১৯ রমজান ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় দিবস : শত্রুকে &

Author Topic: ১৯ রমজান ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় দিবস : শত্রুকে &  (Read 2566 times)

Offline ishaquemijee

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 305
    • View Profile
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়তপ্রাপ্তির পরই মক্কার কুরাইশ কাফেররা নানাবিধ অত্যাচারে অতিষ্ঠ করে তোলে তাঁকে এবং তাঁর সাহাবিদের। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, হাসি-ঠাট্টা, মিথ্যা অপবাদের চরম পর্যায়গুলো একে একে তাদের ওপর বর্তায়। নবদীক্ষিত মুসলমানরা তবুও দমছে না। তাদের এ ঈমানি দৃঢ়তা দেখে কাফের সম্প্রদায় ইসলাম গ্রহণকারী ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, বাবা-ছেলে, স্বামী-স্ত্রীকে গৃহত্যাগে বাধ্য করে। তারা অপরের নিরাপত্তায় থাকার পরও পায়নি যথাযথ শান্তির নিবাস। ক্রমেই সাহাবিদের ওপর শারীরিক নির্যাতন আরম্ভ হয়। নানামাত্রিক নির্যাতন, জখম, খুন সত্ত্বেও মুসলমানরা ধৈর্যচ্যুত হননি। তারা নবী করিমের (সা.) নির্দেশে সবকিছু সহ্য করেও ইসলামের দাওয়াত দিতে পিছপা হননি। অত্যাচারের মাত্রা ক্রমে বাড়তে বাড়তে নবী করিম (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের এক পর্যায়ে আবু তালিব গিরি গুহায় বন্দি জীবন যাপন করতে বাধ্য করা হয়। এরপরও নিস্তার মেলেনি মুসলমানদের। এভাবে দীর্ঘ তেরটি বছর চরম নির্যাতন সহ্য করে মহানবী (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা আল্লাহর হুকুমে মদিনায় হিজরত করেন।
৬ষ্ঠ হিজরিতে মহানবী (সা.) সাহাবিদের নিয়ে হজব্রত পালনের উদ্দেশে মক্কায় গমন করেন। সেখানের কাফেরদের চরম বৈরিতা ও বাধার মুখে হজ না করেই হুদায়বিয়ার সন্ধি করে ফিরে আসতে হয় এবং এ সন্ধির ধারামতেই ৮ম হিজরিতে মহানবী (সা.) মক্কা বিজয় করেন।
অষ্টম হিজরি। রমজান মাস। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দশ সহস্রাধিক সাহাবি নিয়ে মক্কাভিমুখে মদিনা ত্যাগ করেন। মক্কার কিছু দূরের পর্বতে তাঁরা সেনা ছাউনি গড়ে তোলেন। কৌশলগত কারণে রান্নার চুলা বেশি এবং টয়লেট তৈরি করা হয় কম। কুরাইশদের মনে ভীতির সঞ্চার ঘটে। হুজুর (সা.) ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি নিরস্ত্রাবস্থায় নিজ গৃহে বসে থাকবে, যে ব্যক্তি কাবা ঘরে আশ্রয় নেবে অথবা যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ। কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান তখনও মুসলমান হননি। মহানবী (সা.) ১০ রমজান বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন। প্রথমেই কাবার মূর্তি অপসারণ করেন এই আয়াত তেলাওয়াত করতে করতে—‘সত্য সমাগত, মিথ্যা বিতাড়িত। মিথ্যার পরাজয় নিশ্চিত।’

মক্কায় প্রবেশের মুহূর্তেই কুরাইশ কাফেরদের আত্মা কেঁপে ওঠে। তারা ভাবতে শুরু করে, এতদিনের অত্যাচারের সামান্যতম বদলাও যদি নেয়া হয়, তবে একটি কাফেরেরও নিস্তার নেই। কম্পমান কাফেরদের এ অবস্থা দেখে মহানবী (সা.) বললেন, আজ তোমরা আমার কাছে কীরূপ ব্যবহার প্রত্যাশা কর। বৃদ্ধরা সাহসের সঙ্গে বলল, আমরা তোমার কাছে স্নেহশীল পিতা, শ্রদ্ধাবান পুত্র, প্রেমময়ী নেতা ও দয়ালু ভাইয়ের আচরণ কামনা করি। মহানবী (সা.) বললেন, আজকে তোমাদের প্রতি আমার কোনো প্রতিশোধ নেই। চিহ্নিত কয়েকজন ছাড়া সবাইকেই মহানবী (সা.) সাধারণ ক্ষমা করে দিলেন। মুসলমানদের এহেন আচরণে দলে দলে কুরাইশ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিল। বিনা রক্তপাত বা উত্তপ্ততা ছাড়াই সংঘটিত হলো মক্কা বিজয়ের মতো মহা ঐতিহাসিক বিপ্লব।

মক্কা বিজয়ের এ শিক্ষা আমাদের মধ্যে আজ অনুপস্থিত। পরাজিত ও দুর্বলদের প্রতি বিজয়ী ও শাসকের খড়গকৃপাণ আমরা দেখে আসছি অহরহ। সাধারণত নির্বাচনে বিজয়ী দলের অত্যাচারে দেশছাড়া, ভূমিছাড়া, বাড়িছাড়া হতে হচ্ছে পরাজিত দলের সদস্যদের। এ যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হচ্ছে। রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় উগ্রতার বিদ্বেষে আমরা দিন দিন একটি চরম নিচু জাতিতে পরিণত হচ্ছি। অথচ মক্কা বিজয়ের শিক্ষা আমাদের মধ্যে থাকলে চিরশত্রুকেও সহাস্যে ক্ষমা করে দিতে পারতাম। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন। আমিন।