অরকাইটিস বা অণ্ডকোষের প্রদাহ

Author Topic: অরকাইটিস বা অণ্ডকোষের প্রদাহ  (Read 2854 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2667
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
অরকাইটিস হলো একটি বা দু’টি অণ্ডকোষের প্রদাহ, যা সচরাচর সংক্রমণের কারণে হয়। অনেকে এটাকে এপিডিডাইমো-অরকাইটিস অথবা টেস্টিস ইনফেকশন বলে থাকেন।

কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোঃ
অরকাইটিস বা অণ্ডকোষের প্রদাহ বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা ঘটতে পারে। এটা সাধারণত এপিডিডাইমিসের প্রদাহের ফলস্বরূপ হয়। অণ্ডকোষের শেষ প্রান্তে থাকে এপিডিডাইমিস। এটা একটি নল, যা ভাস ডিফারেন্স (শুক্রবাহী নালি) ও অণ্ডকোষকে সংযুক্ত করে।

অরকাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ ভাইরাসজনিত কারণ হচ্ছে মাম্পস। মাম্পসের প্রায় ৩০ শতাংশ রোগীর অসুস্থতার সময় অরকাইটিস হয়। এটা সবচেয়ে বেশি হয় বয়ঃসন্ধিকাল পার হয়ে আসা ছেলেদের। ১০ বছর বয়সের আগে এটা তেমন একটা দেখা যায় না। এটা সাধারণ মাম্পস হওয়ার চার থেকে ছয় দিন পরে ঘটে। অরকাইটিস রয়েছে এমন এক-তৃতীয়াংশ ছেলেদের এটা ঘটে থাকে মাম্পসের কারণে। পরিণতিতে অণ্ডকোষ ছোট হয়ে যায়।

২-২০ শতাংশ পুরুষের অরকাইটিস হয় বিরল রোগ ব্রুসেলোসিসের কারণে। অরকাইটিস বা অণ্ডকোষের প্রদাহ প্রোস্টেট বা এপিডিডাইমিসের সংক্রমণের কারণে হতে পারে। যৌন সংক্রামক রোগ যেমন গনরিয়া ও ক্লামাইডিয়ার কারণেও এটা হতে পারে। সাধারণত ১৯ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষদের যৌনবাহিত কারণে অরকাইটিস বা অণ্ডকোষের প্রদাহ বেশি হয়।

যৌনবাহিত কারণ ছাড়া অন্য যেসব কারণে অরকাইটিস হতে পারে তা হলোঃ

    মাম্পস রোগের বিরুদ্ধে অপর্যাপ্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা
    বয়স ৪৫ বছরের বেশি
    বারবার মূত্রপথে সংক্রমণ
    মূত্রপথের জন্মগত সমস্যা
    জনন-মূত্রপথে অস্ত্রোপচার
    দীর্ঘদিন ফলিস ক্যাথেটারের ব্যবহার

যৌনবাহিত কারণে অরকাইটিসের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

    একাধিক যৌনসঙ্গিনী
    অস্বাভাবিক যৌন আচরণ
    যৌনসঙ্গিনীর আগে কোনো যৌনবাহিত রোগের ইতিহাস
    গনরিয়া অথবা অন্য যৌনবাহিত রোগের ইতিহাস

উল্লেখ্য, এ রোগে প্রথমে প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ হয়। আস্তে আস্তে এ জীবাণু প্রোস্টেটে সংক্রমিত হয় এবং প্রোস্টেট থেকে এ রোগের জীবাণু এপিডিডাইমিসকে আক্রমণ করে।

রোগের উপসর্গঃ

    অণ্ডথলি ফুলে যাওয়া
    অণ্ডকোষে ব্যথা হওয়া, ফুলে যাওয়া ও ভারী বোধ হওয়া
    আক্রান্ত পাশের কুঁচকিতে ব্যথা হওয়া, ফুলে যাওয়া
    জ্বর হওয়া
    লিঙ্গ পথে পুঁজ নির্গত হওয়া
    প্রস্রাবে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া করা
    যৌনসঙ্গমের সময় কিংবা বীর্যপাতের সময় ব্যথা করা
    কুঁচকিতে ব্যথা করা
    পায়খানা করার সময় কিংবা কোঁত দেয়ার সময় অণ্ডকোষের ব্যথা বেড়ে যাওয়া
    বীর্যে রক্ত যাওয়া

পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ

    প্রস্রাবের রুটিন ও কালচার পরীক্ষা
    ক্লামাইডিয়া ও গনোরিয়ার পরীক্ষা (ইউরেথ্রাল স্মেয়ার)
    রক্তের রুটিন পরীক্ষা
    ডপলার আল্ট্রাসাউন্ড
    টেস্টিকুলার স্ক্যান (নিউক্লিয়ার মেডিসিন স্ক্যান)।

চিকিৎসাঃ যদি সংক্রমণ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ঘটে তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। গনরিয়া বা ক্লামাইডিয়ার ক্ষেত্রে যৌনসঙ্গিনীকেও চিকিৎসা দিতে হবে। ব্যথা নাশক ও প্রদাহবিরোধী ওষুধ দিতে হবে।

ভাইরাসজনিত কারণে অরকাইটিস হলে, কেবল ব্যথানাশক ওষুধ দিতে হবে। রোগীকে বিশ্রামে রাখতে হবে এবং অণ্ডথলি উঁচু করে রাখতে হবে। আক্রান্ত স্থানে বরফের সেঁক দেয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, সময়মতো চিকিৎসা না করলে অণ্ডকোষের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়াজনিত অরকাইটিসের সঠিক চিকিৎসা করা হলে অণ্ডকোষের স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে। মাম্পস অরকাইটিসের তেমন কোনো ফলদায়ক চিকিৎসা নেই। এ ক্ষেত্রে প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

রোগের জটিলতাঃ অরকাইটিসের কারণে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং একটি বা দু’টি অণ্ডকোষই ছোট হয়ে যেতে পারে। অরকাইটিসের কারণে আরো যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে সেসবের মধ্যে রয়েছে অণ্ডথলিতে ফোড়া হওয়া, অণ্ডকোষে রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া, অণ্ডথলির ত্বকে ফিস্টুলা হওয়া এবং দীর্ঘস্থায়ী এপিডিডাইমিসের প্রদাহ হওয়া।

অণ্ডথলিতে কিংবা অণ্ডকোষে তীব্র ব্যথা হলে তাৎক্ষণিক অপারেশনের প্রয়োজন হয়। যদি আপনার অণ্ডথলিতে কিংবা অণ্ডকোষে তীব্র ব্যথা হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।