5
« on: December 08, 2023, 08:31:51 PM »
জীবন মানেই অপ্রাপ্ত বাসনা- আরতি আর আরাধ্যের লীলা কীর্তন। এই কীর্তনে একবার তাল হারালে জীবন বেতালা। জীবনের ভাবনাগুলো সংকুচিত হয়। বিপর্যস্থ্য হয়, জীবন জিজ্ঞাসার। আমার দশাও এমনি। আমি লেখা-পড়া শেষ করে চাকুরী করেছি প্রায় একুশ বছর। শুধু বেতালায়- বেহালা বাজিঁয়েছি। বুঝতে পারিনি জীবন বিনিময়ে চলে। বিনিময় না বুঝে চলা এক-ধরনের পাগলামী।
লালন ফকির বলেছেন, সময় গেলে সাধন হবে না…। আমারও হয়নি। বরাবরই আমি সাদাকে সাদা, কালা কে কালা বলতে অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্তু সমাজ অতো সোজা নয়। এখনকার সমাজ পাড়-ভেঙ্গে, ঘাট চিনে চলে। তথাকথিত ভদ্ররা সমাজে ম্যাকিয়াভেলীর সমাজতন্ত্র চালু করেছে।
চাকুরী জীবনে দেখেছি, ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্যকর্মসূচীর লোকেরা চির- দিনই নির্যাতিত। এখানে ধর্মদৃষ্টতায়- বলিষ্ঠতা, চাতুরতায়- সফলতা আর চামুচামীতে-পদন্নোতি ।
দেখেছি, বাকবর্ধিতায় কত নচ্ছার ম্যানেজার হয়। চপলতায় কত কুলংগার সুপারভাইজর হয়। কত ভাষাহীনরা ভাষাবিদ আর মূর্খরা প্রশাসনের অধিকর্তা- আর এ, বি, সি, ডি পড়ুয়ারা ব্যাক্তিত্ববান হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজে ইতিহাসের প্রভাষক পদে চাকুরী করেছি প্রায় পাচঁ বছর। শিক্ষিত হিসাবে শিক্ষকদের ভ্রান্ত আচরণ আমাকে দারুন ভাবে মর্মাহত করেছে।
দেখেছি, শিক্ষিত দানবদের ভয়ে- দেশ বরেন্য ব্যারিষ্টার রফিক-উল-হকরা কি ভাবে দিশেহারা হয়। পদ-পদবীর লোভে মানুষ কতটা অ-মানবিক হয়।
কিছু দিন আগে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ প্রফেসর ড. গোলাম মওলা চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন। আমি ওনার সেকশনে অনেকদিন চাকুরী করেছি। তা’ছাড়া আমি যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা-পড়া করেছি, ওনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ছিলেন।
অবসরের পরে ড্যাফোডিলে যোগদান করেছিলেন। পদ-পদবী ছোট হওয়ায় ওনার সাথে আমার তেমন কথা হয়নি। তবে উনি একজন বিচক্ষণ ও মেধাবী লোক ছিলেন। চামুচাদের ছাপিয়ে, সিদ্ধান্ত নিতে ও দিতে ব্যক্তিত্বে পরিচয় রাখতেন।
ওনি যখন শাররীক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন তখন বাধ্য হয়ে অবসরে যেতে হয়। উনার সময় ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস ভালই চলছিল কিন্তু উনার অবসরের পর তোষামুদকারীরা অধিকর্তাদের নানান ভাবে ম্যাসেজ করে তালে মাল ঢেলে দেয়। সেই মাল খেয়ে যথাযথ কতৃপক্ষ বেসামাল।
জনাব মওলা, জীবদ্দশায় সম্ভত দুটি বই লেখে গেছেন। তার ভ্রমন কাহিনীর উপর লিখিত বইয়ের পান্ডলিপির শুদ্ধতা পড়ার সুযোগ আমার হয়েছিল। বইটি প্রকাশিত হয়েছে কিনা জানি না। তবে এই বইটিতে উনার পরিবারসহ সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের নানান ঘটনাই স্থান পেয়েছে। সব ছাপিয়ে গিয়েছে, একক মওলার-ব্যক্তি জীবনের মৌলিক ভাবনা ও কর্ম- দর্শনের কথা।
জনাব মওলার ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে কথা বলায় অভ্যস্ত ছিলেন না। আমাদের সময় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে জহিরুল নামের একজন ষ্টাফ ছিল। অত্যন্ত চতুর ও কর্মদক্ষ। সে এখন আর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে নেই। পর পর কয়েক বছর বেতন বৃদ্ধি আবেদন করে কর্তৃপক্ষের কোন সাড়া না পেয়ে রাগে, দুঃখে ও অভিমানে চাকুরী ছেড়ে এখন সৌদি আরবে প্রবাস জীবন-যাপন করছে ।
সে সময় জনাব মওলা স্যার ধানমন্ডির ২৭ নম্বরে-প্রিন্স প্লাজার অপজিটের একটি ছিমছাম বাসায় থাকতেন। প্রয়োজনের তুলনায় বাসায় জায়গা ছিল কম। তাই তিনি নতুন বাসায় উঠার মনস্থ করে, বাসার কিছু পুরাতন আসবাব পত্র বিক্রি করে দেন।
আমি জহিরুলের সহযোগিতায় স্যারের কাছ থেকে নামে মাত্র টাকা দিয়ে একটি ফ্রিজ কিনে ছিলাম। স্যার আমাদের সাথে এ ব্যাপারে কোন রকম দরদাম করেন নাই। টাকা হাতে দেয়ার সময় তিনি কেবল একবার মাত্র আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
তাতেই হাজার কথা বুঝে নিয়ে-ছিলেন। এটি-ই ছিল তার চরিত্রের অন্যতম দিক-দর্শন । মোট কথা একজন পরিপুর্ন শিক্ষিত লোকের যা থাকার দরকার তিনি ছিলেন তার শ্রেষ্ঠ উদাহারণ।
স্যারের দেয়া ফ্রিজটি আজও সচল আছে। আমি যত বার ফ্রিজটি খুলি- নড়াচড়া করি ততবার স্যারকে মনে পড়ে। বিশ্বাসী হয়না- স্যার আজ আর আমাদের মাঝে নেই। মহানজন- মহাজনি করে চলে গেছেন। খুচরা- ক্রেতাদের ঋণে ফেলে। মহান আল্লাহ পাক তার মহাজন- আত্মার প্রশান্তি দিন, এই কামনা নিরন্তর। (ড্যাফোডিল নিয়ে অনেক লেখার আছে পরবর্তী পর্বে ধারাবাহিকভাবে লিখব-ইনশাল্লাহ)
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সাবেক সহকারী কর্মকর্তা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি।