ইন্টারনেটের ব্যবহার শিশুদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি ঝুঁকিও বাড়ায়
(https://www.unicef.org/bangladesh/sites/unicef.org.bangladesh/files/styles/press_release_feature/public/UNI170298.JPG?itok=UQDEnK6n)
ইউনিসেফ আজ জানিয়েছে, প্রতিদিন ১ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি বা প্রতি আধা সেকেন্ডে একজন শিশু প্রথমবারের মতো অনলাইন জগতে প্রবেশ করে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থাটি সতর্ক করে জানিয়েছে, ডিজিটাল দুনিয়ায় এই প্রবেশ তাদের সামনে উপকার ও সুযোগের বিশাল দ্বার উন্মোচন করে। তবে একই সঙ্গে তাদের ঝুঁকি ও ক্ষতির মুখেও ফেলে, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষতিকর আধেয় (কনটেন্ট), যৌন হয়রানি ও শোষণ, সাইবার উৎপীড়ন ও তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার।
ইউনিসেফের ডাটা রিসার্চ ও পলিসি বিভাগের পরিচালক লরেন্স চ্যান্ডি বলেন, “প্রতিদিন হাজার হাজার শিশু প্রথমবারের মতো অনলাইনে যাচ্ছে, যা তাদের জন্য ব্যাপক বিপদের দ্বার উন্মুক্ত করে। অথচ বিপদগুলো চিহ্নিত করার বদলে আমরা কেবল মূল্যায়নই করে যাচ্ছি। অনলাইনে সবচেয়ে ভয়াবহ ঝুঁকিগুলো দূর করার জন্য নীতিমালা প্রণয়নে সরকার ও বেসরকারি খাতগুলো অবশ্য কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে শিশুদের অনলাইন জীবনকে সম্পূর্ণরূপে বুঝতে ও তা সুরক্ষিত করার জন্য আরো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একজন শিশু এবং বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি ২০১৭: ডিজিটাল বিশ্বে শিশুরা‘শীর্ষক প্রতিবেদনে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সে অনুযায়ী ডিজিটাল বিশ্বের ক্ষতির হাত থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখা, অনলাইনে তাদের কার্যক্রমের তথ্য নিরাপদ রাখা এবং তাদের জন্য নিরাপদ ও মানসম্মপন্ন আধেয় ব্যবহারের সুযোগ তৈরিতে খুব কম কাজই হয়েছে।
প্রতিবেদনটি স্পষ্ট করে দেয় যে, ডিজিটাল বিশ্বে শিশুদের সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব সরকার, পরিবার, স্কুল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সবার। এতে বলা হয়েছে, শিশুদের ওপর ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাবকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনতে বিশেষ করে প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ শিল্পে বেসরকারি খাতের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু এই দায়িত্ব কখনোই যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়নি। তাই তথ্য ও গোপনীয়তার বিষয়ে নৈতিক মানসহ অনলাইনে শিশুদের উপকারে আসে এবং তাদের সুরক্ষিত রাখে- এমন চর্চাগুলো বাড়াতে বেসরকারি খাতের শক্তি ও প্রভাবকে কাজে লাগাতে হবে।
নিম্নোক্ত উপায়ে শিশুদের ডিজিটাল পলিসির কেন্দ্রে রাখতে সরকার, সুশীল সমাজ, জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিশু সংগঠন এবং বিশেষভাবে বেসরকারি খাতের প্রতি নতুন করে জোরালো সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছে ইউনিসেফ:
১. বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের পদক্ষেপে সমন্বয় করা। গোপনে অবৈধ পাচার এবং অনলাইনে শিশুদের যৌন হয়রানির মতো অপরাধ সংঘটনে সক্ষমতা তৈরি করতে পারে- এমন ডিজিটাল প্রযুক্তির গতির সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য প্রযুক্তির নকশায় নিরাপত্তা নীতিমালার সন্নিবেশ ঘটাতে হবে। এক্ষেত্রে সমাধানের খোঁজে একত্রে কাজ করতে আমাদের নীতিমালা প্রণয়নকারী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রযুক্তি শিল্পের মধ্যে সহযোগিতা অবশ্যই গভীরতর করতে হবে।
২. শিশুদের গোপনীয়তাকে নিরাপদ রাখা। শিশুদের তথ্য সুরক্ষিত রাখা, এর অপব্যবহার না করা এবং এই গোপনীয়তাকে সম্মান জানানো; অনলাইন শিশুদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের পূর্ণ প্রয়োগ এবং নিজেদের গোপনীয় বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকে শিশুরা কীভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারে- সে বিষয়ে শেখানোর জন্য বেসরকারি খাত ও সরকারের আরো জোরালো প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।
৩. ডিজিটাল শিক্ষা ও এর আরো ন্যায়সঙ্গত ব্যবহারের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে অনলাইনে শিশুদের ক্ষমতায়ন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত আইসিটি প্ল্যাটফর্ম এবং পাঠ্যক্রম তৈরি; ডিজিটাল দক্ষতাসমূহ শেখাতে অনলাইন লাইব্রেরিগুলোকে সহায়তা প্রদান এবং পাবলিক লাইব্রেরিগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তিতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পেছনে বিনিয়োগ; অনলাইনে বিপদ এবং ভুল তথ্য চিহ্নিত করা এবং এগুলো থেকে নিজেদের কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যায় সে বিষয়ে শিশুদের শেখাতে হবে। তাছাড়া ডিজিটাল নাগরিকত্বকে ডিজিটাল শিক্ষা নির্দেশিকার একটি মূল উপাদানে পরিণত করতে সরকার ও প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতার ভিত্তিতে শিশুরা কীভাবে অনলাইনে নিজেদের অবগত, সম্পৃক্ত ও নিরাপদ রাখতে পারে সে বিষয়ে অবশ্যই তাদের শেখাতে হবে।
৪. বেসরকারি খাতের অনন্য ভূমিকাকে কাজে লাগানো। শিশুদের ঝুঁকি কমায় এমন নৈতিক পণ্য তৈরি ও বিপণনসহ অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষিত রাখে ও তাদের উপকারে আসে এমন তথ্য ও গোপনীয়তা বিষয়ে নৈতিকমান সম্পন্ন পণ্য তৈরি এবং তা প্রয়োগের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে।
৫. অনলাইনে শিশুদের সহজ প্রবেশ, সুযোগ ও ঝুঁকির পেছনের প্রমাণ বের করার জন্যে বিনিয়োগ আরও বাড়ান। অনলাইনে শিশুদের প্রবেশ ও তাদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমাদের আরো ভালো প্রমাণ প্রয়োজন, যাতে নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও নীতিমালা প্রণয়নে এগুলো আমরা কাজে লাগাতে পারি। পাশাপাশি সেগুলো যাতে শিশুদের স্বতন্ত্র চাহিদা ও অধিকারের স্বীকৃতি দেয়; ডিজিটাল বিশ্বের চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করতে বৈশ্বিক পর্যায়ে সমন্বয় ও জ্ঞানের আদান প্রদান জোরদার করে। একইসাথে ওইসব প্রমাণ যাতে শিশুবিষয়ক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা গভীর করে এবং নীতি ও আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে পদ্ধতিগতভাবে আরো সম্পৃক্ত করে।
চ্যান্ডি বলেন, “একটি লিংকে ক্লিক করতে যে সময় লাগে, সেই সময়ের মধ্যেই একটি শিশু তার ডিজিটাল পদচিহ্ন তৈরি করতে শুরু করে,যদিও ওইসব চিহ্ন সব সময় শিশুটির স্বার্থের জন্য সর্বোত্তম হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। ভাবা হয় না, শিশুরা ওই চিহ্ন অনুসরণ করতে পারে এবং এর অপব্যবহার হতে পারে।” তিনি আরো বলেন, ”যেহেতু আরও ছোট ছোট শিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করেছে, তাদের কীভাবে অনলাইনে নিরাপদ রাখা যায় এবং তাদের ডিজিটাল পদচারণা কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়; সে বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।”
Link: https://www.unicef.org/bangladesh/%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF/%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%B8%E0%A7%83%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%BF-%E0%A6%9D%E0%A7%81%E0%A6%81%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%93-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A7%9F