রোজা যুগে যুগে দেশে দেশে

Author Topic: রোজা যুগে যুগে দেশে দেশে  (Read 1176 times)

Offline ishaquemijee

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 305
    • View Profile
সুরা আল বাকারার ১৮৩নং আয়াতে আমরা দেখতে পাই, সিয়াম সাধনা এমন এক ইবাদত, যা শুধু উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর আল্লাহ ফরজ করে দেননি। বরং তিনি অন্যদের ওপরও তা অবশ্যকর্তব্য হিসেবে পালন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সিয়াম সাধনা একজন মানুষের দেহ ও মনের ওপর সমানভাবে প্রভাব ফেলে। কোরআনে আরও বলা হয়েছে, সিয়াম সাধনা করলে একজনের মধ্যে তাকওয়ার গুণ আসতে পারে। তাকওয়া বা আল্লাহর আজাব-গজব থেকে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা এমন এক মানসিক গুণ, যা একজন মানুষকে আসল মানুষে পরিণত করে।

আল্লাহ যুগে যুগে সিয়াম সাধনাকে ফরজ করে দিয়েছেন। জান্নাতে নিষিদ্ধ ফল খেয়ে ফেলার পর হজরত আদম (আ.)-কে ৩০ দিন সিয়াম পালন করতে হয়েছে বলে মুসা বিন নাসর বাগদাদী উল্লেখ করছেন। তবে এটা কতটুকু বিশুদ্ধ তা নিয়ে যথেষ্ট কথা রয়েছে। ইবনে হাজার উল্লেখ করেন : আদম (আ.) কত দিন সিয়াম পালন করেছেন তা বলা না গেলেও তিনি তা পালন করেছেন এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
আল্লামা নিশাপুরী তার আরাইসের মধ্যে উল্লেখ করেছেন : ইদ্রিস (আ.) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে সারা জীবন সিয়াম সাধনা করেছেন। ইমাম তাবারি কাতাদা থেকে উল্লেখ করেছেন : নুহ (আ.) মুহররমের ১০ তারিখ তার জাহাজ থেকে নামেন। তিনি ওই দিন সবাইকে সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন। ইবনু কাসীর বিভিন্ন সূত্র থেকে উল্লেখ করে বলেন, নুহ (আ.)-এর যুগ থেকে প্রতিটি মাসে তিন দিনের সিয়াম সাধনা পরিচিতি লাভ করে। আমাদের নবী (সা.)-ও তা নফল হিসেবে আদায় করতে বলে গেছেন।

প্রাচীন মেক্সিকোর আদিবাসীদের শুধু পুরোহিতদের রোজা রাখতে হতো। এটা করতে পুরোহিতের জিহ্বা ফোঁড় করে দেয়া হতো, যাতে করে তারা কিছু খেতে না পারে। এই রোজা পালন করতে হতো ১৬০ দিন। এটা করতে পারলে সেই পুরোহিত দেবতার আসন পেত। আদিবাসীরা বছরে ফসল কাটার সময় রোজা পালন করত, বড়দের জন্য যেকোনো দিনে আটটি আর ছোটদের জন্য চারটি রোজা রাখতে হতো। এটা পালন করতে হতো উপাসনালয়ে গিয়ে চুপ করে বসে থেকে। নড়াচড়া করাও হারাম ছিল তাদের। আর খাওয়া-দাওয়া কিংবা যৌনাচারের প্রশ্নই ছিল না।
snanimuq ছিল আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান আদিবাসীদের আরেক ধরনের রোজা। এটা ছিল সূর্য ডোবার পর থেকে পরদিন সকালে সূর্য ডগমগে হয়ে ওঠা পর্যন্ত এই রোজা রাখতে হতো। সূর্য জ্বলজ্বলে না হলে রোজা না ভেঙে চালিয়ে যেতে হতো। ভারতীয় হিন্দুদের যারা ইন্দ্রের পূজা করে তাদেরও এই রোজা রাখতে হয়।

পাপুয়া নিউগিনিতে রোজা রাখার ধরন কিছুটা অন্যরকম। কোনো সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে, ভূমিষ্ঠস্থলেই স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই এই রোজা রাখতে হয়। সন্তান প্রসবের আগ থেকে প্রসব হয়ে যাওয়ার পর একদিন পর্যন্ত এই রোজার পরিধি। কোনো মেয়ের প্রথম ঋতুস্রাব দেখা দিলে তাকে সেইদিন থেকে পাঁচ দিন রোজা পালন করতে হয় এই আদিবাসীদের। মেক্সিকোর উজটাক গোত্র নববিবাহিত দম্পতিকে রোজা পালনের নির্দেশ দেয়। বিয়ের সময় থেকে এক নাগাড়ে চারদিন নবদম্পতিকে রোজা পালন করতে হয়। এতে করে যৌনতাজনিত সব পাপ নাকি মাফ হয়ে যায়। উত্তর আমেরিকার বিবিলুস গোত্রের মতে রোজা হলো সবচেয়ে উন্নতমানের ইবাদত। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন তাদের রোজা থাকতে হয়।
রোজা পালন করতে গিয়ে মানুষজন গোশত, মাছ, শাক-সবজি, শর্করাজাতীয় খাবার যেমন—গম, চাল এসব খাওয়া সাধারণভাবে বন্ধ রাখে। তবে প্রায় সবাই পানি, ফল এবং দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার অনুমতি দেয়। এক সময় রোজা রাখতে হতো একদম চুপ থেকে। এটা এমনকি ইয়াহুদিদেরও নিয়ম ছিল। মরিয়ম (আ.)-কে আল্লাহ বলে দিয়েছিলেন : ‘তুমি মানুষের বলো, আমি আজ আল্লাহর নামে রোজা রেখেছি। কাজেই কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারব না।’
মিসরে ফসল তোলার মৌসুমে নবান্নের রোজা ছিল খুব প্রসিদ্ধ। এ সময়ে প্রতিটি পুরুষের ছয় সপ্তাহ রোজা পালন করতে হতো। জাদু টোনা থেকে বাঁচার জন্য ফাইদ্বান (বর্ষা) ঋতুর চতুর্থ মাসের উনিশ তারিখ রোজা পালনের পরামর্শ দেয়া হতো।
ড. মহাদেব মনে করেন হিন্দুদের প্রতিটি বর্ণের ও প্রতিটি সম্প্রদায়ের আলাদা আলাদা রোজার নিয়ম আছে। তবে বেশি প্রসিদ্ধ হলো একাদশীর রোজা। নারীরাও একদিন উপবাস থাকে, যেদিনকে ‘বরাত’ বলা হয়। হিন্দু ধর্মে একাদশী ও দ্বাদশীর রোজা রাখা হয়, এতে বছরে চব্বিশটা রোজা হয়ে যায়। বুদ্ধ তার অনুসারীদের রোজা রাখতে রাখতে মরে যেতেই বেশি উত্সাহ দিয়েছেন। প্রতিটি চান্দ্র মাসের প্রথম, নবম, পঞ্চদশ ও দ্বাবিংশতি এই চার দিনে রোজা পালন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে পানাহার ও নারী সম্ভোগ না করে একদম নীরব-নিথর হয়ে যোগতন্ত্রে লিপ্ত থাকতে বলা হয়েছে।