জিনিস বানায় যে প্রিন্টার
(http://paimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/400x0x1/uploads/media/2015/06/22/2acb60a3f6dcb548206c58614c957aca-5.jpg)
শান্ত স্বচ্ছ জলরাশির দুই পাড়ে বসে দুটি রোবট একমনে সেতু তৈরি করে চলেছে। ত্রিমাত্রিক মুদ্রণপ্রযুক্তির (থ্রিডি প্রিন্টিং) মাধ্যমে একের পর এক ধাতব কাঠামো তৈরি করে তা জোড়া দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রোবটগুলো। ২০১৭ সালে আমস্টারডামের এক খালের ওপর এভাবেই তৈরি হবে সেতু। নকশা তৈরিও শেষ। বিশ্বে ত্রিমাত্রিক মুদ্রণপ্রযুক্তি যখন এতটা এগিয়ে গেছে, তখন বাংলাদেশের মানুষ এর সঙ্গে সবে পরিচিত হচ্ছে। সদ্য সমাপ্ত আইসিটি এক্সপোতে আগত লোকজনও অনেকটা অবাক হয়েই দেখেছেন থ্রিডি প্রিন্টারের কাজের পরিধি।
স্বাস্থ্যসেবা, উড়োজাহাজ ও গাড়ি প্রস্তুত শিল্প এবং খাবার তৈরির মতো কাজে থ্রিডি প্রিন্টারের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ২০২০ সাল নাগাদ থ্রিডি প্রিন্টিং ভিত্তিক শিল্প থেকে আয়ের পরিমাণ দুই হাজার এক শ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকায় থ্রিডি প্রিন্টার বিপণন করছে ইউনিক বিজনেস সিস্টেমস লিমিটেড। গতকাল ২১ জুন প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল থ্রিডি প্রিন্টার। সেখানেই জানা যায় এর খুঁটিনাটি। ইউনিক বিজনেস সিস্টেমের পরিকল্পনা পরিচালক হামজা বিন হাকিম বলেন, ‘একটা সময় প্রত্যেক ঘরেই থ্রিডি প্রিন্টার পৌঁছে যাবে। প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ঘরে তৈরি করে নেওয়া যাবে।’
যেভাবে কাজ করে
ত্রিমাত্রিক কোনো বস্তু প্রিন্ট করার পদ্ধতিটা বেশ মজার। দুটি ধাপে এই কাজ হয়ে থাকে। প্রথমে কোনো বস্তু তৈরির ধারণা থেকে নকশা তৈরি করে নিতে হবে কম্পিউটারে। পরের অংশে সেই প্রিন্টের নির্দেশ দিলে থ্রিডি প্রিন্টারে বস্তুটি তৈরি হয়ে বেরিয়ে আসবে।
ধারণা থেকে নকশা
প্রথমেই ঠিক করে নিতে হবে আপনি কী বানাতে চান। এরপর ধারণাকে ত্রিমাত্রিক নকশায় রূপান্তর করতে হবে। এ জন্য যেকোনো কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন (ক্যাড) বা অ্যানিমেশন মডেলিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা যেতে পারে। যেভাবে নকশা করবেন, হুবহু তাই প্রিন্ট হয়ে বেরিয়ে আসবে। তাই মাপজোকের কাজটা করতে হবে নিখুঁতভাবে। এরপর ফাইলটি সেভ করতে হবে এসটিএল ফরম্যাটে। সফটওয়্যারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নকশাকে প্রিন্ট করতে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করে নেবে।
নকশা থেকে প্রিন্ট
থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের প্রযুক্তিকে বলা হয় ‘অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং’। এমনটা বলার কারণ, এই প্রযুক্তিতে প্রিন্ট হয় একের পর এক স্তর যোগ করে। এখন অনেক ধরনের থ্রিডি প্রিন্টার পাওয়া যায়। প্রিন্টারের এই প্রকারভেদ মূলত কাঁচামালের ওপর নির্ভর করেই। সাধারণত প্লাস্টিক ফিলামেন্ট ব্যবহার করে প্রিন্ট করা হয়। প্লাস্টিকের তার প্রিন্টহেডে এসে উচ্চ তাপে গলানো হয়। এই গলিত প্লাস্টিক নকশা অনুযায়ী বিভিন্ন পরতে প্রিন্ট হয়, অনেকটা ইঙ্কজেট প্রিন্টারের মতো। তাৎক্ষণিকভাবে জমাট বাঁধার জন্য বায়ুপ্রবাহের ব্যবস্থা আছে। নকশা অনুযায়ী পরতের পর পরত প্রিন্ট হয়ে পূর্ণাঙ্গ বস্তুতে পরিণত হয়।
বাংলাদেশে থ্রিডি প্রিন্টার
গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে দেশের প্রথম থ্রিডি প্রিন্টিং ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই তা চালু হয়েছে। মোটামুটি এক লাখ টাকার মধ্যেই বিভিন্ন মডেলের থ্রিডি প্রিন্টার কিনতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ইউনিক বিজনেস সিস্টেমস লিমিটেড প্রথম এমবটের তৈরি থ্রিডি প্রিন্টার বাজারজাত করছে। এ ছাড়া কম্পিউটার সিটি টেকনোলজিস এবং এমআরএফ ট্রেডিং কোম্পানির শোরুমে পাওয়া যাবে থ্রিডি প্রিন্টার।
বিতর্ক
প্রযুক্তির বিভিন্ন উদ্ভাবনের মতোই থ্রিডি প্রিন্টার নিয়েও আছে নানা বিতর্ক। জাপানের এক যুবক এ ধরনের প্রিন্টারে পিস্তল তৈরি করলে এই বিতর্কের শুরু হয়। সে যুবককে গ্রেপ্তার করা হলেও সাধারণ নাগরিকের হাতে যে এমন আগ্নেয়াস্ত্র যাবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবেন? সবচেয়ে বড় কথা থ্রিডি প্রিন্টার চালাতে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়।
Source: http://goo.gl/FUJlY7