চা বাগান বেড়ানোর আসল সময় বর্ষাকাল। আর এ বছরের ঈদের ছুটিটা পড়েছে বর্ষাতেই। ছুটির এ সময়ে তাই চা বাগান ঘুরেই কাটাতে পারেন।আর এ ভ্রমণে যদি চা বাগানের ভেতরে কিংবা আশপাশের কোনো টিনের চালের বাংলোতে থাকতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই।
টিনের চালে রাতের ঝুম বৃষ্টিও উপভোগ করতে পারবেন প্রাণ ভরে। এবারের ঈদের ভ্রমণ সূচি তাই ঠিক করে নিতে পারেন মৌলভী বাজারের চা বাগানগুলোতে।
চা বাগান ভ্রমণে গিয়ে সবার আগে দেখা উচিত চা-কন্যাকে।
ঢাকা-শ্রীমঙ্গল মহাসড়কের হবিগঞ্জ জেলার শেষ প্রান্তে এবং মৌলভীবাজার জেলার প্রবেশ মুখে ‘চা কন্যা’ ভাস্কর্য। ঢাকা থেকে যেতে রশিদপুর চা বাগান ছাড়িয়ে একটু সামনেই সড়কের বাঁকে সাদা ধবধবে চা কন্যা ঠায় দাঁড়িয়ে।
সাদা ধবধবে এক নারী, পিঠে ঝোলানো ঝুড়ি, কোমল হাতে তুলে চলছেন চা পাতা।
সাতগাঁও চা বাগানের সহায়তায় দৃষ্টিনন্দন এ ভাস্কর্য তৈরি করেছে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন। প্রায় চব্বিশ ফুট উঁচু ভাষ্কর্যটি চায়ের রাজধানীতে সব পর্যটককে যেন স্বাগত জানাতেই দাঁড়িয়ে আছে।
সুন্দর এটি নির্মাণ করেন শিল্পী সঞ্জিত রায়। ‘চা কন্যা’ ভাস্কর্যের পাশেই সুন্দর চা বাগান ‘সাতগাঁও’। পাহাড়ের গায়ে গায়ে এ চা বাগানের সৌন্দর্যও অবর্ণনীয়।
সাতগাঁও চা বাগান থেকে শ্রীমঙ্গল খুব একটা বেশি দূরে নয়। শ্রীমঙ্গলকে চায়ের রাজ্য বললে ভুল হবে না। শহরের কোলাহল ছেড়ে একটু বাইরে গেলেই একেবারেই নির্জন সব চা বাগান এখানে।
শ্রীমঙ্গলের মৌলভীবাজার সড়ক ছেড়ে শহর। এরপরেই ভানুগাছ সড়ক। এপথে শুধুই চা বাগানের রাজত্ব। আরেকটু সামনে গেলেই হাতের বাঁয়ে চা বাগানের ভেতর থেকে একটি পাকা সড়ক সোজা দক্ষিণে চা গবেষণা কেন্দ্রের দিকে চলে গেছে।
এ সড়কের আরেকটু ভেতরে গেলে শুধুই চা বাগান। ভানুগাছ সড়কে টি রিসোর্ট ফেলে সামনে গ্রান্ড সুলতান রিসোর্ট লাগোয়া সড়কের হাতের ডানে সড়কটি চলে গেছে নূরজাহান টি এস্টেটের দিকে।
এ পথে আরও বেশ কিছু সুন্দর চা বাগানও আছে।
শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়ক ধরে কমলগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। সেখান থেকে আরও কয়েক কিলোমিটার গেলে মাধবপুর। এখানে বিশাল এক হ্রদ ঘিরে আছে বেশ কিছু চা বাগান।
সরকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি কোম্পানির বাগান এগুলো। মাধবপুর লেকের আশপাশের এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ বাগানের সৌন্দর্য একেবারেই আলাদা।
মাধবপুর লেক থেকে বেড়িয়ে হাতের বাঁয়ে পিচঢালা পথ চলে গেছে ধলই সীমান্তে। এ পথেও আছে শুধুই চা বাগান। প্রায় দুই কিলোমিটার চলার পর শুরুতেই দেখে নিন ‘শ্রীগোবিন্দপুর’ চা বাগান।
এ বাগান ছেড়ে আরও দক্ষিণে গেলে বাংলাদেশ সীমানার আগে ছোট সড়কের দুই পাশে শুধুই চা বাগান। এ বাগান থেকে একেবারে সীমান্তে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ।
তবে বিজিবি ক্যাম্পের আগে ইট বাঁধানো একটি পথ চলে গেছে হাতের পশ্চিমে। নির্জন এ পথের শুরুতেই ধলই চা বাগান। এখানে উঁচু উঁচু পাহাড়ের গায়ে গায়ে কেবল চা বাগানেরই সৌন্দর্য। এ পথে চা বাগান দেখতে দেখতে চলে আসা যায় শ্রীমঙ্গল শহরে।
কীভাবে যাবেনঢাকা থেকে রেল কিংবা সড়ক পথে সরাসরি শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়।
ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাস যায় শ্রীমঙ্গল। ভাড়া সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সপ্তাহের মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস, প্রতিদিন দুপুর ১২টায় জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টায় কালনী এক্সপ্রেস, বুধবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল অথবা কুলাউড়া নামা যায়।
ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের ভাড়া শোভন ২শ’ টাকা। শোভন চেয়ার ২৪০ টাকা, প্রথম চেয়ার ৩২০ টাকা, প্রথম শ্রেণি বার্থ ৪৮০ টাকা, স্নিগ্ধা ৪৬০ টাকা, এসি সিট ৫৫২ টাকা, এসি বার্থ ৮২৮ টাকা।
এছাড়া চট্টগ্রাম থেকেও সরাসরি ট্রেনে যাওয়া যায় মৌলভী বাজারের শ্রীমঙ্গল কিংবা কুলাউড়া।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন স্টেশন দুটিতে নামা যায়।
শ্রীমঙ্গল থেকে থেকে শনিবার ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ১২টা ৫৮ মিনিটে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং রোববার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১১টা ২৪ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস, সৌদিয়া পরিবহনের নন এসি বাস শ্রীমঙ্গল হয়ে মৌলভী বাজার। ভাড়া নন এসি বাসে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৩৮০ টাকা।
কোথায় থাকবেনশ্রীমঙ্গল শহরে পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল রিসোর্ট আছে। শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘেঁষে আছে আছে পাঁচ তারকা মানের গ্রান্ড সুলতান গলফ রিসোর্ট (০২-৯৮৫৮৮২৭)।
তবে মধ্যম বাজেটে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা ভানুগাছ সড়কে টি রিসোর্ট (০৮৬২৬-৭১২০৭, ০১৭১২৯১৬০০১)।
এছাড়া শ্রীমঙ্গলের অন্যান্য রিসোর্ট হল- হবিগঞ্জ সড়কে রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট (০২-৯৫৫৩৫৭০, ০১৯৩৮৩০৫৭০৭) ও টি টাউন রেস্ট হাউস (০৮৬২৬-৭১০৬৫)। রাধানগরে চমৎকার দুটি রিসোর্ট হল- নিসর্গ নিরব ইকো রিসোর্ট (০১৭১৫০৪১২০৭) এবং নিসর্গ লিচিবাড়ি ইকো রির্সোট (০১৭১৬৯৩৯৫৪০)।
এছাড়া রাধানগরের আরও দুটি অসাধারণ রিসোর্ট শান্তি বাড়ি রিসোর্ট (০১৭১৬১৮৯২৮৮), হারমিটেজ কটেজ (০১৯৩২৮৩১৬৫৩)। লাউয়াছড়া জঙ্গল সংলগ্ন লেমন গার্ডেন রিসোর্ট (০১৭৬৩৪৪৪০০০, ০১৭৫৮৭৭১৪৯২)।
এসব হোটেল রিসোর্টে ১ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায় কক্ষ আছে।
Source:
http://bangla.bdnews24.com/lifestyle/article1165870.bdnews