Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Md. Khairul Bashar

Pages: 1 ... 4 5 [6] 7 8 ... 14
76
Journalism & Mass Communication / Proposed Alphabet for Sawtal Language
« on: February 03, 2013, 12:26:10 PM »
কোনো জাতির ভাষা কি বর্ণমালা সেই জাতির ধারাবাহিক বিকাশ ও বিরাজমানতার সঙ্গেই জড়িত। বাংলাদেশে আদিবাসী সমাজে মাতৃভাষার চর্চা থাকলেও অধিকাংশ ভাষার নিজস্ব লিপি না থাকায় অনেকেই বাংলা হরফ ব্যবহার করেই ভাষাচর্চা চালিয়ে আসছেন। চাকমা, মারমা, রাখাইন, ত্রিপুরা, মৈতৈ মণিপুরিরা নিজস্ব বর্ণমালায় নিজেদের ভেতর কিছুটা মাতৃভাষার চর্চা করেন। মান্দিদের আচিক ভাষার প্রায় পাঁচ ধরনের ‘আচিক থোকবিরিম (বর্ণমালা)’ প্রস্তাবিত হলেও তা চালু নয়। লেঙ্গাম ভাষার একটি বর্ণমালাও তৈরি করেছেন নেত্রকোনার কলমাকান্দার সুরেশ নংমিন। মেনলে ম্রো উদ্ভাবিত বর্ণমালা দিয়ে ম্রো আদিবাসীদের ক্রামা ধর্মাবলম্বীরা কিছুটা চর্চা করছেন। খাসি, বম, লুসাই, মাহালি, মান্দিদের ভেতর রোমান হরফে নিজস্ব ভাষায় খ্রিষ্টধর্মের কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে সম্পূর্ণ চাকমা ভাষা ও বর্ণমালায় প্রকাশিত হয় দেবাশীষ চাকমার উপন্যাস ফেবো। রাজশাহীতে শুরু হয় সাঁওতালি ভাষার প্রথম বেসরকারি বিদ্যালয়।

ভারতে সাঁওতালি ভাষা ও অলচিকি বর্ণমালার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিললেও বাংলাদেশে এখনো আদিবাসী জনগণের সাংবিধানিক স্বীকৃতিই মেলেনি। সাঁওতালি ভাষা কোন্ লিপি বা হরফে লেখা হবে, তা নিয়ে বাংলাদেশে আবারও বিচ্ছিন্ন কিছু প্রশ্ন উঠেছে। অলচিকি, রোমান না বাংলা? বাংলাদিশোম সান্তাল বাইসি, আদিবাসী মুক্তি মোর্চা, সান্তাল ল্যাংগুয়েজ ডেভেলপমেন্ট কমিটি ও মাহালে ল্যাংগুয়েজ ডেভেলপমেন্ট কমিটি সম্প্রতি রাজশাহী ও দিনাজপুরে কর্মশালা ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রোমান হরফে সাঁওতালি ভাষার পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের দাবি তুলেছে (সূত্র: প্রথম আলো, ২৩.১২.২০১২)। বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত সাঁওতাল সম্প্রদায় সাঁওতালি ভাষা রোমান হরফে লেখার পক্ষে নয়।

পণ্ডিত রঘুনাথ মুরমু কেবল অলচিকি আবিষ্কার নয়, সাঁওতালি ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য সূচনা করেন এক সংগ্রামী অধ্যায়। ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আদিবাসী সোসিও-এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েন’ বা অ্যাসেকা। ১৯৭০-৭১ সালে রোমান লিপিতে সাঁওতালি ভাষা লেখার রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে অ্যাসেকা কলকাতায় হাজার হাজার সাঁওতাল জনগণের মিছিল সংগঠিত করেন। ১৯৭৯ সালে ভারতে সাঁওতালি ভাষার একমাত্র লিপি হিসেবে অলচিকিকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৮০-৯০ দশকে অলচিকি বর্ণমালায় প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক রচনার কাজ শুরু হয়। ভারতের সংবিধানের অষ্টম তফসিলে সাঁওতালি ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি ২০০০ সালের ১ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

বাংলাদেশে যারা রোমান হরফে সাঁওতালি ভাষা লেখার দাবি তুলেছেন, তা নতুন নয়। নিপীড়িতের ভাষা ও বর্ণমালার ওপর অধিপতি ক্ষমতা বারবার যেমন চেপে বসে, এটি তারই সাম্প্রতিক ধারাবাহিকতা। ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে শুরু করে অনেক খ্রিষ্টান মিশনারিদের কাজেও এই বর্ণ-বলপ্রয়োগ দেখতে পাই। রোমান হরফে সাঁওতালি ভাষা লেখার ব্যাকরণ ও উচ্চারণগত জটিলতা এবং সীমাবদ্ধতাও প্রমাণিত হয়েছে। রোমান হরফে সাঁওতালি ভাষার স্বরধ্বনিগুলো ঠিকমতো লেখা যায় না (সূত্র: হেরাল্ড, গোয়া, ভারত, ২২/৯/১২)। সাঁওতালি ভাষার ব্যাকরণে চারটি অবদমিত ধ্বনি আছে। মিশনারি পণ্ডিত রেভারেন্ড স্ক্রেফসরুড ও পি. ও. বোডিং এ ধ্বনিগুলোকে অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনির অবদমিত রূপ মনে করে, এগুলোকে যথাক্রমে রোমান হরফের ‘কে’, ‘সি’, ‘টি’ এবং ‘পি’ চিহ্নের সাহায্যে প্রকাশ করেন। কিন্তু ফাদার হফম্যানের মতে, এই ধ্বনিগুলো ঘোষ ধ্বনির অবদমিত রূপ। তিনি এ ধ্বনিগুলোকে ঘোষ বর্ণ যথাক্রমে স্বর অবদমিত, জ্, দ্, এবং ব্ এর অবদমিত ধ্বনি হিসেবে যথাক্রমে স্বর-অবদমন ‘ডি’, ‘জে’ এবং ‘বি’ চিহ্নের সাহায্যে লেখার প্রস্তাব দেন। মিশনারি পণ্ডিতদের এই বিতর্ক ১৯২৫ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় (সূত্র: রঘুনাথ মুরমু: সাঁওতালি সাহিত্য ও অলচিকি আন্দোলন, ড. শান্তি সিংহ, কলকাতা, ২০০৪, পৃ. ৩৬)। ১৯২৫ সালেই পণ্ডিত রঘুনাথ মুরমু অলচিকি নামে সাঁওতালি বর্ণমালা উদ্ভাবন করে এসব বিতর্ক ও সমস্যার বৈজ্ঞানিক নজির হাজির করেন।

ব্রিটিশ উপনিবেশের অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে যে সাঁওতাল জনগণ ১৮৫৫ সালে সংগঠিত করেছেন দুনিয়া কাঁপানো বিদ্রোহ, ১৫৭ বছর পর সেই জনগণের পক্ষে নিজ মাতৃভাষাকে রোমান হরফে লেখা কি সম্ভব? তা ছাড়া সাঁওতালি ভাষা যখন রোমান হরফে লেখা হচ্ছে তখন এটির বেশ কিছু বর্ণের পরিবর্তন ঘটছে। রোমান হরফে সাঁওতালি ভাষা শেখার মানে তাই কোনোভাবেই রোমান লিপি শেখা হয়ে যাচ্ছে না। আজকের করপোরেট দুনিয়ার বাস্তবতায় যদি ইংরেজি কি অন্যান্য ভাষা জানতেই হয়, তবে সেটি সাঁওতাল শিশুদের জন্য রাষ্ট্রই নিশ্চিত করবে। কিন্তু নিজ মাতৃভাষা নিজ ভাষায় বা জনগণের নিজস্ব সিদ্ধান্তে গৃহীত হরফের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরি। সামাজিক রূপান্তরের ধারাবাহিকতাই ঠিক করবে কোনো ভাষা কী হরফ কী আদলে টিকে থাকবে। দুনিয়ার সব হরফেরই একটি রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। অলচিকি হরফে বাংলাদেশের সাঁওতাল জনগণ অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি, অধিকাংশেরই বর্ণ অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলায়। কৃষক, দিনমজুর থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী কি চাকরিজীবী—সবাই নিজ জাতির বাইরে বাংলা ভাষাতেই নিত্যদিনের চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। রপ্ত করেছেন বাংলা বর্ণমালা। বাংলা হরফে সাঁওতালি সাহিত্য চর্চা করছেন অনেকেই। বাংলা ভাষাও কখনো কখনো সাঁওতালি ভাষার ওপর আধিপত্য বিস্তার করলেও নিজ দেশের গরিষ্ঠ ভাগ জনগণের প্রচলিত এই বাংলা বর্ণমালাই চাইছেন অধিকাংশ সাঁওতাল জনগণ। রাষ্ট্রের দায়িত্ব বাংলা হরফের সঙ্গে সাঁওতাল জনগণের এই ঐতিহাসিক অস্তিত্ব ও বিকাশমানতা স্বীকৃতি দেওয়া।

স্মরণে রাখা জরুরি, বাংলা ভাষার জন্য কেবল বাঙালি নয়, দেশের আদিবাসী জনগণেরও রক্ত-ঘাম ঝরেছে। সাঁওতালি ভাষার অজস্র শব্দ ও ব্যঞ্জনা নিয়ে হাজার বছর ধরে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে বাংলা ভাষা। কেবল বাংলা নয়, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষার জন্য ১৯৯৬ সালের ১৬ মার্চ শহীদ হয়েছেন সুদেষ্ণা সিংহ। সাঁওতালি ভাষা ও অলচিকি বর্ণমালার সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য ভারতে সংগঠিত হয়েছে দীর্ঘ গণসংগ্রাম। আসন্ন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আগেই আশা করি, সরকার সাঁওতালি ভাষাসহ দেশের সব আদিবাসী জনগণের মাতৃভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করবে। রোমান বা অন্য কোনো অপরিচিত হরফ নয়, অলচিকি না হলে বাংলা বর্ণমালার মাধ্যমেই নিশ্চিত হোক সাঁওতালি ভাষার ন্যায়বিচার।


পাভেল পার্থ: গবেষক ও লেখক।


Source: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-02-03/news/326170

77
Journalism & Mass Communication / Car Theft Contron Through Mobile Phone !
« on: February 02, 2013, 01:47:22 PM »
একজন স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানী মোঃ সালাউদ্দিন। লেখাপড়া বেশিদূর না করলেও ছোটকাল থেকেই বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণায় মগ্ন থাকতেন। আর এ নেশা থেকেই বেশিদূর লেখাপড়া না শিখেও আবিষ্কার করেছেন বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি। তার আবিষ্কৃত এসব প্রযুক্তি সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই প্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যক মনে করছেন অনেকেই। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্পগবেষণা পরিষদ আয়োজিত শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় তাঁর আবিষ্কৃত প্রযুক্তি আকর্ষণ করেছে অনেককেই।

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম নয়। দিনে দিনে বাড়ছে মোটরসাইকেলের ব্যবহার। তাছাড়া মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সচ্ছল পরিবারের প্রাইভেট কার ও মাইক্রো গাড়িসহ বিভিন্ন গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত গাড়ি চুরির সংখ্যা বাড়ছে। ফলে কেউ একেবারে নির্বিঘেÅ“ গাড়ি ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারছেন না। এসব গাড়ি মালিকদের গাড়ির নিরাপত্তা বিধানে সালাউদ্দিন তৈরি করেছেন মোবাইল ফোনের সাহায্যে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি। কোন চোর যদি কারও গাড়ি চুরি করতে যায় তাহলে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে চুরির আগেই মালিক জেনে যাবেন বিষয়টি। তাছাড়া চুরি যাওয়া গাড়িটির অবস্থান সম্পর্কে সঙ্গে সঙ্গে তথ্য পেয়ে যেতে পারেন যে কেউ। এছাড়া বিভিন্ন কারণে অনেকে দীর্ঘদিন গাড়ি ব্যবহার করেন না। কিন্তু প্রতিদিন একবার হলেও গাড়ি স্টার্ট করতে হয়। তা না হলে গাড়ির ইঞ্জিন ঠা-া হয়ে স্টার্ট নাও হতে পারে। আবার কেউ দূরে অবস্থান করলে গাড়ি স্টার্ট করা সম্ভব নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাড়ি স্টার্ট ও বন্ধ করা যাবে। বিদেশ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানী সালাউদ্দিন এ প্রযুক্তির নাম দিয়েছেন মোবাইলের সাহায্যে গাড়ির নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ। এই নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন একটি মাত্র ডিভাইস। যা মোটরসাইকেল বা গাড়ির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। ডিভাইসের পাসওয়ার্ড থাকবে মোবাইল ফোনের সঙ্গে সংযুক্ত। গাড়ি কেউ চুরি করলে সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংকেত পাঠাবে ডিভাইস থেকে। আবার দূর থেকে মোবাইলের মাধ্যমে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই গাড়ি স্টার্ট অন অফ করা যাবে। সেক্ষেত্রে কারও গাড়ি থাকবে নিরাপদ। চুরি হয়ে যাওয়ার কোন ভয় নেই।

মেহেরপুরের গাংনি থানার মোহম্মদপুর গ্রামে জন্ম স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানী মোঃ সালাউদ্দিনের। লেখাপড়া করেছেন মাত্র এসএসসি পর্যন্ত। আগে থেকে পরিবারের ইলেক্ট্রনিক হার্ডওয়্যারের দোকান ছিল। এ দোকানে কাজ করার সময় বিজ্ঞানের আবিষ্কারের দিকে ঝুঁকে পড়েন সালাউদ্দিন। গাড়ি নিরাপত্তা প্রযুক্তি ছাড়া তিনি আবিষ্কার করেছেন ব্যাটারি ও সেলফ স্টার্টের সেফটি ডিভাইস। অনেক সময় গাড়িতে তেল বা জ্বালানি না থাকলে গাড়ি স্টার্ট হতে চায় না। এ কারণে অনেক সময় গাড়ির ভেতরে থাকার ব্যাটারিতে চাপ পড়ে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তবে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে সে ক্ষতির কোন আশঙ্কা নেই। গাড়ির ইঞ্জিনের নিরাপত্তার জন্য তৈরি করেছেন সেফটি ডিভাইস। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে বন্ধ হয়ে যাবে না। ফলে নিরাপদ থাকবে গাড়ি। এছাড়া তিনি আবিষ্কার করেছেন অটো টিউবওয়েল পদ্ধতি। এ পদ্ধতি পানি তুলতে বার বার মোটর স্টার্ট করতে হবে না। এটি পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত কোন লোকের দরকার হবে না। বিদ্যুত চলে গেলে যেমন পানি তোলা বন্ধ হয়ে যাবে তেমনি আবার বিদ্যুত ফিরে আসলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অটো টিউবওয়েল চালু হয়ে যাবে। তিনি জানান এ পদ্ধতিতে খরচ কম। মোটর নষ্ট হওয়ার কোন ভয় নেই। সালাউদ্দিন জনকন্ঠকে বলেন, তার ইচ্ছা রয়েছে বায়ুশক্তি ব্যবহার করে গাড়ি চালানোর প্রযুক্তি আবিষ্কার করা। যাতে গাড়িতে তেলের কোন প্রয়োজন না হয়। তিনি বলেন, তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান। এজন্য সরকার বা সংশ্লিষ্টদের সাহায্যের একান্ত প্রয়োজন। একাজে সাহায্য সহায়তা পেলে তিনি তার গবেষণাকে অনেকদূর নিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান।

স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানীর পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ মেলায় রয়েছে খুদে বিজ্ঞানীদেরও মিলন মেলা। এসব খুদে বিজ্ঞানী তাদের আবিষ্কারে বিভিন্ন মডেল তুলে ধরছেন মেলায়। নটর ডেম কলেজের দু ছাত্র অনিক ও তৌফিক তৈরি করেছেন তারবিহীন বিদ্যুত সরবরাহের মডেল। এ মডেলের মাধ্যমে তারা তুলে ধরছেন মহাকাশ থেকে কিভাবে সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুত শক্তিকে কাজে লাগানো যায়। এ মডেলে তারা তুলে ধরেছেন সোলার সংযুক্ত স্যাটেলাইট আকাশে উৎক্ষেপণ করতে হবে। এর সঙ্গে ট্রান্সমিটিং এন্টেনা সংযুক্ত থাকবে। আর পৃথিবীতে থাকবে একটি রিসিভিং এন্টেনা। সোলারের মাধ্যমে সংগৃহীত বিদ্যুত শক্তি ট্রান্সমিটিং এন্টেনার সাহায্যে রিসিভিং এন্টেনায় সরবরাহ হবে। সেখান থেকে বিভিন্ন কৌশলে তা গ্রিডে স্থাপন করা হবে। তারা বলেন, আগামীতে বিদ্যুত উৎপাদনের বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহারের কোন উপায় নেই। ফলে এখন থেকেই নতুন নতুন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তারবিহীন বিদ্যুত প্রবাহ একটি অন্যতম বিদ্যুত উৎপাদন পদ্ধতি হতে পারে।
বৃহস্পতিবার থেকে ধানম-ির ড. কুদরাত-এ-খুদা সড়কে বিসিএসআইআর চত্বরে আয়োজিত এ মেলা শুরু হয়েছে। তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এ মেলা শেষ হচ্ছে আজ শনিবার। নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান সচেতন, বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহিত করা এবং বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবছর বিসিএসআইআর এ মেলার আয়োজন করে। এবার এ মেলায় বিভিন্ন স্কুল কলেজ, বিজ্ঞান ক্লাব ও স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানী মিলে প্রায় ৭৪টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এসব স্কুল কলেজের খুদে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন আবিষ্কারের মডেল তুলে ধরেছে। এছাড়া স্বশিক্ষিত ৩টি বিজ্ঞানী গ্রুপ মেলায় অংশ নিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে মেলায় ১৮৭টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। বিসিএসআইআর-এর বিভিন্ন গবেষণা মেলায় প্রদর্শন করা হচ্ছে।



Source: http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2013-02-02&ni=124409

78
Journalism & Mass Communication / Quality Time for Your Family
« on: January 30, 2013, 10:15:21 AM »
কাজ তো থাকবেই, তবু দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরকে সময় দেওয়া জরুরি। আধুনিক জীবনে ‘কোয়ালিটি টাইম’-এর কথা উচ্চারিত হচ্ছে বারবার। অর্থাৎ, কতটা সময় দিলাম, তার চেয়েও বড় কীভাবে সময় দিলাম...

ব্যস্ত জীবন। ব্যস্ত দিন। স্বামী-স্ত্রী দুজনরেই দম ফেলার অবকাশ নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দুজন দুদিকে। স্বামী তো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিস নিয়েই ব্যস্ত। ওদিকে ভোরে সন্তানদের স্কুলের জন্য তৈরি করে দিয়ে স্ত্রীও অফিসমুখী। শুধু কর্মজীবী স্ত্রীই নন, গৃহিণীর কাজের পরিমাণও কোনো অংশে কম নয়। ভোর থেকে শুরু হয় তাঁর কর্মযজ্ঞ। এই ব্যস্ততার মধ্যে কখন যে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর থেকে খানিকটা দূরে সরে গেছেন, টেরও পাননি। দিনের পর দিন একসঙ্গে থাকলেও শেষ কবে খুনসুটিতে মেতেছিলেন, মনে করতে পারছেন না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দাম্পত্য জীবনে কোয়ালিটি টাইম বা গুণগত সময়ের খুব প্রয়োজন। তাহলে অনেক ব্যস্ততার মধ্যে পুরোনো সেই দিনের মতো এখনো ভালোবাসার রেশ থাকে সম্পর্কে। ১০ ঘণ্টা একসঙ্গে থাকার চেয়ে এক ঘণ্টার গুণগত সময় অনেক বেশি কার্যকর সম্পর্কের বুনটে।

কাজের বাইরে একান্তে
সারা সপ্তাহেই ব্যস্ততা। এর মধ্যেও দুজন দুজনের জন্য খানিকটা সময় রাখতেই পারেন। অফিস থেকে ফেরার পথে স্বামী-স্ত্রী কোনো কফি শপে গিয়ে কফিতে চুমুক দিতে দিতে কিছু মুহূর্ত কাটাতে পারেন। তখন সংসারের হালচাল, সন্তানের ভবিষ্যৎ কিংবা অফিসের সমস্যাগুলো ছাপিয়ে নিজেদের জন্য একটু সময় দিন। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোরশেদা বেগমের মতে, গুণগত সময় মানেই পরিবারের জন্য একান্ত কিছু সময়, যে সময়টুকুতে সব ধরনের সমস্যা দূরে সরিয়ে শুধু ভালোবাসার আবেশে থাকবেন দুজন। তখন পরস্পরের প্রতি অভিযোগগুলো তুলবেন না। তাহলে দাম্পত্য জীবনের অনেক সমস্যা মাথা চাড়া দেবে না।

এই দিন তোমার-আমার
মনে হতেই পারে, কেন প্রয়োজন কোয়ালিটি টাইম? এই তো বেশ ভালো আছি। সংসারের জন্যই তো কাজ করছি। স্বামী-সন্তানের দেখভাল করেই তো জীবন কাটিয়ে দিলাম। তবুও কোথায় যেন বেদনার সুর বাজে। অনেকে তো বুঝতেই পারেন না যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ফলাফলে কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায় দাম্পত্যে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ কিংবা ভার্চুয়াল জগতের হাতছানি। এটি যেন না হয়। হাজারো কাজের মধ্যে একটি দিন বেছে নিন। সেই দিনে স্বামী-স্ত্রী বাইরে ঘুরতে যেতে পারেন। রাতে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করতে পারেন। অল্প আয়োজনে রিকশায়ও আইসক্রিম খেতে খেতে গল্প করতে পারেন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার বিটপী দাশ সব সময় চেষ্টা করেন পরিবারের সঙ্গে কোয়ালিটি সময় কাটাতে। ছুটির দিনে কোথাও বেড়াতে না গেলে স্বামী-সন্তানের সঙ্গে বাড়িতে বসে সিনেমা দেখেন। বন্ধুদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন। তিনি বলেন, ‘কাজের বাইরে আসলে পুরো সময়টা আমার স্বামী-সন্তানের জন্য বরাদ্দ। সন্ধ্যার চা এবং রাতের খাবার সব সময় স্বামীর সঙ্গে খাওয়ার চেষ্টা করি। এই সময়টুকু না দিলে পারিবারিক বন্ধন মজবুত থাকে না।’

এগিয়ে আসতে হবে স্বামীকেও
শুধু স্ত্রী একাই কোয়ালিটি টাইম নিয়ে ভাববেন, তা নয়। পারস্পরিক সম্পর্কের জন্য দুজনেরই সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে, বিশেষ করে স্বামীদের। তাঁরা অনেক সময় মনে করেন, সব দায়িত্ব শুধু স্ত্রীদেরই। বিষয়টি তেমন হওয়া উচিত নয়। কেউ কেউ ভাবেন, দামি উপহার কিংবা কেনাকাটার টাকা দিয়ে দিলেই দায়িত্ব শেষ; বরং স্ত্রীকে হঠাৎ তাঁর প্রিয় কোনো ফুল, বই বা ছোট্ট কিছু দিয়ে অবাক করে দিতে পারেন। ব্যস্ততার মধ্যেও যে তাঁকে মনে রেখেছেন, এতেই স্ত্রী খুশি হবেন। কাজ তো থাকবেই, তবুও অফিস থেকে ফিরে একসঙ্গে এক কাপ চা খেলে ক্ষতি কী?

প্রাধান্য দিন সঙ্গীর পছন্দকে
সবচেয়ে প্রাধান্য দিতে হবে সঙ্গীর ছোট ছোট পছন্দকে। খুব সূক্ষ্ম ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিলে দাম্পত্য জীবন সুখকর হয়ে উঠবে। পারস্পরিক ভুল বোঝাঝুঝি বড় আকার ধারণ করে না, এমনটাই মনে করেন ব্র্যাক ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান তাহনিয়্যাত আহমেদ। সঙ্গীকে সব সময় বুঝিয়ে দিতে হবে, আপনার জীবনে তাঁর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। পর্যাপ্ত সময় না দিলে তিনি একাকিত্ববোধে ভুগতে পারেন। পরিস্থিতি এমন হওয়ার আগেই দিনের একটি সময় সঙ্গীর জন্য বরাদ্দ রাখুন।


Source: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-30/news/325068

79
মহানবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) [৫৭০-৬৩২ খ্রি.] ছিলেন বিশ্বশান্তির অগ্রদূত। সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুখ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি একটি আদর্শ জীবনবিধান প্রতিষ্ঠা করে সর্বাধিক কৃতিত্বের আসনে সমাসীন হয়েছেন। যাঁর প্রশস্তি সর্বকালের ও সর্বযুগের জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের মুখে মুখে বিধৃত। তিনি এমন এক সময় পৃথিবীতে আগমন করেন, যখন আরবের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা অধঃপতনের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। বিশ্বমানবতার সেই ঘোরতর অন্ধকারে ভূ-পৃষ্ঠে হেদায়েতের আলোকবর্তিকা নিয়ে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল মক্কার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার গর্ভে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শুভাগমন ঘটে। তাঁকে শান্তি, মুক্তি, প্রগতি ও সামগ্রিক কল্যাণের জন্য বিশ্ববাসীর রহমত হিসেবে আখ্যায়িত করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত রূপে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত-১০৭)

সমাজে তাঁর শান্তি প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ ও পদ্ধতি ছিল অনন্য। যুদ্ধ-বিগ্রহ, কলহ-বিবাদ, রক্তপাত, অরাজকতা ইত্যাদি দূরীভূত করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির ভিত্তিতে তিনি একটি অনুপম আদর্শ কল্যাণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। তৎকালীন আরবদের মধ্যে কোনো ঐক্যবোধ বা জাতীয় চেতনা ছিল না। গোত্রপ্রীতির কারণে সমাজে কলহ-বিবাদ লেগেই থাকত। তিনি এ কৃত্রিম ভেদাভেদ ও দ্বন্দ্ব-কলহের চিরতরে অবসান ঘটান। আরব সমাজে দাসত্বপ্রথা মানুষে মানুষে চরম শ্রেণীবৈষম্যের সৃষ্টি করেছিল। হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রথম বিশ্বনেতা, যিনি সমাজ থেকে দাসত্বপ্রথার বিলোপ সাধন করেন। তৎকালীন কন্যাশিশুকে আরবে জীবন্ত মাটির নিচে প্রথিত করা হতো। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ জঘন্য প্রথা নিষেধ করেন। নারীদের অমর্যাদা ও বিশৃঙ্খল জীবনযাপন আরব সমাজের অশান্তির কারণ ছিল। নারী জাতিকে নির্যাতন ও দুর্দশার হাত থেকে উদ্ধার করে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।’

মদিনায় হিজরতের পর তিনি সেখানে আদর্শ ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, নাগরিকদের মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ মদিনার সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন। মানবেতিহাসের প্রথম প্রশাসনিক সংবিধান ‘মদিনা সনদ’, যাতে সেখানে বসবাসরত সব ধর্মাবলম্বীর স্বাধীনতা ও অধিকারের যথোপযুক্ত স্বীকৃতি ছিল। মদিনায় স্থায়ীভাবে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং তথায় বসবাসকারী অন্যান্য ধর্মাবলম্বী, বিশেষত ইহুদিদের সঙ্গে তিনি এক শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেন। এভাবে তিনি মদিনার জীবনে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করে শান্তি স্থাপনের বলিষ্ঠ উদ্যোগ নেন। দয়ালু নবী হওয়া সত্ত্বেও সন্ত্রাস দমনপূর্বক সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন আপসহীন।

শত অত্যাচার-নির্যাতন ও যুদ্ধ করে আজীবন যে জাতি তাঁকে সীমাহীন কষ্ট দিয়েছে, সে জাতি ও গোত্রকে ক্ষমা করে তাদের সঙ্গে উদার মনোভাব দেখিয়ে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন। কঠিন যন্ত্রণা-দুঃখ-কষ্ট-বেদনা সহ্য করে মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে পাথরের আঘাত সয়েও তিনি মানবতার জয়গান গেয়েছেন, সমাজের মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আহ্বান করেছেন। আজীবন অসহায়, বঞ্চিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের সামাজিক শান্তি ও মুক্তির জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন তিনি। অভিশপ্ত দাসপ্রথা, যৌতুক প্রথাসহ সমাজের নানা ধরনের অনিয়ম ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ক্লান্তিহীন সৈনিকের মতো লড়াই করেছেন।

চলমান বিশ্বে তাঁর সুবিচার ও সুশাসন কায়েম হলে পৃথিবীতে কোনো প্রকার সামাজিক অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা বিরাজমান থাকত না। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উচ্চ মর্যাদার বিষয়ে জগৎখ্যাত অনেক মনীষীই ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। অমুসলিম লেখক উইলিয়াম হার্ট তাঁর দি হানড্রেড গ্রন্থে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সর্বাগ্রে স্থান দিয়ে বলেছেন, ‘পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ প্রভাবশালীদের তালিকায় আমি সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বেছে নিয়েছি। আমার এ পছন্দ কোনো কোনো পাঠককে বিস্মিত করতে পারে। কিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যিনি ধর্মীয় ও বৈষয়িক উভয় ক্ষেত্রেই সর্বাঙ্গীণ সাফল্য লাভ করেছেন।’

প্রখ্যাত দার্শনিক জর্জ বার্নার্ড শ হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে মানবতার ত্রাণকর্তা বলে আখ্যায়িত করে জোরালো ভাষায় স্বীকার করেছেন, ‘ইসলামই কেবল শান্তিময় পৃথিবী গড়তে সক্ষম।’ সমস্যা-জর্জরিত বর্তমান বিশ্বে সামাজিক শান্তি ও মুক্তির পথ খুঁজতে গিয়ে তিনি যথার্থই বলেছেন, ‘মুহাম্মদ (সা.)-এর মতো কোনো ব্যক্তি যদি আধুনিক জগতের একনায়কত্ব গ্রহণ করতেন, তাহলে এমন এক উপায়ে তিনি এর সমস্যা সমাধানে সফলকাম হতেন, যা পৃথিবীতে নিয়ে আসত বহু বাঞ্ছিত শান্তি ও সুখ।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বপ্রথম বিশ্ববাসীকে সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ উপহার দিয়ে ইসলামের সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য, শান্তিশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তার বাণী শুনিয়েছিলেন। সততা, ন্যায়নিষ্ঠা ও সদয় ব্যবহারে তাঁর কাছে কখনো স্বধর্মী বা বিধর্মী বিচার ছিল না। তাঁর অনুপম জীবন ও সমাজসংস্কারমূলক কর্মধারা সব মানুষের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এক চিরন্তন আদর্শ। মানবজাতির মধ্যে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও সংহতি প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ থেকে অন্যায়, অবিচার ও অসত্য দূরীভূত করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর আজীবন প্রয়াস বিশ্বমানবতার জন্য মহান অনুপ্রেরণার উৎস। পরমতসহিষ্ণুতা, সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার অতুলনীয় যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থ্থাপন করেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে।

তাওহীদের আদর্শ, সাম্য, মৈত্রী, শান্তি, ক্ষমা, ঔদার্য, ন্যায়নীতি ও মানবপ্রেমের অগ্রদূত মহানবী (সা.)-এর পবিত্র সিরাত বা জীবনচরিত মানবতার ইতিহাসে তুলনাবিহীন। সমাজসংস্কারক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, রাষ্ট্রনায়ক, শাসক, ব্যবসায়ী, বিচারক, স্বামী, পিতা, নেতা, বিশ্বমানবতার মুক্তিদাতা ও শান্তির অগ্রদূত হিসেবে অর্থাৎ মানবজীবনের প্রতিটি বিষয়ে তিনি ছিলেন অনুপম, অতুলনীয় এক মহান আদর্শের ধারক ও বাহক। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় যে বিশ্বশান্তি ও কল্যাণের পথই হলো মহানবী (সা.)-এর অনুপম শিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারের মূল চেতনা। সকল হিংসা-বিদ্বেষ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য ও বিভ্রান্তি দূরীভূত হয়ে মানব সমাজে শান্তি ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে সর্বক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ বাস্তবায়িত হোক—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।


ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।


Source: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-25/news/324052

80
Journalism & Mass Communication / Suggestions for Parents of Lovers !!
« on: January 23, 2013, 12:32:58 PM »
ফেসবুকে মেয়ের প্রোফাইল পিকচারে দেখা গেল যুগল একটি ছবি। সেই ছেলের সঙ্গেই কোনো রেস্তোরাঁয় মেয়েটিকে দেখে ফেললেন কোনো আত্মীয়। মেয়ের মুঠোফোন ঘাঁটতে না চাইলেও সন্দেহ আর চেপে রাখা গেল না। ইনবক্সের প্রায় সব মেসেজই এসেছে একটি বিশেষ নাম থেকে, মেসেজের ভাষাও আবেগপ্রবণ। মন না মানতে চাইলেও ব্যাপারটা সত্যি। আপনার মেয়ের জীবনে কেউ এসেছে। তার আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সেই বিশেষ ছেলেকে ঘিরেই। এখন কী করবেন মা? মুঠোফোনটা কেড়ে নিয়ে ঘরবন্দী করে রাখবেন? নাকি ছেলেটির ঠিকানা জোগাড় করে তার বাড়িতে গিয়ে বকাঝকা করে আসবেন? হয়তো আপনার প্রথম প্রতিক্রিয়া তেমনই হবে। কিন্তু তা করলেন তো ভুল করলেন!

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সময়ের ছেলেমেয়েকে বকাঝকা করে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তাদের সঙ্গে মিশতে হবে বন্ধুর মতো। জীবনের নানা অলিগলি চিনিয়ে দিতে হবে। তবে কোন পথে সে হাঁটবে, সেই সিদ্ধান্ত কিন্তু তারই। এমন পরিস্থিতির আগেই মেয়ের সঙ্গে গড়ে তুলতে হবে বন্ধুর মতো সম্পর্ক যাতে সে আপনাকে গোপন করে কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়। কিশোর বয়সে মেয়েটির মধ্যে নিজস্ব মতামত দেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়। সে যা দেখে, তা-ই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে। বাইরের রূপই যে সব নয়, এটা সে বোঝে না। নিজের সম্পর্কটাকে তার খুব সুন্দর একটা সময় বলেই মনে হয়। ভবিষ্যতে কী হবে এটা নিয়ে সে চিন্তা করতে পারে না। মেয়ের এই সময়কার অনুভূতিটা মাকে বুঝতে হবে। কী করবেন তার আগে জানতে হবে কী করবেন না।

 প্রথমত, সমালোচনা, চেঁচামেচি একদমই করা যাবে না। তাকে বাধা দেওয়াও ঠিক হবে না। তাহলে সে আপনার সঙ্গে লড়াই করতেই বেশি সময় ব্যয় করবে, সম্পর্কটার ভালোমন্দ তলিয়ে দেখার সুযোগ সে পাবে না। কিছুদিন পরে হয়ে তো সে নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে সরে আসবে। এ সময় মাকে মাথা ঠান্ডা রেখে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলাতে হবে। আবার বাধা না দিলেও তার স্বাধীনতার সীমারেখাটুকুও তাকে দেখিয়ে দিতে হবে। ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটি কতটুকু মিশবে, তা যেন সে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেয়। যেমন তাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না বলেই সে ছেলেটির সঙ্গে দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে পারে না। দৃঢ় কিন্তু কঠিন নয়, এমন হবে মায়ের আচরণ। এমনটাই মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মেখলা সরকার।এ নিয়ে আরও পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেম আর স্কুল পর্যায়ের প্রেম কি এক?
কোন বয়সের প্রেম আসলে মেনে নেওয়ার মতো? এ নিয়ে সমাজে একটা দ্বন্দ্ব তো আছেই। মাহবুবা নাসরীনের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া একটি মেয়ের নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। সে নিজের সঙ্গী বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিজে নিতেই পারে। সে ব্যাপারে মা-বাবার হস্তক্ষেপ করার তেমন কিছু নেই। তবে স্কুল বা কলেজে পড়া মেয়েটি কার সঙ্গে মিশছে, কী করছে, সেই খোঁজ অবশ্যই রাখতে হবে।

স্বামীকে কীভাবে বলবেন?
এটা নির্ভর করে পরিবারের গঠনের ওপর। যে পরিবারের বাবা খুব রাগী ও কর্তৃত্বপরায়ণ, তাঁকে মেয়ের প্রেমের ব্যাপারটা বললে বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। আপনার স্বামী হয়তো শুনে রেগে যাবেন, চেঁচামেচি করবেন, তাতে মেয়ের জেদ আরও বেড়ে যেতে পারে। শুরুতে মা বরং ব্যাপারটি ভেবে দেখুন। মেয়ের সঙ্গে মা-বাবার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে খোলাখুলি আলাপ করতে পারেন।

ছেলেটির বাড়িতে কি যোগাযোগ করবেন?
শুরুতে এটা করা একদমই ঠিক হবে না। অনেক মা-ই মেজাজ ঠিক রাখতে না পেরে মেয়ের অগোচরে ছেলেটিকে বকাঝকা করেন। এমনকি তার বাড়িতে গিয়ে নালিশও করে আসেন। এটা জানতে পারলে বরং মেয়ের সঙ্গে মায়ের সম্পর্কই খারাপ হয়ে যেতে পারে। তার বন্ধুর কাছেও সে ছোট হয়ে থাকবে। তাই প্রথমে ছেলেটির সঙ্গে যোগাযোগ না করাই ভালো। বরং মেয়েকে বলুন, ছেলেটির সঙ্গে আপনার পরিচয় করিয়ে দিতে। মনে রাখুন, সম্পর্কটা গড়েছে দুজন মিলেই। শুধু ছেলেটিকে একতরফা দোষারোপ করা উচিত নয়। যদি মনে হয় এই সম্পর্ক একটি সুন্দর পরিণতি পেতে পারে, ছেলেটির পরিবারও যদি আপনাদের মতোই হয়, তবে তার মা-বাবার সঙ্গে দুজনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলাপ করে রাখতে পারেন।

মেয়ে ভুল সঙ্গী নির্বাচন করলে কী করবেন?
এমনও হতে পারে, আপনি বুঝতে পারছেন, ছেলেটি আপনার মেয়ের জন্য একদমই উপযুক্ত নয়। সেটা আপনি বুঝলেও মেয়েটি আবেগপ্রবণ অবস্থায় বুঝতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে সম্পর্ক ভাঙার কথা মেয়েকে বলা মোটেও ঠিক নয়। তাতে সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তাকে নিজের জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা বলুন। ক্যারিয়ার, পড়াশোনায় বেশি মনোযোগ দিতে বলুন। একটা সময় হয়তো সে নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পারবে।

ছেলেটির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন হবে?
মেয়েটি তার পছন্দের ছেলেটিকে বাড়িতে এনে আপনার সঙ্গে পরিচয়ও করিয়ে দিল। আপনি কি তার সঙ্গে মেয়ের অন্য বন্ধুদের মতো মিশতে পারবেন? সেটা করাটাই আপনার আর আপনার মেয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো। একজন অভিভাবকের মতো ছেলেটির সঙ্গে মিশুন। তাকে যতটা সম্ভব পরামর্শ দিন, সাহায্য করুন। তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে দেখার কোনো প্রয়োজন নেই।



Source: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-23/news/323543

81
Journalism & Mass Communication / Russell's Work Around the World
« on: January 23, 2013, 11:59:58 AM »
ধানখেতের পাশে কয়েকজন যুবকের হাতে ল্যাপটপ। একমনে তাঁরা কাজ করে চলেছেন। তাঁদের পেছনে দাঁড়িয়ে রাসেল আহমেদ। কেউ একটু সমস্যায় পড়লেই কীভাবে সমাধান করা যায়, তা দেখিয়ে দিচ্ছেন তিনি। ভেড়ামারা ডিগ্রি কলেজের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র রাসেল। শূন্য থেকে শুরু করে আকাশছোঁয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এই যুবক। শুধু একা কাজ করে সফল হচ্ছেন, ভালো আয় করছেন, এমন নয়; গ্রামের অনেককেই নিজের কাজের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। শিখিয়ে-পড়িয়ে তাঁদের দিচ্ছেন ভালো আয় করার পথের সন্ধান।

এখন প্রতি মাসে রাসেল কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ফারাকপুর গ্রামে বসেই বিদেশের আউটসোর্সিং কাজ করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করছেন। কীভাবে তা সম্ভব হলো? জানা যাক বিস্তারিত।
২০০৯ সালে গ্রামের বাজারে একটি দোকানে হঠাৎ কম্পিউটার দেখে থমকে দাঁড়ান রাসেল। প্রতিদিন কলেজ ছুটির পর সেই আশ্চর্য বস্তুটির কাছে হাজির হন। দেখতে দেখতে তাঁর মনে ইচ্ছা জাগে, কম্পিউটার শিখতে হবে।

রাসেলের জন্ম ১৯৮৯ সালে। বাবা মকবুল হোসেন পেশায় দরজি, মা রেহানা পারভীন গৃহিণী। মা-বাবা আর তিন ভাইবোনের সংসার চলে কায়ক্লেশে। কিন্তু কম্পিউটার তত দিনে জাদু করেছে রাসেলকে। তিনি বায়না ধরেন, পড়ালেখার পাশাপাশি কম্পিউটারের কাজ শিখবেন। ছেলের ইচ্ছা পূরণ হয় মায়ের বিয়ের কানের দুল বিক্রি করে। একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ভর্তি হয়ে যান রাসেল আহমেদ। মাসিক ১০০ টাকা বেতনে একটি চাকরিও জুটিয়ে ফেলেন।

কাজ করতে করতেই জানতে পারেন ইন্টারনেট থেকে আয় করা যায়। শুরু করেন ওয়েব ডিজাইন শেখা। একদিন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারেন উপজেলা ই-সেন্টারে উদ্যোক্তা নিয়োগ হবে। সেখানে আবেদন করেন, চাকরিও পেয়ে যান। ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলামের সহযোগিতায় অনলাইনে আয় সম্পর্কে আগ্রহী হন। এ সময় খুলনাতে এক প্রশিক্ষণে গিয়ে আউটসোর্সিংয়ের কাজ পাওয়ার ওয়েবসাইট ওডেস্ক ডট কমে তিনি অ্যাকাউন্ট খোলেন। একটা কাজও পেয়ে যান। কাজটি ঠিকঠাক করায় আরও কাজ আসতে থাকে। প্রথম মাসেই আয় ১৫ হাজার টাকা। সেটা ২০১০ সালের শেষের দিকের কথা।

এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি রাসেল আহমেদকে। আউটসোর্সিং কাজের জন্যই ইংরেজি ভাষা শিখতে থাকেন, সঙ্গে ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব প্রোগ্রামিং। গত অক্টোবর মাসে রাসেলের আয় হয়েছে দুই লাখ টাকা। ‘ডিজাইনিংওয়ে’ নামে নিজের একটি কোম্পানি তৈরি করেছেন। এই কোম্পানি বিভিন্ন বিদেশি গ্রাহকের কাজ করে দেয়। ওডেস্কের মতো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে না গিয়ে সরাসরিও অনেক কাজ পান তিনি। রাসেল বলেন, ‘আমি বাংলাদেশি হিসেবে গর্ববোধ করি। এত সীমাবদ্ধতা থাকার পরও আমি আমার কোম্পানিতে বাংলাদেশি মানুষদের প্রাধান্য দিচ্ছি।’

ভেড়ামারার গ্রামে বসে রাসেল এখন কানাডার মেশিন রিসার্চ অ্যান্ড সফটওয়্যার ফাউন্ড্রি লিমিটেডে চাকরি করেন। বেতন পান মাসে দেড় লাখ টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের এটি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন চাকরিও করেন। অস্ট্রেলিয়ার একজন উদ্যোক্তার সঙ্গে অংশীদার হয়ে চালাচ্ছেন একটি অনলাইন বিপণনপ্রতিষ্ঠান (ইয়োরমার্কেটিংসেলস)। রাসেলের অস্ট্রেলীয় অংশীদার স্থায়ীভাবে তাঁকে সে দেশে গিয়ে থাকা ও কাজ করার প্রস্তাব দিলেও হাসিমুখেই তা ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ পেয়েছেন। ফলে আউটসোর্সিংয়ের কাজটি আরও গতি পেয়েছে। রাসেলের ভাষায়, ‘এ দেশের সুযোগ-সুবিধায় বড় হয়েছি, তাই বিদেশে যাব না। আমি আমার গ্রাম থেকেই দেশকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যেতে চাই।’

অনলাইনে যে কেউ যেকোনো জায়গা থেকে যেন কাজ শিখতে পারেন, সে জন্য আর আর ফাউন্ডেশন (www.rrfoundation.net) নামে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন রাসেল। উদ্দেশ্য, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা। এই সাইটের ভিডিও টিউটোরিয়ালগুলো কম্পিউটারে নামিয়ে নিয়ে যে কেউ আউটসোর্সিং শিখতে পারবেন। পুরোটাই বিনা মূল্যে। এভাবেই নিজের গ্রামে থেকে রাসেল ছড়িয়ে পড়ছেন দেশময়, বিশ্বময়। দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন আরও উঁচুতে।



Source: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-23/news/323670

82
প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের কথা বা বক্তব্য প্রকাশের গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রযুক্তিবিদেরা কাজ করে যাচ্ছেন। হকিংয়ের যোগাযোগ-সামর্থ্য বর্তমানে প্রতি মিনিটে মাত্র এক শব্দে নেমে গেছে। যুগান্তকারী কোনো উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই হার বাড়ানোর ব্যাপারে গবেষকেরা আশাবাদী।

প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান ইন্টেল জানায়, অসুস্থ হকিংয়ের অবস্থার অবনতি হলে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁর কথা সংরক্ষণের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। শরীরের অল্প কয়েকটি মাংসপেশির ওপর হকিংয়ের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সেই মাংসপেশির সাহায্যে তিনি যে সংকেত পাঠাতে পারেন, তা ইন্টেলের নতুন প্রযুক্তি দ্রুত রূপান্তর করবে। স্নায়ুতন্ত্রের দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হকিং ৫০ বছর ধরে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ও গবেষণাকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা কমে আসছে।

ইন্টেলের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা জাস্টিন র‌্যাটনার গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কনজিউমার ইলেকট্রনিকস শো (সিইএস) নামের প্রদর্শনীতে জানান, নতুন যন্ত্রাংশ ব্যবহারে হকিংয়ের যোগাযোগের সামর্থ্য বাড়বে।

ইন্টেল ১৯৯০-এর দশক থেকে হকিংকে যোগাযোগ-সহায়ক প্রযুক্তি সরবরাহ করে আসছে। যোগাযোগ-সামর্থ্য কমে যাওয়ায় তিনি ২০১১ সালে ইন্টেলের যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মুরের সাহায্য চান। হকিংয়ের ৭০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গত বছর তাঁর সঙ্গে দেখা করেন র‌্যাটনার। তিনি বলেন, বর্তমান প্রযুক্তি হকিংয়ের মতো ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করার জন্য যথেষ্ট নয়। তাঁকে প্রতি মিনিটে অন্তত পাঁচটি শব্দ প্রকাশের জন্য সহায়ক যন্ত্র তৈরি করতে হবে। এমনকি, মিনিটে ১০টি শব্দ প্রকাশের মতো ব্যবস্থা উদ্ভাবনের চেষ্টা করতে হবে।
বর্তমান ব্যবস্থায় হকিং একটি ট্যাবলেট পিসির ও ওয়েবক্যামের সাহায্যে স্কাইপের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন।


Source: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-21/news/323146

83
Journalism & Mass Communication / Re: Relief from Eve teasing and Rape
« on: January 21, 2013, 01:15:38 PM »
thank you sir for your valuable comment. i agree with you. to get relief the holy quran and hadith could be the best solution.

84
Journalism & Mass Communication / Relief from Eve teasing and Rape
« on: January 19, 2013, 11:57:14 AM »
পথেঘাটে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার খবরগুলো নিয়ে যখন বিচলিত মানুষজন কিছু প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করছিলেন, ভাবছিলেন স্থায়ী সমাধানের কথা, তখন এসব ছাপিয়ে আসতে থাকল ধর্ষণের খবর। সর্বশেষ যে ঘটনাটি স্তম্ভিত করেছে সবাইকে, সেটি ঘটেছে মাত্র পাঁচ বছরের এক শিশুর ওপর। তাকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে হাজতবাস করেছে যে তরুণ, সে জামিনে বেরিয়ে এসে সেই শিশুর ওপর বদলা নিয়েছে—ধর্ষণ করে তাকে হত্যা করেছে। যে সমাজে নিতান্ত দুধের শিশুও নিরাপদ নয়, সে কি মানুষের সমাজ হতে পারে? স্বভাবতই কঠোর আইন আর কঠিন শাস্তির কথা উঠেছে। কিন্তু আইনের প্রক্রিয়াটি ভিকটিমের জন্য এমনই প্রতিকূল যে, তা ডিঙিয়ে শাস্তি আদায় করা প্রায় অসম্ভব। তার ওপর পুরুষশাসিত সমাজের আনুষঙ্গিক লাঞ্ছনা তো আছেই। ফলে ঘটনা প্রকাশ পায় কম, শাস্তি হয় আরও কম।
ইভ টিজিং ও ধর্ষণকে হয়তো অপরাধের প্রকৃতি ও মাত্রাগত দিক থেকে আলাদা করা যায়। তবে উৎস দুটিরই এক এবং নারীর জন্য লাঞ্ছনার মাত্রাগত পার্থক্য বস্তুত ভিকটিমের প্রতি অবিচারই। প্রকৃতিগত পার্থক্য টানা যায় এভাবে যে প্রথমটি মূলত উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মেলামেশার সমস্যা থেকে উদ্ভূত অপরাধ, আর দ্বিতীয়টি সরাসরি যৌন নির্যাতনের অপরাধ। এই অপরাধ ব্যাপক হারে ঘটতে থাকায় এটি সমাজের জন্য সমস্যা হয়ে উঠেছে।

এই দুষ্টচক্র যে এ সমাজে পাকাপোক্ত আসন করে নিতে পারছে, তার কারণ যৌনতা সম্পর্কে আমাদের নীরবতা। যে সমাজকে আমরা নারী ও পুরুষের মধ্যে সব ধরনের লিঙ্গবৈষম্য রদ করে সমতাভিত্তিক করে গড়তে চাইছি, সেখানে যৌনতা কোনোভাবেই আলোচিত না হলে অভীষ্ট লক্ষ্য কীভাবে অর্জিত হবে? পারস্পরিকতা, বোঝাপড়া ও সহযোগিতা ওপর-ওপর চলতে পারে, কিন্তু এসবের ভিত্তি হবে ভান, কপটতা এবং অনেকাংশে মিথ্যাচার। এই অপরিপক্বতার ফলে সমাজে অধিকাংশ দাম্পত্য সম্পর্ক বস্তুত ঘানিটানার মতো গতানুগতিক, যান্ত্রিক, একঘেয়ে ও ক্লান্তিকর ব্যাপারে পরিণত হয়। এভাবে সমাজে যৌনতার একটা রুগ্ণ ক্ষয়িষ্ণু রূপ টিকে আছে। এ থেকে যৌনতা সম্পর্কে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যকর মনোভাব তৈরি হতে পারে না। অস্পষ্ট, প্রায়ই অসুস্থ এই মানসিকতার ফলে ছেলেমেয়েরা নানা রকম অজ্ঞতাজনিত ভীতি, আশঙ্কা এবং বয়সোচিত জৈবিক-মানসিক রোমাঞ্চ, শিহরণ ইত্যাদির জগাখিচুড়ির মধ্যে বড় হতে হতে ঘটনা-দুর্ঘটনার জন্ম দেয় বা তার শিকার হয়।
আমাদের সমাজে মেয়েরা স্বাধীনতা, সুযোগ-সুবিধা, প্রশ্রয় কিছুতেই ছেলেদের সমকক্ষ নয়। একটা বয়সে ছেলেরা মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করবে, এটি আমরা জানি। সমতা থাকলে এ ক্ষেত্রে মেয়েদের দিক থেকেও তা ঘটত। কিন্তু অসমতার বাস্তবতায় স্বভাবতই সন্ত্রস্ত ও সাবধানি বাবা-মা মেয়েকে ছেলেদের কাছ থেকে আগলে রেখে নিরাপদে বিয়ে পর্যন্ত পার করতে প্রাণান্ত পরিশ্রম করছেন। সব পিতা-মাতা সব সময় মেয়েকে এত লম্বা সময়, তদুপরি যে বয়সটা তার সামাজিকভাবে বেড়ে ওঠার কাল, কঠোর নিরাপত্তা অর্থাৎ বিচ্ছিন্নতার ঘেরাটোপে রাখতে পারেন না। তাদের অসুবিধা যেমন আছে, তেমনি বয়স তার ধর্ম পালন করে এবং এই অস্বাভাবিক অবস্থায় অস্বাভাবিক আচরণের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করতে চায়। এভাবে সমাজই অপরাধের জন্ম দেয়, আবার তার কাছেই জিম্মি হয়ে থাকে।
আমাকে এনজিওর এক বন্ধু আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছিলেন, আসুন না, ইভ টিজিং বন্ধের জন্য একটি মানববন্ধন করি। আমি তাঁকে জিগ্যেস করেছিলাম, তাঁর বাজেট কত। অঙ্কটা শুনে তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলাম, চলুন না, সেই বাজেট দিয়ে পঞ্চাশ পঞ্চাশ এক শটা ছেলেমেয়েকে দুই দিন একসঙ্গে কাজ করতে দিই। তাতে ফল হবে, ওই ছেলেগুলো আর ইভ টিজিং করবে না। ঠাট্টা-তামাশার মাত্রা ছাপিয়ে ছেলেমেয়ের সম্পর্ক নির্যাতনের পর্যায়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ছেলের জন্য প্রধান সুবিধা হলো অপরিচয়—আক্রান্ত নারীর সঙ্গে অপরিচয়। যখন ছেলেমেয়েরা আনন্দময় মহৎ, সৃষ্টিশীল কাজের সঙ্গী হয়, তখন তাদের মধ্যে যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধার বোধ তৈরি হতে পারে, তা আনন্দ বা মহত্ত্বের অভিজ্ঞতাকে মূল্য দিতে শেখায় এবং সে অভিজ্ঞতাকে কেউই চট করে কলুষিত করতে পারবে না।
তাই অপরিচয়ের বেড়া ভাঙতে হবে। এ কাজটা আদতে সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত। কিন্তু আমাদের সমাজে এটা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ, বড়রা শিশু-কিশোরদের সঙ্গ দিচ্ছেন না। বাবা-মা, শিক্ষক বা অন্য আত্মীয়স্বজন আজ যে ভোগসর্বস্বতার কাছে নতজানু হয়ে পড়েছি, তাতে ন্যূনতম নীতির আলোকে সমাজের কাজ করার মতো মানসিকতা তরুণ-তরুণীরা হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু মেয়েদের প্রকৃত জীবন থেকে নেপথ্যের জীবনে ঠেলে দিয়ে দায়িত্ব সারা যাবে না।

একটা স্বাভাবিক বিষয় এ সমাজ না জানার ভান করছে। অতীতকাল থেকে সব রকম বুনো প্রাণীকে পোষ মানানোর কাজটার সূচনা করেছিল নারীরা। দার্শনিক উইল ডুরান্ট লিখেছেন, নারী বন্য পশু পোষ মানাতে মানাতে পুরুষকেও প্রায় বাগে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সম্পদের ওপর প্রভুত্বের (এঙ্গেলস স্মরণ করুন) প্রয়োজনে তারা বল্গা ছিঁড়ে ফেলেছে। আমার বিশ্বাস, কিশোরকে সবচেয়ে ভালো ম্যানেজ করতে পারেন স্নেহশীল নারী। আগে পাড়াগুলো যখন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কাজে প্রাণবন্ত ছিল, তখন দেখেছি একটু বয়স্ক আপা, খালাদের কী রকম ন্যাওটা হয়ে যায় কিশোরেরা। এঁরাও এখন কালের গর্ভে হারিয়ে গেছেন। কিশোর যখন যৌনতাড়নায় ভোগে, তখন তাকে নিঃসঙ্গতা কিংবা কুসঙ্গে ঠেলে দেওয়া তো সামাজিক অপরাধ। যুগ যুগ ধরে এ অপরাধ তো আমরা করে আসছি। আজকে ডিভিডি, চ্যানেল, ইউটিউব এবং মেইলের মাধ্যমে যেভাবে যৌনতার মুক্ত ভয়ংকর প্রদর্শনী ও ছড়াছড়ি চলছে, তখন কোনো রকম শিক্ষা-সাহচর্য-পরামর্শ ছাড়া একটা সদ্য প্রবৃত্তিতাড়িত-পীড়িত কিশোরকে আমরা এর মধ্যে ছেড়ে দিয়ে তার কাছ থেকে সঠিক আচরণটি আশা করছি। একি ভণ্ডামি নয়! কিশোরের যাতনা বুঝতে হলে সেইন্ট অগাস্টিন, লিও তলস্তয়, মহাত্মা গান্ধী—তিন মনীষীর আত্মজীবনীতে তাঁদের কৈশোরকালের অধ্যায়ে একটু চোখ বোলাতে বলব। এ সমাজ শিশু-কিশোর ও কিশোরীদের সঙ্গে শুধুই ভণ্ডামি, নিষ্ঠুরতা ও দায়িত্বহীন আচরণ করে চলেছে।
যৌনতার নিরিখে ছেলেদের পক্ষে ভয়ংকর হওয়া সম্ভব। মেয়েদের পক্ষে ছেলেকে প্ররোচিত করা সম্ভব হলেও একজন মেয়ের অজান্তেও ছেলেটি প্ররোচিত হতে সক্ষম। যৌনতার আগমন জীবনের স্বাভাবিক জৈবিক পরিণতি। ফলে অবদমন কোনো সমাধান নয়, এর সুষ্ঠু সুস্থ বিকাশই কাম্য। সে ক্ষেত্রে বড়দের সুচিন্তিত সংবেদনশীল সাহচর্য প্রয়োজন।

ফলে যৌন প্রসঙ্গে নীরবতা ভাঙতে হবে। আমরা যেহেতু নারী-পুরুষের বৈষম্যহীন সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের অঙ্গীকার করেছি, তাই এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গকে এড়িয়ে যেতে পারি না। যৌনতা এমন এক উপাদান, যা নারী-পুরুষের জীবনে কখনো ভীষণ সহায়ক, কখনো প্রতিবন্ধক, কখনো শান্তি-প্রীতির আধার, কখনো সংঘাত-ঘৃণার হাতিয়ার হতে পারে। অথচ একে এড়িয়ে কেবল নিষেধাজ্ঞার পথে চলতে গিয়ে একটা আড়াল তৈরি করছি। ফলে সমাজে যৌনতার বেপরোয়া চণ্ড রূপটিই প্রকট হয়ে উঠছে। নারীবাদী লেখিকা আঁদ্রিয়া নাই লিখেছিলেন, পুরুষ যেহেতু ধর্ষণে সক্ষম, তাই তার পক্ষে ধর্ষকে পরিণত হওয়া সম্ভব। এখানে এটুকুও বলে রাখা ভালো, বিজ্ঞান বা কলা যেকোনোভাবেই কাম প্রসঙ্গ অচর্চিত থাকার ফলে এ সমাজে অধিকাংশ দাম্পত্যের ক্ষেত্রেও নারী (অনেক ক্ষেত্রে পুরুষও) প্রকৃত যৌনতৃপ্তি থেকে বঞ্চিত থাকে, অনেক স্ত্রী স্বামীর হাতে ধর্ষিতা হয়। এর বিপরীতে হয়তো নারীর প্ররোচনার কথা তোলা হবে। মেয়েদের পোশাক-আশাক ও চলাফেরা ইত্যাদি নিয়ে কথা উঠবে, এতে সারবত্তা কিছু আছে, কিন্তু এটুকুতে সমস্যার মৌলিক জায়গায় যাওয়া যায় না। কারণ, এতে হয়তো আকর্ষণ বোধের মাত্রার হেরফের হতে পারে, কিন্তু মূল বিষয়টি হলো বিপরীত লিঙ্গের মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ জৈবিক এবং স্বভাবগত। মাত্রাগত ভূমিকাকে আমি অস্বীকার করব না, কিন্তু সেটুকু প্রথমত সমস্যার অসম্পূর্ণ সমাধান, আর দ্বিতীয়ত এর বিপরীত ধরনের অপব্যবহার ঘটার আশঙ্কাই থাকবে বেশি, যার ভুক্তভোগী হবে নারী। বস্তুত এটাই আমাদের সমাজে ঘটতে দেখছি।

কথা হলো, নারীর ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটতে হবে, যা সমাজ দেখবে এবং মান্য করবে। প্রকাশ্যে এই স্বীকৃতি ও মান্যতা নারী-পুরুষ সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এই সূত্রে আরেকটি প্রসঙ্গ এসে যায়। একসময় কোনো একটি ভারতীয় চ্যানেলে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত অভিনেতা-নির্মাতা আলিক পদমসি একটি সিরিয়াল অনুষ্ঠান করতেন ‘ড্রিম মারচেন্ট’ নামে। এতে তিনি দেখিয়েছিলেন, কীভাবে বাজার অর্থনীতির এই যুগে ভোগ্যপণ্যের বিপণনে নারীর যৌন আবেদনকে অত্যন্ত কৌশলে ব্যবহার করা হয়। ধরে নেওয়া হয় যে বাজার এখনো পুরুষ ক্রেতাই নিয়ন্ত্রণ করছে, তাই টোপ হিসেবে নারীর এই অপব্যবহার। মানতেই হবে, পুঁজিবাদের অভিশাপ হলো, এ সবকিছুকেই ব্যবসার বিষয় করে ফেলে এবং সবকিছুর মূল্য নির্ধারণ করে বিপণনযোগ্যতার নিরিখে। ফলে বাজার সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করছে, নীতি, ঔচিত্য বা সংস্কৃতির সব গণ্ডিই তছনছ করে একতরফা সর্বনাশা খেলায় মেতেছে বাজার। তাতে সমাজের মানবিক ঐতিহ্যের অনেক কিছুই বিনষ্ট হচ্ছে—নীতিনৈতিকতাও চাপে পড়ছে, তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নারীর শালীন সৌন্দর্য।

এ রকম মুক্তবাজারের মধ্যে কিশোরটিকে আপনি একা ছেড়ে দিতে পারেন না। মেয়েটিকে তার দৃষ্টির বাইরে রাখার কৌশলও কাজ দেবে না। মানুষ আগুন নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবহার করতে শিখে সভ্যতার পথে এগিয়েছে। ঠিক একইভাবে যৌনশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখে সঠিক পথে সভ্যতাকে আরও এগিয়ে নিতে পারি আমরা। অতএব যৌবনকে ভয় পেলে চলবে না, প্রমথ চৌধুরীর মতো বলুন, যৌবনে দাও রাজটিকা। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন নতুন যৌবনের দূত যেমন বেড়া ভাঙে, তেমনি গড়ে তোলার কাজও সে-ই করে। আর বিদ্রোহী নজরুল যেন স্বয়ং যৌবনের জয়তিলক।

ধর্ষণের কালো মৃত্যুপুরী থেকে আলো-ঝলমল জগতে ফিরে আসতে হলে জীবনেরই ফুল ফোটাতে হবে। সে জীবনে কিশোরের যেমন ভূমিকা থাকবে, কিশোরীরও থাকবে তেমনি। সম-অধিকারে সমান তালে ওরা যৌথ কাজে অংশ নেবে। বড়দের ভূমিকা অবশ্যই প্রভুত্ব বা খবরদারির নয়, অংশীদারের—সহায়ক পথপ্রদর্শক অংশীদারের।

 আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।


Source: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-19/news/322477

85
Journalism & Mass Communication / I Myself Bangladesh.........
« on: January 17, 2013, 10:02:05 AM »
নিশ্চিত হয়ে গেছে বারাক ওবামার বিজয়। দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। টিভিতে, ইন্টারনেটে ওবামার ‘বিজয়ক্ষণ’ দেখেছে গোটা পৃথিবী। এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে জুয়েলের সঙ্গে কথোপকথন।‘জুয়েল ভাই, একটা লেখা যে লিখতে হয়!’‘ভাই, খুব ক্লান্ত। পরে লিখলে হয় না? আমরা এখনো শিকাগোতে। পুরো সপ্তাহ কাজ... দিনে ২০ ঘণ্টা। এইবার ছেড়ে দেন।’‘বিজয়মুহূর্তে আপনি বারাক ওবামার সঙ্গে ছিলেন। সবকিছু আপনার নিজের চোখে দেখা। আপনি না লিখলে কি হয়?’অনেক চাপাচাপির পর অবশেষে রাজি হন জুয়েল সামাদ; বার্তা সংস্থা এএফপির হোয়াইট হাউস ফটো সাংবাদিক। ‘না’ বলাটা এখনো শিখে উঠতে পারেননি হয়তো। সে কারণেই প্রেসিডেন্টকে নিয়ে শিকাগো থেকে এয়ারফোর্স ওয়ান হোয়াইট হাউসের পথে উড়াল দেওয়ার আগেই লেখাটা পাঠিয়ে দেন ঠিকঠাক। সঙ্গে তাঁর নিজের তোলা অসাধারণ সব ছবি।
১০ নভেম্বর, ২০১২। জুয়েল সামাদের লেখা ও ছবি নিয়ে প্রকাশিত হয় ‘ছুটির দিন’-এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন—‘বিজয়ক্ষণে বারাক ওবামার সঙ্গে’।
সেবারই প্রথম নয়। এই আলোকচিত্রী আমাদের এমন অনুরোধ রেখেছেন একাধিকবার। কিন্তু জুয়েল সামাদ কীভাবে পৌঁছে গেলেন হোয়াইট হাউস অবধি? কীভাবে হয়ে উঠলেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষটির নিত্য সহচর? জানা যাক সেই কাহিনি।

একের পর এক গুলি বেরিয়ে যাচ্ছে কানের পাশ দিয়ে। চারপাশে দাউ দাউ আগুন। মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে ধরণি। এসবের মধ্যেই জীবন বাজি রেখে ছুটে চলেছেন অকুতোভয় এক বাংলাদেশি যুবক। গল্প-উপন্যাসের পাতায় এমন দুঃসাহসী ‘চিরনবীন’ বাংলাদেশি তরুণের খোঁজ মেলে। কিন্তু বাস্তবে? হ্যাঁ, ইরাকে যুদ্ধের ময়দানে, আফগানিস্তানে ক্যামেরা হাতে ‘অবিশ্বাস্য’ সেই লড়াইটায় লড়েছেন জুয়েল সামাদ। তবে, সেই যুদ্ধই প্রথম নয়। জুয়েলের জীবনের শুরুটাই হয়েছিল অন্য এক ‘যুদ্ধ’ দিয়ে। পুরান ঢাকায় কেটেছে জুয়েলের শৈশব। জন্মের এক মাস পর থেকেই দাদা-দাদির কাছে মানুষ। বাবা আবদুস সালাম নিজেও ছিলেন আলোকচিত্রী। সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা মারা যাওয়ার পর অকূল পাথারে পড়ে জুয়েলদের পরিবার। জুয়েল তখন ক্লাস নাইনের ছাত্র।

১৯৯৩ সাল। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল হয়েছে। ছয়টা লেটার নিয়ে পাস করেছেন জুয়েল। বন্ধুবান্ধব কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। কিন্তু জুয়েলকে নামতে হলো চাকরির সন্ধানে। এগিয়ে এলেন ডেইলি মর্নিং সান পত্রিকার প্রধান আলোকচিত্রী আবু তাহের। তাঁর সহায়তায় শুরু হলো ডেইলি মর্নিং সান-এর ডার্করুমে কাজ শেখার পালা। একটা পেনট্যাক্স ক্যামেরা নিয়ে জুয়েল নিজেই শুরু করলেন ছবি তোলার কাজ। পরে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করলেন। ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে জুয়েলের চাকরি হয়ে গেল জনকণ্ঠ পত্রিকায়।

এরই মধ্যে আরেক ঘটনা। বার্তা সংস্থা এএফপির বিশ্বজোড়া খ্যাতির কথা কে না জানে। এএফপির দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান জন ম্যাকডুগ্যাল এলেন ঢাকায়। জনকণ্ঠ পত্রিকায় একটা ছবি দেখে দারুণ পছন্দ হয় জনের। ওই ছবির আলোকচিত্রী ছিলেন জুয়েল সামাদ। ডাক পেলেন তিনি। ক্যামেরা হাতে দিয়ে তাঁকে বলা হলো, ‘তোমার হাতে মাত্র ৩০ মিনিট সময়, এর মধ্যে তোমাকে রিকশাচালকদের কিছু ছবি তুলতে হবে।’ জুয়েল ছবি তুললেন। তাঁর তোলা ছবি মনে ধরে গেল জনের। মনে যে ধরল, তার প্রমাণ—কয়েক দিন পর পেয়ে গেলেন বার্তা সংস্থা এএফপিতে কাজ করার প্রস্তাব। সেই সুবাদে শুরু হলো ক্যামেরা কাঁধে জুয়েলের ‘মিশন’। পাকিস্তান, আফগানিস্তান ঘুরে ইন্দোনেশিয়ায় জুয়েল এলেন ব্যুরোপ্রধান হিসেবে। এরই মধ্যে ইরাক আর আফগানিস্তানে যুদ্ধের ময়দানে যেতে হয়েছে একাধিকবার। ২০০৮ সালের আগস্টে এল যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ডাক। ওবামার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে অফিশিয়ালি দায়িত্ব পেলেন হোয়াইট হাউসে কাজ করার। তারপর এএফপির হোয়াইট হাউস ফটোগ্রাফার হিসেবে বারাক ওবামাকে ‘কাভারেজ’ করার দায়িত্ব। এখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জনসমক্ষে উপস্থিতি মানেই বুঝে নেবেন, ক্যামেরা কাঁধে আশপাশেই আছেন বাংলাদেশের ছেলে জুয়েল সামাদ!



Source: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-17/news/322136

86
Journalism & Mass Communication / Intelligence is the Sword!
« on: January 13, 2013, 03:38:30 PM »
১২ বছর বয়সী সিয়াম অপহূত হয়েছিল গত মাসে। অপহরণের পর মুক্তিপণও চাওয়া হয়েছিল তার পরিবারের কাছে। কিন্তু সিয়াম শেষমেশ বুদ্ধি খাটিয়ে বের হয়ে আসে অপহরণকারীদের কবল থেকে!

ষষ্ঠ শ্রেণীর সেকেন্ড বয় ইমতিয়াজ আহমেদ। সবাই ডাকে সিয়াম নামে। পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজারের একটি স্কুলের ছাত্র সে। ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বরের ঘটনা। সেদিন ছিল হরতাল। পরের দিন সামাজিক বিজ্ঞান পরীক্ষা। সিয়াম তো সবকিছুই পড়েছে। তাই খানিকক্ষণের ছুটি মিলেছে মায়ের কাছ থেকে। সময় বেলা আড়াইটা। বাসা-লাগোয়া হাজি মাজহারুল হক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ। শুরু হলো খেলা। খেলায় সবার সঙ্গে যোগ দিল সিয়ামের বন্ধু মুহিতের (ছদ্মনাম) ফুফাতো ভাই অনিক চৌধুরী। ২৬-২৭ বছর বয়সী এই তরুণের সঙ্গে তাদের পরিচয় মাস পাঁচেক হয়। এরই মধ্যে অনিক বেশ খাতির জমিয়েছে মালিটোলার ছোট ছেলেপুলেদের সঙ্গে। বিশেষ করে সিয়ামের সঙ্গে তার বেশ ভাব। খেলা শেষ হলো বেলা সাড়ে তিনটার দিকে। ৩৬ রান করে দলকে জেতায় সিয়াম। অনিক এসে বলল, ‘সিয়াম, চলো আজকে তোমাকে আমার অ্যাকুরিয়ামের মাছ আর কবুতর দেখাব। মুহিতও যাবে আমাদের সঙ্গে।’ অ্যাকুরিয়ামের মাছ আর কবুতরের ভীষণ নেশা সিয়ামের। অনিক এটা ভালো করেই জানত। আর জানত, তার প্রস্তাবে সিয়াম রাজি হয়ে যাবে নির্দ্বিধায়। হলোও তাই। বাসায় গিয়ে কোনো রকমে গোসল সেরে, মুখে কিছু না দিয়েই বাইরে বেরিয়ে এল ছেলেটা। মা রওনক জাহান, ব্যবসায়ী বাবা এস এম সিরাজউদ্দৌলা টেরও পেলেন না কিছু।

ধলপুরের চিড়িয়া
মাঠে এসেই সিয়াম দেখে অনিক আছে, মুহিত নেই। তাই জিজ্ঞেস করল, ‘মুহিত যাবে না?’ অনিক বলল, ‘মুহিত আগেই চলে গেছে ওর মায়ের সঙ্গে। ’
রিকশায় চেপে বসল তারা। যেতে যেতে অনিক জেনে নিল সিয়ামের বাবার মুঠোফোন নম্বর। মা কী করেন, বাবা কী করেন—এমন হাজারো প্রশ্ন তার। সিয়ামও সব বলে দিল গড়গড় করে। হরতালের দিন, বেশ কয়েকটি গলি পেরিয়ে তারা পৌঁছাল কমিশনারের গলির শেষ মাথায়, একটা ছিমছাম ছয়তলা বাসায়। উঠে গেল সেই বাসার চারতলায়। বাসায় ঢুকেই সিয়াম জানতে চাইল, ‘মুহিত কোথায়?’ অনিক বলল, ‘আছে হয়তো আশপাশে। চলে আসবে এখনই। তুমি এখানে বসো, জুস খাও।’ জুস খাওয়ার পরও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল সিয়াম। অনিকের স্ত্রী ও তাদের তিন-চার মাস বয়সী সন্তান বাদে আর কাউকে খুঁজে পেল না বাসাটায়। খানিকটা সময় কেটে গেল অ্যাকুরিয়ামের বর্ণিল মাছ আর বিচিত্র সব কবুতর দেখে। কিন্তু তার পরও যে মুহিতের দেখা নেই। এদিকে বেলা যায় যায়। পরের দিনই পরীক্ষা। বাসায় দেরি করে ফিরলে তো রেহাই নেই! সিয়াম আবার গেল অনিকের কাছে, ‘ভাইয়া, মুহিত কোথায়? দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি বাসায় ফিরব।’ কথাটা বলতেই চোখের সামনে আরেক অনিককে আবিষ্কার করল সিয়াম! চোখ রাঙিয়ে ধমকে উঠল লোকটা, ‘খবরদার, আর একটা কথা বলবি না!’ বলতে বলতে টেনেহিঁচড়ে আরেকটা ঘরে নিয়ে গেল তাকে। বের করল একটা চকচকে ধারালো চাকু! গলার কাছে ধরে হুমকি দিল, ‘চিৎকার-চেঁচামেচি করলে মেরে ফেলব একেবারে।’ হতভম্ব হয়ে গেল সিয়াম। চিৎকার-চেঁচামেচির প্রশ্নই আসে না। তার ভাষায়, ‘তখন শুধু আম্মু-আব্বুর কথা মনে পড়ছিল! কিন্তু কাঁদছিলাম না আমি।’ অনিক আর তার স্ত্রী সিয়ামের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলল ওড়না দিয়ে। প্রথমবার বিদ্রোহ করতেই হাত দুটো সামনে এনে বাঁধল অনিক। পা বাঁধতেও ভুলল না। মুখে শক্ত করে লাগিয়ে দিল মোটা স্কচ টেপ। তারপর রুমের বক্স খাটটার তোশক আর পাটাতন সরিয়ে সিয়ামকে শুইয়ে দিল মাঝখানে। তার ওপর আবার বিছিয়ে দিল পাটাতন ও তোশক। সিয়ামের মনে পড়ছিল সেই সময়টার কথা, ‘শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।’

সত্যিকারের অ্যাডভেঞ্চার
খাটের মধ্যে বন্দী সিয়াম। কিছুটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর ধাতস্থ হলো সে। চিন্তা করল, যে করেই হোক, বেরিয়ে যেতে হবে। তাই অনেক কষ্টে পা দিয়ে জোরসে আঘাত করল খাটে। শব্দ পেয়েই ছুটে এল অনিক। হিসহিসে গলায় হুমকি দিল, ‘শব্দ করলেই মেরে ফেলব!’ তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে রইল সিয়াম। বাইরে বেশ ঠান্ডা, কিন্তু খাটের নিচে ঘেমে-নেয়ে একাকার সে। খাটের নিচ দিয়ে কেবল একটুখানি করে বাতাস আসছিল। ‘সময়ের হিসাব তখন মাথায় ছিল না। কিছুক্ষণ পর আবার খাটে আঘাত করলাম আমি। কোনো সাড়া নেই। আবার শব্দ করলাম, আগের চেয়ে জোরে। তার পরও সাড়া নেই। এরপর একটানা কিছুক্ষণ শব্দ করে গেলাম। নিশ্চিত হলাম—বাসায় কেউ নেই!’ বলছিল সিয়াম।

ব্যস, সেই সুযোগের সঙ্গে সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে এল ঘাম! ঘামের কারণে মুখের স্কচটেপ অনেকটাই খুলে গিয়েছিল। হাত বাঁধা থাকার পরও অনেক চেষ্টা-চরিত্র করে টেনে বাকিটুকুও খুলে ফেলল সিয়াম। স্কচ টেপ খুলতেই দাঁত দিয়ে হাতের বাঁধন খুলতে শুরু করল সে। খুলেও গেল একসময়! এরপর পা, সেটাও মুক্ত। এরপর? সিয়ামের মুখে শুনুন বাকিটুকু, ‘হাত-পায়ের বাঁধন খুলে ফেলার পর পিঠ দিয়ে ওপরের দিকে ঠেলতে লাগলাম। ঠেলতে ঠেলতে খাটের পাটাতনটা একটুখানি সরে গেল। ওই জায়গাটা দিয়েই কষ্ট করে বেরিয়ে এলাম। ছিলে গেল হাত আর পিঠ। কিন্তু তখন আর ব্যথা নিয়ে মাথা ঘামালাম না। সোজা গিয়ে আটকে দিলাম প্রধান দরজার ছিটকিনি। কারণ, জানতাম, ভেতর থেকে বন্ধ থাকলে তারা সহজে ঢুকতে পারবে না। এরপর প্রতিটা ঘর আর বাথরুম চেক করলাম। কাউকেই পেলাম না। বাসার চারপাশ ঘুরে দেখলাম। খুঁজতে লাগলাম বেরোনোর পথ।’ কিন্তু কোনো পথই যে নেই! একটা উপায় বের করল ছোট্ট সিয়াম। রান্নাঘরে পেয়ে গেল আলু আর পেঁয়াজ। সেগুলো নিয়ে ছুড়ে দিতে লাগল জানালা দিয়ে। নিচেই বেশ কয়েকটি দোকান, পথচারীদের আনাগোনা। অনেকেই বিষয়টা লক্ষ্য করল। কিন্তু বাচ্চা-কাচ্চার দুষ্টুমি ভেবে নজর দিল না সেভাবে। সিয়ামের বাবার মুঠোফোনে ততক্ষণে ফোন করেছে অনিক, ‘ছেলেকে বাঁচাতে চাইলে ২০ লাখ টাকা নিয়ে আসুন। বেশি চালাকি করলে বা রাজি না হলে কালই আপনার ছেলের শরীরের একটা অংশ পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’ শুনেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল সিরাজউদ্দৌলার। উদ্বিগ্ন স্ত্রীকে কেবল বললেন, ‘ছেলে ভালো আছে। এক জায়গায় খেলতে গেছে। চিন্তা কোরো না, আমি দেখছি।’ কিন্তু মা কি আর চিন্তা না করে পারেন! কান্নায় অস্থির তিনি।

তখনো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে সিয়াম, ‘আমাকে বাঁচান! ওরা আমাকে কিডন্যাপ করেছে। আমাকে মেরে ফেলবে!’ প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চিৎকার করার পরও তার কথা পৌঁছাল না কারও কানে! কী করে সিয়াম! খুঁজে একটা কলম আর কাগজ পেয়ে গেল। ছোট্ট দুটি চিরকুটে লিখল, ‘আমাকে কিডন্যাপ করেছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে বাঁচান!’ নিচে ওর বাবার মুঠোফোন নম্বর। লেখা শেষ হলে চিরকুট দুটি আলুর সঙ্গে মুড়িয়ে ছুড়ে মারল রাস্তায়। একজন সেটা কুড়িয়ে নিয়ে পড়তেই পুরো ধলপুর এলাকায় তোলপাড়! ঘেরাও করা হলো বাসাটা!

মায়ের বুকে সিয়াম
রাত দুইটার দিকে বংশাল থানায় ছেলেকে ফিরে পেলেন মা রওনক জাহান। বলছিলেন সেই মুহূর্তের কথা, ‘ছেলেকে ফিরে পাওয়ার পর আমার আর কিছু মনে নেই! ওকে বুকে জড়িয়ে ধরতে ধরতে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম! ’ অনিক চৌধুরীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে ধলপুরের ওই বাসা থেকে। ভিড়ভাট্টা দেখার পরও বাসায় ঢুকেছিল সে। হয়তো ভাবতেও পারেনি, ছোট্ট সিয়াম এভাবে বেরিয়ে আসবে। অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির মামলায় বিচার চলছে তার। এ ছাড়া বেরিয়ে এসেছে তার আগের কুকীর্তির খবরাখবর। সিরাজউদ্দৌলা আশা করছেন, ‘ছেলেকে ফিরে পেয়েছি, কিন্তু এই আসামি যেন আর কোনো ক্ষতি করতে না পারে কারোরই। যথাযথ বিচারই আমাদের কাম্য।’

আর দীপু নাম্বার টু-ভক্ত সিয়াম কী বলে? ছোটদের জন্য ও পরামর্শ দিল, ‘মা-বাবাকে না বলে কোথাও যাওয়া যাবে না। এমনকি পরিচিত কারোর সঙ্গেও না। আর বিপদে যদি কেউ পড়েই যায়, তাহলে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। ’ ভাবছেন, শেখানো বুলি? একদম না!

অপহরণ থেকে বাঁচার উপায়
শিশু অপহরণ ঠেকাতে এবং অপহূত হলে কী করা উচিত? এসব বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা দিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের পুলিশের উপকমিশনার মো. মাসুদুর রহমান।
 অপহরণকারীর চোখে চোখ রাখা যাবে না। কারণ, চোখে চোখ রাখলেই অপহরণকারীরা বুঝে ফেলে অপহূত মানুষটি তাকে চিনে ফেলেছে। মোটকথা, অপহরণকারীকে চিনলেও সেটা বুঝতে দেওয়া যাবে না।
 অপহরণকারীরা যা বলে, সেভাবেই চলতে হবে। এটা ভিকটিম ও ভিকটিমের মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন—সবার বেলায় প্রযোজ্য।
 অপহরণকারীর মানসিকতা বুঝতে হবে। শিশুদের হয়তো এটা বুঝতে বেগ পেতে হয়। কিন্তু অভিভাবকদের বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। ভিকটিমকে নিরাপদে রাখাটাই প্রধান ও প্রথম দায়িত্ব তাঁদের। আর মুক্তিপণের টাকার অঙ্ক নিয়েও কোনো বাগিবতণ্ডায় জড়ানো উচিত নয়।
 পালানোর জন্য অহেতুক চেষ্টা না করা। পালানোর আগে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে।
 অভিভাবকদের নিশ্চিত হতে হবে, সন্তানেরা কার সঙ্গে চলাফেরা করছে। কারণ, ইদানীং বন্ধুদের মধ্য থেকেই অপরাধী বেরিয়ে আসছে বেশি।
 সন্তানেরা কোথায় গেল, কতক্ষণ থাকবে, কার সঙ্গে থাকবে—এসব বিষয়ে মা-বাবাকে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে সব সময়।



Source: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-12/news/320609

87
Hadith / Re: One Hadith A Day
« on: January 12, 2013, 09:57:13 AM »

88
Journalism & Mass Communication / Islamic Terminology
« on: January 10, 2013, 10:15:40 AM »

89
Journalism & Mass Communication / Re: About Jamjam Well
« on: January 08, 2013, 01:36:00 PM »
Thank you all. May Allah quench us with "Hauze Kawsar".

90
Law / Re: What's from Govt. for Autistic Children??
« on: January 07, 2013, 01:25:10 PM »
Thank you madam for sharing this great news .............

Pages: 1 ... 4 5 [6] 7 8 ... 14