লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম

Author Topic: লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম  (Read 1738 times)

Offline Badshah Mamun

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2002
    • View Profile
    • Daffodil International University
লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম

আবদুস সবুর খান


মাহে রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমত বা অনুগ্রহের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত বা ক্ষমার, শেষ ১০ দিন দোজখের আগুন থেকে মুক্তির। এ মাসে মহান আল্লাহ্ রোজাদার মুমিন মুসলমানদের জন্য ‘লাইলাতুল কদর’ নামে এমন এক মহিমান্বিত রাত দান করেছেন, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। মহান রাব্বুল আলামিন এ রাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের একটি স্বতন্ত্র সূরায় তিনি এরশাদ করেন, ‘আমি একে লাইলাতুল কদরে নাজিল করেছি। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আপনি কি জানেন? লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতারা ও রুহ (জিবরাঈল) তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে অবতীর্ণ হয়। সেই শান্তি ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সূরা কদর, আয়াত ১-৫)
এই সূরার শানে নুজুল সম্পর্কে হজরত ইবনে হাতেম (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) বনি-ইসরাঈলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জিহাদে মশগুল থাকে এবং কখনো অস্ত্র সংবরণ করেনি। সাহাবিরা এ কথা শুনে বিস্মিত হলে এ সূরা অবতীর্ণ হয়। এতে রাসুল (সা.)-এর উম্মতের জন্য শুধু এক রাত্রির ইবাদতই সে মুজাহিদের এক হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করা হয়েছে। হজরত ইবনে জরির (রহ.) অপর একটি ঘটনা এভাবে উল্লেখ করেছেন, বনি-ইসরাঈলের জনৈক ইবাদতকারী ব্যক্তি সারা রাত ইবাদতে মশগুল থাকতেন ও সকাল হতেই জিহাদের জন্য বের হয়ে যেতেন এবং সারা দিন জিহাদে লিপ্ত থাকতেন। তিনি এক হাজার মাস এভাবে কাটিয়ে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ্ তাআলা সূরা কদর নাজিল করে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন।


কদরের এক অর্থ মাহাত্ম্য ও সম্মান। এর মাহাত্ম্য ও সম্মানের কারণেই একে ‘লাইলাতুল কদর’ তথা মহিমান্বিত রাত বলা হয়। কদরের আরেক অর্থ তকদির এবং আদেশও হয়ে থাকে। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, বৃষ্টি ইত্যাদির পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাদের লিখে দেওয়া হয়। এমনকি, এ বছর কে হজ করবে, তা-ও লিখে দেওয়া হয়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর উক্তি অনুযায়ী চারজন ফেরেশতাকে এসব কাজে সোপর্দ করা হয়। তাঁরা হলেন: ইসরাফিল, মিকাঈল, আজরাঈল ও জিবরাঈল। (কুরতুবি)
হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, এই রাতে জিবরাঈল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট একদল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজ অথবা জিকিরে মশগুল থাকেন, তাঁদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (মাযহারি)
রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, সারা জমিনে কাঁকর কুচি যত—তার চেয়েও অধিক ফেরেশতা এই রাতে অবতরণ করেন। (ইবনে খুযায়মা)
কোরআন পাকের সুস্পষ্ট বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে লাইলাতুল কদর রমজান মাসেই। তবে এর সঠিক তারিখ সম্পর্কে আলেমদের বিভিন্ন উক্তি বা মত রয়েছে, যা সংখ্যায় ৪০ পর্যন্ত পৌঁছে। তাফসিরে মাজহারির ভাষ্যমতে, এসব উক্তির নির্ভুল তথ্য এই যে লাইলাতুল কদর রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের মধ্যে আসে কিন্তু এরও কোনো তারিখ নির্দিষ্ট নেই। বরং যেকোনো রাতেই হতে পারে। প্রত্যেক রমজানে তা পরিবর্তিতও হয়। সহিহ্ হাদিসদৃষ্টে এই ১০ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে তা অনুসন্ধান করো।’ (বুখারি)
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ দশক আসত তখন তিনি নিজে রাত জাগতেন ও পরিবারবর্গকেও জাগাতেন এবং কোমর কষে বাঁধতেন।’ (বুখারি ও মুসলিম) অনেকে রমজান মাসের ২৭তম রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। ইমাম আবু হানিফার (র.) অবস্থান এই মতের পক্ষে। তবে যদি লাইলাতুল কদরকে রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে ঘূর্ণায়মান এবং প্রতি রমজানে পরিবর্তনশীল মেনে নেওয়া যায়, তাহলে এর দিন-তারিখ সম্পর্কিত হাদিসগুলোর মধ্যে কোনো বিরোধ অবশিষ্ট থাকে না।
আপাতদৃষ্টিতে লক্ষ করলে দেখা যায়, চান্দ্রমাসের শেষ ১০ দিন কৃষ্ণপক্ষ; লগ্ন হিসেবে এটি তেমন শুভ নয়। অপর দিকে জাহেলি যুগেও আরব দেশে এসব মাস ধরেই বর্ষ গণনা করা হতো। তখনো রমজান মাস ছিল। তবে আরবদের কাছে এর তেমন গুরুত্ব ছিল না। তারা জাহেলি যুগে মহরম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ—এই চার মাসকে শাহরুল হারাম বা পবিত্র মাস হিসেবে গণনা করত। এই মাসগুলোতে তারা কোনো প্রকার যুদ্ধবিগ্রহ আরম্ভ করত না। এমনকি চলমান যুদ্ধও এই মাসগুলোতে স্থগিত ঘোষণা করা হতো। পবিত্র কোরআন নাজিলের পরই রমজান মাসের এবং লাইলাতুল কদরের এত গুরুত্ব বেড়েছে। পবিত্র কোরআন নাজিলই এর মূল কারণ। কোরআনের সংস্পর্শে এসে কৃষ্ণপক্ষের একটি রাত হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা পেয়েছে। পবিত্র কোরআনের সংস্পর্শে এসে আরবের সবচেয়ে বর্বর জাতি বিশ্বের সবচেয়ে সভ্য, পরিশীলিত ও শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হয়েছিল। আজও যদি আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে পবিত্র কোরআনের শিক্ষাগুলো অনুশীলন করতে পারি, তাহলে মহান আল্লাহ্ও আমাদের লাইলাতুল কদরের মতো শ্রেষ্ঠ মানবগোষ্ঠীতে পরিণত করবেন। আল্লাহ্ তাআলা আমাদের সবাইকে পবিত্র কোরআন নাজিলের রাত লাইলাতুল কদরের সেই সৌভাগ্য নসিব করুন।

ড. আবদুস সবুর খান: সহযোগী অধ্যাপক, ফারসি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Source: http://prothom-alo.com/detail/date/2012-08-12/news/281160
Md. Abdullah-Al-Mamun (Badshah)
Senior Assistant Director
Daffodil International University
01811-458850
cmoffice@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd

www.fb.com/badshahmamun.ju
www.linkedin.com/in/badshahmamun
www.twitter.com/badshahmamun

Offline ishaquemijee

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 305
    • View Profile
রমজানের বিশেষ একটি নেয়ামত হলো লাইলাতুল কদর। মহান আল্লাহ তায়ালা এ নেয়ামত অন্য কোনো নবীর উম্মতকে দান করেননি। পূর্ববর্তী উম্মতের আয়ু ছিল দীর্ঘ। এ উম্মতের আয়ু সে তুলনায় খুবই কম। তাই আল্লাহপাক অনুগ্রহপূর্বক এ উম্মতকে শবেকদর দান করেছেন এবং এক রাতের ইবাদতের মর্যাদা এক হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে বেশি করে দিয়েছেন। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আলী (রা.) ও হজরত ওরওয়াহ (রা.) বলেন, একদিন রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের সামনে বনি ইসরাঈলের চার মহান ব্যক্তি তথা হজরত আইয়ূব (আ.), হজরত জাকারিয়া (আ.), হজরত হিজকিল (আ.) ও হজরত ইউশা ইবনে নুন প্রমুখ সম্পর্কে আলোচনা করে বললেন, তারা দীর্ঘ হায়াত লাভ করার কারণে দীর্ঘকাল ধরে আল্লাহর ইবাদত করার সুযোগ পেয়েছেন। তাদের প্রত্যেকে ৮০ বছর করে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করেছেন। এ সময়ের মধ্যে তারা একটিও নাফরমানি করেননি। এসব কথা শুনে সাহাবিরা অত্যন্ত বিস্মিত হলেন এবং নিজেদের ব্যাপারে আফসোস করলেন। এমন সময় হজরত জিবরাঈল (আ.) রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদমতে হাজির হয়ে বললেন, আপনার উম্মত এ সব ব্যক্তির ৮০ বছর ইবাদত করার কারণে আশ্চর্যবোধ করছে, অথচ আল্লাহ তায়ালা এর চেয়ে উত্তম ও বরকতময় বিষয় আপনার উম্মতকে দান করেছেন। অতঃপর তিনি সূরা কদর পাঠ করে শোনালেন। এতে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিরা আনন্দিত হলেন (দুরের মানছুর ৬/৩৭১)।
লাইলাতুল কদর অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ রাত। এ রাতের মর্যাদার কারণেই মূলত তাকে লাইলাতুল কদর বলা হয়। আমাদের কাছে তা শবেকদর নামে পরিচিত। শবেকদরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো—এ রাতের মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কোরআন লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে নাজিল করা হয়েছে। এরপর দীর্ঘ ২৩ বছর বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সময়ের তা রাসুলে কারিমের (সা.) ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। শবেকদরের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আমি কোরআন মাজিদকে লাইলাতুল কদরে নাজিল করেছি। হে নবী আপনি কি জানেন লাইলাইতুল কদর কী?
লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাতে ফেরেস্তারা ও জিবরাঈল (আ.) তাদের পরওয়ারদেগারে হুকুম সব (মঙ্গলময়) বিষয় নিয়ে অবতরণ করেন। এ রাত আগা-গোড়াই শান্তি। তা থাকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত (সূরা কদর)। এই আয়াতে বলা হয়েছে, শবেকদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এক হাজার মাসে ৮৩ বছর ৪ মাস হয়। শবেকদরকে হাজার মাসের সমান বলা হয়নি। বরং হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে। তবে এই উত্কৃষ্টতার সীমা-পরিসীমা নির্ধারণ করা হয়নি। তা একশ’ গুণ বেশি হতে পারে, এক হাজার গুণ বেশি হতে পারে বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে। সঠিক পরিমাণ আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
শবেকদরে ইবাদত-বন্দেগি করার গুরুত্ব অপরিসীম। এ রাতে অধিক পরিমাণে নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আজকারে মশগুল থাকা আমাদের সবার কর্তব্য। একাধিক হাদিসে এর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাপ করে দেয়া হবে (মেশকাত)। অন্য হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি ইবাদতের মাধ্যমে শবেকদর লাভ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার মর্যাদা বুলন্দ করবেন। মোট কথা, শবেকদর আমাদের জন্য ইবাদতের অপূর্ব সুযোগ। এতে কষ্ট কম, কিন্তু সওয়ার অনেক বেশি। দু’এক রাত জাগ্রত থেকে মনকে বুঝিয়ে ইবাদত করে নেয়া তেমন কষ্টের কাজ নয়। অথচ এতে সওয়াব অনেক বেশি। এটা আমাদের ওপর মহান আল্লাহর অনেক বড় কৃপা। কেউ যদি পূর্ণ অর্জনের এমন বড় সুযোগ পেয়েও গাফেল ও অমনোযোগী থাকে তবে তার মতো হতভাগা আর কে হবে? অতএব রমজানের কোনো মুহূর্তকে নষ্ট করা উচিত নয়। বিশেষত রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের প্রতি বেশি যত্নবান হওয়া উচিত এবং অধিক পরিমাণে রাত জাগরণ করা উচিত। যাতে শবেকদরের ফজিলত অর্জন হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন।

Offline sethy

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 1069
    • View Profile
Thanks Allah for the gift
Sazia Afrin Sethy
ID:101-11-1366
BBA Department,
Batch: 25th,
Sec: B.