Daffodil International University

Science & Information Technology => Artificial Intelligence (AI) => Topic started by: Shahana Parvin on February 07, 2022, 12:41:59 PM

Title: রোবট ব্যবহারে কৌশলী হতে হবে
Post by: Shahana Parvin on February 07, 2022, 12:41:59 PM
প্রযুক্তিকীকরণ আমাদের করতেই হবে, কিন্তু তা করতে হবে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে, যাতে প্রকৃতি আর প্রযুক্তির মধ্যে ভারসাম্য থাকে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মানুষের সঙ্গে রোবটের সম্পর্ক আরও বাড়বে। তবে সব রোবটকে যে হাঁটতে-চলতে-কথা বলতে পারা যন্ত্রমানব হতে হবে, তা কিন্তু নয়। কলকারখানায় যে যন্ত্রগুলো এখন মানুষ ব্যবহার করে, সেগুলো আগামী দিনে চালাবে রোবট। অর্থাৎ কলকারখানায় কর্মীদের বদলে রোবট কাজ করবে।

রোবট কর্মীদের বেতন–বিশ্রামের দরকার হয় না, খাবারের বিরতি বা ছুটি দেওয়ারও ঝামেলা নেই। নির্ভুলভাবে একটানা কাজ করার ক্ষমতা থাকায় রোবট দিয়ে কাজ করালে উৎপাদন ও লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে নিঃসন্দেহে। ফলে মালিকপক্ষও মানুষের বদলে রোবট কর্মী বেশি পছন্দ করবে। রোবটকে যে যন্ত্রই হতে হবে, তা কিন্তু নয়। সফটওয়্যার রোবটও মানুষের করা কাজ দ্রুত করতে পারে। একে বলে রোবটিকস প্রোসেস অটোমেশন (আরপিএ)। এই ধরনের সফটওয়্যার দিয়ে কয়েক দিনের কাজ মাত্র কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টায় করা যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক সিদ্ধান্তও দ্রুত নেওয়া সম্ভব।

বোঝাই যাচ্ছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব শ্রমজীবী মানুষের জীবিকার জন্য বড় ধরনের হুমকি হতে পারে। কারণ, কায়িক শ্রমের পাশাপাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক কাজও খুব সহজেই রোবট দিয়ে করা সম্ভব। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, আগামী দিনে বেশ কিছু নতুন কাজ বা পেশা তৈরি হবে, যা এখনো আমাদের ধারণার বাইরেই রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, বর্তমানে স্কুলে সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশই আগামী দিনে সম্পূর্ণ নতুন কোনো পেশায় যোগ দেবে, যেসব পেশার এখন পর্যন্ত কোনো অস্তিত্বই নেই। অর্থাৎ পুরোনো পেশাগুলো হারিয়ে নতুন নতুন পেশা তৈরি হবে, ফলে চাকরির সংখ্যা বাড়বে। তবে এ জন্য অবশ্যই কর্মীদের নতুন ঘরানার প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এক প্রতিবেদনে অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ পোশাককর্মী চাকরি হারাতে পারেন। চামড়াজাত শিল্পে এই হার ৩৫ শতাংশ আর পর্যটনশিল্পে ২০ শতাংশ হতে পারে। একইভাবে আসবাব নির্মাণশিল্পে প্রায় ১৪ লাখ ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণশিল্পে ৬ লাখ কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।

ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির রোবট আমাদের বিভিন্ন কাজ কম সময়ে দক্ষতার সঙ্গে করে দেবে। ফলে কায়িক শ্রমিক ছাড়াও ব্যাংকের ঋণ কর্মকর্তা, কেরানি, আইন সহকারী, খুচরা বিক্রয়কর্মী, নিরাপত্তাকর্মী, চিকিৎসক পেশা চাকরিচ্যুতির ঝুঁকিতে থাকবে। অন্যদিকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে ডেটা অ্যানালিস্ট, ডেটা সায়েন্টিস্ট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, প্রসেস অটোমেশন, তথ্য সুরক্ষাসহ ইন্টারনেট অব থিংস বিশেষজ্ঞদের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে আমাদের দেশে সরকারি উদ্যোগে জাতীয় রোবটিকস কৌশলপত্র তৈরির কাজ চলছে। এই কৌশলপত্রে নিচের দুটি বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি বলে মনে করি।

১. শিল্পে ব্যবহার উপযোগী রোবট এরই মধ্যে বাংলাদেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। শিগগির অনেক উৎপাদক প্রতিষ্ঠানেই এসব শিল্প রোবটের (ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট) ব্যবহার হবে। নিজেদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আমরা যতই বলি না কেন, রোবট বা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব চাকরি হারানোর কারণ হবে না, কথাটি বাংলাদেশের মতো দেশে বাস্তবায়ন করা বেশ কষ্টকর। কারণ, যে হারে কারখানা আধুনিকায়ন হবে, সেই হারে নতুন চাকরি তৈরি হবে না। ফলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শ্রমিকের কাজ হারানোর আশঙ্কা থেকেই যাবে। বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারিভাবে কারখানায় রোবট ব্যবহারের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অর্থাৎ কোনো মালিক রাতারাতি নিজের কারখানায় শতভাগ রোবট বসিয়ে সব শ্রমিককে ছাঁটাই করতে পারবেন না। তাঁকে এই কাজ পর্যায়ক্রমে করতে হবে। সরকার বলে দিতে পারে, প্রতিবছর এই রোবট ব্যবহারের হার কোনোভাবেই ২৫ থেকে ৩৩ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না। অন্যভাবে বলতে হলে, অটোমেশনের কারণ দেখিয়ে কোনোভাবেই ২৫ থেকে ৩৩ শতাংশের বেশি শ্রমিককে একসঙ্গে চাকরিচ্যুত করা যাবে না।

২. যুক্তরাষ্ট্রের সিওবট নামের এক রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পোশাক তৈরির জন্য রোবট বানিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আলোচনা করে তাদের তৈরি রোবটগুলো বাংলাদেশে সংযোজনের ব্যবস্থা করতে হবে। এর ফলে দুটি লাভ হবে আমাদের। প্রযুক্তি বিনিময়ের পাশাপাশি জ্ঞানও বাড়বে। এ ছাড়া বাংলাদেশে তৈরি হলে স্থানীয় তৈরি পোশাক (আরএমজি) কারখানা কম দামে রোবটগুলো কিনতে পারবে এবং বিক্রয়োত্তর সেবাও পাবে। ফলে পোশাক তৈরির খরচ কমায় প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে সুবিধা হবে। শুধু তা–ই নয়, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের দেশগুলো যদি কখনো নিজেদের দেশেই রোবটের সাহায্যে পোশাক তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমরা দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশে তৈরি সিওবট রোবট বিক্রি করতে পারব। এখন সবাই আমাদের আরএমজি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে চেনে, তখন হয়তো আমরা রোবট রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি পাব।

লেখক: বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এবং বেসিসের সাবেক সভাপতি
Title: Re: রোবট ব্যবহারে কৌশলী হতে হবে
Post by: dulal.lib on March 22, 2022, 06:49:03 PM
সত্যিই তাই....