Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - khadija kochi

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 7
31
Faculty Forum / ছুটির পরে অফিসে
« on: June 23, 2018, 01:47:14 PM »

ছুটির পরে অফিসে যোগ দিয়ে অনেকের খোঁজখবর নিতে পারেন। ছুটির পরে অফিসে যোগ দিয়ে অনেকের খোঁজখবর নিতে পারেন।কয়েক দিনের ছুটির পরে আবার সেই আগের মতো ঘড়িবাঁধা জীবনে ফিরে আসা। নয়টা-পাঁচটা অফিসের সেই চক্রে আবারও জড়িয়ে পড়া। ছুটি শেষে অফিসে ফিরলেও ছুটির রেশ যেন কাটতেই চায় না। ছুটির পরের দিন তো এমনিতে অফিসে কাজে মন বসে না।

আবারও ব্যস্ততার চাপ নিতে মন চায় না। ছুটির রেশটা ছুটির পরেও থেকে যায়। মন না চাইলেও অফিসে পা রাখতে হয়, ব্যস্ততার চাদরে নিজেকে জড়িয়ে নিতে হয়। ছুটি শেষে যেভাবে অফিসের কাজে মন বসাবেন তা নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাশেদুর রহমান।

স্মৃতিকে ইতিবাচক উপায়ে ব্যবহার করুন

ছুটির আনন্দের স্মৃতি আমাদের মধ্যে ইতিবাচক শক্তি জোগায়। ছুটির পরে সেই ইতিবাচক শক্তিকে মনোযোগ বাড়াতে ব্যবহার করুন। ফুরফুরে মেজাজে কাজে যোগ দিন। ছুটির রোমাঞ্চ যেন কর্মক্ষেত্রে জোর হিসেবে কাজে দেয়, সে দিকে নজর দিন।

যোগাযোগ বাড়াতে ছুটির আমেজ ব্যবহার করুন

ছুটির পরে কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার পরে আপনি আপনার সহযোগী কিংবা গ্রাহক যাঁরা—তাঁদের খোঁজখবর নিন। ফোন করে কুশলাদি জিজ্ঞেস করুন। এই আন্তরিকতা অনেক নতুন মানুষের মধ্যে আপনার পরিচিতি বাড়াবে।

অফিসের পরিবেশে মানিয়ে নিন

ছুটির পরে সেই বাঁধাধরা নিয়মে কি আর নিজেকে জড়াতে ইচ্ছে করে? ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অফিসে পা রাখলেও আবারও অফিসের শৃঙ্খলায় ফিরে আসুন। অফিসের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আবারও আগের আপনি হয়ে যান।

রেখে যাওয়া কাজের ফিরিস্তি নিয়ে বসুন

আগে কোন কোন কাজ সম্পন্ন করা বাকি ছিল, ছুটি থেকে ফিরে আসার পরে সেগুলো শেষ করতে সময় দিন। কোন কাজ কতটুকু এগোলো, কোথায়-কেমন অবস্থানে আছে তা জেনে আবারও কাজ শুরু করুন। নতুন কোন কোন কাজ শুরু করবেন তারও একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন দ্রুত।

ই-মেইলের উত্তর দিন

বেশ কয়েক দিনের ছুটিতে একগাদা ই-মেইল বার্তা জমা হয়ে যেতে পারে। ছুটি থেকে ফিরে সময় নিয়ে ই-মেইলের উত্তর দিন। বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে ই-মেইল করার ক্ষেত্রে উৎসবের ছুটির কারণ এক-দুই লাইনের মধ্যে জানিয়ে তাঁকেও শুভেচ্ছা জানাতে পারেন।

সভার জন্য নিজেকে তৈরি করুন

ছুটি থেকে ফিরে অফিসে পা রাখতেই শুরু হয় একগাদা সভা। সভার জন্য নিজেকে তৈরি করুন। কোন সভা কোন বিষয়ে তা সম্পর্কে আগেই জেনে নিন।

ছুটির গল্প-ছবি আড্ডার জন্য জমিয়ে রাখুন

সারাক্ষণ মাথায় ছুটিতে কী করেছেন, কোথায় কোথায় ঘুরতে গেলেন তা না রেখে দুপুরের খাবারের সময় সহকর্মীদের জানাতে পারেন। অফিসের সময়ে কোনোভাবেই ছুটির গল্প নিয়ে আড্ডা জমিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সহকর্মীদের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে ছুটির গল্প শোনাতে পারেন। নিজের গল্প যেমন বলবেন, তেমনি অন্যদের গল্পও শুনতে মনোযোগী হতে হবে।

স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখুন

ছুটিতে তো আরাম-আয়েশেই ছিলেন। শরীরের দিকে কি আর খেয়াল রাখার সময় ছিল। কর্মব্যস্ততা শুরু হলে আবারও ফিটনেসের দিকে মন দিন। অফিসে হেঁটে কিংবা সাইকেল চালিয়ে আসার অভ্যাস করতে পারেন।

32




অনুপ্রেরণা বনাম অভ্যাস
অনুপ্রেরণা আজ একরকম, কাল আরেক রকম। আপনি যদি অভ্যাস তৈরি করতে পারেন তাহলে ব্যায়াম থেকে শুরু করে প্রতিদিন যেকোনো কাজই করতে পারবেন।
প্রতিদিন যদি অনুপ্রেরণার জোরে ভোর পাঁচটায় ওঠার পরিকল্পনা করেন, তাহলে কোনো কোনো দিন নাও ঘুম ভাঙতে পারে। ভোরের একটু বৃষ্টি আর বিছানার ওম ছেড়ে ওঠা কি এত সহজ? উল্টো দিকে আপনি যদি অভ্যাস আর নিয়মে অনুরক্ত হন তাহলে রোদ-বৃষ্টি-শীত কোনো কিছুই আপনাকে সকালে উঠতে আটকাতে পারবে না।
পরিবেশ বদলে ফেলুন
একই পরিবেশে সব সময় থাকতে থাকতে অজান্তেই নিজেকে বিষাদের চক্রে আটকে ফেলি। নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে দীর্ঘদিন ধরে একই পরিবেশে না থেকে চারপাশে নতুন কিছু তৈরি করুন। নিজের ঘরটিকে ভিন্নভাবে গুছিয়ে নিন। অফিসের কাজের টেবিলকে একটু এদিক-সেদিক করে নিজের চারপাশে নতুন পরিবেশ তৈরি করুন। নতুন পরিবেশে আমাদের মস্তিষ্কে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কাজ করে। আগ্রহ আর মনের জোর বাড়াতে পরিবেশ বদলে নিন।

পোশাকে মনোযোগ দিন
মনের দুর্বলতা আর বিষণ্নতাকে প্রভাবিত করে আমরা কি পরছি তার ওপর। কোন রঙের পোশাক পরছি, কোন ধরনের পোশাকে নিজেকে আয়নার সামনে দেখি তা আমাদের অবচেতন মনের ওপর প্রভাব ফেলে। নিজেকে সামাজিক কোনো অবস্থানে ছোট মনে হলে পোশাক পরিবর্তন করুন। আপনাকে যে পোশাকে আত্মবিশ্বাসী মনে হয়, তাই পরে নিজের মনের জোর বাড়ান।

অনুপ্রেরণার গল্প থেকে শিক্ষা নিন
অন্যদের সাফল্যের গল্প থেকে নিজের জন্য শিক্ষা খুঁজে নিন। অন্যদের ব্যর্থতা থেকে নিজের জন্য কী শিক্ষা হতে পারে, তা ভাবার চেষ্টা করুন। গল্পের পেছনের মূল ভাবনা কীভাবে আপনাকে সামনে এগিয়ে নিতে পারে, তা নিয়ে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া বাড়ানোর চেষ্টা করুন।

ছোট ছোট লক্ষ্যে এগিয়ে যান
এক দিনে ২০ মাইল দৌড়ানো কি সম্ভব? হুট করেই এক দিন এমন দীর্ঘ পথ দৌড়ানো যেমন অসম্ভব, তেমনি এক দিনে হাজার পৃষ্ঠার উপন্যাস লেখাও অসম্ভব। আপনি যদি প্রতিদিন ২০ মিনিট করে লেখা বা দৌড়ানোর অভ্যাস করেন, তাহলে একদিন ২০ মাইল ছাপিয়ে যেতে পারেন। ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করে প্রতিদিন একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

সময়কে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন
হয়তো ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ভোর ছয়টা বাজলে অ্যালার্মের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করছেন। উল্টোভাবে চিন্তা করে নিজেকে বদলে ফেলার চেষ্টা করুন। রাতে এমন সময় ঘুমান যেন ভোর ছয়টায় আপনার এমনিতেই ঘুম ভেঙে যায়। সময়কে নিজের জন্য আয়ত্ত করতে শিখুন।

33
Faculty Forum / ছোট তবে শান্তির নীড়
« on: April 30, 2018, 11:35:26 AM »
ছোট তবে শান্তির নীড়

 
 

ছোট বাসায় জিনিসপত্র রাখার এরকম তাক ঘরের সৌন্দর্য্যও বাড়াবে। ছবি: নকশাছোট বাসায় জিনিসপত্র রাখার এরকম তাক ঘরের সৌন্দর্য্যও বাড়াবে। ছবি: নকশা
সাধ ও সাধ্য। এই দুয়ের মিশেলে বাসা খুঁজে পাওয়া অনেকটাই কঠিন। কম বেশি ৬০০ থেকে ৯০০ বর্গফুট ফ্ল্যাট বাড়ি এখন বেশ দেখা যায়। নীড় ছোট হলেও ক্ষতি নেই, যদি তা হয় সাজানো–গোছানো। নতুন দম্পতি কিংবা ছানাসহ টোনাটুনির ছোট পরিবারগুলোর কাছে এমন বাসাই প্রথম পছন্দ। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় আসবাব, নিত্যব্যবহার্য তৈজসের ভিড়ে ছোট বাসাগুলো ছিমছাম হয়ে ওঠে না।

অন্দরসজ্জা বাসার খোলামেলা ভাব বজায় রাখতে বড় ভূমিকা পালন করে। বাসার দেয়ালের রং নির্বাচন করা থেকে শুরু করে আসবাবের আকার–প্রকার, এগুলোর কৌশলগত অবস্থান ঠিক করা—সবকিছু বাসাকে পরিপাটি করে তোলে। বাঁধাধরা নিয়ম না থাকলেও কিছু কৌশল প্রয়োগে ছোট বাসাও হয়ে ওঠে শান্তির নীড়।
মেঝে থেকে ছাদ অব্দি
হরেক রকম জিনিস তুলে রাখার জন্য ব্যবহৃত শেলফ গতানুগতিকভাবে ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেয়ালের ওপরের অংশ কার্যত থাকে অব্যবহৃত। দেয়ালের গায়ে টানা লম্বা তাক বা শেলফ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা জিনিসগুলোকে যেমন গুছিয়ে দেয়, তেমন অহেতুক আসবাবের ভারিক্কিও কমায়। দেয়ালের ওপরের অংশে ঝুলন্ত বা ওয়াল মাউন্টেড আসবাব বেশ কার্যকর, আর দেখতেও সুন্দর দেখায়।

বাধাহীন অবিরাম
না হলেই নয় এমন দেয়াল ছাড়া দেয়ালের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমিয়ে তার বদলে খোলা শেলফ বা প্রয়োজনমতো ভাঁজ হয়ে যাওয়া জালি-কাজের বিভাজক (পার্টিশন) বেশ কাজে দেয়। যেমন খাবার ঘর

কে বসার জায়গা বা লিভিং স্পেসকে সম্পূর্ণ আলাদা না করেও আলাদা জায়গার আবহ দেওয়া সম্ভব।

এর নিচে ওর নিচে
জিনিসপত্র রাখার জায়গা (স্টোরেজ স্পেস) সঠিক এবং সৃজনশীল ব্যবহার ছোট্ট বাসাগুলো সার্থকতার চাবিকাঠি। জানালার পাশে যেখানে টানা লম্বা শেলফ করা যাচ্ছে না, সেখানে নিচু শেলফ হয়ে উঠতে পারে সমাধান। এটি বসার নিরিবিলি আয়োজন হিসেবেও কাজে দেয়। ছোট টুল হয়ে যেতে পারে বাচ্চার খেলনার বাক্স। একইভাবে খাট, সোফা, এমনকি টেবিলের নিচটাও হয়ে উঠতে পারে এটা–ওটা গুছিয়ে রাখার সহজ সমাধান।

দেখাক আরেকটু বড়

যা আছে তাকে আরেকটু বড় করে দেখানোর কৌশলটা হলো ভিজ্যুয়াল ইল্যুশন। কামরার উচ্চতা বেশি দেখানোর কার্যকরী এমনই এক উপায় হচ্ছে পর্দা টানানোর রড যতটা সম্ভব উঁচুতে লাগানো। এ ক্ষেত্রে মোটামুটিভাবে ছাদ থেকে দুই বা তিন ইঞ্চি নিচে পর্দার রড লাগালে কাজ হয়ে যায়। জানালার দুপাশে দুই থেকে চার ইঞ্চি বাড়তি রাখলে জানালা বড় দেখায় এবং পর্দা সরিয়ে রাখতে পারার জন্য ঘরে আরও বেশি দিনের আলো আসার পথ সুগম হয়।

আয়নার ব্যবহার নিমেষেই জায়গাটুকুকে দ্বিগুণ করে দেখায়। বড় টানা আয়না বা ফ্রেমে বাঁধানো টুকরো আয়না ঘর সাজানোর উপকরণ তো বটেই, সরু করিডোরকেও করে প্রশস্ত।

জাঁকিয়ে বসা গাঢ় রঙের পরিবর্তে হালকা চাপা সাদা, হলদে, মেটে বা ছাই রং আলো প্রতিফলন করে ঘরকে করে বড়।

এসব কৌশল মেনে আর আপনার নিজস্বতার যোগে ছোট্ট নীড়টাই হয়ে উঠবে অনন্য।


34
Faculty Forum / জীবন যা শেখায় না
« on: April 30, 2018, 11:32:36 AM »


১. জীবন সব সময়ই সচল। আপনি এখন যে কর্মস্থলে কাজ করছেন ভাবছেন আপনি ছাড়া সব অচল। আসলে কিন্তু না। আপনি যদি আজ কাজ ছেড়ে দেন তাহলে কর্মস্থলে সাময়িক সমস্যা তৈরি হবে, কিন্তু খুব দ্রুত আপনার উপস্থিতি সবাই ভুলে যাবে। তেমনি আজ আপনি হয়তো বন্ধুমহলে বেশ জনপ্রিয়। আপনাকে ছাড়া কোনো আড্ডাই জমে না। জেনে রাখুন, আপনি না থাকলেও আড্ডার রং কোনো অংশেই মলিন হবে না।
২. কোনো কিছুই জীবনে চিরস্থায়ী নয়। আবেগ, অনুযোগ কিংবা অভিযোগ-কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। সামাজিক সম্পর্কগুলো সব সময়ই এক রকমের গাঢ় হবে না। আজ আপনার কাছে যাকে ভালো লাগছে, কালকে তাকে আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে। আজ যিনি প্রশংসা করছেন, কাল তিনি আপনার কঠোর সমালোচক হতেই পারেন।
৩. নিজেকে কখনোই অন্যদের সঙ্গে তুলনা করবেন না। নিজেকে নিজের সঙ্গে তুলনা করতে শিখুন। বন্ধুর ভালো চাকরির খবর শুনে নিজেকে হেয় করবেন না, বন্ধু উৎসাহ দিয়ে নিজের পথ গোছানোর চেষ্টা করুন।
৪. আর্থিক স্বাধীনতা আপনার জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয়। ধার করার অভ্যাস কিংবা ঋণে নিজেকে জড়াবেন না। চেষ্টা করুন নিজের হাতে আয় করতে। যতটা আয় করবেন, তা বুঝে ব্যয় করতে শিখুন। প্রয়োজনের বাইরের ব্যবহারের জিনিসপত্র কেনা থেকে বিরত থাকুন। অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করুন। দামি মুঠোফোনে যতটা আনন্দ মেলে হয়তো মঞ্চনাটক দেখার অভিজ্ঞতা আরও আনন্দ দেবে। বস্তুগত আনন্দের চেয়ে অভিজ্ঞতা, স্মৃতি জমানোর দিকে মনোযোগ দিন।
৫. যত বড়ই দুঃখ আসুক না কেন, তা মলিন হবেই। প্রেমিককে হারানোর বেদনা, ভালো চাকরির সুযোগ বা পরীক্ষায় ভালো ফল-নানা কারণে ব্যর্থতা আর শোক জীবনে আসতে পারে। জেনে রাখুন, সব দুঃখই ধীরে ধীরে হালকা হতে থাকে। একদিন সব দুঃখ কাটিয়ে সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি আমরা।
৬. শুধু পরিশ্রমেই জীবনে সাফল্য আসে না। পরিশ্রমের সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সৃজনশীলতাকে যোগ করতে হয়। বছরের পর বছর একই কাজ করতে করতে জীবনকে কখনোই একঘেয়েমির বৃত্তে আটকে ফেলবেন না। সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝুঁকি নিতে শিখুন। ঝুঁকি নেওয়ার একটা সুবিধা হচ্ছে, আপনি জানেন না সামনে কী আসবে। এই অচেনা আর অজানা পথ সামনে নতুন দ্বার খুলে দেয়।
৭. সাফল্য কিংবা ব্যর্থতাই জীবনের সবকিছু না। সময়কে নান্দনিক উপায়ে রাঙিয়ে বেঁচে থাকাই জীবন।
৮. অন্যের মতামতকেই জীবনের সব বলে ভাববেন না। একই বই কারও কাছে ভালো লাগতে পারে, কারও কাছে খারাপ লাগতে পারে। তেমনি আপনার কাজ কারও কাছে ভালো লাগতে পারে, কারও কাছে খারাপ লাগতে পারে-সব সময় নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে কাজ করুন।
৯. মুঠোফোন বা সামাজিক দুনিয়াই জীবনের সব না। বন্ধুর সাফল্যের ছবি ফেসবুকে দেখে মন খারাপ হতেই পারে আপনার। আবার দিনের অনেকটা সময় মুঠোফোনের পেছনে ব্যয় করার ফল কিন্তু ইতিবাচক হয় না। নিজের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন। নিজের শখকে গুরুত্ব দিন।
১০. নিজের পথ নিজেকেই চলতে হয়। অন্যরা আপনাকে দারুণ পছন্দ করে হয়তো, কিন্তু দিন শেষে আপনার পথ আপনাকেই অতিক্রম করতে হবে। প্রত্যেক মানুষের এগিয়ে চলার গল্প, কষ্টের গল্প ভিন্ন হয়-তাই আপনাকে কেউ এগিয়ে নেবে তা ভেবে কখনোই বসে থাকবেন না।


35



বসের ঝাড়ি খাননি এমন চাকরিজীবী খুঁজে পাওয়া ভার। বসের ঝাড়ি খেয়ে তো আর মুখে হাসি আসবে না। কাজেই মেজাজ খারাপ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে কী প্রতিক্রিয়া দেখাবেন, তা ভাবনার বিষয়। কারণ ওই ঝাড়ির প্রতিক্রিয়া যথাযথ না হলে, তা আপনার হাতে বরখাস্তের নোটিশও ধরিয়ে দিতে পারে। কাজেই সাবধান তো হতেই হবে। হাজার হোক রুটি-রুজির ব্যাপার।

যদি দেখেন যে বস আপনাকে হয়রানি বা উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করছেন, তবে প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগ বা আইনজীবীর কাছে যেতে পারেন। কিন্তু কাজের বিষয় নিয়েই বকা খেলে একটু ভেবে দেখতে হবে। একটু চিন্তা করে দেখুন। দোষ কি আপনার ছিল, নাকি আপনি বলির পাঁঠা? বস কি নিজের হতাশা আপনার ওপর ঝাড়লেন? নাকি আপনাকে বাগে পেতে তক্কে তক্কেই ছিলেন তিনি?

অনেকগুলো প্রশ্ন হয়ে গেল। তবে এসবের উত্তরেই কিন্তু সমাধান লুকিয়ে আছে। বসের বকাঝকার বিপরীতে আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া না দেখানোই ভালো

। উল্টো চিৎকার করে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বলার চেয়ে বেশি বেশি শোনার অভ্যাস গড়তে হবে। বসের অভিযোগ শুনতে শুনতেই তৈরি করতে হবে নিজের যৌক্তিক উত্তর।

১. আলাদাভাবে বসুন
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সবার সামনে বকাঝকা শুরু করলে তাঁর সঙ্গে আলাদাভাবে আনুষ্ঠানিক আলাপে বসার প্রস্তাব দিতে পারেন। যতটা বিন

য়ের সঙ্গে শান্তভাবে এই প্রস্তাব দেবেন, ততই মঙ্গল। আলাদাভাবে বসলে বস যেমন আপনার সমস্যাগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারবেন, তেমনি আপনিও এর জবাব দেওয়ার সুযোগ পাবেন। অফিসে সবার সামনে ভরা হাটে এই প্রত্যুত্তর দেওয়া কিছুটা কঠিন। তবে আপনাকেও অভিযোগ মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

২. নিজেকে ব্যাখ্যা করুন
একটি বিষয় মনে রাখবেন, বসের তোপের মুখে অবশ্যই আপনাকে যথাসম্ভব শান্ত থাকতে হবে। তবে নিশ্চুপ থাকতে হবে, এমন নয়। আপনার ‘ভুল’ কাজের ব্যাখ্যা নিয়ে যদি বস ভুল বুঝে থাকেন, তবে অবশ্যই তা ভাঙাতে হবে। প্রতিহিংসাপরায়ণ হলে চলবে না। বস উত্তর চাইলে চুপ না থেকে কথা বলতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে হবে। যদি উত্তর যৌক্তিক হয়, তবে ভালো বস হলে তিনি শান্ত হয়ে আসবেন।

৩. ভুল হলে মেনে নিন
নিজের ভুল স্বীকার করায় কোনো লজ্জা নেই। এতে আপনার ভালো বৈ মন্দ হবে না। কখনো নিজের ভুলের অজুহাত দেবেন না। ভুল ভুলই। সেটি স্বীকার না করে উল্টো অজুহাত দিলে কর্মী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা জন্ম নেয় কর্তাদের মনে। তাই ভুল নিয়ে তর্কে না জড়ানোই ভালো। বরং স্পষ্টভাবে নিজের ভুল স্বীকার করে নিন। ভুল শুধরে নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতনের কাছে পরামর্শ নিন এবং কঠোর পরিশ্রম করুন। আপনার এই কাজে বস শান্ত হওয়ার পাশাপাশি বাহবাও দিতে পারেন।

৪. পাল্টা চিৎকার নয়
মনে রাখবেন, কোনো অফিসের বড় কর্তা আপনার মতোই রক্তে-মাংসে গড়া একজন মানুষ। রাগ তাঁর হতেই পারে। বস হলেই একজন ব্যক্তি পুরোপুরি খারাপ হয়ে যান না। তাই পাল্টা চিৎকার না করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করুন। পাল্টা চিৎকার পরিস্থিতি শুধু খারাপই করবে। এর চেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যার সমাধানে যাওয়ার চেষ্টা করুন। নিজেই যদি সমাধান দিতে পারেন, তবে দেখবেন কিছুক্ষণ আগে চিৎকার করে অফিস মাথায় তোলা ব্যক্তিটিই নরম হয়ে এসেছেন।

৫. সতর্ক থাকুন
কর্মস্থলে চেঁচামেচি একজন কর্মীকে মানসিকভাবে বেশ দুর্বল করে দেয়। অনেক সময় আরেকজনের ভুলের কারণেও আপনাকে অযথা বকা খেতে হতে পারে। তবে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ করার মানে নেই। আবার মন খারাপ করে কান্নাকাটি করলে আপনারই ক্ষতি। এতে কাজে মনঃসংযোগ কমে গিয়ে ভুল হবে আরও বেশি। তাই ঠান্ডা মাথায় বকা হজম করে কাজে নৈপুণ্য দেখাতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে আবার একই ভুল যেন না হয়।

একটি কথা মনে রাখবেন। আপনাকে বসের চেয়েও বেশি সফল হতে হবে। ক্ষণিকের জন্য এই লক্ষ্যকে অসম্ভব বলে মনে হলেও, দীর্ঘ মেয়াদে এ সংকল্পই আপনাকে সফলতার দরজায় পৌঁছে দেবে। সুতরাং মনঃকষ্টে না ভুগে উদ্যমী হওয়ার চেষ্টা করুন। এভাবেই পড়ে যেতে পারেন বসের সুনজরে।



36
Faculty Forum / দরকারি ১০ দক্ষতা
« on: April 30, 2018, 11:26:35 AM »

দরকারি ১০ দক্ষতা

 
 

মানুষের দক্ষতা সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে। কারিগরি ও মানবিক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে কারিগরি দক্ষতার নানান বিষয় ও প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে পারি। এর বাইরে বেশ কিছু দক্ষতা আছে, যা নিজে থেকেই আয়ত্ত করতে হয়। সারা পৃথিবীতেই চাকরির ক্ষেত্রে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ‘সফট স্কিল’ গড়ে তোলার ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে, সফট স্কিল বলতে সাধারণত এই মানবিক দক্ষতাগুলোকেই বোঝানো হয়। কারিগরি দিক দিয়ে আপনি যতই দক্ষ হন না কেন, মানবিক দক্ষতা না থাকলে ক্যারিয়ারে সফল হওয়া কঠিন।

..
১. যোগাযোগ দক্ষতা

পড়াশোনার বিষয়টা যা-ই হোক, যে ক্ষেত্রেই আপনি ক্যারিয়ার গড়েন না কেন, আপনার মধ্যে যোগাযোগের দক্ষতা থাকা জরুরি। ভাষাগত দক্ষতা, ইতিবাচক শারীরিক ভাবভঙ্গি, লেখার দক্ষতা, গল্প বলার দক্ষতা, রসবোধ, শোনার আগ্রহ, পাবলিক স্পিকিং, সাক্ষাৎকার গ্রহণসহ ই–মেইল লেখা, নিজের বক্তব্য তুলে ধরার যোগ্যতা আয়ত্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই এসব দক্ষতা বিকাশে মনোযোগ দেওয়া উচিত। কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। চর্চার মাধ্যমে দুর্বলতা দূর করতে হবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিজেকে আরও দক্ষ করে তুলতে টেড টকস: দ্য অফিশিয়াল টেড গাইড টু পাবলিক স্পিকিং বইটি পড়তে পারেন। মনে রাখবেন, বাংলা ও ইংরেজি, দুটো ভাষাতেই আপনাকে দক্ষ হতে হবে।

২. নেতৃত্ব বিকাশ

যেকোনো ক্যারিয়ারেই নেতৃত্ব দেওয়ার গুণ থাকা এখন বিশেষ যোগ্যতা। আপনি ম্যানেজার হতে চান কিংবা দক্ষ কর্মী, আপনার মধ্যে নেতৃত্বের সব গুণ থাকতে হবে। দল গঠনের সক্ষমতা, নেতৃত্বের সুযোগ তৈরি করা, পরামর্শ দেওয়া-নেওয়া, সংঘাত নিরসনের কৌশল জানা, কূটনীতি, মতামত দেওয়া ও নেওয়া, তত্ত্বাবধান করাসহ দূর থেকেই দলকে নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা আয়ত্ত করতে হবে। টম র‍্যাথের স্ট্রেন্থস ফাইন্ডার ২.০ বইটি পড়ে জানতে পারবেন, কোন ধরনের নেতৃত্বের গুণাবলি আপনার মধ্যে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে বিভিন্ন বিজনেস কেস কম্পিটিশন, হ্যাকাথন আরও নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে নিজের নেতৃত্ব বিকাশের সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। সংগঠনে কাজের মধ্য দিয়েও নেতৃত্বের গুণ বিকাশ করা যায়।

পেশাগত দক্ষতাপেশাগত দক্ষতা
৩. পেশাগত দক্ষতা

পেশাগত দক্ষতা বলতে প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা, পরিকল্পনা করা, মিটিং পরিকল্পনা, প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ, পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর কোথায় কী হচ্ছে, গবেষণা করার আগ্রহ, ব্যবসায় রীতিনীতি সম্পর্কে জানা, প্রশিক্ষণ নেওয়া ও দেওয়া এবং গ্রাহকসেবার নানা দিক সম্পর্কে জানা—এসবই বোঝায়। পেশাগত দক্ষতাগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষে কর্মজীবনে পা রাখলে ভয় কিংবা জড়তা তেমন থাকে না। চার্লস দুহিগের দ্য পাওয়ার অব হ্যাবিট: হোয়াই উই ডু হোয়াট উই ডু ইন লাইফ অ্যান্ড বিজনেস বইটি পড়লে জড়তা কাটানোর বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে জানা যাবে।

৪. ব্যক্তিগত দক্ষতা
আপনি কতটা ইতিবাচক মানুষ কিংবা নেতিবাচক পরিবেশে নিজেকে কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তার ওপর নির্ভর করছে আপনার ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তিগত দক্ষতা বলতে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা বুদ্ধিবৃত্তিক আবেগ, ব্যক্তি সচেতনতা, আবেগের নিয়ন্ত্রণ, আত্মবিশ্বাস, উৎসাহ, আপনি কতটা সহানুভূতিশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ—এসবই বোঝায়। আপনি কেমন মানুষ, আগে তা খুঁজে বের করতে হবে, তারপর কোথায় কোথায় দুর্বলতা তা বের করে নিজেকে শোধরাতে হবে। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স ২.০ বইটি পড়লে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা বুদ্ধিবৃত্তিক আবেগ কীভাবে, কতটা সৃজনশীল উপায়ে বিকাশ করা যায়, তা জানতে পারবেন।

৫. নিজেকে উপস্থাপন

নিজেকে অন্যের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাও একটি দক্ষতা। এমন নয় যে আপনি যা নন, তা অন্যের সামনে দেখাতে হবে। বরং আপনার শক্তির জায়গাগুলোকে কাজে লাগিয়েই নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করা শিখতে হবে। অন্যের সামনে নিজের ‘ব্র্যান্ডিং’ করতে হবে।

৬. ইতিবাচক চিন্তা করা শিখতে হবে

আপনি কীভাবে চিন্তা করেন—এ থেকেই বোঝা যায় আপনি কতটা দক্ষ। নিজের চিন্তাশক্তি বিকাশের জন্য অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড্যানিয়েল কাহনেম্যানের থিংকিং, ফাস্ট অ্যান্ড স্লো বইটি পড়তে পারেন। সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক চিন্তা করা শিখতে হবে এবং তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।

৭. সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন

জীবনে আপনি কতটা সফল হবেন, তা নির্ভর করে আপনার সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী দক্ষতার ওপর। সৃজনশীলতার সঙ্গে নিজের বুদ্ধিমত্তার নান্দনিকতার সম্পর্ক যুক্ত। উদ্ভাবনী দক্ষতা বিকাশের জন্য আপনি অভিজ্ঞ কোনো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। যে ভাবনাগুলো আপনাকে আলোড়িত করছে, সেগুলো শুধু মাথার ভেতর না রেখে প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। তাহলেই আপনার শক্তি ও দুর্বলতাগুলো জানতে পারবেন।

৮. সংবেদনশীলতা

আপনার সংবেদনশীলতা আপনার আজীবনের শক্তি। কোনো কারণে ব্যর্থ হলে কত দ্রুত সময়ে স্বাভাবিক হতে পারেন কিংবা ব্যর্থতার প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়া কতটা ইতিবাচক, এসব গুণই সংবেদনশীলতা। আপনি নিজের অনুভূতিকে কতটা ইতিবাচক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তা আপনাকে চর্চার মাধ্যমে শিখতে হবে।

 ৯. সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ

আমরা সমস্যা নিয়ে ভাবতে পছন্দ করি। সমস্যা নিয়ে ভাবতে ভাবতে সমাধান নিয়ে ভাবনার সুযোগই পাই না। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকেই সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে জানতে হবে। সমস্যা সমাধানের জন্য গণিত ও যুক্তির বিভিন্ন কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে আবেগের চেয়ে যুক্তি ও বাস্তবতার দিকে খেয়াল রাখতে শিখতে হবে।

১০. শেখার আগ্রহ

সবচেয়ে বড় সফট স্কিল হচ্ছে শেখার আগ্রহ থাকা এবং শিখে তা প্রয়োগের চেষ্টা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেকে নিয়ে অহংকারবোধ করি, নিজে থেকে কিছু শিখতে চাই না, যা একটি ফাঁদ। আপনি নিজেকে জ্ঞানী ভাবা শুরু করলেই শেখার আগ্রহ নষ্ট হয়ে যাবে। শিখতে না পারলে ক্যারিয়ার বা জীবনকে সামনে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। আপনার চেয়ে বয়সে বড় কিংবা ছোট সবার কাছে যেতে হবে শেখার জন্য। কে আপনাকে কোন বিষয়টি শেখাবে, তা কিন্তু আপনি জানেন না। আপনার মন যদি নতুন কিছু শেখার জন্য প্রস্তুত না থাকে, তাহলে আপনি নিজেকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবেন না।

37
স্কুলপড়ুয়া শিশুদের বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা থাকে। এই বয়সে তাদের যে খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। সঠিক পরিমাণে পুষ্টিযুক্ত খাবার না খেলে ভবিষ্যতে উচ্চ কোলেস্টেরল, স্থূলকায় হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
দুই বছর ও এর থেকে বেশি বয়সের স্কুলগামী শিশুদের জন্য ‘ফুড পিরামিড’ ছক আছে। যেখানে শিশুর কায়িক শ্রম, ব্যক্তিত্ব মিলিয়ে তাকে নানা রকমের পুষ্টিকর সুষম খাবারে উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে।
‘সারা জীবনের জন্য সুস্থ হার্ট’ নিশ্চিত করতে এ বয়সেই শিশু-কিশোর বয়সের খাদ্যগ্রহণ তালিকাতে কড়া নজরদারি করার প্রয়োজন আছে। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানের শিশু-কিশোর-কিশোরী পুষ্টিহীন সুস্বাদু খাবারে বেশি আগ্রহী। উচ্চ চর্বি ও সুগারযুক্ত খাবারে বেশি আসক্ত।

শিশুদের জন্য যেমন খাবার ভালো
* ফল ও শাকসবজি
* কম পরিমাণে ফলের রস খাওয়া
* ভেজিটেবল অয়েলের ব্যবহার
* মাখন ও অন্যান্য পশুচর্বির বদলে লো স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার

* সম্পূর্ণ দানাদার শস্য গ্রহণ (ব্রেড বা সেরিয়্যালের বদলে)
* লো ফ্যাট মিল্ক
* বেশি মাছ
* কম লবণ
পারিবারিক খাবারের মেন্যুতে এই তালিকা মেনে চলা ভালো।
শিশু খিদে অনুযায়ী তার প্লেটের খাবার খাবে—পুরোটাই তাকে খেতে হবে, এভাবে জোরাজুরি করা যাবে না
যেসব শিশু-কিশোর প্রতিদিন সুষম খাবার গ্রহণ করে, তাদের আলাদা করে ভিটামিন খাওয়ানোর প্রয়োজন পড়ে না। যারা একটু-আধটু খায়, অপুষ্টিতে ভুগছে, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত, ওজনে বাড়ছে না ও সবজি ডায়েটে নির্ভরশীল, তাদের জন্য ‘ভিটামিন-খনিজ’ জোগান দেওয়া উচিত।
শিশু-কিশোর বয়সে অস্থিকাঠামো মজবুত রাখা বেশি জরুরি। এ জন্য শিশুকে যথাযথ পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’-যুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। বিজ্ঞানীরা এক বছরের বেশি বয়সী শিশুকে দৈনিক ৬০০ ইউনিট ‘ভিটামিন ডি’ এবং ৯-১৮ বছর বয়সীদের জন্য দৈনিক ১৩০০ মিলিগ্রাম করে ক্যালসিয়াম দিতে বলেছেন।
শিশু বেশি চিনিযুক্ত পানীয় ও ফলের রস গ্রহণের ফলে ভরপেট থাকার কারণে ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে পারে না। ফলে তারা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’-বঞ্চিত থেকে সুষম দেহকাঠামো পায় না।
শিশুবিষয়ক অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটাও দেখা যায়, যেহেতু বয়ঃসন্ধিকাল জীবনের বেশ সংবেদনশীল সময়। শিশু ভাবাবেগপূর্ণ থাকে। অথচ সে এ বয়সে বেড়ে ওঠে বেশ দ্রুততার সঙ্গে। সঠিকভাবে খাদ্য পুষ্টি গ্রহণ করে না। ফার্স্টফুড, বাইরের খাবার বেশি খায়। এতে শরীর গঠনের বিভিন্ন উপাদান থেকে বঞ্চিত হয়।
এ বয়সে যারা বিভিন্ন খেলায় অংশ নেয়, বিশেষ করে অ্যাথলেটরা। তারাও খাদ্য উপাদানের নানা প্রচারণার ফাঁদে পড়ে। অ্যাথলেটদের জন্য প্রধান পুষ্টি উৎস হলো পানি। প্রতি ১৫ মিনিটের ব্যায়ামের পরে তৃষ্ণা থাকুক বা না-ই থাকুক, তাকে ৪-৮ আউন্স পানি পান করতে হবে।

38
অন্তর্জালের রঙিন দুনিয়ায় ঘুরে বা টেলিভিশন দেখতে বসলে সময় পার হয়ে যায় দ্রুত। যার ফলে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত দুপুর। আর সকালে ঘুম থেকে উঠতেই ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১০টা বা তারও বেশি। ফলাফল সকালের নাশতা পেটে না দিয়েই অফিস বা ক্লাসের পথে দৌড়। অথচ সকালে ওঠার অভ্যাস বদলে দিতে পারে অনেক কিছুই। বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী বলেন, ‘সারা দিন উজ্জীবিত থাকতে চাইলে অবশ্যই সকালে ওঠা উচিত। ভোরে ওঠার অভ্যাস গোটা দিনটাকে আরও একটু বড় করে দেয়। সুস্থ থাকার জন্য সকালে একটু হাঁটা, ব্যায়াম করা, সময় নিয়ে আমিষসমৃদ্ধ নাশতা খাওয়া দরকার; যেটা সম্ভব হয় সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারলে। নিজের জন্যও একটু পরিচ্ছন্ন সময় পাওয়া যায় ভোরে উঠলে। যাঁরা ভাবেন ভোরে ওঠা অসম্ভব, তাঁদের জন্য বলব, অভ্যাসই মানুষের স্বভাব গঠন করে।’
রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে পরিপূর্ণ প্রাতরাশ (নাশতা) করা জরুরি। সকালে ঘুম থেকে উঠলে ঠিকমতো অফিস করে সন্ধ্যার মধ্যে বাসায় ফিরে আসা সম্ভব। যে কারণে পরের পুরোটা সময় পরিবারের জন্য রাখা যায়। পরিবারসহ রাতের খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যায়। সকালে উঠে শান্ত একটা পরিবেশে নিজের সারা দিনের পরিকল্পনা সাজিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। ফোর্বস সাময়িকীর একটি নিবন্ধ বলছে, মন ও শরীর ভালো রাখতে অধিকাংশ ব্যস্ত ও সফল লোকেরা সকালে উঠেই ব্যায়াম করেন। সকাল সকাল অফিসে এলে যানবাহনের জটলা থেকে মুক্তি মিলবে। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য হাঁটা ও সকালে ঠিকমতো নাশতা করা দরকার। তাই সকাল সকাল ওঠার অভ্যাস না থাকলে কোনোটিই ঠিকমতো কাজে দেবে না।

সকালে ওঠার জন্য
যাঁরা নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠতে চান, তাঁদের জন্য কিছু পরামর্শ থাকছে এখানে—
* রাত জেগে টেলিভিশন দেখার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। এমনকি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ ইন্টারনেটের রাতজাগা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
* শোয়ার ঘর থেকে কম্পিউটার বা মুঠোফোন দূরে রাখুন।
* ঠিকমতো ঘুমানোর জন্য ঘরের পরিবেশও ঠিক রাখা প্রয়োজন। ঘর অন্ধকার ও ঠান্ডা থাকলে ঠিকমতো ঘুমানো যাবে।
* রাতের খাবার আটটা থেকে নয়টার মধ্যেই শেষ করতে হবে। এরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ঘুমাতে যান।
* একজন সুস্থ মানুষের জন্য আট ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। তাই সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়লে অনেক সকালেই ঘুম থেকে ওঠা যাবে।
* সকালে ওঠার অভ্যাস করার জন্য অ্যালার্ম ঘড়ি রাখতে পারেন শোয়ার ঘরে। তবে ঘড়িটা অবশ্যই খাট থেকে খানিকটা দূরে রাখুন, যাতে করে সেটা বাজলে উঠে গিয়ে বন্ধ করতে হয়।
* সকালে ওঠার অভ্যাসের শুরুতেই বড়সড় পরিবর্তন না করে সময় নিয়ে অভ্যাস করুন। প্রথম দিকে নিয়মিত সময়ের ৩০ মিনিট আগে ওঠার চেষ্টা করুন। এর কয়েক দিন পরে আবার ১৫ মিনিট এগিয়ে নিন। এভাবে ওঠার চেষ্টা করলে সেটা সহজেই অভ্যাসে রূপ নেবে।
* সকালে দ্রুত ওঠার জন্য আগেভাগে ঘুমিয়ে পড়া দরকার। তাহলে ঘুমের সমস্যা হবে না।
* অ্যালার্ম বাজার পর মস্তিষ্ককে ভাবার সময় না দিয়ে দ্রুত উঠে রুমের বাইরে চলে আসুন। সকালে উঠেই ব্রাশ করা বা অন্য কোনো কাজ শুরু করুন।
* সকালে নিজের জন্য একটা ভালো উপলক্ষ তৈরি রাখুন। যেমন গান শোনা, লেখার অভ্যাস ইত্যাদি; যা নিজেকে আকৃষ্ট করবে এমন কোনো বিষয় ভেবে রাখুন।
* সকালে উঠে মানসিক প্রশান্তির জন্য নিজেই একটু চা-কফি তৈরি, সূর্যোদয় দেখা, বাগান করা, নাশতা তৈরি বা বই পড়ার মতো কাজও করতে পারেন।
* বেশি রাত করে ঘুমালে চেহারায় তার ছাপ পড়ে আর দ্রুত ঘুমিয়ে সকালে উঠলে চেহারা ও মন ভালো থাকে।

39
Faculty Forum / রাগ করলেই বাপের বাড়ি!
« on: November 24, 2015, 12:34:27 AM »
এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে। মেয়েটির প্রবল অভিমান। ভীষণ কষ্ট! মা-বাবাও বিষয়টি নিয়ে বড় মুশকিলে পড়লেন। তাঁদের বিবেচনায় খুব মন্দ নয় মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। জামাই, শ্বশুর-শাশুড়ি তো বেশ ভালোই। যা একটু টানাপোড়েন, অমনটা সব বাড়িতে কমবেশি থাকেই। ওসব মানিয়ে নিতে হয়।
মেয়ের অভিযোগ হলো, শ্বশুরবাড়িতে তিনি মানুষ হিসেবে মর্যাদা পান না। নিজের কর্মস্থলে যে মর্যাদা, আস্থা, সম্মান পান, শ্বশুরবাড়িতে কেন পাবেন না। স্বামীর বাড়ি কি তাঁর নিজের বাড়ি নয়। স্বামীর বাড়ি তাঁর বাড়ি নয়, বাপের বাড়িও তাঁর বাড়ি নয়। একজন নারীর তবে ঠিকানা কোথায়?
‘নিজেরই যদি বাড়ি হতো তাহলে কি এমন ব্যবহার করত! কীভাবে ভাবব যে ওটা আমার বাড়ি? আগে চাকরি করতাম না, সংসারে টাকা দিতে পারতাম না। তাই কোনো বিষয়ে কথাও বলতাম না। এখন তো টাকাও দিই। তবু কেন এই বাড়ি আমার বাড়ি হতে পারল না?’ বলেন মেয়েটি।
প্রশ্নটা অপ্রিয়। প্রশ্নটা ভয়ংকর। একই সঙ্গে প্রশ্নটা সত্য, সরল ও বাস্তব। একজন মনোবিদ হওয়ায় আমার পেশা সমাজ-মানুষ-ঘনিষ্ঠ। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই নিষ্ঠুর প্রশ্ন প্রায়ই আমাকে শুনতে হয়। কেউ অশ্রুসজল কণ্ঠে বলেন। কেউ বলেন হতাশায় ক্ষোভে।
২.

কেন মেয়েরা এক কাপড়ে শ্বশুর বা স্বামীর বাড়ি ছেড়ে আসেন? এমনটি তো কাম্য নয়। একজন চিকিৎসক হিসেবে যে সমস্যাগুলো দেখি, সেগুলো হলো—
পরিবেশ, অনাস্থা, কূটকচালি, গৃহবধূকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা অনিরাপদ করে রাখে তাঁর অস্তিত্বকে। নানা রকম কুসংস্কার, সন্তান না হওয়া, বিলম্বে হওয়া, অতিরিক্ত রক্ষণশীল মনোভাব একজন নারীকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলে।
একজন মেয়ে তাঁর বাপের বাড়ির পরিচিত ও অভ্যস্ত জগৎ ছেড়ে যখন অন্য আরেকটি সংসারে যান, অনেক সময় সেখানে মানিয়ে নিতে পারেন না।
সমস্যা থাকবে। সমস্যা নিয়েই সংসার। সমাধান কী। আমরা গৎ বাঁধা পরামর্শ দিই—মানিয়ে চলুন।
নিজেকে জানতে হবে। স্বতন্ত্র মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মনকে অতিরিক্ত চাপে রাখলে বিগড়াবেই। সংসারে আপনার যা অধিকার, সচেতন থাকতে হবে গোড়া থেকেই। অধিকার রক্ষা ও বাস্তবায়নই নারীকে দেবে আত্মরক্ষার শক্তি ও ভিত্তি। আইনগত অধিকার জানতে হবে। সাবধান থাকতে হবে। কথা বলা ও আলোচনার সাহস হারানো চলবে না।
সংসার কেবল স্বামীর নয়। শ্বশুরবাড়িরও নয়। সংসার স্বামী-স্ত্রী দুজনের। দুজনের আত্মার মেলবন্ধন। এই ভাবনা ও অধিকার চর্চা করতে হবে।

৩.
অনেকে বলে থাকেন, নারীর মন বোঝা দায়! নারীর মন পাঠ অগম্য কেন হবে! আসলে নারীর মনের কথা কখনোই শোনাই যে হয়নি। নারীকে তাঁর কথা বলতে যে দেওয়া হয়নি। ব্যক্তিগত কাউন্সেলিং অভিজ্ঞতায় দেখেছি, নারীর মনের কথা শোনা হলে তাঁর চেয়ে সরলভাষী, সহজ ব্যাখ্যাকারী আর কেউ নন।
কাউকে যদি জিজ্ঞাসা করেন আপনার বাসা কোথায়। জবাবে বেশির ভাগ মেয়ে বলেন, আমাদের বাসা অমুক জায়গায়। পুরুষেরা অনেক সময় বলেন, আমার বাসা অমুক খানে। এই ‘আমাদের বনাম আমার’ বলার মধ্যেই রয়েছে যত রহস্য।
একজন কর্মজীবী নারী বলছিলেন, পুরুষের পরিচয়েই সংসার। একজন গৃহকর্তার পরিচয়ে বাড়িভাড়া নেওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকও হন বাবা কিংবা স্বামী-শ্বশুর। নারী যখন বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি যান, নারীর ন্যায্য অধিকারের যতই মোহনীয় বাণী শোনান না কেন, বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে বাপের বাড়ির অধিকার হারান। যে ঘরটিতে বড় হয়েছেন, সে ঘরটিও তাঁর থাকে না। এই নারী যখন প্রবল অভিমানে স্বামীর কাছ থেকে চলে আসেন, তখন ভাবেন, তাঁর ঠিকানা কোথায়?
আরেকটি প্রশ্ন নারীর মুখেও শুনি। পুরুষেরাও তো বলেনই। তা হলো বাড়ি তৈরি, ফ্ল্যাট কেনার টাকা জোগান পুরুষ, সম্পদ তাঁর নামে হবে। কেউ কেউ ভালোবেসে, দায়ে পড়ে, সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারায় বাড়ি লিখে দেন নারীকে। তারপরও নারী কেন ঘর ছাড়ার টানাপোড়েনে ভুগবেন? হোক স্বামী-শ্বশুরের, সে ঘরকে কেন মেয়েরা নিজের ভাবতে পারেন না?
এই প্রশ্নের জবাব পেয়েছিলাম সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ নারী আইনজীবীর কাছে। তাঁর দুই মেয়ে। ছেলে নেই। স্বামীও আইনজীবী। তাঁর থেকে জানা গেল, তাঁদের অর্জিত সম্পত্তি তাঁর মেয়েরা আইনত একচ্ছত্র ভোগ করতে পারবে না। যদি একটি ছেলে থাকত, সে একাই একচ্ছত্র ভোগ করতে পারত। সম্পদে অধিকারবোধের এই সংকট আছেই। তারপর শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার বংশানুক্রমিক আতঙ্ক একজন নারীর মনোজগৎকে সব সময় তটস্থ ও বিপন্ন করে রাখে। তাঁকে কাবু ও শক্তিহীন করে রাখে। বিয়ে তো ছেলেরাও করেন। কই তাঁদের তো কোনো বাড়ি থেকে বিতাড়নের আতঙ্ক তাড়া করে বেড়ায় না।
এই মনঃপীড়া, মনোযন্ত্রণা থেকে মুক্তি কোথায়? আইনবিদদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলব, মুক্তি অধিকারে। মুক্তি সম্পত্তির অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নে। সচেতনতা নারীকে দেবে সব রকম রহস্যময়তা থেকে মুক্তি। যেকোনো অধিকার সংরক্ষণ আপনাকে দেবে মানসিক শক্তি। একই সঙ্গে নিজস্ব অস্তিত্বের ভিত্তি। তখন একজন নারী মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন। প্রশান্তিতে থাকবেন।
স্বামীর সংসারকেন্দ্রিক নারীর কর্মতৎপরতাকে কতই প্রশংসার বন্যায় ভাসানো হয়। বিয়ের পর সংসারকে সুন্দর করে সাজাতে-গোছাতে কী পরিশ্রমই না নারী করেন। এই কাজের মূল্যায়ন কেন হবে না? কেন তাঁকে ভুগতে হবে, পরের জায়গা পরের জমিতে অস্থায়ী বাসিন্দার মনঃসংকটে। বুঝলাম, পুরুষ অর্থ জোগান দিচ্ছেন। আমরা কেন এই আয়-সর্বস্ব পরিশ্রমকে একচেটিয়া মূল্যায়ন করব। নারীর সংসার-কর্মকেও অর্থনৈতিক অধিকারের মাপকাঠিতে মূল্যায়ন করতে হবে।

সুলতানা আলগিন: সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

40


    প্রচ্ছদ
    জীবনযাপন
    জেনে নিন

রেগে গেলেন তো মরে গেলেন!
রুহিনা তাসকিন | আপডেট: ১৫:৩৭, অক্টোবর ২১, ২০১৫
০ Like

 
 
 
 
 
 

হলিউডের ছবি ‘অ্যাভেঞ্জার্স’-এ রাগ কমানোর বিদ্যা শিখেছেন হিউ জ্যাকম্যান!শিরোনামটা ঠিকই পড়েছেন। রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন নয়, একদম মরে যাওয়ার কথাই বলা হয়েছে। ট্রাফিক জ্যামে বসে আপনার রাগের চোটে মাথার চুল ছেঁড়ার জোগাড়? অফিসে সহকর্মীদের ওপর সব সময়ই বেজার আপনি? বাড়ি ফিরেও বাচ্চাদের আহ্লাদ-আবদারে মেজাজটা চড়ে যায়?


এমন স্বভাব বদলানোটাই ভালো। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে বিপজ্জনক তথ্য। প্রায় চল্লিশ বছরের কাছাকাছি বয়সের এক হাজার ৩০৭ জন পুরুষের ওপর জরিপ চালায় তারা। এদের মধ্যে সবচেয়ে রাগী ২৫ শতাংশ মানুষ অন্যদের তুলনায় ১.৫৭ গুণ বেশি মৃত্যুঝুঁকিতে আছেন। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে এ গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞেস করা হতো, আপনি কী প্রায়ই রেগে থাকেন? সে সময়ে তাঁদের বয়স ছিল ২০-৪০ এর মধ্যে। ৩৫ বছর পরে আবার তাঁদের তথ্য মিলিয়ে দেখা গেছে, এ প্রশ্নের উত্তরে যাঁরা হ্যাঁ বলেছিলেন, তাঁদের অন্যদের তুলনায় আগেই মৃত্যু ঘটেছে অথবা মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে গেছে । এমনকি বৈবাহিক অবস্থা, ধূমপান, আয় ইত্যাদি বিষয়ের কথাও বিবেচনা করা হয়েছে এ গবেষণায়।

গবেষণাটির প্রধান পরিচালনাকারী অ্যামেলিয়া ক্যারাকারের কাছে অবশ্য ভালো খবরও আছে। তিনি জানিয়েছেন, এ ধরনের মানুষেরা (যাঁরা মৃত্যুঝুঁকিতে আছে) সব সময়ই রেগে থাকেন। ক্ষণিকের রাগের প্রশ্ন নয় এটি। এটা শুধু এক বিকেলের রেগে থাকা বা এক বছরের ব্যাপারও নয়।

রক্তচাপ ও হৃৎপিণ্ডের ওপরে রেগে যাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব যে কতটা তা অনেকেই জানেন। অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, রাগ ও বিদ্বেষ কীভাবে হৃৎপিণ্ডের গতিতে ছন্দপতন ঘটায়। অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন বলা হয় একে। তবে মজার ব্যাপার হলো, নারীদের ক্ষেত্রে কিন্তু সচরাচর এমনটি হতে দেখা যায় না। অর্থাৎ রেগে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি পুরুষদেরই বেশি।

যাঁরা এর মধ্যেই চিন্তায় পড়ে গেছেন, তাঁদের জন্য তথ্য হচ্ছে— অনেক গবেষণাতে এমনও দেখা গেছে, রাগ চেপে রাখাটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে। বিশেষ করে; কেউ যদি মনে করেন তাঁর সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।

তাহলে কী রাগ হলে প্রকাশ করে ফেলাটাই ভালো? সম্ভবত তাই। যদি এর প্রকাশটা মাঝে মাঝে হয় এবং খুব দ্রুতই আবারও মন ভালো হয়ে যায়। নিয়মিত রেগে গিয়ে চারপাশটা মাথায় তুলে ফেলাটা মোটেও ভালো কিছু নয়।

ক্যারাকারের মতে, রাগ মাপার আধুনিক নানা স্কেল ব্যবহার করে হয়তো তাঁদের গবেষণার চাইতেও বেশি তথ্য পাওয়া যাবে। আবার ঠিক কতখানি সময় ধরে রেগে থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাও সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায়নি এতে। তবু রাগ আপনার জন্য ক্ষতিই ডেকে আনবে তাতে সন্দেহ নেই। যেসব মানুষের ওপর আপনি রেগে যাবেন, তাঁদের চাইতে ক্ষতিটা কিন্তু আপনারই বেশি।

তাহলে বরং হলিউডের ছবির সেই ‘হাল্ক’ চরিত্রটির মতোই হয়ে যান। সব সময়ই রেগে থাকে সে। অবশ্য, রাগ নিয়ন্ত্রণে আনার বিদ্যাও যে শেখা সম্ভব তা কিন্তু দেখানো হয়েছে হলিউডেরই আরেক ছবি ‘অ্যাভেঞ্জার্স’-এ।

41

রক্তে কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ভয়ে আপনি হয়তো বাদ দিয়েছেন প্রিয় অনেক খাবার। মাংস খাওয়া যাবে না। মিষ্টি খাওয়া বন্ধ। ভাজাপোড়া ফাস্ট ফুড বিদেয় হয়েছে আগেই। তাহলে ভালো খাবার কোনটা? কী খেলে ক্ষতি না হয়ে বরং উপকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে? এমন খাবার নিশ্চয়ই আছে, আর সেগুলো একেবারে বিস্বাদও নয়।
ওজন ও রক্তে চর্বি যাঁদের বেশি অথবা হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের রোগীদের বেছে নিতে হবে এমন খাবার, যা রক্তে অসম্পৃক্ত বা উপকারী চর্বি সরবরাহ করে। পাশাপাশি সেগুলো যেন রক্তে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল এ রকম কিছু খাবারের একটি তালিকা দিয়েছে।
১. ওটমিল বা ভুট্টার তৈরি খাবার: সকালের নাশতায় ভুট্টা বা যবের তৈরি ওটমিল বা কর্নফ্লেক্স হতে পারে একটি আদর্শ খাবার। এতে করে দিনের শুরুতেই ১ থেকে ২ গ্রাম আঁশ খাওয়া হয়ে যাবে, যা অন্ত্রে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেবে।
২. বাদাম: প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম আপনার রক্তে ক্ষতিকর চর্বি বা কম ঘনত্বের লিপিডের (এলডিএল) মাত্রা ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া বাদাম খেলে পাবেন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা শক্তি জোগাবে সারা দিন।
৩. শিমের বিচি: শিমের বিচি, মটরশুঁটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। এমন খাদ্য সহজে পেট ভরার তৃপ্তি দেয়। ফলে কম খাওয়া হয়।
৪. তৈলাক্ত সামুদ্রিক মাছ: সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন অন্তত তৈলাক্ত মাছ খান। সামুদ্রিক মাছ হলে আরও ভালো। এতে আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা রক্তে ক্ষতিকর ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে।
৫. সবজি, ফলমূল: সবুজ পাতা ও ডাঁটাসুদ্ধ সবজি, যেমন বিভিন্ন ধরনের শাক এবং খোসাসহ ফলমূলে (যেমন: পেয়ারা, আপেল) রয়েছে অন্ত্রের চর্বি শোষণ কমানোর উপাদান। প্রতিদিন এ ধরনের খাবার আপনার রক্তে এলডিএলের মাত্রা ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে বলে গবেষণায় তথ্য মিলেছে।
সূত্র: হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল পাবলিকেশন

42
রমজান মাস শেষ হলেই উৎসবের ঈদ। নতুন পোশাক, মজার খাবারের জন্য সবার নানা রকম আয়োজন। এই আয়োজনের সঙ্গে ওষুধের আয়োজনটাও যুক্ত হওয়া জরুরি। কারণ, ঈদের সময় (বিশেষত ঈদের দিন) অনেক ওষুধের দোকান বন্ধ থাকে। জরুরি কোনো দরকার হলে তখন আর পাওয়া যাবে না। এক মাস রোজা রাখার পরে ঈদের নানা রকম খাবার, অনেকেরই বুকে জ্বালাপোড়া, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রকম জটিলতায় আক্রান্ত হন। অনেকে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খেয়ে অ্যাসিডিটি কিংবা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এমন ছোটখাটো সমস্যাগুলো যা নিজেই জরুরি কিছু ওষুধের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব, সেটা ওষুধের দোকান বন্ধের জন্য বা বাসায় না থাকার জন্য সম্ভব হয় না। তাই এখন থেকেই কিনে রাখতে পারেন। বুকের জ্বালাপোড়া, অ্যাসিডিটির জন্য বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ আছে। আপনার পছন্দমতো কিনে নিন। সেই সঙ্গে হঠাৎ পেট, হাত, পা, দাঁতে ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ কিনে রাখা জরুরি। যেকোনো কাটা, পুড়ে যাওয়া, পোকাকামড়ের জন্য দরকার অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম।
বাসায় রক্তে চিনির পরিমাণ মাপার যন্ত্র থাকলে সেই যন্ত্রের জন্য সুচ (নিডল) আছে কি না তা দেখে নিন। হাঁপানির রোগীদের জন্য ইনহেলার, নেবুলাইজার, নাকের ওষুধ এখন থেকেই গুছিয়ে রাখা দরকার।
অনেকের রাতে ঘুম আসে না। মাঝে মাঝে ঘুমের ওষুধ খেতে হয়। রক্তচাপ কমে ও বাড়ে। এ ধরনের সমস্যায় যাঁরা কষ্ট পান, তাঁরা ঘুমের ওষুধ কাছে রাখবেন। ওরস্যালাইন, হট ওয়াটার ব্যাগ (দেহের কোনো জায়গায় তাপ দেওয়ার জন্য দরকার হয়), অ্যান্টিসেপটিক পেপার, কটন বাড (কান পরিষ্কারের জন্য), কাশি ও জরের ওষুধ এখন থেকেই বাসায় রাখার চেষ্টা করুন।
অনেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খান। যেমন উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বাতের ওষুধ, হরমোনের সমস্যাসহ এমন কিছু অসুখ রয়েছে, যেখানে নিয়মিত চেকআপ ও ওষুধ খেতে হয়। ঈদের দুই-তিন দিন পরেও অনেক সময় দোকান বন্ধ থাকে। তাই বাসায় ওষুধের জোগাড় এখন থেকেই করুন। আপনি যে ওষুধ খান, সেটাই কিনবেন। যেমন অ্যাসিডিটির জন্য বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ আছে। তবে সব অ্যান্টাসিড-জাতীয় ওষুধ সবাই সবার সহনীয় নয়।
উৎসবের সময় ওষুধ বাসায় রাখার বিষয়ে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আ ফ ম হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘ঈদের দিনগুলোতে আমাদের দেশের মানুষের জন্য অ্যান্টাসিড-জাতীয় ওষুধ, খাবার স্যালাইন, হৃদরোগী যাঁরা জরুরি যে ওষুধ খান, তাঁরা কমপক্ষে ১০ দিনের জন্য ওষুধ কিনে নিন। জিহ্বার নিচে অনেক হৃদরোগীদের ওষুধ দিতে হয়। এ ধরনের রোগীদের আরও যেসব ওষুধ খেতে হয়, সেগুলোও কিনতে হবে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শের কাগজ দেখে। আর এই সময় অনেকেই ডায়রিয়া ও সেই সঙ্গে জ্বরে আক্রান্ত হন। এ জন্য চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বাসায় রাখা উচিত।
এ সময় আরও জরুরি জিনিস হলো প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফার্স্ট এইড বক্স। ছোটখাটো সমস্যাগুলো যেন তীব্র না হয়, তাই এই বক্সটি বিপদের বন্ধু। ওষুধপত্রের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স ও বিভিন্ন হাসপাতালের ঠিকানা রাখতে হবে হাতের কাছেই।

43
Faculty Forum / হঠাৎ যদি পা ফুলে যায়
« on: November 24, 2015, 12:24:23 AM »
হৃদ্রোগ এবং যকৃৎ কিংবা কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির দুই পায়ে অনেক সময় পানি আসে। পা ফোলে। কিন্তু যদি কারও এক পা হঠাৎ ফুলে যায়, সেটা নিশ্চয়ই চিন্তার বিষয়। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ কোনো সদস্য, রোগাক্রান্ত বা শয্যাশায়ী ব্যক্তি, অথবা কেউ বড় কোনো দুর্ঘটনা বা অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘদিন শুয়ে থাকলে তাঁর পায়ের শিরার মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় রোগটির নাম ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (ডিভিটি)। গুরুতর এই সমস্যায় পায়ের শিরায় জমাট বাঁধা রক্ত শরীরের অন্য কোনো বড় রক্তনালিতে আটকে গিয়ে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের রোজকার চলাফেরায় পায়ের মাংসপেশির সংকোচনের ফলে পা থেকে শিরার মাধ্যমে রক্ত হৃৎপিণ্ডের দিকে প্রতিনিয়ত বাহিত হয়। দীর্ঘদিন, এমনকি দীর্ঘ সময় (যেমন একটানা দীর্ঘ বিমানযাত্রা) নড়াচড়া না করার ফলে শিরার মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়ে এ বিপত্তি ঘটে। তাই বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তির পরিচর্যায় কয়েকটি বিষয় মনে রাখা অতি জরুরি:
* যাঁরা দীর্ঘদিন শুয়ে আছেন, পক্ষাঘাত বা পা ভাঙা রোগী, তাঁদের প্রতিদিন নিয়ম করে খানিকটা হাঁটাচলা করা উচিত। প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নিয়ে যথাসম্ভব উঠে বসা, একটু হাঁটা, বিছানা থেকে নেমে অন্য চেয়ারে বসা, বাথরুম বা খাওয়ার ঘরে অন্তত হেঁটে যাওয়া ইত্যাদি অভ্যাস চালিয়ে যেতে হবে।
* প্লাস্টার থাকা বা অন্য কারণে বিছানা থেকে না নামতে পারলে পায়ের মাংসপেশি ও আঙুল নাড়াচাড়ার ব্যায়াম করতে পারেন। পক্ষাঘাত বা প্যারালাইসিসের রোগীরা নিয়মিত ফিজিওিথেরাপি নেবেন।
* অস্ত্রোপচারের পর এখন দীর্ঘদিন শুয়ে থাকার নিয়ম নেই। চিকিৎসকের পরামর্শে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া উচিত।
* দীর্ঘ যাত্রায়, বিশেষ করে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিমানযাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করুন। মাঝে মাঝে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন, পা নাড়ান, পায়ের ব্যায়াম করুন এবং যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করুন

44
মানবদেহের ৭৫ শতাংশই পানি। পরিপাক, সংবহন, পুষ্টিকণা পরিবহন, খাদ্য শোষণ ও বিপাক, তাপমাত্রা ও ভারসাম্য রক্ষাসহ শরীরের প্রতিটি কাজে পানির প্রয়োজন হয়। অথচ এই পানিই কখনো কখনো নানা রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগ আসলে পানিবাহিত।
জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি নয়জনের একজন বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার পানির আওতায় নেই। প্রতি তিনজনে একজন সঠিক পয়োনিষ্কাশনের আওতার বাইরে। ফলে দেখা দিচ্ছে নানা রোগবালাই। কেবল বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন পানি ব্যবহারের মাধ্যমে দুনিয়াজুড়ে পানিবাহিত রোগ এবং এ কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি ২১ শতাংশ কমানো যেতে পারে।
পানি বিশুদ্ধ করার সঠিক পদ্ধতি কোনটি, এ নিয়ে অনেকেরই আছে বিভ্রান্তি। পানি ফুটিয়ে পান করা ভালো, নাকি ফিল্টার করে, নাকি দুটোই?
* পানি ফুটিয়ে নেওয়া সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি। এতে জীবাণু, পরজীবী এমনকি তার ডিম ও লার্ভাসহ সবই ধ্বংস হয়। পানি ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কমপক্ষে ১০ মিনিট ধরে ফোটাতে হবে। তারপর তা ঠান্ডা করে কলসি, কাচের জগ বা পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। রেখে দেওয়া ফোটানো পানিতে আবার জীবাণুর আক্রমণ হতে পারে—বিশেষ করে, যদি তা বেশি দিন রেখে দেওয়া হয়। তাই রোজকার পানি রোজই ফুটিয়ে নেওয়া ভালো।
* পানি ফোটালে জীবাণু ও পরজীবী ধ্বংস হয় বটে, তবে সব রাসায়নিক উপাদান নষ্ট হয় না। ফোটানো পানিতে কখনো কখনো ক্যালসিয়াম কার্বনেট জাতীয় তলানি পড়ে। এর সবগুলো যে খারাপ, তা নয়। তবে খনিজ উপাদানের কারণে পানি ঘোলাটে বা অপরিচ্ছন্ন দেখালে ছেঁকে নেওয়া যেতে পারে।
* ফোটানো পানি আবার ফিল্টার করা প্রয়োজন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আসে। পানি ফোটানোর মাধ্যমেই ক্ষতিকর জীবাণু দূর করা সম্ভব, তবে সন্দেহ হলে ফিল্টার করা যায়। বেশির ভাগ ফিল্টার আসলে পানির স্বাদ ও গন্ধকেই উন্নত করে।
* ভ্রমণে, বনজঙ্গলে, ক্যাম্পে বা দুর্গত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করা হয়। এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়, তবে জরুরি পরিস্থিতিতে কাজ চালানো যেতে পারে।
* বাইরে বা ভ্রমণের সময় কেনা পানির চেয়ে বাড়ি থেকে বোতলে পানি নেওয়ার চেষ্টা করুন। কাচ ও স্টিলের পাত্রে পানি সংরক্ষণ করাই সবচেয়ে ভালো।

45
Faculty Forum / সাইনাস নিয়ে যাতনা
« on: November 24, 2015, 12:21:17 AM »
যাঁদের সাইনোসাইটিস বা সাইনাসের প্রদাহ আছে, তাঁদের জন্য মৌসুম পরিবর্তনের সময়টা খারাপ। এটা তাঁদের আকস্মিক সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সময়।
আমাদের নাকের পেছনে ও মাথার খুলির ভেতর কিছু ফাঁকা জায়গা আছে যার নাম সাইনাস। সাইনোসাইটিসে এই ফাঁকা জায়গার ভেতর তরল জমে, প্রদাহ হয় ও কখনো সংক্রমণ ঘটে। শীতের শুরুতে ঠান্ডা হাওয়া ও ধুলাবালু নাক-মুখ দিয়ে প্রবেশ করে এই প্রদাহের সৃষ্টি করে। এর ফলে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হতে থাকে, নাক বন্ধ হয়ে যায়, কখনো সর্দি হয়। নাকের পেছন দিকে তরল গলায় প্রবাহিত হয় ও এর কারণে গলায় খুসখুস কাশি হতে পারে। জীবাণু সংক্রমণ হলে জ্বরও আসতে পারে।
সাইনাসের সমস্যা বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করতে এই সময়টা একটু সাবধানে থাকতে হবে। চট করে যেন ঠান্ডা লেগে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। ঠান্ডা পানি পান করা উচিত নয়। আর গোসলেও হালকা গরম পানি ব্যবহার করা উচিত। ভোরে বা সন্ধ্যার পর কুয়াশা ও শীতল বাতাসের হাত থেকে বাঁচতে একটু ভারী জামাকাপড় পরুন। ধুলাবালু, কার্পেটের ধুলা, পশুপাখির লোম আপনার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। নাক না ঢেকে ধুলা ঝাড়া ঠিক নয়।
তারপরও সমস্যায় পড়লে দরকার পুরোপুরি বিশ্রাম ও প্রচুর তরল খাবার। গরম স্যুপ, গরম আদা চা বা গ্রিন টি আরাম দেবে। বারবার পানি পান করুন। নয়তো পানিশূন্যতা হতে পারে। প্রচুর ভিটামিন সি আছে এমন খাবার খান। যেমন লেবু, মাল্টা, কমলা, জাম্বুরা ইত্যাদি। নাক বন্ধ হয়ে গেলে অস্বস্তি কমাতে নাকে স্যালাইন বা লবণ পানির ড্রপ ব্যবহার করা যায়। গরম পানির ভাঁপ নিলে বন্ধ নাক খুলে যাবে। রাতে একটু উঁচু বালিশ ব্যবহার করে ঘর গরম করে ঘুমালে অনেকটাই স্বস্তি মিলবে। শিশুদের নাক পরিষ্কার রাখুন, নয়তো শ্বাসকষ্ট হতে পারে। প্রয়োজনে অ্যান্টি-হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু দুই বছরের নিচের শিশুদের তা না দেওয়াই ভালো। জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যায়। কয়েক দিনের মধ্যে সেরে না গেলে বা জ্বর তীব্র হলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 7