হাজার মাসের সেরা মাস, ইবাদতের বসন্তকাল মাহে রমজান। মহান রাব্বুল আলামিন এ মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন। হাদিসের ভাষায় তা সত্তরগুণ করে দেয়া হয়। ছোট বড় প্রতিটি কাজের প্রতিদান এ হারে বৃদ্ধি পায়। মুমিন মাত্রই রমজানে অধিক ইবাদতে প্রয়াসী হন। প্রত্যেকে তার সাধ্যমত জানা অনুসারে চেষ্টা করে যান। রোজা অনেক পুণ্যের কাজ, যার বিনিময়ও অসীম। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, মহান রাব্বুল আলামিন বলেন— ‘রোজা আমার জন্য এবং আমি তার প্রতিদান দেব’। রোজা রাখতে গিয়ে আমরা অন্যান্য সময়ে হালাল কাজ-পানাহার, স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকি। অথচ রোজা রেখেও অনেক সময় সব সময়ের হারাম কাজ থেকে আমরা বেঁচে থাকতে পারি না। যার অন্যতম একটি হলো গিবত। অনেকে মনে করেন, কারও মাঝে বিদ্যমান দোষচর্চা গিবত নয়, এটা ঠিক নয়। সাহাবায়ে কেরাম রসুলকে (সা.) অনুরূপ প্রশ্ন করেছিলেন। তারা জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.)! যদি কারও মধ্যে উল্লিখিত দোষ থাকে তবেও কি গিবত হবে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আলোচিত দোষ তার মধ্যে থাকলেই তা গিবত হবে, না হয় তা হবে অপবাদ, যা আরও জঘন্য। দেখা যায় সমাজে আমরা ক’জন মানুষ একত্রিত হলেই শুরু হয়ে যায় পরনিন্দা চর্চা। অথচ হাদিসের ভাষায় তা ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য অপরাধ। ইরশাদ হয়েছে, ‘পরনিন্দা ব্যভিচার অপেক্ষা জঘন্যতম’ কালামেপাকে সে বিষয়ে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই কর’ (হুজুরাত-১২)।
রোজা রেখে সব ধরনের গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক, না হয় কেবলই পানাহারের সংযম হবে, রোজায় উপকৃত হওয়া যাবে না। নবী করীম (সা.) বলেন, অনেক রোজাদার এমন রয়েছে সারাদিন উপোস থাকা ব্যতীত রোজা তাদের কোনো উপকারে আসে না। (দারামি) অন্য হাদিসে মিথ্যার ব্যাপারেও অনুরূপ হুশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। তাই অতি কষ্টের রোজাকে ফলপ্রসূ করতে রোজা রাখার পাশাপাশি অন্যান্য হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। না হয় অযথা সারাদিন উপোস থাকার আসল ফায়দা পাব না। তাছাড়া কারও কল্যাণকামী হলে তার অগোচরে দোষ চর্চায় কোনো ফায়দা নেই। বরং তার সঙ্গে বসে দরদ ও মমতার সঙ্গে তাকে বলা যেতে পারে তাতে ফায়দা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বরং বুদ্ধিমান হলে সে তা শুনবে এবং তা সংশোধনে প্রয়াসী হবে। হাদিসের নির্দেশও তাই। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ’ অর্থাত্ আয়নায় যেমন তার চেহারার সব স্পষ্ট দেখা যায়, তার ভালো মন্দ ভেসে ওঠে, তেমনি এক মুমিন অপর মুমিনের দোষত্রুটি ধরে তাকে সংশোধনে সহযোগিতা করবে। সুতরাং চলুন, সংযমের এ মাসে রোজাকে কেন্দ্র করে পরনিন্দাসহ অন্যান্য সব হারাম কাজ পরিহার করার অনুশীলন করি।