Daffodil International University

Faculty of Engineering => EEE => Topic started by: abdussatter on April 01, 2015, 10:56:02 AM

Title: The Ant
Post by: abdussatter on April 01, 2015, 10:56:02 AM
পিঁপড়াগুলো দেয়াল থেকে খসে খসে পড়ে। তার পরও বেয়ে ওঠে। কিন্তু আট সেকেন্ডের মধ্যেই আবার পড়ে যায়। কারণ, জায়গাটা মহাশূন্য। তাই সেখানে মাধ্যাকর্ষণ নেই। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পরীক্ষামূলকভাবে নেওয়া হয়েছিল ছোট প্রাণীগুলোকে। পরিবেশটা অপরিচিত হলেও সেগুলো এখনো দলবদ্ধভাবে কাজকর্ম করতে পারে।
জীববিজ্ঞানীরা বলছেন, আইএসএসের ওই পরিবেশে পিঁপড়ার ‘সংঘবদ্ধ অনুসন্ধান’ ব্যাহত হলেও একেবারে থেমে যায়নি। তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে প্রাণীটির সহযোগিতামূলক আচরণের কৌশল নির্ণয় এবং অনুসরণ করে একই ধরনের সামর্থ্যের রোবট তৈরির
চেষ্টা করছেন।
রসদ পরিবাহী একটি রকেটে করে গত বছরের জানুয়ারিতে ওই পিঁপড়াগুলোকে মহাশূন্যে পাঠানো হয়। সেখানে প্রাণীগুলোর ওপর পরিচালিত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল ফ্রন্টিয়ার্স ইন ইকোলজি অ্যান্ড ইভল্যুশন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা এখন একটি নাগরিক বিজ্ঞান প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছেন, যার আওতায় স্কুলগামী শিশুরাও নিজেদের ক্লাসরুমে বিচরণকারী পিঁপড়াদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজে সহায়তা করতে পারবে। আর মহাশূন্যে পিঁপড়াদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য নভোচারীরা তো রয়েছেনই।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী ডেবোরাহ গর্ডন বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে বলেন, পৃথিবীর নানা ধরনের পরিবেশে টিকে থাকার মাধ্যমে পিঁপড়ারা নিজেদের তৎপরতার প্রমাণ দিয়েছে। কিন্তু আইএসএসের অত্যন্ত হালকা মাধ্যাকর্ষণে প্রাণীটির তৎপরতা সম্পর্কে কিছুটা নতুন ধারণা মিলেছে। সেখানে পিঁপড়ারা কী রকম আচরণ করবে, সে সম্পর্কে গবেষকদের কোনো ধারণাই
ছিল না।
বারবার পড়ে যাওয়ার ফলে পিঁপড়াগুলো আইএসএসের ভেতরের পরিবেশে সহজে পারস্পরিক যোগাযোগ রাখতে পারছিল না। তবে সেখানকার কঠিন পৃষ্ঠতলে তারা ‘উল্লেখযোগ্য সামর্থ্যের’ প্রমাণ দিয়েছে। প্রায় ১০ শতাংশ পিঁপড়া যেকোনো সময় শূন্যে ভাসছিল। কখনো কখনো তারা অন্য পিঁপড়ার গায়ের ওপর গিয়ে পড়ছিল। আবার কখনো তারা নিচে কোনো কিছু আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করছিল। গবেষকেরা মনে করেন, প্রাণীটির এ ধরনের কৌশল বেশ আকর্ষণীয়।
প্রায় ৮০টি পিঁপড়ার জন্য গবেষকেরা আটটি পথ তৈরি করে দেন। সেগুলো ছিল স্বচ্ছ প্লাস্টিকের তৈরি। প্রতিটির ভেতরে আবার প্রাণীটির ‘বাসা’ বা থাকার জায়গাও ছিল। পরীক্ষার শুরুতে সব বাধা সরিয়ে পিঁপড়াগুলোকে নতুন এলাকা অনুসন্ধানের সুযোগ করে দেওয়া হয়। কয়েক মিনিট পর দ্বিতীয় প্রতিবন্ধকতাটিও তুলে নেওয়া হয় এবং প্রাণীটির জন্য আরও বড় বিচরণক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবে প্রায় পাঁচ মিনিটে প্রতিটি পিঁপড়া ওই ক্ষেত্রের প্রায় প্রতিটি কোনা অন্তত দুবার ঘুরে আসে। একই প্রক্রিয়ায় পৃথিবীতে বসবাসরত একদল পিঁপড়ার ওপরও পরীক্ষা চালানো হয়। তুলনামূলক ওই দুটি পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে গবেষকেরা বলেন, মহাশূন্যের পিঁপড়াগুলো অনুসন্ধানী তৎপরতায় অচেনা বাধা সত্ত্বেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। তবে পৃথিবীর স্বাভাবিক মাধ্যাকর্ষণে তাদের সামর্থ্য নিঃসন্দেহে অনেক গুণ বেশি। মহাশূন্যে প্লাস্টিকের পৃষ্ঠতলে নিজেদের পা আটকে রাখতে হিমশিম খেতে হয়েছে প্রাণীটিকে। তার পরও তারা সেই প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেশ ভালো সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছে।
মহাশূন্যের পরিবেশটা ওই পিঁপড়াগুলোর জন্য ছিল একেবারেই নতুন। তাই সেখানে প্রথম পা ফেলেই তারা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। পৃথিবীর প্রতিটি স্থানে অন্তত একটি হলেও পিঁপড়া রয়েছে, যাদের মোট প্রজাতি সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তারা ভিন্ন ভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে চলাফেরা করে। যেমন মহাশূন্যে নিয়ে যাওয়া ইউরোপীয় পিঁপড়াগুলো নতুন জায়গায় গিয়ে সোজা কোনাগুলোর দিকে ছুটে যায়। আর আর্জেন্টিনা থেকে নিয়ে যাওয়া একটি প্রজাতির পিঁপড়ারা নতুন জায়গাটির মাঝ বরাবর ধীরে ধীরে চলে এবং প্রতিটি ইঞ্চি স্পর্শ করে যায়। গর্ডন বলেন, সব পিঁপড়াই সংঘবদ্ধ অনুসন্ধানী তৎপরতা দেখায়। ব্যাপারটা এখনো রহস্যময়। হয়তো এ ব্যাপারে তাদের কোনো সমন্বিত কৌশল রয়েছে, যা এখনো অনাবিষ্কৃত।
সূত্র: বিবিসি