Daffodil International University

Career Development Centre (CDC) => Education => Articles and Write up => Topic started by: Shamim Ansary on August 24, 2017, 10:55:15 AM

Title: What is our precautions to safeguard the flood?
Post by: Shamim Ansary on August 24, 2017, 10:55:15 AM
বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি কতটুকু?

(https://scontent.fdac5-1.fna.fbcdn.net/v/t1.0-9/20954014_1477376799016428_3645746285003485227_n.jpg?oh=0fecb270c2be2ed61e7d71c2f4904f13&oe=5A242448)
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু

দেশের মানুষকে প্রতিবছর ভাগ্যদেবীর যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়ে নানা সমস্যায় জর্জরিত হতে হয়, বন্যা তার অন্যতম। বিগত বছরগুলোর মতো চলতি বছরও দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চলসহ ২১টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকারে দেখা দিয়েছে। পানির ঢল, ব্যাপক নদীভাঙন আর প্রবল বন্যায় গৃহহীন, সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। বন্যার কারণে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে রাস্তায়, স্কুল-কলেজে নির্ঘুম ও দুশ্চিন্তাযুক্ত মনে রাত পার করছে অসহায় ওই মানুষগুলো। প্রতি মুহূর্তে তারা ভোগ করছে নিদারুণ ও অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট আর যন্ত্রণা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর বন্যা বিপর্যয়ে এ পর্যন্ত ১১৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, দেশের ২১ জেলায় ৩২ লাখ ৮৭ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে অবশ্য বন্যার ভয়াবহতার মাত্রা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বন্যাকবলিত এ পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ওই বিপুল জনগোষ্ঠীকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ, সাহায্য-সহযোগিতা ইত্যাদি সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কি না? পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বন্যার্ত মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বটে; কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় সামান্য। বন্যাকবলিত জেলাগুলোর শহর ও উপজেলা পর্যায়ে বা যাতায়াত করা সহজ—এমন এলাকাগুলোতে কিছু ত্রাণ তত্পরতা থাকলেও বন্যাকবলিত অনেক জেলায়, বিশেষ করে যেসব জেলায় দুর্গম চরাঞ্চল রয়েছে, সেখানে ত্রাণ নিয়ে তেমন কেউ যাচ্ছে না বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে এমন অনেক চর রয়েছে, যেখানকার লোকজন স্বাভাবিক শুষ্ক মৌসুমেই অভাব-অনটনের মধ্যে থাকে।

তারা এখন কতটা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে বন্যার গত পাঁচ দিনে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ত্রাণ যায়নি এমন খবরও পাওয়া গেছে। আর বন্যাকবলিত এসব জেলার অনেক মানুষই যে এখন ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত সে কথা বলাই বাহুল্য। এবারের ভয়াবহ বন্যায় জনজীবন যেভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, যত টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে, তা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘটেনি বলে জানা যায়। বন্যার প্রভাবে কিছু কিছু এলাকার চিত্র এমন দাঁড়িয়েছে যে যেসব জায়গায় এই কিছুদিন আগেও যেখানে লোকালয় ছিল; কিন্তু বন্যার কারণে আজ সেখানে লোকালয় বলে কিছু নেই। বন্যায় বসতবাড়ি ডুবে যাওয়ার কারণে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বাঁধ বা উঁচু স্থানে।

এবারের বন্যায় বন্যাকবলিত জেলাগুলোর বেশির ভাগ স্থানের নলকূপ ডুবে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকটও দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ-ব্যাধি। এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয় যে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বন্যা ও বন্যাপরবর্তী সময় নানা ধরনের রোগ-বালাই দেখা যায়। এর মধ্যে পানিবাহিত রোগের প্রভাবই বেশি দেখা যায়। বন্যার সময় ময়লা-আবর্জনা, মানুষ ও পশু-পাখির মলমূত্র এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা একত্র হয়ে এসব উৎস থেকে জীবাণু বন্যার পানিতে মিশে যায় এবং তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে বন্যায় সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার বেড়ে যায়। বন্যায় আক্রান্ত মানুষ যেন পানিবাহিত রোগ থেকে সহজেই রক্ষা পেতে পারে সে জন্য সরকারি-বেসকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে অবশ্যই সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে। আর এসব মানুষ যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কাজেই নিরাপদ পানি ব্যবহার করে তা জানাতে হবে। এর পাশাপাশি এও জানাতে হবে যে তারা যেন বন্যার পানি বা বন্যায় তলিয়ে যাওয়া নলকূপ, কুয়া বা অন্য কোনো উেসর পানি জীবাণু দ্বারা দূষিত থাকায় কোনো অবস্থায়ই এসব পানি দিয়ে হাত-মুখ না ধোয়, কুলি না করে বা পান করা থেকে বিরত থাকে। বন্যার পানিতে গোসল করা, কাপড়চোপড় ধোয়া, থালাবাসন পরিষ্কার করা থেকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। বন্যার পানি ফুটিয়ে পান করার ব্যাপারেও বন্যায় আক্রান্তদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। তবে পানিফোটানোর জন্য জ্বালানির সংকট থাকলে বা ফোটানো সম্ভব না হলে ক্লোরিনের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

চলতি বছর দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলসহ ২১টি জেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে এক প্রকার বাধ্য হয়েছে। দেখা গেছে, উত্তরাঞ্চলের পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতিবছর দেশে বন্যা হলেও বন্যা মোকাবেলায় সরকারসহ জনগণের পক্ষ থেকে কেন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকে না? কেন বন্যা প্রতিরোধ করার জন্য উপযুক্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না? এ ক্ষেত্রে সমস্যা কী কী কিংবা সমস্যা কোথায়? আবার সরকার, বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠনসহ সবার পক্ষ থেকে বন্যা মোকাবেলায় চলতি বছর বন্যাকবলিত মানুষের জন্য উল্লেখযোগ্য তেমন কী করা হয়েছে? সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছরই বন্যার সময় বলতে শোনা যায় যে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে; বন্যায় আক্রান্ত এলাকায় ত্রাণের অভাব নেই ইত্যাদি। এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিবছর দেশের বন্যাকবলিত জেলায় যে পরিমাণ আশ্রয়কেন্দ্র থাকা প্রয়োজন, সেই তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্র নেই। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে স্থান পাওয়া মানুষের সংখ্যা নগণ্য। অসংখ্য মানুষ তখন এক প্রকার বাধ্য হয়েই খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করে, যা মানবিকতা বিপর্যয়ের ভয়াবহ রূপ। এসব মানুষের জন্য শুধু চালই যথেষ্ট নয়। বিশুদ্ধ খাবার পানি, শিশুখাদ্য, ওরস্যালাইনসহ জরুরি ওষুধ-পথ্যেরও প্রয়োজন এসব মানুষের। পাশাপাশি সরকারি ত্রাণসামগ্রী সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করাও জরুরি। বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বন্যাত্রাণের যে সংস্কৃতি কিছুকাল আগেও ছিল। বন্যাদুর্গত মানুষগুলোর প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া আমার, আপনারসহ সবার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। কারণ ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’। তবে এ কথা সবারই স্মরণ রাখা প্রয়োজন, বন্যাকবলিত হওয়ার পর বন্যার্তদের সাহায্য-সহযোগিতা করার চেয়ে বন্যা যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা করা উত্তম। কারণ ‘Prevention is better than cure’। আগামী দিনগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে যেন বন্যায় আক্রান্ত জেলাগুলোর বিভিন্ন জায়গা চিহ্নিত করে সঠিক উপায়ে বাঁধ ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়, নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোয় জিও টিউব (বালুর বড় বড় বস্তা) ফেলার ব্যবস্থা করা, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করাসহ এমন সব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় যেন সহজেই বন্যা মোকাবেলা করা যায়। আর এসব কিছু সম্ভব হলে অর্থাৎ বন্যা মোকাবেলা করার সব প্রস্তুতি পর্যাপ্ত হলে এবং শেষ পর্যন্ত এর সঠিক বাস্তবায়ন ঘটলে নিশ্চয় দেশের জনগণকে তখন আর বন্যার ফলে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে না।

লেখক : ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক

Source: http://www.kalerkantho.com/print-edition/sub-editorial/2017/08/22/534572