Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - saima rhemu

Pages: 1 2 3 [4] 5 6 ... 9
46
সব শিশুদের মধ্যে একটা সাধারণ সমস্যা দেখা যায়। সেটা হলো খাবার নিয়ে বায়নাক্কা করা! কোনো কোনো শিশু নিজের পছন্দের খাবার ছাড়া আর কিছুই খেতে চায় না। আবার কোনো শিশু সব কিছুতেই নাক সিঁটকায়। কেউ আছে খায় বটে, তবে পুরো খাবার না খেয়েই উঠে পড়ে। মোটকথা, বেশির ভাগ বাচ্চারাই খাবার নিয়ে ঝামেলা করে!

বাচ্চা কেন খেতে চায়না?

বেশির ভাগ মায়েরই অভিযোগ—বাচ্চা খেতে চায় না। কিছু কিছু রোগের কারণে শিশুদের রুচি কমে যেতে পারে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অত জটিল কিছু নয়। অনেক ক্ষেত্রেই এ বিষয়ে মা-বাবার উৎকণ্ঠা থাকে। হয়তো শিশু তার রুচি ও পরিমাণ অনুযায়ী ঠিকই খাচ্ছে, কিন্তু মা-বাবা তাতে তৃপ্ত হচ্ছেন না। শিশুর আসলে কোনো রোগ নেই, সমস্যাটা তার মনে। বয়স অনুযায়ী মানসিক ও শারীরিক বিকাশ অন্য বাচ্চাদের মতো হলে শিশুর খাওয়া নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।

শিশুর প্রতি মনোযোগ কমে গেলেও সে খাওয়া কমিয়ে দিতে পারে। সে যখন দেখে যে ঠিকমতো না খেলে বা খাবার নিয়ে যন্ত্রণা করলে তাকে নিয়ে সবাই অস্থির হয়ে পড়ছে, তখন খাবার নিয়ে বায়না ধরে।

জোর করে খাওয়ানোর ফলে শিশুর মধ্যে প্রচণ্ডভাবে খাদ্য অনিহা দেখা দেয়।অনেক সময় শক্ত খাবার, অপছন্দের খাবার এবং একই খাবারের পুনরাবৃত্তি করে খাওয়ালে খাবারের প্রতি শিশুর অনীহা তৈরি হয় এবং সে খাবার দেখলে ভয় পায় বা বমি করে ফেলে।

ছোট শিশুদের ঘ্রাণেন্দ্রিয় বেশ স্পর্শকাতর। খাবারের গন্ধ এবং রং যদি ভালো না হয় বাচ্চারা সে খাবার খেতে চায় না, মুখ থেকে ফেলে দেয়। অনেক সময় শরীরের জিনঘটিত কারণে কিছু কিছু খাবারের গন্ধ বা স্বাদ বাচ্চারা সহ্য করতে পারে না। এর ফলে তারা সব ধরনের খাবার খেতে চায় না, বেছে বেছে খায়।

হজম প্রক্রিয়াতে সমস্যা থাকায় অনেক বাচ্চার খিদে কম পায় এবং খাবার ইচ্ছা থাকে না। এ কারণেও অনেক বাচ্চা খাবার নিয়ে বায়না করতে পারে।যেসব শিশুদের ঘনঘন মুড পরিবর্তন হয়, তারা খাবার নিয়ে সমস্যা করে বেশি। নিজের স্বাধীন মেজাজ বোঝানোর জন্য বা বজায় রাখার জন্য অনেক শিশু খাবার নিয়ে বায়না ও জিদ করতে থাকে।

শিশুর খাবার না খেতে চাওয়ার পেছনে অনেক সময় সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার কাজ করে। যেসব বাচ্চার মা অতিরিক্ত আদর বা শাসন করে, সে বাচ্চাদের মধ্যে খাবার নিয়ে ঝামেলা করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

অনেক মা শিশুকে নিয়মমাফিক খাওয়ানোর মাঝে কান্নামাত্রই মায়ের দুধ খাওয়ান বা অন্যান্য খাবার খাওয়ান। এ অনিয়মিত খাবারের দরুন শিশুর খাবারের রুচি ও ক্ষিধা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সে খাবার খেতে অনীহা প্রকাশ করে।

কোনো কোনো বাড়িতে শিশু নিজের খাবার সময় ছাড়া অন্য সময়ও পরিবারের অন্য সদস্য বা আত্মীয়স্বজন সবার সঙ্গে খায়। আবার অনেক মা তার শিশু সাতটার সময় পেটভরে খায়নি বলে আটটার সময় তাকে আরেকবার খাবার দেন, ৯টার সময় আবার চেষ্টা করেন এবং এমনিভাবে সারা দিন ধরেই প্রচেষ্টা চলতে থাকে। এসব অভ্যাসই শিশুর খাবারের প্রতি অনিহা তৈরি করে।

তবে কিছু বাচ্চা আছে যারা, সত্যি সত্যি খায় না। বৃদ্ধিটাও ঠিকমতো হয় না। তাহলে দেখতে হবে যে বাচ্চাটি অপুষ্টির শিকার হচ্ছে কি না বা তার রক্তশূন্যতা হয়েছে কি না? না কি বাচ্চার ঘন ঘন কোনো সংক্রমণ হচ্ছে, যার জন্য খাওয়ায় রুচি কমে যাচ্ছে। যদি শিশুটির রক্তশূন্যতা থাকে, অপুষ্টি থাকে—বাচ্চাটি বসে থাকবে, খুব বেশি সচল থাকবে না। তাহলে এগুলো দেখতে হবে। পাশাপাশি কৃমি আছে কি না দেখতে হবে। কিছু বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া, অ্যাজমা থাকতে পারে, কিংবা প্রস্রাবে সংক্রমণ আছে; তখন বাচ্চাটিকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সে যে খায় না, তার কারণ কী খুঁজতে হবে। শুধুই কি ক্ষুধামান্দ্য নাকি সঙ্গে আর কিছু রয়েছে, সেসব দেখতে হবে। দেখে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে।

বাচ্চাকে জোর করে খাওয়ানোর কুফল

গবেষণায় বলা হয়, জোর করে খাওয়ানো হলে বরং ভালোর চেয়ে মন্দটাই বেশি হতে পারে। জোর করে খাওয়ানোতে কোনো উপকার হয় না বললেই চলে।এতে শিশুর স্বাভাবিক খাওয়ার অভ্যাস বাধাগ্রস্ত হয় এবং অস্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে।

বাচ্চার নিজের যদি খাওয়ার ইচ্ছে না থাকে, সেক্ষেত্রে জোর করে লাভ নেই। বরং, জোর করে খাওয়ালে মুখের মধ্যেই অনেকসময় খাবার রেখে দেয় বাচ্চারা। সেই খাবার গলায় আটকে যাওয়ার ভয় থাকে। এমনকী, শ্বাস নিতেও অসুবিধা দেখা দিতে পারে।

জোরজবরদস্তি খাবার খাওয়ালে বাচ্চা সঠিক পুষ্টি পায় না। তাই বাচ্চা যাতে সঠিক পুষ্টি পায়, তার জন্য তাকে নিজেকে খেতে দিন ইচ্ছেমতো। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও খাবার খাওয়ালে বাচ্চারা অনেকসময় বমি করে দেয়। এতে বাচ্চার শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে।  জোর করে খাবার খাওয়ালে বাচ্চার মনে সেই নিয়ে ভয় সৃষ্টি হতে পারে। এমনকী, এই নিয়ে কান্নাকাটি ও চিৎকার করা শুরু করতে পারে।

রোগা চেহারা মানে বাচ্চা সঠিক পুষ্টি পাচ্ছে না, গোলগাল হলে তবে তার স্বাস্থ্য ঠিকঠাক, এ ধারণা আদতে ভুল৷ বরং মোটাসোটা বাচ্চারাই ‘চাইল্ড ওবেসিটি’তে আক্রান্ত৷ ছোটবেলায় বয়সের তুলনায় অতিরিক্ত মোটা হলে বড় হয়ে হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে যায়৷ তাই সন্তানের যত্ন নিন ঠিকই, কিন্তু বেশি খাইয়ে মোটা করবেন না৷

প্রায়শই দেখা যায় যে বাবা মায়েরা ছেলেমেয়েদের বেশি করে খাওয়াতে চাইছেন বা ওদের জোর করছেন যাতে ওরা প্লেটে খাবার ফেলে না রাখে। বাবা মায়েরা এগুলো বাচ্চাদের ভালো চেয়েই করেন কিন্তু অসুবিধে হল এই ভাবে জোর করে খাওয়ানোর ফলে বাচ্চারা নিজেদের শরীরের প্রয়োজন এবং খিদে নিজেরাই বুঝতে পারে না। বাচ্চারা এর ফলে খাবারকে হোমটাস্কের মত করে গিলতে শুরু করে। অথচ খুব দরকারি হচ্ছে ভালোবেসে খাবার খাওয়া, জোর করে গিলে নয়। আর এমন ভাবে জোর করে খাইয়ে গেলে ওজনও বাড়বে না আর ব্যাপারটা স্বাস্থ্যকরও নয়।
জোর করে খাবার খাওয়ালে বাচ্চার  খাবার নিয়ে ভীতি কাজ করতে পারে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে শিশুর বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে সমস্যা হয়, কখনো বা তারা ওজন হারাতে থাকে। বারবার খাবারের জন্য তাগিদ দিলে শিশু খাবারের প্রতি অনীহা দেখাবে। খাওয়া নিয়ে একবার জোর করে খাওয়ালে পরে যখনই তাকে খাওয়াতে চাইবেন তখন সে ভয়ে আরও কম খাবে। খাওয়ার প্রতি তার কোনো উৎসাহ থাকবে না।

পরিশিষ্ট

বাচ্চার খাবারের ক্ষেত্রে এসব দিক লক্ষ্য রাখার সাথে সাথে সন্তান ঠিকমতো বেড়ে উঠছে কি না, তাও নজরে রাখতে হবে। যদি দেখা যায় যে বাচ্চা সমবয়সীদের মতোই বাড়ছে, ওজনও ঠিক আছে; তাহলে বুঝতে হবে তার শরীরে পুষ্টির কোনো ঘাটতি নেই, অর্থাৎ আপনার শিশুর খাওয়াদাওয়া স্বাভাবিকই আছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, বাচ্চার ওজন বয়সের তুলনায় বেশি অথচ মা-বাবার অভিযোগ—শিশুটি একদমই খায় না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মা-বাবাকে বুঝতে হবে যে শিশু যদি ঠিকঠাক না খেত, তাহলে তার ওজন বেশি হতো না। আর এরপর যদি জোর করে শিশুটিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে তা শিশুটির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যদি দেখা যায় যে বাচ্চা ঠিকঠাক বাড়ছে না, বয়সের তুলনায় ওজন অনেক কম অথবা ওজন বয়সের তুলনায় অনেক বেশি, তাহলে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

47
সব পিতামাতাই সন্তানের মুখ থেকে প্রথম শব্দ শোনার জন্য অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন।  তাই সন্তানের কথা বলায় দেরী হলে তা অত্যন্ত দুশ্চিন্তা ও হতাশার কারণ হয়। তবে ভালো খবর হচ্ছে বেশিরভাগ শিশুরাই দেরীতে কথা বলা শুরু করে দুই বছর বয়সের মধ্যে কোন সমস্যা ছাড়াই। প্রতি চারজনে একজন শিশু বিলম্বে কথা বলা শুরু করে। এদের বেশিরভাগেরই বিশেষ সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। শিশুর কথা বলার বিষয়ে এবং কখন একজন বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া প্রয়োজন সে বিষয়ে আজকের আলোচনা।

শিশুর কথা বলা নিয়ে কখন চিন্তিত হবেন

শিশু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জিনিস শেখে। যেমন উপুড় হওয়া, বসা, হামাগুড়ি দেয়া। একইভাবে সে একটি নির্দিষ্ট বয়সে তারা কথা বলা শুরু করে। এই বয়স এর পর যদি শিশুরা কথা বলা শুরু না করে তাহলে অবশ্যই বাবা-মা সচেতন হতে হবে। কথা বলা শুরুর বয়সী শিশুর মধ্যে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশের ভাষা ব্যবহারে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত ছেলে শিশুদের তুলনায় মেয়ে শিশুরা দ্রুত কথা বলতে শেখে। যদি কোনো শিশু ১৮ থেকে ২০ মাস পার হওয়ার পরও দিনে ১০টির কম শব্দ বলে বা ২১ থেকে ৩০ মাস পার হওয়ার পর দিনে ৫০টিরও কম শব্দ বলে তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা আছে।

যখন শিশুর সাহায্য প্রয়োজন

প্রথমেই মা বাবা হিসেবে আপনাদের যদি কোন কিছু অস্বাভাবিক লাগে তবে ডাক্তারকে জানান। কারণ আপনারাই আপনাদের বাচ্চাকে সবচাইতে ভালো বুঝবেন। যদি আপনার বাচ্চার মধ্যে কথা বলার ক্ষেত্রে নিচের লক্ষণ গুলো দেখেন সে ক্ষেত্রেও ডাক্তারের সাথে আলোচনা করা নেয়া উচিত।

১২ মাসের মধ্যে

১ বছর বয়সেও শিশু যখন অস্ফুট বাক্য বলে না বা অন্যদের কথার সাথে সাথে তা অনুকরণ করার চেষ্টা করে না বা প্রতিক্রিয়া দেখায় না তখন বুঝতে হবে যে কোন সমস্যা আছে তার।

বাচ্চা যদি “মামা” বা “ডাডা” জাতীয় শব্দ উচ্চারণ না করে।

যদি কোন রকম ইঙ্গিত না করে- যেমন, হাত বা মাথা নাড়ানো বা আঙ্গুলের সাহায্যে কোন কিছু নির্দেশ করা
“না” বা “টাটা” জাতীয় শব্দ বুঝতে না পারা বা তাতে সাড়া না দেয়া।
প্রিয় কোন জিনিসের দিকে নির্দেশ না করা।

১৫ মাসের মধ্যে কোন শব্দ না বলা।

১৮ মাসের মধ্যে

১৮ মাস বয়সেও যদি সে অন্তত ৬ টি শব্দ বলতে না পারে।
শরীরের কোন অঙ্গের নাম বললে যদি তা নির্দেশ করতে না পারে।
যদি তার প্রয়োজনে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে না পারে বা কোন কিছু নির্দেশ করে দেখাতে না পারে।

১৯-২৪ মাসের মধ্যে

যদি এ সময়ের মধ্যে বাচ্চার শব্দভাণ্ডার দ্রুত বাড়তে না থাকে (অন্তত প্রতি সপ্তাহে ১ টি নতুন শব্দ না শেখে)

২৪ মাসে

২ বছর বয়সেও যদি সে খুব অল্প শব্দ বলতে পারে এবং যদি সে খুব একটা কথা না বলে,
কোন কিছু নির্দেশ করলে যদি সাড়া না দেয়।
কারো কথা বা আচরণ যদি নকল না করে।
বইয়ে বা কোন ছবি দেখিয়ে নাম বললে যদি তা নির্দেশ করতে না পারে।
দুটো শব্দ যদি জোরা লাগাতে না পারে।
ঘরের সাধারণ জিনিস পত্রের ব্যাবহার যদি না যানে। যেমন টুথব্রাশ বা কাঁটা চামচ

৩ বছর বয়সে

৩ বছর বয়সেও যদি তার উচ্চারণগুলো অন্যরা বুঝতে না পারে তখন শিশুর  সাহায্য প্রয়োজন বলে ধরে নিতে হবে।কোনো শব্দ অর্ধেক উচ্চারণ করা, যেমন – মোবাইলকে ‘মোবাই’ বলা। নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত এরকম ভুল হওয়া স্বাভাবিক, ভুল শুধরে দেয়ার পরও যদি বড় হয়ে বাচ্চারা এভাবে কথা বলে তাহলে স্পিচ থেরাপি দিতে হয়। কথা শুনে তা বুঝতে না পারা, দিক চিনতে না পারা, প্রশ্নের উত্তর না দেয়া, কোনো তথ্য শুনে তা বুঝে নেয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে।

শিশুর কথা বলতে শুরু করার টাইমলাইন।

শিশুর দেরিতে কথা বলার বিভিন্ন কারন
বংশগত কারণে অনেক সময় শিশুরা দেরিতে কথা বলা শুরু করতে পারে।মস্তিষ্কের জন্মগত ত্রুটি, প্রসবকালীন জটিলতা, ভীষণ জ্বর, খিঁচুনি, জীবাণু সংক্রমণ ইত্যাদি শিশুর কথা বলার বাধা হতে পারে। সঠিক সময়ের পূর্বেই জন্মগ্রহণ করা, কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা এবং জন্মের সময়ে চিকিৎসাগত কোন সমস্যার কারণে শিশুর ভাষার দক্ষতা অর্জনে বিলম্ব হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদে কানের সংক্রমণে আক্রান্ত হয় যে শিশুরা তাদের কথা বলা শুরু করতে দেরি হয়। যদি শিশুর ১ বছর বয়সের মধ্যে তার কানের ভেতরে তরল জমা থাকে সংক্রমণের কারণে তাহলে তার শব্দ শুনতে সমস্যা হবে এবং সে দেরীতে কথা বলা শুরু করবে। জিহ্বার ত্রুটির কারণে  অনেক শিশু ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারে না। শিশুর মানসিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও শিশু দেরিতে কথা বলা শেখে।

 
শিশুর সামনে অত্যধিক উচ্চস্বরে কথা বললেও নার্ভাসনেসের কারণে তাদের কথা জড়িয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। অস্বাভাবিক পারিবারিক পরিবেশ শিশুর যথাসময়ে কথা বলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। পরিবারে সদস্যদের অস্বাভাবিক আচরণের কারণে শিশুর কথা বলা বিলম্বিত হতে পারে। এমনকি দীর্ঘ সময় কথা না বলেও থাকতে পারে।

মেয়ে শিশুর তুলনায় ছেলে শিশুদের কথা বলায় দেরী হয় বেশি এবং তা হতে পারে ১/২ মাসের ব্যবধানে। ১৬  মাস বয়সে ছেলে শিশুরা গড়ে ৩০ টি শব্দ বলতে পারে যেখানে মেয়ে শিশুরা গড়ে ৫০ টি শব্দ বলতে পারে।

যারা কিছুদিন আগে জন্মগ্রহণ করে অর্থাৎ প্রিম্যাচিউর শিশুদের কথা বলা শুরু হতে দেরি হয়। কারণ গর্ভাবস্থায় ৪০ সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই অর্থাৎ ৩৭তম সপ্তাহে বা তার আগেই প্রিম্যাচিউর বেবির জন্ম হয়। ফলে প্রিম্যাচিউর বেবি গর্ভের শেষ মাসটির গুরুত্বপূর্ণ মানসিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত হয়। তাই তারা দেরিতে কথা বলে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রিম্যাচিউর শিশুর উন্নয়নের হিসাব করার সময় তার জন্ম তারিখ নয় বরং তার যখন জন্মানোর কথা ছিল সেই তারিখটি থেকে গণনা শুরু করতে হবে। ৩ মাস পূর্বে জন্মগ্রহণ করা শিশুর কথা বলতে দেরী হচ্ছে মনে হতে পারে কিন্তু সে আসলে ঠিক ভাবেই বেড়ে উঠছে। যমজ শিশু অন্যদের তুলনায় দেরিতে কথা বলে।

শিশুর দেরীতে কথা বলার সাথে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের সম্পর্ক

স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের মতো যন্ত্র ব্যবহারের সঙ্গে শিশুদের দেরিতে কথা বলার যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন কানাডার গবেষকরা।তারা বলছেন, শিশুরা যতো বেশি সময় স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের মতো স্ক্রিন সংবলিত যন্ত্র ব্যবহার করবে, ততোই তাদের দেরিতে কথা বলার ঝুঁকি বাড়বে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে অনুষ্ঠিত পেডিয়াট্রিক একাডেমিক সোসাইটিজ মিটিংয়ে এই গবেষণার প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। গবেষকদলের এক সদস্য কানাডার অন্টারিওর ‘দ্য হসপিটাল ফর সিক চিলড্রেন’ হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ক্যাথেরিন বার্কেন বলেন, ‘ট্যাব ও স্মার্টফোনের মতো যন্ত্র এখন সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহারের সঙ্গে শিশুদের দেরিতে কথা বলা শুরুর একটি যোগসূত্র আমরা পেয়েছি।’

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুদের স্মার্টফোন বা ট্যাবের মতো যন্ত্রের ব্যবহার যদি ৩০ মিনিট করে বাড়ে, তবে তাদের দেরিতে কথা বলা শুরুর ঝুঁকি বাড়ে ৪৯ শতাংশ।

শিশু দেরীতে কথা বললে কি করতে হবে?

বাচ্চাদের কথা বলায় সমস্যা হতেই পারে, তবে যত কম বয়সে সমস্যাটি ধরা পড়বে, তত দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। যদি আপনার সন্তানের কথা বলায় কোনো ধরনের সমস্যা চোখে পড়ে, দেরি না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। বিশেষ করে তোতলানো, কম কথা বলা, অক্ষরজ্ঞান সম্পর্কিত সমস্যাগুলো অবহেলা করা উচিৎ নয় একদমই।

শিশুর আড়াই বছর বয়সেও যদি সঠিকভাবে শব্দ বলতে না পারে তাহলে তার চিকিৎসকের সাহায্য প্রয়োজন। স্পীচ থেরাপির মাধ্যমে বা কানের সংক্রমণের নিরাময় বা শ্রবণ সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে চিকিৎসক তার নিরাময়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
 
যেসব শিশু দেরিতে কথা বলে বা ঠিকমতো কথা বলা শিখছে না তাদের ক্ষেত্রে প্রতিটি কাজে একটি নির্দিষ্ট শব্দের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কথা বলতে হবে। যেমন- শিশুকে গোসল করানোর সময় `গোসল` শব্দটির ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আবার বাইরে যাওয়ার সময় `যাব` শব্দটি বারবার বলে শিশুকে বোঝাতে হবে।

শিশু যদি ইশারার সাহায্যে যোগাযোগ করতে চায়, তবে সেই ইশারার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং অর্থবোধক শব্দ যোগ করে তাকে কথা বলতে উৎসাহিত করুন। যেমন- শিশু বিদায় জানাতে হাত বাড়ালে আপনি বলুন `বাই বাই` অথবা `টা টা`।

শিশুর সবচেয়ে পছন্দের জিনিসটি একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় রেখে (শিশুর নাগালের বাইরে) তাকে জিনিসটি দেখান। যখন সে ওটা নিতে চাইবে বা আপনার হাত ধরে টানবে, তখন আপনি জিনিসটির নাম একটু স্পষ্টভাবে বলুন। যেমন- যদি `গাড়ি` হয় তবে বলুন `ও, তুমি গাড়ি খেলতে চাও?` অথবা `এই যে তোমার গাড়ি।`

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু মূল শব্দের আগে অনেক ক্ষেত্রে আগে প্রতীকী শব্দ ব্যবহার শুরু করে। তাই এ ক্ষেত্রে আপনিও প্রাথমিকভাবে প্রতীকী শব্দ ব্যবহারে বেশি গুরুত্ব দিন। যেমন- গাড়ি বোঝাতে পিপ্পিপ্। বেড়াল বোঝাতে মিঁউ মিঁউ ইত্যাদি। যেসব শিশু মাঝেমধ্যে দু-একটি শব্দ বলছে, তাদের শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধির ওপর জোর দিন। যেমন- শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ (মাথা, হাত, পা), বিভিন্ন জিনিসের নাম (বল, গাড়ি, চিরুনি), বিভিন্ন ক্রিয়াবাচক শব্দ (খাব, যাব, ঘুম) ইত্যাদি শেখান।

দুই বছরের বড় শিশুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পরিচিত এবং অতি পছন্দের ৮-১০টি ছবি নিয়ে একটি বই তৈরি করুন। প্রতিদিন একটু একটু করে বই দেখিয়ে শিশুকে ছবির মাধ্যমে নাম শেখাতে পারেন। যেসব শিশু চোখে চোখে তাকায় না এবং মনোযোগ কম, আবার কথাও বলছে না, তাদের ক্ষেত্রে আগে চোখে চোখে তাকানো ও মনোযোগ বৃদ্ধির বিভিন্ন কৌশলের ওপর গুরুত্ব দিন। যেমন- লুকোচুরি খেলা, কাতুকুতু দেওয়া, চোখে চোখে তাকিয়ে শিশুর পছন্দের ছড়াগান অঙ্গভঙ্গি করে গাওয়া।

কি করবেন না

কথা বলার জন্য অত্যধিক চাপ যেমন- `বল, বল` ইত্যাদি করা যাবে না।
শিশুকে অপ্রাসঙ্গিক অথবা অতিরিক্ত প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকুন।
একসঙ্গে অনেক শব্দ শেখানোর চেষ্টা করবেন না, এতে শিশু কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
শিশুকে কথা না বলতে পারা, বা ভুলভাবে বলার জন্য বকা দেয়া যাবে না এতে শিশুর মধ্যে ভয় দানা বাঁধে এবং পরে সে কথা বলতে অনাগ্রহী হয়ে যেতে পারে। তার আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়।
স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কিছুটা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ব্যবস্থা। সঠিক সময়ে এই পদ্ধতির কৌশলগত প্রয়োগ হলে শিশু কথা এবং যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে উন্নতি করবে।অনেক মা-বাবাই ভাবেন, অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুর সঙ্গে তাঁদের পিছিয়ে পড়া শিশুর খেলার পরিবেশ করে দিলেই আপনা আপনিই কথা শিখে যাবে। কিন্তু মনে রাখবেন, এমনটা না-ও হতে পারে। তাই নিজেরা বাড়িতে চেষ্টা করুন, প্রয়োজনে স্পিচ থেরাপির সহায়তা নিন।

আজকাল অনেকেই বলেন দেড় দুই বছর পার হয়ে যাচ্ছে, তারপরও শিশু কথা বলছে না। অনেক শিশুর এই সমস্যা তিন বছর পর্যন্তও স্থায়ী হচ্ছে। চিন্তিত হয়ে অনেক বাবা-মাই ছোটেন চিকিৎসকের কাছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর সঙ্গে যতো বেশি পরিমান কথা বলা হবে, ততই সে দ্রুত কথা বলা শিখবে। আজকাল শিশুরা বেড়ে উঠছে একক পরিবারে। যেখানে বাবা-মা ছাড়া তার সঙ্গে কথা বলার কেউ থাকে না। আবার বাবা-মাও নিজ নিজ কাজে এত বেশি ব্যস্ত থাকেন যে  ছোট শিশুটির সঙ্গে খুব বেশি কথা বলার সময় পান না। একারণেও শিশুরা দেরীতে কথা বলতে শেখে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব শিশুর দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয় এবং তাদের সঙ্গে বেশি কথা বলা হয় তারা অন্য শিশুদের তুলনায় দ্রুত কথা বলা শেখে। তাদের সঙ্গে খেলাচ্ছলে কথা বললে তারা খুশি হয়, দ্রুত সাড়া দেয়। তাই যত বেশী সম্ভব আপনার বাচ্চার সাথে কথা বলুন।

48
আপনার বাচ্চার জন্য সলিড খাবার খাওয়া শুরু করা একটা বড় পদক্ষেপ। যখন বাচ্চার বয়স ৬ মাস হয়ে যায় তখন বাচ্চার কিছু আচরণ দেখে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার শিশু সলিড খাবার খাওয়ার জন্য তৈরী কিনা৷ যে শিশু সলিড খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে সে সাধারণত এই কাজগুলি করতে পারে:

* সে মাথা উপরদিকে তুলতে পারে৷ সলিড খাবার খাওয়ার জন্য বাচ্চার দৃঢ়ভাবে মাথা সোজা করে রাখতে পারাটা জরুরী।

* হেলান দেওয়ার সুবিধা পেলে, সে ভালো করে বসতে পারে৷ প্রথমে হয়ত আপনার শিশুকে কোলে নিয়ে বসাতে হবে৷ যখন বাচ্চা আরেকটু ভালোভাবে বসতে শিখবে তখন তাকে উঁচু চেয়ারে বসাতে পারেন।

* সে চিবানোর মত মুখভঙ্গী করবে৷ আপনার শিশু তার মুখের ভিতরে খাবার নিয়ে তা মুখের পেছনে নিতে ও গিলতে পারা জানতে হবে। বাচ্চা যখন ভালভবে গিলতে শিখবে তখন খেয়াল করে দেখবেন তার মুখে থেকে লালা কম ঝরবে। এ সময় বাচ্চার একটি বা দুটি দাঁতও উঠে যেতে পারে।

* বাচ্চার ওজন ঠিকভাবে বাড়বে। বেশীরভাগ বাচ্চাই জন্মের দ্বিগুণ ওজন লাভ করার সাথে সাথে সলিড খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। বাচ্চার ৬ মাস বয়স নাগাদ বাচ্চার ওজন জন্মের প্রায় দ্বিগুণ হয়।

* আপনি কী খাচ্ছেন সেই ব্যাপারে সে উৎসুক হবে৷ যখন শিশুরা আপনার খাবারের দিকে তাকায় ও সেদিকে হাত বাড়িয়ে দেয় তার মানে সে শক্ত খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত৷

* তার শরীরের ওজন স্বাস্থ্যকর৷ বেশির ভাগ শিশুর জন্মের সময় যা ওজন থাকে তার দ্বিগুণ ওজন হয়ে গেলে তারা সলিড খাবার খাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে যায়৷ এটা সাধারণত প্রায় 6 মাস বয়সে হয়৷

* বাচ্চা খাবারের দিকে তাকাতে, তা মুঠি করে ধরতে এবং নিজের মুখে দিতে পারে।

৬ মাস বয়সের আগেই আপনার শিশুর এই লক্ষণগুলি হয়ত আপনার চোখে পড়ে৷ সেক্ষেত্রও বিশেষজ্ঞদের মতে তাকে সলিড খাবার খেতে দেওয়ার আগে তার ৬ মাস বয়স হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা নিরাপদ৷ ততদিনে তার হজমশক্তি আরো মজবুত হয়ে যায়৷ তার অর্থ এই যে তার পেটের গোলমাল বা খাবারে খারাপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে৷

এ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করলে বাচ্চার খাবার থেকে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা ও কম থাকে।  বিশেষ করে যদি পরিবারের কারো অ্যালার্জির বা coeliac disease এর ইতিহাস থাকে তবে ৬ মাসের আগে কোনভাবেই সলিড শুরু করা উচিত নয়। শস্যের গ্লুটেনের কারণে coeliac disease বাড়তে পারে।

কিছু কিছু লক্ষণ দেখে অনেকেই মনে করেন বাচ্চা সলিড খাওয়ার জন্য তৈরি, যেমন-

হাতের মুঠি চাবানো

রাতের বেলা জেগে যাওয়া।

খাবারের জন্য কান্না কাটি করা


এসব আচরণ বাড়তে থাকা সব বাচ্চাই করে। এটার মানে এই নয় যে সে সলিড খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত।আপনি যদি বাচ্চাকে ৬ মাসের আগেই সলিড খাওয়ানোর পরিকল্পনা করেন তবে এর আগে অবশ্যই একবার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেয়া উচিত।

তবে মনে রাখতে হবে বাচ্চা যদি ৬ মাস বয়সে সলিড খাবার খেতে না চায় তাহলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নাই। শুধুমাত্র বুকের দুধ খেয়েই ৯-১২ মাস পর্যন্ত বাচ্চার পর্যাপ্ত বৃদ্ধি হতে পারে। কখনো কখনো ৬ মাস বয়সের পর বাচ্চা মায়ের দুধ থেকে যে জিঙ্ক ও আয়রন পায় তা তার  জন্য পর্যাপ্ত হয়না।  সে ক্ষেত্রে বাচ্চা বাড়তি খাবার থেকে সে চাহিদা পূরণ করে। বাচ্চা যদি সলিড খেতে না চাই তবে সে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বাচ্চার বৃদ্ধির দিকে নজর রাখুন এবং তাকে তার জন্য উপযুক্ত সলিড খাবার দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যান।

49
ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা নিয়ম করে রোজা রাখেন পুরো মাসজুড়ে। অসুস্থ থাকলেও সহসা রোজা ভাঙেন না। তবে যারা ডায়াবেটিস, পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার, শ্বাসকষ্ট, হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এসব সমস্যায় ভুগছেন, তাদের সমস্যা হবার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এলে যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যা হয়, রোজা রাখার ব্যাপারে তাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

ডায়াবেটিস রোগীরা খাদ্যাভ্যাস এবং ওষুধ সেবনবিধিতে কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে নিরাপদে রোজা রাখতে পারবেন। অবশ্যই রোজা শুরু করার আগে নিজের ডাক্তারের সাথে কথা বলুন এবং তার পরামর্শ মেনে চলুন।

ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখার বিষয়ে কিছু তথ্য দিয়েছেন প্রফেসর এবিএম আবদুল্লাহ, ডিন, মেডিসিন অনুষদ, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। তার ভাষ্যে, রোজা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রোগীদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ ও রহমতস্বরূপ।

ডায়াবেটিক রোগীরা সঠিক নিয়মে রোজা রাখলে নানা রকম উপকার পেতে পারেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল উপায় হলো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, আর রোজা হতে পারে তার এক অন্যতম উপায়। এতে সহজেই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সহজ ও সুন্দরভাবে করা যায়।

যারা ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল নন, তাদের ক্ষেত্রে রোজা রাখা হতে পারে আদর্শ চিকিৎসা ব্যবস্থা। যারা ইনসুলিন নেন তাদের ক্ষেত্রেও রোজা অবস্থায় ওষুধের মাত্রা কমাতে সহায়ক। শুধু রক্তের গ্লুকোজই নয়, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণেও রোজা মোক্ষম। এর সঙ্গে সঙ্গে রোজা রোগীকে সংযম, পরিমিতিবোধ ও শৃংখলার শিক্ষা দেয়, যা ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় অপরিহার্য।

নিরাপদে রোজা রাখতে ডায়াবেটিস রোগীরা মেনে চলতে পারেন কিছু টিপস-

১) অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে রোজা রাখুন। কোনোভাবেই নিজের উদ্যোগে ওষুধ বা ওষুধের ডোজ পাল্টাবেন না।

২) সেহেরি বাদ দেবেন না কোনোভাবেই। কোনো কারণে সেহেরিতে না খেতে পারলে সেদিন রোজা না রাখাই নিরাপদ।

৩) ইফতারের পর থেকে সেহেরি পর্যন্ত ৮ গ্লাস পানি পান করুন। 

৪) রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং নিয়মিত চেক করুন। অনেকের বাড়িতেই গ্লুকোমিটার (ব্লাড গ্লুকোজ পরিমাপের ছোট যন্ত্র) থাকে। তা ব্যবহার করুন।

৫) রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি, কম বা পানিশূন্যতা দেখা দিলে রোজা ভাঙাই আপনার জন্য নিরাপদ। এ অবস্থায় দ্রত ডাক্তারের সাথে দেখা করুন। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা চার মিলিমোল/লিটারের কম বা ১৬ মিলিমোল/লিটারের বেশি হলে আপনার রোজা ভাঙা দরকার। রক্তের গ্লুকোজ কমে গেলে আপনার শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন-

- শরীর কাঁপা

- কোনো কারণ ছাড়াই ঘেমে যাওয়া

- বুক ধড়ফড় করা

- প্রচণ্ড ক্ষুধা

- মাথা ঘোরা

- বিভ্রান্তি


শরীরে পানিশূন্যতা হলেও মাথা ঘোরা এবং বিভ্রান্তির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

৬) ইফতারের সময়ে ধীরেসুস্থে খাবার খান। অতি দ্রুত বা বেশি খেয়ে ফেলবেন না। রোজার সময়েও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নির্ধারিত খাদ্যতালিকা মেনে চলুন।

50
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত একটি রোগের নাম – ডায়বেটিস। এই রোগটি নারী-পুরুষ বা বয়স ভেদে সকলের মধ্যেই দেখা যায়। আমাদের দেশেও প্রচুর ডায়বেটিস রোগী রয়েছে এবং দিন দিন তা বাড়ছে। আমাদের চারপাশে তাকালেই অনেক রোগী দেখতে পাই। যদিও রোগটি ব্যপক হারে বাড়ছে, কিন্তু এর প্রতি মানুষের সচেতনতা তেমন নেই বললেই চলে। অনেকে এই রোগ নিয়ে না জেনেই দিন পার করছেন এবং শরীরের অবস্থার অবনতি ঘটাচ্ছেন। যদিও রোগটি সারাজীবনের তবুও একে নিয়ন্ত্রন করে সুস্থ্যসবলভাবে বেঁচে থাকা যায় অনায়াসে। এই রোগ নিয়ে সকলের মনেই নানা প্রশ্ন আছে।



প্রশ্নঃ ১কখন ডায়বেটিসের জন্য টেস্ট বা পরীক্ষা করানো উচিত?

উত্তরঃ


যদি আপনার বার বার প্রস্রাব পায়, রাতে বেশ কয়েকবার উঠতে হয় প্রস্রাব করতে, হঠাত ওজন কমতে থাকে, হঠাৎ খিদে বেড়ে যায়, হাত-পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ধরে, বারবার নানা ধরনের ইনফেকশন হয়, কেটে গেলে ক্ষত না শুকোয়-এমন লক্ষন দেখা দিলে অবশ্যই ডায়বেটিস রয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করিয়ে নেবেন। এ ছাড়াও মোটা মানুষদের নিয়মিত ডায়বেটিসের পরীক্ষা করানো দরকার। পাশাপাশি বাবা-মা, ভাই-বোন অথবা পরিবারের রক্তের সম্পর্ক আছে এমন কারও যদি ডায়বেটিস থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই এই টেস্ট করানো উচিত। ৪৫ বছর বয়সের পর থেকে নিয়মিতভাবে প্রতি তিন বছর অন্তর ডায়বেটিসের পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।

প্রশ্নঃ ২ডায়বেটিস বা সুগারের রোগ ধরলে সেটা কি কোনওদিন সারে?

উত্তরঃ


এই প্রশ্নের জবাব সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’তে ঠিকঠাক দেওয়া যায় না। কারণ, এমন অনেক মোটা মানুষ রয়েছেন যাঁদের ডায়বেটিস ধরেছে, তাঁরা যদি ঠিকঠাক নিয়ম মেনে খাওয়া দাওয়া করেন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করে নিজেদের আদর্শ দৈহিক ওজনের কাছাকাছি পৌঁছতে পারেন বা ৭-১০% ওজন কমাতে পারেন, তাহলে দেখা গেছে বেশ কিছু মানুষের ওষুধ বন্ধ করা গেছে।
 
প্রশ্নঃ ৩তার মানেই কি সেই মানুষটার ডায়বেটিস রোগ সেরে গেল?

উত্তরঃ


ডায়বেটিস রোগ একবার ধরা পড়লে সারা জীবনের ব্যাপার। আমরা যেটা দেখি, সেটা হল ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে কি না। যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে তার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।

প্রশ্নঃ ৪ডায়বেটিস থেকে কী কী জটিলতা শরীরে দেখা দিতে পারে?

উত্তরঃ


সারা বিশ্বে কিডনি ফেলিওরের প্রধান কারণটাই হল ডায়বেটিস মেলিটাস। এমনকী আমাদের দেশে অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ হল ডায়বেটিসের জন্য চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে যাওয়া। সুগারের জন্য শরীরের স্নায়ু, শিরা, ধমনী, প্রতিটি প্রত্যঙ্গেরই সমস্যা শুরু হয়। যার ফলে হার্ট অ্যাটাক, ব্রেনের স্ট্রোক, নিউরোপ্যাথি-এই সমস্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রশ্নঃ ৫ডায়বেটিস হলে কি একজন মানুষের পছন্দের সব খাবার বন্ধ করে দিতে হয়?

উত্তরঃ


না। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। একজন সাধারণ মানুষের হেলদি ডায়েট বলতে যা বোঝায়, বেশিরভাগ ডায়বেটিস রোগীর ক্ষেত্রে সেটা খেলেই চলে। আমরা যেটা হিসেব করে দিই, তা হল প্রতিটি রোগীর বয়স, ওজন এবং সারাদিনে কী ধরনের দৈহিক কাজকর্ম করতে হয়, তার ওপর ভিত্তি করে গড়া।

প্রশ্নঃ ৬ডায়বেটিস হলে মিষ্টি, আলু, ভাত সবই খাওয়া চলে?

উত্তরঃ


হ্যাঁ। আমরা হিসেব করে টোটাল ক্যালোরি ইনটেকের ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা দিতে পারি। এর মানে এই নয় যে, মিষ্টি, আলু, ভাত এইসব খাওয়া যাবে না। ন’মাসে-ছ’মাসে এক আধটা মিষ্টি খাওয়াই যায়, যদি রোগীর ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। আমরা সাধারণত ‘ব্ল্যাঙ্ক ক্যালরি’ বা খুব তাড়াতাড়ি শরীরে শোষিত হয় এমন ধরনের খাবার খেতে নিষেধ করি। যেমন-চিনি, কোল্ড ড্রিঙ্কস, চকোলেট ইত্যাদি। কারণ, এগুলো চট করে ক্যালরি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু, যদি কেউ একটা মিষ্টি খেয়ে সারাদিন সেই পরিমান ক্যালরি পরিশ্রম করে ঝরিয়ে ফেলতে পারেন, তাহলে ন’মালে-ছ’মাসে একটা মিষ্টি খাওয়া যেতেই পারে।

প্রশ্নঃ ৭ইনসুলিন শুরু করা মানে আর কোনও ওষুধ কাজ করে না। এটা কি ঠিক?

উত্তরঃ


ইনসুলিন কিন্তু ডায়বেটিসের আল্টিমেট এবং সেরা চিকিত্সা। যে সব ক্ষেত্রে ডায়বেটিসের ট্যাবলেট কাজ করে না, সেখানে ইনসুলিন ছাড়া কোনও গতি নেই। যখন কোনও ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, যেমন-হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেলিওর ইত্যাদি, তখন ডায়বেটিসের জন্য ইনসুলিন ছাড়া অন্য কোনও ওষুধ নেই। কিন্তু, বেশ কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা ভাল হয়ে গেলে এবং ‘স্টেবল’ থাকলে ইনসুলিন বন্ধ করে ট্যাবলেট চালু করা যেতে পারে। কিন্তু, এটা অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ, বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের তত্ত্বাবধানে হতে হবে।

প্রশ্নঃ ৮আনুমানিক কতজন মানুষ বিশ্বে ডায়বেটিস রোগে ভুগছেন?

উত্তরঃ


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ওয়ার্ল্ড হেলথ ওরগ্যানাইজেশন বা ‘হু’) এবং আই ডি এফ-এর মত সংস্থারা অনুমান করছেন যে, সারা বিশ্বে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ ডায়বেটিসে ভোগেন। এইসব সংস্থার অনুমান, আরও প্রায় ১০-১৫ কোটি ডায়বেটিক রোগী আছেন, কিন্তু কোনওরকম স্বাস্থ্য সেবার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ নেই বলে তাঁদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। দুর্ভাগ্যবশত, এই ২৫ কোটি সংখ্যাটা আগামী ১০ বছরে ৪০ কোটিতে পরিণত হতে চলেছে। আর একটা সমস্যা হল, উপমহাদেশে ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলছে। অনুমান করা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ১০-২০ শতাংশ মানুষ ডায়বেটিসের রোগী।

প্রশ্নঃ ৯ডায়বেটিসের চিকিত্সা চলাকালীন কতদিন অন্তর রক্তপরীক্ষা করাতে হয়?

উত্তরঃ


এখানে দিন বলে কোনও ব্যাপার নেই। ডায়বেটিসের বেশ কিছু কমপ্লিকেশনে অনেকসময় আমরা দিনে ৪-৫ বার পর্যন্ত টেস্ট করি। কিন্তু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দিনে বার দুয়েক টেস্ট করলেই চলে। যেটাকে আমরা ফাস্টিং এবং পি পি সুগার টেস্ট বলি। কতদিন পর পর টেস্ট করতে লাগবে, তা রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। কখনও ২-৩ দিন অন্তর, কখনও বা আবার ২-৩ মাস অন্তর পরীক্ষা করাতে লাগে।



প্রশ্নঃ ১০ফাস্টিং এবং পি পি সুগার কীভাবে টেস্ট করা উচিত?

উত্তরঃ


ফাস্টিং সুগার টেস্ট করতে গেলে অন্তত ৮ ঘণ্টা কোনওরকম ক্যালরি নেওয়া চলবে না। তবে, শুধু পানি খাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে পি পি সুগারের ক্ষেত্রে দিনের মেজর বা প্রধান মিলের পর টেস্ট করাতে হবে। যদি সকালে ভারী নাশতা করে দুপুরে হালকে টিফিন করার অভ্যাস থাকে, তাহলে নাশতার ২ ঘণ্টা পরে যে সুগার টেস্ট করা হবে, সেটাই পি পি সুগার। আর, যদি সকালে হালকা টিফিন করে দুপুরে ভারী খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে তার ২ ঘণ্টা পরের টেস্টটা হবে পি পি সুগার। যদি ফাস্টিং সুগার টেস্ট বা খালি পেটে সুগারের পরিমাণ ৭ মিলি.মোল/লিটার এর বেশি থাকে এবং পি পি সুগার বা ভরা পেটে সুগারের পরিমাণ ১১.১ মিলি.মোল/লিটার এর বেশি থাকে, তাহলে আমরা ধরে নিই যে রোগীটি ডায়বেটিস মেলিটাস হয়েছে। এর পর থেকেই তাকে চিকিৎসার আওতায় চলে আসা উচিত।

51
রমজান মাস মানে সংযমের মাস। খাবারের প্রতি সংযম রেখে খারাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখার শিক্ষা গ্রহণের মাস। কিন্তু এ মাস ঘিরেই যেন খাবারের উত্‍সব লেগে যায় ভোজনরসিক বাঙালীদের ঘরে ঘরে। ইফতারের থালা উপচে পড়ে নানা রকম খাবারে। ইফতারের নানা পদে বিশেষভাবে প্রাধান্য পায় বিভিন্ন তেলে ভাজা খাবার। ফলাফল, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, বুক-পেট জ্বালাপোড়া, ব্যথা। অথচ মাত্র দুটি ছোট্ট কাজ করে পুরো রোজার মাস গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রাখতে পারবেন দূরে। তাও আবার প্রিয় খাবার খাওয়া বাদ না দিয়েই! কী সেই কাজ দুটি? জেনে নিন।

১. ইফতার শুরু করুন খেজুর দিয়ে। শুরুতেই অনেকখানি পানি বা শরবত পান করে ফেলবেন না। পানীয় জাতীয় জিনিস ধীরে ধীরে ইফতারের অন্য খাবারের ফাঁকে ফাঁকে খান। ইফতার করা শেষ হলে আধা ইঞ্চি পরিমাণ কাঁচা আদা চিবিয়ে খান। রক্তচাপের সমস্যা না থাকলে খানিকটা লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে ভাজাভুজির খাওয়ার কারণে যে গ্যাসের সমস্যা হতো, তার সম্ভাবনা কেটে যাবে অনেকাংশে।

২. সেহেরিতে চেষ্টা করবেন কম তেল-মসলাযুক্ত খাবার খেতে। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কম হবে। সেহেরিতে যা-ই খান না কেন, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন। সেহেরি খাবার পর আধা কাপ পানিতে ১ টেবিল চামচ সাদা সিরকা মিশিয়ে পান করুন।

উপরের দুটি কাজ যদি পুরো রমজান অনুসরণ করতে পারেন, তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আপনার কাছ থেকে থাকবে বহু বহু দূরে।

52
গর্ভবতী মায়ের যদি শারীরিক কোনো জটিলতা না থাকে তাহলে তাঁর রোজা থাকতে কোনো বাধা নেই। তবে রোজা রাখা যাবে কি যাবে না এটা নির্ভর করে রোগীর অবস্থার উপর। প্রয়োজনে এ বিষয়ে রোজার মাস আসার আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে জেনে নিতে পারেন যে আপনি রোজা রাখায় কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকে মনে করেন, বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা রোজা রাখলে বুকের দুধ কমে যায় এবং সন্তান দুধ থেকে বঞ্চিত হয়  তাদের এমন ধারনা  সঠিক নয়। রোজা রাখলে বুকের দুধ কমার কোনো আশঙ্কা নেই। এজন্য গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মা রোজা রাখলে তাকে অবশ্যই সেহরি ও ইফতারের সময় প্রচুর তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। 

গর্ভবতী মায়েরা কখন রোজা রাখতে পারবেন?

গর্ভকালীন অবস্থার উপর ভিত্তি করে তাঁর রোজা রাখা নির্ভর করে। কখন রোজা রাখা যাবে বা যাবেনা এর ভিত্তিতে গর্ভকালীন সময়কে তিনটি  ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হলো ।

১। গর্ভের প্রথম তিন মাস:

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস রোজা না রাখাই উত্তম। এই সময় মায়ের গর্ভে অনাগত শিশুর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত হতে থাকে। তাই এসময় মায়ের শরীরে সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পানি ইত্যাদির পর্যাপ্ত সরবরাহ জরুরি। এ সময় যেহেতু মায়ের শরীর থেকেই গর্ভের শিশু তাঁর দরকারি জিনিস পায় সেহেতু এসময় মায়ের দেহে কোনো কিছুর অভাব ঘটলে পরবর্তী জীবনে শিশুর জীবনে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় অনেকের প্রেশার বা রক্তচাপ বেড়ে যায়। এ সময় তাঁকে নিয়মমতো কিছু ওষুধ খেতে হয়। রোজা রাখলে এর ব্যত্যয় ঘটে। তাছাড়া গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে যেহেতু গর্ভবতী মায়েদের বেশী বমি বমি ভাব হয়, মাথা ঘুরায়, খেতে কষ্ট হয় ও ওজন কমে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে তাই এই প্রথম তিন মাস রোজা না রাখাই ভালো।

২। গর্ভের মধ্যবর্তী তিন মাস:

গর্ভকালীন মাঝের তিন মাস কিছুটা রিলাক্স থাকে। কারণ মধ্যবর্তী তিন মাসে গর্ভবতী মায়েরা একটু ভালো অনুভব করেন। আর এই সময়ের মধ্যেই বাচ্চাটির গঠনও তৈরি হয়ে যায়। তাই ইচ্ছা করলে যদি অন্য কোনো সমস্যা না থাকে এ সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভবতী মা রোজা রাখতে পারেন। তবে দিন ছোট থাকার কারণে শীতকালে কষ্ট কম হয় বলে এসময়  তারা রোজা রাখতে পারেন। তবে গরমের সময় হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোজা না রাখাই উত্তম। যাঁদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁদের রোজা না রাখা ভালো।

৩। গর্ভের শেষ তিন মাস:

শেষের তিন মাস গর্ভবতী মাকে খুবই সতর্ক হয়ে চলা উচিত। যেহেতু এ সময় মায়ের পেটে বাচ্চা দ্রুত বাড়ে তাই গর্ভবতী মা ও তাঁর অনাগত সন্তানের পুষ্টি নিশ্চিত করতে মাকে পর্যাপ্ত খাবার ও বিশ্রাম নেয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া খুবই জরুরী। তাই এ সময় রোজা না রাখাই উত্তম।

এছাড়া যাঁরা হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি বা ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ করা অবস্থায় রয়েছেন, তাঁদের একটু বেশি সতর্ক থাকা উচিত। অনেক চিকিৎসার পরও যাঁদের এ অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেসব হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি মায়েদের রোজা না রাখাই ভালো। রাখতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।

গর্ভবতী মায়ের সাহরির খাবার কেমন হবে?

গর্ভাবস্থায় রোজা রাখতে চাইলে সাহরিতে তাঁকে একজন স্বাভাবিক মানুষের খাদ্যতালিকার ন্যায় সুষম খাবার খেতে হবে। তাকে ক্যালরি ও আঁশযুক্ত খাবারের দিকে বেশি খেয়াল করা দরকার। গরমের সময় রোজা শুরু হলে পানিশূন্যতা ও শরীরে লবণের পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে এজন্য এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাই ইফতার ও সেহেরির সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তাছাড়া যেসব খাবারে গ্যাস হয় বা বুক জ্বালা করে সাহরির সময় সেসব খাবারগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। তাই খাবার মেন্যুতে আপেল, কলা, খেজুর ইত্যাদি রাখা উচিত।

গর্ভবতী মায়ের ইফতারের খাবার কেমন হবে?

গর্ভবতী মায়েরা কয়েকটি খেজুর, ফলের জুস খেয়ে ইফতার শুরু করতে পারেন। এতে তাদের রক্তের সুগার লেভেল ঠিক থাকবে। ইফতারির মেন্যুতে দুধও রাখা যেতে পারে কারণ দুধ গর্ভবতী মায়েদের অ্যামোনিয়া হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। এছাড়া খাবারের তালিকায় সবজি, স্যুপ, সালাদ, মাছ, মাংস, প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন ডাল, বাদামি চালের ভাত এবং গমের রুটি ইত্যাদি রাখতে পারেন।

রোজাদার গর্ভবতী মায়েদের জন্য কিছু সতর্কতামুলক পরামর্শ

গর্ভাবস্থায় গুরুপাক, ভারি, ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত ও বাসি খাবার ইত্যাদি পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন।
ইফতার ও সেহেরিতে যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করুন। কোন অবস্থাতেই সেহরি না খেয়ে রোজা রাখার চেষ্টা করবেন না তাতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে।
গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি আঁশযুক্ত, প্রোটিনযুক্ত ও ফ্যাটসম্পন্ন খাবার গ্রহণ করুন কারণ এসব উপাদান ধীরগতিতে পরিপাক হয় বিধায় ক্ষুধা কম লাগবে।
রোজার সময় বেশি বিশ্রাম নিন ও দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলুন।
এ সময় পরিমিত চিনিযুক্ত ও জাউ ভাত জাতীয় খাবার খেতে পারেন।
এ সময় অনেকক্ষণ রোদে বা গরমে অবস্থান না করে বাতাস আছে এমন খোলামেলা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন।
পারলে রাতে খাবারের পর বিশ্রাম নিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করুন।
 

গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ক্যালরির প্রয়োজন হয় বলে একজন গর্ভবতী মাকে দিনে ছয়বার বা তারও বেশি খেতে বলা হয়। গরমকালে রোজা রাখলে সাধারণত শীতকালের চেয়ে অধিক সময় (প্রায় ১৪ ঘণ্টা) পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। এই দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই কষ্টকর । তাছাড়া গরমে গর্ভবতী মা প্রচুর ঘেমে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতায় ভুগতে পারেন। এছাড়া রোজা রাখার ফলে অনাগত শিশুটি অপুষ্টি ও কম ওজন নিয়ে জন্ম নিতে পারে। পাশাপাশি গর্ভবতী মা মূত্রনালির ইনফেকশনেও ভুগতে পারেন। তাই গর্ভাবস্থায় রোজা রাখলে যদি মা-বা বাচ্চার ক্ষতি হয়, বা যদি ডাক্তারের কোন নিষেধাজ্ঞা থাকে, তাহলে এসময় রোজা না রাখাই ভাল।

53
ছেলেবেলার কথা মনে আছে? আমরা যারা একটু গ্রামে বড় হয়েছি তখন কিন্তু কিছু না বুঝেই শুধুমাত্র খেলার ছলে দড়ি লাফাতাম। তখন এতো আধুনিক স্কিপিং রোপ ছিল না। আজকাল কিন্তু সেই দড়ি লাফানো একটি দারুণ ব্যায়াম হিসেবে পরিচিত। আপনার স্বাস্থ্য ফিট রাখতে, ওজন কমাতে, শরীরের ঘাম ঝরাতে দড়ি লাফের বিকল্প খুব কম। আসুন জেনে নিই,  দড়ি লাফানোর  ১৪টি উপকারিতা সম্পর্কে।

(১)  এটাকে একটি ভালো  কার্ডিও ও হাই ইনটেনসিভ ইন্টারভেল ট্রেইনিং বলা হয়।

(২) আপনার দেহের  চর্বি ঝরাতে এর জুড়ি নেই।দৌড়ানোর চেয়ে স্কিপিং বেশি ক্যালোরি বার্ন করতে সক্ষম। এক ঘন্টা স্কিপিং-এ ১৩০০ ক্যালোরি খরচ হয়!

(৩) বেশিরভাগ সময় বাইরে দৌড়াতে যেতে হবে চিন্তা করে আলসেমি ঘিরে ধরে। তবে হাতের কাছে দড়ি থাকলে আর ঘরের বাইরে যেতে হবে না । ঘরেই করতে পারবেন। তাই খারাপ আবহাওয়া আপনার ফিটনেস  রুটিনে আর বাধা নয়।

(৪) এটা ব্যায়ামের সবচেয়ে সস্তা উপার । একটি রোপ  হলেই হল।

(৫) এটা আপনার মাংসপেশিকে টোন করতে সাহায্য করবে।

(৬) এটা আপনার হাত পা একসাথে চালানো ব্যাল্যান্স করবে সাথে শরীরের অন্য অঙ্গ প্রতঙ্গ।তাই  সব অ্যাথলেটরাই  স্কিপ্পিং চর্চা করেন ।

(৭) শরীরের সামাঞ্জস্য  রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম।

৮) এতে আপনার ফুল বডি ওয়ার্ক আউট হবে। এটা থাই  টান টান করতে খুব কার্যকর। এমন কি হাতের মাংসপেশিও ।

(৯) আপনার হিপের মাংসপেশি টান টান করে।

(১০)  গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্কিপিং আপনার জয়েন্টে কম চাপ তৈরি করে দৌড়ানোর চেয়ে। তাই দৌড়ানোর চেয়ে স্কিপিং ভালো ব্যায়াম হিসেবে পরিচিত।

(১১) যেহেতু স্কিপিং এর ফলে হার্ট বিট  ফার্স্ট হয় তাই এটি আপনাকে আলাদা করে কার্ডিও ভাস্কুলার এক্সারসাইজ করতে হবে না।

(১২) এই এক্সারসাইজ  করতে আপনাকে একেবারে পারদর্শী হতে হবে তা নয়। বিগিনার থেকে অ্যাডভান্স সবাই এটি করতে পারবে।

(১৩) নিয়মিত এই  এক্সারসাইজ  হাড়ের  ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে।

(১৪) স্কিপ্পিং রোপটি আপনি আপনার হাতের ব্যাগেও রাখতে পারবেন তাই আপনার ব্যায়ামের রুটিন কখনোই মিস হবে না।

স্কিপিং এর জন্য যা আপনিই মনে রাখবেন:

একটি ভালোমানের রোপ কিনবেন।
 
খালি পায়ে স্কিপিং করবেন নাকি জুতা পায়ে? অনেক বলে যে, খালি পায়ে স্কিপিং ভালো। এতে পায়ের অনেক সমস্যাও ভালো হয়। কিন্তু হটাৎ করে আপনি খালি পায়ে স্কিপিং করলে ব্যথা হতে পারে। তাই স্পোর্টস সু পরে স্কিপিং করাই শ্রেয়।
মেয়েদের জন্য বিশেষ করে প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের জন্য ভালো মানের স্পোর্টস ব্রা পরে স্কিপিং করা উচিৎ।
প্রথমে ধীরে ধীরে স্কিপিং করবেন এবং আস্তে আস্তে গতি বাড়াবেন ।
সমান জায়গায় স্কিপিং করবেন। উডেন ফ্লোর হলে ভালো হয়।
খোলা জায়গায় স্কিপিং করে আপনি আনন্দ পাবেন বদ্ধ জায়গার চেয়ে।
এটি একটি হাই ইনটেনসিটি ব্যায়াম তাই ওয়ার্ম আপ খুব জরুরী।


স্কিপিং এর প্রকারভেদ:

(১) ডাবল জাম্প- সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কিপিং স্টাইল যাতে বেশি গতি চর্চা হয় আর ক্যালোরি বার্নও বেশি হয় ।

(২) ক্রস জাম্প-  ইনটেনসিভ স্কিপিং স্টাইল  তবে মাঝে মাঝে আপনাকে ব্রেক দিতে হবে।

(৩) এক পায়ে লাফানো- এটা অ্যাডভান্স স্কিপিং তাই ডাবল জাম্প বা ক্রস জাম্প চর্চা করে আয়ত্তে এনে তবে এটি করা উচিৎ। এতে বেশি ব্যাল্যান্স দরকার হয়।



টিপস

স্কিপিং করার জন্য প্রথমে ১৫ মিনিট স্কিপিং করবেন প্রতি ১০-১৫ সেকেন্ড ইন্টারভেলে। প্রথমে ৫ মিনিট ওয়ার্মআপ করবেন।

54
আমাদের দৈনন্দিন জীবন কসমেটিক্স ছাড়া যেন প্রায় অচল। না চাইলেও কিছু না কিছু কসমেটিক্স আমাদের ব্যবহার করতে হয়। কখনও কখনও এই কসমেটিক্স থেকে হয়ে যায় অ্যালার্জি। প্রসাধনীর ছোঁয়ায় আমেজ যতটুকু তার চেয়েও বেশি হচ্ছে চমকের ছোঁয়া; কিন্তু এ প্রসাধনী ব্যবহারেও আছে নানা সমস্যা। বাজারে বিভিন্ন ধরনের যে প্রসাধন সামগ্রী পাওয়া যায় তা থেকে সৃষ্টি হতে পারে ত্বকের প্রদাহ, হতে পারে অ্যালার্জি। আসুন এর করণ ও প্রতিকার জেনে নিই।

প্রসাধনীজনিত প্রদাহ মূলত তিন ধরনের।

১. প্রাথমিক উত্তেজনাপ্রসূত,
২. সালোক সংবেদনজনিত,
৩. অ্যালার্জিজনিত।

কসমেটিক্স থেকে অ্যালার্জি কেন হয়?

প্রথমেই আসা যাক নেইল পলিশের কথায়। নেইল পলিশে থাকে সালফেনোমাইড এবং ফরমালডিহাইড রেজিন, যা ব্যবহারে গলায় এমনকি চোখের পাতায়ও প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। আবার অনেকেরই অভ্যাস আছে নেইল পলিশ বারবার তুলে নতুন নেইল পলিশ লাগানোর। এ তোলার কাজে যা ব্যবহার করা হয় তাতে থাকে অ্যাসিটোন। উপর্যুপরি অ্যাসিটোন দ্রবণ ব্যবহারে নখের ক্ষতি হতে পারে।

চুল পাকলে অনেকে কলপ ব্যবহার করে থাকেন। চুলের কলপে থাকে প্যারাফিনাইল ডাইঅ্যামাইন। এজন্য কলপ ব্যবহারের পরপরই মাথায়, গোঁফ বা দাড়িতে অ্যালার্জির সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের কলপ ব্যবহারে ত্বকে অ্যালার্জির সৃষ্টি হবে কি-না, তা কানের লতির পেছনে ২৪ ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে পরখ করতে পারেন। উন্নত দেশের মেয়েরা মাথার চুলের রং সাদা করতে পছন্দ করে। চুলের রং সাদা করার কাজে ব্যবহূত কেমিক্যাল যেমন—পারসাইড ও অ্যামোনিয়া ব্যবহার করা হয়, তা অনেক ক্ষেত্রে উত্তেজনাজনিত প্রদাহ বা অ্যালার্জির সৃষ্টি করে থাকে।

চুল কুঁচকানো বা সোজা করা এখন বেশ জনপ্রিয়। ফ্যাশনের জন্য যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয় তা থেকে সাধারণত কোনো প্রদাহ বা অ্যালার্জির সৃষ্টি হয় না বটে, কিন্তু এর ফলে চুল ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে। চুলের জন্য বিভিন্ন স্প্রে আমরা ব্যবহার করে থাকি। এ স্প্রেতে থাকে ল্যানোলিন, যা অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।

বাজারে আবার বিভিন্ন হেয়ার লোশন বা টনিকও পাওয়া যায়। এসব সিনকোনার টিংচার থেকে অ্যালার্জি সৃষ্টি হতে পারে। আবার সুগন্ধি পদার্থ ব্যবহারের অভ্যাস আমাদের অনেকেরই। হেয়ার লোশনের সঙ্গে এই সুগন্ধি পদার্থের ব্যবহারে আপনার ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি হতে পারে। কারণ সুগন্ধি লোশনে থাকে রিসর্সিন, কুইনাইন সালফেট ইত্যাদি। লিপস্টিকে যে রঞ্জক পদার্থ থাকে তার থেকে কিন্তু অনেকের ঠোঁটে অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়ে থাকে। কারণ এতে ডাই এবং টেট্রা ব্রোমোফ্রোরোসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাজেই যারা ঠোঁটের সমস্যায় ভোগেন তারা লক্ষ করবেন যে, লিপস্টিক ব্যবহার করার পর তা বাড়ে কি না? রূপসজ্জার জন্য অনেকেই মাশকারা, আইশ্যাডো বা আইলাইনার ব্যবহার করে থাকেন। মনে রাখবেন এর থেকেও অ্যালার্জির সৃষ্টি হতে পারে।

কোন কসমেটিক্স থেকে অ্যালার্জি হয়

সবার ত্বক এক রকম হয় না। অ্যালার্জি আসলে ত্বকের ধরনের উপর নির্ভর করে হতে পারে। কারো কারো ঠোঁটে লিপস্টিক দিলে হয়, আবার কারো লোশন, শ্যাম্পু, সাবান থেকেও অ্যালার্জি দেখা দেয়। খুব বেশি ফেসিয়াল করালেও অ্যালার্জি হতে পারে। কাজল, চুলের রং থেকেও অনেকের অ্যালার্জি হয়।

কীভাবে বুঝবেন অ্যালার্জি হয়েছে

* ত্বকে লালচে ভাব দেখা যায়।
* ত্বকে নানান রকমের গোটা ওঠে।
* ত্বক খসখসে হয়ে যায়।
* অনেক সময় ত্বকে কালো কালো ছোপ দাগ পড়ে।
* মাথায় হলে চুলের গোড়া ভীষণ চুলকায় ও কপালের চারপাশ ফুলে ওঠে।

এর থেকে প্রতিকার পেতে হলে কী করবেন

* কসমেটিক্স কেনার আগে ভালো করে তার মেয়াদের তারিখ দেখে নিন।
* সব সময় ভালো কোম্পানির পণ্য কেনার চেষ্টা করুন।
* কাজলে অ্যালার্জি হলে, কাজল দেওয়ার সময় খেয়াল রাখুন তা যেন চোখের মণির থেকে বেশ দূরে দেওয়া হয়। তাহলে আর এই সমস্যা নাও হতে পারে।
* যাদের ত্বক সেনসিটিভ তারা হালকা রং এবং হালকা সুগন্ধিযুক্ত পণ্য ব্যবহার করুন।
* খুব বেশিক্ষণ মেকআপ করে থাকবেন না।
* যে কসমেটিক্সে সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করবেন, তার ব্যবহার সাথে সাথে বন্ধ করে দিন।
* অনেক দিন ধরে ঘরে রাখা কোনো কসমেটিক্স ব্যবহার না করাই ভালো।
* ত্বক সব সময় পরিষ্কার রাখবেন।

যা খাবেন যা খাবেন না

যাদের অ্যালার্জি আছে তারা অ্যালার্জিযুক্ত খাবার, যেমন—গরুর মাংস, বেগুন, পুঁই শাক ইত্যাদি খাবেন না।

55
অনেকেই চিনি খেতে ভালবাসেন। এর মিষ্টি স্বাদ প্রায় সবার প্রিয়। কিন্তু অতিরিক্ত চিনি খাওয়া মোটেই ভাল নয়। মাত্রাতিরিক্ত চিনি শরীরের জন্য নানা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই আমাদের জানা প্রয়োজন যে প্রতিদিন কতটুকু চিনি আমরা খেতে পারি।

আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন মহিলাদের প্রতিদিন অনধিক ১০০ ক্যালরি (২৫ গ্রাম) এবং পুরুষদের অনধিক ১৫০ ক্যালরি (৩৫.৭ গ্রাম) চিনি খাবার পরামর্শ দিয়েছেন। এক চা-চামচ চিনিতে থাকে ১৬ ক্যালরি। তাই মহিলারা সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ চা-চামচ এবং পুরুষের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ চা-চামচ খাওয়া যেতে পারে। তবে এই হিসাব অন্যান্য খাবার যেমন পানিয়, ফাস্ট ফুড, বিভিন্ন তরকারী এবং অন্যান্য খাবারে ব্যবহৃত চিনি সহ।

মার্কিনরা গড়ে প্রতিদিন ২২ চা চামচ চিনি খান। এই বাড়তি চিনি তাদের পেটে যায় রান্নায় ব্যবহূত উচ্চ ফ্রাকটোজ যুক্ত কর্ণ সিরাপ, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চা বা কফি মিষ্টি করতে ব্যবহূত চিনি প্রভৃতি থেকে। বাড়তি চিনি শরীরে আরো জমা হয় ঠান্ডা পানীয় থেকে। এক ক্যান সোডা পানিতে থাকে ৮ চা চামচ চিনি বা ১৩০ ক্যালরি। প্রত্যেক কোলাতে সাধারণত: এই পরিমাণ চিনি থাকে।

মাত্রাতিরিক্ত এই চিনি গ্রহণের ফলশ্রুতিতে দেহ যেমন স্থূল হয় তেমনি এটা উচ্চ রক্তচাপ, হূদরোগ এবং সন্ন্যাস রোগের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট। সুতরাং নিরোগ দেহ ও জীবন দীর্ঘায়িত করতে চাইলে পরিমিত পরিমাণে চিনি খাওয়ার অভ্যাস করুন।

56
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের নামটি আজকাল বেশ শুনতে পাওয়া যায়। ওজন কমানোর জন্য অনেকেই এটি খেয়ে থাকেন। শুধু ওজন কমানোর জন্য নয়, ত্বক এবং চুলের যত্ন নিতেও অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের জুড়ি নেই।

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন, অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারটা কি?

অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার

অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান যাতে রয়েছে অ্যাসিটিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড এবং ম্যালিক অ্যাসিড। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন, এনজাইম, মিনারেল সল্ট এবং অ্যামিনো অ্যাসিড, যা সাধারণ ঠাণ্ডা-কাশি, পেশীতে ব্যথা, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করে থাকে। স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি সৌন্দর্য রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার।

ত্বক এবং চুলের যত্নে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের কিছু কার্যকারী ব্যবহার নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।


(১) ব্রণকে বলুন বাই বাই

এক অংশ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এবং দুই অংশ পানি একটি পাত্রে মিশিয়ে নিন। একটি তুলোর বল মিশ্রণে ভিজিয়ে নিন। এটি ব্রণের উপর রাখুন ১০ মিনিট। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার প্রসেসটি রিপিট করুন।

অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারে অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা ব্রণ সাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি ত্বকের পিএইচ লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখে।

(২) খুশকি দূর করতে

একটি পাত্রে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার নিয়ে নিন। এরপর একটি তুলোর বল তাতে ভিজিয়ে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করে লাগান। এবার একটি টাওয়েল গরম পানিতে ভিজিয়ে নিন। এই টাওয়েল দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে রাখুন। এক ঘন্টা পর কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল  ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার এই পদ্ধতি অ্যাপ্লাই করুন। দেখবেন এক মাসের মধ্যে খুশকি গায়েব হয়ে গেছে।

(৩) স্কিন টোনার 

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার বেশ উপকারী। এর আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। এছাড়া ত্বকের পিএচ লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার।

আধা কাপ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এবং এর সাথে পানি মিশিয়ে নিন। আপনি চাইলে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মেশাতে পারেন। একটি তুলোর বল এতে ভিজিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন। এটি কয়েক মিনিট ত্বকে রেখে দিন। দিনে দুইবার ব্যবহার করুন। আপনি যদি স্বাভাবিক ত্বকের অধিকারী হন তবে এক অংশ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এবং চার অংশ পানি মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।

(৪) সানবার্ন রোধে

ত্বকে একবার সানবার্ন হলে তা দূর করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। ত্বকের এই রোদেপোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করবে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার। সমপরিমাণ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এবং ঠাণ্ডা পানি একসাথে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ত্বকে ম্যাসাজ করে লাগান। এটি দিনে কয়েকবার ব্যবহার করুন।

(৫) চুলের আগা-ফাটা রোধ

চুলের আগা ফাটা রোধ করতে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার অনেক কার্যকর। শ্যাম্পু করার পর এটি চুলে লাগান। তারপর অনেক মিনিট পর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন। কিছুদিনের মধ্যে চুলের আগা ফাটা দূর হয়ে যাবে।

(৬) চুলের রুক্ষতা দূর করতে

রুক্ষ, শুষ্ক চুল নিয়ে চিন্তিত? চুলের এই রুক্ষতা দূর করে চুলকে শাইনি করে তুলতে সাহায্য করবে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার। ১/৪ কাপ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এবং দুই কাপ পানি একসাথে মিশিয়ে নিন। চুল শ্যাম্পু করার পর এটি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। মাথার তালুতে এটি ম্যাসাজ করে লাগান। ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন।

(৭) নখের হলদেটে ভাব দূর করা

বিভিন্ন কারণে নখ হলেদেটে হয়ে যায়। নখের এই হলদেটে ভাব দূর করে দেয় অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার। ১/২ কাপ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণে আঙ্গুল ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলন। অলিভ অয়েল দিয়ে আঙ্গুলগুলো ম্যাসাজ করুন। এটি দিনে দুইবার ব্যবহার করুন।

তবে কোনকিছুরই অতিরিক্ত কিন্তু ভালো নয়। প্রয়োজনের বেশি পরিমাণ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার খেলে দাঁতের ক্ষয়, হাড়ের ডেনসিটি কমে যাওয়া (অস্টিওপরোসিস), হাইপোক্যালেমিয়া (পটাসিয়াম লেভেল কমে যাওয়া), ব্লাড সুগার লেভেল কমে যাওয়া, টিস্যু ড্যামেজ ইত্যাদি সাইড ইফেক্টের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  তাই পরিমিত পরিমাণে এবং দরকার হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উত্তম।

57
বর্তমানে নারীরা সবক্ষেত্রে পুরুষদের সাথে সমান তালে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে। কর্মক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং নারীদের পুরুষদের চাইতেও বেশি পরিশ্রম করতে হয়। কারণ তাঁদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসে কাজ করে ঘরে এসে আবার করতে হয় রান্নাবান্না, ছেলেমেয়েদেরকে সামলানোসহ সংসারের আরো নানান যাবতীয় কাজ। তাই চাকরিজীবী নারীদের নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া দরকার। কিন্তু চাকরিজীবী নারীরা কিভাবে এটি করবেন? চলুন, একটু না হয় জেনে নেয়া যাক।

কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা

প্রথমেই যেটি দরকার সেটি হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বানিয়ে নেওয়া। যা আপনাকে করতে হবে অফিস ও ঘরের কাজের মধ্যে সমন্বয় রেখে।

দিনের শুরুতে

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে হবে। সময়টি এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে সংসারের যাবতীয় কাজ শেষ করে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় থাকে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান

কাজের চাপে চাকরিজীবী নারীরা অনেক সময় পানি পান করতে ভুলে যান। যা তাঁদের পানিশূন্যতার কারণ হতে পারে। শুধু তাই নয়, এটি ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। তাই অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখা খুবই জরুরি। প্রয়োজনে সঙ্গে পানির বোতল রাখুন।

ব্যায়াম

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। হালকা ও মুক্ত হাতে ব্যায়াম করুন। এতে সারাদিন আপনার শরীর ও মন সজীব ও চাঙা থাকবে। অফিস থেকে ফিরে আসার পরও নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন।

সুষম খাদ্য গ্রহণ

বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। আবার খাবার অতিরিক্ত কমও খাওয়া যাবে না। কারণ এতে আপনার শরীর ‍দুর্বল হয়ে যাবে। খাবারের মধ্যে বৈচিত্র্য নিয়ে আসুন। খেয়াল রাখবেন আপনার খাবার তালিকায় ফল ও সবজি যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। নিয়মিত সুষম খাদ্যাভ্যাস আপনাকে সুষ্ঠ ও সবল রাখবে।

হাঁটাহাঁটির অভ্যাস

অফিসে একটানা বসে কাজ না করে কাজের ফাঁকে একটু হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস করুন। দাঁড়িয়ে কাজ করার অভ্যাসও করতে পারেন। এটি আপনার শরীরকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করবে।

সঙ্গে হালকা খাবার রাখুন

অফিসে দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকা যাবে না। কারণ তা আপনার শরীরের অ্যাসিডিটিসহ বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। সবসময় নিজের সঙ্গে করে হালকা খাবার নিয়ে যাবেন। বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ও বিস্কুট জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।

নিয়ম করে ডাক্তার দেখান

ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে অনেক কর্মজীবী নারীরা ছোটখাটো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাকে অবহেলা করেন। এই ছোটখাটো স্বাস্থ্য সমস্যাই পরে বড় আকার নিতে পারে। তাই অবহেলা করবেন না। নিয়ম করে ডাক্তার দেখান ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।

বিনোদন

সপ্তাহ শেষে ছুটির দিনটিতে পরিবার নিয়ে বিভিন্ন বিনোদনের আয়োজন করুন। যেমন নতুন কোন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়া, প্রিয় কারো সাথে দেখা করা ও আড্ডা মারা। বড় ছুটি পেলে দূরে কোথাও ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়তে পারেন। এটি কাজে আপনার একঘেঁয়েমি দুর করে নতুন উদ্যমে কাজ করার শক্তি জোগাবে।

হাসিখুশি থাকুন

কর্মক্ষেত্রে নেতিবাচকতার চর্চা যেমন সহকর্মীদের সঙ্গে পরচর্চায়, পরনিন্দায়, হতাশার কথায় অংশ নেবেন না। সম্ভব হলে এগুলোকে নিরুৎসাহিত করবেন। নিজের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা একান্ত বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করুন অথবা কোন মনোবিদের সহায়তা নিন। সবসময় হাসিখুশি থাকুন ও নিজের কাজকে উপভোগ করুন।

আসলে ব্যস্ততা এতটাই অবসন্ন করে রাখে যে, এই ব্যাপারগুলো না চাইতেও খেয়ালের বাইরে চলে যায়। তবুও নিজের খেয়ালটা কিন্তু নিজেকেই রাখতে হবে। নিউট্রিশন আর ফিটনেসে গরমিলটা এড়ানো গেলে কিন্তু কর্মব্যস্ত জীবনটাও উপভোগ্য হয়ে উঠবে।

58
আমরা এমন একটা সময়ে বাস করি যেখানে সবাই হয় সৌন্দর্য বা স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য নিজের ওজন , ফিগারের দিকে চড়া নজর রাখে… সেখানে হঠাৎ যদি একদিন দেখি শখের জামাটার হাতা টাইট হয়ে যাচ্ছে, শরীরের এখানে সেখানে নতুন কিছু চর্বির আস্তর! তখন যে কতটা কষ্ট হয় সেটা আমরা সবাই কমবেশি জানি তাই নয় কি?

আচ্ছা এমনটা কি আপনার সাথেও হয়? রোজ যেমনটা খান তেমনই খাওয়াদাওয়া, কাজকর্ম, হালকা এক্সারসাইজ করছেন। কিন্তু কথা নেই, বার্তা নেই হঠাৎ ৫ কেজি ওজন বেড়ে গেল! টেরই পেলেন না! আর যারা ওজন লক্ষ্য করেন না তারা তো মিনিমাম ১৫-২০ কেজি বাড়ার আগে নিজের এই চেঞ্জ নিয়ে তেমন চিন্তাই করেন না! আবার কেউ কেউ আছেন, প্রানপন চেষ্টা করেও ওজন কমাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাতাসেও যেন ওজন বাড়ে, তাই না?

উপরের একটা সিচুয়েশনেও যদি আপনি পড়ে থাকেন কখনো, আজ আপনার সাথেই কথা বলতে চাই…!
কি ভাবছেন নতুন একটা ‘ডায়েট চার্ট’ নামক বস্তু দেব? না না , এক্সারসাইজ আর হেলদি লাইফস্টাইল ছাড়া যে  স্বাস্থ্য, ফিগার কোনটাই কনট্রোলে আনা সম্ভব না সেটা আমরা ভালভাবেই জানি।  কিন্তু অনেক সময় সেসব কিছুই কাজ করে না, কিন্তু কেন? আমাদের দেশের অধিকাংশ নারীই প্রবলেমের গভীরে যাবার চিন্তাটুকুও না করে বছরের পর বছর ‘ক্রাশ ডায়েট’ নামক টর্চার নিজের উপরে চালান। লাভতো কিছুই হয় না, ফ্রি হিসেবে পান গ্যাস্ট্রিক, এসিডিটির জীবনভর সমস্যা!

হ্যাঁ, একটা বিশাল অংশের মানুষের অস্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির মূল কারণ ‘হরমোনাল ইমব্যালেন্স’ । আর এই ক্ষেত্রে ওজন কমানোর চিন্তা করার আগে হরমোন লেভেল কনট্রোল করতে হবে। এছাড়া কোন উপায় আসলে নেই। আর শুধু মাত্র ডায়েট বা লাইফস্টাইল দিয়েও আবার হরমোন লেভেল কন্ট্রোলে রাখাটা সম্ভব নয়। এজন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেডিকেল হেল্পের দরকার হয়। হরমোনের কারনে ওজন বেড়ে যাওয়াটা কিন্তু এখানে মেইন প্রবলেম নয়। হরমোন ইমব্যালেন্সটা মেইন প্রবলেম! আর ওজন বেড়ে যাওয়া এই ইমব্যালেন্স এর কারণে তৈরি রোগ ব্যাধির একটা ‘উপসর্গ’ মাত্র। তাই মেইন প্রবলেমটা কোথায় সেটা বের করে ট্রিট যত কুইকলি করবেন ততই ভালো।

আসুন কিছু জেনারেল হরমোনাল ইমব্যালেন্স এরক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস এবং লাইফস্টাইল এর কিছু চেঞ্জ নিয়ে কথা বলি-

করটিসল (Cortisol)

শরীরে তৈরি প্রধান ‘স্ট্রেস হরমোন’।নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে যেকোনো স্ট্রেসফুল সিচুএশনে অ্যাডরেনাল গ্ল্যাণ্ড ‘করটিসল’ প্রডিউস করে। আর দেহে প্রচুর পরিমাণে করটিসল থাকলে দেহ ‘ইনফ্লেমেটোরি মুড’-এ চলে যায়। যার লং টার্ম রেজাল্ট ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, বিভিন্ন অটো ইমিউন রোগ ব্যাধি। খুব অল্প সময়ের স্ট্রেসে করটিসল আমাদের অ্যাংজাইটি কমাতে হেল্প করে, বাট সবসময় এই হরমোনের লেভেলে ইমব্যালেন্স থাকলে দেহের পুরো সিস্টেম ধ্বংসও সে একাই করতে পারে। যেমন- অতিরিক্ত ইনসুলিন প্রোডাকশন এবং ফ্যাট সেল প্রোডাকশন ( ওজন বাড়ার কারণ)।

*কি করবেন?

অবশ্যই যেকোনো মূল্যে প্রতি রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাবেন। রোজকার রুটিনে স্ট্রেস কন্ট্রোল করা শহরের বিজি লাইফে খুবই জটিল। কিন্তু উপায় নেই। তাই মেডিটেশন করার ট্রাই করুন। অবশ্যই যেকোনো ভাবে প্রসেসড ফুড, প্রিজারভেটিভ এভয়েড করবেন।

থাইরয়েড (Thyroid)

আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ হরমোনের সমস্যা বলতে এক প্রজনন হরমোন আর এই থাইরয়েডকেই চেনে! তাই একে নতুন করে পরিচিত করিয়ে দেবার কিছু নেই। থাইরয়েড প্রবলেমে ওজন বাড়ে, কমন নলেজ, কিন্তু কেন? ভেবেছেন কখনো? বলছি, থাইরয়েড গ্ল্যাণ্ড থেকে নিঃসরিত হরমোনের একটা প্রধান কাজ আমাদের মেটাবোলিজম , ঘুম, হার্ট রেট, বৃদ্ধি কন্ট্রোল করা। যখন যথেষ্ট হরমোন শরীরে তৈরি হয় না, তখনই হাইপারথাইরয়েডিজম হতে পারে। কেন দরকারি হরমোন ঠিকভাবে তৈরি হচ্ছে না? ডাক্তাররা অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল আর জেনেটিকস কে দায়ি করেন। ম্যালনিউট্রিশন, টক্সিক আবহাওয়া- এসবও বেশ বড় কালপ্রিট! থাইরয়েডের অভাবে একি সাথে বডির মেটাবোলিজম মানে ক্যালরি থেকে এনার্জি কনভার্সনের রেট বাধাগ্রস্থ হয়, ফ্যাট বাড়তে থাকে এবং দেহে পানি জমতে থাকে। দুই মিলে কি হয়? হঠাৎ করে ২০ কেজি ওজন বেড়ে যায়!

*কি করবেন?

থাইরয়েড রিলেটেড সমস্যা আছে সন্দেহ থাকলে কোন দিকে না তাকিয়ে সাথে সাথে ডাক্তার দেখাবেন। আর মেডিকেশনের সাহায্যে সবসময় হরমোন ব্যালান্সে রাখার চেষ্টা করবেন। আয়োডিন যুক্ত লবণ খাবেন এবং কাঁচা শাক সবজি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করবেন। ডাক্তারের সাহায্য ছাড়া কোনভাবেই এই প্রবলেম আপনি কন্ট্রোল করতে পারবেন না।

লেপটিন (Leptin)

খাবারের সময় পেট ভরেছে কি ভরে নি এটা আপনি কিভাবে বোঝেন বলুনতো? এই ‘ভরপেট ফিলিং’ দেবার পেছনে হাত আছে ‘লেপটিন’ নামক আমাদের কাছে মোটামুটি অপরিচিত এই হরমোনের। লেপটিন আমাদের বডিকে সিগন্যাল দেয় যে কখন তার ফুয়েল ট্যাংক পুরো ভরে গেছে, তাই আমরা সেটা টের পেয়ে খাওয়া বন্ধ করি। কিন্তু অতিরিক্ত প্রসেসড খাবার, প্রিজারভেটিভ, চিনি এবং চিনি যুক্ত খাবার আমাদের দেহে অতিরিক্ত লেপটিন তৈরি করে। এতে কি হয়? দেহের ‘লেপটিন সেনসিটিভিটি’ কমে যায়। অর্থাৎ লেপটিন তৈরি হলেও তখন বডি এটা বোঝে না যে তার আর খাবারের দরকার নেই যথেষ্ট হয়েছে। সে অতিরিক্ত খাবার খেয়েই যায় । আর এরই ফল অতিরিক্ত ওজনের ভার।

*কি করবেন?

দুই তিন ঘণ্টা পরপর স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খান। অতিরিক্ত চিনি, মিষ্টি এবং মিষ্টি ফল পরিহার করুন। এবং প্রচুর প্রচুর পানি খান। বিস্কিট, চানাচুর, সাদা চিনি, কোল্ড ড্রিংক খাওয়া একেবারেই বন্ধ করুন।

মেলাটোনিন (Melatonin)

‘ঘুমের হরমোন’ নামেই এর পরিচিতি বেশি। আজকাল অনেকেই ঘুমের ন্যাচারাল সাইকেল মেনটেন করতে মেলাটোনিন সাপ্লিমেনট খেয়ে থাকেন। পিনিয়াল গ্ল্যাণ্ড থেকে তৈরি এই হরমোন আমাদের ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে এবং রোজ একই সময়ে ঘুমানোর সিগন্যাল দেবার কাজটা করে। ন্যাচারালি রাতে দেহে মেলাটোনিন বেশি নিঃসরিত হয় এবং সকালে কমে আসে (সান সাইকেলের সাথে তাল রেখে) এজন্য সকালে ঘুমানো স্বাভাবিক মানুষের জন্য কঠিন এবং রাতে ঘুমিয়ে পড়াটা সহজ। দেহ রাতের ঘুমের সময়টাতে দেহের ক্ষয় ক্ষতি গুলো সারিয়ে তোলে। কিন্তু ঘুমের সাইকেল এবং মেলাটোনিন-এর লেভেলে অসামাঞ্জস্য দেখা দিলে এই রিপেয়ারের কাজগুলো ঠিকভাবে হয় না। এতে ইনফ্লেমেশন বাড়ে, দেহে অতিরিক্ত পানি জমে যায়, মেটাবলিসম স্লো হয়ে যায় এবং ফলাফলে ওজন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।

*কি করবেন?

রাত ১০ টার পড়ে ঘরে কোন আলো জ্বালাবেন না, চোখের সামনে ব্লু লাইট (যেকোনো স্ক্রিন যেমন ফোন, পিসি, টিভি ব্লু লাইট নিঃসরণ করে) রাখবেন না। পিসি, ফোনে নাইট লাইট সেটিং ইউজ করুন যাতে সূর্য ডোবার সাথে সাথে কালার টোন কুল থেকে ওয়ার্ম হয়ে যায়। এতে অনেক রাত পর্যন্ত “ঘুমাতে পারছি না” এই অজুহাতে জেগে থাকার সমস্যা কমবে। কাঠবাদাম, চেরি, সূর্যমুখীর বীজ, এলাচি এসব হচ্ছে ন্যাচারাল মেলাটোনিনের সোর্স। তাই খাবার তালিকায় এসব রাখার ট্রাই করুন।

ইসট্রোজেন (Estrogen)

প্রধান নারী প্রজনন হরমোন। কিন্তু নারী পুরুষ দুইয়ের দেহেই ন্যাচারালি বা আর্টিফিশিয়ালি এই হরমোনের লেভেল কন্ট্রোলের বাইর চলে যেতে পারে। সমস্যাটা তখনি শুরু হয়। আপনি কি জানেন, খাবারের মাধ্যমেও আপনার দেহে এক্সেস ইসট্রোজেন আসতে পারে? স্পেশালি পেসটিসাইড আর গ্রোথ হরমোন দিয়ে তৈরি খাবার খেলে এই সমস্যা এড়ানোর উপায় নেই বললেই চলে। আবার অনেকের দেহে জেনেটিক কারণেই অতিরিক্ত হরমোন তৈরি হয়! ইসট্রোজেন লেভেল বেড়ে গেলে দেহে ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা কমে আসে। আর তখনি অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি (একচুয়ালি অতিরিক্ত মেদ বৃদ্ধি) শুরু হয়। ফলাফলে প্রজননে সমস্যাসহ আরও অনেক জটিল শারীরিক রোগ ব্যাধি দেখা দেয়।

*কি করবেন?

সাদা ময়দা, সাদা ভাত, সাদা চিনি এসব বাদ দিন। হোল ফুড খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। যতটা পারেন ক্লিন অরগানিক প্রোডাক্ট খান। রোজ ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ দেহের নিজের হরমোন লেভেল ঠিক রাখতে হেল্প করবে। ফার্মের গ্রোথ হরমোন দেয়া পোলট্রি, রেডমিট, ডেইরি একেবারেই বাদ দিন।

59
ওজন কমানোর বিষয়টা বেশ গোলমেলে। সকলের জন্য সব পদ্ধতি কাজ করে না, সবাই একই পদ্ধতিতে ওজন কমাতে পারেন না। কারো এক রকম ডায়েটে কাজ দিলে অন্য কারোই আবার সেটায় ওজন বাড়ে। ব্যায়ামের ক্ষেত্রেও তাই। তাছাড়া লিঙ্গ ও বয়স ভেদেও ওজন কমানোর প্রক্রিয়াতে আছে আকাশ পাতাল পার্থক্য। তবে রয়েছে এমন কিছু উপায়, যেটা অবলম্বন করলে যে কারো ওজন কমতে বাধ্য। জেনে নিন ওজন কমানোর এমনই ১০টি উপায়, যেগুলোতে কষ্টও বিশেষ হয় না।

১) স্ন্যাক্স হোক বেক করা

সমুচা, রোল, চিকেন ফ্রাই খেতে ভালো লাগে? অবশ্যই খান। তবে ডুবো তেলে না ভেজে খান ওভেনে বেক করে। ব্যবহার করতে পারেন এয়ার ফ্রায়ার।

২) ক্ষুধা পেলেই ফল কিংবা সবজি

দিনে ৩ বেলা খাবারের ফাঁকে ক্ষুধা পেলে ফল ও সবজি ছাড়া আর কিচ্ছু খাবেন না।

৩) মিষ্টি খাবার না খেয়ে মিষ্টি ফল

মিষ্টি খেতে খুব ভালো লাগে। মিষ্টি খাবার বাদ দিয়ে খান মিষ্টি ফল।

৪) তরল ক্যালোরিকে না বলুন

পানীয় থেকে ক্যালোরি গ্রহণকে একেবারেই না বলুন। জুস, মিল্ক সেক, কোমল পানীয় ইত্যাদি সবকিছু বর্জন করুন। ডাবের পানি বা এমন প্রাকৃতিক ফলের রস চলতে পারে।

৫) দাঁত মাজার পর কিচ্ছু খাবেন না

রাত জেগে থাকলে অনেকেরই নানান রকমের খাবার খেতে ইচ্ছা করে। একটা ছোট্ট ট্রিক করুন। ডিনারের পর পরই দাঁত মেজে ফেলুন এবং দাঁত মাজার পর কিচ্ছু খাবেন না।

৬) পানীয় কেবল পানি

সম্ভব হলে সকল পানীয় খাওয়া বাদ দিন। কেবল সাদা পানিটাকেই করে নিন সঙ্গী।

৭) একটু খানি পরিশ্রম

ব্যায়াম করার সময় পান না? ঘরের কাজ গুলো নিজেই করুন। লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ভাঙুন। শপ্ল দূরত্বে হেঁটে যান।

৮) দিনে একবার কার্বোহাইড্রেট

ভাত কিংবা রুটি যাই খান না কেন, দিনে একবার খান এই ধরণের খাবার। বাকি সময়ে কেবল মাছ মাংস ও সবজি। খেতে পারেন ওটমিল।

৯) ঘুমটা পর্যাপ্ত

পর্যাপ্ত না ঘুমালে বা রাত জাগলে ওজন বাড়ে। তাই ঘুমটা নিয়ে আসুন রুটিনের মাঝে।

১০) বিদায় করুন চিনিকে

চা-কফি বা শরবত খেতে ভালো লাগে? খান, তবে চিনি দিয়ে নয়। ব্যবহার করুন সুগার ফ্রি।

60
আপনি প্রায়ই রাত জাগেন অথচ খুব সকালেই আপনাকে হয়তো অফিসে বসের মুখোমুখি হতে হয়। রাত জাগার এ ক্লান্তি দূর করতে আপনাকে হয়তো প্রায় সময়ই অতিরিক্ত কফি পান করতে হয় এবং যত চেষ্টাই করুন না কেন আপনার হয়তো কোনো রাতেই পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে না।
এমন কিছু অপ্রকাশ্য শারীরিক অসঙ্গতি আপনার এই ক্লান্তির জন্য দায়ী যা আপনি হয়তো অনুমানও করতে পারেন না । এমনকি খাদ্যাভ্যাস কিংবা ব্যায়ামের অভ্যাসও হতে পারে ক্লান্তির মূল কারণ।

এই ক্লান্তির রহস্য খুঁজে বের করা ও তার সমাধানের বিষয়ে এখানে রয়েছে কার্যকরী ৭টি উপায়, যা আপনাকে কর্মোদ্যম ও প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর করে তুলবে, ঠিক যেমনটি আপনি চান।

১. আপনি কি পানিশূন্যতায় ভুগছেন?

দ্যা জার্নাল অব নিউট্রিশন পত্রিকার একটি গবেষণায় দেখা যায়, বেশিরভাগ স্বাস্থ্যবতী নারীই তাদের শরীরের চাহিদার মোট ১.৫ ভাগ পানিও পান করেন না। গবেষকরা লক্ষ্য করেন, নিওরনের হাইপোথ্যালামাস, অর্থাৎ মস্তিষ্কের যে অংশ আপনার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে- সেটি পানীয় জলের চাহিদা না মেটানো পর্যন্ত অবিরত বার্তা পাঠাতে থাকে যা কিনা আপনার ক্লান্ত অনুভূতি তৈরি করার জন্য যথেষ্ট।

সমাধান:

দৈনিক কমপক্ষে আট গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করুন। যদিও, আপনি কি পরিমাণ পানি পান করবেন তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিমাপ নেই কেন না আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে আপনার শরীরে পানির চাহিদা পরিবর্তিত হয়। ফলে, যখনই তৃষ্ণা অনুভব করবেন তখনই পান করুন। শিকাগো স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পুষ্টি বিজ্ঞানি ড. জিনা সারশিও বলেন, প্রতি তিন ঘণ্টায় যদি একবার অন্তত মলত্যাগের প্রয়োজন অনুভূত হয় এবং তার রঙ যদি প্রায় স্বচ্ছ দেখা যায় তবেই আপনি কেবল ধরে নিতে পারেন শরীরে পানির চাহিদা যথেষ্ট পূরণ হয়েছে।

২. অপর্যাপ্ত ভিটামিন বি ১২

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা সচল রাখতে এবং রক্তের লোহিত কণা তৈরি করতে ভিটামিন বি ১২ ভূমিকা রাখে। সেই সাথে, রক্তের মধ্য দিয়ে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ করে এই ভিটামিন। এটি মূলত প্রাণীজ আমিষের ভেতরে বেশি পাওয়া যায়। ফলে, নিরামিষাসীরা ভিটামিন বি ১২ এর অভাবে ভুগতে পারেন। এই ভিটামিনের অভাবে ক্লান্তিজনিত কারণে আপনি মাথা ঘুরে পড়েও যেতে পারেন বলে জানান ড. সারশিও।

সমাধান:

যদি একই সাথে ক্লান্তি, বিস্মৃতি, অস্থিরতা এবং শরীরের কিছু স্থানে অসারতা অনুভব করেন, তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে এর কারণ হিসেবে ভিটামিন বি ১২-এর অভাবকে দায়ী করতে পারেন। ফলে, আপনি দ্রুত একজন ডাক্তার কিংবা পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলাপ করুন। আপনার হয়তো ১০০ থেকে ৫০০ মি. গ্রা. পর্যন্ত ভিটামিন সেবন করতে হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে ড. সারশিও বলেন, এই ভিটামিন বড়িগুলো প্রয়োজনমতো দ্রুতই আপনার ক্লান্তিকে দূর করবে, যদি আপনার শরীরে তার ঘাটতি থেকে থাকে। তবে, বি ১২ ভিটামিনের ঘাটতি না থাকলে এটা কোনো কাজই দেবে না। অর্থাৎ, ক্যাফেইনের মতো যেকোনো অবস্থাতেই আপনার ক্লান্তি দূর করার ক্ষেত্রে এটি কার্যকর নয়।

৩. কাজের চাপে যখন বিপর্যস্ত

সাধারণত, দৈনন্দিন কাজের সাথে তাল মিলিয়ে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা সকালে সর্বোচ্চ কর্মক্ষম থাকে এবং বেলা বাড়ার সাথে সাথে দুর্বল হয়ে পরে। কিন্তু টরেন্টোর ন্যাচারোপ্যাথিক স্ট্রেস মেডিসিনের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মার্ক বাবস বলেন, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ আপনার শরীরের স্ট্রেস হরমোনকে নাজেহাল কিংবা অকর্মন্য করে ফেলতে পারে। যার কারণে রাত বাড়তে থাকলেও আপনার ঘুম না আসা কিংবা ঘুমের মধ্যে হাঁটার মতো অসুস্থতা আপনাকে পেয়ে বসতে পারে।

সমাধান:

আপনি চাপের কারণ মোকাবিলা করতে না পারলেও আপনার প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তনের মাধ্যমে চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মেডিটেশন একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায়। দিনে মাত্র ১৫ মিনিটের একটি মেডিটেশনের অভ্যাস আপনার দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ থেকে অনেকটাই হালকা করে দিতে পারে।

৪. অজানা হৃদরোগে আক্রান্ত?

ফুসফুস এবং হার্ট-সংক্রান্ত গবেষণাবিষয়ক একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়, হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত অর্ধেকের বেশি নারীরাই রাতে ঘুমানোর আগে অস্বাভাবিক রকম ক্লান্তিতে ভোগেন।
গবেষক ডা. হুসেইন বলেন, সিড়ি দিয়ে ওঠানামা কিংবা ব্যায়ামের পর যদি আপনার ছোট ছোট নিঃশ্বাস নিতেও ক্লান্তি হয়, তাহলে নিশ্চিত থাকুন আপনার ধমনি হৃদযন্ত্রে যথাযথভাবে রক্ত সঞ্চালন করতে পারছে না।

সমাধান:

এ বিষয়ে ডা. হুসেইনের পরামর্শ আপনার এই ক্লান্ত দশা এবং সেই সাথে অন্যান্য কোনো উপসর্গ যদি থাকে, যেমন বুকে ব্যথা কিংবা শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি একজন ডাক্তারের কাছে খুলে বলুন। সে ক্ষেত্রে ডাক্তার হয়তো আপনাকে একটি স্ট্রেস টেস্ট বা ইকোকার্ডিওগ্রাম করার পরামর্শ দিয়ে থাকবেন।

৫. অপর্যাপ্ত কিংবা মাত্রাতিরিক্ত লোহিতকণার উপস্থিতি (রক্তস্বল্পতা)

রক্তস্বল্পতা ক্লান্তির অন্যতম কারণ, বেশিরভাগ নারীই এ রোগে ভুগে থাকেন। সেইসাথে, রক্তে অতিরিক্ত লোহিতকণার উপস্থিতিও পর্যাপ্ত অক্সিজেন পরিবহনে বাধা দেয়। ফলে, আপনার শরীরে লোহিতকণার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত না থাকলে অক্সিজেন প্রবাহের অপর্যাপ্ততার ফলে আপনি সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়বেন।

সমাধান:

নিরামিষাশীদের রক্তস্বল্পতায় ভোগার সম্ভবনা থাকে। সেই সাথে, থাইরয়েডজনিত অসুখ, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এবং অতিরিক্ত রক্তস্রাব রক্তস্বল্পতার জন্য দায়ী। অন্যদিকে, অত্যাধিক আয়রন বড়ি সেবন আপনার রক্তে লোহিতকণা অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিতে পারে। মাথার চুল ও নখ পাতলা হয়ে যাওয়া কিংবা দাঁড়ানো অবস্থায় চোখে অন্ধকার দেখা আপনার রক্তে লোহিতকণার মাত্রাধিক্যতা নির্দেশ করে। সে ক্ষেত্রে ডা. সারশিওর পরামর্শ, বছরে অন্তত একবার রক্তে লোহিতকণার মাত্রা পরীক্ষা করে নিন এবং অস্বাভাবিক কিছু পেলেই সেটা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করুন।

৬. অকর্মন্যতা

অলসতা কিংবা অকর্মন্যতাও হতে পারে আপনার দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তির জন্য দায়ী- বলে জানান ডা. বাবস। একটি কর্মব্যস্ত দিন কিংবা একটু হাত-পা ছুড়ে নেওয়া আপনার রক্তে গ্লুকোজের সরবরাহ তৈরি করে, যা আপনাকে ক্লান্ত হতে দেয় না। এর বিপরীতে, দিনভর কম্পিউটারের পর্দায় কিংবা বিছানায় অলস সময় যাপন আপনার শরীরের ক্যালরি পুড়তে দেয় না- যার ফলে আপনি অলসতাজনিত ক্লান্তিতে ভুগতে থাকেন।

সমাধান:

আপনার চটপটে চলাফেরা এরা কর্মোদ্দীপ্ত জীবনযাপন এর একটি সমাধান হতে পারে। সম্প্রতি আমেরিকার শরীরচর্চা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণা প্রকাশের পর নারীদের সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট পরিমিত শরীরচর্চা করার নির্দেশনা দিয়েছে সে দেশের সরকার। নিয়মিত শরীরচর্চার ফলে আপনি আরো ভালোভাবে ঘুমুতে পারবেন যার ফলে এক সপ্তাহের মধ্যেই আপনি দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে পারেন।

৭. মূত্রনালীর সংক্রমণ

যদি মূত্রনালীতে সংক্রমণের ফলে আপনি মূত্রত্যাগের সময়ে জ্বালাপোড়া অনুভব করবেন। অর্ধেকের বেশি নারীরাই এ সংক্রমণের শিকার এবং এ অসুস্থতা তাদেরকে ক্লান্ত করে তোলে। ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইওরোগাইনিকোলোজির সহযোগী অধ্যাপক ডা. অ্যাশলে ক্যারোল জানান, এ সংক্রমণের অত্যাচারের আপনার শরীরের বেশ কিছু শক্তিক্ষয় ঘটে এবং আপনার বিশ্রামের প্রয়োজন বাড়িয়ে তোলে।

সমাধান:

ডাক্তার যদি আপনার মূত্রথলিতে সংক্রমণের আশঙ্কা করেন তবে এই ব্যাকটেরিয়া নির্মূলের জন্য তিনি সাত থেকে দশ দিন মেয়াদি যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। পরবর্তীতে, পুনরায় এ সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করুন।

এ বিষয়গুলোতে সচেতন থাকলে আপনি সহজেই একটি কর্মে উদ্যম, উৎফুল্ল এবং ক্লান্তিহীন জীবন যাপন করতে পারবেন।

Pages: 1 2 3 [4] 5 6 ... 9