টিউন্টারভিউ গেস্ট: অরিল্ড ক্লকারহগ, প্রতিষ্ঠাতা, সামহোয়্যার ইন লিমিটেড
টিউন্টারভিউ হোস্ট: আরিফ নিজামী
সময়: মঙ্গলবার, ৫ জুলাই ২০১১ । দুপুর ২ টা ।
ব্যাপ্তি: প্রায় ৪০ মিনিট
স্থান: “সামহোয়্যার ইন” অফিস, গুলশান – ১ , ঢাকা ।
বাংলাদেশে বাংলা ব্লগিং চালু করার মূল কারিগর সামহোয়্যার ইন লিমিটেড । এর প্রতিষ্ঠাতা নরওয়ের নাগরিক অরিল্ড ক্লকারহগ । যিনি বেশ কিছু বছর ধরে বাংলাদেশে আছেন, বাংলায় পুরোপুরি কথা বলতে পারেন । তার সহধর্মিনী সামহোয়্যার ইনের হেড অফ এলায়েন্স সৈয়দা গুলশানা ফেরদৌস জানা । ২০০৫ সালে সামহোয়্যার ইন লিমিটেডই নিয়ে আসে প্রথম বাংলা ব্লগিং প্লাটফরম “সামহোয়্যার ইন ব্লগ” ।
টেকটিউনস: “সামহোয়্যার ইন” শুরুটা কিভাবে হলো ?
অরিল্ড: আমি আছি এখানে ১৭ বছর । আমি আর জানা বিয়ে করি সাড়ে নয় বছর আগে । আমরা যখন এই কোম্পানি সেটআপ করেছি তখন চেষ্টা করেছি সোসিয়্যাল মিডিয়া নিয়ে কাজ করতে । আমরা দুইজনই GP তে কাজ করেছি, আমি আরেকটা MIS সফটওয়্যারটিম এর সাথেও কাজ করেছি ৩ বছর । টিম এপ্রোচ খুবই ইন্টারেস্টিং লেগেছে যদিও ওটা আমার সাবজেক্ট না । মনে হয়েছে এটা খুব ভালো লাইন হতে পারে এখানে বাংলাদেশে । কারণ ২০০৪ এ এখানে ছোট ছোট কোম্পানি কাজ করছিল । বেশিরভাগ আউটসোর্সিং করতে আর কিছু লোকাল মার্কেটে কাজ করেছে । CD বার্ণ করে সেল করেছে, পাইরেসী করেছে ইত্যাদি । ওই সময় অনলাইন কমিউনিটি অনেক বেড়ে গিয়েছিল ইউটিউব, হাই ফাইভ ইত্যাদি । আমরা দেখেছি যে বাংলাদেশের জন্য এটা অনেক ভালো হতে পারে ।
এখানে unbelievable মোবাইল রেভুলুশ্যন হয়ে গেছে । কেউ ভাবে নাই এরকম হবে কিন্তু হয়ে গেছে, এটা ভবিষ্যতে আরো বড় হবে । এটা new way of communication । এটা একটা চমৎকার সুযোগ । আমরা মনে করি মোবাইল হচ্ছে একজন থেকে আরেকজন আর সোসিয়্যাল মিডিয়া হচ্ছে অনেকজন থেকে অনেকজন । প্রথমে ইন্টারেষ্ট ছিল একটা ব্লগ কমিউনিটি একটা পাবলিশিং প্লাটফরম হবে যেখানে যে কেউ নিজের লেখা পাবলিশ করতে পারবে, নিজে আলোচনা করতে পারবে । তখন জানা বলল এখানে কিছু করতে হলে বাংলায় করতে হবে, বাংলা ভাষা থাকতেই হবে । কিন্তু তখনও ওয়েবে এটা সম্ভব ছিল না । আমরা দেখেছি যে, কিছু ডেস্কটপ সালুশন চলে এসেছে । সামহোয়্যার ইন শুরু করেছে আউটসোর্সিং দিয়ে কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য সোসিয়্যাল মিডিয়াই ছিল । ২০০৫ সালের ডিসেম্বারে আমরা ভেবেছি একটা ব্লগ কমিউনিটি তৈরীর চেষ্টা করব ১৬ ই ডিসেম্বারের মধ্যে । তখন হাসিন হায়দার আমাদের সাথে ছিল ও দায়িত্ব নিয়েছে কিভাবে ফনেটিক বা কোনভাবে বাংলা লেখা যায় । ও বলেছে পারব যেভাবেই হোক পারব । আমাদের ইমরান হাসান প্রথম খুব সিম্পল একটা প্লাটফরম তৈরী করে ।
ওই সময় ৫০-১০০ জন বাংলাদেশী ব্লগার ছিল । ওরাও ইংরেজীতে লিখছে । ৩-৪জন হতে পারে বাংলা লিখছে, ওরা ওয়ার্ডপ্রেস বা ব্লগার এডাপ্ট করতে পেরেছে । কিন্তু সাধারণ মানুষের কোন উপায় নেই । এরপর আমরা সামহোয়্যার ইন ব্লগ চালু করি । যারা ব্লগে ছিল তাদের ইনফর্ম করি, ২ মাসের মধ্যে আমরা ১০০০ সদস্য পাই ।
শুরুতে বলতে হবে যে ১৭ তারিখ অগাষ্ট ২০০৫ সালে যখন জেএমবি বিভিন্ন স্থানে বোমা ফাটায় তখন আমরা সবাই কনফিউজড, কেউ কোন খবর দিতে পারছিল না । তখন আমরা চিন্তা করেছি যদি একটা সিটিজেন মিডিয়া থাকত বা একটা ব্লগ কমিউনিটি থাকত তবে সবার জন্যই ভালো হত ।
টেকটিউনস: আপনার বাংলাদেশে আসাটা কিভাবে হলো ?
অরিল্ড: আমি বাংলাদেশে আসি ১৯৮৬ সালে । কিছু NGO এর মাধ্যমে, তাছাড়া এখানে কিছু ফ্রেন্ড ছিল, বাংলাদেশের প্রতি ইন্টারেস্ট ছিল । ৮৬ তে এসে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুড়েছি বেশ ভালো লেগেছে । আমি সেটেল হই ১৯৯৪ সালে ।
টেকটিউনস: “সামহোয়্যার ইন” ব্রান্ড নামটা কিভাবে মাথায় আসে ?
অরিল্ড: সবাই, সবকিছুই Belong করে Some where । ম্যাপে আমি পিন রাখতে পারি যে এটা আমার বাসা, এটা আমার অফিস । যেকোন অফিস হোক সার্ভিস হোক সবই একটা লোকেশন । আমরা দেখেছি যে অনেক সার্ভিস পুরো ওয়ার্ল্ড কভার করে কিন্তু লোকাল কমিউনিটি তেমন কিছু পাচ্ছে না । আমরা যেখানে প্রত্যহ জীবন নির্বাহ করি সেখানে তেমন অনলাইন সার্ভিস নাই । এই জন্য আমরা চেয়েছি “সামহোয়্যার ইন” একটা সার্ভিস হবে যেটা পাওয়ারড বাই লোকাল কমিউনিটি । যেমন সামহোয়্যার ইন বাংলাদেশ , সামহোয়্যার ইন আফ্রিকা বা সামহোয়্যার ইন নরওয়ে ।
টেকটিউনস: “সামহোয়্যার ইন” এর বর্তমান সাফল্য নিয়ে কি আপনারা সন্তুষ্ট ?
অরিল্ড: হ্যা এবং না । কোম্পানিটা হয়েছে ৬ বছর, ব্লগটা হয়েছে সাড়ে ৫ বছর । আমাদের সামহোয়্যার ইন ব্লগ এটা চমৎকার সফল । ব্লগারদের এনগেজমেন্টটা যে হয়েছে, এরপর আরো অনেক কমিউনিটি হয়েছে । ট্রেন্ডসেট করেছি । আমরা একটা নতুন অপর্চুনিটি এনেছি । একটু সেটিসফাই যে পপুলার হয়ে গেছি । আর ওয়েবে বাংলা ভাষার Pioneer হয়েছি । কিন্তু কোম্পানি হিসেবে ফাইনেন্সিয়ালি আমরা স্ট্রাগাল করেছি ।
কোম্পানি হিসেবে অনেক কিছু কঠিন ছিল । আমাদের এখানে খুব ভালো একটা সেটাপ, এখন ভালো অবস্থানে আছি । এটাও একটা রেসপন্সিবিলিটি । এখন ২০১১ এখানে এখনো অনলাইনে আয় করা যাবে না । অনলাইন কমিউনিটি থেকে বাংলাদেশে আয় করাটা মোটামুটি অসম্ভব । এখানে ইকমার্সের ঘাটতি, পেমেন্ট সাল্যুশনের ঘাটতি । আরো অনেক কোম্পানি বাংলাদেশে থাকতে পারত যদি এটা ফাইনেন্সিয়ালি ভায়েবল হতো । আমরা আউটসোর্সিং করে সাসটেইন করি । ২০০৮ পূর্যন্ত আমরা এটা ভালো পেরেছি । কিন্তু ২০০৮ সনে যখন গ্লোবাল রিসেশন হয়েছে তখন আমরা অনেক কাষ্টমার হারিয়েছি ।
টেকটিউনস: Red Herring Asia Tech Startup পুরস্কার কতোটা প্রভাব ফেলেছে সামহোয়্যার ইনে ?
অরিল্ড: গ্লোবালী আমরা রিকগনিশন পেয়েছি । এখানে আমরাই প্রথম এটা পেয়েছি । এই আওয়ার্ডটা খুবই সম্মানজনক । এখানে এটা এতোটা পরিচিত না । কিন্তু অনলাইন কমিউনিটিতে এটা অনেক সম্মানজনক । ব্যবসার ক্ষেত্রে এটা তেমন কোন প্রভাব ফেলেনি । আমাদের পার্টনারদের জন্য এটা একটা সাইন অফ কোয়ালিটি । কিন্তু সরাসরি কোন প্রভাব নেই । তবে আমরা খুবই খুশী এই সম্মান পেয়ে ।
টেকটিউনস: এই ৬ বছরে কখনও কি মনে হয়েছে বাংলাদেশে সেটেল হওয়াটা একটা ভূল স্বীদ্ধান্ত ছিল ?
অরিল্ড: আমি এখানে বাস করছি । আমার ফেমিলি এখানে আছে । জব না করে আমি ঠিক করেছি আমি ক্রিয়েট করব । আমি একজন ক্রিয়েটিভ মানুষ । আমি কিছু কনট্রিবিউট করতে চাই । সামহোয়্যার স্টার্ট করার পর আমাদের ভালো কিছু লোক জয়েন করেছে এটা একটা সেটিসফেকশন । আমি কখনই চিন্তা করিনি এটা একটা ভূল ডিসিশন । তবে অবশ্যই এটা একটা স্ট্রাগ্রাল ছিল এবং থাকবে । তবে এখান থেকে যাওয়ার কোন প্লান নেই ।
টেকটিউনস: বাংলাদেশের ব্লগার ও অন্যান্য দেশের ব্লগারদের মধ্যে পার্থক্য কোথায় ?
অরিল্ড: বিশাল পার্থক্য আছে । বাংলাদেশ পৃথিবীর এক নম্বর ব্লগ কমিউনিটির দেশ । অন্য দেশে আর এমন নেই যেখানে ব্লগ কমিউনিটি এতটা স্ট্রনগ । এখানে বেশীর ভাগ ব্লগার ওয়েব কমিউনিটিতে belong করে । অন্যান্য দেশের বেশীরভাগ ব্লগার পারসোনাল ব্লগ মেইনটেইন করে । এখানে আমরা ইউনিটি ফিল করি, যে আমরা সবাই ব্লগার, বাংলায় শেয়ার করি ।
আমরা দেশের জন্য কন্ট্রিবিউট করতে চাই । আমরা বিভিন্ন সাবজেক্ট নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি । এটা দেশের জন্য ইমপ্রুভমেন্ট । অন্য দেশের ব্লগারদের এভারেজ বয়স অনেক কম । এখানে ব্লগারদের এভারেজ বয়স বেশী । আমাদের এজ গ্রুপ হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৪ । অন্যান্য দেশে সেটা হচ্ছে ১৫ থেকে ২২ ।
টেকটিউনস: আমাদের ব্লগাররা কি আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠেছে ?
অরিল্ড: অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ব্লগাররা খুবই স্কিলড । আমাদের খুবই স্ট্রনগ ও ক্লিয়ার এনালাইটিক ইনফরমড । একদিকে এখানের ব্লগাররা খুবই মেচিউরড । যারা ব্লগ করে তারা ইন্টার নেটের আরলি এডাপ্টর । এখানে ২-৩% পপুলেশন একটিভ ইন্টারনেট ইউজার । যারা এখানে ইন্টারনেট ইউজ করে তারা ভালো অফিসে কাজ করে well educated যদি এগুলো ধরি তবে আমাদের ব্লগাররা খুবই ম্যাচিউরড । তবুও আমি একটু মিস করি হার্ড ডেপথ এনালাইসিস । অন্যান্য দেশে যেমন আছে । ভালো হতো যদি ব্লগার গ্রুপ থাকত যারা পলিটিকাল, ইকোনমিকাল এনালাইসিস লেখা হতো, ডিবেট হতো।
টেকটিউনস: সামহোয়্যার ব্লগের মডারেশন নিয়ে অনেক জনপ্রিয় ব্লগারই অসন্তুষ্ট । ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের মধ্যে বিভেদ করা হচ্ছে বলেও অনেকে অভিযোগ করেন । এ ব্যাপারে কি মন্তব্য কি ?
অরিল্ড: আমাদের মডারেশন অনেকে ক্রিটিসাইজ করে । এটা বিরাট একটা ব্লগিং প্লাটফরম । প্রতিদিন ৭০০-৮০০ পোষ্ট আসে, ৮-১০ হাজার কমেন্ট আসে । আমাদের মডারেশন এখনও in house । আমাদের কমিউনিটি মডারেশন নাই । আমরা ফাইনেনসিয়ালী অনেক স্ট্রাগাল করি । আমাদের মডারেশন ক্যাপাসিটি অনেক কম, অনেক পোষ্ট আমাদের চোখে পড়ে না বা ফলো করতে পারি না । অনেকে বাইরে থেকে দেখে ভাবে এই পোষ্ট থাকছে কিভাবে, এই পোষ্ট সরাচ্ছে না কেন । বা ওই পোষ্ট সরিয়েছে আর এই পোষ্ট সরাচ্ছে না । এটা হচ্ছে আমাদের লিমিটেড ক্যাপাসিটি বা উইকনেস । আমাদের যদি আরো রিসোর্স থাকত ব্লগ থেকে আরো আয় হতো তবে মডারেশন আরো স্ট্রনগ হতো ।
টেকটিউনস: ব্লগের কনটেন্টের ব্যাপারে কি কখনো সরকারের কোন হস্তক্ষেপ ছিল ?
অরিল্ড: না । কখনও না ।
টেকটিউনস: সামহোয়্যার ইন ব্লগ বা আওয়াজ কি এখন ফাইনেনসিয়ালি সফল ?
অরিল্ড: সামহোয়্যার ইন ব্লগ চালাতে স্যালারী, অফিস রেন্ট, ইন্টারনেট সব মিলিয়ে আমাদের মাসে ৩-৪ লক্ষ টাকা খরচ হয় । আর শুরু থেকে এই পূর্যন্ত মোট এক কোটি টাকার উপর হবে । কিন্তু লনজ রানে এটা সেল্ফ সাসটেইন হবে । এটা খুবই পপুলার একটা প্লাটফরম । যদি আমরা ভালো মার্কেটিং করত পারি তাহলে আরো ভাল হবে । তাছাড়া আওয়াজ এখনো ছোট । এটা মোবাইল দিয়ে আরো ফাস্ট স্প্রেড হতে পারে, তখন রেভিনিয়ু আসবে । এখনো আওয়াজ থেকে কোন রেভিনিয়ু পাই না ।
টেকটিউনস: সামহোয়্যার ইন” এর সোশিয়াল প্লাটফরম “আওয়াজ” এর বতর্মান ব্যবহারকারী সংখ্যা সম্বন্ধে যদি একটু ধারণা দিতেন ?
অরিল্ড: আওয়াজে প্রায় ৩০ হাজার রেজিস্টার্ড ইউজার আছে । দৈনিক একটিভ ইউজার ১ হাজারের কাছাকাছি হতে পারে । দৈনিক আমরা ১৫০০-১৬০০ সাউট (shout) পাই, ৬-৭ হাজার কমেন্ট পাই ।
টেকটিউনস: আওয়াজের এপিআই বা এতে অটো পাবলিশ করার কোন প্লাগইন তৈরীর চিন্তা ভাবনা আছে কি ?
অরিল্ড: আমরা এগুলো নিয়ে অনেক চিন্তা করছি । এটা নিয়ে আমাদের অনেক প্লান আছে । আমাদের রিসোর্স লিমিটেড । ফাইনেন্সিয়ালি যদি আমরা স্ট্রনগ হতাম তবে বড় একটা টিম এর পিছনে লাগিয়ে দিতাম সামহোয়্যার ইন ব্লগে এবং আওয়াজে । এখনো একটা ছোট টিম এটা নিয়ে কাজ করে । ডেভপলপমেন্ট আরো হবে, API ও হবে । আওয়াজ একটা আড্ডা সিস্টেম প্লাটফরম । আরেকটু ডেভলপমেন্টের পর এটা এক্সপোর্ট করা যাবে । বিভিন্ন সাইটে লাগানোর জন্য ছোট Shout বক্স থাকতে পারে বা অন্য কোন কিছু ।
টেকটিউনস: “সামহোয়্যার ইন” এর সাবেক ডেভলপার হাসিন ভাই, ইমরান ভাইরা এখন নিজেরাই উদ্দোগতা এই সম্পর্কে আপনার মতামত কি ?
অরিল্ড: খুবই ভালো । আমরা খুবই লাকি । আমি খুবই প্রিভিলেজ ফিল করি যে “সামহোয়্যার ইন” একটা কোম্পানি যেটা বাংলাদেশের খুবই ভালো টেলেন্ট একট্রাকট করতে পেরেছি । তবে সবাইকে ধরে রাখতে পারি নাই । এক দিকে আমরা এক্সপেক্টও করি না যে সবাই আমাদের সাথে পাচঁ ছয় বছর থাকবে । তারপরও যাদের খুবই ভালো Entrepreneur স্পিরিট যেমন হাসিন, ইমরান, তারা আমাদের সাথে ছিল । এটা খুব ভালো একটা পার্টনারশীপ ছিল । এখনও খুব ভালো একটা টিম আমাদের সাথে আছে । আমরা খুবই খুশি যে “সামহোয়্যার ইন”তে তাদের Entrepreneur ডেভলপমেন্ট হয়েছে, পারসোনাল ডেভলপমেন্ট হয়েছে । এখানে প্রথম দিন থেকেই কিভাবে আমরা entrepreneur হই, কিভাবে বিজনেস অপর্টুনিটি দেখতে হয় । কেউ যদি এটা নিজের কাজে লাগায়, আমরা যদি কারো ইনসপেরেশন হতে পারি তবে আমি খুব খুশি । আমি তাদের success দেখতে চাই ।
টেকটিউনস: “সামহোয়্যার ইন” দিয়েই বাংলা ব্লগিংয়ের যাত্রা শুরু, এর সাবেক ব্লগাররাই নতুন অনেক প্লাটফরম দাড় করিয়েছেন এখন সামহোয়্যারের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন, এটাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন ?
অরিল্ড: এটা একটা কমপ্লিমেন্ট । যে আমরা তাদেরকে এনেবল করেছি ব্লগিং শুরু করতে । এখানে তাদের ব্লগিং নিয়ে ধারণা হয়েছে । তারা ভেবেছে আমরা ভিন্ন করতে চাই । যদি এখানে শুধু “সামহোয়্যার ইন” থাকত তাহলে অনেক বোরিং লাগত । এখন ব্লগাররা সিলেক্ট করতে পারবে কোথায় ব্লগ করবে । আগে আমরা একা ছিলাম, এখন ২৫-৩০টা ব্লগ বা ফোরাম প্লাটফরম । ব্লগাররা টেকটিউনস, “সামহোয়্যার ইন” বা প্রথম আলো ব্লগ যেখানে ভালো লাগবে সেখানে থাকবে ।
টেকটিউনস: আপনি সামহোয়্যার ইন ব্লগ রেগুলারলী ফলো করেন ? ব্লগারদের মধ্যে কোন পারসোনাল ফেভরেট ?
অরিল্ড: আমি চেক করি প্রতিদিন । কিন্তু আমি একটা কোম্পানি রান করি, এখানে অনেক ডেভপলপমেন্ট চলছে, আওয়াজের অনেক ডেভলপমেন্ট হচ্ছে । তাই তেমন পড়ার সময় পাই না, আমি শুধু একটু আপডেট নিতে চাই । ফেভরেটকে বলতে চাই না তবে এখানকার ব্লগারদের প্রতি আমি খুবই ইমপ্রেসড যে ব্লগ কমিউনিটির মধ্যে কত টেলেন্টেড, কত স্কিল, কত স্ট্রেনথ আমি খুবই ইমপ্রেসড ।
টেকটিউনস: “সামহোয়্যার ইন” এর ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি ? ভবিষ্যতে আরো কি কি প্রডাক্ট আসতে পারে ?
অরিল্ড: ফিউচার প্ল্যান নিয়ে তেমন কিছু বলতে চাই না । তবে “সামহোয়্যার ইন” এর প্রথম থেকে কিছু আইডিয়া ছিল, ওগুলো এখনো আছে । হয়ত আমাদের রিসোর্স বা টাইম নাই । আমাদের দুটি মূল প্রডাক্ট “সামহোয়্যার ইন” ব্লগ ও আওয়াজ এই দুটো আরো ভালো করতে চাই ।
টেকটিউনস: সামহোয়্যার ইন এর আউটসোসিং নিয়ে কিছু বলেন ।
অরিল্ড: “সামহোয়্যার ইন”-এ দুটি টিম । একটা ডেটা মাইনিং টিম ও একটা প্রোগ্রামিং টিম । ডেটা মাইনিং টিমটা খুব ভালো করছিল । কিন্তু রিসেশনের সময় অনেক ক্লায়েন্ট ছুটে গেছে । এখনও দুটো টিম আছে । আমরা এটা আরো গ্রো করতে চাই ।
টেকটিউনস: দেশের আইটি সেক্টরের বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করুন ।
অরিল্ড: বাংলাদেশে মনে হচ্ছে এগুলো একটা ফ্যাশন ওয়ার্ড । যেকোন সরকারের কাছে IT একটা ফ্যাশন ওয়ার্ড। যে আমরা আইটি সাপোর্ট করব, প্রোগ্রামিং ডেভলপমেন্ট এক্সপোর্ট সাপোর্ট করব, ডিজিটাল বাংলাদেশ করব ইত্যাদি । তবে ভালো যে একটু ধারণা আছে । আমি মনে করি সরকার ও ইনভেস্টরদের কাছ আইটি সেক্টরটা নেগলেগটেড । আইটি সেক্টর ডেভলপ করার জন্য যা দরকার তা এখনো দেখতে পাচ্ছি না । বিজনেস লিডারসরাও এখন ট্রেডিশনাল ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে আছে, খুব কম ইনভেস্টমেন্ট বাইরে থেকে আসছে । আমরা এখন IT সেক্টরে যা দেখছি তারা ছোট উদ্দোগতা । আরো অনেক চমৎকার সব সুযোগ আছে এখানে ।
টেকটিউনস: বাংলাদেশে আইটি ব্যবসার মূল অসুবিধাগুলো কি কি ?
অরিল্ড: পাওয়ার (বিদ্যুৎ) , ইন্টারনেট , দেশের ব্রান্ডিং ইত্যাদি । যারা বাইরের ইনভেস্টর বা আউটসোর্সিং নিয়ে কাজ করে তারা চিন্তা করে আমরা কোন দেশে যাব ভারতে, চায়নায় না ভিয়েতনামে । এই লিস্টে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচে । এই ক্ষেত্রে আরো কাজ করতে হবে, পজিটিভ দিকগুলো আরো তুলে ধরতে হবে । তাছাড়া যারা চাকরি চায় তাদের টেলেন্ট আছে কিন্তু সেল্ফ গ্রোথটা শক্তিশালী না । রেলিভেন্ট এডুকেশন বা প্রাকটিস খুব কম । ভবিষ্যতে টেলেন্টের অভাব হতে পারে । এখন ঢাকায় কোম্পানি যদি ন্যাশনালী রেসপেক্টেড হতে চায়, প্রতিষ্ঠিত হতে চায় তবে অনেক খরচ করতে হবে। ভালো ইন্টারনেট লাইন লাগবে, ভালো অফিস লাগবে ।
টেকটিউনস: আপনার ক্যারিয়ার গোল কি ? শেষ জীবনে নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান ?
অরিল্ড: আশা করি “সামহোয়্যার ইন”-এ যাতে সারা জীবনই কাজ করতে পারি । আমরা যাতে সোসিয়্যাল মিডিয়া লোকাল কমিউনিটি হিসেবে সারা বাংলাদেশে গ্রো করতে পারি । তারপর হতে পারে অন্য কোন দেশে । তাহলে আমরা খুবই খুশি হতাম যে এটা আমাদের কনট্রিবিউশন ।
টেকটিউনস: পুরো পুরো কি বাংলাদেশেই থেকে যাবেন, না কখনো স্থায়ীভাবে নরওয়ে চলে যাবার পরিকল্পনা আছে ?
অরিল্ড: বাংলাদেশ আমার বাড়ি । এখানে আমার ফ্যামিলি আছে । অব্যশই নরওয়েও আমার দেশ । ওখানে বাবা মা আছে । আমরা এভাবে সেটআপ করেছি যে এখানে থাকি, কিন্তু নরওয়ের সাথেও যোগাযোগ আছে । বছরে ২-৩ বার যাই নরওয়েতে ।
টেকটিউনস: টেকটিউনস কি আপনি ভিজিট করেন?
অরিল্ড: টেকটিউনস আমি ভিজিট করি কিন্তু ওখানেও তেমন পড়তে পারি না । বাংলা পড়তে আমার এখনো কষ্ট হয়, সময় লাগে । মাঝে মাঝে ওখানের লিংক পাই, পোষ্ট পাই, ইন্টারেস্টিং লাগে । আমি চেষ্টা করি, কমেন্ট বা আলোচনাগুলোও পড়ি । ওখানে আমার একাউন্ট নেই তবে আমি খুবই ইমপ্রেসড । সামহোয়্যার নিয়ে অনেক কন্ট্রোভার্সি আছে তবু ওটা সবচেয়ে বড় প্লাটফরম কিন্তু টেকটিউনস নিয়ে কোন কন্ট্রোভার্সি নেই ।
টেকটিউনস: টেকটিউনস নিয়ে আপনার কোন পরামর্শ ।
অরিল্ড: ব্লগাররা টেকটিউনস ভিজিট করে, টেকনোলজি সম্বন্ধে জানতে চায় । অনেক হেল্প পায়, টেকটিউনস থেকে উত্তর পায় । তবে আমি মনে করি আপনারা এত বড় যে দেশের টেকনলজী নিয়ে আরো সাবজেক্ট কভার করতে পারবেন । আরো বেশী কোম্পানি যারা টেক সেক্টরে আছে বা ইউনিভার্সটিগুলো আছে তাদের সাথে ক্লোজ হন তাহলে সবার ইন্টারেস্ট আরো বাড়বে ।
টেকটিউনস: জনাব অরিল্ড ক্লকারহগ, টেকটিউনসকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
অরিল্ড: টেকটিউনসকেও অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
[ঈষৎ সংক্ষেপিত ও সম্পাদিত]
https://www.techtunes.com.bd/featured/tune-id/78991