Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - shaiful

Pages: [1] 2 3 ... 5
1
১৯৬৪ সালে ৩৪ বছর বয়সী জুন আলমেইডা যখন নতুন ধরনের ভাইরাসের খোঁজ পাওয়ার দাবি করলেন তখন একটি পিয়ার-রিভিউ জার্নালে তা প্রত্যাখ্যান করা হলো। তাঁর ধারণ করা ছবিগুলোতে ভাইরাসের চারপাশে যে বর্ণ বলয় বা মুকুটের মতো দেখা গেল তাকে বিচারকেরা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বাজে ছবি বলে বাতিল করে দিলেন। তাঁরা কি তখন বুঝতে পেরেছিলেন মাত্র পাঁচ দশক বাদেই ওই বাতিল হওয়া বাজে ছবির ভাইরাস বিশ্বজুড়ে মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে?

স্কটিশ ভাইরোলজিস্ট আলমেইডাকেই করোনাভাইরাস আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারি সৃষ্টিকারী সার্স-কোভ-২ ভাইরাস ওই করোনাভাইরাস পরিবারের সদস্য। কোভিড-১৯ সংক্রমণের তীব্রতার সঙ্গে করোনাভাইরাসকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে তাতে আলমেইডা আবিষ্কারটি আবারও আলোচনায় ফিরে এসেছে।

কোভিড-১৯ একটি নতুন ধরনের ভাইরাস, তবে সেটি করোনাভাইরাসের একটি প্রজাতি। ১৯৬৪ সালে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের গবেষণাগারে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করেছিলেন ড. আলমেইডা। তিনি ছিলেন স্কটল্যান্ডের এক বাসচালকের মেয়ে। ১৯৬৪ সালে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের গবেষণাগারে প্রথম এই মারণ ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন।

১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন জুন আলমেইডা। গ্লাসগোর আলেজান্দ্রা পার্কের কাছাকাছি টেনমেন্ট এলাকায় বড় হন তিনি। ১৬ বছর বয়সেই ছেড়েছিলেন স্কুল। আনুষ্ঠানিক বিদ্যার ক্ষেত্রে তিনি সামান্য পড়াশোনা করেই স্কুল ছাড়েন। তবে গ্লাসগো রয়্যাল ইনফার্মারিতে হিস্টোপ্যাথলজিতে গবেষণাগার কর্মী হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন। তারপর পাড়ি দেন লন্ডনে। ১৯৫৪ সালে তিনি এনরিক আলমেইডাকে বিয়ে করেন, যিনি ছিলেন শিল্পী ও ভেনেজুয়েলার বংশোদ্ভূত। পরে এই দম্পতি ও তাঁদের মেয়ে কানাডার টরন্টোতে পাড়ি দেন। সেখানে অন্টারিও ক্যানসার ইনস্টিটিউটে জুন আলমেইডা একটি ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপ নিয়ে তাঁর অসামান্য দক্ষতা দেখান।

২০০৮ সালের আলমেডার এক মরণোত্তর প্রোফাইল অনুসারে, কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিবিহীন বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতি অর্জন করা তখন ব্রিটেনের চেয়ে সহজ ছিল। কোনো আনুষ্ঠানিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও, তিনি বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রবন্ধের সহ-লেখক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাসগুলোর গঠন কাঠামোটি বর্ণনা করেছিলেন যা আগে দৃশ্যমান হয়নি।

বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসাবিষয়ক লেখক জর্জ উইন্টার বলেন, ড. আলমেইডা এমন একটি পদ্ধতির সূচনা করেছিলেন যা অ্যান্টিবডি সংহত করার মাধ্যমে ভাইরাসগুলো আরও পরিষ্কারভাবে দেখা সম্ভব হয়। তাঁর এই প্রতিভার বিষয়টি যুক্তরাজ্যের মনোযোগ কাড়ে। ১৯৬৪ সালে তাঁকে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কাজ করার জন্য প্রলুব্ধ করে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনা হয়। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর এই হাসপাতালেই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। ফিরে আসার পর তিনি ডক্টর ডেভিড টাইরেলের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন।

উইন্টার বলছেন, ড. টাইরেল স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে অনুনাসিক ধোয়ার ওপর গবেষণা করছিলেন। তাঁরা বেশ কয়েকটি সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাস বৃদ্ধি দেখতে পারছিলেন, কিন্তু সবগুলো নয়। তার মধ্যে একটি বিশেষভাবে নজরে আসে। সেটির নাম দেওয়া হয়েছিল বি-৮১৪, যা এসেছিল ১৯৬০ সালে সারের একটি বোর্ডিং স্কুলের এক ছাত্রের কাজ থেকে। তাঁরা দেখেন, সাধারণ সর্দি-কাশির কয়েকটি লক্ষণ স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে তৈরি করতে পারলেও, সেগুলো তাদের নিয়মিত কোষের ভেতরে আর বেড়ে উঠতে পারে না। তবে স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে প্রত্যঙ্গের মধ্যে কিছু বৃদ্ধি দেখিয়েছিল। সেটা দেখে অবাক হয়ে ড. টাইরেল ভাবলেন, এটা কোনো বৈদ্যুতিক মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা উচিত।

তাঁরা সেসব নমুনা জুন আলমেইডাকে পাঠান, যিনি নমুনার মধ্যে ভাইরাস কণা দেখতে পান। সেগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো দেখতে হলেও পুরোপুরি তা নয়। তিনি যা শনাক্ত করেছিলেন, সেটি বিশ্বে করোনাভাইরাস হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

মি. উইন্টার বলছেন, আলমেইডা ইঁদুরের মধ্যে হেপাটাইটিস এবং মুরগির সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস নিয়ে গবেষণা করার সময় এর আগে এ ধরনের কণাগুলো দেখেছিলেন। তা সত্ত্বেও, পিয়ার-রিভিউ জার্নালে পাঠানো তার নথিটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। কারণ রেফারিরা বলেছিলেন, তিনি যেসব ছবি দিয়েছেন, সেগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কণার বাজে ধরনের চিত্র।’

বি-৮১৪ আবিষ্কারের বিষয়ে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি করোনাভাইরাসের প্রথম যে চিত্র দেখেছিলেন, সেটি প্রকাশিত হয় দুই বছর পরে জেনারেল ভাইরোলজি জার্নালে।

আলমেইডা পরবর্তীতে লন্ডনের পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিকেল স্কুলে কাজ করেন, যেখানে তিনি ডক্টরেট সম্মানে ভূষিত হন। ওয়েলকাম ইনস্টিটিউটে তিনি তাঁর পেশাজীবন শেষ করেন যেখানে বেশ ভাইরাস ইমেজিংয়ের ক্ষেত্রে তাঁর নামে বেশ কয়েকটি স্বত্বাধিকার হয়। ওয়েলকাম ছেড়ে দেওয়ার পর ড. আলমেইডা যোগ ব্যায়ামের প্রশিক্ষক হন। তবে পরবর্তীতে ১৯৮০-এর দশকে তিনি এইচআইভি ভাইরাসের ইমেজিং-এর ক্ষেত্রে একজন পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন।

২০০৭ সালে, ৭৭ বছর বয়সে জুন আলমেইডা মারা যান। মৃত্যুর তেরো বছর পরে তিনি তাঁর সেই কাজের জন্য অবশেষে স্বীকৃতি পাচ্ছেন, যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি সম্পর্কে বুঝতে সহায়তা করছে।

আলমেইডাকে ইমিউন ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের একটি সহজ কৌশল ব্যবহারের প্রাথমিক পথিকৃৎ হিসেবে স্মরণ করা হয়, যা বিজ্ঞানীদের পক্ষে ভাইরাসগুলো দেখা সম্ভব করেছিল। মার্কিন সরকারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বিশেষজ্ঞ এ জেড কাপিকিয়ানকে ইমিউন ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের কৌশল শেখানোর কৃতিত্ব দেওয়া হলো আলমেইডাকে। কাপিকিয়ান এ কৌশলেই ‘নরোভাইরাস’ শনাক্ত করেন যা ‘শীতকালে বমির প্রাদুর্ভাব ঘটায়’।

সূত্র: প্রথম আলো

2
বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী নোভেল করোনাভাইরাসের তাণ্ডবলীলার মধ্যেই দোসর হিসেবে জুটেছে গ্যাস্ট্রো-করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে বেশ কয়েক জন আক্রান্ত হয়েছেন গ্যাস্ট্রো-করোনাভাইরাসের সংক্রমণে। তবে, নোভেল করোনার পাশে গ্যাস্ট্রো-করোনার সংক্রমণ এতটাই সীমিত, বেশি চর্চা না-হওয়ায়, আমাদের কাছে অজানাই থেকে গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এটি আলাদা কিছু নয়, কোভিড-১৯ এরই দ্বিতীয় সংস্করণ। তাই উপেক্ষা না-করে, গ্যাস্ট্রো-করোনাভাইরাসের লক্ষণ জেনে রাখা জরুরি।

গ্যাস্ট্রো-করোনাভাইরাস শুনেই আশাকরি আন্দাজ করতে পারছেন, এর সঙ্গে পেটের কোনও না সম্পর্ক আছে। হ্যাঁ, তা আছে বইকি। নোভেল করোনাভাইরাসে জ্বর-সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ দেখা যায়। আক্রমণের লক্ষ্য শ্বাসনালী। প্রথম দিকে সাধারণ সর্দি-কাশির সঙ্গে অনেকে গুলিয়ে ফেলেন। বা, করোনা পজিটিভ হওয়া সত্ত্বেও কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, এমনটাও ঘটছে। কিন্তু, গ্যাস্ট্রো-করোনাভাইরাস অ্যাটাক করছে পেটে।

পেটে থেকে থেকে মোচড় দেওয়া, এমনকী ডায়েরিয়াও গ্যাস্ট্রো-করোনাভাইরাসের অন্যতম লক্ষণ। কম লক্ষণযুক্ত পেটে উদ্ভূত এই গ্যাস্ট্রো-করোনাভাইরাস এখন চিকিত্‍‌সকদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ করোনার উপসর্গের সঙ্গে মিল না-থাকাতেই সমস্যা বেড়েছে। অনেক সময় চিকিত্‍‌সকেরা বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে, নোরোভাইরাসের সঙ্গে এর লক্ষণের অনেকটা মিল পাওয়া যায়।

সুতরাং, আমাদের জানতে হবে গ্যাস্ট্রো-করোনাভাইরাস কি? এর উপসর্গই বা কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাস প্রথমে কোনও ব্যক্তির শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করার পরিবর্তে পেটে আক্রমণ করে। কাশির সাধারণ উপসর্গ দেখা যায় না। এককথায়, ফুসফুসের নীচের অংশে নিউমোনিয়ার একটি সংস্করণ। সে কারণে পেটে ব্যথা হয়।

চিকিত্‍‌সকেরা জানাচ্ছেন, যদি কোনও ব্যক্তির পেটে ব্যথা অনুভব হয় বা ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয় তবে, এটি গ্যাস্ট্রো কভিড -১৯ এর প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। পেটে শক্ত কিছু অনুভূত হতে পারে, পেট ব্যথা বা পেটের নিচের অংশে নিস্তেজ ব্যথা হতে পারে। এগুলো প্রাথমিক লক্ষণ। এর পর কাশি ও জ্বরের মতো সাধারণ উপসর্গগুলো আসবে। এই লক্ষণগুলি পেটের অন্য অসুখ থেকেও হতে পারে। তাই গ্যাস্ট্রো-করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, সেটা বুঝতে পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথম দিকে পেটব্যথা ও ডায়েরিয়া। ক্রমে ক্রমে অবিরাম কাশি ও উচ্চ তাপমাত্রা জ্বর আসবে। ফলে, পেটেব্যথা বা পেটখারাপের সঙ্গে জ্বর-কাশি থাকলে, ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। গ্যাস্ট্রো-ভাইরাসকে নোরোভাইরাসও বলা হচ্ছে।

সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস

3
করোনাভাইরাসে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো শ্বাসকষ্ট। এই শ্বাসকষ্ট লাঘব করতে চিকিৎসকরা বলছেন উপুড় হয়ে শুতে। ধারণাটা অবশ্য নতুন নয়। প্রায় সাত বছর আগে শ্বাসকষ্টের রোগীদের উপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলেন একদল ফরাসি গবেষক। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভষায় এই পদ্ধতির নাম ‘প্রন পজিশন’।

সম্প্রতি দুই চিকিৎসকের ফোনালাপে আবার উঠে এসেছে এই প্রন পজিশন। ফোনালাপে শোনা যায়, চল্লিশ বছর বয়সী কোভিড পজিটিভ এক যুবকের প্রাণ বাঁচাতে উপুড় করিয়ে শোয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন আমেরিকার নর্থওয়েল হেলথের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিনের প্রধান ডা. মঙ্গলা নরসিংহম। মারাত্মক শ্বাসকষ্টে ওই যুবক কার্যত নিশ্বাসই নিতে পারছিলেন না। কী চিকিৎসা দেবেন বুঝে উঠতে না পেরে ডা. মঙ্গলাকে ফোন করেন সহকর্মী চিকিৎসক। জানতে চেয়েছিলেন, রোগীকে লাইফ সাপোর্ট বা ভেন্টিলেশনে দেব কি? জবাবে ফোনেই ফরাসি গবেষণার প্রসঙ্গ টেনে রোগীকে উপুড় করিয়ে শোয়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন সিসিইউ বিশেষজ্ঞ। চিকিৎসা পরিভাষায় যা কি না ‘প্রন পজিশন’ নামে পরিচিত। ডা. মঙ্গলার সেই পরামর্শে ধীরে ধীরে বেঁচে ওঠে যুবকটি।

চিকিৎসকদের মতে, করেনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করার ফলে সারা পৃথিবীতেই ভেন্টিলেটর সংকট দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় ‘প্রন পজিশন’ টেকনিক করোনাযুদ্ধে গেমচেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে। তাঁদের বক্তব্য, কোভিড রোগীর শ্বাস নিতে অসুবিধা হলে বা শ্বাসকষ্ট শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গেই ভেন্টিলেশনে না দেওয়াই ভাল। বরং, আগে এই প্রন পজিশনে রেখে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। এমনকী ভেন্টিলেশনে দেওয়ার পরও রোগীর উপর এই বিদ্যে প্রয়োগ করা উচিত।

জানা যাচ্ছে, শুধু আমেরিকা নয়, কোভিড-যুদ্ধে ব্রিটেনের চিকিৎসকদের কাছেও অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এই ‘প্রন পজিশন’। আইসিইউ-তে থাকা অনেক রোগীকেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনছে এই ‘অ্যানাটমিক্যাল পজিশন’।

সূত্র: নিউজ ব্রেক ও সিএনএন

4
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দিনে দিনে বাড়ছে। উপসর্গ দেখা দিলেই এখন পরীক্ষা করা উচিত। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে উপসর্গই দেখা যায় না। আবার কারও ক্ষেত্রে উপসর্গ থাকলেও করোনা ধরা পড়ছে না। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাস নিয়ে নানাজনের মনে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন।

প্রশ্ন: কোনো উপসর্গ নেই, তবু করোনা হতে পারে?

করোনা সংক্রমিত ৮০ শতাংশ রোগীর উপসর্গ থাকে খুবই মৃদু, সাধারণ সর্দিজ্বরের মতো। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সিডিসির তথ্যমতে, ২৫ শতাংশ রোগীর আদৌ কোনো উপসর্গই থাকে না। এ ধরনের রোগী নিজের অজান্তেই আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠছেন। তবে তাঁরা সংক্রমণ ছড়াতে ভূমিকা রাখছেন। এই দলে শিশু-কিশোরদের সংখ্যাই বেশি। রোগীদের একটা অংশ আবার প্রি-সিম্পটোমেটিক। মানে, তাদের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে একটু দেরিতে। কিন্তু তার আগেই ভাইরাস ছড়াতে শুরু করেন তাঁরা। কাজেই জ্বর-কাশি না থাকলেও যে আপনি বা আপনার চারপাশের সবাই নিরাপদ ও করোনামুক্ত, তা কিন্তু নয়। এ ক্ষেত্রে সিডিসির পরামর্শ হলো, যত দিন লকডাউন চালু থাকে তত দিন ঘরে থাকুন, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন, মাস্ক পরুন।

প্রশ্ন: উপসর্গ আছে, কিন্তু করোনা নেগেটিভ। তাহলে?

গবেষকেরা বলছেন, করোনা নির্ণয়ের জন্য যে আরটি পিসিআর পরীক্ষা করা হয়, তা ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে ফলস নেগেটিভ রিপোর্ট দিতে পারে। নমুনা সংগ্রহের সময় অসতর্কতা, শরীরে ভাইরাল লোড (জীবাণুর সংখ্যা) কম থাকা বা সঠিক সময়ে পরীক্ষা না করার কারণে এমনটা হয়। এর সমাধান হলো রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও সতর্কতা অবলম্বন করে ১৪ দিন আইসোলেশনে (সঙ্গনিরোধ) থাকতে হবে, সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি থাকলে বুকের সিটি স্ক্যান একটি বিকল্প পরীক্ষা, যা ক্ষেত্রবিশেষে ৯৭ শতাংশ নিশ্চিত করে বলে দিতে পারে করোনার সংক্রমণ হয়েছে কি না।

প্রশ্ন: করোনা একবার হলে কি পরে আবার হতে পারে?

কোনো ব্যক্তি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ভাইরাসের বিরুদ্ধে তাঁর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার কথা। অন্য সব ভাইরাসের মতো শরীরে বিদ্যমান সেই অ্যান্টিবডি সুস্থ হয়ে ওঠার পর অনেক দিন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ইতিমধ্যে আক্রান্ত ও সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশের শরীরে যথেষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার বিষয়টি লক্ষ করা গেছে, যা পরে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। এদিকে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ হওয়ার পর আবারও সংক্রমিত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, করোনার পুনঃসংক্রমণের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ডা. হিমেল ঘোষ, চিকিৎসা কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডুমুরিয়া, খুলনা

সূত্র: প্রথম আলো

5
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় দেশে দেশে সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুন মেনে চলার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সংক্রমণ কমে আসায় কোনো কোনো দেশের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বিধিনিষেধ শিথিল করার পরিকল্পনাও করছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলেছেন, সামাজিক এই দূরত্ব আরও দুই বছর মেনে চলতে হবে। তাঁরা সতর্ক করে বলেছেন, করোনার সংক্রমণের হুমকি ২০২৪ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের পাঁচ গবেষক গবেষণাটি করেছেন। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্স-এ গত মঙ্গলবার গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।
সার্স করোনাভাইরাস ও মার্স করোনাভাইরাসের সংক্রমণের যেসব তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে, সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে নতুন এই মডেল দাঁড় করিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ঋতুচক্রের পরিবর্তন ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতার ভিন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞানীরা নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি ধারণা করার চেষ্টা করেছেন। এতে তাঁরা দেখেছেন, বছরের যেকোনো সময়ই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

নতুন এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, ২০২৪ সালের শেষ দিকে আবার মহামারি আকারে ছড়াতে পারে করোনার সংক্রমণ। আর বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০২২ সাল পর্যন্ত সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। তবে নতুন এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট করেননি, ২০২২ সাল পর্যন্ত পুরো সময়টাই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে কি না। তবে তাঁরা বলেছেন, নতুন করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক বা চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবনের আগপর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।

গবেষণা নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের মধ্যে যদি স্থায়ীভাবে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে ওঠে, তাহলেও এটি বিলুপ্ত হতে সময় লাগবে পাঁচ বছর বা তার কিছু বেশি দিন। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে নিবন্ধে আরও বলা হয়, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে নেওয়া পদক্ষেপ রোগী ও সন্দেহভাজন রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত ও কোয়ারেন্টিন করতে সহায়ক হয় এবং তা স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ কমায়।

খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের।

6
সর্দি-কাশি ও জ্বরে চিকিৎসকের পরামর্শ
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর)
নম্বর: ১০৬৫৫ ও ০১৯৪৪৩৩৩২২২

করোনার সময়ে জরুরি সাহায্য পেতে ফোন করুন
সর্দি-কাশি ও জ্বরে চিকিৎসকের পরামর্শ

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর)


নম্বর: ১০৬৫৫ ও ০১৯৪৪৩৩৩২২২

Lifebuoy Soap
ই–মেইল: iedcrcovid19@gmail.com

করোনাবিষয়ক তথ্য পেতে এবং সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য দিতে ওয়েবসাইট: corona.gov.bd

স্বাস্থ্য বাতায়নের হটলাইন নম্বর ১৬২৬৩

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের  হটলাইন নম্বর ৩৩৩

সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর: ০১৭৬৯০৪৫৭৩৯

মিথ্যা বা গুজব প্রচারের বিষয়টি নজরে এলে

৯৯৯  অথবা ৯৫১২২৬৪, ৯৫১৪৯৮৮

দাফন কার্যক্রমে সহায়তা পেতে

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই যুগ্ম সচিবের

মুঠোফোন নম্বর: ০১৭১২০৮০৯৮৩ ও ০১৫৫২২০৪২০৮

করোনা পরিস্থিতিতে সহায়তার জন্য

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টারে ফোন বা এসএমএস করা যাবে, প্রতি দিন এবং যেকোনো সময়। টোল ফ্রি নম্বর: ১০৯

মনঃসামাজিক সহায়তা সেল

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মনঃসামাজিক সহায়তা সেল চালু করেছে। রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে ফোনকলের মাধ্যমে সেবা মিলবে।

ফোন:  ০১৮১১৪৫৮৫৪১ও০১৮১১৪৫৮৫৪২

মুঠোফোনে দন্ত রোগের চিকিৎসা

মুখ ও দাঁতের চিকিৎসা পেতে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির সদস্যদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নেওয়া যাবে।

 নম্বর: ০১৭১১১৩৬৩৬২, ০১৭৪১৪৯০১৩৪, ০১৭১১৫৪০০৪৫, ০১৭১১৯৩৭৫৯০, ০১৭১১৮০০০৪৯, ০১৭১২৪৮৬৫৪৮ ০১৭১৫০৭৫৭৪০, ০১৭১৭২১১১০৫, ০১৮১৭৫৪১০০৫ ও ০১৮১৭০৯৪৩৩১

জরুরি ত্রাণ পেতে

ঢাকা জেলা প্রশাসনের হটলাইন: ০২৪৭১১০৮৯১, ০১৯৮৭৮৫২০০৮

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন: ০১৭০৯৯০০৭০৩, ০১৭০৯৯০০৭০৪

 ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরামর্শ সেবা

পাঁচটি অঞ্চলে করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত চিকিৎসা তথ্য ও পরামর্শ সেবা চালু।

মগবাজার: ৯৩৫৫২৭৭, মোহাম্মদপুর: ০১৩১১-৯৪৬৪৩২, মাজার রোড, মিরপুর: ০১৩০১-৫৯৬৮৩৯,
বর্ধিত পল্লবী, মিরপুর: ০১৭৭০-৭২২১৯৪ এবং উত্তরা: ০১৩১৪-৭৬৬৫৪৫

Source: Prothom Alo

7
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রকোপকে মোকাবিলার জন্য চিকিৎসকদের পাশাপাশি প্রযুক্তিবিদদেরও একটা দায়বদ্ধতা আছে। আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি হতে পারে প্রযুক্তিবিদদের অন্যতম একটা হাতিয়ার।

সে লক্ষ্যেই করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আগামী ২৮-৩০ এপ্রিল, অনলাইনে আয়োজন করতে যাচ্ছে ‘করোনাথন-১৯’ শীর্ষক হ্যাকাথন। এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বিজয়ীগণ পুরস্কার হিসেবে পাবেন ২৫০০০ ইউএস ডলার। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র সমূহ (করোনার প্রভাব বিবেচনায়) হচ্ছে- স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য ও পুষ্টি সেবা, শিক্ষাসেবা ও ওপেন বক্স আইডিয়া।

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে আয়োজিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকমর্তা মোহাম্মদ সুরুজ্জামান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন মাল্টিমিডিয়া ও ক্রিয়েটিভ টেনোলজি বিভাগের প্রধান ড. শেখ মোহাম্মদ আলাইয়ার। বক্তব্য রাখেন এলাইড হেলথ সায়েন্স অনুষদের সহযোগী ডিন অধ্যাপক ড. আবু নাসের জাফরুল্লাহ। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক কে এম হাসান রিপন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি হওয়া অসংখ্য সমস্যার সমাধান শনাক্তকরণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে জরুরি সমস্যাগুলো যথা স্বাস্থ্য, খাদ্য, পুষ্টি ইত্যাদির সমাধান নির্ণয় করা, শিক্ষার্থীদেরকে বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে উদ্বুদ্ধ করা এবং বর্তমান সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীগণ যেন তাদের জ্ঞান এবং দক্ষতা কাজে লাগাতে পারে, সে লক্ষ্যে তাদের যথাযথ প্ল্যাটফর্ম প্রদান করাই এই ‘করোনাথন-১৯’ এর উদ্দেশ্য।

ছাত্রছাত্রীদের জমা দেয়া প্রোজেক্ট বা সমাধানগুলো ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সমাদৃত প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত করা হবে। নির্বাচিত সমাধানগুলোকে আরো পরিশালিত করার জন্য ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আর্থিক অনুদান সহ উন্নত ল্যাব সেবা প্রদান করবে। এআই/এমএল/আইওটি/রোবটিক্স এবং বিগ ডেটা প্রযুক্তিগুলোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা/খাদ্য ও পুষ্টি/শিক্ষা সহ আরো অন্যান্য বিষয়ের উপর সমাধান বের করে আনাই এই করোনাথন-১৯ এর মূল লক্ষ্য।

আয়োজকরা জানান, ‘ইয়ং মাইন্ডস অলওয়েজ লুকস ফর নিউ সলিউশ্যন্স। আর সে লক্ষ্যেই তরুণ ছাত্রছাত্রীদের কাজে লাগিয়ে এই বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানের উপায় উদ্ভাবন করতে চাই। করোনাথন-১৯ হয়তো করোনা নিধনকারী ভ্যাক্সিন সমাজকে উপহার দিতে পারবে না কিন্তু জীবনের জন্য যে প্রযুক্তি এই বিশ্বাসটা সমাজে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে।’

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে বা বিস্তারিত জানতে ভিজিট: https://coronathon19.daffodilvarsity.edu.bd/

8
ফুসফুস আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। শ্বাস-প্রশ্বাস, রক্তে অক্সিজেন প্রবেশ, কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনসহ দেহের অনেক জরুরি কাজ করে। ফুসফুস প্রাণীর চালিকাশক্তি।

সুস্থ ফুসফুসের কারণে মানুষ সুস্থভাবে জীবনযাপন করে থাকে। বর্তমান বিশ্বের এক বড় আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের মূল আক্রমণ স্থলও ফুসফুস। এই ভাইরাস নাক বা মুখের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায় এবং ধীরে ধীরে এর কার্যক্ষমতা নষ্ট করে রোগীকে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ইত্যাদি জটিলতা, এমনকি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে যেভাবে আপনার ফুসফুস যত্ন নেবেন, জেনে নেওয়া যাক।

১। খাবার প্রসঙ্গে আসা যাক। ফুসফুসের জন্য ভিটামিন-এ, সি, ই (বিটাক্যারোটিন ও ক্যারোটিনয়েডস), ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, সোডিয়াম, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকদের মতে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অর্থাৎ ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-ই ফুসফুসের জন্য মহৌষধ। আদা, রসুন, রঙিন শাকসবজি, ফল, তৈলাক্ত মাছ, টক ফল, সরিষা, আমলকী, আপেল, কমলা, ব্রোকলি, ডিম, ফুলকপি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেল আছে।

এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার ফুসফুসের ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে উজ্জীবিত করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে সেল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে এবং ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ফুসফুস তথা পুরো দেহের সুস্থতা নিশ্চিত করে। এসব খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৩০ থেকে ৪৫ মিলি লিটার পানি প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ কারও ওজন ৬০ কেজি হলে তার দৈনিক পানির চাহিদা হবে ন্যূনতম ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৭ লিটার। পর্যাপ্ত পানি পান করলে ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তির পাশাপাশি দেহ টক্সিনমুক্ত থাকবে এবং কোষকে উজ্জীবিত রাখতে সাহায্য করবে।

২। ফুসফুসের যত্নের কথা বললে প্রথমেই বলতে হয় ধূমপান ত্যাগের কথা। ধূমপায়ীদের ফুসফুসের কোষ স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দুর্বল হয়ে থাকে বলে তাদের শ্বাসতন্ত্রের রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও সবার থেকে বেশি থাকে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ধূমপায়ীদের করোনাভাইরাসের ‌‘অ্যাট রিস্ক’ বা ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, অর্থাৎ সাধারণ মানুষ অপেক্ষা ধূমপায়ীরা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, যার জন্য ধূমপান ত্যাগ আবশ্যক। এই আপৎকালীন সময়টা ধূমপান ছাড়ার অভ্যাসের জন্য আদর্শ সময়।

৩। ফুসফুস ভালো রাখতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। ব্যায়াম করলে দেহে প্রচুর অক্সিজেন প্রবেশ করে এবং বারবার সম্প্রসারণ-প্রসারণের ফলে ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন ১৫-৩০ মিনিট জোরে হাঁটা, প্রাণায়াম, বড় করে শ্বাস নেওয়া এবং সময় নিয়ে শ্বাস ছাড়া, মেডিটেশন ইত্যাদি ব্রিদিং এক্সারসাইজ একই সঙ্গে ফুসফুস এবং সম্পূর্ণ দেহের জন্য ভালো। পাশাপাশি প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা নির্বিঘ্ন ঘুমও সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।

মোট কথা ধূমপান না করা, নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামে ফুসফুস ও সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, যা শুধু করোনাই নয় যেকোনো ধরনের অসুস্থতা থেকেই আমাদের সুরক্ষা দেবে।

এ ছাড়া খাদ্যতালিকায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। এ দুটি উপাদান প্রাকৃতিকভাবেই ফুসফুস পরিষ্কার করে। তাই আনারসের জুস নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখুন। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি।

ধূমপায়ীদের ফুসফুস পরিষ্কারে সাহায্য করে আদা। প্রতিদিন এক টুকরো আদা চিবুলে শ্বাসতন্ত্র ও ফুসফুস থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়।

ফুসফুসকে পরিষ্কার করতে গাজরের জুস পান বেশ সাহায্য করে। প্রতিদিন দুই বেলা এই জুস খেলে ফুসফুস পরিষ্কার থাকে।

প্রতিদিন লেবুর শরবত খেলে ফুসফুস শক্তিশালী হয় এবং বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়।

প্রতিদিন গ্রিন টি পান ফুসফুসকে পরিষ্কার করে। এ ছাড়া গ্রিন টি অন্ত্রের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়।

গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে ফুসফুস শক্তিশালী হয় এবং প্রাকৃতিকভাবে ফুসফুস পরিষ্কার হয়।

সূত্রঃ আমাদের সময়

9
মহামারি করোনা পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষকে ঘরবন্দি করে ফেলেছে। নায়ক, গায়ক, শিক্ষক, অফিসার, বিজ্ঞানী, ভাবুক, লেখক, কবি—সবাই এখন কাজ করছেন ঘরে বসেই। ঠিক এরকম এক মহামারির সময় বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনও ঘরে বসেই নিজের কাজটুকু করেছিলেন।

নিউটনের বয়স তখন মাত্র কুড়ি। পড়াশোনা করছেন কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে। নামের আগে ‘স্যার’ উপাধী যুক্ত হয়নি তখনো। হঠাৎ হানা দিলো মহামারি প্লেগ। আজ থেকে অন্তত দুশো বছর আগে এই বিশ্ব আবিষ্কার করেছিল এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াকে, যা প্লেগ রোগ সৃষ্টি করে। মানুষ তখন জানত না প্লেগ থেকে বাঁচার উপায়। তবে না জেনেও প্লেগ থেকে বাঁচার জন্য যে কাজগুলো করত, আমরা এত বছর পরও সেই কাজগুলোই করছি। কাজটি আর কিছুই নয়, সোশ্যাল ডিসটেন্সিং। সামাজিক দূরত্ব!

১৬৬৫ সালে এই ‘সোশ্যাল ডিসটেন্সিং’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল। তারপর কেটে গেছে কতশত বছর। শব্দটি আবার ফিরে এসেছে স্বমহিমায়, ছড়িয়ে পড়েছে সারা ‍পৃথিবীতে করোনাভাইরাসের হাত ধরে।

সে যাইহোক। বলছিলাম স্যার আইজ্যাক নিউটনের কথা। তখন, মানে ওই প্লেগের কালে কেমব্রিজ তাদের  সমস্ত শিক্ষার্থীদেরকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল এবং বলেছিল—‘ঘরে থেকেই পড়াশোনা করো’। নিউটন তখন ফিরে গেলেন কেমব্রিজ থেকে ষাট মাইল দূরে উলসথ্রপ মানোরে নিজের বাড়িতে।

বাড়িতে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেন নিউটন এবং বলা চলে তাঁর শিক্ষকদের কোনোরূপ সহায়তা ছাড়াই তিনি বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করলেন।  প্রায় এক বছর গৃহবন্দি থাকতে হয়েছিল নিউটনকে। সেই বছরকে তিনি পরবর্তীতে ‘বিস্ময়ের বছর’ বলে অভিহিত করেছিলেন। প্রথমত তিনি তাঁর গাণিতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে ‍শুরু করেন। কেমব্রিজে যে ক্যালকুলাসগুলো তিনি করতে শুরু করেছিলেন, সেগুলোর সব অধ্যায় তিনি ঘরে বসে শেষ করে ফেলেন। তারপর তিনি তার শোবার ঘরে কয়েকটি প্রিজম নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।  তাঁর শয়নকক্ষের ডানপাশে ছিল জানালা। সেই জানালার ওপারেই ছিল একটা আপেল গাছ। সেই বিখ্যাত আপেল গাছ!

আপেল গাছের গল্পটা আমরা প্রায় সবাই জানি। ওই গাছের নিচেই একদিন গিয়ে বসেছিলেন নিউটন। একটি আপেল খসে পড়েছিল তাঁর মাথায়। তখন নিউটনের মনে প্রশ্ন জেগেছিল আপেল কেন নিচের দিকে পড়ল? সেই প্রশ্নের পথ ধরেই আবিষ্কার করে ফেলেন তাঁর বিখ্যাত মধ্যাকর্ষণ ও গতির তত্ত্ব।

সেই ১৬৬৫-৬৬ সালে প্লেগে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা গিয়েছিল। ইউরোপে ব্ল্যাক ডেথ প্রাণহানির পর চারশ বছরের ইতিহাসে সেটিই ছিল সবচেয়ে বড় মহামারি। নিউটন কেমব্রিজে ফিরতে পেরেছিলেন ১৬৬৭ সালে। তার ছয় মাসের মধ্যে তিনি ফেলো নির্বাচিত হোন এবং দুই বছরের মাথায় হোন কেমব্রিজের অধ্যাপক!

বলা বাহুল্য, নিউটন একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। আপনি সেই দৃষ্টান্তকে স্মরণ করুন আর অনুপ্রাণিত হোন। এই ঘরবন্দি সময়টাকে কাজে লাগান। প্রচুর পড়াশোনা করুন এবং কাজ করুন। যার যে ধরনের কাজ করতে ভালো লাগে সেই ধরনের কাজ নিয়েই পরীক্ষা-নীরিক্ষায় মেতে উঠুন। মহামারি প্লেগ যেভাবে বদলে দিয়েছিল নিউটনের জীবনকে, এই করোনাকালীন বন্দিজীবনও হয়তো বদলে দেবে আপনার জীবনকে।

সূত্র: সেইন্ট অ্যালবানস ম্যাসেঞ্জার

ইংরেজি থেকে অনুবাদ মারুফ ইসলাম

10
AI Solutions and Services for support Covid-19 Disease Recovery

11
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এখন ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হলেন সারা দেশের স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁরা যথেষ্ট বীরত্বের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের সেবা–শুশ্রূষায় ইতিমধ্যে ৩৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, বেশি পরীক্ষার কারণেই প্রথমবারের মতো এক দিনে শতাধিক আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ মিলেছে। দেশ ব্যাপকভাবে সংক্রমণের মুখোমুখি, তাই একে রুখে দিতে সব ক্ষেত্রে ‘যার যা কিছু আছে’ তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার কোনো বিকল্প নেই।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন যে পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, তাতে এর আরও সংক্রমণ ঠেকাতে এখন কী করণীয়, কী অগ্রাধিকার, সে বিষয়ে আমরা গত কয়েক দিনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। নিচের পুরো আলোচনা প্রধানত তাঁদেরই মতামতের ভিত্তিতে।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ নিশ্চিত করেছেন যে মহামারিতে টেস্টের বিষয়টি খুব জরুরি নয়, লক্ষণ দেখে চিকিৎসকেরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন—সেটাই পথ। আর পরীক্ষায় নেগেটিভ মানেই শতভাগ ক্ষেত্রে নেগেটিভ নয়। পজিটিভ মানেও পজিটিভ নয়। যিনি আজ নেগেটিভ, তিনি কাল পজিটিভ হতে পারেন। তবে এমন ঘটনা অল্পই ঘটবে। এই ভয়াবহ ছোঁয়াচে রোগটি মানুষকে ভোগাবে যত বেশি, প্রাণ কাড়বে সেই তুলনায় অনেক কম মানুষের। ১০০ জন মানুষ আক্রান্ত হলে ৮০ জনেরই হয়তো কোনো ওষুধ লাগবে না। দিন কয়েক সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদিতে ভুগে সেরে উঠবেন। চিন্তা হলো বাকি ২০ ভাগ নিয়ে। বিশ্বব্যাপী করোনায় গড় মৃত্যুর হার এখনো পাঁচজনের নিচে।

২.

হাসপাতাল বা যেখানেই করোনার সেবা মিলবে, সেটা যেখানেই হোক, চিকিৎসক থাকলেই হলো। সেখানে আক্রান্ত মানুষ ছুটবে। সেই কারণে দেশের ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মী কারা, তার একটা তালিকা করা এখন জরুরি। দেশের আনাচকানাচে যত ওষুধের দোকান, প্যাথলজিক্যাল টেস্ট, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ এককথায়, যত ধরনের চিকিৎসা–সংশ্লিষ্ট জায়গা আছে, তার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সবার একটা প্রশিক্ষণ লাগবে। প্রত্যেককে পিপিই ও মাস্ক দিতে হবে। কারণ, আক্রান্ত মানুষ প্রথমেই এসব স্থাপনায় ছুটবে, সুতরাং এসব জায়গার কর্মীদের বড় ভূমিকা থাকবে।

সরাসরি চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও আয়াদের (অ্যাটেনডেন্ট) মানসম্পন্ন পিপিই ও মাস্ক (এন-৯৫ বা সমতুল্য) লাগবে। কিন্তু বাদবাকি যাঁরা আছেন, তাঁদের সাধারণ সুরক্ষাসামগ্রী হলেই চলবে। তাঁরা দরকার হলে কাপড়ের তৈরি পিপিই ও মাস্ক পরবেন। প্রশিক্ষিত পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রতিদিন এটা ধুয়ে দেবেন। যাতে এটা তাঁরা বারবার ব্যবহার করতে পারেন।

৩.

যদি পিসিআর (বর্তমানে সরকারিভাবে চলমান ব্যবস্থা) দিয়ে আইইডিসিআরের মতামত সাপেক্ষে টেস্ট করানোর পরিস্থিতি না থাকে, সে ক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য স্থানে নতুন খোলা সরকারি ল্যাবগুলোর পক্ষেও পেরে ওঠা কঠিন হবে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দাবি যথার্থ হলে রোগী শনাক্তে একটা বড় অগ্রগতি হবে। কিন্তু পিসিআরের মতো এই র‍্যাপিড টেস্টব্লটের সীমাবদ্ধতা থাকবে। বরং ফলস নেগেটিভের হার সরকারি টেস্টের চেয়ে এখানে আরও বেশি হতে পারে। আবার করোনা সংক্রমণের অন্তত শুরুর তিন দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দেহে কিট কাজই করবে না। এরপরও কম খরচে ও দ্রুততম সময়ে ফল জানার কারণে যে উপকার পাওয়া যাবে, সেটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে লক্ষণ বা উপসর্গ দেখেই অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা যা বোঝার বুঝে যাবেন। উন্নত বিশ্বের কিট পিসিআর কিংবা গণস্বাস্থ্যের ডটব্লট যদি নেগেটিভও বলে লক্ষণ থাকে, তবে চিকিৎসককে করোনার ব্যবস্থাপত্রই দিতে হবে।

করোনা সংক্রমণের চিকিৎসা যেখানেই থাকবে, সেখানে সেবাপ্রার্থীর লাইন লম্বা হবে। সেখানকার পিপিই পরা গেটকিপারকে সিরিয়াল রক্ষায় ঘাম ঝরাতে হবে। সাধারণ নিয়মে চিকিৎসকেরা প্রথম দর্শনে লক্ষণ শোনেন, এরপর টেস্ট দেন। রোগী বা তাঁর আত্মীয়, এরপর ল্যাবে ছোটেন। পরে আরেক তারিখে টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে আসেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি ও বেসরকারি সব ক্ষেত্রেই চিকিৎসা ও পরীক্ষার ক্ষেত্রে একটা সৃজনশীল ফিল্টারিং করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং এটা সম্ভব। এতে ফ্রন্টলাইনে থাকা চিকিৎসকদের ওপর চাপ অনেকটাই কমবে।

দিন তিনেকের জ্বর ও কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট থাকা (কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়া) হলো করোনার মূল উপসর্গ। এখন এমন লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিরা চিন্তিত হবেন। অন্য সময় হলে এসব অনেকেই উপেক্ষা করেন। অন্যান্য অসুস্থতার কারণেও উল্লিখিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ফলে সাধারণ কিছু টেস্টের মাধ্যমেও চিকিৎসকেরা ক্ষেত্রবিশেষে সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন। এসবের মধ্যে রয়েছে টোটাল ব্লাড কাউন্ট অ্যান্ড লিম্ফোসাইট লেভেল, লিভারের কার্যকারিতা, সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন (শরীরে জ্বলুনি বেশি হলে রক্তে প্রোটিনের মাত্রাও বেশি হবে), ফেরেটিং (আয়রন জটিলতা অনুধাবন) এবং ডি-ডাইমার (বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের কারণ নির্ণয়) করাবেন। চিকিৎসক যদি প্রথম চারটি উচ্চ মাত্রার পান, তাহলে তাকে বেশি সন্দেহ করবেন। এর সঙ্গে রোগী যদি বুকের এক্স-রে ও সিটি স্ক্যান রিপোর্ট নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে প্রায় ১৬ আনাই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যেতে পারেন।

উল্লিখিত টেস্টগুলোর প্রায় সবটাই (সিটি বাদে) প্রতিটি উপজেলায় আছে। জেলাগুলোতে এর সবটাই ভালোভাবে আছে। সুতরাং সরকার ল্যাবের মালিকদের সঙ্গে বসে এ–সংক্রান্ত টেস্টের ফি কমিয়ে দিতে পারে। চিকিৎসকের সহকারীরা আগে রিপোর্ট দেখবেন এবং সেই অনুযায়ী তাঁরা সিরিয়ালের সমন্বয় করবেন। অবশ্য সম্ভব ক্ষেত্রে চিকিৎসক দেখিয়ে টেস্ট করানোই শ্রেয়।

৯ এপ্রিল ডব্লিউএইচও–সমর্থিত নতুন সরকারি নির্দেশনায় উল্লিখিত টেস্টগুলোরও উল্লেখ রয়েছে। ডিজিএইচএসডটগভডটবিডিতে ঢুকে ‘করোনা’তে ক্লিক করলে আপনি ৩৫ পৃষ্ঠার গাইডলাইন পাবেন। এতে প্রথমবারের মতো নির্দিষ্টভাবে করোনার ওষুধ হিসেবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিনের নাম উল্লেখ করা আছে। এর সীমাবদ্ধতার কথাও অবশ্য বলা আছে। তবে দায়িত্বশীল একজন বললেন টেস্ট ও ওষুধ চিকিৎসকদের বিষয়। তাই তাঁরা ব্রিফ করেননি। এটা ভুল নীতি। পরিষ্কার বাংলায় কোথায় কত টাকায় টেস্ট ও ওষুধ মিলবে, তা মানুষকে ব্যাপকভাবে জানানো দরকার।

৪.

আগেই বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশের হাসপাতালে চিকিৎসা লাগে। কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে আইসিইউতে রাখতে হয়। এই ব্যবস্থা বাংলাদেশে কতজন রোগীর জন্য করা যাবে, সেটা এক বড় প্রশ্ন। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেলে এ ক্ষেত্রে আমাদের যা সামর্থ্য, তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য হিসেবে বিবেচিত হবে। সাধারণভাবে ভেন্টিলেটর ও আইসিইউর সুবিধা আমাদের দেশে ব্যয়বহুল এবং সচ্ছলেরাই এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। বর্তমান বাস্তবতায় আক্রান্তের সংখ্যা যেহেতু বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই সেই বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে জরুরি ভিত্তিতে কম খরচে নেগেটিভ ফ্লো রুম (যেখানে শুধু এক্সজস্ট ফ্যান দিয়ে দূষিত বাতাস বাইরে যাবে) তৈরি করা প্রয়োজন। আর লাগবে প্রচুর অক্সিজেন। হাসপাতালে আসা করোনা সংক্রমিত রোগীদের ৫ ভাগের আইসিইউ লাগবে। কিন্তু বাকি ১০ ভাগের দরকার পড়বে সিলিন্ডারে অক্সিজেন। সিলিন্ডারে আইসিইউ চলে না। সেন্ট্রাল এসি সিস্টেম লাগে। সুতরাং দেশের সর্বত্র অক্সিজেন পৌঁছাতে হবে। নেগেটিভ ফ্লো রুম এবং অক্সিজেন ছাড়া করোনা রোগীর সুচিকিৎসা অসম্ভব।

৫.

মরদেহ দাফন ও সৎকারের বিষয়ে সারা দেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সমন্বয়ে প্রশিক্ষিত কর্মী দরকার। নারায়ণগঞ্জে একজন বেহালাবাদকের লাশ প্রায় ৯ ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থাকা, নরসিংদীতে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে দাফনে বাধাদানের ঘটনা সতর্ক হওয়ার জন্য যথেষ্ট। ইউএনডিপি ও আইসিআরসি শুধু ঢাকার জন্য আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের অনধিক ১০০ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেবে। সারা দেশে মসজিদভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গঠন করে তাঁদের প্রশিক্ষণ ও পিপিই দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।

সর্বশেষে বলব, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল আরও দৃঢ় করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিমার মতো প্রণোদনা ছাড়াই একাত্তরে জাতি মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল। তবে করোনায় ত্রাণ দিতে গিয়ে আহত একজন সহকারী কমিশনারকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়েছে। সিলেট থেকে করোনায় আক্রান্ত একজন স্বনামধন্য চিকিৎসককে (সহকারী অধ্যাপক) আনা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই বলছেন, তিনি কমিটির সভাপতি। অথচ তাঁকে না জানিয়েই সিদ্ধান্ত হয়। এসবই গভীর সমন্বয় ও প্রস্তুতিহীনতার নির্দেশ করে। সরকারকে অবশ্যই এমন অবস্থা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে হবে এবং তা দ্রুতই করতে হবে।

মিজানুর রহমান খান: প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক

12
মুদি দোকানের তাকের ভেতর ক্ষুদ্র বায়ুবাহিত ভাইরাস কণা কীভাবে ছড়ায়, তার কম্পিউটার মডেল তৈরি করেছেন গবেষকেরা। ছবি: আলটো ইউনিভার্সিটির সৌজন্যে
মুদি দোকানের তাকের ভেতর ক্ষুদ্র বায়ুবাহিত ভাইরাস কণা কীভাবে ছড়ায়, তার কম্পিউটার মডেল তৈরি করেছেন গবেষকেরা। ছবি: আলটো ইউনিভার্সিটির সৌজন্যে
ফিনল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা কীভাবে মুদি দোকানের কাঠামোর মতো ইনডোরে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বায়ুবাহিত ভাইরাল কণা ছড়িয়ে পড়ে, এর মডেল তৈরি করেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, তাঁদের তৈরি এ মডেল নতুন করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়ায়, আমাদের তা আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। লাইভ সায়েন্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

গবেষণাটির জন্য ফিনল্যান্ডের আলটো ইউনিভার্সিটি, ফিনিশ মেটেরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট, ভিটিটিস টেকনিক্যাল রিসার্চ সেন্টার ও হেলসিঙ্কি ইউনিভার্সিটির একটি যৌথ গবেষক দল কাজ করেছে। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে কীভাবে কোনো ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের অঞ্চল ছেড়ে ছোট ছোট ভাইরাল কণা ছড়িয়ে পড়ে, এর মডেল তৈরিতে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করেছে তারা। গবেষণাকাজে তারা এমন একটি কৃত্রিম দৃশ্য তৈরি করেছে, যেখানে দোকানের দুই তাকের মাঝে কোনো ব্যক্তি হাঁচি-কাশি দিলে সেখানকার বায়ু চলাচলের বিষয়টি হিসাবের মধ্যে আনা যায়।

ফ্লুইড ডায়নামিকস নিয়ে গবেষণাকারী আলটো ইউনিভার্সিটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উইল ভুরিনেন এক বিবৃতিতে বলেন, করোনাভাইরাস ছড়ানোর মডেল নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তাঁরা দেখেছেন কোনো ব্যক্তির কাশির সময় তার চারপাশে অ্যারোসল ‘মেঘ’ তৈরি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে ও মিশে যায়। তবে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক মিনিট সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে ওই ঘনীভূত মেঘের মতো এলাকা দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে তত্ত্ব অনুযায়ী এসব ভাইরাল কণা তাঁর শ্বাসের সঙ্গে ঢুকে পড়ে।

ভুরিনেন বলেন, করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত কেউ কাশি দিয়ে চলে যেতে পারে, তবে তবে তিনি করোনাভাইরাস বহনকারী অত্যন্ত ছোট অ্যারোসোল কণাকে পেছনে রেখে যান। এসব কণা আশপাশের অন্যদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ঢুকে যেতে পারে।

গবেষণার ভিত্তিতে ফিনল্যান্ডের গবেষকেরা এখন মানুষজনকে যেসব এলাকায় বেশি জনসমাগম হয় এবং অন্দরের যেসব জায়গায় বেশি লোকজন চলাচল করে, সেগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন।

গবেষকেরা ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট অ্যারোসোল কণার গতিবিধির মডেল তৈরি করেছেন, যাতে এত ক্ষুদ্র কণাও আছে, যা বাতাসে ভেসে থাকতে পারে এবং কোনো পৃষ্ঠে পড়ার চেয়ে বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে চলাচল করে।

গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের তৈরি মডেলটি আরও উন্নত করতে কাজ করবেন এবং বায়ুতে চলাচলকারী কণার চলাচল আরও ভালোভাবে বুঝতে ভিজুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়াও উন্নত করবেন।

Source: Prothom Alo

13
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক উদ্ভাবনে গবেষণা চলছে বিভিন্ন দেশে। এর মধ্যে জাপানের তৈরি একটি ওষুধ আশার আলো দেখিয়েছে বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্টরা।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এক পরীক্ষায় সাফল্য এনে দিয়েছে ‘আভিগান’ নামে একটি ওষুধ। একদল জাপানি গবেষক এমন দাবি করে জানিয়েছে, মাত্র সাত থেকে নয় দিনে একজন রোগী সুস্থ হয়ে যেতে পারেন এই ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে।

জাপানের গবেষকরা ওষুধটি ১২০ জন রোগীর ওপর এটি প্রয়োগ করেছেন। এর মধ্যে ৩০ বছর বয়সী এক রোগীর ওপর আভিগান প্রয়োগ করার পর তিনি মাত্র ৭ দিনে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

তবে আভিগানের সঙ্গে তারা আরেকটি ওষুধ প্রয়োগ করেছেন। জাপানের চিকিৎসায় চলমান ওরভোসকো নামের ওষুধের সঙ্গে আভিগানের যৌথ প্রয়োগ করেন একজন মধ্যবয়সী রোগীর ওপর। তিনি মাত্র ৯ দিনে সুস্থ হয়ে গেছেন।


গবেষক দল আরও বলছে, সন্তানসম্ভবা নারীদের এ ওষুধ প্রয়োগে নেতিবাচক ফলাফল আসতে পারে, এমন আশঙ্কায় তাদের ওপর এটি প্রয়োগ করা হয়নি।

Source: Somoy News

14
আফগানিস্তানের কাবুলের বস্তি থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলের শহরতলিতে এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে করোনাভাইরাস মহামারি আকারে স্পর্শ করেনি। করোনা নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্বেগ বাড়ছে। অবশ্য যতটা স্বাস্থ্য নিয়ে, এর চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে।

হয়তো এই উদ্বেগেই বিশ্বের চেহারা পাল্টে যাবে। আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অক্সফাম বলছে, প্রায় ৯৫ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া নতুন এই করোনাভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিকে যেভাবে বিপর্যস্ত করছে, এতে জরুরি ব্যবস্থা না নিলে উন্নয়নশীল দেশের ৫০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের মুখে পড়তে পারে। মানুষের চোখের সামনে যে উদ্বেগ বাড়ছে, তা ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

অক্সফামের এই সতর্কবার্তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে চিন্তার বিষয় হলো, এই মুহূর্তে কি আমূল পরিবর্তন আনার কোনো সুযোগ রয়েছে? শুধু উন্নয়নশীল দেশ, না উন্নত দেশের পক্ষেও কি এটা সম্ভব? এটা কি ন্যায়সংগত হবে, যে শ্রমিক স্বাস্থ্যসেবা পান না, তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় কাজে যেতে বাধ্য করা। কারণ, তাঁরা তো আরও অনেককে সংক্রামিত করবেন। এটা কি ঠিক হবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে স্থানীয় কফি শপটি বন্ধ করতে বাধ্য করা?

দেখা যাচ্ছে, মালিক তো ক্ষতির মুখে পড়ছেনই, সারা মাস কাজ করে হঠাৎ কোনো বেতন না পেয়ে বসে থাকতে হচ্ছে কর্মচারীটিকে।

এ বিষয়ে অক্সফামের অর্থনীতিবিদ ম্যাক্স লসনের কাছে আল–জাজিরার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, এই পরিস্থিতিতে আমূল পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না। তিনি বলেন, বর্তমান এই সংকট অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাচ্ছে। ব্যক্তির অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য যেখানে তাকেই দায়ী করা হয়, সেখানে এখন সরকারগুলো করপোরেট ব্যবসার পাশাপাশি একক ব্যক্তিকে সহায়তা করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এখন এই চিন্তা সারা বিশ্বেই বিকাশ লাভ করছে।

ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমস সম্প্রতি একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। বিশ্বের এমন সময়ে একটি সর্বজনীন ন্যূনতম আয় বা ইউনিভারসাল বেসিক ইনকামের (ইউবিআই) সুবিধার কথা বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে এক ধাপ এগিয়ে গেছে স্পেন। দেশটির অর্থমন্ত্রী বলেছেন, করোনাভাইরাস সংকটের আলোকে ইউবিআই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রবর্তন করতে চাইছেন তাঁরা। এ ছাড়া করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে যাঁরা, তাঁদের আগে সহায়তা করা হবে বলছে যুক্তরাজ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উন্মোচন করেছেন দুই লাখ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ।

দেখা যাচ্ছে, এবারের চিত্র ২০০৮ সালের চেয়ে বেশ ভিন্ন। কারণ, ওই আর্থিক সংকটে আলাদা বা একক ব্যক্তির সহায়তা করার কথা ভাবেনি কোনো সরকার। সরকারগুলো অর্থ সহায়তা দিয়েছিল কেবল ব্যাংক ও করপোরেশনগুলোকে এবং ব্যাপক ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছিল, ফলে উন্নত দেশের সাধারণ মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ওইটাই ওই সময়ের একটি প্যাটার্ন ছিল। তবে এবারের সংকট সব ধারণা পাল্টে দিয়েছে। এবার দ্রুত অবস্থার পরিবর্তনের জন্য ব্যক্তিদের ঋণ মওকুফ, নগদ প্রদান, করমুক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। মাত্র ১ শতাংশ বা করপোরেট জগৎকে বাঁচানোর জন্য অর্থসহায়তা নয়, সবার জন্য করা হচ্ছে।

লসন বলেন, ২০০৮ সালে মন্দার পরে আর্থিক খাতের জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তবে এলিটরা সব সময় নিজের কথাই ভেবেছে। তবে উচ্চবিত্তরা কি এখন বুঝতে পারছে সাধারণ মানুষ যে হুমকির মুখে আছে, সে হমকির মুখে তারাও আছে। করোনাভাইরাস ধনী–গরিব ভেদাভেদ করে না। দেখে না কে কারখানার প্রধান আর কে শ্রমিক। এই সংকটের উত্তর কেবল একক ব্যক্তিকে অর্থ প্রদানের মধ্যে নয়। তবে অতীতে যে বিষয়গুলো সমাজতন্ত্র বলে বিবেচনা করা হতো, এখন সেটাই বোধগম্য হচ্ছে।

এখন দেখা যাক, যখন এই বিশ্ব করোনাভাইরাস মুক্ত হবে, তখন সর্বজনীন ন্যূনতম আয়, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা, ঋণ মওকুফ, কর মুক্তি এসব ধারণারও মৃত্যু হয় কি না।

Source: Prothom Alo

15
আমরা জানতাম এটা আসছে। ১৯৯৪ সালে পুলিৎজার জয়ী মার্কিন বিজ্ঞান সাংবাদিক এবং লেখক লরি গ্যারেট এমন পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। ‘দ্য কামিং প্লেগ’ বইতে তিনি লিখেছিলেন, ‘মানব জাতি যখন নিজেরাই আরও বেশি জনাকীর্ণ ভূমি এবং দুষ্প্রাপ্য সংস্থান নিয়ে লড়াই করে তখন তার সুবিধা জীবাণুর আদালতে চলে যায়। ...হোমো সেপিয়েন্সরা যদি যুক্তিবাদী বৈশ্বিক গ্রামে বাস করতে না শেখে এবং ভাইরাসের জন্য সুযোগ সীমিত না করে তবে ভাইরাস জয়ী হবে।’

যদি এ লেখকের ভাষা অতিরঞ্জিত মনে হয় তবে ২০০৪ সালে মার্কিন মেডিসিন ইনস্টিটিউটের আরও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ বিবেচনা করুন। এটি গ্যোথের উদ্ধৃতি দিয়ে ২০০৩ সালের সার্স প্রাদুর্ভাবের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো মূল্যায়ন করেছে। যাতে বলা হয়েছে, জানাটাই যথেষ্ট নয়; আমাদের অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে। ইচ্ছা যথেষ্ট নয়; আমদের অবশ্যই করে দেখাতে হবে। সার্সের দ্রুত দমন জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সাফল্য, তবে এটি একটি সতর্কতাও। আবার যদি সার্স ফিরে আসে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চরম চাপের মধ্যে পড়বে। অব্যাহত সতর্কতা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

এ সম্পর্কে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাইরাস সৃষ্ট মহামারি নিয়ে আগে থেকে সতর্কবার্তা থাকলেও বিশ্ব ওই সতর্কবার্তা অবহেলা করেছে।

২০১২ থেকে ২০১৯ সালে দায়িত্ব পালন করা যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ইয়ান বয়ড স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারির জন্য প্রচলিত চিকিৎসা চর্চার কথাই ধরুন। এতে সে সময় প্রায় দুই লাখ লোক মারা গিয়েছিল। যা আমাকে একেবারে বিধ্বস্ত করে দেয়। কিন্তু ওই অভিজ্ঞতা থেকে সরকার কোনো শিক্ষা নিয়েছিল? মহামারিতে কী কী সাহায্য করতে পারে তা আমরা জেনেছি কিন্তু প্রয়োজনীয় সে পাঠগুলো আর প্রয়োগ করা হয়নি। এসব পাঠ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ যাই হোক না কেন, সত্যটি রয়েই গেল।’

সার্স-কোভ-২ এর বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া দাঁড়িয়েছে যে, এটি একটি প্রজন্মের বিজ্ঞান নীতির সবচেয়ে ব্যর্থতা। সংকেতগুলো পরিষ্কার ছিল। ১৯৯৪ সালে হেনড্রা, ১৯৯৮ সালে নিপা, ২০০৩ সালে সার্স, ২০১২ সালে মার্স ও ২০১৪ সালে ইবোলার মতো মহামারি ভাইরাসে কারণে ঘটেছে। এসব ক্ষেত্রে ভাইরাস প্রাণী শরীর থেকে উদ্ভূত হয়ে মানুষের মধ্যে চলে এসেছে। সার্স সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসটি নতুন রূপ নিয়েই কোভিড-১৯ সৃষ্টি করেছে।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সতর্কবার্তার লক্ষণগুলো যে অবহেলা করা হয়েছে তা, অবাক করা কোনো ঘটনা নয়। আমাদের মধ্যে কম লোকের মহামারি মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা সবাই আমাদের নিজস্ব বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেলে না এমন তথ্য অবহেলার দায়ে দুষ্ট। বিপর্যয় মানুষের স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা প্রকাশ করে। কেউ এলোমেলো বিরল ঘটনার জন্য কীভাবে পরিকল্পনা করতে পারে? যেমন—ভূমিকম্পবিদ লুসি জোন্স তাঁর ২০১৮ সালে প্রকাশিত বই ‘দ্য বিগ ওয়ানস’-এ যুক্তি দেখিয়েছেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনিবার্য; বিপর্যয় নয়’।

এসব ক্ষেত্রে সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিককে রক্ষা করা। মহামারিজনিত ঝুঁকিগুলো পরিমাপ এবং এর পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়। লেখক লরি গ্যারেট ও ইনস্টিটিউট অব মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, আশির দশকে এইচআইভির উৎপত্তির পর থেকেই নতুন মহামারির বিপদগুলো আঁচ করা যায়। এরপর থেকে ওই ভাইরাসে সাড়ে ৭ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ও ৩ কোটি ২০ লাখ লোক মারা গেছে। তবে সার্স-কোভ-২ যেভাবে ছড়িয়েছে এত দ্রুত এইচআইভি ছড়ায়নি। তবে, ওই ভাইরাসের শিক্ষা থেকে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন ভাইরাসের মহামারি ঠেকানোর প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।

সাধারণত দেখা যায়, কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে জনসাধারণ ও রাজনীতিকেরা বিশেষজ্ঞদের মুখাপেক্ষী হন। তবে এবারে গবেষকেরা ভুল ধারণা দিয়েছিলেন। যুক্তরাজ্যে ধারণা করা হয়েছিল, এবারের মহামারি বড়জোর ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো হবে। এ ভাইরাসটির কারণে ২০১৪-১৫ সালের দিকে ২৮ হাজার ৩৩০ জন মারা যান। কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা আর কোভিড-১৯ তো আর এক নয়।

অন্যদিকে, চীন তাদের সার্সের অভিজ্ঞতা থেকে আগে থেকেই ভয় পেয়েছিল। যখন তাদের সরকার নতুন ভাইরাসের ছড়ানোর বিষয়টি বুঝতে পেরেছিল তখন আর শুধু হাত ধোয়া বা হাঁচি কাশির শিষ্টাচার মানার পরামর্শে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তারা পুরো শহর কোয়ারেন্টিন করে সেখানকার অর্থনীতি থামিয়ে দেয়। যুক্তরাজ্যের সাবেক একজন স্বাস্থ্যসচিব বলেছেন, কোভিট–১৯ নিয়ে যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো মৃদু হুমকি নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

ঝুঁকি নির্ণয় ব্যর্থতার কারণেই সংক্রমণের তরঙ্গ ঠেকানোর কাজে মারাত্মক বিলম্ব ঘটে যায়। সামনের সারির স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মীদের কাছ থেকে যে মরিয়া আবেদন পাওয়া যায়, তা পড়তেও কষ্ট হয়। অনেক স্বাস্থ্যসেবা কর্মী মনে করেন, তারা অস্ত্র ছাড়াই যুদ্ধে নামতে যাচ্ছেন। অনেকেই একে আত্মহত্যা বলে মন্তব্য করেন। কেউ কেউ নিজেকে হিরো বলার চাইতে বাধ্য হয়ে কাজে থাকার কথা বলেন।

গার্ডিয়ান বলছে, যুক্তরাজ্যে অনেক চিকিৎসক ও সেবাকর্মীর জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের ঘাটতির বিষয়টি খুবই নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। অনেক হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় নিরাপদ সরঞ্জাম সরবরাহ করতেও পারেনি। প্রতিটি সংবাদ সম্মেলনে সরকারের মুখপাত্র বারবার একই কথা আওড়ে চলেন। ‘আমরা প্রতিটি মেডিকেল ও বৈজ্ঞানিক পরামর্শ মেনে চলছি।’ এ বাক্যটি শুনতে ভালো লাগলেও তা আংশিক সত্য। সরকার নিজেও জানত এনএইচএস অপ্রস্তুত ছিল। তারা যথেষ্ট আইসিইউ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। একজন চিকিৎসক বলেছেন, দেখে মনে হচ্ছে যে ইতালি, চীন, স্পেনে ঘটে যাওয়া মানব ট্র্যাজেডি থেকে কেউ শিখতে চায় না। এটা খুবই দুঃখজনক। চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরাও একে অন্যকে দেখে শিখতে চান না।’

আমরা সম্ভবত অ্যানথ্রোপসিনের যুগে জীবনযাপন করছিলাম যেখানে মানুষের কার্যকলাপ পরিবেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। অ্যানথ্রোপসিনের ধারণা মানুষের সর্বশক্তিমত্তার ধারণাটিকে বোঝায়। কিন্তু কোভিড-১৯ আমাদের সমাজের বিস্ময়কর দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এটি সহযোগিতা, সমন্বয় এবং একসঙ্গে আমাদের কাজ করার অক্ষমতা প্রকাশ করেছে। তবে আমরা প্রাকৃতিক বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তাই, আমরা একসময় নিজেদের যে ক্ষমতাধর ভাবতাম আমরা আসলে তা নই।

কোভিড-১৯ যদি শেষ পর্যন্ত মানুষের অহংকার কিছুটা কমাতে পারে, তবে এ মারাত্মক মহামারি থেকে তারা কিছু শিক্ষা গ্রহণ করবে। তা না হলে, আমরা আমাদের আত্মতৃপ্ত ব্যতিক্রমী সংস্কৃতিতেই ডুবে যাব এবং পরবর্তী মহামারির জন্য অপেক্ষায় থাকব, যা বলা যায় অবশ্যম্ভাবী। সাম্প্রতিক ইতিহাস বলে, আমাদের ধারণার চেয়েও দ্রুত সেই মুহূর্ত এসে হাজির হতে পারে।

Sourse: Prohtom Alo

Pages: [1] 2 3 ... 5