Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - najnin

Pages: 1 2 3 [4] 5
46
রমবর্ধনশীল সেক্যুলার বিশ্বে কি মুসলিমরা আধুনিক সমাজের সাথে একাত্ম হতে পারবে?

পশ্চিমের দেশগুলোতে সেক্যুলার রাজনীতি দাঁড়িয়ে আছে জনগণের সার্বভৌমত্বের উপর যারা প্রতিটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সরকার নির্বাচিত করে। তাত্ত্বিকভাবে, ইসলামে সকল সার্বভৌমত্ব মহান আল্লাহ্‌তাআলার আর তথাকথিত নির্বাচিত সরকার ততদিনই অস্থায়ীভাবে থাকবে যতদিন না দেশে আল্লাহ্‌র ইচ্ছা ও শরীয়া আইন প্রবর্তন না হচ্ছে। তাত্ত্বিকভাবে যাই-ই থাকুক, যেকোন সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে সমাজে শান্তি-শৃংখলা বজায় রেখে এর প্রভূত উন্নতি সাধন করা এবং শক্তিশালী নৈতিক নীতিমালার মাধ্যমে একটা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করা।সমস্যার শুরু ঠিক তখনই, যখন বিভিন্ন রকমের মত ও পথের উপস্থিতি থাকে। কার ইসলাম, কোন ইসলাম, কখন কোথায় প্রয়োগ করা হবে?এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে সৌদিআরব, সুদান, পাকিস্তান, ইরান ও আফগানিস্তানে ইসলামকে রাজনৈতিক আদর্শ বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, কিন্তু আভ্যন্তরীণ নানা বিরোধ, এমনকি আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন মুসলিম দেশের সাথে বা অন্যান্যদের সাথে বিরোধ বা মতবিভেদ ঘুচেছে খুব কমই।এসব দেশগুলোতে সম্পদের পুনর্বন্টন বা সাধারণ জনগণের কাছে অর্থনৈতিক বা সামাজিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছেছে খুব কমই।ইসলাম যে সুবিধাদির কথা বলে তার বাস্তবায়ন হয়নি বললেই চলে।
যেসব মুসলিম দেশগুলোতে সেক্যুলার ভাবধারার উপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে যেমন তুরষ্ক, মিশর, তাদের জনগণের সাধারণ অবস্থা তূলনামূলকভাবে অল্পকিছু ভাল, যদিও বিশ্বাস এবং কর্মতৎপরতার অবাধ স্বাধীনতাই এখানে চর্চিত হয়। বেশির ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠি যারা বিভিন্ন সেক্যুলার আদর্শের সরকারের অধীনে আছে, তাদের অবস্থা তুলনামূলকভাবে বেশি গ্রহণযোগ্য। এসব রাষ্ট্র আধুনিক রাজনীতি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে পশ্চিমা মডেল গ্রহণ করেছে, আর নিজেদেরকে ইসলামী ভাবধারায় উদ্ধুদ্ধ রেখেছে। কিন্তু সমস্যা রয়ে গেছে যেসব জায়গায় তা হলোঃ ইসলাম কি করে রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ আর রাষ্ট্রীয় আইন-কানুনকে হ্যান্ডেল করবে? ব্যক্তিপর্যায়ে আর রাষ্ট্রপর্যায়ের মূল্যবোধের সংজ্ঞা কি হবে, আলাদা সংজ্ঞা কিভাবে কারা তৈরী করবে, এজন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাই বা কিরূপ হবে? যেখানে আল্লাহ্‌তাআলা কর্তৃক নাযিলকৃত ও নির্দিষ্ট কিছু আইন-কানুন ইতিমধ্যেই আছে, এর মাঝে কোন কোনটার পক্ষে বা বিপক্ষে বিতর্ক তোলা যাবে বা করা যাবে? এর মাঝে সুস্পষ্টভাবে কারা সত্যিকার অর্থে বিতর্ক করতে চায়, আর কারা শুধু তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকেই প্রাধান্য দিয়ে নিজেদের মতকেই কেবল প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেটাও চিহ্নিত করতে হবে।

রাজনৈতিক ইসলাম নিজেদের ভাষ্য ও বক্তব্যের মাধ্যমেই নানারকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীনঃ নিজেদের আদর্শমত চলা, যেসব মূলনীতি গঠন করা হয়েছে নিজেদের ও অন্যান্যদের জন্য সেগুলো মেনে চলা, কোন ইসলামী সরকার বা আন্দোলন যদি ইসলামের বাইরের কোন পদক্ষেপ নেয় তার প্রতিবাদ করা, প্রয়োজনে এড়িয়ে যাওয়া, মুসলিম সমাজের নানা ব্যর্থতার দায়ভার নিজেদের কাঁধে নেয়া বা শেয়ার করা, সকল সমস্যাতেই পশ্চিমাদের বিষেদাগার না করা ইত্যাদি ইত্যাদি।

একটা উল্লেখযোগ্য ইস্যু হলো কিভাবে ইসলামী সরকারগুলো ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীদের সাথে আচরণ করবে বা অন্যান্য দেশে মুসলিম সংখ্যালঘুদের কি করণীয় হবে।বর্তমানে ইসলামের যে রাজনৈতিক আদর্শ প্রচলিত আছে তাতে মুসলিম ও অমুসলিমদের নিয়ে একটি সাম্য ও বহুজাতিক সমাজের তেমন সুযোগ নেই।এটা কেবল সহনশীলতার প্রশ্ন নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যেকোন বিশ্বাসের মানুষদের সমান গণ্য করা এবং সমান নাগরিক অধিকার দেয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন সোশাল ও লিগ্যাল ইস্যুতে যেসব রাজনৈতিক মতপার্থক্য আছে, বা এসব বিষয়ে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন বা মিডিয়ার কি কি ভূমিকা বা প্রভাব থাকবে, সেটা নিয়ে পুনরায় পর্যালোচনা করতে হবে। সামাজিকভাবে বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে একজন নাগরিক কি কি আইনি সুবিধা পেতে পারেন তার একটা নতুন ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা তৈরী করতে হবে।
একইভাবে যেসব দেশে মুসলিমরা সংখ্যায় কম তারা সেদেশগুলোর সরকারদের সাথে এক ধরণের নতুন সমঝোতায় আসতে পারেন।ভারতীয় মুসলিম (মোট জনসংখ্যার ১২%) এবং ফিলিপিনো মুসলিমগণ (মোট জনসংখ্যার ৮%) তাদের কমিউনিটির ভিতরে যেকোন ধরণের বাড়াবাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে দেখেই এটা বোঝা যায় আলাদা হয়ে যাওয়া কোন ভাল কিছু বয়ে আনতে পারে না। সামাজিক সুসম্পর্ক সৃষ্টির ক্ষেত্রে ধর্মীয় ঐক্য এখন আর ভালভাবে কাজ করছে নয়া, সে তুলনায় সাংস্কৃতিক ঐক্য বেশি কার্যকর হচ্ছে যেটা বসনিয়ার সার্বদের বেলায় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সারা মধ্য এশিয়া জুড়ে, এবং সে সাথে আফ্রিকায় ও পশ্চিমা নানা দেশে ইসলামের নামে যেসব সন্ত্রাসী কার্জকলাপ চলছে এগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। একই সাথে মুসলিম ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীদের বিভিন্ন আইনি চাহিদা সেদেশগুলোর সরকারদের নিশ্চিত করতে হবে। প্রায় ৫ কোটি চাইনিজ মুসলিমকে কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না, সেদেশের জনসংখ্যার বিচারে যত কমই হোক না কেন।
আন্তর্জাতিকভাবে ইসলামী রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিকভাবে, সম্পদের দিক থেকে এবং রাজনৈতিকভাবে নিজেদের উত্তরোত্তরভাবে উন্নতি ঘটাচ্ছে। উম্মাহ্‌র মাঝে ইসলামী খেলাফতের চেয়ে স্থানীয় সংস্কৃতি ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রতি আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিছু ইসলামী রাষ্ট্র যেমন লিবিয়া, ইরান, ইরাক, ইয়েমন পশ্চিমাদের প্রতি ততটা উদার নয়, আবার সেটা ভারসাম্য পাচ্ছে সৌদিআরব, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন, ব্রুনেইর মতো রাষ্ট্রের তাদের সাথে সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে। তার মানে এই নয় যে পশ্চিমাদের সাথে এদের কোন ফারাক নেই। বরং ডঃ মাহাথির মোহাম্মদ, লী কুয়ান ইয়ে এবং গোহ চোক টং (সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী)-এর মতো নেতারা পশ্চিমাদের বিভিন্ন সমস্যার খুব কঠোরভাবেই সমালোচনা করেছেন।
বিশ্বব্যাপী পশ্চিমা ধ্যান-ধারণার ব্যাপক প্রভাব সত্ত্বেও তাদের এখনো তেমন কোন শক্ত ভিত্তি নাই। বিংশ শতাব্দীতে সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, পশ্চিমাদেশগুলোতে যেসব আদর্শ লালন-পালন করা হয়েছে, সেগুলো দিয়ে তৃতীয় বিশ্বের প্রতি তাদের হিপোক্রেটিক আচরণের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি, এমনকি তারা পারেনি ইউরোপীয় নানা জাতির মাঝে বিদ্যমান যুদ্ধগুলো থামাতে।
পশ্চিমের অবশ্যই ইসলামকে বুঝতে হবে, অবশ্যই নতুন হুমকি হিসেবে নয়। বরং তাদের সেক্যুলার তত্ত্বের জয়জয়কার অবস্থার পরেও ইসলামে অনেক আইডিয়া এবং নৈতিক মূল্যবোধ আছে যা তারা কাজে লাগাতে পারে।পশ্চিমাদের সারা বিশ্বে মুসলিমদের অভিজ্ঞতাগুলোর ব্যাপকতা সম্বন্ধেও ভাল জানতে হবে।তাদের যে কেবল আভ্যন্তরীণ ইসলামিক সমস্যাই আছে তা নয়, পশ্চিমের মতো মুসলিমরাও অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, পরিবেশগত, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধজনিত সমস্যায় ভুগছে।বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ঔষধ, শিক্ষার মতো মানবিক অভিজ্ঞতাসমূহ এবং সুবিধাদি সকলে মিলেই সমানভাবে শেয়ার করতে হবে।পশ্চিমারা যদি তাদের তৈরী শব্দগুলো যেমনঃ ব্যক্তিস্বাধীনতা, উদারতা, সাংবিধানিক সরকারব্যবস্থা, মানবাধিকার, সমানাধিকার, স্বাধীনতা, আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মুক্ত বাজার, রাষ্ট্র ও চার্চের আলাদা অবস্থান এসবে বিশ্বাস করে তাহলে তাদের উচিত হবে আন্তরিক আলোচনার মাধ্যমে এগুলো বিশ্বের অন্য প্রান্তের দেশগুলোর সাথে শেয়ার করা, অবশ্যই বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নয়। যেসব বৈশিষ্ট্যের মধ্য দিয়ে তারা ভাল এবং খারাপ রাষ্ট্র সংজ্ঞায়িত করে সেগুলোকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে। যে সব বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমাদের সাথে চীনের সম্পর্ক নষ্ট হয় না, একই বৈশিষ্ট্যের কারণে আলজেরিয়ায় আর বসনিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে দাবী করা হয়, এটা স্রেফ হিপোক্রেসী ছাড়া আর কিছুই নয়। একদিকে পশ্চিমা বিশ্ব তথা যুক্তরাষ্ট্র সৌদিআরব, কুয়েত আর পাকিস্তানকে সহযোগিতা করে, অন্যদিকে ইরান, সিরিয়া, ইরাক, সুদানের সাথে খারাপ আচরণ এমনকি আক্রমণ করে বসে, এতে করে তারা মুসলিমদের মাঝে কোন আস্থা তৈরি করতে পারে না। একদিকে তারা আফগানিস্তানের মুজাহেদিনদের সহায়তা করেছে, অন্যদিকে তারা ফিলিস্তিনিদের দমনে ইসরাইলকে সহায়তা করছে। ইসরাইলদের ক্রমাগত ভূমি অধিগ্রহণ কিছুতেই মেনে নেবার মতো নয়, অথচ ফিলিস্তিনিদের অনুভূতি ও ইচ্ছার প্রতি পশ্চিমাদের আচরণ মোটেও তেমন আন্তরিক নয়। এমনকি মুসলিমদের অ্ত্যধিক আবেগপ্রবণতাও এক্ষেত্রে কোন কাজে আসছে না।
পশ্চিমাদের নিজেদের সংস্কৃতি “বিশ্বসংস্কৃতি”র নামে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা আজ প্রতিরোধের মুখে পড়ছে, এটাকে এক নতুন ধরণের আগ্রাসন হিসেবেই দেখছে সবাই। “সাংস্কৃতিক আগ্রাসন”, “মানবাধিকার আগ্রাসন” ইত্যাদি নামে এগুলোকে অভিহিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের তরুণ প্রজন্মদের মাঝে নিজেদের স্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধের প্রতি নতুন করে জাগরণ ও সচেতনতা সৃষ্টি হওয়ায় এ অঞ্চলে এসব পশ্চিমা আগ্রাসনকে ক্ষতিকর হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
আজ পশ্চিমাদের যেমন তাদের সুপিরিয়র আদর্শের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে, ঠিক তেমনি মুসলিমদেরও বুঝতে হবে যে তাদের ঐতিহ্যেরও পুনর্ব্যাখ্যা হওয়া প্রয়োজন। আলেমগণের গোঁ ধরে বসে থাকলে চলবে না যে ইসলাম সম্পূর্ণ আলাদা জীবন ব্যবস্থা। এটা অন্য সব ব্যবস্থার চেয়ে ভাল। এই ধারণার ফলে পশ্চিমা আদর্শগুলো কেবল আপেক্ষিকভাবেই কম মূল্যায়িত হয় না, সেসাথে মুসলিম সমাজে তাদের কোন গ্রহণযোগ্যতাই থাকে না। আদর্শের দিক থেকে বিতর্ক সাধারণত বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে হয়, যেমন ঐশ্বরিক কর্তৃত্ব কার হাতে আছে, তাওরাত, বাইবেল নাকি কোরআনের? যারা এর যেকোন একটিকে অগ্রগণ্য হিসেবে গ্রহণ করে, তখন বাকীগুলোকে বাতিল গণ্য করার সমস্যা তো থাকেই, সেই সাথে যারা এর কোনটিকেই মানে না, তাদেরকে নিয়েও ভাবতে হয়। এটা খুব অযৌক্তিক যে যারা কুরআন মানে না, তাদেরকে কুরআনের কর্তৃত্ব বোঝাতে যাওয়া।তাই আসলে বিতর্কের লেভেল আলাদা করতে হবে, বিতর্ক অবশ্যই হতে হবে যুক্তি ও তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে। এটা দেখে গেছে মানুষ বছরের পর বছর জীবন-যাপনের নানারকম বাস্তবতার কারণে মূল আদর্শ থেকে দূরে সরে গেছে। তার মানে এই নয় যে আদর্শগুলো অর্থহীন হয়ে গেছে, বরং মূলে ফিরে যাবার একটা চাহিদা তৈরী হয়েছে। এখন প্রয়োজন একটা প্রচন্ড সাহসী ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ নেয়া যার মাধ্যমে কালের বিবর্তনে ঐতিহাসিকভাবে যেসব ধারা বা আদর্শ সংযোজিত হয়েছে সেখান থেকে সহজ-সরল ইসলামে প্রত্যাবর্তন করা যার কথাই মূলত কোরআনে বলা আছে।
ইসলাম এবং পশ্চিম পরস্পর পরস্পরকে অনেক কিছু দিতে পারে। যদি একজন আরেকজনের উপর প্রভাব বিস্তার করতে যায় তাহলে কেবল সন্দেহ, অসহিষ্ণুতা আর ভয় ছাড়া আর কিছু জন্মাতে পারে না। যখন ইউরোপে মূর্খতা আর বর্বরতার অন্ধকার যুগ চলছিল, তখন ইসলামই জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা কিছু সংরক্ষণ করেছিল। পরবর্তীতে সেসব জ্ঞান পুনরায় আবিষ্কারের মাধ্যমে আজ ইউরোপ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রদূত হয়েছে। দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া ধর্মীয় নেতারা সেখানে পরাজিত হয়েছে। অন্যদিকে প্রায় একই সময়ে একই রকম কিছু পথভ্রষ্ট ধর্মীয় নেতার কারণে মুসলিম সমাজে ইজতিহাদ এবং যুক্তিসহকারে মতপার্থক্য বা বিতর্কের যে চর্চা ছিল সেটাকে অবদমন করা হয়েছে।যার ফলশ্রুতিতে ইউরোপ সারা বিশ্ব জুড়ে অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত আগ্রাসন আর উপনিবেশিকতার চর্চা করে গেছে। এখন জ্ঞানের একটা আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ প্রবাহ যদি পশ্চিমা বিশ্ব থেকে মুসলিম বিশ্বে দেয়া যায়, তাহলে মুসলিমরা আবারো নতুন করে সঞ্জীবিত হতো, আর আধুনিক বিশ্বে নতুন করে সৃজনশীলতার উজ্জ্বল সাক্ষর রাখতে পারতো।
শুধুমাত্র বস্তুবাদের স্থানান্তরই পর্যাপ্ত নয়। দুই সমাজেই নতুন করে আদর্শের উপর কাজ করতে হবে। ধর্মীয় যেকোন অসহিষ্ণু ইস্যুর মোকাবিলার ক্ষেত্রে এটা মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ্‌তাআলার নাযিলকৃত কোরআনের মতে অমুসলিমদের স্বীকৃতি দেয়াটা একটা ফ্যাক্ট। যদি আমরা একেশ্বৈরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি এবং রাসূল(সাঃ) এর আদর্শ মানি তবে উনি যেভাবে বলেছেন সেভাবেই আমাদের অন্যদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। আমরা অবশ্যই আমাদের ঐতিহ্যকে পুনঃনিরীক্ষণ করবো, তবে সেটা স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে, বাতিল বা বর্জন করার মাধ্যমে নয়। আজ পশ্চিমা সমাজে যেসব প্রভাববিস্তারকারী দ্রুতবর্ধনশীল টার্ম আছে, মানে ব্যক্তিস্বাধীনতা, বস্তুবাদ, ভোগবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ –সেসব ক্ষেত্রে ইসলাম অনেক কিছু তাদের দিতে পারে।
মানবসমাজকে চরিত্রায়িত করতে যেসব নৈতিক মাপকাঠির প্রয়োজন হয়, তার সবকিছুর মধ্যম অবস্থানটাই ইসলামের দখলে আছে। ‘ইসলাম এবং পশ্চিম’ নামক ফান্সের এক এসোসিয়েশন প্রসিডেন্ট ফ্রাঙ্কিস ল্যামান্ড বলেন, “ইসলাম পশ্চিমে তিনটি অতি প্রয়োজনীয় মূল্যেবোধের পুনর্জন্ম দিতে পারেঃ বিশ্বের যে অংশে অতিমাত্রায় ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার চর্চা হচ্ছে সেখানে কমিউনিটির ধারণা, পবিত্রতার ধারণা এবং সত্যবোধ। আর এটাই হতে পারে পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামের অবদান।” আবারো যে কথা বলা পশ্চিমাদের অবশ্যই বিশ্বের অন্য প্রান্তের প্রতি তাদের আগ্রাসী মনোভাব প্রত্যাহার করতে হবে এবং তাদের বাকী বিশ্বের প্রতি তাদের মনোভাবের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। মূলত “বাকী বিশ্ব” বলতে যা বুঝায়, এই ধারণাটাই পরিবর্তন করতে হবে।

রেফারেন্স:

1. http://www.ifew.com/insight/authors/ibwatson.html

2. http://www.ifew.com/insight/v12i01/ibw.html

3. http://najnin.wordpress.com/wp-admin/post-new.php

47
[লেখক পরিচিতিঃ ডঃ আই ব্রুস ওয়াটসন প্যালেস্টাইন বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ নিউজিল্যান্ডের “সাউথ এশিয়ান এন্ড ইসলামিক হিস্ট্রি”র প্রভাষক। এছাড়া তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট প্রোগ্রাম ইন ইসলামিক স্টাডিজের কো-অর্ডিনেটর। এছাড়াও তিনি “সাউথ এশিয়া”র সহ-সম্পাদক। “পিরিওডিকা ইসলামিকা”র আন্তর্জাতিক সম্পাদক কমিটির সদস্য। তিনি দক্ষিণ এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ইতিহাসের উপরে অনেকগুলো প্রবন্ধ লিখেছেন যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তার একটি বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।
ডঃ ওয়াটসনের লেখা “ইসলাম ও আধুনিক বিশ্বে এর চ্যালেঞ্জসমূহ” নামক প্রবন্ধটি ১৯৯৭ সালে প্রথম “ইনসাইট”-এর ১২তম ভলিউমে প্রকাশিত হয়। এই পোস্টে অত্যন্ত সময়োপযোগী লেখাটির একটা ভাবানুবাদ করার চেষ্টা করা হয়েছে।]

সারা বিশ্বে ঘরে-বাইরে ইসলাম আজ নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ইসলামের ভিতরকার নানারকম টানাপোড়েনকেই প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। বিশ্বব্যাপী বাইরের দিক থেকে মানে অমুসলিমদের ও অবিশ্বাসীদের কাছ থেকে যেসব সমালোচনাগুলো হয় সেগুলোকে পথভ্রষ্টতা, অজ্ঞতা বা শত্রুতা হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু ইসলামের সীমানার ভিতরে থেকে যেসব মতপার্থক্যের বা মতবিরোধিতার সৃষ্টি হচ্ছে, এগুলো এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নেই। খুব সাধারণ ভৌগোলিক সেন্সে, ইসলামের মূল কেন্দ্রসমূহকে তার অবস্থান পরিবর্তনের হাত হতে রক্ষা করার কথা বলা যায়। যেমন, সৌদিআরবের মক্কা-মদীনা হচ্ছে ইসলামের মূল ধর্মীয় পবিত্র ভূমি, প্রতিবছর এখানে হজ্জ অনুষ্ঠিত হয়, এর মাধ্যমে সৌদিআরব মুসলিম বিশ্বে তার অভিভাবকত্ব ধরে রেখেছে, কিন্তু শিয়ামতাবলম্বী ইরান ও আরো কিছু ক্ষুদ্র মতাদর্শের দল এর বিরোধীতা করে আসছে। কিন্তু মুসলিম উম্মাহর অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখবার ফলে সৌদিআরব বেশ জোরালোভাবেই এ ধরণের বিরোধীতাকে নাকচ করতে পারছে। এক সৌদিআরবের যে পরিমাণ তেলসম্পদ আছে, তা কুয়েত, ইরাক, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, ইরান, ইয়েমেনের সম্মিলিত আয়ের কাছাকাছি। কিন্তু এ সম্পদের উৎস সীমিত। তাই কয়েক বছরের মধ্যেই এই অর্থনৈতিক কেন্দ্র মুসলিম বিশ্বের আরেক প্রান্তে স্থানান্তর হবে যেখানে শক্তির স্থিতিশীল উৎস পাওয়া যাবে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি উতপন্ন হবে। পশ্চিম এশিয়ার অর্থবিনিয়োগকারীরা অনেকদিন ধরেই এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা উপলব্ধি করছেন, কিন্তু তারা পশ্চিমা বিশ্ব এবং অমুসলিমদের উপর নির্ভর করে বসে আছেন। অন্যদিকে ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র হচ্ছে মিশরের কায়রো। এখানে যেসব আদর্শ ও ধ্যান-ধারণার চর্চা হয় তা সারা বিশ্বের মুসলিমদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অঞ্চলগুলো যেমন- ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশগুলোর মাধ্যমে। ধীরে ধীরে বিভিন্ন কেন্দ্রের ক্ষমতার স্থানান্তর হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে পবিত্রভূমির দাবীর পক্ষে-বিপক্ষে এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম কমিউনিটি বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। রক্ষণশীল কেন্দ্রসমূহ অধিকতর শক্তিশালী, যোগ্যতাসম্পন্ন ও উদার মুসলিমদের চাপের মুখে কোনঠাসা হয়ে পড়ছে।

যদিও ইসলামে আদর্শিকভাবে সাম্য এবং উন্নয়নমুখী পার্থিব জীবনযাপনের প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়, কিন্তু বিপুল সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠীর জীবন-যাপনের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক পর্যায়ের, যেকোন মানদন্ডের বিচারে যার কোন অবস্থানই নেই। এবং এ প্যারাডক্স সম্পদশালী তেলসমৃদ্ধ আরব দেশগুলোতেই বেশি প্রতীয়মান হয়। যেখানে আদর্শগত দিক থেকে ইনসাফ এবং ভাতৃত্ববোধের চর্চা হবার কথা, সেখানে দেখা যাচ্ছে একদিকে ধনী মুসলিম দেশগুলো বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছে, দামী দামী সব মিলিটারী অস্ত্র-শস্ত্র কিনছে, অন্যদিকে ফিলিপিন, পাকিস্তান, ফিলিস্তিনের মতো দেশগুলো থেকে শ্রমিক আমদানী করা হচ্ছে! ১৯৯০-৯১-এর উপসাগরীয় যুদ্ধের পর এ পরিস্থিতি আরো বেশি নাজুক হয়েছে। অধিকাংশ জনগনের কর্মসংস্থানের অভাব, দ্রুত নগরায়ন, ভারসাম্যহীন উন্নয়ন প্রকল্প – সবকিছুই একসাথে শুরু হয়েছে মুসলিম উম্মাহর মাঝে। যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন মুসলিম সমাজে উপার্জন আর সম্পদের মাঝে বিস্তর ফারাক দেখা দিয়েছে, কিন্তু সে তুলনায় তাদের মাঝে সম্পদের সুষম ও দক্ষ বন্টন হয়েছে খুব কমই।

ইসলামে সুদ হারাম হবার বিষয়ে পশ্চিমাদের মাঝে নানারকম কনফিউশন থাকার ফলে মুসলিম দেশগুলোতে উন্নয়নমূলক বিনিয়োগ খুব ধীরগতিতে হয়। আবার মুসলিম বিনিয়োগকারীরা অমুসলিম দেশগুলোতেই নিজেদের অর্থ লগ্নি করতে স্বস্তিবোধ করে, কারণ সেখানে থেকে লাভও বেশি পাওয়া যায়, আবার ঐসব দেশগুলোতে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি অনেক স্থিতিশীল ও নিরাপদ। আবার কোথাও কোথাও মানুষজন যদি তার কমিউনিটির সুবিধার্থে বিনিয়োগ করতে চায়, তারাও নানাবিধ অন্যরকম সমস্যার মুখোমুখি হয়। বাংলাদেশে গ্রামীন ব্যাংক গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদের মাঝে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে যা ব্যক্তি পর্যায়ে বা সামষ্টিকভাবে বিনিয়োগ করা যায়। সেখানে মূলধনের পরিমাণ খুব অল্প আর সুদও নির্দিষ্ট। মূলধন আগে পরিশোধ করতে হয়, এরপর বাকী থেকে যাওয়া অল্প পরিমাণ মূলধনের উপর সূদ নির্ধারিত হয়। বাতসরিক শতকরা ২০ ভাগ সুদ যদিও পরিমাণে বেশি মনে হয়, কিন্তু বাংলাদেশের অন্যান্য মহাজনী সুদ ব্যবস্থার মাসিক ২০% সুদ বা বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দৈনিক ১০% সুদের তুলনায় এটা নিতান্তই ক্ষুদ্র পরিমাণের। বানিজ্যিকভাবে দক্ষ নয় এমনসব লোককেই গ্রামীন ব্যাংক অর্থ ধার দেয়। জনগণকে ব্যাংকের অফিসারদের মাধ্যমে ট্রেনিং দেয়া হয় কিভাবে তাদের চাহিদা মোতাবেক সঠিক পন্থায় পুঁজি খাটাবে। গ্রামীন ব্যাংক তার গ্রাহকদের কাছাকাছি থেকে তাদেরকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে সেবা দেয়ার মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছে এবং এতে করে তাদের ঋণ আদায়ের পরিমাণ প্রায় শতকরা ৯৮ ভাগ। অথচ এই ব্যাংককে মহাজনদের পক্ষ থেকে বিবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে, কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাপেক্ষে এই ঋণ অনেক নিতান্ত পরিমাণের, আরেকদিকে যারা গ্রামের নারীদের ক্ষমতায়ন চান না তাদের বিরোধিতার মুখোমুখিও হতে হয়েছে। এ ব্যাংকটি ইসলামী আদর্শই বাস্তবায়ন করেছে, অথচ এদের বিরোধিতা করা হয়েছে অন্যান্য সুদীব্যবস্থার দ্বারা তাদের নিজস্ব ইসলাম চর্চার মাধ্যমে।

এ ধরণের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বৈষম্য থেকেই সমাজে নানারকম মতবিরোধ ও ক্ষোভ তৈরী হয়।সমানভাবে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের সরকারগুলোর শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হওয়াও একটি কারণ।একইভাবে রাষ্ট্রগুলোর আধুনিক হবার মূল লক্ষ্যও এড়িয়ে যেতে পারে না।সমসাময়িক বিশ্বে সহনশীল জ্ঞানময় জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আধুনিকতার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কনসেপ্ট।আধুনিকতা মানে চলন-বলনে পশ্চিমাদের মতো হওয়া নয়, বরঞ্চ এর মানে হলো মুসলিম জ্ঞান-দর্শনে আরো কিছু সেকুলার ভাবধারা প্রবেশ করানো।ডঃ মাহাথির মোহাম্মদ এ বিষয়টিকে সুন্দরভাবে অনুধাবন করেছেন যে, সেকুলার আর ইসলামী জ্ঞান বলে দুটো আলাদা বিষয় থাকতে পারে না, এ ধরণের সব জ্ঞানই ইসলামের মাঝে আছে। তাই তো উনার মতো একজন প্রণিধানযোগ্য ও সফল মুসলিম নেতা এক হাতে এমন এক স্বাধীন এবং অগ্রসর মুসলিম আদর্শ গড়ে তুলেছেন যেখানে নানা বিষয়ে বিস্তর জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর এটা করা হয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্যের প্রতি পূর্ণ সচেতনতা ও শ্রদ্ধাসহ এক চমৎকার নৈতিক শিক্ষাপদ্ধতিকে ধর্মীয় বিশ্বাস সমুন্নত রাখার একমাত্র পন্থা হিসেবে। বর্তমানে অনেক মুসলিম বুদ্ধিজীবি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন কিভাবে আধুনিক বিশ্বে মুসলিমদের পরিচয় তুলে ধরা যাবে, কিন্তু তারা পশ্চিমা মিডিয়ার কভারেজ পায় না, যেমনটা পায় কট্টরপন্থীরা।পশ্চিমা মিডিয়া কেবল সন্ত্রাসী আর উগ্রমনস্কদের প্রতিই আগ্রহী, অথচ যেখানে পশ্চিমা জনগণ রাজনীতিবিমুখ ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনযাপন নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে একদল শান্ত মুসলিম বুদ্ধিজীবি নীরবে গবেষণা করে যাচ্ছেন মানব জীবনে আভ্যন্তরীণ মূল্যবোধের কি ধরণের প্রয়োজনীয়তা আছে এর উপর।এই বুদ্ধিজীবিরা কেবল যে নিজ দেশে কট্টরপন্থীদের দ্বারা চাপের মুখে থাকে তা নয়, এরা পশ্চিমাদের কাছ থেকে প্রাপ্য স্বীকৃতি, সহযোগিতা কোন কিছুই পায় না। এখন সময় এসেছে মুসলিম নেতাদের নিজ দেশে আধুনিকতার ধ্যান – ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার।আর ইজতিহাদের পুনর্জাগরণের মাধ্যমে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো ঠিক রেখে নীতিমালাগুলোর যুগোপযোগী ব্যাখা দাঁড় করানোর এবং সন্দেহজনক যে কোন কিছু যা বিভিন্ন সময়ে ইসলামে অনুপ্রবেশ করেছে সেগুলোকে ছাঁটাই করে ফেলার।

আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সবকিছুই গ্রহণযোগ্য, কিন্তু যদি পরিস্থিতি এমন হয় যে মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্ব নির্ভর করবে কেবল পশ্চিমাদের করা উন্নতিগুলোর উপর তাহলে এজাতীয় ধ্যান-ধারণা অবশ্যই বর্জনীয়। এখানে মূল প্রশ্ন যেটা কেবল নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার আর এর উপর নির্ভরশীলতাই কি জীবনের দর্শন বদলাতে পারে, চাহিদার পরিবর্তন ঘটাতে পারে, সমাজে খুব বড় ধরণের পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে? যারা এসব নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করছে, দেখভাল করছেন, তারাই কি মানব জাতির নতুন নেতা বনে যাচ্ছেন? এসব জ্ঞান ও প্রযুক্তির সুবিধাজনক বস্তুগত বৈশিষ্ট্যের চেয়েও বড় প্রশ্ন হলো এ প্রযুক্তিগুলো কিভাবে ব্যবহার হবে, কি ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে, কারা এসবের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করবেন? এটা খুব সহজেই বোঝা যায় সেকুলার কর্তৃপক্ষ কখনোই এসবের জবাব দিতে পারবে না, তারা কেবল ব্যবহারের সাংখ্যিক মানের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কিন্তু গুণগত মানের কোন সিদ্ধান্ত দিতে তারা অপারগ।

এটা খুবই বিপদজনক যে মুসলিমরা কোন বাদ-বিচার না করেই পশ্চিমা যেকোন ধ্যান-ধারণা নিজেদের মাঝে গ্রহণ করে নিবে। তাদেরকে অবশ্যই ইসলামের আলোকে যাচাই করে দেখতে হবে। যাদের ইসলাম সম্বন্ধে পর্যাপ্ত ধারণা নেই, তারা ভাবে,

“ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যপূর্ণ কিছু নয়, বরং এটা একটা আংশিক জীবন ব্যবস্থা, আধুনিক বিভিন্ন মতাদর্শ সংযোজনের মাধ্যমেই তা পূর্ণতা পেতে পারে। এই ইসলাম সম্পূর্ণ ব্যবস্থা হতে পারতো যদি এর কিছু মূল প্রতিশব্দকে পরিবর্তন করে নেয়া যেত যা কিনা অসতর্কভাবে নেয়া হয়েছে………যারা ইসলামের পূর্ণাঙ্গ গঠনের ব্যাপারে জানেন, তারা খুব ভালভাবেই বোঝেন যে কোর ইসলামের কোনকিছুই পরিবর্তনীয় নয়।”

পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় যদি মুসলিমদের মাঝের নানা মতপার্থক্যকে খুব সিরিয়াসলি নেয়া হয় এবং তৃতীয় আরেক পন্থা খুঁজে বের করা হয়। যদি পশ্চিমাদের সবই বর্জন করা হয়, তাহলে ইসলামী ঐতিহ্যে সৃজনশীলতার আর উৎপাদনমুখী গতিশীলতার যে সুযোগ আছে সেটা পুরোপুরি দমিয়ে ফেলা হয়। বর্তমান বিশ্বে ইসলামের যে পুনর্জাগরণ ঘটছে তাতে কি দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ-বালাই, অশিক্ষার মতো যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলোর প্রতি প্রর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়া হয়েছে?পুনর্জাগরণের কর্মীরা কি অতীত থেকে কিছু শিখেছে নাকি তারা এখনো নেশায় বুদ হয়ে আছে ইসলামী শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনার নিজ নিজ পছন্দের ভাষ্য নিয়ে?কি কি ক্ষেত্রে তারা নিজস্ব প্রতীক ও সংস্কৃতির চর্চা করবে? তারা কি এখনো পুরোনো আইন-কানুন নিয়ে পড়ে আছে, নাকি আইনের যুগোপযোগী সংস্কারের কথা ভাবছে?সমাজে নারী এবং অন্যান্য ধর্মের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে এখনো কি কুরআন এবং সুন্নাহর শিক্ষার সাথে ধর্মান্ধদের মনোভাবের ফারাক আছে? এখনো কি রাজনীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে কাফেররাই ধর্মান্ধদের প্রধান সমস্যা?এখনো কি নিজেদের ব্যাখ্যাই একমাত্র ঠিক এই বলে উম্মাহ্‌কে বিভিন্ন গোত্রে বা দলে ভাগ করে দেয়ার প্রতিই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িকারীরা ব্যস্ত? এসব বিভিন্ন ব্যাখ্যার পক্ষে শেষপ্রান্তে অবস্থান নিয়ে কি মুসলিম উম্মাহর মাঝে নানা উপদলের সৃষ্টি হচ্ছে?

আমাদের তাহলে এখন কি করতে হবে? ফজলুর রহমান এ ব্যাপারটা সঠিকভাবে অনুধাবন করেছেন। ইসলামের প্রয়োজন কিছু উন্নত পর্যায়ের মন যারা বিভিন্ন পুরাতন শব্দকে আদর্শের জায়গায় রেখে নতুন কিছু শব্দ দ্বারা প্রতিস্থাপন করবে। কোন আধুনিক ব্যক্তি কি আছেন পশ্চিমাদের বাদ দিয়ে আধুনিকতা গ্রহণ করে তাদের আকাংখাগুলো ভালভাবে বুঝতে পারবেন? পশ্চিমা সমাজগুলোতে এরকম বহু উদাহরণ আছে, যেখানে সব ধরণের প্রযুক্তিসহ আধুনিকতাকে গ্রহণ করার ফলে ঐতিহ্যবাহী প্রথাগুলো চাপা পড়ে গেছে এবং নতুন ধরণের মূল্যবোধের সৃষ্টি হয়েছে।

সীমাহীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর উন্নতির ফলে বিশেষ করে স্বাধীন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আর বিদেশী ও তাদের মূল্যবোধের অবাধ আমদানীর ফলে, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফলে সৃষ্ট বস্তুবাদীতা আর বেশি বেশি সেক্যুলারিজমের কারণে আজ ভোগবাদীতা, প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থপরতা, অন্যায় সম্পদঅর্জন, অত্যধিক উচ্চাশা, অবাধ যৌনতা ও পরিবারের ভাঙ্গনসহ নানারকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

(ক্রমশ)

48
আজকের পত্রিকায় (রেফারেন্স ৫) ধর্ম মন্ত্রনালয়ের দাবী অনুযায়ী আমিনীরা ২৩.৫ এবং ২৫.২ ধারাকে কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী বলছেন।
ওই দুটো ধারা দেখলে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে নারী ও পুরুষ যিনি যতটুকু সম্পদের মালিক বা যিনি যে ব্যবসা বা বিনিয়োগ করছেন, সে নিজ নিজ সম্পদ বা ব্যবসা বা ইত্যাকার যেকোন কিছুর পূর্ণ অধিকার রাখবেন। আমরা সম্পদ ও উত্তরাধিকার এবং সম্পদের উপর নারী-পুরুষের অধিকার সংক্রান্ত কুরআনের আয়াতগুলো যদি দেখি, তাহলে স্পষ্টতঃই বুঝতে পারবো এখানে কুরআন বা সুন্নাহ্‌র কোন বরখেলাপ হয় নাই। ইসলামে উত্তরাধিকার সম্পদ ভাগের ক্ষেত্রে এবং ঋণের চুক্তিপত্রের সাক্ষীর ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের আলাদা আলাদা অংশীদারীত্ব আছে, যেটা নিয়ে নারীনীতিতে কোন কথাই বলা নেই।

সূরা নিসা, আয়াত ১১ঃ
আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু’ এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক।…

সূরা নিসা, আয়াত ১২ঃ
আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের স্ত্রীরা যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তোমাদের হবে এক-চতুর্থাংশ ঐ সম্পত্তির, যা তারা ছেড়ে যায়; ওছিয়্যতের পর, যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর। স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর।…

সূরা নিসা, আয়াত ৩২ঃ
আর তোমরা আকাঙ্ক্ষা করো না এমন সব বিষয়ে যাতে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের একের উপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত।

সূরা বাকারা, আয়াত ২৮২ঃ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ঋনের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লিখে দেবে; লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। আল্লাহ তাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন, তার উচিত তা লিখে দেয়া। এবং ঋন গ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দেয় এবং সে যেন স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও বেশ কম না করে। অতঃপর ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ হয় কিংবা দূর্বল হয় অথবা নিজে লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে অক্ষম হয়, তবে তার অভিভাবক ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখাবে। দুজন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্যে থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা। ঐ সাক্ষীদের মধ্য থেকে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর যাতে একজন যদি ভুলে যায়, তবে একজন অন্যজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যখন ডাকা হয়, তখন সাক্ষীদের অস্বীকার করা উচিত নয়। তোমরা এটা লিখতে অলসতা করোনা, তা ছোট হোক কিংবা বড়, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এ লিপিবদ্ধ করণ আল্লাহর কাছে সুবিচারকে অধিক কায়েম রাখে, সাক্ষ্যকে অধিক সুসংহত রাখে এবং তোমাদের সন্দেহে পতিত না হওয়ার পক্ষে অধিক উপযুক্ত। কিন্তু যদি কারবার নগদ হয়, পরস্পর হাতে হাতে আদান-প্রদান কর, তবে তা না লিখলে তোমাদের প্রতি কোন অভিযোগ নেই। তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সাক্ষী রাখ। কোন লেখক ও সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না। যদি তোমরা এরূপ কর, তবে তা তোমাদের পক্ষে পাপের বিষয়। আল্লাহকে ভয় কর তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আল্লাহ সব কিছু জানেন।

সূরা নিসাতেই বিস্তারিতভাবে নারী-পুরুষের সম্পদের অংশীদার, অধিকার ও দায়িত্ববোধ নিয়ে বিস্তারিত বলা আছে। এটা কে না জানে যে একজন নারীকে বিয়ের সময় উত্তম মোহরানা দেয়া এবং পরবর্তীতে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর জন্য অবশ্য কর্তব্য। আর নারীদের এক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হয়েছে। একজন পুরুষের তার বাবা-মার প্রতিও আর্থিক দায়িত্বপালনের বাধ্যবাধকতা আছে, যেটা একজন নারীর নেই। তাই উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদে নারীর অংশ কিছু কম। এটাকে কি বৈষম্য বলা যায়? আমি এখানে হাইলাইট করবো ধারা ১৭.৪ এবং ১৭.৬কে। সেখানে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন বলতে কোনগুলোকে বোঝানো হয়েছে? এ ব্যাপারে সরকারের সুস্পষ্ট বক্তব্য জরুরী। যারা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে নারীর পুরুষের সমান অংশ চান, তারা পরিবারে নারীর যে আর্থিক দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে এ ব্যাপারে কি বলতে চান? এ ব্যাপারে সরকারের কোন চিন্তা-ভাবনা আছে কি? ইসলাম নারীদের যে ব্যাপারগুলোতে ছাড় দিয়েছে, সেগুলোতে নারীদের বাধ্য করিয়ে পুরুষদের দায়-দায়িত্ব কমানোটা ঠিক কতটা নারী-স্বাধীনতা বা নারী-অধিকারের ব্যাপার হতে পারে? তবে প্রশংসনীয় যে ব্যাপারটা সেটা হলো এসব আইন সংস্কার কমিটিতে নারী আইনজ্ঞদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। কারণ এ যাবতকালে আমরা দেখেছি যে পুরুষেরাই নারীদের জন্য আইন তৈরী করে, নারীর করণীয় ঠিক করে, যার মাঝে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবটা প্রকটভাবে ফুটে উঠে। নারীদের সমস্যাগুলো নারীরাই ভাল অনুধাবন করতে পারবেন।

উপরে উল্লিখিত দুটো ক্ষেত্র ছাড়া ইসলামে আর কোথাও নারী-পুরুষ জেন্ডার পার্থক্য নেই। আমরা জানি ইসলামের মূল যে পাঁচটি অবশ্যকরণীয় বিষয় আছে, সেখানে নারী-পুরুষ দুজনের জন্য সমান। এসবের জন্য উভয়কেই সমানভাবে আল্লাহ্‌র কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আগ্রহী পাঠকেরা ইসলামে নারী-পুরুষের জেন্ডার ইকুয়েলিটি সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে রেফারেন্স ৭ এবং ৮ পড়ে দেখতে পারেন।

এখানে আরেকটা উল্লেখযোগ্য যে বিষয়, সেটা হলো একটা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে কেবল সিডওকে রেফার করে নারীনীতি করা হচ্ছে, এখানে ইসলাম বা অন্য কোন ধর্মের কোন উল্লেখই নেই বা এসব ধর্মে নারীদের কি কি অধিকার দেয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপ কি কি, এ নিয়ে কোন আলোচনাই নেই। ধর্মের ব্যাপারটা এখানে যে কারণে প্রাসঙ্গিক তা হলো যে একজন নারী যদি স্বেচ্ছায় গৃহিনী হিসেবে থাকতে চান, তাহলে কেউই তাকে বাইরে কাজ করতে বাধ্য করতে পারেন না। তাকে বেকার বলাটাও ঠিক নয়। নারীর এই গৃহকর্মের মর্যাদার ব্যাপারে নারীনীতিতে কিছু কথা বলা আছে, সেটার বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। আবার কোন নারী উপার্জন করলেও পরিবারে আর্থিক খরচ দিতে তিনি দায়বদ্ধ নন, ধর্ম তাকে এক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে, এসব অধিকার কিভাবে রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে সে ব্যাপারে নারীনীতিতে কিছু বলা নেই।

এরপর সরকারের বক্তব্যের বাইরে আমি আমিনী সাহেব বা সমমনাদের কাছে জানতে চাই, প্লীজ ঠিক কোন কোন পয়েন্টে কুরআন ও সুন্নাহর ঠিক কোন কোনভাবে বরখেলাপ হয়েছে বলে আপনাদের মনে হচ্ছে, এ ব্যাপারে আপনারা আমাদের বিস্তারিতভাবে জানান। আর ইসলামে ইতিমধ্যে যেসব অধিকার দেয়া হয়েছে নারীদের যেমন মোহরানা, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি, নারীর নিজের ব্যাপারে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার … সমাজে যে এসবের হরহামেশাই বরখেলাপ হচ্ছে এ ব্যাপারে আপনাদের করণীয় কি, বক্তব্য কি? কেমন করে নারীদের এসব অধিকার পূর্ণাঙ্গভাবে নিশ্চিত করবেন? যারা এসব অধিকার দিচ্ছে না তাদের ব্যাপারে আপনাদের করণীয় কি, মন্তব্য কি?

ফতোয়াপ্রসঙ্গঃ

বাংলাদেশি নারীদের অধিকার ও দুর্দশা নিয়ে কথা বলতে গেলে অবধারিতভাবেই গ্রামে-গঞ্জে ফতোয়ার স্বীকার ও দোররার আঘাতে জর্জরিত নারীদের কথা চলে আসবে। ফতোয়ার এই ভুল প্রয়োগের ফলে কত নারী যে একতরফা এবং অন্যায়ভাবে অত্যাচারের স্বীকার হচ্ছে, এসবের পুরো পরিসংখ্যানও হয়তো ঠিকভাবে রাখা হয় না। আর পত্র-পত্রিকা মারফত এসব অনাচারের কথা জানার ফলে সাধারণ মানুষের মনে ফতোয়া সম্বন্ধে এক ধরণের বিতৃষ্ণা এবং ভীতি কাজ করে। অথচ ফতোয়া আদতে এরকম কিছু নয়। তাহলে ফতোয়া কি? কিভাবে এর প্রয়োগ হবার কথা?

বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে ফতোয়া দেয়া বন্ধ করা নিয়ে মামলা চলছে। একবার ফতোয়া বন্ধসংক্রান্ত রায় দেয়া হয়েছে, এখন সেটার উপরে করা আপিলের শুনানি চলছে। এ নিয়ে ৫ জন আলেমের মতামত চাওয়া হয়েছে। এখানে একটা ব্যাপার লক্ষ্যণীয় যে আমাদের উচ্চ আদালতে পরিপূর্ণভাবে ইসলামী ফিকহ ও আইন অনুযায়ী বিচার করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আছে। তা না হলে আলাদাভাবে ৫ জন আলেমের মতামত নেয়ার দরকার পড়তো না।

ফতোয়া মূলত ইসলামী আইনি পরামর্শ বা মতামত ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় একজন উকিল আর বিচারকের কাজের পার্থক্য যদি আমরা লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাব একজন উকিল বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় পাশ করে তারপর ওকালতি করার লাইসেন্স পান, এবং উনি মক্কেলের কোন সমস্যার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সে সমস্যার একটা সম্ভাব্য সমাধানের পথ বাতলে দেন। কিন্তু সেই সমাধানকে কার্যকর করার জন্য আদালতে মামলা করতে হয়, পর্যাপ্ত সাক্ষ্য, তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে বিচারক প্রচলিত আইনের ভিতরে থেকে সে ব্যাপারে রায় দেন, আর এই আইন গুলো প্রণীত হয় আমাদের সংসদে। একজন উকিল নিজে কোন আইন কার্যকর করার অধিকার রাখেন না। ঠিক একইভাবে একজন মুফতি মানে যিনি ইসলামী আইন অনুযায়ী তার মক্কেলকে বিভিন্ন আইনি পরামর্শ দেন, তাকেও কিছু যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়েই তবে মুফতী হতে হয়, তারও কোন সুযোগ নেই সেই পরামর্শ বা ফতোয়া কার্যকর করার। এই ফতোয়া কার্যকর করতে হলে শরীয়া আদালতে মামলা করতে হবে, বিচারিক নিয়ম-কানুন ফলো করেই একজন কাজী বা ইসলামী বিচারক রায় দিবেন এবং রায় কার্যকর করবেন। আর যেই ইসলামী আইনগুলোর আলোকে এই রায় দেয়া হবে সেগুলো প্রণীত হবে শূরা কাউন্সিলে / সংসদে। জীবন যাপনের যেকোন স্তরে যেকোন বিষয়েই ইসলামে কি বলা আছে, কিভাবে কি করা যেতে পারে, কি করা ঠিক নয় এসব ব্যাপারে আলেমরা সাধারণ মুসলিমদের নানারকম মতামত দিয়ে থাকেন, যেটাকে আমরা ফতোয়া বলে থাকি। এইতো সংক্ষেপে ফতোয়ার ধারণা। এটা আমি বললাম আমার জানা থেকে, বিভিন্ন রেফারেন্স বইতে ফতোয়া সম্বন্ধে যা বলা আছে সে অনুযায়ী(রেফারেন্স ৯)। মাননীয় আদালতই ঠিক করবেন ফতোয়ার ব্যাপারে উনাদের মত কি?



রেফারেন্সসমূহঃ

৫। প্রথম আলো, ৩ এপ্রিল ২০১১ঃ http://bit.ly/gd1qv9
৬। http://www.ourholyquran.com
৭। G-15 Position of Women in Islam – The Economic Aspect: Islamic Teaching Course, Dr. Jamal Badawi, http://bit.ly/hfyZ6B
৮। Gender Equity in Islam, D: Jamal Badawi: http://bit.ly/goU9vZ
৯। ফতোয়া (Ref: Oxford Encyclopedia on Modern Islamic World, Vol-2, Page: 8-16). http://bit.ly/eSYxAZ

49
দুই বছর আগে জাতীয় নারী নীতি’২০১১-র খসড়া নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছিল। বিশেষ করে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা ফজলুল হক আমিনীর এ নীতি কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী বলে এটাকে স্থগিত করার দাবী নিয়ে হরতাল ডেকে বসেছিলেন। যেহেতু কিছু মানুষ দাবী করছেন যে এই নারীনীতিতে কুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী কিছু ধারা আছে, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের জানা দরকার আসলেই কি আছে এতে।

প্রথমেই পত্রপত্রিকায় বিভিন্নজনের বক্তব্যে “সিডও” নিয়ে কথা হচ্ছে এবং এটাকেই মূলত কুরআন ও সুন্নাহ্‌র পরিপন্থী বলা হছে এবং সরকারের নারীনীতিও প্রণীত হয়েছে “সিডও”র অনুসরণে, তাই এ নিয়ে দুটো কথা বলি। আবার বর্তমানে হেফাজতে ইসলামও "সিডও"কে নিয়ে সমালোচনা করছেন। তবে উনারা যে বিষয় নিয়ে অভিযোগ করেছেন সেরকম কোন ক্লজ আমি "সিডও"তে খুঁজে পাইনি। এছাড়া কুরআন, সুন্নাহবিরোধী যেকোন কিছুই বাংলাদেশ সংরক্ষণ করেছে।

১ নং রেফারেন্সে সিডও (CEDAW)-র ধারাগুলোর সার সংক্ষেপগুলো দেখা যাবে। নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে “The Convention on the Elimination of All forms of Discrimination Against Women (CEDAW)” সনদ গৃহীত হয় এবং ১৯৮১ সালে এটাকে কার্যকর করা হয়। বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে এ সনদ সাক্ষর করে এবং নিয়মঅনুযায়ী চার বছর পরপর এ সংক্রান্ত রিপোর্ট জাতিসংঘে পেশ করে। সারা বিশ্বে মোট ১৮৬টি দেশ এই সনদ সাক্ষর করে, তবে খোদ যুক্তরাষ্ট্রই (মানবাধিকারের কর্ণধার) এটিকে এখনো অনুমোদন দেয়নি। এছাড়া ইরানও অনুমোদন দেয় নাই। দেশে দেশে নারী ও নারীশিশুদের নানারকম নিরাপত্তামূলক ও নায্য অধিকারমূলক আইন প্রণয়নের প্রসঙ্গে সিডও-র মূল ধারাগুলো হচ্ছেঃ

১। আন্তর্জাতিকভাবে সেক্স ট্রাফিক ও স্থানীয় যৌন হয়রানি কমানো
২। শিক্ষা ও ভোকেশনাল ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা
৩। ভোটাধিকার নিশ্চিত করা
৪। জোরপূর্বক বিয়ে ও বাল্যবিবাহ বন্ধকরণ ও সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিশ্চিতকরণ
৫। মা ও তার শিশুকে পর্যাপ্ত মেটারনিটি সেবা দেয়া
৬। কোনরকম বৈষম্য ছাড়া নারীদের কাজের ও ব্যবসার সুযোগ নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশে প্রথম পর্যায়ে ধারা ২, ১৩ ও ১৬-র কিছু কিছু অংশ সংরক্ষণ করে সনদ সাক্ষর করা হয়। এখনো পর্যন্ত ধারা ২ সংরক্ষিত অবস্থায় আছে কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধী মনে করে(রেফারেন্স ২)। এটা জাতিসংঘের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া তথ্য। তবে নারীনীতি ২০১১ তে বলা আছে ধারা ১৬ (ক)-ও এখনো পর্যন্ত সংরক্ষিত।

এবার দেখি আমাদের নারীনীতি ২০১১ তে কি কি বলা আছে।

বাংলাদেশ সরকারের নারী ও শিশু মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে এর খসড়া কপিটি পাওয়া যাবে(রেফারেন্স ৪)। যেহেতু মূল বিতর্কের বিষয়বস্তু হচ্ছে এ নীতিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার দিয়ে কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তাই যে যে পয়েন্টগুলোতে নারীর সমান অধিকার বা সমান অংশীদারিত্ব বা সমান অংশগ্রহণ এসব শব্দগুলো আছে, সে পয়েন্টগুলো আমি এখানে দিলাম।

১৬.১ বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রীয় ও গণজীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
১৬.৫ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মূল ধারায় নারীর পূর্ণ ও সম অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
১৬.৮ নারী পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য নিরসন করা।
১৬.১২ রাজনীতি, প্রশাসন ও অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে, আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া এবং পারিবারিক জীবনের সর্বত্র নারী পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

১৭.১ মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার সকল ক্ষেত্রে, যেমন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ যে সমঅধিকারী, তার স্বীকৃতি স্বরূপ নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ করা।
১৭.২ নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (CEDAW) এর প্রচার ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১৭.৩ নারীর মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন সংশোধন ও প্রয়োজনীয় নতুন আইন প্রণয়ন করা।
১৭.৪ বিদ্যমান সকল বৈষম্যমূলক আইন বিলোপ করা এবং আইন প্রণয়ন ও সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশন বা কমিটিতে নারী আইনজ্ঞদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
১৭.৫ স্থানীয় বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোন ধর্মের, কোন অনুশাসনের ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারী স্বার্থের পরিপন্থী এবং প্রচলিত আইন বিরোধী কোন বক্তব্য প্রদান বা অনুরূপ কাজ বা কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করা।
১৭.৬ বৈষম্যমূলক কোন আইন প্রণয়ন না করা বা বৈষম্যমূলক কোন সামাজিক প্রথার উন্মেষ ঘটতে না দেয়া।

২৩.২ অর্থনৈতিক নীতি (বাণিজ্যনীতি, মুদ্রানীতি, করনীতি প্রভৃতি) প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করা।
২৩.৫ সম্পদ, কর্মসংস্থান, বাজার ও ব্যবসায় নারীকে সমান সুযোগ ও অংশীদারীত্ব দেয়া।
২৩.৭ নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরী, শ্রম বাজারে নারীর বর্ধিত অংশগ্রহণ ও কর্মস্থলে সমসুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা।

২৫. নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জরুরী বিষয়াদি যথা;
২৫.১ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, জীবনব্যাপী শিক্ষা, কারিগরী শিক্ষা, আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ, তথ্য ও প্রযুক্তিতে নারীকে পূর্ণ ও সমান সুযোগ প্রদান করা।
২৫.২ উপার্জন, উত্তরাধিকার, ঋণ, ভূমি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করা।

৩১.৩ কৃষিতে নারী শ্রমিকের মজুরী বৈষম্য দূরীকরণ এবং সমকাজে সম মজুরী নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৩২.৩ রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে পর্যায়ক্রমে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
৩২.৪ নির্বাচনে অধিকহারে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুপ্রাণিত করা।
৩২.৯ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার উচ্চ পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী নিয়োগ করা।

৩৩.১ প্রশাসনিক কাঠামোর উচ্চ পর্যায়ে নারীর জন্য সরকারি চাকরিতে প্রবেশ সহজ করার লক্ষ্যে চুক্তিভিত্তিক এবং পার্শ্ব প্রবেশের (Lateral entry) ব্যবস্থা করা।

৩৪.৯ পরিবার পরিকল্পনা ও সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করা।
৩৬.১ প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশের নিরাপত্তায় নারীর অবদান স্বীকার করে পরিবেশ সংরক্ষণের নীতি ও কর্মসূচীতে নারির সমান অংশগ্রহণের সুযোগ ও নারী প্রেক্ষিত প্রতিফলিত করা।
৩৬.৩ কৃষি, মতস্য, গবাদি পশুপালন ও বনায়নে নারীকে উতসাহিত করা ও সমান সুযোগ প্রদান করা।

রেফারেন্সসমূহঃ

১। সিডওঃ http://www.cedaw2010.org/index.php/about-cedaw/summary-of-provisions

২। Reservation of CEDAW: http://www.un.org/womenwatch/daw/cedaw/reservations.htm

৩। সম্পূর্ণ সিডও সনদঃ http://bit.ly/hvmH1m

৪। জাতীয় নারী নীতি ২০১১ঃ http://www.mowca.gov.bd/

(ক্রমশ)

50
সূরা নূর:

১১। যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। তোমরা একে নিজেদের জন্যে খারাপ মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। তাদের প্রত্যেকের জন্যে ততটুকু আছে যতটুকু সে গোনাহ করেছে এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্যে রয়েছে বিরাট শাস্তি।

১২। তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?

১৩। তারা কেন এ ব্যাপারে চার জন সাক্ষী উপস্থিত করেনি; অতঃপর যখন তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, তখন তারাই আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী।

১৪। যদি ইহকালে ও পরকালে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত, তবে তোমরা যা চর্চা করছিলে, তজ্জন্যে তোমাদেরকে গুরুতর আযাব স্পর্শ করত।

১৫। যখন তোমরা একে মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে এবং মুখে এমন বিষয় উচ্চারণ করছিলে, যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না। তোমরা একে তুচ্ছ মনে করছিলে, অথচ এটা আল্লাহর কাছে গুরুতর ব্যাপার ছিল।

১৬। তোমরা যখন এ কথা শুনলে তখন কেন বললে না যে, এ বিষয়ে কথা বলা আমাদের উচিত নয়। আল্লাহ তো পবিত্র, মহান। এটা তো এক গুরুতর অপবাদ।

১৭। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, তোমরা যদি ঈমানদার হও, তবে তখনও পুনরায় এ ধরণের আচরণের পুনরাবৃত্তি করো না।

১৮। আল্লাহ তোমাদের জন্যে কাজের কথা স্পষ্ট করে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

এই আয়াতসমূহ নাযিল হয়েছিল যখন একদল মুসলিম আয়েশা(রা: )কে চরিত্রহানীর অপবাদ দিচ্ছিল, এবং রাসূল(সা: )ও উনার স্ত্রীর ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। এর শাস্তি হিসেবে প্রায় একমাস ওহী নাযিল বন্ধ ছিল। অপবাদ দেয়া যে কত বড় অপরাধ, এই আয়াতগুলো পড়লে এবং তৎকালীন মদীনা সমাজে এ নিয়ে যেসব ঘটনা ঘটে গিয়েছিল সেসব পড়লেই বোঝা যায়। আশা করি ঈমানদারগণ কুৎসা রটনা থেকে নিজেদের বিরত রাখার চেষ্টা করবেন।

উৎসর্গ: যারা হেনা, রুমানাসহ আরো অনেক নারীদের চরিত্রহননে আত্মতৃপ্তি পান তাদেরকে।

51
আমেরিকায়  পিএইচডি অধ্যয়নরত এক বাংলাদেশী আপু জানাচ্ছিলেন সে দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট। অনেক আমেরিকান নারীদের সাথে কথা বলে দেখা গেছে তারা পরিবারে নিগৃহিত  হচ্ছেন। উন্নত দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে পরিবারে যথার্থ মর্যাদা দেয়া হচ্ছে না। সে দেশের পরিবারগুলোতে নারী এবং শিশুদের সমপর্যায়ে দেখা হচ্ছে। এখনো   পর্যন্ত গৃহকর্ম কেবল নারীদের বলে ভাবা হচ্ছে, খুব কম পুরুষই  গৃহকর্মে তাদের স্ত্রীদের কাজে সহায়তা করেন। এই গৃহকর্মের সুত্র ধরেই অনেক পরিবারে ভাঙ্গন ধরছে। এছাড়াও পারিবারিক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াতেও পরিবারের নারীদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে বা তাদের মতামত নেয়াই হচ্ছে না। এমনকি নারীদের গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনাও ঘটে চলেছে। পশ্চিমা বিশ্বে পুরুষের এই রাগের মাথায় স্ত্রী গায়ে হাত তোলার পিছনে কারণ হিসেবে মদ দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে মুসলিম বিশ্বেও এ ধরণের ঘটছে, অথচ এসব দেশে মদের প্রকোপ অনেক কম! এর পিছনে কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে আমাদের মুসলিম বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে শেকড় গেঁড়ে বসতে পারেনি। এখনো মজ্জাগতভাবে এ অঞ্চলে একনায়কতন্ত্রের কদর বেশি। এর প্রভাব পড়ছে ব্যক্তিপর্যায়েও। মানুষের এই স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের ফলেই সে তার ঘরের নারীদের মতামতের মুল্য দেয় না, এমনকি গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করে না।

এই যে নারীদের শিশুর সমতুল্য ভাবা হয় তার আবেগপ্রবণতা বা যুক্তির ধার কম ভেবে বা কম বিচক্ষণ ভেবে এটা ঠিক নয়। নারীকে পুরুষের সমতুল্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। অনেকেই ইসলামের দিকে আঙ্গুল তুলে বলেন কুরআনেই নাকি নারীদের মর্যাদা পুরুষের অর্ধেক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে কোরআনের আয়াতসমুহকে উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করেন। তারা পুরুষের প্রতি যে পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব ন্যস্ত করা আছে সেদিকটা আর উল্লেখ করেন না। আবার সূরা নিসার এই ৩৪ নং আয়াতের কথা উল্লেখ করে বলেন যে পুরুষকে পরিবারের স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে তাকে পরিবারের প্রধান করা হয়েছে, স্ত্রীর অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাই পুরুষের কথা মেনেই নারীকে চলতে হবে। আবার অবাধ্য স্ত্রীকে প্রহার করার কথাও কোরআনে বলা আছে। অথচ রাসূল(সাঃ ) নিজেই কোনদিন উনার স্ত্রীদের গায়ে হাত তোলেননি। যখন তার স্ত্রীরা অপর্যাপ্ত ভরণপোষণ নিয়ে রাসূল(সাঃ ) এর সাথে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়েছিলেন, আল্লাহর তরফ থেকে তাদেরকে সম্মানের সাথে ডিভোর্স দেবার কথা বলা হয়েছিল (সূরা আহযাব, ২৮ নং আয়াত)। আর রাসূল (সাঃ ) নিজে ধর্মপ্রচারসহ রাষ্ট্রীয় নানান কাজে ব্যস্ত থাকার পরেও ঘরের কাজে স্ত্রীদের সাহায্য করতেন। এছাড়াও একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কখনোই তার অধিনস্তদের গায়ে হাত তোলেন না, কর্মচারীরা যতই ভুল করুক না কেন, বড়জোর তাদেরকে চাকুরি থেকে ছাঁটাই করেন।

নারী পুরুষের সমান মর্যাদার প্রমাণস্বরূপ কোরআনে বেশ কিছু আয়াতই আছে। এছাড়াও কোরআনের আয়াতগুলো বিচ্ছিন্নভাবে উপস্থাপন করা ঠিক নয়। একই বিষয়ের সবকটি আয়াতকে বিবেচনা করেই কোন একটা ইস্যুতে উপসংহারে আসা উচিত। সূরা বাকারার ৪৭ নং আয়াতে আল্লাহতাআলা বলেছেন, “আমি বনী আদমকে সম্মানিত করেছি।” এখানে নারীপুরুষ উভয়ের কথাই বলা হয়েছে। এছাড়া ইসলামী শরিয়তের প্রথম অধ্যায়েই বলা হয়েছে, এই শরিয়ত মানার বাধ্যবাধকতা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের (মুকাল্লাফ), পাগল এবং শিশু ব্যতীত। শরিয়তে নামায না পড়ার শাস্তির বিধান নারীপুরুষ উভয়ের জন্য সমান। চুরির দায়ে হাত কাটার শাস্তিও নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। পুরুষকে আর্থিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে নামায বা চুরির ক্ষেত্রে শাস্তি কম-বেশি করা হয়নি। তাই কেবল সামাজিক রীতি নীতির কাছে নতি স্বীকার করে নারীকে অবহেলা করার বা অমর্যাদা করার কোন সুযোগ নেই। আর কিভাবে নারীদের ব্যাপারে পুরুষের এই মনোভাব বদলানো যাবে সেটা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। আমাদের জুম্মার খুতবাগুলোতে নারীদের প্রহারের বিরুদ্ধে বেশি করে করে বলতে হবে। ইমামদের যখন ট্রেনিং দেয়া হয় উনাদেরকে ভাল করে বলে দিতে হবে, সচেতন করে দিতে হবে যাতে করে সবাই নিজ নিজ কর্মস্থল মসজিদে এবং মসজিদসংলগ্ন এলাকাতে এই কথাগুলো বেশি বেশি করে প্রচার করেন।

আর পরিবারগুলোতে স্ত্রীকে সম্মান করার ব্যাপারে যে ইসলামে কোন বাঁধা নেই সেটা আমরা উপরের আলোচনাতেই দেখলাম। পরিবারের সব বিষয়ে স্ত্রীর মতামত নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার মাধ্যমেই পরিবারে নারীদের মর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব।

 

সূত্রঃ সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি ভাবনা – জনাব শাহ আবদুল হান্নান

52
মানবজীবনের নানা পর্যায়ে, বিভিন্ন কাজে-কর্মে কিভাবে কথা বলতে হবে, কিভাবে আচরণ করতে হবে, কি কি নিয়ম মানতে হবে এসব নিয়ে কুরআনে এবং হাদিসে বিস্তারিতভাবে অনেক কিছুই বলা আছে।

এই যেমন কুরআনে বলা আছে, তোমাদের গলার স্বর নিচুর কর…সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বর হচ্ছে গাধার স্বর…

মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূল(সাঃ ) তাঁর সাহাবিদের জিজ্ঞ্যেস করলেন, বল তো তোমাদের মাঝে দেউলিয়া কে? একজন জবাব দিলেন, যার কোন টাকা পয়সা নেই, সম্পদ নেই সেই-ই দেউলিয়া। রাসূল জবাব দিলেন, না, আমার জাতির মাঝে যে ব্যাক্তি কেয়ামতের দিন নামাজ, রোযা, জাকাত নিয়ে আল্লাহ্‌র সামনে দাঁড়াবে কিন্তু সে দুনিয়াতে গালিগালাজ, খারাপ আচরণ, অপরকে অপমান করা, আঘাত করা এসব কাজে অভ্যস্ত ছিল সে-ই হবে দেউলিয়া। কারণ, তার দ্বারা আঘাতপ্রাপ্তরা তার ভাল কাজগুলোর বিনিময়ে পুরষ্কারপ্রাপ্ত হবে, এদিকে সে তাদের পাপের বোঝা বহন করবে এবং শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।

কি ভীষণ কথা! আমরা কয়জনে এ কথাগুলো মনে রাখতে পারি?

তাই আজকের পোস্টে ইসলামের আলোকে কোন সভাস্থলে বা গ্রুপ আড্ডার আচরণবিধি নিয়ে কিছু কথা বলবো। এবং এটা ব্লগীয় বা ফোরামের পরিবেশের জন্যও প্রাসঙ্গিক হবে আশা করি।

উপযুক্ত আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারনঃ

যখন কেউ কোথাও কথা বলবে, তাকে খেয়াল রাখতে হবে ঐখানে ঐ মুহুর্তে ঠিক কি বিষয়ে কথা হচ্ছে, সেই বিষয়েই কথা বলা উচিত এবং সংক্ষেপে বলা উচিত। যদি সে সেই আলোচনাসভায় বা আড্ডাস্থলে জুনিয়র লেভেলের কেউ হয় তাহলে তার মতামত জানতে না চাওয়া পর্যন্ত কথা বলা ঠিক নয়। তবে যদি এমন হয় যে তার কিছু কথা বা মতামত সেখানে কোন ইতিবাচক প্রভাব রাখবে তাহলে সে তা বিনয়ের সাথে বলতে পারে। কখনোই অনেক লম্বা সময় ধরে কথা বলা ঠিক নয়। আর কথা বলতে হবে পর্যাপ্ত স্বরে, স্পষ্ট উচ্চারণে। বুখারি শরীফে বর্ণিত হাদিসে বলা আছে, রাসূল(সাঃ ) এমনভাবে কথা বলতেন যে তার প্রতিটা শব্দ গোণা যেত। আর কথাগুলো ছিল সুস্পষ্ট এবং গোছালো। খুব বেশিও বলতেন না, আবার কমও না। খুব উচ্চস্বরে বা রাগতস্বরে কথা বলা পছন্দ করতেন না।

যখন কোন গল্প-গুজব বা আলোচনার মাঝখানে আজান শোনা যাবে, সাথে সাথে আলোচনা বন্ধ করে মনোযোগ সহকারে আযান শুনতে হবে এবং তার জবাব দিতে হবে। আজান হলো আত্মার খাবার যা কিনা বিশ্বাস ও আনুগত্যের দিকে আহবান করে। আমরা অনেক সময়ই গল্পে এতো মশগুল থাকি যে কখন যে আজান হয়ে যায় টেরই পাই না। আর বিদেশের মাটিতে মসজিদের সেই আজানের ধ্বনি শোনার তো তেমন সুযোগই হয় না। যদি পিসির সামনে বসে থাকা হয় আর কানে হেডফোন লাগানো থাকে সময়মতো তাহলেই কেবল শোনার ভাগ্য হয়।

পর্যাপ্ত স্বরে কথা বলাঃ

আগের প্যারাতেও এ নিয়ে কিছু কথা বলা হয়েছে। যে কোন মানুষ ঘরে-বাইরে গ্রুপ আড্ডায় বা একাকি যে কোন অবস্থাতেই থাকুক না কেন নিচুস্বরে, স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলা উচিত, আর তা যেন হয় শ্রুতিমধুর। উচ্চস্বরে কথা বলাটা বেশ অশোভনীয় এবং এতে করে শ্রোতাদের প্রতি এক ধরণের অশ্রদ্ধাও প্রকাশ পায়। এবং বন্ধু বলি, কলিগ বলি, সিনিয়র বা জুনিয়র কেউ, অথবা অপরিচিত কেউ, সবার ক্ষেত্রেই এটা মনে রাখতে হবে। ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন আবদুল্লাহ্‌ বিন আল জুবায়ের বলেছেন যখন ওমর(রাঃ ), রাসূল(সাঃ )-এর সাথে কোন কথা বলতেন তখন উনি এতোটাই নিচুস্বরে কথা বলতেন যে রাসূলের শুনতে কষ্ট হতো।

বন্তব্য শোনার অভ্যাস গড়ে তোলাঃ

যখন কেউ কোন বিষয়ে কথা বলা শুরু করে, তখন সে বিষয়ে যাকে বলা হচ্ছে তার জানা থাকলেও চুপ করে শুনে যাওয়া উচিত যেন সে এইমাত্রই কথাগুলো শুনছে। ইমাম মালিক, আল-লাইথ বিন সা’দ এবং আল-থাওরীর সংগী ইমাম আবদুল্লাহ্‌ বিন ওয়াহাব আল কুরেশী আল-মারসী বলেছেন, কখনো কখনো কেউ আমাকে কোন কথা বলতে এসেছে যা আমি তার বাবা-মায়ের বিয়ের আগে শুনেছি, তবুও আমি এমন মনোযোগের সেগুলো শুনেছি যেন এই প্রথম শুনলাম। আসলে কারো কথার মাঝে বাঁধা দেয়াটা একধরণের রূঢ়তা ও বাজে আচরণের প্রকাশ।
ভালভাবে কথা বলার পাশাপাশি ভালভাবে শোনাও চর্চার বিষয়। আর ভালভাবে শোনা মানে হলো আই কনটাক্ট রক্ষা করা, বক্তাকে তার বক্তব্য শেষ করতে দেয়া এবং নিজেকে বক্তার বক্তব্যে বাঁধা দেয়া থেকে বিরত রাখা।

আলোচনা এবং বিতর্কঃ

কেউ যদি কোন আলাপচারিতায় কোন আলোচনা বুঝতে না পারে সে যেন ধৈর্য সহকারে বক্তার বক্তব্য শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করে। তারপর যথাযথভাবে প্রাথমিক কিছু ভূমিকাসহ বিনয়ের সাথে প্রশ্ন উত্থাপন করবে। তবে বক্তব্যের মাঝে বাঁধা দেয়া ঠিক নয়। আবার স্থানটি যদি হয় ক্লাশরুম বা কোন মতবিনিময় সভা, সেখানে কেবল শুনে গেলেই চলবে না, একেকটা টপিক শেষে প্রশ্ন করা, আলোচনা করা, বিতর্ক করা বাঞ্ছনীয়। এতে করে জ্ঞানের দ্বার উন্মুক্ত হয়। শুধুই অনুসরণ করার চেয়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে কোন বিষয়ে গভীরভাবে জানা বা প্রাসঙ্গিক বিতর্ক উত্থাপন করার মাধ্যমেই প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব।

যদি কারো সহপাঠী বা সহকর্মী কোন কিছু না বুঝলে তার সিনিয়র কলিগ বা স্কলারকে কিছু জিজ্ঞ্যেস করে জানতে, তাহলে তারও সেটা মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত। হয়তো সে ব্যাপারটা আগে থেকেই কিছু জানে, কিন্তু তবুও বারবার শোনার ফলে কোন বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা আরো বাড়ে, বিষয়বস্তু সম্বন্ধে ধারণা আরো স্বচ্ছ হয়।

যখন বড় কেউ বা কোন স্কলার কোন বিষয় নিয়ে কথা বলেন, তখন সেতা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয়। ওইস সময়ে পাশেরজনের সাথে গল্পে মেতে যাওয়া ঠিক নয়।
কারো কোন বিষয়ে ভালোভাবে জানা না থাকলে তা নিয়ে ভুল কনফিডেন্স দেখানো ঠিক নয় বা অযথা তর্কে জড়ানো ঠিক নয়। কারো সাথে কোন বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দিলে কখনো বিপরীত মতের মানুষের সাথে রূঢ় আচরণ করা ঠিক নয়। কাউকে তার ভিন্নমত পোষণের জন্য অবজ্ঞা করা ঠিক নয়। কারো কোন কথায় যদি ভুল ধরা পড়ে সেটা বিনয়ের সাথে বুঝিয়ে বলা উচিত।কারো ভুল প্রমাণিত হলে তাকে তিরষ্কার করা ঠিক নয়। আমাদের সবারই আচার-আচরণে দয়ালু এবং কথাবার্তায় ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে।

আল্লাহ্‌র নামে কসম খাওয়াঃ

অনেকের মাঝে এ অভ্যাস আছে যে কিছু বলার সময়ে আল্লাহ্‌র নামে কসম কাটে। আবার অনেকে খুব সহজেই কথায় কথায় প্রতিজ্ঞা করে। এগুলো খুবই বাজে অভ্যাস। বলা যায় না, কারো হয়তো পদস্খলন হতে পারে, বা পূর্বের অবস্থান থেকে সরে যেতে পারে। তাহলে এটা ভীষণ রকমের গোনাহের কাজ হয়। রাসূল (সাঃ ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌তাআলা ও হাশর দিবসের ভয় রাখে, সে যেন হয় ভাল কথা বলে, না হয় চুপ থাকে। (বুখারি, মুসলিম)

প্রশ্নের জবাব দেয়াঃ

কেউ কোন প্রশ্ন করলে তাড়াহুড়ো করে বা রূঢ়ভাবে তার জবাব দেয়া উচিত নয়। ভাল হচ্ছে কাউকে কোন ব্যাপারে জিজ্ঞ্যেস করা না হলে সে বিষয়ে চুপ থাকা। এটাই উৎকৃষ্ট পন্থা। এতে করে তার বক্তব্য শোনার প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরী হয় এবং শ্রদ্ধা বাড়ে।
সাহাবী মুজাহিদ ইবনে জাবর বলেছেন, জ্ঞানী লোকমান(আঃ ) তার পুত্রকে উপদেশ দিয়েছেন যে যখন কাউকে কোন প্রশ্ন করা হয়, তখন তুমি আগ বাড়িয়ে তার কোন জবাব দিবে না যেন এটা কোন পুরষ্কার অর্জনের প্রতিযোগিতা। এতে করে যাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়, অন্যদিকে প্রশ্নকারীকেও বিব্রত করা হয়। এবং এতে করে তোমার বোকামি এবং খারাপ আচরণের প্রতিই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

মোটামুটি এই হলো কোন জনসমাগমে বা আড্ডাস্থলে বা সভাস্থলে কিভাবে ইসলামের শেখানো পন্থায় আচরণ করতে হবে বা কথা বলতে হবে। আমরা অনেকেই জেনে না জেনে উপরে উল্লেখিত এক বা একাধিক ভুলগুলো করে ফেলি। যেমন আমার নিজের ক্ষেত্রেই দেখেছি খুব ঘরোয়া পরিবেশে শোনার আদব-কায়দা সবসময়ে মেনে চলতে পারি না। কেউ যদি কোন পুরোনো বিষয় নিয়ে বার বার কথা বলতে শুরু করে, অনেক সময়েই আমি বলে ফেলি, আরে জানি তো! এক কথা শুনতে শুনতে কান পঁচে গেল, এটা তো সেই ১৯৫৩ সালের কথা………

আল্লাহ্‌তাআলা আমাদের সবাইকে আরো ধৈর্যশীল হতে সাহায্য করুক। আমীন।

কৃতজ্ঞতা:

১। Islamic manners: Shaykh Abdul Fattah Abu Guddah

২। Aspects of Islamic Etiquette

53
রাসূল(সাঃ) এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত [ ৬২০ খ্রিস্টাব্দ] ছিল ইসলামে শান্তি, সৌহার্দ্য, নিরাপত্তা, বিশ্বাস স্থাপনের এক অমূল্য নিদর্শন! যখন কুরাইশরা রাসূলের ইসলাম পালনে নানাবিধভাবে বাঁধাপ্রদান করছিল, নওমুসলিমদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছিল, তখন মহান আল্লাহতাআলার নির্দেশে কোনরকম আক্রমণাত্মক অবস্থানে না গিয়ে মক্কা থেকে সরে গিয়ে মদিনায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। অথচ তখন নওমুসলিমদের তালিকায় ছিলেন ওমর(রাঃ) [যিনি ৬১৬ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম কবুল করেন], হামযা (রাঃ) র মতো যোদ্ধা সাহাবী। এখানে উল্লেখ্য যে খোদ ইবলিশ শয়তান পর্যন্ত ওমর(রাঃ)কে ভয় পেতেন, উনি যে রাস্তায় হাঁটতেন, ইবলিশ সেই রাস্তার ধারে কাছে যেতেন না, আর উনি ছিলেন প্রকাশ্য মুসলিম। হামযা(রাঃ) পরিচিত হয়েছিলেন আল্লাহর সিংহ হিসেবে। শেষ পর্যন্ত ইসলামের জন্য জীবন দিয়ে তিনি হয়েছিলেন ইসলামের সকল শহীদের ‘নেতা’! অথচ এরকম আরো অনেক যোদ্ধা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহতাআলা তখনই যুদ্ধ করার অনুমতি দেননি।

আরো ভাল কিছু অপেক্ষা করছিল আমাদের নবীকরীম(সাঃ) এর জন্য। মদিনায় আসার পরপরই মিনায় ১২ জন মদিনাবাসী রাসূলের (সাঃ) হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিল, সেসময়ে তিনি তার বক্তব্যে সাতটি মূল বিষয়ের কথা বলেছেন, যা বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থে স্থান পেয়েছে,

১। সকল বিশ্বাস এবং আনুগত্য কেবল আল্লাহতাআলার জন্য
২। জীবনে কখনো চুরি করবে না
৩। ব্যভিচার করবে না
৪। হত্যা করবে না
৫। কাউকে অপবাদ দিও না
৬। গীবত করো না
৭। ভাল কাজের চর্চা করো, এবং মন্দ থেকে বিরত থাক।
[সূত্রঃ ইবনে হিশাম, সিরাতুন্নবী, ভলিউম ২, পৃষ্ঠা ২৮১]

এই সাতটি পয়েন্টের মধ্যে কেবল একটিই ধর্মীয় আকীদাবিষয়ক। আর বাকী ছয়টিই মানুষের নৈতিক আচরণকে পুনর্গঠন ও সংশোধন করার জন্যে বলা হয়েছে। এসবগুলো সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে, এবং এগুলো ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার জন্যই সমানভাবেই প্রযোজ্য। এরপর রাসূল (সাঃ) প্রথম প্রকাশ্যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন মদিনা যাবার পথে কুবার এক মসজিদে, হিজরতের পর প্রথম শুক্রবার ছিল সেদিন। রাসূল(সাঃ) সকল মুসলিমদের জন্য অবশ্যকরণীয় কিছু বিষয়ে বললেন,

১। আল্লাহর উপাসনা করা,
২। সত্যবাদী হওয়া
৩। সমাজের সকলকে ভালোবাসা
৪। সকল প্রতিজ্ঞা ও চুক্তি রক্ষা করা,
৫। হক ও বাতিলের পার্থক্য নিরূপণ করা,
৬। সদাচরণ করা
[সূত্রঃ ইবনে হিশাম, সিরাতুন্নবী, ভলিউম ৩, পৃষ্ঠা ৩০]

কৃতজ্ঞতাঃ শায়খুল ইসলাম ডঃ মুহম্মদ তাহির উল ক্বাদরী র বিশ্লেষণধর্মী লেখা ‘মদিনা সনদ, ৬৩ সাংবিধানিক আর্টিকেল’।

চলবে…

54
পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ থাকেন যাদের কর্ম পৃথিবীটাকে, সমাজটাকে অনেক বদলে দেয়। সেরকম একজন মানুষ ডঃ আখতার স্যার।  সেদিন কথা বলছিলাম উনার সাথে, গিয়েছিলাম নিজের ডিপার্টমেন্টের একটা প্রয়োজনে। পাশের ডিপার্টমেন্ট সিএসই-র প্রফেসর এবং বিভাগীয় প্রধান তিনি। নানান কথার মাঝেই জানতে পারলাম উনার জীবনে করা একটি উল্লেখযোগ্য কাজ যা যেকোন গবেষকের জন্য একটি অনুপ্রেরণার বিষয়। গল্পটা উনি বলছিলেন এভাবেই, প্রায় দশ বারো বছর আগে এক ছড়া বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে গিয়েই তার মনের ভিতরে দারূণ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বইটি ছিল দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা বাংলায় প্রথম ছড়ার বই। এর আগে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বাংলায় কোন সাহিত্যের বই ছিল না। তাছাড়া এই বইটি কম্পোজ করতে অনেক কষ্ট হয়েছিল, প্রায় এক মাস লেগেছিল ব্রেইল পদ্ধতিতে বইটি লিখতে। ব্রেইল পদ্ধতিতে কম্পিঊটারে এডিটিং এবং কম্পোজ করা ছিল অত্যন্ত দূরূহ একটি কাজ। এ ব্যাপারটি শুনেই আখতার স্যার অনেক বেশি আবেগে আপ্লুত হয়েছিলেন। এটা নিয়ে ভাবতে লাগলেন কিভাবে কি করা যায়। কিছুদিন পর এমআইএসটির কিছু ছাত্র আসলো উনার কাছে থিসিসের কাজ করতে। উনিও সে সুযোগটা আর হাতছাড়া করলেন না। উঠে পড়ে লেগে গেলেন কিভাবে ব্রেইল ভাষাকে সহজে বাংলায় পরিণত করা যায়। কাজটি মোটেও সহজসাধ্য কিছু ছিল না। উনি এবং ক্ষুদে গবেষক দল প্রথমে ব্রেইল ভাষাটি রপ্ত করলেন, সেটির ব্যকরণ শিখলেন। তারপর ডিজিটাল ইমেজ প্রসেসিং-এর বিশেষ শাখা প্যাটার্ন রিকগনিশনের মাধ্যমে তৈরী করতে লাগলেন ব্রেইল থেকে বাংলা অনুবাদ করার ডিজিটাল টুলস। এর মাঝে স্যার জার্মানে গিয়েছিলেন পোস্ট ডক্টরেটের জন্য। সেখানে গিয়েও তার কাজ থেমে থাকেনি। স্কাইপি, ই-মেইল ইত্যাদি নানা ইলেক্ট্রনিক্স যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় ছাত্রদেরকে তিনি তত্ত্বাবধান করে গেছেন। অবশেষে তার দল একটি পূর্নাংগ সফটওয়্যার তৈরী করতে সমর্থ হয় যেটা দিয়ে খুব সহজেই ব্রেইল থেকে বাংলা বা বাংলা থেকে ব্রেইল এ লেখা অনুবাদ করা যায়। এ কাজের অংশ হিসেবে প্রথমেই তারা ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবালের 'মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস' বইটি ব্রেইল ভাষায় অন্নুবাদ করে ফেলেন। যেটি পেয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষেরা অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, অনেক আগ্রহ নিয়ে তারা বইটি পড়েন। তাদের মনে এক ভীষণ ক্ষুধা ছিল সাহিত্য পড়ার, সেটা কিছুটা হলেও মিটেছে এই বইটি হাতে পেয়ে।
এর পর আর থেমে থাকেনি বিষয়টি, বেঙ্গেলনেসিস প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রতি মাসে যে 'জল পড়ে পাতা নড়ে' সাহিত্যপাতাটি বের হয়, তার ব্রেইল ভার্শনও বের হয় স্যারের করা এই সফটওয়্যারটি দিয়ে, স্যার তাদের বিনামূল্যেই দিয়েছেন এটি। তবে শর্ত দিয়েছেন প্রতিটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থায় যেন সফটওয়্যারটি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়া জাতীয় শিক্ষাবোর্ড নবম এবং দশম শ্রেণীর সব পাঠ্যবই এই সফটওয়্যার দিয়ে ব্রেইলে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সেগুলো ছাপানোর কাজও এগিয়ে চলছে। এছাড়া ডঃ আখতার স্যার এবং তার ছাত্রদের এবিষয়ের উপরে লেখা দুটো আন্তর্জাতিক জার্নালও প্রকাশ করেছেন। একটি আন্তর্জাতিক মানের বইয়ের চ্যাপ্টার তৈরী হয়েছে এ সফটওয়্যারটির এলগরিদম নিয়ে। এদিকে জাফর ইকবাল স্যারের তত্ত্বাবধানে আরেকদল ক্ষুদে গবেষক কাজে নেমেছেন কি করে সহজ উপায়ে ব্রেইল সাশ্রয়ী প্রিন্টার তৈরী করা যায়।
এটিএন বাংলাতে স্যারের একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে, এছাড়াও একটি সেমিনারে উনি এই কাজটি সবার সামনে তুলে ধরেছেন। আসলে এই ধরণের দেশীয় গবেষণাকর্ম আমাদের উৎসাহ জোগায় কিভাবে নিজেদের প্রযুক্তিজ্ঞান দেশের প্রয়োজনে লাগানো যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাব্বানী স্যার, বুয়েটের কায়কোবাদ স্যার, সাস্টের জাফর ইকবাল স্যার, ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আখতার স্যারের মতো মানুষেরা আমাদের মতো নবীশ গবেষকদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।

55
Self Esteem and You / Believe in Yourself!
« on: March 13, 2013, 03:14:34 PM »
Have a faith in your abilities! Without a humble but reasonable confidence in your own powers you cannot be successful or happy. But with sound self-confidence you can succeed. A sense of inferiority and inadequacy interferes with the attainment of your hopes, but self-confidence leads to self realization and successful achievement.

We build up the feeling of insecurity or security by how we think. If in our thoughts we constantly fix attention upon sinister expectations of dire events that might happen, the result will be constantly to feel insecure.

Lack of self-confidence apparently is one of the great problems besetting people today. In a university a survey was made of six hundred students in psychology courses. The students were asked to state their most difficult personal problem. Seventy five percent listed lack of confidence. It can safely be assumed that the same large proportion is true of the population generally. Everywhere you encounter people who are inwardly afraid, who shrink from life, who suffer from a deep sense of inadequacy and insecurity, who doubt their own powers. Deep within themselves they mistrust their ability to meet responsibilities or to grasp opportunities. Always they are beset by the vague and sinister fear that something is not going to be quite right. They do not believe that they have it in them to be what they they want to be, and so they try to make themselves content with something less than that of which they are capable. Thousands upon thousands go crawling through life on their hands and knees, defeated and afraid. And in most cases such frustration of power is unnecessary.

The blows of life, the accumulation of difficulties, the multiplication of problems tend to sap energy and leave you spent and discouraged. In such a condition the true status of your power is often obscured, and a person yields to a discouragement that is not justified by the facts. It is vitally essential to re-appraise your personality assets. When done in an attitude of reasonableness, this evaluation will convince you that you are less defeated than you think you are.

For example, a man fifty-two years of age consulted me. He was in great despondency. He revealed utter despair. He said he ‘was all through’. He informed me that everything he had built up over his lifetime had been swept away.

“Everything?”  I asked.

“Everything,” he repeated. He was through, he reiterated. “I have nothing left at all. Everything is gone. There  is no hope, and I am too old to start all over again. I have lost all faith.”

Naturally I felt sympathetic towards him, but it was evident that his chief trouble was the fact that dark shadows of hopelessness had entered his mind and discoloured his outlook, distorting it. Behind this twisted thinking his true powers had retreated, leaving him without force.

“So,” I said, “suppose we take a piece of paper and write down the values you have left.”

“There’s no use,” he sighed. “I haven’t a single thing left. I thought I told you that.”

I said: “Let’s just see, anyway.” Then asked: “Is your wife still with you?”

“Why, yes, of course, and she is wonderful. We have been married for thirty years. She would never leave me no matter how bad things are.”

“All right, let us put that down – your wife is still with you and she will never leave you no matter what happens. How about your children? Got any children?”

“Yes,” he replied. “I have three, and they are certainly wonderful. I have been touched by the way they have come to me and said: ‘Dad, we love you, and we’ll stand by you.’ ”

“Well, then,” I said, “that is number two – three children who love you and who will stand by you. Got any friends?” I asked.

“Yes,” he said, “I really have some fine friends. I must admit they have been pretty decent. They have come around and said they would like to help me, but what can they do? They can’t do anything.”

“That is number three- you have some friends who would like to help you and who hold you in esteem. How about your integrity? Have you done anything wrong?”

“My integrity is all right,” he answered. “I have always tried to do the right thing and my conscience is clear.”

“All right,” I said, “we wil put that down as number four-integrity. How about your health?”

“My health is all right,” he answered. “I have had very few sick days, and I guess I am in pretty good shape physically.”

“So let’s put down as number five-good physical health. How about the United States? Do you think it’s still doing business and is the land of opportunity?”

“Yes,” he said, “It is the only country in the world I would want to live in.”

“That is number six – you live in the United States, land of opportunity, and you are glad to be here.” Then I asked: “How about your religious faith? Do you believe in God and that God will help you?”

“Yes,” he said. “I do not think I could have got through this at all if I hadn’t had some help from God.”

“Now,” I said, “let’s list the assets we have figured out:

“1. A wonderful wife – married for thirty years.

2. Three devoted children who will stand by you.

3. Friends who will help you and who hold you in esteem.

4. Integrity – nothing to be ashamed of

5. Good physical health.

6. Live in the United States, the greatest country in the world.

7. Have religious faith.”

I shoved it across the table at him. “Take a look at that. I guess you have quite a total of assets. I thought you told me everything had been swept away.”

He grinned ashamedly. “I guess I didn’t think of those things. I never thought of it that way. Perhaps things aren’t so bad at that, ” he said pensively. “May be I can start all over again if I can just get some confidence, if I can get the feel of some power within me. ”

Well, he got it, and he did start all over again. But he did so only when he changed his viewpoint, his mental attitude. Faith swept away his doubts, and more than enough power to overcome all his difficulties emerged from within him.

From: The Power of Positive Thinking — Norman Vincent Peale

56
Telecom Forum / Future Wireless Vision – Convergence, WISDOM
« on: February 21, 2013, 08:07:08 PM »

Gugliemo Marconi said in 1932, “It is dangerous to put limits on wireless.”

 Today’s concern is, “It is dangerous to put limits on wireless data rates”.
400 Mb/s (1999) ?         1 Gb/s (2001) ?       1 Tb/s? (2005) ?

Family Tree of Wireless Communication System

Fig. 1

Now let’s see what is GIMCV ???

It means Global Information Multimedia Communication Village. It stands on convergence of all kinds of networks.

Convergence means coming together of voice, facsimile, data, video, and image applications, systems, and networks, both wireline and wireless and several others.


Convergence: Fundamental Drivers

Moore’s Law:
-Doubling of processing power every 18 months at same cost.
Metcalf’s Law:
-Value of a network increases geometrically as the network endpoints increase.
Reed’s Law:
-The utility of large networks, particularly social networks, can scale exponentially with the size of the network.
Market Law:
-As competition increases, industry players with appropriate scale will innovate and drive consumer costs down.
Gilder’s Law:
- predicts a six-fold increase of the available Bit Rate every 1.5 years. It will take approx six years to achieve the 1 Tbps (Megacommunications).

Fig 2

5G & WISDOM

It is assumed that the emerging 4G technologies (WiMAX and LTE) and the WISDOM concept will lead the wireless communication towards the realization of true 5G systems.

WISDOM means Wireless Innovative System for Dynamic Operating Megacommunications.


WISDOM Impact

• WISDOM is expected to advance: the state-of-the-art in the architecture of next generation of wireless networks and cognitive technologies
• WISDOM will constitute the building block of the Future Internet.
• WISDOM system will design and develop technologies, systems and network architectures offering up to 1Tb/s communications (1Terabit/s = 1012 bits/s), with a coverage extending from a city region, to a country, the continents and the world.

WISDOM: Applications for GIMCV Networks

 Fig 3

1Tb/s Wireless Aggregation
 
Fig 4
 

WISDOM Concept mapped with Thematic Areas
 
Fig 5

The objective of the WISDOM system is to create the enabling wireless infrastructure for the human-centric communications in 2020 and beyond. Specifically, WISDOM aims to design and develop novel technologies, systems and networks that integrate into a flexible and dynamically-operating architecture that offers:

•   up to 1Terabit/s wireless link rate in burst-mode and at short distances or as system aggregated traffic; and,
•   at least 250 Mbps to the end user at full mobility;
•   with a coverage extending from the personal space (the home, the car, or the neighborhood), to a city-wide region in a metro environment.

How to be Achieved?

To attain this level of performance, WISDOM will synergistically exploit:
•   higher spectrum efficiencies in smaller cell sizes with optimized dynamic spectrum management across different technologies, and the use of heterogeneous access networks in aggregate;
•   cognitive radio (CR) & cognitive networking (CN) concepts using both newly freed spectrum and higher carrier frequencies;
•   Improved wireless-wireline interfaces with lower overheads to the core & metro network of the future as well as the indoors wired infrastructure.

WISDOM brings a New Paradigm

Fig 6




57
৪। একসাথে তিন তালাক দেয়াঃ

Dawud :: Book 12 : Hadith 2194

Narrated Abdullah ibn Abbas:
Tawus said: AbusSahba’ said to Ibn Abbas: Do you know that a divorce by three pronouncements was made a single one during the time of the Prophet (peace_be_upon_him), and of AbuBakr and in the early days of the caliphate of Umar? He replied: Yes.

Muslim :: Book 9 : Hadith 3493

Abu al-Sahba’ said to Ibn ‘Abbas: Enlighten us with your information whether the three divorces (pronounced at one and the same time) were not treated as one during the lifetime of Allah’s Messenger (may peace be upon him) and Abu Bakr. He said: It was in fact so, but when during the caliphate of ‘Umar (Allah be pleased with him) people began to pronounce divorce frequently, he allowed them to do so (to treat pronouncements of three divorces in a single breath as one).
কাছাকাছি রকমের আরো কিছু হাদীস মুসলিম ও আবু দাউদ শরীফে আছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে রাসূল(সাঃ), আবু বকর(রাঃ) এবং উমর(রাঃ)-র শাসনামলের প্রথম দিকে একসাথে তিন তালাক উচ্চারণ করলেও এক তালাক ধরা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে ঊমর(রাঃ)-র সময়ে লোকজন যখন প্রায়শই তালাক দিতে চাইতো, তাড়াহুড়ো করতে চাইতো এবং প্রথম স্ত্রীকে পুরোপুরি ছেড়ে দেয়ার পক্ষেই তাদের প্রবণতা দেখতে পেয়ে একসাথে তিনবার উচ্চারিত তালাক থেকে একবারে তিন তালাক হয়ে যাওয়ার প্রচলন শুরু করা হয়। পরবর্তীতে সেটা এতোই জনপ্রিয়তা পায় যে বিভিন্ন ফিকহবিদের হাত ধরে, বিভিন্ন মাজহাবের মাঝ দিয়ে এটাই আজ আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত মত। রাসূল(সাঃ) এর সময়েও কিছু একসাথে তিন তালাকের ঘটনা ঘটেছে (উপরে বর্ণিত ফাতিমা বিনতে কায়েসের ঘটনাটিও সেরকম একটি ঘটনা), যেটা জানতে পেরে রাসূল(সাঃ) খুব রেগে গিয়েছিলেন এবং ভীষণভাবে অপছন্দ করেছিলেন, বলেছিলেন তোমরা আল্লাহ্‌র দেয়া বিধানকে খেলাচ্ছলে ব্যবহার করছো? তবে সে তালাকগুলো কার্যকর হয়েছিল। ৫ নং রেফারেন্স লিঙ্কে এরকম দু একটি হাদীসের কথা বলা আছে।
উমর(রাঃ)-র সময়ে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়াও নিষেধ করা হয়েছিল, সেটাও আরেকটি বহুল প্রচলিত মত হিসেবে সারা বিশ্বসহ এ বাংলাদেশেও পরিচিত এবং চর্চিত। আমাদের অনেক আলেমদেরই পছন্দ নারীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকতে। যদি আজকাল অনেক দেশেই নারীরা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ছে, বাংলাদেশে খুব অল্পভাবে চালু আছে নারীদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার ব্যাপারটি। তবে ধীরে ধীরে এ চর্চাটি বাড়ছে, কারণ আমরা রাসূল(সাঃ)-এর সুন্নাহ্‌কেই বেশি অনুসরণ করতে চাই।
তাই এক সাথে তিন তালাক উচ্চারণে নিরুৎসাহিত করা (যা তাক্‌ওয়ার অন্তর্ভুক্ত নয়), কঠোরভাবে নিষেধ করা এবং সেটাকে এক তালাক হিসেবে গণ্য করাটাকেই অনেক বেশি সুন্নাহ কাছাকাছি যাওয়া বলে মনে হয়। আমাদের বিজ্ঞ আলেমগণ নিশ্চয়ই দেখতে পান যে এক সাথে তিন তালাক হলে পরে একজন নারী কি পরিমাণ ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। এবং এর থেকে হীন সুযোগ নিয়ে আমাদের দেশে গ্রামে গঞ্জে মাঝে মাঝেই চুক্তিভিত্তিক মারাত্মক বর্বর আর অশ্লীল  হিল্লা বিয়ে সংঘটিত হচ্ছে। এখানে আরেকটি কথা বলে রাখা ভাল ইসলামী আদালত ছাড়া যে কেউ যখন তখন কোন ফতোয়া কার্যকর করতে পারে না, তবুও ফতোয়ার নানা রকমের অপব্যবহার এবং বেআইনীভাবে অপপ্রয়োগ হয়ে আসছিল আমাদের দেশে। আশার কথা এই যে আমাদের বিজ্ঞ আদালত যত্রতত্র ফতোয়া দেয়া নিষিদ্ধ করেছেন।
নারীর তালাক প্রদানের ক্ষমতাঃ

ইসলামী শরীয়তে সাধারণত স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ক্ষমতা অর্পণ করতে পারেন। আমরা দেখি যে রাসূল(সাঃ) আল্লাহ্‌তাআলার  নির্দেশে তাঁর স্ত্রীদের তাঁকে তালাক দেয়ার অপশন দিয়েছিলেন এবং প্রথম অপশন দিয়েছিলেন আয়েশা(রাঃ)কে।

সূরা আহযাবঃ

২৮। হে নবী, আপনার পত্নীগণকে বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার বিলাসিতা কামনা কর, তবে আস, আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদের বিদায় নেই।

২৯। পক্ষান্তরে যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসূল ও পরকাল কামনা কর, তবে তোমাদের সৎকর্মপরায়ণদের জন্য আল্লাহ মহা পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন।

Bukhari :: Book 7 :: Volume 63 :: Hadith 189

Narrated Musruq:
I asked ‘Aisha about the option: She said, “The Prophet gave us the option. Do you think that option was considered as a divorce?” I said, “It matters little to me if I give my wife the option once or a hundred times after she has chosen me.”

এখানে আমি আরেকটু বলে রাখি, আমাদের দেশে বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন আইনেও নারীরা স্বামী কর্তৃক তালাক প্রদানের ক্ষমতা পান যদি সে অপশনের কথা নিকাহনামায় উল্লেখ থাকে। যেসব নারীরা ভবিষ্যতে বিয়ে করবেন তারা অবশ্যই তাদের বিয়েতে নিকাহনামা সাইন করার আগে ১৮ নম্বর অপশনটি চেক করে নিবেন যে আপনাকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে কিনা। আমাদের দেশে অনেক শিক্ষিত নারীরাও এ ব্যাপারে সচেতন নন। এ সুবিধা না পাওয়ার ফলে অনেক নারীই পরবর্তিতে ভোগান্তির স্বীকার হন বলে সরকারী কাজিদের বাই ডিফল্ট ঐ অপশন দিয়ে দিতে বলা হয়। তবুও নিজেদের চেক করে নেয়া ভাল।

জুডিশিয়াল ডিভোর্সঃ

আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী নানা কারণে স্ত্রীরা আদালতে গিয়ে ডিভোর্স চাইতে পারেন। যেমন,

১। দীর্ধদিন ধরে স্বামীর অনুপস্থিতি (চার বছর),
২। দুই বছর পর্যন্ত টানা ভরণপোষণ না দেয়া,
৩। স্বামী বহুবিবাহ সংক্রান্ত চুক্তি ভঙ্গ করলে,
৪। স্বামীর যৌন অক্ষমতা,
৫। স্বামীর সাত বছরের জেল হলে,
৬। স্বামী কর্তৃক নির্যাতন ইত্যাদি।

এছাড়া স্বামীর কন্সেন্ট ব্যতীত জুডিশিয়াল খুলা তালাকের অপশনও আছে। তবে সেক্ষেত্রে স্বামী আর্থিক দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাবেন।
 
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ

১। G-45, G-46, Islamic Teaching Course, vol 3 (Social System of Islam)
Jamal A. Badawi, Ph.D.

http://www.witness-pioneer.org/vil/Books/JB/IslamicTeachingCourse-3.html
 
২। The Status Of Women In Islam
by Dr.Yusuf Al Qaradawy

http://www.witness-pioneer.org/vil/Books/Q_WI/divorce.htm
 

৩। সংক্ষেপে এক নজরে তালাকের ব্যাপারটা পুরোটা বুঝতে

http://www.islamonline.net/servlet/Satellite?pagename=IslamOnline-English-Ask_Scholar/FatwaE/FatwaE&cid=1119503543322

 
৪। বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মালিকী মুয়াত্তা, আবু দাউদ,

http://www.quranexplorer.com/Hadith/English/Index.html

৫। http://www.banglakitab.com/BukhariShareef/BukhariShareef-ImamBukhariRA-Vol-6-IntroAndPage-218-273.pdf

৬। মুসলিম পারিবারিক আইন

http://www.law.emory.edu/ifl/legal/bangladesh.htm
আপডেটঃ

মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান নারীর তালাকের আইন ও অধিকার নিয়ে খুঁটিনাটি বিস্তারিত তথ্যসহ একটা চমৎকার সাইট পেলাম।

58
আরো তিনটি সূরাতে তালাক সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে এবং এবং নারী-পুরুষের পারস্পরিক আচরণ সংক্রান্ত আয়াত এসেছে,

সূরা আত্‌-ত্বালাক্কঃ

১। হে নবী, তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো। তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিস্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয় যদি না তারা কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমালংঘন করে, সে নিজেরই অনিষ্ট করে। সে জানে না, হয়তো আল্লাহ এই তালাকের পর কোন নতুন উপায় করে দেবেন।

২। অতঃপর তারা যখন তাদের ইদ্দতকালে পৌঁছে, তখন তাদেরকে যথোপযুক্ত পন্থায় রেখে দেবে অথবা যথোপযুক্ত পন্থায় ছেড়ে দেবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন নির্ভরযোগ্য লোককে সাক্ষী রাখবে। তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দিবে। এতদ্দ্বারা যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।

৩।এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।

৪। তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে। গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তানপ্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।

৫। এটা আল্লাহর নির্দেশ, যা তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পাপ মোচন করেন এবং তাকে মহাপুরস্কার দেন।

৬। তোমরা তোমাদের সামর্থ  অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর, তাদেরকেও বসবাসের জন্যে সেরূপ গৃহ দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না। যদি তারা গর্ভবতী হয়, তবে সন্তানপ্রসব পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার বহন করবে। যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্যদান করে, তবে তাদেরকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেবে এবং এ সম্পর্কে পরস্পর সংযতভাবে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি পরস্পর জেদ কর, তবে অন্য নারী স্তন্যদান করবে।

৭। বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিযিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশী ব্যয় করার আদেশ কাউকে করেন না। আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন।

মাওলানা ইউসূফ আলীর তাফসীরঃ
http://www.ourholyquran.com/index.php?option=com_content&view=article&id=125:65-surah-at-talaq-revealed-in-madina-ayah-number-12&catid=38:yusuf-ali-bangla-pdf&Itemid=257

১। প্রথম আয়াতটিতে তালাকের সময় ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন হাদীসে বারবার বলা হয়েছে যে নারী হায়েজে থাকা অবস্থায় যেন তালাক দেয়া না হয়। কোন কোন সাহাবী ঐরূপ অবস্থায় যখন তাদের স্ত্রীদের তালাক দিয়েছেন রাসূল(সাঃ) খুব অপছন্দ করেছেন ব্যাপারটি এবং এ ব্যাপারে তাদের নিরুৎসাহিত করেছিলেন।

Bukhari :: Book 7 :: Volume 63 :: Hadith 178

Narrated ‘Abdullah bin ‘Umar:
that he had divorced his wife while she was menstruating during the lifetime of Allah’s Apostle . ‘Umar bin Al-Khattab asked Allah’s Apostle about that. Allah’s Apostle said, “Order him (your son) to take her back and keep her till she is clean and then to wait till she gets her next period and becomes clean again, whereupon, if he wishes to keep her, he can do so, and if he wishes to divorce her he can divorce her before having sexual intercourse with her; and that is the prescribed period which Allah has fixed for the women meant to be divorced.”

২। এরপর ইদ্দতকালীন সময়ে স্ত্রীর স্বামীর গৃহে অবস্থান ও খোরপোষ প্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে। এটা সূরা বাকারাতেও বলা আছে যা আমি আগের পর্বে দিয়েছি। তবে স্ত্রী যদি ইদ্দতকালীন সময়ে স্বামীর গৃহে থাকতে না চায় তাহলে খোরপোষ থেকে বঞ্চিত হতে পারে। বিভিন্ন হাদীসে ফাতিমা বিনতে কায়েসের(আঃ) স্বামী কর্তৃক পূর্ণাঙ্গ তালাকপ্রাপ্তির ঘটনায় রাসূল(সাঃ) কর্তৃক ভরণপোষণ না দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা বলা আছে।

Muslim :: Book 9 : Hadith 3524

Abu Ishaq reported: I was with al-Aswad b. Yazid sitting in the great mosque, and there was with us al-Sha’bi, and he narrated the narration of Fatima bint Qais (Allah be pleased with her) that Allah’s Messenger (may peace be upon him) did not make any provision for lodging and maintenance allowance for her. Al-Aswad caught hold of some pebbles in his fist and he threw them towards him saying: Woe be to thee, you narrate like it, whereas Umar said: We cannot abandon the Book of Allah and the Sunnah of our Apostle (may peace be upon him) for the words of a woman. We do not know whether she remembers that or she forgets. For her, there is a provision of lodging and maintenance allowance. Allah, the Exalted and Majestic, said:” Turn them not from their houses nor should they themselves go forth unless they commit an open indecency”

৩। তালাকের ক্ষেত্রে দুজন নির্ভরযোগ্য সাক্ষী রাখার কথা বলা হচ্ছে।

৪। এ সূরাতে নারীর বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন রকমের ইদ্দতকালের কথা বলা আছে। যেমনঃ
    স্বাভাবিক স্ত্রীদের বেলায় তিনমাস, গর্ভবতীদের বেলায় সন্তানপ্রসব পর্যন্ত এবং দুগ্ধপোষ্য শিশু থাকলে সন্তানকে স্তন্যদান পর্যন্ত। তবে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী যদি সন্তানকে দুধপান করাতে না চায়, সেক্ষেত্রে ধাত্রী কর্তৃক দুধপান করানো যেতে পারে।

৫। ভরণপোষণের বেলায়ও সেই আগের কথাগুলোই এখানে বলা আছে। এখানে আরেকটু যেটা বলা আছে যে স্বামীর সামর্থ অনুযায়ীই ভরণপোষণ দিতে হবে।

এখন আমরা সূরা নিসাতে দেখি আল্লাহ্‌তাআলা পুরুষদেরকে তাদের স্ত্রীর প্রতি কিরূপ আচরণ করতে বলেছেন।

সূরা নিসাঃ

১৯। হে ঈমাণদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহন করা তোমাদের জন্যে হালাল নয় এবং তাদেরকে আটক রেখো না যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ তার কিয়দংশ নিয়ে নাও; কিন্তু তারা যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতা করে! নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ, অনেক কল্যাণ রেখেছেন।

২০। যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী পরিবর্তন করতে ইচ্ছা কর এবং তাদের একজনকে প্রচুর ধন-সম্পদ প্রদান করে থাক, তবে তা থেকে কিছুই ফেরত গ্রহণ করো না। তোমরা কি তা অন্যায়ভাবে ও প্রকাশ্য গোনাহর মাধ্যমে গ্রহণ করবে?

২১। তোমরা কিরূপে তা গ্রহণ করতে পার, অথচ তোমাদের একজন অন্য জনের কাছে গমন এবং নারীরা তোমাদের কাছে থেকে সুদৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে।

তাফসীরঃ সূরা নিসা, পৃষ্ঠা ৮-৯ঃ
http://www.ourholyquran.com/index.php?option=com_content&view=article&id=61:4-surah-an-nisaa-revealed-in-madina-ayah-number-176&catid=38:yusuf-ali-bangla-pdf&Itemid=257

উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে আমরা দেখতে পাই যে, জোর করে নারীদের আটকে রাখা বা সম্পত্তি মনে করা একেবারেই অনুচিত। আর স্ত্রীকে তালাক দেয়ার সময়ে তাকে আগে যেসব উপহার বা ধন-সম্পদ দেয়া হয়েছে, সেগুলো ফেরত না নেবার জন্যই বলা হয়েছে।
 

আবার কোন নারীকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দেয়া হলে তার কোন ইদ্দত পালনের প্রয়োজন নেই। এ সংক্রান্ত আয়াত,

সূরা আহযাবঃ

৪৯। মুমিনগণ! তোমরা যখন মুমিন নারীদেরকে বিবাহ কর, অতঃপর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও, তখন তাদেরকে ইদ্দত পালনে বাধ্য করার অধিকার তোমাদের নাই। অতঃপর তোমরা তাদেরকে কিছু দেবে এবং উত্তম পন্থায় বিদায় দেবে।

এখন আমি তালাক সংক্রান্ত আরো কিছু প্রাসঙ্গিক হাদীস এখানে দিচ্ছি,

১। একই দম্পতির চতুর্থ বিয়ের ব্যাপারে শর্তঃ

তৃতীয় তালাকের পর যখন একজন নারী দ্বিতীয় স্বামী কর্তৃক ডিভোর্সড হলেও দ্বিতীয় স্বামীর সাথে প্রাক্তন স্বামীর মতো একইরূপ সম্পর্ক না হয়ে থাকলে তিনি তার পূর্বতন স্বামীকে বিয়ে করতে পারবেন না।

Bukhari :: Book 7 :: Volume 63 :: Hadith 187

Narrated ‘Aisha:
A man divorced his wife thrice (by expressing his decision to divorce her thrice), then she married another man who also divorced her. The Prophet was asked if she could legally marry the first husband (or not). The Prophet replied, “No, she cannot marry the first husband unless the second husband consummates his marriage with her, just as the first husband had done.”

Dawud :: Book 12 : Hadith 2302

Narrated Aisha, Ummul Mu’minin:
The Apostle of Allah (peace_be_upon_him) was asked about a man who divorced his wife three times, and she married another who entered upon her, but divorced her before having intercourse with her, whether she was lawful for the former husband. She said: The Prophet (peace_be_upon_him) replied: She is not lawful for the first (husband) until she tastes the honey of the other husband and he tastes her honey.

২। মনে মনে তালাকের চিন্তা করলো কিন্তু কোন একশন না নিলে তালাক কার্যকর হয় নাঃ

Bukhari :: Book 7 :: Volume 63 :: Hadith 194

Narrated Abu Huraira:
The Prophet said, “Allah has forgiven my followers the evil thoughts that occur to their minds, as long as such thoughts are not put into action or uttered.” And Qatada said, “If someone divorces his wife just in his mind, such an unuttered divorce has no effect.

৩। খুলা তালাক সংক্রান্ত হাদীসঃ

Bukhari :: Book 7 :: Volume 63 :: Hadith 197

Narrated Ibn ‘Abbas:
The wife of Thabit bin Qais came to the Prophet and said, “O Allah’s Apostle! I do not blame Thabit for defects in his character or his religion, but I, being a Muslim, dislike to behave in un-Islamic manner (if I remain with him).” On that Allah’s Apostle said (to her), “Will you give back the garden which your husband has given you (as Mahr)?” She said, “Yes.” Then the Prophet said to Thabit, “O Thabit! Accept your garden, and divorce her once.”

 

চলবে…

59
Islam / Talak & Hille Merriage
« on: January 21, 2013, 12:52:08 AM »
আমাদের দেশে তিন তালাক এবং হিল্লা বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। বিভিন্ন সময়ে গ্রামে-গঞ্জে একসাথে তিন তালাক, দুই তিন দিনের হিল্লা বিয়ে বা ডিভোর্সী নারীকে আবার বিয়ে করতে না দেয়া সংক্রান্ত নানা ঘটনার কথা আমরা পত্রিকার মারফত জানতে পাই। আমরা অনেকেই সেগুলোকে ইসলামের প্রকৃত আইন বলে মনে করি। তাই আমি এ পোস্টে চেষ্টা করেছি কোরআনে সত্যিকার  অর্থে এই তিন তালাক বা হিল্লা বিয়ে নিয়ে কি বলা আছে সেটা তুলে ধরার।

সূরা বাকারাঃ

২২৫। তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে ধরবেন না, কিন্তু সেসব কসমের ব্যাপারে ধরবেন, তোমাদের মন যার প্রতিজ্ঞা করেছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী ধৈর্য্যশীল।

২২৬। যারা নিজেদের স্ত্রীদের নিকট গমন করবেনা বলে কসম খেয়ে বসে তাদের জন্য চার মাসের অবকাশ রয়েছে অতঃপর যদি পারস্পরিক মিল-মিশ করে নেয়, তবে আল্লাহ ক্ষমাকারী দয়ালু।

২২৭। আর যদি বর্জন করার সংকল্প করে নেয়, তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী ও জ্ঞানী।

২২৮। আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহর প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষণ করে। আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। আর নারীরদের ওপর পুরুষদের প্রাধান্য রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।

২২৯। তালাকে-‘রাজঈ’ হ’ল দুবার পর্যন্ত তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সহৃদয়তার সঙ্গে বর্জন করবে। আর নিজের দেয়া সম্পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য জায়েয নয় তাদের কাছ থেকে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম।

২৩০। তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।

২৩১। আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, অতঃপর তারা নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত করে নেয়, তখন তোমরা নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে রেখে দাও অথবা সহানুভুতির সাথে তাদেরকে মুক্ত করে দাও। আর তোমরা তাদেরকে জ্বালাতন ও বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্যে আটকে রেখো না। আর যারা এমন করবে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদেরই ক্ষতি করবে। আর আল্লাহর নির্দেশকে হাস্যকর বিষয়ে পরিণত করো না। আল্লাহর সে অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদের উপর রয়েছে এবং তাও স্মরণ কর, যে কিতাব ও জ্ঞানের কথা তোমাদের উপর নাযিল করা হয়েছে যার দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দান করা হয়। আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ সর্ববিষয়েই জ্ঞানময়।

২৩২। আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও এবং তারপর তারাও নির্ধারিত ইদ্দত পূর্ন করতে থাকে, তখন তাদেরকে পূর্ব স্বামীদের সাথে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নিয়মানুযায়ী বিয়ে করতে বাধাদান করো না। এ উপদেশ তাকেই দেয়া হচ্ছে, যে আল্লাহ ও কেয়ামত দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে একান্ত পরিশুদ্ধতা ও অনেক পবিত্রতা। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।

২৩৩। আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ন দু’বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়াবার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। আর সন্তানের অধিকারী অর্থাৎ, পিতার উপর হলো সে সমস্ত নারীর খোর-পোষের দায়িত্ব প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী। কাউকে তার সামর্থাতিরিক্ত চাপের সম্মুখীন করা হয় না। আর মাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। এবং যার সন্তান তাকেও তার সন্তানের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন করা যাবে না। আর ওয়ারিসদের উপরও দায়িত্ব এই। তারপর যদি পিতা-মাতা ইচ্ছা করে, তাহলে দু’বছরের ভিতরেই নিজেদের পারস্পরিক পরামর্শক্রমে দুধ ছাড়িয়ে দিতে পারে, তাতে তাদের কোন পাপ নেই, আর যদি তোমরা কোন ধাত্রীর দ্বারা নিজের সন্তানদেরকে দুধ খাওয়াতে চাও, তাহলে যদি তোমরা সাব্যস্তকৃত প্রচলিত বিনিময় দিয়ে দাও তাতেও কোন পাপ নেই। আর আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ অত্যন্ত ভাল করেই দেখেন।

 

মাওলানা ইউসূফ আলীর তাফসীর, সূরা বাকারা, পৃষ্ঠা ৮৩-৮৬

http://www.ourholyquran.com/index.php?option=com_content&view=article&id=59:2-surah-al-baqara-revealed-in-madina-ayah-number-286&catid=38:yusuf-ali-bangla-pdf&Itemid=257

 

উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে যে তথ্যগুলো জানা যায় বা আলেমরা বুঝে নিয়েছেন, সেগুলো হলো,

১। রাগের মাথায় বা ঝোঁকের বশে কোন কিছু করলে সেটা বিবেচ্য হবে না, এটা তালাকের বেলায়ও প্রযোজ্য। এ সংক্রান্ত রাসূল(সাঃ) এর একটি হাদীসও আছে।

২। নারী-পুরুষ দুজনেরই সমান অধিকার আছে তালাক দেয়ার ব্যাপারে, তবে পুরুষের অগ্রাধিকার আছে। এটা এসেছে মূলত পুরুষের আর্থিক দায়িত্ব থেকে। যেহেতু স্বামী তালাক দিলে ইদ্দত কাল পর্যন্ত স্ত্রীর ভরণপোষণ দেয়া, মোহরানা দেয়া, সন্তানের খরচ বহন করা যেহেতু পুরুষের দায়িত্ব, অথচ এদিকে তালাকের মাধ্যমে সে তার স্ত্রী হারাচ্ছে এজন্য।

৩। আবার স্ত্রী নিজেও কিছু বিনিময় দিয়ে তালাক নিতে পারবে, যেটাকে “খুলা তালাক” বলা হয়। এটা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে স্ত্রী কর্তৃক দেয়া তালাক।

আরেক রকমের পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে তালাক আছে, যেটাকে বলে “মুবাররা””। সেখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনের পারস্পরিক সম্মতিতে তালাক হয় এবং নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে যার যার আর্থিক ও অন্যান্য শর্ত মুক্ত করা হয়।

৪। স্বামী কর্তৃক যখন স্ত্রীকে তালাক দেয়া হয় (সচেতন অবস্থায় মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে) তখন সেই স্ত্রীকে তিনমাসের ইদ্দতকাল পালন করতে হয়, তার প্রেগনেন্সী টেস্টের জন্য। এসময়ে তাকে স্বামীর বাড়িতেই থাকবার জন্য বলা হয়েছে, এবং স্বামীকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে স্ত্রীর সাথে ভাল ব্যবহার করার জন্য। এসময়ে স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্বও স্বামীর। এই ইদ্দত পালন করার সময়ে যদি তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে সংসারে ফিরে আসে তাহলে আর বিবাহবিচ্ছেদ হয় না। এমনকি এসময়ের মাঝে স্বামী বা স্ত্রী কেউ যদি মারাও যায় তারা তার সঙ্গীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে।

কিন্তু ইদ্দতকাল পার হয়ে যাওয়ার পরেও যদি সমঝোতা না হয় তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় – এটা হলো প্রথম তালাক।

এরপর স্বামী বা স্ত্রী অন্য কাউকে বা আগের সঙ্গীকে আবার বিয়ে করতে পারে, এক্ষেত্রে নতুন করে দেনমোহর ধার্য করা হয় এবং এই তালাকপ্রাপ্তা নারীদের তাদের পূর্ব স্বামীর কাছে ফিরতে যাতে কোনরূপ বাধা দেয়া না হয় সেটা স্পষ্টভাবে কোরআনে আল্লাহ্‌তাআলা বলে দিয়েছেন।

৫। পুনরায় বিয়ের পর আবার পরে কোন এক সময়ে যদি বনিবনা না হয় তাহলে আগের নিয়ম মতো দ্বিতীয়বার তালাক হতে পারবে। এরপর স্বামী-স্ত্রী যদি আবারো মনে করে যে তারা একসাথে সংসার করবে তাহলে দ্বিতীয়বারও তারা পুনরায় নতুন করে বিয়ে করতে পারবে — এটা হলো দ্বিতীয় তালাক এবং তদপরবর্তী বিয়ে।

৬। এরপর যদি আবারো তাদের মাঝে মনোমালিন্য দেখা দেয়, তাহলে তৃতীয়বারের মতো তালাক দেয়া যাবে। এবং এর ইদ্দতকালের মধ্যে যদি আর কোন সমঝোতা না হয়, তাহলে স্থায়ীভাবে স্বামী-স্ত্রী দুজন আলাদা হয়ে যাবে। এরপর তাদের নিজেদের মধ্যে আর বিয়ে হতে পারবে না — এটা হলো তৃতীয় তালাক।

৭। এরপর ওই স্ত্রী আলাদা কোন পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে যদি চায়। প্রথম স্বামী যদি আবারো সেই স্ত্রীকে ফিরে পেতে চায়, এখন তাকে অপেক্ষা করতে হবে তার প্রাক্তন স্ত্রীর দ্বিতীয় স্বামীর স্বাভাবিক মৃত্যু বা স্বতঃস্ফুর্ত ডিভোর্সের উপরে। এরপর যদি আবারো ওই প্রাক্তন স্ত্রী আর প্রাক্তন স্বামী পরস্পরকে বিয়ে করে এটা হবে চতুর্থবারের মতো বিয়ে এবং এটাই হলো “হিল্লা বিয়ে” , আরবীতে শব্দটি হলো “হালালাহ্‌”।

৮। ডিভোর্সের সময় যদি কোন দুগ্ধপোষ্য সন্তান থাকে তাহলে ইদ্দতকাল দুধপান শেষ হবার সময় পর্যন্ত হবে এবং ওই পর্যন্ত স্ত্রীর ভরনপোষণের দায়িত্ব স্বামীর উপরে থাকবে।

৯। এখানে যাবতীয় খুলা তালাক, ১ম , ২য়, ৩য়, ৪র্থ বিয়ে-তালাক – কোনটাতেই কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ বা তৃতীয় কোন পক্ষের কোন বাড়াবাড়ি করা চলবে না। তবে তালাক বা বিয়ের সময় দুজন করে সাক্ষী লাগে।

 

চলবে…

60
বাচ্চাদের খাবারের সময় যে বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে,

১। মনোযোগ সরিয়ে নেয়া – ছোট বাচ্চাদের কাছে ‘মনোযোগ’ সব থেকে বড় পুরস্কার হয়! যার অর্থ হচ্ছে আপনারা কেবল বাচ্চার ইতিবাচক ব্যবহারেরই প্রশংসা করবেন, যেমন – যখন বাচ্চা খাবার সময় বিরক্ত করবে না আর ভালোভাবে খাবার খাবে, তখন তার প্রশংসা করা উচিৎ। বাচ্চার সংখ্যা একাধিক হলে ভালোভাবে খাবার খাওয়ার ওপরেই সম্পূর্ণ মনোযোগ দিন। অন্য বাচ্চাদের সাথে তুলনা করবেন না, কেবল উপেক্ষা করে যান!

২। খাবার খাওয়ার সময়কে আনন্দে ভরিয়ে তোলার চেষ্টা করুন। রঙিন আর আকর্ষণীয় কাপ প্লেট আর পাত্র ব্যবহার করুন এবং ছোট বাচ্চাদের খেতে দেয়ার সময় তাদের প্রিয় খেলনা কাছে রাখুন।

৩। বাচ্চাদের তাড়াহুড়ো করে খাবার খাওয়ার জন্য বলবেন না! বাচ্চারা প্রায়ই খাবার খাওয়ার সময় খেলা করতে থাকে। তারা যদি খাবারের গ্রাসকে ২ মিনিটের বেশি মুখের মধ্যে পুরে রাখে, তাহলে আপনি তাদের এমনটা না করার জন্য বলতে পারেন।

৪। বাচ্চাদের কখনো জোর করে খাবার খাওয়াবেন না! তারা খাবার খেতে না চাইলে মাঝে মাঝে তাদের গল্প শুনিয়ে বা খেলনা দিয়ে খাবার খাওয়াতে পারেন। তবে এমনটা বেশি করলে সেটা বাচ্চাদের অভ্যাসে পরিবর্তিত হয়ে পড়তেও পারে! তাদের আধা ঘণ্টা পরে আবার একবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। বাচ্চারা কথা না শুনলে তাদের দুধ, জুস বা স্যুপ দিন … পরের রাউন্ডে খাবার দিন।

৫। বাচ্চা বাইরে থেকে খেলে, ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পরেই তাদের খাবার দিবেন না… কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার পরে খাবার খেতে দিন!

৬। পিপাসার্ত বাচ্চা কখনো খাবার খেতে চাইবে না। প্রথমে তাকে পানি খেতে দিন আর তারপর আধ ঘণ্টা পরে কিছু খেতে দিন… এতে ক্ষিধে আর পাচন শক্তি বাড়বে! খাবার খাওয়ার আগে বা খাওয়ার সময় বাচ্চাকে বেশি জল পান করতে দেবেন না… এতে ক্ষিধে আর পাচন শক্তি কমে আসে!

৭। প্লেটে ততটাই খাবার নিন… যতটা বাচ্চা একবারে খেতে পারবে! এর ফলে বাচ্চারঅ পূর্ণতার অনুভব হবে! সে আরও খাবার চাইলে প্রথমে খাবার শেষ করার জন্য তার প্রশংসা করুন আর তারপর খাবার দিন! প্রয়োজনের বেশি খাবার প্লেটে ভরা আর তারপর বাচ্চাকে পুরো খাবার খাওয়ার জন্য বাধ্য করা মোটেই ভালো ব্যাপার নয়।

৮। খাবারের সময় মিশ্রিত আইটেম দিন, যাতে বাচ্চার বেছে খাবার খাওয়ার অভ্যাস না হয়ে পড়ে! তাকে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকারের তরকারী, বিভিন্ন রূপে রান্না করে খাওয়ান।

৯। খাবার খাওয়ার আগে বিস্কুট, টফি, চকোলেট, দুধ বা মেওয়া ইত্যাদি দেবেন না। এগুল খাবার শেষ করার পরে পুরস্কার হিসেবে দিন!

১০। খাবার খাওয়ার সময় টিভি দেখার পুরস্কার দেবেন না। টিভি দেখলে খাবারের থেকে মনোযোগ সরে যাবে আর পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হবে!

১১। খাবার শেষ হবার পরেই কোন পুরস্কার দিন…কেবলমাত্র প্রতিশ্রুতি দেবেন না!

১২। এমন অভ্যাস তৈরি করুন যাতে পুরো পরিবার দিনের মধ্যে অন্ততঃ পক্ষে একবার এক সাথে বসে খাবার খায়! বাচ্চার প্লেটে সব খাবার রেখে, তাকে নিজে সেটা খেতে বলুন। এর দ্বারা আহার-বিহারের সুস্থ অভ্যাসের বিকশিত হবে!

১৩। শিশুদের শাসন করতে গিয়ে কখনো অপমান করবেন না, মনে রাখবেন শিশুদের আত্মমর্যাদাবোধ প্রবল। অপমান শিশুদের মনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং শিশুটি ধীরে ধীরে বিদ্রোহী হয়ে পড়ে।

 

পরামর্শক্রমেঃ ডাঃ সুনীল বৈদ।

Pages: 1 2 3 [4] 5