Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - mardia.ce

Pages: [1]
1
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এক ভদ্রলোক অপর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া সহপাঠীকে বলেছিলেন। ‘যেখানেই আমাদের চাকরি হোক, কম্পিউটারের স্বার্থে হলেও একটা এসি রুম দিবে, আর তোদের মাঠেঘাটে ঘুরতে হবে’। কথা হাড়েহাড়ে সত্যি। পাশ করার আগে এবং পরে শুধু ধূলার রাজ্যে চলাফেরা করতে হয়। এমনকি শতভাগ ডিজাইনের কাজ করেন, এমন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকেও কাজ দেখতে যেতে হয় নিজের প্রয়োজনেই। ডিজাইন তারটাই বেশি বাস্তবসম্মত, যিনি ফিল্ডের অবস্থা বেশি জানেন। এজন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং একসময় গিয়ে দাঁড়ায় 'লেস ইঞ্জিনিয়ারিং, মোর ম্যানেজমেন্ট'। অর্থাৎ মেশিনপত্র খুটুরখাটুর করার চেয়ে কাজ বুঝে লোক চালানোই মুখ্য হয়ে যায়।
 
পড়াশোনার সময়টাতে এ ব্যপারটা অনুশীলনের জন্য নানারকম কোর্স আছে। স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় মাঝেমাঝে বিরক্ত হয়ে যেতাম, কী কাজে লাগবে এইসব নাটবল্টু, লেদ মেশিন আর কাঠের কাজের ইতিবৃত্ত জেনে? পরে সাইট বা নিজের ঘরে কাজ করাতে গিয়ে দেখি, কাজ করাতে হলেও একটা পর্যায়ের জ্ঞান লাগে। নইলে 'পনর বিশ বচ্ছর ধইরা এই কাম করি, এক মাসের আগে পারুমই না' টাইপের আপত্তির কাছে একদম হেরে যেতে হয়। এক বছরের প্রজেক্ট টাইম অনিচ্ছাসত্ত্বেও বেড়ে যায়, হয়ত আঠারো মাসে বছর হয়ে যায়।
 
পড়াশোনার কাজে একটু গভীর মনযোগ দিতে হবে। তার ওপর আছে কিছু ব্যক্তিগত ব্যস্ততা। বাইশের শেষ ছয়মাস মাত্র তিনটা ক্লাসের সাথে দুইটা কোর্স দেওয়া হল। Workshop Lab এবং Details of Construction Lab. দুইটারই সাবজেক্ট এরিয়া বিশাল, ক্লাসরুমে করার কিচ্ছু নাই। সুতরাং সেভাবেই সাজিয়ে ফেললাম পুরো সেমিস্টারের কাজ৷ ক্লাসরুমকে শুধু রাখলাম রিপোর্টিং এর জায়গা হিসেবে।
 
Details of Construction Lab কোর্সে ছোট ছোট সাতজনের গ্রুপ করা হল, চারটা৷ এক সপ্তাহে কাজ দেখতে যাবে, পরের সপ্তাহে সেটার ওপর প্রতি গ্রুপের যে কোন দুইজন সদস্য প্রেজেন্টেশন দেবে। পরের সপ্তাহে অন্য দুইজন। প্রতিবার এই কোর্সে আমি  ইঁট-বালি-সিমেন্ট-খোয়া, গ্লাস-এলুমিনিয়াম সহ মোটামুটি সমস্ত কনস্ট্রাকশন মেটেরিয়ালের বাজারদর, নতুন ব্র‍্যান্ড এবং কোথায় কি পাওয়া যায়, জেনে যাই। শুধু তাই না, মাটি খোঁড়া থেকে শুরু করে বেসমেন্ট, বীম-কলাম-স্ল্যাব ঢালাই, সিঁড়ি, ফাউন্ডেশন,  ছাদের ট্যাংক, লিফট, ফায়ার এসকেপ কনস্ট্রাকশনের আদ্যোপান্ত জেনে এসে, নিজেদের তোলা ছবি দিয়ে ক্লাসে বুঝাতে হয়েছে ওদের। কাজটা শুধু আনন্দের তাই না, পুরো সেমিস্টার একবারও আমাকে ‘এই চুপ করে আমার কথা শোনো’ কিংবা ‘কেউ ফোন হাতে নিও না’ ধরণের সাবধানবাণী দিতে হয় নি। কারণ ক্লাসে ওদের কাজই ছিলো কথা বলা এবং ফোন থেকে ছবি ঘেঁটে বের করে প্রেজেন্টেশন বানানো।
 
Workshop Lab এর কাজটা এত সহজ ছিলো না। কারণ কাঠ এবং লোহার কাটাকুটির কাজগুলো শুধু দেখলেই হবে না, অভিজ্ঞ কেউ না বুঝিয়ে দিলে কাজ বোঝা যাবে না। এ জায়গায় ছাত্রদের একা পাঠিয়ে দিলে কাজের কাজ হবে না। সুতরাং বের হলাম। ইউনিভার্সিটির আশেপাশে বেশ কয়েকটা ওয়ার্কশপে গিয়ে রীতিমতো অবাক হলাম। একে জায়গা সংকট, তার ওপর কেনই যেন ওরা অজানা অচেনা ছাত্রদের ক্লাস নেয়াতে বেশ অনীহা দেখালো। এদিকে আমাদের বাজেট পাশ হয়ে গেছে, হাতে টাকাও এসে গেছে। শেষ চেষ্টা হিসেবে ক্লাসে ছাত্রদের বললাম। একজনের বাবার বিশাল কাঠের আড়ত এবং ফার্নিচার ওয়ার্কশপ পাওয়া গেলো মিরপুরে। কিন্তু ওয়েল্ডিং আর লেদ মেশিনের কাজ দেখাবো কোথায়? হঠাত মনে পড়লো, আব্বু একজনের কথা বলতেন। আমার আব্বু রিটায়ারের আগে শেষ পনেরো বছর একটা ফার্মাসিউটিক্যালসের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের হেড ছিলেন। বিভিন্ন পার্টস এর কাজ করাতেন একটা ওয়ার্কশপে। সেই আতাউর রহমান আংকেল আবার বেশ ইনোভেটিভ ছিলেন, দারুণ কিছু মজার মজার জিনিস বানিয়ে দিতেন। বই আটকে রাখার একটা স্ট্যান্ড বানিয়ে দিয়েছিলেন স্টেইনলেস স্টীল দিয়ে, দেখাদেখি আমি আবদার করায় আমাকেও দিয়েছিলেন। যা হোক, আব্বুর মাধ্যমে উনার সাথেও যোগাযোগ হল। ঠিক হল, একই দিনে মিরপুর কাঠের কাজ দেখে দিনের পরের অর্ধেকে গাজীপুর কালিয়াকৈর গিয়ে স্টীল ওয়ার্কশপের কাজ দেখাবো। বাজেট এবং গাড়ির অনুমতি নেওয়াই আছে, এগারোই নভেম্বর বেরিয়ে পড়ার প্ল্যান করে ফেলা হল।
 
কখন কোথায় যাওয়া, থামা কিংবা খাবারের বিরতি, এর একটা বিস্তারিত শিডিউল ট্রান্সপোর্ট ডিভিশনের কাছে ইমেইল করেছিলাম। সকাল সাতটায় আশুলিয়া থেকে যাত্রা করে ধানমণ্ডির ছাত্রদের নিয়ে ওখানেই ড্রাইভারদের সাথে ছোট্ট একটা মিটিং করে সে শিডিউল বুঝিয়ে দিলাম। পরের স্টপেজ মিরপুরের কার্পেন্ট্রি শপ। সেখানে যাবার পর ছাত্রদের সাথে ছোট করে ব্রিফিং হল। কিভাবে এই ফিল্ড ওয়ার্কের মার্কিং হবে, কি কি প্রশ্ন করা যাবে, কোন গ্রুপ কতটা প্রশ্ন করবে, ইত্যাদি বুঝিয়ে দিয়েছি। দুইজনকে দেওয়া হল ছবি তোলা আর ভিডিও করার কাজ। আর, একজন পরে বিস্তারিত লিখবে সেটাও বলে দিলাম। গাছ কাটা, সংরক্ষণ, সীজনিং, সেখান থেকে স'মিলে তক্তা বা খুঁটি বানানো, পালিশিং, কিনারের গ্রুভ কাটা, নকশা করা, নানা ধরণের জয়েন্ট করা, এক এক করে সব দেখানো হল। মজার ব্যপার হচ্ছে, আমরা ক্লাসে চার মাসে যা পড়িয়েছি, তার অনেক কাজ এবং যন্ত্রপাতি এখন আর ব্যবহারই হয় না। অটোমেটিক মেশিন এসে গেছে।
 
এখান থেকে বেরিয়ে নামাজ আর খাওয়ার বিরতি। আবার ছোট্ট তিন মিনিটের মিটিং করলাম। ড্রাইভার এবং সাথের স্টাফদের সাথে৷ ঠিক হলো, ভালো একটা খাবার জায়গা বাছাই করতে হবে যেটা গাজীপুরের পথে পড়বে এবং পাশে মসজিদও থাকবে। এখানে একটা বিষয় বলে রাখি। একজন স্টাফ ছিলো একটা বাসে, সে আসলে আমাদেরই ছাত্র, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের। এটা ওর পার্টটাইম কাজ। ওর বাড়িও গাজীপুর হওয়ায় পুরো কাজে চমৎকার সমন্বয় করা গেছে, ড্রাইভারদের সাথে যোগাযোগও সাবলীল হয়েছে।
 
গাজীপুর, আব্বুর প্রাক্তন কর্মক্ষেত্রের ঠিক পাশেই ওয়ার্কশপ। আগেও পিকনিকে এসেছি কয়েকবার। গিয়ে দেখি আতাউর সাহেব বিরাট আয়োজন করেছেন। পাশের ফাঁকা জায়গায় শামিয়ানা টাঙিয়ে ডেকোরেটর থেকে চেয়ার আনিয়েছেন। দোকানের ভেতরে তিনজন বসে আবার প্যাকেট করছে। কলা, আপেল, বিস্কুট আরও কি কি। আপত্তি করলাম। বললেন, আপনার আব্বুর সম্মানে। পাশের টঙ থেকে সবাই চা খেয়েছি, বিল দিতে গিয়ে শুনি কড়া নিষেধ করা আছে। আমাদের থেকে যেন পয়সা নেওয়া না হয়। ছাত্রদেরকে লেদ মেশিন, ওয়েল্ডিং মেশিন নিয়ে বলার সময়ও গলা কেঁপে যাচ্ছিলো আংকেলের। বলছিলেন, 'ইগো থাকা যাবে না, শেখার মানসিকতা না থাকলে টেকনিক্যাল ফিল্ডে টিকতে পারবেন না। এই যে আপনাদের ম্যাডামের আব্বা, আগে কাগজে এঁকে ড্রইং দিতেন, আবার কাঠি দিয়ে থ্রিডি মডেল বানিয়ে দেখাতেন। কত পরামর্শ দিয়েছেন। এত বড় মানুষ এসে আমার দোকানে চা খেতেন আর কাজ দেখায় দিতেন। নিখুঁত না হলে যেতেন না'।
 
ফেরার পথে ওখানে দেওয়া নাশতা দিয়েই বেশ বিকেলের খাবার হয়ে গেলো। শুক্রবার দেখেই হয়তো, নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা আগেই আমরা পৌঁছে গেলাম ক্যম্পাসে। সেখান থেকে একটা বাস আবার আমাদের বাকিদের নামিয়ে দিয়ে আসলো ধানমণ্ডি।
 
ইচ্ছে করেই কিছু প্ল্যানিং বিস্তারিত লিখেছি। কারণ, কাজ যখন ক্লাসের বাইরে, সেখানে দরকার হয় শক্তিশালী এবং বাস্তবানুগ প্ল্যান, আর তার সাথে বাস্তবায়নের ইচ্ছা এবং চেষ্টা। এক্ষেত্রে ছাত্রদের সহযোগিতা যেমন লাগে, তেমন দরকার হয় ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্ট সহ বেশ কয়েকটা অফিসের সমন্বয়। কাজের এক সপ্তাহ পরে ভাইভাতে বসে যখন জিগেস করছিলাম, কি কি ব্যপার ভালো লেগেছে। একজন বলেছে, ম্যাডাম সবচেয়ে ভালো লেগেছে এই যে আতাউর আংকেলকে, উনি এতো চমৎকার একটা মানুষ। আরেকজন বলেছে, করোনায় ক্লাস শুরু হওয়ায় ওরা আর এরকম আউটডোর ট্যুর পায় নি। অনেকটা পথ একসাথে থেকে তিন বছরের চেনা ক্লাসমেটের এমন কিছু গুণ দেখেছে যা আগে জানতোই না।
 
অর্জন হিসেবে, মেশিনপাতির বৃত্তান্ত জানার পাশাপাশি এসবও কম না। কি বলেন?

2
মানুষ, স্রষ্টার  সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। ভাবতেই ভালো লাগে, আপনি আমি আমরা সবাই এক মহান শিল্পীর সযতনে তৈরী ভাষ্কর্য, যিনি নিছক খেয়ালের বশে আমাদের তৈরী করেন নি। একটি শিশুকেই দেখুন না।কি নিখুঁত তার হাত পা নাক মুখ- সব  কিছু। যে বয়সে তার সাহায্য দরকার, সে বয়সে সে কোলে নেবার মত ওজন নিয়ে জন্মায়, যেন আমরা ওদের কোলে নিয়ে নিয়ে দরকারী কাজগুলো করে দিতে পারি। আর যখন সে স্বাবলম্বি, তখন তার হাত পা শক্তসমর্থ, আঘাত সামলানোর ক্ষমতা তৈরী হয়ে যায়। আপনার হাতেই দেখুন, চামড়ার নিচে অসংখ্য রক্তনালী এক বারও তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে না।  আপনার চুল, চোখ, শরীর ঠিক কেমন করে আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে মিলিয়ে তৈরী করা  হয়েছে।
আসুন এবার চোখ ফিরাই, আমাদের হাতে মহান সে শিল্পীর তুলে দেয়া সে শিল্পটির দিকে।  হ্যাঁ, আমি আমাদের বাচ্চাদের কথাই বলছি।  তাকিয়ে দেখুন, সে শিল্পী কী অসামান্য দক্ষতায় আমাদের চোখ-নাক-চুল-ইচ্ছেগুলো ওদের মধ্যে রোপণ করে দিয়েছেন।  ওরা আমাদের অবয়ব নিয়ে আসে, অসহায় বলেই কি? যেন আমরা মায়ায় পড়ে ওদের কাজগুলো যত্ন করে করে দিই? হয়তবা।  ওরা আমাদের মতোই হাসে, কারণ আমরাই ওদের শেখাই, ওরা আমাদের মতো করেই জীবনকে দেখতে শেখে।
আজকের পৃথিবীতে আমরা যারা বড় হয়েছি, কিংবা আমাদের বাচ্চারা বড় হচ্ছে, আমাদের আর আমাদের বাচ্চাদের সামনে অনেকগুলো চ্যলেঞ্জ আসে, যা আমাদের ছেলেবেলায় আসেনি। যে স্বাদের অস্তিত্বই আমরা জানিনা, ওদেরকে সে স্বাদ ভরা জগতে ছেড়ে দিয়ে কেবল ‘সময় খারাপ’ বলে আমাদের কর্তব্য শেষ হবে না। আপনি জানেন না হয়ত, আপনার চঞ্চল ছেলেটি, উচ্ছ্বল মেয়েটি এমন একটি যুদ্ধ নিজের সাথে প্রতিদিন করে যাচ্ছে, যে যুদ্ধ আপনি চিনেনই না। এই সদাপরিবর্তনশীল জগতে তাকে ছেড়ে দিতে আপনি বাধ্য, কিন্তু ছড়ি হাতে তাকে শুধু কিছু ‘নিয়ম’ শেখানোই যথেষ্ঠ নয়, প্রয়োজন মূল্যবোধ শেখানো। নিয়ম সব জায়গায় খাটে না, কিন্তু মূল্যবোধ আমাদেরকে শিখিয়ে দেয়, বা জেনে নিতে উৎসাহ দেয়, আমরা কখন কি করবো।
তো, অনেক লেখাপড়া,  খুঁটিনাটি কাজ আর অভ্যাস  শেখানোর ফাঁকে আসুন  না আমরা বাচ্চাদের কিছু জিনিসের পার্থক্য শেখাই। তাদের হাতে তুলে দিই কিছু মূল্যবোধের ছাঁকনী, চলার পথ যেন নিজেরাই খুঁজে বের করে নিতে পারে। ভাবছেন, ওয়ার্কশিট দিচ্ছি? হতেও পারে, কিন্তু এ ওয়ার্কশিট ওদের জন্য নয়, আপনি আমি আমাদের মত বাবামায়েদের জন্য সাহায্য হয়ে উঠতেও পারে।
১। স্রষ্টা এবং সৃষ্টি (creator and creation):
ছোট বাচ্চাদের হাতে যে খেলনা আমরা তুলে দিই, তার উৎস ওরা জানে। ওরা হয়ত আমাদেরকে জিগেস করে জেনে নেয়, অথবা ডিসকভারিতে ‘ফ্যক্টরী মেইড’ দেখে শেখে। কেউ কেউ কল্পনাও করে, ও বড়ো হয়ে টয়োটা বানাবে। কোন কোন মায়াবতী ভাবে, ও একটা পুতুলের ফ্যক্টরী দেবে, সব গরীব বাচ্চাদের হাতে একটা করে পুতুল দিয়ে ওদের হাসিগুলা মনের ঘরে জমা করবে। এই যে বাচ্চারা, ওদের হাতের সব জিনিসের বানানোর ইতিহাস জানে, ওদের নিজেদের মহামূল্যবান শরীর আর মনের উৎস জানে কি? ওদের প্রশ্নগুলো কিন্তু আমাদের লজ্জায় ফেলে দেয় মাঝে মাঝে। নিজেদের লজ্জা ঢাকতে আমরা আরেকটা খেলনা ধরিয়ে দিই, না হয়, ধমক দিয়ে চোখের আড়াল করি।
সোজা কথায় বলি, ওদেরকে নিজেদের চিনতে এবং শ্রদ্ধা করতে শেখান। নিজের শরীর কি, কেন আল্লাহ এভাবে ওকে বানিয়েছেন, কখন এর কি কি পরিবর্তন হচ্ছে, কিভাবে সে পরিবর্তনের যত্ন নিতে হবে, জানান। নিজে না পারলে ওর পছন্দের কাউকে দিয়ে জানান। মনে রাখবেন, আপনি সন্ধান না দিলেও সে এসবের জবাব খুঁজবেই। আর হয়ত কোন অসাধু বন্ধু জবাবের ছলে তাকে অন্ধকারের পথ দেখিয়ে দেবে। আর আপনার চোখে দেখালে, সে শুধু বৈচিত্র্যকে জানবেই না, বরং এই বৈচিত্র্যের স্রষ্টাকেও মাথা নুয়ে প্রশংসা করবে, যিনি ওর জন্যই ওর নিজেকে এতো সুন্দর করে বানিয়েছেন।
২। জিজ্ঞাসা এবং জবাব (question and answer):
আমরা কেন প্রশ্ন করি? কৌতুহল থেকেই তো, না? আর জবাব মনের মতো না হওয়া পর্যন্ত প্রশ্ন করেই যাই। শিশুকে প্রশ্ন করতে বাঁধা দেবেন না কখনও। মনে রাখবেন, শয়তান এবং ফেরেশতা, এই দুইয়ের সাথে মানুষের পার্থক্যই তার এই অনুসন্ধিৎসা। একে বন্ধ করে দিলে আপনি বড়জোর একটি প্রাণ লালন পালনের তৃপ্তি পেতে পারেন, মানুষ নামের আশ্চর্য এই সৃষ্টিকে বড় করে তোলার স্বাদ পাবেন না।
৩। মূল্য এবং দাম (value and price) :
একটা তুলনা আমরা বাচ্চাদের প্রায়ই দিই, দোকানের বার্গার বনাম বাসায় বানানো বার্গার। মানে, স্বাদে, দোকানের বার্গার দামে বেশী কিন্তু বাসায় মায়ের হাতে বানানো স্বাস্থ্যকর বার্গারের মূল্য অবশ্যই বেশি, দামে কম পড়লেও। ঠিক এ জিনিসটাই এই সময়ের বাচ্চাদের জানা সবচেয়ে বেশী দরকার।
একটা জিনিসের মূল্য বেশী, কিন্তু দামে নিতান্তই সস্তা হতে পারে। আবার কোনটা অল্প দামে পাওয়া যাচ্ছে, বা একেবারে বিনে পয়সায়, কিন্তু সেটার মূল্য আকাশছোঁয়া হতে পারে। শুধু চকচকে মোড়কে ভুলেই দাম আর মূল্যের এই যাচাই বাছাই ছাড়া যেন কোন জিনিস বা মানুষকে নিজেদের জীবনে জায়গা দিয়ে না দিই, এটা নিজেরাও চর্চা করা উচিত, সময় পেলে বাচ্চাদের সাথে কথা বলে বলে ওদেরকেও বুঝতে দেয়া উচিত।
৪। বাস্তব এবং পরাবাস্তব (real and virtual) :
এ দুই জগত বড় আলাদা, তবু বড় বেশী আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানোও। বাস্তব জগত কি? যে জগতের উপাদানগুলোকে ধরাছোঁয়া যায়, পঞ্চইন্দ্রিয়তে অনুভব করা যায়। আর পরাবাস্তব জগত হল, যে জগতটাকে দেখা যায় না, এবং চাইলে যেখানে অনেক বাস্তবতাই লুকিয়ে রাখা যায়। সমস্যাটা সেখানেই। পরাবাস্তবকে কখনওই বাস্তব ভেবে ভুল করা যাবে না, আবার পরাবাস্তবকে অস্বীকার করাও যাবে না। ছোট একটা উদাহরণ দিই। একজনকে ফোন করলেন, সে সায়দাবাদ, আপনাকে বললো, ‘‘ভাই আমি ত টঙ্গী, আজকে আসতে পারবো না’’। তো, ফোন ব্যবহার করার সময়ই আপনার এই ধারণা রাখতে হবে যে, সে যা বলছে তা ফোনে বলছে, আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, আবার ফোন ব্যবহার করা এজন্য বাদও দেয়া যাবে না, তাই না?
বাচ্চাদের জগতটা সোজাসুজি যুক্তির। এজন্য ওরা যে কোন কিছুকেই চেখে দেখতে চায়। ওদেরকে সুন্দরভাবে বড় হতে দেয়ার জন্য সেটা দরকারও। টককে টক বললেই হবে না, ওরা জিভ দিয়ে দেখতে হবে, কাকে আপনি টক বলছেন। সুতরাং পরাবাস্তবতার জগতে ওদেরকে ছেড়ে দেবার সময় বেঁধে দিতে হবে, আপনার সশরীর উপস্থিতি থাকতে হবে, বাস্তবতাকেও চিনাতে হবে, যেন ওরা নিজেরাই চেখে নিতে পারে, তুলনা করতে পারে। কারুর লেখায় ‘হা হা’ হাসির প্রতিক্রিয়া দিতে পারুক, সাথে সাথে শিখিয়ে দেন কারুর কথায় মজা পেয়ে কিভাবে পেট চেপে হাসা যায়, বইয়ের পাতায় কিছু পড়ে প্রাণ খুলে কাঁদা যায়, কিভাবে শুধু ভাইবোনের চোখ দেখেই বুঝে ফেলা যায় তার মন ভালো নেই।
৫। জীবন আর জীবিকা (Life and livelihood) :
মানুষ বাঁচার জন্য খায়, খেয়ে বাঁচে, মানুষ হওয়ার সংগ্রাম করে। মানুষের শরীরের মূল তিনটি সত্তার চাহিদা আছে। তার একটি হল খাওয়ার জন্য, একটি যৌন চাহিদা, এই দুই মিলে যতটুকু, সেটুকুতে মানুষ আর অন্য প্রাণী একই রকম। একটা প্রাণীকেও পেট ভরাতে হয়, বংশবৃদ্ধি করতে হয়। মানুষের তৃতীর সত্তাটা চিন্তার ক্ষমতাসম্পন্ন। এর ক্ষমতা অদ্ভুত। এই বুদ্ধিবৃত্তিক সত্তা আছে বলেই মানুষ কাঁচা খায় না, শুধু সেদ্ধতে পেট ভরায় না। নানান রসদ দিয়ে রসনা বিলাস করে। কিংবা থাকার জায়গাটা মনোরম করে সাজিয়ে রাখে। দুটা মানুষ, কোনরকম দামী খাবার না খেয়ে, এমনকি একজন আরেকজনকে স্পর্শ না করেও ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করে প্রাণ আনন্দে ভরিয়ে তুলতে পারে। সারা মাসের কষ্টের রোজগার বাবামায়ের হাতে তুলে দিয়ে লুকিয়ে তাঁদের তৃপ্তির হাসি দেখতে পারে।
আপনার সন্তানকে পড়ালেখা করাবেন, পৃথিবীতে চলার যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য, কিন্তু ভুলে যাবেন না, ‘জীবনের জন্যই জীবিকা’, এ শিক্ষাও আপনিই তাকে দিতে হবে। ছোট ছোট কাজ দিন, তাকে তার পারিশ্রমিক দিন, সে পয়সায় কোন অনাহারীর জন্য খাবার কিনে দিতে উৎসাহ দিন, লুকিয়ে সেই দুঃস্থ মানুষটার খুশী দেখতে দিন। আপনার কোলে মনুষ্যসন্তান তৈরী হোক, শুধুমাত্র একটা দুপেয়ে জীব নয়।
শুরুর কথায় ফিরে যাই। জগতের এই একটি কাজ, শিশুকে পৃথিবীতে আনা এবং তাকে নিজের মত আরেকটা মানুষ করে বড় করা, একটি মস্ত বড় দায়িত্ব। মানুষ সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় প্রাণী, যার কোন শারীরিক যোগ্যতা নেই, এমনকি একটু ইঁদুরের সাথেও দৌড়ে পারার। এই মানুষকেই সৃষ্টির সেরা করে বড় করার কাজটি যাঁদের, তাদের একজনের পায়ের নিচে জান্নাত আর আরেকজনের সন্তুষ্টি সরাসরি আল্লাহর সন্তুষ্টি। এই মর্যাদা শুধুই উপভোগের জন্য নয়, আমাদের সন্তানের লিলিপুট চোখে আমাদেরকে গালিভার দেখানোর জন্য নয়। এই মর্যাদার পেছনে লুকিয়ে আছে দায়িত্ব আর কর্তব্যের মস্তবড় বোঝা। এই বোধকে মাথায় রেখেই আমরা প্রতিদিন পথ চলি, ‘কচিকাঁচাগুলো ডাঁটো করে তুলি, বাঁচিবার তরে সবাই যুঝি’।

3
Civil Engineering / Re: পরীক্ষা সমাচার ১
« on: September 20, 2018, 07:26:27 PM »
Thank you for your comment

4
Civil Engineering / পরীক্ষা সমাচার ১
« on: September 19, 2018, 09:34:31 PM »
ড্যাফোডিলে আছি প্রায় এক বছর। তিন সেমিস্টার পার হল। সে হিসেবে তিনটা মিড টার্ম আর তিনটা ফাইনালের পরীক্ষা পরিদর্শক থাকলাম। একেকবারে গড়ে ১২টা ডিউটি থাকে। শুনতে কম শোনালেও মাত্র পাঁচ কি ছয় দিনে এই এতোগুলো সময় পাহারাদারি করা বেশ আয়াসসাধ্য ব্যপার।
কি হয় পরীক্ষার সময়?
ডিউটি রোস্টার পাবার পর, সময় ধরে গেলাম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। এ কী? মস্ত বড় লাইন! সাইনের জন্য। সাইন করে খাতা নিয়ে হেলেদুলে রুমে যাবেন? হবে নাহ। পরীক্ষার খাতা, প্রশ্নের খাম, সব নিতে হবে। কোনোটার কলেবরই বগলদাবা করার যোগ্য না। তার ওপর, কপাল ভালো হলে পড়বেন একই বিল্ডিং এ। নইলে তরতর করে নেমে ফুটপাথ দিয়ে, অগ্নিশলাকার আহ্বানে মত্ত ছাত্রদের ভিড় বাঁচিয়ে অন্য বিল্ডিং এ যেতে হবে। ফেরার সময়ও একই রুটে ফিরবেন। মোটামুটি ভিড় ঠেলে, পরীক্ষা শেষে উদ্বেলিত জনতার ভিড়। আমার মত ছোটখাটো হলে ত কথাই নেই, মানুষের কোমরের বাঁক দিয়ে আলো দেখা যায় সামনে, ওই দেখে হাঁটতে হবে।
রুমে গিয়ে মোটামুটি হুংকার দিতে হবে, মোবাইল ফোন জমা দাও, ব্যাগ সব। এরপরের কাজ মোটামুটি গৎবাঁধা। খাতা দেয়া, প্রশ্ন দেয়া, সাইন করা, কিছু ফর্ম ফিলাপ করা, আর পেছনে হাত বেঁধে গম্ভীর হয়ে হেঁটে বেড়ানো। কপাল খারাপ হলে কারুর দুষ্কর্ম আবিষ্কার করবেন, হয়ত সে খাতা আটকে হুমকি দিতে হবে, আর গুরুতর হলে পরীক্ষা শেষ করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সে খাতা রিপোর্ট করবেন। কপাল কার খারাপ? নিয়ন্ত্রণ কক্ষে আসবার আগ পর্যন্ত আপনার মনে হবে, ছাত্রেরই কপালটা খারাপ। আহা বেচারা! কিন্তু জমা দেয়ার ঝামেলার পর? আপনার মনে হতে থাকবে, কি ভুলে আমি এত, সয়েছি ব্যথা... ইত্যাদি।
কড়া নজরদারীর মজা হল, বেশ একটা তৃপ্তি পাওয়া যায় যে, আইনের অনুগমন করা হল। আরেকটা ভালো দিক হল, ঘুম পায় না। নইলে ঘুমঘুম চোখে ছাত্রদের দিকে তাকাবেন, তাদের একজনকে দুইজন হয়ে যেতে দেখবেন, আর সেটা টের পেলে ওরাও আপনাকে বেশ একটু ‘দেখে নেবে’। তবে, এই দেড় ঘন্টা বা দুইঘন্টার তিনটা ডিউটি একই দিনে পড়লে মাথা মোটামুটি হ্যাং হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। ফেরার পথে ভাড়া দিতে টের পাবেন। আরও একটা ঝামেলা আছে। লিফটে একদিন একদল তরুণের কি এক কথায় হাসি আটকাতে না পেরে ফিক করে হেসে দিয়েছি। নেমে এরা ঘিরে ধরলো, আমি ত দেখতে শুনতে মনুষ্যপদবাচ্যই মনে হয় ওদের, তবে কেন পরীক্ষার হলে এমন বিদ্ঘুটে হয়ে যাই? আরেকদিন, অর্ধেক সময় না যেতেই এক ছাত্র উঠে এসে খাতা জমা দিয়ে একদম সোজাসুজি বলে দিলো, ‘ম্যডাম কাজটা ভালো করলেন না’। কি কাজ? কড়া পাহারা দিয়েছি, ও কিছুই লেখেনি প্রায়। বললাম, ‘পরের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আগেই ভাববা, আমিই গার্ডে থাকবো। দেখো প্রস্তুতি ভালো হবে’। কিসের কি, দৃষ্টিতে মোটামুটি ভষ্ম করে বিদায় নিলো।
পরীক্ষার হলে প্রায়ই একটা গান মনে পড়ে। ওই যে যখন উত্তরের মাঝে আটকে গিয়ে কোন এক অসহায় আদম সন্তান সামনের জনের অস্বচ্ছ পিঠ বরাবর নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে, তখন। না জানি মনে মনে গায়, ‘তোমার বুকের মধ্যখানে, মন যেখানে হৃদয় যেখানে ... (আহা যদি সে বরাবর একটা ফুটো থাকতো)’। তাই পথেঘাটে, ক্লাসে, ক্রমাগত বুঝাই, এই পরীক্ষা হলের স্ট্যান্ডার্ড হলো ওদের সার্টিফিকেটের মানের সমানুপাতিক। সুতরাং, সময় থাকতে সাধনায় লেগে পড়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

Pages: [1]