626
« on: December 05, 2015, 01:42:03 PM »
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশ দাম কমাবে না। বরং বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করলে বাংলাদেশেও দাম বাড়ানো হবে।
তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) কথা দিয়েছেন, দাম বাড়ালেও তা বিশ্ববাজারের দরের সঙ্গে ১০ টাকার বেশি পার্থক্য হবে না। উল্লেখ্য, বিশ্ববাজারে তেলের দাম এখনো ব্যারেলপ্রতি ৪০ ডলারের কাছাকাছি।
অর্থমন্ত্রী আরও কথা দিয়েছেন, আগামী জুন মাসে নতুন মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আইন চালু হবে। এ জন্য গঠিত কমিটির দুটি সুপারিশ মেনে বাকিগুলো বাতিল করা হবে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগ সুপারিশই মানা হবে না।
আইএমএফের কাছ থেকে এখন বাংলাদেশ বর্ধিত ঋণ সুবিধার (ইসিএফ) আওতায় ঋণ নিচ্ছে। এই ঋণ নিতে হলে কিছু ব্যবস্থা নিতে হয় বাংলাদেশকে, যাকে আবার শর্ত বলতে নারাজ সরকার ও আইএমএফ। নিয়ম হচ্ছে আইএমএফ ঋণ দেবে কিস্তিতে এবং এর আগে তারা বাংলাদেশ অর্থনীতির একটি মূল্যায়ন করবে। অর্থাৎ দেখা হবে শর্ত পূরণ হয়েছে কি না। আর সরকারকেও এ সময় জানাতে হয় কী করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে কী করা হবে। আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল মাত্রই ইএসএফের পঞ্চম ও ষষ্ঠ মূল্যায়ন শেষ করেছে। এর আগে গত ৫ অক্টোবর অর্থমন্ত্রী প্রথা অনুযায়ী আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন ল্যাগার্ডকে একটি চিঠি দেন। চিঠির সঙ্গে দেওয়া হয় অর্থনীতি নিয়ে একটি স্মারক প্রতিবেদন। সেই প্রতিবেদনে সরকার কী করবে এবং কী করেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
আইএমএফ মনে করে, বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি। স্মারক প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী তা স্বীকার করে বলেছেন, গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির বড় কারণ হচ্ছে দুর্বল বিনিয়োগ পরিস্থিতি এবং অর্থনীতির শ্লথ কার্যক্রম। তবে চলতি ব্যয়ে নিয়ন্ত্রণ ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন কম হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।
রাজস্ব কার্যক্রম নিয়ে আইএমএফের প্রধান শর্ত হচ্ছে, ভ্যাট আইন কার্যকর করতে হবে। অর্থমন্ত্রী আইএমএফের প্রধানকে জানান, ২০১৬ এর জুলাই থেকে তা কার্যকর হবে। স্মারক প্রতিবেদনে এ নিয়ে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে প্রস্তাবিত আইনটি জাতীয় সংসদে উত্থাপনের আগে অংশীদারদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তারপরেও আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে ব্যবসায়ীদের একটি অংশের তীব্র আপত্তি উঠলে তাঁদের নিয়ে একটি যৌথ কমিটি করে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের সুপারিশ ছিল ভ্যাট কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কমানো। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দুটি সুপারিশ মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেমন বার্ষিক টার্নওভার ৩০ লাখ হলে তবেই কর দিতে হবে। আগে এটি ছিল ২৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া সামাজিকভাবে স্পর্শকাতর কিছু পণ্যকে ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখা হবে। অর্থমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, একটি প্রত্যক্ষ কর সনদ বা ট্যাক্স কোড তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে করের ভিত্তি সম্প্রসারিত হবে এবং বিভিন্ন ধরনের করছাড় বাতিল করা হবে।
সরকারের ভর্তুকি নীতি ও জ্বালানি তেল নিয়ে স্মারকে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশ কমায়নি। এতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। এর ফলে বিপিসি প্রথমবারের মতো দেনাও কমাতে পারছে। আর সাশ্রয় করা অর্থ গরিবদের লক্ষ্য করে সামাজিকভাবে ব্যয় করা হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সংস্কার প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে মূলত বিপিসির কথাই বলা হয়েছে। এর আগে বিপিসিতে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষক নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছিল আইএমএফের সঙ্গে। এ কারণে ঋণের কিস্তি বাতিলেরও আশঙ্কা দেখা দেয়। তবে বাংলাদেশ অবস্থান থেকে সরে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিপিসিতে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কাজ করবে। তবে এ জন্য আইন বদলানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা–প্রক্রিয়া দুর্বল এবং ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনার পরিদর্শন কার্যক্রমও অপর্যাপ্ত। এরপরেই রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে টাকা-ডলার বিনিময় হার নিয়ে বলা হয়েছে, বাজার যদি টাকার অবমূল্যায়ন চায়, তাহলে তা করতে দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, প্রায় এক বছর ধরে টাকাকে শক্তিশালী করে রাখা হয়েছিল। তবে রপ্তানিকারকেরা টাকার অবমূল্যায়ন চাইলেও তা করা হয়নি। কিন্তু আইএমএফকে কথা দেওয়ার পর গত অক্টোবরের শেষ দিকে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটতে থাকে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।