Daffodil International University

Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Rijik (রিজিক) => Topic started by: Khan Ehsanul Hoque on October 13, 2022, 09:58:31 AM

Title: সর্বোত্তম হালাল রিযিক পর্ব ২
Post by: Khan Ehsanul Hoque on October 13, 2022, 09:58:31 AM
সর্বোত্তম হালাল রিযিক পর্ব ২


কুরআন এবং হাদীসের বিভিন্ন ভাষ্যে স্পষ্ট নির্দেশ করা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলার বন্দেগী করার পাশাপাশি নিজের জীবিকা উপার্জনের জন্যও বৈধ সব রকমের চেষ্টা করতে হবে। অব্যাহতভাবে সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। শুধু তাই নয়, বৈধ উপায়ে রুযীর প্রচেষ্টাও ইবাদত। বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিজ হাতে উপার্জন করে যে খাদ্য গ্রহণ করা হয়, আল্লাহ তা‘আলার নিকট তার চেয়ে প্রিয় খাদ্য আর কিছুই নয়।” আল্লাহর এক প্রিয় নবী দাঊদ আলাইহিস সালাম এ জন্য প্রশংসিত হন যে, তিনি তার নিজের হাতে কামাই করে খেতেন। কারো কামাই খেতেন না। হাদীসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিজ হাতে কামাই করে খাদ্য গ্রহণ করার চেয়ে উত্তম আর কোনো খাদ্য হতে পারে না। আল্লাহর নবী দাঊদ আলাইহিস সালাম তিনি হাতের কামাই ছাড়া খাদ্য গ্রহণ করতে না।” আল্লাহ তা‘আলা দাঊদ আলাইহিস সালামের জন্য লোহাকে নরম করে দেন। ফলে তিনি এ লোহা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ও উপকারী বস্তু তৈরি করে তা বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে এ বিষয়ে বর্ণনা দিয়ে বলেন: “আর অবশ্যই আমরা আমাদের পক্ষ থেকে দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আমি আদেশ করলাম) ‘হে পর্বতমালা, তোমরা তার সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর’ এবং পাখিদেরকেও (এ আদেশ দিয়েছিলাম)। আর আমি তার জন্য লোহাকেও নরম করে দিয়েছিলাম, (এ নির্দেশ দিয়ে যে,) ‘তুমি পরিপূর্ণ বর্ম তৈরি কর এবং যথার্থ পরিমাণে প্রস্তুত কর’। আর তোমরা সৎকর্ম কর। তোমরা যা কিছু কর নিশ্চয় আমি তার সম্যক দ্রষ্টা।” [সূরা সাবা, আয়াত: ১০, ১১]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “তোমাদের কেউ পিঠের উপর বোঝা বহন করা, এটি তার জন্য অধিক উত্তম, মানুষের নিকট হাত পাতার তুলনায়। কেউ তাকে কিছু দিল বা না করল।”

আল্লাহর অপর নবী নূহ আলাইহিস সালাম তিনিও কাট মিস্ত্রি কাজ করতেন। আল্লাহর আদেশে তিনি নিজ হাতেই কিস্তি নির্মাণ করেন, যদ্বারা মহা প্লাবন থেকে নাজাত পেলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর সে নৌকা তৈরি করতে লাগল এবং যখনই তার কাওমের নেতৃস্থানীয় কোনো ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যেত, তাকে নিয়ে উপহাস করত। সে বলল, ‘যদি তোমরা আমাদের নিয়ে উপহাস কর, তবে আমরাও তোমাদের নিয়ে উপহাস করব, যেমন তোমরা উপহাস করছ।” [সূরা হুদ, আয়াত: ৩৮]

আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি আমাদের আদর্শ ও অনুকরণীয় তিনি নিজেও পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরাতেন। হালাল রুযী উপার্জনের জন্য তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন, ব্যবসায়ী কাজে বিভিন্ন দেশে-বিদেশে সফর করতেন। এত বড় মর্যাদার অধিকারী হওয়া আল্লাহর প্রিয় বান্দা তথা নবীরা নিজ হাতে কামাই রুযী করা এবং কর্ম করাকে নিজেদের মর্যাদাহানি মনে করতেন না। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের উপর অর্পিত মহান দায়িত্ব-আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করা-পালন সত্ত্বেও তাদের কর্ম করা থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারে নি। তারা তাদের নিজ হাতে কামাই করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরাও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। হালাল উপার্জনের প্রতি তাদের আগ্রহের কোনো কমতি ছিল না। তারা কখনোই বেকার বসে থাকতেন না। অন্যের বোঝা হয়ে থাকতেন না। মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইতেন না। ভিক্ষা চাওয়া খুবই ঘৃণিত কাজ। ভিক্ষা করা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরুৎসাহিত করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কোনো লোক তার রশি নিয়ে বনে জঙ্গলে বা পাহাড়ে গিয়ে লাকড়ি সংগ্রহ করে, লাকড়ির বোঝা নিয়ে, নিজের প্রয়োজন মিটানো বা হালাল রুযী কামাই করার উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে বিক্রি করা মানুষের ধারে ধারে ভিক্ষা করা (কেউ তাকে দিল আবার কেউ না করল)-এর চেয়ে অধিক উত্তম।” আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য বিভিন্ন ধরণের কর্মস্থলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারি। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারি। যা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানেই উপকারে আসবে।

যুবক ভাইয়েরা! আপনারা ঘরে বসে না থেকে বিভিন্ন ধরনের কর্ম শিখুন। বর্তমানে কর্মের অভাব নাই তেমনিভাবে যারা কর্ম করতে পারে তাদের চাহিদারও অন্ত নেই। আপনার কর্ম দ্বারা শুধু আপনি উপকৃত হবেন তা নয়, বরং আপনার দ্বারা পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতি সবাই উপকৃত হবে।

কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য বর্তমানে আমাদের যুবক ভাইয়েরা কর্ম-বিমুখ। তাদের মধ্যে কর্মের প্রতি অনীহা দেখা যায়। তারা সরকারি চাকুরীর পিছনে ছুটাছুটি করে। তারা মনে করে সরকারি চাকুরি করলে সম্মান বৃদ্ধি পাবে। আসল সম্মান আখিরাতের সম্মান। প্রকৃত সম্মান তো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার মধ্যেই নিহিত। আমরা যে যত বেশি মেহনত করবো, তা আমার দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে কাজে লাগবে।

সুতরাং যুবক ভাইদের প্রতি আমাদের দাওয়াত হলো, নবী ও রাসূলদের অনুকরণে হালাল উপার্জনের দিকে মনোযোগী হন। হালাল পন্থায় কামাই রুযী করে নিজেরা স্বাবলম্বী হন এবং মানুষের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করুন। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন।  আমীন!!

Source: https://quraneralo.net/best-halal-rijik-part-2/