পৃথিবীর যে সকল দেশে সাংবিধানিক শ্রেষ্ঠত্ব (constitutional supremacy) স্বীকৃত সে সকল দেশের সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ও ক্ষমতার সীমারেখা নির্ধারিত থাকে। অনুরুপভাবে,আমাদের সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে সুপ্রীম কোর্টের গঠন, ক্ষমতা, এখতিয়ার ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করা আছে। সংবিধান অনুযায়ী হাইকোর্টকে আদি, আপীল,নিন্ম আদালত সমূহের উপর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রন মূলক ক্ষমতা সহ কোর্ট অব রেকর্ড হিসাবে এর অবমাননার জন্য যে কোন ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদানের ও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। একই উপায়ে, শেষ appellate court হিসাবে আপীল বিভাগকে তার নিয়মিত দায়িত্বের পাশাপাশি কোন বিবাদমান বিষয়ে সম্পূর্ন ন্যায়বিচারের নিশ্চায়তা প্রদানার্থে তার অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার প্রদানপূর্বক যে কোন আদেশ বা রায় প্রদানের বৈধতা প্রদান করেছে।
Complete justice কি?
Complete justice এর exact কোন সংঙ্গা দেওয়া কঠিন। তবে, আইনাঙ্গনে ‘Complete Justice’ প্রত্যয়টি কোন আইন কাঠামোতে বিদ্যমান কারিগরি(technical) ত্রুটি সংশোধনীর মাধ্যমে কোন মামলায় বিবদমান পক্ষকে পরিপূর্ণ রূপে বিচার প্রদানকে বোঝায়। বিচারপতি মোস্তফা কামাল একটি মামালায় বলেছিলেন,Complete justice প্রত্যয়টির ব্যাবহার একেক মামালায় একেকভাবে পরিলক্ষিত হয়- কখনো এটি আইনানুসারে বিচার, কখনো বা বিবেকবোধ থেকে নিসৃত স্বছতার ভিত্তিতে বিচার, কখনো বা এটির মাধ্যমে মামলার মেরিটের ভিত্তিতে ছোটখাট ত্রুটিসমূহ দূর করে সঠিক এবং ন্যায়ানুগ বিচার সম্পন্ন করাকে বোঝানো হয়।তবে, এর ব্যাবহার প্রত্যেকটি মামালায় ভিন্নরুপ পরিগ্রহ করে। ভারতীয় একটি মামালায় Complete justice-কে বলা হয়েছে-“ The phrase ‘complete justice…is the word of width couched with elasticity to meet myriad situations created by human ingunuity or cause or result of operation of staute law or law declared....under the constitution and cannot be cribbed or cabined within any limitaions or phraseology”. অর্থাৎ, আইন প্রনয়নের সময় বিদ্যমান ত্রুটি থেকে বা প্রায়োগিক কোন বিষয়ের ত্রুটি থেকে সৃষ্ট কোন জটিলতা দূরীকরনের মাধ্যমে কোন মামলার কাংখিত ফল আনয়নের প্রক্রিয়াই হল চূড়ান্ত ন্যায়বিচার(Complete justice) সাধন।
সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদে বর্নিত Complete justice-এর প্রকৃতি কেমন?
সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, কোন মামলায় বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করনার্থে আদালতের যেকোন আদেশ দেবার ক্ষমতা থাকবে। মূলতঃ সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ আপীল বিভাগকে সম্পূর্ণ ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য অসীম ক্ষমতায় ক্ষমতায়িত করেছে। Art. 104 empowes the appellate division to pass any such “decree or order as may be necesary for doing complete justice between the parties.” আপীল বিভাগকে এরুপ ক্ষমতা দেবার কারণ হচ্ছে,ক) আপীল বিভাগ দেশের আইন কাঠামোতে বিদ্যমান সর্বোচ্চ appellate forum.; খ) মামলায় বিদ্যমান কোন টেকনিক্যাল ত্রুটির কারনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে না এমনটি কাম্য হতে পারে না; গ) আপীল বিভাগ দেশের সর্বোচ্চ আপীল আদালত বিধায় অনেক বিষয়ের বাস্তবায়নের জন্য যেন নির্বাহী বিভাগের মুখাপেক্ষী হয়ে না থাকতে হয়- এ জন্য আইন প্রনেতাগন আপীল বিভাগকে এরুপ যুক্তিসঙ্গত ক্ষমতায় ক্ষমতায়িত করেছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সর্বোচ্চ বিচারাদালের বা ক্ষেত্রবিশেষ সুপ্রীম constitutional court –এর হতে এরুপ ক্ষমতা প্রদান করা হয়। উদাহরণ স্বরুপ, আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে এরুপ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আমাদের সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদে আপীল বিভাগকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা হল-
ক। আদালতের সম্মুখে কোন ব্যক্তির হাজিরা নিশ্চিত করার আদেশ প্রদান করা;
খ। কোন দলিল যা কিনা অন্য কোন ব্যক্তির দখলে আছে তার উদ্ধার এবং আদালতের সামনে হাজির করার আদেশ প্রদান করা; এবং
গ। কোন বিষয়ে আদালত যদি মনে করেন যে, উক্ত মামলায় কোন পক্ষ আইনগত ত্রুটির কারনে বা অন্য কোন কারনে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হয়েছেন, তাহলে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করনার্থে যেমন সঙ্গত মনে হয় আদালত তেমন “আদেশ, ডিক্রি বা রায় ঘোষণা করতে পারেন।
তবে মনে রাখতে হবে, সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদে বর্ণিত complete justice এর ক্ষমতা শুধুমাত্র আপীল বিভাগের হাতেই বিদ্যমান, অন্য কোন আদালত বা ট্রাইব্যুনাল এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে না।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ এর অধীন সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার করা (doing complete justice) আপীল আদালতের অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা(inherent power):
বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদকে বলা হয় আপীল আদালতকে অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা প্রয়োগকারী সাংবিধানিক অনুচ্ছেদ যা কোন আইন দ্বারা সীমীত করা বা খাট করা যাবে না। তবে, এই অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা শুধুমাত্র আপীল আদালতেরই রয়েছে; অন্য কোন আদালত বা ট্রাইব্যুনালের এই ক্ষমতা নেই। অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা আদালতের এমন এক ক্ষমতা যা আদালতের সাথে built in. উল্লেখ্য, আদালতের এই অর্ন্তনিহিত ক্ষমতার ধারণাটি এসেছে প্রাচীন ইংল্যান্ডের বিচার কাঠামো থেকে; প্রাচীন ইংল্যান্ডের কমন ল’ কোর্ট যখন কোন বিষয়ে প্রচলিত আইনি ব্যাবস্থার মধ্যে থেকে যথাযথ প্রতিকার দিতে পারতো না তখন নিয়মিত আদালতের পাশাপাশি ইকুয়টি আদালত প্রচলিত আইনের এসকল ত্রুটি বা অসমম্পূর্ণতা মাথায় রেখে পরিপূর্ণ ন্যায় বিচারের সার্থে সঙ্গতিপূর্ণ যে কোন আদেশ দিতে পারতেন। প্রাচীন ইংলিশ আইনের এ সকল মূলনীতি সমূহ পরবর্তীতে আমাদের বিধিবদ্ধ আইনে অবস্থান করে নেয়। দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮-এর ১৫১ ধারা, ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ৫৬১-এ ধারা সহ, চুক্তি আইন, সুনিদৃষ্ট প্রতিকার আইন, ট্রাষ্ট আইনের অনেক ধারা সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইন সমূহে আদালতের ন্যায়বিচার মূলক নিজবিবেচনাধীন ক্ষমতা (discretionary) প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
তবে, অন্যান্য আইনে যাই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ক্ষমতার স্বরুপ ও ব্যাপ্তি অন্যান্য আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা থেকে সপূর্ণ ভিন্ন ও ব্যাপক। আপীল বিভাগ বাংলাদেশ বিদ্যমান আইনী ব্যাবস্থায় সর্বোচ্চ আপীল আদালত যার ফলে এই আদালতকে সংবিধান প্রদত্ত যে অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে তার মাধ্যমে কোন মামলায় সুষ্ঠু ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে আপীল বিভাগ যে কোন আদেশ, রায় বা ডিক্রি প্রদান করতে পারেন। প্রশ্ন উঠতে পারে এরুপ ন্যায়ানুগ আদেশ প্রদানার্থে আপীল বিভাগ কি বিদ্যমান কোন আইন বা তার বিধান কে এড়িয়ে যেতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তর একটু পরে দিচ্ছি।
সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা(inherent power) প্রয়োগকালে আপীল বিভাগ কি বিদ্যমান আইনের কোন বিধান ভঙ্গ করতে পারে?
আমাদের দেশের উচ্চ আদালতে উপরোল্লিখিত বিষয়ে তেমন নির্দেশনা বা বিতর্ক ভারতের আদালতসমূহে এমনকি সুপ্রিম কোর্টে ও বিভিন্নতর সিদ্ধান্ত পরিলক্ষিত হয় । Prem Chand vs Excise Commr. U.P. (1963) মামলায় এই প্রথম প্রশ্ন প্রথম উত্থাপিত হয় যে, ভারতীয় সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে (আমাদের দেশের ১০৪ ধারার অনুরুপ) বর্ণিত complete justice নিশ্চিত করার জন্য আদালত কি মৌলিক অধিকার সন্নিবেশিত সংবিধানের কোন বিধানকে ignore করতে পারে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে আদালত বলেন,
“ কমপ্লিট জাস্টিস করার জন্য আদালতের ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে শুধু সংবিধানের কোন বিধানই নয় বরং বিধিবদ্ধ আইনের কোন বিধানকেও খর্ব করা যাবে না।“
পরবর্তীতে প্রেমচাঁদ মামলার এত সিদ্ধান্ত A.R. Antulay case (1998) মামলায় গৃহীত হয়।
যাইহোক, Delhi Judicial Service Commission case(1991) মামলায় ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট প্রেমচাঁদ মামলা থেকে ভিন্নধর্মী আরেকটি স্বতন্ত্র সিদ্ধান্তে উপনীত হন; এ মামলায় আদালত এ বলেন,
“ কোন মামলায় ন্যায় বিচার নিশ্চিত করনার্থে আদালতের অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা প্রয়োগের যে অধিকার বিদ্যমান আছে সেটি সংবিধান প্রদত্ত একটি অধিকার সুতরাং, কোন সাধারণ পার্লামেন্টারি আইন দ্বারা সংবিধানের এই ক্ষমতা সীমিত করা যাবে না।“
পরবর্তীতে, দেল্লী জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মামলায় গৃহীত এই সিদ্ধান্ত Union Carbide Corp. vs Union of India (1991) মামলায় অনুসৃত হয়।
উপরেবর্ণিত ভিন্নধর্মী দুই সিদ্ধানের বাইরে এই দুই ধরনের সিদ্ধান্তকে একত্রিত করে আরেকটি মত যা harmonious view হিসাবে পরিচিত, লক্ষ্য করা যায়। ভারতের সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন মামলায় (১৯৯৮) আদালত এই মতকে সমর্থন করে বলেন,
“এটা সত্য যে, সাংবিধানিক ক্ষমতা সাধারন আইন দ্বারা সীমিত করা যায় না কিন্তু তার মানে এই নয় যে সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত ক্ষমতাকে প্রয়োগ করার জন্য অন্যান্য আইনে বর্ণিত সু-স্পষ্ট বিধি-কে ভঙ্গ করার জন্য প্রদান করা হয়েছে।“
সুতরাং, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের ভাষ্য অনুযায়ী এখন বর্তমান অবস্থা হচ্ছে- কোন মামলায় কোন পরিস্থিতিতে সংবিধানে বর্ণিত অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে তা নির্দ্ধারিত হবে প্রত্যেকটি ভিন্ন ভিন্ন মামলার প্রেক্ষিতে। তবে, শুধুমাত্র অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা প্রয়োগ করার জন্য কোন আইনের সু-স্পষ্ট বিধানকে যাতে ভঙ্গ করা না হয় আদালত এবিষয়ে সবিশেষ গুরুত্ব প্রদান করবেন।[M.C. Mehta vs Kamal Nath (2000)]
সর্ব-ভারতে সংবিধানের ১৪২ ধারা (আমাদের দেশের ১০৪ ধারা) ও আদালতের অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও এ বিষয়ে জুরিস্প্রুডেন্স ডেভেলপ করলেও আমাদের দেশে এ বিষয়ে তেমন উচ্চ আদালতের সিদ্ধন্তের মাধ্যমে আলোচনা তেমন একটা পরিলক্ষিত হয় না। কারণ বুঝি না; এত সুন্দর একটা বিধান, আদালতের অসীম ক্ষমতা ব্যাবহারের কি চমৎকার সুযোগ, তার পরেও কেন যানি
?? যাইহোক,বাংলাদেশে Nazir Uddhin vs Hameeda Banu,45 DLR (AD) 38, মামলায় আদালতের অবস্থান হচ্ছে,” আদালত সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদের ক্ষমতা প্রয়োগের সূত্র ধরে এমন কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না যাতে কোন আইনের সু-স্পষ্ট বিধান লংঘিত হয়।“ আদালত এই মামলায় অরো বলেন যে, “court of first instance হিসাবে নিন্ম আদালত যা করতে পারেন না উচ্চ আদালত হিসাবে আপীল বিভাগ ও সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদকে আমন্ত্রন জানিয়ে তা করতে পারেন না।“
উচ্চ আদালতের এমন সিদ্ধান্তকে আমার কাছে গতানুগতিক মনে হয়েছে কারণ-
ক) সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদে বর্ণিত একটি আসাধারণ ক্ষমতা (extra ordinary and special power), সুতরাং একে সাধারণ চিরাচরিত ব্যাখ্যা দেওয়া এই অনুচ্ছেদের মূল spirit অনুধাবনে ব্যার্থতার নামান্তর বৈ কিছু-ই নয়;(এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত মত);
খ) সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদের মূলে যদি আমরা যাই তাহলে দেখা যাবে, আদালত কে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবেলায়; অর্থাৎ আইন প্রনয়নের সময় আইন প্রনেতাদের ভবিষ্যতে কি ঘটবে এমন সব কিছু মাথায় থাকা সম্ভব নয় কারণ, মানুষের চিন্তাশক্তির একটা সীমা আছে। আর এই বিষয়ের বিবেচনায়ই আদালতকে অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা ও সু-বিবেচনা মূলক ক্ষমতা নামে একটা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যাতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়। এমতবস্থায়, আইনের সাধারণ ব্যাখ্যার মাধ্যমে আদালতের ক্ষমতা সীমিত করার মানে ন্যায় বিচারের পথকেও সংকীর্ণ করে দেওয়া, যা আমার কাছে কেমন যেন অগ্রহণযোগ্য মনে হয়;
গ) আদালত এবং বিচারকদের বলা হয় দুনিয়াতে সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধি অর্থাৎ বিচারকেরা আইন এবং বিবেক বুদ্ধি দিয়ে ন্যায় বিচার করবেন যার কারনে তারা সৃষ্টি কর্তার কাছে জবাবদিহি করবেন। কোন ক্ষতিগ্রস্থ বিচার প্রার্থীর ক্ষতি সম্পর্কে অবগত হয়েও শুধুমাত্র আইনী বিধানের অপ্রতুলতা বা অসংলগ্নতার দরুন তাকে বিচার দেওয়া যাবে না এটা ন্যায় বিচারের মূল স্পিরিটের সাথে অনুগামী নয়।
এছাড়া, আরো অনেক কারনে মনে হয়, আদালতের অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা প্রয়োগে আইনের মাধ্যমে বা উচ্চ আদালতের কোন সিদ্ধান্তের মধ্যমে সীমারেখা নিরূপণ করা অগ্রহণযোগ্য। উল্লেখ্য, তাহলে অনেকে বলতে পারেন, এটি কি আইনসভার আইনকে পাশ কাটিয়ে জাজ-মেড ল বা বিচারক তৈরি আইনের মত সিদ্ধান্তের মধ্যে যাবে না? উত্তর –না। কারণ, সুপ্রীম কোর্টকে সংবিধান ব্যাখ্যার অধিকার প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং, সংবিধানের আভিভাবক হিসাবে এর রক্ষা ও জনগণের অধিকার সমুন্নত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ব্যাখ্যা দেওয়ার দায়িত্ব ও বটে সুপ্রীম কোর্টের।
১০৪ অনুচ্ছেদের প্রয়োগ ঘটিয়ে আপীল বিভাগ কি কি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন?
এতক্ষন আলোচনার পর একথা বলা অপ্রাসঙ্গিক যে, সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদের অধীন সুপ্রীম কোর্টের কি কি ক্ষমতা রয়েছে...এক কথায়, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য যে আদেশ দেওয়া প্রয়োজন, আপীল বিভাগ তা-ই দিতে পারেন। তার পরেও নজিরের আলোকে কিছু উদাহারণ দেওয়া যেতে পারে-
১, রিভিশনাল অথরিটি সম্পন্ন কোর্টে মামলা ফেরৎ পাঠানো; ২, ন্যায় বিচারের স্বার্থে যে কোন দলিল বা তদন্ত রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো; ৩, procedural law এর যে কোন টেকনিক্যাল ত্রুটি সংশোধন পূর্বক মামলা নিস্পত্তি; ৪, হাইকোর্ট বা ট্রাইব্যুনাল কতৃক অপর্যাপ্ত দন্ডকে বৃদ্ধি করে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো।
আরো অনেক আছে...।মোদ্দাকথা, সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ আপীল বিভাগের হাতে ন্যায় বিচার সাধনার্থে একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র যার সুষ্ঠু ব্যাবহার ন্যায় বিচারের পথকে সুগম করতে পারে।