Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - sharifa

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 29
31
মানবদেহের প্রতিটি সমস্যারই বিশেষ কিছু লক্ষণ আছে। বলা যেতে পারে, এই বিশেষ লক্ষণগুলো আমাদের আগে-ভাগেই সাবধান হতে বলে। কিন্তু এরপরও আমরা এগুলো অগ্রাহ্য করি। ফলে শরীরে বাসা বাধতে শুরু করে নানা ধরণের রোগ। এ সমস্যা সমাধানের জন্য লক্ষণগুলো সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। সেসব লক্ষণ নিজের বা অন্য কারো মধ্যে দেখা মাত্রই ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিতে হবে।

একইরকম ক্যান্সার হলেও নানা ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয়। কোথায় ক্যান্সার হয়েছে, সেটি কত বড় এবং দেহের অঙ্গ ও টিস্যুগুলোকে তা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তার ওপর ভিত্তি করেই উপসর্গগুলো সৃষ্টি হয়। তবে আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই ক্যান্সারের অজানা লক্ষণগুলো সম্পর্কে।

১. স্থায়ী কাশি
দীর্ঘস্থায়ী কফ হলো ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ। এর পাশাপাশি ক্ষুধামান্দ্য এবং আকস্মিক ওজন হ্রাসের মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে। শেষ পর্যায়ে এসে ফুসফুস ক্যান্সার থেকে কফের সঙ্গে রক্তপড়া এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এটি ক্যান্সারের শীর্ষ লক্ষণগুলোর একটি।
২. ত্বকের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি
এটি স্তন ক্যান্সারের একটি অজানা লক্ষণ। শক্ত গিঁটের মতো স্তন বা বগলের নিচে এই লক্ষণ দেখা দেয়। এতে প্রদাহ বা র‌্যাশ এবং আকার পরিবর্তন হয়।

৩. আকস্মিক ওজন হ্রাস
পাকস্থলীতে ক্যান্সার হলে এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পাকস্থলীতে ক্যান্সার হলে মাংসের প্রতি অরুচি, স্বল্প খাবারেই তৃপ্তি, রক্তশুন্যতা এবং অন্ত্রের মধ্য দিয়ে খাবার চলাচলে সমস্যার মতো লক্ষণগুলোও দেখা দিতে পারে।

৪. ত্বকে চুলকানি
সব ধরনের ত্বকের চুলকানি টিউমারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। কিন্তু মূত্রাশয়ে ত্বকের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে জননাঙ্গে চুলকানি হতে পারে। ব্রেন ক্যান্সার হলে নাকের ছিদ্রপথে চুলকানি হতে পারে।

৫. প্রস্রাব করার সময় তরল নিঃসরণ
এটি হতে পারে কিডনি ক্যান্সারের একটি লক্ষণ। যা প্রস্রাব করার সময় রক্তপড়ার মতো লক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। পাশাপাশি কিডনিতে হাইপারটেনশন ও ব্যাথা এবং দীর্ঘমেয়াদি দূর্বলতা এসব লক্ষণও থাকবে। ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর একটি এটি।

৬. অন্ত্রের কার্যক্রম পরিবর্তিত হয়ে যায়
অন্ত্রে ক্যান্সার হলে পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়া, শ্লেষ্মা নিঃসরণ বা দূষিত স্রাব এবং হঠাৎ মলত্যাগের মতো লক্ষণ দেখা দেয়।

৭. স্থায়ী স্বরভঙ্গ বা গলাব্যাথা ও গলদাহ
শ্বাসনালীর ক্যান্সার হলে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে। এছাড়া গলার পেশির স্ফীতি ঘটে গলায় একটি মাংসপিণ্ড জমে যাওয়ার মতো অনুভূতিও হতে পারে। এটিও ক্যান্সারের একটি অজানা লক্ষণ।

সূত্র: বোল্ড স্কাই

32
ক্যান্সারের যে ৫টি লক্ষণ পুরুষদের অগ্রাহ্য করা উচিত নয়

সাধারণ ব্যথা এবং ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর মধ্যকার ফারাক জানা থাকাটা জরুরি। বেশিরভাগ সময়ই পুরুষদের ক্যান্সার হলে তা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে না। কেননা ক্যান্সারের লক্ষণগুলোকে ছোটখাটো কোনো সমস্যার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে অগ্রাহ্য করা হয়। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়েই যদি ক্যান্সারের লক্ষণগুলো সনাক্ত করা যায় তাহলে ক্যান্সার পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব হতে পারে।

পুরুষদের ক্যান্সারের আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিশ্রামের অভ্যাসে পরিবর্তন, খাবার গিলতে সমস্যা, গলার স্বর কর্কশ বা ফ্যাঁসফেঁসে হয়ে যাওয়া, অজানা কারণে ওজন কমে যাওয়া, মুখের পরিবর্তন এবং পাকস্থলী বা তলপেটে ব্যথা প্রভৃতি।

নিয়মিতভাবে ক্যান্সারের স্ক্রিনিং টেস্ট করানো প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যান্সার সনাক্ত করার সবচেয়ে ভালো উপায়। ক্যান্সারে আক্রান্তদের বেশিরভাগই তাদের রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে অগ্রাহ্য করেন বা পরিস্থিতি বিপর্যয়কর হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো কিছু্ই টের পান না। তবে ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলোও খুব বেশি স্পষ্ট হয় না এবং দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে খুব বেশি বাধাগ্রস্ত করে না। ফলে লোকেই বুঝতে পারেন না তাদের আসলে ক্যান্সার হয়েছে কিনা। আসুন জেনে নেওয়া যাক ক্যান্সারের এমন ৫টি লক্ষণ সম্পর্কে যেগুলো পুরুষদের একদমই অগ্রাহ্য করা উচিত নয়।

১. প্রস্রাবে পরিবর্তন
প্রস্রাবের প্রবাহে যে পরিবর্তনগুলো হতে পারে ক্যান্সারের লক্ষণ: প্রস্রাবের প্রবাহ শুরু করতে সমস্যা, প্রস্রাবের প্রবাহ বন্ধ করতে সমস্যা, স্বাভাবিকের চেয়ে দুর্বল প্রস্রাবের স্রোত, প্রস্রাব ঝরা বা চুইয়ে পড়া, দিনে কতবার প্রস্রাব করা হচ্ছে সেই হার-এ পরিবর্তন, অণ্ডকোষের অথবা অন্ডকোষের ভেতরের মাংসপিণ্ডের আকার এর স্ফীতি বা সংকোচন, অণ্ডকোষের ওজন বেড়ে যাওয়া এবং লিঙ্গোত্থানে সমস্যা।

২. মুখের পরিবর্তন
মুখের ভেতরে এবং গলায় যেসব পরিবর্তন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে: মুখের ভেতরে সাদা দাগ (গোল স্পট বা লম্বা দাগ), মুখে এবং গলায় অনবরত ব্যথা, খাবার গিলতে সমস্যা, নিচের চোয়াল নাড়াতে সমস্যা, অজানা কারণে দাঁত নড়বড়ে হওয়া বা উঠে আসা, মুখ ফুলে যাওয়া, ঠোঁটে অসাড়তা বা অতিসংবেদনশীলতা, গালের ভেতরে বা জিহ্বায় ক্ষত ও ঘাঁ অথবা জিহ্বা থেকে রক্ত পড়া, অনবরত কফ-কাশি বা স্বরভঙ্গ এবং কফের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া।

আরও পড়ুন: ক্যান্সার থেকে বাঁচতে চাইলে মেনে চলুন এই ১০টি পরামর্শ

৩. স্তনে পরিবর্তন
পুরুষদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। যত স্তন ক্যান্সার হয় তার মাত্র ১% হয় পুরুষদের স্তনে। আর এ কারণেই পুরুষরা স্তন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো অগ্রাহ্য করেন। পুরুষদের স্তন ক্যান্সার হয় মূলত ইস্ট্রোজেন হরমোনের উচ্চ মাত্রা, ক্ষতিকর বিকিরণ বা পারিবারিকভাবে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে।
পুরুষদের স্তন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো হলো: স্তনের আকার বেড়ে যাওয়া, স্তনের বোটায় ব্যথা, স্তনবৃন্তের সংকোচন বা ওল্টানো অবস্থা, স্তনবৃন্তে ক্ষত, স্তনবৃন্তের চারপাশে গোলকার লালচে হওয়া বা মাংসপিণ্ড যাতে ব্যথা নাও থাকতে পারে, স্তনবৃন্ত থেকে তরল নিঃসরিত হওয়া যা দেখতে পানির মতো, কালো বা রক্তাভ হতে পারে, বাহুর নিচের লসিকাগ্রন্থি বেড়ে যাওয়া, স্তনবৃন্ত বা এর চারপাশে লাল হয়ে যাওয়া।

৪. পাকস্থলি সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ
পাকস্থলিতে এবং পেটের ব্যথা হতে পারে নানা কারণে। কিন্তু ব্যথা কমানোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরও যদি তা না কমে তাহলে তা ক্যান্সারের লক্ষণও হতে পারে। পাকস্থলি সংশ্লিষ্ট ক্যান্সারের লক্ষণগুলো হলো: ক্ষুধামান্দ্য, দীর্ঘমেয়াদি এসিডিটি, বুক জ্বালাপোড়া (পাকস্থলি বা গলার ক্যান্সারের লক্ষণ), বমি- রক্তসহ বা ছাড়া, পেট ফোলা, বা পেটে তরল জমা হওয়া, পাকস্থলিতে ব্যথা যা হতে পারে ভেতরের দিকে চাপ প্রয়োগ করার অনুভূতিযুক্ত (অগ্নাশয় ক্যান্সার), পাকস্থলিতে খিচুনি এবং অস্বস্তি (লিভার ক্যান্সার), অল্প খাবারেই পেট ভরে যাওয়া, প্রস্রাব বা পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া (কিডনি বা মূত্রাশয় ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার)।

আরও পড়ুন: প্রতিদিনের যে ৬টি খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় সবচেয়ে বেশি

৫. অজানা কারণে ওজন কমা
যারা সুস্বাস্থ্যের জন্য ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন তাদের হুট করেই ওজন কমাটা কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই যদি ওজন কমে যায় তাহলে বিপদের লক্ষণ। অগ্নাশয়, পাকস্থলি বা ফুসফুসের ক্যান্সার হলে এমন হঠাৎ করেই ওজন কমে যেতে পারে। এছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থির অতিসক্রিয়তা, ডায়াবেটিস, লিভার সিরোসিস বা যক্ষ্মা হলে হঠাৎ করেই ওজন কমে যেতে পারে।

সূত্র: এনডিটিভি হেলথ

33
ক্যান্সারকে জয় করতে হলে ক্যান্সারের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা যেমন জানতে হবে, তেমনি ভাঙতে হবে ভুল ধারণা। আমাদের দেশে ক্যান্সার সম্পর্কে যেসব ভুল ধারণা আছে তার কয়েকটি আজ তুলে ধরা হলো।
- ক্যান্সার ছোঁয়াচে
- ক্যান্সার শুধু বেশি বয়সে হয়, শিশুদের হয় না
- সব ক্যান্সারই বংশগত
- ধূমপান ও পান-জর্দার সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক নেই
- ক্যান্সার শনাক্ত করার জন্য এফএনএসি
(সুই দিয়ে কোষ সংগ্রহ) করলে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে
- ক্যান্সার শনাক্ত করা ও সঠিক অবস্থা জানার জন্য বারবার টেস্ট করা অনর্থক
- সব ক্যান্সার মানেই মৃত্যু অনিবার্য
- ক্যান্সারের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়
- সব অবস্থাতেই ক্যান্সার অপারেশন করা সম্ভব
- শুধু অপারেশন করেই সব ক্যান্সার সারিয়ে তোলা সম্ভব
- অপারেশনের পর বের করা টিস্যু আর হিস্টোপ্যাথলজি টেস্ট করার প্রয়োজন নেই
- ক্যান্সারের শুধু শেষ অবস্থাতেই কেমোথেরাপি দেওয়া হয়
- কেমোথেরাপি দিলে যে চুল পড়ে যায়, তা আর কখনও ওঠে না
- কেমোথেরাপি/রেডিওথেরাপি চলাকালীন রোগীর সংস্পর্শে আসা যাবে না
- কেমোথেরাপি মানে বিষ
- রেডিওথেরাপি মানে বিদ্যুতের শক
- রেডিওথেরাপি বেদনাদায়ক ও খুব কষ্টকর
- সব ক্যান্সারই মুখে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে সারিয়ে তোলা সম্ভব
- ক্যান্সার চিকিৎসা শেষে আর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার প্রওয়াজন নেই
- ক্যান্সার বিভাগে কর্মরত কর্মীদেরও ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অধিক

35
চিকিৎসা এবং ওষুধ
চিকিৎসক ক্যান্সার কোষের ধরণ, ক্যান্সারের পর্যায়, হরমোনের সংবেদনশীলতা, রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং রোগীর নিজের মতামতের উপর ভিত্তি করে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা ধরণ নির্ধারণ করে থাকেন। অধিকাংশ রোগীর স্তন ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসা/অস্ত্রোপাচার করা হয় এবং এর সাথে কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি বা বিকিরণ থেরাপিও প্রয়োজন হয়।

স্তন ক্যান্সারের নানাবিধ চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রচলিত আছে এবং অনেক সময় চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রোগীকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে হয়। এজন্য একজন স্তন বিশেষজ্ঞ বা স্তন পরিচর্যা কেন্দ্রে/ক্লিনিকে যোগাযোগ করে দ্বিতীয় মতামত বিবেচনা করা যেতে পারে। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত অন্যান্য রোগীর সাথে এব্যাপারে আলাপ আলোচনা করা যেতে পারে।

স্তন ক্যান্সারে শল্যচিকিৎসা/অস্ত্রোপাচার

স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় যে সকল শল্যচিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে তা হল-
- ক্যান্সার আক্রান্ত চাকা (টিউমার) অপসারণ
এতে স্তন সংরক্ষণ করে টিউমার/চাকা অপসারণ বা স্থায়ীভাবে টিউমার অপসারণ করা যায়। এখানে শল্যবিদ টিউমার এবং এর আশেপাশে সুস্থ টিস্যু অপসারণ করেন। সাধারণত ছোট টিউমার যেগুলো পার্শ্ববর্তী টিস্যু থেকে সহজে অপসারণ করা যায় সেগুলোর ক্ষেত্রে এধরণের অস্ত্রোপাচার করা হয়।

- সম্পূর্ণ স্তন অপসারণ
এধরণের অস্ত্রোপাচারে সম্পূর্ণ স্তন ফেলে দেওয়া হয় অথবা স্তন এবং এর নিচের বুকের খাঁচার মাংসপেশি, বগলের লসিকাগ্রন্থিসহ আনুসাঙ্গিক আক্রান্ত টিস্যু অপসারণ করা হয়। সাধারণত এখন আর তেমন করা হয় না। কোন কোন রোগীর স্তনের চামড়া সংরক্ষণ করে বিকল্পভাবে স্তন পুনর্গঠন করা হয়।

-একটি লসিকা অপসারণ
যদি ক্যান্সার বগলের একটি লসিকাগ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়ে তবে শল্যবিদরা এই গ্রন্থিসহ আশেপাশের অন্যান্য কিছু লসিকাগ্রন্থিও অপসারণ করেন। এই লসিকাগ্রন্থি যে পদ্ধতির মাধ্যমে অপসারণ করা হয় তাকে প্রহরী লসিকাগ্রন্থি বায়োপসি বলে এবং অপসারণের পর তাতে স্তন ক্যান্সার কোষ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। যদি এতে কোন ক্যান্সার কোষ না থাকে তাবে অবশিষ্ট লসিকাগ্রন্থিতে ক্যান্সার কোষ পাওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে এবং এজন্য সেগুলো অপসারণ করাও প্রয়োজন পরে না।

- বগলের লসিকাগ্রন্থিসমূহ অপসারণ
যদি শল্যবিদরা বগলের প্রহরী লসিকাগ্রন্থিতে ক্যান্সার কোষ পান তবে তারা বগলের অতিরক্তি লসিকাগ্রন্থি অপসারণ করেন। যদিও প্রমাণিত যে ২ ইঞ্চি –  ৫ সেন্টিমিটার এর সমান স্তনের প্রাথমিক পর্যায়ের টিউমারের ক্ষেত্রে যেখানে বগলের অল্পসংখ্যক লসিকাগ্রন্থি আক্রান্ত হয়েছে সেখানে স্তন টিউমার অপসারণ কেমোথেরাপি এবং পুরো স্তন বিকিরণ চিকিৎসা রোগীদের অতিরিক্ত লসিকাগ্রন্থি অপসারণের ক্ষেত্রে রোগীর বেঁচে থাকার অনুপাত বাড়ায় না। এধরণের প্রাথমিক টিউমারের ক্ষেত্রে স্তন টিউমার অপসারণের পর কেমেোথেরাপি এবং বিকিরণ চিকিৎসাই সমভাবে কার্যকর এবং প্রমাণিত। এই চিকিৎসা লসিকাগ্রন্থি অপসারণের ফলে হাতের দীর্ঘস্থায়ী ফোলার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানো হয়।
বড় স্তন টিউমারের ক্ষেত্রে অথবা যদি শরীরিক পরীক্ষার সময় বগলের কোন লসিকাগ্রন্থি হতে অনুভূত হয় সেসব ক্ষেত্রে বগলের লসিকাগ্রন্থির ব্যবচ্ছেদ করা হয়। যদি কোন রোগীর আংশিক স্তন বিকিরণ চিকিৎসা নিতে চায় তাদের ক্ষেত্রেও লসিকাগ্রন্থির ব্যবচ্ছেদ করা যেতে পারে।
স্তন ক্যান্সারের শল্যচিকিৎসার জটিলতা কি ধরণের শল্যচিকিৎসা নির্বাচন করা হবে তার উপর নির্ভর করে। শল্যচিকিৎসায় রক্তপাত ও সংক্রমনের ঝুঁকি থাকে।
কিছু মহিলা শল্যচিকিৎসার পর স্তন পুর্নগঠন করতে চান। এব্যাপারে শল্যবিদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করতে হয়। স্তন ক্যান্সারের অপারেশনের আগে একজন প্লাস্টিক শল্যবিদের সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে। স্তন পুর্নগঠনের ক্ষেত্রে কৃত্রিম স্তন ইমপ্লান্ট বা নিজের শরীরের টিস্যু ব্যবহার নির্বাচন করা হয়। এই অস্ত্রোপাচার স্তন ক্যান্সার অপারেশনের সময় বা তার পরবর্তী সময় করা হয়।

বিকিরণ চিকিৎসা

উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন শক্তির বিকিরণ চিকিৎসা ব্যবহার করে ক্যান্সারের কোষ নির্মূল করা হয় (যেমন: এক্সরে),  রেডিও থেরাপি সাধারণত একটি বড় মেশিনের সাহায্যে শরীরের দিকে লক্ষ করে তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করে। তাছাড়া শরীরের ভেতরে তেজস্ক্রিয় পদার্থ স্থাপন করেও বিকিরণ করা যায়।

-বাহ্যিক বিম রেডিয়েশন
বাহ্যিক বিম বিকিরণ সাধারণত প্রারম্ভিক স্তরের স্তন ক্যান্সারের জন্য ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসকেরা অনেক বড় স্তন ক্যান্সারের জন্য লাম্পেকটমির পরে বিকিরণ থেরাপির পরামর্শ দিতে পারেন। এই রেডিও থেরাপি যেসব মহিলাদের উপর ব্যবহার করা হয় যাদের সেন্টিনেল নোড বায়োপসি নেগেটিভ হয় এবং এতে তাদের অন্যান্য লসিকাগ্রন্থিতে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
রেডিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো- ক্লান্তিভাব এবং সে অংশের চামড়ায় রোদে পোড়া, লালা ফুসকুড়ি হতে পারে, এছাড়া স্তন ফোলা এবং স্তনের চামড়া অধিক দৃঢ় মনে হতে পারে।

কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপি ক্যান্সার কোষকে ধ্বংসকারী ওষুধ হিসেবে কাজ করে। যদি ক্যান্সার পুনরায় হওয়ার এবং শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার কোন আশঙ্কা থাকে তখন চিকিৎসক কেমোথেরাপির পরামর্শ দিতে পারেন। যা ক্যান্সার পুনরায় হওয়ার আশঙ্কা দূর করে। একে বলা হয় এডজুভেন্ট সিস্টেমিক কেমোথেরাপি।

কেমোথেরাপী মাঝে মধ্যে কিছু মহিলাদের স্তনের অস্ত্রোপাচারের পূর্বে দেয়া হয়, যাদের স্তনের টিউমার অনেক বড় থাকে। চিকিৎসকরা একে নিউএডজুভেন্ট কেমোথেরাপী বলেন। এর উদ্দেশ্য হলো টিউমারের আকৃতিকে ছোট করা। যাতে অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে তা সহজে অপসারণ করা যায়। এটি আরোগ্য লাভের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। নিউ এডজুভেন্ট কেমোথেরাপীর উপর গবেষণা চলছে যা নির্ণয় করার চেষ্টা করছে যে কারা এ চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে সুফল পাবে।

কেমোথেরাপী ব্যবহার করা হয় মহিলাদের জন্য যাদের ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যান্সারকে নিয়ন্ত্রেণে রাখার জন্য এবং ক্যান্সার এর উপসর্গ সমূহ লাঘবের জন্য চিকিৎসকরা কেমোথেরাপী সুপারিশ করতে পারেন।
কেমোথেরাপী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নির্ভর করে কেমোথেরাপীর ওষুধের উপর। সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো হচ্ছে- চুল পড়া, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, ক্লান্তি ভাব এবং ইনফেকশন হওয়া অল্প ঝুঁকি।

হরমোন থেরাপি
হরমোন থেরাপি অথবা হরমোনকে বন্ধ করে দেওয়ার থেরাপি: সাধরাণত যে সব স্তন ক্যান্সার এর হরমোনের সংবেদনশীলতা আছে সেসব ক্যান্সারে ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসকেরা এই ক্যান্সারকে মাঝে মধ্যে ‘ইস্ট্রোজেন রিসেপটর পজেটিভ (ইআর পজেটিভ) অথবা প্রজেস্ট্রেরণ রিসেপটর পজেটিভ (পিআর পজেটিভ)’ ক্যান্সার বলে থাকেন।
হরমোন থেরাপী অস্ত্রপচার অথবা অন্যান্য চিকিৎসার পরে ব্যবহার করা যেতে পারে। যা পুনরায় ক্যান্সার হওয়া সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়। যদি কারো ক্যান্সার ইতিমধ্যে ছড়িয়ে যায় তবে হরমোনথেরাপী একে কমিয়ে দিতে পারে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

হরমোন থেরাপীতে নিম্নোক্ত চিকিৎসা অর্ন্তভুক্ত:

চিকিৎসা ব্যবস্থা যা হরমোনকে ক্যান্সারের কোষের সঙ্গে যুক্ত হতে বাধা দান করেঃ
টেমোক্সিফেন সাধারণত সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় সিলেকটিভ ইস্ট্রজেন রিসেপটর মডিউলেটর হিসেবে। ইস্ট্রোজেনকে ক্যান্সার এর কোষের সঙ্গে যুক্ত হতে বাধা দান করে। টিউমারের বৃদ্ধি ধীরে ধীরে করে এবং টিউমারের কোষকে মেরে ফেলে। টেমোক্সিফেন মহিলাদের মেনোপজ হওয়ার পূর্বে ও পরে উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায়। ইহার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, ক্লান্তিভাব, গরম অনুভব করা, রাতে ঘাম হওয়া এবং যৌনাঙ্গ শুকনাভাব। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো- চোখে ছানি পড়া, রক্ত জমাট বাধা, স্ট্রোক এবং জরায়ু ক্যান্সার।

চিকিৎসকরা যা মোনোপেজের পরে শরীরের ইস্ট্রোজেন তৈরি করা বন্ধ করে দেয়-
কিছু গ্রুপ এর ওষুধ যাকে বলা হয় এরামেটোস ইনহিবিটর, এনজাইম এর কাজকে বন্ধ করে যা শরীরের এন্ড্রোজেন হরমোনকে ইস্ট্রোজন হরমোনে পরিণত করে। এসব ওষুধ শুধুমাত্র  মহিলাদের মেনোপেজের পরে কাজ করে। এরোমেটস ইনহিবিটর হলো: এনাস্ট্রজল, লেট্রোজল এবং এক্সমেসটেন। এধরণের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো হল: হাড় এবং মাংসপেশীতে ব্যাথা, হাড় পাতলা হয়ে যাওয়া (অস্টেওপরেসিস), আরেকটি ওষুধ ফালভেস্টমেন্ট, ইস্ট্রোজেনকে সরাসরি বাধা দেয় যা টিউমারের কোষকে বেঁচে থাকবার জন্য সহায়তা করে। ফালভেসট্রেন্ট সাধারণত  সেসব মহিলাদের মেনোপেজের পরে ব্যবহার করা যায় যাদের অন্যান্য হরমোন বন্ধ করার থেরাপি কাজ করে না এবং যারা টেমোক্সেন খেতে পারেন না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো হলো ক্লান্তিভাব, বমি বমি ভাব এবং গরম অনুভূতি হওয়া। ফালভেসট্রেন্ট ইনজেকশন এর মাধ্যমে মাসে একবার দেওয়া হয়।

সার্জারী অথবা ওষুধ যা ডিম্বাশয়ের হরমোন তৈরিতে বাধা প্রদান করে:
মেনোপেজের পূর্বে যদি ডিম্বাশয় অপসারণ করা হয় অথবা ওষুধ দিয়ে ডিম্বাশয়ের ইস্ট্রজেন তৈরি বন্ধ করা যায় তাহলে ইহা একটি কার্যকর হরমোনের চিকিৎসা হতে পারে। এটিকে বলা হয় প্রফাইলেকটিক উফেরেকটমি অথবা সার্জাইক্যাল মেনোপেজ।

লক্ষ্যপূর্ণ ওষুধ
এসব ওষুধ ক্যান্সার এর কোষের মধ্যে নির্দিষ্ট কোন অস্বাভাবিকতাকে আক্রমন করে। অনুমোদেতি লক্ষ্যপূর্ণ ওষুধ হলো:

হারসেপটিন:
কিছু স্তন ক্যান্সার অতিরিক্তি পরিমাণ প্রোটিন তৈরি করে যাকে বলা হয় হিউমেন গ্রোথ ফেক্টর হারসেপটিন-২(HER 2)। হারসেপটিন এসব প্রোটিনকে লক্ষ্য করে যারা ক্যান্সারের কোষকে বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। যদি আপনার স্তন ক্যান্সার অত্যাধিক হারটু (HER 2) তৈরি করে তবে হারসেপটিন সেই প্রোটিনকে বাধা দেয় এবং ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো হল: হার্ট এর ক্ষতি, মাথাব্যাথা এবং চর্মে লাল ফুসকুরি অর্ন্তভুক্ত।

লেপাটিনিব:
লেপাটিনিব হার টু প্রোটিনকে লক্ষ্য করে এবং যে স্তন ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছে (অ্যাডভান্সড মেটাস্টেটিক ক্যান্সার) সেখানে ব্যবহার করা হয়। লেপাটিনিব সংরক্ষণ করে রাখা হয় সে সব মহিলাদের জন্য যারা ইতিমধ্যে হারসেপটিন চেষ্টা করেছেন এবং যাদের ক্যান্সার অনেকদূর অগ্রসর হয়ে পড়েছে । পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো: বমি বমি ভাব, বমি, পাতলা পায়খানা, ক্লান্তি ভাব, মুখে ঘা, চামড়ায় লাল লাল ফুসকুরি এবং হাত ও পায়ে ব্যাথা।

এভাস্টিন:
এভাস্টিন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা ক্যান্সার কোষ এর সংকেত যা নতুন রক্তনালীকে আকর্ষিত করে তা বন্ধ করে দেয়। নতুন রক্তনালী ছাড়া যা টিউমারেকে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে, ক্যান্সার কোষ মারা যায়। সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ক্লান্তি ভাব, রক্ত জমাট বাধা, হার্ট এর ক্ষতি হওয়া্, কিডনী নষ্ট হওয়া, কনজেসটিভ হার্ট ফেলিওর, উচ্চ রক্তচাপ, মাখা ব্যাথা, ধীর ক্ষত নিরাময়। গবেষণায় দেখা গেছে, যদিও এই সব ওষুধ স্তন ক্যান্সারের বৃদ্ধি ধীর করে কিন্তু ইহা আয়ু বৃদ্ধি করে না। তাই স্তন ক্যান্সারের এভাস্টিন এর ব্যবহার বিতর্কিত।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নির্ভর করে আপনি কি ধরণের ওষুধ সেবন করবেন তার উপর। এসমস্ত ওষুধ অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

http://agbreastcare.org/banglainfo/treatments/

36
ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় কেমোথেরাপি একটি বহুল ব্যবহৃত চিকিৎসা পদ্ধতি।

কেমোথেরাপি এমন এক ধরণের চিকিৎসা যার মাধ্যমে ক্যান্সারের সেলগুলোকে ধ্বংস করা হয় এবং সেগুলোর বিস্তার থামানো হয়।

তবে সব ধরনের ক্যান্সারের জন্য এক ধরণের চিকিৎসা প্রযোজ্য নয়।

বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার সেল বিভিন্ন ধরণের ঔষধে সাড়া দেয়।

কেমোথেরাপির সর্বোচ্চ ভালো ফলাফলের জন্য আট ধরনের ঔষধের সমন্বয়ে ঘটানো হয়।

কেমোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা উন্নত করার জন্য চিকিৎসকরা নতুন ধরণের ঔষধের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করছেন।

অধিকাংশ সময় কেমোথেরাপির কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু আধুনিক কিছু কেমোথেরাপি সামান্য সমস্যা তৈরি করে।

কখন কেমোথেরাপি দেয়া হয়?
কেমোথেরাপির ঔষধ রক্তের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। এটি তখন পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

ফলে ক্যান্সারের সেল যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই ধ্বংস হবে।
কেমোথেরাপি তখনই দেয়া হয়, যখন ডাক্তাররা মনে করেন যে, ক্যান্সারের সেল শরীরের একাধিক জায়গায় আছে।

ক্যান্সার যদি শনাক্ত করা না যায়, তখন এর কিছু সেল মূল টিউমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আশেপাশের অংশে আক্রমণ করে।

অনেক সময় ক্যান্সার সেল অনেক দূর পর্যন্ত যায়। যেমন লিভার কিংবা ফুসফুসে গিয়ে ছড়াতে থাকে।

একজন চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যান্সার টিউমারের এবং তার আশপাশের টিস্যু কেটে ফেলতে পারেন।

রেডিওথেরাপির মাধ্যমেও ক্যান্সার সেল ধ্বংস করা যায়। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট ছোট জায়গায় রেডিও থেরাপি দেয়া যায়।

তবে এর মাধ্যমে শরীরের সুস্থ কোষগুলো নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ ফেলে দেবার পর সেখানে যদি আরো ক্ষতিকারক ক্যান্সারের কোষের সম্ভাবনা থাকে তখন কেমোথেরাপি দেয়া হয়।

কিছু কিছু ক্যান্সার, যেমন লিউকেমিয়ার চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি দেয়া হয়।

কারণ লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হলে সেটি পুরো শরীরে ছড়িয়ে যায়।

অনেক সময় অস্ত্রোপচারের আগেও কেমোথেরাপি দেয়া হয়। ক্যান্সার টিউমারের আকার ছোট করার জন্য এটি করা হয়।

টিউমারের আকার ছোট হয়ে আসলে চিকিৎসকের জন্য সেটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ফেলে দেয়া সহজ হয়।

অনেক সময় ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য না হলেও কেমোথেরাপি দেয়া হয়। এর মাধ্যমে রোগীর শরীরে কিছুটা ভালোভাবে তৈরি হয়।

কেমোথেরাপি কিভাবে কাজ করে?
ক্যান্সার সেলের জন্য কেমোথেরাপি হচ্ছে এক ধরণের বিষ।

এতে ক্যান্সার সেল ধ্বংস হয়। এটাকে বলা হয় সাইটোটক্সিক কেমিক্যাল।

তবে মনে রাখা দরকার যে জিনিসটিকে শরীরের ক্যান্সার সেলের জন্য বিষাক্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে, সেটি শরীরের সুস্থ-স্বাভাবিক কোষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

কেমোথেরাপি এমন একটি জিনিস যেটি শরীরের ক্ষতিকারক ক্যান্সার কোষগুলোকে যতটা সম্ভব খুঁজে বের করে ধ্বংস করে এবং ভালো কোষগুলোকে যতটা সম্ভব কম ধ্বংস করে।
কেমোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসকরা এখন অনেক বেশি সাফল্য পাচ্ছেন, কারণ এর মাধ্যমে শরীরের ক্যান্সার কোষ এবং এর আশপাশের ভালো কোষগুলোকে চিহ্নিত করে আলাদা করা যাচ্ছে।

শরীরের ক্যান্সার কোষ এবং সুস্থ কোষের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য আছে।

ক্যান্সার কোষগুলো দ্রুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পুনরায় ক্যান্সার কোষ তৈরি করে।

অন্যদিকে সুস্থ কোষগুলো ক্যান্সার কোষের মতো দ্রুত আলাদা হয় না এবং বিস্তার লাভ করে না।

ক্যান্সার কোষগুলো যেহেতু দ্রুত বিস্তার লাভের মাধ্যমে নতুন কোষ তৈরি করে সেজন্য টিউমার তৈরি হয়।

শরীরের যে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে সেটি ক্যান্সার কোষ আক্রমণ করেন না।

কারণ ক্যান্সার কোষ শরীরের ভেতরেই তৈরি হয়। ফলে শরীরের ভেতরকার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্যান্সারকে বাইরে থেকে আসা কিছু মনে করে না।

কিছু কেমোথেরাপি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এমনভাবে পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাতে ক্যান্সার কোষগুলোকে বাইরে থেকে আসা কোষ হিসেবে দেখে এবং সেগুলোকে আক্রমণ করে।

কেমোথেরাপি কীভাবে দেয়া হয়?

সাধারণত ইনজেকশনের মাধ্যমে কেমোথেরাপি শিরায় প্রবেশ করানো হয়।

অনেক সময় স্যালাইন যেভাবে দেয়া হয়, কেমোথেরাপিও সেভাবে দেয়া হয়। এতে করে ঔষধ কিছুটা পাতলা হয়ে আসে।

কোন রোগীকে যদি অন্য ঔষধও নিতে হয় তখন তার শিরায় একটি ইনজেকশনের টিউব রেখে দেয়া হয়। যাতে করে বিভিন্ন ধরনের ঔষধের জন্য বারবার সেটি খুলতে এবং লাগাতে না হয়। এতে করে রোগীর অস্বস্তি কম হতে পারে।

https://www.bbc.com/bengali/news-44350943

37
স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট দিয়েছে ১১টি লক্ষণ। এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে ঘাবড়ে না গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে রোগী ও স্বজনদের।

১. দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তিবোধ করেন অথবা অবসাদে ভোগেন তবে সেটা অনেক রোগেরই কারণ হতে পারে, হতে পারে ক্যান্সারও। মলাশয়ের ক্যান্সার বা রক্তে ক্যান্সার হলে সাধারণত এমন উপসর্গ দেখা যায়। তাই, আপনি যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ক্লান্তিবোধ করেন অথবা দীর্ঘসময় ধরে ক্লান্ত থাকেন, অবিলম্বে চিকিৎসাসেবা নিন।

২. আকস্মিক ওজন হ্রাস
কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ করেই দ্রুতগতিতে যদি ওজন হারাতে থাকেন, তবে ভাবনার কারণ আছে। অনেক ক্যান্সারই সাধারণত হুট করে ওজন কমিয়ে ফেলে। তাই শরীরের ওজনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে সবসময়।
৩. দীর্ঘদিনের ব্যথা
দৃশ্যত কোনো কারণ (যেমন জখম-আঘাত) ছাড়া যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে শরীরের কোনো স্থানে ব্যথায় ভোগেন, তবে তাতে ওষুধও কাজ না করলে এ নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। শরীরের কোন জায়গায় ব্যথা করছে তার ওপর নির্ভর করছে রোগী ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত নাকি ডিম্বাশয়, পায়ুপথ বা মলাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত।

৪. অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড
আপনি যদি শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক কোনো মাংসপিণ্ড দেখতে পান অথবা মাংস জমাট হতে দেখেন কিংবা এ ধরনের পরিবর্তন বুঝতে পারেন, তবে এটা তেমন কিছুরই লক্ষণ, যা আপনার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। এমনকি আপনার শরীরে কোনো পরিবর্তন স্বাভাবিক মনে হলেও পর্যবেক্ষণ করুন, এরপর অন্তত চিকিৎসককে জানান।

৫. ঘন ঘন জ্বর
ক্যান্সার শরীরে জেঁকে বসলে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এতে ঘন ঘন জ্বর দেখা দেয়। দুর্ভাবনার ব্যাপার হলো, কিছু ক্যান্সারের শেষ পর্যায়েরই উপসর্গ ঘন ঘন জ্বর। তবে ব্ল্যাড ক্যান্সারসহ এ ধরনের কিছু ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়েই ঘন ঘন জ্বর দেখা দেয় শরীরে।
৬. ত্বকে পরিবর্তন
অনেকেই ত্বকের ক্যান্সারের ব্যাপারে সচেতন নন। ত্বকে অস্বাভাবিক পরিবর্তনই এমন ক্যান্সার শনাক্ত করার সহজ উপায়। তাই ত্বকে অতিরিক্ত তিল বা ফ্রিকেল অথবা আঁচিলের দিকে খেয়াল করুন। যদি এর রং, আকারে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, ফস্কুড়ি পড়ে যাওয়া এবং রক্তক্ষরণও অন্যান্য ক্যান্সারের উপসর্গ।

৭. দীর্ঘস্থায়ী কাঁশি
আপনি যদি দেখেন যে ওষুধ সেবনের পরও কাশি সারছেই না, তবে শীতকালীন কাশির চেয়েও এটা বেশি কিছু ধরে নিতে হবে। আর এই কাশির কারণে যদি আপনার বুক, পিঠ বা কাঁধে ব্যথা করে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৮. মল-মূত্রত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন
যদি মল বা মূত্রত্যাগের জন্য ঘন ঘন শৌচাগারে যেতে হয়, তবে এখানে ক্যান্সার নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যও মলাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ। মূত্রত্যাগের সময় অন্ত্রে ব্যথা বা রক্তক্ষরণ মূত্রথলির ক্যান্সারের উপসর্গ।

৯. অকারণে রক্তক্ষরণ
যদি কাশির সময় রক্তক্ষরণ হয়, তবে এটা ক্যান্সারের বড় লক্ষণ। এছাড়া স্ত্রী অঙ্গ (ভ্যাজিনা) বা মলদ্বার থেকে রক্তক্ষরণসহ এ ধরনের অন্যান্য অস্বাভাবিকতাও ক্যান্সারের উপসর্গ।

১০. খাবার গ্রহণে সমস্যা
কেউ খাবার খেলেই যদি নিয়মিত বদহজমে ভোগেন, তবে পেট, কণ্ঠনালী বা গলার ক্যান্সার নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। অবশ্য সাধারণত এসব উপসর্গকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। তবু অসুস্থতাকে কখনো এড়িয়ে যেতে নেই।

১১. অন্যান্য উপসর্গ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপরে উল্লিখিত উপসর্গগুলোকে ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ মনে করা হয়। তবে এর বাইরেও অনেক লক্ষণ আছে ক্যান্সারের। এগুলোর মধ্যে আছে পা ফুলে যাওয়া, শরীরের আকারে বা অনুভূতিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ইত্যাদি।

সবশেষ কথা হলো, ক্যান্সারের অনেক কারণ বোঝাও যায় না, এমনকি অন্য ক্যান্সারের চিকিৎসার পরবর্তী পরিণতি হিসেবে আরেক ক্যান্সার দেখা দেয়। তাই শরীরের যেকোনো অসুস্থতাকেই গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। বিশেষ করে বয়স ৩০-৪০ বছর পেরিয়ে গেলে অবশ্যই প্রতি অর্ধবছর বা প্রতিবছর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

আশার কথা এই যে, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে পারলে বেশিরভাগ ক্যান্সারেরই চিকিৎসা সম্ভব। জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, বলিউড অভিনেত্রী মনিষা কৈরালা বা ভারতের ক্রিকেটার যুবরাজ সিংরা কিন্তু ক্যান্সার জয় করে দাপটের সঙ্গেই ফিরেছেন স্ব স্ব অঙ্গনে।
https://www.banglanews24.com/health/news/bd/694442.details

38
Cancer / কোলন ক্যান্সার কেন হয়?
« on: July 09, 2019, 04:13:05 PM »
কোলন ক্যান্সারের কথা আমরা অনেকেই জানি। কোলন ক্যান্সারে মারা গিয়েছেন জনপ্রিয় কথা সাহিত্যক হুমায়ুন আহমেদ। সাধারণত পুরুষ ও কৃষ্ণাঙ্গরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বয়স ৫০ পেরুলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।


কোলন ক্যান্সার কেন হয়?

পরিবেশ ও জিনগত

পরিবেশ ও জিনগত কারণে বৃহদন্ত্র ও মলাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা পাঁচ ভাগ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে ব্যায়াম ( বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে) এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।

ধূমপান ও মদ্যপান

অতিরিক্ত গরু বা ছাগলের মাংস খাওয়া, খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবারের অনুপস্থিতি, ধূমপান ও মদ্যপান এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। তবে স্থুলকায় ব্যক্তিদের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

মা, বাবা ও ভাই বোন

বৃহদন্ত্র ও মলাশয় ক্যান্সার হওয়ার পারিবারিক ইতিহাস রোগটির সম্ভাবনা বাড়ায়। বিশেষ করে মা, বাবা, ভাই কিংবা বোনের বৃহদন্ত্র ও মলাশয় ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ে। এছাড়া অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

লক্ষণ

প্রাথমিকভাবে কোলন ক্যান্সার নির্ণয় অত্যন্ত কঠিন। কেননা প্রথমদিকে রোগটির তেমন কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না।কোলন বা মলাশয়ের কোন জায়গায় ক্যান্সার রয়েছে তার উপর ভিত্তি করে উপসর্গের বিভিন্নতা দেখা যায়।

পায়খানার সঙ্গে রক্ত

পায়খানার সঙ্গে রক্ত কিংবা পেটে ব্যথা নিয়ে অধিকাংশ রোগী প্রথম চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

মলত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন (কখনও ডায়রিয়া, কখনও কষা), রক্তশূন্যতা (দূর্বলতা, শ্বাসকষ্ট) ইত্যাদি রোগটির প্রাথমিক লক্ষণ।

অতিরিক্ত ওজনশূন্যতা

অতিরিক্ত ওজনশূন্যতা এই রোগের লক্ষণ। অতিরিক্ত ওজনশূন্যতা, পেটে চাকা, পেটে পানি, কাশির সঙ্গে রক্ত ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে আসেন।

চিকিৎসা

অপারেশন

কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা এক-কথায় অপারেশন। অপারেশনের আগে বা পরে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। অপারেশনের সময় রেডিওথেরাপির ব্যবহার এখনও গবেষণাধীন। যে কোনো ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি শব্দ বিশ্বে বহুল প্রচলিত, তা হল (multidisciplinary approach), অর্থাৎ সার্জন, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, সাইকোথেরাপিস্ট, প্যাথলজিস্ট, ক্যান্সার কেয়ার নার্সসহ সকলের মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের জন্য।

সচেতন হতে হবে

একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, ক্যান্সার কঠিন রোগ হলেও এর উপযুক্ত চিকিৎসা রয়েছে। রোগীদের সচেতনতা এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সচেতনতা রোগটিকে প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয়ে সাহায্য করবে।
https://www.jugantor.com/lifestyle/86846/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%B9%E0%A7%9F

39
Cancer / রক্তের ক্যানসার কেন হয়
« on: July 09, 2019, 04:11:28 PM »
• ব্লাড ক্যানসার ছোঁয়াচে বা সংক্রামক নয়
• ব্লাড ক্যানসার ছোট–বড় যে কারও হতে পারে

ব্লাড ক্যানসার বা রক্তের ক্যানসার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত। সময়ের সঙ্গে এ ধরনের রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি পাল্টেছে, অনেক উন্নতিও লাভ করেছে।

মূলত লিউকেমিয়াকে আমরা ব্লাড ক্যানসার বলে থাকি। এটি হলো রক্তকোষের ক্যানসার, বিশেষত শ্বেত রক্তকণিকার ক্যানসার। রক্তকোষ তৈরি হয় বোনম্যারো বা অস্থিমজ্জায়, তারপর ধাপে ধাপে পরিপক্ব বা পরিণত হয়ে অবশেষে এটি রক্তে আসে। যদি কোনো কারণে অতিমাত্রায় ও অস্বাভাবিকভাবে এই রক্তকোষ তৈরি হয়, তাহলে সেগুলো পরিপক্ব হতে পারে না। এতে প্রচুর অপরিপক্ব ও অস্বাভাবিক রক্তকোষ রক্তপ্রবাহে চলে আসে। মূলত শ্বেত রক্তকণিকাই বেশি আক্রান্ত হয়। কিন্তু ক্রমে অস্থিমজ্জা পুরোপুরি আক্রান্ত হওয়ার কারণে রক্তের অন্যান্য কোষের অভাবও দেখা দেয়।
কেন হয়?

ব্লাড ক্যানসার কেন হয় তার সঠিক কারণটি এখনো অস্পষ্ট। নানা ধরনের তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব, রাসায়নিক বর্জ্য, ধূমপান, কৃত্রিম রং, কীটনাশক, ভাইরাস ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়। এগুলোর প্রভাবে জিনে মিউটেশন ঘটে যায় ও কোষ বিভাজনে অস্বাভাবিক উল্টাপাল্টা সংকেত প্রবাহিত হয়। তখন কোষ বিভাজনে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, অপরিণত অস্বাভাবিক কোষ রক্তপ্রবাহে চলে আসে। ব্লাড ক্যানসার ছোঁয়াচে বা সংক্রামক নয়। ব্লাড ক্যানসার ছোট–বড় যে কারও হতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন?

দীর্ঘদিনের জ্বর, রক্তশূন্যতা, ত্বকে লাল র‌্যাশ, দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্তপাত, হাড়ে ব্যথা, বারবার সংক্রমণ ইত্যাদি সব উপসর্গ নিয়ে প্রকাশ পেতে পারে ব্লাড ক্যানসার। অনেক সময় কেবল রুটিন পরীক্ষা করতে গিয়েই ধরা পড়ে। রক্তের কাউন্ট ও পেরিফেরাল ব্লাড ফিল্মই বেশির ভাগ সময় রোগ ধরিয়ে দেয়। তবে বোনম্যারো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয়। ফ্লো সাইটোমেট্রি, ইমিউনোফেনোটাইপিং ইত্যাদি আধুনিক পরীক্ষা এখন সরকারি হাসপাতালগুলোতেই হচ্ছে। সাইটোজেনেটিকস করলে রোগের কেমোথেরাপির ধরন সম্পর্কে ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, রোগ সারাইয়ের সম্ভাবনা আঁচ করা যায়।

লিউকেমিয়া চিকিৎসায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। শিশুদের একিউট লিউকেমিয়ার চিকিৎসায় নিরাময়ের হার উন্নত বিশ্বে ৯০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ও আধুনিক কেমোথেরাপি রোগীদের সেরে ওঠার আশার আলো দেখাচ্ছে।
https://www.prothomalo.com/life-style/article/1591907/%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%B9%E0%A7%9F

40
ক্যান্সার বা কর্কটরোগ অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি। এখনও পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কারণ, প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ সহজে ধরা পরে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোনও চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। বাস্তবিক অর্থে এখনও পর্যন্ত ক্যান্সারের চিকিত্সায় পুরোপুরি কার্যকর কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। ক্যান্সার সারানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিত্সাপদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে এই রোগ সারানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি। ২০০ প্রকারেরও বেশি ক্যান্সার রয়েছে। প্রত্যেক ক্যান্সারই আলাদা আলাদা এবং এদের চিকিত্সাপদ্ধতিও আলাদা। বর্তমানে ক্যান্সার নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে এবং এ সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্বের সমস্ত প্রাণীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের সমন্বয়ে গঠিত। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারণভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়।

সাধারণভাবে বলতে গেলে, যখন এই কোষগুলো কোনও কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়। একেই টিউমার বলে। এই টিউমার বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে। বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পাওয়া কলাকে নিয়োপ্লাসিয়া (টিউমার) বলে, এবং সেরকম ক্রিয়াযুক্ত কোষকে নিয়োপ্লাস্টিক কোষ বলে। নিওপ্লাস্টিক কোষ আশেপাশের কলাকে ভেদ করতে না-পারলে তাকে বলে নিরীহ বা বিনাইন টিউমার। বিনাইন টিউমার ক্যান্সার নয়। নিওপ্লাসিয়া কলা ভেদকক্ষমতাসম্পন্ন হলে তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার, এবং তার অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনক্ষম ভেদক ক্ষমতাযুক্ত কোষগুলিকে ক্যান্সার কোষ বলে। অনেক ক্যান্সার প্রথমে বিনাইন টিউমার হিসাবে শুরু হয়, পরে তার মধ্যেকার কিছু কোষ পরিবর্তিত (ট্রান্সফর্মেসন) হয়ে ম্যালিগন্যান্ট (অর্থাত ভেদকক্ষমতাযুক্ত) হয়ে যায়। তবে বিনাইন টিউমার ক্যান্সারে পরিবর্তিত হবেই তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিছু বিনাইন টিউমারসদৃশ ব্যাধি আছে যাতে ক্যান্সার হওয়া অবশ্যম্ভাবী - এদের প্রি-ক্যান্সার বলে। নামে বিনাইন অর্থাত নিরীহ হলেও, বিনাইন টিউমারও চাপ দিয়ে আশেপাশের কলার ক্ষতি করতে পারে। মেটাস্টাসিস হলো ক্যান্সারের একটি পর্যায়, যাতে ক্যান্সার কোষগুলি অন্যান্য কলাকে ভেদ করে ও রক্ত, লসিকাতন্ত্র (Lymphatic System) ইত্যাদির মাধ্যমে দূরবর্তী কলায় ছড়িয়ে যায়।

এখন প্রশ্নে হচ্ছে, কেন ক্যান্সার হয়? ক্যান্সার কি একটি আধুনিক রোগ? এর কোনো বংশগত কারণ আছে কি? পরিবেশ কি এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখে? চলুন আজকের 'স্বাস্থ্য ও জীবন' অনুষ্ঠানে আমরা এ প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করি।

অনেকে মনে করেন, ক্যান্সার একটি আধুনিক রোগ। আসলে এটা ঠিক নয়। প্রাচীন মিসর ও প্রাচীন গ্রিসের চিকিত্সরা 'ক্যান্সারের' উপসর্গ বর্ণনা করে গেছেন। এ ছাড়া, ৩ হাজার বছর আগের মানব জীবাশ্ম থেকে ক্যান্সারের লক্ষণ খুঁজে পেয়েছেন আধুনিক বিজ্ঞানীরা। হ্যাঁ, ক্যান্সার আধুনিক রোগ নয়, এর ইতিহাস মানবজাতির মতো সুদীর্ঘকালের। প্রাচীনকালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আধুনিক প্রযুক্তি ছিল না। অনেক তথ্য লিপিবদ্ধও হতো না। তাই বলে এটা মনে করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই যে, সুদূর অতীতের মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতো না।

ক্যান্সারের ইতিহাস যা-ই হোক, কেন মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, তা জানতে আধুনিক চিকিত্সাবিজ্ঞান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। কারণটা জানা গেলে তার প্রতিরোধের ব্যবস্থাও করা যেত। আমরা শুধু বলতে পারি, কিছু কিছু কারণে ক্যান্সার হবার আশঙ্কা বাড়ে।

ক্যান্সার কি বংশগতভাবে ছড়াতে পারে? হ্যা, ক্যান্সারের সাথে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে পরিবারের কেউ যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তবে তার উত্তরসূরিদেরও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খানিকটা হলেও বাড়ে। তবে পিতার ক্যান্সার হলে, পুত্রেরও ক্যান্সার হবে, এমন কোনো কথা নেই। আবার বিরল হলেও, এমন ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে যে, পরিবারের বেশ কয়েকজন ভাইবোন একে একে ব্লাড ক্যান্সারে মারা গেছেন।

মা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে, মেয়েরও স্তন ক্যান্সার হতে পারে। এক্ষেত্রে আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে বেশি। বিখ্যাত অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মা স্তন ক্যান্সাএ আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমরা অনেকেই জানি, জোলি নিজেও এ ক্যান্সারের রোগী। তাকে নিজের দুটো স্তনই কেটে ফেলতে হয়েছে। অবশ্য, স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। মোদ্দা কথা, ক্যান্সারের বংশগত বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট নয়।

রাসায়নিক পদার্থের সাথে ক্যান্সারের অনেক বড় একটা সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, মেসোথেলিওমিয়া-তে (এক ধরনের দূর্লভ ক্যান্সার, এতে ফুসফুসের চারপাশ এবং পেটের দিকের কোষগুলো আক্রান্ত হয়) আক্রান্তদের ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই এসবেস্টস ধাতুর সংস্পর্শে আসার কারণে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। সাধারণত জাহাজ তৈরির শিল্পের সাথে যারা জড়িত তাদের এই ধাতুর সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। এ কারণেই অনেক দেশে এই ধাতুর ব্যবহার নিষিদ্ধ। একইভাবে রঙের কারখানা, রাবার বা গ্যাসের কাজে যারা নিয়োজিত তারা একধরনের বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে মুত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে অনেক দেশে এসব রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশগত কারণের অন্যতম একটা হচ্ছে সূর্য। রোদে বেশিক্ষণ থাকার কারণে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তেজস্ক্রিয়তার কারণেও বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র ২০০৮ সালে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, ক্যান্সারে আক্রান্তদের ১৯ শতাংশই বিরূপ পরিবেশের কারণে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এতে প্রতিবছর ১৩ লাখ লোক প্রাণ হারান। হু'র আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণালয় ১০৭টি বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ চিহ্নিত করেছে, যেগুলো মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। এসবেস্টসের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। স্টিল কাস্টিং, অ্যালুমিনিয়াম, চামড়ার গুড়া ইত্যাদিও এ তালিকায় আছে। যদি আপনি এসব রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করেন বা আপনার পেশার সাথে যদি এসব পদার্থে সংশ্লিষ্টতা থাকে, তবে আপনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন, এমন আশঙ্কা বেশি। অতএব সাবধাণতা অবলম্বন করুন। প্রয়োজনে পেশা পরিবর্তন করুন, বা বাসস্থান পরিবর্তন করুন।

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনপদ্ধতির সাথেও ক্যান্সারের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। যেমন, ধুমপান বা মদ্যপানের সাথে ফুসফুস, মুখ ও কণ্ঠনালীর এবং যকৃত বা লিভারের ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে। তেমনিভাবে পান-সুপারি, জর্দা, মাংস, অতিরিক্ত লবণ, চিনি ইত্যাদি খাবারের সাথেও ক্যান্সারের যোগসূত্র রয়েছে। যারা সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম কম করেন তাদের মধ্যেও ক্যান্সারের প্রবণতাটা বেশি।

আবার ক্যান্সারের সাথে বয়সের একটা সম্পর্কও খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সাধারণত বয়স যত বাড়তে থাকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে। কারণ এ সময়ে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক হিসেবে দেখা যায় যত মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তাদের শতকরা ৭০ ভাগেরই বয়স ৬০ বছরের ওপর।

আলিম: ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী? কোন লক্ষণ দেখলে আমরা বুঝবো যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছি? একেক ক্যান্সারের জন্য একেক ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ হচ্ছে:

• খুব ক্লান্ত বোধ করা

• ক্ষুধা কমে যাওয়া

• শরীরের যে কোনো জায়গায় চাকা বা দলা দেখা দেওয়া

• দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ভাঙ্গা

• মলত্যাগে পরিবর্তন আসা (ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মলের সাথে রক্ত যাওয়া)

• জ্বর, রাতে ঠান্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া

• অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমা

• অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া

• ত্বকের পরিবর্তন দেখা যাওয়া

ক্যান্সারের চিকিত্সায় আধুনিক চিকিত্সকরা বেশ কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করেন।

অস্ত্রোপচার: শরীরের যে জায়গাটি ক্যান্সার আক্রান্ত হয় সেটির ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো এবং তার আশেপাশের কোষগুলোকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে সরিয়ে ফেলা হয়। ক্যান্সার যদি অল্প একটু জায়গা জুড়ে থাকে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে এ ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

রেডিওথেরাপি: নিয়ন্ত্রিতভাবে শরীরের অংশবিশেষে তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করে সেই জায়গার ক্যান্সার-কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়।

কেমোথেরাপি: এই ব্যবস্থায় ক্যান্সারকোষকে ধ্বংস করতে অ্যান্টি-ক্যান্সার (সাইটোটক্সিক) ড্রাগস বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ৫০টিরও বেশি ধরনের কেমিওথেরাপি ওষুধ রয়েছে। এগুলোর কোনোটা ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসেবে খেতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ওষুধগুলোকে স্যালাইনের সাথে বা অন্য কোনোভাবে সরাসরি রক্তে দিয়ে দেওয়া হয়। রক্তের সাথে মিশে এই ওষুধগুলো শরীরের যেখানে যেখানে ক্যান্সার কোষ রয়েছে সেখানে গিয়ে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে।

হরমোন থেরাপি: শরীরের কিছু হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন করার মাধ্যমে এই চিকিত্সা করা হয়। শরীরের বৃদ্ধির সাথে হরমোনের একটা সম্পর্ক রয়েছে। কোনো কোনো ক্যান্সার এ হরমোন দ্বারা প্রভাবিত হয়। ফলে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে ক্যান্সারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হরমোন থেরাপি ব্যবহৃত হয়।

সহায়ক চিকিত্সা: ক্যান্সারের শারীরিক চিকিত্সার পাশাপাশি রোগীদের মানসিক চিকিত্সার ব্যাপারে এখন জোর দিচ্ছেন চিকিত্সকরা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীরা বেশ মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যান, অনেকে মানসিকভাবে ভেঙ্গেও পরেন। এ কারণে অনেক সময় তাদের অবস্থা বেশি গুরুতর না হলেও অনেকে দ্রুত মারা যান। ফলে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন চিকিত্সকরা এবং উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের সেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংগঠন কাজও করে যাচ্ছে। এর মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তদের গ্রুপও দেখা যায়। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করেন। এর পাশাপাশি যোগ, মেডিটেশন ইত্যাদির মাধ্যমেও রোগীদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার শিক্ষা দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি মানসিক স্বস্তির জন্য কেউ যদি ধর্মীয় বা সামাজিক কোনো কাজে নিয়োজিত হতে চান সে ব্যাপারেও তাদেরকে উত্সাহ দেওয়া হয়।

এসব ছাড়া, বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন ক্যান্সারের চিকিত্সায় অব্যর্থ ওষুধ আবিস্কারের। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে এ ধরনের ওষুধ তৈরির ব্যাপারে এখন গবেষণা চলছে। এছাড়াও ক্যান্সারের ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখনো এগুলো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

ক্যান্সার থেকে বাঁচতে চিকিত্সকরা কিছু সাবধানতা অবলম্বন করার কথাও বলেন, বলেন কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার কথা। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এভাবে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকখানি কমানো যায়।

নিয়মিত ব্যায়াম: প্রত্যেকদিন নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা; যেমন-দৌড়ানো, সাইকেল চালনো, নাচ করা, হাঁটা।

খাদ্যভ্যাস: ধূমপান বা মদ্যপান ছেড়ে দেওয়া বা পরিমাণে কমিয়ে আনা। পান-সুপারি জর্দা, তামাকপাতা খাওয়া বন্ধ করা। চর্বিজাতীয় পদার্থ কম খাওয়া। সম্ভব হলে মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া বা কমিয়ে দেওয়া। প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি, ফলমূল এবং আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া।

সচেতনতা: বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন মেখে বের হওয়া। নিয়মিত ডাক্তার দেখানো। সেটা সম্ভব না-হলে শরীরে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া। ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে অবশ্যই নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গিয়ে শরীর পরীক্ষা করানো।

http://bengali.cri.cn/941/2015/05/17/41s155126.htm

41
ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ তামাক গ্রহণ। প্রতিদিন যারা দুই থেকে তিন প্যাকেট সিগারেট সেবন করেন এবং ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে সেবন করেন, এদের মধ্যে ৯০ ভাগ লোকের ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আজ শুক্রবার (১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৪৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক অধ্যাপক ডাক্তার সৈয়দ মোহম্মদ আকরাম হোসেন।

প্রশ্ন : ফুসফুস ক্যান্সারের উপসর্গ কী?

উত্তর : ফুসফুসের ক্যান্সারের অনেক লক্ষণ রয়েছে। যদি টিউমারের আকার ছোট হয় তাহলে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। যদি টিউমারের পরিমাপ বড় হয় তখন লক্ষণ দেখা যায়। তখন কাশি থাকে এবং কাশির সঙ্গে রক্ত ঝরে। এ ছাড়া শরীরের ওজন কমে আসে, গলার স্বর ভেঙে যায়।

প্রশ্ন : কারো যদি ফুসফুসে ক্যান্সার হয় তবে কোনো ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?

উত্তর : যখন টিউমারটি ছোট থাকে, সুস্থ হওয়ার মতো, তখন সে ক্ষেত্রে সমস্যা  ধরা পড়ে না। কোনো টিউমার যদি পাশে থাকে সে ক্ষেত্রেও বোঝা যায় না। এটি আস্তে আস্তে বড় হয়ে যায়। যারা ২০ থেকে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ধূমপান করে  তারা যদি এক্সরে করে বা স্ক্রিনিং করে তাহলে অনেক সময় সমস্যা ধরা পড়ে। এ রকম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২৫ ভাগ রোগীকে নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে।

প্রশ্ন : যখন এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আসে তখন কী কী পরামর্শ দিয়ে থাকেন এবং আপনাদের চিকিৎসা পদ্ধতিটি কীভাবে শুরু করেন?

উত্তর : সাধারণত প্রথম দিকে চিকিৎসকের কাছে যখন এই সমস্যাগুলো নিয়ে আসেন তখন ফাইনিরিলিস স্পিডিশন সাইটোলজি করতে বলা হয় এবং সিটি গাইটেট করা হয়। এগুলো করলে আমরা জানতে পারি কোন ধরনের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে ব্যক্তিটি। পরবর্তী সময়ে দেখা হয় এটি অন্য কোথাও ছড়িয়েছে কি না। সে ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম, বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা এবং হাড় পরীক্ষা করা হয়। যদি না ছড়িয়ে থাকে তাহলে এক রকমের চিকিৎসা এবং ছড়িয়ে থাকলে আরেক ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এতে আবার কোষের ভিন্নতা রয়েছে। একটাকে বলা হয় স্মোলসার ফুসফুস ক্যান্সার। আরেকটিকে বলা হয়, স্কোয়ামাস ফুসফুস ক্যান্সার।

প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে কী ধরনের  চিকিৎসা করা হয়?

উত্তর : প্রথম দিকে ছোট থাকলে অপারেশন করা হয়। বড় হলে রেডিও থেরাপি কেমোথেরাপি করে চিকিৎসা করে থাকি।

প্রশ্ন : অনেকেরই এ সময় মানসিক অবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এ সময় কীভাবে রোগীকে তার মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়? পাশাপাশি চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে আপনাদের পরামর্শ কী হয়?

উত্তর : এটাকে আমরা ব্রেকিং দি বেড নিউজ বলে থাকি। খারাপ সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি পদ্ধতি থাকা দরকার। এ ক্ষেত্রে আমরা তথ্যটি রোগী এবং তার আত্মীয়দের কাছে ধীরে ধীরে পৌঁছাই। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা জানানোর চেষ্টা করি কেমোথেরাপি বা রেডিও থেরাপি কীভাবে দিতে হয়। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কেমন। এগুলো বিস্তারিতভাবে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতা এ সময় খুবই প্রয়োজন হয়।

প্রশ্ন : কেমোথেরাপি এবং রেডিও থেরাপির যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে এগুলো জানানোর পর পরামর্শগুলো রোগীরা কীভাবে নেয়?  এবং এই পরামর্শ তাদের জন্য কতটুকু ভূমিকা পালন করে বলে মনে করেন?

উত্তর : আমরা দেখেছি রোগীরা প্রথম দিকে বিষয়টি মানতে চায় না। আস্তে আস্তে তারা এ পরিস্থিতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নেয়।

প্রশ্ন : চিকিৎসার পর আবার কী সমস্যাটি ফিরে আসে?

উত্তর : দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফুসফুসের ক্যান্সার যদি একেবারেই প্রাথমিক সময় ধরা না যায় তাহলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা পাঁচ বছরের বেশি বাঁচে না। এখন অনেক নতুন কেমোথেরাপি, রিসিপটর বেইজ কেমোথেরাপি চলে এসেছে। সেগুলো দিয়ে আমরা হয়তো একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চেষ্টা করি এতে রোগীকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। আর প্রথম সময়ে যদি ধরা পড়ে তাহলে পাঁচ বছরের বেশি সময় পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা যায়। আসলে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ার উপরে রোগীর সুস্থতা অনেকটা নির্ভর করে।
প্রশ্ন : প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার যাতে ধরা পড়ে সে জন্য কী করা জরুরি?

উত্তর : যারা চেইন স্মোকার তাদের প্রত্যেক বছর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। ধূমপান বন্ধ করতে হবে। তারপর বুকের এক্সরে করে দেখতে হবে কী অবস্থা। তার পরে প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান বা অন্য বিষয়গুলো করতে হবে।

প্রশ্ন : ধূমপায়ীর পরিবারের কী কারো ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে?

উত্তর : দেখা গেছে, যে ধূমপান করছে তার পরিবারের ২৫ ভাগ মানুষের মধ্যে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ধূমপায়ীর অফিসের অন্যদের মধ্যে (২৫ ভাগ) ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

প্রশ্ন : আমাদের দেশের অনেক রোগী বাইরে চলে যাচ্ছে। কেন তারা এমন করে, কী মনে হয়?

উত্তর : সারা বাংলাদেশে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ ক্যান্সারের রোগী আছে। অথচ আমাদের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের সংখ্যা দেড় শরও কম।

বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান অ্যান্ড সার্জন, এ ব্যাপারে কাজ করে থাকে। তারা ফেলোশিপ দিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের আরো ভালো কাজের জন্য কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়া যেত এবং কলেজের বিভাগগুলোকে যদি কলেজ করে দেওয়া হতো তাহলে ভালো হতো। আর যারা নতুন নতুন পাস করে বের হচ্ছে তাদের যদি বিদেশে ছয় মাস বা এক বছরের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেত তাহলে বিশ্বমানের পুরোপুরি সেবাই আমরা বাংলাদেশে দিতে পারতাম।

তবে এখন আমারা বাংলাদেশ অবশ্যই অনেক উন্নতমানের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। আমাদের রোগীরা এখন আগের চাইতে অনেক ভালো আছেন।

প্রশ্ন : রোগীরা যেন বাইরে চিকিৎসার জন্য না যায় সে জন্য বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রতি পরামর্শ কী থাকবে?

উত্তর : অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে চিকিৎসকের নাম ধরে রোগী রেফার করেন চিকিৎসকরা। তার মানে আমাদের প্রতি আস্থা পাচ্ছেন বিদেশের লোকজনও। আর সফলভাবে বাংলাদেশে চিকিৎসা হচ্ছে এটি আমাদের কাছে আশার ব্যাপার।

45
Diabetics / Gestational diabetes symptoms
« on: July 09, 2019, 02:31:29 PM »

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 29