা উইন্টার ভ্যাকেশনের সময়ে অলিখিতভাবে অনেক ছুটি মেলে। যদিও প্রায় সব প্রফেসরই নিজের তাগিদে এ সময়টাতেও কাজ করেন গবেষণায়, সেটি অন্য ব্যাপার। বসের আধিক্য নাই। অধিকাংশ জায়গাতেই একজন প্রফেসরের মোট তিন বা চার জন বস থাকে। ডিপার্টমেন্ট চেয়ার, ডিন, প্রভোস্ট, আর ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট। তাও অনেকটাই ইনফর্মাল, ম্যানেজার এসে ধমকাচ্ছে, ছড়ি ঘুরাচ্ছে এসবের ব্যাপার নাই।

বেতনের দিক থেকে অধ্যাপনার বেতন কোম্পানির চাকুরির বেতনের চাইতে একটু কম কাগজে-কলমে, কারণ কোম্পানির চাকুরির বেতন বলা হয় ১২ মাসের হিসাবে, আর প্রফেসরদের চাকুরির বেতন নয় মাসের হিসাবে। সামারের তিন মাসে অবশ্য প্রফেসরেরা বেকার থাকেন না, প্রায় সবাই-ই সামার কোর্স নিয়ে অথবা রিসার্চের ফান্ড থেকে সামারের বেতন যোগাড় করেন। ফলে সেটি যোগ করার পর প্রফেসরদের বেতন কোম্পানির চাকুরির কাছাকাছি পৌছে যায় বটে।

আর অধিকাংশ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে বেশ ভালো রকমের পেনশন ও বেনিফিটস প্যাকেজ থাকে। ফলে অবসর নেয়ার পরে ভালো অংকের পেনশন পাবার নিশ্চয়তা থাকে। তাছাড়া স্বাস্থ্যবীমাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা অনেক। আর ইউনিভার্সিটির শহরে থাকা-খাওয়াসহ জীবনযাপনের খরচও কম হয় বলে বড় শহরের কোম্পানির চাকুরির চাইতে আসলে এক দিক থেকে প্রফেসরদের বেতনের ক্রয়ক্ষমতা বরং বেশিই হয়।

আর সব শেষে বলতে পারি ইমিগ্রেশনের সুবিধা। ইউনিভার্সিটির এইচ-ওয়ান-বি-এর কোটার ঝামেলা নাই, যে কোনো সময়েই আবেদন করা যায়। আর ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে গ্রিনকার্ড পাওয়াটাও বেশ সহজ। ইউনিভার্সিটির অফিসই সব কাজ করে দেয়। কাজেই সব মিলিয়ে টেনিউর ট্র্যাকের প্রফেসরের চাকুরিটা আমেরিকায় যেমন অত্যন্ত সম্মানের, তেমনই অন্যান্য সুবিধার দিক থেকে অতুলনীয়। তবে এ কারণে এই চাকুরির সংখ্যাও কম এবং এরকম চাকুরি পাওয়ার প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি।

নন-টেনিউর ট্র্যাকে কন্ট্রাক্ট বেসিসে টিচিং ফ্যাকাল্টি নেয়া হয় অনেক জায়গাতেই। এসব চাকুরির টাইটেল হয় টিচিং প্রফেসর। এক্ষেত্রে টেনিউরের সুবিধা নাই। আর প্রতি সেমিস্টারে ৩/৪টি করে কোর্স পড়াতে হয়। তবে রিসার্চ করার বাধ্যবাধকতা নাই। অনেকেই এ দিকে যান প্রতিযোগিতা কম বলে আর পড়াতে ভালোলাগে বলে। এর সাথে সাথে নন-টেনিউর ট্র্যাকে রিসার্চার পজিশনও থাকে, রিসার্চ প্রফেসর অথবা সাইন্টিস্ট হিসাবে নিয়োগ পাওয়া যায় ইউনিভার্সিটিতে। তবে এ পদগুলো প্রায় সব ক্ষেত্রেই গ্রান্টনির্ভর মানে রিসার্চ সেন্টারের ফান্ডিং-এর উপরে পদ থাকা না থাকা নির্ভর করে। বড় ইউনিভার্সিটিতে ভালো ফান্ডিংসহ রিসার্চ সেন্টার থাকে, যেখানে বহু রিসার্চ প্রফেসর বা সাইন্টিস্ট নিয়োগ করা হয়। এদের পড়ানোর বাধ্যবাধকতা নাই, পুরোটা সময় দিতে হয় গবেষণাতেই।

অ্যাকাডেমিক চাকুরির মধ্যে সবশেষে বলবো পোস্ট-ডক্টোরাল ফেলো হিসেবে চাকুরির কথা। এগুলো মূলত পিএইচডি করার পর প্রফেসরের অধীনে গবেষক হিসাবে কাজ করার খণ্ডকালীন (১, ২, বা ৪ বছরের) চাকুরি। প্রফেসরেরা নানা প্রজেক্টে সাহায্যের জন্য পিএইচডিধারী গবেষক খোঁজেন। ল্যাবে সিনিয়র রিসার্চার হিসেবে কাজ করার জন্য পোস্ট-ডক্টোরাল ফেলো হিসাবে কাজ শুরু করা যায়। অনেক বিষয় যেমন বায়োলজি-সংক্রান্ত বিষয়ে অ্যাকাডেমিক লাইনে যেতে হলে পোস্ট-ডক করাটা প্রায় বাধ্যতামূলক। আবার কম্পিউটার সাইন্সে বাধ্যতামূলক না হলেও অভিজ্ঞতা অর্জন এবং কাজ শেখার জন্য অনেকে আজকাল ১/২ বছর পোস্টডক করছেন। এরকম চাকুরি পাওয়াটা বেশ সহজ। প্রথাগত ইন্টারভিউ লাগে না, মূলত নিয়োগকারী প্রফেসরের সাথে খাতির করতে পারলেই এরকম চাকুরি পাওয়া সম্ভব। তবে সমস্যা হলো এগুলো অস্থায়ী চাকুরি। সবাই জানে যে ১ বা ২ বছর, বা বড়জোর ৪ বছর পোস্ট-ডক করবে, তারপর স্থায়ী চাকুরি খুঁজে নিবে। তবে পাশ করার পরে পরে চাকুরি নিয়ে মাথা ঘামাবার চাইতে বছর কয়েক পোস্টডক করে নিলে নতুন ইউনিভার্সিটির ব্র্যান্ডিংটা কাজে লাগতে পারে। আর ধীরে সুস্থে টেনিউর ট্র্যাকের চাকুরি পাওয়ার সময়ও মেলে। বেতন বেশ কম, অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসরদের অর্ধেকের মতো হয়। তবে যেকোন সময়েই এ চাকুরি পাওয়া সম্ভব যদি নিয়োগকারী প্রফেসর রাজি থাকেন। তাই স্বল্পমেয়াদী চাকুরি হিসাবে পিএইচডি করার পরে পোস্ট-ডক মন্দ নয়।

এখন দেখা যাক একাডেমিয়ার বাইরে আর কী কী সুযোগ আছে।

পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের একটি বড় গন্তব্য হলো রিসার্চ ল্যাব বা গবেষণাগার। সরকারি বা বেসরকারি প্রচুর রিসার্চ ল্যাব আছে যাদের বড় কাজ হলো রিসার্চের পিছনে সময় দিয়ে নতুন কিছু আবিষ্কার করা।

আমেরিকার সরকারের অনেকগুলো ন্যাশনাল ল্যাব আছে, এগুলো প্রচণ্ড মর্যাদাকর ও বিখ্যাত। যেমন লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাব, লরেন্স বার্ক্লে ল্যাব, আরাগোন ন্যাশনাল ল্যাব, ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাব, প্যাসিফিক-নর্থওয়েস্ট ন্যাশনাল ল্যাব ইত্যাদি। এসব ল্যাবে বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে গবেষণা হয়ে থাকে। সেজন্য পিএইচডি ডিগ্রিধারী গবেষক ও বিজ্ঞানীদের কাজের সুযোগ আছে। ন্যাশনাল ল্যাবের সুবিধা হলো সুনাম। প্রতিটি ন্যাশনাল ল্যাবই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নামকরা প্রতিষ্ঠান। আর এখানকার চাকুরির নিরাপত্তাও বেশ ভালো। ব্যবসায়িক ল্যাব না হওয়ায় অনেক বিষয়ে মৌলিক গবেষণার সুযোগ আছে। অসুবিধার দিক হলো, কিছু কিছু ল্যাবে নানা রকমের গোপন গবেষণা চলে বলে সেখানে কাজ কেবল নাগরিক বা গ্রিনকার্ডধারী স্থায়ী বাসিন্দারাই পারেন। তবে নন-ক্লাসিফাইড/সিক্রেট কাজও আছে।

ন্যাশনাল ল্যাব ছাড়াও নানা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামকরা গবেষণাগার আছে। বেল ল্যাবসের নাম আমরা অনেকেই জানি, কিন্তু মাইক্রোসফট রিসার্চ, আইবিএম রিসার্চ, এসবের মতো মৌলিক গবেষণার প্রতিষ্ঠান আছে। এসব জায়গার সুবিধা হলো ভালো মানের গবেষণা করা যায় খুব ভালো রিসার্চারদের সাথে। সামারে সাহায্য করার জন্য পাওয়া যায় ইন্টার্ন। তবে দুয়েকটি জায়গা বাদে আসলে ইচ্ছামতো গবেষণা সেভাবে করা চলে না, কোম্পানির সুবিধা হয় এমন কাজই করতে হয়। মাইক্রোসফট রিসার্চ বা আইবিএম রিসার্চে একসময় ইচ্ছামতো কাজ করার অপশন থাকলেও এখন কমে এসেছে বলে শুনেছি।

রিসার্চ ল্যাবে কাজের সুবিধার মধ্যে আছে ভালো বেতন, নানা সুযোগ সুবিধা, যেমন কোম্পানির ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং ডেটা নিয়ে কাজের সুযোগ ইত্যাদি। অসুবিধার মধ্যে রয়েছে ইচ্ছামতো কাজের বদলে অনেক সময়েই কোম্পানির স্বার্থে কাজ করতে হয়। আবার অনেক সময়ে প্যাটেন্ট পাওয়ার আগে পর্যন্ত রিসার্চ পাবলিশ করা যায় না। রিসার্চ ল্যাবে একসময়ে ছাঁটাই হতো না, তবে ইদানিং অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হওয়াতে অনেক ল্যাব বন্ধ হয়ে গেছে বটে।

নানা কোম্পানিতেও প্রকৌশলী বা অন্যান্য পদে পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা কাজ করতে পারেন। যেমন গুগল, ফেইসবুক, মাইক্রোসফটে প্রচুর মানুষ রিসার্চ ল্যাবের বাইরেও ডেভেলপমেন্ট অংশে কাজ করেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, যেসব কাজ মাস্টার্স করেই করা সম্ভব, পিএইচডি করার পরে সেসব কাজে যোগ দেয়াটা আসলে এক অর্থে সময়ের অপচয়। অনেক কাজে রিসার্চের দরকার হলেও দেখা যায় যে নন-পিএইচডি বসের বা ম্যানেজারের অধীনেই দিব্যি সেসব কাজ চলছে। কোম্পানির এরকম চাকুরিতে আসলে কার কী ডিগ্রি বা ইতিহাস আছে সেটি ব্যাপার না, কে কী কাজ পারে সেটাই ব্যাপার। তার জন্য পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা অতিরিক্ত কোনো সুবিধা তেমন পান না।

যাহোক, এই শ্রেণীর কাজের সুবিধা হলো ডেভেলপমেন্ট ছাড়া আর কোনো মাথাব্যথা নাই। কাজেই বাসায় ফেরার পরে কাজ নিয়ে চিন্তা নাই, পড়ানোর ঝামেলা নাই। বেতনও অনেক ক্ষেত্রে বেশ ভালো। ছুটি/বেনিফিট/স্টক অপশন এসব তো আছেই। তবে বেতনের অংকটা আসলে বিভ্রান্তিকর। ক্যালিফোর্নিয়ার প্রচণ্ড খরুচে জায়গায় দুই লাখ ডলার বছরে পেলেও সেটি আসলে অপেক্ষাকৃত কম খরচের স্টেটের ৯০ হাজার ডলার বেতনের চাকুরির চাইতে কম বেতনের এক অর্থে । থাকাখাওয়ার খরচ হিসাব করলে ৯০ হাজারেই অনেক ভালো করে থাকা চলে।

একটি বিষয় আসলে আলোচনা করা হয়নি। সেটি হলো, উদ্যোক্তা হওয়া বা স্টার্টাপ খোলার ব্যাপারটি। পিএইচডির পর নানা চাকুরির পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসাবেও ক্যারিয়ার গড়া যায়। পিএইচডির সময়ে ৪/৫ বছর একটি জিনিষের প্রশিক্ষণ অনেকটা পরোক্ষভাবে হয়, তা হলো কোনো সমস্যার সমাধান করার জন্য জানপ্রাণ নিয়ে লেগে থাকা। থিসিস শেষ করার জন্য এই যে প্রচেষ্টা, এতো একাগ্রভাবে কাজ করা, এই ব্যাপারটি কিন্তু উদ্ভাবন ও নতুন উদ্যোগ গড়ে তোলার জন্যও পরবর্তিতে কাজে লাগতে পারে। আমার পরিচিত অনেকে পিএইচডির পর কোনো কোম্পানিতে না ঢুকে নিজেই স্টার্টাপ খুলে বসেছেন। এটিতে ঝুঁকি আছে অনেক, তবে নিজের জন্য কাজ করার মজাও আলাদা।

প্রশ্ন হতে পারে, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য এটা কি বাস্তবসম্মত? কারণ ভিসাসংক্রান্ত কারণে সরাসরি নিজে উদ্যোগ শুরু করা যায় না শুরুতে। এখানে দুইটি ব্যাপার আছে—প্রথমত, শুরুতে কয়েক বছর ইন্ডাস্ট্রিতে বা অন্যত্র কাজ করে ইমিগ্রেশনের ব্যাপারটি গুছিয়ে নিয়ে তারপর স্টার্টাপ খুলে বসা যায়। আর দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞান বা প্রকৌশলে পিএইচডির পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসা-সংক্রান্ত আরও কিছু প্রশিক্ষণ বা ডিগ্রি করে নিলে প্রডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং, মানে একটি আইডিয়াকে প্রটোটাইপ থেকে প্রডাক্টে কীভাবে আনা চলে, সেটি বোঝা সম্ভব।

সুবিধাটা কী এ রকমের ক্যারিয়ারে? নিজের বস নিজে হওয়া, নিজের হাতে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, এর মতো আনন্দের কাজ কি আর কিছু হতে পারে? যারা অ্যাকাডেমিক লাইনে যাবেন না, তারা ইন্ডাস্ট্রির চাকুরির বাইরে এ-দিকে ক্যারিয়ার করার কথা ভাবতে পারেন। আপনার প্রডাক্ট ঠিকমতো হিট হলে বড় কোনো কোম্পানি স্টার্টাপকে কিনে নিতে পারে মোটা অংকে। হোয়াটসঅ্যাপের কথা মনে আছে তো? মাত্র ১৮ মাসের পুরানো কোম্পানিকে ফেইসবুক কিনে নিয়েছিলো ১৮ বিলিয়ন ডলারে (স্টার্টাপ-সংক্রান্ত আইডিয়াটি প্রদানের কারণে ড. বিপ্লব পালকে ধন্যবাদ)।

কাজেই সবসময় গতানুগতিক অ্যাকাডেমিয়া, ল্যাব, আর ইন্ডাস্ট্রি—এসবের মধ্যে চিন্তা সীমাবদ্ধ না রেখে একটু বৃত্তের বাইরে ভাবতে পারেন।

রাগিব হাসান: সহযোগী অধ্যাপক, দি ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহাম, যুক্তরাষ্ট্র।
Title: Re: আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা: পিএইচডির পর কী?
Post by: sheikhabujar on June 22, 2018, 03:22:58 AM
nice post
Title: Re: আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা: পিএইচডির পর কী?
Post by: Md. Siddiqul Alam (Reza) on July 14, 2018, 03:59:09 PM
Thanks a lot for informative post.
Title: Re: আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা: পিএইচডির পর কী?
Post by: Raisa on July 31, 2018, 09:31:36 AM
good one
Title: Re: আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা: পিএইচডির পর কী?
Post by: tokiyeasir on July 31, 2018, 11:13:06 AM
Informative
Title: Re: আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা: পিএইচডির পর কী?
Post by: gour2010 on September 16, 2018, 12:00:11 PM
Nice post...
Title: Re: আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা: পিএইচডির পর কী?
Post by: Al Mahmud Rumman on September 19, 2018, 11:41:43 AM
 :)
Title: Re: আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা: পিএইচডির পর কী?
Post by: zahid.eng on October 06, 2018, 11:37:14 AM
thank you.
Title: Re: আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা: পিএইচডির পর কী?
Post by: Showrav.Yazdani on November 15, 2018, 11:41:16 AM
Thanks for sharing
Dewan G. Y. Showrav
Senior lecturer
Dept.of Business Administration
Title: Re: আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা: পিএইচডির পর কী?
Post by: drrana on February 09, 2019, 04:50:13 PM
 :) :)