Daffodil International University

Faculty of Engineering => EEE => Topic started by: abdussatter on May 27, 2018, 01:42:07 PM

Title: দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
Post by: abdussatter on May 27, 2018, 01:42:07 PM
শিক্ষা পরিবারের প্রধান মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, উপস্থিত সুধিমণ্ডলী এবং ছাত্রছাত্রী বন্ধুরা, আমার মতো একজন অযোগ্য মানুষকে সমাবর্তন বক্তা বানানো হয়েছে। (আমি আরেকটু জোরে করতালি প্রত্যাশা করেছিলাম, অন্তত এটুকুর সমর্থন আসুক!) তো এ থেকেই বোঝা যায় দেশে এ ধরনের সমাবর্তন বক্তার কী পরিমাণে বিলুপ্তি ঘটেছে। মিষ্টি রসওয়ালা আখের পরিবর্তে, আখগাছের পরিবর্তে এখন ভেরেন্ডাগাছ দিয়েই মোটামুটি কাজ চলছে। আমাদের গ্রামের দিকে আগে একটা প্রবাদ ছিল। মাঝে মাঝে বড় বড় দুর্ভিক্ষ হতো। তখন বাঘ আর ছাগলের অবস্থা প্রায় এক হয়ে যেত। তো সেই প্রবাদটা এ রকম—দেশে কি আইলো আকাল, ছাগলে চাটে বাঘের গাল। এখন আমরা ছাগলেরা সমাবর্তন বক্তার গাল চাটছি বসে বসে।

সবাইকে শুভেচ্ছা। পুরান ঢাকায় একটা জোক আছে শুনেছিলাম। একদিন এক চোর ঢুকেছে চুরি করার জন্য এক বাড়িতে। ঢোকার পরে খুচখাচ খুচখাচ শব্দ করছে। ঘরের লোকেরা জেগে আছে। চোর আর পালানোর জায়গা পায়নি। গিয়ে ঢুকেছে চৌকির নিচে। একদম শেষ প্রান্তে চলে গেছে। এখন ওটাকে বের করে কী করে। হাত ঢুকিয়ে দিলে কামড়ে দিতে পারে। কী করা যায়? শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো যে মশারির যে স্ট্যান্ড আছে, ওই স্ট্যান্ড দিয়ে খোঁচালে চোর হয়তো বেরোবে। সেই অনুযায়ী স্ট্যান্ড দিয়ে খোঁচানো শুরু হয়েছে। তো দুই-চার খোঁচা খাওয়ার পরেই চোর বলছে, ‘আস্তে খোঁচাইয়েন, চোখে লাগবার পারে। চোখ লইয়া ডং নিহি?’ মানুষের যেমন চোখ নিয়ে ঢং করা যায় না। একটা জাতির শিক্ষা নিয়েও তেমনি ঢং করা যায় না।

পিথাগোরাসের সম্প্রদায়ের লোকেরা বলতেন, সব জিনিসই আসলে সংখ্যা। আমার বক্তব্য...আমি খুব ক্ষুদ্র মানুষ, বক্তব্য নয় এটা, কেবল ফিসফিস কথা—সব জিনিসই আসলই জ্ঞান। আসলে শিক্ষা। এই যে আজকে অ্যারোপ্লেন উড়ছে আকাশে, এই যে রেলগাড়ি চলছে, এই যে আমরা চাঁদে গেছি, এই যে মানুষের বিস্ময়কর সাফল্য, এই যে চিকিৎসাব্যবস্থার অবিশ্বাস্য উন্নতি, এই যে কৃষির আশ্চর্য প্রসার, এই যে অদ্ভুত শিল্পায়ন, এই যে মানবসভ্যতার বিকাশ, ধর্ম-দর্শন-বিজ্ঞান-শিল্পসাহিত্য সবকিছু—এগুলো আসলে কী? এগুলো আসলে তো সবই আমাদের শিক্ষার মাধ্যমে পাওয়া। সুতরাং মানবসভ্যতাটাই একটা শিক্ষার মাধ্যমে পাওয়া, শিক্ষা দিয়ে তৈরি। শিক্ষার মান যত দিন আছে, এই সভ্যতা তত দিন আছে। যেদিন থাকবে না, সেদিন থাকবে না। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতিতে শিক্ষার একটা বিরাট অবদান।

আমি বোধ হয় ২০০৩ বা ২০০৪ সালে তখন আমেরিকাতে ছিলাম। ওখানে কাগজে খুব ফলাও করে উঠল যে সেই বছরের যে সম্পদ উৎপাদন করেছে আমেরিকা, সেই সম্পদের ৮৭ ভাগ বিদ্যাজাত। বিদ্যা থেকে আসা। তাহলে বোঝা যায় যে বর্তমান পৃথিবীর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কতখানি অবদান রাখে শিক্ষা। আমি তো মনে করি আমাদের দেশে এত সব চেষ্টা না করে সমস্ত মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমিয়ে দশ পারসেন্টে নিয়ে এসে যদি শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ নব্বই ভাগ করা হতো এবং এটা যদি ১০ বছর চলতে দেওয়া হতো তাহলে যে বাংলাদেশকে আমরা পেতাম সে বাংলাদেশকে পেতে আমাদের আরও ৪০ বছর লাগবে। সুতরাং শিক্ষা খুব বড় জিনিস। পৃথিবীর যা কিছু বড় যা কিছু মহান যা কিছু শ্রেষ্ঠ, এটা শিক্ষা থেকে আসা। শুধু শিক্ষা থেকে না, শিক্ষার জন্য যে মনটা দরকার সেই মনটা থেকেও আসা।

শিক্ষা শুধু অর্থনৈতিক বা বৃত্তিক বিকাশেই অবদান রাখেনি, শিক্ষা মহান জিনিসে অবদান রেখেছে। কী দিয়ে? নিমগ্নতা দিয়ে, নিবিষ্টতা দিয়ে, সাধনা দিয়ে, মানুষের প্রয়াস দিয়ে, মানুষের সংগ্রাম দিয়ে। আজকে কি সেই অবস্থার মধ্যে আমরা আছি? শিক্ষা কি সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে? আমার তো মনে হয় শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে শিক্ষাক্ষেত্রে একটা ধস আমরা দেখতে পাচ্ছি। বড় জিনিস থেকে মানুষ ক্রমাগতভাবে সরে যাচ্ছে। এর একটা কারণ হতে পারে—আমরা ইতিমধ্যে একটা ভিন্নযুগে পদার্পণ করেছি। একটা ভিন্ন কাল, একটা অস্থির সময়। একটা ঊর্ধ্বশ্বাস সময়। একটা প্রতিযোগিতামূলক সময়। একটা উত্তেজনাপূর্ণ সময়। এই উত্তেজনা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘উত্তেজনা এবং শক্তি এক নহে। ইহারা পরস্পরবিরোধী।’ কারণ উত্তেজিত মুহূর্তে আমরা সবচেয়ে শক্তিহীন। কারণ উত্তেজিত মুহূর্তে আমাদের মেধা কাজ করে না। আমাদের ইন্দ্রিয় গতিশীল, চঞ্চল, অস্থির। হৃদয় আজ এক রকম আছে, কাল আরেক রকম। কিন্তু মানুষের মনন চিরকাল একরকম, এটা স্থির। এই দুইয়ের একটা সমন্বয় আমাদের চাই। এখন একটা উত্তেজনায় আমরা ছুটছি। প্রতিযোগিতায় আমরা ছুটছি। রাস্তার দিকে যখন তাকাই, একটা গাড়ি আরেকটা গাড়িকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছে পাগলের মতো। এটা কি একটা গাড়ি আরেকটা গাড়িকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছে? না একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছে? পৃথিবীতে যখন বিত্তের বিশাল বিকাশ শুরু হলো, তখন এই বিত্ত পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে একটা উত্তেজনার জগতে চলে গেল। যা কিছু গভীর, যা কিছু বড়, যা কিছু স্থায়ী, তাকে অবজ্ঞা করছি। কিন্তু আমার মনে হয়, অ্যারোপ্লেনের যেমন দুই পাখা থাকে, আমাদের যেমন দুই পা থাকে, এক পা থাকলে আমরা হয়তো নাচতে পারব, দুই-তিন মিনিট এক মিনিটের জন্য, কিন্তু এক পা দিয়ে কোনো দিন হাঁটতে পারব না। তেমনি দুটোকে মেলাতে হবে। বড় জিনিসকেও আমাদের ধারণ করতে হবে। কিন্তু ব্যাপারটা কঠিন। কারণ বড় জিনিসকে ধারণ করতে হলে শুধু ছুটলে চলে না। উত্তেজনায় উন্মাদ হলে চলে না। থামতে হয়। থামা মানে কী? থামা মানে প্রত্যাখ্যান। থামা মানে আমি যেটা পেতে পারতাম, আমি সেটা নিচ্ছি না। থামা মানে হচ্ছে গাছের মতো দাঁড়ানো, যে রকমভাবে দাঁড়ালে ওই গাছ একদিন ফুলে-ফলে সবকিছুতে ভরে ওঠে।

আমি একটা ছোট্ট গল্প দিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করি। আমার শারীরিক, মানসিক অবস্থা কোনোটাই আজকে ঠিক কথা বলার উপযোগী ছিল না। তবুও কথা বলে গেছি কিছুটা। একটা গ্রিক উপকথা। আপনারা অনেকে হয়তো পড়েছেন। একটা খুবই সুন্দরী মেয়ে ছিল। দাফনি। অবিশ্বাস্য সুন্দরী। উপকথাতে তা-ই হয়। উপকথাতে কোনো খারাপ চেহারার মানুষ কখনো দেখা যায় না। কারণ উপকথার মধ্যে মানুষ তার স্বপ্নের পৃথিবীকে তৈরি করতে চায়। সেই স্বপ্নের পৃথিবী কুৎসিত হতে পারে না। তো সেই উপকথায় একটা নদী আছে। দাফনি হলো সেই নদীর রাজার মেয়ে। নদীর পাশে একটা বিশাল জঙ্গল। বিশাল অরণ্য। সেই অরণ্যে সে একা একা ঘুরে বেড়ায়। সেখানে যত সুদর্শন যুবককে দেখে, তাদের সঙ্গে সে প্রেমের অভিনয় করে। সেই যুবক যখন সম্পূর্ণভাবে তার প্রেমে মত্ত হয়ে ওঠে, তখন সে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে একটা পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করে। এ রকমভাবে তার দিন কাটছে। সে থামে না। একজন শেষ হলে আরেকজনের কাছে যায়, আরেকজন শেষ হলে আরেকজনের কাছে যায়।

এমন সময় হলো কী, সে চোখে পড়ে গেল অ্যাপোলো দেবতার। অ্যাপোলো দেবতা তাকে দেখেই তার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে গেল। মানুষই যখন মুগ্ধ, দেবতা তো আরও অনুভূতিশীল, তাই না? তার তো অবস্থা আরও করুণ! সে বলল, ‘দাফনি তুমি দাঁড়াও।’ দাফনি বুঝল যে এ দেবতা, একে সে এড়িয়ে যেতে পারবে না। তখন সে দৌড়াতে লাগল, তার হাত থেকে পালানোর জন্য। সেও দৌড়াচ্ছে, অ্যাপোলোও দৌড়াচ্ছে। কিন্তু অ্যাপোলোর সঙ্গে দৌড়ে তো তার পারার কথা নয়। অ্যাপোলো ক্রমে কাছে চলে এল। একসময় দাফনি টের পেল যে তার পেছনে অ্যাপোলোর ঘন ঘন নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।

এমন সময় একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। অরণ্য শেষ হয়ে গেল এবং দেখল যে সামনে সেই নদী। তখন দাফনি চিৎকার করে উঠল, ‘বাবা আমাকে বাঁচাও।’ তখন দেখা গেল যে আস্তে আস্তে দাফনির পা মাটির মধ্যে গেড়ে গেল এবং পায়ের আঙুলগুলো শিকড়ের মতো হয়ে মাটির নিচে ছড়িয়ে গেল। তার হাতগুলো ডালের মতো হয়ে, আঙুলগুলো পাতার মতো হয়ে সমস্ত অবয়বটা গাছে পরিণত হলো। সে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকল। তখন অ্যাপোলো বলল, দাফনি, তুমি এত দিন অস্থির ছিলে। এত দিন তুমি শুধু ছুটেছ। কাউকে তুমি দাওনি কিছুই। কারণ তোমার নিজেরও কিছু ছিল না। তুমি ছিলে একটা ঊর্ধ্বগতিসম্পন্ন মানুষ। কিন্তু আজকে দেখো, তুমি দাঁড়িয়েছ। এই জন্য তুমি আজকে একটা বৃক্ষে পরিণত হয়েছ। এই জন্য দেখো আজ তোমার কত ডাল, কত পাতা এবং কত ফুল। আমি তোমাকে আশীর্বাদ করছি, বর দিচ্ছি, তুমি যেহেতু দাঁড়াতে পেরেছ, সুতরাং আজ থেকে এই গ্রিসের সমস্ত বীরদের মাথার মুকুট তোমার এই পাতা দিয়ে তৈরি হবে। দাফনি কী গাছ হয়ে গিয়েছিল? অলিভ। অলিভ গাছের পাতা দিয়ে মুকুট তৈরি হয়। গ্রিসে যত প্রেমিক-প্রেমিকা আছে, তারা তোমার ফুলের দ্বারা তাদের ভালোবাসা পরস্পরকে জানাবে।

ছাত্রছাত্রীদের জন্য আমারও একটাই কথা—থামো। দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো। দাঁড়াতে শেখো। গাছ হতে শেখো। গাছের মতো সমুন্নত, গাছের মতো পোশাক-আবহ, গাছের মতো পাতায় ভরা, ফুলে ভরা, সৌন্দর্যে ভরা। তাহলে এই পৃথিবীতে সত্যিকারভাবে কিছু দিতে পারবে। তা না হলে হাততালি এবং শিস দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। ধন্যবাদ।


(স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। অসাধারণ বক্তা তিনি। গত ৯ মে তাঁর কথা শোনার সুযোগ হয়েছিল একদল শিক্ষার্থীর। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তা ছিলেন তিনি। যখন সবাই শুধু ছুটছে, ছুটছে, সামনে এগোতে চাইছে; তখন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ শিক্ষার্থীদের বলছেন—থামতে শেখো।)

Source: প্রথম আলো

Title: Re: দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
Post by: mdashraful.eee on May 28, 2018, 02:36:48 PM
দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো:
heading is awesome
Title: Re: দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
Post by: Nahid_EEE on May 31, 2018, 02:27:55 PM
Thank you for sharing.
Title: Re: দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
Post by: abdussatter on June 05, 2018, 04:50:04 PM
Thank you.
Title: Re: দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
Post by: milan on June 05, 2018, 05:38:13 PM

 

দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো:
Title: Re: দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
Post by: Abdus Sattar on June 08, 2018, 01:48:01 AM
সুন্দর এবং বাস্তবধর্মী উদাহরণ।
Title: Re: দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
Post by: S. M. Enamul Hoque Yousuf on June 08, 2018, 02:14:11 PM
 :)
Title: Re: দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
Post by: tokiyeasir on June 09, 2018, 10:00:15 AM
heading is awesome
Title: Re: দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
Post by: parvez.te on July 01, 2018, 11:53:23 AM
Good information.
Title: Re: দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
Post by: khyrul on July 09, 2018, 02:29:01 PM
Important post for everybody.
Title: Re: দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
Post by: akhi on October 23, 2018, 11:34:45 AM
Thanks for sharing