Daffodil International University

Faculty of Humanities and Social Science => Development Studies => Teaching and Learning => Topic started by: sisyphus on February 19, 2020, 12:08:27 PM

Title: শিক্ষকতায় প্রযুক্তি - প্রযুক্তিময়তায় শিক্ষক
Post by: sisyphus on February 19, 2020, 12:08:27 PM
২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস। সদ্য ঢাবি থেকে মাস্টার্স পাস করে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছি। শিক্ষক হতে পারার স্বপ্নপূরণে আমি আনন্দে আটখানা। সে আনন্দের জোয়ারে ভাটা হয়ে আসলো জানুয়ারী থেকে মার্চ- তিনমাসের লাগাতার অবরোধ। আমরা শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে শুক্রবার বাদে সপ্তাহের অন্য দিনগুলায় ক্লাস নেয়া থেকে বিরত থাকলাম। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের বিরতীর সময়টুকু বাদে সকাল-সন্ধা একটানা পাঁচটা করে ক্লাস নিতে শুরু করলাম। তবু সপ্তাহের ছয়ঘন্টার ক্লাস কি আর দুইঘন্টায় নেয়া সম্ভব? বিকল্প একটা কিছু খোঁজা শুরু করলাম- খোঁজ দ্য সার্চ!

সিএসই বিভাগীয় প্রধান আখতার স্যারের থেকে প্রথম শুনলাম গুগল ক্লাসরুম নামের এক ভার্চুয়াল প্লাটফর্মের কথা। অতঃপর ফুয়াদ স্যার ( Md Fouad Hossain Sarker ) থেকে গুগল ক্লাসরুম ব্যবহারের হাতেখড়ি। পরের সপ্তাহ থেকে শুরু হলো আমার অনলাইন দুনিয়ার প্রথম ভার্চুয়াল/লাইভ ক্লাস নেয়া। একসাথে তিন সেকশনের শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে মিশন ইম্পসিবল। লাইভ কথোপোকথনে প্রতি দেড়ঘন্টার ক্লাসে কীবোর্ডে রীতিমত ঊঁড়ে বেরিয়েছি আমি আর আমার ছাত্রছাত্রীরা। ফলাফল? - প্রতিক্লাসে গড়ে ৩০০টির বেশী কমেন্ট; যার প্রায় ৮০ শতাংশই আমার আর আমার ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন-উত্তরের খেলা। নতুন উপায়ে, নতুন কিছু জানতে চাওয়া ও জানানোর আকুতি। ক্লাসের বাইরে ক্লাস। সে এক বিরল, বিচিত্র অভিজ্ঞতা!

জানুয়ারি ২০১৯-এ খেলাচ্ছলে কুইজ নেয়ার জন্য  Kahoot টুলটার খোঁজ প্রথম পাই সহকর্মী ও বড়বোন সুবহেনূর আপুর (Subhenur Latif) কাছ থেকে। কিন্তু কিছু টেকনিক্যাল অসুবিধা হতে পারে ভেবে কাহুট ব্যবহারের সাহস পাচ্ছিলাম না। তবু একদিন উত্তরা ক্যাম্পাসের বিবিএ প্রোগ্রামের ছাত্রছাত্রীদের কাহুটে একটা ডেমো কুইজ নিই। ব্যাস, এরপর থেকে  ওদের কাহুট চাই-ই চাই। ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দেখে আমার নিজের উৎসাহ বেড়ে গেল। পরের সেমিস্টার থেকে নিজের বিভাগ ডেভোলপমেন্ট স্ট্যাডিজ মাস্টার্স প্রোগ্রামে নিয়মিত কাহুট ব্যবহার শুরু করি। ল্যাপটপে আমার কাহুটে কুইজ বানানো দেখে ফুয়াদ স্যারও টুলটার ব্যবহার শুরু করলেন অন্য আরেক ডিপার্টমেন্টে। গত তিন সেমিস্টার ধরে চলছে এ চর্চা। শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষা নামক বিভীষিকাময় ব্যাপারটা এত আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে সেটা কে জানত!
আমাকে নিয়ে আমার ছাত্রছাত্রীদের সত্য অনুভূতিগুলো বরাবরই জানার ইচ্ছা ছিল। Padlet টুলের মাধ্যমে তাদের ফিডব্যাক নেয়ার আইডিয়াটা সহকর্মী সাইফুল ইসলাম (Saiful Islam) থেকে ধার করলাম। শিক্ষক হিসেবে আমাকে নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আনন্দ-বেদনা/ অভিযোগ-অনুযোগ/ সন্তোষ-অসন্তোষ/ মূল্যায়ন/উপদেশ ইত্যাদি লিখে বেনামী চিরকুট/খোলাচিঠি পাঠাতে একটা Padlet খুলে দিলাম। চমৎকার এই খোলা দেয়ালটি হয়ে উঠলো মনের কথা জোরে বলার যেন এক বিশাল ক্যানভাস। ওখানটায় গত দুইবছর ধরে আমার ছাত্রছাত্রীরা তাদের সব না বলা কথাগুলো লিখে যাচ্ছে। নিজ ডিপার্টমেন্টের কয়েক সহকর্মীর সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করেছিলাম। তাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে আগ্রহী হয়ে খুলে ফেলেছেন তাদের নিজস্ব প্যাডলেট। এই করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর দূরত্ব-নৈকট্য আর সম্পর্কের অনন্য রসায়ন আরও  রসময়, আরও অসাধারণ হয়ে উঠছে কি?

ইউটিউবে লাইভ ক্লাস নেয়া শুরু করেছি গত দুই সেমিস্টার হল। যতটা না প্রয়োজনের তাগিদে তারচাইতে বেশী নতুন কোনভাবে শিক্ষকতার তাড়না থেকে। আমার ছাত্রছাত্রীরা বরাবরের মতই উৎসাহী ও উত্তেজিত। তবে মুশকিল হচ্ছে ইতিমধ্যে আমার জীবিত থেকে বিবাহিত জীবনে অবনতি ঘটেছে। বাসায় বসে “অফিসের কাজ” করছি বলে সবচেয়ে বড় আপত্তি যার কাছ থেকে আসার কথা (আমার বউ) সেই উলটো ওয়েবক্যাম সেটাপ, স্ক্রিন শেয়ারিং-এর মত খুটিনাটি কারিগরি বিষয়ে আমাকে সহায়তা করেছে। স্পষ্ট শব্দের জন্য আলাদা মাইক্রোফোন কেনা থেকে শুরু করে স্ট্রিমিং-বাফারিং, কমেন্ট টেস্টিং-এর মত হুলুস্থুল ব্যাপারে তার ধৈর্য ও আগ্রহ আমাকে মুগ্ধ করেছে। এ অনুপ্রেরণা তুলনাহীন। এ ব্যাপারে আমি অবশ্য বরাবরই সৌভাগ্যবান। শিক্ষকতায় আমার প্রয়াত বাবা, মমতাময়ী মা ও অসাধারণ বড়বোনদের অনুপ্ররণার ঘাটতি কোনকালেই ছিল না।  তাঁদের মাঝেমধ্যে  বলতে ইচ্ছা করে তোমাদের এ ভালবাসার যোগ্য আমি নই, আমি খুবই সামান্য একজন।  কিন্তু খুব নাটুকে শোনাবে বলে আর বলা হয়ে ওঠেনা।।
 8)
Title: Re: শিক্ষকতায় প্রযুক্তি - প্রযুক্তিময়তায় শিক্ষক
Post by: niamot.ds on March 15, 2020, 12:20:09 PM
অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল স্যার। এগিয়ে যান।