Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - firoz_hasan

Pages: [1]
1
মানবাকৃতির রোবটগুলো বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে কৌতুক শোনানোর পাশাপাশি যোগব্যায়ামও শেখাতে পারে। আলঝেইমারে (স্মৃতি হারিয়ে যাওয়া রোগ) আক্রান্ত রোগীদের সেবায় ‘নাউ’ ও ‘পিপার’ নামের বিশেষ ধরনের রোবটগুলো তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
গবেষকদের দাবি, রোবটগুলো কথা বলার মাধ্যমে স্মৃতি পুনরুদ্ধারেও সাহায্য করতে পারে। আলঝেইমারস রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিদের সাহায্য করতে তৈরি করা রোবটগুলো এরই মধ্যে মিনেসোটা নার্সিং হোমে ব্যবহার করা হচ্ছে।

2
স্মার্টফোনে ছবি তোলার পাশাপাশি ভিডিও করেন অনেকে। আকারে বড় ভিডিও বিনিময় করতে দীর্ঘ সময়ের পাশাপাশি ইন্টারনেট ডেটাও বেশি খরচ হয়। তবে চাইলেই ভিডিও সংকোচনের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।

অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলা স্মার্টফোনে ভিডিও সংকোচনের জন্য বর্তমানে বেশ কিছু অ্যাপ পাওয়া যায়, যার মধ্যে ‘ভিডিও কম্প্রেসর’ ব্যবহারকারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
অ্যাপটি ব্যবহারের জন্য প্রথমে https://play.google.com/store/apps/details? id=com. videoconverter.videocompressor ঠিকানা থেকে ডাউনলোড করে ইনস্টল করতে হবে। এবার অ্যাপটি চালু করে ড্যাশবোর্ডে প্রবেশের পর Allow Storage Access অপশন নির্বাচন করে Allow চাপতে হবে। এরপর ড্যাশবোর্ড থেকে Video Compressor অপশনে ক্লিক করলেই দেখা যাবে মিডিয়া গ্যালারি। এখানে যে ভিডিওটি সংকোচন করতে হবে, সেটি নির্বাচন করতে হবে। Browse অপশন কাজে লাগিয়েও নির্বাচন করা যাবে ভিডিও।
ভিডিও নির্বাচনের পর Encoder অপশন থেকে পছন্দের এনকোডার নির্বাচন করে Video Format অপশনে প্রয়োজনীয় ফরম্যাট ও File Size বেছে নিতে হবে। যদি ভিডিওটি ই–মেইলে পাঠাতে চান, তবে Fit to E–mail: 25 MB অপশন ও 480P বা 360P রেজল্যুশন ফরম্যাট নির্বাচন করে Compress বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর ভিডিও ফাইলের নাম দিয়ে Start বাটনে ক্লিক করলেই ভিডিও সংকোচন হতে থাকবে।
https://www.prothomalo.com/technology/advice/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%AB%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%93%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87

3
আমরা প্রায় সবাই ফেসবুকে নিজেদের আনন্দের মুহূর্তগুলো বন্ধুদের সঙ্গে বিনিময় করে থাকি। কিন্তু অনেক সময় বন্ধুতালিকায় থাকা এক বা একাধিক ব্যক্তি আমাদের ফেসবুক পোস্টে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ফলে মন খারাপ হওয়ার পাশাপাশি বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। ফেসবুক পোস্টের মন্তব্য নিয়ন্ত্রণ–সুবিধা কাজে লাগিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।
মন্তব্য নিয়ন্ত্রণ–সুবিধার আওতায় নির্দিষ্ট ফেসবুক পোস্টে কোন কোন ব্যক্তি মন্তব্য করতে পারবেন, তা আগে থেকেই নির্ধারণ করা যায়। এমনকি মন্তব্যের সুযোগ পুরোপুরি বন্ধও রাখা সম্ভব। ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য পোস্টের প্রাইভেসি অপশন অবশ্যই ‘Public’–এর বদলে ‘Private’ বা ‘Friends’ নির্বাচন করতে হবে।
মন্তব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য ফেসবুকে প্রবেশ করে নির্বাচিত পোস্টের ওপরের ডান দিকে থাকা তিনটি ডট আইকনে ক্লিক করে Who can comment on this post? অপশন নির্বাচন করতে হবে। এবার Profiles and Pages you mention অপশনে ক্লিক করলেই মন্তব্যে সুবিধা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।

নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের মন্তব্য করার সুযোগ দিতে হলে পোস্টে অবশ্যই সেই ব্যক্তির নাম @ দিয়ে উল্লেখ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে একাধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা যায়। ফলে আপনার পছন্দের ব্যক্তিরা চাইলেই পোস্টে মন্তব্য করার সুযোগ পাবেন।

4
ব্যক্তিগত বা অফিসের বিভিন্ন হিসাব মাইক্রোসফট এক্সেলে সংরক্ষণ করেন অনেকেই। তথ্যের নিরাপত্তায় চাইলেই নির্দিষ্ট মাইক্রোসফট এক্সেল ফাইলে পাসওয়ার্ড দেওয়া যায়। পাসওয়ার্ড দেওয়ার জন্য প্রথমে নির্বাচিত ফাইলটি মাইক্রোসফট এক্সেলের সাহায্যে খুলতে হবে। ফাইল খোলার পর মেনুতে ক্লিক করে Save As অপশন নির্বাচন করতে হবে। এবার বাঁ পাশে থাকা Browse বাটনে ক্লিক করলেই চালু হবে Save As ডায়ালগ বক্স।
বক্সের নিচে থাকা Save as type ড্রপডাউন থেকে Excel Workbook, Excel 97-2003 Workbook, Excel Add-in ফরম্যাট নির্বাচন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, অন্য কোনো ফরম্যাট নির্বাচন করলে পাসওয়ার্ড সুবিধা দেখা যাবে না। এবার এই বক্সের নিচে থাকা Tools অপশনের ড্রপডাউন আইকনে ক্লিক করে General options নির্বাচন করতে হবে।
ফাইল পরিবর্তনের জন্য Password to modify বক্সে পাসওয়ার্ড লিখতে হবে। যদি ফাইল খুলতে এবং পরিবর্তন করতে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে চান, তবে Password to open বক্সেও একই পাসওয়ার্ড দিতে হবে। এবার Read-Only recommended এর পাশের বক্সে টিকচিহ্ন দিয়ে OK করে আবার পাসওয়ার্ড লিখে OK করতে হবে। এরপর মেইন সেভ অ্যাজ ডায়ালগ বক্সে Save বাটনে ক্লিক করলেই ফাইলটিতে পাসওয়ার্ড যুক্ত হয়ে যাবে।
পাসওয়ার্ড মুছে ফেলার জন্য আগের নিয়ম অনুসরণ করে Tools অপশনের ড্রপডাউন আইকনে ক্লিক করে General options নির্বাচন করতে হবে। এবার আগে দেওয়া পাসওয়ার্ডগুলো মুছে ফেলার পর Read-Only recommended বক্সে থাকা টিক তুলে দিয়ে Save অপশনে ক্লিক করতে হবে।
https://www.prothomalo.com/technology/advice/%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%93%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A1-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87

5
রিমোট ডেস্কটপ সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের পাশাপাশি অফিসের কম্পিউটারও ব্যবহার করা সম্ভব। বর্তমানে বেশ কিছু রিমোট ডেস্কটপ সফটওয়্যার পাওয়া যায়, যার মধ্যে অ্যানিডেস্ক ব্যবহারকারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
অ্যানিডেস্ক সফটওয়্যারের সাহায্যে কম্পিউটার থেকে ফাইল এবং বার্তা পাঠানো যাবে। কম্পিউটারের পর্দার ছবি ধারণেরও সুযোগ মিলবে। সফটওয়্যারটির আকার বেশ ছোট, মাত্র ৩ মেগাবাইট। anydesk.com ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যারটি বিনা মূল্যে ডাউনলোড করা যাবে।

আপনি যে কম্পিউটারটি দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান, সে কম্পিউটারে প্রথমেই অ্যানিডেস্ক সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে ইনস্টল করতে হবে। এবার সফটওয়্যারটি চালু করলেই ৯ সংখ্যার একটি আইডি নম্বর দেখা যাবে। নম্বরটি কাজে লাগিয়েই মূলত দূর থেকে কম্পিউটার ব্যবহার করা যাবে।
দূর থেকে নির্দিষ্ট কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমে সফটওয়্যারের Enter Remote Address অপশন থেকে অপর প্রান্তে থাকা কম্পিউটারের অ্যানিডেস্ক আইডি নম্বর লিখে ডান পাশে থাকা `→’ আইকনে ক্লিক করতে হবে বা এন্টার চাপতে হবে। অপর প্রান্তের কম্পিউটার ব্যবহারকারী Accept চাপলেই সেই কম্পিউটার আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। কাজ শেষ হওয়ার পর Disconnect অপশনে ক্লিক করলে দুটি কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। চাইলে মুঠোফোন থেকে একই পদ্ধতিতে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এ জন্য অবশ্যই মুঠোফোনে অ্যানিডেস্ক অ্যাপ ইনস্টল থাকাতে হবে। গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে।

যেভাবে ফাইল পাঠাবেন
অ্যানিডেস্ক সফটওয়্যারের সাহায্যে দূর থেকে কম্পিউটারের ফাইল পাঠানোর জন্য প্রথমে ফাইল ট্রান্সফার আইকনে ক্লিক করতে হবে। এবার ফাইল নির্বাচনের পর আপলোডে ক্লিক করলেই ফাইল বিনিময় হয়ে যাবে। একই উপায়ে রিমোট কম্পিউটার থেকে ফাইল গ্রহণ করতে হলে ফাইল নির্বাচন করে Download অপশনে ক্লিক করতে হবে।

https://www.prothomalo.com/technology/advice/%E0%A6%A6%E0%A7%82%E0%A6%B0-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%89%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87

6
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হলো এমন একটি প্রযুক্তি, যা তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে যন্ত্র বা অ্যাপ্লিকেশনকে মানুষের বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তির আদলে কাজের উপযোগী করে তোলে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে কাজ করে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি সাধারণত অ্যালগরিদম ও মেশিন লার্নিং-সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিশাল তথ্যভান্ডার বিশ্লেষণ করে ফলাফল ও অনুমান জানিয়ে থাকে। মানুষ বেশি কাজ করলে ক্লান্ত হয়ে যায়, বিরতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির বিরতির প্রয়োজন নেই।
একসঙ্গে হাজার হাজার কাজ দ্রুত করার পাশাপাশি খুব অল্প সময়ে নতুন অনেক বিষয় শিখতে পারে। মূলত আগের তথ্য বিশ্লেষণ করেই বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির লক্ষ্য হলো এমন একটি কম্পিউটার সিস্টেম তৈরি করা, যা মানুষের আচরণ ও চিন্তাশক্তির আদলে জটিল সমস্যার সমাধান করবে। নির্ভুল তথ্যের পাশাপাশি মানুষের আদলে বুদ্ধিমত্তা থাকায় সাইবার নিরাপত্তা, ভিডিও গেমস, নকশা, স্মার্ট গাড়ি, ডেটা সেন্টার ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির চাহিদা বাড়ছে।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিরও উন্নয়ন হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রও উন্নত হয়ে উঠছে, যা একদিন মানুষের মস্তিষ্কের আদলে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে পারবে।

7
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রমে উৎকর্ষ অর্জন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালগুলোকে দেশের শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয়’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান কারিকুলামে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ কে খান আইন অনুষদ অডিটরিয়ামে ইউজিসি আয়োজিত এ কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নাছিম আখতার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) বেনু কুমার দে ও রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য কাঞ্চন চাকমা।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির আওতায় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবনসংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন জোরদারকরণে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালার সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

কর্মশালায় ইউজিসি সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করলেও অনেক সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচন করেছে। এ সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।
দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের নয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। ইউজিসি সদস্য আরও বলেন, শিল্প-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সেতুবন্ধন তৈরি হলে গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির বাজারজাতকরণ সহজ হবে। এতে উদ্ভাবক, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও দেশের সাধারণ মানুষ সুফল পাবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাবেন এবং এসব প্রতিষ্ঠানের আধুনিক ল্যাব ব্যবহার করে গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণা ও উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলা না গেলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জগুলো যথাযথভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না।

ইউজিসি আয়োজিত এই কর্মশালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম হবে। এ ধরনের আয়োজন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রম আরও বেগবান করতে সহায়ক হবে।

ইউজিসি এপিএর ফোকাল পয়েন্ট গোলাম দস্তগীরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন আফরোজা পারভীন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক কাজী মুহাইমিন-আস-সাকিব। কর্মশালায় ইউজিসি ইনোভেশন টিমের ফোকাল পয়েন্ট রবিউল ইসলামসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসির ৪৬ শিক্ষক ও কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
https://www.prothomalo.com/education/higher-education/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%9F%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%97%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A6%A3%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%89%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%89%E0%A7%8E%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7-%E0%A6%85%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87

8
ভর্তি প্রক্রিয়ার একটি অংশ হলো ফোন ইন্টারভিউ। এই অংশটি হতে পারে দুই সময়ে -- কোনো প্রফেসরের সাথে কাজ করা বা ফান্ডিং পাওয়া নিয়ে আলোচনা অনেকদূর আগালে প্রফেসর হয়তো শিক্ষার্থীর সাথে সরাসরি কথা বলতে চাইতে পারেন। আবার অনেক সময়ে ভর্তি প্রক্রিয়ার প্রাথমিক বাছাই শেষ হবার পরে শর্টলিস্টে থাকা প্রার্থীদের সাথে ভর্তি কমিটির প্রফেসরেরা কথা বলতে পারেন। সেজন্য ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করে একটি সময় নির্ধারণ করে নেয়া হয় যখন এই ইন্টারভিউটি নেয়া হয়।

~~ কেন নেয়া হয় ফোন ইন্টারভিউ?

শিক্ষকতা জীবন শুরুর পরে ভর্তি কমিটির সদস্য হিসাবে একাধিক ফোন ইন্টারভিউ নেয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। এর ভিত্তিতে ফোন ইন্টারভিউ কেনো নেয়া হয় এবং কী কী দেখা হয়, তার উপরে একটু ধারণা দেই। কাগজে কলমে একজন শিক্ষার্থী অসাধারণ হতে পারে। মানে, সিভি, জিপিএ এসবের ভিত্তিতে কাউকে খুব ভালো মনে হতে পারে। কিন্তু কথা বলে দেখে নেয়া হয় আসলেই সেই শিক্ষার্থী এরকম ভালো কী না। কাগজে কলমে অসাধারণ মনে হওয়া অনেক শিক্ষার্থী হয়তো দেখা যায় ফোনে পুরাই উল্টা -- কথাবার্তা মুখ ফুটে বলতে পারে না, অথবা সহজ প্রশ্নের জবাব দিতে পারে না। কিংবা টেস্ট স্কোর ভালো হলেও ইংরেজি বলতে পারে না আদৌ। এসব সমস্যা আছে কি না তা যাচাই করার জন্যই সাধারণত ফোন ইন্টারভিউ নেয় ভর্তি কমিটি।

~~ কীভাবে নেয়া হয় ইন্টারভিউ

ফোন ইন্টারভিউ এর নামের ফোন থাকলেও ফোনেই হবে এমন কথা নাই। ইন্টারনেট এর সুবিধা আসার পরে ফোন এর পাশাপাশি ভয়েস ওভার আইপি ব্যবহার করে ইন্টারভিউ নেয়া হয়। এজন্য ব্যবহার করা হতে পারে স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা গুগল হ্যাংআউট। আর ইন্টারভিউ অডিও এর সাথে সাথে ভিডিও চ্যাটও হতে পারে যাতে করে ভর্তি কমিটি বা প্রফেসর এবং শিক্ষার্থী একে অপরকে দেখতে পারেন কথাবার্তার সময়ে।

~~ কী জিনিষ যাচাই করা হয়?

ফোন ইন্টারভিউতে কী যাচাই করা হবে সেটা আসলে ইন্টারভিউকারীদের উপরে নির্ভর করে। তবে কতগুলা সাধারণ জিনিষ আছে যা দেখা হয়। প্রথমত -- শিক্ষার্থীটি ইংরেজি কেমন বলছে, আটকে যাচ্ছে কি না, আমতা আমতা করছে কি না। টোফেল বা আইইএলটিএস এর স্কোর ভালো হলেও অনেক সময়ে ইংরেজি বলতে অভ্যস্ত না থাকায় অনেকে এখানে আটকে যান। ভর্তি কমিটি এইটাই দেখে -- শিক্ষার্থীটি কাগজে কলমে ইংরেজি পারে নাকি আসলে বলতেও পারে।

এর পরে দেখা হয় শিক্ষার্থীটি নানা প্রশ্নের জবাব দিতে পারছে কি না। একটা বেশ প্রচলিত প্রশ্ন হলো কেনো গ্রাজুয়েট স্কুলে মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে চান, কী বিষয়ে আগ্রহ, কেনো এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বেছে নিলেন, এরকম। অনেক সময়ে শুরুই করা হয় এভাবে, Tell me about yourself অর্থাত নিজের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় শিক্ষার্থীটিকে, এক মিনিটে নিজের সম্পর্কে গুছিয়ে কী বলতে পারে সেটা দেখার জন্য। পিএইচডি বা মাস্টার্স লেভেলের প্ল্যান কী? পাস করার পরে কী করতে চান সেটা, এসব প্রশ্ন আসতে পারে। আবার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কী, সেটাও যাচাই করা হতে পারে, এই ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসতে পারে পাঁচ বছর পরে কোথায় দেখতে চান নিজেকে। আর প্রায় সব ক্ষেত্রেই ইন্টারভিউ এর শেষে প্রশ্ন করা হবে, Do you have any questions?

~~ ইন্টারভিউতে ঝামেলা হয় কীভাবে?

ফোন ইন্টারভিউ ভজঘট বাঁধতে পারে বেশ কিছু কারণে, আসুন দেখা যাক সেগুলো। প্রথমেই আসে ফোন লাইনের গণ্ডগোল। ফোন লাইনে কথা যদি শোনা না যায় অথবা খড়খড় শব্দের কারণে কথা বুঝতে ঝামেলা হয়, সেটা বেশ বিরক্তিকর এবং আপনার সম্পর্কে ইম্প্রেশন খারাপ করে দিবে আপনি যতোই ভালো প্রার্থী হন না কেনো।

এর পর আসছে কথা বার্তা বলা। ইংরেজিতে খাবি খাওয়া, তোতলানো, এসব আসলে আপনার ইংরেজি বলার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্নের কারণ হবে। বিদেশী শিক্ষার্থী হিসাবে চোস্ত ইংরেজি বলবেন সেটা আসলে কেউই আশা করছে না, বাংলাদেশী এক্সেন্টে কথা বললে সেটা সমস্যা না। কিন্তু একটা বাক্য বলতে গিয়ে যদি দশবার ইয়ে ইয়ে অথবা আই মিন, ইউ নো এরকম হোঁচট খান, তাহলে সেটা সমস্যা।

আর প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত তৈলমর্দন করা কথা বলাও ভালো না। প্রফেসরেরা শিক্ষার্থীদের কথা শুনে অভ্যস্ত, তাঁরা সহজেই ধরতে পারেন কে তেলাচ্ছে আর কে আসলেই নিষ্ঠাবান। কারো কথা শুনে যদি মনে হয় সে সব কথাতেই হুজুর হুজুর করছে, সেটা খারাপ দেখায়।

আরেকটা ব্যাপার হলো অল্প কথায় সরাসরি জবাব না দিয়ে দীর্ঘ জবাব দেয়া, অথবা রবোটের মতো বলা, কিংবা কাগজে চোথা দেখে বা মুখস্ত বলছেন এমন মনে হওয়া। আমার অভিজ্ঞতায় এমন অনেক সময় গেছে যখন খুব সহজ একটা প্রশ্ন করেছি কিন্তু জবাবে শিক্ষার্থীটি প্রায় ১ মিনিট ধরে দীর্ঘ জবাব দিয়েই চলেছে, আমি আর আমার কলিগেরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি, কখন এই জবাব শেষ হবে তা নিয়ে। অথবা প্রশ্ন করা মাত্রই হড় বড় করে বিটিভির খবর পড়ার মতো করে বলছে, শুনে মনে হচ্ছে হাতে প্রশ্ন-আর-জবাবের গাইড বই নিয়ে কথা বলছে।

প্রফেসরের সাথে রিসার্চ নিয়ে ফোন ইন্টারভিউ এর সময়ে আরো একটা গণ্ডগোল হতে পারে। প্রফেসরেরা সাধারণত নিজের রিসার্চের সাথে মিল আছে কিনা বা নিজের রিসার্চ এরিয়াগুলাতে শিক্ষার্থীর আগ্রহ কেমন সেটা জানতে চান কথা বলে। প্রায় সময়েই শিক্ষার্থীরা প্রফেসরকে পটানোর জন্য প্রফেসরের সাইট দেখে যা যা লেখা আছে তার সবগুলাতেই আগ্রহ এমন ভাব দেখান। এখানে সমস্যা দুইটা -- প্রফেসরের সাইটের তথ্য হালনাগাদ করা নাও থাকতে পারে যার ফলে সেই সব বিষয়ে প্রফেসর এখন আর কাজ নাও করতে পারেন। আবার সব-বিষয়েই-আগ্রহী এমন ভাব দেখালে প্রফেসরের মনে হতে পারে, এই ছাত্রের গভীরতা কম -- ভর্তির মতলবে সবকিছুতেই আগ্রহের ভান করছে।

পরিশেষে দেখা যাক ভিডিও থাকলে অতিরিক্ত সমস্যা কী হতে পারে -- আপনার পোষাক যদি অতিরিক্ত ক্যাজুয়াল হয় অথবা চকরা বকরা হয়, তাহলে সেটা দৃষ্টিকটু। আবার অন্ধকার ব্যাকগ্রাউন্ড, কিংবা ব্যাকগ্রাউন্ডে অগোছালো ময়লা এরকম হয় তাহলে সেটা অবচেতনভাবে হলেও ইন্টারভিউ নেয়া মানুষদের মনে প্রভাব ফেলবে।Ragib Hasan

9
আসলে গুগলের জন্যে প্রিপারেশন নেওয়া কারো লক্ষ্য হওয়া উচিৎ না, উচিৎ একজন ভালো প্রোগ্রামার বা সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। যদি কারো প্রোগ্রামিং ভালোই না লাগে তাহলে শুধুমাত্র যশ খ্যাতি বা টাকার কথা চিন্তা করে প্রোগ্রামিং করা উচিত না। একজন ভালো প্রোগ্রামার হতে পারলে শুধু গুগল না বরং দেশী বিদেশী বিভিন্ন জায়গায় ভালো করার সুযোগ আছে।
তাহলে আসা যাক কিভাবে নিজেকে একজন ভালো প্রোগ্রামার হিসেবে গড়ে তোলা যায়। এটা আসলে কয়েক সপ্তাহ বা মাসেই হয়ে যাবে না, তার জন্যে অনেক পরিশ্রম ও সময় দিতে হবে।
একজন ভালো প্রোগ্রামার হাওয়ার জন্যে যে বিষয়গুলো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় সেগুলো হল:
১. যেকোনো একটা অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড লাঙ্গুয়েজ ভালো করে শিখতে হবে। যেমন C++, Java, Python ইত্যাদি। (একটা ভালো করে শিখলে বাকিগুলো পরে দরকার পড়লে সহজেই শিখে ফেলা যাবে)
২. ডাটা স্ট্রাকচার ভালো করে বুঝতে হবে অর্থাৎ কোন জায়গায় কোন ধরনের ডাটা স্ট্রাকচার ব্যবহার করতে হবে সেসব বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে এবং খুব কমন ডাটা স্ট্রাকচার গুলো যেমন লিস্ট বা হ্যাশম্যাপ কিভাবে ইমপ্লিমেন্ট করা যায় তা জানতে হবে।
৩. অ্যালগরিদম এর উপর ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। বিভিন্ন কমন অ্যালগরিদম গুলো জানতে বুঝতে ও অ্যাপ্লাই করতে শিখতে হবে।
৪. টাইম ও স্পেস কমপ্লেক্সিটি কি এবং কি কারণে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেটা বুঝতে হবে এবং যেকোনো একটা প্রোগ্রাম এর টাইম ও স্পেস কমপ্লেক্সিটি বের করতে জানতে হবে।
৫. কনকারেন্ট প্রোগ্রামিং, থ্রেড, মিউটেক্স, সেমাফোর, রেস কন্ডিশন বুঝতে হবে।
৬. অপারেটিং সিস্টেম এর বিভিন্ন কনসেপ্ট যেমন স্কেজুলিং, ফাইল সিস্টেম সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
৭. লাস্ট বাট নট দা লিস্ট: problem solving ability (এটি যেকোনো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর core গুণাবলির একটি)
এখন আসা যাক কি করলে এসব ভালো ভাবে শিখতে পারা যাবে:
১. কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং।
বিভিন্ন কনটেস্ট যেমন ACM icpc, Google Codejam এ অংশগ্রহণ করলে একই সাথে অনেক কিছু শেখা যাবে আবার সেগুলো অনুশীলন ও করা হয়ে যাবে।
২. ভালো প্রোগ্রামারদের কোড দেখে শিখতে হবে।
যেমন আমি Google Codejam এর প্রথম দিকে থাকা contestant দের সলিউশন গুলো ডাউনলোড করে বোঝার চেষ্টা করতাম যে তারা কেন কোন ডাটা স্ট্রাকচার ব্যবহার করেছে।
৩. ভালো বই পড়তে হবে।
ইদানিং বাংলাতেও প্রোগ্রামিং এর উপর অনেক ভালো বই বের হচ্ছে। যেমন Tamim Shahriar Subeen ভাই এর বা Jhankar Mahbub ভাই এর বই গুলো দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। আবার ইংরেজি বুঝতে সমস্যা না হলে Head First সিরিজ এর বই গুলো পড়ে দেখা যেতে পারে। এছাড়াও অ্যালগরিদম এর বিভিন্ন ভালো বই পড়তে হবে। আর যেকোনো ইন্টারভিউ এর জন্যে Cracking the coding interview বইটা সবার অবশ্যই একবার পড়ে দেখা উচিৎ।
৪. YouTube.
আজকাল প্রায় সবকিছুই ইউটিউব থেকে শিখতে পারা যায়। যেমন আমার প্রোগ্রামিং শেখার শুরু TheNewBoston এর ইউটিউব এর ভিডিও গুলো দেখে। আর Harvard CS50, MIT Introduction to Algorithm এর ভিডিও গুলো তো এককথায় অসাধারণ।
৫. প্রাকটিস।
এটার কোন বিকল্প নেই। Leetcode, HackerRank, UVA তে বিভিন্ন প্রবলেম গুলো সলভ করতে হবে। এতে অনেক নতুন কিছু শিখতেও পারা যাবে।

10
ফাহিমুল করিমের জন্য তাঁর শারীরিক বাধা কোনো ‘বাধা’ হয়ে ওঠেনি। ঘরে বসেই ওয়েবসাইট থেকে কাজ নিয়ে আয় করছেন এই তরুণ।



মাগুরার ছেলে ফাহিমুলের (২১) জীবন আর সবার মতো নয়। ডুচেনেমাসকিউলার ডিসথ্রফি নামে জটিল রোগে আক্রান্ত তিনি। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সেই তাঁর শরীরের পেশি শুকিয়ে যায়। তবে রোগের কাছে হার মানেননি ফাহিমুল। মনোবল হারাননি। অদম্য লড়াকু ফাহিমুল এখন সফল ফ্রিল্যান্সার।

ছোটবেলায় সাইকেল চালাতেন ফাহিমুল। বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন। পড়ালেখাতেও ছিলেন মেধাবী। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। ২০১২ সালের শেষ দিকে জেএসসি পরীক্ষার ঠিক আগে বিছানায় পড়ে যান। ধীরে ধীরে তাঁর পেশি শুকিয়ে যেতে থাকে। তারপর একেবারেই অকেজো হয়ে যায় হাত-পা থেকে শুরু করে পুরো শরীর। মাগুরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়তেন ফাহিমুল। রোগে পড়ে একপর্যায়ে এই মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।

ফাহিমুলের বাবা রেজাউল করিম। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানির বিপণন বিভাগে কাজ করতেন। মা হাজেরা খাতুন গৃহিণী। ছোট এক বোন নবম শ্রেণিতে পড়ে।

জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ফাহিমুলের জীবন অনেকটা ‘বিছানাবন্দী’ হয়ে যায়। দৈনন্দিন কাজের জন্য তাঁকে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। ফাহিমুলের স্বপ্নটা সেখানেই স্থবির হয়ে যেতে পারত। কিন্তু দৃঢ় মনোবল তাঁকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে। এই তরুণ বিশ্বাস করেন, শারীরিক অক্ষমতা মানেই সবকিছু থেমে থাকা নয়। মনের জোরে জেগে ওঠেন তিনি। একপর্যায়ে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করেন। এখন আপওয়ার্কে প্রতি ঘণ্টায় তাঁর রেট ৮ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৭০ টাকা।


ফাহিমুলের জীবন ও সংগ্রামের গল্পটা তাঁর কাছ থেকেই শোনা যাক। ফাহিমুল বলেন, ‘২০১২ সালের কথা। আমি তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। জেএসসি পরীক্ষার ঠিক দুই–তিন দিন আগে আমার চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে যায়। রোগটা ছোটবেলা থেকেই ছিল। ডাক্তার বলেছিলেন, একসময় এমন হবে। আস্তে আস্তে শরীর একদম শুকিয়ে যাবে। শক্তি হারিয়ে যাবে। এমনকি হয়তো ১৮ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকব। এই অবস্থাতেই জেএসসি পরীক্ষা দিই। ভালো রেজাল্টও করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নবম শ্রেণিতে আমার আর ভর্তি হওয়া হয় না। সেখানেই আমার পড়ালেখার ইতি ঘটে। ছোটবেলা থেকেই আমার নতুন বিষয় শেখার ব্যাপারে খুব আগ্রহ ছিল। সেটা বই পড়ে হোক, কারও কাছ থেকে হোক বা টেলিভিশন দেখেই হোক। নবম শ্রেণিতে ভর্তি না হলেও বিজ্ঞান বিভাগের বইগুলো বাসায় এনে দিয়েছিলেন আম্মু। সেগুলো নিজে নিজে পড়তাম। একসময় আমি ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করলাম। সবাই আমার বাসায় এসে পড়ত।’

প্রাইভেট পড়িয়ে ফাহিমুলের কিছু টাকা জমে। বাসা থেকে আর কিছু টাকা নিয়ে ২০১৪ সালের শেষ দিকে একটা অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনেন তিনি। ইন্টারনেটে সংযুক্ত হন। তারপর ধরে ধীরে গুগল, ইউটিউব সম্পর্কে জানতে পারেন তিনি। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি ফেসবুকের একটা পেজে ইন্টারনেটে আয় করা সম্পর্কে জানতে পারেন ফাহিমুল। তিনি প্রথমে জেনেছিলেন টি-স্প্রিং সম্পর্কে। ভেবেছিলেন মোবাইল দিয়েই কাজ করা যাবে। কয়েক দিনের চেষ্টায় ব্যর্থ হন। একটা কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা খুব করে অনুভব করেন। বাসায় বলেন। কিন্তু বোঝাতে পারেননি। তা ছাড়া অর্থেরও সংকট ছিল।

হাল ছাড়েননি ফাহিমুল। তিনি বলেন, ‘পরে একটা গ্রুপে যুক্ত হলাম। নাম ছিল ওডেস্ক বাংলাদেশ (বর্তমানে আপওয়ার্ক বাংলাদেশ)। ওখানে দেখতাম, সবাই অনলাইনে কাজ নিয়ে কথা বলত। আমি সবার পোস্ট, কমেন্ট নিয়মিত পড়তাম। সেখানেরই একটা পোস্ট থেকে ওয়েব ডিজাইনের কথা জানতে পারি। ওখানে কিছু লিংক দেওয়া ছিল। আমি সেগুলো ডাউনলোড করে পড়ে পড়ে এইচটিএমএলটা প্রায় শিখে ফেলি। কিন্তু কিছুদিন পর অধৈর্য লাগছিল। ভাবলাম, এভাবেও সম্ভব না। আমাকে নির্দিষ্ট কোনো কাজ শিখতে হবে। কাজ শিখতে চাই বলে গ্রুপে পোস্ট দিই। গ্রুপের একজন অ্যাডমিন আমার এলাকার একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি কিছুদিন পর আমার বাসায় এসে আমাকে কাজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেন। গ্রাফিকস ডিজাইন সম্পর্কেও ধারণা দেন। কিন্তু তখনো আমার কম্পিউটার ছিল না৷’

পরিচিতদের উদ্যোগ, মায়ের জমানো টাকা ও ব্যাংক থেকে ঋণ দিয়ে ২০১৬ সালের নভেম্বরে একটা ল্যাপটপ কেনেন ফাহিমুল। ল্যাপটপ ব্যবহার আয়ত্তে এলেও নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহারের আর্থিক সামর্থ্য ছিল না তাঁর। একটা ডিভিডি কিনে গ্রাফিকস ডিজাইন শেখা শুরু করেন তিনি। তারপর নিয়মিত চর্চা। শুরুতে শেখেন ফটোশপ। অন্য দরকারি বিষয়গুলো ইউটিউব দেখে শিখতে থাকেন তিনি। কম টাকায় ইন্টারনেটের অফার পেলে ফ্রিল্যান্স টিউটোরিয়ালের ভিডিও ডাউনলোড করতেন তিনি। শুরুতে বিজনেস কার্ড ও ব্যানার তৈরি শেখেন। এরপর অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফাইভার সম্পর্কে জানেন।


ফাহিমুল বলেন, ‘ফেসবুকে সার্চ করে ফাইভার হেল্প বাংলাদেশ গ্রুপের খোঁজ পাই। গ্রুপের ডকুমেন্টগুলো পড়ে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফাইভারে গিগ (ফাইভারে প্রতিটি সার্ভিসের অফারকে গিগ বলে) খুলি। গিগ খোলার অল্প দিনের মধ্যেই কাজ পেয়ে যাই। ভাবতেও পারিনি, এত দ্রুত কাজ পেয়ে যাব। আমি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কাজটা শেষ করি। বায়ার খুশি হয়ে আমাকে ৫ স্টার রিভিউসহ বোনাস দেন। আমার প্রথম উপার্জন ছিল ১৫ মার্কিন ডলার।’

তারপর ফাহিমুলকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। এক মাসেই তিনি লেভেল ওয়ান সেলার হয়ে যান। তখন প্রচুর কাজ আসতে থাকে। তিনি বলেন, ‘এমনও হয়েছে, কাজের জন্য আমি খাওয়ার সময় পেতাম না। আম্মু হাতে করে খাইয়ে দিয়েছে, আর আমি কাজ করেছি।’

প্রথম তিন মাসের মধ্যে ফাহিমুল লেভেল টু সেলার হয়ে যান। তাঁর উপার্জন বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪০ হাজার হয়ে গিয়েছিল। ২০১৭ সালের এপ্রিলে তাঁর বাবার চাকরি চলে যায়। তখনই তিনি প্রথম কাজের টাকা তুলতে পারেন। শুরুতে ৩৭ হাজার টাকা তোলেন। ২০১৭ সালে মাঝামাঝি আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খোলেন ফাহিমুল। কয়েক দিন চেষ্টার পর অ্যাকাউন্ট অনুমোদন পায়। আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আপওয়ার্কে দ্রুত কাজ পেয়ে যান। তিন মাসেই আপওয়ার্কের টপ লেভেলের ব্যাজ পেয়ে যান তিনি। এখনো ফাইভারে লেভেল টু ও আপওয়ার্কে টপ রেটেড ব্যাজ ধরে রেখেছেন তিনি। গত দুই বছরে সাড়ে চার শর বেশি প্রজেক্টে কাজ করেছেন ফাহিমুল।

ফাহিমুলের বাবা রেজাউল করিম জানান, তাঁর ছেলের রোগের বিষয়টি প্রথম ধরা পড়ে ২০০৬ সালে। দেশে বেশ জায়গায় চিকিৎসা করানোর পর ২০০৮ সালে ফাহিমুলকে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের কলকাতায়। সেখানে একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, ফাহিমুল ডুচেনেমাসকিউলার ডিস্থ্রফিতে আক্রান্ত। ধীরে ধীরে তাঁর পেশি দুর্বল হয়ে যাবে। বংশগত রোগটির কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা জটিল হতে পারে। সেখান থেকে ফিজিওথেরাপির পরামর্শ ও পুনরায় চিকিৎসার জন্য যেতে বলা হয়। ফাহিমুল অচল হয়ে পড়লে আর্থিক সংকটের কারণে আর ভারতে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

হাতের আঙুলগুলোও যাঁর ঠিকমতো কাজ করে না, তিনি কীভাবে এত দূর এলেন? ফাহিমুল বলেন, ‘হতাশ হয়নি। স্টিফেন হকিংয়ের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজেছি।’

ফাহিমুল জানান, শারীরিকভাবে অক্ষম হলেও তিনি মানসিকভাবে বেশ শক্ত। তাই তিনি আটকে থাকেননি।

ফাহিমুল বাস্তবতা বোঝেন। তাঁর ধারণা, তিনি দীর্ঘদিন ফ্রিল্যান্সিংয়ের এই কাজ করতে পারবেন না। তাই পরিকল্পনা করছেন টাকা জমিয়ে কোনো ব্যবসা শুরুর, যেখানে আরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

বর্তমানে পরিবারের খরচের একটা বড় অংশ আসে ফাহিমুলের আয় থেকে। ছেলের উপার্জিত অর্থে ইতিমধ্যে শহরে চার শতক জমি কিনেছে পরিবার।

বাবা রেজাউল করিম বলেন, ২০০৮ সালের পর বড় পর্যায়ে আর কোনো চিকিৎসা হয়নি ফাহিমুলের। এত দিন অর্থাভাবে করতে পারেননি। এখন ফাহিমুল যেহেতু উপার্জন করছেন, তাই এ নিয়ে নতুন করে ভাবছেন।

ফাহিমুলের মা হাজেরা খাতুন জানান, ছেলে রাত জেগে কাজ করে। তাঁর কাছে থাকতে হয়। খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে তাঁকে সব কাজে সহায়তা করতে হয়।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের কয়েকটি গ্রুপে মডারেটর হিসেবে আছেন ফাহিমুল। মাগুরাসহ দেশের অনেকে জায়গা থেকে অনেকেই তাঁর কাছে পরামর্শ চান।

ফাহিমুল জানান, ফ্রিল্যান্সার হতে হলে প্রচুর ধৈর্যের প্রয়োজন। এ কারণে অনেক তরুণ কাজ শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেন না। ফ্রিল্যান্সিংয়ে ইংরেজি জানা জরুরি। তিনি বিভিন্ন ইংরেজি সিনেমা, শো ইত্যাদি দেখাসহ নানাভাবে ইংরেজি শিখেছেন। বায়ারদের সঙ্গে কথা বলতে প্রথম প্রথম সমস্যা হতো। এখন অনেকটা আয়ত্তে এসে গেছে।

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নিজেকে প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করা জরুরি বলে মনে করেন ফাহিমুল। তাই তিনি প্রতিদিনই নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করেন।

ফাহিমুলের মতো যাঁরা জীবনসংগ্রামী, তাঁদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কখনো ভাববেন না যে আপনি দুর্বল। কখনোই ভেঙে পড়া যাবে না। আমি কখনো নিজেকে দুর্বল ভাবি না৷ অন্য মানুষের মতোই নিজেকে মনে করি। পরিবারের জন্য উপার্জন করতে হবে ভেবেই কাজ করি।’

11
গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের নামটা অনেকেই জানেন সেই "ইউরেকা ইউরেকা" কথাটা মানে "আমি পেয়েছি" এর সুবাদে। রাজার মুকুটের ভেজাল ধরতে পারার কায়দাটা বের করে উত্তেজনার চোটে গোসল করা বাদ দিয়ে আর্কিমিডিস কাপড় চোপড় না পরেই রাস্তায় দৌড়ে বেরিয়ে গেছিলেন ইউরেকা বলতে বলতে। কিন্তু আর্কিমিডিসের অন্যান্য অনেক আবিষ্কারও আসলে বেশ ইন্টারেস্টিং। এর মাঝে আছে তাপ রশ্মি।

সাইন্স ফিকশন মুভ্যি যেমন স্টার ট্রেক বা স্টার ওয়ার্স দেখেছেন? ঐ যে, স্পেস শিপ থেকে লেজার কামানের মারণ রশ্মি ছুটে আঘাত করছে শত্রুর জাহাজে? মজার ব্যাপার হলো আজ থেকে দুই হাজারের বেশি বছর আগে আর্কিমিডিস খুব সহজ উপায়ে আর প্রতিদিনের ব্যবহার্য একটা জিনিষকে কাজে লাগিয়ে বানিয়ে ছিলেন ভয়াবহ মারণ তাপ রশ্মি -- বহু দূর থেকে তাপের হলকায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন আক্রমণকারী রোমান বাহিনীর জাহাজে।

আর্কিমিডিসের বাড়ি গ্রিসের সিরাকিউজে, সেখানে হামলা চালাতে আসে রোমান সৈন্যরা। খ্রিস্টপূর্ব ২১০-২১২ সালের কথা। জাহাজের পর জাহাজ নিয়ে করছে হামলা। দুর্বল রাজ্য সিরাকিউজের সবাই দ্বারস্ত হলো আর্কিমিডিসের। কোনো ভাবে কি আর্কিমিডিস রোমান জাহাজগুলোকে পারবেন ঠেকাতে?

আর্কিমিডিসের মাথায় খেলে গেলো দারুণ একটা বুদ্ধি। আর কিছু না, লাগবে তাঁর আয়না। একটা দুইটা না, অনেকগুলো। খটখটে রোদেলা এক দিনে আয়না হাতে দাঁড় করিয়ে দিলেন অনেকজন সহকারীকে। আয়নাগুলো বড়সড়। কিছু দূরে যেই না রোমান একটা জাহাজ এলো, আর যায় কোথায়, সবাই মিলে আয়নাটা তাক করলো এমনভাবে, সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে যাতে পড়ে সেই জাহাজের মাস্তুলের একটা জায়গাতে। আয়না একটা হলে প্রতিফলিত আলোয় তাপের পরিমাণ কমই হতো, কিন্তু এতোগুলো আয়নার সমবেত শক্তি কম না, মুহূর্তের মধ্যে সেই জায়গাটার তাপমাত্রা দাঁড়ালো কয়েকশ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দাউ দাউ করে ধরে গেলো আগুণ। রোমানরা তো গেলো ভড়কে, কী এমন অদ্ভুত শক্তি নিয়ে বসে আছে সিরাকিউজের লোকজন, দূর থেকে ধরাচ্ছে আগুন? বেশ কয়েকটা জাহাজ হারিয়ে তারা শেষমেশ বিরতি দিলো আপাতত। যদিও দুই বছরের অবরোধ শেষে তারা ঠিকই এক সময়ে সিরাকিউজ জয় করে নেয়।

(আর্কিমিডিসের এই আবিষ্কারের গল্পটা কি সত্যি? কাঠে আগুন ধরাতে হলে লাগে অন্তত ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, রোদের আলো প্রতিফলিত করে সেটা করা সম্ভব? জনপ্রিয় টিভি সিরিজ মিথবাস্টারে এটা করার চেষ্টা করতে গিয়ে সফল হয়নি, কিন্তু ২০০৫ সালে MIT এর একদল ছাত্র অনেকগুলো আয়না বসিয়ে ঠিকই দূর থেকে কাঠের জাহাজে আগুন লাগাতে সক্ষম হয়, কাজেই ব্যাপারটা কারিগরিভাবে সম্ভব বটে)।

নিজের শহরকে বাঁচাতে আর্কিমিডিস এরকম আরো অনেক আবিষ্কার করেছিলেন, কিন্তু তাঁর মন পড়ে থাকতো জ্যামিতি আর গণিতে। জীবনের শেষ দিনটিতে আর্কিমিডিস বালির উপরে বৃত্ত্বের চিত্র এঁকে একটি জ্যামিতিক সমস্যা নিয়ে গভীর চিন্তায় ছিলেন মগ্ন। হঠাৎ সামনে পড়লো কারো ছায়া। রোমান এক সৈন্য তরবারী হাতে এসেছে। রোমান সেনাপতি মার্সেলাস আর্কিমিডিসের নাম জানতেন, সম্মানও করতেন। তাই সৈন্যদের প্রতি আদেশ ছিলো আর্কিমিডিসকে মার্সেলাসের দরবারে নিয়ে আসার। সৈন্যটি আর্কিমিডিসকে যাবার জন্য তৈরী হতে আদেশ দিলে আর্কিমিডিস বললেন, Nōlī turbāre circulōs meōs! অর্থাৎ "আমার বৃত্তগুলোকে নষ্ট করো না, আমি চিন্তা করছি"! হৃদয়হীন রোমান সৈন্যটির খুব রাগ হলো, কতো বড় সাহস এই আধ পাগল গ্রিক লোকটার, সেনাপতির আদেশ অমান্য করছে বালির উপরে আঁকিবুকির জন্য! তরবারির এক আঘাতে হলো আর্কিমিডিসের জীবনাবসান, ৭৫ বছর বয়সে জ্যামিতির সেই সমস্যটির কথা ভাবতে ভাবতে। সেনাপতি মার্সেলাস পরে এই ঘটনার কথা জানতে পেরে খুব মন খারাপ করেন, আর্কিমিডিস ছিলো তাঁর মতে জ্যামিতির জগতের দেবতুল্য প্রতিভা।

সিরাকিউজেই হয় আর্কিমিডিসের সমাধি, স্মৃতিফলক হিসাবে তাঁর প্রিয় জ্যামিতিক সমস্যা -- সিলিন্ডার আর বৃত্তের চিত্র আঁকা ছিলো পাথরে। কালের স্রোতধারায় সেই সমাধিটি গেছে হারিয়ে, কিন্তু ইউরেকা ইউরেকা বলা সেই প্রতিভাধর বিজ্ঞানীর কথা আমরা আজও মনে করছি ২২০০ বছর পরে। আরো বহুদিন মনে করবো।

12
আপনি কি উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় গ্রাড স্কুলে ভর্তি হতে চান? কিন্তু ফান্ডিং জোগাড় হয়নি/এসিস্টেন্টশিপ পাননি/টাকা নাই? তাহলে এই লেখাটা আপনার জন্য। (হাতি পোস্ট হলেও কষ্ট করে একটু পড়ে নিন ও জনস্বার্থে লেখাটা ভর্তিচ্ছুদের পড়ান।)

“আমার পরিবারের সামর্থ নাই ফান্ডিং ছাড়া পড়ার”

“আমি অমুক জায়গায় ফান্ড পাই নাই, তাই তাদের ভর্তির অফার নিতে পারি নাই।”

এই কথাগুলা কি চেনা চেনা লাগে?

আপনি নিজেই কি বলছেন এসব কথা?

বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিবারের ক্ষেত্রেই প্রথম কথাটা প্রযোজ্য, বাপের টাকায় বিদেশে টিউশন ফি দিয়ে পড়ার সামর্থ খুব কম মানুষেরই আছে। তাই উচ্চ শিক্ষার্থে মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ে পড়ার জন্য সবাই ফান্ডিং খোজে, যা ফেলোশীপ, রিসার্চ এসিস্টেন্টশীপ, কিংবা টিচিং এসিস্টেন্টশীপের মাধ্যমে আসে। কিন্তু সেগুলা পাওয়া সম্ভব একাডেমিক বা রিসার্চের ফল ভালো হলে। এর কারণে সবাই সেভাবে ফান্ডিং পান না। ফান্ডিং ছাড়া মাস্টার্সে ভর্তির অফার বা আই-টুয়েন্টি সহজেই মিলে। কিন্তু ফান্ডিং ছাড়া সেই অফার গ্রহণ করতে আগ্রহী হন না বাংলাদেশের অধিকাংশই। আমার কর্মস্থল ইউনিভার্সিটি অফ আলাবামা অ্যাট বার্মিংহাম এ কম্পিউটার সাইন্সে মাস্টার্সে এরকম প্রচুর আনফান্ডেড এডমিশন দেই আমরা, এর মাঝে বাংলাদেশের অনেকেই থাকেন, কিন্তু অন্যদেশীয়রা এসে গেলেও বাংলাদেশ থেকে কেউ অফার নেননা, এমনকি অন্যত্র ভর্তির আমন্ত্রণ না থাকলেও।

আমি বলবো, এটা বড় রকমের বোকামি। ফান্ডিং না পেলে পড়বেনই না?

~ ফান্ডিং ছাড়াই উচ্চশিক্ষার উপায় ~

কেনো?

কারণ পড়ার খরচ জোগাড়ের অজস্র তরিকা আছে, যা অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা ভালো করেই জানে এবং তা প্রয়োগ করে দিব্যি মাস্টার্সের খরচ বের করে ফেলছে।

আমি মাস্টার্স/পিএইচডি লেভেলের একটা ক্লাস পড়াই। রিসার্চ কোর্স বলে সেখানে সাধারণত ১৫ জন শিক্ষার্থী হতো, কিন্তু গত বছর দুয়েক ধরে বিপুল সংখ্যক মাস্টার্স লেভেলের বিদেশী শিক্ষার্থী আসছে, ফলে সেই ক্লাসে জায়গাই মেলেনা। অধিকাংশ শিক্ষার্থী আসছে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, কিংবা চীন থেকে।

কীভাবে?

প্রথাগত ফান্ডিং সোর্সের যেমন টিএ আরএ এর বাইরেও যে কোনো ক্যাম্পাসে অনেক কাজের সুযোগ থাকে। হতে পারে সেটা অন্য কোনো বিভাগের কোনো প্রফেসরের অধীনে রিসার্চ এসিস্টেন্টের কাজ। উদাহরণ স্বরূপ বলি, আমার পরিচিত একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স করতো, কিন্তু রিসার্চ এসিস্টেন্ট ছিলো মেডিকাল স্কুলের এক প্রফেসরের সাথে, কারণ সেই প্রফেসরের কিছু সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট জাতীয় কাজ ছিলো এক প্রজেক্টে।
আবার অনেক সময়ে ঘণ্টা হিসাবে নানা কাজ করা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই। আমার এক ইরানী ছাত্র ছিলো, মাস্টার্স করছে। তার কোনো ফান্ডিং ছিলো না, মাস খানেক ধরে আমার পিছনে ঘুরেছে, শেষমেশ তাকে ডিপার্টমেন্টের সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের অধীনে একটা প্রজেক্টে মোবাইল এপ ডেভেলপারের কাজ জুটিয়ে দিলাম, মাসে তার আয় দাঁড়ালো বারশ ডলারের মতো। পুরাপুরি ফান্ড না হলেও কিন্তু তার অনেক খানি খরচ জোগাড় হলো। আর এর পাশাপাশি একটা ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে পার্ট টাইম চাকুরি জোগাড় করেছিলো, আয় হয়েছে ভালোই, টিউশন কাভার করে থাকা খাওয়ার খরচ মিটে গেছে। বছর দুয়েক কষ্ট করে মাস্টার্স শেষ করে ফেলেছে, এই সময়ের মধ্যেই তার পকেট থেকে যা খরচ হয়েছে সবটা তুলে ফেলতে পারবে মনে হয়।

আর অনেক ডিপার্টমেন্টই ফান্ডিং না দিলেও টিউশন মাফ করা (ওয়েইভার) অথবা ইন-স্টেট টিউশন দিতে পারে। আমার কর্মস্থলে ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামা অ্যাট বার্মিংহাম এ কম্পিউটার বিজ্ঞানে মাস্টার্সে ফান্ড না দিলেও ৫-৬ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে টিউশন মাফ কিংবা কম টিউশনের সুবিধা দেয়া হয়। ফলে প্রতি সেমিস্টারে পড়ার খরচ কমে দাঁড়ায় ৩-৪ হাজার ডলারের মতো, যা পার্ট টাইম চাকুরি থেকে মেটানো সম্ভব। আমার দুঃখ লাগে যখন দেখি, অনেক বাংলাদেশী ছাত্রই ফান্ডিং না পেলে আসবেই না এই গোঁ ধরে বসে থাকে, আর সেখানে ভারত, নেপাল। ইরান, চীনের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে ক্যাম্পাসে হাজির হলেই কাজ একটা জোগাড় হবে, এই বিশ্বাসে চলে আসে, পেয়েও যায় কাজ/ফান্ডিং।

আমার লেখাগুলা পড়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, সেলফ ফান্ডিং এ ভর্তি হলেও ভিসা মেলে না। এই যুক্তি কিন্তু অন্যান্য দেশের জন্যও প্রযোজ্য। ভারত বা পাকিস্তানী শিক্ষার্থীদের জন্য যে পরিমাণ এডমিশন দেয়ায় হয় তাদের সবাই ভিসা পায়না বটে। কিন্তু অনেকেই পায়। আর বাংলাদেশী প্রচুর শিক্ষার্থীকেও আমার ইউনিভার্সিটিতেও দেখেছি সেলফ ফান্ডিং এ ভিসা নিয়ে আসতে। কাজেই "ভিসা পাবো না" এইটাকে অবধারিত ধরে নেয়া এবং এরকম যারা বলছে তাদের কথা বিশ্বাস করাটাও বোকামির মাঝেই পড়ে। চেষ্টা না করলে জানবেন কী করে?

তাই এই গোঁ ধরে বসে থাকা বাদ দেন … ফান্ডিং শুরুতে সরাসরি না পেলেও পরে অবশ্যই পাওয়া যায়, সেটা বিশ্বাস করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য উদ্যম আর সদিচ্ছা থাকলে ফান্ডিং এক সময়ে জোগাড় হবেই।

13
আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা -- মাস্টার্স করবেন নাকি পিএইচডি? ~

আপনি কি উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় গ্রাড স্কুলে ভর্তি হতে চান? কিন্তু বুঝতে পারছেন না মাস্টার্সে যাবেন না পিএইচডিতে? তাহলে এই লেখাটা আপনার জন্য। (হাতি পোস্ট হলেও কষ্ট করে একটু পড়ে নিন ও জনস্বার্থে লেখাটা ভর্তিচ্ছুদের পড়ান।)

[মূল লেখাটি ২০১০ সালে লিখেছিলাম। সাত বছর পর ভর্তি প্রক্রিয়ার প্রশাসনিক দিকের সাথে সরাসরি জড়িত হয়ে আরো কিছু যোগ করার ইচ্ছা হলো। মাত্রই মাস্টার্স এডমিশন এপ্লিকেশনগুলা রিভিউ করে সিদ্ধান্ত দিলাম, তাই ভাবলাম লেখাটা একটু হালনাগাদ করা যাক]

মার্কিন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাইরেক্ট পিএইচডি করার সুযোগ আছে। অর্থাৎ, বিএসসি ডিগ্রিধারীরা সরাসরি পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ পান। বাংলাদেশে অনেকের মাঝে একটা ভুল ধারণা দেখেছি -- পিএইচডি করতে গেলে আগে মাস্টার্স থাকা প্রয়োজন। অন্তত মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা ঠিক না -- সুযোগ্য প্রার্থীদের সরাসরি পিএইচডিতে ভর্তি করা হয়। আর পিএইচডি করতে করতে মাস্টার্স ডিগ্রিটা নেয়া বা না নেয়া অনেক জায়গাতেই ছাত্রের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে। যেমন, আমার গ্র্যাড স্কুল ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স করতে হলে ৬টা কোর্স আর থিসিস লিখতে হতো। অনেক জায়গায় আবার ৬/৭টা কোর্স করলেই মাস্টার্স নেয়ার সুযোগ আছে।

আমি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামা অ্যাট বার্মিংহাম এর কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে সহযোগী অধ্যাপনার কাজ করছি, এই সেমিস্টারে গ্রাজুয়েট ভর্তি প্রক্রিয়ার সাথে ভালো ভাবে জড়িত আছি। আমার বিভাগে মাস্টার্স করতে মোট ৩০ ক্রেডিট কোর্সওয়ার্ক লাগে, অথবা কিছু কম কোর্স কিন্তু থিসিস অপশনও আছে। গতবছর থেকে প্রতি সেমিস্টারে অন্তত ৩০-৫০ জন নতুন ভারতীয়/চীনা/পাকিস্তানী/নেপালী শিক্ষার্থী আসছে মাস্টার্সে, সেটা নিয়ে একটু পরেই লিখছি, আগে দেখা যাক, মাস্টার্স আর পিএইচডির মধ্যে সুবিধা অসুবিধা কেমন।

১) ফান্ডিং

মাস্টার্স পর্যায়ে ফান্ড পাওয়াটা বেশ কঠিন। মার্কিন অর্থনীতির এই দুর্দিনে মাস্টার্স পর্যায়ের ফান্ড প্রায় গায়েব হয়ে গেছে। কাজেই মাস্টার্সে ভর্তি হলে অন্তত ১ম সেমিস্টারে ফান্ড পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। সেক্ষেত্রে টিউশন ফি দিয়ে পড়তে হবে, যা অনেক ক্ষেত্রেই নাগালের বাইরের পর্যায়ে। তবে কিছু "কিন্তু" আছে এই জায়গাটায়।

স্টেইট ইউনিভার্সিটি, অর্থাৎ রাজ্য সরকারের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন কম। যেমন, ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ে এক সেমিস্টারে খরচ পড়ে প্রায় ৩ থেকে ৬ হাজার ডলার, তবে বিদেশী ছাত্রদের জন্য বেশি চার্জ সহ মোট ফি প্রায় ১০/১২ হাজার ডলারের মতো। আর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেই ফি এর পরিমাণ বেড়ে যাবে অনেকখানি। আমার এক সময়ের কর্মস্থল জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব দিতে পারি, এখানে মাস্টার্স পর্যায়ে প্রতি সেমিস্টারের ফি প্রায় ২২ থেকে ২৫ হাজার ডলার। তবে অনেক জায়গায় বিশেষ করে আমেরিকার দক্ষিণের দিকে টিউশন ফি অনেক কম। আমার এখনকার কর্মস্থল ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামাতে প্রতি সেমিস্টারে আউট অফ স্টেট ফি ৯ হাজার ডলারের মতো। মোট ৩ সেমিস্টারে মাস্টার্সের কাজ সারতে পারলে মোট খরচ আসলে ৩০ হাজারের নিচেই পড়বে।

মাস্টার্সে ১ম সেমিস্টারে ভালো কাজ দেখিয়ে প্রফেসরের কাছ থেকে রিসার্চ অ্যাসিস্টান্টশিপ (আরএ) যোগাড় করতে পারলে টিউশন মাফ হতে পারে, আর বেতনও পাওয়া যেতে পারে। আবার ফান্ডিং না পেলেও ক্যাম্পাসে এটাসেটা কাজ করে অনেকেই কিছুটা কাজ চালিয়ে নিচ্ছে দেখেছি।

পক্ষান্তরে, পিএইচডিতে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই ফান্ড দেয়া হয়, টিচিং/রিসার্চ অ্যাসিস্টান্টশীপ বা ফেলোশীপের মাধ্যমে। এর সাথে টিউশন ফীও মাফ করা হয়। যা বেতন দেয়া হয়, তা খুব বেশি না, তবে এদিক সেদিক করে বিদেশী ছাত্ররা ভালোই থাকতে পারে।

মাস্টার্সে ফান্ড দেয়া কম হয় বলে ভর্তির কড়াকড়িও কম, অ্যাডমিশন পাওয়া সহজ। মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে আমরা জিআরই চাই না ইউএবিতে, আবার টোফেলও মোটামুটি হলেই চলে। পক্ষান্তরে পিএইচডির অ্যাডমিশন পাওয়াটা কঠিন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই কয়েকশ মাস্টার্স ছাত্র থাকে, কিন্তু পিএইচডি ছাত্র নেয়া হয় জনা দশেক/বিশেক প্রতি বছরে।

(ইদানিং আমার ইউনিভার্সিটি (UAB) এ প্রচুর এশিয়ার ছাত্র আসছে, তাদের কেউ ফান্ড নিয়ে আসে নাই। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বোকামি নিয়ে আমার আক্ষেপের অন্ত নাই, বাংলাদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই ভারতীয়/চীনা/পাকিস্তানী শিক্ষার্থীদের সমান বা অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো বেশি মেধাবী, কিন্তু ফান্ডিং না পেলে পড়বো না এই গোঁ ধরে থাকায় তারা দেশেই পড়ে আছে, যেখানে বাকি দেশের ছেলেপেলে দেড় বছরে মাস্টার্স সেরে ফেলে চাকুরিতে ঢুকে যাচ্ছে অনায়াসে। এরা ফান্ড পায় কৈ? তা নিয়ে আরেকদিন লিখবো, আসল ঘটনা হলো এরা এক সেমিস্টারের খরচ যোগাড় করে এসে পড়ে, কারণ জানা কথা একবার এসে পড়তে পারলে এটা সেটা করে ফান্ডিং মিলবেই।)

২) সময়

মাস্টার্সে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই বছর। আর পিএইচডিতে জায়গা ভেদে ৫ থেকে ৭ বছর (যদিও UABতে আমার অধীনে কাজ করা আমার দুই তুখোড় ছাত্র সরাসরি পৌনে চার বছরে পিএইচডি করেছে বটে, তবে তারা ব্যতিক্রম)। কাজেই ভেবে নিন, আপনার হাতে এতোটা সময় আছে কি না। জব মার্কেটের অবস্থা পাল্টায় নিয়মিত। আর বিষয়ও পাল্টে যায় -- আজ যে বিষয়টি একেবারে হট টপিক, ৫ বছর পরে সেটার কথা ভুলে যেতে পারে সবাই।

(নতুন যোগ করি, আমার ৬ বছরের অধ্যাপনা জীবনে দেখলাম, উদ্যমী ছেলেপেলে দেড় বছরে মাস্টার্স শেষ করে ফেলছে। আজকে এক ভারতীয় ছাত্রের সাথে কথা হলো, সে ২০১৬ এর ফল সেমিস্টারে শুরু করেছিলো। এখন জানালো তার এই সেমিস্টারেই মাস্টার্সের কোর্সওয়ার্ক শেষ, এখন চাকুরি খুঁজছে। বলাই বাহুল্য, কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসাবে চাকুরি এটা হোক সেটা হোক সে পেয়ে যাবে অচিরেই। দেড় বছরের মধ্যে ডিগ্রি সহ প্রতিষ্ঠা। এই ব্যাপারটা অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যদি আপনার একাডেমিয়াতে যাবার ইচ্ছা না থাকে, লক্ষ্য যদি হয় ইন্ডাস্ট্রির চাকুরি, তাহলে মাস্টার্স করাই ভালো। দুই ডিগ্রির মাঝে সময়ের পার্থক্য ৩ থেকে ৬ বছর। যদি পাস করে কোনো কোম্পানিতেই যোগ দেন এন্ট্রি লেভেলে, পিএইচডি অতিরিক্ত খুব একটা কাজ দেবে না, বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া (আর অ্যান্ড ডি ল্যাব, রিসার্চ ল্যাব ইত্যাদি বাদে)। কাজেই কেবল ডক্টর তকমা লাগাবার এই সময়টা ছাত্রবেতনে কাটিয়ে পরিবারপরিজন ও নিজেকে অর্থকষ্টে রাখার মানেই হয় না। বিশেষ করে যখন দেখবেন আপনি ৬/৭ বছর পিএইচডি করে দারিদ্রসীমার নীচে বৌবাচ্চাদের রাখছেন যেখানে আপনার পাশের অনেকেই বুদ্ধি করে মাস্টার্স নিয়ে সম্মানজনক বেতনের চাকুরিতে আছে দুই বছরের মাথায়।)

৩) খাটুনি

মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ের খাটুনির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। মাস্টার্সের কোর্স রিকয়ারমেন্ট পিএইচডির প্রায় অর্ধেক, আর থিসিসের পার্থক্যও বিশাল। মাস্টার্সের থিসিস প্রায় ক্ষেত্রেই একটি মাত্র প্রজেক্ট নির্ভর, যেখানে পিএইচডি থিসিসে একাধিক রিসার্চ পেপারের কাজ নিয়ে বেশ বড় আকারের কাজ করতে হয়। এক সেমিস্টার খেটেই এক্সপেরিমেন্ট সহ মাস্টার্স থিসিস অনেকে লিখে ফেলে, যেখানে পিএইচডির গবেষণা শেষ হবার পরে থিসিস লিখতেই অনেকের এর চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে। আবার অধিকাংশ মাস্টার্স প্রোগ্রামেই নন থিসিস অপশন থাকে। আমার ইউনিভার্সিটিতে (UAB) সেটাই প্রায় সবাই করে।

কাজেই কয়েক বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করার মতো উদ্যম বজায় রাখতে পারবেন কি না, সেটা আগেই ভেবে দেখুন। সেশন জটের কল্যাণে বাংলাদেশ থেকে আসা গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টরা অনেকেই ২৫+ বয়সের, পিএইচডি করতে করতে ৩০-৩৩+ হয়ে যায়, সেই বয়সে পড়া/পরীক্ষা দেয়ার মতো তেজ আছে/থাকবে কি আপনার? হয়তো আছে, তবে অনেকেরই আর উদ্যমটা থাকে না।

৪) চাকুরি

আপনার লক্ষ্য যদি হয় কোনো মার্কিন কোম্পানিতে চাকুরি পাওয়া, তাহলে তার জন্য মাস্টার্স করাই যথেষ্ট। অধিকাংশ চাকুরির জন্য মাস্টার্স ডিগ্রি হলেই চলে। আর ২ বছর পড়েই চাকুরির বাজারে ঢুকতে পারছেন, যা বড় একটা সুবিধা।

অনেক চাকুরিতেই পিএইচডি থাকাটা কোনো অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসাবে ধরা হয় না। উদাহরণ দেই - গুগলে বিএসসি, মাস্টার্স, বা পিএইচডি সব রকমের লোকজনই নেয়া হয়। মাস্টার্সের চাইতে পিএইচডিতে ৩ থেকে ৪ বছর সময় বেশি লাগে। কাজেই আজ যিনি মাস্টার্স নিয়েই ঢুকছেন সেখানে, ৩/৪ বছর পরে স্টক অপশন, বেতন, আর বোনাস সব মিলে কয়েক মিলিয়ন ডলার এগিয়ে থাকবেন। অধিকাংশ টেক কোম্পানিতেই পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে শুরুতে অল্প একটু বেশি বেতন থাকে, কিন্তু ৩/৪ বছর আগে যোগ দেয়া মাস্টার্স ডিগ্রিধারীরা সেই সময়টাতে তার চেয়ে অনেক বেশিই সুবিধা পেয়ে গেছে। গুগলে যখন ইন্টার্নশীপ করতাম, তখন অনেক গ্রুপের ম্যানেজারকে দেখেছি মাস্টার্স বা ব্যাচেলর্স করা, যেখানে তাদের অধীনে কাজ করা অনেকেই আবার পিএইচডি করা। কাজেই চাকুরির বাজারের অনেক জায়গাতেই পিএইচডি বা মাস্টার্সের কোনো পার্থক্য নেই।

হাতে নাতে দেখা কিছু উদাহরণ দেই, গুগলে দেড় বছরে মাস্টার্স পাশ করেও অনেকে ঢোকে (আমার ছাত্রই ঢুকেছে), আবার নামকরা টপ ইউনি থেকে ৭ বছরে পিএইচডি করেও ঢোকে, তাদের এন্ট্রি লেভেলের পজিশনে বেতনের পার্থক্য বছরে মাত্র ১০-১৫ হাজার ডলার মাত্র। আর ঢোকার পর দেখা যাবে বস হয়তো কেবল ব্যাচেলর্স করা বা মাস্টার্স করা, পিএইচডি করার কারণে অতিরিক্ত সম্মান/সুবিধা অধিকাংশ কোম্পানিতেই নাই।

অবশ্য একাডেমিক ও রিসার্চ লাইনে আবার পিএইচডি অপরিহার্য। কাজেই আপনার লক্ষ্য যদি হয় একাডেমিক বা রিসার্চ লাইনে থাকা, সেক্ষেত্রে পিএইচডি করতেই হবে

তাহলে কী জিনিষ বিবেচনা করবেন????

- আপনার মূল লক্ষ্য কী -- রিসার্চ/একাডেমিক লাইন, নাকি চাকুরি? (প্রফেসর হতে চাইলে পিএইচডি করেন, নাইলে সময় নষ্ট না করে মাস্টার্সে যান)

- ফান্ড পাবেন কি পাবেন না? ফান্ড না পেলে টিউশন ফি অন্তত ১ম সেমিস্টারে দিতে পারবেন কি?

- ৫/৬ বছর আরো পড়ার ধৈর্য্য আছে কি? বয়স আছে কি? (নাকি দেড়-দুই বছরে মাস্টার্স করে কাজে নামতে চান?)

সব বিচার করে বেছে নিন, পিএইচডি নাকি মাস্টার্স, কোনটিতে আবেদন করবেন। উল্লেখ্য, একবার একটা বেছে নিলে অন্যটাতে যেতে পারবেন না, তা কিন্তু না। দরকার হলে পরেও প্রোগ্রাম পাল্টানো যায়, যদিও সেটা সময়সাপেক্ষ।

সংগৃহীত রাগিব হাসান

Pages: [1]