Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Farhana Haque

Pages: 1 [2] 3 4
16
পৃথিবীতে প্রটিটি সফল মানুষের কিছু ব্যর্থতার গল্প আছে।  একবারে চেষ্ঠায় কেউ সফল হননি। সফল উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ, শিল্পী, লেখক, বিজ্ঞানী – যার কথাই বলা যাক, সবাইকেই ব্যর্থতার কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে সফল হতে হয়েছে। আবার এই সাফল্য পাওয়ার পরও অনেকে তা ধরে রাখতে পারেন নাই বরং আবার ব্যর্থ হয়েছেন।  আবারও তাঁরা উঠে দাঁড়িয়েছেন, এবং নবশেষে সফল হয়েছেন। এইসব সফল মানুষের সবার মধ্যেই একটা আশ্চর্যরকম মানসিক শক্তি আর আত্মবিশ্বাস আছে। যত বড় ব্যর্থতার মুখেই তাঁরা পড়েন না কেন – কখনওই কাজ করা বন্ধ করেন না। কখনওই তাঁরা বিশ্বাস হারান না।  তাঁদের এইসব ব্যর্থতার গল্প থেকে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের।  প্রতিটি গল্প থেকেই অনুপ্রেরণা নেয়ার মত কিছু না কিছু আছে।

আপনি যে ধরনের বিপদ বা খারাপ পরিস্থিতিতেই পড়েন না কেন, এইসব অসাধারণ সফল মানুষদের ব্যর্থতার গল্প এবং ব্যর্থতাকে জয় করার গল্প যদি মাথায় রাখেন – তবে কোনও অবস্থাতেই সাহস আর বিশ্বাস হারাবেন না।  কোনও বড় লক্ষ্যকেই আর অসম্ভব মনে হবে না।  যে কোনও ব্যর্থতা থেকেই আপনি আবার ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা পাবেন।  চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক পৃথিবীর সেরা সফল ১১ জন মানুষের ব্যর্থতার কাহিনী।

০১. আব্রাহাম লিংকন

১৮০৯ সালে জন্ম নেয়া এই মানুষটি আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট।  আমেরিকার সর্বকালের সেরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে ধরা হয় তাঁকে।  আমেরিকায় দাসদের স্বাধীনতা লাভের পেছনে তাঁর অবদানই সবচেয়ে বেশি।  রাজনীতি ও খ্যাতির দিক দিয়ে তিনি নি:সন্দেহে পৃথিবীর ইতিহাসের সফলতম মানুষদের একজন।  কিন্তু তাঁর শুরুটা কিন্তু ব্যর্থতার গল্প দিয়েই। 

২৩ বছর বয়সে তাঁর চাকরি চলে যায়। সেই সময়ে তিনি তাঁর প্রথম নির্বাচনেও হারেন।  ২৯ বছর বয়সে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এর সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচন করে হারেন।

১৮৪৮ সালে, ৩৯ বছর বয়সী লিংকন ওয়াশিংটনের জেনারেল ল্যান্ড অফিসের কমিশনার হওয়ার জন্য নির্বাচন করে পরাজিত হন।  ৪৯ বছর বয়সে সিনেটর হওয়ার জন্য নির্বাচনে দাঁড়িয়ে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হন।  এত ব্যর্থতার পরও তিনি রাজনীতি না ছেড়ে চেষ্টা করে যান।  অবশেষে ১৮৬১ সালে, ৫২ বছর বয়সে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।  প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগের প্রায় পুরোটাই ছিল ব্যর্থতার গল্প।  কিন্তু এরপর তিনি ইতিহাস বদলে দেন।


০২. আলবার্ট আইনস্টাইন



পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত ও সফল বিজ্ঞানীদের একজন তিনি।  তিনি এতটাই সফল যে, ‘বিজ্ঞানী’ শব্দটা মাথায় আসলেই বেশিরভাগ মানুষ তাঁর কথা ভাবেন।  পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম সেরা মেধাবী বলা হয় তাঁকে।  কিন্তু ১৮৭৯ সালে জন্ম নেয়া এই জার্মান জিনিয়াসকে একটা সময় পর্যন্ত গর্ধভ মনে করা হত।  কিছুতেই তিনি ভালো ছিলেন না।  কথা বলা শিখতেই তাঁর ৪ বছর লেগেছিলো।  পড়াশুনায় ছিলেন একদম কাঁচা।  ১৬ বছর বয়সে জুরিখের সুইস ফেডারেল পলিটেকনিক স্কুলের ভর্তি পরীক্ষায় শোচনীয় ভাবে ফেল করেন।

ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ে প্রতিটি বিষয়ে তিনি এতই বাজে রেজাল্ট করতেন যে, একাধিক বার পড়াশুনা বাদ দেয়ার চিন্তা করতে হয়েছিল।  মারা যাওয়ার সময়ে তাঁর বাবার একমাত্র দু:খ ছিল যে এই গর্ধভ ছেলে জীবনে কিছুই করতে পারবে না।  বাবার এই কথায় আইনস্টাইন বহুদিন ধরে মনে কষ্ট চেপে রেখেছিলেন।


 
কোনও কাজ না পেয়ে তিনি বাধ্য হয়ে ইন্সুরেন্স সেলস ম্যানের কাজ নেন।  কোনও কাজ না পারলে মানুষ এই ধরনের চাকরি করতো।  ২ বছর পর তিনি পেটেন্ট অফিসে কাজ পান। যেখানে নতুন ডিভাইস পেটেন্ট করার আগে পরীক্ষা করা হতো।

কিন্তু একটা সময়ে এই মানুষটাই পৃথিবীর চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। তাঁর সেই ‘ডাল ব্রেন’ নিয়ে তিনি পদার্থ বিজ্ঞানের বেশ কয়েকটি মূল সূত্র সৃষ্টি করে গেছেন।  বিজ্ঞানে অবদানের জন্য নোবেল প্রাইজ জিতেছেন।  প্রমাণ করেছেন যে চেষ্টা করলে সবাইকে দিয়েই সবকিছু সম্ভব।

০৩. বিল গেটস

যদিও এখন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি আমাজনের জেফ বেজোস, কিন্তু এখনও অনেকে মনে করেন যে বিল গেটসই পৃথিবীর ধনীতম মানুষ।  কারণ, এতদিন ধরে তিনি বিশ্বের এক নম্বর ধনী ছিলেন যে, অন্য কেউ তাঁর জায়গা দখল করেছে – এটাই অনেকে জানে না।

আজকের বিশ্বের কম্পিউটারের বিপ্লবের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান যাদের, তাঁদের অন্যতম হলেন তিনি।  এইযে লেখাটি পড়ছেন, এটিও লেখা হয়েছে তাঁর বানানো অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ কম্পিউটারে, তাঁর বানানো মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ব্যবহার করে।  পৃথিবীর বেশিরভাগ কম্পিউটার এখনও তাঁর কোম্পানীর সফটঅয়্যারে চলে।

কিন্তু আপনি কি জানেন, বিল গেটসের প্রথম প্রজেক্ট অপমানজনক ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল? মাইক্রোসফট এর কো-ফাউন্ডার এবং বাল্যবন্ধু পল এ্যালেন আর বিল গেটস মিলে “Traf-O-Data” নামে একটি মেশিন তৈরী করেছিলেন যেটি ট্রাফিক কাউন্টার গুলো থেকে ডাটা সংগ্রহ করে সরকারি ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারদের তা গুছিয়ে সরবরাহ করবে।  এমনিতে কাজটি হাতে করতে হতো।

এই যন্ত্রটির ওপেনিং এ স্বয়ং শিয়াটলের ট্রাফিক সুপারভাইজার এসেছিলেন।  কিন্তু যন্ত্রটি চালু করার পর কোনওভাবেই কাজ করেনি।  এমন লজ্জা আর অপমান গেটসের জীবনে আর আসেনি।  কিন্তু তাঁরা থেমে যাননি।  এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই বিল আর পল মিলে পরে মাইক্রোসফটকে সফল করেন।

17

বছর দুয়েক আগে সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে পৃথিবী ও পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষায় বড়দের আরও অনেক বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালনের দাবিতে নিজের স্কুলের সামনে একা প্ল্যাকার্ড হাতে ধর্মঘটে বসেছিলেন।

মাত্র দুই বছরে এই কিশোরী জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্দোলনে সারা বিশ্বের দূত হয়ে উঠেছেন। তার ডাকে জড়ো হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ।

একজন কন্যা শিশু যেন নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, বাবা, ভাই, স্বামী এবং শেষ জীবনে ছেলে তার দায়িত্ব নেবে - এমনটা না ভেবে "আমিও পারি" এই মনোভাব নিয়ে সামনে এগোতে পারে, সেই আত্মবিশ্বাস কীভাবে অর্জন করা সম্ভব?

কন্যা শিশুকে নিজের ব্যাপারে এই আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে কিভাবে শেখানো যায়?

আজ জাতিসংঘের বিশ্ব কন্যা শিশু দিবসে মা-বাবার জন্য মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও শিশুদের বিকাশ বিষয়ক চিকিৎসকের পরামর্শ।

সিদ্ধান্ত ও দায়িত্ব

আত্মবিশ্বাস একদম ছোটবেলা থেকেই তৈরি করতে হয়, বলছেন মনোবিজ্ঞানী ডা. ইশরাত শারমিন রহমান।

তিনি বলছেন, বাবা-মা শিশুর তার সাথে ছোটবেলা থেকে যে আচরণ করবে তার উপর নির্ভর করে শিশু আত্মবিশ্বাসী হবে কি হবে না।

ছোট বেলা থেকেই কন্যা শিশুর মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

তাকে কথা বলতে দিতে হবে। সেজন্য ছোট বেলা থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে দেবার কথা বলছেন তিনি।

"তুমি মেয়ে, তুমি কি বোঝ, এসব কথা না বলে ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিতে দেয়া। যেমন তাকে জিজ্ঞেস করা সকালের নাস্তায় সে কি খেতে চায়? ডিমটা সেদ্ধ হবে নাকি পোচ? কন্যা শিশুকে তার উপযোগী কোন দায়িত্ব দেয়া। সেটি পেরে উঠলে তার মনে হবে আমিও পারি।"

তিনি বলছেন, ছোট বেলায় বাবা ও মায়ের মধ্যে যে সম্পর্কে শিশু দেখে তার উপর ভিত্তি করে নিজের অবস্থান ঠিক করে নেয় শিশু, বলছেন ডা. ইশরাত শারমিন। সে যদি দেখে পরিবারে বাবাই সব সিদ্ধান্ত নেয়, মায়ের কোন বক্তব্য থাকে না - তাহলে মেয়ে শিশুরা সেটাই শিখবে। এমন পারিবারিক পরিবেশ মেয়ে শিশুদের আত্মবিশ্বাস তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে।

সমালোচনা ও অন্যদের সাথে তুলনা না করা

বিশ্বব্যাপী সৌন্দর্য নিয়ে কন্যা শিশুকে অনেক বার্তা দেয়া হয়। বিভিন্ন দেশে তার নানা ধরন।

সেন্টার ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডিজ-এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইশরাত শামিম বলছেন, "বাংলাদেশে মেয়েদের হয়ত তার পাশের বাড়ির মেয়েটি, বা চাচাতো-খালাতো বোনদের সাথে গায়ের রঙ, চুল নিয়ে তুলনা করা হয়। খুব সরাসরি বলা হয় দেখো ও কত সুন্দর, পরিপাটি, পড়াশুনায় তোমার চেয়ে তোমার কত ভাল। এরকম তুলনা করার কারণে আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়। মেয়েরা নিজেরাও অন্যদের সাথে তুলনা করে।''

তিনি বলছেন, টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকেও মেয়েরা নিজেরা অন্যদের সাথে নিজেদের তুলনা করতে শেখে। তাদের শেখাতে হবে সৌন্দর্যের ধারণা ও মেয়েদের জীবন সম্পর্কে এসব জায়গায় সে যা দেখছে সেটাই বাস্তব দুনিয়া নয়।

শিশুদের বিকাশ বিষয়ক চিকিৎসক ডা. রিয়াজ মোবারক বলছেন, "আমার কাছে অনেক অভিভাবক আসেন যারা মেয়ে বাচ্চার হয়ত কোথাও দাগ রয়েছে তারা সেটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন যে 'মেয়ে বড় হলে কেমন লাগবে'। তারা চিন্তা করেন যে বড় হলে মেয়ের বিয়ে হবে না। বাবা-মায়েদের বুঝতে হবে হবে যে কন্যা শিশু হলে মুখে দাগ বাড়তি ইস্যু নয়।"


ওটা তোমার কাজ নয়, তুমি পারবে না

পৃথিবীর অনেক কিছু আজকাল বদলে গেছে। একসময় মেয়েদের বাইসাইকেল চালানো কটু চোখে দেখা হতো। আর এখন মেয়েরা বিমান চালাচ্ছে।

ডা. ইশরাত শারমিন বলছেন, "বাংলাদেশে বাবা-মায়েরা মেয়ে শিশুদের সব কাজ করে দেন। এটা অতি-ভালবাসার কারণে হতে পারে, অথবা সে পারবে না -এই চিন্তা থেকেও হতে পারে। আগ বাড়িয়ে সব কিছু করে না দেয়া, এতে ভবিষ্যতে নিজে বুদ্ধি করে কিছু করার ক্ষমতা নষ্ট হয়। এই কারণেই হয়ত আমরা দেখি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও অনেক কাজে তার সাথে একজন পুরুষ থাকে।"

পরিবারে ছেলে ও মেয়েকে সমান সুযোগ দেয়ার কথা বলছেন ডা. শারমিন।

"মেয়েটিকে একটা পর্যায় পর্যন্ত পড়িয়ে বিয়ে দিতে হবে, এটাই তার একমাত্র গন্তব্য, শুধুমাত্র এমন চিন্তা হয়ত অনেকেই আজকাল আর করেন না। কিন্তু ছেলের শিক্ষার জন্য বাড়তি কোচিং, তার ক্যারিয়ার তৈরিতে বাড়তি আশা এবং সেটি নিয়ে প্রকাশ্যে মেয়েদের সামনে আলাপ করা, এটিও মেয়ে শিশুদের মন ছোট করে এবং আত্মবিশ্বাস কমায়।"

ভাল কাজের প্রশংসা আর ইতিবাচক চিন্তা করতে শেখানোর কথা বলছেন, ডা. শারমিন।

"তুমি পারবে না, এসব না বলে বরং তার কোন সফলতাকে প্রশংসা করা ও পুরস্কৃত করা উচিৎ। তার সফলতাকে প্রশংসা করা উচিত। কোন কিছুতে ভাল না করলেও সেজন্য বকা না দিয়ে সে যে চেষ্টা করছে তার জন্যেও তাকে প্রশংসা করা উচিৎ।"

কন্যা শিশুকে ইতিবাচক চিন্তা করতে শেখানোর কথা বলছেন তিনি।

খাবার ও খেলার সাথে আত্মবিশ্বাসের সম্পর্ক

ডা. রিয়াজ মোবারক বলছেন, "আমার কাছে সব শ্রেণীর বাবা-মায়েরা আসেন। ছেলে ও মেয়ে শিশুদের খাবারে পার্থক্য আজকাল আর আছে বলে আমার মনে হয় না। তবে কৈশোরে পিরিয়ডের জন্য মেয়েদের খাবার বেশি প্রয়োজন হয়। কারণ তখন অনেক সময় রক্ত স্বল্পতা হতে পারে। খাদ্য দিয়ে সেটা পূরণ করতে হয়।"

পুষ্টিবিজ্ঞানী সৈয়দা শারমিন আক্তার বলছেন, খাবার কম খেলে চিন্তা করার ক্ষমতা কমে যায়।

ডা. মোবারক আরও বলছেন, অনেক সময় মেয়েদের ভিটামিন ডি'র ঘাটতি হয় কারণ ছেলেরা বাইরে খেলা করে, তাদের বাইরে কাজে পাঠানো হয়, তারা রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে। ভিটামিন ডি হাড়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও আরও অনেক কিছুর জন্য দরকার।

ডা. ইশরাত শারমিন বলছেন, বাইরে যেতে না দেয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই বলেন গায়ের রঙ কালো হয়ে যাবে।

সব ধরনের খেলনা ও খেলতে দেয়া

বাংলাদেশে অনেক বাবা-মা মেয়ে শিশু ও ছেলে শিশুর জন্য যে খেলনা কেনেন, আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা যে খেলনা উপহার দেন - তাতেও নিজের সম্পর্কে শিশুর মনোভাব তৈরি হয়।

"মেয়ে শিশুকে সব ধরনের খেলনা কিনে দিন। ক্রিকেট ব্যাট, সাইকেল, শুধু পুতুল আর রান্নার খেলনা নয়।" বলছেন ডা. ইশরাত শারমিন।

একটা বয়সের পর বাংলাদেশে মেয়েদের খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ডা. রিয়াজ মোবারক মনে করেন মেয়ে শিশুদের সব ধরনের খেলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে উৎসাহিত করতে দেয়া উচিত।

"জিমে যাওয়া, সাতার কাটা এসব করতে দিলে সেটিও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। খেলাধুলা, শরীর চর্চা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ আত্মবিশ্বাস ও নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা তৈরি করে।"

সূত্রঃ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক

18

নাম অ্যাডাম হ্যারি, বয়স কুড়ি বছর। বর্তমানে তিনি বিমানচালক হওয়ার পথে। এই গল্পে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আপনি তখনই অবাক হবেন যখন জানতে পারবেন আর পাঁচজনের মত স্বাভাবিক জীবন ছিল না হ্যারি। কারণ ইনিই প্রথম দেশের বিমানচালক হতে চলেছে, যিনি তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি। হ্য়ারির সমস্ত খরচা বহন করেছে কেরল সরকার।

হ্যারি জীবনের উনিশ বছর বয়সে তাঁর পরিবার জানতে পারে তিনি একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। একথা জানার পরই তাঁর ওপর শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার। মানসিক তো বটেই শুরু হয় শারীরিক অত্যাচারও। চলে মারধর। প্রায় এক বছর টানা ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল হ্যারিকে। শেষমেষ কোনও উপায় না পেয়ে ঘর থেকে পালিয়ে যায় সে। পৌঁছায় কেরলের এর্নাকুলামে। তিনি জানিয়েছেন, আমার কপাল ভালো যে সেখানে গিয়ে আমি তৃতীয় লিঙ্গের একজনের সঙ্গে পরিচিত হই। সেই সময় আমার মাথার উপরে না আছে ছাদ, সঙ্গে না আছে কোনও জিনিস। রাত কাটাতাম রেলস্টেশনেই। বাঁচার জন্য ফলের রসের একটা দোকানে কাজ শুরু করি। তারপরে উড়ানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এমন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আমি পড়াতে শুরু করি কিন্তু আমি তৃতীয় লিঙ্গ হওয়ায় তারা আমাকে খুব একটা বেশি টাকাপয়সা দিত না।

হ্য়ারির জীবন সম্পর্কে জানাজানি হতেই বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম তাঁকে নিয়ে খবর করা শুরু করে। বিষয়টি কেরল সরকারের নজরে আসতেই সমাজকল্যাণ দফতর থেকে ফোন যায় হ্যারির কাছে। এরপর সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিকরা তাঁকে পরামর্শ দেন উড়ানের পরবর্তী প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য উপযুক্ত কোনও প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করতে।

সমাজকল্যাণ দফতরের এক সচিব তাঁকে বলেন, ট্রান্সজেন্ডার জাস্টিস বোর্ডে বৃত্তির জন্য আবেদন করতে। সেই আবেদন মঞ্জুর হতে আমি রাজীব গান্ধী ইনস্টিটিউট অফ অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড টেকনোলজিতে ভর্তি হই। সেখান থেকে আজ এই জায়গায় পৌঁছায় অ্যাডাম। তবে হ্য়ারির একটাই প্রশ্ন,যাঁরা তাঁরই মতো তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি, আর পাঁচজনের মতো তাঁদেরও সসম্মানে বাঁচার অধিকার রয়েছে তাহলে তাঁদের এত সংগ্রাম করতে হবে কেন?

সূত্রঃ মহানগর ওয়েবডেস্ক

19
একটি প্রসিদ্ধ প্রবাদ বাক্য আছে, Where there’s a will, there’s a way অর্থ- ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। সেই আদিকাল থেকেই এ প্রবাদ বাক্যটা মানুষের মুখে মুখে চলে আসছে। ছাত্রছাত্রীরাও তাদের খাতায় এ বিষয়ে অসংখ্যবার ভাবসম্প্রসারণ লিখেছে। শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে এ বিষয়ে প্রতিনিয়তই পাঠদান করে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো ইচ্ছা নামক এই অফুরন্ত শক্তি প্রত্যেক ব্যক্তির মাঝে লুকিয়ে থাকলেও তার ব্যবহার লক্ষ করা যায় না। ইচ্ছাশক্তিকে ব্যবহার করে জীবন পরিচালনার উপায় তথা কাজের সাফল্যে পৌঁছার কোনো তৎপরতা অনেকের মাঝেই অনুপস্থিত থাকে। যদিও সঠিকভাবে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করা এবং সে ইচ্ছাকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা সত্যিই কষ্টকর ব্যাপার। কিন্তু ইচ্ছাশক্তি প্রবল হলে মানুষ পারে না এমন কোনো কাজ নেই।

মানুষের ভেতর যে এক বিশাল শক্তি লুকিয়ে আছে তার নাম ইচ্ছাশক্তি। যে শক্তি অফুরন্ত সম্ভাবনার দ্বার। এই অফুরন্ত ইচ্ছাশক্তিকে যদি সত্যিকারার্থে জাগ্রত করা যায় তাহলে সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে হলেও বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব। অদম্য ইচ্ছাশক্তি সাফল্যের অন্যতম সোপান। অদম্য, অজেয় ইচ্ছাশক্তি যার রয়েছে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা তারই সবচেয়ে বেশি। সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছার জন্য প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তিকে শক্তিশালী করা। কিন্তু অনেক সময় মানুষ তার ইচ্ছাশক্তিকে জাগ্রত করে না। নিজের ভেতরের ইচ্ছাশক্তিকে নিজের মাঝেই ঘুম পাড়িয়ে রাখে। নিজেকে ছোট মনে করে। না পারার ভয়কে জাগ্রত করে রাখে। অথচ নিজের ভেতর লুকিয়ে থাকা অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে যদি জাগিয়ে তোলা যায় তাহলে যেকোনো সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।

ইচ্ছা করলেই মানুষ অসাধ্যকে সাধন করতে পারে। কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হয়েও সাফল্যকে ছিনিয়ে আনতে পারে। সেটা হলো নিজেকে দুর্বল না ভাবা, আত্মবিশ্বাস রাখা, ব্যর্থ হওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা। নিজের মাঝে যে বিশাল ইচ্ছাশক্তি লুকিয়ে আছে এর ওপর অনেকেরই বিশ্বাস নেই। অনেকেই ভাবেন ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, এটি তার জন্য প্রযোজ্য নয়। যারা নিজের জন্য ইচ্ছাশক্তি প্রযোজ্য নয় বলে আলসেমি করেন তারা মূলত তার ভেতর লুকিয়ে থাকা অফুরন্ত শক্তিটাকেই তিলে তিলে শেষ করে দেন, ধামাচাপা দিয়ে রাখেন। অথচ ইচ্ছাশক্তিকে প্রবল করেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লে ফলাফল বের করে নিয়ে আসা সম্ভব।

ইচ্ছাশক্তির বলে প্রতিবন্ধকতার পাহাড় মাড়িয়ে অনেকেই সাফল্য ছিনিয়ে এনেছেন। আমাদের চারপাশেই এ রকম হাজারো উদাহরণ আছে। ২০১৪ সালে এইচএসসি’তে এক অন্ধ ছেলের গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ার খবরে দেশব্যাপী আলোড়ন তৈরি হয়। প্রশ্ন উঠে জন্মান্ধ ছেলেটি কিভাবে এমন সাফল্য অর্জন করতে পারল। জানা গেল ছেলেটি চোখে না দেখলে কী হবে, তার মমতাময়ী মা তার বইয়ের পড়াগুলো মোবাইলে রেকর্ড করে রাখতেন, আর সে মোবাইলের রেকর্ড শুনে পড়া মুখস্থ করত। পরবর্তীতে সে এইচএসসি-২০১৪ পরীক্ষাতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিল। এটি মূলত তার ইচ্ছাশক্তির কারণেই সম্ভব হয়েছিল। ইচ্ছাশক্তি প্রবল থাকলে শুধু চোখের প্রতিবন্ধকতা কেন যেকোনো প্রতিবন্ধকতাকেও জয় করা সম্ভব। এমনই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার হজরতপুর গ্রামের কৃষক জাহিদ সরওয়ারের ছেলে জুবায়ের হোসাইন। মুখে কলম নিয়েই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে সে। জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী জুবায়ের হাত-পা কাজে না লাগায় মুখেই কলম তুলে নেয়। খাতায় লেখালেখি শিখতে বছরখানেক সময় লাগলেও সে এখন স্বাভাবিক মানুষের মতো লিখতে পারে। জুবায়ের প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পেয়েছিলো জিপিএ ৪ দশমিক ২৫। জেএসসিতে সে জিপিএ ৫ পায়।

অনেক সময় আমরা ইচ্ছাশক্তির অভাবে নানান ধরনের হতাশা দুশ্চিন্তা ও মানসিক রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ি। যার ফলে কাজে চলে আসে অনীহা। কাজ করার সময়, বাধাবিপত্তির সময় ইচ্ছাশক্তিকে প্রবল রাখুন, ইচ্ছাশক্তিকে স্থায়ী করার চেষ্টা করুন। কারণ কাজের ইচ্ছা নির্ভর করে কাজের প্রতি আগ্রহের ওপর। কতটা আগ্রহের সাথে কাজ করছেন তার ওপরই নির্ভর করে আপনার ইচ্ছা কতক্ষণ স্থায়ী হবে। মানুষের ইচ্ছাশক্তি বাড়ানোর উপায় বের করতে গবেষকরা বিস্তর গবেষণা করেছেন। পরিশেষে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, ইচ্ছাশক্তি একটি পেশির ন্যায়, যা বেশি কাজ করার দরুন ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং সে ক্লান্তিকে পূরণ করতে পরিমিত খাদ্য দরকার। গবেষণায় এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে দেহের অন্যান্য পেশির মত ইচ্ছাশক্তির ক্ষমতাও বাড়ানো সম্ভব। ইচ্ছাশক্তি প্রবল হলে মানুষ পারে না এমন কোনো কাজ নেই।

সুস্থ ও শারীরিকভাবে ভালো থাকার অন্যতম মন্ত্র হলো নিজের ইচ্ছে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় হতাশা, দুশ্চিন্তা ও মানসিক রোগ থেকে মুক্তির অন্যতম মন্ত্র হলো নিজের প্রতি নিজের ইচ্ছে। যার ফলে নিজের ভবিষ্যৎ, ক্যারিয়ার, স্মৃতিশক্তি ও দক্ষতা বাড়াতে মূলমন্ত্র শক্তি হিসেবে কাজ করবে। আপনি হয়ে উঠবেন আগের থেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও সুস্থ। ইচ্ছাশক্তি প্রবল থাকলে যেকোনো প্রতিবন্ধকতাকে জয় করা সম্ভব। আমরা যারা খারাপ রেজাল্ট করি, তারাও খুব হতাশায় ভোগে থাকি। এর কারণ ইচ্ছাশক্তিকে শক্তিশালী না করা। ছোট বড় সবাই কিছু না কিছু নিয়ে হতাশাতে ভোগছি। হতাশা এক ধরনের মানসিক রোগ। আর আপনি এই রোগে যদি আক্রান্ত হয়ে পড়েন, তাহলে আপনি সাফল্য অর্জনের লক্ষ্য থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাবেন। সাফল্য অর্জন তো করতেই পারবেন না, যা অর্জনে থাকবে তাও হারাবেন। যার মধ্যে ইচ্ছাশক্তি থাকে হতাশা তাকে কখনও কাবু করতে পারে না।

ইচ্ছাশক্তির বলে বলীয়ান হয়ে মানুষ অধ্যবসায়ে হয়েছে মনোযোগী, পেয়েছে চিত্তের একাগ্রতা, যা মানুষকে তার সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। ইচ্ছাশক্তি মানুষের মনোবলকে দৃঢ় করে এবং কাজে সাফল্যের রসদ জোগায়। ইচ্ছা না থাকলে এক ধরনের জড়তা কাজ করে মানব-হৃদয়ে। ফলে কোনো আকাক্সক্ষাও জাগে না। ইচ্ছাশক্তি প্রচন্ড শক্তিশালী হলে যেকোনো বাধা তার কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। পৃথিবী জয় করার প্রবল ইচ্ছা থেকে নেপোলিয়ন ইউরোপ জয় করেছিলেন, আবরাহাম লিংকন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হতে পেরেছিলেন। স্বাধীন হওয়ার তীব্র ইচ্ছা থেকেই আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। তাই ইচ্ছাশক্তিই মানুষের কাজের ও সাফল্যের মূল শক্তি। ইচ্ছাহীন জীবন অর্থহীন। ইচ্ছা থেকেই প্রয়োজনের সৃষ্টি হয় আর প্রয়োজন থেকেই বের হয় সাফল্য পাওয়ার উপায়। তাই ইচ্ছাকে সাফল্যের মূলমন্ত্রও বলা হয়।

কেউ কেউ বলে থাকেন, মহান আল্লাহর ইচ্ছাতেই যেহেতু সবকিছু হয়ে থাকে তাহলে ব্যর্থতার পেছনে ব্যক্তি-ইচ্ছা-অনিচ্ছার দায় কোথায়! এখানে সবচেয়ে বড় যে ভুলটা সাধারণত হয় তা হলো, আল্লাহর ইচ্ছাকে মানুষের ইচ্ছার মতো কিছু একটা বিবেচনা করা। বস্তুত আল্লাহর ইচ্ছা হচ্ছে আমাদের জন্য মূল শক্তি, যেই শক্তির বলে আমরা ইচ্ছা করতে পারি। আর আমরা তখনই কেবল ইচ্ছা করতে পারি যখন “আল্লাহর ইচ্ছা” আমাদেরকে ইচ্ছা করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। এ ক্ষেত্রে একটি ছোট্ট উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। মনে করুন আপনি কোনো পাওয়ার স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ নিচ্ছেন এবং সেই বিদ্যুৎ আপনি ইচ্ছামত বিভিন্ন কাজে লাগাচ্ছেন। এখানে বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য আপনি পাওয়ার স্টেশন যিনি চালাচ্ছেন তার ইচ্ছার অধীন। কিন্তু বিদ্যুৎ কোন খাতে ব্যবহার করবেন সেটা আপনার ইচ্ছাধীন। বিদ্যুতের সঠিক কিংবা অপব্যবহারের দায় আপনার।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলেছেন,আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো কাজ চাপিয়ে দেন না। সে যা ভালো কাজ করেছে তার ফল পাবে এবং যা খারাপ করেছে তা তার বিরুদ্ধে যাবে। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ২৮৬ ) হজরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী (সা) বলেছেন যে, আল্লাহ বেহেশতে ও দোজখে প্রত্যেক ব্যক্তির স্থান পূর্ব থেকেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। লোকেরা বললেন, হে, আল্লাহর রাসূল (সা)! আমরা কি আমল করা ছেড়ে দেবো এবং পূর্ব থেকেই লিপিবদ্ধ করে রাখা বিষয়ের ওপর ভরসা করে বসে থাকব? রাসূল (সা) বললেন, কেন থাকবে? যে ব্যক্তিকে যে স্থানের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তার জন্য সেই কাজ সহজ করে দেবেন। সৎ ব্যক্তির জন্য সৎকাজ করা সহজ হয়ে যাবে। বদ ব্যক্তির জন্য বদকাজ করা সহজ হয়ে যাবে। (বুখারি ও মুসলিম)।

20

শিশুরা যত ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থাকতে পারে, তার সবই বিদ্যমান পথশিশুদের ক্ষেত্রে৷ বিশেষ করে তাদের অধিকারের জায়গা থেকে, বঞ্চনার জায়গা থেকে, সব ধরনের ঝুঁকিতে থাকা শিশুরাই পথশিশু৷ এটাই আমরা মনে করি৷ যেমন ধরেন, একটা শিশুর সবার আগে বাসস্থানের অধিকার রয়েছে, নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে, খাদ্যের অধিকার রয়েছে, শিক্ষার অধিকার রয়েছে৷ এসব কিছুই পথশিশুদের জন্য প্রযোজ্য৷ এর কোনো অধিকারই তারা ঠিকমত পাচ্ছে না৷ তার ওপর শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের ঝুঁকি থাকছে রাস্তা-ঘাটে৷ তাদের ওপর অর্থনৈতিক নিপীড়ন থাকছে এবং এর চেয়েও বেশি পরিমাণে যেটা, সেটা হচ্ছে মাদক এবং নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে শিশুদের জাড়ানো হচ্ছে৷ ফলে সার্বিকভাবেই ভয়াবহ থেকেও ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পথশিশুরা রয়েছে৷
২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে৷ এই লক্ষ্য পূরণের পথে সরকার কতদূর এগিয়েছে?
আসলে ২০৩০ না, ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্য রয়েছে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রায়৷ সেই লক্ষ্যমাত্রায় সরকার অনেকখানি কাঠামোগতভাবে এগিয়েছে৷ কাঠামোগত বলতে আমরা যেটা বুঝি বা বলছি যে, এটা করার জন্য সরকারের যে ধরনের আইন-কানুন, পলিসি দরকার, যেমন ধরেন আমাদের একটা জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালা রয়েছে৷ সেটা ২০১০ সালে হয়েছে৷ সেটির আলোকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত একটি কর্মপরিকল্পনা রয়েছে৷ আমরা যদি বলি, ন্যাশনাল প্ল্যান অফ অ্যাকশন রয়েছে৷ জাতীয় পরিকল্পনা ২০২১ সাল পর্যন্ত এবং সম্প্রতি সরকারি অর্থায়নে একটি অর্থনীতি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে৷ শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে  নিয়ে আসার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ আসলে কাঠামোগতভাবে যেভাবে এগোচ্ছে, সেটুকু অনেক আশা জাগায়৷ কিন্তু শিশুশ্রম নিরসনে একটা জায়গায় মনে হয় আমরা কম গুরুত্ব দিচ্ছি৷ সেটি হচ্ছে, আমরা যেটা বলে থাকি সর্বশেষ জরিপে ১২ লাখ আশি হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে জড়িত৷ আমরা কেবল তাদের ওখানে নজর দিচ্ছি যে, এই বারো লাখ আশি হাজার শিশুকে সরিয়ে নিরাপদে নিয়ে যেতে পারি কিনা৷ কিন্তু আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে, নতুন করে যেন কোনো শিশু সেই জায়গায় না আসে৷ সেই ধরনের প্রতিরোধমূলক কাজ, অর্থাৎ নতুন করে শিশুদেরকে আমরা কাজে না এনে স্কুলে দিতে পারি৷ সেই কাজটা যদি বাড়ানো যায়, তাহলে ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব৷

পথশিশুদের উপর নির্যাতনের খবর প্রায়ই শোনা যায়৷ ধর্ষণের মতো অপরাধ হচ্ছে এই শিশুদের উপর৷ এই অবস্থা থেকে শিশুদের রক্ষায় আমাদের করণীয় কি?

এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হচ্ছে যে, আমরা তো চাই না প্রথমত শিশুরা পথে আসুক, পথে থাকুক৷ এ-রকম কোনো বিষয় থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে এইযে, বিপুল সংখ্যক শিশু পথে রয়েছে৷ সরকার পথশিশু উন্নয়ন কার্যক্রম নামে একটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷ সেখানে শিশুদের থাকা-খাওয়া এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ আমি মনে করি, সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে সারাদেশের যেখানে যত পথশিশু রয়েছে, তাদের জন্য নিরাপদ আবাসন করা দরকার৷ প্রথমেই থাকার ব্যবস্থা এবং তাদের বয়সোপযোগী শিক্ষা এবং তারা যেন একটা বয়সে যখন বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ আছে, সেখানে সেই বয়স হলে তাদের ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে একটা জব, যা কোনরকম ঝুঁকিপূর্ণ নয়, এমন একটি কাজের সঙ্গে যুক্ত করা৷ সরাসরি আমি যদি এক কথায় বলতে চাই, করণীয় রয়েছে শিক্ষা, বিনোদনসহ অন্যান্য যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেটি নিশ্চিত করা এবং সকলের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা৷

শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার৷ কিন্তু সব পথশিশু স্কুলে যাচ্ছে না৷ তাদের শিক্ষার মধ্যে আনার পথে প্রতিবন্ধকতা কী?

বাধ্যতামূলক শিক্ষা, মানে  হচ্ছে আপনাকে যদি তিন ঘণ্টার জন্য বা চার ঘণ্টার জন্য স্কুলে আসতে বলা হয়, আপনি সেখানে আসতে বাধ্য৷ কিন্তু এই শিশুটা স্কুলে আসতে গেলে তাকে তো পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে আসতে হবে৷ পেট ভরে খেয়ে আসতে হবে৷ কিন্তু ভেবে দেখলে বুঝতে পারি, একটি শিশুর যেখানে থাকার জায়গা নেই, ভালো একটা কাপড় নেই, খাবারের কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ তার জন্য পড়তে আসা বাধ্যতামূলক করা কতটা বাস্তবসম্মত? তার জন্য সেখানে শিক্ষার অবস্থান অনেক নীচেই৷ তার যদি বাকি চাহিদাগুলো পূরণ করা যায় এবং তার যদি একটি থাকার জায়গা থাকে এবং খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে এবং একটি পরিচ্ছন্ন পোশাক থাকে, তখন আমরা শিক্ষার কথাটা গুরুত্বের সাথে তাকে বলতে পারি৷ আমরা মনে করি বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইনের কথা বলে পথশিশুদের অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না, যদি না তাদের অন্যান্য চাহিদাগুলো পূরণ করা যায়৷ 

সূত্রঃ ডয়চে ভেলে

21


The student community is one of the worst affected groups in the Covid-19 pandemic. Since the outbreak of the pandemic in India, Kalinga Institute of Social Sciences (KISS), Bhubaneswar has taken a series of measures to keep its students safe and healthy as well as ensuring that they suffer a minimum academic loss due to the prolonged lockdown. KISS is a home for 30,000 poor tribal students from interior districts of Odisha pursuing their studies from Standard-I to PG/Ph.D. level. Founded by eminent educationist and social activist, Prof.Achyuta Samanta, it provides lodging, boarding, education, vocational skills, sports training fully free of cost to enable them to realize their full potential.

Days before the nationwide lockdown was announced, all 30000 students were sent back to their homes in their respective villages. But for KISS students, being away from the campus did not mean academic loss. In a massive logistics operation, Prof. Samanta, who has always put the education of these tribal students above everything else, arranged for the textbooks, study materials and dried food items to be provided at the students' doorsteps at the start of the new academic year. KISS students come from interior villages scattered in all the 30 districts of Odisha. The massive operation took 15 days of planning and 10 days of implementation, engaging as many as 25 buses.

Even During Pandemic, KISS Keeps 30000 Tribal Students Connected to Studies
Before the students left KISS campus on 17th March 2020, they were trained to lead the awareness campaigns to fight the pandemic. Back in their villages, they are actively contributing to the fight against Corona Virus. They are engaged in creating awareness on social distancing, frequent hand washing, proper use of masks and respiratory hygiene, keeping their family and community safe.

KISS was one of the early institutes to begin online classes and has been maintaining the academic schedule perfectly for students of all levels. However, online classes exclusively over a platform like Zoom may not be the best way to reach all students of KISS, as they are from underprivileged background and live in remote regions of the state. Realizing this, KISS launched an e-Learning initiative with support from Kalinga TV, which is telecasting the classes every day. Follow-up instructions and study materials are also provided to the students in WhatsApp groups. Staff members of KISS constantly monitor and mentor the students for their academic and emotional development.

Even During Pandemic, KISS Keeps 30000 Tribal Students Connected to Studies
Despite the best effort to maintain academic schedule over virtual platforms, in the absence of structured campus life, tribal students are particularly vulnerable to drop out. Under social and family pressure, girl students may discontinue studies to get married. KISS has launched a series of initiatives to connect with the students and guardians and keep their morale high during this trying time. Every month dry food items are being sent to them and delivered at their doorsteps. Students are also provided with guide books and workbooks prepared by the teachers of KISS as per the students' academic needs. The monthly materials also contain sanitary napkins for the adolescent girl students.

Even During Pandemic, KISS Keeps 30000 Tribal Students Connected to Studies
Sports are an integral part of campus life at KISS, which has thousands of talented sportspersons who represent the State and country in multiple disciplines. The Sports Department of KISS has been providing regular online coaching to the students, especially in Rugby, Judo and Archery, etc., to help them maintain their fitness level.

Prof. Samanta cares for KISS students as his own children and the students also look up to him as their godfather. He has been sending regular video messages to the students to inspire them and keep their morale high. He is also regularly interacting with the parents and alumni representatives via virtual video conferencing. The initiative is expected to keep students connected to their studies and ensure the return of all students as and when the Government decides to reopen campuses for students.


Source:
https://www.thehindu.com/brandhub/even-during-pandemic-kiss-keeps-30000-tribal-students-connected-to-studies/article32611657.ece

22

ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা, সব শিশুরই অন্তরে। তার মানে, আজকের শিশুই আগামী দিনের পিতা। আগামী দিনের, জাতির নেতা। প্রত্যেক জাতির নেতারা যেমন, তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে নিজেদের দেশ এবং জাতিকে সম্মানের সঙ্গে তুলে ধরে। ভবিষ্যতে আমাদের দেশ এবং জাতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার দায়িত্ব আজকের শিশুদের ওপর।

শিশুর মধ্যে রয়েছে, সুপ্ত সম্ভাবনা যা সমাজ ও দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। যারা আগামীতে, বিশ্ব দরবারে আমাদের দেশকে মর্যাদার স্থানে নিয়ে যাবে, তারাই যদি খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষার অধিকারসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে আমাদের দেশকে মর্যাদাসম্পন্ন অবস্থানে তুলে ধরবে কে বা কারা?

জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী ০-১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল মানবসন্তানই শিশু। বাংলাদেশ সরকারের শিশুনীতি অনুযায়ী ০-১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল মানবসন্তানকে শিশু বলা হয়েছে। এদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ ভাগ শিশু, তন্মধ্যে ১৫ শতাংশ হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত শিশু। সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের সংখ্যার সঠিক কোন জরিপ না থাকলেও, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দশ লাখের অধিক পথশিশু আছ। যারা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। পরিপূর্ণ শিশু বিকাশ ও শিশু উন্নয়ন ব্যাহত হলে জাতি মেধাশূন্য নেতৃত্ব পাবে। থেমে যাবে জাতির অগ্রগতি। তাই সকল শিশুর সঠিক পরিচর্যা হওয়া জরুরি।

২০০৫ সালে সমাজসেবা অধিদফতরের এক গবেষণায় ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই; ৪০ শতাংশ প্রতিদিন গোসল করতে পারে না; ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় পায়খানা করে; ৮৪ শতাংশ শিশুর কোনো শীতবস্ত্র নেই; ৫৪ শতাংশ শিশুর অসুস্থতায় দেখার কেউ নেই; ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থতায় ডাক্তার দেখাতে পারে না। মাদকাসক্তির চিত্র ভয়াবহ। শিশু অধিকার ফোরামের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ৮৫ ভাগ পথশিশু মাদকাসক্ত। ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ শিশু ধূমপানে, ২৮ শতাংশ ট্যাবলেট, ৮ শতাংশ ইঞ্জেকশনে আসক্ত, ৮০ শতাংশ শিশু কাজ করে জীবন টিকিয়ে রাখতে; ২০ শতাংশ শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়; ৪৬ শতাংশ মেয়ে শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়; ১৪.৫ শতাংশ শিশু সার্বিকভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।

যারা জ্ঞানগরিমায় বড় হয়ে দেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার দায়িত্ব নেবে তাদের অনেকেরই নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই, তারা পাচ্ছে না তাদের মৌলিক অধিকার। অভিভাবকহীন পথশিশুদের রাত কাটাতে হয় লঞ্চ, ফেরিঘাট, ফুটপাত, রেলস্টেশন, ওভারব্রিজ অথবা খোলা আকাশের নিচে।

এ সকল শিশু দু’বেলা খাবারের টাকা জোগাতে, কেউ ফেরি করে ফুল বিক্রি করছে, কেউ চা বিক্রি করছে, কেউবা কুলি, শ্রমিক, রিকশাচালক বা কলকারখানায় নানা রকম কঠোর এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বেছে নিয়েছে। আবার অনেক শিশুকেই রাস্তাঘাটে দু’মুঠো খাবারের জন্য ভিক্ষা করতে দেখা যায়। অভিভাবকহীন এ শিশুদের দিয়ে অনেকেই করাচ্ছে ভয়ংকর অপরাধ কর্মকাণ্ড। সামান্য কিছু টাকা বা দু’বেলা খাবারের জন্য চুরি, ছিনতাই, গাড়িতে আগুন, বোমা মারা, মাদক চোরাচালানসহ নানা রকম অপরাধকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে শিশুরা।

শিক্ষা লাভের অধিকার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার হলেও তাদের বইয়ের বদলে হাতে নিতে হচ্ছে ইট ভাঙার হাতুড়ি।

বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলায় রূপ দিতে হলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ শিশু আইন ’১৩-এর ৮৯ অনুচ্ছেদে ১৬টি ক্যাটাগরিতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুর কথা বলেছে। বিশ্ব শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পথশিশু পুনর্বাসনের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশুরা কেন রাস্তায় ঘুরবে? একটা শিশুও রাস্তায় ঘুরবে না। একটা শিশুও এভাবে মানবেতর জীবনযাপন করবে না।’

এ লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে একযোগে পথশিশুদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করার জন্য পরামর্শ দেন। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে যাচ্ছে, একই সালে জাতিসংঘে শিশু অধিকার বাস্তবায়নবিষয়ক প্রতিবেদন জমা দেবে বাংলাদেশ।

শুধু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নয় বরং শিশু অধিকার রক্ষায় ও বাংলাদেশ উঁচু অবস্থানে অবস্থান সৃষ্টি করুক, আর তার জন্য প্রয়োজন সরকারের পাশাপাশি সকল দায়িত্বশীল নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। শিশুরা ফুলের মত, একটি ফুলও যেন পরিপূর্ণ বিকশিত হওয়ার পূর্বে ঝরে না যায় এবং তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই লক্ষ্যে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। অভিভাবকহীন পথশিশুদের সরকারিভাবে লালনপালন, সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য সম্পূর্ণ আবাসিক কিছু প্রতিষ্ঠান সকল শহরেই গড়ে তুলতে হবে।

সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি দাতা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ সকল স্তরের নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে। পথশিশু হয়ে জন্মানোর কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং আর যেন কোনো শিশুকে পথশিশু হিসাবে পরিচয় বহন করতে না হয়, সে লক্ষ্যে সরকারিভাবে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও, দেশে এখনো অনেক পরিবার আছে যারা তাদের সন্তানের মৌলিক চাহিদা মেটাতে অক্ষম। গরিব এ সকল শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা বেতনে অধ্যয়ন এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জামা কাপড়, জুতা, স্কুল-ব্যাগ, ফ্রি টিফিনসহ অন্যান্য খরচ বাবদ অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে হবে।

শুধু সরকার নয় বরং প্রতিটি নাগরিককেই নিজ নিজ জায়গা থেকে গরিব অসহায় এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায়, করুণা হিসাবে নয় বরং কর্তব্য ভেবে এগিয়ে আসতে হবে। আজকের অবহেলিত শিশুদের পাশে সমাজের সকল স্তরের মানুষ এগিয়ে আসুন, এদের হাতটা শক্ত করে ধরুন, দেখবেন এই শিশুরাই একদিন স্টিভ জবস হয়ে উঠবে। এরাই একদিন বাংলাদেশকে বিশ্বের উঁচু মর্যাদায় নিয়ে যাবে। আজকের পথকলিরাই উপহার দেবে সোনার বাংলা।

23

মানুষের মানবতা এবং মনুষ্যত্ব দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। যার ফলে পথশিশুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের বিবেক কখনো কি নাড়া দেয় না? আজ যে ছোট ছোট বাচ্চা রাস্তায় পত্রিকা বিক্রি করে, ফুল বিক্রি করে কিংবা কিছু খাবে বলে টাকা চায় তাদের ভবিষ্যৎ কী? যে বয়সে তাদের হাতে থাকা উচিত বই-খাতা আজ তাদের হাতে প্লাস্টিকের বস্তা। রাস্তায় রাস্তায় তারা প্লাস্টিক খোঁজে। কী নির্মম বেদনাময় দৃশ্য। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে পথশিশুর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ। বর্তমানে পথশিশুর সংখ্যা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জরিপ পাওয়া যায় নি।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পথশিশুদের ৫১ ভাগ ‘অশ্লীল কথার শিকার’ হয়। শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ২০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয় মেয়েশিশু। ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। আর মেয়ে পথশিশুদের মধ্যে ৪৬ ভাগ যৌন নির্যাতনের শিকার। সোশ্যাল এন্ড ইকোনমিক অ্যানহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ) নামের একটি সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০ শতাংশ শিশু গোসল করতে পারে না, ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই এবং ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থ হলে ডাক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না। পথশিশুদের জীবনযাপন অনেক জটিল। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ থেকে তারা নানা জিনিস সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য। তারা নানা রোগে আক্রান্ত হয়। পথশিশুদের ২৫-৩০ ভাগ মেয়ে। তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, পথশিশুদের ৮২ শতাংশই নানা ধরনের পেটের অসুখে আক্রান্ত। এই অসুখের পেছনে যে অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ দায়ী, তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি নোংরা পরিবেশে থাকার কারণে এদের মধ্যে চর্মরোগের হারও অনেক বেশি, চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় ভাসমান এই শিশুদের ৬১ শতাংশই কোনো না কোনো চর্মরোগে আক্রান্ত।
 
ঢাকাসহ সারাদেশে পথশিশুদের নিয়ে অনেক বেসরকারি সংগঠন কাজ করে। কেউ খাবার দেয়। কেউ পোশাক দেয়। কেউ দেয় শিক্ষা। কেউ আবার তাদের বিনোদনের ব্যবস্থাও করে। তবে দিনশেষে তাদের পথেই ফিরে যেতে হয়। তাদের পুরোপুরি পুনর্বাসনের জন্য খুব বেশি উদ্যোগ নেই। শহরে অনেক বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ আছে এই পথশিশুদের জন্য। সরকারি কিছু উদ্যোগও আছে। কিন্তু এর কোনো উদ্যোগই টেকসই নয়। আসলে তাদের দরকার স্থায়ী পুনর্বাসন। ফ্যামিলি অ্যাটাচমেন্ট। সেটা কীভাবে করা যায় তা সরকারকে ভাবতে হবে। তাদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনাই হলো আসল কাজ। তাদের শিক্ষা, থাকার স্থায়ী জায়গা এবং খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। তারা যদি যেখানে আছে, সেখানেই থাকে, তাহলে কোনো লাভ নেই। পথ থেকে তাদের ঘরে তুলতে হবে। এসব বাচ্চা যদি কোনো গাইডলাইনের ভেতর দিয়ে না যায় তবে তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত অন্ধকারে।

এখন দেখা যায় পরিবারের সঙ্গে থেকেও ছেলেমেয়েরা বিপথে চলে যায়। সেখানে রাস্তায় থাকা এসব ছেলেমেয়েকে বিপথে নিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার বলে মনে হয় না। তাই তাদের সরকারের সহায়তায় হোক আর বেসরকারি সহায়তায় হোক থাকা-খাওয়া এবং পড়াশোনার মাধ্যমে অন্যান্য শিশুর মতো জীবনযাপন করার সুযোগ করে দিতে হবে। তবেই পথশিশু নামক কোনো নাম শিশুর সঙ্গে যুক্ত হবে না। দেশ থেকে মুছে যাবে টোকাই নামক শব্দটি। পথশিশুর ঠিকানা যদি পথেই থেকে যায় তবে এসব শিশুর জন্য লোক দেখানো ভালোবাসায় কিছুই হবে না। আপনি ১০০টা শিশুকে লোক দেখানো সেবা না দিয়ে একটা শিশুর দায়িত্ব নিন। যেন সেই শিশুটা বড় হয়ে কিছু করতে পারে। এভাবে প্রতিটা সংগঠন যদি পথশিশুদের সাময়িক সেবা এবং খাবার না দিয়ে তাদের পুরো দায়িত্ব নেয়, তাহলে অন্তত কিছু শিশু হলেও দেশের সম্পদ হিসেবে রূপান্তরিত হবে।

লেখকঃ আজহার মাহমুদ, খুলশী,

24

৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম বিশেষভাবে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। শিরোনামটি ছিল এ রকম: ‘দেশের পথশিশুদের অর্ধেকই মাদকাসক্ত’। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু আছে সাড়ে ১১ লাখ। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ লাখই মাদকাসক্ত। শিশুদের মাদকাসক্তি নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়। মাদকাসক্ত পথশিশুর এই সংখ্যা জেনে আমাদের শিউরে উঠার কথা। কী ভয়াবহ কথা! বর্তমানে এই সংখ্যাটি আরো ব্যপাকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ঢাকা আহছানিয়া মিশন আয়োজিত ওই সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়, শিশুদের মাদকাসক্তি নিরাময়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। তার মধ্যে পর্যাপ্ত নিরাময়কেন্দ্র না থাকা, মাদকাসক্ত শিশুর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বয়ের অভাব, মাদকাসক্ত শিশুদের চিকিৎসায় দক্ষ জনবলের অভাব, চিকিৎসা-পরবর্তী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না থাকা উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশে এসব প্রতিবন্ধকতা থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। শিশু মাদকাসক্ত হওয়ার পর তার নিরাময় করতে গিয়ে আমরা এসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছি। কিন্তু এমন কোনো ব্যবস্থা কি নেওয়া যায় না, যাতে কোনো শিশুকে পথে জীবন যাপন করতে না হয়? সবাই চাইলে নিশ্চয়ই তা সম্ভব। সে জন্য খুঁজে বের করতে হবে শিশুদের পথশিশুতে পরিণত হওয়ার কারণ। পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের মতে, মূলত দারিদ্র্যের কারণে শিশুরা পথশিশুতে পরিণত হচ্ছে। এ ছাড়া বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ বা একাধিক বিয়ে, তাঁদের মৃত্যু, পারিবারিক অশান্তি, শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন, নদীভাঙন, হারিয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শিশুরা পরিণত হয় পথশিশুতে।

সম্প্রতি এ রকমই এক পথশিশু সাফিয়ার দেখা পাই রাজধানীর পান্থপথের মোড়ে। বয়স আনুমানিক ১২ বছর। ফুল বিক্রি করছিল সে। যে বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে সে পথে পথে ফুল বিক্রি করছে। সাফিয়ার কাছ থেকে কিছু ফুল কিনি। জিজ্ঞেস করি, কেন ফুল বিক্রি করছ? সাফিয়ার জবাব, ‘এই ফুল বিক্রি কইরা আমার আর ছুডু ভাইয়ের খাওন কিনি।’
‘শুধু ফুল বিক্রি করে খাবারের টাকা জোগাড় হয়?’
সাফিয়ার উত্তর, ‘না ভিক্ষাও করি।’
জানতে চাওয়া তাদের বাবা-মা কোথায় থাকেন। সাফিয়া জানায়, মায়ের হাতে মার খেয়ে তারা দুই ভাইবোন পালিয়ে ঢাকায় চলে এসেছে।
বাড়ি ফিরে যাচ্ছে না কেন জানতে চাইলে সাফিয়ার উত্তর, ‘কেমতে যামু? বাড়ির রাস্তা তো চিনি না।’
সাফিয়ার মতো প্রতিটি পথশিশুর পথে নামার পেছনে কারণ রয়েছে। কিন্তু কারণগুলো দূর করার চেষ্টা করিনি কেউই।
প্রতিবছর ২ অক্টোবর আমাদের দেশে পালিত হয় ‘জাতীয় পথশিশু দিবস’। দিনটি পালন উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু যাঁরা এসব কর্মসূচি পালন করেন, তাঁরা কি একবারও ভাবেন, কেন আমরা দিবসটি পালন করছি? এই দিবস পালনের মধ্যে যে আমাদের লজ্জাও লুকিয়ে আছে। শিশুদের এ অবস্থার জন্য দায়ী তো আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোই। তাহলে আমরা কেন দিবসটি পালন করছি? আর এ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে তো পথশিশুদের আসলে কোনো লাভ হয় না।

আমাদের দেশে অনেকে পথশিশুদের জন্য অনেক কিছু করেন। কেউ ঈদের সময় নতুন পোশাক কিনে দেন, কেউ পিঠা উৎসবের, আবার কেউ খেলাধুলার আয়োজন করেন, কেউ কেউ পথশিশুদের জন্য স্কুল খুলে তাদের প্রাথমিক শিক্ষা দিচ্ছেন। কিন্তু এসব পদক্ষেপ পথশিশুদের দীর্ঘ মেয়াদে কোনো উপকার করে না। যথাযথভাবে পুনর্বাসন না হওয়ায় তারা আবার আগের জীবনেই ফিরে যায়।

উন্নত দেশগুলোয় দেখা যায়, প্রত্যেক শিশুর দায়িত্ব রাষ্ট্র কোনো না কোনোভাবে পালন করে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো এটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। রাষ্ট্রযন্ত্র এদের সম্বন্ধে অসচেতন। ফুটপাত, পার্ক, ট্রেন ও বাসস্টেশন, লঞ্চঘাট, সরকারি ভবনের নিচে বসবাসকারী এসব পথশিশুকে দেখার কেউ নেই। অবহেলা, অনাদরে, খেয়ে না–খেয়ে তাদের দিন কাটে। তারা মাদকাসক্ত হচ্ছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শিশু সনদ, শিশু আইনসহ দেশের প্রচলিত আইনে প্রতিটি শিশু তাদের সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, খাদ্য ও পুষ্টি, বিনোদন পাওয়ার অধিকার রাখে। শিশুদের সব ধরনের নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে আত্মরক্ষার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে এসব সনদ ও আইনে । কিন্তু আমাদের দেশের পথশিশুরা এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত। সরকারকে এখন এসব পথশিশুর কথা নতুন করে ভাবতে হবে। শিশুরা যাতে আর পথে বসবাস না করে, তার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। সে জন্য প্রথমে যা করতে হবে, তা হচ্ছে দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করা। যদিও এখন বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ১ হাজার ৩১৬ ডলার। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মাথাপিছু জিডিপি কিংবা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত বহন করছে। কিন্তু দেশের আয় ও সম্পদ বণ্টনের বৈষম্য হ্রাসে এখনো তেমন সাফল্য অর্জিত হয়নি। ফলে দরিদ্র মানুষ দরিদ্রই রয়ে গেছে। দেশে দারিদ্র্যের হার এখন ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অতি দারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।

তবে শুধু দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যমে শিশুদের পথে জীবন যাপন করা থামানো যাবে না। এর জন্য আরও অনেক কাজ করতে হবে। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ বাড়াতে হবে। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হবে। সন্তানকে ভালোবাসতে হবে। তাদের সুশিক্ষা দিতে হবে। শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় তার পরিবার। কিন্তু সেই পরিবারে যদি সে অবহেলা বা নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে সেখানে সে থাকতে চাইবে না। মা-বাবা বা অভিভাবকের হাতে মার খেয়ে সন্তান বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে—আমাদের দেশে এমন উদাহরণ রয়েছে ভূরি ভূরি। কাজেই পরিবারকে হতে হবে শান্তিপূর্ণ। এর জন্য সমাজ থেকে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে। সমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। জানি অনেকেই বলবেন যে বলা সহজ, করা কঠিন। কিন্তু এই কঠিন কাজটিই করতে হবে সবাই মিলে। আসুন, এমন একটি দেশ গড়ি, যেখানে ‘পথশিশু’ বলে কেউ থাকবে না।

লেখকঃ রোকেয়া রহমান, সাংবাদিক।

25

সারা বিশ্ব এখন করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত। এমন পরিস্থিতিতে সবাই চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। কারোরই কিছু ভালো লাগছে না। ঘরে বসে থাকতে থাকতে সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্বজুড়ে ০২ এপ্রিল দিনটি পালিত হয় বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে। অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৮ সাল থেকে বেশ ঘটা করে দিনটি পালিত হয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে শিশুরা বিশেষ করে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু/কিশোরদের জন্য ঘরে বন্দি হয়ে থাকা আরও বেশি কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছে।

এই সঙ্কটময় সময়ে অনেকেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন তাদের অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু/কিশোর সন্তানকে নিয়ে। ঘরে বসে থেকে বাচ্চারা হয়ে যাচ্ছে বিরক্ত। অস্তিরতা, জেদ, কান্না-এগুলো সামাল দিতে অনেকেই হয়ে পড়ছেন দিশেহারা।

আর যেহেতু হঠাৎ করে স্কুলগুলো বন্ধ। তাই তাদের জীবনে ঘটেছে ছন্দপতন। এমতাবস্থায় শিশুদের স্বস্তি দেওয়ার জন্য অভিভাবকেরা কিছু করতে পারেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- 

•         চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া
•         এই সময়ে কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয় তা শেখানো
•         রুটিন করে দেয়া এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে সাহায্য করা। আবার রুটিনের যে পরিবর্তন হতে পারে তাও শেখানো
•         বাসায় যাবতীয় কাজে যুক্ত করা- যেমন সবজি কাটা, গাছের পরিচর্চা করা, বিছানা গোছানো, ফার্নিচার মোছা ইত্যাদি
•         অল্প সময়ের জন্য শিক্ষামূলক ভিডিও দেখতে দেয়া
•         সামাজিক গল্পের সাহায্যে শেখানোর চেষ্টা করা
•         যেহেতু বাবা মা বাসায় থাকছেন তাই শিশুর সঙ্গে যথষ্ট সময় কাটানো
•         না সূচক কথা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা
•         শিশুদের সামনে তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক কথা না বলা
•         অ্যানার্জি বার্ন হয় এমন কাজ করানো সেক্ষেত্রে রেগুলার এক্সারসাইজ করানো
•         সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক কাজ করানো
•         যাথা সম্ভব নিজের কাজ নিজেকে করতে উৎসাহিত করা
•         যাদের অস্থিরতা বেশি তাদের অবশ্যই অকুপেশনাল থেরাপিস্টের মতামত নিয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া
•         শিশুদের সঙ্গে নির্দিষ্ট ও স্পস্ট উচ্চারণে কথা বলা
•         সহজ ও ছোট শব্দ ব্যবহার করে কথা বলা
•         কাজ করতে উৎসাহিত করা এবং সঠিক কাজের জন্য শিশুকে পুরস্কৃত করা

তবে মনে রাখা জরুরি প্রতিটা শিশু আলাদা হয়। তাদের পছন্দ-অপছন্দও হয় ভিন্ন। অভিভাবক হিসেবে আপনিই সবচেয়ে ভালো বুঝবেন তার জন্য কোনটি সঠিক। সবাই সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন। 


লেখক: মারুফা হোসেন, পরিচালক, স্কুল ফর গিফটেড চিলড্রেন (এসজিসি), ঢাকা ও রাজশাহী।

26
বাংলাদেশে করোনায় সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পথশিশুরা৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা মাস্ক ব্যবহারের সঙ্গতি তাদের নেই৷ খাদ্য ও কাজের সংকটেও আছে তারা৷



ঢাকায় পথশিশুদের মাত্র দুটি সরকারি শেল্টার হোম আছে৷ তাতে সব মিলিয়ে তিনশ' শিশু থাকতে পারে৷ আর বেসরকারি উদ্যোগে কিছু শেল্টার হোম আছে, যেখানে পথশিশুরা রাতে থাকতে পারে৷ কোনো খাবার দেয়া হয় না৷ এর বাইরে আহসানিয়া মিশনের উদ্যোগে পঞ্চগড়ে ‘আহসানিয়া মিশন শিশু নগরী' পথ শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় আশ্রয় কেন্দ্র৷ সেখানে ২৫০ জন শিশু থাকে৷ তাদের খাবার, শিক্ষা, চিকিৎসা সব কিছুই দেয়া হয় বলে জানায় আহসানিয়া মিশন৷ এটি জার্মানির কিন্ডারনটহিল্ফে'র সহায়তায় পরিচালিত হয়৷

কিন্তু সব মিলিয়ে কয়েকশ' শিশুর জন্য কয়েকটি শেল্টার হোম থাকলেও বাংলাদেশে পথশিশু আছে ১৩ লাখ৷ ঢাকায়ই আছে সাড়ে চার লাখ৷ এই শিশুরা করোনার মধ্যেও পথেই থাকছে৷ দলবদ্ধভাবে থাকছে৷ খোলা রাস্তা, বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশন বা খোলা জায়গায় ঘুমাচ্ছে৷ কেউ করোনায় আক্রান্ত হলেও বুঝতে পারছে না৷ চিকিৎসা তো অনেক পরের কথা৷

স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্ক (স্ক্যান)  করোনার শুরুর দিকে ৪৫২ জন পথশিশুর মধ্যে একটি জরিপ করে৷ ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেছে নেয়া এই শিশুদের জরিপ থেকে জানা যায়, তাদের কেউই মাস্ক ব্যবহার করে না৷ তারা মনে করে, করোনা ধনীদের রোগ, এটা গরিবদের হয় না৷ করোনা সম্পর্কে অসচেতন এই শিশুরা নিয়মিত খাবারও পায় না৷ অনেকে খাবার বিতরণ করলেও পথ শিশুরা তা সবসময় পায় না৷ তাদের কাজ নেই৷ তাদের কেউ কোভিড আক্রান্ত কিনা তা-ও তারা বুঝতে পারে না৷ তারা মনে করে, সর্দি হয়েছে৷
বাংলাদেশে পথশিশুদের জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসার উদ্যোগও নেই৷ তাদের পক্ষে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নেয়াও ভীষণ কঠিন৷ অন্যদিকে সরকারি বা বেসরকারি কোনো পর্যায়েই পথ শিশুদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রাখা হয়নি৷ নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো পথ শিশু মারা গেছে এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই৷

আহসানিয়া মিশনের সহকারী পরিচালক ও স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্ক-এর সভাপতি জাহাঙ্গীর নাকির বলেন, ‘‘আমরা সরকারের কাছে করোনার সময় এই পথশিশুদের খাদ্য, চিকিৎসা এবং আশ্রয়ের একটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম৷ আমরা বলেছিলাম, সরকার চাইলে আমরা এটা সমন্বয় করতে পারি৷ সরকার খাদ্য দিক৷ আমরা যে শিশুদের পরিবার আছে তাদের পরিবারে ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগের কথাও বলেছিলাম৷ কিন্তু সরকারের এ নিয়ে কোনো প্রজেক্ট না থাকায় সেটা করা যায়নি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এই করোনায় পথ শিশুদের, কাজ নেই, খাবার নেই, থাকার জায়গা নেই৷ তারা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে৷’’

নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পথ শিশুদের নিয়ে আলাদা একটি প্রকল্প আছে৷ প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, ‘‘করোনায় সমস্যা হয়েছে, আমরা আমাদের শেল্টার হোমে বাইরের শিশুদের নিতে পারিনি৷ আর ভেতরের শিশুদের বাইরে যেতে দিতে পারিনি৷ তবে এখন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বাইরের শিশুদের নেয়া শুরু হয়েছে৷ শেল্টারে থাকা শিশুদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও আছে৷’’

তবে এই সময়ে আরো অনেক শিশু রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে৷ যাদের বাবা-মায়ের এখন কাজ নেই, তারা ঘর থেকে খাবারের জন্য বের হচ্ছে৷ আবার যে শিশুরা আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করত তাদেরও কাজ নেই৷ তারাও এখন পথশিশু৷ আবুল হোসেন দাবি করেন, সরকার চেষ্টা করছে, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে যাতে কোনো শিশুই নজরের বাইরে না থাকে৷ করোনায় সময় এসব শিশুর অন্তত এক বেলা খাবার দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও দাবি তার৷

তিনি মনে করেন, ‘‘১০ লাখেরও বেশি পথশিশুর কথা বলা হলেও এখন তাদের সংখ্যা কমছে৷ আর স্কুল খুলে গেলে আরো কমে যাবে৷ কারণ, স্কুলে এখন খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়৷’’

এদিকে করোনায় পথশিশুদের এই খারাপ অবস্থা নিয়ে এই পর্যায়ে ভাবতে শুরু করেছে সরকার৷ নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে এরকম সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই মাসেই একটি বৈঠক করেছে৷


সুত্রঃ https://www.dw.com/…/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B…/a-54730381

27
এ বছরের শুরুতে বিশ্বব্যাপী মানুষজন নতুন একটি শব্দ শুনেছে। আর তা হল করোনাভাইরাস। এটি এমন এক ভাইরাস যা স্তব্ধ করে দিয়েছে পৃথিবীর প্রাণচাঞ্চল্য।
শিশুরা করোনাভাইরাসে অপেক্ষাকৃত অনেক কম আক্রান্ত হলেও বলা হচ্ছে শিশুরা করোনাভাইরাসের নীরব শিকার।

পরিবারের আয় ও অভুক্ত শিশু

ঢাকার মিরপুরে পলেস্তারা খসে পড়া জীর্ণ চেহারার একটি ভবনে বাস করেন রিনা বেগম ও তার পরিবার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তার স্বামী পেশায় সিএনজি চালক। একসময় যার উপার্জন ছিল মাসে ১৫ হাজার টাকার বেশি, কিন্তু মাস দুয়েকের বেশি সময় ধরে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ঘরে খাবার নেই এমন দিনও গেছে।
রিনা বেগম বলছিলেন সাধারণ ছুটি চলাকালীন সাত বছরের ছেলেকে দুপুরে খেতে দিতে পারেননি এমন অভিজ্ঞতাও তার হয়েছে। তিনি বলছেন, "রোজার মাসে আমরা রোজা রাখছি না খাইয়া। একদিন ছেলেটারে সকালে দোকান থেইকা একটা পাউরুটি আইনা দিছি। এরপর সারাদিন আর কিছু দিতে পারি নাই। ঘরে চাল ছিল না এইরকম অনেক দিন হইছে।"লকডাউন চলাকালীন তার স্বামী দিনে সিএনজি নিয়ে বের হতেন আর প্রায়ই খালি হাতে ঘরে ফিরতেন। এখন অটোরিকশা চালাতে পারলেও আগের মতো এত যাত্রী নেই, অনেক ধারদেনা হয়ে গেছে। রিনা বেগম বলছেন আর্থিকভাবে তারা যেন কয়েক বছর পিছিয়ে গেলেন। রিনা বেগম বলছেন, "ছেলেটা সারাদিন খাই খাই করে। কিন্তু টাকা না থাকলে কোত্থেকে খাইতে দেব।"

এই পরিবারের অভুক্ত দিন কাটানো আর এখনকার দৈন্যদশার কারণ করোনাভাইরাস।

রিনা বেগমের অভুক্ত শিশুটির মতোই বাবা-মায়ের বেকারত্ব ও আয় কমে যাওয়ার বড় প্রভাব সাধারণত পড়ে শিশুদের উপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সায়মা হক ব্যাখ্যা করছিলেন শিশুরা কীভাবে বেকারত্ব ও দারিদ্রের শিকার হচ্ছে। তিনি বলছেন, "আমরা জানতে পারছি যে সার্বিকভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যে ব্যাঘাত ঘটেছে তাতে আমাদের যারা দরিদ্র ও হত দরিদ্র তাদের সংখ্যা বেড়ে যাবে। নতুন অনেক পরিবার দারিদ্রের তালিকায় চলে আসবে। পরিবারের সদস্যদের যদি আয় কমে যায় তাহলে ওই উপার্জনক্ষম ব্যক্তির উপর পরিবারের অন্য যারা নির্ভরশীল তাদের পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের উপর খুব স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রভাব পড়বে। "তিনি বলছেন, "বিষয়টা এরকম যে, আগে হয়ত বাবা-মা তার শিশুকে সপ্তাহে পাঁচটা ডিম দিতে পারতো। কিন্তু এখন হয়ত একটা বা দুটো দিতে পারে। সব খাবারগুলো আর দিতে পারছে না।"

এমন পূর্বাভাস ইতিমধ্যেই বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দা চিলড্রেন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তাদের একটি জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬৪ শতাংশ শিশু জানিয়েছে যে তাদের পরিবার কঠিন খাদ্য সংকটে রয়েছে। খুব ছোট পরিসরে জরিপটি করা হলেও এথেকে কিছু ধারনা পাওয়া যায়।

শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত

করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটায় বেকারত্ব, দারিদ্র, ক্ষুধাও যেন কোভিড-১৯ এর উপসর্গ হয়ে উঠেছে।
ঢাকার শিশু হাসপাতালের ডেভেলপমেন্টাল পিডিয়াট্রিশিয়ান ডা. রিয়াজ মোবারক বলছেন, পরিবারে খাদ্য সংকট কারণে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগবে।
তিনি বলছেন, "অনেকেরই বেতন বন্ধ হয়ে গেছে বা কমে গেছে, চাকরি চলে গেছে। এসব ঘরে তো খাবার ঠিকমতো আসছে না। শিশুর যে সুসম পুষ্টি সেটা কিন্তু হচ্ছে না। সে কারণে শিশুর লম্বায় বড় হওয়া, ওজন বাড়া এসব কমে যাবে।"তিনি বলছেন ঘরে বসে থেকে শিশু একাকীত্বে ভুগছে। শিশুর বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তার ভাষায়, "দীর্ঘদিনের আবদ্ধ অবস্থা শিশুর সকল ধরনের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। একটা শিশু যখন হাঁটতে শেখে, কথা বলতে, দৌড়াতে শেখে, ছবি আঁকে, নাচে এইসব জিনিস শিশুর বিকাশের একটা অংশ। শিশুর সকল ধরনের বিকাশ, বুদ্ধির বিকাশ এই পরিস্থিতিতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া শিশুর সময় কাটানোর জন্য আরেকটা শিশুর দরকার হয়।"

ডা. মোবারক আরো বলছেন শিশুর পুষ্টির অভাব হলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকবে। আর অন্যদিকে আরেকটি শিশুর সংস্পর্শে আসার সুযোগ শিশুরা সবচেয়ে বেশি পায় স্কুলে, প্রতিবেশী এবং আত্মীয়দের পরিবারে। সেই সুযোগ তার একেবারেই কমে গেছে।তিনি বলছেন ঘরে বসে থেকে শিশু একাকীত্বে ভুগছে। শিশুর বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

তার ভাষায়, "দীর্ঘদিনের আবদ্ধ অবস্থা শিশুর সকল ধরনের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। একটা শিশু যখন হাঁটতে শেখে, কথা বলতে, দৌড়াতে শেখে, ছবি আঁকে, নাচে এইসব জিনিস শিশুর বিকাশের একটা অংশ। শিশুর সকল ধরনের বিকাশ, বুদ্ধির বিকাশ এই পরিস্থিতিতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া শিশুর সময় কাটানোর জন্য আরেকটা শিশুর দরকার হয়।"

ডা. মোবারক আরো বলছেন শিশুর পুষ্টির অভাব হলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকবে। আর অন্যদিকে আরেকটি শিশুর সংস্পর্শে আসার সুযোগ শিশুরা সবচেয়ে বেশি পায় স্কুলে, প্রতিবেশী এবং আত্মীয়দের পরিবারে। সেই সুযোগ তার একেবারেই কমে গেছে। একটি জরীপে ৬৪ শতাংশ শিশু জানিয়েছে তাদের পরিবার খাদ্য সংকটে রয়েছে।

বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রম, পাচার

ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা কর্মকর্তা শাবনাজ জাহেরিন বলছেন, ক্ষুধা, অপুষ্টি ও একাকীত্ব ছাড়াও শিশুরা ঝুঁকির মুখে পড়বে আরো নানা ভাবে।

বিশেষজ্ঞরা এটিকে বলছেন 'সেকেন্ডারি এফেক্ট'। দীর্ঘ লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকার কারণে মন্দা, বেকারত্ব ও দারিদ্রের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশুরা স্কুল থেকে ঝরে পরবে। শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ে, পাচারের শিকার হবে। শাবনাজ জাহেরিন বলছেন, "বাড়িতে খাবার নেই, তাই তারা পরিবারের সাথে ভিক্ষাবৃত্তিতে যুক্ত হচ্ছে। আমরা মনে করছি ১০ থেকে ১৮ যে বয়সটা, কিশোর বয়সে যারা আছে তারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
''কিশোর বয়সী মেয়েরা বিশেষ করে বাল্যবিয়ের শিকার হবে। যেহেতু স্কুলে যেতে পারছে না, তাই খুবই সম্ভাবনা পরিবার শিশুদেরকে বিভিন্ন কাজে যুক্ত করবে। শিশুদের পাচারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।" শাবনাজ জাহেরিন যেমনটা বলছেন, ইদানীং রাস্তায় অনেক বেশি শিশুকে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। ভ্যানে করে পাড়ায় পাড়ায় যারা সবজি বিক্রি করতে আসেন তাদের অনেকেই কিশোর বয়সী। যে সময়ে স্কুলে থাকার কথা, তেমন অনেক শিশুকে দেখা যাচ্ছে রিকশাভ্যান ভর্তি সদাই নিয়ে বাবার সাথে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বলছে, ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রমের হার কমেছিল ৯৪ শতাংশ কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এর প্রবণতা উল্টো পথে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। লক্ষ লক্ষ শিশু আবারো শিশুশ্রমে যুক্ত হতে বাধ্য হবে বলে সংস্থাটি আশংকা প্রকাশ করছে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান বন্ধের প্রভাব থাকবে অনেকদিন। অন্যদিকে শাবনাজ জাহেরিন বলছেন, পরিবারের দারিদ্রের কারণে শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার পরিসংখ্যান হয়ত পাওয়া যাবে বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে।

কিন্তু বাংলাদেশে স্কুলের শ্রেণীকক্ষে পাঠদান এমনিতেই বন্ধ রয়েছে ছয় মাস হল। এপ্রিলের এক তারিখের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। তা কবে হবে সেনিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। ইতিমধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আগস্টের ৬ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে পরিস্থিতি ভালো না হলে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকতে পারে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত।
রংপুরের মিঠাপুকুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুর সাইয়েদা নাজনীন বলছেন, তার শ্রেণীকক্ষে নতুন বইয়ের প্রথম চ্যাপ্টারের পড়া শুরু হয়েই থেমে গেছে। তিনি বলছেন, "ইংরেজিতে সিলেবাসটা মাত্র শুরু করেছিলাম। শুরুতেই ছিল ইংরেজিতে হাই, হেলো বা নাম দিয়ে একে অপরের সাথে পরিচয় পর্ব। সেই অংশটাতেই থেমে যেতে হয়েছে। "তিনি বলছেন, শ্রেণীকক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষায় যে ঘাটতি হচ্ছে আগামী বছরেও হয়ত সেটা কাটিয়ে ওঠা যাবে না। "শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের কাছে যে ধরনের পড়াশোনা হয় সেটা বাসায় হয়না। ক্লাসে ৪৫ মিনিটে সে যা শিখবে ওই একই বিষয় সে বাসায় শিখতে সক্ষম হচ্ছে না। আমি দেখছি বিদ্যালয়ের প্রতি শিশুদের আগ্রহ চলে যাচ্ছে।" বড় শহরে কিছু স্কুল অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও গ্রামের শিশুরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি টেলিভিশনে পাঠদান অনুষ্ঠান হলেও অনেকে তা জানেনই না। নুর সাইয়েদা নাজনীন বলছেন, "এতদিন স্কুল বন্ধ থাকায় সেশন জট তৈরি হবে। স্কুল যখন শুরু হবে, যেসব পড়াশোনা হয়নি সেটা নিয়ে শিশুরা হিমশিম খেয়ে যাবে। তাদের উপর চাপ তৈরি হবে।"

শিশুর আচরণগত পরিবর্তন, বিষণ্ণতা, মানসিক ট্রমা

করোনাভাইরাস প্যান্ডেমিক শুরু হওয়ার পর থেকে শিশুরা এমনিতেই মানসিক চাপে ভুগছে। স্কুল নেই, বন্ধুদের সাথে দেখা নেই, খেলা নেই, ঘরের চার দেয়াল ছাড়া কোথাও বেড়াতে যাওয়ার উপায় নেই। আর অন্যদিকে সারাদিন বাবা-মায়ের ভাইরাস সংক্রমণ, আয় রোজগার আর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ। করোনাভাইরাসে শিশুরা খুব বেশি আক্রান্ত না হলেও এ থেকে মুক্তিরও যেন উপায় নেই। দিনভর সকল সম্প্রচার মাধ্যমে একই বিষয় নিয়ে আলোচনা। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে বিশ্বব্যাপী আশি লাখের বেশি মানুষের আক্রান্ত হওয়া, সাড়ে চার লাখের মতো মানুষের মৃত্যুর খবর নিয়ে চারপাশে বড়রাও সারাক্ষণ কথা বলছে। চারিদিকে শুধু শঙ্কার আবহ শিশুর মনোজগতের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট ডা. ইশরাত শারমিন রহমান। তার ভাষায়, "শিশুরা বুঝতে পারে না করোনাভাইরাস কি, এর ক্ষতিটা কি, কেন তাদের সারাক্ষণ ঘরেই থাকতে হচ্ছে। হঠাৎ করে তার স্বাভাবিক রুটিনটা এলোমেলো হয়ে গেছে। সে স্কুলে যেতে পারছে না, খেলতে যেতে পারছে না। তাদের আবেগ ও আচরণের মধ্যে একটা পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি। হয়ত অকারণে জেদ করছে, কান্নাকাটি করছে।"
"বাড়িতে অনেক বেশি করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বাবা-মা সংসার চলবে কি করে, টাকা পয়সা নেই, সামনে কি হবে, সেসব বিষয় নিয়ে সারাক্ষণ কথাবার্তা বলছেন। বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তায় শিশুদেরও উদ্বেগ বাড়তে পারে।" তিনি বলছেন, কিশোর বয়সীরা হয়ত অনেক বেশি সময় ঘরে দরজা আটকে থাকছেন, অনলাইনে অনেক বেশি সময় কাটাচ্ছেন। তাদের মধ্যে বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। ডা. ইশরাত শারমিন রহমান আরও বলছেন, বাবা-মায়ের মানসিক চাপের কারণে শিশুদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। যার ব্যাখ্যা হয়ত বুঝতে পারবে না শিশুর সরল মন। এতে বাবা-মায়ের উপরে তার ক্ষোভ তৈরি হতে পারে, তাদের সাথে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন বেড়ে যেতে পারে।

দরিদ্র পরিবারের শিশুরা নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সংস্পর্শে আসতে পারে। সবমিলিয়ে ক্ষুধা, অপুষ্টি, শিশু শ্রমের সাথে সাথে শিশুদের মনে নিশ্চিতভাবেই দীর্ঘমেয়াদি একটা ট্রমা রেখে যাবে করোনাভাইরাস সৃষ্ট মহামারি।

28
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর ভূমিকা।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি বাস্তবায়ন হয়েছে ২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। এ সময়ে এসডিজির লক্ষ্য ছিল স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষুধা-দারিদ্র্যের হার অর্ধেক কমিয়ে আনা। বাংলাদেশে দারিদ্র্যদূরীকরণ এবং সামাজিক অগ্রগতি সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে বিস্ময়কর বলে প্রতীয়মান হয়েছে। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাপক সফলতা উন্নয়নশীল দেশের মানুষ গভীর আগ্রহ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। পর্যবেক্ষকরা অনেকেই অবিশ্বাস্য এ উন্নয়নকে মানতে পারছেন না। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশেষ করে প্রবৃদ্ধির উচ্চহারের বড় তিনটি কারণ রয়েছে। এক. চার দশক ধরে আমাদের পোশাক শিল্পে লাগাতার সফলতা। পোশাক শিল্পে যুক্ত রয়েছেন ৫০ থেকে লাখ ৬০ লাখ নারী এবং পুরুষ শ্রমিক। দুই. প্রবাসে প্রায় এক কোটি শ্রমিক, যারা কষ্ট করে টাকা-পয়সা রোজগার করে দেশে পাঠান। তিন. কৃষিতে উল্লেখযোগ্য হারে উৎপাদন বৃদ্ধি। প্রায় চার কোটি মানুষ উন্নয়নে অবদান রাখছেন। বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছেন। এমডিজি বাস্তবায়নে পোশাক শিল্প, কৃষি এবং প্রবাসী আয় অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অথচ এ তিন খাতকে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব ও মর্যাদা নিয়ে দেখি না। পোশাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকরা স্বল্প বেতনে কঠিন পরিশ্রম করেন। তাদের কর্মক্ষেত্রে আগের চেয়ে নিরাপত্তা বেড়েছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও তুলনা মূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পোশাক শ্রমিকদের দিকে তাকালে বোঝা যায়, তারা কতটা ভালো আছেন। তাদের থাকার জায়গা অত্যন্ত নিম্নমানের। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে অতি দ্রুত কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। অধিকাংশ পোশাক শ্রমিক সন্তান লালন-পালনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারেন না। সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করেন মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি। তাদের অনেকেই আবার প্রবীণ। কৃষিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে আমাদের প্রবীণ জনগোষ্ঠী রয়েছে। কৃষিতে অবসর গ্রহণের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। ফলে একজন মানুষ যতক্ষণ শারীরিকভাবে চলাফেরা করতে সক্ষম, ততক্ষণ তিনি কৃষিতে কাজ করেন। প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা থাকেন। অনেকের মা-বাবা প্রবীণ। এ প্রবীণ মা-বাবা সংসারে সন্তান পালনে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেন। মোট কথা, প্রবীণ জনগোষ্ঠী পোশাক শিল্প, কৃষি এবং প্রবাসী আয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করছেন। দুর্ভাগ্য এ প্রবীণ জনগোষ্ঠী আমাদের চিন্তক, নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি সীমার বাইরে। বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বা এসডিজির যুগে প্রবেশ করেছে। এসডিজির সময়কাল ধরা হয়েছে ২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব লক্ষ্য অর্জনে নানা ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশাল এ কর্মযজ্ঞে দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমার পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। এসডিজি অর্জন করা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এক নম্বর লক্ষ্য হলো, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা। দুই নম্বর লক্ষ্যÑ ক্ষুধা অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, পুষ্টি উন্নয়ন, টেকসই কৃষি উন্নয়ন। তিন নম্বর লক্ষ্য হলো, সব বয়সি মানুষের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা। চার নম্বর লক্ষ্যÑ শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা। সাধারণ পাঠকমাত্রই বুঝতে পারবেন ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রথম চারটি লক্ষ্য বাস্তবায়ন কতটা দুরূহ কাজ। ক্ষুধা-দারিদ্র্য কমিয়ে আনা যায় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়ে; কিন্তু এটি নির্মূল করার বিষয়টি হবে কঠিন। ক্ষুধা-দারিদ্র্য নির্মূল এটি দৃশ্যমান হতে হবে। কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব কিন্তু বিষমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার উৎপাদন কঠিন চ্যালেঞ্জ। কৃষির টেকসই উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

স্বাস্থ্য খাত বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জনসাধারণের সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করতে বড় বড় অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। শিক্ষার বিস্তার ঘটানো সম্ভব। বাংলাদেশে শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা খুবই দুরূহ একটি বিষয়। শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে অবকাঠামোর উন্নয়ন, ভালো শিক্ষক, যুগোপযোগী সিলেবাস, উন্নতমানের পরীক্ষাগার, পর্যাপ্ত বাজেট, জ্ঞান সৃষ্টি এবং বিতরণের মুক্ত পরিবেশসহ আরও অনেক বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য অর্জনে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে সম্পৃক্ত করা খুবই জরুরি বিষয়। এসডিজির ১৬ নম্বর লক্ষ্য হলো, নিশ্চিত করবে সর্বস্তরে সংবেদনশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিনিধিত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ। নির্যাতন, মানবপাচার শিশু নির্যাতন, সহিংসতা বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া আছে। আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসডিজির সব লক্ষ্যের বাস্তবায়নে ১৬ নম্বর লক্ষ্যটি বিশেষ মনোযোগ পাবে।

এসডিজি অর্জন করতে হলে জনসাধারণের প্রয়োজন ও আকাক্সক্ষার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে এসডিজি অর্জন করতে দেশের প্রায় দেড় কোটি প্রবীণের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। প্রায় দেড় কোটি প্রবীণের যোগ্যতা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার জন্য সক্ষম প্রবীণকে কাজে লাগাতে হবে। সক্ষম প্রবীণকে আয় বৃদ্ধিমূলক কাজে যুক্ত করতে হবে। সহজ শর্তে স্বল্পসুদে ঋণ গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। যেসব প্রবীণ কৃষিকাজে যুক্ত তাদের উৎপাদনের উপকরণগুলোকে সহজলভ্য করা। উৎপাদিত পণ্যের উচিত মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এসব কাজে প্রবীণের অংশগ্রহণ, মতামত, পরামর্শ, সিদ্ধান্তকে গুরুত্বসহ বিবেচনা করতে হবে। কৃষি খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রবীণদের অভিজ্ঞতা-মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রবীণদের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ প্রবীণরা অসংক্রামক কয়েকটি ব্যাধিতে ভুগতে থাকেন। অধিকাংশ প্রবীণ উচ্চরক্তচাপ ডায়াবেটিস, বাত রোড, হৃদরোগ, কিডনি রোড, ক্যান্সার, হাঁপানি, অ্যালার্জি, হাঁটু-কোমর ব্যথায় ভুগতে থাকেন। আর্থিক সংকটের কারণে প্রবীণদের একটি বড় অংশ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। কেউ কেউ সঠিক চিকিৎসা সময়মতো পান না। প্রবীণদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রবীণ কেন্দ্র, ডেকেয়ার সেন্টার, নার্সিং হোম, প্রবীণ ক্লাব গঠন করার মধ্য দিয়ে প্রবীণদের সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। প্রবীণরা দলবদ্ধভাবে মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করার কাজে অংশ নিতে পারেন। মাদক গ্রহণের কুফল, ব্যায়াম করার সুফল, খেলাধুলার উপকারিতা, পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়। রোগ নিরাময় থেকে রোগপ্রতিরোধের চেষ্টা করা অধিক লাভজনক। প্রবীণদের এসব বিষয়ে ধারণা দিতে হবে। প্রবীণদের তুলনামূলকভাবে আয়-রোজগার কম হলে ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা গ্রহণ কষ্টদায়ক। প্রবীণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বীমা চালু করা দরকার। যারা নবীন, তারাও স্বাস্থ্য বীমাতে প্রিমিয়াম দেবেন, যখন প্রবীণ হবেন তখন চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। সমাজের সব মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। প্রত্যেক মানুষকেই ‘সেবাকর্মীর’ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে তিনি পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে সক্ষম হন। পরিবারের সদস্যরা অন্যদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দিতে পারেন, প্রবীণ নিবাস, প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র, প্রবীণ ক্লাবে, প্রবীণ ডে-কেয়ার সেন্টার ইত্যাদিতে পয়সার বিনিময়ে অথবা বিনা পয়সায় প্রবীণ সেবা দেয়া যায়, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্রবীণরাই প্রবীণদের সেবা-যতœ, খোঁজখবর বেশি করেন। প্রবীণদের সংগঠিত অবস্থায় প্রবীণদের প্রতি মনোযোগী হতে অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে। দেশে শিক্ষার বিস্তার মোটামুটি হয়েছে বলে আমার ধারণা। শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রবীণদের অনেক বড় ধরনের সুযোগ রয়েছে। নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং জ্ঞান বিতরণের সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারি বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত করতে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারবে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে উন্নত মূল্যবোধের মানুষ তৈরি করা, যারা প্রাণ এবং প্রকৃতি রক্ষায় কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালন করতে পারবেন। সমাজে ভিন্ন মত-পথের মানুষের স্বাধীনভাবে নিজেদের মতপ্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। প্রকৃতিকে ধ্বংস না করে কীভাবে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারে সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

সুশিক্ষাই মানুষকে সহনশীল মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। সুশাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে বৈষম্য দূর হবে এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। লুটপাট, কাড়াকাড়ি, ক্ষমতার মোহ, নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া অব্যাহত থাকলে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে, একে অপরকে নির্মূল করার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকবে। শিক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীকে বাসযোগ্য, শান্তিময় করে গড়ে তুলতে প্রবীণদের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে, প্রাকৃতিক ও সামাজিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রবীণের অভিজ্ঞতা-দক্ষতা কাজে লাগাতে হবে। এসডিজির লক্ষ্য, সব মানুষের উন্নয়ন। কোনো মানুষই যেন উন্নত-আরামদায়ক জীবন থেকে বঞ্চিত না হন। স্বল্প খরচে উন্নতমানের দুর্নীতিমুক্ত সেবা মানুষের হাতের মুঠোয় থাকবে। এসডিজি অর্জনে অনেক বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সেগুলো হলোÑ রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্বলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সহিংসতা, আয়বৈষম্য বৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল, দুর্বৃত্তায়ন, দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ইত্যাদি। এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করলে সুফল পাওয়া যাবে।

লেখক :হাসান আলী, সভাপতি, এজিং সাপোর্ট ফোরাম
ট্রেজারার, বাংলাদেশ জেরোন্টলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএ)

29
 
  টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর ভূমিকা।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি বাস্তবায়ন হয়েছে ২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। এ সময়ে এসডিজির লক্ষ্য ছিল স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষুধা-দারিদ্র্যের হার অর্ধেক কমিয়ে আনা। বাংলাদেশে দারিদ্র্যদূরীকরণ এবং সামাজিক অগ্রগতি সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে বিস্ময়কর বলে প্রতীয়মান হয়েছে। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাপক সফলতা উন্নয়নশীল দেশের মানুষ গভীর আগ্রহ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। পর্যবেক্ষকরা অনেকেই অবিশ্বাস্য এ উন্নয়নকে মানতে পারছেন না। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশেষ করে প্রবৃদ্ধির উচ্চহারের বড় তিনটি কারণ রয়েছে। এক. চার দশক ধরে আমাদের পোশাক শিল্পে লাগাতার সফলতা। পোশাক শিল্পে যুক্ত রয়েছেন ৫০ থেকে লাখ ৬০ লাখ নারী এবং পুরুষ শ্রমিক। দুই. প্রবাসে প্রায় এক কোটি শ্রমিক, যারা কষ্ট করে টাকা-পয়সা রোজগার করে দেশে পাঠান। তিন. কৃষিতে উল্লেখযোগ্য হারে উৎপাদন বৃদ্ধি। প্রায় চার কোটি মানুষ উন্নয়নে অবদান রাখছেন। বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছেন। এমডিজি বাস্তবায়নে পোশাক শিল্প, কৃষি এবং প্রবাসী আয় অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অথচ এ তিন খাতকে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব ও মর্যাদা নিয়ে দেখি না। পোশাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকরা স্বল্প বেতনে কঠিন পরিশ্রম করেন। তাদের কর্মক্ষেত্রে আগের চেয়ে নিরাপত্তা বেড়েছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও তুলনা মূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পোশাক শ্রমিকদের দিকে তাকালে বোঝা যায়, তারা কতটা ভালো আছেন। তাদের থাকার জায়গা অত্যন্ত নিম্নমানের। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে অতি দ্রুত কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। অধিকাংশ পোশাক শ্রমিক সন্তান লালন-পালনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারেন না। সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করেন মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি। তাদের অনেকেই আবার প্রবীণ। কৃষিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে আমাদের প্রবীণ জনগোষ্ঠী রয়েছে। কৃষিতে অবসর গ্রহণের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। ফলে একজন মানুষ যতক্ষণ শারীরিকভাবে চলাফেরা করতে সক্ষম, ততক্ষণ তিনি কৃষিতে কাজ করেন। প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা থাকেন। অনেকের মা-বাবা প্রবীণ। এ প্রবীণ মা-বাবা সংসারে সন্তান পালনে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেন। মোট কথা, প্রবীণ জনগোষ্ঠী পোশাক শিল্প, কৃষি এবং প্রবাসী আয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করছেন। দুর্ভাগ্য এ প্রবীণ জনগোষ্ঠী আমাদের চিন্তক, নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি সীমার বাইরে। বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বা এসডিজির যুগে প্রবেশ করেছে। এসডিজির সময়কাল ধরা হয়েছে ২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব লক্ষ্য অর্জনে নানা ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশাল এ কর্মযজ্ঞে দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমার পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। এসডিজি অর্জন করা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এক নম্বর লক্ষ্য হলো, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা। দুই নম্বর লক্ষ্যÑ ক্ষুধা অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, পুষ্টি উন্নয়ন, টেকসই কৃষি উন্নয়ন। তিন নম্বর লক্ষ্য হলো, সব বয়সি মানুষের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা। চার নম্বর লক্ষ্যÑ শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা। সাধারণ পাঠকমাত্রই বুঝতে পারবেন ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রথম চারটি লক্ষ্য বাস্তবায়ন কতটা দুরূহ কাজ। ক্ষুধা-দারিদ্র্য কমিয়ে আনা যায় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়ে; কিন্তু এটি নির্মূল করার বিষয়টি হবে কঠিন। ক্ষুধা-দারিদ্র্য নির্মূল এটি দৃশ্যমান হতে হবে। কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব কিন্তু বিষমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার উৎপাদন কঠিন চ্যালেঞ্জ। কৃষির টেকসই উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

স্বাস্থ্য খাত বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জনসাধারণের সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করতে বড় বড় অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। শিক্ষার বিস্তার ঘটানো সম্ভব। বাংলাদেশে শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা খুবই দুরূহ একটি বিষয়। শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে অবকাঠামোর উন্নয়ন, ভালো শিক্ষক, যুগোপযোগী সিলেবাস, উন্নতমানের পরীক্ষাগার, পর্যাপ্ত বাজেট, জ্ঞান সৃষ্টি এবং বিতরণের মুক্ত পরিবেশসহ আরও অনেক বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য অর্জনে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে সম্পৃক্ত করা খুবই জরুরি বিষয়। এসডিজির ১৬ নম্বর লক্ষ্য হলো, নিশ্চিত করবে সর্বস্তরে সংবেদনশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিনিধিত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ। নির্যাতন, মানবপাচার শিশু নির্যাতন, সহিংসতা বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া আছে। আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসডিজির সব লক্ষ্যের বাস্তবায়নে ১৬ নম্বর লক্ষ্যটি বিশেষ মনোযোগ পাবে।

এসডিজি অর্জন করতে হলে জনসাধারণের প্রয়োজন ও আকাক্সক্ষার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে এসডিজি অর্জন করতে দেশের প্রায় দেড় কোটি প্রবীণের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। প্রায় দেড় কোটি প্রবীণের যোগ্যতা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার জন্য সক্ষম প্রবীণকে কাজে লাগাতে হবে। সক্ষম প্রবীণকে আয় বৃদ্ধিমূলক কাজে যুক্ত করতে হবে। সহজ শর্তে স্বল্পসুদে ঋণ গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। যেসব প্রবীণ কৃষিকাজে যুক্ত তাদের উৎপাদনের উপকরণগুলোকে সহজলভ্য করা। উৎপাদিত পণ্যের উচিত মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এসব কাজে প্রবীণের অংশগ্রহণ, মতামত, পরামর্শ, সিদ্ধান্তকে গুরুত্বসহ বিবেচনা করতে হবে। কৃষি খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রবীণদের অভিজ্ঞতা-মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রবীণদের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ প্রবীণরা অসংক্রামক কয়েকটি ব্যাধিতে ভুগতে থাকেন। অধিকাংশ প্রবীণ উচ্চরক্তচাপ ডায়াবেটিস, বাত রোড, হৃদরোগ, কিডনি রোড, ক্যান্সার, হাঁপানি, অ্যালার্জি, হাঁটু-কোমর ব্যথায় ভুগতে থাকেন। আর্থিক সংকটের কারণে প্রবীণদের একটি বড় অংশ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। কেউ কেউ সঠিক চিকিৎসা সময়মতো পান না। প্রবীণদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রবীণ কেন্দ্র, ডেকেয়ার সেন্টার, নার্সিং হোম, প্রবীণ ক্লাব গঠন করার মধ্য দিয়ে প্রবীণদের সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। প্রবীণরা দলবদ্ধভাবে মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করার কাজে অংশ নিতে পারেন। মাদক গ্রহণের কুফল, ব্যায়াম করার সুফল, খেলাধুলার উপকারিতা, পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়। রোগ নিরাময় থেকে রোগপ্রতিরোধের চেষ্টা করা অধিক লাভজনক। প্রবীণদের এসব বিষয়ে ধারণা দিতে হবে। প্রবীণদের তুলনামূলকভাবে আয়-রোজগার কম হলে ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা গ্রহণ কষ্টদায়ক। প্রবীণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বীমা চালু করা দরকার। যারা নবীন, তারাও স্বাস্থ্য বীমাতে প্রিমিয়াম দেবেন, যখন প্রবীণ হবেন তখন চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। সমাজের সব মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। প্রত্যেক মানুষকেই ‘সেবাকর্মীর’ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে তিনি পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে সক্ষম হন। পরিবারের সদস্যরা অন্যদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দিতে পারেন, প্রবীণ নিবাস, প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র, প্রবীণ ক্লাবে, প্রবীণ ডে-কেয়ার সেন্টার ইত্যাদিতে পয়সার বিনিময়ে অথবা বিনা পয়সায় প্রবীণ সেবা দেয়া যায়, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্রবীণরাই প্রবীণদের সেবা-যতœ, খোঁজখবর বেশি করেন। প্রবীণদের সংগঠিত অবস্থায় প্রবীণদের প্রতি মনোযোগী হতে অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে। দেশে শিক্ষার বিস্তার মোটামুটি হয়েছে বলে আমার ধারণা। শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রবীণদের অনেক বড় ধরনের সুযোগ রয়েছে। নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং জ্ঞান বিতরণের সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারি বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত করতে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারবে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে উন্নত মূল্যবোধের মানুষ তৈরি করা, যারা প্রাণ এবং প্রকৃতি রক্ষায় কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালন করতে পারবেন। সমাজে ভিন্ন মত-পথের মানুষের স্বাধীনভাবে নিজেদের মতপ্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। প্রকৃতিকে ধ্বংস না করে কীভাবে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারে সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
সুশিক্ষাই মানুষকে সহনশীল মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। সুশাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে বৈষম্য দূর হবে এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। লুটপাট, কাড়াকাড়ি, ক্ষমতার মোহ, নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া অব্যাহত থাকলে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে, একে অপরকে নির্মূল করার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকবে। শিক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীকে বাসযোগ্য, শান্তিময় করে গড়ে তুলতে প্রবীণদের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে, প্রাকৃতিক ও সামাজিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রবীণের অভিজ্ঞতা-দক্ষতা কাজে লাগাতে হবে। এসডিজির লক্ষ্য, সব মানুষের উন্নয়ন। কোনো মানুষই যেন উন্নত-আরামদায়ক জীবন থেকে বঞ্চিত না হন। স্বল্প খরচে উন্নতমানের দুর্নীতিমুক্ত সেবা মানুষের হাতের মুঠোয় থাকবে। এসডিজি অর্জনে অনেক বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সেগুলো হলোÑ রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্বলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সহিংসতা, আয়বৈষম্য বৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল, দুর্বৃত্তায়ন, দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ইত্যাদি। এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করলে সুফল পাওয়া যাবে।

লেখক : হাসান আলী  সভাপতি, এজিং সাপোর্ট ফোরাম
ট্রেজারার, বাংলাদেশ জেরোন্টলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএ)

30
Common Forum/Request/Suggestions / My Child Has Autism. Now What?
« on: April 22, 2020, 12:52:34 PM »
When your child is diagnosed with autism, it can feel like everything changes. Even though your child is the same as he was going into the appointment, your perception of what will be changed. You’re left thinking, “My child has autism. Now what?”



As scary as the autism diagnosis can be, there are ways you can prepare your child, and your family, for success. Begin with these 8 steps:

Remember the diagnosis doesn’t change your child


Your child is the same person you’ve loved since bringing him home from the hospital. Although it might feel like things have changed when you get the diagnosis, nothing is different except that you understand your child in a new way.

Autism doesn’t define him, it helps explain how he perceives the world. The diagnosis isn’t a life sentence. It’s a guide to help you know what he’s going to need from you in order to grow into the most successful person he can be.

We all need help in different ways. We have unique strengths and challenges. Your child does as well. Encourage what he’s good at, then teach him how to complete, or accommodate, the tasks he finds challenging.

Allow yourself to be upset

Telling yourself not to be upset about the diagnosis isn’t going to stop it from happening. In fact, receiving this news can trigger grief, and dealing with your emotions is an important component of coping with grief. Help Guide offers a useful guide for managing grief in Coping with Grief and Loss.

In order to heal and be able to move forward with all you will need to handle, you can’t avoid your emotions. Allow yourself to feel however you’re feeling. Go through the stages of grief, if that’s how you’re feeling. There’s nothing wrong with that.

And then get ready to help your child. Because it is so much you can do to help him succeed.

Learn about autism

Although you might feel like you “know” what autism is, take the time to learn all the facts. Look for information from more than one source and understand the entire spectrum of symptoms. Work with your pediatrician and specialists to understand your child’s specific needs and challenges.

But also look for information from other sources. Autism is a spectrum and no two people experience it the same way. Therefore you should look for resources that are as diverse.

The CDC is an excellent place to find the information you can depend on. Start with What is Autism Spectrum Disorder? You can also find data and statistics as well as treatment options. Although this information is fact-based and unbiased, there are many other resources you can use for a different perspective.

We offer several free courses on our ABA Mentor site including:

What is Autism?
What is ABA?
Introduction to Applied Behavior Analysis
Autism Speaks is a nonprofit dedicated to increasing awareness of autism and providing support to those with autism and their families. They provide support directly to families through their ART (Autism Response Team). Their information about Autism is extensive and begins with What is Autism?

Our Understanding Autism page has many resources as well including:

Communication and Children with Autism
Explaining Autism to Kids
What is Nonverbal Communication?
Sensory Activities for Your Child with Autism
What You Need to Know about Autistic Tantrums
6 Strategies to Make Behavioral Change Easier
5 Reasons to Help Your Child with Autism Expand His Interests
Stereotypies and Your Child with Autism
Stages of Play and Your Child with Autism
Understanding How My Child with Autism Plays

Find support
All parents need support, but when your child has autism you need even more. You can find help when you join a parent’s group or the school PTA. You can look for groups on Meetup or talk to your child’s school or pediatrician about any groups they might be aware of. These groups will be filled with people who can offer emotional support and actionable advice. Don’t allow the diagnosis to isolate you and your child.

Additionally you can find support online. We have a Facebook group for parents where you can connect with other families who will be able to share stories, advice and support. You can ask questions and share both your struggles and your victories. For more support you can join our membership at Understanding Your Child with Autism where we will teach you step-by-step the best way to teach your child.

There are many blogs written by parents who have a child (or multiple children) with autism. Robin writes about her experiences raising children with autism in Autism in Our Nest. She has two children who are both on the spectrum. Her daughter Catelyn has High Functioning Autism. She shares Catelyn’s experience in An Interview with Catelyn. Much of her blog focuses on her son Declan. In her post, “He May Never…“ she gives parents hope as she shares how she was told Declan may never do a lot of things he’s now able to do.

Research treatment options
There is no “cure” for autism (read our post Is There a Cure for Autism?). Autism is a unique way of experiencing the world. It is now your role to understand your child’s perspective and learn how to interact with him in a way that supports him the best.

There is no one-size-fits-all solution to autism. Every child is unique and will have varying needs and preferences. However, often the best treatment for autism is Applied Behavior Analysis. ABA offers tools to help you understand your child’s perspective so that you can teach him in the way that he learns best. It treats every child as the one-of-a-kind individual that he is, and aligns treatment with this understanding.
[/size][/size]

Partner with your child’s school
Your child’s school should be a place where you can turn for information and support. They have resources dedicated to children with special needs and staff who are trained in this area. This is a great place to start.

Unfortunately, due to budgets and the challenge of finding high-quality staff for relatively low-paying positions, you may find your child’s school doesn’t have the resources you need. If you’re not getting the support you need from the school, try these strategies:

Meet with your child’s teacher and principal. What are their concerns? What solutions can they bring to the table? If they lack experience working with children with autism, are you able to direct them to resources and training
Consider whether your child needs a specialized learning environment. Many parents feel strongly that they want their child to remain part of the traditional classroom. However, this isn’t always the best decision. Our post The Secret to Inclusion: It’s Not What You Think! discusses the pros and cons of keeping your child in a traditional classroom.
Ask for an IEP, 504 or behavior intervention plan. The Individuals with Disabilities Education Act (IDEA) guarantees all children the right to a free public education. Our post Behavior Intervention Plan: Does Your Child Need One? explains the difference between each of these plans and points you to valuable resources where you can find more information.
Consider hiring an advocate. When all else fails, thinking about hiring someone to fight with the school on your behalf, if you can afford to. Read When Parents & Schools Disagree by Ruth Heitin, Ph.D., Educational Consultant for more on special education advocacy.

Take care of yourself
Being a parent is a full time job with little, if any, time for taking care of yourself. Children with autism often require even more attention than other children. And due to sleep problems often the precious time in the middle of the night gets interrupted. Yet taking time for yourself will make you a better parent. Taking care of yourself isn’t selfish. It’s necessary.

But how can you possibly manage this? Trying to arrange a break might feel like more effort than it’s worth. However once it becomes part of your routine it will be easier. Here are some strategies to get you started:

1.Divide and conquer
2.Find a babysitter
3.Engage siblings

Let’s look at how this can work:

Divide and Conquer

If you’re married, give your spouse one night every other week to go do something he or she enjoys, whether it be taking a walk, seeing friends, going to the library, watching a movie or anything else. On alternate weeks, you can get a night to do the same. This can be done on a smaller scale by taking turns with other routines, like bedtime. Just be sure you’re using the time for yourself – and not the dishes.

Find a Babysitter

When family and friends offer to babysit, take them up on it even if it’s just a few hours. You may be tempted to say no for a variety of reasons but chances are these people honestly want to help and you can give them a gift by letting them. You may need to teach them how to be with your child, and there may be teary goodbyes as your child gets used to you leaving, but you will all be better off for it.

Engage Siblings

If you have more than one child, consider finding activities for your children to do together. Depending on temperament and age this might require some initial investment on your part, but in the end, you will end up with a more peaceful home and children who are closer to each other. Read our post Activities for Siblings to Do Together for ideas. Also, read our post How Can Siblings Be Included in the Care of Children with Autism? before using siblings to free up your time.


By Amelia Dalphonse

Pages: 1 [2] 3 4