Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Mrs.Anjuara Khanom

Pages: 1 ... 12 13 [14] 15 16 ... 32
196
মুমিন জীবনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত ফরজ। এর কোনো তুলনা হয় না। ফরজ আদায়ের পর যারা নফল আদায় করে তাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর বিশেষ রহমত। নফলের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর অধিকতর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ করে। হাদিসে কুদসিতে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হতে থাকে। একপর্যায়ে সে আমার মাহবুব ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে যায়।’ (বুখারি: ২/৯৬৩)

নফল ইবাদতের মধ্যে নফল নামাজ আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত নামাজের বাইরেও কিছু নফল নামাজ রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো- আওয়াবিন নামাজ।

আওয়াবিন শব্দটি ফার্সি। এটি ‘আওয়াব’ শব্দ থেকে নির্গত। এর আভিধানিক অর্থ হলো খোদাভীরু। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় মাগরিবের ফরজ ও সুন্নত নামাজ আদায় করার পর যে নফল নামাজ পড়া হয় তাকে আওয়াবিন নামাজ বলে।

আওয়াবিনের ওয়াক্ত: আওয়াবিন একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ। হাদিস শরিফে ‘সালাতুল আওয়াবিন’ নামেই নামাজটির উল্লেখ রয়েছে। মাগরিবের নামাজের পর আওয়াবিনের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং এশার আগ পর্যন্ত তার সময় বাকি থাকে। মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির (রহ.) থেকে বর্ণিত একটি মুরসাল হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজি ব্যক্তি যে নামাজ পড়ে একে সালাতুল আওয়াবিন (আওয়াবিনের নামাজ) বলে।’ (জামে সাগির : ২/৪২৭)। আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে (নিভৃতে) যে নামাজ পড়া হয় একে সালাতুল আওয়াবিন (আওয়াবিন নামাজ) বলে।’ (কিয়ামুল লাইল : ৮৮)। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আওয়াবিনের ওয়াক্ত ঐ সময় থেকে শুরু হয়, যখন নামাজি মাগরিবের নামাজ পড়ে শেষ করে এবং এর ওয়াক্ত এশার ওয়াক্ত হওয়া পর্যন্ত থাকে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৫৯৭৩)

ফজিলত: হাদিস ভা-ারে আওয়াবিন নামাজের অনেক ফজিলত, মাহাত্ম্য ও বরকতের কথা বর্ণিত হয়েছে। সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ গুনাহ মাফ হয় এ নামাজের মাধ্যমে। আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘মাগরিবের নামাজের পর যে ব্যক্তি ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়বে তার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ : ৩৩৮০)।

সালেম (রহ.) স্বীয় পিতা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ পড়বে তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (নাইলুল আওতার : ৩/৫৫)। অন্য আরেকটি হাদিসে এসেছে, ‘এ নামাজে গুরুত্বারোপকারী বান্দা আওয়াবিন তথা আল্লাহমুখী, আনুগত্যকারী ও নেককার বান্দাদের গণ্য হবে।’

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ পড়বে তাকে আওয়াবিন তথা নেককার, আনুগত্যকারী বান্দাদের মধ্যে লেখা হবে এবং কোরআনের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন-নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল।’ (বনি ইসরাইল : ২৫) [আল বাহরুর রায়েক : ২/৫০]।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর এ নামাজ পড়বে তার মর্যাদা জান্নাতের উঁচু স্থানে হবে।’ (ইতহাফুস সাদাহ : ৩/৩৭১)।

১২ বছরের ইবাদতের সমান সওয়াবের সুসংবাদ রয়েছে আওয়াবিন নামাজে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে ছয় রাকাত নফল আদায় করে, মাঝখানে কোনো দুনিয়াবি কথা না বলে, তাহলে সেটা ১২ বছরের ইবাদতের সমান গণ্য হবে।’ (তিরমিজি : ১/৫৫৯)

নিয়মিত আওয়াবিন পড়লে বেহেশতে ঘর তৈরি করা হয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকাত নফল নামাজ পড়বে আল্লাহতায়ালা তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর প্রতিষ্ঠিত করবেন (অর্থাৎ সে বেহেশতে যাবে)’ (তিরমিজি : ১/৯৮, হাদিস : ৪৩৭)। হাসান বসরি (রহ.) বলতেন, এশার মধ্যবর্তী সময়ের নামাজও রাতের নামাজ বা তাহাজ্জুদের নামাজ বলে গণ্য হবে।’ (আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকি)।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ফেরেশতারা ঐসকল লোকদের ঢেকে নেয়, যারা মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজ পড়ে। আর এ নামাজের নাম সালাতুল আওয়াবিন (আওয়াবিনের নামাজ)।’ (শরহুস সুন্নাহ, বাগাবি : ৮৯২)

আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধকারী হাদিসসমূহের পাশাপাশি এ নামাজের ব্যাপারে নবীজির নিজের (সা.) আমলও হাদিসগুলোতে বর্ণিত হয়েছে। আম্মার ইবনে ইয়াজিদের ছেলে মোহাম্মদ ইবনে আম্মার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি আমার পিতা আম্মার ইবনে ইয়াসিরকে (রা.) দেখেছি, তিনি মাগরিবের পর দুই রাকাত পড়তেন এবং বলতেন, আমি আমার প্রিয় মোহাম্মাদ (সা.)-কে দেখেছি, তিনি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ পড়তেন।’ (আল মুজামুল আওসাত লিত-তাবরানি: ২৭৪৫)। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)ও বলেছেন, নবীজি (সা.) এ নামাজ পড়েছেন।’ (কিয়ামুল লাইল : ৮৮)। হুজায়ফা (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজির (সা.) কাছে এসে তার সঙ্গে মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম। তিনি মাগরিবের পরে এশার নামাজ পর্যন্ত নফল নামাজে রত থাকলেন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২/১৫)। আনাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামাজ পড়তেন।’ (নাইলুল আওতার : ৩/৫৪) আনাস (রা.) থেকেই অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, নবীজি (সা.) অনেক সময় মাগরিবের নামাজ পড়ে নফল নামাজ পড়তেন, এমনকি কখনো এশার নামাজের আজান হয়ে যেত।’ (কাসফুল গুম্মাহ : ১১২)।

আওয়াবিন নামাজ কয় রাকাত: এই নামাজ কমপক্ষে ছয় রাকাত এবং সর্বাপেক্ষা বিশ রাকাত নফল নামাজ। ছয় রাকাত পড়ারও সুযোগ না হলে মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত মিলিয়ে ছয় রাকাত পড়া যায়। নবীজি (সা.) কখনো ৬ রাকাত (তিরমিজি) কখনো ৪ রাকাত (নাইলুল আওতার) কখনো ১২ রাকাত (ইতহাফুস সাদাহ : ৩/৩৭১) আবার কখনো বা ২০ রাকাত (তিরমিজি : ৪৩৫) নফল নামাজ পড়তেন। তবে ৬ রাকাতই অধিকাংশ সময় পড়তেন।

সাহাবায়ে কেরামও এ নামাজের খুব গুরুত্ব দিতেন। আনাস (রা.) বলেন, সাহাবায়ে কেরামের একটি বড় জামাত মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে এ নামাজ আদায় করতেন।’ (নাইলুল আওতার : ৩/৫৪)। তাবেয়ি, তাবে তাবেয়ি ও পূর্বসূরী সবাই এর ওপর আমল করেছেন।

আওয়াবিন পড়ার পদ্ধতি: নিঃসন্দেহে এ নামাজ অনেক ফজিলত ও মর্যাদার অধিকারী। এ নামাজের প্রতি গুরুত্বদান উভয় জাহানে বরকত ও কল্যাণের কারণ। নামাজটি পড়ার পদ্ধতি হলো-দুই দুই রাকাত করে তিন সালামে নামাজটি পড়া। বিদগ্ধ ফকিহদের অভিমতও এটাই যে, এ নামাজ দু রাকাত করে তিন সালামে পড়া মোস্তাহাব। (আল বাহরুর রায়েক : ২/৫০)। দু রাকাত করে পড়া এজন্যও উত্তম যে, নবীজি (সা.) রাতের নামাজ দুই রাকাত করে পড়তেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ফরজের পাশাপাশি নফল ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম বাগে জান্নাত, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ।

197
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজর নামাজের গুরুত্ব অনেক। হাদিসে এর এত বেশি গুরুত্ব এসেছে যে, যদি একজন মুমিন তন্মধ্য থেকে মাত্র একটিও মনে রাখে তাহলেও এক্ষেত্রে তার গাফলতি অনায়াসে দূর হয়ে যাবে। তার হিম্মত বেড়ে যাবে। ঘুম ও অলসতা কাটিয়ে ওঠতে সক্ষম হবে। নব প্রেরণায় উজ্জীবিত হবে। যেমন-

এক- ফজরের নামাজে দাঁড়ানো, সারা রাত দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সমান। উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জামাতে এশার নামাজ আদায় করলো, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়লো, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়লো। -সহিহ মুসলিম: ১০৯৬

দুই- ওই দিনের পুরোটা আল্লাহর জিম্মায় থাকার দুর্লভ সৌভাগ্য। ফজরের নামাজ পড়লেই শুধু এ-ঈর্ষণীয় সৌভাগ্য লাভ করা যাবে। যুনদব ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সুফইয়ান আলবাজালি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল, সে আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল। অতএব আল্লাহ যেন তার জিম্মার বিষয়ে তোমাদেরকে কোনোরূপ অভিযুক্ত না করেন। -জামেউত তিরমিযি: ২১৮৪

তিন- ফজরের নামাজ কেয়ামতের দিন নুর হয়ে দেখা দেবে। বুরাইদা আল আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যারা আঁধারে (ফজর নামাযে) মসজিদের দিকে হেঁটে যায়, তাদের কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নুর প্রাপ্তির সুসংবাদ দাও। -সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৪

চার- জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত প্রাপ্তির সুসংবাদ। আবু যুহাইর ‘উমারাহ ইবনে রুআইবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (ফজরের ও আসরের নামাজ) আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। -সহিহ মুসলিম: ৬৩৪

পাঁচ- মুনাফেকি থেকে মুক্তি পাবে। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকদের ওপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হত।
-সহিহ বুখারি: ৬৫৭



198
বিখ্যাত আরবি সাহিত্যিক শায়েখ সুলাইমান আল জিলানির বর্রণা করা একটি ঘটনা আমার হৃদয়ে আটকে আছে। তিনি বলেন, একবার তিনি গাড়িতে করে তার আরো দুইজন আলেম সাথী নিয়ে সফরে রওনা করেন।এক জায়গায় রাস্তার উপর কতগুরো উট দেখেতে পেলাম। রাস্তার অপর পাশে একটি গাড়িতে বৃদ্ধ একজন লোক বসে আছে।আমি গাড়ি সামনে নিতে পারছিলাম না উটগুলোর কারণে। উটের রাখালরা উটগুলোকে হাঁকাচ্ছে কিন্তু সেগুলো রাস্তা ছাড়ছিলো না।

আমি ভাবলাম হরণ বাজালে হয়ত উটগুলো রাস্তা ছেড়ে দিবে। আমি তাই আমার গাড়ির হরণ বাজালাম। এমনি গাড়িতে বসা বৃদ্ধ উটের মালিক আমাকে গালিগালজ করতে শুরু করলো। আমার বাবা নিয়ে অভিশাপ দিতে থাকলো। বলল অভিশাপ পড়ুক এমন বাবার উপর যে তোমার মত ছেলেকে জন্ম দিয়েছে, আমার উটের উপর হরণ বাজানোর তুই কে! তোকে যে জন্ম দিয়েছে তার উপরও অভিশাপ। যা তা বলে আমাকে গালি দিতে থাকলো।

বৃদ্ধর উপর আমার প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হলো। সাধারণ একটি হরণের জন্য এভাবে গালিগালাজ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমি তো ভালোর জন্যই হরণ বাজিয়েছিলাম, হয়ত আমার হরণ শুনে উট চলতে শুরু করবে। আর এর বদলায় এমন গালি শুনতে হলো?

আমি খুব রাগান্বিত হয়ে গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে গায়ের জোড়ে দরজাটি বন্ধ করি। জামার হাতা গুটাতে গুটাতে বৃদ্ধের দিকে যেতে থাকি। গাড়িতে থাকা আমার দুই সাথীর মধ্যে একজন বললেন আপনি কী করতে যাচ্ছেন। আমি বললাম আজ নতুন কিছু দেখবেন। আমি এটা বলে হনহন করে বৃদ্ধের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম।

গিয়ে খুব জোড়ে শব্দ করে তার গাড়ির দরজা খুললাম। বৃদ্ধ আমার ভাবসাব দেখে ভয় পেয়ে গেলো। আমি দরজা খুলেই তার কপালে চুমু দিলাম। আমি বললাম আমাকে আপনি ক্ষমা করে দেন, আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি, আমি আপনার উটকে কষ্ট দিয়েছি। তার অর্থ আমি আপনাকেই কষ্ট দিয়েছি। আসলেই আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন।

বৃদ্ধ আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল। বেটা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি তোমার বাবা মা কে গালি দিয়েছি, অভিশাপ দিয়েছি। আর তুমি আমার কপালে চুমু খেয়েছ আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছ। তুমি বরং আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তখন বললাম, আপনি আমার বাবা-মা এমনকি আমাকে অভিশাপ দিয়েছেন, গালিগালাজ করেছন।

আল্লাহর কসম, আমি কিয়ামত পর্যন্ত আপনাকে ক্ষমা করব না। তবে আপনি ক্ষমা পেতে পারেন এক শর্তে। শর্ত যদি মানেন তাহলে আমি আপনাকে ক্ষমা করবো। বৃদ্ধ লোকটি বলল কী তোমার শর্ত বল। আমি শর্ত মানতে রাজি আছি। আমি বললাম আমাদের উটের দুধ পান করাতে হবে। বৃদ্ধ খুশি হয়ে বলল অবশ্যই।

বৃদ্ধ তার খাদেমদের আদেশ দিলেন, তাড়াতাড়ি গদি বসাও। গালিচা বিছাও। আরেকজন গিযে দুধ দোহন করে নিয়ে আসো। আমার সঙ্গীরাসহ পেটভরে দুধ পান করি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি শের পারেন? তিনি আমাদের শের শুনাতে শুরু করে। অনেক কবিতা শুনায় আমাদের। আমাদের এ মাহফিল আধাঘণ্টা পর্যন্ত চলে। আমরা যখন ওঠার অনুমতি চাই, বৃদ্ধ আমাদের তিনজনকে জড়িয়ে ধরে বলল আমি তোমাদেরকে ছাড়বো না।

আল্লাহর কসম তোমাদেরকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। তোমাদেরকে এভাবে যেতে দিবো না। আমি বৃদ্ধকে বললাম আমাদের এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে হবে। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আবার একদিন আপনার মেহমান হবো। এখন আমাদের অনুমতি দেন। বৃদ্ধ তার উটের পেছনে পর্দা করা তিনটি মেয়েকে দেখিয়ে বলল আমার তিনটি মেয়ে আছে, তোমরা তিন জনও আলেম ও বুদ্ধিমান। তোমরা তাদেরকে বিয়ে করে আমাকে সম্মানিত কর।

সম্মানিত পাঠক! আপনাদের কী মনে হয়? গালির বদলায় একটি নয় তিন তিনটি প্রস্তাব। এটা এজন্যই যে, আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন, ভাল ও মন্দ সমান নয়। জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শুত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। (সুরা হা-মীম ৪১:৩৪)

আমি যদি বৃদ্ধের গালির বিপরিতে ভালো আচরণ না করতাম, তাহলে চিত্রটা অন্যরকমও হতে পারতো। গালির বিপরিতে ভালো আচরণের কারণে এ ঘটনাটা কত সুন্দর হয়ে গেলো। আমরা যদি কুরআনের এ ছোট্ট আয়তটার উপর আমল করি, তাহলে আমাদের পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও জান্নাতের মত আনন্দময় হয়ে যেতো।
সূত্র: আরমোগান বাংলা সাইট

199
আওয়ার ইসলাম: আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কেউ দোয়া করলে তিনি খুব খুশি হন । যারা আল্লাহর কাছে চায় আল্লাহ তাদের তিনি ভালোবাসেন। আর যারা আল্লাহর কাছে চায় না তিনি তাদের অপছন্দ করেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের প্রভু বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ -সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬০

আল্লাহ বলেছেন আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। কিন্তু কখনো কখনো দেখা যায়, আমরা দিনরাত তার কাছে কেঁদে কেঁদে দোয়া করলেও কবুল হচ্ছে না। এর কারণ কী? ইসলাম বিশেষজ্ঞদের মতে কিছু কিছু কারণে আমাদের দোয়া আরশ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায় না। যদি এসব ক্ষেত্রে আমরা একটু সচেতন হয় তাহলে আমরা আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন বলে আশা করা যায়।

এক- আল্লাহপ্রদত্ত দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া : হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই তোমরা সৎ কাজের জন্য আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। তা না হলে আল্লাহ তাআলা শিগগির তোমাদের ওপর তাঁর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তাঁর কাছে দোয়া করলেও তিনি তোমাদের সেই দোয়া গ্রহণ করবেন না। -সুনানে তিরমিজি: ২১৬৯

দুই- আত্মীয়তা ছিন্ন করা : আত্মীয়তা ছিন্ন করা একটি বড় ধরনের পাপ। এই পাপের শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গাতেই ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কোনো মুসলিম দোয়া করার সময় কোনো গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দোয়া না করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে এ তিনটির কোনো একটি দান করেন। এক- হয়তো তাকে তার কাঙ্ক্ষিত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করেন, দুই- অথবা তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন এবং তিন- অথবা তার কোনো অকল্যাণ বা বিপদাপদ তার থেকে দূরে করে দেন। সাহাবিরা বলেন, তাহলে তো আমরা অনেক বেশি লাভ করব। তিনি বলেন, আল্লাহ এর চেয়েও বেশি দেন। -আত-তারগীব: ১৬৩৩

তিন- দোয়া করে নিরাশ হওয়া : দোয়ার পর আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস রেখো যে আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করবেন। নেতিবাচক কোনো চিন্তা না করা। অন্যথায় এ দোয়া বিফল হয়ে যেতে পারে। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না। সহিহ বুখারি: ৬৩৪০

চার- হারাম থেকে বেঁচে থাকা : দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে হারাম খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় ইত্যাদি পরিহার করা। হারাম উপার্জনে নিজেকে সম্পৃক্ত করে যতই দোয়া করা হোক, তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও সারা শরীর ধুলামলিন। সে আসমানের দিকে হাত প্রশস্ত করে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এমতাবস্থায় তার দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে? – সুনানে তিরমিজি: ৮৯৬৯

পাঁচ-অন্যমনস্ক হয়ে দোয়া করা : দোয়ার সময় পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দোয়া করা। আল্লাহ অবচেতন মনের দোয়া গ্রহণ করেন না। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া কোরো। জেনে রেখো, আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না। -সুনানে তিরমিজি: ৩৪৭৯)

200
সুলাইমান মোল্লা: হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমআ এবং রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে যে সব গোনাহ হয়ে থাকে তা পরবর্তী নামাজ, জুমআ এবং রমজান (পালনে) সে সব মধ্যবর্তী গোনাহসমূহের কাফফারা হয়ে থাকে। যদি কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (মুসলিম, তিরিমজি)

উল্লেখিত হাদিসেরর আলোকে বুঝা যায়, কোনো ব্যক্তি যদি ফজরের নামাজ পড়ার পর পরদিন ফজরের নামাজ আদায় করে তবে এ সময়ে মধ্যে করা সব (কবিরা গোনাহ ব্যতিত) গোনাহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিবেন।

অনুরূপভাবে এক জুমা থেকে অপর জুমা এবং এক রমজানের রোজা আদায়ের পর থেকে পরবর্তী রমজানের রোজা আদায় করে তবে ওই ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত পূর্ণ এক বছরের সব (কবিরা গোনাহ ব্যতিত) গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

জুমার দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য রয়েছে ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল। এগুলো মধ্যে তিনটি আমল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হলো-

এক. জুমার দিনে ‘সুরা কাহফ’ তেলাওয়াত করা। কুরআনুল কারিমের ১৫তম পারার ১৮নং সুরা এটি। যদি কেউ সম্পূর্ণ সুরাটি তেলাওয়াত করতে না পারে তবে সে যেন এ সুরার প্রথম এবং শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করে।

এই আমলের ফজিলত- যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য এক জুমা থেকে অপর (পরবর্তী) জুমা পর্যন্ত নূর হবে। যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, সে আটদিন পর্যন্ত সর্বপ্রকার ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয় তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে। এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত তার সব (কবিরা গোনাহ ব্যতিত) গোনাহ মাফ হয়ে যাবে।

দুই. জুমআর দিনে বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা উত্তম ও ফজিলতপূর্ণ। যদি কোনো ব্যক্তি একবার দরূদ পড়ে তবে তার প্রতি ১০টি রহমত নাজিল হয়।

তিন. জুমআর দিন দোয়া কবুলের কিছু সময় বা মুহূর্ত রয়েছে; সে সময়গুলোতে বেশি বেশি দোয়া ও ইসতেগফার করা।

জুমআর দিন ও জুমআর নামাজ আদায় মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্ব ও ফজিলতপূর্ণ দিন। এ দিনের প্রতিটি আমলই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমআর নামাজ পরিত্যাগ করার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (ইচ্ছা করে) অলসতাবশত তিনটি জুমআ ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তাআলা তার হৃদয়ে মোহর মেরে দেন।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালেক)

201
আওয়ার ইসলাম: জুমআর দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য রয়েছে ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল। এগুলোর মধ্যে একটি আমল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তা হচ্ছে জুমআর দিনে ‘সুরা কাহফ’ তেলাওয়াত। পবিত্র কুরআনুল কারিমের ১৫তম পারার ১৮নং সুরা এটি। যদি কেউ সম্পূর্ণ সুরাটি তেলাওয়াত করতে না পারে তাহলে এ সুরার প্রথম এবং শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করলেও অনেকটা ফজিলত পাবে। এ সুরা তেলাওয়াতের ফজিলত বর্ণনা করে হাদিসে এসেছে-

‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার ইমানের নুর এ জুমাহ থেকে আগামী জুমাহ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মিশকাত ২১৭৫)’

‘যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রাখা হবে। (মুসলিম) (মিশকাত)’

‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য এমন একটি নুর হবে, যা তার অবস্থানের জায়গা থেকে মক্কা পর্যন্ত আলোকিত করে দিবে। আর যে ব্যক্তি এ সুরার শেষ দশটি আয়াত পাঠ করবে, তার জীবদ্দশায় দাজ্জাল বের হলেও সে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সিলসিলায়ে সহীহা -২৬৫১)।

‘যে ব্যক্তি জুমার রাতে সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য স্বীয় অবস্থানের জায়গা হতে পবিত্র মক্কা পর্যন্ত একটি নুর হবে।’ (সহীহ তারগীব ওয়াত্ তারহীব – ৭৩৬)।

‘জুমার দিনে সূরা কাহফ পাঠ করিলে কিয়ামত দিবসে তার পায়ের নীচ থেকে আকাশের মেঘমালা পর্যন্ত নূর আলোকিত হবে এবং দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহ মাফ হবে।’ (আত তারগীব ওয়াল তারহীব- ১/২৯৮)

‘জনৈক ব্যক্তি সূরাহ আল কাহফ পড়ছিল। তখন লোকটি তাকিয়ে দেখতে পেল একখণ্ড মেঘ তাকে পরিবেষ্টন করে নিয়েছে। বারা ইবনু আযিব বর্ণনা করেছেন যে, লোকটি বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম এর কাছে বললেন। তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে অমুক তুমি সুরাটি পড়তে থাক। কারণ এটি ছিল আল্লাহর রহমত বা প্রশান্তি যা কোরআন তেলাওয়াতের কারণে বা কোরআন তেলাওয়াতের জন্য অবতীর্ণ হয়েছিল।’ (মুসলিম- ১৭৪২)।

202
Women / স্ত্রীর হক ও অধিকার
« on: November 18, 2020, 12:49:52 PM »
স্ত্রীদের হক ও অধিকার এবং স্বামীর হক ও অধিকার এ বিষয়দ্বয় তো ব্যাপক বিশ্লেষণের দাবি রাখে। তবে এখানে আমরা সংক্ষেপে স্ত্রীর হক ও অধিকার নিয়ে আলোচনা করছি। প্রিয় রাসুলে কারীম (সঃ) বলেন “মু’মিনদের মধ্যে পূর্ণতর মু’মিন সে যার ব্যবহার ভালো, আর তোমাদের মধ্যে ভালো সে, যে তার স্ত্রীদের জন্য ভালো” (তিরমিযী শরীফ, মেশকাত শরীফ)। অত্র হাদীস দ্বারা স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করা তাদের গুরুত্বপূর্ণ হক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এমনকি সকল মানুষের মধ্যে ভালো ব্যবহারের হকদারও নিজের স্ত্রী যেমনটি নিম্নে বর্ণিত হাদিসের মাধ্যমে বুঝে আসে:- “তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহারের/আচরণের দিক থেকে সর্বোত্তম”। “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই ভালো যে তার স্ত্রীর কাছে ভালো আর আমি আমার স্ত্রীর কাছে ভালো”। (সুনানে তিরমিযি শরীফ) এই জন্যইতো মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সূরাতুন নিসার ১৯ নং আয়াতে বলেন, “সাবধান! স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর”। “হাকিম ইবনে মু‘আবিয়া কুশাইরী (রাঃ) আনহু সুত্রে তার পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইয়া রসূলাল্ল-হ্! আমাদের উপর আমাদের স্ত্রীদের কি হক (অধিকার) রয়েছে? তিনি বলেন, তুমি নিজে যখন আহার করবে তখন তাকেও খাবার দেবে, যখন কাপড় পরিধান করবে তখন তাকেও কাপড় দেবে। তার মুখের উপর মারবে না, ভর্ৎসনা করবে না তথা তাকে অশ্লীল গালি দেবে না এবং তাকে ত্যাগ করে ঘরের বাহিরে ফেলে রাখবে না। অর্থাৎ স্ত্রীকে সংশোধনের জন্য বিছানা পৃথক করলেও তাকে ঘরের বাহিরে ফেলে রাখা যাবে না”। (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ শরীফ)। কুরআন সুন্নাহ অপরাপর দলিল প্রমাণের আলোকে জানা যায় যে, স্ত্রীদের অন্যতম হক হলো তাদের থাকা, খাওয়া, পোষাক-পরিচ্ছেদের ব্যবস্থা করা, স্ত্রীদের সতিত্বের মর্যদা রক্ষার্থে পর্দায় রাখা, একাধিক স্ত্রী থাকলে ভরণ-পোষণ, রাত যাপন প্রভৃতি বিষয়ে তাদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা। যদি স্বামীর স্বচ্ছলতা ও সামর্থ্য থাকে তাহলে স্ত্রীকে পর্দায় রেখে তার জন্য চাকরের/ পর্দাশীলা চাকরানীর ব্যবস্থা করা (তবে স্বচ্ছলতা ও সামর্থ্য না থাকলে ঘরোয়া রান্না বান্না ইত্যাদি স্ত্রীর দায়িত্ব)। প্রতি চার মাসে অন্তত একবার স্ত্রীর সাথে স্বামী-স্ত্রী সুলভ আচরণ করা। এছাড়া স্বামীর উপর ন্যয়সংগত ভাবে অভিমান করাও স্ত্রীর অধিকার ইত্যাদি। মহান আল্লাহ বলেন, “হুন্না লিবাছুল্ লাকুম ওয়াআংতুম লিবাছুল্ লাহুন্না অর্থাৎ স্ত্রীরা তোমাদের পোষাক আর তোমরা (স্বামীরা) তাদের তথা স্ত্রীদের পোষাক”। হাকিমুল উম্মাত মুজাদ্দেদুল মিল্লাত আল্লামা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, পোষাক পরিচ্ছদ দ্বারা মানুষ ধুলাবালি থেকে শরীরকে রক্ষা করে, শীত-গ্রীষ্মের কষ্ট নিবারণ করে, ভদ্রতা রক্ষা পায়, মান মর্যাদা বৃদ্ধি লাভ করে। বাস্তবিক পক্ষে এই চারটি উদ্যেশ্যেই দাম্পত্য জীবন রচনা করা হয়। হযরত আব্দুল্লাহ যাম‘আ (রাঃ) বলেন প্রিয় রসুলে কারীম (সঃ) বলেন, কেউ যেন নিজের স্ত্রীকে গোলাম, বাদীর ন্যায় না পেটায়, অতপর দিন শেষেই তার সাথে শয়ন করে। পারিবারিকভাবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সুখে-শান্তিতে থাকতে হলে পারিবারিক আপোষ-সমঝোতা, ক্ষমার গুণে গুণান্নিত হওয়া, স্বামী-স্ত্রী কেউ কারোর দোষ-ত্রুটি প্রকাশ না করা। ইমাম ইবনে মালিক রহ. এর মতানুযায়ী স্বামী স্ত্রীর আপোসের প্রত্যেকের কথাবার্তা, কার্যকলাপ অপরের কাছে আমানত। তাদের যে কেউ তা প্রকাশ করবে, যা সে অপছন্দ করে, তাহলে নিশ্চিতই সে খেয়ানত করল। আর তা যদি হয় অপবাদ তাহলে তো মারাত্মক কবিরা গুনাহ। এর দ্বারা বিয়ের মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর মাঝে যে গভীর ভালোবাসা ও মমতা তৈরি হয় তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমন কি সংসার পর্যন্ত ভেঙ্গে যেতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, “আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের মধ্যে থেকেই তোমাদের জন্য জোড়া তথা স্ত্রী বা স্বামী সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও মমতা সৃষ্টি করেছেন”। (সূরা রূম আয়াত-২১) অত্র আয়াতে বর্ণিত স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের কাছ থেকে প্রশান্তি, ভালোবাসা ও মমতা সারাটি জীবন পেতে চাইলে করাচীর বিশ্ববিখ্যাত পীরে কামেল শাইখুল আরব ওয়াল আজম কুতুবুল আলম আল্লামা শাহ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার ছাহেব রহ. কর্তৃক কুরআন-সুন্নাহর আলোকে লিখিত “ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামী-স্ত্রীর সুখের জীবন” নামক মহামূল্যবান গ্রন্থটি নিজে পড়ি, অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করি। তদনুযায়ী আমল করি। প্রশান্তি ও স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক ভালোবাসা ও মমতার মহান স্রষ্টার কখন কী আদেশ ও নিষেধ তা জেনে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ ভাবে বোঝার ও আমল করার তাওফীক্ব দান করুন। আ-মী-ন।

203
মহান আল্লাহ তাআলা এ ভূপৃষ্ঠের কোন কিছুই অযথা সৃষ্টি করেন নি। প্রতিটি জিনিসের মাঝে বান্দার জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ কল্যাণ কখনো আমরা উপলব্ধি করতে পারি আবার কখনো আমাদের বোধোদয় হয় না। চোট বড় প্রতিটি আদেশেই আমাদের কল্যাণের জন্য। এ বিশ্বাস একজন মুমিন তার হৃদয়ে লালন করে। অনেক বিষয় আমাদের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও তার গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম।

ইসলামের একটি শিষ্টাচার হলো কেউ যদি হাঁচি দেয় তাহলে সে আলহামদুলিল্লাহ বলবে। এটা ইসলামের শিক্ষা। আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত: নবী (সা:) বলেন: কেউ হাঁচি দিয়ে যেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে। সে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে তার অপর (মুসলমান) ভাই বা সঙ্গী যেন ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলে। সে তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বললে (শুকরিয়াাস্বরূপ) সে যেন বলে, ‘ইয়াাহদিকাল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকা’ (আল্লাহ তোমায় সৎপথে চালিত করুন এবং তোমার অবস্থার সংশোধন করুন)।(বুখারী,হাদীস: ৬২২৪)
আলহামদুলিল্লাহ এটি একটি কোরআনিক শব্দ। যার অর্থ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। কোনো কিছু পাওয়ার পর কিংবা কোনো কিছু খাওয়ার পর সাধারণত আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলি। কোনো সুসংবাদ, রোগমুক্তি কিংবা অন্তর শীতল করা আবেগ-অনুভূতির ক্ষেত্রেও আলহামদুলিল্লাহ বলি। প্রশ্ন হচ্ছে বাহ্যত হাঁচির মাধ্যমে এগুলোর কোনটাই দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু প্রকৃত মুমিন তার বিশ্বাস যে এর মাঝে মুমিনের কল্যাণ রয়েছে তাই এমনটা আদেশ করা হয়েছে। কিন্তু সংশয়বাদীরা তা বিশ্বাস করে না। রাসূলের সেই আদেশকে তারা তাচ্ছিল্য করে। এটা তাদের প্রতিনিয়ত অভ্যাস। আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে রাসূল যে আদেশ দিয়েছেন বর্তমান বিজ্ঞান তার লাভ অকপটে স্বীকার করছেন।
আমাদের নাকের ভেতরের অংশের দিকে লোম থাকে। অনেকেরই কাছেই এগুলো বিরক্তিকর। এগুলো আসলে এমনি এমনি থাকে না । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাকের ভেতরের চুল কখনোই চিমটা দিয়ে ওঠানো উচিত নয়। এই লোম নাকের ভিতরে ধূলোবালি আটকাতে সাহায্য করে। এই লোম পার হয়ে যখন কোনো কিছু নাকের ভিতরে প্রবেশ করে তখন হাঁচি হয়। বিশেষ করে দেহে বাইরের জীবাণু প্রতিরোধে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঝাঁঝাঁলো বা কড়া গন্ধ থেকেও হাঁচি হতে পারে। আসলে ধূলোজাতীয় কোনো পদার্থ হোক আর কোনো গন্ধই হোক না কেন, আমাদের নাকের ভেতরে উত্তেজনা বা সুড়সুড়ি সৃষ্টি হলেই আমাদের হাঁচি হয়।
হাঁচি একটা বিস্ময়। হাঁচি আসলে মানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। একদম শেষের দিকে কোন দিকে মুখ করে হাঁচি দেবেন এটা শুধু মানুষের নিয়ন্ত্রণে!
চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণা আনুযায়ী আপনি যখন হাঁচি দেন ঘন্টায় প্রায় ১৬০ মাইল বেগে নাক দিয়ে বাতাস বেরিয়ে আসে। আর এর সাথে বেরিয়ে আসা জলীয়পদার্থ প্রায় পাঁচ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। হাঁচির স্প্রের কথা ভুলে গেলে চলবে না প্রায় ২০০০ থেকে ৫০০০ জীবাণুযুক্ত তরলপদার্থ নাক-মুখ দিয়ে হাঁচির মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। (উইকেপিডিয়া)
হাঁচি আপনার দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে। কারণ, এর মাধ্যমে আমাদের দেহ থেকে বিভিন্ন জীবাণু বের হয়ে যায়। কেউ যদি হাঁচি আটকে রাখে তাহলে বড় ধরণের বিপত্তি ঘটতে পারে। ঘণ্টায় ১০০ মাইল থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ মাইল এই চাপকে জোর করে শরীরের ভিতর গিলে নিলে ভিতরে বহু ক্ষতি হতে পারে। যেমন, ল্যারিংসে ফ্র্যাকচার, কোমরে ব্যথা, মুখের নার্ভে ক্ষত।
এখানেই শেষ নয়। জোর করে হাঁচি চাপলে এর থেকেও বড় বিপদ ঘটতে পারে। কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বধির হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। হাঁচির বহির্মুখী প্রেসার শরীরের ভিতরে গেলে পাঁজর পর্যন্ত গুঁড়িয়ে যেতে পারে। হাঁচি চাপলে যখন ত খন মাসলে মারাত্মক টান ধরতে পারে। হাঁচির প্রেসার বাইরে বেরিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক নিয়ম। বহির্মুখী সেই ফোর্স জোর করে শরীরের ভেতর চালান করলে তা মস্তিষ্ক ও দেহের বিভিন্ন জায়গায় তরঙ্গ তৈরি করে। ওই তরঙ্গের আঘাতে শরীরে প্রচুর ড্যামেজ হয়। ( মাইকেল বেনিঞ্জার)
হাঁচি আসলে মুখে হাত দেওয়ার ইহলৌকিক উপকার নোভেল করোনা ভাইরাস চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। যা আমাদের নবী দের হাজার বছর আগে শিখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হাই-হাঁচি দিলে মুখে হাত দেবে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে, হাঁচির মাধ্যমে যেহেতু মানুষ মারাত্মক ক্ষতি থেকে মুক্তি লাভ করে এ কারণেই হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁচির পর শুকরিয়া স্বরূপ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে শিখিয়েছেন। কতইনা সুন্দর ইসলামের শাস্বত বিধান।

204

পুষ্টিগুণে ভরপুর এক ফল নাশপাতি। নাশপাতিতে প্রচুর পরিামাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এই ফল তাই ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে। ব্রেস্ট, লাং, প্রোস্টেট, কোলন ও রেকটাম ক্যানসার দূর করে নাশপাতি। এতে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে।

প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে নাশপাতিতে। ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকার কারণে এই ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তাই ফ্লু অথবা ঠাণ্ডাজনিতে রোগে ভুগলে নাশপাতি খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেক ডাক্তার।
নাশপাতিতে প্রচুর আয়রন ও কপার থাকে, যা অ্যানিমিয়ার প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ভালো ভূমিকা রাখে। শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে গেলে রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ বাড়ে। তাই নাশপাতি খেলে অ্যানিমিয়া, মাংস পেশির দুর্বলতা, ক্লান্তি ও শারীরিক অবসাদ দূর হয়।

অস্টিওপোরোসিসসহ হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা যাদের আছে, তাদের জন্য উপকারী ফল নাশপাতি। এতে থাকা কপার, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হাড়ের ক্ষয়রোধ করে হাড় মজবুত রাখে।


বিডি প্রতিদিন/

205
দাঁতে ব্যথা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, তাই দাঁতের স্বাস্থ্য ধরে রাখতে কিছু ঘরোয়া টোটকা মেনে চলুন।

লবণ গরম পানি
দাঁত, মাড়ি, গলায় ব্যথা কমাতে খুব ভাল কাজ করে লবণ মিশ্রিত গরম পানি। এক গ্লাস গরম পানিতে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করুন। এতে যেকোনও সংক্রমণ সেরে যাবে।
রসুন
এক কোয়া রসুন থেঁতলে অল্প লবণের সঙ্গে মিশিয়ে দাঁতে লাগিয়ে রাখুন। খুব বেশি যন্ত্রণা হলে এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খান। যন্ত্রণা কমে যাবে।

লবঙ্গ
দুটো লবঙ্গ থেঁতলে নিয়ে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্টটা দাঁতে লাগান।

লবণ ও গোলমরিচ
লবণ ও গোলমরিচ সম পরিমাণে মিশিয়ে পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। দাঁতের ওপর এই পেস্ট লাগিয়ে কয়েক মিনিট রাখুন। দাঁতে ব্যথা কমে গেলেও এটা কয়েক দিন করে গেলে আরাম পাবেন।

পেঁয়াজ
পিঁয়াজের অ্যান্টিসেপটিক গুণ যেকোনও ক্ষত, ব্যথা সারাতে সাহায্য করে। দাঁতে ব্যথা হলে এক টুকরো কাঁচা পিঁয়াজ চিবিয়ে খেয়ে নিন। যদি বেশি ঝাঁঝ লাগে তবে দাঁতের ওপর পিঁয়াজ রাখলেও আরাম পাবেন।

আদা
এক টুকরো আদা কেটে নিন এবং যে দাঁতে ব্যথা করছে সে দাঁত দিয়ে চিবাতে থাকুন। যদি চিবাতে বেশি ব্যথা লাগে তাহলে অন্য পাশের দাঁত দিয়ে চিবিয়ে যে রস এবং আদার পেস্ট তৈরি হবে সেটা ওই আক্রান্ত দাঁতের কাছে নিয়ে যান। জিভ দিয়ে একটু চেপে রাখুন দাঁতের কাছে। কিছুক্ষণের মাঝেই ব্যথা চলে যাবে।

বেকিং সোডা
একটা কটন বাড একটু পানিতে ভিজিয়ে নিন। এর মাথায় অনেকটা বেকিং সোডা লাগিয়ে নিয়ে ব্যাথা হওয়া দাঁতের ওপরে দিন। অন্যভাবেও বেকিং সোডা ব্যবহার করা যায়। এক চামচ বেকিং সোডা এক গ্লাস গরম পানিতে গুলে সেটা দিয়ে কুলকুচি করুন।

দূর্বা ঘাসের রস
এছাড়া দূর্ব ঘাসের রসও দাঁতের ব্যথা কমাতে পারে। এটা দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও সহায়তা করে।

তবে মনে রাখবেন, আপনার দাঁত ব্যথা করছে তার মানে নিশ্চয়ই দাঁতের ভেতরে কোনও সমস্যা আছে এবং অবশ্যই ডেন্টিস্টের সাহায্য ছাড়া সে সমস্যার থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না।

ঘরোয়া এই প্রতিকারগুলো আপনাকে কিছুটা সময়ের জন্য ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে মাত্র। বিশেষ করে যদি মাড়ি ফুলে যায় তবে বুঝতে হবে সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডেন্টিস্টের সঙ্গে দেখা করুন।


বিডি প্রতিদিন/

206
করোনা

আমি করোনা; আসল নাম নভেল করোনাভাইরাস। আমি অণুজীব, সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রেও আমাকে দেখা যায় না। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান নগরে আমার জন্ম। এরপর ক্রমান্বয়ে আমি দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ি। এখন গোটা দুনিয়া আমার কবজায়।

কিন্তু জন্মের পর মনে হচ্ছে, জন্মই আমার আজন্ম পাপ। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে আমি আতঙ্কের প্রতিশব্দ। আমার নাম শুনলে মানুষের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে।

কারণ, আমার জন্মের মধ্যেই ধ্বংসের বীজ নিহিত। আকারে অতি ক্ষুদ্র হলেও আমাকে স্রষ্টা অপার শক্তির অধিকারী করে পাঠিয়েছেন। আমার মতো অদৃশ্য শক্তির মাজেজা খুঁজতে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা হিমশিম খাচ্ছেন। কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছেন না। আমি বহুরূপী, রহস্যময়ী, প্রয়োজন অনুযায়ী রূপ ও শক্তির হ্রাস/বৃদ্ধিতে আমার সমকক্ষ এখনও পয়দা হয়নি। আর অতি ক্ষুদ্রাকৃতি হওয়ার সুবিধা হল, আমি মানুষের নাক-মুখের ফাঁক-ফোকর দিয়ে ঢুকে পড়ি যা কেউ টের পায় না।

একবার ঢুকতে পারলেই হল, এরপরই শুরু হয় আমার মরণখেলা। আমার থাকার জায়গার অভাব নেই। তবে মনুষ্য দেহই আমার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। পৃথিবীর অগণিত মানুষকে আমি এরই মধ্যে কুপোকাত করেছি। আমাকে ঠেকানোর জন্য মানুষ মুখোশ পরছে। আমাকে আটকানোর আরও কত ব্যবস্থা! আমার ভয়ে লকডাউন করে মানুষকে ঘরবন্দি করে রাখা হয়েছিল।

বাজার, ঘাট, অফিস-আদালত, শিল্প-বাণিজ্য, গাড়ি, উড়োজাহাজ সব বন্ধ ছিল। এ তো গেল আমাকে ঠেকিয়ে রাখার আয়োজন-উদ্যোগ। এখন আমাকে চিরতরে নির্মূল করার জন্যে পৃথিবীর তাবৎ পণ্ডিত, জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বিলাত, আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ভারত ইত্যাদি দেশের বিজ্ঞানীরা আমাকে নির্মূল করতে উঠেপড়ে লেগেছে টিকা বানাতে। কিন্তু স্রষ্টা আমাকে কম বুদ্ধি দেননি। যখন দেখি আমাকে মারার চিন্তা করে কেউ টিকা বানিয়ে টেস্ট করছে, অমনি আমি চেহারা পাল্টে ফেলি। কূলে এসে পণ্ডিতদের তরী ডুবে যায়। তাদের মাথায় হাত দেখে আমি মনে মনে হাসি।

কিন্তু একটা বিষয় আমি বুঝি না, আপনারা এত বুদ্ধিমান প্রাণী হয়েও কেন আমার মুণ্ডুপাত করছেন? আপনাদের তো জ্ঞানের সীমা নেই। একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখেন এত বিবেক-বুদ্ধি নিয়ে আপনারা স্বজাতির মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি, যুদ্ধ-বিগ্রহ করে, খাদ্যে বিষ মিশিয়ে, ঈশ্বরের সৃষ্টি আকাশ-বাতাসকে দূষিত করে, পাহাড়-জঙ্গল, নদী-নালাকে তছনছ করে নিত্যদিন অসংখ্য মানুষের জীবন ধ্বংস করে যাচ্ছেন। বিকলাঙ্গ করছেন। অপুষ্টিতে মেরে ফেলছেন কত শিশুকে।

হিসাব করে দেখেন, দুনিয়া সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আমি এবং আমার জ্ঞাতিগোষ্ঠীরা কত মানুষ মেরেছে। আর আপনারা নিজেদের দখলদারি বজায় রাখতে কোটি কোটি মানুষের প্রাণ নিয়েছেন। এখনও স্বজাতিকে মারতে দিন-রাত কূটচালে মত্ত হয়ে আছেন। মারণাস্ত্রের গুদাম উপচে পড়ছে, অস্ত্রের খেলায় সারা দুনিয়াকে অস্থির করে তুলছেন।

সৃষ্টির সেরা জীব আপনারা, বিবেক-বুদ্ধি, জ্ঞান ইত্যাদিতে আপনাদের তুলনা নেই। প্রাণীকূলসহ এই সুন্দর পৃথিবীকে লালন পালন ও হেফাজত করা মানুষ জাতির স্রষ্টা প্রদত্ত মহান দায়িত্ব। স্বজাতির মধ্যে রেষারেষি ভুলে একে অন্যের সেবায় জীবন উৎসর্গ করুন। প্রাণীকূলকে রক্ষা করুন, প্রকৃতিকে বাঁচান, সৃষ্টির সবকিছুকে আপন নিয়মে বাঁচিয়ে রাখুন।

ঈশ্বর দয়ার সাগর, দেখবেন পৃথিবী স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে। সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলবে ধরিত্রী। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আমরাও আর কোনোদিন আপনাদের বিরক্ত করব না। আমরা বাতাসের সঙ্গে মিশে খুশবু ছড়াব, অক্সিজেন দিয়ে ভরিয়ে দেব আপনাদের প্রাণ-মন।

Source:https://www.jugantor.com/todays-paper

207
নামাজের সালাম ফেরানোর পর সবার মুখে মুখে একবার 'আল্লাহু আকবার' এবং তিনবার 'আসতাগফিরুল্লাহ' তথা ইসতেগফারের ধ্বনি ওঠে। কিন্তু কেন? নামাজের সালাম ফেরানোর এ ইসতেগফার পড়ার কারণ কী?

নামাজের পর ইসতেগফার কেন পড়বেন? এর প্রথম উত্তর হলো- এটি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম একটি আমল। হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাজের সালাম ফেরাতেন, তখন সর্ব প্রথম যে শব্দ তাঁর পবিত্র জবান থেকে বেরত হতো, তাহলো- আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ।‘

চিন্তা করার বিষয় হল, কেন তিন বার ইসতেগফার পড়তেন? কুরআন-সুন্নাহর বর্ণনা মতে, গোনাহ বা অন্যায় কাজ সংঘটিত হলেই ইসতেগফার পড়া হয়। আর নামাজ তো হলো ঈমানের পর ইবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। নামাজের পুরোটাই তো সাওয়াব আর সাওয়াব। তবে নামাজ শেষে কেন ইসতেগফার?

‘ইসলাম আওর হামারি জিন্দেগি’ গ্রন্থে এসেছে, ইসতেগফারএ জন্য করা হয়েছে যে, নামাজ যেভাবে হক আদায় করে পড়ার কথা; সেভাবে হক আদায় করে নামাজ পড়া হয়নি। যে নামাজকে মুমিনের জন্য মেরাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সে কারণেই নামাজের সালাম ফেরানোর পরপরই ইসতেগফার পড়া হয়।

ইসতেগফার পড়ার সময় মুমিনের মনে এ অবস্থা বিরাজ করবে যে-
ما عبدناك حق عبادتك و ما عرفناك حق معرفتك
হে আল্লাহ! আমাদের থেকে আপনার ইবাদতের (নামাজের) হক আদায় হয়নি। না জানি কত ভুল কত বিচ্যুতি এই ইবাদতে (নামাজে) সংঘটিত হয়েছে। হে আল্লাহ! আমরা (নামাজের সালাম ফেরানোর পর পর সর্বপ্রথম সেই সব ভুল-ত্রুটির জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাই, যা এই নামাজে সংঘটিত হয়েছে।'

মুমিন মুসলমানের উচিত, নামাজের সালাম ফেরানোর পর পর উল্লেখিত অনুভূতি নিয়ে সুন্নাতের উপর আমলের নিয়তে ৩ বার ইসতেগফার পড়া। যথাযথ হক আদায় করে নামাজ পড়ার চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ হক আদায় করে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। নামাজের সালাম ফেরানোর পর পর ৩ বার ইসতেগফার পড়ার মাধ্যমে সুন্নাতের আমল জারি রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

208
মানুষ আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী। আল্লাহর গোলামীর মাধ্যমেই মানুষ তার সান্নিধ্য লাভ করে। তাঁর গোলামি বা ইবাদত করার অন্যতম মাধ্যম হলো নামাজ। যা মুমিন মুসলমানের অনন্য গৌরবময় ইবাদত। এ ইবাদতের মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলার সঙ্গে বান্দা গড়ে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার জন্য গৌরবময় এ উপহার দান করতে তাঁর প্রিয় বন্ধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মেরাজের নির্দেশ দেন। ইসলামের ইতিহাসে এ মেরাজও অনন্য বিস্ময়কর অলৌকিক ঘটনা।

পৃথিবীর ইতিহাসে বিশ্বনবির নামাজ প্রাপ্তির ক্ষণ ও মেরাজের ঘটনা বিশ্বমানবতার কাছে বিস্ময়কর। যার বিস্ময় আজও শেষ হয়নি। মেরাজের রাতে আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভের মাধ্যমেই নামাজ পেয়েছেন বিশ্বনবি। এ জন্য নামাজই হচ্ছে মুমিন মুসলমানের জন্য আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভের অন্যতম মাধ্যম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক রাতে মক্কা থেকে ফিলিস্তিনের হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে সাত আসমান পার করে অজানা দূরত্বের দীর্ঘ পথ পরিভ্রমণ করে মহান প্রভুর সান্নিধ্য লাভ করেছেন। আর মুমিন মুসলমান দীর্ঘ পথের সফর ও কষ্ট না করেই নামাজের মাধ্যমে মহান প্রভুর একান্ত সান্নিধ্য ও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হবেন।

যে কারণে মহান প্রভু মেরাজের রাতে মুমিন মুসলমানের জন্য নামাজকে আবশ্যক করে দিয়েছেন। যাতে মুমিন মুসলমান প্রতিদিন প্রতিক্ষণ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে নিবিড় সম্পর্ক ও একান্ত সান্নিধ্য লাভ করতে পারেন।

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা প্রথম পূর্ণাঙ্গ যে সুরাটি নাজিল করেছেন, তাহলো সুরা আল-ফাতিহা। এ সুরাটিকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়ে থাকে। মুমিন বান্দা নামাজের প্রতি রাকাআতেই এ সুরার মাধ্যমেই সুসম্পর্ক তৈরি করার জন্য মহান প্রভুর সঙ্গে একান্তে নিবিড় কথা বলেন। আর মহান প্রভুও প্রতিটি আয়াতে আয়াতে জবাব দিয়ে থাকেন।

নামাজে মুমিন বান্দা কীভাবে আল্লাহর সঙ্গে একান্তে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করেন এবং কথা বলেন; আর আল্লাহ তাআলাই বা কীভাবে এসব কথার উত্তর দেন, তা হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ মুসলিম প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে-

> আমার বান্দা যখন বলে- الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ‘আলহামদুলিল্লাহহি রাব্বিল আলামিন’

> তখন আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে’। বান্দার মুখ থেকে 'আলহামদুলিল্লাহহি রাব্বিল আলামিন' প্রশংসার উচ্চারণ শুনে আল্লাহ এতটাই খুশি হন এবং গর্ববোধ করেন যে, তিনি তাঁর ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, ‘আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে’।

> বান্দা যখন হৃদয় থেকে বলে- الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ 'আর রাহমানির রাহিম'

> তখন আল্লাহ বলেন- ‘আমার বান্দা আমার গুণাগান গায়’।

> বান্দা যখন হৃদয় থেকে বলে- مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ 'মালিকি ইয়াওমিদ্দিন'

> তখন আল্লাহ বলেন- ‘আমার বান্দা আমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করছে’।

> তারপর বান্দা যখন অনুগতচিত্তে বলে- إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ 'ইয়্যাকা নাবুদু ও ইয়্যাকা নাসতাইন' অর্থাৎ আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি, একমাত্র আপনার কাছেই সাহায্য চাই।

> তখন আল্লাহ বলেন- ‘এটা আমার আর আমার বান্দার সম্পর্ক, বান্দা (যখন) যা চাইবে তা-ই সে পাবে’।

> তারপর বান্দা মহান প্রভুর কাছে একান্ত দরদ মাখা কণ্ঠে দুনিয়ার সেরা জিনিসের আবেদন করেন। আর তাহলো-

اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ - صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ

'ইহদিনাস সিরাত্বাল মুসতাক্বিম, সিরাত্বাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়া লাদদ্বাল্লিন'

অর্থ : ‘(হে প্রভু!) আপনি আমাদের সহজ-সরল পথ দেখান। তাঁদের পথ; যাঁদের প্রতি আপনি নেয়ামত দান করেছেন। আর যারা অভিশপ্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত কিংবা পথহারা বা পথভ্রষ্ট তাদের পথে আমাদের পরিচালিত করবেন না’।

> তখনও আল্লাহ বলেন- ‘এটা শুধু আমার বান্দার জন্য, আমার বান্দা যা চাইবে তা-ই পাবে।' (মুসলিম)

একনিষ্ঠ নামাজে মুমিন মুসলমান সুরা ফাতেহা পড়ার মাধ্যমেই মহান আল্লাহর সঙ্গে কথা বলে থাকেন; নিবিড় সুসম্পর্ক তৈরি করার সুযোগ লাভ করেন। নামাজের প্রতি রাকাআতেই মুমিন মুসলমানকে এ সুরাটি পড়ে হয়। কেননা সুরা ফাতেহা পড়া ছাড়া নামাজই হবে না।

এ নামাজেই মুমিনের সঙ্গে আল্লাহর মেরাজ সংঘটিত হয়। নিবিড় মগ্নতায় মুমিন বান্দা আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন। আল্লাহর সঙ্গে এ সুসম্পর্ক তৈরিতে আল্লাহ ও নামাজি ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ থাকে না। এ সময় বান্দা আল্লাহর কাছে যেভাবে, যা চাইবে; মহান আল্লাহ বান্দাকে তাই দিয়ে দেবেন বলেও হাদিসে কুদসিতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখ করেছেন।

এ কারণেই নামাজের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবেগ প্রবণ হয়ে পড়তেন। আবেগঘন কণ্ঠে হজরত বেলালকে আহ্বান করতেন আর বলতেন-

‘হে বেলাল! নামাজের ব্যবস্থা কর; আমাকে শান্তি দাও।’

এ শান্তি; কিসের শান্তি? তা ছিল আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার শান্তি! মেরাজের অপার গৌরবময় সুখ শান্তি!

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নিজেদের প্রতি ওয়াক্তের নামাজকে মেরাজে রূপান্তরিত করা। আল্লাহর সঙ্গে নিবিড় সুসম্পর্ক তৈরি করে নেয়া। বিশ্বনবির প্রশান্তি লাভের বিষয়টি নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করা।

আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে যথাসময়ে প্রতি ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। নামাজের মাধ্যমে মহান রবের সঙ্গে একান্তে কথা বলার তাওফিক দান করুন। নিবিড় সুসম্পর্ক তৈরির করার তাওফিক দান করুন। নামাজে মেরাজের প্রশান্তি ও সুখ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

209
নামাজ মুমিনের মিরাজ তথা আল্লাহ তাআলার দিদার লাভ। শুধু তাই নয়, জীবন সংগ্রামে সাফল্যের জন্য এর গুরুত্ব অত্যাধিক। কেননা  নামাজের মাধ্যমেই বান্দা তাঁর প্রভুর একান্ত সান্নিধ্য লাভ করে। তাই জীবন সংগ্রামে সাফল্য লাভ করতে হলে নামাজের গুরুত্ব উপলব্দি করতে হবে।

আল্লাহ বলেন-
‘তোমরা নামাজের মাধ্যমে আমার কাছে সাহায্য চাও।’ অন্যত্র এসেছে, ‘নিশ্চয় নামাজ অন্যায় অসুন্দর কাজ থেকে বিরত রাখে।’ ` কুরআনের এ বক্তব্য প্রথমত মানুষের দুনিয়ার জীবন সংগ্রামের সাফল্য লাভের জন্যই নাজিল হয়েছে। যে দুনিয়ার জীবনে সফল, সে আখিরাতে বিশাল জিন্দেগিতেও হবে সফল।

তাই মানুষ দুনিয়ার জীবনে সাফল্য লাভ করতে হলে, নামাজের মাধ্যমেই তার সান্নিধ্যে আসা সম্ভব। তাঁর সান্নিধ্যে উপস্থিতি, তার স্মরণে বিভোর ও তন্ময় থাকা, তাঁর প্রতিটি হুকুম পালনে শপথ গ্রহণ করা, তাঁর প্রতি বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করা, তার রহমত লাভে ধন্য হওয়া, অন্তরে প্রশান্তি লাভ করা, সকল প্রকার অশান্তি, অন্যায়-অনাচার থেকে আত্মরাক্ষা করতে সাহায্য লাভ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে নামাজ। যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে নামাজের মাধ্যমে উক্ত বিষয়গুলো অর্জন করতে সামথ্য হবে; তার জন্য দুনিয়ার জীবন হবে সুন্দর, সাফল্যমণ্ডিত ও সার্থক।

সুতরাং আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালনার্থে নামাজ পড়ে দুনিয়ার জীবনে শান্তি ও আখিরাতে সাফল্য লাভ করাই হবে প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নামাজের মাধ্যমে জীবন সংগ্রামে সাফল্য লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমাদেরকে নামাজি ব্যক্তি হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

210
Namaj/Salat / সফর অবস্থায় নামাজ আদায়
« on: November 07, 2020, 01:08:26 PM »
সফর শব্দের অর্থ হলো ভ্রমণ করা। অর্থাৎ যে কোনো প্রয়োজনে নিজের স্থায়ী বসবাসের স্থান ছেড়ে অন্য কোথাও গমন করাই সফর। ইসলামি শরিয়ত কর্তৃক নির্দিষ্ট পরিমান জায়গা সফরে অতিক্রম করলে নামাজ কসর (সংক্ষিপ্ত) করে আদায় করতে হয়। কারণ সফরে অধিকাংশ সময় কষ্ট হয়ে থাকে আর ইসলাম দয়া ও সহজের দ্বীন। তাই সফর অবস্থায় নামাজ কসর করে আদায় করা ইসলামের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্যও বটে। নামাজের কসর প্রসঙ্গে একটি হাদিস তুলে ধরা হলো-

Namaj

হজরত ইয়া’লা ইবনে উমাইয়া বলেন, আমি হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যখন বললাম, আল্লাহ বলেন, ‘নামাজকে কসর করে আদায় করলে তোমাদেরপ্রতি পাপ নেই; যদি ভয় কর যে, যারা কাফের (অবিশ্বাসী) তারা তোমাদেরকে ফেৎনায় ফেলতে পারে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১০১)

তখন তিনি (হজরত ওমর) বললেন, তুমি যেমন আশ্চর্য হচ্ছ; আমিও তেমনি আশ্চর্য হয়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। উত্তরে তিনি (বিশ্বনবি) বলেন, ‘ইহা একটি দান; যা আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি (রহমতস্বরূপ) দান করেছেন। অতএব, আল্লাহর দান কবুল করে নাও।’ (মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর জন্য সফর অবস্থায় চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাজসমূহকে দুই রাকাআত করে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সফরের দূরুত্ব এবং কত দিন পর্যন্ত স্থায়ী বসবাসের বাইরে অবস্থান করলে নামাজ কসর করে পড়তে হবে তা পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হবে।

বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব থেকে হজের সফর চলছে; এ হজের সফরে নামাজকে কসর আদায় করা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সকল সফরের নিয়মের আওতায় অবতীর্ণ ব্যক্তিকে চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাজ কসর করে পড়ে তার হুকুম পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Pages: 1 ... 12 13 [14] 15 16 ... 32