Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Saeed Ahsan Khalid

Pages: [1]
1

সম্রাট বাহাদুর শাহ্ জাফর বা ২য় বাহাদুর শাহ্ (অক্টোবর ২৪, ১৭৭৫ - নভেম্বর ৭, ১৮৬২) মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট। সোয়া তিন শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী, দিল্লীর মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বশেষ প্রতিনিধি, মরমী কবি ও সুফী সাধক সম্রাট বাহাদুর শাহ্ জাফরের জীবন ইতিহাসের বড় ট্র্যাজেডি হয়ে আছে। তার রচিত কবিতা ও গজল এই ভাগ্যবিডম্বিত সম্রাটের নির্বাসিত জীবনের একাকীত্ব, বিষাদ আর অসহায়ত্তের অনবদ্য সাক্ষ্য বহন করছে। যে কয়েকজন প্রবাদপুরুষ অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেম ও চরম আত্মত্যাগের পরিচয় দিয়েছিলেন, এই বাংলার মাটিতে স্বাধীনতার স্বপ্নবীজ বপন করেছিলেন তন্মধ্যে সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন সম্রাট বাবর, আকবর, জাহাঙ্গীর ও শাহজাহানের উত্তরসূরী শেষ মুঘল সম্রাট, মুঘল সাম্রাজ্যের মহাদুর্দিনে তিনি ভারতবর্ষের ক্ষমতা গ্রহণ করেন।

সম্রাট হলেও তিনি ছিলেন নামমাত্র সম্রাট। বাহাদুর শাহ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পেনশনভোগী ছিলেন। তিনি বার্ষিক ১ লাখ টাকা ভাতা পেতেন। ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও সম্পদ সব কিছু হারিয়ে সম্রাট প্রাসাদের চার দেয়ালের অভ্যন্তরে জীবন কাটাতে বাধ্য হলেন। এ সময় অমর্যাদার মনোবেদনা ভুলে থাকার জন্য তিনি গজল ও মুশায়েরায় নিমগ্ন থাকতেন ; লালকেল্লায় সাহিত্যের আসর বসিয়ে সময় কাটাতেন। তিনি নিজেও কবিতা লিখতেন। জীবনের কষ্ট ও বিষাদ তাঁর কবিতার মূল বিষয়। তাঁর কবিতার ছত্রে ছত্রে দু:খ ও বিষাদের সাথে দেশ ও জাতির পরাধীনতার কথা বিধৃত। একটি কবিতায় আছেঃ

“Umer e daraz mang ka lae the char din,
Do arzo me kat gae; do intezar me.”

যার অর্থ:

"চার দিনের জন্য আয়ু নিয়ে এসেছিলাম। দু’দিন কাটল প্রত্যাশায় আর দু’দিন অপেক্ষায়।"

বাহাদুর শাহ সিংহাসনে আরোহণের ২০ বছর পর সূত্রপাত হয় ঐতিহাসিক সিপাহি বিদ্রোহের। পলাশী যুদ্ধের পর ১০০ বছর কেটে গেছে তত দিনে। ১১ মে সিপাহিরা দিল্লি অধিকার করে বহু ইংরেজকে হত্যা ও বিতাড়ন করেন। দেশপ্রেমিক সিপাহিরা এ দিন লালকেল্লায় প্রবেশ করে নামেমাত্র মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরকে ভারতের স্বাধীন সম্রাট বলে ঘোষণা করেন। সিপাহিরা সম্রাটের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে শপথ নেন। এ দিন গভীর রাতে লালকেল্লায় একুশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে ৮২ বছরের বৃদ্ধ সম্রাটকে দেওয়ান-ই খানোস এ সম্মান জানানো হয়। বাহাদুর শাহ জাফর সিপাহিদের বিপ্লব তথা ভারতবর্ষের প্রথম সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন¬ এ সংবাদে একের পর সেনাছাউনিতে বিদ্রোহ হতে থাকে। ইংরেজরা অতি নির্মমভাবে বিদ্রোহ দমন করে। এক ঘণ্টার এ যুদ্ধে ৪১ জন দেশীয় সিপাহি নিহত হন। আর বন্দি হন বেশ কয়েকজন। রাজপুত্রদ্বয়ের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বৃদ্ধ, নির্যাতিত সম্রাটের নিকট পাঠিয়ে দেয়া হলো। পুত্র যুগল ও অন্যান্য প্রিয়জনের করুণ ও নির্মম পরিণতি প্রত্যক্ষ করে সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। বন্দি দেশি সিপাহিদের আন্টাঘরের ময়দানে (বর্তমান বাহাদুর শাহ পার্কে) সবার সামনে গাছে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়া হয়। দেশি প্রজারা যাতে ভয় পায় সে জন্য ফাঁসির ব্যবস্থা করা হয়েছিল জনসমক্ষে। তবে সেদিন অকুতভয় এ বীরসেনানিরা স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছিলেন ফাঁসির রজ্জু। সিপাহি বিপস্নবের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে মুঘল বাদশাহ বাহাদুর শাহের স্মৃতিতে ভিক্টোরিয়া পার্ক নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক, মুক্তিকামী মানুষের শৌর্য-বির্যের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশের পুরনো ঢাকায় এখনো সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে বাহাদুর শাহ পার্ক।

সম্রাটকে বিচারের নামে প্রহসনের আদালতে দাঁড় করানো হয়। হাজির করা হয় বানোয়াট সাক্ষী। বিচারকরা রায় দেন, দিল্লির সাবেক সম্রাট ১০ মে থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংগঠনের দায়ে অপরাধী। তার শাস্তি চরম অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। কিন্তু তার বার্ধক্যের কথা বিবেচনা করে প্রাণ দণ্ডাদেশ না দিয়ে তাঁকে বার্মার (বর্তমান মায়ানমার) রেঙ্গুনে (বর্তমান ইয়াঙ্গুন) নির্বাসনে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়। ১৮৫৮ সালের ৯ ডিসেম্বর সম্রাট ও তার পরিবারকে বহনকারী জাহাজ রেঙ্গুনে পৌঁছে। ব্রিটিশ বাহিনীর ক্যাপ্টেন নেলসন ডেভিসের বাসভবনের ছোট গ্যারেজে সম্রাট ও তার পরিবার-পরিজনের বন্দিজীবন শুরু হয়। সম্রাটকে শুতে দেয়া হয় একটা পাটের দড়ির খাটিয়ায়। ভারতের প্রিয় মাতৃভূমি থেকে বহু দূরে রেঙ্গুনের মাটিতে সম্রাটের জীবনের বাকি দিনগুলো চরম দু:খ ও অভাব অনটনের মধ্যে কেটেছিল। ইংরেজ সরকার নির্বাসিত সম্রাট ও তার পরিবারের ১৬ জন সদস্যের জন্য খোরাকি বাবদ দৈনিক এগার টাকা এবং প্রতি রোববারে বার টাকা করে দিতেন। আর মাসের পহেলা দিনে সাবান, তোয়ালে কেনার জন্য মাথাপিছু দু'টাকা করে দিতেন। কোনো লোককে তাদের সাথে দেখা করতে দেয়া হতো না। চাকর-বাকররা পাস নিয়ে তাদের কাছে যেতে পারতো। কারাগারের অভ্যন্তরে এক বদ্ধ প্রকোষ্ঠে, শতরকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মধ্যেই তিনি রচনা করেছিলেন অসংখ্য সুবিখ্যাত পংক্তিমালা, গজল, শায়েরি। সম্রাটের ইচ্ছা ছিল স্বদেশের মাটিতে সমাহিত হওয়া। জন্মভূমির প্রতি ছিল প্রচণ্ড অনুরাগ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন জীবনের শেষ সময় ঘনিয়ে আসছে। স্বদেশের মাটিতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ কিংবা সমাহিত হওয়ার সাধ কোনোটাই পূরণ হবে না। নিদারুণ দু:খে তিনি লিখেছেন একের পর এক কালোত্তীর্ণ কবিতা। এই মর্যাদাহীন ‘সম্রাট’ উপাধি কে উপহাস করে বিষাদ কণ্ঠে তিনি বলছেনঃ

“ya mujhe afsar-e-shahana banaya hota,
ya mera taj gadayana banaya hota”


ইংরেজি অনুবাদে অর্থ হলঃ

“You should have made me the chief of the kings or
Instead you should have given me a crown that a beggar may wear.”


নিম্নোক্ত কবিতাটি সম্রাটের কবরের এপিটাফে খোদিত আছে যেটিতে সম্রাটের ভাগ্যবিডম্বিত অন্তরাত্মার করুণ চিত্র ফুটে উঠেঃ

“kitnaa hai bad-nasiib “Zafar”
dafan ke liye do Ghaz zamiin bhii na milii kuu-e-yaar me”

অর্থঃ

“এতই হতভাগা জাফর, যে তার দাফনের প্রয়োজনে,
স্বজনের দেশে দু’গজ মাটি- তাও মিললনা।"

সম্রাট অন্য এক কবিতায় খেদোক্তি করে নিজের জীবনের অসারতার কথা বর্ণনা করছেনঃ

“Na kisi ki aankh ka noor hoon,
Na kisi ke dil ka quaraar hoon
Jo kisi ke kaam na aa sake,
Main voh ek musht-e-ghobaar hoon
Mera rang roop bigad gaya,
Mera yaar mujhse bichhad gaya
Jo chaman fizaa mein ujad gaya,
Main ussi ki fasle bahaar hoon”

যেটির ইংরেজি অনুবাদ করলে দাড়ায়ঃ
“I am no one's light of the eye,
Neither am I any heart's solace
One that can never be useful to anyone,
I am that handful of dust
My appearance has been ruined,
My lover has been lost
I am the crop of the spring,
Of the garden that wilted in its bloom”


অভাব, অনটন, উপেক্ষা আর অবহেলায় বিডম্বিত সম্রাট পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হলেন। এমন বিড়ম্বনাপূর্ণ জীবনের অবসান হয় ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ নভেম্বর, শুক্রবার ভোর ৫টায়। সম্রাটকে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে রেঙ্গুন শহরের এক নির্জন এলাকায় অতি দীন-হীনভাবে, খুবই তাচ্ছিল্যের সাথে সমাহিত করে ইংরেজ সরকার। কবরটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য, যা একসময় নষ্ট হয়ে যাবে, ঘাসগুলো গোটা জায়গা আচ্ছাদিত করে ফেলবে। কোথায় সর্বশেষ মুঘল সম্রাট শায়িত আছেন, তার চিহ্নও কেউ খুঁজে পাবে না। পরে তার আসল কবর আবিষ্কৃত ও সমাধিসৌধ নির্মিত হয়। সম্রাটের প্রিয়তমা স্ত্রী জিনাত মহল মারা যান ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে। সম্রাটের পাশেই রয়েছে তার সমাধি।

সম্রাট ও তার প্রিয়জনদের সমাধি হয়ে উঠেছে যুগ যুগ ধরে দেশপ্রেমিকদের তীর্থ স্থানের মতো। ইন্তেকালের দেড় শতাব্দী পরও সম্রাট বাহাদুর শাহ্ জাফর আজো ভক্তদের হৃদয়ে অমলিন। প্রতি জুমাবার দিন নামাজের পরে আর ঈদের দিনে মুশায়ারার মাহফিল বসে। পঠিত হয় বাহাদুর শাহ’র অমর কাসীদা সমুহ। স্মরণ করা হয় এই উপেক্ষিত, বঞ্চিত, ভাগ্যপীড়িত কবিকে।

সন্দেহ নেই সম্রাট বাহাদুর শাহ্ জাফর ইতিহাসের এক ট্র্যাজিক নায়ক যার জীবন বিষাদ, বঞ্চনা, অবহেলা আর উপেক্ষার পদাবলীতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। তবু তিনিই আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, আমাদের চেতনার অঙ্কুরোদগম তাঁর হাত ধরেই হয়েছে। তাই আমাদের ইতিহাসের কাছে ফিরতে হবে- বিপ্লবের ব্যর্থতা কেবল শোকগাথা নয়; নতুন প্রজন্মের কাছে উপনিবেশবাদ আর সাম্রাজ্যবাদকে শনাক্ত করারও দিকনির্দেশনা। আমরা চিনতে চাই হতভাগ্য সম্রাট বাহাদুর শাহকে, তাঁর সময়কাল কে, চিনতে চাই অতীতের সঙ্গে বর্তমানের নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী মায়ানমার সফরে গিয়ে তার সমাধি সৌধ পরিদর্শন করেন। সে সময় তিনি পরিদর্শক বইতে লিখেছিলেনঃ

"দু গজ জমিন তো না মিলি হিন্দুস্তান মে , পার তেরী কোরবানী সে উঠি আজাদী কি আওয়াজ, বদনসীব তো নাহি জাফর, জুড়া হ্যায় তেরা নাম ভারত শান আউর শওকত মে, আজাদী কি পয়গাম সে"।

বাংলায় অনুবাদ করলে দাড়ায়;

"হিন্দুস্তানে তুমি দু গজ মাটি পাও নি সত্য। তবে তোমার আত্মত্যাগ থেকেই আমাদের স্বাধীনতার আওয়াজ উঠেছিল। দুর্ভাগ্য তোমার নয় জাফর, স্বাধীনতার বার্তার মধ্যে দিয়ে ভারতবর্ষের সুনাম ও গৌরবের সঙ্গে তোমার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে"

------------------------------------

সাঈদ আহসান খালিদ
সিনিয়র লেকচারার
আইন বিভাগ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

2
ধর্ষণের ঘটনা এখন নৈমিত্তিক। পত্রিকার পাতা কিংবা খবরের ওয়েব পোর্টালগুলো খুললেই ধর্ষণের অজস্র খবর চোখের সামনে ভেসে উঠে। ধর্ষণের খবরে আমরা আর বেশি আঁতকে উঠি না। নির্লিপ্ত অভ্যস্ততায় আমাদের অসংবেদি চোখ পত্রিকার পাতা উল্টিয়ে বিনোদন পাতায় চলে যেতে সময়ক্ষেপণ করেনা। আবার অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষণের খবরের সরস উপস্থাপনায় অনেকেই খুঁজে পাই বিনোদন উপাদান। সাম্প্রতিক সময়ে নারী নির্যাতন, নারীকে যৌনহয়রানি এবং নারী অবমাননার ঘটনাগুলো গণমাধ্যমে উঠে আসছে,গণমাধ্যমে ধর্ষণের সংবাদ প্রকাশিত হলে সেটার সাথে চাটনি হিসেবে ধর্ষণের আনুমানিক বিবরণ থাকে, এভাবে আরেকদফা শ্লীলতাহানী ঘটে ধর্ষিতার। নারীর উপর পুরুষের বলপ্রয়োগের চরম রূপ ধর্ষণ, যাতে পুরুষ নারীর সম্মতি ছাড়া তাঁর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। ধর্ষিত হওয়া নারীর জন্য মৃত্যুর থেকেও মারাত্মক; ধর্ষিত হওয়ার অভিজ্ঞতা ধসিয়ে দেয় ধর্ষিত নারীর জীবনের ভিত্তিকেই।

যে কোনও সাধারন মানুষের-ই যে ধারণা ধর্ষণ নিয়ে তা হচ্ছে, ধর্ষণ করা হয় শুধুমাত্র কারো সাথে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। এটা আংশিক সত্য মাত্র। ধর্ষণের অনেক শ্রেণীর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘Spousal Rape বা Marital Rape ’, অর্থাৎ নিজের spouse বা স্ত্রীকে ধর্ষণ। শুধুমাত্র যৌন-সম্পর্ক স্থাপনের জন্য নিজের স্ত্রীকে কেউ ধর্ষণ করে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন কোনও পুরুষ এরকম হিংস্র আচরণ করে? উত্তর এক কথায় দেওয়া যায় না। মনোবিদরা বলেন সবক্ষেত্রেই ধর্ষকদের তিনটি ব্যাপার লক্ষণীয়ঃ ক্ষমতা (power), ক্রোধ (anger) এবং যৌনতা (sexuality)। মনোবিজ্ঞানীদের একটি বড় অংশ মনে করেন ধর্ষণও (শিশু নির্যাতন থেকে শুরু করে নারী নির্যাতন) শুধুমাত্র নিজের কর্তৃত্ব (dominance) প্রতিষ্ঠার জন্যই করা হয়। গবেষকরা মোটামুটি দুইটি বড় শ্রেণীতে ফেলেন ধর্ষণকে। একটি হচ্ছে Power Rape, আরেকটিকে বলা যায় Anger Rape। সবক্ষেত্রেই একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, “the use of sex is to express issues of power or anger”।

আজকাল নারীর স্বনির্ভরতা পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে বিপন্ন করে তুলছে। নারী হয়ে উঠেছে শত্রু লিঙ্গ। নারীর নিরাপত্তা, আত্মসম্মান, স্বাধীন চিন্তার সুযোগ কেড়ে নিলেই কেবলমাত্র পুরুষ নিশ্চিন্ত হতে পারে এবং তার সবচেয়ে সহজ উপায় হল যৌন হিংসা। একজন নারী কেবল মাত্র পুরুষকে সুখ দেবার একটা শরীর, তার বেশি কিছু নয় পুরুষের এটা বারবার মনে করার এবং মনে করাবার প্রয়োজনীয়তা এখন তীব্র। নারীকে গায়ের জোরে অসহায় করে ফেলতে পারলে একদিকে তার স্পর্ধা গুড়িয়ে দেয়া যায় অন্যদিকে পৌরুষের তীব্র মনোবেদনা কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়। পুজিবাদী সমাজে নারীর প্রধান পরিচয় সে যৌনবস্তু, পন্য বিক্রি থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে নারীর শরীর ও যৌনতাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সমাজের সর্বত্র পুজিবাদী এই আদর্শের বিকাশ আমাদের একধরনের বিকৃত যৌনচর্চায় অনুপ্রানিত করে। নারী পুরুষ সম্পর্ক আর দশটা সম্পর্কের মতই ক্ষমতা সম্পর্ক। ঘরে বাইরে নারীর উপর আগ্রাসী যৌন আচরন,যৌন হয়রানী যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ সবই পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোতে নারীর অধস্তনতাই প্রকাশ করে নানা রুপে। তাই ধর্ষণ, যৌন হয়রানী/নিপীড়ন, নারীর সম্মতি ব্যাতিরেকে তার উপর যে কোন ধরনের আগ্রাসী যৌন আচরন ক্ষমতা প্রদর্শনের, দমন-পীড়নের, কর্তৃত্ব করার কুৎসিত বহিঃপ্রকাশ বই আর কিছু নয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যার জন্ম সচেতন চেষ্টা ছাড়া নারীবান্ধব, নারীবাদী, সে কোনভাবেই হয়ে উঠতে পারেনা। দৃষ্টিভঙ্গিটা পুরুষতান্ত্রিক বলেই নারীকে তারা গণ্য করে অধস্তন লৈঙ্গিক পরিচয়ের বস্তু হিসেবে যা লেহনযোগ্য, পীড়নযোগ্য।

সুজান ব্রাউনমিলার তাঁর সাড়াজাগানো বইঃ Against Our Will: Men, Women, and Rape এ ধর্ষণ কে ব্যাখ্যা করেছেন পুরুষাধিপত্য প্রতিষ্ঠার কেন্দ্রীয় উপাদানরূপে। ব্রাউনমিলারের মতে, ধর্ষণ শুধু কিছু মনোব্যাধিগ্রস্ত মানুষের কাজ নয়, এটি পুরুষতন্ত্রের ফসল। লৈঙ্গিক রাজনীতিতে ধর্ষণ একটি বড় হাতিয়ার, নারীকে অধীনে রাখার পুরুষের চরম উপায়। আজকের কিশোর আর তরুণেরাও এই পুরুষতন্ত্রের ফসল। তাদের ধর্ষকামী মনোবৃত্তির পিছনে তাই তাদের অবিকশিত মানস দায়ী, তাঁর চেয়ে বেশী দায়ী এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা যা তাঁকে অবিকশিত, লৈঙ্গিক চেতনায় পঙ্গু করে রেখেছে। ধর্ষণে তাই বয়স মুখ্য নয়, কামেচ্ছাও মুখ্য নয়। নারীর পোশাকটি যৌন উত্তেজক কিনা সেটিও মুখ্য নয়। এখানে চার বছরের শিশু থেকে ষাট বছরের বৃদ্ধাও ধর্ষিত হয়। বোরকা পরা মেয়েও ধর্ষণের হাত থেকে নিস্তার পায়না। বাংলাদেশের ই বহু আদিবাসী সমাজের মেয়েদের ঊর্ধ্বাংশ উন্মুক্ত থাকে। সংক্ষিপ্ত পোশাকে নগ্ন স্তন নিয়ে তাঁরা লোকালয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাঁদের আমরা অসভ্য বলে গালি দেই। কই তাঁদের সমাজে তো ধর্ষণের মচ্ছব নেই, নগ্নতা সত্ত্বেও নারীর শরীরে আদিবাসী পুরুষ হামলে পড়েনা। তবে কি তাঁরা অমানবিক? তবে কি তাঁদের কামবোধ নেই? আদিবাসীদের সমাজে ঘুরতে গিয়ে বরং এই 'সভ্য' আমরাই তাঁদের নগ্নিতায় কামার্ত হই; অসুস্থ বিনোদন খুঁজে পাই। যে সভ্যতা আড়াল করতে শেখায়, যে সভ্যতা পোশাক আমদানি করে সেই সভ্যতা একই সাথে অবগুণ্ঠণমুক্তাদের দেখে কামার্ত হতে শেখায়।

আগ্রাসন,সংঘর্ষ এবং যুদ্ধের অনাকাঙ্ক্ষিত কিন্তু অনিবার্য শিকার নারী। যুদ্ধে বুলেট এবং আগ্রাসী সৈনিকের পৌরুষ তখন দুটি সমান্তরাল অস্ত্রে পরিণত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের সর্বাত্মক ব্যবহার নিশ্চিত করে। পৃথিবীর নানা দেশে সংঘটিত অধিকাংশ যুদ্ধ কিংবা জাতিগত সহিংসতায় নারী ধর্ষণ যুদ্ধের অন্যতম উপকরন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সাম্প্রতিক কালের উদাহরন হিসেবে আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কম্বোডিয়া, চেচনিয়া, কঙ্গো, সাইপ্রাস, এল সালভাদর, পূর্ব তিমুর, গুয়েতেমালা, হাইতি, লাইবেরিয়া, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া, পেরু, রুয়ান্ডা, উগান্ডা, সিয়েরেলিওন, সোমালিয়া, ভিয়েতনাম, কসভ, সার্বিয়া, জিম্বাবুয়ের নাম উল্লেখযোগ্য। অতি সম্প্রতি মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংঘটিত জাতিগত সহিংসতায় আমরা দেখেছি কিভাবে রোহিংগা মুসলিম নারীরা গণধর্ষণের নির্মম শিকার হয়েছেন।

ধর্ষিত নারী আণবিক বোমাগ্রস্ত নগরী, যার কিছুই আর আগের মতো থাকেনা। কিন্তু ধর্ষিত হওয়ার পর সমাজ তাঁর সাথে সুব্যবহার করেনা, তাঁর জন্য বেদনার্ত হয়না, করুনা করেনা। ধর্ষিত অধিকাংশ নারীই ধর্ষণকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে না, কেননা সমাজ অনেকটা ধর্ষণকারীর পক্ষেই। তাই অধিকাংশ ধর্ষিত নারীই ধর্ষণকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ না তোলে ঘটনাটি কে ভাগ্য ব'লে মেনে নেয়। ধর্ষিত নারী কিছুটা সান্ত্বনা পেতে পারতো বিচার বিভাগের কাছ থেকে; কিন্তু বিচার বিভাগ, যা পুরুষেরই সৃষ্টি, তাকে নিয়ে অনেকটা খেলায় মেতে উঠে। বিচার বিভাগের সাহায্য চাওয়ার পর ধর্ষিত নারী ধর্ষিত হওয়ার বিভীষিকার পর পড়ে বিচারব্যবস্থার বিভীষিকার মধ্যে। ধর্ষণের অভিযোগের পর কাজ শুরু করে পুলিশ; তারা তথাকথিত সত্য ঘটনা বের করার নামে নির্মম অশ্লীলভাবে জেরা করতে থাকে ধর্ষিতাদের। (দ্রষ্টব্যঃ হুমায়ূন আজাদ, নির্বাচিত প্রবন্ধ-ধর্ষণ, পৃ. ২০০)
পুলিশের জেরায় ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত হলে এবার চলে ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা। এই পরীক্ষার জন্য ধর্ষিতাকে আবারো নগ্ন হতে হয়, চিকিৎসক তার স্তন, যোনি সহ শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের অনুপুঙ্খ পরীক্ষা শেষে একটি ফরেনসিক রিপোর্ট প্রদান করেন যেটিকে আইনের ভাষায় MC বা Medical Certificate বলা হয়। এবার শুরু হয় বিচারিক নিষ্ঠুরতা। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি অন্য আদালতের তুলনায় 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে' উৎসুক লোকসমাগম বেশী থাকে। সবাই যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে ওই ভিকটিম নারীকে দেখার আশায়, তার মুখে ধর্ষণের বর্ণনা শুনে অনেকেই লাভ করে কাম পুলক। বিচার চলার সময় অপরাধী পুরুষটির বদলে বিচারালয়ের সব মনোযোগ নিবদ্ধ থাকে নারীটির উপর। বিচারালয়ে প্রথমেই নারীটির চরিত্রের উপর লেপন করা হয় একরাশ কালিমা; খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করা হয় তার অতীত যৌন ইতিহাস। আসামীর উকিলের প্রানান্ত চেষ্টা থাকে নারীটিকে চরিত্রহীন, বহুগামী, ব্যভিচারিণী এবং চূড়ান্তভাবে পতিতা প্রমান করার এবং এর মধ্য দিয়ে এটি প্রতিষ্ঠা করা যে এখানে আসামী কর্তৃক কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি এবং যা ঘটেছে তা পরস্পরের সম্মতিতেই ঘটেছে। আর এটি প্রমাণ করার জন্য নারীটির উপর অশ্লীল প্রশ্নের ঝড় বয়ে যায়-তাকে বর্ণনা করতে হয় ধর্ষণের বিস্তারিত আখ্যান।
এভাবেই নারীটি ধর্ষণের অভিশপ্ত চক্রে ঘুরপাক খেতে থাকে, বার বার ধর্ষিত হতে থাকে-পুলিশের কাছে, চিকিৎসকের কাছে, আদালতেরে ভরা মজলিশে। আমরা জানি, আইন প্রমাণ আর সাক্ষ্য ছাড়া কোন প্রতিকার দেয়না কিন্তু ধর্ষিতা কি আরও মানবিক, সংবেদী বিচারব্যবস্থা আশা করতে পারেনা? ধর্ষণের মামলা গুলো যদি 'ক্যামেরা ট্রায়াল' এর ব্যবস্থা করা হয় তাহলে ভিকটিমরা এই বিভীষিকার হাত থেকে কিছুটা রক্ষা পেত।
এছাড়া বাংলাদেশে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৩৭৫ ধারানুযায়ী এখনো স্ত্রীর ইচ্ছা বা সম্মতির বিরুদ্ধে স্বামীর যৌনক্রিয়াকে 'ধর্ষণ' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি যদি না স্ত্রীর বয়স ১৩ বছরের নিচে হয়। অর্থাৎ ধর্ষণের সমস্ত উপাদানের উপস্থিতি সত্ত্বেও প্রাপ্ত বয়স্ক কোন স্ত্রীকে তার সম্মতি বা ইচ্ছা ছাড়াই স্বামী জোরপূর্বক যৌনকর্মে বাধ্য করতে পারে যেটি সর্বজনীন মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

আমরা একটি ধর্ষণ মুক্ত, নিপীড়ন মুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি। নারীর উপর যৌন হয়রানী, ধর্ষণ, যে কোন ধরনের যৌন নিপীড়নকে আমরা যখন নারী পুরুষ প্রত্যেকে নিজেদের নিরাপত্তাহীনতা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবো, শুধু ভূক্তভোগী নয় প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অসম্মান হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবো, পুরুষতন্ত্রকে উৎখাত করে নারী-পুরুষের সমতা ভিত্তিক মানবিক সমাজ বিনির্মাণ করতে পারবো তখনই একটি নিপীড়ন মুক্ত সমাজের দিকে, বিকশিত মানবতার দিকে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। সেদিনের প্রত্যাশায় রইলাম।

--------------------------------------------
সাঈদ আহসান খালিদ
সিনিয়র লেকচারার
আইন বিভাগ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি [

3
Law / তালাক! তালাক! তালাক! (what is Talak)
« on: September 30, 2013, 09:55:30 AM »
পারিবারিক জীবনে ভাঙ্গন ও বিপর্যয় অত্যন্ত মর্মান্তিক ব্যাপার। তালাক হচ্ছে এ বিপর্যয়ের চুড়ান্ত পরিণতি। পারিবারিক জীবনে চুড়ান্ত বিপর্যয় থেকে স্বামী স্ত্রী উভয়কে রক্ষার জন্য ইসলামে তালাকের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যখন চরমভাবে বিরোধ দেখা দেয়,পরস্পর মিলে মিশে স্বামী স্ত্রী হিসেবে শান্তিপূর্ণ ও মাধুর্য মন্ডিত জীবন যাপন যখন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়,পারস্পারিক সম্পর্ক যখন হয়েপড়ে তিক্ত, বিষাক্ত, একজনের মন যখন অপরজন থেকে এমন ভাবে বিমূখ হয়ে যায় যে, তাদের শুভ মিলনের আর কোন সম্ভাবনা থাকেনা; ঠিক তখনই এই চুড়ান্ত পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইসলামে।

তালাক কি?

আরবি-তে 'তালাক' শব্দের অর্থ হল কোনো কিছু ভেঙ্গে ফেলা বা ছিন্ন করা। বিবাহ-চুক্তির মাধ্যমে স্থাপিত সম্পর্ক আইনসিদ্ধ উপায়ে ভেঙ্গে দেওয়াকে মুসলিম আইনে 'তালাক' বা বিবাহবিচ্ছেদ বলে। মুসলিম আইনে বিবাহবিচ্ছেদ নর-নারীর একটি বৈধ ও স্বীকৃত অধিকার। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক যদি এমন পর্যায় পৌঁছয় যে, একসঙ্গে থাকা তাঁদের একজন বা দুজনের পক্ষেই সম্ভব হয় না, সেক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দিষ্ট উপায়ে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটানো যেতে পারে।

কি কি উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে?

(ক) স্বামীর পক্ষ থেকে তালাক;
(খ) স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক, যদি স্বামী স্ত্রীকে তালাক-ই-তৌফিজের ক্ষমতা দান করে থাকেন;
(গ) খুলার মাধ্যমে;
(ঘ) মুবারাতের মাধ্যমে;
(ঙ) আদালতের মাধ্যমে;

স্বামী কি যখন খুশি তখন তালাক দিতে পারে?

ইসলামী শরীয়া আইনে স্বামীর তালাক প্রদানের ক্ষমতা অসীম এবং শর্তহীন। স্বামী কোন কারন দর্শানো ছাড়াই স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন। কিন্তু স্ত্রীর তালাক প্রদানের ক্ষমতা অসীম নয় বরং শর্তযুক্ত যদি না স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করে। তালাক ইসলামে অনুমোদিত কিন্তু ঘৃণ্য একটি কাজ। নবী (সাঃ) তালাক সম্পর্কে বলেছেন তালাক অপেক্ষা ঘৃনার জিনিস আল্লাহ তায়ালা আর সৃষ্টি করেন নি হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত নিম্নোক্ত বাণী হতে তালাকের ভয়াবহতা উপলদ্ধি করা যায়।তোমরা বিয়ে কর কিন্তু তালাক দিয়োনা কেননা,তালাক দিলে তার দরুন আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠে। স্বামী যদিও বিনা কারনে আইনগতভাবে স্ত্রীকে তালাক প্রদানের অধিকারী কিন্তু ইসলাম স্বামীকে তালাক প্রদানের আগে নানান ভাবে সতর্ক হওয়ার আদেশ প্রদান করেছে এবং বিনা কারনে তালাক প্রদানে নিরুৎসাহিত করেছে। ইসলাম বারবার স্বামীকে সতর্ক করেছে যেন সে তার প্রেয়সী স্ত্রীর সাথে নূন্যতম খারাপ আচরণ না করে। হাদীসে ঘোষণা দিয়েছে, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে-ই, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম”। উপদেশ দিয়েছে- “দেখো, যদি তুমি তার (স্ত্রীর) একটি আচরণে অসন্তুষ্ট হও, তা হলে তার অন্য কোন আচরণ নিশ্চয় তোমাকে মুগ্ধ করবে। ফলে সে দিকে লক্ষ্য করে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখো।” (হাদীসের মর্মার্থ) এভাবে বারবার বিভিন্ন ভাবে স্বামীকে ভালো আচরণ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছে, একান্তই যদি তোমার সাথে মিল না হয় তবে তাকে বোঝাও। এতেও না হলে একই খাটে আলাদা আলাদা শয়ন করো। এরপর ভিন্ন খাটে শোও। অতপর ভিন্ন ঘরে রাত্রি যাপন কর, এভাবেও ঠিক না হলে উভয় পরিবারের লোক দিয়ে মিটমাট করার চেষ্টা করো। তাতেও সমাধান না হলে তখনি তালাকের বিধান কার্যকর করার উপদেশ দেয়া হয়েছে। যে ইসলামের সত্যিকার অনুসারী সে কখনো এই বিধানকে অগ্রাহ্য করে একত্রে তিন তালাক দিয়ে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করবেনা এমনটাই প্রত্যাশিত। কারন এক সঙ্গে তিন তালাক দেয়াকে রাসূল স. ও তাঁর সাহাবীগণ প্রচন্ড রকম অপছন্দ করতেন। এ জন্য একসঙ্গে তিন তালাককে বিদাতী তালাক বলা হয় ফিকহের পরিভাষায়। মূলত তালাক দেয়ার সুন্নাহ সমর্থিত নিয়ম হলো, একবার কেবল এক তালাক দেয়া। এরপর তিন ঋতু পর্যন্ত অপেক্ষা করা। যদি বনিবনা হয়ে যায়, তাহলে এর মধ্যে ঋতু পরবর্তী পবিত্রতাকালীন সময়ে স্বামী তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবে। আর যদি বনিবনা না হয়, তাহলে তিন ঋতু অতিবাহিত হলে বিবাহ ভেঙে যাবে। কিন্তু মুখে তিন তালাক একত্রে উচ্চারণ করলে ঠিক ই তালাক কার্যকর হয়ে যাবে শরীয়া আইন অনুসারে এবং স্ত্রী তাঁর স্বামীর জন্য হারাম হয়ে যাবে, তাঁদের তালাক পরবর্তী দৈহিক সম্পর্ক জেনা হিসেবে গন্য হবে এবং উদ্ভূত সন্তান অবৈধ বলে পরিগনিত হবে। এখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনের সাথে শরীয়া আইনের একটি বিরোধ রয়েছে। তাহল- বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনে মুখে পরপর তিনবার 'তালাক' উচ্চারণ করলে অথবা একসাথে 'বায়েন তালাক' কথাটি বললেই তালাক কার্যকরী হয় না। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭ (১) ধারা অনুযায়ী, স্বামী তালাক দেবার পরপরই তালাক দেবার সংবাদটি একটি নোটিশের মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে (যে চেয়ারম্যানের এলাকায় স্ত্রী বাস করছেন) জানাতে হবে।সেই নোটিশের একটি কপি স্ত্রীকে পাঠাতে স্বামী বাধ্য। স্বামী যদি চেয়ারম্যান এবং স্ত্রীকে তালাকের নোটিশ না পাঠান, তবে ঐ একই আইনের ৭ (২) ধারা অনুযায়ে স্বামী এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা দশ হাজার টাকা জরিমানা অথবা অথবা দুটি দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন। নোটিশ পাবার ত্রিশ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পুনর্মিলন ঘটানোর উদ্দেশ্যে উভয়পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সালিশী পরিষদ গঠন করবেন এবং তাঁদের মধ্যে সমঝোতা আনার প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু সালিশীতে যদি কাজ না হয় এবং নোটিশ দেবার ৯০ দিনের মধ্যে স্বামী যদি স্ত্রীকে দেওয়া নোটিশ প্রত্যাহার না করেন, তবে ৯০ দিন পরে তালাক কার্যকরী হবে। ৯০ দিন পার না হওয়া পর্যন্ত দম্পতিকে আইনসিদ্ধ স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই ধরা হবে এবং স্ত্রী ভরণপোষণও পাবে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ -এর ৭(১) নং ধারা অনুযায়ী - চেয়ারম্যান ও স্ত্রীকে নোটিশ না পাঠালে স্বামী শাস্তি পাবেন ঠিকই, কিন্তু তালাক বাতিল হবে না। তালাক কার্যকরী হবে। (সম্প্রতি একটি মামলায় (মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বনাম মোছা:হেলেনা বেগম ও অন্যান্য। সিভিল রিভিশন নং ৬৯৮, ১৯৯২) এ মর্মেই রায় দেওয়া হয়েছে।)

৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগে কি তালাক প্রত্যাহার করা যাবে?

হ্যাঁ, এই ৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগে অবশ্যই তালাক প্রত্যাহার করা যাবে। এই সময়টা এইজন্যই রাখা হয়েছে যাতে করে স্বামী-স্ত্রী উভয়পক্ষই ঠাণ্ডা মাথায় সব কিছু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন - পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে পারেন।

বিচ্ছেদ প্রাপ্ত স্বামী কি আবার আগের স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারে?

আগেই বলেছি শরীয়া আইন অনুসারে বিচ্ছেদ প্রাপ্ত স্বামী স্ত্রী কে হিলা বিয়ে ব্যতীত পুনরায় গ্রহণ করতে পারেনা। হিল্লা শব্দটি আরবী حلة থেকে এসেছে। এর অর্থ বৈধতা/ বৈধ করণ। চূড়ান্ত বিচ্ছেদের পর ইদ্দত পালন শেষে স্ত্রীর যদি অন্য কোন পুরুষের সাথে বিবাহ ঘটে এবং স্ত্রীর ২য় স্বামী যদি মারা যায় অথবা তাঁকে তালাক দেয় তবে ইদ্দত পালন শেষে প্রথম স্বামী ইচ্ছে করলে পুনরায় তাকে গ্রহণ করতে পারে। তা হলে এমতাবস্থায় মাঝের এই বিয়েটা হিল্লা বা প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ করণ বলে গণ্য হলো। আর এ কারণেই একে হিল্লা বিয়ে বলা হয়।
কিন্তু আজকাল যা হয় তা হলো, নাটকের ন্যায় স্ত্রীকে চুক্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় কোন স্বামীর কাছে বিবাহ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় ২য় স্বামীর সাথে আর্থিক লেনদেন ও করা হয়ে থাকে। যেন সে এক রাত কাটিয়ে তালাক দিয়ে দেয় এবং প্রথম স্বামী তাকে পুণরায় গ্রহণ করে নিতে পারে। অনেক সময় ২য় স্বামীর সাথে এমন চুক্তিও করা হয় যে সে ওই স্ত্রীর সাথে রাত্রি যাপন করবে কিন্তু দৈহিক সম্পর্ক করতে পারবেনা। এই ধরনের চুক্তিভিত্তিক হিলা বিয়ে ইসলাম সম্মত নয়। নবীজী (স) এ কাজে কঠোর অভিশাপ দিয়েছেন। এতে মূলত নারীকে অবহেলার বস্তুতে পরিণত করা হয়।

এতক্ষণ যা বললাম তা শরীয়ার বিধান। কিন্তু রাষ্ট্রীয় আইনে এই বিধানের আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে।

১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ এর ৭ (৬) ধারা অনুযায়ী তালাকের মাধ্যমে কোন বিবাহবিচ্ছেদ ঘটলে, তালাক হওয়া দম্পতি আবার বিয়ে করতে চাইলে নতুন করে বিয়ে করতে হবে। তবে তার জন্য মধ্যবর্তী বা হিল্লা বিয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের মাধ্যমে 'হিল্লা' বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওই একই অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি তিনবারের বেশি বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে থাকে তবে হিলা বিয়ে ব্যতীত তাঁরা আর পরস্পরকে বিয়ে করতে পারবেনা। একবার হিলা বিয়েকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আবার তিন বার বিচ্ছেদের পর সেই হিলা বিয়েকে পুনর্বিবাহের শর্ত হিসেবে যুক্ত করা এই অধ্যাদেশের একটি স্ববিরোধীতা ছাড়া আর কিছু নয়।

স্ত্রী কীভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে?

(১) তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে
(২) খুলার মাধ্যমে
(৩) মোবারাতের মাধ্যমে
(৪) আদালতে আবেদনের মাধ্যম

খুলা বিচ্ছেদ কাকে বলেঃ
যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক বনিবনা ভাল না থাকে, তবে স্ত্রী অর্থ বা সম্পত্তির বিনিময়ে স্বামীকে বিচ্ছেদ ঘটাতে রাজী করাতে পারে। যেহেতু অধিকাংশ নারীর সম্পত্তি থাকে না অথবা সম্পত্তি থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকে না, সেক্ষেত্রে স্ত্রী মোহরানা বা মোহরানার অংশ দিয়ে স্বামীকে তালাক দিতে রাজী করানোর চেষ্টা করতে পারেন।

মোবারাতঃ

যে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী, উভয়ই একে অন্যের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন এবং তাঁরা চুক্তির মাধ্যমে তাঁদের বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটান, তখন বলা মোবারাত। খুলার মত মোবারাতও এক ধরণের চুক্তি-ভিত্তিক বিবাহবিচ্ছেদ।

তালাক-ই-তৌফিজ এবং কাবিননামার ১৮ নং কলামঃ

তালাক-ই-তৌফিজ স্ত্রীর নিজস্ব ক্ষমতা নয়। স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেয়, তবে স্ত্রীও স্বামীর মতো তালাক দিতে পারে। সেক্ষেত্রে স্ত্রীকেও স্বামীর মতো তালাকের নোটিশ চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাতে এবং এক কপি স্বামীর কাছে পাঠাতে হবে। স্ত্রীর এই তালাক দেওয়ার ক্ষমতাকে তালাক-ই-তৌফিজ বলে।

নিকাহনামা/কাবিননামার ১৮ নং ঘরে "স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করছে কি না? করে থাকলে কী শর্তে?" এই প্রশ্নটি থাকে। স্বামীর একতরফা ক্ষমতার কারণে স্ত্রীকে বহু নির্যাতন সহ্য করেও স্বামীর সাথে থাকতে হয়। ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইনে বর্ণিত শর্তগুলো (যেমন, নির্যাতন, নিরুদ্দেশ) না থাকলে বা খুলা কিংবা মুবারাতের মাধ্যমে হুলার স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ না পেলে একটি মেয়ের পক্ষে বিয়ে থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। সেক্ষেত্রে স্ত্রী অপেক্ষাকৃত কম জটিলতায় তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে মুক্তি পেতে পারে। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। নিকাহ্নামার ১৮ নং ঘরটি এজন্য অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পূরণ করা উচিত। অনেক সময় কাজীরা এ প্রশ্ন করেন না এবং ঘরটি শূন্য থাকে। আবার অনেক সময় এই ঘরটি পূরণ করার কথা বললে বর পক্ষের অনেক মুরুব্বী বলে থাকেন বিয়ের মতো এরকম একটি শুভ কাজের সময় কেন তালাকের মতো অশুভ ব্যাপার নিয়ে ঘাটাঘাটি? এভাবে কৌশলে বরপক্ষের লোকজন এই ব্যাপারটি উপেক্ষা করে যায় আবার কনে পক্ষের লোকজন সংকোচ বা লজ্জায় এই ঘরটি পূরণ করেন না। ফলে কখনো দাম্পত্য কলহ তৈরি হলে মেয়েটি তালাকের এই অধিকারটি প্রয়োগ করতে পারেনা, তাঁকে খুলা বা মুবারাতের আশ্রয় নিতে হয়। কিন্তু সেখানেও স্বামীর সম্মতি প্রয়োজন। স্বামী স্বেচ্ছায় রাজি না থাকলে এই প্রক্রিয়ায়ও বিয়ে ছিন্ন করা সম্ভব হয়না। শেষ ভরসা হল আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করা। কিন্তু আইনে উল্লেখিত ঘটনা না ঘটলে বা নির্দিষ্ট শর্তসমূহ পূরণ না হলে এই প্রক্রিয়ায় ও বিবাহ বিচ্ছেদ অসম্ভব। তাছাড়া বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ একজন নারীর জন্য সময় এবং অর্থ সাপেক্ষ। এছাড়া সামাজিক অপমানবোধের ব্যাপার তো রয়েছেই। তাই কাবিননামার ১৮ নং কলামে Tick চিহ্ন দিয়ে তালাকে তউফিজের অধিকার নিশ্চিত করা প্রতিটি মেয়ের জন্য অবশ্য কর্তব্য। অভিভাবকদের সচেতনতাও এক্ষেত্রে খুব জরুরী। আর কাজীদের অবশ্যই দুপক্ষকে দিয়ে ঘরটি সম্পর্কে অবগত করানো উচিত।

স্ত্রী কর্তৃক আদালতে আবেদন মাধ্যমে তালাকঃ

১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের অধীনে স্ত্রী নিম্নোক্ত ৯টি কারণের যে কোনো এক বা একাধিকের ভিত্তিতে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রার্থনা করতে পারেন:
(১) স্বামী ৪ বছরের অধিক সময় নিরুদ্দেশ থাকলে;
(২) দুই বছর যাবত্ স্ত্রীর খোরপোষ দিতে স্বামী ব্যর্থ হলে;
(৩) স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লঙঘন করে অতিরিক্ত স্ত্রী গ্রহণ করলে;
(৪) স্বামী সাত বছর বা তার বেশি সময় কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে;
(৫) কোনো যুক্তি-সঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর ধরে স্বামী তাঁর দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে;
(৬) স্বামী বিয়ের সময় পুরুষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করার সময়পর্যন্ত বজায় থাকলে;
(৭) স্বামী দুই বছর ধরে পাগল থাকলে অথবা মারাত্বক যৌনব্যধিতে আক্রান্ত থাকলে;
(৮) নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে হয়ে থাকলে অথবা সাবালকত্ব লাভের পর অর্থাত্ ১৮ বছর পূর্ণ হবার পর স্ত্রীর বিয়ে অস্বীকার করলে (কিন্তু এক্ষেত্রে স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে থাকলে এরকম মামলা দায়ের করা যাবে না)
(৯) নিম্নলিখিত যে কোনো অর্থে স্ত্রীর সাথে স্বামী নিষ্ঠুর আচরণ করলে:
(ক) যদি স্ত্রীকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা;
(খ) কুখ্যাত মহিলাদের (women of ill reputation) সঙ্গে স্বামীর মেলামেশা করা কিংবা নৈতিকতা-বর্জিত জীবন যাপন করা।
(গ) নৈতিকতা-বর্জিত জীবন যাপনের জন্য স্ত্রীকে বাধ্য করা;
(ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তান্তর করা, কিংবা স্ত্রীকে তার সম্পত্তির বৈধ অধিকার প্রয়োগে দেওয়া;
(ঙ) স্ত্রীকে তার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেওয়া;
(চ ) যদি স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকে, তবে পবিত্র কোরানের নির্দেশে তাদের সাথে সমান ব্যবহার না করা;
তবে উপরোক্ত কারণগুলির ভিত্তিতে মামলা দায়ের করতে হলে স্ত্রীর কাছে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকতে হবে।

তালাক কখন কার্যকরী হয় না?

গর্ভবতী অবস্থায় তালাক দিলে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকরী হবে না। সন্তানের বৈধতা বা পিতৃত্ব নির্ধারণের জন্যই এ আইন তৈরি করা হয়েছে।

(বিয়ে মানবজীবনের সুন্দরতম একটি সম্পর্ক। ভালবাসা-প্রেমে-শ্রদ্ধায়-মমতায় এই বন্ধনে নারী পুরুষ আমৃত্যু আবদ্ধ থাকবে এটাই আমাদের চাওয়া। কারো জীবনে তালাকের নির্মম খড়গ নেমে আসুক, আমরা কেউ নিশ্চয় তা চাইনা-তারপরও তালাক জীবনের কঠিন বাস্তবতা। কেউ যদি এই বাস্তবতার সম্মুখীন হয় সে যেন আইনের মারপ্যাঁচে দেশেহারা না হয়ে পড়ে, তাঁর অধিকার থেকে অন্য কেউ যেন তাঁকে বঞ্চিত না করতে পারে, সেই সচেতনতা তৈরির উদ্দেশেই এই লিখা।
আইনের ব্যাখ্যায় কোন ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী। এক্ষেত্রে যে কোন সংশোধন আমাকে সমৃদ্ধ করবে। সবাই ভাল থাকুন।

-----------------------------------------------------
Saeed Ahsan Khalid
Senior Lecturer
Department of Law
Daffodil International University

4
Law / HOW TO MAKE AN EXCELLENT POWER-POINT PRESENTATION: Useful Tips
« on: September 28, 2013, 03:10:39 PM »
Class Presentation Tips: Making effective classroom presentations takes practice, but with a few tips up your sleeve, you are ready to take on the challenge.

 

Note - These presentation tips refer to PowerPoint slides (all versions), but all of these tips in general, can be applied to any presentation.

 
1. Know Your Topic*****

 
Students usually want to charge right in and start using the presentation software immediately. Do the research first and know your material. Think through what you will present before beginning the project on the computer. Creating the slide show is the easy part. The best classroom presentations are created by people who are comfortable with what they are going to talk about.

 
2. Use Key Phrases About Your Topic*****

 
Good presenters use key phrases and include only the most important information. Your topic may be vast, but choose only the top three or four points and make them several times throughout the presentation in the classroom.

 
3. Avoid Using Too Much Text on the Slide*****

 
One of the biggest mistakes students make in classroom presentations, is in writing their whole speech on the slides. The slide show is meant to accompany your oral presentation. Write in the form of jot notes, called bullet points, on slides. Use simple language and limit the number of bullets to three or four per slide. The surrounding space will make it easier to read.

 
4. Limit the Number of Slides*****

 
Too many slides in a presentation will cause you to be rushing to get through them, and your audience might end up paying more attention to the changing slide than to what you are saying. On average, one slide per minute is about right in a classroom presentation.

 
5. Layout of Your Slide is Important*****

 
Make your slides easy to follow. Put the title at the top where your audience expects to find it. Phrases should read left to right and top to bottom. Keep important information near the top of the slide. Often the bottom portions of slides cannot be seen from the back rows because heads are in the way.

 
6. Avoid Fancy Fonts*****

 
Choose a font that is simple and easy to read such as Arial, Times New Roman or Verdana. You may have a really cool font on your computer, but save it for other uses. Don't use more than two different fonts – one for headings and another for content. Keep all fonts large enough (at least 18 pt and preferably 24 pt) so that people at the back of the room will be able to read them easily.

 
7. Use Contrasting Colors For Text and Background*****

 
Dark text on a light background is best. This combination offers the most visibility. Sometimes though, you may want a dark background for effect, to dazzle the crowd. In that case, be sure to make text a light color for easy reading in a classroom presentation.

 
Text is often difficult to read on patterned or textured backgrounds.

 
Keep your color scheme consistent throughout your classroom presentation.

 
8. Try a Slide Design Template to Keep the Look Consistent*****

 
When you use a design template, choose one that will not detract from your classroom presentation. Test it ahead of time to make sure that the text will be readable and the graphics won’t get lost in the background.


9. Use Animations and Transitions Sparingly in Classroom Presentations*****

 

Let's face it. Students love to apply animations and transitions every place they can. This will certainly be entertaining, but rarely will the audience be paying attention to the message of the presentation.

Apply animations to graphics to make a point, not to entertain. Using preset animation schemes will apply action to titles and bullet points, keeping the slide show consistent and interesting. Remember, the slide show is a visual aid and not the objective of the classroom presentation.

-------------------------------------------------------------------------------
SAEED AHSAN KHALID
Senior Lecturer
Department of Law
Daffodil International University.

5
দেনমোহর নিয়ে আমাদের সমাজে নানান বিভ্রান্তি প্রচলিত আছে। অধিকাংশ নারী দেনমোহর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে বিয়েতে উচ্চ দেনমোহর নির্ধারণ না করলে পরিবারের স্ট্যাটাস বাঁচেনা! তাই দেনমোহর এখন সমাজে ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে; তা পরিশোধের সক্ষমতা আছে কি নেই তা নিয়ে কারো ভাবান্তর নেই।

দেনমোহর কী?

পবিত্র কুরআনে দেনমোহরকে বিভিন্ন শব্দে বিশেষায়িত করে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন- বলা হয়েছে, ‘নিহলা’ (স্বতঃস্ফূর্তভাবে/সন্তষ্টচিত্তে), ‘ফারিদা’ (নির্ধারিত বা বাধ্যবাধকতা), ‘আজর’ (বিনিময়), ‘সাদুকাহ’ (আন্তরিক দান) ইত্যাদি। ইসলামি শরিআহর পরিভাষায়, দেনমোহর হচ্ছে বিবাহবন্ধন উপলক্ষে স্বামী কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে স্ত্রীকে নগদ অর্থ, সোনা-রুপা বা স্থাবর সস্পত্তি দান করা। এটা পরিশোধ করা স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক। এটা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর করুণা নয়, স্ত্রীর অধিকার। দেনমোহর বিবাহিত মুসলিম নারীর একটি বিশেষ অধিকার। এই অধিকার মুসলিম আইনের উৎস পবিত্র কুরআন দ্বারা স্বীকৃত। মুসলিম আইন অনুযায়ী দেনমোহর হলো বিয়ের একটি শর্ত এবং স্ত্রীর একটি আইনগত অধিকার। দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ এবং অবশ্যই পরিশোধযোগ্য। বিয়ের সময় যদি দেনমোহর নির্ধারণ করা না হয় এমনকি স্ত্রী পরবর্তীতে কোন দেনমোহর দাবী করবে না এ শর্তেও যদি বিয়ে হয় তাহলেও স্ত্রীকে উপযুক্ত দেনমোহর দিতে স্বামী বাধ্য।

দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ ও সময়সীমাঃ

দেনমোহর নির্ধারিত থাকতে পারে, আবার অনির্ধারিতও হতে পারে। হানাফি আইন অনুসারে, নির্ধারিত দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হবে ১০ দিরহাম এবং মালিকি আইনে তিন দিরহাম। কিন্তু সর্বোচ্চটা অনির্ধারিত। সাধারণত দেনমোহর নির্ধারণ করতে কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়-পাত্রীর পারিবারিক অবস্থা, বংশ মর্যাদা, আর্থিক অবস্থা, ব্যক্তিগত যোগ্যতা তার পরিবারের অন্য মহিলাদের (যেমন : ফুফু, বোন) দেনমোহরের পরিমাণ, এই বিষয়টির ভিত্তিতেও দেনমোহর নির্ধারিত হয়। এছাড়া পাত্রের আর্থিক সঙ্গতি, সামাজিক এবং পারিবারিক অবস্থানও দেনমোহর নির্ধারণে বিশেষ বিবেচনায় নিতে হবে।

নির্ধারিত দেনমোহরের দু’টি অংশ থাকে। একটি অংশ হলো তাৎক্ষণিক দেনমোহর-‘মোহরে মু’আজ্জাল’ বা নগদে প্রদেয় এবং আরেকটি অংশ হলো বিলম্বিত দেনমোহর-‘মোহরে মুয়াজ্জাল’ বা বাকিতে প্রদেয়। আমাদের দেশে মোহরানা বাকি রেখে বিয়ে করার প্রথাটিই বহুল প্রচলিত। আর এ কারণেই মোহরানা বাকি থাকে এবং এক পর্যায়ে স্বামী সেটা বেমালুম ভুলে যায়। তাই মোহরানা নগদে বিয়ের মজলিশে বা বিয়ের স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করে দেয়া উত্তম। ইসলামি শরিআহর দৃষ্টিতে পুরো মোহরানা বিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিংবা প্রথম মিলনের রাতের আগেই নগদে পরিশোধ করা সবচেয়ে উত্তম। বকেয়া অংশও অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করা উচিত। কোনো অবস্থায়ই মোহরানার পাওনা যুগ যুগ ধরে বাকি রেখে স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য জীবন যাপন করা যাবে না। এটা দেনমোহরের মূল চেতনার পরিপন্থী। দেনমোহর একবার নির্ধারণ করার পর এর পরিমাণ কমানো যায় না। তবে স্বামী নিজ উদ্যোগে তা বাড়াতে পারে। যদি কেউ আদালতে দেনমোহর দাবি করেন (বিয়ের সময় দেনমোহর নির্ধারিত না থাকলে) তবে আদালত স্ত্রীর মর্যাদা এবং স্ত্রীর পিতৃকুলের অন্যান্য মহিলার দেনমোহরের পরিপ্রেক্ষিতে দেনমোহর নির্ধারণ করতে পারেন।

স্ত্রীর মোহরানা তলব করার অধিকারঃ

তাৎক্ষণিক দেনমোহর স্ত্রীর প্রতি স্বামীর এক প্রকার ঋণ। যে কোন সময় স্ত্রী তার পাওনা দেনমোহরের দাবি জানাতে পারে এবং স্বামীকে অবশ্যই দেনমোহর পরিশোধ করতে হয়। বিলম্বিত দেনমোহরের প্রশ্ন আসে স্বামীর মৃত্যুর পর বা বিয়ে বিচ্ছেদের পর। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী দেনমোহরের টাকা পরিশোধের জন্য কোন সম্পত্তির দখল বজায় রাখতে পারে এবং এই দখল চালিয়ে যেতে পারে ততদিন পর্যন্ত যতদিন পর্যন্ত না দেনমোহরের টাকা পরিশোধিত হয়। এই ধরনের দখল বজায় রাখার জন্য স্বামীর অথবা তা উত্তরাধিকারীদের কোনরকম সম্মতির প্রয়োজন নেই। একজন বিধবার দখল বজায় রাখা সম্পত্তিতে তার অধিকার দুই রকমের। একটি হচ্ছে সম্পত্তি থেকে সে তার প্রাপ্য বিলম্বিত দেনমোহর আদায় করবে। অন্যটি হচ্ছে একজন উত্তরাধিকারী হিসাবে হিস্যা পাবে।

তাৎক্ষণিক দেনমোহর চাওয়া মাত্র পরিশোধ করতে হয়। কাজেই এ দেনমোহর স্ত্রী বিয়ের পর যেকোন সময় চাইতে পারেন এবং স্বামী তাৎক্ষণিক দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য থাকেন। যদি কোনো স্ত্রী স্বামীর কাছে তাৎক্ষণিক দেনমোহর চেয়ে না পায়, তবে সেই স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতে ও দাম্পত্য মিলনে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। এমনকি সে পৃথক-আলাদা বসবাস করতে পারে এবং এ সময় স্বামী স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবে। এরকম ক্ষেত্রে স্বামী যদি দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারে মামলা করেন তবে সেই মামলা খারিজ হয়ে যাবে। কারণ সে স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করেননি। স্বামী দেনমোহর দিতে অস্বীকার করার পর তিন বছরের মধ্যে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে হবে। কিন্তু সে যদি এভাবে তিন বছর কাটিয়ে দেয় এবং দেনমোহরের জন্য মামলা না করেন তবে সে মামলা করার অধিকার হারাবে।

বিলম্বিত দেনমোহর পরিশোধের কোন সময়সীমা বেঁধে দেয়া নেই বলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক বা স্বামীর মৃত্যু ঘটলে তার তিন বছরের মধ্যে দেনমোহরের জন্য স্ত্রীকে মামলা করতে হবে। তিন বছর পার হয়ে গেলে স্ত্রী মামলা করার অধিকার হারাবেন। স্বামীর মৃত্যুর পর অপরিশোধিত দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণস্বরূপ। অন্যান্য ঋণের মতোই মৃতের এই ঋণ শোধ করতে হয়। দাফন-কাফনের খরচ করার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি থেকে দেনমোহর এবং অন্যান্য ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বিবাহিতা থাকা অবস্থায় স্ত্রী তাৎক্ষণিক দেনমোহর না চাইলে বিয়ে বিচ্ছেদের পর তাৎক্ষণিক ও বিলম্বিত সম্পূর্ণ দেনমোহর পাবার অধিকারী হবেন।

দেনমোহর নিয়ে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাঃ

দেনমোহর পরিশোধের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে রয়েছে চরম অজ্ঞতা কিংবা সজ্ঞান উদাসীনতা। নিয়মিত নামাজ-রোজা আদায় করেন এমন অনেক মানুষও দেনমোহরের বিষয়ে সচেতন নন। এ বিষয়ে উদাসীনতা এতো প্রকট যে, তারা নফল নামাজ পড়াকে যতোটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, স্ত্রীর মোহর আদায়কে তার সিকিভাগও গুরুত্ব দেন না। তাই দেনমোহর পরিশোধের ব্যাপারে বাংলাদেশের চিত্র বলতে গেলে অনেকটা হতাশাব্যঞ্জক ও লজ্জাজনক। এখানে অধিকাংশই দেনমোহর সন্তুষ্টচিত্তে পরিশোধ করতে চান না। এ বিষয়ে নানা টালবাহানার আশ্রয় নেয়া হয়। অনেকে বাসর রাতেই কৃত্রিম ভালোবাসার অভিনয়ে স্ত্রীকে ভুলিয়ে তার কাছ থেকে দেনমোহরের দাবি মাফ করিয়ে নেন।সদ্য বিবাহিত স্ত্রী আবেগের বশে এবং লজ্জাবশত তা মাফ করে দেন। যে মেয়েটি তাঁর বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয়-পরিজনকে ছেড়ে একটি নতুন পরিবেশে মাত্র প্রবেশ করেছে তাঁকে বাসর রাতের মতো আবেগীয় মুহূর্তে দেনমোহর মাফ করতে বলা টা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল, হীনতা আর কাপুরুষতা ছাড়া আর কিছু নয় পক্ষান্তরে, স্ত্রীর দেনমোহর বাকি রেখে দাম্পত্য জীবন শুরু করে অনেকে ইচ্ছে করেই তা আর পরিশোধ করেন না। স্ত্রীর দেনমোহরের কথা ভুলে যান। এ অবস্থায় স্বামী মারা গেলে পড়শীরা এসে স্বামীর মৃতদেহ খাটিয়ায় উঠানোর আগে তার স্ত্রীর কাছে মোহরানার দাবি মাফ চায়। একজন সদ্য বিধবা স্ত্রীর পক্ষে এরকম একটা নাজুক মুহূর্তে কি আর মোহরানার দাবি মুখে আনা সম্ভব হয়? সে তখন মাফ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে স্বামী কর্তৃক প্রথম রাতের ছলনায় বা শবযাত্রার খাটিয়ায় শুয়ে মোহরানার দাবি মাফ চাইলে আর স্ত্রী সেটা মাফ করে দিলে কি মাফ হয়ে যাবে? রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমানের জন্য কারো সম্পদ হালাল হবে না যদি না সে তাকে সন্তুষ্টচিত্তে দান করে। সুতরাং শরিআহ বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো, এভাবে মোহরানার দাবি স্ত্রী মাফ করে দিলেও আসলে তা মাফ হবে না। কেননা, এটা স্ত্রীর উপরে এক প্রকার বলপ্রয়োগ। অতএব বলপ্রয়োগের ক্ষমা আর আন্তরিক ক্ষমা দুটো এক নয়।

একটি ভুল ধারণা বাংলাদেশে প্রচলিত আছে। যেমন বরের এক লক্ষ টাকা দেনমোহর পরিশোধের ক্ষমতা আছে, কিন্তু কাবিননামায় কনে পক্ষের সামাজিক মর্যাদা রক্ষার অজুহাতে জোরপূর্বক লেখানো হয় দশ লক্ষ টাকা। কনেপক্ষ ভাবে, মোহরানার অর্থ বেশি হলে বর কখনো কনেকে তালাক দিতে পারবে না। আর ছেলের পক্ষ ভাবে, যতো খুশি মোহরানা লিখুক। ওটা তো আর পরিশোধ করতে হবে না। এটি নিয়ে বর ও কনে পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা লেগেই থাকে।এ কথাটি ঠিক যে, দেনমোহরের কোন সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। যেকোন পরিমাণ অর্থ দেনমোহর হিসেবে নির্ধারিত হতে পারে। কিন্তু দেনমোহরের পরিমাণ এত বেশি রাখা উচিত নয় যা স্বামীর পক্ষে দেয়া অসম্ভব। দেনমোহর যেহেতু স্ত্রীর আর্থিক নিরাপত্তার জন্য দেয়া হয় সেহেতু এর পরিমাণ এত কম রাখাও উচিত নয় যা স্ত্রীর আর্থিক নিরাপত্তা বিধানে বিন্দুমাত্র সহায়ক হবে না। সে জন্য বর এবং কনে পক্ষ বিয়ের সময় সঠিক দেনমোহর ধার্যের ব্যাপারে বাস্তবতাকে মাথায় রাখতে পারে। এভাবে আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনা করে দেনমোহর ধার্য করলে স্বামী তা সহজেই পরিশোধ করতে পারবেন এবং প্রাপ্য দেনমোহরের অধিকার থেকে নারীরা বঞ্চিত হবে না। মোহরানা পরিশোধ না করার নিয়তেই যে স্বামী অধিক পরিমাণ মোহরানা নির্ধারণপূর্বক স্ত্রীকে বিয়ে করে তার সাথে দাম্পত্য জীবন শুরু করে, সেটা আসলে প্রতারণা দিয়েই দাম্পত্য জীবন শুরু করার শামিল। কেননা, দেনমোহরের কারণেই স্ত্রী তার স্বামীর জন্য হালাল হয়েছিল। অতএব দেনমোহরই যেখানে পরিশোধ করা হলো না, সেখানে স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক হালাল হয় কিভাবে?

অনেক স্বামী মনে করেন, স্ত্রীর ভরণ-পোষণসহ যাবতীয় ব্যয়ভার তো তিনিই বহন করছেন। অতএব এর মধ্যে আবার আলাদা করে তাকে মোহরানা পরিশোধ করতে হবে কেন? কিন্তু দেনমোহরের সঙ্গে ভরণপোষণের কোনো সম্পর্ক নেই। দুটি সম্পূর্ণ আলাদা অধিকার। বিয়ের পর স্ত্রীর ভরণপোষণের যাবতীয় খরচ কোনোভাবেই দেনমোহরের অংশ বলে ধরে নেয়া যাবে না। বিবাহিত নারী বিবাহকালীন এবং বিবাহ বিচ্ছেদ হলে ইদ্দতকালীন সময়ে ভরণপোষণের অধিকারী। ভরণপোষণের খরচ কে কোন অবস্থাতেই দেনমোহরের অংশ হিসেবে পরিশোধ করা হচ্ছে বলে ধরা যাবে না।

অনেক স্বামী স্ত্রীকে দামী কিছু উপহার দিলে মনে করেন যে দেনমোহর পরিশোধ হয়ে গেছে। এটিও ভ্রান্ত ধারণা। স্বামী স্ত্রীকে যে উপহার দেবে তা অবশ্যই দেনমোহর নয়। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীকে প্রেমের নিদর্শনস্বরূপ অনেক কিছুই দিতে পারে। স্বামী যদি দেনমোহর হিসেবে স্ত্রীকে কিছু দেয়, তবেই তা দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে। জমি হস্তান্তরের দলিলে ‘দেনমোহর বাবদ’ কথাটি লেখা না থাকলে এরূপ জমি উপহার দেয়া দেনমোহর হিসেবে ধরা হবে না।

আবার অনেকে সোনার অলংকার বা ব্যাংকে স্ত্রীর নামে অর্থ ফিক্সড ডিপোজিট করে দেন দেনমোহর পরিশোধ করছেন উল্লেখ করে অথচ দেখা যায় সেই অলঙ্কার বা অর্থে স্ত্রীর কোন নিয়ন্ত্রন নেই, সেই অলংকার বা অর্থ স্ত্রী তার নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারে না। সেটা নিয়ন্ত্রিত থাকে অন্যের হাতে। যদি তাই হয়, তবে এভাবে মোহরানা আদায় হবে না। কেননা, বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, মোহরানা এমনভাবে প্রদান করতে হবে যাতে তার উপর স্ত্রীর নিঃশর্ত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং স্ত্রী নিজ ইচ্ছামতো বিনা বাধায় তা ব্যবহার, খরচ, দান, ভোগ বা ঋণ দিতে পারে।

আরেকটি কু অভ্যাস প্রচলিত আছে তা হল- বিয়ের সময় স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত উপহার সামগ্রী যেমন স্বর্ণালঙ্কার, কসমেটিকস, কাপড়-চোপড় কে ধরা হয় মোহরানার অর্ধেক উসুল হিসেবে আবার অনেক সময় স্বল্প দামের জিনিসপত্র উপহার দিয়ে বেশি পরিমানে দেনমোহর উসুল দেখানো হয় অথচ উপহার দেনমোহর হিসেবে গন্য হতে পারেনা যা আমি আগেই বলেছি।

সবচেয়ে প্রচলিত বড় ভুল ধারণা হল-স্ত্রী যদি নিজে স্বামীকে তালাক দেয় (তালাক-ই-তাফইজ)তাহলে স্বামীকে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবেনা। কিন্তু দেনমোহর সর্বাবস্থায় স্বামীর ঋণ। দেনমোহর কখনোই মাফ হবেনা। ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ-বিচ্ছেদ আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, অত্র আইনে সন্নিবেশিত কোনো কিছুই কোনো বিবাহিত মহিলার বিবাহ-বিচ্ছেদের ফলে মুসলিম আইন অনুযায়ী তাঁর প্রাপ্য দেনমোহর অথবা তাঁর কোনো অংশের ওপর তাঁর অধিকারকে ক্ষুণ্ন করবে না। ওই ধারা অনুসারে প্রমাণিত হয় যে কোনো মুসলিম নারী আদালতের মাধ্যমে তাঁর স্বামীকে তালাক দিলেও ওই নারীর দেনমোহরের অধিকার লোপ পায় না। মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ অনুযায়ী সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া আরেকটি বিবাহ করলে তাঁকে অবিলম্বে তাঁর বর্তমান স্ত্রীর বা স্ত্রীদের তাৎক্ষণিক অথবা বিলম্বিত দেনমোহরের যাবতীয় টাকা পরিশোধ করতে হবে এবং ওই অর্থ পরিশোধ করা না হলে তা বকেয়া রাজস্বের মতো আদায় হবে। নিকাহনামায় বা বিবাহের চুক্তিতে দেনমোহর-ঋণ পরিশোধের পদ্ধতি নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলে দেনমোহরের সমগ্র অর্থ চাহিবামাত্র দেয় বলে ধরে নিতে হবে।

দেনমোহরের দাবি কখন মাফ হয়ঃ

কেউ যদি তার স্ত্রীকে ফুসলিয়ে দেনমোহর মাফ করিয়ে নেয়, তবে সেটা মাফ হবে না। সেটার দাবি থেকে স্বামী কোনোদিন মুক্তি পাবে না। অবশ্য কোনো প্রকার চাপ, হুমকি, শঠতা, ছলনা, প্ররোচনা ব্যতীত সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় যদি স্ত্রী তার মোহরানার কোনো অংশ বা পুরো অংশের দাবি মাফ করে দেয়, তবেই কেবল স্বামী তা থেকে মুক্তি পাবে। নচেৎ নয়। অবশ্য এটাও ইসলামি শরিআহর কথা যে, স্বামীর আর্থিক অবস্থা কোনো কারণে অসচ্ছল হলে, মোহরানা পরিশোধে তাকে স্ত্রীর সময় বাড়িয়ে দেয়া উচিত। আর স্বামী যদি একেবারেই আর্থিকভাবে অসচ্ছল হয়, তবে স্ত্রীর উচিত দেনমোহরের দাবি থেকে স্বামীকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে দেয়া।

শেষ কথা হল স্বামীর একচ্ছত্র তালাকের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে দেনমোহর। এতে স্ত্রীর সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা কিছুটা হলেও নিরাপদ হয়। কিন্তু বিয়ে শুধুই দুটি দেহের যৌন চাহিদা পূরণের একটি দেওয়ানি চুক্তি নয়, দুটি হৃদয়ের ও মিলন ঘটে এর মাধ্যমে। তাই বেশি দেনমোহর ধার্য করে হয়তো স্ট্যাটাস দেখানো যায়, স্বামীর অক্ষমতাকে পুঁজি করে বিয়ে বিচ্ছেদ কে হয়তো কিছুটা ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে কিন্তু মেলবন্ধনহীন সেই সম্পর্কে হৃদয়ের উষ্ণতা কতটুকু থাকবে তাও ভাবার বিষয়-বিয়ে যেন কারো ঘাড়ে লাশের বোঝা না হয়ে যায়!

-------------------------------------------------------------------------------------------------
SAEED AHSAN KHALID
Senior Lecturer
Department of Law
Daffodil International University.

Pages: [1]